রাজেশ্বরী বাসুদেবের (পরে দত্ত) প্রথম রেকর্ড প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর মাসটিতে, ১৯৪১-এর আগস্টে। রাজেশ্বরী তখন শান্তিনিকেতনে সংগীতভবনের শিক্ষার্থী। সেই রেকর্ডে (H-920) তিনি গেয়েছিলেন ১৯৩৯-এ লেখা বর্ষামঙ্গলের দুটি গান : ‘আজি তোমায় আবার চাই শুনাবারে’ আর ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’। গান দুটি তাঁর কণ্ঠে এতই আবেগপূর্ণ ও মর্মস্পর্শী ছিল যে, সমকালীন শ্রোতারা গভীরভাবে মুগ্ধ হন। এই রেকর্ডের মাধ্যমে রাজেশ্বরী রবীন্দ্রসংগীতের জগতে এক অনন্য স্থান অধিকার করেন এবং তাঁর কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের গান নতুন মাত্রা পায়। আবু সয়ীদ আইয়ুব এই রেকর্ড শুনে এতটাই প্রভাবিত হন যে, পরে রাজেশ্বরীকে ব্যক্তিগতভাবে চিনে যারপরনাই বিস্মিত হন যখন দেখেন, তাঁর প্রিয় 888sport live chatী সামনেই তখন বসে আছেন! লাহোরে কেটেছিল রাজেশ্বরীর স্কুল-কলেজ জীবন। স্নাতক হওয়ার পরে মেধাবী ছাত্রী রাজেশ্বরী ১৯৩৮ সালে একরকম জোর করেই চলে আসেন শান্তিনিকেতনে, সংগীত শিক্ষার জন্য। ১৯৩৮ থেকে ১৯৪২ – চার বছরে উচ্চাঙ্গসংগীতের পাশাপাশি রাজেশ্বরী শেখেন রবীন্দ্রনাথের গান। শিক্ষক হিসেবে সেই পর্বে পেয়েছিলেন শান্তিদেব ঘোষ, শৈলজারঞ্জন মজুমদার, ইন্দুলেখা ঘোষ, অমিতা সেন ও সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথকে। কবির সচিব সুধীরচন্দ্র করের আত্মকথনে আছে, কবির কাছে রাজেশ্বরীর গান-শেখার টুকরো 888sport sign up bonus : ‘উদয়নের একতলায় সামনের চাতালে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বসে গান শেখাচ্ছেন [কবি] সংগীতভবনের ছাত্রী রাজেশ্বরী দেবীকে। গেয়েই চলেছেন। কণ্ঠের আকুলতা কূল মানছে না। পুরোনো গান : ‘আমার পরান লয়ে কী খেলা খেলাবে’১।’
রাজেশ্বরীর জীবদ্দশায় প্রায় সমস্ত গান বেরিয়েছিল হিন্দুস্থান রেকর্ড কোম্পানি থেকে। হিন্দুস্থান থেকে প্রকাশিত ৭৮ আরপিএস ঘূর্ণন ডিস্কগুলির মধ্যে আশ্চর্যভাবে রাজেশ্বরীর একটি থেকে গেছে জন888sport sign up bonusর কিছু আড়ালে, যার এক পিঠে ছিল ‘ধীরে ধীরে ধীরে বও’, অন্য পিঠে ‘বুঝি ওই সুদূরে’। বলা বাহুল্য, দুটি গানই যে রবীন্দ্রসংগীত, তা নিয়ে আজ বিতর্ক নেই। কিন্তু রাজেশ্বরীর ওই ডিস্কে (রেকর্ড নং H-2142) ‘বুঝি ওই সুদূরে’ গানটি চিহ্নিত হয়েছিল ‘ব্রহ্ম-সংগীত’ বলে, আরো তাৎপর্যপূর্ণ হলো, ডিস্কে রেকর্ড লেবেলে লেখা ছিল ‘রচনা : অজ্ঞাত’। ‘অজ্ঞাত’ জনের রচিত তথাকথিত ওই ‘ব্রহ্ম-সংগীত’টি কীভাবে পাওয়া গেল, সে-উল্লেখও অবশ্য ছিল ওখানে : ‘স্বর্গীয় প্রফুল্ল চন্দ্র মহলানবীশের সৌজন্যে প্রাপ্ত’ (দ্র. চিত্র ১)। এই কটি সূত্র ধরে এগোতে গেলে প্রথমে যে-প্রশ্নটি স্বভাবতই জাগবে, ১৯২৩-এ যে-গান রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, সুরও দিয়েছিলেন, সে-গান কেন চিহ্নিত হলো ‘রচনা : অজ্ঞাত’ বলে? এ-প্রশ্নের উত্তর মিলবে একাধিক জায়গায়। যেমন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার-প্রকাশিত রবীন্দ্র-রচনাবলীর ‘গ্রন্থপরিচয়’ শীর্ষক ষোড়শ খণ্ড (প্রকাশ : মে ২০০১) বলা হয়েছে :
