রবীন্দ্রনাথের তিন 888sport promo code : অপর্ণা, সুদর্শনা ও নন্দিনী

ভ্রূণাবস্থা থেকেই 888sport promo codeজাতির সঙ্গে আমাদের নাড়ির যোগ। কখনো মা, কখনো ভগিনী, কখনো প্রেয়সী, কখনো-বা সহধর্মিণীরূপে তাঁরা ধরা দিয়েছেন। কবির লেখনীর প্রেরণা হয়ে উঠেছেন। আবার সভ্যতার দ্রোহকালে নিজেই স্বহস্তে তুলে নিয়েছেন আয়ুধ। দেবতাকুল যখন মহিষাসুর বিনাশে ব্যর্থ হয়েছেন, তখনই আবির্ভূত হয়েছেন মা দুর্গা। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে জেগে উঠেছেন 888sport promo codeরা। সময়ে সময়ে 888sport live footballিকরা তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছেন অস্ত্র। তাঁদের গলায় ধ্বনিত হয়েছে প্রতিবাদী সুর। বিপ্লবের আর এক নাম হয়ে উঠেছেন 888sport promo code।

রবীন্দ্রনাথও এর ব্যতিক্রম নন। তাঁর 888sport live football-সমুদ্রে বারবার ভেসে উঠেছে এক-একজন উজ্জ্বল 888sport promo codeর মুখচ্ছবি। কখনো তাঁরা বালিকা, কখনো কিশোরী, কখনো-বা যুবতী। এসব স্তর অতিক্রম করে তাঁরা ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছেন এক-একজন সম্পূর্ণ 888sport promo code। তাঁর 888sport app download apk, ছোটগল্প, 888sport alternative link, নাটক সর্বত্রই 888sport promo codeশক্তির জয়জয়কার। তাঁর 888sport live footballকর্মের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, সেখানে যেন 888sport promo codeরা বারবার নব নবরূপে ফিরে এসেছেন। রবীন্দ্রনাথের নায়িকারা একেবারেই স্বতন্ত্র। কখনো তাঁরা দ্বিধাগ্রস্ত,  কখনো-বা আত্মবিশ্বাসী। কখনো তাঁরা রহস্যময়ী, আবার কখনো ভীষণ অকপট।

‘স্ত্রীর পত্র’ গল্পের ‘মৃণাল’ আমাদের বিস্ময়বোধকে যেন আরো একবার নাড়িয়ে দেয়। তার কণ্ঠে শোনা যায়, ‘তুমি ভাবছ আমি মরতে যাচ্ছি – ভয় নেই, অমন পুরোনো ঠাট্টা তোমাদের সঙ্গে আমি করব না।’ এই বাক্য যেন পাঠকের বিবেককে আলোড়িত করে। শেষের 888sport app download apk 888sport alternative linkে ‘লাবণ্য’ এক স্বতন্ত্র প্রভায় দীপ্ত। তার আত্মদীপ্তি আমাদের নতুনভাবে প্রভাবিত করে। তার প্রেমচিন্তা আমাদের মনে বিস্ময় জাগায়। অপরদিকে ঘরে-বাইরেতে ‘বিমলা’র মধ্যে এক অদ্ভুত দোলাচল দেখা যায়। দুই পুরুষের দ্বন্দ্বে সে দ্বিধাগ্রস্ত। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সে সব দ্বিধা কাটিয়ে সত্যপ্রেমের পথই বেছে নেয়।

888sport promo codeচরিত্রের ভেতর যে এক চিরকালীন রহস্যময়তা, তাকে রবীন্দ্রনাথ রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। আপাত-ঘরোয়া রমণীর বুকের গহিনেও যে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠতে পারে, এই সত্যকে তিনি প্রাণপণে বিশ্বাস করেছিলেন। সারাজীবন তিনি বহু 888sport promo codeর সান্নিধ্য লাভ করেছেন। কৈশোরে ও যৌবনে নতুন বউঠান কাদম্বরী দেবীর সাহচর্য তাঁর জীবনে অন্য এক মাত্রা এনে দিয়েছিল। এরপর রাণু নাম্নী এক কন্যা তাঁর জীবনে আসে। শোনা যায়, এই কন্যাটিকে দেখেই তিনি রক্তকরবীর ‘নন্দিনী’ নামক মানবীর ধারণা পেয়েছিলেন। বিদ্যাপতি যেমন তাঁর পদাবলিতে রাধার ক্রমবিকাশ ঘটিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথও তাঁর নাটকগুলোতে 888sport promo codeচরিত্রের ক্রমবিবর্তন দেখিয়েছেন। তাঁর অধিকাংশ নাটকের কেন্দ্রে রয়েছে 888sport promo code। সেই 888sport promo codeকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়েছে নাটকের ঘটনাক্রম।

কয়েকটি নাটক নির্বাচন করে, সেগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথের নাটকে 888sport promo codeচরিত্রের ক্রমবিবর্তন উপলব্ধি করা যায়। সেক্ষেত্রে বিসর্জন (১৮৯০) নাটকের ‘অপর্ণা’, রাজা (১৯১০) নাটকের ‘সুদর্শনা’ এবং রক্তকরবীর (১৯২৬) ‘নন্দিনী’কে বেছে নেওয়া যেতে পারে। তিনটি নাটকের মধ্যে আমরা তিনজন 888sport promo codeকে পাই। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ মহিমায় উজ্জ্বল। সচেতন পাঠকমাত্রই লক্ষ করবেন, এই তিন চরিত্রের মধ্যে একটি অদৃশ্য সংযোগ রয়েছে। তারা সবাই কোনো না কোনো বিপ্লবের অংশীদার। কিন্তু তাদের প্রতিবাদের ভাষা আলাদা, পদ্ধতি ভিন্নতর।

