মাহমুদুল হকের মুক্তিযুদ্ধের 888sport alternative link : অন্য এক বীরাঙ্গনা

 

আমিনুর রহমান সুলতান

মাহমুদুল হক তাঁর 888sport live footballজীবনে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে দুটি 888sport alternative link লিখেছেন। একটি জীবন আমার বোন (১৯৭৬), রচনাকাল ১৯৭২, প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল বিচিত্রার ঈদ 888sport free betয়। আরেকটি খেলাঘর (১৯৮৮), রচনাকাল ১৪-২০ আগস্ট ১৯৭৮, প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল সচিত্র সন্ধানীর প্রথম বর্ষ, 888sport free bet-২০-এ।১

প্রভুত্বশক্তিকে অটুট রাখতে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী সরকার একাত্তরের মার্চে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের পরিকল্পিত গণহত্যার মাধ্যমে পূর্ববাংলায় যে অকথ্য ও নির্মম অত্যাচার, ধ্বংসযজ্ঞ আর লুটপাট চালাচ্ছিল তাতে যুক্ত হয়েছিল পরিকল্পিত  ‘ধর্ষণ’। বাঙালির সম্মিলিত প্রতিবাদ, প্রতিরোধে তা থেকে মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয় একাত্তর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে ও নেত্বত্বে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর বুকে 888sport apps প্রতিষ্ঠা পায়। ত্রিশ লাখ মানুষ শহিদ হয় এ যুদ্ধে। আর তিন লক্ষাধিক 888sport promo code যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। মুক্তিযুদ্ধকালে ধর্ষিত 888sport promo codeদের বঙ্গবন্ধু ‘বীরাঙ্গনা’ হিসেবে বরণ করে নেন। শুধু তাই নয়,

তৎকালীন সরকার নির্যাতনের শিকার 888sport promo codeদের পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ সংস্থা গঠন করে বিভিন্ন জেলায় শাখা কেন্দ্র স্থাপন করে। গর্ভবতী 888sport promo codeদের গর্ভপাতের জন্য বিশেষ আইন প্রণয়ন করে গর্ভপাতকে সাময়িককালের জন্য এক ধরনের বৈধতা প্রদান করা হয়।… পাশাপাশি যুদ্ধশিশুদের বিদেশে দত্তক গ্রহণের জন্য বিশেষ বিধান ও ব্যবস্থা সরকার নিয়েছিল।২

বীরাঙ্গনাদের অধিকাংশই স্বাধীনতার পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গিয়েছিল নানাভাবে। কেউ-বা বিদেশে পাড়ি জমিয়ে বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করে সংসারী হয়ে, কেউ-বা পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গেই সে¦চ্ছায় বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পাকিস্তানে চলে গিয়ে।

ধর্ষিত হওয়ার মধ্য দিয়ে তারা চরম দুঃখভোগ করলেও জীবনবোধ থেকে তা বিস্মৃত হয়নি। জীবনে বাঁচতে হবে, জীবনসংগ্রামে লড়তে হবে  – এই বোধ তাদের অগ্রসর করেছে সামনের দিকে। কিন্তু এমনও বীরাঙ্গনা আছেন ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা ও পাকিস্তানিদের পৈশাচিকতার উন্মত্ততা তাদের হৃদয়কে গভীরভাবে বিক্ষুব্ধ করেছে; ধর্ষিত হওয়ার পর হারিয়েছে জীবনের ভারসাম্য, অনুভূতির ক্রমবিকাশ ঘটার ব্যত্যয় সৃষ্টি হয় তাদের মধ্যে বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে, খ-িত হয়ে যায় অনুভূতিগুলো – দ্বিধাগ্রস্ত হয় বোধবিহীন, চেতনাবিহীন। এ যেন অন্য এক বীরাঙ্গনা।

খেলাঘর 888sport alternative linkের পরিপার্শ্ব বা ভূগোলের অধিকাংশ জায়গা জুড়ে রয়েছে গ্রাম আর পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধ। তবে গ্রামের ছবির চেয়ে গ্রামের জনজীবন ও জনপদে দ্রুত একটা পরিবর্তন আসে মুক্তিযুদ্ধের কারণে, তা নতুন উপলব্ধিতে দাঁড় করায় আমাদের পাঠ-অভিজ্ঞতায়।

888sport app থেকে পালিয়ে গ্রামে এসে নিরাপদে বাঁচার জন্য আশ্রয় নেওয়া রেহানা এবং রেহানাকে আশ্রয় দেওয়া গ্রামের কলেজশিক্ষক রেহানার চাচাত ভাই মনোয়ার ওরফে টুনুর চাকরিস্থলের বন্ধু ইয়াকুব ও ইয়াকুবকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসা স্কুলশিক্ষক মুকুলের জীবন, গ্রামের গেরিলাদের আক্রমণ, গেরিলাদের উপস্থিতি, গেরিলাদের গোপনে সহযোগিতায় এগিয়ে আসা সাধারণ মানুষ এবং পাকিস্তানিদের ধ্বংসযজ্ঞের চালচিত্র 888sport alternative linkে উঠে এসেছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ইছাপুরার মতো অনেক গ্রামই নিস্তরঙ্গ গ্রাম ছিল না। গ্রামেও ঢুকে পড়েছিল রাজনীতি, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যাকা-, ধ্বংসযজ্ঞ। আর এ-কাজে সহযোগিতা করেছিল তাদের এদেশীয় দোসর স্থানীয় দালালরা। তাদেরই প্রতিনিধি বি. ডি. পিয়ার মোহাম্মদ।

