রক্তে সিক্ত মাটির গল্প

দীপংকর গৌতম

বাঙালির স্বাধীনতা আকাঙক্ষা অনেক পুরনো। টংক, তেভাগা, নানাকার, ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ কোনো কিছুই স্বাধীনতা-সংগ্রাম থেকে আলাদা ছিল না। মানুষ একের পর এক যত সংগ্রাম করে যাচ্ছিল ততই একটা ধারণায় এসে উপনীত হচ্ছিল যে, কোনো সংগ্রাম বৃথা যায় না। সংগ্রামের এই ধারাবাহিকতায় ’৫২, ’৬২, ’৬৯-এর পথ পেরিয়ে একদিন আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। অজস্র মানুষের আত্মত্যাগ, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আর দুই লাখ
মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাঙালি উপনীত হয় জীবনের চূড়ান্ত সংগ্রামে। এই সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের পেছনে ছিল বহুবিধ ঘটনা, বিরূপ পরিস্থিতি, অসম আর্থিক বণ্টনব্যবস্থা, প্রশাসনিক কর্তৃত্বের বঞ্চনাসহ গুরুতর বিষয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের ক্রমাবনতির চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। ২৫ মার্চ দিবাগত মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে বাঙালিদের ওপর অপারেশন চালানোর মধ্য দিয়ে তারা প্রতিবাদমুখর বাঙালিকে চিরতরে স্তব্ধ করতে চেয়েছিল। কিন্তু ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামক ওই পরিকল্পনা দিয়ে নারকীয় গণহত্যা চালালেও স্তব্ধ করা যায়নি। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। দেশকে হানাদারমুক্ত করতে মরণপণ লড়াইয়ে অংশ নেয় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, পেশাজীবী নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষ। পাকবাহিনীর আক্রমণ ও গণহত্যা মোকাবেলার জন্য গড়ে তোলে প্রতিরোধ। নয় মাস আতঙ্কিত প্রহর  অতিক্রম করে আসে বিজয়ের মাহেন্দ্রক্ষণ। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করার বেশিদিন পার না হতেই সক্রিয় হয়ে ওঠে এদেশে ঘাপটি মেরে থাকা পরাজিত শত্রম্নরা। ১৯৭১ সালে সংঘটিত একটি গণবিপস্নবকে ১৯৭৫ সালের একটি প্রতিবিপস্নব দিয়ে শেষ করে দেওয়া হয়। হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রাণপুরুষকে তাঁর পরিবার-পরিজনসহ। রক্তাক্ত করা হয় সংবিধানকে। বিকৃত করা হয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে। ঘাতকদের উন্মত্ত মঞ্চে পরিণত হয় দেশ। আর একাত্তরের যেসব মহানায়ক জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন তাঁরা হয়ে যান অপাঙ্ক্তেয়। মানবেতর জীবনযাপন করে বেঁচে থাকেন সব বীরযোদ্ধা। বেহাত হওয়া বীরগাথা 888sport app পড়ে যায়। বিক্ষত করা হয় সংবিধানকে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হয়ে ওঠে দলীয় ক্যাডারদের আড্ডাখানা। মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাসকে বিকৃত করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যেসব বীরযোদ্ধা জীবনকে তুচ্ছ করে দেশমাতৃকাকে হায়েনার হাত থেকে রক্ষা করতে মরণপণ সংগ্রাম করেছিলেন তাঁরা মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকেন। বিশেষ দিবসে এঁদের ডাকা হলেও এ-বীরদের প্রশ্নে রাষ্ট্র, সরকারের যে-ধরনের ভূমিকা রাখার কথা ছিল তা কোনো সরকার করেনি। তালিকার পর তালিকা হয়েছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা লজ্জায় আনতচিত্তে তালিকায় নাম উঠাতেও বিরূপ ছিলেন। বীরত্বের চূড়ান্ত জায়গায় অবস্থান করেও তাঁরা বীরের খেতাব পাননি। সেই যুদ্ধদিনের যুদ্ধাহত বীরদের নিয়ে লিখেছেন লেখক-গবেষক সালেক খোকন। দেশের গ্রাম থেকে গ্রামান্তর ঘুরে তুলে এনেছেন সেসব বীরকে, যাঁদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি 888sport apps। সালেক খোকন একসময় এই মাটিবর্তী আগুনমুখাদের আবিষ্কার করেছেন তাঁদের কথা, শুনেছেন সেগুলো বিভিন্ন কাগজে, পোর্টালে ছেপে প্রথমে জনগণের চোখের সামনে এনেছেন – এসবই বই আকারে প্রকাশ করেছে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স। লেখকের কথায় তিনি লিখেছেন – ‘বছর সাতেক আগের কথা। বিজয় দিবসের এক অনুষ্ঠানে দেখা হয় দিনাজপুরের মুক্তিযোদ্ধা কৃষ্ণ কিশোর দাসের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের মাইনের আঘাতে উড়ে যায় তার বাঁ পা। স্বাধীন দেশে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন তিনি। আক্ষেপ নিয়ে তিনি সেদিন বলেছিলেন, ‘প্রতিবছর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিতে আসেন
মন্ত্রী-এমপিরা। তাদের বলা সমস্ত কথাই পত্রিকায় ছাপা হয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের না বলা কথাগুলো অপ্রকাশিতই থেকে যায়। ফলে ইতিহাসের অপ্রকাশিত কথাগুলো ঘুরপাক খায় মুক্তিযোদ্ধাদের মনের অতলে।’ কথাগুলো প্রবলভাবে স্পর্শ করে আমায়। মূলত তখন থেকেই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্যে ইতিহাস সংগ্রহের কাজটি শুরু।’ এই দুরূহ ও মহৎ কাজটির মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে জনযুদ্ধের অজস্র গণযোদ্ধা, যাঁরা বীর, যাঁরা পাকসেনাদের সাক্ষাৎ মৃত্যুদূতে পরিণত হয়েছিলেন। বিনাযুদ্ধে যাঁরা দেশের একমুঠো মাটিও ছাড়তে চাননি। যাঁরা ১০ খানা টিন, ২ মণ গম বা একটা পস্নটের জন্য যুদ্ধ করেননি। মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ৪৫ বছর পরে তাঁরা বলেছেন তাঁদের কথা। গেরিলা সব আগুনমুখা মানুষ, যাঁদের বর্ণনা শুনলে এখনো শিহরে উঠতে হয়। অতিসাধারণ এঁরা এখন। আর যাদের বিরুদ্ধে লড়েছিল তারা তাদের গাড়িতে এসব লড়াকুর রক্তে কেনা পতাকা উড়িয়ে ঘুরেছে। বীরযোদ্ধা তাজউদ্দিনের বর্ণনা শুনলেও চোখ ভিজে আসবে – এই সেই মহামানব, দেশপ্রেমিক, যাঁর দেশের প্রতি কোনো চাওয়া নেই। অথচ ঠোঁটের মাথায় প্রাণ নিয়ে যে যুদ্ধ করেছে।

