বু ল ব ন ও স মা ন
ভরা পৌষ। শীতকাতুরে আমি নিজ গ্রাম সবলসিংহপুরে। সকালে ঘুম ভেঙে স্বস্তি। শীতটা তো উপভোগ্য! পিতৃদেব কি সন্তানের স্বাচ্ছন্দ্য ভেবে আশীর্বাদ বাড়িয়ে! জয় বাংলা! জয় বাবা! পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম… মা, রাগ করো না, তোমার কথাও মনে পড়ছে। তেরো বছরে এই গ্রামের বধূ হয়ে পৌঁছেছিলে। পাড়া-প্রতিবেশীর ফিসফাস… এতো ধাড়ি মেয়ে বউ করে এনেছে… একসময় আমার প্রশ্ন ছিল, তোমার বাবা এতো অল্প বয়সে বিয়ে দিয়েছিলেন কেন? নানার অবস্থা তো অখারাপ ছিল না। তুমি উষ্মা প্রকাশ করে প্রতিবেশীর ফিসফাসের কথা জানিয়েছিলে। তখন ছিল আমার হাসির পালা। এই সমাজ সম্বন্ধে কত কম জানি। সমাজতত্ত্বে স্নাতকোত্তর পাঠ নিয়ে কতটুকু বা জানা যায়?
তিনতলা লজের সিঙ্গেল কামরা থেকে বেরিয়ে ছাদে গিয়ে উত্তরের উঁচু বাঁশঝাড় দেখে তৃপ্ত। ছেলেবেলায় বাঁশঝাড় বিরক্তি জাগাত। চারদিক বাঁশঝাড়ে আঁধার। যদিও ভূতের ভয় ছিল না।
এখন গাঁও-গ্রামে তিনতলা লজ, ভাবতেও অবাক লাগে। রাস্তাটাও পুরো ঢালাই। শুধু জনমানুষের চিরকেলে অসচেতনতা। রাস্তার পাশেই মাটির ঢেলা আর বালির সত্মূপ। সবই ভাগের মা। পঞ্চায়েত নিদ্রিত। কবি অবশ্যি ভবিষ্য-দ্রষ্টা… ভারত, শুধু ঘুমায়ে রয়…
হালকা কুয়াশার স্রোত। দেখতে দেখতে মাতুল রবি উদিত হলেন। আহ! কী চমৎকার স্পর্শ। মাতৃস্পর্শের মতো। মাতুল তো মাতারই ভ্রাতা। চন্দ্রও মামা। সুয্যিমামা। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় মামাকে বলে, মও। আমার খুব বলতে ইচ্ছা হচ্ছিল, মও, গম আছ না? গম মানে ভালো।
ছাদের দক্ষিণে একটা নবীন জামগাছ। কিছুটা ধূলিস্নাত। নিচে চুল্লি। অতিথি-অভ্যাগতদের জন্য লুচি-পরোটা তেলে ডুবছে। চমৎকার একটা ক্ষিদে-জাগানিয়া ঘ্রাণ। এমন রাজকীয় ব্যবস্থা! ব্যবস্থাপকদের উদ্দেশে নমস্কার। শওকত ওসমান এদের কত না আপন!
বাবা সেই কত যুগ আগে চট্টগ্রামে থাকতে ব্রিদিং এক্সারসাইজ শিখিয়েছিলেন। এতোদিন পর মনে পড়ল। ছাদের মাঝে স্থান নিয়ে পুবমুখী। ব্রিদিং এক্সারসাইজ অনুশীলন। আহ! কী শাস্তি। 888sport app-কলকাতার বাতাস থেকে কতটা আলাদা। কত হালকা। ধুলোটা যদি আরো কম হতো!
বাঁদিকের বংশঝাড়কে সখার মতো শাখা দুলিয়ে উত্তুরে হাওয়ার সঙ্গে অভিবাদন দিতে দেখি। জয় বাবা বংশঝাড়। যুগ যুগ জিও। নিজেকে তোমাদের একজন ভাবতে শুরু করেছি… শওকত ওসমানের বংশধর হিসেবে। বাহুতে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম না থাক বংশ তো আছে? নিজেকে জগৎপালকের অংশ ভাবতে আপত্তি কোথায়? সফরসঙ্গী অ্যাডভোকেট হোসেনকে হাঁক দিই। সে ছয় দশকের জওয়ান, খালি গায়ে নির্গত। গায়ে রোদ মাখতে মাখতে বলে, শীতের ভয় করছিলেন, শীত কোথা?