১৮৮৭ সালে প্রকাশিত রাজর্ষি 888sport alternative linkের প্রথম অংশ অবলম্বন করে রবীন্দ্রনাথ বিসর্জন নাটক রচনা করেছিলেন। দেওঘর যাত্রার পথে ট্রেনে রবীন্দ্রনাথ ঘুমের ভেতর এ-888sport alternative linkের প্লট পেয়েছিলেন। তাঁর ভাষায়, ‘স্বপ্নে দেখলুম একটা পাথরের মন্দির। ছোটো মেয়েকে নিয়ে বাপ এসেছেন পুজো দিতে। সাদা পাথরের সিঁড়ির উপর দিয়ে বলির রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। দেখে মেয়েটির মুখে কী ভয়! কী বেদনা! বাপকে সে বারবার করুণস্বরে বলতে লাগল, বাবা, এত রক্ত কেন! বাপ কোনোমতে মেয়ের মুখ চাপা দিতে চায়, মেয়ে তখন নিজের আঁচল দিয়ে রক্ত মুছতে লাগল। জেগে উঠেই বললুম, গল্প পাওয়া গেল…।’ ১৮৯০ সালে বিসর্জন নাটকটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এর বেশ কতগুলো পাঠান্তর পাওয়া যায়।

ত্রিপুরা রাজ্যের প্রেক্ষাপটে এই নাটকের কাহিনি গড়ে উঠেছে। এ-নাটকে মূলত ব্রাহ্মণ্য শক্তির সঙ্গে ক্ষত্রিয় শক্তির দ্বন্দ্ব সূচিত হয়েছে। সমগ্র নাটকে বলিপ্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হতে দেখা যায়। ত্রিপুরারাজ গোবিন্দমাণিক্য তাঁর রাজ্যকে বলির মতো একটি অমানবিক প্রথার হাত থেকে নিষ্কৃতি দিতে চান। আর মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রঘুপতি কিছুতেই সংস্কারের বেড়াজাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে পারেন না। এ নিয়ে সমগ্র নাটকে নাট্যসংঘাত দানা বাঁধে। ঘটনাক্রমে এই নাট্যসংঘাতের মধ্যে এসে পড়ে ‘অপর্ণা’ ও ‘জয়সিংহ’ নামে দুজন মানব-মানবী। তাদের দুজনের মধ্যে এক অদ্ভুত প্রেমময় বন্ধন গড়ে ওঠে। জয়সিংহ রঘুপতির পালিত পুত্র। জন্ম থেকেই সে রঘুপতির আদর্শে, বদ্ধ মন্দিরের ঘেরাটোপে লালিত হয়েছে। মুক্ত প্রেমের স্বাদ তার অচেনা। শৈশব থেকেই তার মনে দুর্ভেদ্য কিছু সংস্কার গেঁথে গেছে। আর অপর্ণা নামক বালিকাটি একজন ভিখারিণী। দেবী ত্রিপুরেশ্বরীর পুজোয় বলির উদ্দেশ্যে তার ‘ছাগশিশু’ হরণ করা হয়েছে। সে যে-কোনো কিছুর বিনিময়ে তার প্রাণের চেয়ে প্রিয় ছাগশিশুটিকে ফেরত চায়; কিন্তু মায়ের পুজোর উদ্দেশে প্রদত্ত বলি ফিরিয়ে দেওয়া আর সম্ভব হয় না। তাও সে বারবার প্রার্থনা জানায়। অপর্ণার এই আর্তি দেখে জয়সিংহের চোখে জল আসে। সেই চোখের জল অপর্ণার কাছে এক ভিন্নতর বার্তা পৌঁছে দেয়। অপর্ণা এক নতুন রূপে জয়সিংহকে আবিষ্কার করে। জয়সিংহের বুকের গহিনে এক স্পর্শকাতর হৃদয়ের সন্ধান পায় সে। অপর্ণা জয়সিংহকে বলে, ‘তুমি তো নিষ্ঠুর নহ… আঁখি-প্রান্তে তব অশ্রু ঝরে মোর দুখে। তবে এসো তুমি, এ মন্দির ছেড়ে এসো। তবে ক্ষম মোরে, মিথ্যা আমি অপরাধী করেছি তোমায়।’ এই আহবান যেন জয়সিংহের এতদিনকার সংস্কারের প্রাচীরে এসে ধাক্কা দেয়। এ-সংলাপ উচ্চারণের মধ্য দিয়েই অপর্ণা রঘুপতির বিরুদ্ধে অসচেতনেই প্রতিবাদ ঘোষণা করেছে।

প্রকৃতপক্ষে অপর্ণা এই নাটকে সত্যপ্রেমের প্রতীক। সে নিতান্ত বালিকা হয়েও প্রতিবাদী। জয়সিংহ যখন তাকে বলে যে, মা তার ছাগশিশুটিকে নিয়েছেন, তখন সে সদর্পে ঘোষণা করে, ‘মা তাহারে নিয়েছেন? মিছে কথা। রাক্ষসী নিয়েছে তারে!’ আজন্ম-স্বাধীন বলেই হয়তো অপর্ণা এমন একটি কথা এত অবলীলায় বলে ফেলেছে। কোনোরকম সংস্কার তার ভাবনাকে অসার করে ফেলতে পারেনি। সে তার বিশ্বাসে অচল। সে জানে, মায়ের ধর্ম মায়া, মমতা, করুণা। আর যে তার বুক থেকে ‘বাছনি’কে (ছাগশিশু) কেড়ে নিয়েছে, সে কখনো কারো মা হয়ে উঠতে পারে না।