– তাজউদ্দিনের বুকে তখন প্রতিশোধের আগুন। যেভাবেই হোক দেশটা স্বাধীন করতে হবে। সে-আশাতেই একের পর এক চলছে অপারেশন। কিন্তু এক অপারেশনে হাতে মারাত্মকভাবে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। রক্তাক্ত সে-দিনটির আদ্যোপান্ত বললেন তিনি :

‘ফাইট চলছিল মধুপুর আর ময়মনসিংহের মাঝখানে রাঙামাটি এলাকায়। একটা স্কুলে পাকিস্তানি সেনারা ক্যাম্প করছে। আশ্বিন মাসের ৮ তারিখ। তিনডা কোম্পানি আমরা রাইতেই পজিশনে গেলাম। সকালে হবে ফাইট। কোম্পানিতে আমরা একশ। ওই সাইড থাইকা পজিশন নেয় নান্টু কোম্পানি। নির্দেশ ছিল অর্ডার দেওয়ার আগ পর্যন্ত ফায়ার না দেওয়ার। আমার স্বাস্থ্য ছিল ভালো। স্যার কইল, ‘এলএমজিডা তোর কাছে রাখ’। সাইডে স্টেনগানও। আইলের ধার ঘেইষা পজিশনে রইছি। ওগো ক্যাম্প একটু ওপরে। খুব কুয়াশা। কিছু দেখা যায় না। ফজরের আজান দিছে মাত্র। দেখলাম, আমার এলাকার রেজাকার আতিক। হাতমুখ ধুইয়া পাকিস্তানিগো লগে ও বেঞ্চিতে বইসা আছে। ওরাই আমগো গ্রাম জ্বালাইছে। ওরে দেইখাই ঠিক থাকতে পারি না। কমান্ডারের নির্দেশও ভুইলা যাই। ব্রাশ কইরা আতিকসহ সাত আটজনরে ফালায়া দিলাম। শুরু হইল গোলাগুলি।’

