রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি অগ্রন্থিত পত্র ভূমিকা ও টীকা :

কবির প্রয়াণের দুবছর আগে বিশ্বভারতী গ্রন্থ-প্রকাশ সমিতির উদ্যোগে রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রকাশের সূচনা হয়েছিল ১৯৩৯-এ। রবীন্দ্রনাথের তত্ত্বাবধানে ৭ খ- প্রকাশ পায়; ৮ম খ- মুদ্রণের আগেই তিনি প্রয়াত হন। আজ নাগাদ ৩৩ খণ্ড (+ ২ খণ্ড অচলিত খণ্ড) প্রকাশিত হয়েছে। কবির ব্যক্তিগত চিঠিপত্র তিন খণ্ড (ছিন্নপত্র, ভানুসিংহের পত্রাবলী এবং পথে ও পথের প্রান্তে) তিনি নিজেই সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন ১৩১৯ থেকে ১৩৪৫ বঙ্গাব্দের মধ্যে। রচনাবলীর সম্পাদক চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য চিঠিপত্র প্রকাশের সূচনালগ্নে লক্ষ করেছেন : ‘কবির মানসলোকের অনেক মহলের রহস্য কুঞ্চিকা এই চিঠিপত্রের মধ্যেই গোপন আছে।’  কবির প্রয়াণের বছরখানেকের মধ্যেই (১৩৪৯ বঙ্গাব্দ) খণ্ড খণ্ড চিঠিপত্রের প্রকাশনা শুরু হয়। ১৩১৯-এ কবির নোবেল 888sport app download bd-লাভের এক বছর আগে ছিন্নপত্র প্রকাশ পায়। শতাধিক বছরে বিশ্বভারতী গ্রন্থন-বিভাগ চিঠিপত্রের পঁচিশটির বেশি খ- বের করতে সমর্থ হয়নি। ১৪১১ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত চিঠিপত্র মুদ্রিত হয়েছে মাত্র ১৯ খ-।

তাঁর চিঠিপত্রের মূল্য সম্পর্কে কবি নিজেই সচেতন ছিলেন। চিঠি পাঠানোর আগে কবির সচিব অনুলিপি করতেন। কবির নিজের হাতে-লেখা মূল চিঠি প্রাপককে পাঠানো হতো আর সচিবকৃত অনুলিপি সংরক্ষণ করা হতো। আমাদের ধারণা, ১৯১৩ সালে নোবেল 888sport app download bd পাওয়ার পর থেকেই চিঠির অনুলিপি সযত্নে রক্ষেত হতো। কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৯২১ থেকে ১৯৫১ পর্যন্ত বিশ্বভারতীর কর্মসচিবের (রেজিস্ট্রার?) কর্তব্যপালনের সময়ে চিঠিপত্রের অবিকল নকল সংরক্ষণের কাজ সুচারুরূপে পালিত হয়। পরে শিবনারায়ণ রায় রবীন্দ্রভবনের অধ্যক্ষ হয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে চিঠিপত্র, ফটোগ্রাফ-নেগেটিভ ও 888sport app স্মারক সামগ্রীর ক্যাটালগ ও ফাইল তৈরি করেন।

রবীন্দ্রভবন মহাফেজখানা ও গ্রন্থাগারে লোকবলের স্বল্পতার কারণেই সম্ভবত চিঠিপত্র সম্পাদনা-প্রকাশনার ধীরগতি। চিঠিপত্র ও 888sport app রচনাবলি সংকলন ও সম্পাদনায় ব্রতী হয়েছিলেন পুলিনবিহারী সেন, কানাই সামন্ত, শোভনলাল গঙ্গোপাধ্যায়, চিত্তরঞ্জন দেব, জগদিন্দ্র ভৌমিক, শঙ্খ ঘোষ, সুবিমল লাহিড়ী, প্রশান্তকুমার পাল, অনাথনাথ দাস প্রমুখ। সাধনা মজুমদার, ভবতোষ দত্ত, নিরঞ্জন সরকার, দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুতপা ভট্টাচার্য, গোপালচন্দ্র রায়, সমীর সেনগুপ্ত, অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য, গৌরচন্দ্র সাহা, শোভন সোম, সাগর মিত্র, কুণাল সিংহ প্রমুখ চিঠিপত্রের বিভিন্ন খ- সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যাভবন ও পাঠভবনের শিক্ষকদের সংকলন কাজে নিয়োজিত করা হয়নি বা যায়নি। রচনাবলীর প্রথম খণ্ড সংকলিত য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র (১২৮৮ বঙ্গাব্দ) ব্যক্তিগত চিঠি নয়; ভারতী-সম্পাদক দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে প্রেরিত 888sport slot gameকাহিনির ধরনে লেখা নটি দীর্ঘ পত্রনিবন্ধ ওই সংগ্রহ। বাংলায় প্রথম চলতি ভাষায় রচিত বলে ওই পত্রাবলি বিশেষ তাৎপর্যবহ। চিঠির ভাষা-বিষয়ে কবি নিজেই বলেছেন :

আমার মতে যে ভাষায় চিঠি লেখা উচিত সেই ভাষাতেই লেখা হইয়াছে। আত্মীয়স্বজনদের সহিত মুখামুখি একপ্রকার ভাষায় কথা কহা ও তাঁহারা চোখের আড়াল হইবামাত্র আর-এক ভাষায় কথা কহা অসংগত বলিয়া বোধ হয়।

বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র-রচনাবলীর দ্বিতীয় খণ্ড গ্রথিত চিঠিপত্রকে সম্পাদক ‘নিবন্ধ’ অভিহিত করেছেন। অষ্টম খণ্ড কবিবন্ধু লোকেন্দ্রনাথ পালিতকে (১৮৬৫-১৯১৫) লেখা চিঠি চারটি ‘পত্রালাপ’ শিরোনামে গৃহীত (১২৯৮-৯৯ বঙ্গাব্দ)। ঊনবিংশ খণ্ড 888sport cricket BPL rateটি, বিংশ খণ্ড রাশিয়ার চিঠিতে চোদ্দোটি, একবিংশ খণ্ড ছন্দ গ্রন্থে সাতটি এবং সপ্তবিংশ খণ্ড পাঁচটি পত্র সংকলিত। শঙ্খ ঘোষ ও 888sport app-সম্পাদিত দ্বাত্রিংশ খণ্ড (১৪১৯) কয়েকটি চিঠি গ্রন্থ-সমালোচনা নামে মুদ্রিত হয়েছে।

সম্পাদক চারুচন্দ্র ভট্টাচার্য উলেস্নখ করেছিলেন :

‘ছিন্নপত্র’, ‘ভানুসিংহের পত্রাবলী’ এবং ‘পথে ও পথের প্রান্তে’ ভবিষ্যতে ‘রবীন্দ্র-রচনাবলী’র এক বা একাধিক খণ্ড 888sport app চিঠিপত্রের সহিত মুদ্রিত হইবে।

(‘বিজ্ঞপ্তি’, ষড়্বিংশ খ-, বিশ্বভারতী)

এই পরিকল্পনা বাস্তব রূপ পায়নি। দ্বাত্রিংশ [৩২] খণ্ড ‘গ্রন্থ-সমালোচনা’ বিভাগে কয়েকটি পত্র/ পত্রাংশ সংকলিত। আশালতা সিংহকে লেখা একটি চিঠি প্রথম প্রকাশ পায় রবীন্দ্র-বীক্ষায়; পরে দেশ শারদীয় 888sport free betয় (১৪০২) পুনর্মুদ্রিত। সূচনা ও শেষাংশ বাদ দিয়ে ওই চিঠি রূপ পেয়েছে গ্রন্থ-সমালোচনার। বন্দে আলী মিয়া, কান্তিচন্দ্র ঘোষ, ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, হিমাংশুভূষণ সরকার, প্রবোধেন্দুনাথ ঠাকুর, সুরেন্দ্রনাথ মৈত্র, হেমলতা দেবী, শচীন সেন, দেবেশ দাশ, পশুপতি ভট্টাচার্য প্রমুখকে লেখা চিঠি রচনাবলীর ৩২ খণ্ড গ্রন্থ-সমালোচনায় পরিণত; নিরুক্ত পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক প্রেমেন্দ্র মিত্রকে লেখা চিঠিও গ্রন্থ-সমালোচনা। চিঠিপত্র ও গ্রন্থ-সমালোচনার পার্থক্য সম্পর্কে সকলের ধারণা এক নয়।

বিশ্বভারতী গ্রন্থন-বিভাগ ছাড়াও কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, 888sport appর বাংলা একাডেমি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগসহ পশ্চিমবঙ্গের ও 888sport appর একাধিক প্রকাশনী রবীন্দ্রনাথের চিঠিপত্র গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেছে।

