রবীন্দ্রনাথ ও সম্পাদক রামানন্দ

শান্তি সিংহ

 

রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় (১৮৬৫-১৯৪৩) প্রবাসী ও মডার্ন রিভিউ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে বিখ্যাত। লালমাটি বাঁকুড়া শহরের ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম। বাঁকুড়া জিলা স্কুলে পড়ার সময়, অঙ্কের শিক্ষক ব্রাহ্মবাদী কেদারনাথ কুলভীর সংস্পর্শে ব্রাহ্মধর্মে অনুরাগী হন। পরবর্তীকালে তিনি ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন।

তাঁর ছাত্রজীবন উজ্জ্বল। এন্ট্রান্স পরীক্ষায় চতুর্থ। কলকাতা সিটি কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষায় ইংরেজি অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। ইংরেজি এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে চতুর্থ স্থানাধিকারী।

সিটি কলেজে ইংরেজি অধ্যাপনা থেকে এলাহাবাদে কলেজ-অধ্যক্ষ হিসেবে রামানন্দের গমন। ধর্মবন্ধু, দি ইন্ডিয়ান মেসেনজার, দাসী, প্রদীপ প্রভৃতি পত্রিকা-সম্পাদনার অভিজ্ঞতায় পরিপুষ্ট রামানন্দ এলাহাবাদ থেকে সম্পাদক হিসেবে ১৯০১ সালে প্রবাসী ও ১৯০৭ সালে মডার্ন রিভিউ পত্রিকা প্রকাশ করেন। সম্পাদনাকর্মে নিজেকে পরিপূর্ণভাবে যুক্ত রাখার জন্য অধ্যক্ষপদে তিনি ইস্তফা দেন।

প্রদীপ, প্রবাসী ও মডার্ন রিভিউ পত্রিকা-সম্পাদনা সূত্রে রামানন্দের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সৌজন্যমূলক পরিচয় থেকে গভীর সখ্য-আত্মীয়তা গড়ে ওঠে। ১৩০৮ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে (এপ্রিল, ১৯০১) এলাহাবাদের ২/১ সাউথ রোডের বাসাবাড়ি থেকে প্রবাসী পত্রিকার প্রথম 888sport free bet প্রকাশিত হয়। মাসিক প্রবাসী পত্রিকার প্রথম 888sport free betয় অত্যন্ত মর্যাদার সঙ্গে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রবাসী 888sport app download apkটি। 888sport app download apkটির প্রথম স্তবক নিম্নরূপ :

সব ঠাঁই মোর ঘর আছে, আমি সেই ঘর মরি খুঁজিয়া।

দেশে দেশে মোর দেশ আছে, আমি সেই দেশ লব

যুঝিয়া।

পরবাসী আমি যে দুয়ারে চাই

তারি মাঝে মোর আছে যেন ঠাঁই,

কোথা দিয়া সেথা প্রবেশিতে পাই সন্ধান লব বুঝিয়া।

ঘরে ঘরে আছে পরমাত্মীয়, তারে আমি ফিরি

খুঁজিয়া \

রামানন্দ তারপর রবীন্দ্রনাথের অনেক 888sport app download apk, গল্প, 888sport live ছেপেছেন প্রবাসীতে। রবীন্দ্রনাথের গোরা 888sport alternative link ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় প্রবাসী পত্রিকায়। তখন রবীন্দ্রনাথ গোরা 888sport alternative linkের কিস্তি নিয়মিত ডাকযোগে পাঠান এলাহাবাদে। কবির কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথের মর্মান্তিক মৃত্যুশোকেও কবি এলাহাবাদে কোনো লেখার কিস্তি পাঠাতে বিলম্ব করেননি।

এলাহাবাদ থেকে রামানন্দের ইংরেজি পত্রিকা মডার্ন রিভিউ ১৯০৭ সালে প্রকাশিত হয়। সেখানেও রবীন্দ্রনাথের লেখার দাক্ষিণ্য থেকে বঞ্চিত হয়নি পত্রিকাটি।

সম্পাদক-রামানন্দের চরিত্রে ফাঁক বা কোনো ফিকির ছিল না। তিনি বিশ্বাস  করতেন : পত্রিকা-সম্পাদনা মানে                      কবি-লেখকদের কাছে ভিক্ষুকের মতন লেখা ভিক্ষা নয়। উৎকৃষ্ট রচনাপ্রাপ্তির জন্য লেখকদের সাধ্যমতন সম্মান-দক্ষিণা দিয়ে তিনি 888sport apk download apk latest version জানাতেন। বাংলা-পত্রিকার ইতিহাসে, লেখকদের সাধ্যমতন সম্মান-দক্ষিণা দেওয়ার রীতি প্রবাসী-সম্পাদক 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে প্রথম দেখান। লক্ষণীয়, প্রবাসী পত্রিকার প্রথম যুগে, পত্রিকা-প্রকাশনায় বিস্তর আর্থিক ক্ষতির বোঝা বহন করেছেন রামানন্দ, কিন্তু লেখকদের প্রতি সম্মান-দক্ষিণা-রীতি থেকে বিরত হননি।

প্রদীপ পত্রিকা-সম্পাদনায় একদা যুক্ত থেকেও পূর্ণ স্বাধীনতা তাঁর ছিল না। তাই তিনি ক্ষোভের সঙ্গে একদা অকপটে জানান : ‘আমার বিবেচনায় লেখকদের টাকা দিবার প্রথা প্রবর্তন করা উচিত। অনেকে মনে করিবেন, টাকা না-দিয়েই কাগজের খরচ কুলায় না। তাহার উপর টাকা দিতে হইলে স্বত্বাধিকারীর কিছু পৈতৃক জমিদারি থাকা চাই।’

রবীন্দ্রনাথ তাঁর অন্তর দিয়ে রামানন্দের এরূপ নীতিনিষ্ঠ মানসিকতাকে 888sport apk download apk latest versionর চোখে দেখেছেন। তাই সুদূর ভিয়েনা থেকে ১৯২৬ সালের ২৫ অক্টোবর রামানন্দকে তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে লেখেন, ‘সরলা (সরলা দেবী) যখন আপনার সম্পাদকের কার্যকে ব্যবসাদারি বলেছিল, তখন সেটাকে আপনার সম্বন্ধে অনভিজ্ঞতাবশত ভুল বলে মনে করতে পারতুম। কিন্তু লেখার মধ্যে অসম্মানজনক শ্লেষ ছিল বলেই, আমি তা ভাবতে পারি নি, এবং সেটাকে ‘অপরাধ’ ব’লে গণ্য করেই আত্মীয়মন্ডলীকে বেদনা দিয়ে, প্রকাশ্যে তাকে কঠিন শাস্তি দিয়েছি।’