গানটি ‘গীতবিতান’-এ প্রথম গৃহীত হয় ১৩৭১ ভাদ্রের সংস্করণে। গ্রন্থপরিচয়ে বলা হয়েছিল : ‘১৩৩০ সনে ‘বিসর্জন’ অভিনয়ে গাওয়া হয়। স্বর্গীয় প্রফুল্লচন্দ্র (বুলা) মহলানবিশের নিকট ইহার কথা ও সুর পাওয়া গিয়াছিল। সম্প্রতি সাহানা দেবী এই গান টেপ্-রেকর্ডে গাহিয়াছেন …।’
উল্লেখ্য, ১৩৩০-এর বিসর্জন তো নয়-ই, এমনকি রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় কোনো অভিনয়েই গাওয়া হয়নি এ-গান। পরন্তু ১৩৩০ বঙ্গাব্দ নয়, সাহানা দেবী জানিয়েছিলেন, গানটি লেখা হয়েছিল ১৩২৯-এ বসন্তোৎসবের জন্যে। পাশাপাশি সরকারি রচনাবলির ওই ‘গ্রন্থপরিচয়’ ষোড়শ খণ্ড উল্লিখিত হয়েছে রাজেশ্বরীর রেকর্ডের কথাও :
… 888sport app download for androidীয় যে সাহানা দেবীর এই টেপের আগেই বুলা মহলানবিশের কাছে সুর পেয়ে গানটি হিন্দুস্থান রেকর্ডে (H-2142) গেয়েছিলেন রাজেশ্বরী দেবী। রবীন্দ্রভবনে রেকর্ডটি রক্ষিত আছে।
বুলা মহলানবিশ আর সাহানা দেবী ছাড়া আর কেউই সম্ভবত জানতেন না এ-গানের কথা। আর হয়তো সে-কারণে রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় এর কোনো স্বরলিপিও তৈরি হয়নি। এ-দুটো তথ্য অবিশ্বাস্য রকমের বিস্ময়কর হলেও সত্য। সাহানা দেবী আত্মকথায় লিখেছিলেন :
এই গানটি সম্বন্ধে কারও কিছুই জানা নেই। … দোষ কারও নয় সম্পূর্ণ আমার। বি888sport sign up bonusর অপরাধে অপরাধী আমি। গানটি সম্বন্ধে কোনো কিছুই আমার 888sport app download for android ছিল না। বুলা (পরম স্নেহভাজন প্রফুল্ল মহলানবিশ) যদি না এই গানটির কথা আমায় লিখে 888sport app download for android করিয়ে দিতেন তাহলে রবীন্দ্রনাথের এমন সুন্দর গানটি হয়ত চিরকালের মতন আমার বি888sport sign up bonusর অতল তলে তলিয়ে যেত, কোনও দিনও আর কেউই তার সন্ধান পেত না। … বুলার চিঠি পাবার পর থেকে এই গান সম্বন্ধে যা জানি তা প্রকাশ করার গুরুদায়িত্বের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছিলাম। এতকাল পরে আজ সব কথা প্রকাশ করতে পেরে সেই বোঝা নামিয়ে হালকা বোধ করছি। … আমার অক্ষমনীয় [অক্ষমণীয়] বি888sport app download for androidের ত্রম্নটির জন্যেই রবীন্দ্রনাথের এমন গানটি তাঁর রচনাবলীর মধ্যে স্থান পায়নি বা রবীন্দ্র-রচনা বলে স্বীকৃতি পায়নি।২
বুলা মহলানবিশের সক্রিয় উদ্যোগ ও এই সংক্রান্ত সাহানাকে লেখা বুলার একটি চিঠি ১৯৬৪-র গীতবিতান সংস্করণে ‘বুঝি ওই সুদূরে’র অন্তর্ভুক্তির পথ প্রশস্ত করে। এই হলো গানটির ‘রবীন্দ্রসংগীত’ হয়ে-ওঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। এখন মূল প্রশ্নে যদি ফিরি আবার, রাজেশ্বরীর রেকর্ডে রচয়িতা ‘অজ্ঞাত’ লেখা রইল – এর কারণ কি
এ-গান রবীন্দ্রনাথেরই কি না সে-ব্যাপারে তখনো নিঃসংশয় হতে না পারা? রাজেশ্বরীর রেকর্ড তাহলে বেরিয়েছিল কবে? ১৯৬৪-র আগস্টের আগে, সে এক রকম নিশ্চিত। কিন্তু কত আগে? লক্ষণীয়, রাজেশ্বরীর রেকর্ডের উল্লেখ থাকলেও তার প্রকাশ-সময় বিষয়ে কিছুই বলা নেই রবীন্দ্র-রচনাবলীর ওই ষোড়শ খণ্ড।
‘মন হল উদাসী’