আমাকে ক্ষমা-ঘেন্না করে মাফ করে দিয়েছে।
তাই হবে।
সে ফিরে গিয়ে একটা মোটা টি-শার্ট পরে আসে। ভদ্রলোক লাগে। তার চেহারাটা দক্ষিণ ভারতীয়। তামিল বললে কেউ অবিশ্বাস করে না। বাঙালির চেহারা-বৈচিত্র্য বিশ্বখ্যাত। তারপরও একটা বাঙালিয়ানা আছে।
জামতলার লুচি ভাজার গন্ধ ওকেও তাড়িত করে।
লুচি-পরোটার গন্ধ…
এসে যাবে। ধৈর্য ধরো।
তিনতলার ছাদে একটা কাঠের বেঞ্চ আর দুটো পস্নাস্টিক চেয়ারও হাজির। সুতরাং ভিআইপি হিসেবে যদি দুপ্লেট আসে, জয় হিন্দ!
আর কী কপাল, সেই মুহূর্তে মল্লিককে দেখা গেল, দুহাতে দুপ্লেট খাদ্যসম্ভার। ভাপ উড়ছে।
এদিকে পাশের কামরা থেকে পাবনার মানিক মজুমদারের প্রবেশ। কবি ও কাব্য-সংগঠক। আমি বাদ পড়লাম যে?
আমার হাতটা খালি করে দিন, কেউ বাদ পড়বে না। আমি আর হোসেন দ্রুতলয়ে মল্লিকের জোড়া হাত মুক্ত করি। পঁয়ষট্টি বছরের মল্লিক বালকের মতো কাজ করে চলেছে।
দুমিনিটের মধ্যে সে হাজির।
আমরা তিনজন পেটায় নমঃ কর্মে যোগ দিই। তবে কথাটা মল্লিককে না বলে পারলাম না।
আচ্ছা মল্লিক, তোমাদের ক্লাবে জওয়ান ছেলেদের জায়গা নেই?
আছে।
তারা কোথায়? তুমি কেন এই বয়সে ওপর-নিচ করছো?
আমি আহারের ইন-চার্জ।
বুঝলাম। কিন্তু তোমার তো সহকর্মী থাকবে?
নেই।
মানে!
কর্মীরা বাড়িতে। সন্ধ্যায় গানের-নাচের অনুষ্ঠান দেখতে আসবে।
মানে!
সে অনেক কথা।
কিছু তো শোনাও। ইশারা…
রাজনীতি মূল।
যেমন?
সব ক্লাব সরকার থেকে থোক দুলাখ টাকা অনুদান পেয়েছে। এবং এরপর প্রতিবছর এক লাখ করে পাবে।
তোমরা?
পাইনি।
কিছুই না?
কিছুই না। কারণটা এককথায়, আমরা এ-অঞ্চল সিপিএম করি।
আমি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার খানাকুল থানার নাম শুনেছিলাম সিপিএমের দুর্গ বলে। এখন কিছুটা খোলাসা হলো। পয়সা নেই তো ইয়াংরা নেই। আমার চেঁচিয়ে উঠতে ইচ্ছা হলো : জয় বাংলা!
থাক, আর বলতে হবে না। তুমি ভাই ওদিকটা সামলাও। তোমাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।
দাদা, পরে কথা হবে বলে মল্লিকের দ্রুত প্রস্থান।
হোসেন মুখ খোলে, কুইন ভিক্টোরিয়া বলেছিলেন না, দেশে কোনো আন্দোলন হবে না, শুধু বিয়ারের দাম কমিয়ে দাও। এখন এটা উলটে গেছে, বিয়ার কেনার পয়সা দাও যুবকদের।
ঠিক।
ঠিক।
বাকি আমরা দুজন টিকটিকির মতো ঠিক ঠিক করি।
দেখতে দেখতে জলের জগ আর গ্লাস এলো। পেছনে চা। এবার মল্লিকের জায়গা নিয়েছে মোর্তজা। নাতিদীর্ঘ। আদর্শ পশ্চিমবঙ্গবাসী। লেখাপড়া বেশি নেই, কিন্তু কথায় ডক্টরেট। বুঝলেন না, মুদ্রাটা আছে। যেমন রাজশাহীতে – সমস্যা নাই। কলকাতায় – ঠিক কিনা। নোয়াখালীতে – বুঝছেননি। 888sport appয় – হালায়টা এখন কমেছে।
মোর্তজা বেঞ্চের এক কোনায় বসেই, শুরু করল, বুঝলেন না, এখন দেশে মা-মাটি-মানুষের রাজত্ব। আমরা হলুম গিয়ে অস্পৃশ্য। সিপিএম করি। ফলে আমাদের খাওয়া-দাওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে।
স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া তো ভালো মোর্তজা। আমি ওকে আরো উসকে দিই।
তা আপনি সঠিক কথা বলেছেন। তবে বুঝলেন কিনা, শওকত ওসমানের মতো ব্যক্তিত্বকে 888sport apk download apk latest version তো শুধু সিপিএম জানাবে না, জানাবে দেশের আপামর জনসাধারণ। তাহলে রাষ্ট্রের দায়িত্ব কি সবচেয়ে আগে আসছে না!
