ইকবাল আজিজ
এখন এই বৃদ্ধ বয়সে অধ্যাপক মাসুদ যে-শহরে এসেছেন, সেখানে তাঁর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। এ-শহরের পুরনো নড়বড়ে বাড়িঘর, আঁকাবাঁকা রাস্তা, গলি, স্টেশন, সদর হাসপাতাল, সিনেমাহল, সোনাদীঘির মোড় – এসব স্থির হয়ে আছে তার মনে সেই কবে থেকে। তবে শহরের সমাজজীবনের বাইরের দিকটা অনেক বদলে গেছে। শৈশবে তিনি এ-শহরে যে-লোকটিকে দেখেছিলেন ঘোড়ার গাড়ি টমটম চালাতে – যা চলতো টগবগ করে পুরনো পথের ধুলো উড়িয়ে, সেই সেলিম গারোয়ানের ছেলে তাঁর বাল্যবন্ধু মজিদ এখন প্রায় বিশ-পঁচিশটি বাসের মালিক এবং এখানকার অন্যতম বিত্তবান ব্যক্তি; কয়েকটি আন্তঃনগর রুটে তার বাস চলে নিয়মিত প্রতিদিন। শৈশবে মজিদ ছিল শহরের লোকনাথ হাইস্কুলে মাসুদের সহপাঠী এবং তার সঙ্গে মাসুদের এখনো নিয়মিত যোগাযোগ আছে। রাজশাহী শহরের সাজসজ্জায় পরিবর্তন হয়েছে, সেদিনের সেই গেঁয়ো শ্যামলা কিশোরী যেন যুবতী হয়ে স্কার্ট পরে হেঁটে বেড়ায়। কিন্তু শহরের ভেতরটা এখনো তেমনি আছে; সেই অলকা সিনেমাহল, রানীবাজার মোড়, সাহেববাজার আর লালকুঠি নামের প্রাচীন বাড়িটির পাশ দিয়ে সরু রাস্তা দিয়ে পদ্মা নদীর ধারে যাওয়া। এসব যেন মাসুদের শৈশব-কৈশোরের 888sport sign up bonusর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই যে-কেউ তাঁকে রাজশাহী শহরের কথা বললে তাঁর বুকের ভেতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠে; কোথাকার এক বুলবুলি পাখি যেন বাস্তবিকই ঝরা বনপাতার বিলাপের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গান গায়।
একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সমাজতাত্ত্বিক হিসেবে অধ্যাপক মাসুদ আহমদের এখন সারাদেশে খ্যাতি, প্রায়ই তাঁকে দেশের বাইরে কিংবা ভেতরে নানান জায়গায় সেমিনারে অংশ নিতে বা বক্তৃতা দিতে যেতে হয়। তিনি ‘888sport appsের অর্থনীতি ও 888sport promo codeর ক্ষমতায়ন’ শিরোনামে এক সেমিনারে অংশ নেওয়ার জন্য এ-শহরে এসেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের একটি সংগঠন এ-সেমিনারের আয়োজন করেছিল। ভার্সিটির মিলনায়তনে সেমিনার শেষ হয়েছে দুদিন আগে। সেমিনারের উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এবং কাউকে না জানিয়ে অধ্যাপক মাসুদ চলে এসেছেন রাজশাহী স্টেশনের কাছে মাঝারি মানের এক হোটেলে। তাঁর ইচ্ছা, এই হোটেলে এক সপ্তাহ থেকে তিনি চুপিসারে তাঁর শৈশব-কৈশোরের পুরনো শহরটিকে দেখবেন এবং রাজধানীর বাইরে একান্ত নির্জনে স্বস্তির সঙ্গে কিছুটা চিন্তা করার সুযোগ পাবেন। রাজধানীতে তাঁকে মূলত বিভিন্ন সভা-সমিতির সভাপতি কিংবা প্রধান অতিথি হিসেবে অত্যন্ত কর্মব্যস্ত জীবনযাপন করতে হয়।