কোনো একসময় পিয়ার মোহাম্মদ আর নাটেশ্বরের ইদু ছৈয়াল আইয়ুব খানের ইফতার পার্টিতে পাত পেয়েছিল; এ-ব্যাপারে তার ছিল আলাদা গর্ব। শান্তি কমিটির মুরব্বি হওয়ার পর দাপট নিয়ে চলে। এলাকায় কখনো গেরিলারা আতঙ্ক ছড়ানোর জন্যে কয়েকটা গুলি ছুড়ে চলে গেলে মিটিং করে লোক জমায়েত করে। মিটিংয়ে কেউ না এলে জুতাপেটা করে। তার হাবভাব ছিল এরকম, ‘গোটা দেশের ভাগ্য একা তার বুকপকেটে কেউ পুরে দিয়েছে।’

গেরিলা যোদ্ধারাও তার পিছু ছাড়েনি। একবার তার বাড়িতে আতর, সাবান আর কাফনের একটা মোড়ক ফেলে রেখে সাবধান করে দিয়ে যায়। তবে গেরিলাদের আক্রমণের শিকার হতেই হয় তাকে। লেখকের বর্ণনা তুলে ধরছি –

সুবচনী থেকে কোনো একটা কাজ সেরে ফেরার পথে পোড়াগঙ্গার খালে দুম করে আক্রান্ত হয়ে যায় পিয়ার মোহাম্মদের নৌকো। বাইল্যার পাড়ের কাছাকাছি সম্ভবত, খাগড়াবনের আড়ালে গুড়–ম গুড়–ম করে দুটো গুলির শব্দ ফাটতেই নৌকোর পাটাতনের ওপর সটান শুয়ে পড়ে পিয়ার মোহাম্মদ। ততক্ষণে ডান কাঁধের একটা পাশে যা গাঁথার তা গেঁথে গেছে। মাঝিটা ছিল তুখোড়, তার কেরামতিতে জান নিয়ে কোনোমতে ঘরে ফেরে সেদিন পিয়ার মোহাম্মদ, তারপর সোজা পিঠটান 888sport appয়।

পৃ ১৯।

তারপর সেখানেই পড়ে থাকতে হয় তাকে। হাসপাতালে তার ডান হাতটা কেটে ফেলা হয়। তবে গ্রামের মানুষের ভেতর ভয়টা থেকেই যায়। যে-কোনো দিন এক ব্যাটালিয়ন পাঞ্জাবি সৈন্য নিয়ে গ্রামে হাজির হতে পারে পিয়ার মোহাম্মদ, এটা রটনা ছিল; কিন্তু এ-সুযোগ তার আর ঘটে না।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সুযোগমতো গ্রামেও হামলা চালিয়েছে। চালিয়েছে হত্যাকা- ও ধ্বংসযজ্ঞ। এক্ষেত্রে লেখকের বর্ণনা –

মুকুল হাত-পা নেড়ে খুঁটিনাটি বিবরণ দিতে থাকে। সম্ভবত নবাবগঞ্জ বাজারের ক্যাম্প থেকে তারা হুট করে গিয়ে হাজির হয়েছিল। গরিব তাঁতিদের গ্রাম যন্ত্রাইল, তাঁত ফড়িয়া মহাজন এসব নিয়ে তাদের কারবার; যে কোনো মুহূর্তে যে একটা অঘটন ঘটতে পারে সেখানে এ-কথা কারো মাথায় খেলেনি। কোনো রকমের প্রস্তুতি তো ছিলই না, উল্টো তাঁতে আগের চেয়ে একটু বেশি নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছিল তাঁতিরা। নেহাত ঠেকায় না পড়লে, কিংবা ধারেকাছে না থাকলে পশ্চিম পাকিস্তানে তৈরি কাপড়-চোপড় কেনার কোনো কথাই আসে না। যতটুকু পারা যায় দিশি পণ্যের ভেতর নিজেদের সংযুক্ত রাখার জন্যে যে-যার মতো চেষ্টা করে যাচ্ছে।… দিনরাত তাঁত চালায় আর সেই শব্দের ভেতর জয় বাংলার ধ্বনি শোনে। ইছামতি পার হয়ে হুট করে ঝাঁপিয়ে পড়লো আর্মিরা। তাঁত আর তাঁতি – তাদের লক্ষ্য দুটোই। নদীর দিক থেকে বেড় দিয়ে বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে তারা এগিয়ে এলো; আগুন ধোঁয়া আর চিৎকারের মাঝখানে যে যে-দিকে পারে ছুটে পালায়, যারা পারে না তাদের ধরে ধরে জ¦লন্ত তাঁতের ওপর ছুঁড়ে দিতে থাকে।

স্বচক্ষে বহু লাশ ভেসে থাকতে দেখে এসেছে ইছামতিতে মুকুলদের স্কুলের কেরানি চম্পকদির মতিন। পৃ ৩৯-৪০।

গণহত্যা ও অত্যাচারের আরো একটি জ্বলন্ত উদাহরণ লেখক তুলে ধরেছেন এ-888sport alternative linkে –