এমন অকাট্য যুক্তির কাছে মাথানত না করে উপায় নেই।
আপনি এসেছেন পরিবারের পক্ষ থেকে। যা পেরেছেন সবাই মিলে সাহায্য করেছেন। আমাদের গ্রামের মাছ-বিক্রেতা, সবজি-বিক্রেতা থেকে ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত সাহায্য করেছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় দায়িত্বটা তো নেওয়া উচিত ছিল সরকার যারা চালাচ্ছেন!
মোর্তজা, তোমরাই তো রাষ্ট্র। বাদ দাও না, আর কেউ এলো না এলো।
মোর্তজা মনে হয় একটু পিস্নজড হলো।
বলুন কদিন থাকবেন।
যে-কদিন তোমরা রাখবে।
আমরা তো আপনাকে যেতেই দিতে চাই না।
ঠিক আছে, তাহলে থেকে গেলাম। অট্টালিকা বানাও!
অট্টালিকা পারব না, তবে কুঁড়েঘর করে দিতে পারব।
তুমি কিন্তু ধরতে পারোনি। আসলে আমি বলেছি অট টালিকা – মানে হাট – টালির। হাট মানে কী?
কুঁড়েঘর।
আমি তো তা-ই বলেছি – টালির কুঁড়েঘর চাই।
ঠিক আছে, আমার দলিজঘরটা টিনের চালা। ওটা ফেলে টালি বসিয়ে দেব।
সেটা কি শওকত ওসমানের ছেলের উপযুক্ত হবে! প্রিন্স দ্বারকানাথের ছেলে করেছে শাস্তিনিকেতন। আমার জন্য ফুপু আমিনা বেগম বাঁশঝাড়ের পাশে যে এক শতাংশ জায়গা ছেড়েছে, যেখানে তোমরা ছাদহীন একতলা তৈরি করে ফেলে রেখেছো, ওটার ওপর টালি বসাও। তা হলেও হবে।
কিন্তু ওটা তো বানের জায়গা।
আমি তো বানে ভেসে আসিনি দাদা!
আমার নানা ঝামটিয়ায় তিনতলায় মানুষ করেছে। বড়দাদা শেখ ইরশাদ আলী দোতলা মাটির বাড়ি ভাইপোকে দান করে গেলেন। ১৯৭৮-এর বানে বসে গেলে ঘরটা। সুতরাং এই ফ্লাড প্লেনেই আমি থাকব। বানে ভেসে যাব।
বানে ভেসে যেতে দেব না, ডোঙায় তুলব।
তা ভালো। ডাঙায় না উঠিয়ে ডোঙায়।
ডোঙার ওপর ছাউনি দিয়ে দেব।
তার চেয়ে লখিন্দরের ভেলা বানিয়ে দিয়ো।
আমাদের এদিকে কলাগাছের অভাব। মোর্তজার মুখে চিন্তার ভাঁজ।
থাক, থাক, তোমাকে আর আমার চিন্তা করতে হবে না। আমার চিন্তা আমিই করব।
রাগ করলেন নাকি, দলিজঘরের কথা বলেছি বলে?
আরে না। আমাদের মহল্লার দলিজঘরটা বেশ উঁচু ভিটেয় ছিল। আর ঝামটিয়ায় নানাবাড়িরটা ছিল বেশ জাঁকাল। ওটা ১৯৪৮-৪৯-এর বানে বসে গেল। খুব বড় বান হয়েছিল সেবার। পশ্চিমে খড়িগেড়ের বাঁধে সারারাত লণ্ঠন হাতে মানুষকে ছোটাছুটি করতে দেখেছি – তিনতলার ছাদ থেকে। কিন্তু কোপটা গেল দক্ষিণ-পুবের খালনার ওপর দিয়ে। বিকেলের দিকে খালনার বাঁধ ভেঙে যায়। আর ঘণ্টাদুয়েকের মধ্যে ঝামটিয়ার বানের জল দুফুট কমে গেল। সুতরাং মোর্তজা, যাই করো ভিটে বানের জলের ওপরে করে তারপর ঘর। তোমাদের ১৯৭৮-এর বানের কথা মনে আছে তো?
