হাবীবুল্লাহ সিরাজী
যখন প্রথম মিলিল, তখন চতুর্দিকে হা-পিত্যেশ করিতেছে ফাল্গুনের রৌদ্র। অবলোকনের মাত্রাটি বিসত্মৃত হইতেই ঝলমল করিয়া ওঠে পূর্ণ অবয়ব। হস্তবন্ধনী বাজিল, দুলিল কর্ণলতিকা এবং ক্ষীণ হইলেও নাসিকায় জানান দিলো কাঁচা অহংকার। মাভৈঃ, পুষ্পবিলাসে কেশ জুতসই। ছায়াপতাকা পশ্চিমে দোল খাইতেছে, পদপ্রান্তের সবুজ তৃণশীর্ষে পিপীলিকাকুল আহার্য-সন্ধানে নিমগ্ন। ভোগী পলাশের ওষ্ঠে ভাঙিতেছে সিঁদুরের নবীন কৌটা। তাহাকে দেখিয়া কিছুই বোঝা গেল না, অনুমিত হইল না কোনো ভাবপ্রকরণ। আয়োজনটি ছিল 888sport live footballের, আর তাহাতে অংশ লওয়া 888sport promo code-পুরুষগণের আচরণ ছিল ঈষৎ লঘু। তাই যতখানি মনোযোগী হওয়া দরকার ছিল পাঠ-শ্রবণে, তাহা হইতে অধিক আগ্রহ জন্মাইয়াছিল পরিপার্শ্ব-দর্শনে। সামসুলের ব্যবস্থাপনা কিংবা খোশনূরের দাপটের সহিত ঝাঁকিজাল হইয়া ছড়াইয়া পড়িয়াছিল অদ্ভুত গন্ধ-সমবায়। সেইদিন পর্যন্ত তাহার নাম আসলামের ছাউনিতেই অবস্থান করিতেছিল। জানিবার মতো আগ্রহ তৈয়ারি হইবার সুযোগ না দিয়াই দৃষ্টির অন্তরালে চলিয়া গেল। এবং স্বীকার করিতে পারি, মুহূর্তের সেই ঝাপটা ক্ষণিকের বলিয়াই মনে হইয়াছিল।
আবার তাহাকে পাওয়া গেল দুই ঋতু পার করিয়া এক বিদায়ী বৈকালে। বাহিরে ফুটিয়া আছে নম্র আলোয় নারিকেল-মঞ্জরি। আর ভিতরে বৈদ্যুতিক পাখা উপচাইয়া জ্বলিতেছে বিশ ইঞ্চি মনিটর। আদানে-প্রদানে তরলের ঘনত্ব বাড়িতে শুরু করিল। রজনী গাঢ় রূপ পাইলে প্রকাশিত হইল যামিনী। যামিনী 888sport app download apk রচনা করে, আবৃত্তিতে মনোযোগী, সংগীতে আনন্দ লভে এবং টেলিফোনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী থাকে। নতুন আকর্ষণ মায়াময় ফেসবুক, তেঁতুলে-বকুলে ভাসাভাসি। উজান-ভাটায় বুড়িগঙ্গা কী ধলেশ্বরী পার হইয়া গৃহকোণ কিংবা বিদ্যানিকেতনে তাহার সময়-যাপন। হেই কঠিন শর্ত, হেই যৌবনের কবচ — বল, আমি কতদিন ভ্রম-মাছি তাড়াইব? ভিক্ষাপাত্র শূন্য রাখিয়া ময়দানের কাঁকর হইতে কী লাভ করিব? বহিতেছে শত্রম্নদের উল্লাস, খসিতেছে তারাদের তাঁবু; এই আমি আর কতদিন ডাক্তারের পায়ের ভাঁজ দেখিব, আমলার মামলায় দ্বিতীয় সাক্ষী হইব, পাটাতনে গুরা রাখিয়া পাল তুলিব ধানের নৌকায়? কাঁটা ঘুরিতেছে। আটটা বাজিতে লেফ্ট-রাইট, নয়টায় নীলক্ষেত, দশের কাঁটা বিষের ভা– লটপট। তাহার মধ্য দিয়াই আলস্যে-ফুরসতে এই বাঁশি ত’ সেই ছুরি ডাইনে-বামে উঁকি দেয়। যামিনী হাঁপায়।
