মুক্তিযোদ্ধার চোখে বঙ্গবন্ধু

যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলিউজ্জামান। বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলার ধরাল গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন 888sport cricket BPL rate-বাইশ বছরের যুবক। যুদ্ধ করেছেন আট নম্বর সেক্টরে, হেমায়েত বাহিনীতে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখার প্রথম ঘটনাটি আলিউজ্জামান বলেন ঠিক এভাবে – ‘গ্রামে আমগো পছন্দের মানুষ ছিল শেখ আবদুল আজিজ। উনি একদিন বললেন, ‘এক নেতা আসতে লাগছে। শেখ মুজিবুর রহমান কইত তহন। কত মাইনসে কয় মুজিবর। আওয়ামী লীগের। তোরা আওয়ামী লীগ করবি।’ আমরা বললাম, ‘করমু।’ উনি তহন বলেন, ‘এতো সুন্দর ভাষণ দেয় তা বলার মতো না।’ আমি কই, ‘তায় আমগো কোটালিপাড়া আইসবে।’ ‘হ্যাঁ আইসবে।’

শেখ মুজিব একবার খবর পাঠান আসবেন। উনি স্পিডবোটে আসছেন। ঘাগোর বাজারের ঘাটলায় আমরা অপেক্ষায়। ছিলেন শেখ আবদুল আজিজ, গফুর, মুজিবুল হকসহ মেলা নেতা। কোটালিপাড়ার কাছে কুরপাড়া, পুনাতি, গোপালপুর এলাকা। ওইদিককার মানুষ ছিল মুসলিম লীগের পক্ষে। তারা বলতেছে, ‘না, আমাগো ওতো বড় নেতা লাগবো না। মুসলিম লীগই ভালো।’ শেখ মুজিব ওইদিকে গেলেন না।

আমি খুব শয়তানি করতাম। দূর থিকাই চেঁচাইয়া বলি, ‘আপনি আইসেন। আপনি আমাগো বাবা, আইসেন। আমরা থাকতে কেউ বগলে আইতে পারবো না।’ স্পিডবোট থাইকাই আমারে দেখছেন। উনি আইসা ফাস্টেই আমার মাথায় হাতটা দিছেন। এরপর থিকাই শেখ মুজিবরে বাবা ডাকতাম। ঘাগোর ডাকবাংলায় উনি বসলেন। ওইখানেই মিটিং করা হইল। উনি এরপর মাঝেমধ্যে আসতেন। মিটিং করতেন।

একজনের নাম ছিল সেকেন্দার। বাবার খুব ভক্ত। বাবায় (শেখ মুজিব) মরার পরে উনি শোকে পাগল হইয়া যায়। পাগল অবস্থায় দু-তিন বছর ছিল। এরপরই মারা গেছে। বাবার জন্য পাগল এরকম কিছু লোক নিয়া ঘাগোর থেকে কোটালীপাড়ায় যাইতাম মিটিং করতে। বাবায় যতডা মিটিং করছেন, একটা মিটিংয়েও আমি বাদ নাই। প্রত্যেকটা মিটিংয়ে থাকতাম। আব্বা কিছু কইত না। উনিও মুজিবের পক্ষে। মাইনষের কাছে কইত, ‘শেখ মুজিব যদি আইসে তয় আমার আলিউজ্জামান সেখানে আছেই। ও কেমবায় জানে আল্লাহই জানে।’ আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া আছিল না। ওটাই ছিল আমার রাজনীতি।’

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই আনসার ট্রেনিং নেন আলিউজ্জামান। তিনি একদিন ডেকে তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, ‘বাবারে তোমরা আমার যে যে আছো আনসার ট্রেনিংয়ে যাও। এই দেশে বাঁচতে হলে আনসার ট্রেনিংয়ের প্রয়োজন আছে।’

আলিউজ্জামানের ওই আনসার ট্রেনিংই কাজে লাগে একাত্তরে। ঘাগোরে এক অপারেশনে পাকিস্তানি সেনাদের ছোড়া গুলিতে তিনি রক্তাক্ত হন। গুলিটি তাঁর ঘাড় দিয়ে ঢুকে ডান চোখের রগ ছিঁড়ে দুটি দাঁত ও চোয়াল ভেঙে বেরিয়ে যায়। ফলে ডান চোখটি সারাজীবনের জন্য কর্মক্ষমতা হারায়।

