আরশিনগর নামে 888sport appর এক নয়া নাটুয়ার দল এক উৎকৃষ্ট নাট্যনির্মাণ করেছেন। রহু চণ্ডালের হাড়। ইদানীং কলকাতা বা 888sport appর প্রসেনিয়াম থিয়েটারের আঙিনায় ও তাদের অনুসারী নগরনাট্যের নানান ঘাঁটিতে হরেক রকমের ভাঙাগড়ার পালা চলেছে। কোথাও বিষয়, কোথাও আঙ্গিকের দিকে নজর ঘোরানো আছে। কোথাও স্পষ্টই ভাটার টান, কোথাও জোয়ারের ইশারা। এই বিধ্বস্ত পরিমণ্ডলের কথা মাথায় রেখেও আমাদের বলতে হচ্ছে যে, এমন নিপুণ ও নিবিড় নাট্যনির্মাণ সচরাচর আমাদের চোখে পড়ে না। এই নাটকের অস্থিমজ্জায় যে সমবায়ী প্রয়াসের শ্রমকিণাঙ্ক আছে, এই প্রয়াসের আনাচে-কানাচে এক প্রান্তিক সাংস্কৃতিক পরিসরের যে-বিশ্বাসযোগ্য অভিজ্ঞান আছে, এই পরিসর জুড়ে বাংলার সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসের যে মন্থন চলেছে সমগ্র নাট্যক্রিয়া জুড়ে, তা শুধু সাধুবাদ নয়, আমাদের 888sport apk download apk latest version দাবি করে।
কয়েক বছর আগে এই আরশিনগর সে রাতে পূর্ণিমা ছিল প্রযোজনা করে আমাদের চমকে দিয়েছিলেন। শহীদুল জহিরের 888sport alternative link-আধারিত সেই নাটকে কতক লাতিন আমেরিকা ঘরানার জাদুবাস্তবতার চেনা নিরিখকে নগরনাট্যের খাতে বইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন আরশিনগরের নির্দেশক রেজা আরিফ ও তাঁর সঙ্গীসাথিরা। আমাদের তারিফ পেয়েছিলেন। এবারে আমাদের রোজকার দুনিয়ার হিসেবে কতক অচেনা এক নিরিখের তত্ত্বতালাশ করেছেন তাঁরা। অনেক জটিল অনেক স্তরীভূত এক নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা করেছেন। আধার হয়েছে অভিজিৎ সেনের 888sport alternative link রহু চণ্ডালের হাড়।
বৃহত্তর পাঠকগোষ্ঠীর খবরের খাতিরে বলে রাখা ভালো যে, অভিজিৎ সেন আদতে বরিশালের জাতক হলেও তাঁর বেড়ে ওঠা কলকাতায়। বাংলার সংস্কৃতি ও ইতিহাসের যেসব গলিঘুঁজিতে নগরকেন্দ্রিক 888sport live footballের ব্যাপারীরা বড়ো একটা যাতায়াত করেন না, সেসব দিকেই তাঁর বরাবরের মনোযোগ। প্রবল ক্ষমতাবান লেখক হলেও তাঁর লেখালেখি সম্পর্কে বাঙালি পাঠকবর্গের অনেকেই যে ওয়াকিবহাল এমন কথা জোর গলায় বলা যায় না। পশ্চিমবঙ্গে ও পরবর্তীতে 888sport appsে এক ক্ষুদ্র পাঠকগোষ্ঠীর মধ্যে তাঁর বিচরণ। অনেকদিন আগে হরিমাধব মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় বালুরঘাটের ত্রিতীর্থ তাঁর দেবাংশী 888sport alternative linkের এক বিস্ময়কর নাট্যরূপ দিয়েছিল। হালে কুন্তল মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় সংলাপ কোলকাতা তাঁর ধর্মাধর্মের এক মামুলি মঞ্চায়ন করেছে।