কয়েকটা স্পিডবোটে করে পাড়ায় এসে নামলো কিছু সৈন্য, তারপর ঝাঁপিয়ে পড়লো দক্ষিণ চারিগাঁও-এর ওপর। ক’জন হবে? তবে শোনা গিয়েছিল দলে তারা এমন আহামরি ছিল না। নমশূদ্রদের এক একটা পাড়া ধরে আর ভুটভাট আগুন ধরিয়ে দেয়। কুলুদের একটা ঘানিগাছও আস্ত ছিল না। সব পুড়ে ছাই। এক একটা দুধের শিশুকে কোল থেকে কেড়ে নেয়, তারপর শুরু হয় লোফালুফি খেলা; শেষে বেয়োনেট  গেঁথে মাঝে মাঝে আগুনে ঝলসে কাবাব সেঁকা করে।               পৃ ৬২-৬৩।

গ্রামাঞ্চলেও অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছিল। গ্রামের পাশেই হাটে বিক্রি করতে নিয়ে আসা গরু পর্যন্ত তুলে নিয়ে গেছে। যাওয়ার সময় বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে গেছে। ধ্বংস করে গেছে বাইচের বিরাট নৌকাও। অবশ্য গেরিলারা ক্রমে শক্তি অর্জন করে মুকুলদের মতো সহায়তাকারী সাহসী মানুষদের সহযোগিতায় একাধিক আক্রমণ চালিয়েছে।

গোদনাইলের পাটের গুদামে আগুন ধরিয়ে ভীতি জাগিয়ে দিয়ে গেছে গেরিলারা।

আগলা-গালিমপুরে আর্মি বোঝাই একটা লঞ্চকে ছারখার করে দেয় গেরিলারা। অনেক পাঞ্জাবি সৈন্য লঞ্চে টিকতে না পেরে নদীতে হাবুডুবু খেয়ে মরেছে।

প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধার 888sport free bet কমই ছিল। এ নিয়ে ঔপন্যাসিকের একটা মনস্তাত্ত্বিক আক্ষেপও ব্যক্ত হয়েছে ইয়াকুবের ভাবনায় নিরাসক্তভাবে –

কেমন যেন খাপছাড়া; দৃঢ়তার চেয়ে মিথ্যে ঢাকঢোল পেটানোর বহরটাই বেশি, অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়। গ্রামে না আছে কোনো সাজ-সরঞ্জাম, না কোনো সংগঠন, পরিকল্পনা; এখনো নিয়মিত কনুই সাদা করে ক্যারাম খেলা হয়, বাজারের চায়ের দোকানে চুটিয়ে গুলতানি চলে, এরা স্বপ্নের জগতে যে-যার সুস্থির নিরাপত্তার সুখটুকুকে ফুটফাটের গুজবে মাঝে মাঝে একটু চাঙ্গা করে নেয় মাত্র। হাতে গোনা কয়েকটা ছেলে, অধিকাংশই যারা বয়সে তরুণ, দেশান্তরী হয়েছে। ভরসা বলতে এটুকুই। দূর থেকে এরাই স্বপ্নের দরোজা খুলে দিয়েছে, আশা-ভরসা যেটুকু পল্লবিত তা ওই গুটিকতক তরুণের কল্যাণেই। লড়াই করেই যদি দেশকে মুক্ত করতে হয়, স্বাধীনতা আনতে হয়, তার জন্যে প্রথম চোটেই এককাট্টা হতে হবে সবাইকে। তেমন বুঝলে সারাদেশে সাজ সাজ রব পড়ে যেত। পৃ ৪০-৪১।

তবে ক্রমেই যে মুক্তিযোদ্ধার 888sport free bet বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে গেরিলা আক্রমণ, তা আমরা 888sport alternative linkের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রত্যক্ষ করি। সংশয়বাদী ও দুর্বলচিত্তের অবিবাহিত যুবক ইয়াকুবের উক্তি এক্ষেত্রে স্মর্তব্য –

কেউ একটু চোখের আড়াল হলেই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম রটে যায়। যে-কোনো কারণে গ্রামগুলো যদি আক্রান্ত হয়, তখন নামকেওয়াস্তে হলেও কোনো রকমের যে প্রতিরোধ হবে না এ ব্যাপারে আমার কোনো দ্বিমত নেই। পৃ ৬৩।

এক পর্যায়ে অবশ্য মুক্তিযোদ্ধারা গ্রামেই মুক্তাঞ্চলের মতো অবস্থান নেয়। আদিনাথের ভিটা ছেড়ে রেহানা ও ইয়াকুব চলে যাওয়ার পর গেরিলারা এই ভিটাতেই মুকুলের সহযোগিতায় অবস্থান নেয়। 888sport alternative linkের সমাপ্তিতে তার স্বাক্ষর রয়েছে।

ভরদুপুরে দুটো ডিঙ্গি নৌকো পাড়ে এসে লাগে। মুকুল ছুটে যায়, ‘হ্যারা আয়া পড়ছে। হ্যারা আয়া পড়ছে!’