স্বাধীনতা লাভের পর ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলিউজ্জামান এসেছিলেন 888sport appয়, বঙ্গবন্ধুর কাছে। তখনো তাঁর মুখ ফোলা। এক চোখ নষ্ট। চেনার উপায় নেই। সহযোদ্ধারা তাঁকে সামনে রেখে বলে, ‘নেতা দেখেন, গুলি কোথা দিয়ে ঢুকে কোথা দিয়ে বের হইছে।’ বঙ্গবন্ধু তাঁর সামনে যান। চিনে ফেলেন তাঁকে। চোখের জলে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘ধরালের আলিউজ্জামান না তুই।’

একটা ভিজিটিং কার্ড হাতে দিয়ে বলেছিলেন, ‘মনা, এই কার্ড কেউ পায় নাই। তুই কোটালীপাড়ায় আগে পাইছস। পরে দেখা করিস।’ নানা কষ্টে পরিবার চললেও বাবার (শেখ মুজিব) কাছে আর যাওয়া হয় না আলিউজ্জামানের। কেটে যায় কয়েক বছর। একবার নায়েক আর আজিজুলের সঙ্গে দিনক্ষণ ঠিক করেন। ওই কার্ড নিয়া দেখা করবেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। কিন্তু আগের দিন বিকেলবেলায় রাজাকার মকবুল আসে বাড়িতে। তামাশা করে বলে, ‘তোমাগো মুজিব, ফুট্টুস।’ শুনে আলিমুজ্জামান মুষড়ে পড়েন। প্রতিবাদ করে বলেন, ‘তুমি অন্য শেখ মুজিবের কথা শুনছো। আমার বাবায় মরে নাই।’ উনি দৌড়ে যান আজিজের বাড়িতে। গিয়ে দেখেন তিনিও কাঁদছেন। পরে নায়েকের বাড়িতে গিয়েই আলিউজ্জামান বাবার জন্য বেহুঁশ হয়ে পড়েন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আলিউজ্জামান বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন, পেয়েছেন তাঁর সান্নিধ্য। বঙ্গবন্ধুর আলিঙ্গন, তাঁর দেওয়া ভাষণ, তাঁর নির্দেশনা ও স্বপ্নগুলিই আলিউজ্জামানের মতো মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আজো অনিবার্য প্রেরণা হয়ে আছে।

মুক্তিযোদ্ধার চোখে কেমন ছিলেন বঙ্গবন্ধু? তাঁদের কাছে কতটা অনিবার্য ছিলেন তিনি? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আলিউজ্জামানসহ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার মুখোমুখি হই। বঙ্গবন্ধুর কথা 888sport app download for android করে যাঁরা আজো আন্দোলিত ও উদ্দীপ্ত হন।

টাঙ্গাইলের কালীহাতি উপজেলার যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আশরাফ হুমায়ুন বাঙ্গাল। একটি অজানা ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১৯৭০-এর নির্বাচনের পরের ঘটনা। মিছিল-মিটিং করাও তখন কঠিন ছিল। আমি টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক, সেক্রেটারি কাদের সিদ্দিকী। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েই একদিন মিটিং করলাম, কালীহাতির চারণ এলাকায়। মিছিল বের হলে তাতে যোগ দেয় শত শত লোক। এরপর একদিন কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে যাই 888sport appয়। দেখা করি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে, ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরের বাড়িতে। নেতার সঙ্গে ওটাই প্রথম দেখা। মিটিং-মিছিল করার ঘটনা শুনে খুব খুশি হন। বসা ছিলেন। উঠে এসে আমাদের সামনে দাঁড়ালেন। অতঃপর হাত দিয়ে বুকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বললেন, ‘সাবাস বাঙ্গাল।’ বলেই বুকে জড়িয়ে ধরলেন। কী যে ভালো লেগেছিল ওইদিন। নেতার সংস্পর্শে সাহস একশগুণ বেড়ে গিয়েছিল। ওই 888sport sign up bonusটা এখনো ভাবলে চোখ দুটো ভিজে যায়। আমার নাম ছিল কাজী আশরাফ হুমায়ুন। এরপর থেকেই নামের শেষে ‘বাঙ্গাল’ শব্দটা লাগাই। নাম হয় ‘কাজী আশরাফ হুমায়ুন বাঙ্গাল।’ এখন ‘বাঙ্গাল’ বললেই সবাই একনামে চেনে। বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার বাসনাতেই একাত্তরে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। তাই আজো শেখ মুজিব আমাদের হৃদয়ে লেখা একটি নাম।’