‘আমারে ওরা টার্গেট করে। একটা ছাদের ওপর বাঙ্কার কইরা চায়না মেশিনগান ফিট কইরা রাখছিল। মেশিনগান আমার দিকে তাক কইরা বৃষ্টির মতো গুলি করে। আমার সাইডে কাদের। ওর এক পায়ে গুলি লাগছে। নড়তে পারে না। ওরে ধরতে যামু, দেহি, ডান হাতডা নাড়াইতে পারি না। পিছনে চাইয়া দেহি রক্তে ভিজা গেছে আইল। শরীরে গুলি খাইছি পাঁচটা। পায়েরটা কম ক্ষত ছিল। একটা গুলি কখন যে হাতের তালু ভেদ কইরা কনুইয়ের দিকে গেছে টের পাই নাই। গুলিডা ভেতরে আটকাইয়া যায়। গোলাগুলি একটু কমলে অর্ডার আসে ব্যাক করার। সবাই পিছনে চইলা যায়। কিন্তু আমরা দুইজন পইড়া আছি। শরীর তো চলে না। বহু কষ্টে কাদেরকে নিয়া এক দেড়শ গজ পিছনে যাইতেই সাথিরা আমগো তুইলা নেয়।’

গুলিবিদ্ধ হওয়ার কষ্টের চেয়েও ভয়ার্ত ও যন্ত্রণাদায়ক ছিল তাজউদ্দিনের চিকিৎসার সময়টা। সে-কথা বলতে গিয়ে চোখ ভেজান তিনি। বুকের ভেতরকার জামানো কষ্টগুলো যেন ঝরে পড়ে জল হয়ে। তাজউদ্দিনের মতো একেকজন মুক্তিযোদ্ধার জীবনের গল্প আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়, অনেক রক্ত ও আত্মত্যাগের বিনিময়েই স্বাধীন হয়েছিল এই প্রিয় দেশটি। (মানুষের মাংস যে পিপড়ার পছন্দ এইডা একাত্তরে বুঝছি, পৃ ১১)

বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা দুলাল। তাঁর বর্ণনা না শুনলে বোঝা যাবে না। প্রিয় দেশ, মাটি ও মানুষের জন্য চুয়াডাঙ্গা শত্রম্নমুক্ত করতে জীবনকে যেন মৃত্যুর হাতে তুলে দিয়ে নেমেছিলেন। তাঁর কথার মধ্যে তিনি বাঙালির আরেক দল বেইমানের নাম উলেস্নখ করেছেন, যাদের বিচার আজো পুরোপুরি হয়নি। তারা হলো হানাদার বর্বর বাহিনীর সহযোগী। হানাদারদের বর্বরতাকে যারা আরো বেশি ভয়ংকর করে তুলেছিল। তারা হচ্ছে – দেশদ্রোহী রাজাকার, আলশামস ও আলবদর। পৃথিবী বদলালেও এই দেশদ্রোহীরা বদলাবে না। এরা বাঙালি নিধনে মেতেছিল যেমন একাত্তরে, তেমনি সক্রিয় এখনো। গোলাম মোস্তফা দুলালদের মতো ত্যাগী যোদ্ধারাই মুক্ত করবেন দেশ। গোলাম মোস্তফা দুলালের বিবরণীতে উঠে আসে একাত্তরের বীরগাথা –