 

পাদটীকা

১. রবীন্দ্রনাথের একগুচ্ছ পত্র, 888sport app : বাংলা একাডেমী, ১৯৮৬; রবীন্দ্রনাথের চিঠি/ পারুল দেবীকে, নদিয়া : কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৮৭; কল্যাণীয়েষু প্রশান্ত, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ১৪১১ বঙ্গাব্দ; ভক্ত ও কবি, ওই, ১৪১৩ বঙ্গাব্দ; নিজের কথা, কলকাতা : মিত্র ও ঘোষ, ১৪১৮ বঙ্গাব্দ; রবীন্দ্রনাথের অপ্রকাশিত পত্রাবলী, 888sport app : পাঠক সমাবেশ, ২০০১; বিদ্বজ্জনদের কাছে লেখা রবীন্দ্রনাথের অগ্রন্থিত চিঠিপত্র, কলকাতা : পত্রলেখা, ২০১১; রবীন্দ্রনাথ : তাঁর চিঠি, তাঁকে চিঠি, 888sport app : মূর্ধন্য, ২০১১; রবীন্দ্রনাথের চিঠি, ভূপেন্দ্রনাথ সান্যালকে, কলকাতা : পত্রলেখা, ২০১৩ ইত্যাদি।

 

এখানে সংকলিত চিঠিগুলো আজ নাগাদ কবির কোনো বইয়ে ছাপা হয়নি। সাময়িকপত্র, পত্রপ্রাপকদের আত্মজীবনী-888sport sign up bonusকথা এবং তাঁদের 888sport free bet login থেকে এসব সংগ্রহ করেছি। অনুষ্টুপ, কোরক, দেশ, প্রবাসী, বইয়ের দেশ, বাহা, রবীন্দ্রভাবনা, রবীন্দ্রবীক্ষা, শান্তিনিকেতন পত্রিকা ও 888sport live football ইত্যাদি সাময়িকপত্র থেকে চিঠিগুলো সংগ্রথিত।

বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রভবন মহাফেজখানায় সংরক্ষেত নথি থেকেও কয়েকটি পত্র পেয়েছি।

তিরিশ থেকে আশি বছর বয়সে লেখা (১৮৯১-১৯৪০) এসব পত্রে কবির নানা ভাবনাবৈচিত্র্যের পরিচয় আছে। পত্রাবলির বিষয় : নতুন পত্রিকা প্রকাশের পরিকল্পনা; পূর্ববঙ্গ থেকে গ্রামীণ ছড়া সংগ্রহ করে দেওয়ার অনুরোধ; সুদীর্ঘকাল পরে যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের পর স্কুলের বন্ধুকে আমন্ত্রণ; নবীন কবি-যশোপ্রার্থীকে তাঁর প্রথম কাব্যের সীমাবদ্ধতা ধরিয়ে দেওয়া; মতের মিল না-থাকায় শ্রদ্ধেয় লেখকের বইয়ের সমালোচনা লেখার অপারগতা জ্ঞাপন; চীন সফরকালে বিশ্বভারতীর ও চৈনিক অধ্যাপক-বিনিময়ের সম্ভাবনা; নাটকের প্রথম অভিনয়ের পূর্বমুহূর্তে অদল-বদল ও নতুন চরিত্র সংযোজন এবং গানের 888sport free bet কমানো; নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তের লেখায় কবির সম্পর্কে অনুচিত ধারণা পোষণ বিষয়ে অনুযোগ; সফরসঙ্গী সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে সফরনামা প্রকাশের পরামর্শদান; প্রমথনাথ বিশীর কাব্য সম্পর্কে মিশ্র মতামত প্রকাশ; অন্নদাশঙ্কর রায়ের রাখী কাব্য পাঠের প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন এবং সংশোধনের পরামর্শ প্রদান; জগদীশ গুপ্তর কাব্য সম্পর্কে অভিমত দান; হিন্দুদের লেখায় হিন্দু-মনোভাব প্রকাশের বিষয়ে মুসলমানদের অভিযোগ-প্রসঙ্গে ক্ষুব্ধ কবির প্রতিক্রিয়া; বানান-সংস্কার বিষয়ে 888sport live chatী অসিতকুমার হালদারের 888sport live বিষয়ে মতপ্রকাশ; শান্তিনিকেতনের জনৈকা প্রাক্তন ছাত্রীর সন্তানের নামকরণের অনুরোধে বিরক্তি প্রকাশ করে নামকরণ; কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের 888sport app download apkর বই মনোযোগ না-দিয়ে পড়ে প্রথমে একবার মতামত দান এবং পরে মনোযোগ দিয়ে পড়ে আবার উলটো অভিমত প্রকাশ ইত্যাদি।

চিঠিগুলো কবি লিখেছিলেন শিলাইদহ, জোড়াসাঁকো, পিকিং, শান্তিনিকেতন, মংদু ও কালিম্পঙ থেকে। প্রাপকের ঠিকানা : কলকাতা, 888sport app, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, লখনৌ ও পিরোজপুর।

স্বীকৃতি : আলম খোরশেদ, মাহবুবুল হক, বাতিঘর, রবীন্দ্রভবন ও টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট।

 

 

চিঠিপত্র

শ্রীশচন্দ্র মজুমদারকে

[১৮৯১]

পত্র : ১

 

ভ্রাতঃ,

আমাদের হিতবাদী বলে একখানি সাপ্তাহিক সংবাদপত্র বেরোচ্চে। একটি বড় রকমের কম্পানি খুলে কাজে প্রবৃত্ত হওয়া যাচ্ছে। ২৫০০০ টাকা মূলধন। ২৫০ টাকা করে প্রত্যেক অংশ এবং একশ অংশ আবশ্যক। প্রায় অর্ধেক অংশের গ্রাহক ইতিমধ্যেই পাওয়া গেছে। কৃষ্ণকমল বাবুকে প্রধান সম্পাদক, আমাকে 888sport live football বিভাগের সম্পাদক এবং মোহিনীকে রাজনৈতিক সম্পাদক নিযুক্ত করা হয়েছে। বঙ্কিম, রমেশ দত্ত প্রভৃতি অনেক ভাল ভাল লোক লেখায় যোগ দিতে রাজী হয়েছেন। যাই হোক, ইতিমধ্যে দু-তিন মাসের লেখা আমার হাতে জড় না হলে আমাকে ভারি মুশকিলে পড়তে হবে। আবার, কথা হয়েছে প্রতি 888sport free betয় একটা করে ছোট গল্প থাকবে। তোমাকে এই সঙ্কটের সময় আমাকে সহযোগিতা করতে হচ্চে। গুটিকতক বেশ ছোট ছোট লঘুপাঠ্য 888sport live football 888sport live পাঠাতে হচ্চে। – যত ছোট হয় তত ভাল, অতএব সময়াভাবের ওজর ঠিক খাটবে না। বালকে তুমি যেমন বসন্ত উৎসব পাঠশালা প্রভৃতি পাড়াগাঁয়ের চিত্র দিয়েছিলে কিন্তু আমি তোমার কর্মস্থানেরও চিত্র দিতে কিম্বা তোমাকে ফরমাস করতে চাইনে। তুমি তোমার কর্মস্থানেরও চিত্র দিতে পার কিম্বা যা ইচ্ছা লিখতে পার এই প্রসঙ্গে আর-একটা খবর দেওয়া আবশ্যক – লেখকেরা কাগজের অংশ থেকে কিছু পরিমাণ পারিতোষিক পাবেন। – যাই হোক লেখা আমাকে যত শীঘ্র পার পাঠাবে। আর যদি এক-আধটা share নিতে ইচ্ছুক হও, তাও আমাকে লিখো।

 

পত্র : ২

সরলা রায় (মিসেস পি. কে. রায়)-কে

 

শিলাইদহ। কুমারখালি

১৭ আষাঢ় ১৩০০

[১ জুলাই ১৮৯৩]