তাঁর রহু চণ্ডালের হাড় একেবারেই আলাদা গতের লেখা। ব্রিটিশ-রুশ বা মার্কিন 888sport alternative linkের যেসব ছাঁদ আমাদের নাগালে আছে, রহু চণ্ডালের হাড়-কে তাদের সঙ্গে মেলানো দায়। ম্যাজিক রিয়ালিজমের চেনা লবজেও একে আঁটানো যায় না। বাংলা ১৩৯২ সনের পহেলা বৈশাখ, অর্থাৎ আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে, কলকাতার সুবর্ণরেখা রহু চণ্ডালের হাড় ছেপে বের করে। বিমল মজুমদারের নকশা করা সেই বইয়ের মলাটে ঠাঁইনাড়া একদল লোকের ছবি ছিল। তবে এই প্রচরণের পেছনে কোনো সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ইন্ধন ছিল না। কেননা, সেই ছবির তলায় এক খর্বনাসা 888sport promo codeর মুখের আবছায়ায় ওপর লেখা হয়েছিল – ‘উত্তরবঙ্গের এক যাযাবর গোষ্ঠীর জীবন সংগ্রামের কাহিনী’। এই যাযাবর গোষ্ঠী আসলে বাজিকর। ঔপনিবেশিক ভারতের চড়াই-উতরাই কীভাবে তাদের প্রভাবিত করেছে তার রংবেরঙের বুনোটে এই 888sport alternative linkের বিস্তার।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নৃ888sport apkীর চোখ দিয়ে, সাম্যবাদী সমাজচিন্তকের মরমি মন নিয়ে এই আখ্যানকে কলমে ধরেছিলেন অভিজিৎ। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাঁসুলী বাঁকের ইতিকথা বা অদ্বৈত মল্লবর্মণের তিতাস একটি নদীর নামের সঙ্গে রহু চণ্ডালের হাড়ের কিছু মিল থাকলেও সেটা কাঠামোগত। তা কৌমজীবনের ঘূর্ণিপাকের উদ্যাপনে। তবে রাঢ়বঙ্গের কাহার বা বৃহত্তর ময়মনসিংহের মালো সম্প্রদায়ের আঁতের কথা শোনাতে বসে তার বুকে জমা থাকা কিস্সা-কাহিনির ঝোলা উপুড় করে দেওয়ার সুযোগ তাঁরা পাননি। সে তুলনায় আরো বিস্তৃত চিত্রপটে আঁচড় কেটেছেন রহু চণ্ডালের হাড়ের কথক। যে-আখ্যানে কোনো নায়ক নেই, যেখানে কিংবদন্তি আর অতিকথা পাশাপাশি পথ চলে, তাকে ‘মহাকাব্যিক’ বললে কিঞ্চিৎ বেখাপ্পা শোনায়। তবে আজকালকার পরিভাষায় যাকে নিম্নবর্গীয় ও প্রান্তিক বলা হচ্ছে, তার দাঁড়িপাল্লায় এর মাপজোখ করলে ওজনে বেশ ভারি দেখায় রহু চণ্ডালের হাড়কে। কারণ অভিজিৎ খাপছাড়া এক যাযাবর জাতের কয়েক পুরুষের আনাগোনার বৃত্তান্ত শোনাতে বসে লাগাতার সুইফোঁড়ে বুনে দিয়েছেন সমাজ বিবর্তনের মার্কসবাদী পাঠের এক চোরা বয়ান।
তার অন্দরমহলকে হাট করে খুলে দিয়েছেন। এই বয়ানের সুতোয় বাঁধা পড়েছে রাজমহল থেকে রাজশাহী, মনিহারিহাট থেকে মালদা, রংপুর থেকে পাঁচবিবি। কীভাবে কার্যকারণ সম্বন্ধের আপতিক দুর্যোগে বাজিকরদের কপাল পুড়েছে, কীভাবে দামাল এক দুনিয়াতে লেগেছে গেরস্তপনার বাঁধন – তার আভাস ফুটেছে ইতিউতি। এইখানে অভিজিতের ওস্তাদি।
