888sport cricket BPL rate
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। মুক্ত স্বাধীন দেশের মাটিতে পা রেখে অন্যরকম শিহরণ বোধ করলাম। দেশকে শত্রুমুক্ত করতে, বিজয় ছিনিয়ে আনতে কত মানুষকে জীবন দিতে হলো, কত মানুষকে ভোগ করতে হলো অবর্ণনীয় দুঃখকষ্ট, কত 888sport promo codeকে হারাতে হলো সম্ভ্রম। এসব ভেবে মনটা একদিকে যেমন বিষণ্ন হলো, অন্যদিকে তেমনি দেশে ফেরার আনন্দে ভেতরে অন্যরকম অনুভূতি হলো। মনে মনে বললাম, ‘ও আমার দেশের মাটি, তোমার ’পরে ঠেকাই মাথা।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোথায় রাত কাটাবো সেটা ভাবতেই অজয় রায়ের মনে পড়লো অধ্যক্ষ মিন্নত আলীর কথা। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহিলা কলেজের প্রিন্সিপাল। তাঁর কাছে গেলে আমাদের রাত কাটানোর দুশ্চিন্তা দূর হবে ভেবে আমরা তাঁর বাসায় যাই। আমাদের দেখে তিনি খুশি হলেন। তখন সময়টাই ছিল সহমর্মিতার। মিন্নত আলীর সঙ্গে আমার আগে কখনো দেখা হয়নি। তবে তাঁর লেখা আমার প্রথম প্রেম বইটি আমার পড়া ছিল। নায়ক স্বপ্নে দেখছে, নায়িকা তার পাশে এসেছে আর ঘুম থেকে জেগে দেখে তার পাশে শুয়ে আছে একটি বিড়াল – বেশ মজা পেয়েছিলাম পড়ে। সেটা বলতেই মিন্নত স্যার মুখ টিপে একটু হাসলেন। অজয় রায় সম্পর্কে তিনি জানতেন। তাই হঠাৎ অতিথি হলেও সমাদর কম হয়নি। মেয়েদের হোস্টেলে আমাদের রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা হলো।
পরদিন সকালেই রায়পুরায় আমাদের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হই। রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ। ব্রিজ-কালভার্ট সব ভেঙে ফেলেছে পলায়নপর পাকিস্তানি বাহিনী। আমরা কিছু পথ নৌকায়, কিছু পথ রিকশায় করে রায়পুরায় পৌঁছলাম। রায়পুরায় আমাদের বাড়িঘরের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। পাকিস্তানি বাহিনী রায়পুরায় তেমন অভিযান চালায়নি। মায়ের কাছে দুদিন থেকে আমরা ময়মনসিংহ যেতে মনস্থির করি। মা অবশ্য আমাকে আরো কিছুদিন তাঁর কাছে রেখে দিতে চাইছিলেন। কারণ আমার শরীর বেশি ভালো ছিল না; কিন্তু অজয় রায় আমাকে তাঁর সঙ্গেই রাখতে আগ্রহী হওয়ায় আমরা রায়পুরার পাঠ চুকিয়ে ময়মনসিংহের পথ ধরি। যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় কিছুটা রেলে, কিছুটা নৌকায় চড়ে আমরা ময়মনসিংহে পৌঁছাই। কোনো থাকার জায়গা না থাকায় আমাদের প্রথমে গিয়ে দাদুর বাড়িতে উঠতে হয়।
দাদুর বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধকালে ব্যাপক লুটপাট হয়েছিল। যুদ্ধশেষে ফিরে এসে বাড়িতে কিছুই পাওয়া যায়নি। বাড়িটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে ছিল। তবে আমার বড়ভাই বিজন আমাদের আগে ময়মনসিংহ ফিরে বাড়িটি কিছুটা বাসোপযোগী করে তুলেছিল। দাদুর একটি দামি পালঙ্ক ছিল। সেটাও পরিচিত একজনের বাড়ি থেকেই উদ্ধার করা হয়েছিল; কিন্তু বিছানাপত্র না থাকায় পালঙ্কে খড় বিছিয়ে শোয়ার ব্যবস্থা করা হলো। বিদ্যুৎ ছিল না। হারিকেন জ্বালিয়ে রাতের অন্ধকার দূর করা হতো।
আমাদের হাতে তেমন টাকা-পয়সাও ছিল না। রিলিফের চাল-ডাল ছিল বেঁচে থাকার ভরসা। কোথাও রিলিফ বিতরণের খবর শুনলেই বিজন ছুটে গিয়ে তা সংগ্রহ করার চেষ্টা করতো।
এর মধ্যে একদিন রাজ্জাক সাহেব আমার দাদুর বাসায় এসে তাঁর মায়ের কাছে রেখে যাওয়া ৪০ ভরি সোনার গহনা ফেরত দিয়ে যান। গহনার পোঁটলা দাদুর হাতে তুলে দিয়ে রাজ্জাকভাই রসিকতা করে দাদুকে বলেন, গহনা যা দিয়েছিলেন, তাই দিলাম। তবে আপনার নাতনিকে যেভাবে দিয়েছিলেন, সেভাবে ফিরিয়ে দিতে পারলাম না। নাতনি আর একা নেই। তার ভেতরে বেড়ে উঠছে আরেক মানুষ।
রাজ্জাকভাইয়ের এই কথায় দাদুসহ উপস্থিত সবাই হো-হো করে হেসে উঠেছিল।
অজয় রায় বেশিদিন দাদুর বাড়িতে তাঁদের গলগ্রহ হয়ে থাকতে রাজি না হওয়ায় আমরা আলাদা বাসা ভাড়া নিই। রাজিয়া খালাম্মার একটি বাড়ি ছিল। অধ্যাপক যতীন সরকার সে-বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। স্বাধীনতার পর তিনি আর ওই বাড়িতে ফিরে না আসায় আমরাই ভাড়াটে হিসেবে উঠি। কিন্তু তখন অজয় রায়ের কোনো
আয়-উপার্জন ছিল না। ফলে আমাদের খুব অর্থকষ্টের মধ্য দিয়ে দিনযাপন করতে হয়। আমার আত্মীয়দের কাছ থেকে অর্থসাহায্য নেওয়ার ব্যাপারেও অজয় রায়ের আপত্তি ছিল। জিতুভাই নামে এক বড় ব্যবসায়ী অজয় রায়ের খুব ভক্ত ছিলেন। জিতুভাইয়ের মামা আলতাফ আলীও বামপন্থী রাজনীতির এক পোড়খাওয়া নেতা। অজয় রায়ের সঙ্গে আলতাফ আলীর ছিল প্রীতিময় সম্পর্ক। হয়তো এ-কারণেই জিতুভাইয়ের পছন্দের তালিকার শীর্ষে ছিলেন অজয় রায়।