(চিঠিপত্র, বিশ্বভারতী, পৃ ৯১)

রবীন্দ্রনাথের অনুরূপ 888sport apk download apk latest versionর মনোভাব ফুটে উঠেছে ১৯২৭ সালের ২ জুলাই লেখা রামানন্দের প্রতি চিঠিতে। দীর্ঘ চিঠিটির মাঝে রবীন্দ্রনাথ সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘আপনাকে বলচি, আপনার জন্যে, অর্থাৎ আপনার ‘প্রবাসী’ প্রভৃতির জন্যে, আত্মীয় ও অনাত্মীয়দের কাছ থেকে অনেকবার অনেক আঘাত পেয়েছি। সেটা আমি কর্তব্যবোধের স্বীকার করচি। প্রবাসীতে অগ্রগামী হয়ে, আপনি যে পদ্ধতি প্রথম প্রবর্তন করেছিলেন, অন্য সকল কাগজ যখন তারই অনুবর্তন করে প্রতিযোগিতায় প্রবৃত্ত হয়েছিল, তখন আমি সেজন্য অত্যন্ত বিরক্তিবোধ করেছি। প্রমথ (চৌধুরী) ‘সবুজপত্র’-এ একেবারে সেদিকে যায় নি বলেই, আমি আরাম পেয়েছিলুম। ‘সবুজপত্র’ কোনো হিসাবেই ‘প্রবাসী’-র প্রতিযোগী ছিল না; নিজের প্রকৃতিস্বাতন্ত্র্যের উপরেই প্রতিষ্ঠিত ছিল বলেই, আমার পক্ষে ‘সবুজপত্র’-কে অনুকূল্য করা এত সহজ হয়েছিল।’

(চিঠিপত্র, বিশ্বভারতী, পৃ ১০৮)

স্বাদেশিক চেতনাযুক্ত পত্রিকা সম্পাদনা করায় ইংরেজ সরকারের দমনপীড়ন নীতির শিকার হন রামানন্দ। তাই এলাহাবাদ ছেড়ে কলকাতায় ফিরে আসেন। কর্নওয়ালিস স্ট্রিটে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ। তার কাছেই, গলির ভেতর ২১০/৩/১ ভাড়াবাড়িতে এসে ওঠেন। তিনতলা বাড়ির প্রতি তলায় দুটি করে ঘর। সঙ্গে হাত দুয়েক চওড়া বারান্দা। দোতলায় যে-ঘরটি একটু বড় ছিল, সেখানেই রামানন্দের লেখালেখির টেবিল। ওই ঘরেই তিনি শয়ন বিশ্রাম করতেন। একতলায় পত্রিকা অফিস। সেখানে অফিসের কাজ হয়। ১৩১৫ বঙ্গাব্দের (১৯০৮) বৈশাখে প্রবাসী পত্রিকা এবং ১৯০৮ সালের মে মাসে মডার্ন রিভিউ পত্রিকা মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয় কলকাতায়। রঙিন ছবির হাফটোন ব্লক সুন্দরভাবে করার জন্য রামানন্দ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর কারখানায় প্রতিবার করাতেন। কলকাতার গলির ভেতর ভাড়াবাড়িতে রামানন্দ স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের নিয়ে বাস করতেন। প্রতিবেশী বাড়ির রান্নাঘরের ধোঁয়া কুন্ডলি পাকিয়ে আসত তাঁদের ভাড়াবাড়িতে। তবু ওই বাড়িতেই প্রায় বছর-ষোলো সপরিবারে থেকেছেন রামানন্দ।

রবীন্দ্রনাথ প্রায় আড়াই বছর ধরে প্রবাসীতে ধারাবাহিক লিখেছেন গোরা 888sport alternative link। এই 888sport alternative link লেখার জন্য রামানন্দ অনেক আগে আগাম তিনশো টাকা রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে বলেন, ‘যখন পারবেন লিখবেন, নাও যদি পারেন, আমি কোনো দাবি করব না।’ এভাবে দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে লেখক ও সম্পাদকের প্রীতিমধুর সম্পর্ক। আমরা জানি, প্রবাসী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের চোখের বালি, ঘরে বাইরে, শেষের 888sport app download apk 888sport alternative link এবং অচলায়তন, রক্তকরবী, মুক্তধারা নাটক প্রকাশিত। রবীন্দ্রনাথের জীবন888sport sign up bonus, পশ্চিম যাত্রীর ডায়েরি প্রভৃতি বিশেষ ধারার গদ্যগ্রন্থ এবং অনেক 888sport live ও ছোটগল্প প্রকাশিত হয়েছে প্রবাসী পত্রিকায়।

রবীন্দ্রনাথ ১৯২৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রামানন্দকে লেখেন, ‘‘যক্ষপুরী’ নাটকটি (রক্তকরবীর প্রাথমিক নামকরণ) ‘প্রবাসী’-র পূজা-888sport free betয় প্রকাশ না-করিয়া, ফাল্গুন বা চৈত্রমাসে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন, তবে ভাল হয়। অভিনয়ের পূর্বে আমি উহা বাহির করিতে ইচ্ছা করি না।’

(চিঠিপত্র, বিশ্বভারতী, পৃ ৮৬)

বিদেশ 888sport slot gameকালে রবীন্দ্রনাথ নানা ব্যস্ততার মাঝেও রামানন্দকে চিঠি লিখতেন। ১৯১৩ সালের ১২ মে (১৩২০ বঙ্গাব্দের ২৯ বৈশাখ), লন্ডন থেকে রবীন্দ্রনাথ রামানন্দকে লেখেন, ‘‘প্রবাসী’-র যে শত্রু888sport free bet বাড়িতেছে, ইহাতে আনন্দিত হইবেন। ইহাতে ‘প্রবাসী’-র প্রভাবেরই পরিচয় পাওয়া যাইতেছে। শত্রু সৃষ্টি করা শক্তিরই লক্ষণ – বিশ্ববিধাতারও শত্রুর অভাব নাই। আপনি বন্ধু যদি না-পাইতেন, তবে শত্রু দেখা দিত না।’