সরকারি উদ্যোগে প্রকাশিত ওই রচনাবলির সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম ছিলেন শঙ্খ ঘোষ। তাঁর দামিনীর গান (২০০২) বইয়ের শেষ নিবন্ধে আছে এই বিতর্কিত গান ও তৎসহ রাজেশ্বরীর রেকর্ড-প্রসঙ্গ। ‘হারিয়ে-যাওয়া গান’ শীর্ষক ওই নিবন্ধ দামিনীর গান-এ অন্তর্ভুক্তির আগে ছাপা হয়েছিল আমি যে গান গেয়েছিলেম নামাঙ্কিত ‘রবিতীর্থ সুবর্ণজয়ন্তী স্মারকগ্রন্থ’-এ, ১৯৯৬ সালে। নিবন্ধের প্রথম বাক্যে আছে একটি সনের উল্লেখ : ‘সময়টা ছিল বোধ হয় ১৯৫১ সাল।’ এই ‘বোধ হয়’কে ভিত্তি করেই এরপর চলবে ‘হারিয়ে যাওয়া গান’-এর খোঁজ। শঙ্খ ফিরে যাচ্ছেন প্রায় অর্ধশতক আগের 888sport sign up bonusতে :
আমরা তখন কলেজের ছাত্র। আমাদের এক সহপাঠিনী শ্রীলা, শ্রীলা মহলানবিশ। এক সন্ধ্যায়, তার ভাবী বর আমাদের আরেক সহপাঠী শচীন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমিও একবার আমন্ত্রিত ছিলাম তাদের ২১০ কর্ণওয়ালিস স্ট্রিটের বাড়িতে। … অনেকটা দূরে আরেক কোণে বসে আপনমনে বাঁশি বাজাচ্ছেন শ্রীলার বাবা, বুলা মহলানবিশ।৩
এই বাঁশির মর্মরেই শঙ্খ প্রথম শোনেন ‘বুঝি ওই সুদূরে’র সুর। শ্রীলার কাছে জানতে পারলেন, এ-সুর রবীন্দ্রনাথেরই। শ্রীলার বাবা প্রায়ই বাজান বাঁশিতে এই সুর। বুলার কাছ থেকে জানা গেল, ১৯২৩-এ বিসর্জন-এর প্রযোজনায় ব্যবহার করা হবে ভেবে নাকি লেখা হয়েছিল এ-গান। বুলার দায়িত্ব ছিল অভিনয়ের সময়ে নেপথ্যে গানের সঙ্গে বাঁশি বাজানো। সেই সূত্রে তিনি জানতেন ওর সুর। আর সাহানার 888sport sign up bonusকথায়, রবীন্দ্রনাথ আরেকটু আগে শিখিয়েছিলেন ওই গান সে-বছর বসন্তোৎসবে গাইবার জন্য। বিসর্জন-এর অভিনয়ে কিংবা বসন্তোৎসবে কোথাওই আর গাওয়া হলো না সে-গান। শেষ পর্যন্ত তা ‘অ-গীত’ থেকে গেল বলেই রয়ে গেল জনপরিচয়ের বাইরে, শঙ্খের কথায়, একেবারে ‘অ-জ্ঞাত’ হয়ে। এই ইতিহাসটুকুর পর শঙ্খ লেখেন :
আর তারপর, কয়েক মাসের মধ্যে, ভুলেও গেছি আমরা ব্যাপারটা। পুরো ঘটনাটার কথা মনে পড়ল আবার কিছুদিন পর, বাজারে যখন রাজেশ্বরী দত্তের নতুন রেকর্ড বেরোল একখানা, বাঁশি বাজানো-রাখালের-ছবি-দেওয়া হিন্দুস্থান কোম্পানির রেকর্ড। তার দু-পিঠে দুই গান। একদিকে আছে আমাদের … সেই গান : বুঝি ওই সুদূরে ডাকিল মোরে।৪
অসতর্ক পাঠে মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়, ১৯৫১-তেই তাহলে বুঝি বেরিয়েছে রাজেশ্বরীর রেকর্ড। বাক্য দুটো আলাদা করে দেখলে অবশ্য বোঝা যাবে ‘কয়েক মাসের মধ্যে’ রেকর্ড প্রকাশের কথা বলেননি শঙ্খ। ‘কয়েক মাসের মধ্যে, ভুলেও গেছি আমরা ব্যাপারটা।’ ‘ভুলেও গেছি’ কোন ব্যাপারটা? বলা বাহুল্য, বুলার সঙ্গে কথা হওয়ার ব্যাপারটা। সেই ভুলতে-বসা 888sport sign up bonus ফের মনে পড়ল কবে? শঙ্খর কথায়, ‘কিছুদিন পর’ : ‘বাজারে যখন রাজেশ্বরী দত্তের নতুন রেকর্ড বেরোল’ তখন। তার মানে রেকর্ড বেরোনোটা ‘কয়েক মাসের মধ্যে’র ঘটনা নয়। ভুলে যাওয়াটা কয়েক মাসের মধ্যেকার ঘটনা। আর মনে পড়াটা ফের ত্বরান্বিত হলো, যখন বাজারে এলো রাজেশ্বরীর রেকর্ড। কবে এলো সে-রেকর্ড? শঙ্খের কথার রেশ ধরে এগোলে সন-তারিখ সরিয়ে রেখে বলতে হয়, ভুলে যাওয়ার ‘কিছুদিন পর’। ‘কিছুদিন’কে ‘কিছু কাল’ অর্থে কি আমরা ব্যবহার করি? করি হয়তো। কিন্তু শঙ্খ বলেছেন যখন ‘কিছুদিন’, তখন ওই ‘বোধ হয়’ তাড়িত ১৯৫১-কেই রাজেশ্বরীর রেকর্ড প্রকাশের সাল ধরে নিতেও আপত্তি করবেন না হয়তো অনেকে।