অপর্ণার সংস্পর্শে এসেই জয়সিংহ প্রথম প্রকৃত প্রেমকে উপলব্ধি করেছে। অপর্ণার করুণ আহ্বান শুনে এক নতুন চিন্তার আস্বাদ পেয়েছে জয়সিংহ। তার এতদিনের অন্ধভক্তি অপর্ণার প্রেমের স্পর্শে সিক্ত হয়েছে। মুহূর্তমধ্যেই সে দেবী-প্রতিমাকে ‘গিরিনন্দিনী’ বলে সম্বোধন করেছে। সে অনুধাবন করেছে যে, দেবীমূর্তি নিতান্ত ‘পাষাণতনয়া’।

অপর্ণার চিত্তেও জয়সিংহের প্রতি প্রেমের সঞ্চার ঘটেছে। তাই সে জয়সিংহের দয়া চায় না, চায় প্রেম। সে-কারণেই সে অভিমানবশত গেয়ে ওঠে :

আমি একলা চলেছি এ ভবে,

আমায় পথের সন্ধান কে ক’বে?

এই বিপুল পৃথিবীতে সে সঙ্গীহীন। তাকে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করার জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। এমনি কঠিন অভিমান বুকে চেপে সে কালযাপন করতে থাকে। প্রেমের এই সংকটের কালে, অপর্ণার এই নির্ভেজাল প্রেমের আকুতি যেন পাঠকের কাছে এক মানবিক আবেদন সৃষ্টি করে।

সভ্যতার সেই আদি যুগ থেকেই, যতবার প্রচলিত নিয়মের থাবা প্রেমকে গ্রাস করতে চেয়েছে, ততবার প্রেম নিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। অপর্ণা বালিকা হলেও তার ভেতর ছিল সত্যপ্রেমের শক্তি। সেই জোরেই সে রঘুপতির বিরুদ্ধে লড়াই করে, রাজাকে সত্যদৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়ে প্রকৃত প্রেমের পথ দৃঢ় করে তোলে, আবার জয়সিংহকে প্রকৃত প্রেমের স্বরূপ অনুধাবনে সহায়তা করে। তবু জয়সিংহ বারবার তাকে ফিরিয়ে দেয়, সে তার পুরনো সংস্কারের দুর্ভেদ্যতাকে অতিক্রম করতে পারে না। একটি উচ্চারণেই অপর্ণার প্রেমনিষ্ঠা উপলব্ধি করা যায়, ‘অভিমান কিছু নাই আর। জয়সিংহ, তোমার বেদনা, আমার সকল ব্যথা সব গর্ব চেয়ে বেশি। কিছু মোর নাই অভিমান।’

মানুষের চিরন্তন মনোবৃত্তি প্রেমকে বিসর্জন দিয়ে, অসার কিছু প্রথাকে আঁকড়ে বাঁচতে চাইলে জয়সিংহের মতো একনিষ্ঠ, আদর্শবান মানুষকেও আমাদের হারাতে হয়। সত্য আর মিথ্যার মধ্যে যে-পার্থক্য তা জয়সিংহ দেবীরূপী অপর্ণার সংস্পর্শে এসে বুঝতে পেরেছে। তাই তার কণ্ঠে শোনা যায়, ‘সত্য আর মিথ্যার প্রভেদ শুধু এই! – মিথ্যারে রাখিয়া দিই মন্দিরের মাঝে বহু যত্নে, তবুও সে থেকেও থাকে না। সত্যেরে তাড়ায়ে দিই মন্দির বাহিরে অনাদরে, তবুও সে ফিরে ফিরে আসে…।’

জয়সিংহের আত্মহননের মধ্য দিয়ে রঘুপতির অন্ধত্ব ঘুচে গেল। তিনি বুঝতে পারলেন জীবন্ত প্রেমমূর্তি অপর্ণার তুলনায় পাষাণী কালীমূর্তি কত তুচ্ছ। তখনই রঘুপতি অপর্ণাকে মা বলে ডাকলেন। এভাবেই সমগ্র নাটকের মধ্য দিয়ে অপর্ণা অর্থাৎ সত্যপ্রেমের জয় ঘোষিত হয়েছে। অপর্ণা নামের বালিকাটি খুব সাধারণ হয়েও এখানেই সে অসাধারণ। নাট্যকারের লেখনীর আঁচড়ে সে এক বিস্ময়কর চরিত্র হয়ে উঠেছে।

১৯১০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজা নাটকটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ পায়। এই নাটকের মূল চরিত্র ‘রাজা’, কখনো সবার সামনে আসেন না। সবার অগোচরে লোকচক্ষুর অন্তরালেই তার বাস। স্ত্রী, রানী ‘সুদর্শনা’কেও তিনি কিছুতেই দেখা দেন না। এক অন্ধকার কুঠুরিতে তাদের সাক্ষাৎ হয়। কিন্তু সুদর্শনা রাজাকে দেখার জন্য আকুল হয়ে ওঠে। সে যখন রাজাকে প্রশ্ন করে, ‘তুমি আমাকে আলোয় দেখা দিচ্ছ না কেন?’ তার উত্তরে রাজা তাকে বলেন, ‘আলোয় তুমি হাজার হাজার জিনিসের সঙ্গে মিশিয়ে আমাকে দেখতে চাও? এই গভীর অন্ধকারে আমি তোমার একমাত্র হয়ে থাকি-না কেন।’  সুদর্শনার দাসী সুরঙ্গমা তাকে বলে, ‘এ ঘর মাটির আবরণ ভেদ করে পৃথিবীর বুকের মাঝখানে তৈরি। তোমার জন্য রাজা বিশেষ করে করেছেন!’