(চিঠিপত্র, বিশ্বভারতী, পৃ ৪১)

রামানন্দ জহুরি-চোখে প্রবাসী পত্রিকার জন্মলগ্নেই ‘আবিষ্কার’ করেন গুরুত্বপূর্ণ লেখক হিসেবে রবীন্দ্রনাথকে। তাই এলাহাবাদ থেকে প্রবাসীর জন্য নিয়মিত লেখার তাগাদা দিতেন রবীন্দ্রনাথকে। তখন রবীন্দ্রনাথ নোবেল 888sport app download bd-ধন্য কবি হননি।

কলকাতায় প্রত্যাবর্তন সূত্রে, রামানন্দের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের প্রীতিসম্পর্ক গভীরতর হয়। রামানন্দ-কন্যা সীতা দেবী তাঁর লেখা পুণ্য888sport sign up bonus গ্রন্থে প্রত্যক্ষ-অভিজ্ঞতার আলোয় লেখেন, ‘রবীন্দ্রনাথ প্রিন্স দ্বারকানাথের পৌত্র ছিলেন বটে, কিন্তু বড়োমানুষী তাঁহার ভিতর বিন্দুমাত্রও ছিল না। সাধারণ ভাড়াটে ঘোড়ার গাড়িতে অনেক সময় চলিয়া আসিতেন, এমন কি দু’একবার জোড়াসাঁকো হইতে কর্ণওয়ালিস স্ট্রিট পর্যন্ত হাঁটিয়া চলিতেও তাঁহাকে দেখিয়াছি। আমাদের সমাজপাড়ার সেই বাড়িটি অতি ক্ষুদ্র ও সাধারণ ছিল, কিন্তু কতবার তাঁহার চরণরেণুর স্পর্শে তাহা ধন্য হইয়াছে। ‘প্রবাসী’-অফিসের সাজসরঞ্জাম তখন এতই দীন ছিল যে, তাহার বর্ণনা করিলে এখনকার দিনে মানরক্ষা হয় না। সেই স্বল্পলোক ছোট ঘরটিতে, সাধারণ কাঠের টুলে বসিয়া কতদিন তাঁহাকে বাবার (রামানন্দ) সঙ্গে ও চারুবাবুর সঙ্গে গল্প করিতে দেখিয়াছি।’

(ওই, পৃ ১৯-২০)

রামানন্দের জ্যেষ্ঠ কন্যা শান্তা দেবীর কলমেও দেখা যায় : কর্ন ওয়ালিস স্ট্রিটের সমাজপাড়ার ভাড়াবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ এসেছেন জ্যেষ্ঠ কন্যা বেলা দেবীকে সঙ্গে নিয়ে। শান্তা দেবী লিখেছেন, ‘কবি আসিয়াই বলিলেন, ‘রামানন্দ, আপনি মনে করবেন না যে, আপনিই কেবল কন্যাদের নিয়ে বেড়াতে পারেন; আমিও পারি।’’ (ভারত মুক্তিসাধক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ও অর্ধশতাব্দীর বাংলা, পৃ ২৩১)

রামানন্দ যথার্থভাবে রবীন্দ্র-অনুরাগী ও কবির হিতৈষীবন্ধু ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সু888sport login bangladesh link দিয়ে পাঠসঞ্চয় নামে একটি পাঠ্যগ্রন্থ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমভুক্ত করার জন্য তিনি স্বয়ং উদ্যোগী হন। তখন রবীন্দ্রনাথের বয়স পঞ্চাশ-অতিক্রান্ত, যদিও তখন কবি নোবেল 888sport app download bd পাননি। তৎকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটবুক কমিটি রামানন্দের প্রয়াসকে অনুমোদন করেননি। রামানন্দের উদ্যোগকে মর্যাদা দিয়ে রবীন্দ্রনাথ সেই বইটি শান্তিনিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ে পাঠ্যগ্রন্থ হিসেবে নির্বাচিত করেন।

১৯১২ সালের ২৮ জানুয়ারি, কলকাতা টাউন হলে, বঙ্গীয় 888sport live football পরিষদের উদ্যোগে একটি সারস্বত সভার আয়োজন হয়। রামানন্দ ওই সভায় স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। তারপর প্রবাসী পত্রিকায় সশ্রদ্ধচিত্তে তিনি লেখেন, ‘যাঁহারা তাঁহার (রবীন্দ্রনাথের) গ্রন্থাবলী নিবিষ্টচিত্তে অধ্যয়ন করিয়াছেন, তাঁহার অনেকের এবং বহুভাষাভিজ্ঞ কোনো কোনো সুপন্ডিত ব্যক্তির মত এই যে – তিনি বঙ্গের সর্বশ্রেষ্ঠ 888sport live footballিক এবং জগতের লেখকদিগের মধ্যে আসন পাইবার যোগ্য।… তিনি বিশ্বসংগীত শুনিয়াছেন। তাঁহার গদ্যরচনায় ও 888sport app download apkয় তাহারই প্রতিধ্বনি আমরা শুনিতে পাই।’

রবীন্দ্রনাথ প্রবাসী পত্রিকায় লিখেন, তাঁর জীবনে প্রথম সম্মান-দক্ষিণা পেয়েছেন, তা আমরা জানি। অথচ প্রবাসী পত্রিকা সম্পাদকের 888sport apk download apk latest versionপূর্বক সম্মান-দক্ষিণা নিবেদন বিষয়টি নিয়ে ভারতী পত্রিকায় তির্যক ইঙ্গিত করায়, ব্যথিতচিত্ত-ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রনাথ লেখেন, ‘প্রবাসী’-সম্পাদক স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আমার 888sport liveের মূল্য দিয়েছিলেন। মাসিকপত্র থেকে এই আমার প্রথম আর্থিক 888sport app download bd, তারপরে এই ইতিহাসের ধারা আর অধিক বর্ণনা করবার প্রয়োজন নেই।’

‘প্রবাসী’ সম্পাদক যদি সেদিন আমাকে অর্থমূল্য দিতে পেরে থাকেন, তবে তার কারণ এই নয় যে, তিনি ধনবানের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছেন। তার কারণ এই যে, ন্যায্য উপায়ে পত্রিকা থেকে লাভ করতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। তাতে কেবল যে তাঁর সুবিধা হয়েছে তা নয়, আমারও হয়েছে; এবং এই সুবিধা দেশের কাজে লাগাতে পেরেছি।’ (সবুজপত্র পত্রিকা, আশ্বিন ১৩৩৩, পৃ ৬-৭)