মাসুদ খুব সচেতনভাবে টেলিভিশন সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলেন, সাধারণ মানুষ তাঁর চেহারা চেনে না বললেই চলে। তাই রাজশাহীর শিরোইল স্টেশনের কাছে হোটেল গুলশানে একটি সিঙ্গেল রুমে অবস্থান করে তিনি যেন একরাশ সুখ ও প্রশান্তি খুঁজে পেয়েছেন। দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে স্টেশনের মানুষ দেখা যায়, সেইসঙ্গে দেখা যায় স্টেশন থেকে ধীরে ধীরে ট্রেন চলে যাচ্ছে দূরে, বহুদূরে। এই ট্রেন যাবে কোথায়? হয়তো পার্বতীপুর, খুলনা, 888sport app কিংবা গোয়ালন্দ। হোটেলের পেছনের বারান্দায় এসে দাঁড়ালে দেখা যায়, কিছু একতলা ও দোতলা বাড়ি। কোনো বাড়িতে টিনের চাল, বাড়ির পাশে ছোট মাঠ। এছাড়া আছে একটি পুকুর। প্রায়ই দেখা যায় পুকুরে কয়েকটি সাদা রঙের হাঁস সাঁতার কাটছে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর মাসুদ তাঁর এক ভাগ্নি ও ভাগ্নিজামাইয়ের সঙ্গে থাকেন সেগুনবাগিচার একটি ফ্ল্যাটে। অধ্যাপক মাসুদ এই ফ্ল্যাটের মালিক। তাঁর নিজের কোনো সন্তান নেই, তিনি ভাগ্নি ও ভাগ্নিজামাইকে ফ্ল্যাটের একটি ঘর ছেড়ে দিয়েছেন থাকার জন্য; বিনিময়ে তাঁকে দেখাশোনা করা ও থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে। বাস্তবিকই অধ্যাপক মাসুদ আহমেদ দেশের সামাজিক পরিবর্তনের আন্দোলনে ও সেইসঙ্গে আর্তমানবতার মুক্তির সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।
মাসুদের স্ত্রী লায়লা মাসুদ ছিলেন অধ্যাপিকা ও বিশিষ্ট সমাজসেবিকা। চার বছর আগে একরাতে তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন। তারপর থেকে ভাগ্নি ও ভাগ্নিজামাইয়ের সঙ্গে মাসুদের এই চমৎকার সহাবস্থান। লায়লার 888sport sign up bonus ও দেশের মানুষের জন্য অফুরন্ত দায়িত্ববোধ নিয়ে তিনি বেঁচে আছেন। তিনি দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছেন, তারপর অন্য কোথাও যোগ দেননি। তাঁর মনে হয়েছে, এমন স্বাধীনতা তিনি আর কখনো পাননি, চাকরি করা একধরনের পরাধীনতা। প্রকৃত মুক্ত মানুষ কখনো চাকরি করে না। সে পাখির মতোই উড়ে বেড়ায় চেতনার এক বৃক্ষ থেকে অন্য বৃক্ষে। তখন রাশি-রাশি বোধের জন্ম হতে থাকে তাঁর দ্বন্দ্বময় চিন্তা থেকে।
মাসুদ ‘হোটেল গুলশানে’র দোতলার বারান্দা থেকে তাকিয়েছিলেন পুকুরপাড়ের দিকে; দেখলেন ঘাটে দুজন যুবতী গোসল করছে। পুকুরের ঘাটে 888sport promo codeদের গোসলের দৃশ্য রাজধানী 888sport appয় এখন রীতিমতো কল্পনার ব্যাপার। বাস্তবে তা দেখা সম্ভব নয়। একদিন 888sport app শহরে অসংখ্য পুকুর ছিল, তার প্রায় সবই বুজিয়ে ফেলে এখন বাড়িঘর তৈরি করা হয়েছে। মাসুদ নিষ্পাপ শিশুর মতো তাকিয়ে থাকলেন পুকুরঘাটের দিকে; তাঁর মনে পড়লো কৈশোরের কথা। এই শহরের দরগাপাড়ায় তাঁদের পৈতৃক বাড়ির পাশে যে-পুকুর ছিল তার ঘাটে প্রতিদিন কত পুরুষ ও 888sport promo code গোসল করতো। কৈশোরে তিনি কত দুপুরে বাড়ির জানালায় দাঁড়িয়ে দেখেছেন, স্নানশেষে ঘাটে দাঁড়িয়ে 888sport promo codeরা তাদের বসন পালটাচ্ছে। সেদিনের সেসব যুবতীর স্তন, বাহু ও নিতম্বের কিছু কিছু অংশ যেন আজো চোখে ভাসছে। কিন্তু কত সময় চলে গেছে, বাবার মৃত্যুর পরে দরগাপাড়ার সেই বাড়ি কবে বিক্রি হয়েছে, সেই পুকুর ভরাট করা হয়েছে এবং সেখানে এখন সুপার মার্কেট তৈরি হয়েছে। অধ্যাপক মাসুদের ভাইবোনদের বেশিরভাগ এখন দেশের