রবীন্দ্র-প্রেরণায় ধন্য কবিগণ সরকার

আবদুল মান্নান
শৈশবের কয়েকটি বছর বাদ দিলে দীর্ঘ প্রায় আশি বছর রবীন্দ্রনাথ 888sport live footballচর্চা করেন, 888sport live chatের অনুধ্যানে দীর্ঘ এক জীবন অতিবাহিত করেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনোই নিঃসঙ্গ এক 888sport live chatচর্চার মধ্যে সর্বদা বুঁদ হয়ে থাকেননি। জীবনের সাধারণ প্রবাহ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে 888sport live footballচর্চার অনন্য এক জগতে অধিষ্ঠিত থাকেননি। বরং কর্মের বিপুল এক জগতে তিনি আজীবন নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও অঙ্গীকারকে সর্বদাই তিনি গভীর  মমত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। তরুণ লেখকদের লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়া, আলোচনা লেখা এবং পত্রাদির মাধ্যমে প্রেরণা জোগানো তাঁর বহুবিধ সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যে অন্যতম একটি বিষয় ছিল। তিনি কিছুকে কিংবা কাউকে তুচ্ছজ্ঞান করতেন না, অপ্রয়োজনীয় ভাবতেন না। তাঁর মনন ও রুচির সীমাহীন এক ঔদার্যের মধ্যে সবারই স্থান ছিল। কারোই প্রবেশকে তিনি অনুপ্রবেশ মনে করতেন না। অনাকাক্সিক্ষত ভাবতেন না। ফলে দীর্ঘ এক জীবনে তিনি কত লেখকের লেখা যে পড়েছেন, কত আলোচনা যে করেছেন, কত চিঠি যে লিখেছেন তার ইয়ত্তা নেই। কবিযশপ্রার্থী তরুণ কবিগণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে তাঁদের 888sport app download apk সম্পর্কে, তাঁদের লেখা সম্পর্কে একটি মন্তব্যের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন। আর রবীন্দ্রনাথও ওইসব কবি-888sport live footballিকের সৃষ্টির মূলগত প্রবণতা উন্মোচন করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু জগদীশ গুপ্তের লঘুগুরু 888sport alternative link ছাড়া আর কোথাও তিনি বিরূপ সমালোচনা করেননি, কাউকে কষ্ট দেওয়ার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেননি। অধিকন্তু গভীর এক মমত্ববোধের সঙ্গে তিনি তরুণ লেখকদের সম্ভাবনা ও সীমাবদ্ধতার চিত্র তাৎপর্যপূর্ণভাবে তুলে ধরতে চেষ্টা করতেন। তরুণদের 888sport live chatসৃষ্টির অফুরন্ত সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তুলতে চাইতেন, আত্মবিশ্বাসী হওয়ার প্রেরণা জোগাতেন। এ-বিষয়ে তাঁর স্পষ্ট মতামত আছে। ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসে জোড়াসাঁকোর বিচিত্রা ভবনে তরুণ 888sport live footballিকদের সম্মিলনে একটি 888sport live footballসভার আয়োজন হয়েছিল। ওই সভায় –
একজন প্রশ্ন করলেন : 888sport live football-সমালোচনায় লগুড় ও ব্যক্তিগত গালাগালিই যদি একমাত্র জিনিস হয় তাহলে সেটা 888sport live footballের পক্ষে হিতজনক কি না?
রবীন্দ্রনাথ : এটা 888sport live footballের নীতি বিগর্হিত। সে সমালোচনার মধ্যে শান্তি নাই, যা কেবলমাত্র আঘাত দেয়, কেবলমাত্র অপরাধটুকুর প্রতিই সমস্ত চিত্ত নিবিষ্ট করে, আমি তাকে ঠিক মনে করি নে। এ রূপ সমালোচনার ভিতর একটা জিনিস আছে যা বস্তুত নিষ্ঠুরতা – এটা আমাকে পীড়ন করে। 888sport live footballিক অপরাধের বিচার 888sport live footballিকভাবেই হওয়া উচিত। অর্থাৎ, রচনাকে তার সমগ্রতার দিক থেকে দেখতে হবে। অনেক সময়ে টুক্রো করতে গেলেই এক জিনিস আর হয়ে যায়। সমগ্র পটের মধ্যে যে-ছবি আছে পটটাকে ছিঁড়ে তার বিচার করা চলে না – অন্তত সেটা আর্টের বিচার নয়। সুবিচার করতে হলে যে-শান্তি মানুষের থাকা উচিত সেটা রক্ষা করে আমরা যদি আমাদের মতপ্রকাশ করি তাহলে সে মতের প্রভাব অনেক বেশি হয়।
মূলত সজনীকান্ত দাস-সম্পাদিত শনিবারের চিঠি প্রসঙ্গে এই আলোচনার সূত্রপাত। নজরুল, জীবনানন্দ, বুদ্ধদেব বসু প্রমুখ অনেক কবিকে নিয়ে অযৌক্তিক ও নিষ্ঠুর সমালোচনা নিয়ে বেরোত শনিবারের চিঠি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পক্ষাবলম্বন করলেও শনিবারের চিঠি পত্রিকার এই নিষ্ঠুর সমালোচ888sport promo codeতি কোনো দিনই রবীন্দ্রনাথ মেনে নেননি। সমালোচনার খড়গহস্ত বহুবার তাঁকে আক্রান্ত করেছে, রক্তাক্ত করেছে। সুতরাং তিনি জানতেন যে, সৃষ্টিশীল প্রতিভার বিকাশে সুস্থ, সুন্দর ও বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ফলে দু-একটি বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া তিনি সারাজীবন তরুণ কবি-888sport live footballিকদের কল্যাণে সমালোচনার আনন্দময় জগৎ তৈরি করেছিলেন। একজন নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল অভিভাবকের মতোই তিনি তরুণ কবিদের সম্ভাবনাকে স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরেছেন এবং সীমাবদ্ধতার দিকগুলোকে সহানুভূতির সঙ্গে দেখিয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কখনোই নিরুৎসাহিত করেননি; লাঞ্ছিত বা অপমানিত করার তো প্রশ্নই ওঠে না।
৮ই ডিসেম্বর ১৯১৫ সালে রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দকে প্রথম চিঠি লেখেন, জীবনানন্দের বয়স যখন ১৬ বছর। তাঁর কোনো 888sport app download apk তখনো কোথাও মুদ্রিত হয়নি। কিন্তু বি সিলি জানিয়েছেন, ১৯১৯ সালে যখন তিনি কলেজে পড়েন তখন বরিশাল শহরে তাঁদের পরিবার কর্তৃক প্রকাশিত ব্রহ্মবাদী পত্রিকায় তাঁর প্রথম 888sport app download apk প্রকাশিত হয়। সিলি লিখেছেন যে, এরও চার বছর আগে তাঁর কিছু ‘অপ্রকাশিত কাব্যপ্রয়াসের নমুনা তিনি পাঠিয়েছিলেন বাংলা কাব্যের চূড়ান্ত বিচারক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে’। কিন্তু কোন 888sport app download apk পাঠিয়েছিলেন তা আর জানা যায়নি। নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথ এই কিশোরের হাতে লেখা 888sport app download apkকে অগ্রাহ্য করেননি। তিনি খুব সংক্ষিপ্ত ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি চিঠি লিখেছেন জীবনানন্দ দাশকে।

কল্যাণীয়েষু
তোমার কবিত্বশক্তি আছে তাতে সন্দেহমাত্র নেই। – কিন্তু ভাষা-প্রভৃতি নিয়ে এত জবরদস্তি কর কেন বুঝতে পারি নে। কাব্যের মুদ্রাদোষটা ওস্তাদীকে পরিহসিত করে। বড়ো জাতের রচনার মধ্যে একটা শান্তি আছে। যেখানে তার ব্যাঘাত দেখি সেখানে স্থায়িত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ জন্মে। জোর দেখানো যে জোরের প্রমাণ তা নয় বরঞ্চ উল্টো।