১৩৪৮ সালের জ্যৈষ্ঠ 888sport free bet প্রবাসীতে সম্পাদক রামানন্দ সশ্রদ্ধচিত্তে লিখেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ যখন স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া ‘প্রবাসী’-র জন্য বিলাতি ও আমেরিকার বহু মাসিক পত্রের ভাল ভাল 888sport live বাছিয়া, তাহার কোন-কোন অংশ শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক ও ছাত্রদের কাহাকে কাহাকেও 888sport app download apk latest version করিতে দিতেন, সমুদয় 888sport app download apk latest version সংশোধন করিয়া দিতেন, এবং কোন-কোন 888sport app download apk latest version সন্তোষজনক না-হইলে, স্বয়ং সমস্তটি লিখিয়া দিতেন, তখন তিনি অজ্ঞাত ছিলেন না।’

 

দুই

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে রামানন্দের গভীর 888sport apk download apk latest versionপূর্ণ প্রীতিসুসম্পর্কের মাঝে হঠাৎ ভুল-বোঝাবুঝির কালো মেঘ দেখা দেয়। রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখা নটীর পূজা নাটিকাটি ছয়শো টাকার বিনিময়ে বসুমতী পত্রিকায় প্রকাশের জন্য দেন। সেই সংবাদ রামানন্দের কর্ণগোচর হওয়া মাত্র অভিমানভরা ক্ষোভে ১৯২৬ সালের ৯ মে তিনি পত্রাঘাত করেন রবীন্দ্রনাথকে। বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগের সৌজন্যে রামানন্দের চিঠির প্রতিলিপি নিম্নরূপ :

২৬শে বৈশাখ, ১৩৩৩

 

ভক্তিভাজনেষু,

এই চিঠি লিখিতেছি বলিয়া আমাকে ক্ষমা করিবেন। কোন প্রকারে আপনার বিরক্তি উৎপাদন-করা আমার উদ্দেশ্য নহে।

আমি আপনার লেখা পাইবার জন্য কখনও কাড়াকাড়ি করি নাই। তাহা আগ্রহ ও লোভের অভাববশত নহে। তাহার কারণ অন্যরূপ। আপনি স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া আমাকে অনেক অনুগ্রহ করিয়াছেন, তাহা একটি কারণ। দ্বিতীয়ত, যে-যে স্থলে আপনি টাকা লইতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন নাই, তথায় আমি টাকাও দিয়াছি। আগে-আগে আমি নিজেই এ-সব স্থলে কিছু টাকা দিতাম। সম্প্রতি, ‘পশ্চিমযাত্রীর ডায়েরি’ প্রকাশের মাঝামাঝি বা তাহার পরে (আমি তখন প্রায় শান্তিনিকেতনে থাকিতাম বলিয়া, ঠিক সময় মনে নাই) বিশ্বভারতী কার্যালয় দশ টাকা করিয়া পৃষ্ঠাহার নির্দেশ করেন। ঐ হারে কিছু টাকা দেওয়া হইয়াছে। পরে হার-নির্দেশের ভার প্রবাসী অফিসের উপরই দেওয়া হয়। প্রবাসী অফিস ও প্রেস এবং বিশ্বভারতী কার্যালয় উভয় পক্ষের দেনা-পাওনার হিসাব হইয়া গেলে, বাকি টাকা যত শীঘ্র পারি, দিব।

যাহা হউক, উক্ত উভয় কারণে আমার একটা ধারণা ও আশা জন্মে যে, যে-লেখার জন্য আপনি টাকা লইতে সম্মত, তাহা আমি পাইব এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিব। কিন্তু কাল রাতে শান্তিনিকেতনে আহারের পর শুনিলাম যে, ‘নটীর 888sport app download bd’ (রামানন্দ এইভাবে পত্রে লেখেন, শুদ্ধরূপ : ‘নটীর পূজা’) নাটীকাটি ‘বসুমতী’কে ছাপিবার জন্য ৬০০ টাকায় দেওয়া হইয়াছে। অবশ্য যদি ‘প্রবাসী’ উহা প্রকাশ করিবার অযোগ্য বিবেচিত হইয়া থাকে, তাহা হইলে আমার কিছু বলা উচিত নহে। অন্যথা আমার পক্ষে ক্ষুণ্ণ হওয়া স্বাভাবিক। ছয়শত টাকা দিতে সম্ভবত আমিও পারিতাম। আমি  ‘প্রবাসী’-তে ‘মুক্তধারা’ ছাপিবার অধিকারের জন্য ১২৫০ টাকা নগদ এবং ৩৭৫০ খানি ‘মুক্তধারা’ বিশ্বভারতীকে দিয়েছিলাম। সুতরাং ‘নটীর 888sport app download bd’ পাইলে সম্ভবত দরদস্ত্তর করিতাম না। এ-সব কথা আপনার জন্য লিখিতেছি না; লিখিতেছি, বিশ্বভারতী কার্যালয় আমার প্রতি অনাস্থা দেখাইয়াছেন ও অবিচার করিয়াছেন, এই বিশ্বাসবশত।

এখন অবস্থা এই দাঁড়াইতেছে যে, আপনি যদি অতঃপর আমাকে বিনা দক্ষিণায় কিছু লেখা দেন, কিংবা কিছু দক্ষিণা গ্রহণ করেন, তাহা হইলে উভয় ক্ষেত্রেই বিশ্বভারতী কার্যালয়ের এবং আমার এই সন্দেহ স্বভাবতই হইবে যে, আমি বিশ্বভারতীর আর্থিক ক্ষতির কারণ।

অতএব আপনার নিকট আমার বিনীত প্রার্থনা এই যে, আপনি অতঃপর আমাকে বাংলা বা ইংরেজি কোন লেখা দিবেন না। আমি জানি, আপনার লেখা না-পাইলে আমার কাগজ দুটির গৌরব হ্রাস পাইবে। কিন্তু অতঃপর আপনার লেখা গ্রহণ করা আমার পক্ষে উচিত হইবে না। আমার  হৃদয়-মনে দুঃখের কারণের অভাব নাই। তাহার উপর, বিশ্বভারতীর ক্ষতি করিতেছি কিংবা উহার যে সামান্য সেবা আমি করি, তাহা স্বার্থ প্রযুক্ত করি, এরূপ কোন সন্দেহের আঘাত আমার পক্ষে দুঃসহ হইবে।