‘১১ নভেম্বর ১৯৭১। সন্ধ্যাবেলা। কুমার নদীর ওপারে কুঠিবাড়ির কাছে পাওয়ার স্টেশনটি আমরা উড়িয়ে দিই। চুয়াডাঙ্গা থেকে দক্ষিণে যেন কোনো আর্মি আসতে না পারে সে কারণে সেখানকার রেললাইন উড়ানো হয়। এভাবে পরিকল্পনা করে কুষ্টিয়া থেকে আলমডাঙ্গাকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। আমরা তখন পজিশনে থাকি আলমডাঙ্গার চারদিকে।’

‘গেরিলা সেজে শহরের ভেতরটা ‘রেকি’ করতে হবে। তাই ১২ নভেম্বর ভোরে চারজনকে নিয়ে নান্নুভাই শহরে ঢুকলেন। আমরা তাঁর অপেক্ষায় থাকি। সময় সকাল ৯টা। হঠাৎ গুলির শব্দ। ভেতরে কিছু একটা হয়েছে। নান্নুভাইকে উদ্ধার করতে হবে। আমরা কুমার নদ দিয়ে আলমডাঙ্গা শহরে ঢুকি। চারদিক থেকে অন্যরাও এগোতে থাকে। সোনালী ব্যাংকের পাশ থেকে চাঁদতারার দিকে ফায়ার দিই আমরা। ওখানে ছিল রাজাকাররা। খানিক এগোতে নান্নুভাইকে পাওয়া গেল। তাঁর গ্রম্নপটি আগেই এক রাজাকারকে গুলি করে মেরেছে। চারদিকের আক্রমণে রাজাকার ও মিলিশিয়ারা আশ্রয় নেয় আলমডাঙ্গা থানাতে। সেখানকার বাংকারে অবস্থান নিয়ে তারা ব্রাশ চালাতে থাকে।’

‘হান্নানভাইসহ আমরা তিনজন ছিলাম অ্যাডভান্স পার্টিতে। একটা বাড়িতে পজিশন নিয়ে থানার দিকে দেখে দেখে ফায়ার দিচ্ছি। তখন মধ্যদুপুর। নান্নুভাই গার্লস স্কুলের পাশ দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। কিন্তু একটি গুলি এসে লাগে তাঁর মাথায়। কয়েকটা ঝাঁকি দিয়েই তাঁর শরীরটা নিথর হয়ে যায়। একইভাবে গুলিতে মারা যান বজলু ডাক্তারও। হাসুভাই ঢুকছিলেন ডাকবাংলোর পাশ দিয়ে। ওখানে মিলিশিয়ারা পোশাক ছেড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বেশ ধরে থাকে। মুক্তিযোদ্ধা ভেবে তিনি কাছে যেতেই বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মারে ওরা। আনসারভাই গুলি খান চাঁদতারার ওখানে। ওটা ছিল একটা আরবান ফাইট।

‘প্রচ- গোলাগুলি চলছে। আমাদের দৃষ্টি থানার দিকে। কিন্তু ডানে পোস্ট অফিসের কাছে যে একটা বাংকার আছে সেটা বুঝতেও পারিনি। ওরা ওত পেতে ছিল। আমাকে টার্গেট করেই ওরা গুলি ছুড়ে। আমিও পালটা জবাব দিব। হঠাৎ মনে হলো ধাক্কা খেলাম। হাত থেকে এসএলআরটাও পড়ে গেল। গুলি আমার মুখে লাগার কথা। কিন্তু তখন ম্যাগজিনটা কাট করছিলাম। এসএলআরটা মাঝখানে থাকায় গুলিটা প্রথম লাগে এসএলআরের বডিতে। অতঃপর স্পিস্নন্টার ঢুকে যায় ডানহাতের কব্জিতে। ফলে হাড্ডি ভেঙে মাংস বেরিয়ে যায়। চামড়া ঝলসে গিয়ে রগগুলো গাছের শিকড়ের মতো ঝুলতে থাকে। রক্তে ভিজে যায় গোটা হাতটিই।’