এমনিতে টাকা দিতে চাইলে অজয় রায় তা গ্রহণে রাজি হবেন না – এটা বুঝেই জিতুভাই আমাদের সাহায্য করার একটি বিকল্প উপায় বের করেন। তিনি তাঁর তিন ছেলেমেয়েকে পড়ানোর দায়িত্ব দেন অজয় রায়ের ওপর। ছেলেমেয়ে পড়ানোর জন্য জিতুভাই অজয় রায়কে মাসে দুশো টাকা দিতেন। এই দুশো টাকা হয় অজয় রায়ের মাসিক আয়। বাড়ি ভাড়া ৫০ টাকা দিয়ে বাকি ১৫০ টাকায় চলতো সংসার। আমাদের সঙ্গে আমার ভাই বিজন এবং ছোট বোন নীলাও ছিল। বিজন রিলিফের কিছু জিনিসপত্র সংগ্রহ করে আনতো। মহাখালী স্কুলের সামনে কম দামের আসবাবপত্র পাওয়া যেতো। সেখান থেকেই দুটি চৌকি, একটি আলমারি কিনে সংসার শুরু করেছিলাম। আমাদের নতুন সংসারজীবনে বিত্ত-বৈভবের অভাব থাকলেও আমাদের কোনো হতাশা বা মন খারাপ ছিল না। আমরা আশা এবং সম্ভাবনা নিয়েই শুরু করেছিলাম। নতুন স্বাধীন দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ঘোষিত হওয়ায় এবং মুক্ত পরিবেশে দেশের জন্য কাজ করা যাবে ভেবে অজয় রায়ও খুশি এবং উৎসাহী ছিলেন। জিতুভাইয়ের ছেলেমেয়েদের পড়ানোর সময় ছাড়া বাকি সময় তিনি ব্যস্ত থাকতেন পার্টির কাজে।
পাটগুদামে কমিউনিস্ট পার্টির অফিস খোলা হয়েছিল। প্রবীণ ও নবীন নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে পার্টি অফিস মুখর থাকতো। এমন বাধাহীন পরিবেশে বহুদিন কমিউনিস্ট পার্টি কাজ করতে পারেনি। তাই 888sport appsের স্বাধীনতা কমিউনিস্টদের কাছে ছিল এক বড় অর্জন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ‘মানুষের মুখে হাসি ফোটানো’র রাজনীতি করায় তাঁকে সমর্থনের নীতি কমিউনিস্ট পার্টি গ্রহণ করেছিল।
আমার অনেক পছন্দের মানুষ 888sport apk download apk latest versionভাজন মন্মথদা তখন কমিউনিস্ট পার্টি অফিসেই থাকতেন। একদিন অজয় রায় এসে আমাকে বললেন, জয়ন্তী, মন্মথদার কয়েকদিন ধরে জ্বর। জ্বরটা কিছুতেই কমছে না। তাঁকে দিন কয়েক আমাদের বাড়িতে এনে রাখলে কি তোমার খুব অসুবিধা হবে?
মন্মথদার মতো মানুষকে বাসায় ঠাঁই দেওয়া তো আমার জন্য সৌভাগ্যের। জ্বরে কাতর মন্মথদাকে একটু সেবা করার সুযোগ পাবো ভেবে আমি সানন্দে তাঁকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসতে বলি। আমার এবং আমার বোন নীলার যত্নআত্তিতে দিন সাতেকের মধ্যে মন্মথদা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তার কয়েকদিন পর তিনি তাঁর নিজের এলাকা জামালপুরে চলে যান পার্টি সংগঠনের দায়িত্ব নিয়ে। আমার মনে আছে, জ্বরে বেহুঁশ মন্মথদার মাথা একদিন জল দিয়ে ধুয়ে দিয়ে কপালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। একসময় কাতরকণ্ঠে মন্মথদা বললেন, বহুদিন পর যেন আমি আমার মা-বোনের পরশ পেলাম। তাঁর এই কথায় আমার চোখে জল এসে গিয়েছিল। মন্মথদার মা-বোন সবই ছিল; কিন্তু তাঁরা কলকাতায় চলে গিয়েছিলেন। দেশকে ভালোবেসে দেশের জন্য কাজ করার টানে দেশত্যাগী না হয়ে আত্মীয়স্বজনহীন একলা জীবন বেছে নিয়েছিলেন মন্মথদা। এসব মানুষের আত্মত্যাগের কথা কয়জন মনে রেখেছে?
১৯৭২ সালের ১৭ মে আমি প্রথম মা হই। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডা. জোবায়েদ হোসেনের তত্ত্বাবধানে আমাদের প্রথম কন্যাসন্তান পৃথিবীর আলো দেখে। আমার মনে আছে, আজকের বিখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রওশন আরা তখন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী। ছাত্র ইউনিয়ন করার সুবাদে রওশন ছিল আমাদের পরিচিত এবং ঘনিষ্ঠ। আমার মেয়েকে রওশনই প্রথম কোলে তুলে নিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল। হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স সবাই কত আন্তরিকতার সঙ্গে নবজাতক এবং নতুন মায়ের দেখাশোনা করেছেন। তখন সবারই ছিল সেবার মনোভাব। মানুষ নিয়ে চিকিৎসাকর্মীদের মধ্যে ব্যবসায়ী মনোবৃত্তি তখন ছিল না। সবমিলিয়ে ১৫০ টাকা ব্যয় করে আমি আমার মেয়েকে নিয়ে উৎফুল্লচিত্তে বাসায় ফিরেছিলাম।
ডা. রওশনের কাছে আমার পরিবারের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আমার তিন সন্তানের জন্মই তাঁর হাতে, তাঁর সেবায়। এমন হৃদয়বতী চিকিৎসক আমি কম দেখেছি। তাঁর বর বিচারপতি আব্দুর রশীদ একসময় কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অজয় রায় ছিলেন রশীদ-রওশন দম্পতির কাছে বাতিঘরের মতো। জিয়া-এরশাদের শাসনকালে তাঁদের বাসায় অজয় রায় কিছু সময় আত্মগোপনেও থেকেছেন।
বাইশ
