একটি স্ববিরোধী উক্তি দিয়েই শুরু করি। আবুল হাসনাত সাহেবকে আমি চিনতাম, না সত্যি সত্যি চিনতাম না। তাঁর সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল পঁচিশ বছর আগে 888sport appয় ‘গণসাহায্য সংস্থা’র অফিসে। কেমন চুপচাপ একটা মানুষ, কথা প্রায় বলেনই না। তখন দৈনিক সংবাদ পত্রিকার 888sport live football সাময়িকীর দক্ষ সম্পাদক। সত্তর-আশির দশকে 888sport appsে যখন এক উলটো হাওয়া বইছে, তখনকার দিনে দৈনিক সংবাদের বলিষ্ঠ ভূমিকার কথা সবার জানা। আর তার 888sport live footballের পাতা ভরা থাকত প্রগতিশীল ভাবনাচিন্তাসমৃদ্ধ লেখাপত্র দিয়ে। এইসব কর্মকাণ্ডের পেছনের মানুষটা ছিলেন তিনি। সম্পাদক হিসেবে তখনই তাঁর সুনাম শুনেছি নানাজনের মুখে। সেই মানুষের সঙ্গে মুখোমুখি দেখা হওয়ায় স্বভাবতই একটু কৌতূহলী ছিলাম। কিন্তু আমার সব কৌতূহলকে নিরসন করে তিনি দেখা দিলেন একজন সহজ মানুষ হিসেবে, অতি সাধারণ এক আমজনতার বেশে। আমি একটু অবাকই হয়েছিলাম। আমার কথায় তিনি তাঁর ঠিকানাটা আমার ডায়েরিতে লিখে দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই! তাঁর সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়নি তারপর অনেকদিন।
যোগাযোগ হলো বেশ কয়েক বছর পরে। ইতোমধ্যে মাসিকপত্র হিসেবে কালি ও কলম প্রায় সবাইকে চমকে দিয়েই বেরোতে শুরু করেছে। অসাধারণ তার মুদ্রণ সৌকর্য, আকর্ষক বিষয়বস্তু, দেশবরেণ্য সব লেখকের লেখা। দুই বাংলাতেই তখন ওই পত্রিকার গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হচ্ছে একটু একটু করে। এত বড় একটা নির্মাণের পেছনে যাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি সেই আবুল হাসনাতকে চিনলাম বা জানলাম নতুন করে। তখনো জানতাম না একদিন ওই মানুষটারই সহযোগী হয়ে আমি কাজ করব অদূর ভবিষ্যতে। অবশেষে তাই হলো। ললাট লিখন আর কাকে বলে!
সত্যি সত্যি ব্যাপারটা ঘটল আমার পরম শুভার্থী জার্মানি প্রবাসী কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত এবং কথা888sport live footballিক হাসান আজিজুল হকের সুপারিশে। একদিন ওই পত্রিকার কলকাতার সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব এলো খোদ সম্পাদক আবুল হাসনাতের কাছ থেকে। আমি তার কিছুদিন আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। অনেকটাই ফাঁকা ছিলাম। তাই সানন্দেই কাজটা গ্রহণ করলাম। সেসব ২০০৯ সালের কথা। টানা এগারো বছর ধরে ওই মানুষটার সঙ্গে কাজ করলাম। কতবার কতভাবে যে আমাদের দেখা হয়েছে! কথা হয়েছে কত! আর চিঠিপত্রের বিনিময় তো হয়েছে অসংখ্য!