আমি যদি কোন ভুল করিয়া থাকি, কিংবা আমার কোন ত্রুটি হইয়া থাকে, তাহা সংশোধনের সুযোগ দিলে অনুগৃহীত হইব। ইহা পুনর্বার লেখা পাইবার কৌশল নহে, বিশ্বাস করিবেন। উহার লোভ, আশা ও গৌরব ত্যাগ করিলাম।

ইতি

প্রণত

শ্রীরামানন্দ চট্টোপাধ্যায়

 

রামানন্দের ‘পত্রবাণে-বিদ্ধ’ রবীন্দ্রনাথ বেদনাহত চিত্তে ১৩ মে, ১৯২৫ প্রবাসী সম্পাদক রামানন্দকে পত্রযোগে জানান : ‘ক্লান্তিতে যখন আধমরা হয়ে পড়ে আছি, এমন সময়ে রামানন্দবাবুর কাছ থেকে অত্যন্ত কঠিন একখানা চিঠি পেয়ে, দেহ-মন দুইই আরো দমে গেল। তাঁর কাছ থেকে এটা প্রত্যাশা করি নি, কারণ তাঁর সঙ্গে আমার সম্বন্ধ আন্তরিক 888sport apk download apk latest versionপ্রীতির – বাইরের কোনো ঘটনার আকস্মিক উৎপাতে, আমাদের পরস্পর ব্যবহারের এমন উলটপালট হয়ে যেতে পারে, এ-কথা কখনো কল্পনা করি নি।’

সবিশেষ উল্লেখযোগ্য, রবীন্দ্রনাথের বেদনাতুর চিঠি পেয়েও সম্পাদক-রামানন্দের মনে সম্ভবত অভিমানের ক্ষোভ নিরসন হয়নি। তুষের আগুনের মতন ধিকিধিকি-জ্বলা ক্ষোভ এক বছর পরের চিঠিতেও রবীন্দ্রনাথকে জানান রামানন্দ। বিশ্বভারতী গ্রন্থন বিভাগের সৌজন্যে ৩০ জুন, ১৯২৭ লেখা রামানন্দের চিঠির কিয়দংশ উদ্ধৃত করছি :

 

১৫ আষাঢ়, ১৩৩৪

ভক্তিভাজনেষু

আপনি কাল যে আমাকে মৌখিক বলিয়াছিলেন, চিঠিতে কথাগুলো শক্ত হইয়া যায় এবং সব কথাও হয় না, তাহা ঠিক। কিন্তু আমার এটা একটা দুর্বলতা বা অক্ষমতা যে, আমি যথাসময়ে মৌখিক সব কথা গুছাইয়া বলিতে পারি  না – সব কথা মনে পড়ে না। এই জন্য আপনার অবগতির জন্য এই চিঠিতে কয়েকটা কথা লিখিতেছি।

অনেকদিন আগে আমি আপনাকে একটা 888sport alternative link লিখিতে অনুরোধ করিয়াছিলাম। তখন আপনার ইচ্ছা হয় নাই। তাহার পর শান্তাও বলিয়াছিল। তখনও আপনার মানসিক অবস্থা অনুকূল ছিল না। তাহার পর নানা কারণে এবং আপনার ইচ্ছা হওয়ায় আপনি ‘বিচিত্রা’-র জন্য 888sport alternative link লিখিতেছেন।

ফণীবাবুর কন্যা রাণুকে আপনি যে-সব চিঠি লিখিয়াছিলেন, তাহা ‘প্রবাসী’-তে ছাপিবার জন্য কালিদাস আপনার অনুমতি চাহিয়াছিলেন।… এখন বোধহয়, সেই চিঠিগুলিই ‘বিচিত্রা’-র শ্রাবণ 888sport free bet হইতে উহাতে প্রকাশিত হইবে বলিয়া উহার আষাঢ় 888sport free betর ৭২ পৃষ্ঠায় বিজ্ঞাপিত হইয়াছে।…

এই প্রকারে নানা কারণে, আপনার বৃহৎ ও ভাল লেখাগুলি ‘প্রবাসী’-তে না-গিয়া অন্যত্র ছাপা হইবে। অবশ্য ‘প্রবাসী’-র কোন একটা দাবি আছে তা নয়। কিন্তু ‘প্রবাসী’-র সহিতই লেখক হিসেবে আপনার সম্বন্ধ সর্বাপেক্ষা দীর্ঘকালব্যাপী এবং সম্প্রতি হঠাৎ ‘প্রবাসী’-র কোনো 888sport live footballিক, নৈতিক বা অন্যবিধ অপকর্ম ঘটে নাই। এই জন্য অতঃপর ‘প্রবাসী’ অন্য কাগজের পাত্রাবশিষ্টের মত কিছু কিছু পাইলে তাহাতে তাহার উপকার না-হইয়া অপকার হইবার সম্ভাবনা আছে। ইহাও গোপন করিবার চেষ্টা করা বৃথা যে, আমি অহঙ্কারশূন্য নহি। ব্যক্তিগতভাবে আমি উহা ত্যাগ করিতে চেষ্টা যে না করি, তাহা নহে। কিন্তু ‘প্রবাসী’ ও আমি ঠিক এক নই। আমার জামাতা-কন্যা পুত্রবধূ-পুত্রদেরও ইহার সহিত যোগ এবং সম্ভবত কিছু কিছু অহঙ্কার আছে। সুতরাং লোকের চোখে খাট হইলে তাহাতে শুধু যে উহার ক্ষতি হইবে, তাহা নহে, আমার পরিবারস্থ সকলে ব্যথিত হইবে।

আপনার কাছে বৃহৎ ও ভাল লেখা পাইবার উদ্দেশ্যে এসব কথা লিখিতেছি না। কারণ, আমি জানি, আপনি নিজে হইতেই স্বভাবত ‘প্রবাসী’-র সাহায্য করিতে ইচ্ছুক। ‘প্রবাসী’কে বড় ও ভাল লেখাগুলি দিলে তাহাতে আপনার ও বিশ্বভারতীর আর্থিক ক্ষতি হইবে। কারণ যাঁহারা ‘প্রবাসী’কে Crush করিয়া নিজে সুপ্রতিষ্ঠিত হইতে চান, তাঁহারা ধনীলোক; তাঁহারা যত টাকা দিবেন, আমার তত দিবার সাধ্য না থাকিতে পারে। অথচ আমি ‘প্রবাসী’-র প্রতি আপনার প্রীতিবশত বিনামূল্যে বা সস্তায় আপনার লেখা লইতে সম্পূর্ণ ইচ্ছুক। এই জন্য আপনি আমাকে কোন লেখা না দেন, ইহাই আমি চাই।…