ওঁ

মাননীয়েষু

ইংরাজিতে যেমন Nursery Rhymes আছে আমি সেইরূপ বাংলার সমস্ত প্রদেশের ছড়া সংগ্রহ করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছি। কতক কতক সংগ্রহও হইয়াছে। আপনি যদি পূবর্ববঙ্গ হইতে আপনাদের আত্মীয় পরিচিত কাহারো নিকট হইতে যথাসম্ভব আহরণ করিয়া দিতে পারেন ত বড় উপকার হয়। ছড়া যতই অর্থহীন সামান্য তুচ্ছ এবং চলিত হউক না কেন আমার নিকট তাহা বহুমূল্য। এই সমস্ত ছড়ার মধ্যে আমাদের সমাজের অনেক প্রাচীন ইতিহাস ও দৃশ্য প্রচ্ছন্ন হইয়া আছে এবং অনেক তুচ্ছ কথার মধ্যে গভীর কবিত্বের আস্বাদ পাওয়া যায়। যদি এরূপ সংগ্রহক্ষম কাহাকেও পান তবে তাঁহাকে বলিয়া দিবেন যেন গ্রাম্যতা অথবা কুরুচি দোষের জন্য কোন ছড়া বাদ না দেওয়া হয় এবং অর্থহীন শব্দসমষ্টিকেও সামান্য জ্ঞান না করেন। আপনি যদি এমন কাহাকেও না জানেন, তবে অনর্থক কষ্ট করিবেন না এবং আমাকেও মার্জ্জনা করিবেন।

আপনার নিকট হইতে বিদায় লওয়ার পরেও আমি কিছুকাল কলিকাতায় ছিলাম কিন্তু কাজে ব্যস্ত ছিলাম বলিয়া আপনার সহিত আর দেখা করিতে পারি নাই।

আমি এই ঘন বর্ষায় এখন বোটে, গোরাই নদীর উপরে। এখান হইতে দুই চারি দিনের মধ্যে ছাড়িব – অনেকগুলি ছোটো ছোটো নদীর মধ্য দিয়া নানা স্থানে 888sport slot game করিতে হইবে।

এতদিনে বোধ করি ডাক্তার রায় মসূরি হইতে ফিরিয়া আসিয়াছেন। আপনারা সকলে কেমন আছেন?

 

শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Mrs. P. K. Roy

Ballygunj Circular Rd.

Calcutta

 

 

পত্র : ৩

অক্ষয়কুমার মিত্রকে

 

ওঁ       1. Dwarkanath Tagore Lane

Jorasanko,

10th January 1895

১৬ই মাঘ, মঙ্গলবার

[২৯ জানুয়ারি, ১৮৯৫]

 

ভাই অক্ষয়!

বহুদিনের পর তোমার পত্র পাইয়া অতিশয় আহ্লাদিত হইয়াছি। পূর্বে দুই একখানা পত্র পাইয়া ঠিকানা না জানায় উত্তর দিতে পারি নাই।

তোমার পত্র পাইলেই সেই ইস্কুলের ছেলেবেলাকার বন্ধুদের কথা মনে পড়ে। যদিও নর্ম্যাল স্কুলের সমুখ দিয়া যাইবার সময় অসচ্চরিত্র বালকদের কথা মনে করিয়া এখনো সঙ্কুচিত হইয়া পড়ি তথাপি যখন তোমাদের মনে করি তখনি মনে করি সেইদিন আসুক, সেই আড়ি ভাব আর একদিন করি, সেই উঠানামা আর একদিন করি।

তুমি আমার এখনকার বয়োবৃদ্ধির গাম্ভীর্য্য দেখিলে হয়ত হাস্য করিবে, এক সময়ে তোমাদের কাছে এত ছেলেমানুষী করিয়াছি যে তোমাদের কাছে গম্ভীর হওয়া বাস্তবিক হাস্যজনক। তোমার পত্রপাঠে বোধ হইল যে, এখনো যে তোমার সহিত বন্ধুত্ব রহিয়াছে ইহাতে তুমি কিছু আশ্চর্য্য হইয়াছ। কিন্তু আশ্চর্য্য হইবার কারণ কিছুই নাই, আমরণ কাল তোমার নিকট আমার ও আমার নিকট তোমার ভালবাসা প্রাপ্য রহিবে। ইহার অন্যথা হওয়াই আশ্চর্য্যের কারণ। একদিন যদি আমার কাছে আইস তবে দেখিবে, অন্যের নিকট রবি যতই গম্ভীর হউক না কেন তোমার নিকট সেই নবম বর্ষীয় বালক; অভিমান করিয়া এখনও সে আড়ি করিতে পারে, মিটমাট করিয়া পুনরায় ভাব করিতে পারে। যদি এখানে আসিয়া রবিকে রুদ্ধহৃদয়, গম্ভীর বা গবির্বত মনে কর তবে আমার নিন্দা দেশময় রাষ্ট্র করিও। সেই রবি, যে, ইতিহাস, অঙ্ক বা ভূগোলের সময় শ্রেণীর সবর্বশেষে হাঁ করিয়া বসিয়া থাকিত, সে আজ দু’এক ছত্র 888sport app download apk লিখিতে পারিয়াছে বলিয়া কি তোমার নিকট গবর্ব করিতে পারে। তুমি আমার বাল্যকালের অজ্ঞতা দেখিয়া কত হাসিয়াছ, – তোমার কাছে বিজ্ঞতা গাম্ভীর্য্য দেখাইতে লজ্জা বোধ হইবে না?

বোধ হয় শীঘ্র তুমি একদিন এখানে আসিবে; তাহা হইলে বড়ই সন্তুষ্ট হইব। আজ আর অধিক লিখিলাম না।

রবি

পত্র : ৪

সত্যপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়কে

 

[শান্তিনিকেতন

ফাল্গুন ১৩০৮]

মার্চ ১৯০২

ওঁ

ভাই সত্য

এখানকার বিদ্যালয়ের যে ঘর হচ্চে তার ছাদের জন্যে টালি এবং ফ্রেমের কাঠ ও জান্লা দরজা কেনবার জন্যে আশুকে নগদ টাকা দিলে সে শীঘ্র কিনে এনে কাজ সারতে পারবে। নইলে বৃষ্টির সময় আস্চে, মাটির দেয়াল ধুয়ে গেলে বিস্তর লোকসান পড়বে –  ছাতটা অতি শীঘ্র হওয়া চাই – আমরা বড় ভয়ে ভয়ে আছি।

আমাদের বি, পাইন্ টেলিগ্রাফ আপিসে কাজ করে – সুরেন বলছিল। টেলিগ্রাফ আপিসের কর্ম্মচারীরা খুব সস্তায় বাইসিক্ল্ আনাতে পারে। রথী একটা বাইসিক্লের জন্যে ভারি ব্যাকুল হয়ে পড়েছে – পাইন তাদের আপিস থেকে কি শস্তায় জোগাড় করে দিতে পারে না? এখানে কাঁকরের উপর Kushion tyre হলেই ভাল হয় – Pneumatic tyreগুলো ফুটো হলে অনেক হাঙ্গাম।

এতদিন অতিথি ছিল বলে সময় পাইনি – আজ শান্তার জন্যে উত্তর লিখে পাঠালুম।

খেয়েছ যে শালগম                 না করিয়া কাল-গম

এই আমি বহুভাগ্য মানি,

তার পরে মিঠি মিঠি               লিখেছ স্নেহের চিঠি

তার মূল্য কি আছে না জানি!

তুচ্ছ এই উপহার                     কে জানিত কমলার

পদ্মসরোবর দিবে নাড়া,

শাল্গম মটন্রোষ্টে                      কবির অধর ওষ্ঠে

খুলি দিবে কাব্যের ফোয়ারা!

কিন্তু বড়দাদা ভাই,                বড় মনে দুঃখ পাই –

এ খেদ যাবে না প্রাণ গেলে –

শুনিতে হইল এও                    ভাগ্যবান তোমারেও

নাচের দোসর নাহি মেলে!

না হয় না হল বুড়ি                  তবুও ত ঝুড়িঝুড়ি

নাতিনীতে ঘরটি বোঝাই,

যারেই লইবে বাছি                  সেই ত উঠিবে নাচি

নাচিবার ভাবনা ত নাই!

এ কথা ভুলিলে যবে                বুঝায়ে কি আর হবে

ধিক তবে মোর শাল্গমে,

বুঝিলাম, তরকারী                 যত হোক্ দরকারী

তাহাতে কবিত্ব নাহি জমে।

আর না করিব ভুল,                এবার বসন্তে ফুল

তুলিয়া আনিব ভরি ডালা,

শাল্গম পেঁয়াজকলি                  জলে দিয়ে জলাঞ্জলি

পাঠাইব বকুলের মালা!