এই চিঠিতে তরুণ জীবনানন্দ দাশকে নিশ্চিন্ততা ও নিশ্চয়তার সঙ্গে কবিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে দেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এর পরে যা লিখেছেন ভাষা নিয়ে জবরদস্তি ইত্যাদি সেখানেও স্বীকৃতির আরেক রূপ লক্ষ করা যায়। যদিও ভূমেন্দ্র গুহ বলেছেন, ‘স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে রবীন্দ্রনাথ এই তরুণ কবির লেখা পছন্দ করেন নি, বরং কোনো কারণে রেগে লিখেছিলেন, যেজন্য চিঠির শেষে আশীর্বাদ [নেই]।’
ভূমেন্দ্র গুহের ওই অনুমান মোটেই ঠিক ছিল না। অধিকন্তু সতেরো বছরের একজন তরুণ কবিকে রবীন্দ্রনাথের মতো বিশ্বখ্যাতিসম্পন্ন কবি যে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন – এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। আর জীবনানন্দ দাশ রবীন্দ্রনাথের এই স্বীকৃতিকে গোপন এক প্রেরণা হিসেবেই গ্রহণ করেছিলেন। পরিণত বয়সে তিনি রবীন্দ্রনাথের ওই চিঠির কোনো-কোনো অংশের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের প্রেরণা ও আশীর্বাদ কখনোই ভুলতে পারেননি। ১৯৩০ (?) সালের ১১ই ডিসেম্বর জীবনানন্দ দাশ গভীর 888sport apk download apk latest version ও ভক্তির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে লিখেন :
আপনার øেহাশীষ লাভ ক’রে  অন্তর আমার পরিপূর্ণ হ’য়ে উঠেছে। আজকাল 888sport appsের নবীন লেখকদের সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য এই যে তাদের মাথার উপরে স্পষ্ট সূর্য্যালোকের মত আধুনিক পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনীষীকে তারা পেয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনানন্দ দাশকে তাঁর দ্বিতীয় চিঠি লিখেন ১২ই মার্চ, ১৯৩৭ সালে। ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত ধূসর পাণ্ডুলিপি শীর্ষক কাব্যগ্রন্থ পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অভিভূত হন। ৩ অক্টোবর ১৯৩৫ সালে বৃদ্ধদেব বসুকে লেখা এক চিঠিতে তিনি তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন ‘জীবনানন্দ দাশের চিত্ররূপময় 888sport app download apkটি আমাকে আনন্দ দিয়েছে […]’। কবির এই মুগ্ধতার বিস্ময়ক প্রকাশ লক্ষ করা যায় পরবর্তীকালে লেখা দুই লাইনের এই চিঠিতে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘তোমার 888sport app download apkগুলো পড়ে খুশি হয়েছি। তোমার লেখায় রস আছে, স্বকীয়তা আছে এবং তাকিয়ে দেখার আনন্দ আছে।’ ধূসর পাণ্ডুলিপি পাঠিয়ে অন্তর্গত এই শক্তি, এই প্রেরণাই যাচ্ঞা করেছিলেন জীবনানন্দ দাশ।
কবিকে তিনি লিখেছিলেন :
এ যুগের বাঙালীর – ও বিশেষ ক’রে বাঙালী যুবকের সবচেয়ে বেশী গৌরব ও আনন্দ এই যে আপনার অনন্যসাধারণ প্রতিভা ও জীবনের নিত্যনূতন দীপ্তি তার সম্মুখে র’য়ে গেছে। [….]
প্রায় নয় বছর আগে আমি আমার প্রথম 888sport app download apkর বই একখানা আপনাকে পাঠিয়েছিলুম। সেই বই পেয়ে আপনি আমাকে চিঠি লিখেছিলেন : চিঠিখানা আমার মূল্যবান সম্পদের মধ্যে একটি।
জীবনানন্দ দাশের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের দেখা হয়নি কখনোই। কিন্তু দু-একবার চিঠিপত্র বিনিময়ের মধ্যেই যে-সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে – বিশেষ করে জীবনানন্দ দাশ যে-প্রেরণা লাভ করেছেন, আমৃত্যু তিনি অকুণ্ঠচিত্তে তা স্বীকার করেছেন। আর অফুরন্ত ভালোবাসা ও 888sport apk download apk latest versionবোধের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে লিখেছেন অপূর্ব তাৎপর্যমণ্ডিত 888sport app download apk, লিখেছেন আলোচনা।
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১-৬০) রবীন্দ্র-আশীর্বাদপ্রাপ্ত অন্যতম কবি। বৈদান্তিক দার্শনিক হীরেন্দ্রনাথের পুত্র সুধীন্দ্রনাথ ভারতীয় ও পাশ্চাত্য জ্ঞান-888sport apk ও দর্শনচর্চায় অসাধারণ পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। ১৯২৭-২৮ সালের দিকে তিনি রীতিমতো জোড়াসাঁকোয় রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যে যেতেন এবং পাশ্চাত্যের আধুনিক 888sport app download apkর ধারা ইত্যাদি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতেন। এমন কোনো আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ‘কুক্কুট’ 888sport app download apkটি রচনা করেন। ১৯২৮ সালে 888sport app download apkটি প্রবাসীতে প্রকাশিত হয়। এবং এটিই পরিণত বয়সে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রথম 888sport app download apk। প্রথমদিককার 888sport app download apkচর্চার এ-দিনগুলোতে সুধীন্দ্রনাথ প্রভূত পরিমাণ রবীন্দ্র-সান্নিধ্য ও সহযোগিতা লাভ করেছেন। ১৯৩০ সালে প্রকাশিত তন্বী কাব্যগ্রন্থ আগাগোড়া রবীন্দ্র-সম্পাদিত – বলা যায় ‘রবীন্দ্র-সংশোধন-লাঞ্ছিত’ আর সুধীন্দ্রনাথ তা মেনেও নিয়েছেন; কিন্তু অর্কেস্ট্রায় (১৯৩৫) তিনি রবীন্দ্রকৃত সংশোধন মানেননি। ক্রন্দসী (১৯৩৭)  কাব্যগ্রন্থেও রবীন্দ্রনাথের দু-একটি সংশোধন আছে, তার পরে আর নেই। ১৯২৯ সালে বিদেশ888sport slot gameের সময় রবীন্দ্রনাথ তাঁকে সঙ্গী নির্বাচন করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তিনি জাপান-কানাডা-আমেরিকা 888sport slot game করেন। দেশে ফিরে পরিচয় পত্রিকার (১৯৩১) সম্পাদনাসূত্রে রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য থেকে ধীরে ধীরে আলাদা হয়ে যান তিনি।
অসাধারণ স্বাতন্ত্র্য নিয়ে সুধীন্দ্রনাথের আবির্ভাবকে রবীন্দ্রনাথ স্বাগত জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘তোমার রচনায় যে বিশেষ আত্মকীয়তা দেখচি সেটাকে অনাদর করা যায় না।’
কিন্তু সুধীন্দ্রনাথের কাব্যভাষা থেকে শুরু করে জীবনদর্শনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ সহমত প্রকাশ করতে পারেননি। ১১ জুলাই, ১৯২৮ তারিখে সুধীন্দ্রনাথকে লেখা একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ বলেন :