ফেসবুক জারি রহিল। নয়া উদ্যোগে স্কাইপ পর্যন্ত একটি তৈলের খসড়া প্রস্ত্তত করিলে পাসওয়ার্ড সংরক্ষেত হইল। রজনীতে দক্ষেণের ঘরে তক্ষক ডাকিল, ছায়ার সহিত পদযুগল মিলাইয়া প্রভাত ছুটিল মানসাঙ্ক ও বর্ণপরিচয়ের কোষাগারে। মধ্যাহ্নের তাপ-আহার অবসানে মুন্সীগঞ্জ-888sport app সড়কটির একটি নূতন লেইন চালু করিল। দুই পার্শ্বের কাশবন, ধানক্ষেত, হেলেঞ্চাশাখা হইতে মায় রিয়েল এস্টেট কোম্পানির বিলবোর্ড মস্তক দোলাইয়া অভিবাদন জানাইল। জ্যোৎস্না নামিল সিরাজদিখান বাজারে, ঢল পড়িল সদরঘাটে। ময়লা নদীটি শীতলক্ষ্যা অবধি পৌঁছাইয়া তল্লাশি লইল বন্দরের। অন্দরে ইস্পাতের পাতে পড়িল পদচিহ্ন এবং গ-দেশব্যাপী প্রবাহিত হইল কলাবাগান কি গ্রিন রোডের অভিমান। যেই বর্ষণে কলেজ স্ট্রিটের প্রান্ত ভিজিয়াছিল, তাহারই সম্মুখে ছিল নিউমার্কেটের অরেঞ্জ-জুসের আহবান। সমান-সমান নায়েম রোড কি ভূতের গলির পর্দার ঝুল আর ইস্ত্রির দাগ। আমাদের 888sport slot gameের জামপাতাগুলি আরো সবুজ হইয়া উঠিবার আগেই শনশন করিয়া উঠিল : শুষ্ক হৃদয় লয়ে…
(সিদ্ধান্ত যদি লইয়াই থাক তাজমহল কিনিবা, তাহা হইলে শাহজাহানরে খবর লাগাও, মমতাজরে লইয়া অন্য কোথাও শুইবার ব্যবস্থা করুক। আগ্রায় জায়গার অভাব না থাকিলেও ইজ্জতের সওয়াল। জাহাঙ্গীরের পুত্র কি না চাপ সামলান দায় ভাবিয়া গোর সরায়! বিষয়টি অরাজনৈতিক, তাই ঔরঙ্গজেব সাইডলাইনে বসিয়া থাকিবেন। আর, দারা-সুজা-মুরাদ ত’ রেডকার্ড খাইয়া পূর্বেই ময়দান পরিত্যাগ করিয়াছেন। তাহার পরও অনেক কিছু থাকিয়া যায়। মুঘলের কীর্তি বলিয়া কথা। খোঁড়া চেঙ্গিশের তলোয়ারের রক্ত মোছা হয় নাই। দিল্লির সিংহাসনও বাবুর আসমান হইতে পাড়িয়া আনেন নাই। হুমায়ুনের সমাধি কিংবা আকবরের কিল্লা হিন্দুস্থানের রওশন। ভাবনা দখলদারের, আবার প্রেমিকের তাপও উহাতে বর্তমান।
বুঝিলাম, কিনিলা। এইবার শোয়াইবা কাহারে, ঠিক করিয়াছ কিছু? না করিয়া থাকিলে পেনাল্টি শটে প্রেম নামাও। আর সাডেন ডেথে ঝুলাইয়া দাও বিবাহ। ব্যস, তাজ তোমার এবং মহল বিবির। বিবিরে নামাইবার পরপরই কিন্তু তোমারে প্রবেশ করিতে হইবে। তৈয়ারি মাল বেশিদিন ফেলিয়া রাখিলে দখলের সম্ভাবনা। যা দিনকাল …)
বরিশাল হইতে পেয়ারা ও আমড়া আসিয়াছিল। তাহা লইয়া যামিনী কলিকাতা ছুটিল। পরিকল্পনা মোতাবেক আলমের খামতি যখন নূরুতেও ব্যর্থ হইল, তখন অন্য প্রান্তে অপেক্ষা কিংবা অভিলাষ সাফল্যের মুখ দেখিল। ইহার কি কোনো ভিন্ন মানে ছিল? মনের মধ্যে মানেরা দুলিতে-দুলিতে ঝুলিয়া পড়ে। গৌরবের ঝান্ডা উড়াইয়া গ্র্যান্ড ট্রাংক রোড বেনাপোল স্পর্শ করিয়া অতিক্রম করিল দেশের সীমানা। পথচিত্র বদল হইতেই হাওয়ায় ছুটিল মশলা-রৌদ্রের গন্ধ। নব অভিপ্রায়ে মির্জা গালিব স্ট্রিট গলা তুলিল :
আসুন হে জ্যোতির্ময়।
হু, ঘর চাই। জল চাই, গঙ্গা-ভাসান।
সব হবে, ঠান্ডা-গরম যা কিছুই চান।
দুই সিঙ্গেল গরম, এক ডাবল ঠান্ডা।
ব্যস?