সদ্য স্বাধীন দেশে রাজনীতি নিয়ে অজয় রায়ের ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। ময়মনসিংহে তখন বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টি এবং বিভিন্ন গণসংগঠন কাজকর্ম শুরু করে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বামধারায় সম্পৃক্ত করতে পরিকল্পিত উদ্যোগ চলতে থাকে। শ্রমিকদের সংগঠিত করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের কেউ কেউ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হন। রাজিয়া খালাম্মার নেতৃত্বে মহিলা পরিষদ সংগঠিত হয়। সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী, শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘরের তৎপরতা বেড়ে যায়। নূর মোহাম্মদ তালুকদার শিক্ষক সংগঠনে আত্মনিয়োগ করেন। অজয় রায়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে সব কাজ চলতে থাকে।
রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় অজয় রায়ের পক্ষে আর ছাত্র পড়ানোর সময় হয় না। ফলে আমাদের আর্থিক সংকট চরম আকার ধারণ করে। নবজাত কন্যার জন্য প্রয়োজনীয় শিশুখাদ্য এবং সামান্য জামাকাপড় কেনাও দুষ্কর হয়ে পড়ে। কীভাবে আমাদের সংসার চলবে – সেটা ভেবে আমরা কিছুটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম।
অজয় রায় একদিন আমাকে বললেন, আমাদের একজনকে চাকরি আর একজনকে রাজনীতি করতে হবে। একই সঙ্গে দুজন রাজনীতি করতে পারবো না। তাহলে সংসার চলবে না। আমি বললাম, তুমি রাজনীতির মানুষ। রাজনীতির জন্য আপনজন ছেড়ে জেলজুলুমের জীবন বেছে নিয়েছো। এখন স্বাধীন দেশে তুমি রাজনীতি ছাড়বে কেন? রাজনীতি করার মতো জ্ঞান-গরিমা আমার নেই। আমি বরং একটি চাকরি খুঁজতে থাকি।
বেলা রায় নামে আমার পরিচিত একজন স্কুলশিক্ষক ছিলেন। তাঁর কাছে অনেক মেয়ে পড়তে আসতো। আমি একদিন বেলাদিকে বললাম, আমার তো সংসার চালানোর জন্য কিছু আয়-রোজগার করা প্রয়োজন। মেয়েদের পড়ানোর কাজ আমি করতে পারি কি না।
বেলাদি বললেন, কেন নয়। আমি ছাত্রী জোগাড় করে দিচ্ছি।
ব্যস, বেলাদির সহযোগিতায় আমি ব্যাচে ছাত্রী পড়ানো আরম্ভ করে সংসার খরচ চালানোর জন্য কিছু উপার্জন শুরু করলাম। কষ্টেই আমাদের তখন দিন কেটেছে। তবে তার মধ্যেই আনন্দে ছিলাম মানুষের ভালোবাসায়। আমরা যে-পাড়ায় থাকতাম, সে-পাড়াতে ছিল রাজনীতিসচেতন মানুষের বসবাস। অজয় রায়কে সবাই সম্মান-সমীহ করতো।
হরিকিশোর রায় রোড ধরে আমাদের বাসায় যেতে হতো। হরিকিশোর রায় ছিলেন জগদ্বিখ্যাত live chat 888sport পরিচালক ও লেখক সত্যজিৎ রায়ের প্রপিতামহ। সত্যজিৎ রায়ের বাবা সুকুমার রায়। সুকুমার রায়ের বাবা উপেন্দ্রকিশোর রায়। তাঁরা সবাই ছিলেন শিক্ষিত এবং সৃজনশীল মানুষ। সবাই 888sport live footballিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাঁদের নাম জানে না এমন শিক্ষিত বাঙালি আছে বলে মনে হয় না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবার ছাড়া বাঙালির বিখ্যাত পরিবার হলো এই রায় পরিবার।
হরিকিশোর রায়ের আদি নিবাস ছিল কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসুয়া গ্রামে। তাঁরা ছিলেন জমিদার। ময়মনসিংহ শহরে হরিকিশোর রায়ের একটি সুন্দর বাড়ি ছিল। বাড়িটির নাম ছিল ‘পুণ্যলক্ষ্মী ভবন’। আমরা বাড়িটি দেখেছি। তবে তখন সেটা শিক্ষা অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখন অবশ্য ব্রিটিশ আমলের সেই একতলা সুন্দর বাড়িটি আর নেই। সেখানে বহুতল ভবন উঠেছে। হরিকিশোর রায়ের বাড়িটি ময়মনসিংহ শহরে অতি বিখ্যাত ছিল। কালের প্রবাহে কত কিছু বদলে যায়। ওই বাড়ির কথা মনে হলে আমি যেন কানে শুনি : ‘কালস্রোতে ভেসে যায় জীবন যৌবন ধন মান’ – কবিগুরুর সেই অমোঘ বাণী। অন্তরে অনুভব করি গভীর বেদনা। ‘কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল’ হয়ে থাকে ‘একবিন্দু নয়নের জল’।
ওই বাড়ির দুই বাড়ি পেছনেই আমরা থাকতাম। হরিকিশোর রায়ের বাড়ির পেছনে বললেই সবাই চিনতো। এটা নিয়েও আমরা গর্ব অনুভব করতাম। আমাদের বাসার কাছাকাছি একটি মাঠ ছিল। এই মাঠকে ঘিরেও আমার আছে কত মজার 888sport sign up bonus! কত সন্ধ্যায় আমরা এই মাঠে আড্ডা দিয়েছি। হইচই করে সময় কাটিয়েছি। জ্যোৎস্না রাতে মেতে উঠেছি গানে গানে : ‘আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে, বসন্তের এই মাতাল সমীরণে’সহ আরো কত গান যে আমরা সুরে-বেসুরে গাইতাম, মজা করতাম।