আসলে সুদর্শনা প্রথম থেকেই রাজাকে খুঁজেছে ‘বাহিরে’। সুদর্শনা প্রথাগত প্রেমের ভাবনায় আবদ্ধ। তাই যেখানে বস্তুকে চোখে দেখা যায়, স্পর্শ করা যায়, সেই জগতের মধ্যে সে তার প্রেমকে পেতে চেয়েছে। রাজার রূপ দেখার জন্য সুদর্শনার আর্তি ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। সে বারবার সুরঙ্গমাকে জিজ্ঞাসা করে, রাজা ঠিক কতখানি সুন্দর! তার উত্তরে সুরঙ্গমার অকপট স্বীকারোক্তি, ‘…তিনি কি সুন্দর – না, লোকে যাকে সুন্দর বলে তিনি তা নন।’ প্রকৃতপক্ষে সুন্দরের যে প্রথাগত ধারণা, রাজার সৌন্দর্য তাকে অতিক্রম করে অনুপম হয়ে উঠেছে।

এ-নাটকে সুদর্শনা নিজেকে ভেঙে আবার নতুন করে নির্মাণ করেছে। তার প্রেমভাবনা এক নতুন মাত্রা পেয়েছে নাট্যকারের কলমের আঁচড়ে। উপনিষদের চরৈবেতি মন্ত্র রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শনকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছিল। তাঁর কাছে প্রেম ছিল এক অনন্ত যাত্রা। আর সেই যাত্রাপথ কখনো পুষ্পশোভিত নয়। সত্যপ্রেমের পথ সর্বদা কণ্টকাকীর্ণ। এই সত্য তিনি আজীবন বিশ্বাস করে গেছেন। আর তাই তিনি লিখতে পেরেছেন :

তোমার অভিসারে যাব অগম পারে।

চলিতে পথে পথে বাজুক ব্যথা পায়ে…।

এ-বিশ্বাসেই রবীন্দ্রনাথ রাজার কণ্ঠে উচ্চারণ করালেন এক অমোঘ বাণী, ‘মন যদি তার মতো হয় তবেই সে মনের মতো হবে।’ নিজেকে ‘তার’ মনের মতো করে গড়ে তোলার যে-আকুতি তা নাটকের প্রথমাংশে আমরা সুদর্শনার মধ্যে দেখি না। কিন্তু পরবর্তীকালে সে প্রেমের সেই অমোঘ সফরে শামিল হয়। সত্যিকারের সমর্পণের অর্থ উপলব্ধি করে, সে সত্যপ্রেমের পথে এগিয়ে যায়।

সুদর্শনাকে প্রকৃত প্রেমের স্বরূপ বুঝতে সহায়তা করেছেন ‘ঠাকুরদা’। এই চরিত্র রবীন্দ্রনাথের এক অপূর্ব সৃষ্টি। বর্তমান জটিল জীবনযাত্রায় আমরা সহজ কথা আর সহজে বলে উঠতে পারি না। কঠিনের ঘেরাটোপেই আমাদের বসবাস। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরদার মুখ দিয়ে খুব সহজভাবে কিছু আদর্শবোধ আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আপাতভাবে তাঁর কথাগুলো খুব সহজ মনে হলেও, সেগুলোর মধ্যে অন্তর্নিহিত রয়েছে গভীর আত্মোপলব্ধি। সত্যপ্রেমের ছায়া যে সর্বদা নিজ মনের দর্পণে প্রতিফলিত হয়, তা ঠাকুরদা পাঠককে শেখান। তাঁর ভাষায়, ‘ভিক্ষুকের কর্ম নয় রাজাকে চেনা। ছোট ভিক্ষুক বড় ভিক্ষুককেই রাজা বলে মনে করে।’১০ রাজা তার বন্ধু। রাজাকে তিনি একেবারে নিজের মতো করে চিনে নিয়েছেন। রাজা সম্পর্কে তার মন্তব্য, ‘চিনে নিয়েছি যে – সুখে-দুঃখে তাকে চিনে নিয়েছি। এখন আর কাঁদাতে পারে না।’১১

রানী সুদর্শনা রূপের নেশায় ডুবে রাজবেশী ‘সুবর্ণে’র মিথ্যা প্রেমের ফাঁদে পা দেয়। রাজবেশীর চোখ-ধাঁধানো রূপের মায়ায় সে অন্ধ হয়ে তাকেই রাজা ভেবে ভুল করে। আসলে রানীর রাজাকে বোঝার থেকেও দেখার আগ্রহ বহুগুণে বেশি ছিল। এরপর যখন সে রাজাকে স্বচক্ষে দেখল তখন রাজার রূপের মহত্ত্ব সে সহ্য করতে পারল না। রাজার কাঠিন্য, নিষ্ঠুরতা এসবই তার চোখের সামনে এলো। রাজার প্রেম তার রূপমোহগ্রস্ত হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছল না। সে রাজাকে কুৎসিত মনে করে সত্যপ্রেমকে ত্যাগ করল। আত্মাভিমানবশত সে স্থির করল যে, সে গৃহত্যাগ করবে এবং বাইরেই সে নিজের জীবনের সার্থকতা খুঁজে নেবে। কিন্তু আপন অবস্থানচ্যুত হওয়ার কারণেই সে পিতৃগৃহেও স্থান পেল না। অবশেষে সে পথে নেমে আসে। সেই পথের ধুলোর মধ্য দিয়েই সে সত্যপ্রেমের সন্ধানে যাত্রা শুরু করে। সব আভরণ পরিত্যাগ করে, শুধু পথের ধুলোকে নিজের অঙ্গরাগ করে নিয়ে, সে তার প্রভুর খোঁজে এগিয়ে চলে। এই তো প্রেমের প্রকৃত স্বরূপ। ‘পাই না পাই একবার খুঁজতে বেরোব’, ঠাকুরদার এই উক্তি যেন সুদর্শনা সত্য করে তোলে। সে সুরঙ্গমাকে বলে, ‘যতক্ষণ অভিমান করে বসে ছিলুম ততক্ষণ মনে হয়েছিল, সেও আমাকে ছেড়ে গিয়েছে। অভিমান ভাসিয়ে দিয়ে যখনই রাস্তায় বেরিয়ে পড়লুম তখনই মনে হল – সেও বেরিয়ে এসেছে, রাস্তা থেকেই তাকে পাওয়া শুরু করেছি…।’১২ প্রসঙ্গত রবীন্দ্রনাথের একটি গান মনে পড়ে যায় :