আগেই বলেছি, ‘হারিয়ে-যাওয়া গান’-এর প্রথম প্রকাশ ১৯৯৬-এ। ১৯৫১-র যদি হয় সে-ঘটনা, নিশ্চিতভাবে পঁয়তাল্লিশ বছর পরের 888sport sign up bonusচারণ। এতগুলো বছরে কি 888sport sign up bonus সন-তারিখ সম্পর্কে তেমনি নিঃসংশয়? যে কেউ পড়লে দেখবেন, শঙ্খ তাঁর 888sport sign up bonusর অনিশ্চয়তা নিয়ে অনেক কথা কবুল করে চলেছেন এ-লেখায়। ‘হারিয়ে-যাওয়া গান’-এর দ্বিতীয় পরিচ্ছেদের শুরুতে রয়েছে :
888sport sign up bonusকথা অনেক সময়েই বেশ বিপজ্জনক। ঠিকই একসময়ে ঘটেছিল বলে যা মনে হয় অনেক পরে, হয়তো তার সবটাই – কিংবা অনেকটাই – বিচিত্র সব উপাদান দিয়ে তৈরি করে তোলে আমাদের মন। একজন তাই বলেছিলেন, 888sport sign up bonusটা দলিল হতেও পারে হয়তো, কিন্তু প্রমাণ নয় কখনোই।৫
বোঝা যায়, বি888sport app download for android-সম্ভাবনা এত প্রবল যে, নিজেকেই কার্যত প্রশ্ন করছেন, সত্যিই ছিল কি ওই সন্ধ্যার বুলাসাক্ষাৎ? ‘অন্য কেউ যে এ-প্রশ্ন আমাকে করেছেন তা নয়। অনেক অনেক দিন পরে, আমি নিজেই নিজেকে এই প্রশ্নটা করতে শুরু করেছিলাম। ওই সন্ধ্যার সংলাপগুলি কি সত্যি? আর, সত্যিই কি ও-রকম একটা রেকর্ড বেরিয়েছিল?’৬ এর মানে এমন নিশ্চয়ই নয় যে, সাক্ষাৎ আদৌ হয়েছিল কি না সন্দেহ। কিন্তু সেই সাক্ষাৎ কত বছর আগে হয়েছিল, বা সে-রেকর্ড কবে বেরিয়েছিল, সে-নিয়ে সংশয় যে গোপনও করছেন না শঙ্খ, তা ওঁর বক্তব্যের ঝোঁক থেকে মোটামুটি স্পষ্ট। শঙ্খ তাঁর নিজের 888sport sign up bonus নিয়ে যতই সন্দিহান হন না কেন, শুরুতে যেহেতু বলেছেন ‘সময়টা ছিল বোধ হয় ১৯৫১’, ওই ‘বোধ হয়’কে অভ্রান্ত মেনে, ওই বছরটিকে রাজেশ্বরীর
রেকর্ড-প্রকাশের সাল ধরে নিয়ে আশ্বস্ত হতে চাইবেন অনেকে।
শঙ্খ দেখেছিলেন সে-রেকর্ড পরে আর কখনো? ‘অনেক অনেক দিন পরে’ যখন ওঁর কথায়, ‘রবীন্দ্রনাথের গান, গানের রেকর্ড, এসব নিয়ে যাঁরা বিশেষভাবেই ভাবনাচিন্তা করেন, … শুনে, বেশ অবাক হয়েই বলেছিলেন তাঁরা, ‘রাজেশ^রীর রেকর্ড? এই গানের? মনে পড়ছে না তো’৭, তখন নিজেরই সংশয় জেগেছে ‘সত্যিই কি ও-রকম একটা রেকর্ড বেরিয়েছিল?’ সংশয়ে পড়ে তিনি শরণাপন্ন হয়েছেন সম্ভবত সন্তোষ দে বা নির্মলেন্দু রায়চৌধুরীর রবীন্দ্রগানের রেকর্ড-সংক্রান্ত তথ্যভাণ্ডারের দিকে। যতই ভ্রান্তিজর্জর হোক সে-সব বই, অদ্ভুতভাবে তাঁর মনে হয়েছিল, সেগুলি ‘বেশ নির্ভরযোগ্য তথ্যসমৃদ্ধ’ :
রেকর্ডভুক্ত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের যেসব গান, তার তালিকা আর বিবরণ নিয়ে বইও আছে একাধিক, বেশ নির্ভরযোগ্য তথ্যসমৃদ্ধ সে-সব বই। সেসব বইতেও, রাজেশ্বরীর অন্য সমস্ত রবীন্দ্রসংগীতের তালিকা তো পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু ও-গানটির কোনো হদিস নেই কোথাও।৮
‘বুঝি খেলারই বাঁধন ওই যায়’
জানিয়ে রাখা ভালো, সমেত্মাষকুমার দে-র কবিকণ্ঠ ও কলের গান (১৯৯৩) বইতে ‘বুঝি ওই সুদূরে’র কোনো এন্ট্রি নেই। অর্থাৎ রাজেশ্বরী কেন, অন্য কেউ যে এ-গান পরে রেকর্ড করেছেন, এ-তথ্যও নেই।