ইনটেলেক্টেরইট সাজিয়ে তুমি যদি কাব্যরূপ গড়তে যাও তবে সেই সৃষ্টিতে প্রত্যেক ইট ঠিক আপন পরিমাণটির চেয়ে আর কিছু দিতে পারে না। কিন্তু সজীব গাছের প্রত্যেক অংশই আপনাকে ছাড়িয়ে যাচ্চে – তার মধ্যে সৃষ্টির মায়া আছে যাতে করে সেই অংশগুলি সমগ্রকে সহজেই স্বীকার করে। কাব্যরূপের কথাগুলির প্রত্যেকটাই যদি রূপবান হয় তবে সমস্ত রূপটিকেই অংশে অংশেই পাওয়া যায়। একেই বলে সৃষ্টি। […] সেই জন্যই ইচ্ছা করি তোমার রচনাগুলিকে কোনো থিয়োরি দ্বারা পীড়ন না ক’রে  অর্থাৎ তাকে সূক্ষ্মাগ্র জুতো কর্সেট প্রভৃতি না পরিয়ে এবং উড়ে মেয়েদের মত জানু ও কনুই পর্যন্ত সাংঘাতি ঘনসন্নদ্ধ অলঙ্কারের দ্বারা তার অঙ্গটাকে আচ্ছন্ন না করে তার সহজ দেহকে সহজ সজীবতার লাবণ্যে যদি প্রকাশ করো তাহলে তোমার এই লেখাগুলি রসিক সমাজের উপাদেয় ভোজের আয়োজনে লাগবে। মানুষের মধ্যে যে লোকটা বুদ্ধিমান তার দাবির দিকে না তাকিয়ে যে লোকটা রসবিলাসী তাকে খুসি করবার চেষ্টা কোরো।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই অসাধারণ কাব্যাদর্শ সুধীন্দ্রনাথ অনুসরণ করেননি। তিনি তাঁর নিজস্ব পথেই হেঁটেছেন। তবে রবীন্দ্রকৃত মূল্যায়নকে তিনি ‘বর্ণে বর্ণে সত্য’ বলে অবহিত করেছেন। 888sport app download apkর গীতলতার যে প্রথাগত ধারা – রবীন্দ্রনাথে এসে যার চরম বিকাশ ও সমৃদ্ধি সাধিত হয়, সেই ধারার প্রতি সুধীন্দ্রনাথের আগ্রহ ছিল না। আবেগকে নয় – চিন্তাকে তিনি 888sport app download apkর বাহন করতে চেয়েছেন। ফলে প্রথাগত কাব্যরুচিকেও তিনি সম্মান করেননি। ১১ই জুলাই ১৯২৮ তারিখে রবীন্দ্রনাথকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, ‘জনসাধারণের রুচির প্রতি আমার অ888sport apk download apk latest version এত গভীর যে তাদের নিন্দা-প্রশংসায় আমি উদাসীন।’ কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুধীন্দ্রনাথের কাব্যচর্চা বিষয়ে উদাসীন ছিলেন না।
বরং অসাধারণ স্বাতন্ত্র্য বিষয়ে সংশয়ী ছিলেন। কিন্তু ১৯৩০-এ তন্বী যখন বেরোল এবং রবীন্দ্রনাথ ও অন্যরা পড়লেনও তখন তাঁর সংশয় কেটে যায়। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন :
তোমার 888sport app download apkগুলি হঠাৎ আমার মনটাকে বাংলামুখো করে দিলে। চলেছিলুম একেবারে উল্টো দিকে। ভালো লাগল। ছন্দে ভাষায় ব্যঞ্জনায় লেখাগুলি বেশ জমাট হয়েচে। আমার কাছে ঋণস্বীকার করে আজকের দিনে বাংলা দেশে তুমি অসামান্যতা দেখিয়েচ। একেবারেই সাহস করতে না যদি ঋণটা বাইরের জিনিষ না হোত। কাব্যে তোমার একান্ত স্বকীয়তা আর সমস্ত কিছুকে অতিক্রম করে প্রকাশ পেয়েচে।
বিষয় ও প্রকরণে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত যে-স্বাতন্ত্র্যের অভিসারী রবীন্দ্রনাথ  ঠাকুর তাঁকে সর্বদাই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছেন এবং কবির এই স্বাতন্ত্র্যকে প্রশংসা করেছেন। অমিয় চক্রবর্তীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ তাঁর এই ভালো লাগার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন। অমিয় চক্রবর্তী সুধীন্দ্রনাথ দত্তকে জানিয়েছেন, ‘আপনার বইখানি (তন্বী) কবির খুব ভালো লেগেচে। – আমরা সকলে মিলে পড়েচি। ঐ 888sport app download apkগুলির নূতনত্ব এবং উজ্জ্বলতা আমাদের মুগ্ধ করেচে।’ রবীন্দ্রনাথের এই শঙ্কাও ছিল যে, এই নতুন কাব্যভাষা ও জীবন-দর্শন পাঠক-সাধারণ কীভাবে গ্রহণ করবে। বিশেষ করে তন্বী প্রকাশ হওয়ার পর তিনি সমালোচকদের অভিব্যক্তির অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু যখন দেখলেন তেমন কোনো সাড়া পড়ল না, ভালো-মন্দ কিছুই তেমন কেউ বললেন না, তখন ১৩ই সেপ্টেম্বর, ১৯৩৫ সালে রবীন্দ্রনাথ একটি চিঠিতে সুধীন্দ্রনাথ দত্তকে লিখেন :
তোমার প্রথম 888sport app download apkর বই বের হলে কিছুদিন অপেক্ষা করে ছিলেম। দেখবার কৌতূহল ছিল লোকে কী বলে। দেখলুম ভালো মন্দ কিছুই বল্লে না। তাতে বিস্ময় বোধ হয়েছিল – কিন্তু এটা বুঝতে পেরেছিলুম ক্রিটিকরা – যা হোক কিছু একটা বলতে ভরসা পাচ্ছিল না। 888sport live footballে নতুন রূপের আবির্ভাব দেখলে বাঁধামতওয়ালারা সাধারণতঃ তাড়া করে আসে। কিন্তু যদি ভালো লাগে তা হলে কী বলবে ভেবে পায় না। ভালো লাগা উচিত কিনা ঠাহর করতে পারে না। প্রথমটা তোমার ভাষার অপরিচিত দুরূহতায় গোল বাধে। কিন্তু তার ভিতর দিয়েও তোমার যে স্বকীয়ত্ব দেখা যায় তাতে বিদ্রুপ করবার অবসর পেলেও বিরুদ্ধ-বাণীকে থামিয়ে দেয়। […] তোমার কাব্য এসেচে 888sport live football ক্ষেত্রে অপরিচিত বেশে – স্পর্ধিত আধুনিকতার তারস্বরও তার নয়, সাবেক আমলের মধুর সৌজন্যেরও অভাব আছে।
সুধীন্দ্রনাথ দত্তের প্রতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই প্রযতœ তাঁর কবিপ্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়েছিল। কবির এই প্রেরণার কথা 888sport apk download apk latest version ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সুধীন্দ্রনাথ তাঁর বহু চিঠিপত্রে ও গদ্য রচনায় স্বীকার করেছেন। রবীন্দ্রনাথ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন জগতের কবি হওয়া সত্ত্বেও রবীন্দ্র-কাব্যপ্রতিভার কাছে তিনি তাঁর অফুরন্ত ঋণের কথাও স্বীকার করেছেন অকপটে।
বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-৭৪) তিরিশের দশকের অন্যতম প্রধান কবি। রবীন্দ্র-উত্তর আধুনিক কাব্য-আন্দোলনের পুরোধা। 888sport app থেকে প্রকাশিত তাঁর প্রগতি (১৯২৭-২৯) এবং কলকাতা থেকে প্রকাশিত 888sport app download apk (১৯৩৫-৬০) পত্রিকা তাঁকে অমর করে রেখেছে। ব্যক্তিগতভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগ ছিল না।
কিন্তু 888sport app download apk পত্রিকাকে কেন্দ্র করে রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশার পুরো সময়টি 888sport live chatচর্চার জমাট এক বন্ধনের মধ্যে তাঁরা আনন্দিত সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। বুদ্ধদেব বসু রবীন্দ্র-মূল্যায়নে স্থির নির্দিষ্ট ছিলেন না। কখনো তিনি রবীন্দ্রনাথের 888sport live footballকর্মের সমালোচনা করে রবীন্দ্রবিরোধী রূপে আখ্যায়িত হয়েছেন, কখনোবা অফুরন্ত ভালোবাসা, মমতা আর উচ্ছ্বাসে তিনি রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির জগৎকে অবলোকন করেছেন। তাঁর এই অম্লমধুর রবীন্দ্র অনুধ্যান কখনোই রবীন্দ্রনাথকে বিরূপ করে তোলেনি। বরং 888sport app download apk পত্রিকাকে কেন্দ্র করে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর 888sport live chatচর্চার একটি বস্তুনিষ্ঠ ও পরিশীলিত আবেগের সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। আর অস্তিত্বজুড়ে তিনি ধারণ করেছিলেন রবীন্দ্র-প্রেরণার গোপন এক আয়ুধ।