কুষ্টিয়ার এক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে 888sport sign up bonusময় ছবিগুলি এখনো আগলে রেখেছেন। তাঁর নাম সোহরাব গণি দুলাল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার দিনটি আজো তাঁর কাছে 888sport app download for androidীয় হয়ে আছে। তাঁর ভাষায়, ‘তৎকালীন খাদ্য প্রতিমন্ত্রী ও কুষ্টিয়া সদরের এমপি ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম আমাদের কয়েকজনকে নিয়ে যান বঙ্গবন্ধুর কাছে। তিনি তখন বসতেন রমনা পার্কের উল্টো পাশে, সুগন্ধায়। তাঁর স্পর্শ পাওয়ার ইচ্ছায় ছবি তোলার সময় আমি বঙ্গবন্ধুর পায়ের কাছে গিয়ে বসি। ব্যাপারটা বুঝতে পারলেন তিনি। দুই হাতে ঘাড় স্পর্শ করে বললেন, ‘এই তোর নাম কিরে?’ উত্তরে বলি, ‘আমার নাম সোহরাব গণি দুলাল।’ শুনেই তিনি আমার ঘাড়ে আবার থাবা দিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, ‘ও তুই আলালের ঘরের দুলাল।’ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এই 888sport sign up bonusটা থাকবে। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর মা ভয়ে তাঁর সঙ্গে আমার ছবিগুলি বালিশের ভেতর লুকিয়ে রাখতেন। তখন তো বঙ্গবন্ধুর কথা মুখেই আনা যেত না। প্রকাশ্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতে ও ‘জয় বাংলা’ বলতে পারিনি আমরা। বঙ্গবন্ধু মহাচুম্বক। উনার সংস্পর্শে একবার যদি কেউ এসেছে, সে তাঁকে কখনো ভুলবে না। আমাদের কাছে বঙ্গবন্ধু ও 888sport apps দুটো অবিচ্ছেদ্য নাম। এটা ভাগ করা যাবে না। এত বড় মেহনতি মানুষের নেতা আর আসবে না। আন কম্প্যায়েরেবল, আন প্যারালাল লিডার। বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুই।’

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নিজের জীবনের ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা তুলে ধরেন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এ জেড এম আমিনুল ইসলাম চৌধুরী। তাঁর ভাষায়, ‘১৯৬০ সাল। ম্যাট্রিক পাশ করে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হই সিরাজগঞ্জ বিএ কলেজে। এরপর ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। তখন সিরাজগঞ্জ মহকুমার সেক্রেটারি নির্বাচিত হই। প্রেসিডেন্ট ছিলেন আমির হোসেন ভুলু। সেন্ট্রালে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন তখন প্রেসিডেন্ট আর শেখ ফজলুল হক মনি সেক্রেটারি।

সিরাজগঞ্জে ছাত্রদের সংগঠিত করে শিক্ষা কমিশন ও আইয়ুববিরোধী তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলতে থাকি আমরা। এ অপরাধে আবুল কাশেম নুরে এলাহীসহ আমাদের আটজনকে কলেজ থেকে বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। ছাত্ররা তখন ফুঁসে ওঠে। প্রিন্সিপালকে রুমে আটকেও রেখেছিল তারা। প্রতিবাদে সিরাজগঞ্জ বিএ কলেজে ক্লাস বন্ধ ছিল দুই মাস।

ছাত্রত্ব হারিয়ে খুব ঘাবড়ে যাই। কী করব ঠিক বুঝতে পারি না! ওই সময়ই দেখা করি মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে।

কীভাবে?

ছাত্রত্ব বাতিল হওয়ার পর অনেকেই বললেন 888sport appয় গিয়ে রিট পিটিশন করতে। কিন্তু কার কাছে যাবো?  আব্দুল রাজ্জাক ভাই তখন ছাত্রলীগের নেতা। তিনিই নিয়ে যান মুজিব ভাইয়ের কাছে। আমরা তাঁকে পা ছুঁয়ে সালাম করলাম। আমাদের বিমর্ষ মুখগুলির দিকে তাকিয়েই তিনি ঘটনা আঁচ করতে পারলেন, বললেন, ‘বুঝতে পারছি তোরা কী জন্য আইছোস।’

সব শুনে উনি দু-আঙুলে আমার গালে চিমটি কেটে বললেন, ‘ভয় পাইছিস? কিচ্ছু হবে না রে। আমি তো আছি। এদেশে একদিন না একদিন তোরাই হবি রাজা।’

‘আল্লাহ-প্রদত্ত একটা শক্তি ছিল তাঁর মধ্যে। প্রথম দেখায় তাঁকে সত্যিকারের নেতাই মনে হয়েছে। যেন আমাদের কত আপন মানুষ। তাঁর কথা ও উৎসাহে নিমিষেই সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে অন্যরকম শক্তির সঞ্চার হয় মনে। একশ টাকার নোট হাতে দিয়ে শেখ মুজিব বললেন, ‘এস আর পালের (সবিতারঞ্জন পাল) কাছে যা। উনিই তোদের রিট দাখিল করে দিবেন।’

