রিজিয়া রহমানের রক্তের অক্ষর সভ্যতার তলদেশে ঘামের নদী

ষাটের দশকের অন্যতম উজ্জ্বল কথা888sport live footballিক রিজিয়া রহমান (১৯৩৯-২০১৯) সম্প্রতি আশি বছর বয়সে প্রয়াত হলেন। পেছনে রেখে গেছেন প্রায় পাঁচ দশকের 888sport live footballকীর্তি, যদিও সমকালীন 888sport live footballিক মহলে তাঁর নাম অনেকটা অনুচ্চারিতই ছিল। সভা-সমাবেশ-888sport live footballমঞ্চে কোথাও তাঁর উপস্থিতি ছিল না তেমন। কিন্তু 888sport appsের স্বতন্ত্র 888sport live football-যাত্রায় রিজিয়া রহমানের অবদান খুব সামান্য নয়। তাঁর লেখা বং থেকে বাংলা (১৯৮৭), রক্তের অক্ষর (১৯৭৮), অলিখিত উপাখ্যান (১৯৮০), একটি ফুলের জন্য (১৯৮৭), উত্তরপুরুষ (১৯৭৭), সূর্য সবুজ রক্ত (১৯৮০), ধবল জ্যোৎস্না (১৯৮০) ইত্যাদি 888sport alternative link ভিন্ন এক উপলখ–র মতো 888sport live footballের ইতিহাসে দীপ্তি ছড়াবে নিশ্চয়। বিনির্মাণমূলক এক ভূগোল, অনাবিষ্কৃত এক মানচিত্রের সন্ধান তিনি দিয়ে গেছেন। ‘888sport promo code লেখকের’ দুর্বলতা তাঁর 888sport alternative linkে নেই, বরং 888sport alternative linkের বিষয় নির্বাচন, বর্ণনা-কৌশলের দিক থেকে তিনি স্বতন্ত্র ছিলেন। তথাকথিত জনপ্রিয় ধারার পপুলার রাইটিংয়ের দিকে তিনি যাননি।
ষাটের দশকের শুরুতে দৈনিক ইত্তেফাকের 888sport live football পাতায় ‘অনন্য পৃথিবী’ নামে একটি গল্প ছাপা হওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি 888sport live footballে প্রবেশ করেন। উনিশশো সাতষট্টি-আটষট্টি সালের দিকে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে মাস্টার্স পড়ার সময় তিনি প্রথম 888sport alternative link ঘর ভাঙা ঘর (১৯৭৪) লেখা শুরু করেন এবং সাপ্তাহিক ললনায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হলে তা পাঠকমহলে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। স্বামীর চাকরিসূত্রে উনিশশো উনসত্তরের দিকে তিনি তখন চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন। এ-সময় সাপ্তাহিক ললনার অনুরোধে মাত্র পনেরো দিনের মধ্যে চট্টগ্রামে পর্তুগিজদের উত্তরপুরুষ ফিরিঙ্গি বাজারের আধুনিক ফিরিঙ্গিদের জীবনযাপন নিয়ে ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে লেখেন দ্বিতীয় 888sport alternative link উত্তরপুরুষ (১৯৭৭)।
স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে সাপ্তাহিক বিচিত্রার ঈদ888sport free betয় (১৯৭৭) প্রকাশিত হয় তাঁর তৃতীয় 888sport alternative link রক্তের অক্ষর। সম্ভবত 888sport alternative linkের বিষয়সম্ভব কারণে রক্তের অক্ষর অভাবনীয় জনপ্রিয়তা লাভ করে। এক সাক্ষাৎকারে রিজিয়া রহমান বলেন –