সাতজন তরুণ আর কিছু অস্ত্রশস্ত্র।

মুকুল আমার সঙ্গে সকলের পরিচয় করিয়ে দেয়, কাউলকা তালতলার ক্যাম্প এই পোলাপানগুলি ঝাঁঝরা করছিল, এই হইলো গিয়া তর আবুল কমান্ডার, আমাগো আউটশাহির পোলা –

মুহূর্তের মধ্যে আদিনাথের ভিটাবাড়ির নিচে তারা চষে ফেলে। একটা বাঁশ বেয়ে তরতর করে দোতলায় উঠে যায় আবুল। তারপর সব দেখেশুনে ওপর থেকে বললে,

লাগে জানি আল্লায় ব্যাক আমাগো লাইগ্যা বানায়া থুইছে, অক্কুরে যুতসই ব্যাকডি, এস-এল-আর খান ওপরে উঠা –

মুকুল আমার পিঠে একটা থাপ্পড় কশিয়ে বললে,

কই নাই তরে মেজিক দেহামু, কই নাই? অহনে দেখছি সব কিছুই। পৃ ৭৯-৮০।

জীবনঘনিষ্ঠ সময়টা মুক্তিযুদ্ধের। জীবনের স্বাভাবিক চালচলনে ব্যত্যয় ঘটে এ-সময়টায়। অবস্থানের পরিবর্তন হয় প্রতিনিয়ত। এই 888sport alternative linkের কেন্দ্রে আছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল ও রেহানা। রেহানার ডাকনাম ছিল অনেক। দাদার দেওয়া নাম ঝুমি, দিদিমার আন্না, মামার গাব্বু, স্কুলের বান্ধবীদের রাখা নাম টেঁপি, সখির লতা, স্কুলের পরিচিত দুষ্টু ছেলে ভোঁদার খেপানো নাম শনপাপড়ি।

রেহানা উচ্চশিক্ষিত কুমারী। 888sport appর হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করে। 888sport appয় গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাটের সঙ্গে 888sport promo code নির্যাতনও যুক্ত হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা নিরীহ 888sport promo codeদের তাদের ক্যাম্পে নিয়ে দিনের পর দিন রেখে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে ধর্ষণের মধ্য দিয়ে। কাউকে হয়তো ধর্ষণ শেষে ছেড়ে দিয়েছে। কাউকে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে রেখেছে।

রেহানা লাইব্রেরি থেকে হোস্টেলে ফেরার পথে করাচি পুলিশরা রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। টুনু অনেক চেষ্টা করেছে তাকে উদ্ধার করার জন্য। দালাল পর্যন্ত ধরেছে। টুনু রেহানার চাচাতো ভাই। দালালকে একটি দামি টেলিভিশনও উপহার দিয়েছে। কিন্তু কোনো সুরাহা সে করতে পারেনি।

এ সম্পর্কে টুনুর বর্ণনা –

রাস্তা থেকে কারা ধরে নিয়ে গেছে এ সম্পর্কে সঠিক কোনো খবরও ছিল না। কেউ বলে আর্মি, কেউ বলে মিলিশিয়া; এ জট ছাড়াতেও কম সময় নষ্ট হয়নি। আর্মিতে যার যেখানে যত সোর্স আছে সবগুলোকে কাজে লাগাবার চেষ্টা করেও কোনো ফায়দা হয়নি। মধ্যে থেকে এক দালাল শালা ফাঁকতালে কিছু পয়সা পেলো। পৃ ৭৫।

কোনো দালালের সাহায্যের প্রয়োজন হয়নি। ভারসাম্যহীন ও অজ্ঞান অবস্থায় রেহানাকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্যে নিয়ে যায় কেউ। এ-সম্পর্কে টুনুর বর্ণনা –

ঘরে ফিরে শুনি রেহানার খবর। এক বুড়ো ভদ্রলোক, এজিবির কেরানি, তার মুখে সবই শুনলাম, সাত দিন ধরে রেহানা মেডিকেল কলেজে পড়ে আছে। এক ভোরবেলা রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালে তুলে দিয়ে যায় কেউ। ওই বুড়োর এক শালি না কি ওখানকার এক নার্স, খবর দিতে বলেছে সে-ই। পৃ ৭৫-৭৬।

হাসপাতাল থেকে টুনু রেহানাকে তার আশ্রয়ে নিয়ে আসে। কিন্তু তার পেছনেও লোক লেগে যায়। দুই মাস তার কাছে রাখার পর নিজেকে বাঁচাবার জন্যে এবং রেহানার নিরাপত্তার জন্য টুনুর বন্ধু ইয়াকুবের কাছে একটি চিঠি লিখে পাঠিয়ে দেয়। ইয়াকুব যখন 888sport appর একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার কপিরাইটার, তখন মনোয়ার অর্থাৎ টুনু সে-সংস্থার কমার্শিয়াল আর্টিস্ট। সংস্থার সূত্রেই তারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ইয়াকুব সংস্থা ছেড়ে দিয়ে গ্রামের কলেজে শিক্ষকতা পেশাকে গ্রহণ করে গ্রামেই থাকে। গ্রাম এবং ইয়াকুব উভয়েই নিরাপদ ভেবে রেহানাকে পাঠানো হয় ইয়াকুবের কাছে। ইয়াকুবের বর্ণনা –