আমার  সকল নিয়ে বসে আছি

সর্বনাশের আশায়।

আমি  তার লাগি পথ চেয়ে আছি

পথেই যেজন ভাসায়…

সবশেষে সুদর্শনা রাজার ঐকান্তিক প্রেমের কাছে আত্মসমর্পণ করে। তার প্রভুর (রাজা) রূপের মধ্যে সে অরূপকে খুঁজে পায়। সে কাঞ্চিরাজকেও নিজের এই যাত্রার সঙ্গী করে নেয়। আসলে রানীর মধ্যে এই সত্যপ্রেমের বীজ প্রথম থেকেই নিহিত ছিল। কিন্তু তা ছিল সুপ্ত। কীভাবে তা দুঃখের আঘাতে, বিরহের অগ্নিদাহে, অশ্রুতে সিক্ত হয়ে অঙ্কুরিত হলো, নাটকে সেই ঘটনাই বর্ণিত হয়েছে। সুদর্শনা চরিত্রের যে-বিবর্তন নাটকে দেখা যায়, তার পশ্চাতে ঠাকুরদা ও সুরঙ্গমার প্রভাব রয়েছে বিস্তর। সুরঙ্গমা তাকে বলেছে, অন্তরের নিভৃত কক্ষে যেখানে প্রভু স্বয়ং এসে আহ্বান জানান, সেখানে তাকে চিনে নিলে তবেই বাইরে সর্বত্র তাকে চিনে নেওয়া সম্ভব। শেষ পর্যন্ত রানী তার হৃদয়ের দর্পণেই তার রাজাকে, তার প্রেমকে, তার প্রভুকে চিনে নিয়েছে। সে রাজাকে বলেছে, ‘আমার মধ্যে তোমার প্রেম আছে, সেই প্রেমেই তোমার ছায়া পড়ে, সেইখানেই তুমি আপনার রূপ আপনি দেখতে পাও। সে আমার কিছুই নয়, সে তোমার।’১৩ সুদর্শনা উপলব্ধি করেছে, ‘আমার প্রমোদবনে, আমার রানীর ঘরে, তোমাকে দেখতে চেয়েছিলুম বলেই তোমাকে এমন বিরূপ দেখেছিলুম – সেখানে তোমার দাসের অধম দাসকেও তোমার চেয়ে চোখে সুন্দর ঠেকে। তোমাকে তেমন করে দেখবার তৃষ্ণা আমার একেবারে ঘুচে গেছে। তুমি সুন্দর নও প্রভু, সুন্দর নও, তুমি অনুপম।’১৪

আমার কাছে আসতে বলো

একটু ভালোবাসতে বলো

বাহিরে নয় বাহিরে নয়

ভিতর জলে ভাসতে বলো -…’১৫

ভিতর আর বাইরের এই দ্বন্দ্ব চিরকালীন। আর এ-দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েই মানুষ যুগে যুগে সত্যপ্রেমের উদ্ঘাটন করে চলেছে। রাজা নাটকের সুদর্শনাও তার ব্যতিক্রম নয়।

 

১৯২৩ সালের গ্রীষ্মকালে রবীন্দ্রনাথ শিলংয়ে থাকাকালে যক্ষপুরী নামে একটি নাটক রচনা করেন। পরবর্তীকালে ১৯২৬ সালে এই নাটকটি গ্রন্থাকারে প্রকাশকালে এর নাম পরিবর্তিত হয়ে হয় রক্তকরবী। এই নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘নন্দিনী’ নামক এক কন্যা। যক্ষপুরী নামক এক স্থানে এই নাটকের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। যক্ষপুরীর মাটির তলায় তাল তাল স্বর্ণপি- সঞ্চিত আছে। সেই সোনার খবর পেয়ে সেখানকার শ্রমিকদল মাটির নিচে সুড়ঙ্গ কেটে সোনা আহরণের কাজে নিযুক্ত। এই রাজ্যের রাজা ‘মকররাজ’ সর্বদা এক জটিল রহস্যময় জালের অন্তরালে থাকেন। মাটির বুক চিরে সোনা সংগ্রহের এই নিষ্ঠুর চেষ্টার কারণে, সেখানে প্রাণলক্ষ্মী নির্বাসিত। যক্ষপুরীর মানুষ অনর্থক জটিলতার জালে নিজেকে জড়িয়ে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন। প্রেমের পরিবর্তে এখন তারা প্রতাপের মধ্যেই জীবনের পূর্ণতা খুঁজে বেড়ায়, কিন্তু পায় না। যন্ত্রশক্তির কাছে মানবিকশক্তি বারবার মাথানত করে। এমতাবস্থায় ঘটনাক্রমে যক্ষপুরীতে এসে পড়ে নন্দিনী নামে এক 888sport promo code। তার প্রাণের স্পর্শে যেন যক্ষপুরী আরো একবার জেগে ওঠে। প্রেমের আবেগে যান্ত্রিক সব বন্ধনজাল ছিন্ন হয়। মানুষের ভেতর আবার প্রাণের মাধুর্য ফিরে আসে। নন্দিনী তার সবটুকু প্রাণশক্তির নির্যাস নিংড়ে যেন জাগিয়ে তুলতে চায় যক্ষপুরীর আধমরা মানুষগুলোকে। নন্দিনীকে ঘিরে তাদের বিস্ময়ের শেষ নেই। তাই তাকে ‘আধ্যাপক’ বলেছেন, ‘সকালে ফুলের বনে যে আলো আসে তাতে বিস্ময় নেই, কিন্তু পাকা দেওয়ালের ফাটল দিয়ে যে আলো আসে সে আর-এক কথা…।’১৬