তবু আজ মনে হচ্ছে ওই মানুষটাকে একেবারেই চিনতে পারিনি। যেটুকু জেনেছিলাম, তা হলো তাঁর বহিরঙ্গের কিছু খোলস, সেই শামুকের শক্ত আবরণ ভেঙে আসল মানুষটার সন্ধান পেলাম তাঁর মৃত্যুর পর। একদিন কলকাতায় এক অতিথিশালায় তাঁর হাতে দেখেছিলাম একটি 888sport app download apkর বই। লেখকের নাম অজানা। বিশেষ কৌতূহল প্রকাশ করায় বলেছিলেন ওটা ওঁরই ছদ্মনাম। কিন্তু কিছুতেই বইটা আমাকে দেখতে দিলেন না। কথাচ্ছলে ঘুরিয়ে দিলেন প্রসঙ্গ। তাঁর 888sport app download apk পড়ার সুযোগ এলো অনেক পরে, এই মাত্র কদিন আগে, তখন তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন চিরতরে।
চেনা শহরের অলিগলিতে
সন্ত্রস্ত নিঃশব্দ চেতনাহীন মানুষের
যে ক্রন্দনধ্বনি ওঠে
তা আমাদের ধমনিতে ও মস্তিষ্কে লগ্ন হয়ে যায়
আমি জানি
এই সময় সেই সময় নয়।
আমি জানি
দীপ্ত প্রেমিকার ম্লান মুখে ছদ্মবেশী ঘাতকের ছায়া।
বিশুদ্ধ দুঃখে
হৃৎপিণ্ড ছুঁয়ে দেখল কোথায় ঠিক ভালোবাসা
এই সময় সেই সময় নয়।
(‘রঙিন ভাঙা কাচ’)
এই 888sport app download apk পড়ে আমি চমকে গেছি। এটা তাঁর অতি সাম্প্রতিককালে লেখা। কী আশ্চর্য! এমন একজন কবির 888sport app download apk পড়তে এতদিন অপেক্ষা করতে হলো! অথচ এই মানুষটার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পেয়েছি দীর্ঘ এগারো বছর! মাহমুদ আল জামান নামে লিখেছেন অসংখ্য 888sport app download apk। চার-চারটি 888sport app download apkর বইও আছে তাঁর। জানি না কালি ও কলমের পাতায় তাঁর 888sport app download apk ছেপেছেন কি না! ছাপলেও তা আমাকে বলেননি। তাঁর এই কবি-পরিচয়টা আমার কাছে তাই এক আবিষ্কার। আমি এখন সেই তাঁর 888sport app download apkর ঘোরের মধ্যেই রয়েছি। তাই আমার ভালো লাগার কিছু অনুভূতি এখানে ব্যক্ত করতে চাই।
জর্জ ফ্লয়েড
I know why the caged
Birds sing (Maya Angelou)
কালো মানুষ তুমি এখনো
অস্পৃশ্য
শত শত বছর ধরে তুমি
হাঁটছো পথে ও প্রান্তরে; পাথরে কী আছে?
পিতৃপুরুষের হৃৎপিণ্ড ও শহিদ স্তম্ভ
কি আছে পাথরে?
কী আছে সমুদ্রে
শীতল, ঠান্ডা, হিম নৈঃশব্দ্য।
অতি সাম্প্রতিককালে আমেরিকায় ঘটে যাওয়া এই হত্যাকাণ্ড বিশ্ববিবেককে নাড়া দিয়েছিল। হাসনাতভাইয়ের কলমও তাই ঝলসে উঠেছিল প্রতিবাদের কঠোর ভাষায়। 888sport app download apkটি দীর্ঘ। ছত্রে ছত্রে তাঁর কবিস্বভাবের ঝলক। অত্যন্ত নম্র অথচ রৌদ্রময়, চিরায়ত এক স্বপ্নালু অনুভবে প্রতিবাদী। এমন কবিকে জানতে আমার এত দেরি হয়ে গেল! এই যা আক্ষেপ।
বিগত এগারো বছরে বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে তাঁর সঙ্গে, কথা হয়েছে খুব কম। কালি ও কলম মাসিকপত্রটি নিয়ে তাঁর ভাবনাচিন্তার শরিক হয়েছি মাঝে মাঝেই। আসন্ন 888sport free betগুলো নিয়ে তাঁর দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। লেখা এবং লেখা, মানসম্মত লেখা চাই। তাঁর আবেদন পৌঁছে দিতে গেছি কত না নামি-অনামি লেখকের কাছে! নানারকম অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি লেখা সংগ্রহ করতে গিয়ে। অনেক লেখা ছাপা হয়েছে। অনেক লেখা তিনি বাতিল করেছেন। লেখকের নামের ওজন নিয়ে ভাবেননি কখনো। এই অসামান্য পত্রিকার পাতায় কত কিই-না জায়গা পেয়েছে! গল্প 888sport app download apk 888sport live 888sport alternative link 888sport slot game বই নিয়ে আলোচনা, নাটক আর সিনেমার পর্যালোচনা, সর্বোপরি চিত্র-প্রদর্শনীর মেধাবী বর্ণনা। 888sport live chat-888sport live footballের কোনো শাখাই বাদ পড়েনি। আর কে না জানে এই সবই ছিল যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত তাঁর নাম আবুল হাসনাত।
কত রূপেই না তাঁকে জানলাম এই ক-বছরে! কিন্তু তাঁর আসল পরিচয়টাই জানলাম এতদিন পরে, যখন তিনি আমাদের ধরাছোঁয়ার একেবারে বাইরে চলে গেছেন। এই অপরাধবোধের গ্লানি আমি কী দিয়ে ঢাকব!