হ্যাঁ। আরেকজনের অন্যত্র আস্তানা।
বাহিরে সন্ধ্যা জুটিয়াছে। চায়ে পাকোড়া না মিলিলেও নুনবিস্কুটে একটি ফুরফুরে ভাব মিলিল। চল মন, 888sport app download apk দৌড়াই। হাঁকিছে শ্যামল, সুনীল বহিছে চিত্রায়। অর্ধেক রজনী ফতুর করিয়া হোটেলকক্ষের পাল্লা ঠেলিতেই একসঙ্গে জাপটাইয়া ধরিল ভ্যাপসা-গন্ধ ও গুমোট-গরম। পাখা বৃত্ত রচনা করিয়া শব্দাঘাতে কেবল অতিষ্ঠই করিতে পারিল, আরাম কিছু মিলিল না। বোতলের ছিপি আলগা করিতেই মনে কু দিলো, ঠান্ডাঘরে যামিনী বুঝি প্রভাতের দিকে ছুটিতেছে।
ডায়মন্ড হারবার ডাকিয়াছিল। সকালের যাত্রায় বেলা তুলিয়া যুক্ত হইল কাজল ও বুলবুল। সন্ধ্যায় ইলিশ-আয়োজনে গমগম করিল গঙ্গাভবন। 888sport app যেন সেই স্থলে পদ্মা উপুড় করিয়া দিলো। বুলবুল-যামিনীতে ভাব হইতেই তাহারা সাকিলের অসমাপ্ত কোঠায় জ্যোৎস্নাভোগে রজনী ফকফকা দেখিল। আহা, সম্মুখের জলে নর্তকীগণ ঘুঙুর নামাইয়াছে, আর তীরবর্তী কালভার্টে উপবেশন করিয়া গলায় নামিতেছে শাদা আগুন। আগুন আমার ভাই। আমি ত’ তাহার জয় গাহিবই।
শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস বোলপুরে ঢুকিতেই মাহবুব মোমফালি ভাঙা বন্ধ করিল। সাকিল উজাইয়া গেল নৈশযাপনের তদারকিতে, আর অপেক্ষার আয়ু বর্ধিত করিয়া কফিতে চুমুক দিলো যামিনী। আসলাম তাহার নিকটবর্তী জিম্মাদার। সন্ধ্যার জমজমাট পাঠ-সংগীতে আউশ-আমন মিশ খাইল, ঠাকুরমশাই ছাদ খুলিয়া আকাশ নামাইলেন। কোপাই কি আগামীকাল বুক খুলিয়া কেয়াপাতার নৌকা ভাসাইবে, সৃজনী দেখাইবে রাঙামাটির পথ? ফিরিবার কালে লালনের গামছা রতনকুটিরে ফেলিয়া আসিলাম। আরো কি কিছু রহিয়া গেল? নচেৎ যামিনী কাঁদিল কেন?
যতই ফৈজত করুক, মির্জা সাহেবের নিকট আসিতেই হয়। ভেলুপরি শেষ হইলে তরিকত করিয়া কস্ত্তরির টেংরার দাড়িতে আঙুল পড়ে। দুয়ারে শ্যামলী গোঁ-গোঁ করিতেছে। তাহাতে একাই যামিনী আসন পাতিল।
(শিরির লাগিয়া ফরহাদ পাহাড় ভাগ করিয়া দেয়, চোখের পানিতে মরুভূমিতে বানাইয়া ফেলায় মরূদ্যান। তা, তোমার পছন্দ কোনটি — পাহাড়, না মরূদ্যান? পাহাড়ের খাঁজে-খাঁজে যে-শিকড় বিস্তারিত ছিল, সেও বলিয়াছিল প্রেমিকার নাম। মরূদ্যানের ছায়াময় সবুজ পত্রটিও সমর্থন জানাইয়াছিল প্রেমিকের আহাজারি। যাহা শিরি বুঝিয়াছিল তাহা ফরহাদে সম্পূর্ণ না পৌঁছাইলেও একখানা সূর্য এবং একখানা চন্দ্র দিন-রাত্রির সাক্ষী হইয়াছিল।
দুইখানই সস্তায় যাইতেছে। এইবেলা ক্রয় করিয়া রাখ, ভবিষ্যতে মালামাল হইয়া যাইবে।)
এই যে যামিনী-যামিনী করিয়া পাল তুলিয়া হুইশেল বাজাইয়া মাওয়াঘাটে পদ্মাসেতুর জন্য অপেক্ষা — তাহার দর্শনরূপ কী, বন্ধনরূপ কী, বিদ্যারূপ কী? কেহ কি সঙ্গোপনে বলিয়াছিল, ভালো হইতেছে একপ্রস্থ বায়ু — আর বাসা হইতেছে তমালশাখা ? আমি-র সহিত আমরা খেলিয়া গেলে রেলপথ চাপিয়া ধরিল পাঁজর, সড়ক ভাসাইয়া দিলো পূর্ব রজনীর কৃষ্ণ-শ্বেত ভেদ। চেতনার ভিতরেই ত’ অবচেতন ডাক দিয়াছিল, তাই ভুল-শুদ্ধ গলাগলি দাপাইয়াছিল। সত্য বলিবার মুহূর্তে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান লইল মিথ্যা।
পাতার সংবাদ কী?