মাঠসংলগ্ন খাসজমিতে শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষের বাস ছিল। সেখানে একটি নেপালি পরিবার ছিল। সম্ভবত পাটের গুদামে শ্রমিকের কাজ করতো তারা। ওই পরিবারের সদস্যদের একজন আমাদের বিধুর মা। বিধুর মা গরু পালন করতেন। দুধ বিক্রি করতেন। ঘুঁটে (গোবর দিয়ে তৈরি জ্বালানি) বানিয়ে বাড়ি বাড়ি বেচতেন। আমাদের বাড়িতেও তাঁর আসা-যাওয়া ছিল। আমাকে বলতেন, মেয়েকে রোজ দুধ খাওয়াবি। আধা সের দুধ প্রতিদিন দিয়ে যেতেন। বলতেন, পয়সা নিয়ে ভাববি না। যখন পয়সা হবে, তখন দিবি। এই বেটিয়ার বাবা আমাদের ঘরে কতদিন থেকেছে। আমি বুঝেছি যে, আত্মগোপন অবস্থায় বিধুর মায়ের ঘরও ছিল অজয় রায়ের এক নিরাপদ আশ্রয়।
আমি আমার প্রথম মেয়ের নাম রেখেছিলাম ‘পর্ণা’ আর অজয় রায় রেখেছেন ‘অনিন্দিতা’। বিধুর মা আমাদের বাসায় এলে পর্ণাকে কোলে নিয়ে আদর করতেন। শরীরে সরিষার তেল মালিশ করে দিতেন।
এরকম অনেকের আদর-ভালোবাসা পেয়েই পর্ণা বড় হয়ে উঠেছে। ময়মনসিংহে পর্ণার সঙ্গে বেশ ভাব ছিল ওর ‘দুদাল মামা’র। দুদাল মানে দুলাল। ছাত্র ইউনিয়ন নেতা নজরুলের ছোটভাই। দুলাল লেখাপড়া বেশিদূর করেনি। জমিজমা দেখাশোনা করতো। সময় পেলেই আমাদের বাড়িতে এসে পর্ণাকে নিয়ে খেলতে লেগে যেতো। ‘দুদাল মামা’ এলেই দৌড়ে গিয়ে তার কোলে চড়তো পর্ণা। পর্ণাকে বাড়ির বাইরেও নিয়ে যেতো দুলাল। পর্ণার কাছে দুলাল আপন মামার মতোই। এখন পর্ণা বিদেশে থাকলেও দুলালের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। দেশে ফিরলে ময়মনসিংহ গিয়ে মামার সঙ্গে তার দেখা করা চাই-ই চাই।
১৯৭২ সালে দিন পনেরোর জন্য ময়মনসিংহে আমাদের বাসায় ছিলেন কলকাতার বিখ্যাত কবি-সম্পাদক তরুণ সান্যাল। তিনি সিপিআই করতেন। একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তিনি অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছেন। স্কটিশ চার্চ কলেজের অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি ছিলেন পরিচয় পত্রিকার সম্পাদক। তরুণ সান্যালের সঙ্গে অজয় রায়ের অতি সুসম্পর্ক ছিল। আমাদের বাসায় থাকার সময় আমাদের সংসার যে অভাব-অনটনের মধ্যে চলছে সেটা তাঁর নজর এড়ায়নি। তিনি একদিন আমার মেয়েকে কোলে করে বাইরে নিয়ে গিয়ে ওর জন্য নতুন জামাকাপড় কিনে দিয়েছেন। আরো কিছু উপহারসামগ্রীও কিনে দিয়েছিলেন। আমাদের ঘরে তখন কোনো ডাইনিং টেবিল ছিল না। মাটিতে কিছু বিছিয়ে অতিথিদের খাবার দিতাম। কিন্তু এতে আমাদের কোনো সংকোচ ছিল না।
বাসায় রাজনৈতিক নেতাদের আসা-যাওয়া ছিল বেশি। কমিউনিস্ট পার্টির নেতারাই আসতেন, মিটিং করতেন। যতীন সরকার, খগেশদা, লালভাই, আলোকময় নাহাসহ অনেকেই আসতেন; কিন্তু বেশিরভাগ সময় কারো জন্য কোনো আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা সম্ভব হতো না।
ওই সময় আমরা ময়মনসিংহে আমাদের একজন বড় সুহৃদ হিসেবে পেয়েছিলাম জুট পারচেজ অফিসার নজরুলভাইকে। নজরুলভাই ছিলেন বর্তমানে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানের ছোটভাই। নজরুল ইসলাম কোনো একসময় অজয় রায়ের সঙ্গে কারাবন্দি ছিলেন। নজরুল ইসলাম যে কতভাবে আমাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন, তা বলে শেষ করা যাবে না। আমাদের সংসার যে টানাটানির মধ্যে চলে, সেটা জেনেই নজরুলভাই মাঝে মাঝেই আমাদের বাজার করে দিতেন। মেয়ের জন্য কিছু না কিছু কিনে দিতেন। নজরুলভাইয়ের স্ত্রীও খুব ভালো মানুষ ছিলেন।
শামসুভাই নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং কৃষক সমিতির কাজে সক্রিয় একজনের কথাও আমার বেশ মনে পড়ে। তিনিও খুব হাসিখুশি ও মজার মানুষ ছিলেন। আমাদের মন ভালো রাখার জন্য তাঁর চেষ্টার শেষ ছিল না। তিনি দু-একবার ‘মুনলাইট পিকনিকে’র আয়োজন করেছিলেন। একেবারে ছোট থাকতে গ্রামের চড়ুইভাতি, শহরে এসে বনভোজন আর তারপর এই মুনলাইট পিকনিকের ব্যবস্থায় আমরা খুশি ছিলাম। সামর্থ্য অনুযায়ী যার যার বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে এসে এক জায়গায় সমবেত হয়ে বিনোদন করাই ছিল মুনলাইট পিকনিকের আসল উদ্দেশ্য।
এর মধ্যে আমার চাকরি খোঁজার চেষ্টা চলতে থাকে। সদ্য স্বাধীন দেশে সবকিছু ছিল এলোমেলো। চাকরির সুযোগও ছিল সীমিত। তারপর অজয় রায় আবার তদবির-তোষামোদ পছন্দ করতেন না। তবে পরিচিত সবারই জানা ছিল যে, আমি একটি চাকরি খুঁজছি।
একদিন মোয়াজ্জেম সাহেব নামে একজনের কাছ থেকে সুখবর পাওয়া গেল। তিনি জীবন বীমা করপোরেশনের ময়মনসিংহ অফিসে ম্যানেজারের দায়িত্ব পেয়েছেন। তাঁর অফিসে কিছু লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। আমাকে একটি আবেদনপত্র দিতে বললেন। মোয়াজ্জেম সাহেবের পরিবার ছিল মুসলিম লীগ রাজনীতি-প্রভাবিত। তবে তিনি নিজে ছিলেন উদার প্রকৃতির মানুষ। আমি একদিন তাঁর অফিসে গিয়ে আবেদনপত্র জমা দিয়ে আসি। এটা ছিল ১৯৭২ সালের শেষদিকে।