১৯৩৩ সালে বুদ্ধদেব বসুর 888sport alternative link যেদিন ফুটল কমল প্রকাশিত হয়। এই 888sport alternative linkটি রবীন্দ্রনাথের ভালো লাগে। ‘বাক্যের প্রণালী অত্যন্ত ইংরেজি।’ ‘কথাবার্ত্তায় এরকম কৃত্রিম ঢং’ ইত্যাদি ত্র“টি চিহ্নিত করেও রবীন্দ্রনাথ 888sport alternative linkটির অনন্য স্বাতন্ত্র্যকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন। ২৫ বছর বয়সের এ-যুবককে তিনি লিখেন :
তোমার সমস্ত বইটার গৌরব আমি স্বীকার করতে পেরেচি। এতে তোমার প্রতিভার একটি স্বকীয় বিশেষত্ব পাওয়া যায়। তোমার এই গল্পটি বাইরে থেকে নানা উপকরণে সাজানো জিনিষ নয়, এ ভিতর থেকে আপন ভাবপ্রাচুর্য্যে আপনি জেগে ওঠা।
এই তাৎপর্যপূর্ণ চিঠিটি পেয়ে বুদ্ধদেব বসু অভিভূত হয়েছেন। এই প্রেরণার জন্য তিনি কবির কাছে গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে  লিখেছেন, ‘আমার কাছে – প্রত্যেক আধুনিক বাঙালি লেখকের কাছে – কিন্তু বিশেষ করে আমার কাছে আপনি দেবতার মত। আপনার কাছ থেকে আমি ভাষা পেয়েছি। সে-ভাষা আপনার পছন্দ হয় না। আমারই দুর্বলতা, অক্ষমতা।’
বুদ্ধদেব বসু ও প্রেমেন্দ্র মিত্রের সম্পাদনায় 888sport app download apk পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩৫ সালে। পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক ছিলেন সমর সেন। এই প্রথম 888sport free betয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোনো লেখা ছিল না। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ পত্রিকায় প্রকাশিত সবগুলো লেখা পড়েন এবং ৩ অক্টোবর ১৯৩৫ সালে বুদ্ধদেব বসুকে একটি চিঠি লিখেন। অসাধারণ এই চিঠিতে পত্রিকাভুক্ত প্রত্যেক তরুণ লেখকের প্রশংসা করেন। এঁদের মধ্যে আছেন – 888sport sign up bonusশেখর উপাধ্যায় (সুরেন্দ্রনাথ মৈত্র) (১৮৮৭-১৯৪৫), প্রেমেন্দ্র মিত্র (১৯০৪-৮৮), বিষ্ণু দে (১৯০৯-৮২), সমর সেন (১৯১৬-৮৭), সঞ্জয় ভট্টাচার্য (১৯০৯-৬৯), সুধীন্দ্রনাথ দত্ত (১৯০১-৬০), জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪), অজিতকুমার দত্ত (১৯০৭-৭৯), প্রণব রায় (১৯১১-৭৫), অজিতকুমার দত্ত (১৯০৭-৭৯), প্রণব রায় (১৯১১-৭৫) ও বুদ্ধদেব বসু। এঁদের প্রত্যেকের লেখার অফুরন্ত সম্ভাবনা ও কিছু সীমাবদ্ধতাকে কবি নির্মোহ এক দৃষ্টিকোণ থেকে তুুলে ধরেছেন। এই চিঠিতেই তিনি জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে সেই বিখ্যাত উক্তি করেছিলেন, ‘জীবনানন্দ দাশের চিত্ররূপময় 888sport app download apkটি আমাকে আনন্দ দিয়েছে।’ বুদ্ধদেব বসুর তিনটি 888sport app download apk – ‘চিল্কায় সকাল’, ‘ঘুমের গান’ ও ‘বিরহ’ এই 888sport free betয় মুদ্রিত হয়। রবীন্দ্রনাথ এই 888sport app download apk সম্পর্কে লিখেন, ‘তোমার 888sport app download apk তিনটি গদ্যের কণ্ঠে তালমান-ছেঁড়া লিরিক, এবং ভালো লিরিক। সঙ্গে সঙ্গে পদ্যছন্দের মৃদঙ্গওয়ালা বোল দিচ্চে না বলে ভাবের ইঙ্গিতগুলি বিচ্ছুরিত হচ্ছে সহজে,  অথচ সহজে নয়।’
তরুণ লেখকদের আধুনিক লেখা ভালো লাগবে কি লাগবে না – এ-সংশয় থেকে অনেক সময় তিনি সেই তিরিশোত্তর লেখকদের লেখা পড়তে সাহস করতেন না। পাছে ভালো লাগল না এবং নিন্দা করে ফেলবেন এই ছিল তাঁর আশঙ্কা। ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত বুদ্ধদেব বসুর বাসরঘর শীর্ষক 888sport alternative linkটি নিয়েও তাঁর এ-সংশয় ছিল। কিন্তু যখন পড়ে ফেললেন, তখন সংশয় কাটে। ২৫ অক্টোবর, ১৯৩৫ সালে লেখা এক চিঠিতে তিনি এ-888sport alternative linkটির প্রশংসা করেন। রবীন্দ্রনাথ লিখেন – তোমার বইখানি নিঃসংশয়েই ভালো লাগল, তাই অত্যন্ত আশ্বস্ত হয়েছি। গল্প হিসাবে তোমার এ লেখা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। এ কবির লেখা গল্প, আখ্যানকে উপেক্ষা করে বাণীর স্রোতবেগে বয়ে চলেছে।’ বুদ্ধদেব বসু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই স্বীকৃতিতে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হন। এবং গল্পহীন গল্পের একটি ধারা তৈরি হয়। বুদ্ধদেবের পরেই এ-ধারায় যাঁদের নাম উল্লেখ করা যায় তাঁরা হলেন ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, গোপাল হালদার প্রমুখ। কিন্তু দুবছর মাত্র পরে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা এক পত্রে রবীন্দ্রনাথ সম্পূর্ণ উলটো কথা বলেন, তিনি লিখেন, ‘গল্প লিখতে বসে গল্প না লেখাটাকেই যারা বাহাদুরি মনে করেন তুমি যে তাঁদের দলে নাম লেখাওনি এতে খুশি হয়েছি’। কিন্তু সে যাই হোক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রশংসায় শুধু বুদ্ধদেব বসু নন, ওই সময়ের অনেক কথা888sport live footballিকই গল্পহীন চৈতন্যপ্রবাহী এক জীবনালেখ্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। বুদ্ধদেব বসুর কোনো লেখা কবির যে ভালো লাগেনি, সে-কথাও জানিয়েছেন অকপটে। যেমন ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত হঠাৎ আলোর ঝলকানি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মহুয়া কাব্যগ্রন্থের ‘পথের বাঁধন’ শীর্ষক 888sport app download apkর চরণ ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি লেগে ঝলমল করে চিত্ত’ – থেকে নেওয়া নাম অবলম্বনে রচিত এই গ্রন্থটি রবীন্দ্রনাথের ভালো লাগেনি। বইয়ের নাম ভুল করে তিনি লিখেছেন, ‘তোমার ‘হঠাৎ আলোর ঝলসানি’ পড়ে মনে হোলো লেখাগুলিতে আলোর ঝলক ভালো করে লাগেনি।’ নিজের অভিজ্ঞতাকে সৃষ্টির মধ্যে অন্যের ভালো লাগার বিষয় করে তোলার জন্য অভিজ্ঞতার সঙ্গে কল্পনাপ্রতিভার যে মিশেল দেওয়া দরকার, অনুজ কবিকে রবীন্দ্রনাথ এই সৃষ্টি-প্রকৌশলের দীক্ষা দেন। 888sport app download apk পত্রিকার প্রায় প্রতি 888sport free betর জন্যই বুদ্ধদেব বসু লেখা চাইতেন কবির কাছে। আবদারের শেষ ছিল না বলা যায়। সেই ১৯৩৬ সালের দিকে, রবীন্দ্রনাথ যখন পঁচাত্তরের বয়োবৃদ্ধ, তাঁর লিখতে কষ্ট হতো, তবু এই ফুল্ল তরুণদের আবদার তিনি রক্ষা করতে চাইতেন আর জোগাতেন প্রেরণা, নিজস্বতার সামর্থ্য নিয়ে চলার শক্তি।