বাইরে সুপ্রতিষ্ঠিত, কতকাল ধরে তারা প্রবাসী। মাসুদ আবার অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে এলেন, হোটেল গুলশানের পেছনের বারান্দায় তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। পুকুরঘাটে গোসল শেষে দুজন যুবতী উঠে দাঁড়িয়েছে, সারাদেহের প্রতিটি ভাঁজের সঙ্গে তাদের পরনের শাড়ি গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। মাসুদ দীর্ঘকাল পরে তাঁর শরীরের মধ্যে সহসা কেমন যেন জৈবিক তাড়না অনুভব করলেন; তিনি মোল্লা-পুরোহিতদের আনুষ্ঠানিক ধর্মকে মানেন না, বরং প্রাকৃতিক ধর্ম বা জৈবিক ধর্মকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। তাঁর মনে হলো, দীর্ঘকাল পরে এই উত্তেজিত হওয়া আসলে শরীরের জৈবিক চাহিদার বহিঃপ্রকাশ।
অধ্যাপক মাসুদ আহমেদ তাঁর হোটেলের রুমে ফিরে এলেন, জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। মনে পড়লো লায়লার কথা। ক্লাসের সহপাঠী লায়লাকে তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন, মনের ও মতের মিল ছিল যথেষ্ট। তাঁদের বিবাহিত জীবনে কোনো সন্তান হয়নি; কিন্তু তাঁরা ছিলেন খুবই সুখী, একে অন্যের মধ্যে দিয়ে জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষার অনেক অপূর্ণতাকে পূরণ করতে পেরেছিলেন।
এখন এই দুপুরে হোটেল যথেষ্ট নির্জন। তিনি এই হোটেলে দু-একজন কাজের মেয়েকে দেখেছেন, তারা হোটেলে পরিচারিকা ও ঝাড়ুদার হিসেবে কাজ করে। এরা ঘর ঝাড় দেয়, বিছানার চাদর, বালিশ ও লেপের কভার বদলিয়ে দেয়। মাসুদ তেমনই একটি মেয়েকে দেখতে পেলেন, খোলা দরোজা দিয়ে তার ঘরে এসে দাঁড়িয়েছে। মাসুদ তার শরীরের দিকে তাকিয়ে থাকলেন; যুবতী 888sport promo codeর সুগঠিত শরীর, মেয়েটির চেহারায় কোথায় যেন একটা গোপন সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। স্তন ও শরীরের চড়াই-উতরাই বাইরে থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে; মাসুদ নিজের রক্তের মধ্যে গভীর আলোড়ন অনুভব করলেন। মেয়েটি ঘর ঝাড় দিচ্ছে, মাসুদ বালিশে মাথা রেখে ঘাড় ফিরিয়ে যুবতী 888sport promo codeর হাত-পায়ের নড়াচড়া ও শরীরের আন্দোলন দেখছেন। হঠাৎ মেয়েটির সঙ্গে চোখাচোখি হলো। সে সলাজ হেসে ঘাড় ফিরিয়ে নিলো, তারপর আবার তাকালো। এবার কিছুটা দুষ্টুমিভরা দৃষ্টি; সে দেখলো, প্রবীণ এই ভদ্রলোকটি তার দিকে তাকিয়ে আছেন।
হোটেলের এই পরিচারিকার নাম মালতী। মালতী মন্ডল। বাড়ি সীমান্তের রোহনপুরে, কম বয়সে বিধবা হয়ে সে এই হোটেলে কাজ নিয়েছে। এই হোটেলটি তার জন্যে নিরাপদ আশ্রয়। মালতী দেখেছে, হোটেলে চ্যাংড়া বা যুবক অতিথিদের তুলনায় এইসব বুড়ো চাচামিয়া অনেক ভালো। এরা ভালো ব্যবহার করে আর টাকা-পয়সাও দেওয়ার সময় ভীষণ উদার। শুধু দু-একজন বুড়োর মধ্যে একটু বেশি আদেখলাপনা থাকে, শরীরের প্রতিটি ভাঁজ খুঁটে খুঁটে দেখা এদের স্বভাব; আঙুল দিয়ে বা জিভ দিয়ে শরীরের প্রতিটি অঙ্গের স্বাদ পূর্ণভাবে নিতে চায়, অনেক সময় ভাঙা দাঁতের ফাঁক দিয়ে লালা ঝরতে থাকে। এই যা অসুবিধা! এছাড়া চ্যাংড়াদের চেয়ে বুড়ো চাচামিয়ারাই ভালো। এরা আজ পর্যন্ত মালতীকে ঠকায়নি; কেউ কেউ চলে যাওয়ার সময় কাঁদো-কাঁদো স্বরে মালতীর হাত ধরে বলেছে, ‘তোকে কোনোদিন ভুলবো না মালতী। তুই সাবধানে থাকিস। তোকে আমার নিজের মেয়ের মতোই মনে হলো। আল্লাহ তোর ভালো করুক।’ বিদায়ের সময় দু-তিনশো টাকা বখশিশ দিয়ে গেছে তারা।