একদিন দিকচিহ্নহীন বিষণ্নতায়
দেখেছি নৈরাশ্য কথা বলছে ভাঙা শরীরের সঙ্গে
অলীক বিশ্বাস দোল খায়
তুলসীমঞ্চ ও ধ্বংসস্তূপে
ঘাতকের হাতের থাবায়
পূর্ণিপুকুর, দলিল দস্তাবেজ, ঘরদোর, পাঁজিপুথি
উধাও হলো আর্তনাদ আর বর্বরতায়
(‘একদিন’)
কবির সমবেদনার শামিল লাঞ্ছিত নিপীড়িত মানবাত্মা। এই মহাদুঃসময়কালে এমন নির্ভীক উচ্চারণ বেশি তো শোনা যায় না! তাই আমি বিস্মিত ও হতবাক অমন আত্মমুখী মানুষের এমন সংবেদনশীল লেখায়। 888sport appsের পথে-প্রান্তরে ঘটে যাওয়া এমন নানা ঘটনার নীরব প্রতিবাদ যিনি করতে পারেন, তাঁর বড় পরিচয় তিনি কবি।
888sport app download apkর নাম ‘তবু মনে রেখো’। 888sport app download apkয় উল্লিখিত রফিক যেন তিনি। একরাশ অভিমান নিয়ে সবাইকে ছেড়ে যাচ্ছেন জীবনের প্রতি বীতস্পৃহ একজন মানুষ। 888sport app download apkর ছত্রে ছত্রে তার ছায়া।
রফিক চলে যাচ্ছে এই শহর ছেড়ে
এই শহরেই ঘুমিয়ে আছে
তার পিতৃপুরুষ।
আজিমপুর গোরস্তানের লক্ষ কোটি করোটি
মধ্যরাতে খেলা করে।
রফিক এই খেলায় তীব্র রহস্যময়
মানুষ দেখতে থাকে।
হাসপাতালের বেড দেয়নি কোনো সুখ।
বুকের ওঠানামা, অন্ধকারে তীব্র অন্ধকার
অক্সিজেন সিলিন্ডারের আর্ত হাহাকার ও সঞ্চালনে
আবছা মনের ভিতর এক 888sport promo codeর সে
নিত্য যাওয়া-আসা অনুভব করে
যে আসে নিঃশব্দে, ঘুমহীন ঘুমে।
তবে কি তিনি শুনতে পেয়েছিলেন মৃত্যুর পদধ্বনি! নইলে এমন 888sport app download apk লিখবেন কেন? 888sport app download apkর পরতে কেন তবে ছড়িয়ে দেবেন এমন আসন্ন বিদায়ের সুর! তাহলে কি সত্যি সত্যি তিনি হয়ে উঠেছিলেন সত্যিকারের ভবিষ্যৎদ্রষ্টা! নাকি তাঁর মনে জন্ম নিয়েছিল জীবনের প্রতি নিস্পৃহ এক অনুভব! এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে তাঁর 888sport app download apkর মধ্যেই।
রফিক চলে যাচ্ছে
আর্ত হাহাকার চতুর্দিকে।
ভিক্ষার পাত্র হাতে মধ্যবিত্ত,
রক্তে বাজে শিকড়ের দামামা।
হাসপাতালের দরোজায় দীর্ঘ লাইন
কোনো সাড়া জাগায় না কাউকে
দূরের নীল আকাশ, পাখির কূজন,
সবুজের হাতছানি
চিলের বিরতিহীন চিৎকার
রফিককে আর ডাকে না।
অতি সাম্প্রতিককালে লেখা এই 888sport app download apk অবশেষে হয়ে ওঠে এক অমোঘ আত্মবয়ান, যা কি না শোনাতে পারেন একজন কবি। পড়তে পড়তে আমরা চমকে উঠি। এ কোন অমোঘ বাণী শোনালেন কবি। দেখা হলে বলতাম, ‘ফিরিয়ে নিন এই কথাগুলো, আপনাকে আমরা যেতে দেব না।’ কিন্তু কাকে বলব সে-কথা! তিনি তো চলে যাবার সব আয়োজন শেষ করে লিখছেন এই 888sport app download apk, যার শেষকটি ছত্রে তারই এক অনিবার্য উচ্চারণ।