অসাধারণ সেই প্রেরণার ভাষা, অসাধারণ তার বাস্তবতার অনুভাবনা। তিনি  জানুয়ারি ১৯৩৬ সালে বুদ্ধদেব বসুকে লিখেছেন :
যদিও তোমাদের সময় জুড়ে আছি তবুও বস্তুত আমি তোমাদের সমসাময়িক নই। অর্থাৎ তোমাদের বাণী জোগাবার ফরমাস আমার উপর আর নেই। সে কাজে আমাকে বিশ্বাস করতেই পারবে না। তোমাদের পত্রিকাটি সহযাত্রীদের নৌকো – আজও যাদের নাম করতে হবে তারাই ওর সওয়ারি – যারা নামজাদা তাদের জায়গা জুড়তে দিয়ো না। […] তাদের থেকে মনকে খালাস করে নিলে আধুনিকের চৌকি পাতবার জায়গা প্রশস্ত হবে। যদি স্বীকার করো সেই জায়গাটা প্রস্তুত করবার কাজে আমরা সাহায্য করছি সেই যথেষ্ট ¬- চৌকি তোমরাই দখল করো, প্রসন্ন মনে আমরা যেন সেই কামনাই করি।
নতুনের এই জয়গান রবীন্দ্রনাথ বহুবার গেয়েছেন। 888sport live chatের ভাব ও ভাষায় তাঁর যুগ যে আর নেই – সেই নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে তিনি স্বীকার করেছেন প্রসন্ন বিনয়ের সঙ্গে। কিন্তু যে নতুন যুগে তিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন সেই যুগের 888sport live chat-888sport live footballের নতুন ভাব-ভঙ্গিকে তিনি প্রেরণা জুগিয়েছেন। সময়ের বিবর্তনের রূপবৈচিত্র্যকে তিনি সহজভাবে গ্রহণ করেছেন আর সেই নতুন পথের বাঁকে টাল সামলাতে চেয়েছেন নিজেও। তারুণ্যের উষ্ণতার জন্য তাই তিনি সর্বদাই ছিলেন উন্মুখ। তরুণ লেখকদের বিস্ময়কর সম্ভাবনার পথে তিনি সর্বদাই পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় অভিভাবকত্ব প্রদান করেছেন। রবীন্দ্র-উত্তর আধুনিকতার ধ্বজা বহনকারী 888sport app download apk পত্রিকাটির প্রতি তাই তাঁর মনোযোগের অন্ত ছিল না। আর সেই সূত্রে বুদ্ধদেব বসু ছিলেন তাঁর অত্যন্ত øেহভাজন তরুণ কবি।
১৯৪০ সালে 888sport app download apk পত্রিকার আষাঢ় 888sport free betয় বুদ্ধদেব বসু চোখের বালি 888sport alternative linkের সমাপ্তি নিয়ে আপত্তি তোলেন, দুর্বলতা চিহ্নিত করেন। তিনি লিখেন, ‘সত্যি বলতে, শেষ পাতাটি প’ড়ে বিশ্বাসই হ’তে চায় না যে এখানেই, এই জোড়া-তালি দেয়া প্রাণহীন রফাতেই এই তীব্র 888sport alternative linkটির শেষ।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনুজের এই সমালোচনা সানন্দে গ্রহণ করেন এবং চোখের বালির সমাপ্তিটা যে অতি দুর্বল এবং তার জন্য কবি নিজেও অনুতপ্ত – এই সত্য অকপটে স্বীকার করেন। এও বুদ্ধদেব বসুর প্রতি এক মহান কবির অসাধারণ স্বীকৃতি।
বুদ্ধদেব বসু বয়োবৃদ্ধ প্রিয় ওই কবির ঐশ্বর্য, মাহাত্ম্য, শক্তি ও মহিমার কথা কখনোই ভোলেননি। রবীন্দ্রনাথকে অনেক সমালোচনা করেছেন তিনি, আক্রমণও করেছেন। কিন্তু কবির প্রতি তাঁর অপরিসীম 888sport apk download apk latest versionবোধ ও গভীর ভালোবাসা কখনোই গোপন থাকেনি। রবীন্দ্র-জীবদ্দশায় তাঁর শেষ পরিচয় ১৯৪১ সালে 888sport app download apk পত্রিকাটির রবীন্দ্র-888sport free bet। 888sport free betটি প্রকাশিত হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আশিতম জন্মদিনে। জীবনসায়াহ্নে এই বিস্ময়কর উপঢৌকনে রবীন্দ্রনাথ আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন। এর মূলে ছিল আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যে যে-ভাবে আনন্দিত হয়েছে, যার যে-ভাবে ভালো লেগেছে সে সে-ভাবে নিজেকে ব্যক্ত করেছে। ফলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনে হয়েছে, এ শুধু আনন্দেরই সমাহার। ১৪ মে ১৯৪১ সালে বুদ্ধদেবকে লেখা এক চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, ‘আমাকে অবলম্বন করে এবারকার 888sport app download apk পত্রিকায় 888sport live football সম্বন্ধে যে সকল আলোচনা প্রকাশিত হয়েছে তেমন সুসম্পূর্ণ ও সুবিচারিত 888sport live ইতিপূর্বে কোনো বাঙলা পত্রিকায় আমি দেখিনি, এ আমার পক্ষে বিস্ময়জনক।’ বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে প্রত্যক্ষ আলোচনার সময় বলেছেন, 888sport app download apk পত্রিকার এবারকার 888sport free betটি আমার খুব ভালো লেগেছে। বিশেষ একটা যুগের আনন্দের 888sport sign up bonus বিচিত্র পন্থায় তোমরা এখানে এনেছ।’
১৯৩৮ সালে বুদ্ধদেব বসু সপরিবারে বেড়াতে গিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে। সেখানে তখন অবস্থান করছিলেন সমর সেন, কামাক্ষীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, বিষ্ণু দে, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র, চঞ্চল চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। বুদ্ধদেব বসু এ-সময় পনেরো দিন শান্তিনিকেতনে অবস্থান করেন এবং রবীন্দ্রসান্নিধ্যের বিস্ময়কর এক অভিজ্ঞতার ঐশ্বর্য অর্জন করেন। ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত সব পেয়েছির দেশে গ্রন্থে তাঁর সে-অভিজ্ঞতার অন্তরঙ্গ পরিচয় আছে। বুদ্ধদেব বসু রবীন্দ্রনাথকে লিখেছেন, ‘আমার মতো অযোগ্যকে যে-সম্মান আপনি দিয়েছেন তা হবে আমার প্রেরণার উৎস, আপনার কাছ থেকে যে øেহ এবার পেয়েছি তা আমি চিরজীবন ভুলবো না।’ বুদ্ধদেব বসুর প্রতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই øেহ ও মমত্ববোধ তাঁকে সৃষ্টির প্রেরণায় সর্বদাই উজ্জীবিত রেখেছে। বুদ্ধদেব বসু রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে তাঁর বিপুল রচনার মধ্যে গভীর 888sport apk download apk latest version ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে এই প্রেরণার কথা স্বীকার করেছেন।