‘মনে পড়ে সে সময় ‘888sport appর পতিতালয়’ শিরোনামে ‘বিচিত্রা’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি 888sport world cup rate পড়ে আমি স্তম্ভিত হয়েছিলাম, রাতে ঘুমোতে পারিনি। সেই আঘাতের বেদনাই আমাকে ‘রক্তের অক্ষর’ লিখতে বাধ্য করেছিল। সমাজে উপেক্ষিত, ঘৃণিত এইসব 888sport promo codeর জীবনের কথা আমার মত আমার পাঠকদেরও স্তম্ভিত করেছিল, নিষিদ্ধ জগতের দেহব্যবসায় নির্বাসিত পতিতারাও মানুষ। বিবেকসম্পন্ন মানুষকে বিচলিত করেছিল বলেই হয়তো ‘রক্তের অক্ষর’ পাঠকসমাজে গুরুত্ব অর্জন করতে পেয়েছে।’ (গল্পকথা, সম্পাদক : চন্দন আনোয়ার, ২০১৭)। বেশ্যাবৃত্তি পৃথিবীর আদিম পেশা। রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ যুগ পেরিয়ে আধুনিক যুগেও এই বৃত্তি অব্যাহত। বারবণিতাদের রক্ত-পুঁজময় পাওয়া-না পাওয়ার জীবন, করুণ-কান্নার মতো হৃদয়-আততি দিয়ে রিজিয়া রহমান রূপায়িত করেছেন রক্তের অক্ষর 888sport alternative link।
রক্তের অক্ষর 888sport alternative linkের মোট নয়টি পরিচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে পতিতাপল্লির বারাঙ্গনাদের শোষণ, নির্যাতন, বঞ্চনার বীভৎস, বিমানবিক জীবনচিত্র। রিজিয়া রহমান বয়ানটা শুরু করেন এভাবে –
‘সকালটা এখানে অকেজো নেশাখোরের মতো ঝিমধরে পড়ে আছে। পলেস্তারা খসা ইট বের করা দেওয়ালে সরু রোদের রেখা বিনা পয়সার খরিদ্দারের মতো বেহায়াভাবে লুটোপুটি খাচ্ছে। ময়লা উপচানো ড্রেনের ধারে কয়েকটা শালপাতার ঠোঙা আর ছেঁড়া তেল-চপচপে কাগজ নিয়ে গৃহবিবাদে রত একদল কাক। একটু দূরেই একটা ঘেয়ো কুকুর কুণ্ডলী পাকিয়ে ঘুমোচ্ছে। আর কোনো শব্দ নেই। কুসুম উঠেছে সকালেই। সবার আগে এ পাড়ায় সে ওঠে, ঘেনো বকুল, জাহানারা, সখিনা, মর্জিনা সবাই হাতপা ছড়িয়ে বিশ্রীভাবে ঘুমিয়ে থাকে। গলির ভেতর মান্নানের দোকান ঝাপ খোলে না। শুধু রাস্তার ওধারে ডালপুরি আর গোলগোল্লার দোকানের ছোকরাটা সবে চুলোর আঁচ ধরায়।’
রিজিয়া রহমান গোলাপীপট্টির যে-ছবি আঁকেন তা আমাদের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত, সমাজবিধি অনুসৃত শৃঙ্খলার বাইরে আরেকটি সমান্তরাল সমাজ। এই যৌনপল্লি যেন বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। এখানকার বাসিন্দারা চাইলেই বাইরে যেতে পারে না। রাতে কেউ কেউ অভিজাত হোটেলে যাওয়ার সুযোগ পেলেও সে-888sport free bet খুবই কম। যার যার অধীনের মেয়েকে সে খুন করে ফেললেও অন্যরা কথা বলবে না – এটাই পাড়ার নিয়ম। 888sport alternative linkের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে দেখা যায় ইয়াসমীনকে। শিক্ষিত এই 888sport promo code মুক্তিযুদ্ধের সময় ভাইয়ের বন্ধু মুক্তিযোদ্ধা কামালকে আশ্রয় দেওয়ার অপরাধে পাকিস্তানি সৈন্যরা ইয়াসমীনের মা-বাবা-ভাইবোনকে হত্যা করে এবং তাকে ধরে নিয়ে ক্যান্টনমেন্টে ছয় মাস ধরে ধর্ষণ করে। যুদ্ধশেষে ভারসাম্যহীন ইয়াসমীন পুনর্বাসন কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। চাচার কাছে ঠাঁই চেয়ে পায় না। চাচা সম্পত্তির লোভে এবং তার মেয়েদের বিয়ে দিতে সামাজিক সমস্যা হবে চিমত্মা করে ইয়াসমীনকে জায়গা দেয় না। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের বন্ধু তারিক একসময় প্রতিশ্রম্নতি দিলেও যুদ্ধোত্তর সময়ে সে অন্যের স্বামী, বন্ধু তারিক মুখ ফিরিয়ে নেয়। ইয়াসমীন একটা চাকরি নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায় কিন্তু পারে না। ইন্টারভিউ বোর্ডে তার বীরাঙ্গনা খেতাব নিয়ে প্রশ্ন তুললে সে বিব্রত ও অপমানিত হয়। বীরাঙ্গনা ইয়াসমীন ক্ষুব্ধ হয়ে বলে –
‘আমার সম্পর্কে আপনাদের আগ্রহের চেয়ে কৌতূহল বেশি। কারণ আমি সরকারের দেয়া বীরাঙ্গনা খেতাব নিয়ে এসেছি। আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি বলে দিচ্ছে যে, আমি সমাজছাড়া মেয়ে। পাকিস্তানি সৈন্যরা আমার দেহের ক্ষতি করেছে। আর আমার মনের ক্ষতি করেছেন আপনারা। আপনাদের মতো মানুষরা যারা কিছু না হারিয়েও স্বাধীনতার ফল ভোগ করছেন।’
ইয়াসমীনের সংলাপে তীব্র ঘৃণা, শাণিত বিদ্রূপ ছড়িয়ে পড়ে। রিজিয়া রহমান 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধোত্তর সমাজমানসের সংকটকে এভাবে রূপায়িত করেছেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বীরাঙ্গনা খেতাব 888sport promo codeদের সমাজে প্রতিষ্ঠার বদলে ঘৃণার পাত্রী করে তুলেছিল। দুর্ভাগা সেসব 888sport promo codeর যথার্থ চরিত্র ইয়াসমীন। আজকে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে ব্যবসা করে ধনী হয়েছেন, তাদের মুখে একদলা ঘৃণার থুথু ইয়াসমীনের মুখের সংলাপ। পতিতালয়ে মেয়েগুলো আসে কোত্থেকে, সে-সম্পর্কে রিজিয়া রহমান পরিষ্কার ধারণা দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার কর্তৃক লাঞ্ছিত মেয়েদের বিরাট একটি অংশের স্থান হয়েছে ওই নিষিদ্ধ পল্লির নরকে। এছাড়া সৎমা দ্বারা নির্যাতিত, পিতৃপরিচয়হীন নাবালিকা, দুর্ভিক্ষে-দারিদ্রে্য বিক্রীত শিশু, বন্যা, নদীভাঙনে উন্মূল গৃহস্থের কন্যা, পঙ্গু পিতামাতাকে বাঁচাতে অনেক অসহায় মেয়ের স্থান হয় পতিতালয়ে। গোলাপীপট্টির ইয়াসমীন, শামিত্ম, জরিনা, সখিনা, বকুল, মনু, জাহান আরা সবার জীবনের একটা অতীত আছে, পারিবারিক জীবনের করুণ ইতিহাস আছে। এখানেও আছে স্বার্থের দ্বন্দ্ব, হত্যা, নির্মম নিষ্ঠুরতা, তাই সম্পর্কই স্থায়ী নয়। মাসিদের শাসন, মালিকদের অত্যাচার, গুন্ডা, দালালচক্রের কারসাজি, ঝগড়া-বিদ্রূপ, চটুল হাসি, বিশ্বাসঘাতকতা। ফুলমতি অসতর্কতায় সমত্মান জন্ম দিলে তার দেহব্যবসার রোজগারে ভাটা আসে, ঘরভাড়া বাকি পড়ে, দুধের বাচ্চার চিৎকারে অসহনীয় হয়ে ওঠে পাড়ার পরিবেশ। অন্যদিকে জাহান আরার ঠাট, রূপের অহংকার – অভিজাত জনপ্রিয় গণিকা হয়ে ওঠে সে। একসময় মারাত্মক ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে জাহান আরার জীবনে নেমে আসে গভীর অন্ধকার। ঘরের