জগন্নাথকে বোলো আমার জন্যে আলিগড়ের মাখন চার প্যাকেট পাঠিয়ে দেয় যেন। বাইসিক্ল্টার জন্য একটু তাগিদ কোরো ত – রথী পাবে বলে খুব আশা করে ছিল কিন্তু ডাক্তার চাটুয্যে তাকে জুটিয়ে দিতে পারে নি বলে সে ভারি বিমর্ষ হয়ে গেছে। নতুনগুলো অনেক দাম দিয়ে কেনবার সামর্থ্য ত আমাদের নেই – যদি second hand কিম্বা পাইনের দ্বারা টেলিগ্রাফ আপিস থেকে সস্তায় জোগাড় করে দিতে পার তাহলে সুবিধা হয়।

আশুর সম্বন্ধে একটু বিবেচনা কোরো – তাকে ডেকে এনে কত কি চাই সেইটে ঠিক করে নিয়ে যাতে আর কিছুমাত্র বিলম্ব না হয় সেই রকম ব্যবস্থা কোরো। বিদ্যালয়ের কাজ বেশ চলে যাচ্চে।

রবিমামা

পত্র : ৫

সত্যপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়কে

[শান্তিনিকেতন]

২ নভেম্বর ১৯০৯

ওঁ

 

ভাই সত্য

তবে আসল কথাটা তোমাকে বলি। জোড়াসাঁকোর সঙ্গে তুমি সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন করে চলে যাচ্চ এতে আমার হৃদয় কোনোমতেই প্রসন্ন হচ্চে না। এক ত আজন্মকালের বন্ধন – বাড়ির সমস্ত ইঁটকাঠের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে, তার পরে তোমার উপরে খুব একটা নির্ভরের সম্পর্ক দাঁড়িয়ে গেছে। অমনিই ত জোড়াসাঁকো শূন্যপ্রায় – তুমি ওখানে থাক্লে তবু মনে হয় বাড়ি বলে একটা পদার্থ আছে – আমার ছেলেমেয়েরা সকলেই তোমাকে যেমন আত্মীয় বলে জানে এমন আর কাউকেই না। তুমি চলে গেলে বাড়িটা অনেকটা পান্থশালার মত হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষতঃ রথীকে মফস্বলেই কাটাতে হবে – তাহলে আর বাড়ি কাকে নিয়ে রইল! এই জন্যেই যতদিন পারা যায় তোমাকে এখানে ধরে রাখবার চেষ্টা করা যাচ্ছিল। কিন্তু শুধু কেবল ঘর দরজা নিয়ে ত তোমার ঘরকন্না চল্বে না। তোমার নিজের সবাই রইল অন্যত্র – তোমাকে এখানে আবদ্ধ রেখে কেবল কষ্ট দেওয়া। সেই জন্যেই তোমাকে ছুটি দিতে হল। জোড়াসাঁকো ত আমাদের পক্ষে ফাঁক হয়ে এসেছে এবারে তুমি গেলে আরো ফাঁক হয়ে যাবে। আমি আর তিন চার দিনের মধ্যেই কলকাতায় যাব। তার আগেই কি তুমি যেতে চাও? আমি খুব সম্ভব শনি কি রবিবারে গিয়ে পৌঁছব।

সুরেনকে বোলো মোহিনীর কাছ থেকে ও কৃষিব্যাঙ্ক থেকে যে টাকা গত বৎসরে ধার নিয়েছিলুম দ্বিপুরা তার তৃতীয়াংশ দেনা স্বীকার করে নিয়েছেন। আমি তাঁকে এক রকম করে বুঝিয়ে দিয়েছি। বেঙ্গল  ব্যাঙ্কের দেনার সুদও শতকরা ৯ টাকা হিসেবে ধরা হবে। কৃতী       প্রভৃতির দেনা তাঁরা ঠিক স্বীকার করতে প্রস্ত্তত নন – তাঁরা বলেন ওটা তাঁদের সম্মতি নিয়ে দেওয়া হয়নি।

Permanent lease আকারে লেখাপড়া করার প্রস্তাব করে খগেনকে একটা চিঠি লিখেছিলুম তার কোনো উত্তর পাইনি।

সুরেনকে বোলো কৃষিব্যাঙ্কটাকে লিমিটেড কম্পানি করে তুল্তে আর যেন দেরি করা না হয়। এখনি ওর একটা memorandum তৈরি করবার ভার যদি খগেনকে দেওয়া যায় ত ভাল হয়।

রথীর নীচের ঘরের আলমারিতে কাঁচ বসানো হয়েছে কি? মীরার ঘরটিকে ওর বেশ মনের মত করে সাজিয়ে দিতে ইচ্ছা করি। যদি কোনো আস্বাবের অভাব থাকে তাহলে সেটা পূরণ করে দেবার ব্যবস্থা কোরো। ঐ ঘরটিকে নিজের ঘর বলে মনে করে যাতে ওর মন বেশ বসে যায় তাই করে দিতে হবে। বোধ হয় দক্ষিণের দরজায় পরদা করে দিলে ওর ঘরের privacy থাকে। নতুন বাড়ির দোতলায় মীরার শোবার ঘর ঠিক হয়ে গেছে?

আমার যে ঘরে বসবার [ব্যবস্থা] করেছ সেখানে একটা ইলেক্ট্রিক আলোর এবং তার পূবের দিকে হাফ দরজার বন্দোবস্ত করতে হবে – এই ভারটা কাউকে দিয়ো। ঐ ঘরে পাখার একটা ভূমিকা করে রেখে দিতে বোলো – এর পরে গরমের সময় পাখা খাটিয়ে দিলেই চল্বে।

জগন্নাথ বেচারা মরে গিয়ে মনে বড় বেদনা বোধ করচি। আমার প্রতি ওর খুব একটা নির্ভর ও ভক্তি ছিল – ওর মত আর কাউকে শীঘ্র পাব না।

১৬ই কার্ত্তিক ১৩১৬                                                  ইতি

রবিমামা

 

পত্র : ৬

কালিদাস রায়কে

 

জোড়াসাঁকো

[৬ নভেম্বর ১৯০৬]

কল্যাণীয়েষু

এগুলি তোমার কাঁচা বয়সের লেখা – ইহার উপরে অধিক ভরসা রাখিয়ো না – ক্রমে বয়োবৃদ্ধি ও অভ্যাসের সহিত যখন তোমার শক্তি পরিণতি লাভ করিবে তখন বাহিরের সমালোচনার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়ো। এখন অনেকদিন পর্যন্ত নিন্দা প্রশংসায় তোমার কোনো উপকার হইবে না। যদি কাব্য রচনায় তোমার অন্তরের অনুরাগ থাকে তবে অন্য কোনো ফল লাভের আকাঙক্ষা মনে না রাখিয়া আপাততঃ সেই আনন্দে লিখিতে থাক, পরে সময় উপস্থিত হইলে পাঠক সমাজের সমক্ষে উপস্থিত হইলে সার্থকতা লাভ করিবে। ইতি – ২২ শে কার্ত্তিক, ১৩১৩

 

শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

পত্র : ৭

শুধাংশুবিকাশ রায়কে

 

ওঁ

শিলাইদহ

কুমারখালি

২ জ্যৈষ্ঠ

সবিনয় নিবেদন

আমি বহুপূবের্ব আপনার পূবর্বপত্রের উত্তর দিয়াছি কেন পান নাই বুঝিতে পারিতেছি না।

গোবিন্দমাণিক্যের জীববলি নিষেধ ইতিহাসে কোথাও নাই, উহা আমার কল্পনামাত্র।

‘রাজর্ষি’ নামক 888sport alternative linkের পরিশিষ্টভাগে যে ইতিহাসটুকু সন্নিবেশিত হইয়াছে গোবিন্দমাণিক্য সম্বন্ধে তাহার অধিক আমি আর কিছুই জানি না।

ভ্রাতার সহিত যুদ্ধ করিতে অনিচ্ছুক হওয়ায় তিনি রাজ্য ত্যাগ করিয়া চট্টগ্রাম ও আরাকানে স্বেচ্ছাক্রমে নিবর্বাসন যাপন করিয়াছিলেন এ কথা ইতিহাসে পাওয়া যায়।

শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

পত্র : ৮

শুধাংশুবিকাশ রায়কে

 

ওঁ

 

বোলপুর

প্রিয়বরেষু

পাঠ্যপুস্তকের তালিকা কেন চাহিতেছেন? পাঠ্যপুস্তক আছে কোথায় যে তালিকা দিব? ছেলেদের পড়াইতে পড়াইতে প্রত্যহ পাঠ্যপুস্তক তৈরি হইয়া উঠিতেছে। কেবল নিম্নশ্রেণীতে ইংরাজি সোপান এবং সংস্কৃত শিক্ষার জন্য সংস্কৃত প্রবেশ বইখানি ব্যবহার করা হইয়া থাকে। আপনি অথবা বামনদাসবাবু যদি এক সপ্তাহকাল এখানকার নিয়ম ও প্রণালী দেখিয়া যান তবে সমস্ত বুঝিবেন, নহিলে পত্র লিখিয়া বুঝানো অসম্ভব।