ইতোমধ্যে আমি মহিলা পরিষদের কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ি। রাজিয়া খালাম্মা, রোকেয়া আপা, বেলা আপা, ডা. হালিমা, সুমিতা নাহাসহ অনেকেই তখন ময়মনসিংহে মহিলা পরিষদের কাজে সক্রিয়। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন করিম সাহেবের স্ত্রী সুফিয়া করিমও তখন অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষণের শিকার মেয়েদের পুনর্বাসনের কাজটি ছিল তখন গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি।
পরিবারের মধ্যেও 888sport promo code নির্যাতনের ঘটনা নিয়মিত ঘটতো। মহিলা পরিষদ 888sport promo code নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করে – এটা জেনে প্রতিকারের আশায় কিছু অভিযোগ মহিলা পরিষদের কাছেও আসতে থাকে। আলাপ-আলোচনা করে গৃহবিবাদ মেটানোর কাজে আমরা ভূমিকা রাখতে থাকি।
ময়মনসিংহে একজন বড় ঠিকাদার ছিলেন জমির সাহেব। জমির কন্ট্রাক্টর হিসেবেই তিনি পরিচিত ছিলেন। ভদ্রলোক অনেক ধনী ছিলেন। মুসলিম লীগের সঙ্গে জড়িয়ে তিনি বড়লোক হয়েছিলেন, বিয়ে করেছিলেন তিনটি। পান থেকে চুন খসলেই বউদের মারধর করতেন। শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে তাঁর স্ত্রীরা মহিলা পরিষদের শরণাপন্ন হন। মহিলা পরিষদের মধ্যস্থতায় তাঁদের সংসারে কিছুটা শান্তি ফিরেছিল।
রায়পুরা থেকে আমার ছোট সব ভাইবোনকে নিয়ে মা ময়মনসিংহ শহরে চলে এসে কার্যত আমার সংসারের হাল ধরেন। ভাইবোনদের পড়াশোনার জন্য ময়মনসিংহে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়। লাইনে দাঁড়িয়ে ন্যায্যমূল্যের দোকান থেকে চাল-ডাল-তেল-আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সংগ্রহ করতাম। এতে আমি কোনো গ্লানিবোধ করতাম না। জীবনে বেঁচে থাকার চেয়ে বড় কিছু নেই। ছোট ভাইবোনেরা ময়মনসিংহে আসার পর মা ওদের ন্যায্যমূল্যের দোকানে লাইনে দাঁড়ানোর জন্য পাঠাতেন। বলতেন, খেলু (আমার ডাক নাম খেলা, তা থেকেই মায়ের কাছে খেলু) একা কেন এই কাজ করবে, সবাই সুবিধামতো দোকানে যাবে।
এদিকে আমার মেয়ে পর্ণার অন্নপ্রাশনের সময় হয়। অর্থনৈতিক টানাপড়েনের কারণে বড় কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভব হয়নি। আমার মা পায়েস রান্না করে, তা-ই মুখে তুলে দিয়ে মেয়ের মুখেভাত অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছিলাম আমরা।
এর মধ্য দ্বিতীয় সন্তান আমার পেটে আসে। আনন্দ-উদ্বেগ দুটোই বাড়ে। ১৯৭৩ সালের জানুয়ারি মাসে জীবন বীমা করপোরেশনে আমার চাকরি হয়ে যায়। একটি নির্দিষ্ট আয়ের নিশ্চয়তার খবরটি ছিল আমার কাছে তখন বড় আনন্দ ও স্বস্তির।
তেইশ
মশুলি দেওয়ানজি বাড়ির কথা আগেও বলেছি। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে অজয় রায় আমাকে নিয়ে তাঁর বাবার মামাবাড়িতে উঠেছিলেন। ওই বাড়িটি যেমন আমার পছন্দ হয়েছিল, তেমনি কাকি শাশুড়ির আদরযত্নও আমাকে আপ্লুত করেছিল। খুব অল্প সময় ছিলাম; কিন্তু মনে দাগ কেটেছিল গভীরভাবে। তাই স্বাধীনতার পর কয়েকবার আমি মশুলি গিয়েছি। পর্ণাকে কোলে নিয়ে কখনো একা, কখনো ছোট ভাই অথবা বোনকে সঙ্গে নিয়ে মশুলিতে বেড়াতে গিয়েছি। ময়মনসিংহ থেকে একটি লোকাল ট্রেনে চেপে স্টেশনে নেমে রিকশা নিয়ে ওই বাড়িতে পৌঁছতে কোনো সমস্যাই হতো না।
মশুলির ওই আত্মীয়রা ছিলেন বড় জমিদার। তাঁদের নিজেদের জমিতে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ছিল পোস্ট অফিস। বিশাল বাড়িতে দুপাশে ছিল দুটি পুকুর। বাড়ির সঙ্গেই ছিল প্রশস্ত মাঠ। গাছগাছালি, ফুলের বাগান, শ্যামলে-সবুজে মাখামাখি। ছায়া888sport app পাখিডাকা ওই শান্ত পরিবেশে গেলে চারদিক ছবির মতো লাগতো, মনটা ভালো হয়ে যেতো।
কাকি শাশুড়ি আমাকে ভীষণ আদর করতেন। পছন্দের খাবার তৈরি করতেন। বাড়িতে প্রচুর দুধ হতো। দুগ্ধজাত খাবার তৈরিতে কাকিমা ছিলেন অতি নিপুণা। ক্ষিরের তৈরি সাঁচে বানানো সুন্দর সব খাবার খেতেও যেমন সুস্বাদু, তেমনি দেখেও চোখের আরাম হতো।
আমি রুই, বোয়াল, শোলের মতো বড় বড় মাছের চেয়ে ছোট মাছ বেশি পছন্দ করতাম। পুঁটি, টেংরা, মরলা কত রকম মাছ ছিল পুকুরে। ছোট মাছ পছন্দ করতাম বলে কাকিমা আমাকে রসিকতা করে ‘জাউলা’র (জেলে) মেয়ে বলতেন। আমি গেলে জাল দিয়ে পুকুর থেকে নানা পদের ছোট মাছ ধরা হতো। কাকিমার হাতের রান্নাও ছিল অতি উপাদেয়। তিনি কত আদর করে আমাকে খাওয়াতেন। আহা, সেই স্নেহ এখন কোথায় পাবো!