মালতী দেখলো, বুড়ো চাচামিয়া একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এবারের এ-চাচামিয়ার চুল ধবধবে সাদা, কিন্তু চেহারাটা খুব সুন্দর। মালতী বলল, ‘চাচা, কিছু বইলবেন নাক্কি? কুনু অসুবিধা নাই।’
মাসুদ বললেন, ‘তোমার নাম কী?’
মালতী জবাব দিলো। এরপর সে বললো, ‘চাচা, আপনার হাত-পা টিইপে দিবো?’
অধ্যাপক মাসুদ আহমেদ মনের মধ্যে একধরনের সংশয় অনুভব করলেন। তাঁর সংস্কার, রুচিবোধ, দৈহিক তাড়না সব মিলে মনের মধ্যে একধরনের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলো। প্রথমে তিনি বললেন, ‘নাহ, দরকার নেই।’ তারপর মালতীর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কোনো অসুবিধা হবে না তো?’
মালতী ঘরের দরোজা লাগিয়ে এসে বললো, ‘কোনো অসুবিধা নাই চাচা। কেউ কিছু বইলবে না। আপনি চুপ কইরে শুয়ে থাকেন।’
তবু মাসুদের একটু একটু ভয় হতে লাগলো। 888sport promo codeর সমানাধিকার, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তিনি একজন অনলবর্ষী বক্তা। ছাত্র ও সচেতন মানুষের মধ্যে তাঁর যথেষ্ট সম্মান। তবু তাঁর কেন এমন লোভ হলো এই দুপুরবেলায়? ভেজা ছাইয়ের নিচে চাপাপড়া আগুনের মতো সুপ্ত বাসনা যেন অনুকূলে সুযোগে দাউদাউ করে জ্বলে উঠতে চাইছে।
মালতী ধীরে ধীরে মাসুদের শরীর ঘেঁষে বসলো, তারপর তাঁর মাথা টিপতে টিপতে বললো, ‘চাচা, আপনার ভয় কইরছে না তো? ভয় কিছু নাই, এই সময় কেউ থাকে না। সবাই যার যার কাজে বাহিরে চইলে যায়।’
মালতী খুব সুন্দরভাবে মাসুদের মাথা টিপতে শুরু করলো, আঙুল দিয়ে কপাল, মাথা ও ঘাড় অতি নিপুণভাবে টিপতে লাগলো। মালতীর হাত ধীরে ধীরে মাথা থেকে মাসুদের বুকে ও পিঠে নেমে এলো। মালতী একসময় মাসুদের বুক ও পিঠের শিথিল মাংসপেশি টিপতে শুরু করলো; এক অভূতপূর্ব আনন্দে মাসুদ চোখ বুজলেন। তিনি অনুভব করলেন, দীর্ঘদিন অনুশীলন নেই, কিন্তু এই প্রবীণ বয়সেও তার জৈবিক দৃঢ়তা অক্ষুণ্ণ আছে, এখনো তাঁর শরীরের দৃঢ় হওয়ার ক্ষমতা আছে। স্ত্রীর মৃত্যুর কয়েক বছর পর এ যেন অধ্যাপক মাসুদ আহমদের কাছে রীতিমতো আবিষ্কারের মতো মনে হলো। মাসুদ ধীরে ধীরে মালতীকে আঁকড়ে ধরলেন; মালতী যেন ওই অবস্থার অপেক্ষায় ছিলো। সে জড়ানো অবস্থায় পাক খেয়ে নিচে চলে গেলো। এখন মাসুদ তার বুকের ওপর। কিছুক্ষণ পরে মাসুদ অনুভব করলেন, দুটি শরীরের আদিম ঐকতানের তিনি অংশীদার। একসময় ব্যাপারটা মিটে গেলো। মাসুদ বাথরুম থেকে শরীর ধুয়ে এসে মানিব্যাগ থেকে ৫০০ টাকা বের করে মালতীর দিকে বাড়িয়ে দিলেন। মালতী টাকাটা হাতে নিয়ে মাসুদের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘এখন শান্তি পায়াছেন তো? শরীলডা ভালো লাইগছে?’