রেজা আরিফ এর প্রসাদগুণ ঠিক চিনেছেন। প্রযোজনা-পুস্তিকায় তিনি লিখেছেন, ‘এক অর্থে রহু চণ্ডালের হাড় অখণ্ড বাংলার সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক মিলনের গল্প।’ এই মন্তব্যের মর্মার্থে যেমন ঐতিহাসিক সত্য আছে, তেমন আছে যাপনিক সূত্র। রাজপাটের কাছাকাছি থাকা খোশনসিব বাঙালি বরাবরই ক্ষেত্রবিভাজনের খোপে বসে 888sport live chatসাধনা করে এসেছে। ধুরন্ধর শাসককুলের পেতে রাখা অপর নির্মাণের ফাঁদে পা দিয়েছে। অতটা ‘বাঙালি’ নয় বলেই হয়তো বাজিকরের দল ওই বিভাজনমুখী সন্দর্ভের মাপে আটকা পড়েনি। তাদের সামনে রেখে এই গঙ্গাপদ্মামেঘনাবিধৌত ভূখণ্ডের যে সমান্তরাল ইতিহাস লিখতে চেয়েছিলেন অভিজিৎ সেন তাকে শিরোধার্য করে অবাধে পথ কেটেছেন রেজা আরিফ। পৈতে টিকি টুপি টোপরের বালাই ঘুচিয়ে দিয়েও যে একটা আগাপাশতলা বাংলা নাটক বানানো যায়, তার সার্থক প্রয়োগক্ষেত্র হয়ে উঠেছে আরশিনগরের রহু চণ্ডালের হাড়।
আমাদের আলোচনার স্বার্থে ওই বইয়ের ডাস্ট জ্যাকেটে কী লেখা ছিল, পুরনো বানান না বদলে তাতে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
রহু হয়ত বা তাদের আদিপুরুষ। সেই চণ্ডালের হাড়ের ছোঁয়ায় তাদের যত ভেল্কি ভানুমতির খেলা। বাজিকরেরা এমনই এক সম্প্রদায়। উত্তরবঙ্গের দু’চারটি গ্রামে তাদের অবশেষ কিছু মানুষ এখনো যথার্থ গৃহস্থ হওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যায়। 888sport sign up bonus ক্রমশ ঝাপসা হয়, নতুন প্রজন্ম হয়ত ভাল ক’রে জানেই না পশ্চিম কিংবা উত্তর ভারতের কোন জনপদে ছিল তাদের আদি বাস, ছিল অন্য ভাষা অন্য রীতিনীতি। শারিবা তার নানি লুবিনির কাছ থেকে বাজিকরের অতীতকে তুলে আনে গল্প, গাথা, গান, এবং এক ধারাবাহিক সংগ্রামের উপাখ্যান। পাঁচ পুরুষ ধরে প্রায় দেড়শ বছরের এক কাহিনী, যার শুরু হয়েছিল শারিবার বৃদ্ধ প্রপিতামহ পীতমের আমল থেকে এবং যার সঙ্গে আবশ্যিকভাবে এসেছে এই দেড়শ বছরের রাজনীতি সমাজ এবং আরো অনেক উত্থান-পতনের ইতিহাস। পীতম চেয়েছিল যাযাবরী বৃত্তি ত্যাগ করে গৃহস্থ হতে, সেই দায় পাঁচ পুরুষ পরে শারিবা এখনো বহন করছে।
এই ধরতাইটুকুর মধ্যে রহু চণ্ডালের হাড় কী নিয়ে তার খানিক আঁচ মেলে ঠিকই, মেলে না আরো অনেকখানি। যিনি পড়েননি, পড়বার উপায় নেই, সেই তাদের জন্য আরো কিছু জানান দেওয়া আবশ্যক। জানান দিতেই হয় যে এই আখ্যানের শিরদাঁড়া হয়ে আছেন লুবিনি নামের এক প্রাচীনা। অভিজিতের ভাষায়, ‘লুবিনি বলে এক অজ্ঞাত দেশের কথা। সি দ্যাশ হামি নিজেই দেখি নাই, তোক আর কি কবো। সি দ্যাশের ভাষা বাজিকর নিজেই বিসোরণ হোই গিছে, তোক্ আর কি শিখামো!’ এই লুবিনি নানির কাছে বাজিকর সভ্যতার পূর্বমুখী প্রচরণের গল্প শোনে শারিবা। গল্পের তোড়ে ভেসে ওঠে, ভেসে যায় অসংখ্য স্থান-কাল-পাত্র।