৯ আবার সদ্যপ্রকাশিত অমল বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেকর্ড 888sport live chatে রবীন্দ্রনাথ (২০২৫) বইতে ‘বুঝি ওই সুদূরে’র এন্ট্রি থাকলেও সেখানে রাজেশ্বরীর রেকর্ডটির কোনো তথ্য নেই। অমলবাবু দীর্ঘকাল এইচএমভি ও হিন্দুস্থান কোম্পানির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন। গ্রন্থ-সূচনায় অমলবাবু নিজেই জানিয়েছেন, বর্তমানে হিন্দুস্থান রেকর্ড কোম্পানির কনটেন্ট টিমের বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা তিনি। তথাপি হিন্দুস্থান থেকেই প্রকাশিত রাজেশ্বরীর এ-রেকর্ড সম্পর্কে তিনি যে অবহিত নন, তা যথেষ্ট দুর্ভাগ্যের ব্যাপার। যাই হোক, রাজেশ্বরীর এ-রেকর্ডের তথ্য যদি থাকত কবিকণ্ঠ ও কলের গান-এ, তাহলে শঙ্খবাবু হয়তো আরো বিভ্রামিত্মর মুখে পড়তেন। তবে এত যে তত্ত্বতালাশ, মনে হয়, এসব না করেও স্বচ্ছন্দে পাওয়া যেত ওর সম্ভাব্য প্রকাশকাল। শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে খোঁজ করে রেকর্ডের হদিস যে মিলেছিল শুধু তাই নয়, সে-রেকর্ডের লেবেল শঙ্খ যে দেখেছিলেন, তা ওঁর কথায় পরিষ্কার। রাজেশ্বরীর রেকর্ড লেবেল যদি একটু পরখ করা যায় খুঁটিয়ে, তাহলে ওর প্রকাশ-সময় আন্দাজ করে নেওয়া মোটেও দুষ্কর নয়। কেন বলছি এ-কথা? রেকর্ডে রয়েছে দুটি স্পষ্ট গ্রন্থি : এক. ‘রচনা : অজ্ঞাত’; দুই. ‘স্বর্গীয় প্রফুল্লচন্দ্র মহলানবিশের সৌজন্যে প্রাপ্ত’। প্রথমত, ‘রচনা : অজ্ঞাত’ যেহেতু লেখা আছে, তাই নিঃসংশয়ে বলা চলে, আগস্ট ১৯৬৪-তে গীতবিতান-ভুক্ত হওয়ার আগে তা প্রকাশিত হয়েছে। এখন প্রশ্ন, কত আগে? দ্বিতীয় ইশারা থেকে মিলবে এর উত্তর। বুলা মহলানবিশের মৃত্যু হয় ১৯৬২-তে। তাহলে বুঝে নিতে অসুবিধা নেই, ১৯৫১-র ধারেকাছে নয়, বরং তার এক দশক পার করে, ১৯৬২ থেকে ১৯৬৪-র আগস্টের ভেতরে নিশ্চিতভাবে বেরিয়েছে এ-রেকর্ড।
এ তো গেল সোজা পথ। তবে ঘুরপথে প্রামাণ্য আরো কিছু আছে। রাজেশ্বরীর এই গান রেকর্ড হওয়ার পেছনে একা বুলা মহলানবিশ নন, রেকর্ডিং নির্দেশক হিসেবে প্রত্যক্ষত জড়িয়ে ছিলেন রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। এর প্রমাণ মিলবে রেকর্ডের ম্যাট্রিক্সে। সে-প্রসঙ্গে একটু পরে আসব। এখানে বলে রাখি, ১৯৪৫ থেকে ১৯৫৪ রাজেশ্বরী শাস্ত্রীয় সংগীত শিখেছেন কলকাতায় গিরিজাশঙ্কর চক্রবর্তীর কাছে এবং দবীর খাঁর শিষ্য যামিনীনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। শিখছেন মূলত ঠুংরি ও টপ্পা। ১৯৫৪ থেকে ১৯৬০ অবধি রাজেশ্বরী তালিম নিচ্ছেন রমেশচন্দ্রের কাছে।১০ ১৯৬০-এ সুধীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর রাজেশ্বরী প্রবাসে থাকতে শুরু করেন। রমেশচন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ তখনো অক্ষুণ্ণ। ১৯৬২-তে স্থাপিত হলো রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে সংগীত বিভাগের ডিন হয়ে গেলেন রাজেশ্বরীর গুরু রমেশচন্দ্র। ওই বছর জুনে আইয়ুব লিখছেন, তিনি শুনেছেন রমেশ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজেশ্বরীকে একটা রিডারশিপের জন্যে আমন্ত্রণ জানান। পাশাপাশি রমেশচন্দ্র চাইছিলেন, রবীন্দ্রভারতী না হোক, স্বদেশে অন্য কোথাও রাজেশ্বরী ফিরে আসুন সম্মানজনক কোনো পদ নিয়ে, সেটা গবেষণামূলক হলেই ভালো।১১ এ থেকেও বোঝা যায়, ১৯৫১ তো নয়-ই, অন্তত ১৯৫৪-র পরের কোনো সময়ে এ-গান রেকর্ড হওয়া স্বাভাবিক। নইলে রমেশচন্দ্রের সক্রিয়তা থাকবে কী করে ওই রেকর্ডের নির্দেশনায়!