মাসুদ কোনো কথা বললেন না। বহুদিনের অবদমিত জৈবিক চাহিদাটি মিটে যাওয়ার পর তিনি যেন হঠাৎ করে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন নিজেকে নিয়ে। তাঁর মনে হলো, তিনি জৈবিক পরিতৃপ্তি গ্রহণের সময় তাঁর নিজের জন্য কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। অথচ যে-কোনো মুদির দোকান থেকে তিনি নিজের জন্য অতি সামান্য টাকায় একটি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা কিনে আনতে পারতেন। বিশ্বজুড়ে এত প্রচারণা, আর তিনি সামান্য ভুলের মাসুল দিতে গিয়ে তার নিজের জীবনটাকে অনিশ্চিত করে তুললেন? মালতী দরোজা খুলে বেরিয়ে গেলে অধ্যাপক মাসুদ কিছুক্ষণ অবসন্ন হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকলেন। তাঁর মনে হলো, ধীরে ধীরে এইডসের জীবাণু ততক্ষণে তাঁর শরীরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে এবং তা এখন রক্তের সঙ্গে মিশে শরীরের আরো গভীরে চলে গেছে।
মাসুদ ভাবলেন, হয়তো কিছুকাল তিনি এইডসের জীবাণু বহন করবেন, পরে জীবাণু তাঁর শরীরের মধ্যে ঘাতকের অতি ভয়ংকর রূপ ধারণ করে কাজ শুরু করবে। ধীরে ধীরে তাঁর শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা নিঃশেষ হয়ে যাবে। মাসুদ ভাবলেন, যদি এইডসের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়, তবে তাঁর কোনো অনুতাপ নেই। বরং পৃথিবীর অনেক অসহায় মানুষের মতো তিনি এই ঘাতক ব্যাধিকে বরণ করবেন। মনে মনে তাঁদের দুঃখ-বেদনার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করবেন এবং তিলে তিলে নিজেকে সমর্পণ করবেন মহামৃত্যুর কাছে। পৃথিবীতে তাঁর আর কী চাওয়ার আছে? দেশের বিদ্বজ্জন-মাঝে তাঁর যথেষ্ট পরিচিতি, ইতোমধ্যে পৃথিবীর অর্ধেক দেশ তাঁর দেখা হয়ে গেছে। তাঁর স্ত্রী পরলোকে, পুত্রকন্যা নেই; কোনো পিছুটান নেই। তাঁর এখন রহস্যময় অনন্ত পরলোকের দিকে যাত্রার শ্রেষ্ঠ সময়। ঈশ্বর কিংবা মৃত্যু-পরবর্তী যে-জগৎকে তিনি চিরকাল অস্বীকার করে এসেছেন, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তিনি সেই জগতের মুখোমুখি হওয়ার সুযোগ পাবেন। তখন তিনি বুঝতে পারবেন, মৃত্যুর পরে কী আসলে অন্ধকার, নাকি আছে এক আলাদা বিস্ময়।
মাসুদ প্রায় সারাদিন শুয়ে থাকলেন, বিকেল হয়ে গেছে, ইতোমধ্যে আশেপাশের রুমে মানুষ ফিরে এসেছে সারাদিনের কাজ শেষে। এ-সময় মালতী এসে ঘরে ঢুকলো, ‘চাচা, কী হয়েছে আপনার? শরীর খারাপ লাইগছে? উইঠছেন না কেনে? যান, বাহির থেইকে ঘুইরে আসেন।’ মাসুদের গায়ে একটা ধাক্কা দিয়ে মালতী বেরিয়ে গেল। মাসুদ উঠে হাত-মুখ ধুয়ে পরিষ্কার জামা-প্যান্ট ও জুতো পরলেন। প্রথমে তিনি কিছুদূরে সেরিকালচার বোর্ডের বিশাল আঙিনায় ঢুকলেন, এখানে রেশমগুঁটির চাষ হয় এবং এটাই রাজশাহীর রেশমবস্ত্র তৈরির আদি প্রতিষ্ঠান। মাসুদ তাঁর কৈশোরে এখানে অনেকবার এসেছেন মজিদকে নিয়ে। সেদিনের সেইসব তুঁতগাছের কিছুই এখন আর নেই, চারিদিকে কেমন যেন ম্লান বিষণ্ণ পরিবেশ। মাসুদ তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বেরিয়ে এলেন। তিনি রিকশা নিয়ে সাহেববাজার হয়ে পদ্মাতীরে যাওয়ার সরু রাস্তা দিয়ে অগ্রসর হলেন এবং বহু 888sport sign up bonusবিজড়িত ‘লালকুঠি’ নামে লাল রঙের বাড়িটির পাশ দিয়ে পদ্মাতীরে বড়কুঠির পাশে গিয়ে হাজির হলেন। অনেকেই বলে, এই বড়কুঠি রাজশাহী শহরের সবচেয়ে প্রাচীন বাড়ি। এ ছিল একসময় ওলন্দাজদের বাণিজ্যকুঠি।