চাকরি পেয়ে আমি যে কি খুশি হয়েছিলাম, তা এখন আর ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। ১৯৭৩ সালে মাসে ৩০০ টাকা মানে অনেক টাকা। নিজে উপার্জন করা যে আমাদের দেশের মেয়েদের জন্য কত বড় ঘটনা সেটা আমি তখন উপলব্ধি করেছিলাম। অর্থনৈতিক স্বাধীনতার চেয়ে বড় স্বাধীনতা আর কিছু হতে পারে না। দেশের স্বাধীনতা, মাতৃত্ব এবং চাকরি – তিনে মিলে আমি ছিলাম বেজায় খুশি।
আমার কেবলই গাইতে ইচ্ছে হতো : ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে/ আমার মুক্তি ধুলায় ধুলায় ঘাসে ঘাসে।/ দেহ মনের সুদূর পারে হারিয়ে ফেলি আপনারে/ গানে সুরে আমার মুক্তি ঊর্ধ্বে ভাসে। …’
প্রথম মাসের বেতনের টাকা হাতে পেয়ে আমি আমার দাদু-দিদিমা, মা-বাবা, কাকি শাশুড়ি, অজয় রায় এবং মন্মথদাকে কাপড় কিনে দিয়েছি। পর্ণার জন্যও নতুন জামা কিনেছিলাম। এসব করতে গিয়ে হাত খালি হয়ে গেলেও পরম তৃপ্তি পেয়েছিলাম।
আমি চাকরি করি আর মেয়ে ও সংসার সামলান আমার মা। সংসারের দায়িত্ব মায়ের হাতে থাকায় আমি সুযোগ পেলে মহিলা পরিষদের কাজেও অংশ নিতাম। রাজিয়া খালাম্মা, সুফিয়া করিম অবশ্য আমাকে বেশি দৌড়ঝাঁপ করতে বারণ করতেন। কারণ আমার ভেতরে তখন বেড়ে উঠছে আমার দ্বিতীয় সন্তান। রাজিয়া খালাম্মা বলতেন, এক বছরে দুবার মা হচ্ছো, তাই লাফালাফি কম করো।
মশুলির কাকি এবং আমার মা একজোট হয়ে বড় করে আমার সাধ দিয়েছিলেন। সন্তানসম্ভবা মেয়েদের ভালো খাইয়েদাইয়ে সাধ দেওয়া হিন্দুদের একটি রীতি।
১৯৭৩ সালের ১৭ মে আমার দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়। এক বছর আগে ঠিক একই দিন জন্ম হয়েছিল প্রথম সন্তানের। প্রথমজন মেয়ে, দ্বিতীয়জন ছেলে। এবারো ময়মনসিংহ হাসপাতালে সেই ডা. জোবায়েদ হোসেন এবং ডা. রওশন আরার নিবিড় তত্ত্বাবধান।
মনে আছে, ব্যথা শুরু হওয়ায় রাতে আমাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সকালে হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে অজয় রায় ফুলপুরে পার্টির একটি সভায় উপস্থিত থাকার জন্য তখনই চলে যেতে চাইলে ডা. জোবায়েদ তাঁকে বেশ ধমকের সুরে বলেছিলেন, সন্তানের মুখ না দেখে আপনি কোথাও যাবেন না।
অজয় রায় অবশ্য ডাক্তারের পরামর্শ অমান্য করেননি। তখনকার সময়ে কমিউনিস্টরা স্ত্রী-সন্তানের মতোই পার্টি এবং দেশের কাজকে সমান ভালোবাসতেন।
পুত্রসন্তানের মুখ দেখে তাকে একটু কোলে নিয়ে উপস্থিত সবার মিষ্টিমুখের ব্যবস্থা করার পরই অজয় রায় ফুলপুরের উদ্দেশে হাসপাতাল ত্যাগ করেছিলেন।
আমি চাকরি থেকে তিন মাসের ছুটি পেয়েছিলাম। তাই মা এবং আমি মিলে নবজাতকের দেখাশোনা করতাম। জরুরি কোনো প্রয়োজনে হাতের পাঁচ রওশন তো ছিলই। আমার নামের সঙ্গে মিল রেখে আমি ছেলের নাম রেখেছিলাম জয় আর অজয় রায় নাম রাখেন অমিতাভ। অধ্যাপক যতীন সরকার বলতেন ‘অন্তস্থ’। বাসায় ঢুকেই যতীনদা হাঁক দিতেন, কই অন্তস্থর বাবা বাড়িত আছে নি?
মোটামুটি হাসি-আনন্দেই আমাদের দিন কাটতে থাকে। এর মধ্যে অজয় রায়ের 888sport appমুখী হওয়ার ঝোঁক দেখা যায়। স্বাধীনতার পর সিপিবির প্রথম প্রকাশ্য কংগ্রেসে অজয় রায় কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় পার্টির নির্দেশে তাঁকে ময়মনসিংহ ছেড়ে 888sport appয় থাকার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। প্রথমে তিনি একাই 888sport appয় পার্টির অন্য নেতাদের সঙ্গে থাকতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু মণি সিংহ তাঁকে আলাদা বাসা নিয়ে আমাকেও 888sport appয় আনার কথা বললে এক নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়। 888sport appয় আসার প্রস্তাবে আমি প্রথমে বিচলিত বোধ করেছিলাম। কারণ 888sport appয় আমি কিছুই চিনি না। কারো সঙ্গে সেভাবে পরিচয়ও নেই। তাছাড়া চাকরি, দুই সন্তান – সব মিলিয়ে আমি অসহায় বোধ করতে থাকি। আমার ওপর অজয় রায় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দিয়ে চুপচাপ থাকেন। তিনি এমনিতেই একটু গম্ভীর প্রকৃতির ছিলেন। দাদু, মা-বাবা আমার 888sport appয় যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। তাঁরা মনে করেন, স্বামী-স্ত্রী দুজনের দুই জায়গায় থাকা ঠিক হবে না। কষ্ট হলেও একসঙ্গে থাকাই সমীচীন হবে।
বহু আলাপ-আলোচনার পর ঠিক হয়, মেয়েকে মায়ের কাছে রেখে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আমি 888sport appয় আসবো। ঘরসংসারের কাজে আমাকে সাহায্য করার জন্য একজন বয়স্ক বিধবা 888sport promo codeও পাওয়া যায়। তিনি আমাদের পরিচিত। তাঁকে আমরা জেঠিমা ডাকতাম। বলা যায়, জেঠিমার ভরসাতেই আমার 888sport appমুখী হওয়ার ভীতি দূর হয়েছিল। একদিন আমরা বসবাসের জন্য ময়মনসিংহের পাট চুকিয়ে 888sport appয় চলে আসি। যমুনা, ব্রহ্মপুত্রের পর বুড়িগঙ্গার পাড়ে এসে নতুন ঠিকানা হয়।
প্রথমে এসে উঠেছিলাম মগবাজারে বেলাল কলোনির কমিউনিস্ট পার্টির মেসবাড়িতে। তারপর মালিবাগ মোড়ে জাহানারা বেগমের বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়। জাহানারা বেগম পরে বিএনপির নেত্রী হয়েছেন। তিন রুমের বাসায় আমাদের সঙ্গে সাপ্তাহিক একতায় কর্মরত সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জুরও থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। তখন পার্টির সার্বক্ষণিক কর্মীদের কোনো না কোনো পরিবারের সঙ্গে রাখা হতো ব্যয় সাশ্রয়ের জন্য।
মঞ্জুভাইয়ের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল ড্রয়িংরুমে। জেঠিমার বিছানা পাতা হতো খাবারঘরে। মঞ্জুভাইয়ের পড়াশোনা এবং বই সংগ্রহের ঝোঁক ছিল; কিন্তু বই রাখার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মঞ্জুভাই কারো কফিনের কাঠ সংগ্রহ করে নামমাত্র মজুরি দিয়ে একটি আলমারি বানিয়ে বই রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন।
আমার চাকরি 888sport appয় বদল করা সম্ভব হয়। গুলিস্তানে জীবন বীমা করপোরেশনের ডিভিশন অফিসে আমি কাজে যোগ দিই। বেতন বেড়ে হয় ৩৫০ টাকা। 888sport app শহরে তখন যানজট ছিল না। মালিবাগ মোড় থেকে এক টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে গুলিস্তান আসা-যাওয়া করা যেতো। অফিস থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে আমি সংসার সাজানোর কিছু জিনিসপত্র কিনেছিলাম। বাড়ি ভাড়া পার্টি দিত। খাওয়া খরচ চলতো আমার বেতনের টাকায়। বিলাসিতার কোনো সুযোগ ছিল না। বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম প্রয়োজন মিটলেই তখন আমরা খুশি ছিলাম।