একটি নূতন সচিত্র মাসিক কাগজ বাহির হইয়াছে। উহা অন্যসব পুরাতন সচিত্র মাসিকের ন্যায় ‘প্রবাসী’র Rival।  অধিকন্তু মৌখিক ইহা রচিত হইয়াছে যে, উহা ‘প্রবাসী’কে Crush করিবে।…

আমি পুনর্বার বলিতেছি, এইসব কথা ‘প্রবাসী’র জন্য লেখা আদায় করিবার নিমিত্ত লিখিতেছি না।… আপনার অন্য কোন লেখা সম্বন্ধে আমার প্রার্থনা নাই।…

প্রণত

শ্রীরামানন্দ চট্টোপাধ্যায়

 

পুনশ্চ (১) ‘প্রবাসী’র ভাদ্র 888sport free bet হইতে আমি আপনার লেখা হইতে বঞ্চিত থাকিতে প্রতিজ্ঞা করিলাম।… অমিয়বাবুকে (চক্রবর্তী) বলিবেন, তিনিও যেন আপনার আর কোন চিঠি না পাঠান। ‘প্রবাসী’ Crushed হয় কিনা, তাহার Experiment-টা সম্পূর্ণ সন্তাষজনকরূপে হইয়া যাওয়াই ভাল।

প্রণত

শ্রীরামানন্দ চট্টোপাধ্যায়

পুনশ্চ  (২) ‘মডার্ন রিভিউ’-এর জন্যও অনুগ্রহ করিয়া অতঃপর আমাকে কোন লেখা দিবেন না।

প্রণত

শ্রীরামানন্দ চট্টোপাধ্যায়

 

প্রবাসী-সম্পাদকের ৩০ জুন, ১৯২৭ লেখা অভিমানক্ষুব্ধ চিঠিটি ডাক বিভাগের সৌজন্যে পরদিন, অর্থাৎ ১ জুলাই (১৯২৭) রবীন্দ্রনাথের হাতে আসে। চিঠিটি রবীন্দ্রচেতনায় তীব্র বেদনার অভিঘাত জাগায়। তাই একই দিনে (১ জুলাই, ১৯২৭) পরপর দুটি চিঠি এবং পরদিন (২ জুলাই, ১৯২৭) একটি চিঠি রামানন্দকে লিখে মনের বেদনা ও মনের ‘ভার’ লাঘব করতে চেষ্টা করেন রবীন্দ্রনাথ। সেই ঐতিহাসিক তিনটি চিঠি থেকে কিয়দংশ উদ্ধৃতি করা যেতে পারে, বিশ্বভারতী প্রকাশন বিভাগের সৌজন্যে। তা নিম্নরূপ :

 

১ জুলাই, ১৯২৭

ওঁ

888sport apk download apk latest versionস্পদেষু,

আপনি অমিয়কে (চক্রবর্তী) যদি জিজ্ঞাসা করতেন, জানতে পারতেন, এবার আপনার সঙ্গে দেখা হবার অনেক আগেই আমি তাকে বারবার বলেছি যে, ‘প্রবাসী’র সঙ্গে অন্য কোন কাগজের প্রতিযোগিতায় আমি যোগ দিয়েচি, এই অন্যায় জনশ্রুতিকে দূর করবার জন্যে বিশেষ চেষ্টা করতে হবে। অত্যন্ত ব্যস্ত ছিলুম বলেই কিছুই করতে পারিনি সত্য, কিন্তু শীঘ্রই আমার এই সংকল্প সিদ্ধ করব বলে প্রস্ত্তত হতে যাচ্ছিলুম। সেটা যখন অসম্ভব হল, তখন বুঝতে পারচি, বন্ধুত্ব সম্পর্ক নিয়ে চিরদিন আমার যেরকম আকস্মিক দুর্ঘটনা ঘটেচে, এবারেও তাই ঘট্ল। অর্থাৎ কোনো অপরাধ না-করেও আমাকে দুঃখ পেতে হবে।

বারবার দেখেচি যখন পরস্পর বোঝাপড়ার একটা কোনো ব্যাঘাত ঘটে, তখন বাইরে থেকে অত্যুক্তি ও মিথ্যা উক্তি কোথা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে এসে পড়ে। যখন চিত্তরঞ্জন (দাশ) ও দ্বিজেন্দ্রলাল (রায়) আমার অত্যন্ত প্রতিকূল ছিলেন, তখন আমার জবানী, এমন সকল কথা, আমাদের দুইপক্ষের সুপরিচিত লোকে তাঁদের কাছে রটিয়েছিল, যার কোনই মূল ছিল না।… এই সব ছোট ছোট বিষয় নিয়ে যখন ক্ষোভের কারণ ঘটে, তখন একান্ত লজ্জিত হই এবং তাতে আমার গভীরতর ক্ষতির কারণ ঘটে।… আমি কোনো অভিমানকে মনে স্থান দিতে চাই নে। আমার অন্তরের একান্ত প্রার্থনা : আমার মন যেন বাধামুক্ত হয়। আমার বয়স আয়ুর শেষ কোঠায় এসে পৌঁচেছে, তবু আজও প্রাত্যহিক তুষ্টতার গ্লানির দ্বারা নিজেকে আক্রান্ত দেখলে, খেদের অন্ত থাকে না।…

 

ইতি

১ জুলাই, ১৯২৭

আপনাদের

শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

১ জুলাই, ১৯২৭

ওঁ

888sport apk download apk latest versionস্পদেষু,

…আজ দৈববিপাকে, যখন থেকে লেখা বেচাকেনা করতে বাধ্য হয়েছি, তখন থেকে নিজেকে অবমাননা ও বেদনার থেকে রক্ষা করা আমার পক্ষে অসাধ্য হল। যে-মানুষ হাটে নেমেছে, সে বন্ধুত্বের দাবি করতে পারে না। পূর্বে আমার যে 888sport live footballিক স্বাতন্ত্র্য ছিল, আজ পণ্যশালায় তা বিকিয়ে দিয়েচি। এই বিরুদ্ধতার, এই ভুল বোঝাবুঝির আবহাওয়া আমার শান্তির পক্ষে, সাধনার পক্ষে অত্যন্ত প্রতিকূল। এর থেকে প্রাণপণে আমাকে দূরে যেতেই হবে। অসমাপ্ত কাজগুলি সমাপ্ত করতে হবে।