তবে হরিচরণকে বিদায় করিয়া দেওয়া যাক্।

পলাতক ছেলেটির খবর কি? তাহার এরূপ প্রবৃত্তি ও নৈপুণ্য আছে পূবের্ব আভাসমাত্র পাইলে আমরা প্রস্ত্তত থাকিতে পারিতাম। পলায়নের সম্ভবপরতা কল্পনাও করি নাই।

ইতি ২৭ শে ফাল্গুন, ১৩১৩

 

ভবদীয়

শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

 

পত্র : ৯

অক্ষয়চন্দ্র সরকারকে

 

ওঁ

শিলাইদহ

নদিয়া

888sport apk download apk latest versionস্পদেষু

বিনয় সম্ভাষণপূবর্বক নিবেদন-

888sport live footballের আসর ত পরিত্যাগ করিয়াছি। লেখা এবং বলা একেবারে বন্ধ হইয়াছে তাহা নহে কিন্তু বন্ধ করিবার সময় হইয়াছে। সময় যে হইয়াছে তাহার একটা প্রমাণ এই যে লিখিতে আর ইচ্ছাই হয় না – নিশ্চয়ই তাহার কারণ এই যে শক্তি কমিয়াছে এবং মন অন্য দিকে গিয়াছে। শক্তির যখন হ্রাস হয় তখন হিসাব করিয়া চলিতে না পারিলে ফতুর হইতে হয়। সেইজন্য আজকাল চারিদিক হইতে ব্যয় সঙ্কোচ করিয়াছি – ইহাতে লোকে অনেক সময় নিন্দা করে কিন্তু সামর্থ্যের বেশি নবাবী করা আরো অধিক নিন্দনীয়।

তার পরে আপনার বইয়ের সমালোচনা করিতে বসা আমার পক্ষে অশিষ্টতা হইবে। যদি আপনার সহিত সকল অংশে বা অনেকটা পরিমাণে মতের মিল হইত তবে চিন্তা করিতাম না। সমাজকে সংসারকে আপনি যেদিক হইতে দেখেন আমি সেদিক হইতে দেখি না এই কারণে আপনাকে বিচার করিতে বসা আমাকে শোভাই পাইবে না। মঙ্গলকে যিনি যেভাবে উপলব্ধি করিতেছেন তিনি তাহাকে সেই ভাবেই প্রকাশ করিবেন ইহাই ভাল; তাহাতেই কাজ হইবে। তাহার উল্টা পথে কাজের চেয়ে অকাজ বেশি হয়। অন্তত প্রতিবাদ করিবার, তর্ক করিবার প্রবৃত্তি আমার আর নাই, তাহাতে যে সময় যায় সে সময়টা ব্যয় করিবার মত সম্বল আমার ত দেখি না। আপনি আমার মাননীয় – দয়া করিয়া আমাকে এমন অনুরোধ করিবেন না যাহা পালন করিতে গেলে চিত্তপ্রসাদ নষ্ট হইবে।

আপনি কেঁদুলে যাইতে ইচ্ছা করিয়াছেন। স্প্রিংযুক্ত একটা গাড়ি আমাদের আছে সেটা অম্নিবাস্-জাতীয়। তাহাতে এক আধ মাইল চলে কিন্তু দূরে যাইতে হইলে উপযুক্ত গরু পাইবেন না। ঘোড়ার গাড়ি আছে, তাহার ঘোড়া দুটি প্রাচীন, তাহাদিগকে দূর যাত্রায় লইলে তাহাদের পক্ষে মহাপ্রয়াণ হইবে। যদি সম্ভব মনে করেন তবে বড় গরুর গাড়িটাকে লইয়া একবার চেষ্টা দেখিতে পারেন। কিন্তু বর্ষার সময়ে কেন? এখন কাদার পথে বরাবর কোনো ভারি গাড়ি চলিবে কিনা সন্দেহ। পৌষ সংক্রান্তির মেলার সময় যদি যান তবে সকল প্রকারেই সুবিধা হইতে পারিবে।

ইতি ১লা আষাঢ় ১৩১৮

 

আপনার

শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

 

 

পত্র : ১০

প্রবাসী-সম্পাদককে

 

ওঁ

বেশ মনে হচ্ছে, এদের সঙ্গে আমাদের যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা হবে। [বিধুশেখর] শাস্ত্রী মহাশয়কে এখানে পাঠান দরকার আছে। আমাদের প্রস্তাব শুনে এরা ভারি খুসী হয়েছে। এরাও এখান থেকে অধ্যাপক পাঠাতে সম্মত আছে। তাহলে বিশ্বভারতীতে চীনীয় ভাষা শেখ্বার সুব্যবস্থা হবে। চীনীয় থেকে হারান সংস্কৃত বইয়ের তর্জমারও সুবিধা হতে পারবে।

বোধ হয় মে মাসের শেষ পর্যন্ত আমাদের এখানকার পালা। তারপরে জাপানে জুনের মাঝামাঝি। তারপর জাভা, শ্যাম, কাম্বোডিয়া প্রভৃতি শেষ করতে জুলাই আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি লাগতেও পারে। তারপরে দেশে ফিরবো, এইরকম আন্দাজ করছি।

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১লা বৈশাখ ১৩৩১

১৪ এপ্রিল ১৯২৪

পত্র : ১১

গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে

 

 

 

ওঁ

 

 

Santiniketan

Bengal, India

[Jan. 1926]

 

কল্যাণীয়েষু

গৃহপ্রবেশ আরো কিছু বদল করে দিলুম। একটি নতুন Character যোগ করেছি – টুক্রি বলে ছোট মেয়ে। অত ছোট মেয়ে ওরা জোটাতে পারবে ত? কিছু কিছু ছেঁটেও দিয়েছি। বড় ঘনঘন গান ছিল, কমিয়ে দিলুম। তোমার সেই গৃহপ্রবেশ বইখানায় কিছু জোড়াতাড়া করেছিলুম – সেগুলোও এই কপির মধ্যে যোগ করে দিয়ো। কপিটা ফেরৎ চাই – কারণ ছাপতে দিতে হবে। আগামী ৪ঠা তারিখে কলকাতায় যাব তখন তোমাদের সঙ্গে মোকাবিলায় কথা হতে পারবে।

রবিকাকা

 

পত্র : ১২

নরেশচন্দ্র সেনগুপ্তকে

 

 

কলিকাতা

[১৯২৭]

 

 

বিনয় সম্ভাষণপূবর্বক নিবেদন

সামাজিক 888sport liveে আপনার সাহসিকতা দেখিয়া আমি আপনাকে প্রশংসা করিতেছি। সে সময় সমাজবিরুদ্ধ মত অসঙ্কোচে প্রকাশ করা সহজ ছিল না। গল্পরচনায় যদিও কিছুর প্রশংসা করিতে হয় তাহা ভাষাবৈগুণ্য – কল্পনা শক্তির – সামাজিক দুঃসাহসিকতা গল্প888sport live footballের মুখ্য ও প্রশংসাযোগ্য পরিচয় হইতে পারে না। যখন আপনার গল্পের বহির বিজ্ঞাপনে উক্ত প্রশংসা দেখিতে পাই তখন বিস্মিত হইয়াছিলাম এবং যে কেহ আমাকে এ সম্বন্ধে প্রশ্ন
করিয়াছেন তাঁহাদিগকে এই এভাবেই উত্তর দিয়াছি। বিনা প্রশ্নে এ কথা লইয়া আলোচনা করিবার কথা সম্প্রতি বা পূবের্ব আমার মনেও উদয় হয় নাই।

আপনার সহিত মতের বা রুচির পার্থক্য লইয়া আমি ক্ষক্ষাভ অনুভব করি নাই। ‘888sport live football ধর্ম্ম’ 888sport liveে আমি আপনাকে লক্ষ্য করি নাই; আপনার গল্প আপনি কি ভাষায় ও কিভাবে লিখেন তাহা আমি জানিও না। সাময়িকপত্রে বা গ্রন্থে আপনার যে গল্প বা 888sport app download apk পড়িয়া আমি লজ্জা ও দুঃখ বোধ করিয়াছি আপনার লেখা
তাহার অন্তর্গত নহে। সুদীর্ঘকাল আপনার লেখা পড়িবার অবকাশ হয় নাই।

যখন আমি বিদেশে ছিলাম আপনি আমাকে মিথ্যাচারী প্রমাণ করিবার জন্য বিশেষ আগ্রহের সহিত চেষ্টা করিয়াছেন। এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সাক্ষেয়র অপেক্ষামাত্র করেন নাই। হয় আপনি বিশ্বাস করিয়াছেন এরূপ মিথ্যাচার আমার পক্ষে অসম্ভব নহে, নয় বিশ্বাস না করিয়া লিখিয়াছেন। ইহা মত বা রুচিগত আচরণ নহে, চরিত্রগত, এই কারণেই ইহা ক্ষক্ষাভের বিষয়। ইতি ১৩ অগ্রহায়ণ