খুব মনে আছে।
তুমি তো বললে খুব মনে আছে। আমার মামাবাড়ির সাধারণ লোক বলে, খু…উ…ম মনে আছে…
এই সময় পাশের গ্রাম মাড়োখার আমিনুল হাজির। বয়স প্রায় চল্লিশ। দর্শনে যুবক। চঞ্চল। সামাজিক কাজে উৎসাহী। টেলিফোনে তার সঙ্গে আগেই আলাপ হয়েছিল বাবার শতবার্ষিকী নিয়ে।
দাদা, আপনি কি এখন ফ্রি আছেন?
কেন বলো তো?
আগামী ছয়ই জানুয়ারি থেকে রাজা রামমোহন উৎসব হবে।
কিন্তু আমি তো চার তারিখে কলকাতা যাওয়ার এরাদা করেছি।
আর দুটো দিন থেকে যান না।
সম্ভব নয়। প্লেনের টিকিট কনফার্ম করা।
একটু চিন্তা করে বলি, বলো তো আজকে এখনই যেতে পারি। উৎসব নয়, তীর্থ দর্শন বলতে পারো।
যাবেন! আমিনুল একটু অবাক।
গাড়ির জন্য তো আবার ইকবালকে ফোন করতে হয়।
গাড়ি আমি সঙ্গে এনেছি, বলে আমিনুল।
তা হলে আর দেরি নয়, জয় মা বলে বেরিয়ে পড়া যাক।
হোসেন আর আমি আমিনুলকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।
কর্মকর্তাদের অবশ্য জানিয়ে দেওয়া হয় যে, আমরা যত তাড়াতাড়ি পারি ফেরত আসছি। বুঝতে পারি, তারা যে আমিনুলের ওপর সমেত্মাষ প্রকাশ করবে না।
গাড়ি কংক্রিট ছেড়ে বড় রাস্তায় পড়তে আমিনুল বললে, এই জায়গার নাম ফুটানির মোড়।
ফুটানির মোড়! মানে!
মানেটা আমি জানি না, শুধু নামটা জানি।
কার ফুটানি, কিসের ফুটানি… বড় রাস্তার পাশে বলে?
জানি না দাদা। আপনি আপনার গ্রামের লোককে জিজ্ঞেস করবেন।
ঠিক আছে। মনে থাকবে।
অল্প সময়ের মধ্যে গাড়ি রাজহাটি বন্দরে হাজির। এটা বন্দর হলেও লোকে শুধু রাজহাটি বলে। বন্দর কোন কন্দরে লুকিয়ে গেছে। এটা এখন স্থলবন্দর। আমিনুল জানাল, একসময় নাকি এখানে নদী ছিল।
প্রকৃতির খেলা প্রকৃতি খেলছে। আমরা কোন ছার।
রাজহাটি এ-অঞ্চলের বড় বাণিজ্যকেন্দ্র। সেই চল্লিশের দশকে এখানে আমার শৈশবকালের আনাগোনা ছিল। সঙ্গে থাকত ছোটচাচা জিলানী। ডাকনাম ফনু। তখন রাজহাটি অতি ছোট একটি ব্যবসাকেন্দ্র। বাজার-হাট বসে। এখানে বড় রাস্তায় দুটো স্পিডব্রেক দেখে আমিনুলকে বলি, রক্ষে।
মানে!