আরশিনগরের এই নাটক নিয়ে 888sport app তথা 888sport apps যে কিঞ্চিদধিক আলোড়িত এ-খবর তো কবেই কলকাতায় পৌঁছেছিল। আগ্রহ জমছিল। বাদ সাধছিল বন্দোবস্ত। শীতকালীন নাট্য-উৎসবের ঢালাও মরসুমে জুতসই একটা-দুটো মঞ্চ যদিওবা পাওয়া যায়, রহু চণ্ডালের হাড়ের তিরিশ জন কলাকুশলীর বড়োসড়ো দলকে 888sport app থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা, তদুপরি তাদের থাকা-খাওয়ার জন্য দরাজ ও দিলখোলা এক আয়োজকের দরকার ছিল। এগিয়ে এলো অনীক। 888sport cricket BPL rate বছরে পা দেওয়া গঙ্গা-যমুনা নাট্য উৎসবের সপ্তম তথা শেষ পর্যায়ে (২৫ ফেব্রুয়ারি-১ মার্চ) 888sport appsের নানান জায়গা থেকে বাছাই করা নাটক এনেছিলেন তারা। এই সুবাদে ২৯ ফেব্রুয়ারি (বাংলা ১৪২৬ সনের ১৬ ফাল্গুন) সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট এলাকায় তপন থিয়েটার নামের এক বুড়োটে গোছের নড়বড়ে প্রসেনিয়াম থিয়েটারে হইহই করে মঞ্চস্থ হলো রহু চণ্ডালের হাড়। বাংলার মাটিতে বেড়ে-ওঠা বর্ণনাত্মক নাট্যভাষের আধুনিক প্রয়োগে 888sport apps যে সিদ্ধিগঞ্জের মোকামের হদিস পেয়েছে, প্রায় দু-ঘণ্টার এই বর্ণাঢ্য মঞ্চায়ন তার মজবুত ভিতকে আরো পাকাপোক্ত করল।
এই মঞ্চায়নের একটা প্রাগেতিহাস আছে। তার মুখ্য লিপিকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। অনেকদিন ধরেই এই 888sport alternative link সেখানে পড়ানো হয়। সেই সূত্রে অভিজিৎ সেখানে বক্তৃতা দেওয়ার ডাক পেয়েছিলেন ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে। শুনে এসেছিলেন যে, জাহাঙ্গীরনগরের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ তাঁর 888sport alternative linkের নাট্যায়নে ব্রতী হয়েছে। রেজা আরিফ সেই ব্রতচারী। তারপর অনেকদিন কেটেছে। কিছুকাল আগে বিভাগীয় ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এই প্রযোজনার একটা খসড়া চেহারা খাড়া করেছিলেন রেজা। সেই চেহারা খোলতাই হয়েছে আরশিনগরের একদল পাগলপারা নাটুয়ার ঘামে-রক্তে-জলে। এই সংস্কৃত ও বহুবর্ণী রহু চণ্ডালের হাড় প্রথম মঞ্চস্থ হয় 888sport appয়, 888sport apps 888sport live chatকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটারে, ২০১৮-র ২৯ নভেম্বর। বাহবা কুড়োয় এন্তার। সুবাস ছড়ায় চারপাশে। কলকাতায় মঞ্চায়নের কয়েক মাস আগে সামাজিক মাধ্যমে এক প্রতিক্রিয়া জানাতে বসে অশক্ত অভিজিৎ সেন লিখেছিলেন, ‘নিজেকে খুব হতভাগ্য মনে হচ্ছে প্রেক্ষাগৃহে উপস্থিত থেকে এসবের সাক্ষী হতে পারছি না বলে।’ কী আশ্চর্য সমাপতন যে দ্বাবিংশ গঙ্গা-যমুনা নাট্য উৎসবে এই প্রযোজনার দ্বাবিংশ মঞ্চায়ন হলো। এবং অভিজিৎ একেবারে সামনের সারিতে বসে তাঁর 888sport live footballের নাট্যায়ন দেখলেন। বারো বছর আগে যে-বৃত্ত আঁকতে শুরু করেছিলেন রেজা, এই প্রদর্শনীতে যেন তা সম্পূর্ণ হলো।