 

[রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর]

প্রাসঙ্গিক তথ্য

পত্র : ১

হিতবাদী : সাপ্তাহিক, প্রথম প্রকাশ ৩০শে মে ১৮৯১। প্রথম সম্পাদক : কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য (১৮৪০-১৯৩২)। রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, ‘আমার ছোটগল্প লেখার সূত্রপাত এখানেই।’ কবি প্রতি সপ্তাহে ছোটগল্প, সমালোচনা ও 888sport live লিখতেন। ‘অকাল বিবাহ’ 888sport liveটি এই পত্রিকায় ছাপা হলে চন্দ্রনাথ বসুর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বাদ-প্রতিবাদ হয়েছিল।

এই পত্রের প্রাপক শ্রীশচন্দ্র মজুমদার (১৮৬০-১৯০৮)। কবির সঙ্গে তিনি পদরত্নাবলী (১৮৮৫) সম্পাদনা করেন। তাঁকে লেখা আটটি চিঠি ছিন্নপত্রাবলীতে গ্রথিত। মানসী কাব্যের ‘পত্র’ ও ‘শ্রাবণের পত্র’ 888sport app download apk দুটি তাঁর উদ্দেশে লেখা। তিনি গল্পগুচ্ছের (প্রথম অংশ, ১৩০৭ বঙ্গাব্দ) প্রকাশক। কবি তাঁর ফুলজানি 888sport alternative linkের সমালোচনা লেখেন (‘আধুনিক 888sport live football’, রবীন্দ্র-রচনাবলী-৯)। শ্রীশচন্দ্রকে কল্পনা কাব্য (১৯০০) উৎসর্গ করেন কবি।

সংকলিত চিঠিটি বিশ্বভারতী পত্রিকা (শ্রাবণ ১৩৪৯) থেকে উদ্ধৃত, দেশ, রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষপূর্তি 888sport free bet, ১৩৬৯।

 

পত্র : ২

প্রাপক সরলা রায় [মিসেস পি. কে. রায়] – প্রেসিডেন্সী কলেজের অধ্যাপক ড. প্রসন্নকুমার রায়ের স্ত্রী। তাঁর অনুরোধে মায়ার খেলা (১২৯৫ বঙ্গাব্দ) রচিত এবং তাঁকেই উৎসর্গকৃত। এই চিঠির এক বছর পর কবি সাধনা পত্রিকায় (আশ্বিন-কার্তিক ১৩০১)‘মেয়েলী ছড়া’ 888sport live প্রকাশ করে লেখেন, ‘…ছেলে ভুলাইবার জন্য যে সকল মেয়েলী ছড়া প্রচলিত আছে, কিছুকাল হইতে আমি তাহা সংগ্রহ করিতে প্রবৃত্ত ছিলাম।’ কবি একই সময়ে বঙ্গীয় 888sport live football-পরিষৎ-পত্রিকায় ছড়ার সংগ্রহ প্রকাশ করেন। লোক888sport live football (১৯০৭) বইয়ে ‘ছড়ার সংগ্রহ’ সংকলিত।

সংকলিত চিঠিটি রবীন্দ্রবীক্ষা (১৫ শ্রাবণ, ১৩৯৩) এ প্রথম প্রকাশিত।

 

পত্র : ৩

প্রাপক অক্ষয়কুমার মিত্র (১৮৫৮-১৯৩৮) কবির সঙ্গে নর্মাল স্কুলে মেধাবী ছাত্র ছিলেন। দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। পরস্পরের প্রতি প্রীতিপূর্ণ ভাব অক্ষয়কুমারের জীবনকাল পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ ছিল বলে তাঁর পৌত্রী ঊষা দত্ত রবীন্দ্রবীক্ষার (১২ পৌষ, ১৩৯১) সম্পাদককে জানিয়েছেন। তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজের স্নাতক ছিলেন। কবি বাল্যবন্ধুর বিয়েতে উপস্থিত হয়ে স্বরচিত বই উপহার দিয়েছিলেন। উভয়ের মধ্যে পত্রালাপ ছিল। রবীন্দ্রনাথ জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে যেসব নাট্যাভিনয়ে অংশ নিতেন অক্ষয়কুমার প্রত্যেকটিতে উপস্থিত থাকতেন।

চিঠিটি রবীন্দ্রবীক্ষায় (১২ পৌষ, ১৩৯১) প্রথম প্রকাশ পায়।

 

পত্র : ৪

প্রাপক সত্যপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায় (১৮৫৯-১৯৩৩) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড় মেয়ে সৌদামিনীর ছেলে। কবির দ্বিতীয়বার ইংল্যান্ড যাত্রাকালে সত্যপ্রসাদ সহযাত্রী ছিলেন (তবে, উভয়ে মাদ্রাজ থেকে ফিরে আসেন)। জোড়াসাঁকোর জমিদারির সদর সেরেস্তায় কাজকর্ম দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন (১৮৯৭-১৯০৯)। উভয়ের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। তিনি বরোদায় মারা যান। পত্রে সংযুক্ত 888sport app download apkটি সত্যপ্রসাদের নাতনি শান্তার জন্যে পাঠিয়েছিলেন (প্রহাসিনী কাব্যে সংকলিত)। জীবন888sport sign up bonusতে রবীন্দ্রনাথ তাঁর বয়োজ্যেষ্ঠ ভাগ্নের কথা বিস্তারিত লিখেছেন; গগনেন্দ্রনাথ-অঙ্কিত সত্যপ্রসাদের প্রতিকৃতিটি জীবন888sport sign up bonusতে মুদ্রিত।

পত্র : ৫

এই পত্রে বোঝা যায় কবি জোড়াসাঁকোর সেরেস্তার ম্যানেজার ভাগ্নে সত্যপ্রসাদের ওপর কতটা নির্ভর করতেন। আরো জানা যায় ‘আসমানদার’ কবি সাংসারিক ও বৈষয়িক ব্যাপারে কতটা মগ্ন ছিলেন।

 

পত্র : ৬

প্রাপক কবি কালিদাস রায় (১৮৮৯-১৯৭৫)। ১৮ বছর বয়সে প্রকাশিত কুন্দ (১৩১৩) কাব্য সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ এ অভিমত জানান। তিনি ছিলেন চৈতন্যমগ্ন-রচয়িতা লোচন দাসের বংশধর। তাঁর 888sport app কাব্যের মধ্যে রয়েছে : পর্ণপুট, খুদকুঁড়া, লাজাঞ্জলি, হৈমমত্মী, বৈকালী, ব্রজবেণু, সন্ধ্যামণি, ঋতুমঙ্গল, চিত্তচিতা, রসকদম্ব, বলস্নরী ও পূর্ণাহুতি ইত্যাদি। তিনি আনন্দ 888sport app download bd ও রবীন্দ্র 888sport app download bd লাভ করেন। বিশ্বভারতী তাঁকে ‘দেশিকোত্তম’ ও রবীন্দ্রভারতী ডি.লিট উপাধিতে সম্মানিত করে।

 

পত্র : ৭

প্রাপক সুধাংশুবিকাশ রায়ের (১২৮২-১৩৬০ বঙ্গাব্দ) আদি নিবাস 888sport app জেলার মানিকগঞ্জে। প্রেসিডেন্সী কলেজের স্নাতক। কর্মজীবনের সূচনা গিরিডি স্কুলে, এখানে রবীন্দ্রজীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় ও 888sport apkী জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ তাঁর ছাত্র ছিলেন। ১৯০৩-এ গিরিডিতে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয়। তাঁর ভাই হিমাংশুপ্রকাশ শান্তিনিকেতনের প্রথম যুগের শিক্ষক। তাঁর সূত্রে প্রভাতকুমার শান্তিনিকেতনে আসেন।

 

পত্র : ৮

হরিচরণ বলতে এখানে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়-রচিত পাঠ্যপুস্তক বোঝানো হয়েছে। ইংরেজি সোপানসংস্কৃত প্রবেশ রবীন্দ্রনাথ-রচিত বিদ্যালয়ের নিম্নশ্রেণীর পাঠ্যবই।

 