রাজহাটিতে ঢুকব।
ঠিক আছে চলুন।
তার আগে ছোট ছোট ডাবের কাঁদি থেকে চারটে ডাব কেনা হলো। জল কষটা। এ-মঙ্গলঘটে দেওয়ার ডাব, পেটের জন্য নয়। আমার উদ্দেশ্য মাছের বাজার।
সবজির লাইন পার হয়ে মাঝখানে পেয়ে গেলাম মৎস্যরাজি। চোখ জুড়িয়ে গেল। বেশিরভাগ মাছ জ্যান্ত। ছোট ট্যাংরাগুলো সদ্য আনা, রেগে ট্যাঁ ট্যাঁ করছে, কান পাতলে শোনা যায়। চিঁয়োমাছ আছে – একটু ছোট। ঘুসোমাছও জ্যান্ত – পুব বাংলায় ইচামাছ। 888sport appয় বরফ-দেওয়া ফ্যাকাসে মাছ দেখতে অভ্যস্ত। মনে হচ্ছিল সব মাছ কিনে নিয়ে যাই। এখানে আড়াইশো গ্রামের দাম। 888sport appয় ভাগা। একভাগ শদুয়েক গ্রাম হবে কিনা সন্দেহ। একশ টাকার কম নয়। রুই-কাতলা-কার্প সবই চাষের মাছ। এটা এখন সর্বত্র।
বাজার দেখা শেষ। আগের চেয়ে অনেক বড় হয়েছে। রীতিমতো একটা ছোটখাটো শহর। বড় বড় কাপড়ের দোকান। কাটলারি থেকে শুরু করে ঘর সাজানোর দ্রব্যাদিও চোখে পড়ল।
রাজহাটি ছাড়িয়ে খানিক পর খানাকুল থানা ও পঞ্চায়েত দপ্তর ডানে পড়ে। দোতলা ভবন। বেশ পরিপাটি।
আরো কিছুদূর গিয়ে পড়ল ছোট টাউন কৃষ্ণনগর। বুঝলাম প্রায় এসে গেছি। কৃষ্ণ যখন বাঁশি বাজাচ্ছে রাধা আর বেশি দূরে থাকতে পারবে না। আমার কথার রেশ ধরেই গাড়ি রাধানগরে প্রবেশ করল। গা-হাত শিহরিত হচ্ছিল : ভারত পথিক – প্রথম আধুনিক মানবতার রূপকার – যিনি মাত্র ষোলো বছর বয়সে সনাতন ধর্মবিরোধী মন্তব্য করে বাড়ি থেকে বহিষ্কৃত হন। হন ধিকৃত। রাজার ছেলে রাস্তায়। অবশ্য রাজপুত্রদের কাঁধে অনেক অসাধ্য সাধনের দায়িত্ব পড়ে। আর রূপকথার নায়ক তো রাজপুত্রই।
রাধানগরে প্রবেশ করে রাস্তার ডানপাশে একটি তিনতলা ভবন চোখে পড়ে। রাজবাড়ির মতোই কলেবর ও সৌকর্য। গাড়ি অবশ্য এখানে দাঁড়াল না। এগিয়ে গিয়ে একেবারে এক বড় পার্কের ফটকে দাঁড়াল। বোঝা গেল আমরা রাজার সম্পত্তির চৌহদ্দির সামনে। ফটকে দারোয়ান এবং পাশে বড় ফলকে ভেতরে প্রবেশের নিয়মাবলি। টিকিট অপরিহার্য।
এবার আমিনুলের কলকলানির পালা। পাকা গাইড। অদূরে সতীদাহ করার স্থানটি পর্যন্ত সে ঘুরে ঘুরে দেখাল। দেখাল রাজার পৈতৃকবাড়ির ভগ্নাবশেষ। এটা এখন পার্কে রূপান্তর করা হয়েছে। পাটি বিছিয়ে যুবতী মেয়েদের সটান শায়িত চিত্রও আছে। ইমপ্রেশনিস্ট চিত্রকর ক্লদ মোনের কথা মনে পড়ে। তারাই প্রকৃতিকে প্রেমিকের দৃষ্টিতে দেখার রাস্তা খুলে দেন। এখান থেকেই আধুনিক চিত্রধারার শুরু। পরবর্তী সময়ে গেছে বুদ্ধিবাদে। কিউবিজম ও 888sport app ধারা।
এটি এখন পর্যটন কেন্দ্রের আওতায়। ওখান থেকে আমরা আসি রাজার ব্রিস্টলের অনুসরণে নির্মিত 888sport sign up bonusস্তম্ভের সামনে। এটি ব্রিস্টলের হুবহু কপি নয়। জন্মতারিখ লেখা ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দ।
এখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর 888sport apk download apk latest version নিবেদন করে আমরা অফিসঘরের দিকে এগোই। এখানে আবার প্রস্তরফলকে জন্মতারিখ লেখা ১৭৭১ খ্রিষ্টাব্দ। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করছি। হয়তো একটু জোরগলায় হবে। পাশের বাড়ির দোতলায় এক ভদ্রলোক…গায়ে গামছা… মনে হয় স্নানে যাবার প্রস্ত্ততি… জোরগলায় আমাদের শুনিয়ে বললেন, আদালত দুটো সালকেই স্বীকৃতি দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মানুষের এই সচেতনতা প্রশংসার দাবিদার। খানাকুল-রাধানগর ১৪০০ থেকে ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে স্থাপিত। এ-অঞ্চলের সাংস্কৃতিক পটভূমি নবদ্বীপ অপেক্ষা প্রাচীন। বলতে গেলে পিঠোপিঠি ভাই।