মকররাজকে ঘিরে থাকা সেই জটিল আবরণ নন্দিনী কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। সে সেই জাল ছিঁড়ে ফেলতে চায়। সে বারবার রাজাকে অনুরোধ জানায় জালের বাইরে আসতে; কিন্তু রাজা অপারগ। আসলে রাজাও চান সব জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে এসে নন্দিনীর কাছে ধরা দিতে। নন্দিনীর রক্তকরবীর আভাটুকু ছেঁকে নিয়ে, চোখের অঞ্জন করে পরতে ইচ্ছা করে রাজার। কিন্তু যুগ যুগ ধরে যে-কাঠিন্য একটু একটু করে তাকে গ্রাস করেছে, তার দুর্ভেদ্যতাকে ভেদ করা সহজ নয়। তাই রাজা নিজের সম্পর্কে বলেছেন, ‘দুর্গমের থেকে হীরে আনি, মানিক আনি; সহজের থেকে ঐ প্রাণের জাদুটুকু কেড়ে আনতে পারি নে।’১৭

নন্দিনীর প্রেমিক ‘রঞ্জনে’র কথা বারবার রাজা শুনতে চান। আসলে রঞ্জন এই নাটকে প্রেমরূপী বিপ্লব, যার জন্য নন্দিনী অপেক্ষা করে। রাজা, তার আর রঞ্জনের মধ্যে তুলনা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমার মধ্যে কেবল জোরই আছে, আর রঞ্জনের মধ্যে আছে জাদু।’ ধীরে ধীরে নন্দিনী তার প্রাণসম্পদের প্রাচুর্যে সবাইকে মুগ্ধ করে। সবাই তাকে নিজের করে পেতে চায়। কিন্তু সে রঞ্জনের অপেক্ষায় দিন গোনে। তার বিশ্বাস রঞ্জন আসবেই। তাই সে রক্তকরবীর মালা কণ্ঠের অলংকার করে। কারণ রঞ্জন তো তাকে আদর করে রক্তকরবী বলে ডাকে। জয়যাত্রা সূচিত নীলকণ্ঠের পালক বুকের আঁচলে রেখে সে প্রতীক্ষা করে রঞ্জনের। নন্দিনী, রঞ্জন সম্পর্কে বলেছে, ‘…আমাদের নাগাই নদীতে ঝাঁপিয়ে প’ড়ে স্রোতটাকে যেমন সে তোলপাড় করে, আমাকে নিয়ে তেমনি সে তোলপাড় করতে থাকে। প্রাণ নিয়ে সর্বস্ব পণ করে সে হারজিতের খেলা খেলে। সেই খেলাতেই আমাকে সে জিতে নিয়েছে…।’১৮

‘বিশুপাগল’ চরিত্রটি রবীন্দ্রনাথের এক অদ্ভুত সৃষ্টি। হৃদয়ের সবটুকু মাধুর্য সম্পৃক্ত করে তিনি এ-চরিত্রটি নির্মাণ করেছেন। নন্দিনীকে সে ভালোবাসে। কিন্তু লোভীর মতো তাকে পেতে চায় না। সে কেবল নন্দিনীকে গান শোনায়। এক সময়ে এই যক্ষপুরীতে এসে যখন বিশুপাগলের অন্তরের প্রায় সবটুকু আলো চুরি হতে বসেছিল, ঠিক তখনই নন্দিনী তার ভেতরকার সবটুকু আলোকে আবার নতুন করে চিনিয়ে দিয়েছিল। পাগলভাইয়ের (বিশুপাগল) গান শুনে নন্দিনীর মনে হয়, সে যেন তার প্রাপ্য কোনোকিছুই তাকে দিতে পারে না। এর উত্তরে বিশুপাগল বলে, ‘তোর সেই কিছু-না-দেওয়া আমি ললাটে পড়ে চলে যাব। অল্প-কিছু দেওয়ার দামে আমার গান বিক্রী করব না।’১৯ এমনি নিঃস্বার্থ প্রেম তার। নন্দিনী তার ‘দুখজাগানিয়া’। যে-পথ দিয়ে রঞ্জন আসবে সেই পথের ধারে বসে নন্দিনী তার বিশুপাগলের গান শুনতে চায়।

অবশেষে রঞ্জন আসে। কিন্তু মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সে আসে। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যেন যক্ষপুরীতে এক বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে যায়। এই পরিবর্তনই বিপ্লবকে সূচিত করে। আসলে নন্দিনীই রঞ্জনের হৃদয়ে প্রেমের সঞ্চার ঘটায়। এই প্রেমই তো প্রকৃতার্থে বিপ্লব। রঞ্জনের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই রাজা সব শৃঙ্খল ছিন্ন করে পথে নেমে আসেন। নন্দিনীর আঙুলে আঙুল রেখেই তিনি এগিয়ে চলেন সত্যপ্রেমের সন্ধানে। ‘ধ্বজাপূজার ধ্বজা’ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এর মধ্য দিয়েই যক্ষপুরীর সব যান্ত্রিক নিয়মের অবসান ঘটে এবং মানবতার জয় ঘোষিত হয়। নন্দিনীর ডানহাত থেকে খসেপড়া ‘রক্তকরবীর কঙ্কণ’ বিশুপাগল হাতে তুলে নেয়। সে নন্দিনীর রক্তকরবী-সূচিত জাগরণ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়। আর এসব ঘটনার কেন্দ্রে থেকে যায় এক 888sport promo code, নন্দিনী যার ডাকনাম, আর ভালো নাম বিপ্লব।