নাট্যকার হিসেবে তিনি বহুপ্রসূ না হলেও রেজা আরিফের নাট্যনির্মাণের একটা ঘরানা এতদিনে কায়েম হয়ে গিয়েছে। তিনি সহজিয়া পথে চললেও সে-পথে চলা সহজ নয়। অন্তত বাংলা নগরনাট্যের যে ধারাবাহিকতায় আমরা আছি, তার সাপেক্ষে এই পথকে ক্ষুরস্য ধারা বললেও কম বলা হয়। বাচিক নয়, তাঁর নাট্যনির্মাণে জোর পড়ে আঙ্গিক অভিনয়ে। অথচ তার দরুন বাচিক যে কমজোরি হবে তার জো নেই! হালফিলের জবানে যাকে ‘সিনোগ্রাফি’ বলার চল হয়েছে, যাকে এককথায় ‘জিজাইন’ বলে মার্কা মেরে দেওয়া এই উপমহাদেশের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই সব খুঁটিনাটিতে পারদর্শিতা দেখান রেজা। চিত্রপটে ঘা দিয়ে যান থেকে থেকে। তা বলে চিত্তপটকে হেলাফেলা করেন না।
রহু চণ্ডালের হাড় নাটকে আলী আহমেদ মুকুলের অভিজ্ঞতাসঞ্জাত মঞ্চ একটা আছে। আছে উঁচুনিচু তলবিন্যাসের জ্যামিতি।
আপ-রাইটে একটা চওড়া পাটাতনের ওপর দাঁড় করানো আছে একটা চাকা। গরুর গাড়ির চাকার মতো তার গড়ন। মিডল-লেফটে একটা দশাসই খাম্বা। সামনে পেতে রাখা সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে ফুট দশেক উঠে যাওয়া যায় তার ওপর, ওপরের নাতিপ্রশস্ত পাটাতনে খানিক থিতু হওয়া যায়। প্রসেনিয়ামের ছাদ থেকে কতক সার্কাসের ট্র্যাপিজের মতো দড়িদড়া ঝোলে। তাতে নাগরদোলার মতো চরকিপাক খাওয়া যায়, আবার ঝুলনের মতো দোল খাওয়া যায়। বাজিকরদের জীবন বাজি রেখে চলার রোমহর্ষক স্বভাবের অনুচর হয়ে ওঠে ওইসব উল্লম্ব মঞ্চসামগ্রী। এর কোনোটাই একমাত্রিক নয়। সবই স্থিতিস্থাপক ও বহুমুখী। কারণ জগদ্দল কোনো মঞ্চস্থাপত্যে রেজার ভরসা নেই। এই মঞ্চসামগ্রী ও সংলগ্ন মানবশরীরকে এমনভাবে ইস্তেমাল করেন রেজা যে মুহুর্মুহু ভোল পালটায় মঞ্চ। এই গড়ে, পরমুহূর্তে হুড়মুড় করে ভেঙে যায়, আবার গড়ে। প্রসেনিয়াম উপচে পড়ে জীবনের স্রোতে। উষ্ণ প্রস্রবণের মতো জঙ্গম এক কৌমজীবনের ছবি তৈরি হয়। আরশিনগরের সে রাতে পূর্ণিমা ছিল নাটকে দেখেছিলাম বাঁধা গতের গল্পগাছার ফেরে আটকে না পড়ে আমআদমির রোজকার জীবনের গাথা কীভাবে নাট্যবস্তু হয়ে উঠতে পারে, কীভাবে মৃত্তিকাসংলগ্ন সংস্কৃতির নানান গহনা তাকে কনের মতো সাজিয়ে দেয়, কীভাবে নীলচে আলোছায়ায় আরো মায়াবী লাগে কুশীলবদের আটপৌরে সাজ, কীভাবে ঝুলে থাকা কাপড় ধরে উড়াল দেয় মানুষ, আর কেমন করে নৌকোর গলুই হয়ে ওঠে নিষিদ্ধ নৈশজীবনের বাতিঘর। আলোক888sport live chatীর যোগসাজশে এই ব্যাপারটা বেশ মনোহর দেখায়। নাটকবিশেষে রঙের মেজাজ পালটে যায়। আলোকের দায়িত্বে থাকা শাহীন রহমান এই বর্ণাঢ্য পৃথিবীর ঝলমলে দিক চিনিয়েছেন, আঁধারঘুঁজিকেও ভোলেননি। মনোজগতের রংবদলে সুরের কদর করেন রেজা। স্টুডিও রেকর্ডিং নয়, রহু চণ্ডালের হাড় পুরোদস্তুর ভরসা রেখেছে লাইভ মিউজিকে। অথচ পেশাদার গায়েন বায়েনদের তোয়াক্কা না করে আরশিনগরের উদ্যমী কলাকুশলীদের দিয়েই গোটা ব্যাপারটা ছকে নিয়ে চালিয়ে দিয়েছেন। নিজেরাই গান লিখেছেন, গুটিকয় মহাজনের মাধুকরী নিয়ে তাদের সুরে বেঁধেছেন, গেয়েছেন, এমনকি বাজনাও বাজিয়েছেন আরশিনগরের অভিনেতৃকুল। ঘড়ির কাঁটায় বাঁধা, দেশ-বিদেশের রকমারি তালে সাধা এইসব কর্তব্য নিখুঁতভাবে পালন করে গেছেন তাঁরা। রেজওয়ানা মৌরি রেজার নকশা করা তাদের বেশভূষায় পশ্চিম ভারতীয় মরুসভ্যতার একটা আন্দাজ ফুটেছে। আর সোমা মুমতাজের সৌজন্যে তাদের নিটোল অঙ্গবিন্যাসে, তাদের সারগ্রাহী নৃত্যভঙ্গিমায় ফেটে বেরিয়েছে আনকোরা দুরন্তপনা।