এবার সর্বশেষ যুক্তিতে আসি। এটা একেবারেই হিন্দুস্থান কোম্পানির নিজস্ব তথ্য। রেকর্ড ছাপানোর ইতিহাস ধরে ১৯৫১-র তথ্যটাই আগেভাগে দিয়ে রাখি বরং। ১৯৫১-র এপ্রিলে হিন্দুস্থান রেকর্ডের সিরিজ ছুঁলো H-1508 নম্বর, ওই বছর শারদীয়ার রেকর্ড নম্বর H 1518 থেকে H-1527। সেই বছর ডিসেম্বরে হিন্দুস্থানের রেকর্ড সিরিজ পৌঁছাচ্ছে H-1533-এ। তাহলে রাজেশ্বরীর H-2142 তখনো কত সুদূরপরাহত ব্যাপার! পাঁচ বছর পেরিয়ে আসা যাক ১৯৫৬-য়। ওই বছরের ক্যাটালগে রাজেশ্বরী বাসুদেবের তখনো পর্যন্ত প্রকাশিত রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ডের মধ্যে H-920, H-1022, H-1032, H-1097-এর উল্লেখ রয়েছে। এগুলো অবশ্য এক দশকেরও বেশি সময় আগে প্রকাশিত। রাজেশ্বরীর সাক্ষাৎকার-সূত্রে সন্ধ্যা সেন সুরের আগুন-এ লিখেছেন, ১৯৪৩ থেকে ১৯৫৫ – এই বারো বছর রাজেশ^রীর কোনো রেকর্ড বেরোয়নি হিন্দুস্থান থেকে১২। H-1621 বেরোবে ১৯৫৬-তেই, যার একপিঠে থাকবে রাজেশ^রীর বিখ্যাত গান ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি’। পরের বছর রমেশচন্দ্রের সঙ্গে ডুয়েটে গাইবেন ‘আমার মাথা নত করে’ (H-1644); উল্টোপিঠে স্বকণ্ঠে ‘পিপাসা হায় নাহি মিটিল’। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬০/৬১-র মধ্যে হিন্দুস্থান থেকে বেরচ্ছে রাজেশ্বরীর একগুচ্ছ রেকর্ড : H-1650, H-1732, H-1811, H-1873, H-1952, H-1963।
১৯৬১-৬২ সালে হিন্দুস্থানের ৭৮ ঘূর্ণন রেকর্ড ঢুকল ২০০০ সিরিজে। রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষের পরের বছরে (১৯৬২) বের হলো সুবিনয় রায়ের রেকর্ড (H-2054)। একপিঠে ‘মধুর মধুর ধ্বনি বাজে’, অপর পিঠে ‘নব আনন্দে জাগো’। এখানে উল্লেখ করা দরকার, ষোলো বছর আগে কলম্বিয়া থেকে প্রথম রেকর্ড বের হলেও সুবিনয় রায়কে শ্রোতৃমণ্ডলীর সামনে পুনরায় নিয়ে আসার কৃতিত্ব ছিল চণ্ডীচরণ বাবু তথা হিন্দুস্থান রেকর্ড কোম্পানির। ওই বছরেই (১৯৬২) বেরোচ্ছে রাজেশ্বরীর H-2074, যেখানে রইল ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’ আর উল্টোপিঠে ‘হে বিরহী হায়’। ১৯৬৩-তে, শত-দ্বিতম রবীন্দ্রজয়মত্মীতে, হিন্দুস্থান রেকর্ডের নিবেদনে ছিল (দ্র. চিত্র ২) সদ্য-আগত নতুন প্রযুক্তির ৪৫ ঘূর্ণনে রূপান্তরিত দুটি ই.পি. রেকর্ডের (LH-16 এবং LH-17) পাশাপাশি প্রচলিত পুরনো প্রযুক্তির সাতটি ৭৮ ঘূর্ণন রেকর্ড। রাজেশ্বরীর H-2142 তো রইলই, এর ঠিক আগে রইল দেবব্রত বিশ্বাসের H-2141 : যেখানে ছিল ‘সকরুণ বেণু বাজায়ে কে যায়’, উল্টোপিঠে ‘সে যে বাহির হল আমি জানি’। রাজেশ্বরীর রেকর্ডের পরের নম্বর H-2143-এ ছিল সুবিনয় রায়ের গাওয়া ‘তোমায় আমায় মিলন হবে বলে’, অপর দিকে ওঁর সিগনেচার সং ‘বহে নিরন্তর’। সেইসঙ্গে একই মাসে বেরোল অরবিন্দ বিশ্বাস (H-2145) ও রিনি চৌধুরীর (H-2146) দুটো ৭৮ ঘূর্ণন রবীন্দ্রসংগীত রেকর্ড। সবকটি রেকর্ডেরই প্রকাশকাল এপ্রিল-মে ১৯৬৩। তথ্যের সমর্থনে রইল যুগান্তর পত্রিকার ৯ই মে ১৯৬৩-র সাত নম্বর পৃষ্ঠায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের ছবি (দ্র. চিত্র ২)।
‘দ্বার খুলিল …’