 

দুই

এই তিন চরিত্রকে রবীন্দ্রনাথ খুব সযত্নে এঁকেছেন। এই তিন কন্যাকে যেন তিনি সন্তান-স্নেহে লালন করেছেন। তাদের হাতে দিয়েছেন বিদ্রোহের মশাল। আসলে এই তিন 888sport promo code ভিন্ন ভিন্ন কোনো চরিত্র নয়। অত্যন্ত সূক্ষ্ম এক সুতোয় নাট্যকার তাদের গেঁথে রেখেছেন। একজন কন্যা যেমন বালিকা থেকে কিশোরী, কিশোরী থেকে যুবতী এবং যুবতী থেকে ক্রমে সম্পূর্ণ 888sport promo code হয়ে ওঠে, এই তিন চরিত্রও যেন সেই বিবর্তনের ধারাকেই বহন করে চলেছে। বিসর্জনের অপর্ণা এক সরলা বালিকা, যে চিরকালীন বলিপ্রথার বিরুদ্ধে নিজের মতো করে প্রতিবাদ করেছে। সে রাজনীতি বোঝে না, বোঝে না চিরন্তন ব্রাহ্মণ্য ও ক্ষত্রিয় শক্তির বিরোধ। সে কেবল তার প্রাণাধিক ছাগশিশুকে ফিরে পেতে চায়। সে চায় জয়সিংহকে পথে নামাতে। কারণ অপর্ণা জানে, মন্দিরের বন্ধ দরজার ভেতর অন্ধকারে নিমজ্জিত থেকে কখনো প্রেমকে উপলব্ধি করা যায় না। তাকে পেতে হলে কঠিন অন্ধকার ছেড়ে বেরিয়ে এসে আলোকে পাথেয় করতে হয়। কিন্তু জয়সিংহ তার চিরকালীন সংস্কারবশত অপর্ণার ডাকে সাড়া দিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত সে আত্মহননের মাধ্যমে অপর্ণার ডাকে সাড়া দিয়েছে। তার এই আত্মহনন যেন অপর্ণার জয় সূচিত করে। এই মৃত্যুই প্রমাণ করে, অপর্ণা জয়সিংহের ভেতরকার সত্যপ্রেমের বীজকে অঙ্কুরিত করতে পেরেছিল।

রাজা নাটকে সুদর্শনার মধ্যেও যেন আমরা প্রথমদিকে অপর্ণা নামক সরলা বালিকার ছায়া দেখতে পাই। সেই সারল্যেই সে প্রশ্ন করে, ‘কোথাও অন্ধকার কেন থাকবে?’ এতদিন তার ভেতরে যে-সত্যপ্রেমের বীজ লুকিয়ে ছিল, সে-সম্পর্কে সে নিজেও ছিল উদাসীন। তাই সত্যপ্রেমের স্বরূপ অনুধাবনেও তার বেশ কিছুটা সময় লেগেছে। প্রথমদিকে সে রাজার মহত্ত্ব সহ্য করতে না পারলেও কালক্রমে সে সত্য-ভালোবাসার পথে এগিয়ে চলেছে। আসলে এই নাটকে সুদর্শনা নিজেকে ভেঙে আবার নতুন করে গড়েছে। এই ভাঙনের মধ্য দিয়েই সে সমাজের প্রথাগত প্রেমভাবনার ওপর তীব্র আঘাত হেনেছে। ভেঙেচুরে গেছে সমাজের চিরায়ত সেই প্রেমভাবনা। সুদর্শনার হাত ধরে এক নতুন প্রেমভাবনায় দীক্ষিত হয়েছি আমরা।

সুদর্শনার এই প্রেমভাবনা প্রতিফলিত হয়েছে রক্তকরবীতে নন্দিনীর মধ্যে। সে জানে, প্রেম মানে অপেক্ষা। সে বিশ্বাস করে, যে-পথ দিয়ে প্রেম আসবে, সেই পথকে তার অশ্রুসিক্ত করে তুলতে হবে। তাই সে রক্তকরবীর হার কণ্ঠে পরে রঞ্জনের অপেক্ষায় দিন গোনে। আবার বিশুপাগলের গান শুনে সে উদ্বেল হয়ে ওঠে। রঞ্জন যে-পথ দিয়ে আসবে সেই পথের ধারে বসে সে তার পাগলভাইয়ের গান শুনতে চায়। বিশুপাগলকেও সে ভালোবাসে। তাই তার ভেতরের আলোটুকু চিনে নেয় নন্দিনী। আসলে নন্দিনীর মধ্যে বিশুপাগলের জন্য যে-প্রেম আছে, তাতেই সেই আলো প্রতিফলিত হয়। নন্দিনী আর বিশুপাগলের প্রেম যেন আমাদের কাছে এক মাধুর্যপূর্ণ আবেদন সৃষ্টি করে। এই প্রেম সব কৃত্রিমতা, সব কপটতা, সব মালিন্য থেকে মুক্ত এক পবিত্র বন্ধন। এই বন্ধন মানুষকে সব মিথ্যা থেকে মুক্ত করে সত্য মুক্তির পথে নিয়ে যায়।