মাসুদ বড়কুঠির পাশে দাঁড়িয়ে পদ্মানদীর দিকে তাকালেন, গোটা নদীটাই এখন ধুধু বালুচর। সীমান্তের ওপারে ফারাক্কায় বাঁধ দেওয়ার কারণে এককালের প্রমত্তা পদ্মা এখন প্রায় মরুভূমি। অথচ এমন একটি জীবন-মরণ সমস্যার ব্যাপারেও বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ নয়, দেশের দুটি প্রধান দলের এ-ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি নেই। মাসুদ দেশের কিছু দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিকের কথা ভাবলেন; নিজের স্বার্থ ছাড়া এঁরা কিছুই বোঝে না। লুটপাট করাই এঁদের রাজনীতির প্রধান উদ্দেশ্য। মাসুদ দেশের ভবিষ্যতের কথা ভেবে অসহায়বোধ করলেন। তিনি নদীর ধার দিয়ে হাঁটতে থাকলেন, পির মখদুম শাহের মাজার পার হয়ে তিনি মাদ্রাসামাঠের পাশে এসে দাঁড়ালেন। মাসুদ ভাবলেন, ছোটবেলা এই মাঠে বাবার সঙ্গে, ভাইদের সঙ্গে তিনি কতবার ঈদের নামাজ পড়তে এসেছেন। তা প্রায় পঞ্চাশ-ষাট বছর আগের কথা।
888sport sign up bonusভারাক্রান্ত মাসুদের মনে হলো, এবার তিনি বাল্যবন্ধু মজিদের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। তিনি এবার একটি রিকশা নিয়ে দরগাপাড়ার উদ্দেশে রওনা হলেন। তাঁর শৈশব-কৈশোরের দরগাপাড়া। পুকুরপাড়ে তাঁদের সেই প্রাচীন বাড়িটি নেই, তা একটি ফ্ল্যাটবাড়ি; মালিকানাও অনেক আগে বদলে গেছে। তাঁদের বাড়ির পেছনে ছিল সেলিম গারোয়ানের মাটির বাড়ি। সেলিম গারোয়ানের ছেলে মজিদ এখন এ-শহরের অন্যতম বিত্তবান ব্যক্তি, তাঁর ছেলেবেলার বন্ধু। পৃথিবীজুড়ে মাসুদের কত অভিজাত ও সুশিক্ষিত বন্ধু; ওদের মধ্যে মজিদ তার সবচেয়ে খাঁটি ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন। আসলে শৈশব-কৈশোরের বন্ধুদের সঙ্গে যে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তেমনটি ভবিষ্যতে আর হয় না, পরিণত বয়সে সব সম্পর্কই যেন আনুষ্ঠানিক ও কৃত্রিম।
মজিদের সেই পর্ণকুটির আর নেই। দরগাপাড়ায় তাঁদের বাড়িটিই এখন সবচেয়ে সুন্দর বাড়ি। মাসুদ রিকশা নিয়ে মজিদের বাড়ির সামনে এসে থামলেন, বাড়িটি নিস্তব্ধ হয়ে আছে, কোনো সাড়াশব্দ নেই কোথাও। মাসুদ রিকশা থেকে নেমে গেটের কলিংবেল টিপলেন। মজিদের মেজো ছেলে বেরিয়ে এলো। মজিদের পরিবারের সবাই মাসুদকে খুব ভালোভাবে চেনে ও তাদের পরিবারের আপনজন বলে মনে করে। ছেলেটি বেরিয়ে এসে মাসুদকে জড়িয়ে ধরে কাঁদা শুরু করলো, ‘চাচা আপনি কোথায় ছিলেন? আপনার বাসায় আমরা ফোন করেছিলাম। 888sport app থেকে বলা হলো, আপনি এখানে। এখানেও আপনাকে অনেক খুঁজেছি। আপনি সেলফোন ব্যবহার করেন না বলে আপনাকে খুঁজে পাইনি।’
মাসুদ কম্পিত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের কী হয়েছে মকবুল, আমাকে বলো? মজিদ কেমন আছে?’