তখনো জ্ঞান ছিল মুক্তিযোদ্ধা দুলালের। জীবন বাঁচানোর প্রাণান্তকর সংগ্রাম তখনো শেষ হয়ে যায়নি। বরং নিজেকে বাঁচানোর সে-কাহিনি বড়ই করুণ, বড়ই কষ্টের। সে-সময়ই চুয়াডাঙ্গা থেকে পাকিস্তানি আর্মিরা মুহুর্মুহু গুলি ছুড়তে ছুড়তে আলমডাঙ্গার দিকে চলে আসে। গুলিবিদ্ধ ও রক্তাক্ত দুলাল তখন আশ্রয় নেন আলমডাঙ্গার এক কবরস্থানে। পাকিস্তানি সেনাদের ভয়ে পুরনো একটি কবরে সারারাত লুকিয়ে রাখেন নিজেকে। শুধু মৃত মানুষই নয়, একাত্তরে জীবিত মানুষেরও ঠাঁই নিতে হয়েছিল কবরে!

সে-888sport sign up bonusর কথা বলতে গিয়ে চোখে পানি আসে দুলালের। বলেন, ‘হাতের ব্যথায় আমি গোঙাচ্ছিলাম। পরে নওশের আমাকে কাঁধে তুলে নিয়ে যায় এরশাদপুর গ্রামে। সেখানেও ডাক্তার নেই। আমার হাত গামছা দিয়ে বাঁধা। সহযোদ্ধারা মসজিদের খাটিয়ায় তুলে নেয় আমায়। সাদা কাপড়ে 888sport app থাকে খাটিয়াটি। যেন লাশ আমি। পরে বেলগাছির ওহাব মেম্বারের বাড়িতে মিলে গ্রাম্যচিকিৎসা। কিন্তু তাতেও কাজ হয় না। পরে গরুর গাড়িতে করে নেওয়া হয় পাচুরিয়া গ্রামের বিলে। আমার হাত তখন পচতে শুরু করেছে। গন্ধে কেউ সামনে আসে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সঙ্গে ছিলেন লালচান আর শহিদুল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা পালকিতে করে আমায় বর্ডার পার করে আনেন। চিকিৎসা হয় করিমপুর ফিল্ড হাসপাতালে। আমার হাতে গ্র্যাংগ্রিন হয়ে গিয়েছিল। হাতের দিকে চোখ পড়লে এখনো একাত্তরটা মনে পড়ে যায়।’

মুক্তিযুদ্ধ আমার অহংকার। মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের গর্ব। এই অলস পলির মায়ায় বিধৌত দেশকে রক্ষা করতে এসব দেশপ্রেমিক একদিন জীবন বাজি রেখেছিলেন। আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত বাংকারকে উড়িয়ে দিয়েছে ছোটখাটো অস্ত্র আর দেশপ্রেমের মনোবল দিয়ে। যেসব বীর এসব দুঃসাহসী বীরগাথার নির্মাতা আজো তাঁরা গ্রামের মাটিতে মিশে গেছেন জীবন-সংগ্রামের তাগিদে। এসব মানুষকে মাটিবর্তী জীবনের ভেতর থেকে তুলে এনেছেন লেখক-গবেষক সালেক খোকন। সালেক খোকনের সংগ্রহের ভা-ার থেকে মাত্র 888sport cricket BPL rateটি যুদ্ধকাহিনির বর্ণনা এই বইয়ে লিপিবদ্ধ হয়েছে। 888sport cricket BPL rateটি দুস্তর যুদ্ধবীরের বর্ণনা 888sport cricket BPL rateটি মহাকাব্যকে হার মানায়। বইটি প্রকাশ করেছে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স। কাজটি মুক্তিযুদ্ধে চেতনা-জাগানিয়া সাড়াজাগানো একটি কাজ। এই 888sport appsের নরম সবুজ নিসর্গ আর অলস পলির মায়ায় বিধৌত মৃত্তিকা আমার 888sport apps। এই বইটি 888sport appsের ইতিহাসের একটি অংশ। এই বইটিকে লক্ষ্য করে রাষ্ট্র ইচ্ছা করলে তুলে আনতে পারে সেসব বীরকে, যাঁদের আত্মদানে এদেশ স্বাধীন। সেক্ষেত্রে বইটি হতে পারে মাইলফলক।