চারদিন আগে ছোট্ট একটা দলের সঙ্গে ইছাপুরায় এসে পৌঁছায় রেহানা। তাদের দলে ছিল আরো তিনটি মেয়ে। পৌঁছুতে পৌঁছুতে সন্ধে নেমে যাওয়ায় তারা ইছাপুরাতেই রাতটা কাটিয়ে যায়। কারো বাড়ি শ্রীনগর থানার কোনো গ্রামে, কারো-বা লৌহজং-এর কোথাও। সকাল না হতেই তারা যে যার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়ে যায়। থেকে যায় কেবল রেহানা। তারা আসে ইছাপুরার দুলাল মিয়ার সঙ্গে।

দুলাল মিয়া ইছাপুরার মানুষ হলেও 888sport app শহরের কলুটোলায় থাকে। মিটফোর্ড রোডের এক ওষুধের দোকানের কম্পাউন্ডার সে।

আমি তখন হোস্টেলের কামরায় বসে তাস পিটাচ্ছি, দুলাল মিয়া এসে হাজির। বললে, আপনের লগে একটা প্রাইভেট কথা আছে –

বেরিয়ে আসার পর পকেট থেকে একটা ভাঁজ করা কাগজ আমার হাতে দিয়ে দুলাল মিয়া বললে, পত্রখান আপনের, দোস্তে দিচ্ছে, মনোয়ার সাহেব।…

টুনু লিখেছে,

রেহানা আমার চাচাতো বোন; নিজের হেফাজতে রাখিস। কতগুলো কারণে ওকে 888sport app থেকে সরিয়ে দিতে হলো। সাক্ষাতে সব বলবো। তোকে একটু জ¦ালাতন সহ্য করতে হবে, দেশের যে অবস্থা তাতে এই জ¦ালাতনটুকু খুব বেশি একটা কিছু নয়, এর চেয়ে দেশের মানুষ অনেক বেশি সহ্য করছে, অনেক বেশি। যত শিগগির সম্ভব আমি এসে যাবো, তখন তোর ছুটি। ও খুব ভালো মেয়ে, ওকে ভুল বুঝবি না; সব মানুষের জীবনে একবার-না-একবার পরীক্ষা আসে, মনে করবি আমাদেরও সেই রকম দিন এসেছে। শিগ্গির আসছি। পৃ ৩১, ৩৩, ৩৪।

গ্রামের কলেজ-শিক্ষক ইয়াকুব মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়নি মধ্যবিত্তসুলভ স্বভাবের কারণেই। তবে রাজনৈতিক সচেতনতা তার ভেতর আছে। দেশের খবরাখবরও তার জানা। 888sport app শহরের নিরাপত্তাহীনতার কারণে মানুষ ছুটে আসছে গ্রামে। গ্রামকে ভাবছে নিরাপদ। আর এ নিয়ে তার ভেতর তুলনাও চলে।

যে-সময়টিতে ইয়াকুব গ্রামে রয়েছে তখনো কোনো কোনো গ্রামে 888sport app শহরের মতো হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ তেমন হয়নি। 888sport app শহরের চিত্র ইয়াকুবের বর্ণনায় আমরা পাই এরকম –

গুলির শব্দের ভয়ে 888sport app শহরে নাকি এখন আর একটি পাখিও ডাকে না। সত্য-মিথ্যা জানি না, তবে শহর থেকে যারাই আসে, তাদের সকলের মুখে এই একই কথা শুনতে পাই। সে-তুলনায় কত নিরাপদে আছি, কত নিশ্চিন্তে আছি, ভাবতে অবাক লাগে; অথচ কত কাছে – নৌকো আর লঞ্চ মিলে মোট সাড়ে তিন চার ঘণ্টার মাত্র দূরত্ব। এখানে এখনো পাখি ডাকে, বাতাসে এখনো বুনো লতাগুল্মের ঝাঁঝ; পোড়া মানুষ আর বারুদের গন্ধ, রাতের অন্ধকারে আচমকা এক একটা বাড়িতে ভারি-ভারি বুটজুতোর শব্দ, অমানুষিক আর্তনাদ, এইসব নৈমিত্তিক খবরাখবর মাঝেমধ্যে অল্প-বিস্তর হা-হুতোশের আবহাওয়া তৈরি করলেও তেমন গুরুত্বপূর্ণ কখনোই মনে হয় না, যাতে পায়ের তলার মাটি সরে যায়। পৃ ৩৫।

টুনুর চিঠি পেয়ে রেহানাকে ভোলানাথ কবিরাজের বাড়িতে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ইয়াকুব।

ভারি বুদ্ধিমান মনে হয় নিজেকে, গ্রামের চাকরি বেছে নেয়ার পুরনো সিদ্ধান্তটিকে অলৌকিক ছাড়া আর ভাবতে পারি না তখন। পৃ ৩৪।

ইয়াকুব আর ইছাপুরা গ্রাম দুটোই নিরাপদ রেহানার জন্যে। ইয়াকুব রেহানাকে রাখে ভোলানাথ কবিরাজের বাড়িতে। একান্নবর্তী পরিবার হওয়ায় বিরাট পরিবার। এই বাড়িটাই রেহানার থাকার জন্য উপযুক্ত। ইয়াকুবের বর্ণনা –

রেহানার কাছাকাছি বয়সের মেয়েও বেশ কয়েকটি ওই পরিবারে, ঐ এক বাড়ি থেকেই আমাদের কলেজে পড়তে আসে পাঁচ-পাঁচটি মেয়ে। সুবিধে সবদিক থেকে। পৃ ৩৫।