এ তো হলো রেকর্ডের প্রকাশকাল। কিন্তু ‘বুঝি ওই সুদূরে’ রাজেশ্বরী রেকর্ড করেছিলেন কবে? তা জানতে অবশ্যই দেখতে হবে এর ম্যাট্রিক্স। আর তখনই বুঝব, ম্যাট্রিক্স কী আশ্চর্য সব ইতিহাস ধরে রাখে! লক্ষ করার, H-2142 রেকর্ডের যে-দুটো গান, দুটোর ম্যাট্রিক্স কিন্তু কাছাকাছি নয় মোটেই, যোজন দূরবর্তী। ‘বুঝি ওই সুদূরে’র ম্যাট্রিক্স HSB-5116 (দ্র. চিত্র ১১)। অথচ বিপরীতে ‘ধীরে ধীরে ধীরে বও’-এর ম্যাট্রিক্স অনেক পরের : HSB-6447। ম্যাট্রিক্সের সাক্ষ্য বলবে, H-1811 রেকর্ডধৃত ‘আজি কমলমুকুলদল খুলিল’র সঙ্গে সম্ভবত একই দিনে রেকর্ড হয়েছিল ‘বুঝি ওই সুদূরে’। কারণ ‘আজি কমলমুকুলদল’র ম্যাট্রিক্সের অব্যবহিত পরের 888sport free bet : HSB-5117 (দ্র. চিত্র ৩)। উল্লেখ্য, এই H-1811 রেকর্ডটির প্রকাশকাল ১৯৫৯। আবার তারও আগে H-1732 রেকর্ড নম্বরে রাজেশ^রীর গাওয়া ‘মম দুঃখের সাধন’ গানের ম্যাট্রিক্সও একেবারে গায়ে-গায়ে HSB-5115 (দ্র. চিত্র ৪)।
এ-রেকর্ডটি বেরিয়েছে আরো এক বছর আগে, ১৯৫৮-র গোড়ার দিকে। পরপর ম্যাট্রিক্সই বলে দিচ্ছে, রাজেশ্বরী এ-তিনটি গান রেকর্ড করেছিলেন একই সঙ্গে, সম্ভবত ১৯৫৭ সালে। আরো উল্লেখ্য, ‘মম দুঃখের সাধন’ এবং ‘আজি কমলমুকুলদল’র রেকর্ড-লেবেলে উল্লেখ রয়েছে, গান দুটির স্টুডিও-নির্দেশনায় ছিলেন রাজেশ্বরীর আচার্য রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। এ থেকে বোঝা যায়, রেকর্ড লেবেলে অনুক্ত থাকলেও ‘বুঝি ওই সুদূরে’র
নেপথ্য-নির্দেশনার দায়িত্বে ওইদিন স্টুডিওতে রমেশবাবু উপস্থিত ছিলেন।
১৯৫৭-র কোন মাসে এই রেকর্ডিং হয়ে থাকতে পারে? সন্ধ্যা সেন জানিয়েছেন, ১৯৫৭ সালে সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ইউরোপের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে সস্ত্রীক দেশ ছাড়লেন। তার আগে হিন্দুস্থান কোম্পানির নীরদ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজেশ্বরীকে দিয়ে বেশ কটি গান রেকর্ড করিয়ে রেখেছিলেন। ওর মধ্যেই ছিল ‘বুঝি ওই সুদূরে’১৩। সন্ধ্যা সেনের প্রদত্ত তথ্যে একটু ভুল আছে। ১৯৫৭ নয়, রাজেশ্বরীকে সঙ্গে নিয়ে সুধীন্দ্রনাথের তৃতীয়বার ইউরোপ সফর ছিল ১৯৫৫-৫৬-তে। ১৫ই মে ১৯৫৫ থেকে ৫ই ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬। যদি রাজেশ্বরী এই সফরের আগে গান রেকর্ড করে থাকেন, তাহলে ধরতে হয় রেকর্ড গ্রহণের সময় ১৯৫৫-র প্রথমার্ধ। কিন্তু ম্যাট্রিক্স বলছে, অত আগের রেকর্ড এটা হতে পারে না। সন্ধ্যা সেন সম্ভবত ১৯৫৭-য় রাজেশ্বরী-সুধীন্দ্রনাথের মার্কিন মুলুকে পাড়ি দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে আগের ইউরোপযাত্রাকে গুলিয়ে ফেলেছেন।
সুধীন্দ্র-জীবনীকার অমিয় দেব জানিয়েছেন, ১৯৫৭-র ৪ঠা সেপ্টেম্বর শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর আমন্ত্রণে রাজেশ^রীকে সঙ্গে নিয়ে সুধীন্দ্রনাথ জাহাজে চড়েন। আকাশপথে না গিয়ে জলপথে যাত্রার কারণ, দীর্ঘ বিমানযাত্রায় রাজেশ্বরীর অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা। শিকাগোতে দু-বছর পড়িয়ে সুধীন্দ্রনাথ দেশে ফেরেন ৩০-শে সেপ্টেম্বর ১৯৫৯১৪। খুব সম্ভবত, ১৯৫৭-র এই আমেরিকাযাত্রার আগে নীরদবাবু রাজেশ্বরীর কিছু গান রেকর্ড করে রেখেছিলেন। অর্থাৎ ‘বুঝি ওই সুদূরে’সহ বাকি গানগুলো (‘মম দুঃখের সাধন’, ‘আজি কমলমুকুলদল’ প্রভৃতি) ১৯৫৭-র জুলাই-আগস্টের দিকে রেকর্ড হয়েছিল।
