সমরেশ মজুমদার
আজ দুপুরে 888sport appয় এসেছি। প্রতিবারের মতো 888sport app ক্লাবে স্থিতু হয়ে মুঠোযন্ত্রটা তুলে নাম্বার টিপতে গিয়েই শক্ত হলাম। না। এই নাম্বার টিপলে মুঠোযন্ত্র আমাকে সেইখানে কথা বলাতে পারবে না যেখানে হুমায়ূন আহমেদ এখন থাকতে পারেন। সাতাশি সালে পরিচয়। ঘনিষ্ঠতা বিরানব্বই থেকে। এর মধ্যে যতবার এসেছি, এসেই ফোন করেছি। সে উচ্ছ্বসিত গলায় বলেছে, ‘আরে সমরেশদা, কখন আসবেন আমার বাসায়? কোনো কথা শুনতে চাই না, গাড়ি না থাকলে বলুন, পাঠাচ্ছি।’
আমি পশ্চিমবাংলার সেইসব লেখকের একজন যাঁরা পাঠকদের কিছুটা ভালোবাসা পেয়েছেন। আমার পূর্বলেখকরা ছিলেন চাকরিজীবী অথবা পেশায় ডাক্তার, উকিল, বিচারক। কেউ কেউ অধ্যাপক অথবা জমিদার। একমাত্র সমরেশ বসুই চেষ্টা করেছেন লেখার টাকায় জীবনযাপন করতে। তিনি ব্যতিক্রম। পাঠকের ভালোবাসা পাওয়া মানে যে প্রকাশকদের কাছ থেকে ঠিকঠাক সম্মানদক্ষিণা পাওয়া তা ভাবা ভুল হবে। তাছাড়া কলকাতায় কোনো বই বছরে পাঁচ হাজার বিক্রি হলে তার লেখককে জনপ্রিয় লেখক বলা হয়ে থাকে। আজ থেকে ছাব্বিশ বছর আগে যখন আমি স্থির করেছিলাম, চাকরি না করে লেখার ওপর নির্ভর করে বাঁচার চেষ্টা করব তখন অনেকেই আতঙ্কিত হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ অবধি ঠিকঠাক বেঁচে আছি। এই পরিপ্রেক্ষিতে হুমায়ূন অবশ্যই বিপ্লব করে গেছে। তার আগে পূর্ববাংলা বা 888sport appsের লেখকরা লেখা থেকে জীবনযাপনের কথা ভাবতে পারতেন না, যা পশ্চিমবাংলাতেও ভাবা সম্ভব ছিল না।
হুমায়ূন এসে এসব ভাবনাগুলোকে ভেঙে চুরমার করে দিলো কী করে? এসব নিয়ে গবেষকরা নিশ্চয়ই গবেষণা করবেন। সাতাশি সালে বাংলা একাডেমীর মেলায় আমি একজন শীর্ণ চেহারার মানুষকে দেখেছিলাম, যার পরনে পাজামা-পাঞ্জাবি এবং ব্যবহার ও কথায় বিনয় শব্দটি খোদাই করা ছিল। তখনো সে অধ্যাপনা করে। তখন শঙ্খনীল কারাগার, বহুব্রীহি বেরিয়ে গেছে। এইসব দিনরাত্রি চলছে। সেই মেলায়, মনে আছে, পাঠক ঘিরে ধরে তার কাছে সই আদায় করেনি।
বিরানব্বইতে এসে দেখলাম অবস্থা বদলে গেছে। বইমেলায় সে বসলে হাজার লোকের লাইন পড়ে নতুন বই কিনে তাতে সই করিয়ে নিতে। দেখলাম বইগুলোর আয়তন কমেছে। ছিয়ানব্বই পাতায় 888sport alternative link, কোনোটা ষাট পাতায়। কী আছে ওর মধ্যে, যার জন্যে এতো লাইন? জানলাম, একা হুমায়ূনের বই যা বিক্রি হয়, বাকি লেখকদের বই বিক্রির 888sport free bet তার ধারেকাছে পৌঁছায় না। হুমায়ূনবিরোধীরা জানালেন, ‘কিশোরদের মনে যে রোমান্টিক ভাবনা জন্ম নিয়েছে হুমায়ূন তাতে সুড়সুড়ি দেয় বলে বিক্রি হয় বইগুলো।’
কিন্তু ওই সুড়সুড়ি দেওয়ার কায়দাটা আর কেউ রপ্ত করতে পারলেন না কেন? হুমায়ূনের এলিফ্যান্ট রোডের ফ্ল্যাটে প্রায়ই নেমন্তন্ন থাকত। ওর স্ত্রী গুলতেকিন চমৎকার রাঁধতেন। কথাপ্রসঙ্গে ব্যাপারটা বলতেই হুমায়ূন খুব লজ্জা পেয়ে বলল, ‘লোকে গল্প পড়তে পছন্দ করে, আমি সেটা লিখতে চেষ্টা করি। ওঁরা যা বলছেন তা যদি ঠিক হয় ষোলোতে পড়া শুরু করে পঁচিশের পর তো আর পড়া উচিত নয় আমার লেখা।’
‘কী রকম?’