 

আপনাদের

শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

২ জুলাই, ১৯২৭

ওঁ

888sport apk download apk latest versionস্পদেষু,

অনেক কথা হৃদয়ে চাপা থাকে, বলবার প্রয়োজন হয় না; দুঃখের দিনে সেগুলো বলবার সময় আসে। …জানি না, কী কারণে, সংসারে আমার বন্ধুত্বের সীমা অত্যন্ত সংকীর্ণ।… যখন বয়স হয়েছে, পরিচিতি লোকদের মধ্যে যাদের আমি কোনো-না-কোনো কারণে 888sport apk download apk latest version করতে পেরেছি, তাদেরই আমি মনে মনে বন্ধু বলে গণ্য করেছি। তাদেরও সকলকে আমি রক্ষা (সম্পর্ক) করতে পারিনি। এঁদের 888sport free bet অত্যন্ত কম। জগদীশ (বসু), আপনি, যদু বাবু (সরকার) ও রামেন্দ্র সুন্দর (ত্রিবেদী) – এই চারজনের নাম (মনে) পড়চে।

…যাই হোক, ‘প্রবাসী’ ও ‘মডার্ন রিভিউ’-এর তো দরজা বন্ধ। অর্থাৎ আপনার সঙ্গে আমার যে একটা অকৃত্রিম আত্মীয়সম্বন্ধ আছে, সেটা প্রকাশ করবার পথে দেয়াল উঠ্ল। সবসুদ্ধ জড়িয়ে আবহাওয়াটা আমার পক্ষে এতই দুঃখজনক হয়েছে যে, আমার 888sport live footballিক জীবনের পরেই আমার ধিক্কার জন্মেছে। লিখার আনন্দ আজ একটা গুরুতর ব্যাঘাত পেয়েচে। শুধু তাই নয়, এই সমস্ত ব্যাপারে আমাকে একটা খর্বতার মধ্যে নামিয়েছে, তাতে নিজের জন্যে বড়ই লজ্জাবোধ করি।…

আপনাদের

শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথের লেখা চিঠিতে মানবিক বেদনাবোধ ও অভিমানভরা অসহায়তা গভীরভাবে স্পর্শ করে প্রবাসী-সম্পাদককে। তিনি কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত, লজ্জিত ও ক্ষমাপ্রার্থী হন। ১ জুলাই, ১৯২৭ লেখা তাঁর পত্রের কয়েক পঙ্ক্তি :

 

ভক্তিভাজনেষু,

আপনার চিঠি পড়িয়া আমি সাতিশয় ব্যথিত ও লজ্জিত হইলাম। ‘প্রবাসী’-বিষয়ক চিঠিতে বিশ্বভারতীর কথা লেখা আমার খুব অবিবেচনা হইয়াছে, তাহা বুঝিতে পারিয়া আরও মর্মাহত হইলাম।… পাত্রাবশিষ্ট কথাটি ব্যবহার করার অপরাধের জন্য আমি ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি।…

 

রবীন্দ্রনাথের প্রতি মনের গ্লানি ও বেদনা-অনুতাপমিশ্রিত আরো দুটি দীর্ঘ চিঠি একইদিনে রামানন্দ লেখেন ২ জুলাই এবং পরবর্তী একটি চিঠি ৩ জুলাই, ১৯২৭।

(১৯২৭) ২ জুলাইয়ের চিঠিতে রামানন্দ লেখেন, ‘এই ব্যাপারটি লইয়া আমি অত্যন্ত অশান্তিতে কাল কাটাইতেছি।’

(১৯২৭) ৩ জুলাইয়ের চিঠিতে রামানন্দ অকপটে প্রার্থনা করেন, ‘ভগবানের নিকট আলো চাহিতেছি। আপনার আশীর্বাদ ও স্নেহ চাহিতেছি।’

প্রায় সমকালীন আর একটি ঘটনা। ১৯২৬ সালের মে মাসে রবীন্দ্রনাথ ইতালি 888sport slot gameে যান। তাঁর সঙ্গী ছিলেন বিশ্বভারতীর দুজন কর্মসচিব প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ ও রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ মুসোলিনির উষ্ণ আপ্যায়নের আড়ালে তাঁর স্বৈরতন্ত্রী রূপটি জানতে পারেন রোমা রঁলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময়। স্বৈরতন্ত্রবিরোধী রবীন্দ্রনাথ তাঁর মনোভাব জানান, ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান পত্রিকায় ৫ আগস্ট, ১৯২৬।

লক্ষণীয়, রবীন্দ্রনাথের স্বৈরতন্ত্রবিরোধী মনোভাবের প্রকাশ তৎকালীন আতিথ্যের 888sport apk download apk latest versionজ্ঞাপনের পরিপন্থী – এই যুক্তি দিয়ে প্রবাসী (আশ্বিন, ১৩৩৩) ও মডার্ন রিভিউ (অক্টোবর ১৯২৬) পত্রিকায় বিরুদ্ধ সমালোচনা করা হয়। রামানন্দ তখন জেনিভায়। পত্রিকা দুটির সম্পাদনার দায়িত্ব তখন সম্পাদকপুত্র অশোক চট্টোপাধ্যায়ের ওপর। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রনাথের প্রতি ‘ভুল-স্বীকার’ করেন রামানন্দ। তখন ১৯২৬ সালের ২৫ অক্টোবর, ভিয়েনা থেকে ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রনাথ চিঠিতে লেখেন রামানন্দকে : ‘মডার্ন রিভিউ ও প্রবাসীতে আমার সম্বন্ধে যে মন্তব্য বেরিয়েচে, আপনার চিঠিতে সেটাকে আপনি ভুল বলে জানিয়েচেন। আমি তাকে ভুলের চেয়ে কেন বেশি মনে করি সে কথা গোপন করা উচিত নয়।… আপনার কাগজে আমার সম্বন্ধে বিরুদ্ধতা স্বতই অতি পরিমাণ লাভ ক’রে, লোকের চোখে উগ্র হয়ে লাগে।… এই লেখায় সাধারণ লোকে যে চমৎকৃত হয়েচে, দেশের কোনো কোনো চিঠি থেকে তার পরিচয় পেয়েছি।…’