ভোলানাথ কবিরাজের বাড়িতে রাখা হয় মুকুল মাস্টারের সহযোগিতায়। মুকুল স্কুল-শিক্ষক। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তার চলাফেরায় আসে অনেক পরিবর্তন।

মুকুল যে মুকুল, ইস্কুল মাস্টারি আর যাত্রাফাত্রা নিয়ে এত দিন ঢিমে আলসেমির ভেতর যাকে নাক চুবিয়ে পড়ে থাকতে দেখেছি, তাকেও দেখি কিছু একটা নিয়ে ভীষণ তৎপরতায় মেতে উঠেছে। কিছুদিন যাবৎ লক্ষ করে দেখেছি দুদ- সুস্থির হয়ে বসবার মতো তার সময় নেই, কেমন যেন অস্বাভাবিক রকমের চঞ্চল; এই আসে, এই যায়, গুনগুন, ফিশফাশ, মনে হয় তালে আছে একটা কিছু বাধাবার। পৃ ৩৫।

কবিরাজবাড়িতে চারদিন থাকার পর মুকুল ইয়াকুবকে অনুরোধ করে রেহানাকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য। কারণ কবিরাজবাড়ির কেউ চায় না যে, রেহানা তাদের বাড়িতে থাকুক। রেহানাকে তারা সামাল দিতে পারে না বলে জানায় মুকুল। তাছাড়া রেহানার চালচলনে এমন কিছু প্রকাশ পেয়েছে যা ইয়াকুবকে জানাতে চায় না মুকুল।

রেহানাও থাকতে চায় না কবিরাজবাড়িতে। ইয়াকুব জানতে চায় রেহানার সমস্যাটা কোথায়। রেহানার উত্তরে আমরা জানতে পারি, বাড়িটাতে সে যথেষ্ট ভয় পায়। ভীতি তাকে অন্যরকম করে তোলে। রেহানার বর্ণনা –

সারা বাড়িময় দ্যাখো ভোমা ভোমা বিড়াল আর বিড়াল। রাত্রে সবকটার চোখ জ্বলে, যা ভয় করে আমার। ইচ্ছে হয় ধরে ধরে এক-একটাকে আছড়ে মারি। আবার নাকি কবিরাজের বাড়ি। কবিরাজ না ছাই! বিড়ালের লোম পেটে গেলে কি হয় তা জানো? পৃ ৩৬।

মুকুলের প্রস্তাব অনুসারে রেহানাকে সঙ্গে করে ইয়াকুব ওঠে মিঠু-সারের আদিনাথের ভিটেয়। মুকুল ওঠার আগে ভাঙা ভিটেবাড়ি ছাড়া আর কোনো নাম ঠিকানা ছিল না।

লেখকের বর্ণনা –

আদিনাথ পরিবারের কুল-পুরোহিত যজ্ঞেশ্বরের নাতজামাই নন্দ, নন্দের ছোটো ভাই মুকুলচন্দ্র, সেই মুকুলই আদিনাথের ভিটেবাড়ির বর্তমান মালিক। পোড়ো বাড়িটার মোটামুটি বাসযোগ্য একটা ঘর বেছে বছর কয়েক আগে বি. ডি. পিয়ার মোহাম্মদের অনুমতি নিয়ে সে একখানা চৌকি পাতে সেখানে। পৃ ১৪।

আদিনাথের ভিটেটার চারপাশে জনমানুষ নেই। একেবারে বিলের মাঝখানে বাড়ি। মুকুল তার রুমটা ছেড়ে দেয় রেহানার জন্য। রেহানা ও ইয়াকুব আদিনাথের ভিটেয় আশ্রয় নিয়ে দিন কাটায়। অপেক্ষা করে কখন টুনু আসবে এবং তাকে নিয়ে যাবে। অন্তরঙ্গ ভাব বিনিময় ও খুনসুটির মধ্য দিয়েই তাদের সময় কাটে।

একদিন মুকুল টুনুকে নিয়ে উপস্থিত হয় আদিনাথের ভিটেয়। টুনুর কাছ থেকেই ইয়াকুব জানতে পারে রেহানার ধর্ষিত হওয়ার কথা। তারপর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে না পারার ঘটনা। রেহানার জীবনের সঙ্গে আগেই যুক্ত হয়েছিল বাপ-মা হারাবার নিয়তি। টুনুর বর্ণনা –

সে তার নিজের মনে কথা বলে চলে, হ্যাঁ, ভাগ্যও নিয়ে এসেছিল একখানা। যখন কোলের তখন আরেকজনের সঙ্গে পালিয়ে গেল ওর মা, লজ্জায় কারো কাছে মুখ দেখাতে না পেরে শেষে গলায় দড়ি দিলো বাপটাও। দাদা-দাদির কাছে মানুষ। বংশের একমাত্র মেয়ে -। পৃ ৭৬।

প্রভুত্বের দাবি নিয়ে পাকিস্তান সরকার হানাদার বাহিনীকে লেলিয়ে দেয় বাঙালির ওপর নির্মম অত্যাচার, গণহত্যা, 888sport promo code নির্যাতন, বাড়িঘর জ্বালিয়ে ছারখার করে দিতে। মানবতাবিরোধী অপরাধ জেনেও তারা সংঘটিত করে এইসব অপকর্ম।