‘সেটাই হলো। ওই রিট পিটিশনের কারণেই ১৯৬৪ সালে হাইকোর্টের রায়ে আবার ছাত্রত্ব ফিরে পাই। এরপর সকল আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। দেশ স্বাধীন হলে সাধারণ মানুষ চোখের জলে মুক্তিযোদ্ধাদের বুকে জড়িয়ে ধরে। তখন নিজেকে রাজাই মনে হয়েছিল। মনে পড়েছে বঙ্গবন্ধুর কথাটাও। তাঁর ওই কথাগুলোই সত্য হয়েছিল। স্বাধীন দেশে সত্যিই আমরা রাজা হয়েছিলাম।’

888sport appর গেরিলা বীরপ্রতীক শেখ আব্দুল মান্নান পড়তেন শাহীন স্কুলে। তিনি ছিলেন শেখ কামালের বন্ধু। সে সুবাদেই যাতায়াত ছিল বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে। কেমন দেখেছেন জাতির পিতাকে? তাঁর ভাষায়, ‘শেখ মুজিবের 888sport app download for androidশক্তি ছিল অন্যরকম। একদিন দেখলাম আওয়ামী লীগের লোকজন এসেছেন কোনো এক জেলা থেকে। উনি পাইপ টানতে টানতে হঠাৎ বলেন, ‘ওই, তুই করিম না? তোর বাড়ি পঞ্চগড় না।’ আমি ভাবি, এতো লোকের মাঝে উনি নাম মনে রাখলেন কীভাবে! কাউকে আবার কাছে ডেকে নিয়ে পকেটে গুঁজে দিচ্ছেন কিছু টাকা। গ্রামগঞ্জ থেকে যেই আসতেন লিডারের সঙ্গে দেখা করে যেতেন। মুজিবের কাছে যেতে তাদের ভয় হতো না। শেখ মুজিবের মতো সাধারণ মানুষ আর অসাধারণ 888sport app download for androidশক্তি এতো বছরে আর একজনের মধ্যেও পাইনি।’

কথা হয় সিলেটের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মির্জা জামাল পাশার সঙ্গে। তাঁর মনে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটির নানা ভাবনা তৈরি করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। কীভাবে? তাঁর ভাষায়, ‘৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে নেতাদের সঙ্গে চলে যাই 888sport appয়। খুব কাছ থেকে প্রথম দেখি বঙ্গবন্ধুকে। উনি মঞ্চে উঠলেন। মূর্তির মতো দেখেছি তাঁকে। যেন আমার অনেক আপন! তিনি বললেন, ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে …।’ মনের মধ্যে প্রশ্ন, শত্রু কে? তিনি পাকিস্তানি আর্মিদের উদ্দেশে বললেন, ‘তোমরা ব্যারাকে থাকো … গুলি চালাবার চেষ্টা কোরো না …।’ পরিষ্কার হয়ে গেলাম শত্রু আসলে কারা। শেষে বললেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ মাথায় তখনই ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি গেঁথে গেছে। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘মুক্তির সংগ্রাম’। আমার ভেতর তখন ‘মুক্তি’ আর ‘স্বাধীনতা’ শব্দ দুটি খেলা করতে থাকে।’

বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর সেনাবাহিনীর ভেতরের অবস্থা উঠে আসে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সার্জেন্ট মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফার কথায়। তাঁর ভাষায়, ‘আমি তখন যশোর ক্যান্টনমেন্টে, হাবিলদার ছিলাম। বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর শুনেই রায়হান ও সুবেদার জনাব আলীসহ বেশ কয়েকজন 888sport appর দিকে আসার প্রস্তুতি নিই। কিন্তু ব্যারাক থেকেই আমাদের থামিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর ডাকেই মুক্তিযুদ্ধ করেছি। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের হত্যার নজির ইতিহাসে আছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর পরিবারের নিরীহ, নিরপরাধ ব্যক্তিদের হত্যার নজির পৃথিবীতে নেই। বঙ্গবন্ধুকে আমরা স্বাধীন দেশে বাঁচাতে পারিনি, এর চেয়ে দুঃখের আর অপমানের কী আছে! বঙ্গবন্ধুকে নয়, ওরা হত্যা করেছিল মানবতা আর গণতন্ত্রকেও। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আদর্শের তো মৃত্যু নেই।’