প্রকাশিত রেকর্ডের সাক্ষ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, রাজেশ্বরীর গাওয়া ‘মম দুঃখের সাধন’ ও ‘আজি কমলমুকুলদল’ ১৯৫৮-৫৯-এ আলাদা রেকর্ডে বাজারে এলেও ‘বুঝি ওই সুদূরে’ মুক্তি পেল অনেক পরের রেকর্ড নম্বর নিয়ে, ১৯৬৩ সালে। এই বিলম্বের কারণ বুঝে নিতে অসুবিধে হয় না – এ-গান রবীন্দ্রসংগীত বলে গণ্য হবে কি না, তা নিয়ে বিতর্ক ও সংশয়। বুলা মহলানবিশ মিউজিক বোর্ডকে হয়তো-বা গানটির ইতিহাস জানিয়েছিলেন। কিন্তু
সে-ইতিহাস ‘ব্যক্তিগত’ বলে তখনো গ্রাহ্য হয়নি। কবির জন্মশতবর্ষে সাহানা দেবীর 888sport sign up bonusকথা১৫ পড়ে বুলার
পত্র-উদ্যোগ ওই ‘ইতিহাস’কে আরেকটু ‘নৈর্ব্যক্তিক’ করল বটে, কিন্তু তখনো পুরোপুরি কাটেনি সংশয়ের মেঘ। ওই গান গীতবিতান-এ জায়গা পেতে লাগবে আরো তিন বছর। অন্তর্ভুক্তির কৈফিয়তে গীতবিতান-এর সম্পাদকীয়তে তখন থাকল প্রফুল্লচন্দ্র এবং সাহানা দেবী – উভয়ের উল্লেখ। অনুক্ত রয়ে গেল রাজেশ্বরীর রেকর্ডের কথা। অথচ এ-গানের প্রথম রেকর্ড তাঁরই। বলা বাহুল্য, রাজেশ্বরীর গান যখন রেকর্ড হয়, তখন বুলা মহলানবিশ বেঁচে; বহু বিলম্ব সয়ে, বিশ্বভারতীর ছাড়পত্র মিলছে না দেখে অগত্যা ‘রচনা : অজ্ঞাত’ লিখে রেকর্ড বাজারে এলো যখন, তখন বুলা আর বেঁচে নেই। এই হলো রাজেশ্বরীর রেকর্ডের নেপথ্য-ইতিহাস।
তথ্যসূত্র
১. সুধীরচন্দ্র কর, কবি-কথা, সুপ্রকাশন, ১৯৫১, পৃ ১৪১-৪২।
২. সাহানা দেবী, 888sport sign up bonusর খেয়া, প্রাইমা পাবলিকেশন, নভেম্বর ১৯৭৮, পৃ ১৩৫-১৩৬।
৩. শঙ্খ ঘোষ, ‘হারিয়ে-যাওয়া গান’, দামিনীর গান, দ্র. শঙ্খ ঘোষের গদ্যসংগ্রহ, সপ্তম খণ্ড, দে’জ পাবলিশিং, এপ্রিল ২০০৩, পৃ ২৪১।
৪. তদেব, পৃ ২৪৪।
৫. তদেব, পৃ ২৪৪।
৬. তদেব, পৃ ২৪৫।
৭. তদেব, পৃ ২৪৬।
৮. তদেব, পৃ ২৪৬।
৯. অমল বন্দ্যোপাধ্যায়, রেকর্ড 888sport live chatে রবীন্দ্রনাথ, লালমাটি প্রকাশন, ২০২৫, পৃ ২৬১।
১০. সুব্রত সিনহা, ‘শতবর্ষে রাজেশ্বরী দত্ত’, আরেক রকম, ষষ্ঠ বর্ষ, নবম 888sport free bet, ১৬-৩১ বৈশাখ ১৪২৫, পৃ ২৯।
১১. তথ্যগুলি উলিস্নখিত হয়েছে সুব্রত সিনহার 888sport liveে। দ্র. ‘শতবর্ষে রাজেশ্বরী দত্ত’, পূর্বোক্ত, পৃ ২৯।
১২. সন্ধ্যা সেন, সুরের আগুন (অখ-), দে’জ পাবলিশিং, সেপ্টেম্বর ২০১৬, পৃ ২৮৩।
১৩. তদেব, পৃ ২৮৩।
১৪. অমিয় দেব, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ডিসেম্বর ২০০১, পৃ ১৬৭।
১৫. দ্র. সাহানা দেবী, ‘কবির সংস্পর্শে’, পুলিনবিহারী
সেন-সম্পাদিত, রবীন্দ্রায়ণ দ্বিতীয় খণ্ড, বাক888sport live football, ১৩৬৮, পৃ ২২৭-২৫০।
এছাড়া দেখেছি হিন্দুস্থান রেকর্ড, ইনরেকো এবং হিন্দুস্থান মিউজিক্যাল প্রোডাক্টস লিমিটেড-প্রকাশিত বিভিন্ন বছরের রেকর্ড ক্যাটালগ ও তৎসহ দ্র. যুগান্তর পত্রিকা, ৯ মে ১৯৬৩।
ব্যক্তিগত ঋণ ও কৃতজ্ঞতা
১. পার্থসারথি শিকদার, স্বাগত গুপ্ত ও শ্রীকানাইলাল ২. Gramophonetics (Restoring Music) YouTube Channel.


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.