মকবুল বললো, ‘আববা আর নেই। আববা গত পরশু ইন্তেকাল করেছেন।’ এরপর মকবুল পিতৃবন্ধুকে জড়িয়ে ডুকরে কাঁদতে লাগলো। মাসুদ তার পিঠে হাত বুলালেন। তাকে প্রবোধ দিলেন, প্রিয়বন্ধুর আকস্মিক মৃত্যুর খবরে তিনি গভীরভাবে ব্যথা পেয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই দুচোখে কান্না এলো না। হয়তো অনবরত অর্থনীতি, সমাজতত্ত্ব ও বুদ্ধিবৃত্তি চর্চা করতে গিয়ে তিনি কাঁদতে ভুলে গেছেন; তবে সুখ ও দুঃখের নীরব অনুভূতি এখনো মনের মধ্যে আছে। চার বছর আগে লায়লার মৃত্যুর সময়ও তিনি কাঁদতে পারেননি, তীব্র শোকের মুহূর্তে কেমন যেন অন্যমনস্ক ছিলেন। হয়তো মস্তিষ্কের কোনো বিশেষ স্নায়ুকেন্দ্র অকেজো হয়ে গেছে, গভীর বেদনাবিহবল মুহূর্তেও তাঁর দুচোখ অশ্রুসজল হয় না, কোনো আবেগই তাঁকে তেমন আকুল করে না। মজিদ সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। গত পরশু দুপুরে সবার সঙ্গে একসঙ্গে ভাত খেয়েছে। এরপর একমাত্র নাতনিকে কোলে নিয়ে আদর করেছে। বিকেলের দিকে হঠাৎ করে তার বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ডাক্তার আসার আগেই স্তব্ধ হয়ে গেছে। মজিদের দেহ, মৃত্যুর আগে মজিদ তার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে কী যেন বলতে চেয়েছিল; কিন্তু বলতে পারেনি। তার গলা দিয়ে তখন গঁ-গঁ শব্দ বের হচ্ছিল।
মজিদের স্ত্রী ও পরিবারের সবাইকে সান্ত্বনা দিয়ে এবং কুলখানিতে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাসুদ সেদিন বেরিয়ে এসেছেন মৃত বন্ধুর বাড়ি থেকে। এখন রাত নেমেছে, চারদিকে মাঘ মাসের শীত। আর রাজশাহীতে শীতের তীব্রতা দেশের অন্য জায়গা থেকে কিছুটা বেশি। অধ্যাপক মাসুদ একটা রিকশায় চেপে স্টেশনের দিকে রওনা হলেন। মৃত্যুময় জীবনের প্রতিমুহূর্তের অনিশ্চয়তাকে তিনি গভীরভাবে অনুভব করলেন। লাল রঙের সদর হাসপাতাল পেরিয়ে রিকশা যখন লোকনাথ হাইস্কুলের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন তাঁর মনে পড়লো অনেক পুরনো কথা। এই স্কুলের সঙ্গে তার কতো 888sport sign up bonus, মজিদ ও তিনি সেই কিশোরবেলায় এখানে কতো দুষ্টুমি করেছেন। অলকা সিনেমাহলের কাছে এসে তিনি 888sport sign up bonusবিহবল হয়ে পড়লেন। মনে পড়লো, ১৯৪৬ সালে বাবা ও পরিবারের অন্য সবার সঙ্গে তিনি এই হলে বসে দেখেছিলেন প্রমথেশ বড়ুয়া-অভিনীত মুক্তি ছায়াছবি। সেসব দিন নেই, সেই রাজশাহী শহরও নেই। শুধু সময়ের প্রাচীন 888sport sign up bonus হয়ে সেদিনের ঢোপকলগুলি এখনো এ-শহরে ছড়িয়ে আছে।