সবই ব্যর্থ সেবিকার শান্ত চোখে
জল।
সে চলে যাচ্ছে
অতীত ফেলে
কালো মানুষের উদ্যত হাত
অ্যাভিনিউর মিছিল
যুব-বিদ্রোহের কলরোল
পুলিশের কাঁদানে গ্যাসে দৃষ্টিহীন চোখ
888sport promo codeর সঙ্গে হৃদয়গ্রাহী বাক্যালাপ
সব ফেলে
চলে যাচ্ছে।
এমন করে যিনি জীবনের জলছবি আঁকতে পারেন, যে মহান 888sport live chatী এই 888sport app download apkর শেষকটি লাইনে, তিনিই বিবৃত করেছেন তাঁর এই বিদায়ের সুর, অনেকটা যেন কবিগুরুর সেই বিখ্যাত গানের (তবু মনে রেখো) পদচিহ্ন অনুসরণ করে যাওয়া সেই বড় কষ্টের, বড় দুঃখের অনুভূতিমালা। পড়তে পড়তে চোখ ঝাপসা হয়ে যায়।
রক্তবীজে বুনো উন্মাদনা, শরীর শুকিয়ে যায়
দেবদূতের ডানায়।
পিতৃপুরুষের ছবিও ম্লান হয়ে যায়
যন্ত্রণায় যখন মুখ ফিরিয়ে নেয়
বদ্ধ দরোজা খোলার কেউ নেই –
রফিক চলে যাচ্ছে তবু মনে রেখো বলেএই মধ্যাহ্নে।
এই 888sport app download apk পাঠের পরে বুঝে নিতে পারি, চলে যাবার জন্যে কতখানি মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। কাজের সুবাদে তাঁর সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই কথা হতো। পত্রিকার জন্যে তিনি সারাক্ষণ ভাবতেন। এই বাংলার লেখা সংগ্রহের ব্যাপারে নানা রকম পরামর্শ দিতেন। ওঁর সূত্র ধরে আমি প্রথমবারের মতো গিয়েছিলাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং সমরেশ মজুমদারের কাছে। হঠাৎ করেই একসময় তাঁর ফোন আসা বন্ধ হয়ে গেল। তাঁর এই নীরবতায় উদ্বিগ্ন হয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানলাম তাঁর অসুস্থতার কথা। জানতে পারলাম মনের জোর নাকি হারিয়ে ফেলেছেন। খুবই আশঙ্কা হলো। প্রায় প্রতিদিনই খবর নিতাম। কিন্তু বেশি সময় দিলেন না তিনি। সবার সব প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে তিনি চলেই গেলেন অবশেষে। মৃত্যুর পদধ্বনি তিনি সম্ভবত শুনতে পেয়েছিলেন। নইলে কী করে তিনি হাসপাতালে থাকাকালে লিখলেন এই শিরোনামহীন 888sport app download apk!
আমার রোদ্দুর ঢেকে যাচ্ছে কালো মেঘে
হায় ছায়াবৃতা দাও, আমাকে দাও সজীব
সহজ উজ্জ্বলতা
ঘুম নেই চোখে, তাকিয়ে থাকি অক্সিজেনের মিটারে।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.