পত্র : ৯

প্রাপক অক্ষয়চন্দ্র সরকার (১৮৪৬-১৯১৭) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-সম্পাদিত বঙ্গদর্শনের নিয়মিত লেখক। সাপ্তাহিক সাধারণী (১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দ) ও মাসিক নবজীবন (১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দ) সম্পাদনা করেন। সারদাচরণ মিত্রের সহযোগে কয়েক খণ্ড প্রাচীন কাব্যসংগ্রহ (১২৮১-৮৩ বঙ্গাব্দ) সংকলন করে বঙ্কিম ও রবীন্দ্রনাথের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ওই কাব্যসংগ্রহ সম্পর্কে 888sport sign up bonus তাঁর চারণ করেছেন জীবন888sport sign up bonusতে :

… প্রাচীন কাব্যসংগ্রহ সে সময়ে আমার কাছে একটি লোভের সামগ্রী হইয়াছিল।… বিদ্যাপতির দুর্বোধ বিকৃত মৈথিলী পদগুলি অস্পষ্ট বলিয়াই বেশি করিয়া আমার মনোযোগ টানিত। আমি টীকার উপর নির্ভর না করিয়া নিজে বুঝিবার চেষ্টা করিতাম। বিশেষ কোনো দুরূহ শব্দ যেখানে যতবার ব্যবহৃত হইয়াছে সমস্ত আমি ছোটো বাঁধানো খাতায় নোট করিয়া রাখিতাম।…

কবির ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী (১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দ) রচনায় ওই পদগুলির প্রভাব লক্ষ করা যায়।

রবীন্দ্র-888sport live football বিশেষজ্ঞ শোভনলাল গঙ্গোপাধ্যায় ও চিত্তরঞ্জন দেবের অনুমান : ‘নবীন রবির লেখনী-নিঃসৃত অভিনব পদগুলি পড়েই… অক্ষয়চন্দ্র রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে আগ্রহী হন এবং সম্ভবত পত্র দ্বারা প্রথম সংযোগ স্থাপন করেন।’ (দেখুন, রবীন্দ্রবীক্ষা : ১০ পৌষ, ১৩৯০, পত্র-প্রসঙ্গ, পৃ ২০-২১)

রবীন্দ্রনাথের ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের জীবনী’ ব্যঙ্গ রচনাটি নবজীবনে প্রকাশ পায় (শ্রাবণ, ১২৯১)। সূত্র : ওই।

অক্ষয়চন্দ্রের পুত্র অচ্যুতচন্দ্র শান্তিনিকেতনের ছাত্র ছিলেন। কবির আটটি চিঠি রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষেত। চিঠিগুলি রবীন্দ্রবীক্ষায়  (পৌষ ১৩৯০) প্রকাশ পায়। রবীন্দ্রবীক্ষার সম্পাদক ‘পত্র-প্রসঙ্গে’ উলেস্নখ করেছেন :

অক্ষয়চন্দ্রের 888sport live football সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের প্রায় নীরবতা সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথের ‘অচলায়তন’ নাটক-সমালোচনায় অক্ষয়চন্দ্র মুখর হয়েছিলেন। প্রবাসী পত্রে (কার্তিক ১৩১৮) ‘অচলায়তন’ প্রকাশিত হলে ‘আর্যাবর্তে’ (কার্তিক ১৩১৮) এর সমালোচনা করেন ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। উক্ত সমালোচনার উত্তরে রবীন্দ্রনাথের পত্র প্রকাশিত হয় ‘আর্যাবর্তে’র অগ্রহায়ণ 888sport free betয়। রবীন্দ্রনাথের প্রত্যুত্তর-সংবলিত ‘আর্যাবর্তে’ই অক্ষয়চন্দ্র প্রকাশ করেন ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়-প্রণীত ‘ফোয়ারা’ নামক পুস্তকের সমালোচনা এবং সেই সূত্রে ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়-কৃত ‘অচলায়তন’ সমালোচনার ত্রম্নটিবিচ্যুতি প্রদর্শন প্রসঙ্গে অচলায়তনের লেখক রবীন্দ্রনাথের বিরূপ সমালোচনা। অক্ষয়চন্দ্র-কৃত বিরূপ সমালোচনার প্রতিক্রিয়ায় রবীন্দ্রনাথ ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে-পত্র লেখেন ললিতকুমারের পুত্র শ্রীসলিলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে সেই পত্রের শেষাংশ ইতিপূর্বে ‘অচলায়তন’-গ্রন্থের ‘গ্রন্থপরিচয়ে’ প্রকাশিত।

প্রথমাংশ এখানে সংকলিত হল :

‘সবিনয় নমস্কারপূবর্বক নিবেদন,

অক্ষয়বাবু আপনার উপর রাগ করিয়া আমাকে আঘাত করিয়াছেন এ কথা আপনি ঠিক ঠাহর করেন নাই। অচলায়তন সমালোচনায় আপনি একেবারে মৃত্যুবাণ ছাড়েন নাই বলিয়া তিনি আপনাকে উপলক্ষ করিয়া আমাকেই লক্ষ্য করিয়াছেন। তিনি আপনাকে পরামর্শ দিয়াছেন, যে, হয় এসপার নয় ওসপার – ল্যান্সেট লইয়া ফোড়াকাটা সমালোচনা নয় – খাঁড়া লইয়া একেবারে নিঃশেষে সারিয়া ফেলাই সনাতনী চিকিৎসা। ক্ষত্রিয় মতে সমালোচনা কেমন করিয়া করিতে হয় ব্রাহ্মণকে তিনি তাহার উপদেশ দিয়াছেন এবং তাহার নমুনাও দেখাইয়াছেন। কিন্তু এরূপ 888sport live footballিক গু-াগিরি যাহারা নূতন হঠাৎ ক্ষত্রিয় হইয়াছেন তাঁহাদিগকেই শোভা পায়, ইহা বুনিয়াদি ঘরের কায়দা নহে। কোনো বিষয়ের দুই দিক দেখিয়া সত্য বিচার করা অকর্ত্তব্য এরূপ অদ্ভুত উপদেশ সনাতনী বা নূতনী কোনো সংহিতায় আজ পর্যন্ত দেখা যায় নাই। ইহা নিতান্তই ক্রোধান্ধতার উন্মত্ত প্রলাপ।

এরূপ রচনা পড়িলে আমার লজ্জা বোধ হয়। কারণ, যিনি লেখক তিনি বয়োবৃদ্ধ। তিনি হঠাৎ অসংবৃত হইয়া উঠিলে অত্যন্ত অশোভন হয়। মানুষ বিচলিত হইলেই তাহার দুর্বলতা প্রকাশ হইয়া পড়ে – কিন্তু সেটা যদি সরলভাবে প্রকাশ পায় তবে তাহাতে তেমন দোষ হয় না; যদি স্বরচিত বিচারকের আসনের উপর চড়িয়া বসিয়া বিচারকের ভড়ং করিয়া অন্তর্দাহকে অসংযতরূপে ব্যক্ত করা হয় তবে সেটা লজ্জাকর হইয়া পড়িবেই। কারণ, নির্লজ্জতার মতো লজ্জাজনক আর কিছুই হইতে পারে না। তিনি ছাড়া বঙ্গ888sport live footballে আর কেহ সমালোচনা করিতে জানেন না এই অভিমান এমন প্রগলভভাবে লেখক যদি প্রকাশ না করিতেন তবে তিনি রাগের মাথায় যাহা তাহা যেমন তেমন করিয়া বলিলেও আমাদের পক্ষে এমন সংকোচের কারণ হইত না। বাদী প্রতিবাদীতে মাথা ফাটাফাটি হইয়াই থাকে কিন্তু ন্যায়পরতার অহংকার ঘোষণা করিয়া জজ সাজিয়া কেহ লাঠি হাতে দাঙ্গা করিতে আসিলে তাহাতে যত বড়ো দুর্ঘটনা ঘটুক তথাপি তাহা প্রহসন হইয়া দাঁড়ায়।

অক্ষয়বাবু যাহাকে যথার্থ সমালোচনা বলিয়া প্রচার করিতেছেন সেরূপ সমালোচনা আমি যত সহিয়াছি এমন বোধ হয় আর কেহ নহে। তাহার দ্বারা 888sport live footballের শ্রীবৃদ্ধি সাধন হইয়াছে কিনা সে বিচার আমি করিতে চাই না; কিন্তু আমার তাহাতে অনিষ্ট হয় নাই, ভালোই হইয়াছে। একান্ন বৎসর বয়স নিতান্ত কম নয় – আশা করি, আরো যখন বয়স হইবে তখন প্রবীণ বয়সের প্রগলভতার অধিকার দাবি করিয়া নিজের চিত্তচাঞ্চল্যকে 888sport live footballের প্রকাশ্য সভায় অনাবৃতভাবে উপস্থিত করিতে লজ্জাবোধ করিব। দেশের প্রবীণ সমালোচকদের হাতে যদি প্রশংসা লাভ করিতাম তবে বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে 888sport live footballক্ষেত্রে আত্মসংবরণ করা হয়তো উত্তরোত্তর অসাধ্য হইত।… ইতি ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৩১৮ [১৩ ডিসেম্বর, ১৯১১]