হোটেলে পৌঁছে রাত্রির আহার শেষে মাসুদ তাঁর কক্ষে এসে শুয়ে পড়লেন। জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলেন; ওই আকাশে কি এখন মজিদের বিদেহী আত্মা উড়ে বেড়াচ্ছে? তাঁর ঠান্ডা লাগছে না? অধ্যাপক মাসুদ ভাবলেন, ‘মৃত্যুময় এ-জীবনে আমরা কেন বেঁচে থাকতে চাই? আমি, মালতী, মজিদ, লায়লা আমরা সবাই এই পৃথিবীতে প্রাণপণে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম। আসলে জীবনের কোথায় যেন একটা গভীর রহস্য আছে, তা এক নীলপদ্মের মতো আমাদের অবিরত কাছে টানে। আমরা অরূপ রতনের মোহে জড়িয়ে জীবনের জটিল পথে খুঁজে বেড়াই সেই নীলপদ্ম। মৃত্যুময় এ-জীবনের এক অচেনা উদ্যানে ফুটে থাকা অরূপ সে-নীলপদ্মের সন্ধানে ঘুরে বেড়ানোই আমাদের নিয়তি। এইভাবে অবিরত পথ হেঁটে একদিন আমাদের জীবনের অবসান হয়। যেমন চার বছর আগে লায়লা মারা গেছে আর গত পরশু মজিদ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছে। কিন্তু আমি ও মালতী এখনো এই সুন্দর সজীব পৃথিবীতে বেঁচে আছি।’
সেদিন সকালে উঠেই অধ্যাপক মাসুদ হোটেলের ম্যানেজারের মাধ্যমে 888sport appয় যাওয়ার ট্রেনের অগ্রিম টিকিটের ব্যবস্থা করলেন। আগামীকাল সকালে তিনি ‘সিল্কসিটি এক্সপ্রেস’যোগে এ-শহর ছেড়ে চলে যাবেন। মজিদের কুলখানিতে তিনি যাবেন না। এ-ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানিকতা তাঁর কাছে অর্থহীন। বরং বন্ধুর 888sport sign up bonus তিনি আমৃত্যু গভীরভাবে 888sport app download for android করবেন। মাসুদের মনে হলো, লায়লা ও মজিদ যেন তাকে ওপার থেকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে; এপারে জীবন নামের মায়াবী হ্রদে তিনি সাঁতার কাটছেন, তার সঙ্গে মালতীও সাঁতার কাটছে। অনেকদূরে মায়াবী হ্রদের মাঝখানে ফুটে আছে একটি রহস্যময় নীলপদ্ম। তিনি দূর থেকে দেখতে পাচ্ছেন সেই নীল ফুলটি, কিন্তু কাছে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই।
একটু পরেই মালতী ঘরে এলো। বলল, ‘কী চাচা, শুইনলাম 888sport appয় চইলে যাবেন। রাগ কইরেছেন?’ মাসুদ কিছুই বললেন না। শুধু মালতীর দিকে তাকিয়ে রইলেন।
মালতী বললো, ‘চাচা, মাফ কইরে দিয়েন, আপনারা ধনী মানুষ। চাচা, বুইলতে পারেন, ভগবান আমাদের কেন বাঁচায় রাইখেছে। আমি যখন মায়ের কোলে, তখন আবেদ চেয়ারম্যান আমার বাপকে খুন কইরে আমাদের জমি বাড়ি সব দখল কইরেছে। আমার বিয়ের এক বছর পর স্বামী আমাকে রাইখে অন্য এক মাগির সঙ্গে ভারতে পালিয়েছে। সেই থেকে এই জীবন। চাচা, আমি কেনে বাইচে আছি?’
মাসুদের গা-ঘেঁষে বসে মালতী তাঁর গা টিপতে শুরু করলো। মাসুদ বাধা দিলেন না। তিনি অপলক চোখে মালতীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। আগামীকাল সকালে তিনি সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে এ-শহর ছেড়ে চলে যাবেন। তারপর যমুনা নদী পার হয়ে একসময় পৌঁছবেন স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় আচ্ছনণ মহানগরী 888sport appয়।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.