একাত্তরে কুমারী উচ্চশিক্ষিত রেহানার মতো অনেক কুমারীর স্বপ্ন বিলীন হয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতা, নৃশংসতা ও পাশবিকতার জন্যে। একজন মানুষ বিশেষ করে ধর্ষিত 888sport promo code যখন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে তখন তার ভেতর নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়। আর তা থেকে উত্তরণের পথ সহজ নয়।

বীরাঙ্গনা হওয়াটাই একজন 888sport promo code বা মেয়ের জন্যে ট্র্যাজেডি। এই ট্র্যাজেডিকেও স্বাধীনতার পর অনেক বীরাঙ্গনা জয় করেছে। জীবনযাত্রায় নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছে জীবন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। কিন্তু রেহানার মতো বীরাঙ্গনাদের ট্র্যাজেডি থেকে উত্তরণের পথ রুদ্ধ। জীবন থাকলেও জীবনদৃষ্টি ও জীবন-সংগ্রামী চেতনা লুপ্ত হয়ে যায়। সুস্থ ভাবনাগুলোকে জীবনের অস্বাভাবিকতায় গ্রাস করে প্রতি মুহূর্তে।

ইয়াকুবের প্রতি রেহানার গভীর বিশ্বাস আছে কিন্তু তার উপলব্ধি ধরে রাখার ক্ষমতা নেই। রেহানা ও ইয়াকুবের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের একটি বর্ণনা উল্লেখযোগ্য –

আন্না একটা হাত দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে। তারপর চোখে আর কপালে চুমু খায়। আমি কাঠের মতো বসে থাকি, হাত-পা সরে না।…

আন্না আমার মাথার চুলের ভেতর তার ঠোঁট চুমিয়ে দিয়ে বললে, বাবু সোনামনি, আর কক্খোনো এসব কথা বলবে না। আমার গা-হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে, এই দ্যাখো বুকের ভেতরে কি হচ্ছে – আমার একটা হাত নিয়ে তার বুকের ওপর চেপে ধরলো সে, বুঝতে পারে, আমার কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে!

হঠাৎ একটা কা- করে ফেলি আমি, পাগলের মতো আমি ওর গালে চুমু খাই, তারপর দু’হাতে হাঁটু জড়িয়ে ধরে মাথা নিচু করে পড়ে থাকি। মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যায় ব্যাপারটা, যার ভেতর যোগ-বিয়োগ হিসাব-নিকাশ কিছুই থাকে না;

বাতাসের মৃদু স্পর্শে যেভাবে গাছের পাতাগুলো নড়ে, একটা সামান্য পাখি পাতার আড়াল থেকে আরেকটা গাছের ডালে গিয়ে বসে, কতকটা সেইভাবে।

ধীরে ধীরে শক্ত কাঠ হয়ে যায় আন্না এক সময় বললে, ‘ওঠো আমার আর ভালো লাগছে না।’ পৃ ৫৫।

এই ধরনের আরো একাধিক অন্তরঙ্গ মুহূর্ত রয়েছে। যেখানে ভালো লাগার মুহূর্তগুলো নিমিষেই ভাবান্তরে ভিন্ন রূপ নেয় রেহানার কাছে। ইয়াকুবের চোখে সুন্দরের মহিমায় রেহানা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কিন্তু রেহানার চোখে সুন্দরের বিনষ্টি, সুন্দরের অসম্পূর্ণতা অস্থির করে তোলে চিত্তকে। কারো ওপর কারো অধিকার প্রতিষ্ঠা আর হয়ে ওঠে না।

সামাজিক চেতনাবোধ জীবনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। মানুষের আচরণে স্বাভাবিকতা জীবনের নিয়ন্ত্রণে অন্যতম উপায়ও বলা যায়। অথচ তখনো ইয়াকুব রেহানা বা আন্নাকে আবিষ্কার করতে পারেনি।

প্রেমের মর্যাদার রূপদানে ইয়াকুব মধ্যবিত্ত মানসের ব্যক্তির যে দ্বন্দ্ব তাকে কাটিয়ে, দ্বিধার জাল ছিন্ন করে রেহানার প্রেমের মর্যাদার রূপদানে অগ্রসর হয়েছে। রেহানার মনও উন্মুখ ছিল কিন্তু সে-মন যে ক্ষত-বিক্ষত, ভারসাম্যহীন, ভাবালুতার সঙ্গে বাস্তবতার যে কোনো মিল নেই তার অস্তিত্বে। অস্তিত্ব তার প্রশ্নবিদ্ধ।