বিষ্ণু দে (১৯০৯-৮২) কলকাতার অধিবাসী ছিলেন। ইংরেজি 888sport live footballের ছাত্র ও অধ্যাপক। স্কুলে পড়াকালীন সময়েই তাঁর 888sport app download apk, গল্প, 888sport live বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। সেসব লেখা একান্তই স্বতন্ত্র, রবীন্দ্রঘরানা থেকে একেবারেই আলাদা। কিন্তু তিনি ছিলেন রবীন্দ্রভক্ত কবি। রবীন্দ্র-বিরোধী প্রগতি পত্রিকার নিয়মিত লেখক হলেও তিনি কখনোই রবীন্দ্র-বিরোধিতায় অংশগ্রহণ করেননি। অধিকন্তু প্রগতির যেসব লেখায় রবীন্দ্র-বিরোধী মনোভাবের প্রকাশ ঘটত, তিনি তার প্রতিবাদ লিখতেন। কবি হিসেবে স্বতন্ত্র এক জগৎ নির্মাণের জন্য তাঁকে অবশ্যই যুুঝতে হয়েছে সর্বগ্রাসী রবীন্দ্র-বলয়ের সঙ্গে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গড়া 888sport live chat-888sport live football ও সংস্কৃতিগত ঐতিহ্যকে তিনি কখনোই অস্বীকার করেননি। অধিকন্তু তাঁর কাব্যজীবনজুড়ে আছে রবীন্দ্র-ঐতিহ্যের রূপান্তরের প্রয়াস।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে বিষ্ণু দে-র সম্পর্ক ছিল কয়েকটি চিঠি আদান-প্রদান এবং মুখ্যত 888sport live footballচর্চার মাধ্যমে। ১৯৩৮ সালে ইস্টারের ছুটি কাটানোর জন্য একদল তরুণ কবি শান্তিনিকেতন বেছে নিয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে বিষ্ণু দে-ও ছিলেন। এই দলে পরে যুক্ত হয়েছিলেন সপরিবারে বুদ্ধদেব বসু। তাঁর রচিত সব পেয়েছির দেশে (১৯৪৪) গ্রন্থে এই সময়ের বিস্তৃত পরিচয় আছে। সম্ভবত এ-সময়ই প্রথম রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বিষ্ণু দে-র সাক্ষাৎ হয়। কিন্তু পত্র যোগাযোগ ঘটেছিল আরো আগে, ১৯২৮ সালে। ছোট কাগজের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ চিঠি লিখেছেন বিষ্ণু দে-কে এবং নিজের শৈশবের 888sport live football-জীবনও যে ভারতী (১৮৭৭) পত্রিকার ওপর ভর করে বিকশিত হয়েছে তাও স্বীকার করেছেন। আবার কখনো বা ছন্দের স্বরূপ নিয়ে এই অনুজ কবিকে চিঠি লিখেছেন। ১৪ মার্চ, ১৯৩১ সালে তিনি বিষ্ণু দে-কে লিখেছেন :
ছন্দ সম্পর্কে অনেক তর্ক করেচি আর ইচ্ছা নেই। তোমার কি ভালো লাগে বা না লাগে সেটা ভালো লাগবার চরম কথা নয়, আমার কথাও তথৈবচ। তবু নিজের কানে যে লয় আছে নিজের কাব্য সেই লয়েই পা ফেলে চলে, তোমার পদচারণের সঙ্গে তার মিল না হবারই কথা। […]
রুচিভেদ সম্বন্ধে কবিমাত্রেরই অবিচলিত সহিষ্ণুতার চর্চা করাই শ্রেয়।
বিশ্বখ্যাত কবির এই চিঠির মধ্যে তরুণ কবিদের জন্য শিক্ষা আছে, প্রেরণা লাভের বিচিত্র উপাদান আছে। বিষ্ণু দে তাঁর কাব্যজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্দেশনা ও পরামর্শকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। বিষ্ণু দে-র প্রথম কাব্যগ্রন্থ উর্বশী ও আর্টেমিস প্রকাশিত হয় ১৯৩২ সালে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অতীব গুরুত্বের সঙ্গে কাব্যগ্রন্থটি পাঠ করেন এবং পরপর দুটি চিঠিতে এই কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে তাঁর অভিব্যক্তি জানিয়ে বিষ্ণু দে-কে চিঠি লিখেন। প্রথম চিঠি পাঠান ১৩ জুলাই, ১৯৩৩ সালে। চিঠির কিয়দংশ এই :
ব্যস্ততার মধ্যে তোমার বইখানি পড়েছি। খুব সাহসের পরিচয় দিয়েছ। 888sport live footballে অনেকে নতুনের বড়াই করে কিন্তু চলে পুরাতনের পিছু পিছু। তোমার মধ্যে যথার্থই নতুন পথ খননের অধ্যবসায় দেখা গেল। কিন্তু প্রথম আরম্ভে জমিটা থাকে এবড়োখেবড়ো, সম্পূর্ণ সুগম হয় না, সেটা বোধহয় অপরিহার্য। মাঝে মাঝে উঁচোট খেয়েচি কিন্তু বুঝেছি যে জোরে চলবে কোদালখানা। […] আশীর্বাদ করি তোমার কলম কীর্তির অভিসার পথে নতুন বা পুরোনো কোনো সংস্কারেরই লতাপাশে জড়িয়ে পড়বে না। সৃষ্টিকার্য্যে নতুনকাল এবং পুরোনোকাল দুটো কালকেই এড়িয়ে চলতে হয় – চিরকাল বলে আর একটা কাল আছে সেইটের পরেই ভরসা।
এই চিঠি ডাকে দেওয়ার পর কবির মনে হয়েছে কাব্যগ্রন্থটি সম্পর্কে সব কথা বলা হয়নি। তিনি আবার পড়েন এবং চারদিন পর লিখেন 888sport app download apkর ‘চালটা নতুন’, আরো লিখেন ‘সরাসরি বিচারের যোগ্য নয়। এ তাজা মনের লেখা, যৌবনের ঢেউ পাথুরে উপকূলের উপরে উদ্বেল হয়ে উঠেচে – কঠিনের সঙ্গে তরলের চলচে লীলা।’ প্রথাগতের মধ্যে বিধি-বিধানের মধ্যে, বাধা পথের চেনাজানার মধ্যে যে বিষ্ণু দে-র 888sport app download apkর স্থান নয় – এই কাব্যস্বরূপ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯৩৮ সালে বিষ্ণু দে-র চোরাবালি প্রকাশিত হয়। ১৪ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে রবীন্দ্রনাথ লিখেন, ‘তোমার চোরাবালি বইখানি একটু খুলে দেখলুম এর মধ্যে নিবিড় মনোযোগের দাবী আছে। তাই রেখে দিতে হোলো – ছুটি যখন পাব পড়ে দেখব এবং যদি কিছু বলার থাকে বলব।’ বললেন পরের মাসে, ফেব্র“য়ারিতে। ‘কাজের ফাঁকে ফাঁকে তোমার নতুন লেখা বইখানি পড়তে চেষ্টা করিনি তা ঠিক নয়। কিন্তু তোমার রচনাকে এমন দুর্ভেদ্য কেল্লায় বাসা দিয়েছ যে আমার মন দেয়ালে ঠেকেই ফেরে।’ নিজস্ব রুচির জগৎ থেকে রবীন্দ্রনাথের পক্ষে চোরাবালির 888sport app download apkগুলো বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে আলোচনাসূত্রে তিনি বলতেন, ‘এ বুঝিয়ে দিতে পারো তো শিরোপা দেবো।’ এই কাব্য সম্পর্কে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের আলোচনা পড়ে তিনি লিখেন, ‘তাঁর [সুধীন্দ্রনাথ] নির্দেশমতো বোঝবার চেষ্টা করলুম, এবং বোধকরি বুঝেছি। বিষ্ণু দে-র 888sport app download apkর সৌন্দর্য সুধীন্দ্র যথাযোগ্যভাবে দেখিয়েছেন কিন্তু স্বভাবগত বিশেষত্ববশত বিষ্ণু দে-র লেখায় একটা কারণে আমার খটকা লাগে।’ সে-কারণটিও তিনি বলেছেন, আর তা হলো বিদেশি শব্দ ও পুরাণের অনাত্মস্থিত ব্যবহার। কিন্তু চিঠিতে তিনি নিজের অপারগতাকেই দায়ী করেছেন। লিখেছেন, ‘মনে ভাবি, যুগের পরিবর্তন হয়েছে, দূরে পড়ে গেছি  – রস ভোগের রীতি হয়তো বদলেছে, বিচারের পদ্ধতিকেও নতুন রাস্তা বের করতে হবে, আমার আর সময় কোথায়? আশা করছি তোমরা কেবল নবযুগের প্রবর্তন করবে না, তাকে সুগমও করবে।’
তিরিশোত্তর কালের আধুনিক কবিদের অনেকের মতো বিষ্ণু দে-ও 888sport app download apk লেখার প্রেরণার জন্য আশ্রয় নিয়েছিলেন সর্বংসহ প্রবীণ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। আশ্রয় তিনি পেয়েও ছিলেন। আর সেই অধিকারেই তিনি তাঁর 888sport app download apkর দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য রবীন্দ্রনাথের শরণ নেন। টিএস এলিয়টের ‘Journey of the Magi’ 888sport app download apk 888sport app download apk latest version করে তিনি পাঠিয়ে দেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে। রবীন্দ্রনাথ 888sport app download apkটি সংশোধন করেন। এ-বিষয়ে ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে মজা করে লিখেছেন :