শাখায়।
ভাব ছাড়ো।
ভাব ছাড়া আছে কী? ব’লেছে ডিসেম্বরে একটা ফয়সালা ক’রবে।
বিয়ে?
হ্যাঁ। তবে তার আগে তাকে বউ-বিদেয় ক’রতে হবে।
ঠিক?
মনে তো হয়।
যদি না হয়?
তা হ’লে তুমি।
আমি তো চাঁইবাসা। শক্তিবাবুতে ঠাসা।
অসুবিধা নাই।
পাতাকাহিনি পার হইবে না কোনোদিন। ইহা যামিনীর ঝুলন্ত নারিকেল, কাঠের সেতুর খুঁটি। জুটি বন্ধনের প্ররোচনায় চলিতে থাকিবে। যেহেতু পূর্বসূত্রে আবেগ ছিল, বাসনার ছিটেফোঁটা পৌঁছাইয়াছিল হৃদয়ে, তাই বিষয়টির সদরকোঠা পর্যন্ত এত্তেলা দেওয়ায় অন্তরায় ছিল না। চলিতেছে, সগৌরব রচিত হইতেছে মেঘনামালঞ্চ।
(ননির ভা- উজাড় হইয়া গেল, জল শুকাইল, তবু কানুর দেখা নাই। বল রাই, এই মধ্যদিনে কী করিয়া ক্ষুধা-পিপাসা মিটাই? যতদূরে যাই ততই পশ্চাতে পড়ে আশা, ধরা দেয় না। ছলনারা ভালোবাসিতেছে কদম, কামনারা উজাড় করিতে চাহে বৃন্দাবন; তবু ভাষা তিথিডোরে কেবল আনমনা। তোমার গোপাল কি তোমাতেই কেবল সমর্পিত? তবে কেন যব নিঃশেষিত হইল, বিশুদ্ধ আমিষে পচন ধরিল, পক্ব আম্র বৃক্ষতলে গড়াগড়ি খাইল; তাহার পরও না মিলিল প্রেম-দর্শন, না মিলিল সম্ভোগ-সন্তরণ? বিরহের এই সময়কাল ক্রয় করিবার নিমিত্তে কৃষ্ণ তখন অর্জুনের সারথি)
যতখানি প্রাণ শিশির-পতনে মেলে, ততখানি কিন্তু মেলে না রৌদ্র-যাপনে। তাহার পরও রাত্রি ও দিন লইয়া কাড়াকাড়ির কিছু ছিল না। বৈকালের রৌদ্র যখন ছায়া হইতে-হইতে অন্ধকার হইত, যখন যামিনীর চিত্তে প্রবাহিত হইত বুড়িগঙ্গা সেতু অতিক্রম করিবার আনন্দ-বেদনা — তখন নিকট-দূরত্বে অবস্থান করিয়া কেহ হয়তো সিদ্ধান্তের রশি ধরিয়া ঝুল খাইত। প্রফুল্ল যদি বলিল — হু, তবে বিষণ্ণের কাতর চোখে — না। এই যে দ্বন্দ্ব, এই যে টানাপড়েন, তাহার মধ্য দিয়াই চট্টগ্রাম মেইল রাত দশটায় 888sport app পস্নাটফর্ম ছাড়িল। রাত বাড়িতেছে, খই ফুটিতেছে, তাওয়ায় পেঁয়াজ ও লংকা অপেক্ষা করিতেছে; ডিমটি ভাঙ্গা হইলেই ঝাঁপাইয়া পড়িবে। তৈল-লবণ লইয়া বাবুর্চি যখন কিচেনে প্রবেশ করিল — তখন দেখিল, ডিমটি বিড়ালের দখলে চলিয়া গিয়াছে। লংকা-পেঁয়াজ দিয়া খই মাখাইয়া খাইতেছে ট্রেনের গার্ড।
বলিবার কিছু অবশিষ্ট নাই। প্রভাতের আলো পাহাড়ের শরীরে পড়িলে প্রসন্ন মানিকের সহিত পক্ব কদলি ভক্ষণে আকর্ষণ বাড়িল।
ফেরা কক্সবাজার হইয়া। বাস-যাত্রার অভিভাবক দুলাল মাথা দুলাইয়া কেবল বলিল : ইক্ষুরস অতি মিষ্ট, ঈশ্বরকে বন্দনা কর।