ফেরার পথে ভাবতে থাকি, খানাকুল অঞ্চল রামমোহনকে বুকে ধরে ধন্য। তেমনি সবলসিংহপুর শওকত ওসমানকে ধারণ করে একই মর্যাদা পেয়েছে। অবশ্য এখানকার মাটি রাজা রামমোহন আগেই তৈরি করে গেছেন। রাধানগর না গেলে আমার এই উপলব্ধি হতো না। শওকত ওসমানের অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের পেছনে রামমোহনের প্রভাব বড় ধরনের। সবলসিংহপুর বেশ বড় গ্রাম। জন888sport free bet কুড়ি হাজার। হিন্দু-মুসলিম অনুপাত পঞ্চাশ পঞ্চাশ। কিন্তু কোনোদিন কেউ কারো বিরুদ্ধে ছুরি বা লাঠি ধরেনি। ব্যাপারটা মনে এলেই আমি খুব গর্ব অনুভব করি। পরক্ষণেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। এর পরও দেশটা ভাগ হয়ে গেল। কোথা থেকে এলো এ-গরল? পরাধীন দেশের অনেক জ্বালা। নিয়ন্ত্রণের ভার অন্যের হাতে।
ফেরার পথে সেই প্রাসাদতুল্য বাড়িতে আমিনুল আমাদের প্রবেশ করাল। ফটকে কোনো প্রহরী চোখে পড়ল না। ঘরে ঢুকে আমিনুল হাঁক পাড়ে, পরেশদা…
দোতলা থেকে প্রায় পঁয়ষট্টি বছরের এক ভদ্রলোক নামলেন। মধ্যম উচ্চতার – শ্যামবর্ণ চুল শুভ্র, মুখে হাসি।
আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। বলে হাত বাড়িয়ে দিলেন। বসার ঘর ভর্তি বইয়ের আলমারি ও সেল্ফ বইয়ে ঠাসা। বাইরে বারান্দায় এবং নিচে বাগানে চন্দ্রমল্লিকার বাহার। বড় গাঁদাও আছে।
পরেশচন্দ্র দাস রামমোহন-গবেষক এবং ইংরেজি ভাষা বিশেষজ্ঞ। তাঁর ব্যাকরণ ও অভিধান ব্রিটেনের বিদ্যালয়েও চলে। এছাড়া শ্রীলংকা, নাইজেরিয়া প্রভৃতি দেশেও পড়ানো হয়। ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হওয়ায় খুব আনন্দ পেলাম। তিনি কিছু বই উপহারও দিলেন। তার মধ্যে বিশ্বপথিক রামমোহন একটি। আর সেটি পড়ল আমার অংশে।
গ্রামে ফিরতে ফিরতে ভরদুপুর। শীতের বেলা তাই মনে হচ্ছে দিন বুঝি শেষ হতে চলল।
আমাদের ফিরতে দেখেই ছুটে আসে আশরাফুল আলম ওরফে ফটিক। ফটিকচন্দ্রের মাথায় অন্য কোনো ভাবের উদয় হলো না, সোজা বাড়িতে। ওখানেই আমরা অতিথি।
খেয়ে বিশ্রাম নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। ফটিকের সঙ্গে তার কর্মযজ্ঞে। ততক্ষণে তার ওষুধের দোকানের সামনে বিশ-পঁচিশজনের জটলা।
ফটিকদা দোকান খোলেন, দোকান খোলেন… সমস্বর।
বাধ্য হয়ে ফটিক তালা খোলে। দুদিন দোকান বন্ধ রেখেছে। শতবার্ষিকীর কাজ। মানুষজন মেনে নিয়েছে, কিন্তু… ওষুধ বলে কথা!
আমি আর হোসেন দুটি চেয়ার দখল করি। ফটিক ঝটপট এসি চালিয়ে কাজে লাগে। এই একসঙ্গে সবাই দোকানে ঢুকবে না। লাইন লাগাও। জনতা হুকুম তামিল করে। দরজা বন্ধ করে দুজন করে ফটিক ক্রেতা ঢোকায়।
ঝটপট আলমারি থেকে ওষুধ নামাচ্ছে। মনে হলো দুর্গার পুরুষ অবতার। ভাঙ খাওয়া ভোলানাথ নয়।
টাকা-পয়সা কেউ দিচ্ছে, কেউ দিচ্ছে না।
দৃশ্যটি আমাকে ভাবায়।
বলি, ফটিক, সবাই তো পয়সা দিচ্ছে না। তোমার খাতা কই? টুকে রাখছো না?
ফটিক একটু হাসল।
দরকার নেই।
মানে?
ওরা পরে ঠিক দিয়ে যাবে।
যদি ভুলে যায়?