ইতিমধ্যে শ্রী বিষ্ণু দে ‘‘পুনশ্চ’’-এর নকলে ‘‘এলিয়ট’’-এর একটা তর্জ্জমা পাঠিয়েছিল, পড়ে দেখ্লুম। কম্লি ছোড়তি নেই – গদ্যর ঘাড়ে পদ্য কামড়ে ধরেচে। […] আমাকে শোধন করতে অনুরোধ করেছিল। সে প্রক্রিয়ায় তার দেহান্তর ঘটল। পুনর্জন্মের দুঃখ আছে সে দুঃখটা আমারি লেখনী বহন করলে। কিন্তু তার পরে রূপান্তরিত লেখাটার বিষ্ণুপ্রাপ্তির পরে শ্রী বিষ্ণু কোনো উচ্যবাচ্য [উচ্চবাচ্য] করলে না। হয়তো বা পরিচয়-এ বেরবে।  কার পরিচয় নিয়ে? লোকে বলবে বিষ্ণুলোক রবিলোকের সাদৃশ্য লাভ করেচে।
খুবই উপভোগ্য রসিকতা। কিন্তু এর মধ্যে সারবত্তা ছিল। বিষ্ণু দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এসব আশ্রয়-প্রশ্রয় ও আগ্রহকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন। একজন খ্যাতিমান প্রবীণ কবির কাছে তরুণ কবিগণ যে মনোযোগ লাভ করেছেন এবং যে প্রযতœ ও প্রেরণা লাভ করেছেন তার তুলনা চলে না। বিষ্ণু দে-র 888sport app download apkর দুর্বোধ্যতা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ উষ্মা প্রকাশ করেছেন, কিন্তু তাঁর স্বাতন্ত্র্যকে তিনি সর্বদাই সম্মান করেছেন, সম্ভাবনাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। এই সময়ের নতুন 888sport app download apkর অপরিচিত সংগঠন, সংস্থাপনা ও সময়ানুবর্তিতা বিষয়ে তাঁর সীমাবদ্ধতাকে তিনি বারবার দোষারোপ করেছেন, কিন্তু বিষ্ণু দে বা অন্য কাউকে তিনি তিরস্কার করেননি, ছোট করেননি, দোষ দেননি।
সেই সময়ের অধিকাংশ তরুণ কবির মতো সঞ্জয় ভট্টাচার্য (১৯০৯-৬৯) কিছু 888sport app download apk রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে মতামত জানতে চান। ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৫ সালে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে লিখেন, ‘তুমি যে কয়টি 888sport app download apk পাঠিয়েছ পড়ে ভালো লাগল। এতে গদ্যকাব্যের রূপ ও রস্য ভালো রকম প্রকাশ পেয়েছে।’ উল্লেখ থাকে যে, সঞ্জয় ভট্টাচার্য কুমিল্লা থেকে ১৯৩৩ সালে কলকাতা যান এবং ১৯৩৪ সালের শেষ দিকে জোড়াসাঁকোর বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিচয় হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে অতি অল্পদিনের পরিচয়েই তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল এবং কবি এই যুবকের কাব্যপ্রতিবার প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন। তাই ১৯৩৮ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন বাংলা কাব্য পরিচয় নামে একটি সংকলন বের করছেন, তখন সেই সংকলনের জন্য 888sport app download apk চেয়ে চিঠি লিখেছেন সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে। তিনি লিখেছেন, যার বিষয় নয় নর-888sport promo codeর প্রেম এবং যার বাহন নয় গদ্য, ‘তোমার রচিত এমন দুইএকটা 888sport app download apk যদি কাব্যসঙ্কলনের জন্য পাঠিয়ে দাও তাহলে ব্যবহার করতে পারি।’ সঞ্জয় ভট্টাচার্য 888sport app download apk পাঠিয়েছিলেন এবং তাঁর ‘সায়াহ্ন’ শীর্ষক 888sport app download apkটি রবীন্দ্র-সম্পাদিত এই সংকলনে অন্তর্ভুক্ত হয়। সঞ্জয় ভট্টাচার্যের মতো এই অসাধারণ সৌভাগ্য সে-সময়ের অধিকাংশ আধুনিক কবিদেরই হয়নি।
সঞ্জয় ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় পূর্বাশা পত্রিকা ১৯৩২ সাল থেকে প্রকাশিত হয়। এ-পত্রিকাটি তখন খুব জনপ্রিয় ছিল। বলা যায়, পূর্বাশা পত্রিকা সম্পাদনা সঞ্জয় ভট্টাচার্যের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ প্রয়াস এবং জীবনের সবচেয়ে বড় কাজ। এই পত্রিকার সম্পাদকীয়তে কী লেখা তিনি দেবেন তাও রবীন্দ্রনাথের অনুমতি লাভের জন্য পাঠিয়ে দিতে দেখি। রবীন্দ্রনাথ নবযুগের নবীন কবিদের সাফল্যকে প্রেরণা জুগিয়েছেন গভীর মমতার সঙ্গে। তিনি এঁদের কী পরিমাণ আবদার-অনুরোধ-অনুযোগ হাসিমুখে বরণ করেছেন, ইতিহাস তার সাক্ষী। কবি নতুন একটি যুগের পথ তৈরি করে দিতে চেয়েছিলেন। সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে দেওয়া একটি চিঠির সংস্কৃত শ্লোকের ইঙ্গিতে তারই পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি অন্যত্র লিখেছেন :
ভাবি কালের দিকে আমরা পথ তৈরি করে দিতে পারি, কিন্তু গম্য স্থানকে আমার আজকের দিনের রুচি ও বুদ্ধি দিয়ে একেবারে পাকা করে দেব, তা হতেই পারে না। যদি অন্ধ মমতায় তাই করে দিই তা হলে সে আমাদের মৃত সংকল্পের সমাধিস্থান হবে। আমাদের যে চেষ্টা বর্তমানে জন্মগ্রহণ করে, সময় উপস্থিত হলে তার অন্ত্যেষ্টি-সৎকার হবে, তার দ্বারা সত্যের দেহ মুক্তি হবে, কিন্তু তার পরে নবজন্মে তার নবদেহ-ধারণের আহ্বান আসবে।
এই গভীর এক জীবনবোধ থেকেই রবীন্দ্রনাথ নতুন এক প্রজন্ম নির্মাণের দায় গ্রহণ করেছিলেন। তরুণ কবিদের বিচিত্র কৌতূহলের জবাবে তিনি একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে চাইতেন যে, 888sport app download apk বাস্তব-অবাস্তব, গদ্যে-পদ্যে যাই হোক না কেন প্রথমেই তাকে 888sport app download apk হতে হবে, তার মধ্যে কাব্যবস্তু থাকতে হবে। এই প্রেরণায় উজ্জীবিত করার জন্য তিনি সঞ্জয় ভট্টাচার্যকেও চিঠি লিখেছেন। নিজের বিপুল কর্মযজ্ঞের মধ্যে এও ছিল তাঁর নিরন্তর উত্তর-সাধকদের মধ্যে বেঁচে থাকার গোপন এক সৃষ্টি-প্রেরণা।