এই দুরন্তপনার মাত্র দুয়েকটা নমুনা দিই। বাজিকর বানজারাদের সঙ্গে বা নিদেনপক্ষে মাদারি কা খেলের কেরদানির সঙ্গে আমাদের রোজকার মোলাকাত যতই কমে আসুক না কেন, তাদের দড়িবাজি বাঁশবাজি চরকিবাজির একটা আবছা ছবি আমাদের সামূহিক নির্জ্ঞানে ধরা আছে। যেমন ধরা আছে আগুন ফুঁকে ধোঁয়া ওড়ানোর চোখধাঁধানো খেলা। আরশিনগরের কলাকুশলীদের দিয়ে এসবই করিয়েছেন রেজা। অনায়াস পটুতা ফুটে বেরিয়েছে তাদের ক্ষিপ্র অঙ্গভাষায়। সিনেমায় দেখলে একে স্টান্টবাজি বলে দায় এড়াতাম। তপন থিয়েটারের স্বল্পায়তন মঞ্চে এইসব রোমাঞ্চকর অথচ ভীতিপ্রদ কসরত দেখতে দেখতে গা শিউরে উঠেছে। চোখের সামনে দেখেছি যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে ঘুরতে ঘুরতে দড়াম করে কাঠের খাম্বায় ধাক্কা লাগল এক বাজিকরের। নেই পরোয়া! নির্বিকারে খেল চালিয়ে গেলেন তিনি। রণপা নিয়ে দিব্যি চলেফিরে বেড়াচ্ছেন কুশীলবকুল। দোলনায় দুলতে দুলতে হামেশাই কাঠের তক্তায় ঠোক্কর লেগেছে। দর্শক আসনে বসে মনে মনে প্রমাদ গুনেছি। ফায়ার ব্রিদিং দেখানোর সময় কেরোসিনের গন্ধ শুঁকে ফেলেছি আনমনে। চটকে গেছে নাগরিক বিনোদনের অভ্যস্ত মৌতাত। আবার প্রবল আস্ফালনে বাঁশে বাঁশে টক্কর লেগেছে যখন, মরণপণ লড়াই চলেছে বাজিকরের দলের সঙ্গে নানান প্রবলতর প্রতিপক্ষের, মনে মনে পক্ষ নিয়ে টেক্কা দেবার ফন্দি এঁটেছি আমরাও। এভাবে দর্শকদের স্নায়ুর ওপর নানাবিধ পরীক্ষা চালিয়ে গেছেন রেজা। থিয়েটার অফ ক্রুয়েলটির পশ্চিমি চালে নয়। আমাদের পরম্পরাবাহিত বিনোদনের 888sport sign up bonusজাগানিয়া এইসব কায়দা-কসরত আসলে আমাদের আরামের জীবনের বাইরের লড়াকু জীবনের যাপনচিত্র এঁকেছে প্রেক্ষাগৃহ জুড়ে। আমাদের অজ্ঞাতসারে ওই প্রচণ্ড সংগ্রামবিক্ষুব্ধ কৌমজীবনের প্রতি আমাদের 888sport apk download apk latest versionবান করে তুলেছে। কোনো বিরতি ছাড়াই দু-ঘণ্টার কিনার ছুঁয়ে থেমেছে রহু চণ্ডালের হাড়। পল-অণুপল জুড়ে দৃশ্যকাব্যের এই নির্মাণ একবারের জন্যও মঞ্চ থেকে চোখ সরাতে দেয়নি আমাদের।
এর জন্য মূল 888sport alternative linkের আখ্যানরীতিতে কোনো অহেতুক ভাংচুর করতে হয়নি রেজাকে। কোনো সংলাপ কাটতে হয়নি, জুড়তে হয়নি। আখ্যানভাগকে আগুপিছু করে ছেঁটেকেটে নিতে হয়েছে দরকারমাফিক। অনেক কিছু বাদ দিতে হয়েছে। অনেক উপাখ্যান, অনেক ইঙ্গিত চাপা পড়ে গেছে। আবার গদ্যের অন্তর্লীন ছন্দকে ধারণ করতে কথার ফাঁকফোকরে জুড়ে দিতে হয়েছে কয়েকটা গান। গানের সই হয়ে এসেছে নাচ। বাজিকরসুলভ সেইসব রোমহর্ষণের কথা তো আগেই বলেছি। তুরুপের এই কয়েকটা তাসের খেলায় বর্ণনাত্মক নাট্যধারার টলটলে খাতে দিব্যি বয়ে গেছে অভিজিতের তিরতিরে গদ্য।