মালিক কাজীসাব ফুলমতির অভুক্ত চেহারার দিকে তাকায় না, হিরু গুন্ডাকে দিয়ে ভাড়ার টাকা আদায়ের হুমকি দেয়। পিরুকে পিটিয়ে আহত করে মালিক, খরিদ্দার আনতে না পারার কারণে। মৃত্যুপথযাত্রী কুসুমের চিকিৎসার জন্য লেখক সাংবাদিক দেলোয়ারের চেষ্টায় ইয়াসমীন ডাক্তার আনতে গেলে মর্জিনা বলে – ‘এই বেশ্যাপাড়ায় কারো ব্যারাম আরাম হইলে ডাক্তার আহে কবে? ব্যারামে ধরলে হায়াত থাকলে বাইচ্যা ওঠে, না হইলে মইরা যায়। ডোম আইয়া লাশ লইয়া যায়।’ কুসুমের জরুরি চিকিৎসা আর হয় না। বাড়ির ছাদ ধসে মমতা, পিরু, পারুল মারা গেলে মাসি মেয়েগুলোর চাইতে বেশি আক্ষেপ করে হিরুর আর্থিক ক্ষতির জন্য। মাসি আক্ষেপ করে বলে – ‘মমতাটার উঠতি বাজার আছিল। কপালে সইল না, লোকসান গেল হিরুর।’ এই পল্লিতে মানুষের মূল্য নিরূপিত হয় অর্থে, অর্থের অতিরিক্ত মূল্য নেই মানুষের। এখানের মেয়েরা নিজেদের মানুষ ভাবতে ভুলে গেছে। অষ্টম পরিচ্ছেদে দেখা যায়, ইয়াসমীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু কামালের সঙ্গে বেশ্যাপল্লিতে তার দেখা হয়। ইয়াসমীন তাকে বলে –
‘আমরা আশ্রয় দিয়েছিলাম একজন মুক্তিযোদ্ধাকে। যে দেশের জন্য, সবার জন্য যুদ্ধে গিয়েছিল। যার জন্য সেদিন মা-বাবা, ভাইবোন হারাইছি। আর আমি হয়েছি বেশ্যা। যুদ্ধ যদি আমাকে বেশ্যাই বানাল, তবে তার ফলভাগ ওই ক্রীম খাওয়া লোকদের করতে দেব না। আমি বেশ্যা। বেশ্যাই হয়ে যাব।’
গোলাপীপল্লিতে নিয়মিত আসা লেখক সাংবাদিক দেলোয়ারের সংস্পর্শে এসে ইয়াসমীনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত মুক্তির আশা জেগে ওঠে। সে বেশ্যাপাড়ার মেয়েদের সংগঠিত করতে চায়; কিন্তু মেয়েরা বলে – ‘বেশ্যা’ দিয়ে ‘গিরস্থালি’ হয় না। সুতরাং বেশ্যাদের আর সমাজে ফেরা হয় না। 888sport alternative linkের শেষ পর্যায়ে আমরা দেখি, হিরু গোলাপী নামের একটি পনেরো-ষোলো বছরের মেয়েকে আটশো টাকা দিয়ে কিনে আনে। হিরুর ভাষায় ‘মাল একখান আনছি এইবার। দেইখো বছর না যাইতে একেবারে জাহান আরা হইয়া যাইবো।’ হিরুর সঙ্গে তিনজন জোয়ান মর্দ ঘরে ঢোকে। গোলাপীর গগনবিদারী আর্তচিৎকার ইয়াসমীন সহ্য করতে পারে না। প্রতিরোধের জন্য ইয়াসমীন এগিয়ে যায়। অন্য মেয়েরা দরজায় ঝাঁপিয়ে পড়লে যেন অগ্নিগিরি জেগে ওঠে। ইয়াসমীন মর্জিনাকে বলে – ‘দুনিয়ার কেউ কারো কেনা নয়রে মর্জিনা।’ হিরুর ছুরির ঘায়ে ইয়াসমীনের মৃত্যু হয়। মানুষের ভেতরে একটা পশু বাস করে। সে-পশুটার চাহিদা খুবই বন্য। সিমন দ্য বোভোয়া বেশ্যাবৃত্তিকে দেখেছেন পুরুষের স্ববিরোধ হিসেবে। একদিকে পুরুষ চায় ‘সতী-সাধ্বী’ স্ত্রী; কিন্তু স্ত্রীর প্রতি সে পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট নয়। তার প্রয়োজন হয় বেশ্যার। একজনকে পুরুষ সারাজীবনের জন্য ভাড়া করে অন্যজনকে প্রত্যেকবার কাজের জন্য মজুরি দেয়। পুরুষ পশুর এই এক নির্মম স্ববিরোধিতা।