সমর সেনের (১৯১৬-৮৭) বয়স যখন মাত্র 888sport cricket BPL rate বছর, বুদ্ধদেব বসু তখনই তাঁকে ‘নবযৌবনের কবি’ বলে অভিনন্দিত করেছিলেন। আর এই বুদ্ধদেব বসুই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে। অবশ্য সমর সেনের পিতামহ দীনেশচন্দ্র সেন ছিলেন রবীন্দ্রনাথের বন্ধু এবং তাঁর পিতা অরুণচন্দ্র সেন ছিলেন আশ্রম বিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথের øেহভাজন ছাত্র। কিন্তু সমর সেনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সেই ১৯৩৮ সালে একবারই দেখা হয়েছিল  – অন্য কজন কবিবন্ধুর সঙ্গে যখন তিনি শান্তিনিকেতনে ইস্টারের ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন। সেই থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর প্রীতির সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল। কবির দল সন্তুষ্ট হয়ে বিদায় নিয়ে নিশ্চয়ই রবীন্দ্রনাথকে গদগদ ভাষ চিঠি লিখেছেন। সমর সেনের কোনো এক চিঠির উত্তরে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন :
সমর সেদিন তোমরা কবির দলে এসে খুশি হয়ে গেছ শুনে আরামবোধ করচি। তোমরা আতিথ্যের যতটা প্রশংসা করেচ তার যথোচিত কারণ খুঁজে পাচ্ছি নে। অল্পে খুশি হবার শক্তি যদি তোমাদের থাকে সে একটা দুর্লভ গুণ, বিশেষত 888sport appsে।
এবং এই চিঠির মধ্যে রবীন্দ্রনাথের রসিকতার মেজাজ দেখে মনে হয় তিনি সমর সেনকে আপনজন হিসেবেই গ্রহণ করেছিলেন।
বুদ্ধদেব বসুর 888sport app download apk পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৩৪২ সনের আশ্বিন মাসে। এই পত্রিকায় সমর সেনের ‘মুক্তি’, ‘888sport sign up bonus’, ‘প্রেম’ প্রভৃতি শিরোনামের 888sport app download apk প্রকাশিত হয়। ওইসব 888sport app download apk পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূল্যায়ন হলো, ‘সমর সেনের 888sport app download apk কয়টিতে গদ্যের রূঢ়তার ভিতর দিয়ে কাব্যের লাবণ্য প্রকাশ পেয়েছে। 888sport live footballে এঁর লেখা ট্যাঁকসই হবে বলে বোধ হচ্ছে।’ বুদ্ধদেব বসুর উদ্দেশে লেখা এই চিঠির তারিখ ৩ অক্টোবর ১৯৩৫, যখন সমর সেনের বয়স মাত্র ১৯ বছর। কিন্তু তিনি চিরকাল রবীন্দ্রনাথের প্রেরণার কথা 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে মনে রেখেছেন। বাংলা গদ্য-888sport app download apkর এক নতুন ঘরানার স্রষ্টা সমর সেন মাত্র দশ বছর কাব্যচর্চা করে লেখালেখি থেকে বিদায় নেন। কিন্তু তাঁর সেই দশ বছরের কাব্যজগতের পরিচয়ের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ আছেন রবীন্দ্রনাথকে অতিক্রমণের শক্তি হিসেবে, প্রেরণা হিসেবে।
এখানে যাঁদের কথা বলা হলো এঁরা প্রত্যেকেই কবি, স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল কবি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তো নয়ই  –  তিরিশোত্তর কালের কোনো কবিকেই এঁরা অনুসরণ করেননি। অধিকন্তু সকল প্রভাব-প্রতিপত্তির ঊর্ধ্বে এঁরা এক-একজন-এক একটি জগৎ নির্মাণ করেছেন। অমিয় চক্রবর্তীর (১৯০১-৮৬) কথা এ-888sport liveে উল্লেখ করা হয়নি। কারণ দীর্ঘদিন তিনি রবীন্দ্রনাথের 888sport live football-সচিব ছিলেন এবং তাঁর প্রতি রবীন্দ্রনাথের øেহ ও প্রেরণার আলেখ্য রচনা এই ছোট অবয়বের লেখায় সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথের এত কাছে থেকেও তিনি যে 888sport live football-জগৎ নির্মাণ করেছেন তা একান্তই স্বকীয়তার সৌন্দর্যে অনন্য। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের কাছে এঁদের ঋণের কোনো সীমা নেই। রবীন্দ্রনাথের বিপুল বিস্তৃত জগৎকে তাঁরা তাঁদের সৃষ্টির মধ্যে কত বিচিত্রভাবে যে ব্যবহার করেছেন তার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। সমর সেন তাঁর 888sport app download apkয় রবীন্দ্রনাথের পঙ্ক্তি ব্যবহার করেছেন হয়তো রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর মানসিক বৈপরীত্যকে বোঝানোর জন্য। বিষ্ণু দে-র মধ্যেও এই প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তিনি রবীন্দ্র-888sport live chat ঐতিহ্যের অন্য এক রূপান্তরে ব্রতী হয়েছিলেন। তাঁর কাব্যগ্রন্থ তুমি শুধু পঁচিশে বৈশাখ (১৯৫৮) নামের মধ্যেই স্থান পেয়েছে রবীন্দ্র-ভাবনার সঙ্গে তাঁর কল্পনাপ্রতিভার নৈকট্য। এছাড়া নাম রেখেছি কোমল গান্ধার (১৯৫৩) কাব্যগ্রন্থের নাম রাখা হয়েছে ‘পুনশ্চ’ 888sport app download apk থেকে। আর এ-কাব্যগ্রন্থের প্রথম 888sport app download apkর শিরোনাম ‘২২শে শ্রাবণ’ এবং শেষ 888sport app download apk ‘২৫শে বৈশাখ’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিঠিপত্রের ষোড়শ খণ্ডে (১৯৯৫ : ২৬২) উল্লেখ আছে, ‘রবীন্দ্রনাথের অন্য একটা ছায়াও বিষ্ণু দে-র রচনায় দেখা যায়। তাঁর কাব্যধারার প্রথম পর্বে রবীন্দ্রনাথের পঙক্তি [পঙ্ক্তি] ব্যবহৃত হয়েছিল তাঁদের কবিমানসের হয়ে বৈপরীত্য বোঝানোর জন্যেই, আর শেষ পর্বে রবীন্দ্রনাথ হয়ে ওঠেন সমস্ত নঞ্চর্থকতার বিপরীতে সদর্থক এক মূল্যবোধের প্রতীক।’
রবীন্দ্র-বিরোধ আর রবীন্দ্র-ভক্তির ঐকতানে গড়ে উঠেছিল বুদ্ধদেব বসুর মানসভুবন। ভাবনার এই দ্বান্দ্বিক বিকাশ থেকেই তিনি রচনা করেছেন রবীন্দ্রসংক্রান্ত নিজস্ব পাঠ : রবীন্দ্রনাথ : কথা888sport live football (১৯৫৫), সঙ্গ : নিঃসঙ্গতা রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৩), কবি রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৫), Tagore : Portrait of a poet (১৯৬২)।  আর রবীন্দ্রনাথ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন তাঁর বিপুল রচনার মধ্যে। রডোড্রেনডন গুচ্ছ (১৯৩২),  যেদিন ফুটলো কমল (১৯৩৩), হে বিজয়ী বীর (১৯৩৩), একদা তুমি প্রিয়ে (১৯৩৩), ঘরেতে ভ্রমর এলো (১৯৩৫), হঠাৎ আলোর ঝলকানি (১৯৩৫), আমি চঞ্চল হে  (১৯৩৭), সব পেয়েছির দেশে (১৯৪১), ছায়া কালো-কালো (১৯৪২), অন্য কোনো খানে (১৯৫০), এসব গ্রন্থের নাম হুবহু রবীন্দ্রনাথের রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে।
তিরিশোত্তর কালে যে একঝাঁক অসাধারণ মেধাবী কবির আবির্ভাব ঘটেছিল তাঁদের প্রত্যেকেই সৃষ্টির রসদ পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিপুল বিস্ময়কর জগৎ থেকে। আপন আপন শক্তি ও সৌন্দর্যের সামর্থ্যও তাঁরা লাভ করেছিলেন এই মহান কবির প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ প্রভাববলয় থেকে। আর যাঁরা ছিলেন রবীন্দ্রানুসারী কবি এবং যাঁরা সমকালে কবিখ্যাতি লাভ করলেও পরবর্তীকালে ম্লান হয়ে গিয়েছেন তাঁদের 888sport free bet 888sport free betতীত, তাঁদের প্রতি রবীন্দ্রনাথের আশীর্বাদও অপ্রাসঙ্গিক।