ওই গদ্যের খাঁজে-ভাঁজে যে-নাট্যসম্ভাবনা ছিল তাকে উসকে দিয়েছেন রেজা। সবটাই যে রক্তে ভেজা, ঘামে জবজবে এমন তো নয়। কোথাও আনমনা হয়েছে যৌবন। কোথাও উথলে উঠেছে যৌনতা। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে যাচ্ছে রাধা নামের এক রহস্যময়ী স্বয়ংসিদ্ধার কথা। লুবিনির মরদ জামিরের সঙ্গে তার পাগলপারা প্রেমের কথা। ওই ভূমিকায় অভিনেত্রী আইনুন পুতুলের জন্য দু-তিনটি মাত্র দৃশ্য বরাদ্দ। তাতে কথার চাইতে চমক-ঠমকের দিকে ঝোল টানা বেশি। উপাখ্যানের নায়িকাকে লাল রঙে ছুপিয়ে, তার অনর্গল যৌবনকে না লুকিয়ে, বর্ণনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খিলখিল হাসির মাপা প্রয়োগে কী অনায়াসে এক 888sport app download for androidীয় যৌনপ্রতিমা নির্মাণ করা যায় তার সফল নিরীক্ষা করেছেন রেজা। আবির্ভাবলগ্নে রাধাকে রেখেছেন ওই চাকার সামনে। আসামাত্র থেমে থাকা চাকাতে গতিসঞ্চার করেছেন পুতুল। চরাচর আঁধারে ঢেকে রেখে তেরচা আলো পড়েছে তাঁর ওপর। ঘূর্ণায়মান চাকার প্রেক্ষাপটে ওই কুলছাপানো হাসির রসায়নে মাত হয়ে গেছেন সবাই। যখন সবাক হয়েছে রাধা, পরকীয়ার ‘বাণে’ ফুঁড়ে দিয়েছে প্রেমাস্পদের দম্ভকে, বনেবাদাড়ে তার অভিসারের সাতকাহন ফেঁদেছে, অতর্কিতে দোলনায় চেপে বসে দুলতে দুলতে রতিসুখে উছলে উঠে আদুরে গলায় দিয়ে গেছে তাদের মিলিত হবার উদ্দাম বার্তা, আর দুলকি চালে আনদ্ধবাদ্যে তাদের আসঙ্গতৃপ্তির আবহ বেজেছে, তখন ওই বাক্সময় হাস্য আর জমিন-আসমানে সঞ্চরমাণ লাস্যের মণিকাঞ্চনযোগ ঘটে গেছে। এর বিপ্রতীপে দোদোন ঘোষের (নিতাই চন্দ্র কর্মকার) যৌনঈর্ষা চকিতে খুলে দিয়েছে যমুনা পুলিনের গোচারণভূমি চুঁইয়ে পড়া পৌরাণিক পরিসরের দোর। হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো এসেছে রাধা। আবার অনেক হাহাকার আর হকচকানির খিল খুলে দিয়ে চলে গেছে। ক্ষণকালের এই আভাস আমাদের চিরকালের সেলামি আদায় করেছে।
রহু চণ্ডালের হাড় নায়কপ্রধান নয়। ব্যক্তি এখানে কৌমের নামান্তর। কৃত্য এখানে মঞ্চচারণের চাবিকাঠি। সামূহিক অনুশীলন এখানে ব্যক্তিগত সাধনার পরিপন্থী। তাই একক অভিনয়ের চাইতে সমষ্টিগত অভিনয়ের দিকেই ঝোঁক বেশি। দুয়েকজন বাদে সকলেই দুই বা ততোধিক ভূমিকায় মঞ্চে এসেছেন। একবারের জন্যও খাপছাড়া লাগেনি কাউকে। তবু বলতেই হয়, যে-রহু চণ্ডালের প্রতীক বহন করে চলে এ-প্রযোজনা, যার হাড় দিয়ে তৈরি জাদুকাঠি এই বাজিকরদের অপ্রাকৃত উত্তরাধিকার, সেই রহুর এক চিলতে