ঈশ্বর যাহাতে থাকেন তাহাকে লইয়া টানাহেঁচড়া না করাই ভালো। তাহাতে উভয়পক্ষই সুবিধামতো আসন পাতিয়া গুণগান করিতে পারেন, প্রয়োজন পড়িলে গালমন্দও চলিতে পারে। তাই, যামিনীর ঈশ্বর-বন্দনায় মন না থাকিলেও টান ছিল ইক্ষুরসে। দাঁতে পিষিয়াই হউক আর কলে ফেলিয়াই মিলুক — রসে-বশে ছিল তাহার চালচলন। এইখানে এককভাবে কাহারও পাল্লা দিবার উপায় নাই। আসমান ফতুর হইয়া মাটিতে মিশিতে পারে, সমুদ্র শুকাইয়া খাড়া পর্বতে মিলিতে পারে, আগুনের হাত-পা বাঁধিয়া শূন্যে ভাসিতে পারে বায়ু — কিন্তু যামিনীর চক্ষু-ভাষায় তাহার কোনো প্রতিচ্ছাপ পড়িবে না। যামিনী চলিতে থাকুক।
(লাইলীকে লইয়া মজনুর বিপত্তির অন্ত নাই। কড়ি কানা হইলেও জরি ধরিয়া টানে, চক্ষু অন্ধ হইলেও মন তাহাকে চিনাইয়া দেয় আবেগের ফসল হইতে বেদনার জল। তা, মজনু ত’ লাইলীকে ভাবিতে-ভাবিতে পাগলপ্রায় — লাইলী তখন কোন গুহায়? পাতা ভরিয়া উঠিল গাথায়, কালের ওপার হইতে ডাক দিলো
কাঙাল-প্রেমের অভিপ্রায়! এইবেলা দরদাম করিয়া সিন্দুকে ভরিয়া ফেলিলে নিন্দুকের মুখে চুনকালি পড়িবে !)
যামিনীকে লইয়া ফেরার কোনো গতি পরিদৃষ্ট হয় না। ভারী আসমান দুর্বল স্কন্ধে ভর করিলে পূর্ণছেদই পড়িবার আশংকা। দুলিতে-ভুলিতে তাই মধ্যযাম কদাচিৎ জাগিয়া ওঠে :
মানুষ কী করে?
হাত-পা নাড়ায়, শ্বাস-প্রশ্বাসে গন্ধ বিলায়।
সাকুরা না শ্যালে?
অন্য খালে, মৎস্যভবনের আঙিনায়!
মানে?
বিলাসের কৈতর 888sport live chatকলা ফতুর ক’রে ওখানে হুমড়ি খেয়ে প’ড়ে আছে!
ধ্যাৎ, কী যে বলো!
কী শুনতে চাও?
যামিনী যে ফুরায়!
প্রভাতের আগে নয়।
প্রভাতের পূর্বেই সংবাদ হইল বুড়িগঙ্গা-সেতু ধসিয়া পড়িয়াছে। বাসভর্তি যাত্রীদের সলিলসমাধি ঘটিলেও আশ্চর্যজনকভাবে যামিনী বাঁচিয়া গিয়াছে। ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি তাহাকে মুমূর্ষু অবস্থায় পৌঁছাইয়াছে মিটফোর্ড হাসপাতালে। ডাক্তার-নার্সের দৌড়ঝাঁপ, উকিলের ব্যস্ততা, পুলিশের তৎপরতা এবং আমলার হম্বিতম্বির মধ্য দিয়া ঘড়িতে অ্যালার্ম বাজিয়া উঠিল। নয়টায় পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সভায় হাজির থাকিতে হইবে।
যামিনীকে কি একবার ফোন করিয়া স্বপ্নটির কথা বলিব? r


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.