ইয়াকুব রেহানাকে মন দিয়ে দেখেছে, আর রেহানা তার অসুস্থ মনের ওপর নির্ভরশীল। যতক্ষণ মন কিছুটা সুস্থ থাকে, মানসিকতায় ইয়াকুবকে ঠাঁই দেয় হৃদয়াবেগ দিয়ে। কিন্তু তা যে বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকে না। ভেতরে একটা ভাস্কর দানব অন্ধকার করে দিয়ে দাপায়, লাফায়। ভীতি তাকে মানবিক মূল্যে দাঁড় করতে দেয় না। বিশ্বাসপ্রবণ মানুষ হিসেবে রেহানার আস্থা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছিল ইয়াকুব। আর এ-কারণে রেহানার পাগলামিটা ধরা পড়েনি তার কাছে। রেহানার আত্মা আছে; কিন্তু আত্মতৃপ্তির সম্ভাবনা নেই। যা আছে অতীতের খ-িত বাল্য888sport sign up bonus। তাকেই আঁকড়ে ধরে নিজেকে তার পরিপার্শ্বকে হাজির করে। ভরা বর্ষার মৌসুম। নৌকায় রেহানা যায় মিঠু-স্যারের আদিনাথ ভিটেয়। নৌকায় সঙ্গে যায় কলেজ-শিক্ষক ইয়াকুব। নৌকায় ভাসতে ভাসতেই রেহানার ভাবান্তরের মধ্য দিয়ে ইয়াকুব রেহানার অনেক ঘটনা ও বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠে। রেহানার সই ছিল নূরজাহান। রেহানার দেওয়া নাম পাতা। পাতাই আবার রেহানার নাম দিয়েছিল লতা। পাতার 888sport sign up bonusটুকু আছে। সে মরে গিয়েছিল পুকুরে ডুবে। পাতা তার সংসারে বেড়ে উঠেছিল। চাচি ছিল খুবই ডাইনি ধরনের। লেখকের ভাষায় বলা যায়, দাঁতে বিষ আর মধু দুটোই ছিল।

রেহানা আর তার সইয়ের ক্লাসের একটি বন্ধু ছিল বাবু নামে। ও ছিল কিছুটা হাবাগোবা। ওকে ভয় দেখিয়ে তারা বাবুর বাড়ি থেকে ফলশা আনিয়ে খেত।

বাবু মরে গিয়েছিল লরির নিচে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একজন বীরাঙ্গনার ভারসাম্যহীন যাপিত জীবন বিশ্বস্ততার সঙ্গে 888sport live chatরূপ দিয়েছেন লেখক। নিছক বীরাঙ্গনার ভারসাম্যহীন রূপকে উদ্ঘাটন করার জন্যই তিনি 888sport alternative link লেখেননি। লিখেছিলেন যুদ্ধের কালে পাকিস্তানিদের পাশবিকতার কাছে একজন শিক্ষিত মেয়ে ধর্ষিত হলে জীবনের সঙ্গে হার মানা মেয়ের জীবনের পঙ্গুত্বকে নিয়ে। 888sport promo codeত্বের অসম্পূর্ণতাকে মনস্তাত্ত্বিক ও দার্শনিক বিবেচনায় বাস্তবমুখী করে বর্ণনা করেছেন লেখক।

জীবনে দুঃখ থাকে, হতাশা-যন্ত্রণা থাকে, আবার তা থেকে উত্তরণের পথও খুঁজে নেয় মানুষ। রেহানার যে-জীবন তা থেকে উত্তরণের যে কোনো পথ নেই তা আধুনিক চিকিৎসা888sport apkীরাও মত দিয়েছেন। একাত্তরে রেহানার মতো অনেক বীরাঙ্গনা আছে যাদের খোঁজখবর অনেকে জানে না। রেহানা ভারসাম্যহীন বীরাঙ্গনাদের মধ্যে অন্যতম দৃষ্টান্ত। 888sport promo codeর ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্য তার মাতৃত্বে। সুখসমৃদ্ধ সংসার জীবনে। রেহানা ধর্ষিত হওয়ার পর থেকে সে হয়ে ওঠে মরা মাটির পৃথিবী। তাকে বাঁচিয়ে রাখা ছাড়া টুনুর কিই বা করার আছে? কিই বা করার আছে ইয়াকুবের? মনোজগতে 888sport sign up bonusচিহ্ন ধরে রাখা ছাড়া? ইয়াকুবের বর্ণনা –

সারা বারান্দায় আন্নার ছাপ। ইচ্ছে হয় ওর ওপর গাল পেতে শুয়ে থাকি। সবকিছু ফাঁকা মনে হয়। ঝোড়ো বাতাস শূন্য কোঠায় হাহাকার করে। মনে হয় প্রতিটি গাছ সজল চোখে বিধ্বস্ত বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে। দোরগোড়ায় দেয়ালে ঝাঁপিয়ে ওঠা ডুমুর গাছটার সঙ্গে আমার কথা হয়, বলি মনে আছে তোমার, কাল তুমি না একটা পাতা দিয়েছিলে, মনে আছে তোমার! বিলের ওপর পাগলা বাতাস দুমড়ে একাকার হয়ে যায়। ছলছলে পানির কোল ঘেঁষে ওই তো ঘুমশাক, আন্না আমাকে চিনিয়েছিল। ভাই ঘুমশাক, আন্নাকে তুমি মনে রেখো। ওই তো আমরুল, থানকুনি পাতা, মনে আছে তো ভাই, মনে আছে তো ভাই, মনে আছে! পৃ ৭৯।

রেহানার 888sport sign up bonusময় খ-িত অতীত আছে, আছে অস্থির ও নিত্য পরিবর্তনশীল ভাবনার; তেমনি নেই ভবিষ্যতের স্বপ্ন। জীবনের, জীবনসংগ্রামের মুখোমুখি দাঁড়ানোর সম্ভবহীনতা নিয়েই রেহানারা বেঁচে থাকবে। এর নাম নিশ্চয়ই বাঁচা নয়।