কী আর করব…
আর প্রশ্ন চলে না। আমি শুধু দর্শকের ভূমিকায়। কথা-বেশি-বলা অ্যাডভোকেট হোসেনও কথা বলছে না। শুধু দেখছে। পশ্চিমবাংলার কোনো গ্রাম সে এমন কাছ থেকে দেখেনি। ঘুরেছে কাশ্মির থেকে কন্যাকুমারিকা। তার জন্য এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা।
ঘণ্টাখানেকের মধ্যে লোক বিদায় করে। আর কালবিলম্ব করে না।
ফটিক বলে, চলুন, বেরোই, এরা নাহলে দিন কাবার করে দেবে। ওদিকে অনেক কাজ পড়ে আছে।
আমরা অদূরে ডাক্তার সালেমের চেম্বারের দিকে এগোই। সে সংগঠনের সম্পাদক। ভারি পদ। লোকটা হালকা, অমায়িক, কিন্তু দৃঢ়। ভালো বক্তা।
আমাদের দেখতে পেয়েই সে বেরিয়ে আসে। চলুন, চা খেতে যাই।
বলি, চেম্বার খোলা পড়ে রইল যে…
উদাসীন উত্তর, থাক…
আমরা ক্লাব-চত্বর ছাড়িয়ে অল্প দূরে গামার চায়ের দোকানে। গামার চা বিখ্যাত। সব অঞ্চলেই এরকম এক-একটা চায়ের দোকান থাকে, যা বিখ্যাত।
মনে পড়ে, 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার বাঁদিকে পড়ত মধুর ক্যান্টিন। সারা 888sport appয় মধুর ক্যান্টিন সবাই চেনে। এদিকে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের সামনে শরীফ মিয়ার চায়ের দোকান। পঞ্চাশ পয়সায় হাফ প্লেট বিরিয়ানিও পাওয়া যেত। এখন সবই শায়েস্তা খানের আমলের কথা মনে হয়। বাংলায় মোগল আমলের স্বর্ণযুগ শায়েস্তা খানের সময়।
চা খাওয়া শেষে ওরা প্যান্ডেলে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমরা পাশে একটি রায় পরিবার আছে, তাদের দর্শনে এগোই। সন্ধ্যা হয় হয়। পৌষ-সন্ধ্যা। শীত এখনো পছন্দের মধ্যে।
রায় পরিবারের তিনতলা ভবনের সামনে গিয়ে ডাক দিই। বলতে গেলে হাঁক দিই।
বাড়িতে কেউ আছেন?
একটি বালিকা দৌড়ে এলো।
সকালে ওর সঙ্গে আলাপ। ওদের ছবির প্রতিযোগিতায় ও একজন প্রতিযোগী। মনে পড়ে ওর ছবির প্রশংসা করেছিলাম।
সে আমাকে দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
আপনি!
মা, দিদি… কাকিমা… দৌড়ে আস… দ্যাখো, কে এসেছেন…
দেখতে দেখতে জটলা পাকিয়ে গেল।
আরে দাদা, আসুন আসুন… আমাদের কী সৌভাগ্য!
কী যে বলো। তোমরা হলে প্রতিবেশী। একজন প্রতিবেশী আর-একজনের বাড়িতে সাক্ষাতে এসেছে… খুব স্বাভাবিক ঘটনা…
আপনার বাবা আমাদের গৌরব… আপনি তার সন্তান… যদি দেশভাগ না হতো আমরা আপনাদের সাহচর্য পেতাম… আপনারা কত বড় মনের মানুষ।
আরে বাদ দাও! আমরা সবাই সাধারণ।
তা বললে কী হয়! ভগবান এক-একজনকে কত গুণ দিয়ে পাঠান… যাতে অন্যরা উপকৃত হয়।
ওদের এমন জ্ঞানের কথা শুনে চুপ করে যেতে হয়।
ওরা চায়ের জোগাড় করছে দেখে মানা করি।
তা হলে কী খাবেন?
বিএ পড়ে ওদের এক তরুণীর প্রশ্ন।
খেলে একেবারে নৈশ আহার করব।
সে তো আমাদের সৌভাগ্য।
না না, এটা ঠাট্টা।
তা বললে চলবে না। কিছু একটা খেতেই হবে। এখন হোক বা তখন।
শোনো, আমার মামাবাড়িতে আমার প্রিয় খাবার ছিল পরোটা আর গোল গোল করে কাটা আলুভাজি।
ঠিক আছে। তা-ই হবে।
ওরা আমাদের ভেতরঘরে নিয়ে বসিয়ে ঘিরে বসে।
বড় মেয়েটি পড়ে বর্ধমানে। ওর সঙ্গে আলাপটা ভালো জমে। মিহিদানা থেকে সীতাভোগ পর্যন্ত।
রাত শুরু হয়েছে মাত্র। এরই মধ্যে আহার্য উপস্থিত। আমার প্রিয় খাবারের সঙ্গে আরো বাড়তি মটরশুঁটি ভাজি, ডিম।
সত্যি নৈশভোজের ব্যবস্থাই হয়ে গেল। এবার হোসেন মুখ খোলে।
পশ্চিমবাংলার বদনাম কেন যে লোকে করে!