উদ্ধৃত, শোভনলাল গঙ্গোপাধ্যায়-সম্পাদিত, পত্র-প্রসঙ্গ, রবীন্দ্রবীক্ষা : ১০ পৌষ, ১৩৯০, পৃ ২১-২২।

 

পত্র : ১০

প্রবাসী পত্রিকায় (জ্যৈষ্ঠ ১৩৩১) কবির চিঠির এই অংশ মুদ্রিত হয়েছিল, পরে সাময়িকপত্রে রবীন্দ্রপ্রসঙ্গ : প্রবাসী (টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ১৯৭৬) সংকলনে গৃহীত, পৃ ৭৫। ১৯২৪-এর ১২ই এপ্রিল থেকে ৩০শে মে পর্যন্ত কবি চীনে ছিলেন। এপ্রিলের মাঝামাঝি এ-পত্র লিখিত। রবীন্দ্রনাথ চীনে যে-সব বক্তৃতা দিয়েছিলেন তার বেশিরভাগ Talks in China গ্রন্থে গ্রথিত। ১৯২৪-এ মুদ্রিত বইটির প্রচার বন্ধ করে ১৯২৫-এ আর-একটি সংস্করণ প্রকাশ করেন রবীন্দ্রনাথ। দেখুন, শিশিরকুমার দাশ, বিতর্কিত অতিথি, (১ম প্রকাশ ১৩৯২, দ্বি-স ২০১১)। কবির এই সফরের এক যুগ পরে শান্তিনিকেতনে চীন-ভবন স্থাপিত হয়; ভবন ও গ্রন্থাগার চৈনিক সরকারের অর্থে প্রতিষ্ঠিত (এপ্রিল ১৯৩৭)।

 

পত্র : ১১

প্রাপক গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬৬-১৯৩৮) – দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুজ গিরীন্দ্রনাথের পৌত্র ও গুণেন্দ্রনাথের পুত্র। ব্যঙ্গচিত্রী। তাঁর অনুজ অবনীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রভবনে গগনেন্দ্রনাথকে লেখা কবির চিঠি সংরক্ষেত। রবীন্দ্রবীক্ষা, ১৪-২৩ ডিসেম্বর, ১৯৮৫, সংকলনে ১৫টি চিঠি মুদ্রিত; পৃ ২৯-৪৩।

রবীন্দ্রনাথের গৃহপ্রবেশ নাটক ১৯২৫ সালে প্রকাশিত ও কলিকাতা রঙ্গালয়ে প্রথম অভিনীত হয়। এই অভিনয়-উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথ নাটকটিতে অনেক পরিবর্তন করেন।

 

পত্র : ১২

প্রাপক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত (জ. টাঙ্গাইল, ১৮৫২-১৯৬৪) আইনজীবী, প্রগতিশীল 888sport live footballিক। কলকাতা ও 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ছিলেন। ভারতীয় আইন কমিশনের সদস্য (১৯৫৬)। 888sport live, গল্প, 888sport alternative link ও নাটক লিখেছেন। তাঁকে নিয়ে 888sport live footballে অশ্লীলতা ও নীতি-দুর্নীতির বিতর্ক হয়। ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির সভাপতি (১৯২৫-২৬)। নিখিল ভারত প্রগতি লেখক সংঘের কলকাতা অধিবেশনের সভাপতি (১৯৩৬)। ১৩৩৪-এর শ্রাবণ 888sport free betয় বিচিত্রায় রবীন্দ্রনাথ ‘888sport live footballধর্ম’ 888sport live লেখেন; ‘888sport live footballধর্মের সীমানা’ লেখেন নরেশচন্দ্র (, ভাদ্র ১৩৩৪); এর জবাব দেন দ্বিজেন্দ্র বাগচী ‘888sport live footballধর্মের সীমানা বিচার’ (বিচিত্রা, আশ্বিন ১৩৩৪)। ‘888sport live footballধর্মের সীমানা বিচারের উত্তর’ লিখে নরেশচন্দ্র (অগ্রহায়ণ ১৩৩৪) পালটা জবাব দেন। এই বিতর্কে অংশ নিয়ে শরৎচন্দ্র ‘888sport live footballের রীতিনীতি’ লেখেন (বঙ্গবাণী, আশ্বিন ১৩৩৪)। ওই বিতর্ক চলাকালে মালয় সফররত রবীন্দ্রনাথ ‘888sport live footballে নবত্ব’ লিখলেন (প্রবাসী, আগস্ট ১৯২৭)। জীবনীকার জানাচ্ছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ উত্তেজিত মনে নরেশচন্দ্রকে একখানি পত্র দেন, তাহার ভাষা কবিজনোচিত হয় নাই’ (রবীন্দ্রজীবনী, তৃতীয় খ-, পৃ ৩৩৯)।

এখানে সংকলিত পত্রটি উলিস্নখিত পত্র কিনা, শনাক্ত হয়নি।

‘888sport live footballধর্মের সীমানা’য় নরেশচন্দ্র রবীন্দ্রনাথের নাম উলেস্নখ না-করে লিখলেন, ‘যাঁকে নিত্য নূতন রসের পূজারী, নূতন ধারার মন্ত্রগুরু ও অগ্রদূত বলিয়া নব888sport live football এতদিন পূজা করিয়া আসিয়াছে, আজ তাঁহার হাতে আঘাত খাইয়া সে যদি হঠাৎ বিভ্রান্ত ও বিচলিত হইয়া ওঠে তবে তাহা বিচিত্র নয়।’

নরেশচন্দ্র ‘কৈফিয়ৎ’ অংশে বিচিত্রায় আবার লেখেন : রবীন্দ্রনাথের ও-রচনার লক্ষ্য যে তিনিও – সে কথাও তাঁর মনে আসেনি কখনো। কারণ তাঁর যে-বই নিয়ে স্বাস্থ্যরক্ষার হৈচৈ সেই ‘শাস্তি’র রবীন্দ্রনাথ প্রশংসাই করেছেন।

নরেশচন্দ্র ‘কৈফিয়ৎ’-এ লেখেন : রবীন্দ্রনাথকে আমি যত বড় করিয়া দেখি তার চেয়ে কেহ সত্য মর্য্যাদায় তাঁকে শ্রেষ্ঠ বলিয়া জানে কিনা আমি জানি না।

উলিস্নখিত বিতর্কের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন সজনীকান্ত দাস তাঁর আত্ম888sport sign up bonusতে (কলকাতা ১৩৬১)।

888sport live footballধর্ম নিয়ে রবীন্দ্রনাথের 888sport liveের প্রতিবাদে নরেশচন্দ্র ‘888sport live footballধর্মে সীমানা’ 888sport liveে রায় দিলেন, রবীন্দ্রনাথ নিজেই 888sport live footballধর্মের সীমানা লঙ্ঘনের অপরাধী :

শরীর-ব্যাপার মাত্রই তো অপাঙ্ক্তেয় নয়, কেননা চুম্বনের স্থান 888sport live footballে পাকা করিয়া দিয়াছেন বঙ্কিমচন্দ্র হইতে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত সকল 888sport live football-সম্রাট। আলিঙ্গনও চলিয়া গিয়াছে। তা’ছাড়া ‘হৃদয়-যমুনা’, ‘স্তন’, ‘বিজয়িনী’, ‘চিত্রাঙ্গদা’ প্রভৃতি বহু 888sport app download apkয় রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং দৈহিক ব্যাপার লইয়া অপূর্ব রস উদ্বোধন করিয়াছেন। সুতরাং এখানেও একটা সীমারেখা আছে, যাহা অতিক্রম করিলে 888sport live football বে-আব্রম্ন পদবাচ্য হইতে পারে। সে সীমানা কবি কোথায় টানিয়াছেন, তার বাহিরে কোন্ বই, ভিতরেই বা কোন্ বই, – তাহা নির্ণয় করিবার কোনও নির্দেশ দেন নাই। (উদ্ধৃত, সুকুমার সেন, বাঙ্গালা 888sport live footballের ইতিহাস (৪র্থ খ-), তৃ-স ১৯৭১, পৃ ২৫৯।)

নরেশচন্দ্রকে লিখিত পত্রটি রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত। উদ্ধৃত, গৌতম ভট্টাচার্য, শ্লীলতা-অশ্লীলতা ও রবীন্দ্রনাথ। (২০১৭) পৃ ৪৪-৪৫। এই গ্রন্থে নরেশচন্দ্রের দুটি পত্র সংকলিত। r