ভূমিকায় উজ্জ্বল ছিলেন আসাদুজ্জামান আবির। বৃদ্ধা লুবিনির কাঁধে অনেক দায়িত্ব ন্যস্ত করেছিলেন অভিজিৎ-রেজা। যথাযোগ্য মর্যাদায় তা পালন করেছেন শ্যামাঙ্গিণী শ্যামা। তার নাতি শারিবার ভূমিকায় অমিত একটু নিচু পর্দায় খেললেও মানানসই হয়েই ছিলেন। রহু চণ্ডালের হাড়ের একেবারে মধ্যিখানে যে-আখ্যানভাগ তার অন্যতম কুশীলব সালমা। এই বহুমাত্রিক ভূমিকায় আশ্চর্য সপ্রতিভ নুসরাত জিসা। বাজিকরকুলপতি পীতেমের বেশে ফাহিম মালেক ইভান আরেক দাপুটে উপস্থিতি।
একটা ব্যাপার লক্ষণীয়। অভিনেতৃকুলের চোখেমুখে বিশেষ কোনো তৃতাত্ত্বিক আদলকে আমল দেননি নাট্যকার। দরকার পড়লে ঢেকে দিয়েছেন। তাই বিশিষ্ট মঙ্গোলয়েড মুখশ্রী নিয়ে বাদবাকিদের সঙ্গে মিলেমিশে যেতে অসুবিধে হয়নি বৈজয়ন্তী খীসার। সাঁওতাল পরগণার ঝুমুর সুর ছাড়া অন্য কোনো আবহকে মাথায় চড়তে দেননি নাট্যকার। তার জন্য কোনো প্রোটো-অস্ট্রালয়েড মুখোশ আমদানি করতে হয়নি তাঁকে। কতক রাজস্থানি তরিকায় দুজন কুশীলবকে কাপড়ে মুড়ে একটা কুনকি ঘোড়াকে মঞ্চে এনেছিলেন রেজা। ফারজানা মুক্তর ঝকঝকে দাঁতের পাটি আর ঝলমলে চোখের তারা দিয়ে সেই ঘোড়ার মনোজগতের হদিস মিলেছে। খাকি উর্দির রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের সমান্তরালে ওই মূল পশুর চাউনি যে বিরোধাভাস রচনা করেছে তা আখ্যানের এঁকেবেঁকে চলা গতিকে আরো তীব্রতা দিয়েছে। এভাবে বহুস্থানিক বর্ণমালায় সাধা নাট্যভাষার যে আন্তর্জাতিকতা বাংলা প্রসেনিয়াম থিয়েটারের মরকতমণি হতে পারে, তার কীর্তিফলক হয়ে উঠেছে রহু চণ্ডালের হাড়। যাযাবরবৃত্তির আসমানদারিতে যে জমিনদারির খোয়াব বোনা থাকে, যা এই উপমহাদেশের কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসের চালিকাশক্তি, সমবায়ী গরজে সেই খোয়াবনামার দৃশ্যায়ন সম্ভব করেছে আরশিনগর।
২৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নাটক শেষ হওয়ার পর আয়োজকদের তরফ থেকে অভিজিৎ সেনকে মঞ্চে আহ্বান করা হয়েছিল। দৃশ্যত আপ্লুত অভিজিৎ। দেবেশ রায়ের কথা ধার করে একে ‘888sport alternative linkের মঞ্চ পরিক্রমা’ আখ্যা দিয়ে বলছিলেন, ‘আমরা যেভাবে নাটক দেখতে অভ্যস্ত সেই একই পদ্ধতিতে এই নাটক মঞ্চায়ন হয়নি। যেভাবে হয়েছে তা আমাদের পরিতৃপ্ত করেছে কিনা প্রত্যেক দর্শক বুঝতে পারছেন। আমি নিজে পরিতৃপ্ত।’
পরিতৃপ্তির ওই অনুভব সেই সন্ধ্যার পরও এই সমালোচককে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। তাৎক্ষণিক মুগ্ধতাকে আড়াল করে লিখতে বসে এখনো ভেবে চলেছি যে, এক দশক ‘গর্ভে’ ধারণ করার পর এমন বিস্ময়কর নাট্যবস্তু যে-নির্দেশক ‘প্রসব’ করতে পারেন, তাঁর কাছে আগামী পৃথিবী আরো কোন কোন দাবিসনদ নিয়ে হাজিরা দিচ্ছে।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.