পার্টির তখন একটি জিপগাড়ি ছিল। ওই গাড়িতেই নেতাদের বাসা থেকে পার্টি অফিসে আনা-নেওয়া করা হতো। সবকিছুই হতো কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে। অপচয়-অপব্যয় করার কোনো অবস্থা ছিল না। পার্টির শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে যাঁদের অর্থবিত্ত ছিল তাঁরা পোশাক-আশাক দিয়ে সিনিয়র নেতাদের সহযোগিতা করতেন। একটি পরিবারের সদস্যের মতো একে অপরের বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়ানোটা ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। নেতারাও কর্মীদের খোঁজখবর রাখতেন।
আমি তখন ঠিক করেছিলাম, আমি সংসারটাই ভালো করে সামলাবো। সংসারে জড়িয়ে অজয় রায়ের বিপ্লব সাধনায় যাতে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয়, সেটা আমি দেখবো। নিজে রাজনীতির সঙ্গে জড়াবো না।
চব্বিশ
আমি নিজে রাজনীতিতে না জড়ালেও বাসায় তো রাজনীতি বন্ধ ছিল না। অজয় রায় কমিউমিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে থাকায় তাঁর ওপর কিছু রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। তিনি দায়িত্ব পালনে ছিলেন খুবই নিষ্ঠাবান। তাঁর সঙ্গে অনেকেরই যোগাযোগ ছিল। পার্টির অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিভাগের দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে তিনি শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীদের ভেতরেও পার্টি-সংগঠনের কাজ দেখাশোনা করতেন। সারাদিনই ব্যস্ত সময় কাটতো।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির সম্পর্ক ছিল খুবই চমৎকার। কমিউনিস্টদের তিনি বিশ্বাস করতেন, তাদের প্রতি তাঁর আস্থা ছিল। কমিউনিস্ট পার্টি বঙ্গবন্ধুর সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার নীতি নিয়েছিল; কিন্তু দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশ ছিল বিধ্বস্ত। অর্থনীতি ছিল বিপর্যস্ত। রাস্তাঘাট, যোগাযোগ ব্যবস্থা সবই ছিল খারাপ। এক কোটি শরণার্থীকে পুনর্বাসনের কঠিন কাজটি করতে হচ্ছিল। দেশ পুনর্গঠনের কাজে সবার আন্তরিক সমর্থন ও অংশগ্রহণ জরুরি ছিল।
বঙ্গবন্ধু সবাইকে ত্যাগের আদর্শে উজ্জীবিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিন বছর তিনি কিছু দিতে পারবেন না বলে দেশবাসীর কাছে আগাম সময় চেয়ে নিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, গাছ বুনলেই ফল হয় না। ফল পেতে দেরি করতে হয়। বীজ থেকে গাছ, গাছ থেকেই ফল আসে। 888sport apps স্বাধীনতার বীজ বুনেছে। তা থেকে গাছও হয়েছে। তবে পাকা ফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে।
দুঃখের বিষয় হলো, বঙ্গবন্ধুর সমর্থকদের কেউ কেউ অপেক্ষা না করে স্বাধীনতার সুফল ভোগের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন। তাঁরা নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এর সুযোগ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ বিরোধিতাকারী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি বঙ্গবন্ধুর সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার শুরু করেছিল। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) জন্ম নেওয়ায় বঙ্গবন্ধুর সরকারের রাজনৈতিক বিরোধিতার নতুন শক্তি দাঁড়িয়ে যায়। এর সঙ্গে চীনপন্থী বিভিন্ন দল-উপদলও সশস্ত্র পথ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের মধ্যে অস্থিরতার উপাদান ছড়িয়ে দিচ্ছিল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধ গ্রহণের পথ পরিহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁর এই আহ্বানে চরমপন্থীরা সাড়া দেয়নি। বঙ্গবন্ধুর উদারতাকে কেউ কেউ দুর্বলতা ভেবে স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেছিল।
বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছিলেন। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গেও তিনি মৈত্রীর নীতি নিয়েছিলেন। তখন বিশ্বব্যবস্থাও ছিল দুই ধারায় বিভক্ত। একদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা, অন্যদিকে আমেরিকার নেতৃত্বে পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধু প্রথম ব্যবস্থার পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় দ্বিতীয় ব্যবস্থার অনুসারীরা অখুশি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত – শোষক এবং শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।
ওই সময়ের বিশ্বরাজনীতিতে দুই পরাশক্তির দ্বন্দ্ব ছিল প্রকট। সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে দেশ পরিচালনা করতে গেলে সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থার মোড়ল আমেরিকা পদে পদে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতো। ১৯৭৩ সালে চিলিতে বামপন্থী আলেন্দে সরকারকে উৎখাতের ঘটনাটি ছিল সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বড় নজির। আলেন্দেকে হত্যা করে পিনোচেট ক্ষমতা দখল করলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এক প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তৃতায় বলেছিলেন, প্রয়োজনে আলেন্দের পরিণতি বরণ করবো, তবু সাম্রাজ্যবাদের কাছে মাথা নত করবো না।
বঙ্গবন্ধুর এই সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এবং সমাজতন্ত্র-অভিমুখী নীতির কারণে কমিউনিস্ট পার্টি তাঁর সরকারের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল। ১৯৭৩ সালের শেষদিকে অথবা ১৯৭৪ সালের প্রথমদিকে কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মণি সিংহ দলের কয়েকজনকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। অজয় রায়ও সে-সময় উপস্থিত ছিলেন। মণি সিংহকে বঙ্গবন্ধু 888sport apk download apk latest version করতেন। তাঁকে ‘বড়ভাই’ বলে সম্বোধন করতেন। দেশের এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের মধ্যে অনেক কথা হয়েছিল। আলোচনার একপর্যায়ে মণি সিংহ বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি অট্টহাসি দিয়ে বলেছিলেন, আমি তো ভাবি আপনাদের নিরাপত্তা নিয়ে। আমাকে আর কে কী করবে!