 

তিন

মেঘ-রৌদ্রের খেলা যেন এইসব ঘটনা। রবীন্দ্রনাথ ও রামানন্দের পারস্পরিক গুণগ্রাহিতাযুক্ত 888sport apk download apk latest versionপ্রীতির সম্পর্ক আজীবন অমলিন ছিল। রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণ ও বিশেষ অনুরোধে রামানন্দ কিছুদিনের জন্য শান্তিনিকেতন শিক্ষা ভবনের অধ্যক্ষ পদ গ্রহণ করেন। তাঁর দুই কন্যা শান্তা দেবী ও সীতা দেবী শান্তিনিকেতনে পাঠগ্রহণকালে রবীন্দ্র-স্নেহধন্য ছিলেন। রবীন্দ্রনাথও 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে বরাবর লেখা দিয়েছেন রামানন্দ-সম্পাদিত বাংলা-ইংরেজি পত্রিকায়।

লালমাটি বাঁকুড়া ছিল রামানন্দের প্রাণের প্রিয় জন্মস্থান। সেই বাঁকুড়ায় ১৯১৪-১৫ সালে প্রবল দুর্ভিক্ষ হয়। রামানন্দের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসায়, বাঁকুড়ার দুর্ভিক্ষপীড়িত নর888sport promo codeদের সাহায্যকল্পে রবীন্দ্রনাথ নিজ উদ্যোগে, ঠাকুরবাড়ির প্রিয়জনদের নিয়ে তাঁর ফাল্গুনী নাটক কলকাতায় মঞ্চস্থ করেন। নাটক করার যাবতীয় খরচ তিনি সানন্দে বহন করে, টিকিট বিক্রির আনুষঙ্গিক ৮,১৭১ টাকা আয় রামানন্দের হাতে তুলে দেন। বাঁকুড়ার দুর্ভিক্ষ-ত্রাণের জন্য।

রবীন্দ্রনাথের সত্তর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে, কলকাতা টাউন হলে ১৯৩১ সালের ২৭ ডিসেম্বর রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করা হয়। সেই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ছিলেন – জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায় ও রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়। রবীন্দ্র-সম্মাননায় প্রকাশিত হয় গোল্ডেন বুক অব টেগোর মহাগ্রন্থ। ওই সংকলনে লিখেছেন গান্ধীজি, জগদীশচন্দ্র বসু, রোমা রঁলা, আইনস্টাইন, গ্রিক কবি কস্টাস পালামাস প্রমুখ। ওই সংকলন-সম্পাদনা করেন রামানন্দ। তিনি নিজ হাতে, মহতীসভায় সংকলনটি তুলে দেন রবীন্দ্রনাথের হাতে।

জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির জমিদারি দেখাশোনার কাজে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে যান ১৮৯০ সালের ২৫ নভেম্বর। তখন লালন শাহ লোকান্তরিত। (১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর লালনের লোকান্তর ঘটে) তবু লালনের শিষ্য ও শিষ্যতুল্য অনেক বাউলের সঙ্গে পরিচয় ঘটে রবীন্দ্রনাথের। বাউল গানে বিশেষ আগ্রহী হন রবীন্দ্রনাথ।

১৯২৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর ইন্ডিয়ান ফিলজফিক্যাল কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন হয় কলকাতায়, অধুনালুপ্ত সিনেট হলে। সভাপতি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। সভাপতির ভাষণে তিনি তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বাউল কবি ও বাউল দর্শন নিয়ে বলেন। তার আগে, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের প্রবাসী পত্রিকায় ১৩১৪ ভাদ্র থেকে ধারাবাহিক গোরা 888sport alternative link লেখেন। ওই তত্ত্বপ্রধান 888sport alternative linkের শুরুতে বিনয় মুগ্ধ  হয় – ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কম্নে আসে যায়’ বাউল গানে। তা তো রবীন্দ্রনাথেরই প্রাণের কথা!

রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের প্রবাসী পত্রিকায় সমাজতত্ত্ব, 888sport live football, দর্শন, 888sport apk, পুরাকীর্তি, দেশ-বিদেশের চিত্রাবলি প্রভৃতি নানা বিষয়ের পাশে সংযোজিত হয় বাউল গান। প্রবাসীর ‘কষ্টিপাথর’, ‘ছেলেদের পাততাড়ি’, ‘দেশবিদেশের কথা’, ‘পঞ্চশস্য’, ‘মহিলা মজলিস’, ‘বিবিধ প্রসঙ্গ’ প্রভৃতি বিভাগের অনুরূপ ‘হারামণি’ বিভাগটি বেশ জনপ্রিয় হয়। রবীন্দ্রনাথের উৎসাহে রামানন্দ ১৩২২ বঙ্গাব্দের বৈশাখ থেকে প্রবাসীতে শুরু করেন ‘হারামণি’ বিভাগ। সেই বিভাগের প্রথম বাউল গান, গগন হরকরার ‘আমি কোথায় পাব তারে’। প্রবাসীতে উল্লেখ করা হয়েছিল : ‘এই গানটি ঠাকুর মহাশয়ের দ্বারা সংগৃহীত।’ বলা বাহুল্য, গানটির সংগ্রাহক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। (দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই গানটির স্বরলিপি করে দেন প্রবাসীর জন্য।) রবীন্দ্রনাথ-সংগৃহীত কুড়িটি বাউল গান প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

রবীন্দ্রনাথ সারাবিশ্ব 888sport slot game করেছেন। তৎকালীন বাংলা তথা ভারতের  নানা প্রান্তের মানুষও তাঁর দর্শনলাভে ধন্য। লালমাটি বাঁকুড়ায়, জীবন-সায়াহ্নে একবার মাত্র গেছেন ১৯৪০ সালের  ১-৩ মার্চ; রামানন্দের বিশেষ আগ্রহে। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের  ২২ শে শ্রাবণ। সকাল সাতটায় কবির বিছানার কাছে গিয়ে রামানন্দ কবিকে শোনান ব্রহ্মনাম; করেন উপাসনা। ভাদ্রের প্রবাসীতে তিনি লেখেন : ‘বন্ধু বিয়োগ ও বৈধব্য।’

রবীন্দ্র-সুহৃদ রামানন্দের সার্ধশতজন্মবর্ষ 888sport app download for androidে এই বিশেষ 888sport apk download apk latest versionর্ঘ্য নিবেদন।