বলি, ওরা তো কলকাতা দেখে ধারণা করে। গ্রামবাংলা এখনো একইরকম। খাওয়া আর গল্পে গল্পে অনেকটা সময় গেল। ফেরার পথে ওরা সবাই মিলে একেবারে উৎসবপ্রান্ত পর্যন্ত এলো, বারণ শুনল না। দশ টাকা দামের ছোট টর্চগুলো ভালো পথ দেখাল।
ওদের ছোট মেয়েটিকে আমার একটা বই দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। কাছে না থাকায় ব্যর্থ হলাম।
হাতের কাজ ফেলে ফটিক ছুটে এলো। চলুন, অনেক রাত হয়ে গেল।
কোথায় যাব?
ঘরে।
কী জন্য?
বাহ্, খাওয়া-দাওয়া সারতে হবে না?
না।
মানে?
খাবার দরকার নেই।
কী এমন খেলেন?
সব বর্ণনার পরও সে শান্ত হলো না। আপনার ভাবি সারাদিন ধরে ব্যস্ততায় কাটাল।
সরি।
ঠিক লোকের সামনে সরি বলবেন।
ঠিক আছে।
দোতলায় আইটি কক্ষে মানিক প–তের সঙ্গে কাজের কথা জানার চেষ্টা করি। কোন কোন বড় কাগজে খবরটা পাঠানো হয়েছে। লোকাল পেপারে… খানাকুল বার্তা এর মধ্যে একটি। সম্পাদনার মান আমার কাছে উঁচু মনে হয় না। তবু কানামামা।
প–তের সঙ্গে কিছুক্ষণ কাটিয়ে ফটিকের গৃহে। মিসেসের কাছে মাফ চাওয়ার পালা। অল্পের ওপর দিয়ে গেল। জোর করে আবার খেতে বসাননি বলে ধন্যবাদ।
মাথার কাছে মোবাইলটা রেখে মাত্র লেপ মুড়ি দিয়েছি এমন সময় ফোন।
ঘাড় ফিরিয়ে দেখি পৌত্রী প্রাপ্তির কল।
প্রাপ্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠকালীন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বন্ধু আবুল হাসানের পৌত্রী। সেই সুবাদে আমারও। দুবোন প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা। প্রাপ্তি ইংরেজি 888sport live football নিয়ে পড়বে বলে তৈরি হচ্ছে। প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ– এখনো পেরোয়নি। ওরা এক সময়ের মালদাবাসী। ১৯৪৭-এ রাজশাহীর অঙ্গ। এখন জেলা।
দাদু কী করছেন?
আমি সারাদিনের ফিরিস্তি দেওয়া শুরু করি। তারপর গ্রামের একটু পরিচয় দিই। কুড়ি হাজার জন888sport free bet। শতকরা পঞ্চাশ হিন্দু-মুসলিম। ছুরি ধরেনি, লাঠি ধরেনি, কোনোদিন। তারপর ফটিকের ওষুধের দোকান চালানোর প্রক্রিয়া বললাম। বললাম চেম্বার ফেলে ডাক্তারের চায়ের নিমন্ত্রণের কথা। বাদ গেল না রায় পরিবারের আতিথেয়তার কথাও।
সব শোনার পর প্রাপ্তি বললে, দাদু, আপনি তো রূপকথার গল্প শোনাচ্ছেন!
বললাম, রূপকথার গল্প হলে তো রাজা লাগবে। আমি তো বলছি সাধারণ লোকের কথা।
কেন, দিন শুরুই তো করলেন রাজা রামমোহনকে দিয়ে।
সে তো সত্যিকার রাজা।
কেন, রাজা হরিশচন্দ্রের ভূমিকায় আছেন বড় দাদা শওকত ওসমান।
তা হলে রাজপুত্র?
কেন, বুলবন ওসমান।
পৌত্রী, আমাকে বেকায়দায় ফেলে দিলো।
বলি, রাজপুত্রের দায়িত্ব সব বাধা পেরিয়ে রাজকন্যাকে উদ্ধার। এখন রাজকন্যা কোথায় পাব?
এই সময় বিপ বিপ করে কলড্রপ। ওদিক থেকে জবাব মেলার আর কোনো সুযোগ থাকল না। r

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.