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কথা হয় দুই নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. আবুল হোসেনের সঙ্গেও। সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেওয়াসহ দুই নম্বর সেক্টরের নির্ভয়পুর সাব-সেক্টরে এফএফদের (ফ্রিডম ফাইটার) পরিচালনায় বিশেষ দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ তিনি নোয়াখালি 888sport apk ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

নেতাকে প্রথম দেখার 888sport sign up bonus আজো তাঁকে আন্দোলিত করে। তাঁর ভাষায়, ‘১৯৬৬ সালের ঘটনা। খবর পাই শেখ মুজিব চৌমুহনী হয়ে সামনের রাস্তা দিয়েই যাবেন রায়পুরে। আমরা ভাইয়েরা মিলে তখন কাগজ আর বাঁশ দিয়ে নৌকা বানাই। ওইসময় সেটা টাঙাচ্ছি বাড়ির সামনের রাস্তায়। হঠাৎ গাড়ির শব্দ। দেখলাম কচ্ছপের মতো একটা গাড়ি আসছে। ওই গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে আসেন শেখ মুজিবুর রহমান। ছয় ফুটের ওপর লম্বা, ফর্সা একটা মানুষ। ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি পরা, কালো একটা কোটও জড়ানো। ভাবছি, এত লম্বা একটা লোক এই কচ্ছপের মতো ছোট্ট গাড়িতে কীভাবে ছিলেন? উনি এসে বানানো নৌকাটি দেখলেন। এরপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কথা বললেন একান্তভাবে। ওই স্পর্শ ও দৃশ্যটা মনে গেঁথে গেছে। গাছ থেকে ডাব পেড়ে আনা হলো। কিন্তু সেটা দেওয়ার জন্য গ্লাস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শেখ মুজিব ডাবটি মুখে নিয়েই পানি খেতে থাকলেন। ফোঁটা ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে তাঁর শরীরে। এখনো সে 888sport sign up bonus দারুণভাবে মনে হয়।’

মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা ছিলেন বঙ্গবন্ধু – এমনটাই মনে করেন এই বীর যোদ্ধা। অকপটে বলেন, ‘আমরা শুরু করেছিলাম শূন্য হাতে। ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শক্রর মোকাবিলা করতে হবে …।’ তাঁর ওই নির্দেশেই পিটি-প্যারেড আর বাঁশের লাঠি দিয়ে যুদ্ধ শুরু করে এ-জাতি। থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে তো এলএমজির সামনে দাঁড়ানো যায় না। কিন্তু তবুও বুকভরা সাহস আর মনোবল ঠিক রেখে বাঙালি দাঁড়িয়েছিল। তাই বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা একই অর্থে বহমান।’

স্বাধীনতা লাভের পর প্রিয় নেতা ও জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ পৃথিবীব্যাপী আমাদের যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে আমরা নিজেদেরই নিচে নামিয়ে এনেছিলাম। একবার জাপানে গিয়েছি। ওরা বলেছিল, ‘কেমন জাতি তোমরা? যাকে জাতির পিতা করেছ, সেই পিতাকেই তোমরা মেরে ফেললে’।’

এই হত্যাকাণ্ড শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য নয়। একাত্তরের পরাজিত শক্তির প্রতিশোধের অংশও ছিল। যেখানে অংশ নিয়েছিল সেনাবাহিনীর কিছু কুলাঙ্গার। বঙ্গবন্ধু দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও তিন প্রজন্ম নিয়ে নিজের বাড়িতেই ছিলেন। সাধারণ মানুষের আসার কথা চিন্তা করে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাও নেননি। সবাইকে উনি নিজের লোক মনে করতেন। বাঙালিদের কেউ তাঁকে মারবে – এটা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। একটি বিশ^াসের অপমৃত্যু ঘটে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট।

বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য, তাঁর দেওয়া ভাষণ, তাঁর নির্দেশনা ও স্বপ্নগুলিই মুক্তিযোদ্ধাসহ সবার কাছে আজো প্রেরণা হয়ে আছে। বঙ্গবন্ধুর সারাজীবনের লড়াই ছিল বাঙালি জাতির শোষণমুক্তির মধ্য দিয়ে সোনার বাংলা গড়ে তোলা। বাঙালি জাতিকে তিনি কেবল একটি ভূখণ্ডই দেননি, দিয়েছেন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তি। দিয়েছেন অসাম্প্রদায়িক মানবিক চেতনায় উজ্জ্বল জীবনাদর্শ। তাঁর সবকিছুই বাঙালির ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই সব কালেই অনিবার্য হয়ে থাকবেন শেখ মুজিব।