সাধারণত কোনো রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে অজয় রায় বাসায় আমার সঙ্গে কথা বলতেন না। জানতে চাইলে দু-এক কথায় উত্তর দিতেন; কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা হলে, কথা হলে বাসায় ফিরে তিনি বেশ খুশি মনেই তাঁর প্রশংসা করতেন। বলতেন, এই মানুষটি সত্যিকার অর্থেই দেশ-অন্ত্যপ্রাণ। এমন দেশদরদি, মানবদরদি নেতা পাওয়া জাতির জন্য গৌরবের। কমিউনিস্টদের নিখাদ দেশপ্রেম সবার কাছেই প্রশংসিত। কিন্তু অজয় রায় বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেমেরও প্রশংসা করতেন।
আরেকদিনের কথা আমার মনে আছে। 888sport apps-সোভিয়েত মৈত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাঁর গাড়িতে করে অজয় রায়কে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। মৈত্রী সমিতির সভাপতি ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। সুফিয়া কামালের সঙ্গেও বঙ্গবন্ধুর খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। তাঁরা ছিলেন পারিবারিক সুহৃদ। বঙ্গবন্ধু মৈত্রী সমিতির কার্যক্রম বিস্তৃত করার পরামর্শ দিয়ে 888sport apps থেকে অধিকসংখ্যক ছাত্রছাত্রী যাতে সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারে, উচ্চতর গবেষণা করে দেশে ফিরে দেশের জন্য কাজ করতে পারে, সে-ব্যবস্থা করার কথাও বলেছিলেন। নতুন স্বাধীন দেশকে গড়ে তোলার জন্য দেশপ্রেমিক ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য তিনি কমিউনিস্টদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশের পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছিল। বঙ্গবন্ধুর সরকারকে অজনপ্রিয় করার জন্য নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছিল। তখন বৈশ্বিক অর্থনেতিক পরিস্থিতি ভালো ছিল না। 888sport appsের ভেতরেও সংকট তৈরির অপচেষ্টা ছিল। কমিউনিস্ট পার্টি এবং মোজাফফর আহমেদের ন্যাপ ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দল সরকারের পক্ষে ছিল না। ১৯৭৪ সালে নানা ক্ষেত্রে সংকট বাড়তে থাকে। চালসহ খাদ্যদ্রব্যের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বন্ধ করা যায় না। লবণের
কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। মজুদদার, মুনাফাখোরদের দৌরাত্ম্য বাড়তে থাকে। প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই অসহযোগিতা করতে থাকে। একদিকে চীনপন্থীদের সশস্ত্র ভূমিকা, অন্যদিকে পাকিস্তানিমনাদের ‘মুসলিম বাংলা’ কায়েমের তৎপরতা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। থানা লুট, পাটের গুদামে আগুন, আওয়ামী লীগের একাধিক এমপি হত্যার মতো নাশকতা চলতে থাকে।
১৯৭৪ সালে ভয়াবহ বন্যার কারণে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়। এমনিতেই তখন দেশে খাদ্য সংকট ছিল। ৩০ লাখ থেকে ৪০ লাখ টন খাদ্য আমদানি করতে হতো। বঙ্গবন্ধুর সরকারকে বিপাকে ফেলার জন্য আমেরিকা তখন ‘খাদ্য-রাজনীতি’ করে পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছিল। বিদেশি মুদ্রার ঘাটতির কারণে চাল আমদানি করতেও সমস্যা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সংগৃহীত চাল যথাসময়ে দেশে যাতে পৌঁছতে না পারে সেজন্য চক্রান্ত হয়েছে। পিএল-৪৮০ কর্মসূচি অনুযায়ী আমেরিকার 888sport appsে খাদ্য পাঠানোর কথা ছিল; কিন্তু তখন সমাজতান্ত্রিক কিউবার কাছে 888sport apps পাট বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আমেরিকা ক্ষিপ্ত হয়ে 888sport appsে খাদ্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়। দেশের অভ্যন্তরেও অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা মজুদদারি করে খাদ্যসংকট প্রবল করে তুলেছিল।
দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। খাবার না পেয়ে মানুষ মারা যেতে থাকে। এই সময় বঙ্গবন্ধু চরম অসহায় বোধ করতে থাকেন। অনাহারে মানুষ যাতে মারা না যায় সেজন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে লঙ্গরখানা খুলে অভাবী মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা ‘মানুষ-বাঁচানো’র কাজে আত্মনিয়োগ করেন; কিন্তু অনাহারে মৃত্যু রোধ করা যায়নি। দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকা সফরে গিয়ে ক্ষুধার্ত মানুষকে বুকে জড়িয়ে ধরে বঙ্গবন্ধুর কান্নার ছবি সংবাদপত্রে ছাপা হয়।
সরকারকে বিব্রত করার জন্য নানাভাবে ষড়যন্ত্র হতে থাকে। ইত্তেফাক পত্রিকায় কুড়িগ্রাম অঞ্চলের বাসন্তী নামে এক 888sport promo codeর জাল পরা ছবি ছাপা হলে তা নিয়ে দেশের বাইরেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরে জানা গেছে, ওই ছবিটি ছিল সাজানো। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যই ওই ছবি তৈরি করা হয়েছিল। যা হোক, আমাদের সংসারেও তখন চরম সংকট দেখা দেয়। দুই বেলা আমরাও রুটি খেয়ে থেকেছি। রুটির সঙ্গে তরকারিও জুটতো না। পাতলা ডালে ভিজিয়ে রুটি খেতে হয়েছে। আমার মেয়েকে ময়মনসিংহে আমার মায়ের কাছে রেখে এসেছিলাম। এক বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে আমার এক অসহনীয় সময় কেটেছে। কমিউনিস্ট পার্টির অন্য নেতাদেরও তখন একই রকম কষ্টের সময় গেছে। দুই বেলা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা কারো ছিল না।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.