রাজার সঙ্গে নন্দিনীর আবার আরেকরকম প্রেম। রাজা নন্দিনীকে ছুঁতে চান; কিন্তু তার কাঠিন্য তাকে নন্দিনীর কাছাকাছি আসতে দেয় না। অবশেষে নন্দিনীই রাজাকে পথে নামায়। সেই পথ থেকেই তিনি নন্দিনীকে পাওয়া শুরু করেন। পথের ধুলোতেই চলতে থাকে তার প্রেমসাধনা। উল্লেখ্য, রাজা নাটকে সুদর্শনা পথে নেমেই সত্যপ্রেমকে উপলব্ধি করেছিল। রক্তকরবীতে নন্দিনীই পথে নামিয়েছে রাজাকে। নন্দিনীর হাতে হাত রেখেই সাধিত হয়েছে রাজার প্রেমসাধনা। নন্দিনী যেন এই নাটকে পূর্বার্জিত অভিজ্ঞতাই প্রয়োগ করেছে। আসলে নন্দিনী প্রেমের বহুমাত্রিকতাকে অনুধাবন করতে পেরেছিল। বিশুপাগল, রাজা এবং রঞ্জনের সঙ্গে তার প্রেম প্রকৃতিগত দিক থেকে ভিন্নধর্মী। প্রেমের এই বহুমাত্রিকতাই নন্দিনীর পরিণত মননের সূচক। প্রেম আর বিপ্লব তার কাছে আলাদা কিছু নয়, বরং একই মুদ্রার দুই পিঠ। এভাবেই নাটকে নন্দিনীর বিবর্তন সূচিত হয়েছে।

 

তিন

আমরা জানি না, রবীন্দ্রনাথ সচেতনভাবেই এই তিন 888sport promo codeকে এক সূক্ষ্ম সুতোয় গেঁথেছিলেন কিনা! তবে তিনি যে তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলোকে কত আদরে, কত যত্নে দিনের পর দিন লালন করেছেন, এই তিন 888sport promo codeর দিকে তাকালে তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। যখনই পৃথিবীর বুকে অসার কিছু নিয়মের থাবা সত্যপ্রেমের পথকে রুদ্ধ করতে চেয়েছে, তখনই 888sport promo codeরা নদীর মতো ভাসিয়ে দিয়েছে সেসব অনর্থক নিয়মকে। কখনো বালিকা, কখনো যুবতী, কখনো 888sport promo codeরূপে হাতে তুলে নিয়েছে বিপ্লবের আয়ুধ। আর চোখে রেখেছে দিনবদলের স্বপ্ন। সত্যপ্রেমের আলোকে পাথেয় করে তারা এগিয়ে চলেছে এক নতুন পবিত্র পৃথিবীর দিকে। অপর্ণা, সুদর্শনা বা নন্দিনী এদের থেকে ভিন্ন কেউ নয়। বিপ্লবের ভিন্ন ভিন্ন রূপ মাত্র।

 

তথ্যসূত্র

১.   রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গল্পগুচ্ছ, দ্বিতীয় সংস্করণ, কলকাতা, 888sport live footballম, ২০০৩, পৃ ৬১৫।

২.   রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্র 888sport alternative link-সংগ্রহ, কলকাতা, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, ১৩৯৭, অগ্রহায়ণ, পৃ ১০১।

৩. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্র-নাট্য-সংগ্রহ প্রথম খণ্ড, কলকাতা, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, মাঘ ১৪০৬, পৃ ২৬৩।

৪. তদেব, পৃ ২৬২।

৫. তদেব, পৃ ২৬৬।

৬. তদেব, পৃ ৩০৫।

৭. তদেব, পৃ ৭৪৮।

৮. তদেব, পৃ ৭৪৫।

৯. তদেব, পৃ ৭৪৬।

১০. তদেব, পৃ ৭৫৮।

১১. তদেব, পৃ ৭৮৮।

১২. তদেব, পৃ ৭৯১।

১৩. তদেব, পৃ ৭৯৪।

১৪. তদেব, পৃ ৭৯৪।

১৫. শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ 888sport app download apk, পঞ্চম সংস্করণ, কলকাতা, দে’জ পাবলিশিং, ১৯৭৩, পৃ ১৪১।

১৬. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্র-নাট্য-সংগ্রহ, কলকাতা, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, মাঘ ১৪০৬, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ ৭২।

১৭. তদেব, পৃ ৭৬।

১৮. তদেব, পৃ ৮৫।

১৯. তদেব, পৃ ৯০।

 

সহায়ক গ্রন্থসূচি

১. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্র-নাট্য-সংগ্রহ, প্রথম খণ্ড [সংস্করণ নেই], কলকাতা, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, মাঘ ১৪০৬।

২. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্র-নাট্য-সংগ্রহ, দ্বিতীয় খণ্ড [সংস্করণ নেই], কলকাতা, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, মাঘ ১৪০৬।

৩. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্র 888sport alternative link-সংগ্রহ [সংস্করণ নেই], কলকাতা, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, অগ্রহায়ণ ১৩৯৭।

৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গল্পগুচ্ছ, দ্বিতীয় সংস্করণ, কলকাতা, 888sport live footballম, ২০০৩।

৫. শঙ্খ ঘোষ, কালের মাত্রা ও রবীন্দ্র নাটক, ষষ্ঠ সংস্করণ, কলকাতা, দে’জ পাবলিশিং, ১৯৬৯।

৬. সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, রাণু ও ভানু, পঞ্চম সংস্করণ, কলকাতা, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, জানুয়ারি ২০০১।

৭. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবন888sport sign up bonus [সংস্করণ নেই], কলকাতা, বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগ, ১৩১৯।

৮. অমিতাভ চৌধুরী, সূর্যাস্তের আগে রবীন্দ্রনাথ, প্রথম সংস্করণ, কলকাতা, দে’জ পাবলিশিং, এপ্রিল ১৯৮০।

৯. সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার এবং পুনরাবিষ্কার, প্রথম সংস্করণ, কলকাতা, দে’জ পাবলিশিং, জানুয়ারি ২০১১।

১০. জগমোহন মুখোপাধায়, গবেষণা-পত্র অনুসন্ধান ও রচনা, পঞ্চম সংস্করণ, কলকাতা, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ১৯৯২।