‘পঁচিশে পা দিলে বাঙালি আর রোমান্টিক থাকে না। সুড়সুড়ি দেবো কাকে?’ হুমায়ূন হেসেছিল।
সখ্য বেড়েছিল। ওর খুব ইচ্ছে ছিল কলকাতার দেশ পত্রিকায় 888sport alternative link লেখার। 888sport appর তুলনায় কম টাকা পাবে জেনেও ইচ্ছের কথা বলত আমাকে, ‘ছেলেবেলা থেকে যাঁদের লেখা পড়ে বড় হয়েছি, তাঁরা ওই কাগজে লিখতেন। সেখানে লেখার সুযোগ পেলে ধন্য বোধ করব।’ হ্যাঁ, দেশ ওকে লিখতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। পরপর কয়েকটা 888sport alternative link সে লিখেছে সেখানে।
888sport appsের পাঠকরা যখন ঠিকঠাক গল্প-888sport alternative link পেতেন না, তখন হুমায়ূন সেই অভাব দূর করেছিল। রবীন্দ্রনাথে নিবেদিতপ্রাণ এই মানুষটির লেখায় ভালোবাসা জড়ানো ছিল। ওর ‘মিসির আলী’ আমার মতে অনবদ্য সৃষ্টি। হুমায়ূন চলে যাওয়ার পর আবার বিশাল শূন্যতা তৈরি হয়ে গেল।
শরীরের মৃত্যু হবেই। তবে কেউ কেউ বহুকাল, বহুযুগ বেঁচে থাকেন তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে। ব্যতিক্রমী কেউ কেউ। তাঁদের একজন হুমায়ূন আহমেদ।
খ
হুমায়ূনের সঙ্গে দেখা হতো খুব কম। যখন 888sport appয় আসি অথবা বিদেশে একসঙ্গে গেলে। কলকাতায় বোধহয় একবারই। কিন্তু এই সময়ের ব্যবধান অথবা কলকাতা আর 888sport appর দূরত্ব আমাদের সখ্যে চির ধরায়নি। লক্ষ করেছি হুমায়ূন ওর বাবার সম্পর্কে খুব দুর্বল ছিল। কথা উঠলেই সে কেমন ভাবপ্রবণ হয়ে উঠত। বাবাকে নিয়ে অনবদ্য গল্প লিখেছে এবং তা কলকাতার এক গল্পপাঠের আসরে পড়ে শুনিয়েছিল। এই প্রসঙ্গে একটি কথা মনে পড়ছে। ও বলত, আমরা পরিবারের বাইরে গিয়ে যদি বাঁচতে চাই তাহলে কতদিন সুখে থাকতে পারব বলুন তো। আমাদের শেকড় তো সেখানেই।
সেবার আমার 888sport alternative link এতরঙ কেন নিয়ে তদানীন্তন 888sport appsের সরকার কেন জানি না বিরক্ত হয়েছিল আমার ওপর। ওই 888sport alternative linkের পটভূমিকা ছিল আগরতলা এবং সেখানে তখন উগ্রপন্থীদের কার্যকলাপ তীব্র ছিল। তারা ধনী মানুষদের কিডন্যাপ করে 888sport appsের ভেতরে নিয়ে গিয়ে চাপ দিয়ে টাকা আদায় করত। বলাবাহুল্য তাদের দমন করতে 888sport apps পুলিশ উদ্যোগী ছিল না। এটা খুবই সত্যিকথা কিন্তু 888sport apps সরকার তা মেনে নিতে চাইছিল না। এই সময় হুমায়ূন আমাকে 888sport appsে আমন্ত্রণ করল একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্যে। কিছুটা তালবাহানার পর ভিসা পেলাম। কিন্তু 888sport app এয়ারপোর্ট পৌঁছানোমাত্র আমাকে জানানো হলো, আমি শহরে যেতে পারব না। তবে হুমায়ূন আমাকে রিসিভ করতে এসেছে। পুলিশ আমাকে তুলে দিলো তার হাতে। সে আমাকে সরাসরি নিয়ে গেল নুহাশপল্লীতে। শহর থেকে অনেকদূরে। সেখানে চমৎকার কেটেছিল দিন। সকালে ওর প্রিয় জায়গায় আড্ডা মারতাম। চারপাশে গাছপালা। হুমায়ূন বলেছিল, ‘সমরেশদা, এই মাটিতে আমি কখনই কোনো মানুষের লাশ খেতে দেব না।’ বলেছিলাম, ‘লাশ তো খায় কেঁচো এবং পোকায়।’ সে হেসে বলেছিল, ‘ওরা মানুষ নয়, প্রকৃতি। প্রকৃতির জায়গা তো প্রকৃতিতে হবে।’ সেবার সরকারি শাসন থেকে হুমায়ূন আমাকে আগলে রেখেছিল। আমি ফিরে গিয়েছিলাম কলকাতায়। তারপরই আমাকে জানানো হলো আর 888sport appsে যাওয়ার জন্যে আমাকে ভিসা দেওয়া হবে না। হুমায়ূন সেকথা শুনে ফোন করেছিল, ‘সমরেশদা আমি লজ্জিত। ক্ষমাপ্রার্থী।’
তাঁর কয়েকবছর পরে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে ওই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে হুমায়ূন ফোন করল, ‘কবে আসছেন?’
একটা কথা। হুমায়ূন বেশিদিন একই ভাবনায় স্থির থাকতে পারত না। প্রায়ই দুর্বল হয়ে যেত। মত পালটাতো। তাই নিউইয়র্কের হাসপাতালে শুয়ে তার স্ত্রীকে বলেছিল নুহাশপল্লীর ওই গাছের তলায় কবর দিতে। আমি ওর এই ইচ্ছাটাকে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করি না। যে-মানুষটি ওর মানিব্যাগ নিউইয়র্কের হোটেলে চুরি করেছিল, তার সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেও বছর দেড়েক পরে আবার কাছে ডেকে নিয়েছিল। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘এটা কী করলে?’ হেসে বলেছিল, ‘ওর সঙ্গে একসময় ভালো কাটিয়েছি। কদিন আর পৃথিবীতে আছি, খারাপ ব্যাপার মনে রেখে কী হবে!’ অর্থাৎ ও মত বদলাতে পারত।
আমি জানি, হুমায়ূনের মুখেও শুনেছি, 888sport appর কিছু লেখক পছন্দ করেন না এখানকার পাঠক আমাদের বই পড়–ক। হুমায়ূন এতে খুব বিরক্ত হতো। তাঁর মতে, ভালো লেখা পড়া থেকে পাঠকদের বঞ্চিত করার অধিকার কারো নেই।
স্বীকার করতে লজ্জা নেই 888sport appsের স্বাধীনতার পর থেকে এই দুহাজার বারো পর্যন্ত বাংলা888sport live footballের এই বাদশা যেভাবে পাঠক তৈরি করে গেছে তা না করলে আমাদের লেখা পড়ার কোনো পাঠক এখানে পাওয়া যেত না। হুমায়ূন আমাদের পায়ের তলায় মাটি এনে দিয়েছিল।
গত বছর এক গভীর রাত্রে আমি আর সে যখন একা তখন আবেগে আক্রান্ত হয়েছিল। নিজের কৃতকর্মের কিছু অংশের জন্যে তাঁর মনে যে অনুশোচনা এসেছিল তা বোঝাতে চাইছিল। বলেছিলাম, ‘যা ভাবছ তা লিখছ না কেন?’
সে বলেছিল, ‘ভয় লাগে। আমার নায়করা যেমন রাজনীতি নিয়ে কথা বলে না, সে যখন রাস্তায় হাঁটে তখন তা এরশাদ-বেগম জিয়া বা শেখ হাসিনার আমল তা বোঝাতে পারি না যে ভয়ে, সেই ভয়টাই অন্যরকম হয়ে আসে দাদা।’
কথাগুলো মনে পড়ছে আজ। রবীন্দ্রনাথ শরৎচন্দ্রের চেয়ে যার বই সবচেয়ে বেশি প্রকাশমাত্র বিক্রি হয়ে যেত তার তো কিছু অতৃপ্তি থাকবেই। ছিল বলেই সে লেখক।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.