নীলিমা আফরিন
তিনদিন আগেই ঠিক হয়েছিল নেপোলি হয়ে পম্পে ঘুরে রোমে ফিরে পরদিন চিত্রকর্মশালা। ইতালিয়ান 888sport live chatীদের সঙ্গে 888sport appsের 888sport live chatী মোখলেসুর রহমান ও অন্যদের নিয়ে। অন্যদের বলতে 888sport live chatী কনক, সুকণ্ঠী সুস্মিতা, শামিম আর আমি। শামিমের সার্বক্ষণিক সঙ্গী কম্পিউটার হলেও 888sport live chatবোধ তার আছে। মোখলেসুর রহমান রোমের Culture Association Utopia Rome Italy-র আমন্ত্রণে একক চিত্রকলা প্রদর্শনী ‘রূপসী বাংলা’ (Beautiful Bengal) নিয়ে রোমে পৌঁছোয় ৪ অক্টোবর। প্রদর্শনী উদ্বোধন হয় ৮ অক্টোবর, শেষ হয় ২১ অক্টোবর ২০১১। এর সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিল Culture Association Utopia-র পরিচালক 888sport live chatী ফ্রান্সিসyুকা করডোবা। করডোবা ৫৪তম ভেনিস বিয়েনালসহ তিনবার বিয়েনালে অংশগ্রহণকারী 888sport live chatী। তাঁর আন্তরিকতা এবং সদালাপে আমরা সব সময়েই অভিভাবকসুলভ ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়েছি। কর্মশালাটি হয়ে গেল রোমের Via Del Passero Solitario-তে 888sport live chatী উত্তম কর্মকারের নিজস্ব স্টুডিওতে। উত্তম কর্মকার ১৯৮৪ সালে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বিএফএ পাশ করে পাড়ি জমান 888sport live chatকলার তীর্থভূমি ইতালিতে। স্বাধীন 888sport live chatী হিসেবে কাজ করতে করতে তাঁর মনে হয়েছে ইতালির ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত হতে না পারলে নিজের অবস্থানটি সুপ্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। আবারো ভর্তি হলেন রোমের অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে। সেখান থেকে ২০০৫ সালে Laurea in Painting first level (BFA) এবং ২০০৮ সালে Laurea Specialishica in Painting second level (MFA) ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে ফ্রিল্যান্স 888sport live chatী। সকাল থেকেই কর্মশালার গোছগাছ, ক্যানভাসের জোগাড়যন্ত্র, আড্ডার সুবন্দোবস্ত, ডিনারের আয়োজন। নেমে পড়লাম আমরা, মানে আমি, উত্তম আর মোখলেস। সবকিছু গুছানোর সার্বিক দায়িত্ব আমার, ডিনারের আয়োজনে উত্তম মোখলেস 888sport live chatীদ্বয়ের। বাঙালি মেন্যু তৈরি হয়ে গেল ঝটপট। 888sport live chatীরা এসে পড়ার আগেই কিছু কেনাকাটা সারতে হবে। ব্যস, ছুটলাম মার্কেটে। এসে দেখি একজন 888sport live chatী এসে হাজির হয়েছেন। স্বস্তি পেলাম একটু। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই অন্য 888sport live chatীরা আসতে লাগলেন মহাসমারোহে। অ্যাঞ্জেলা দেজোত্তি হাজির প্রিন্টমেকার জেকুবোকে নিয়ে। জেকুবো মূলত ছাপচিত্রী এবং প্রফেসর জিয়াম পাওলো বার্তোর সহকারী। রোমের জিয়াম অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস প্রিন্টমেকিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক। হইহই করতে করতে এসে হাজির আলেসান্দ্রা, ডেভিড ওভিডি, ইগর সাভা। ইগর জলরঙের অসাধারণ কাজ করেন। জলরঙের কাজে ওঁর মুন্শিয়ানার বয়ান শুনলাম অন্য 888sport live chatীদের কাছে। ইগর আসার সময়ে হরেকরকমের মজাদার স্যান্ডউইচ আর পানীয় নিয়ে এসেছেন। ইগর একটু আলাদা, মানে প্রচন্ড মিশুক। ইংরেজি ভালো বোঝেন এবং বলতে পারেন। ফলে তাঁর সঙ্গে আমাদের আলাপ, আদান-প্রদান জমে গেল দ্রুত। এরই মধ্যে এসে হাজির সার্জিও মিল্লোসি। তাঁরা সবাই অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে পড়াশোনা করেছেন। ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সব 888sport live chatীমন যেন এক হয়ে গেল। সব কিছুতেই আগ্রহ এবং জানার অদম্য স্পৃহা দেখা গেল 888sport live chatী আলেসান্দ্রার মধ্যে। এখনো পড়ালেখার মধ্যে আছেন বলেই হয়তো জানার আগ্রহটা প্রবল। 888sport live chatী মোখলেসের কাজ ও টেকনিক সম্বন্ধে জানার জন্য ও যেন ভেতরে ভেতরে ছটফট করছিল। আলেসান্দ্রাসহ অন্যদের আগ্রহ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকল যখন মোখলেস তার বাছাই-করা কাজের মিউজিকসহ স্লাইড শো দেখাতে থাকল। প্রশ্নের পর প্রশ্ন, অবশ্য ওদের বোঝাতে দোভাষীর যথার্থ দায়িত্বটি পালন করেন উত্তম। সিডি দেখা শেষ হলে জেকুবো, সার্জিও মূল কাজ দেখতে চাইলেন। এখানে বলে রাখতে চাই, সিডি দেখার সময়ে অলেসান্দ্রা এতোটাই মুগ্ধ হয়ে দেখছিল এবং বোঝার চেষ্টা করছিল যে, সে দু-তিনবার বসার জায়গা বদল করল। দাঁড়ানো ইগর টুপ করে বসে পড়ল সোফার এক কোণে। আমি খেয়াল করে দেখলাম ওর চোখেমুখে শুধু প্রশ্ন আর প্রশ্ন, আলেসান্দ্রো পাগলের মতো শুধু ছবি তুলছিল আর বারবার মোখলেসের মুখের দিকে তাকাচ্ছিল। অ্যাঞ্জেলা, অ্যান্টোনেল্লা ডেভিড, সার্জিও – ওরা একটু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে কাজগুলো দেখছিল। কিন্তু মোখলেস আর কনক যখন খুলে খুলে মূল ছবিগুলো দেখাচ্ছিল তখন সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল এবং নানারকমের প্রশ্ন করছিল। উত্তমদা সুন্দর মতো সব বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। ওদের এতোখানি আগ্রহ এবং আন্তরিকতা দেখে 888sport live chatী কনক ক্রমশ বিস্মিত হচ্ছিল এবং এক পর্যায়ে সেও বলতে লাগল, কী দেখাচ্ছেন মোখলেস ভাই, অসাধারণ, আমি সত্যিই আবারো প্রাণ ফিরে পাচ্ছি, খুব শিগগিরই শুরু করব। এদিকে কনকের স্ত্রী সুস্মিতাও অবাক দৃষ্টিতে অবলোকন করছিল সবাইকে, বিশেষ করে তার স্বামীকে। ভেতরে ভেতরে সে উৎফুল্ল, কারণটি হয়তো তার স্বামীর অাঁকার জগতে প্রত্যাবর্তনের ইশারা। মোখলেসের গামছার প্রিন্ট জেকুবো, আলেসান্দ্রো, অ্যান্টোনেল্লা, ইগরকে বেশি নাড়া দিচ্ছিল। ইগর এবং আলেসান্দ্রা বারবার এর টেকনিক জানতে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করছিল। মোখলেস যতদূর বুঝানো যায় বোঝাতে লাগল। ইগর তাৎক্ষণিক প্রস্তাব দিলো মোখলেসকে; বলল, আমরা কিন্তু এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম করতে পারি অনায়াসেই, যেমন তুমি এখানে এসে একটা কর্মশালা করাতে পারো, আমরাও তোমাদের দেশে যেতে পারি। মোখলেস যারপরনাই খুশি। ইগরসহ বাকি সবাইও খুশি। ফিরে আসি আগের প্রসঙ্গে। গামছা প্রিন্ট নিয়ে ওদের অতি আগ্রহ দেখে মোখলেসের মনে পড়ে গেল, যাওয়ার সময়ে আমরা কিছু গামছা নিয়ে গিয়েছিলাম। মোখলেস সেগুলো বের করে করে দেখাতে লাগল। অ্যান্টোনেল্লা একটা গামছা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নাচতে শুরু করল। এটা দেখে আলেসান্দ্রো গায়ে জড়িয়ে নিল আরেকটা গামছা। অ্যাঞ্জেলা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল আর মনে মনে ভাবছিল তার ভাগ্যে বুঝি আর গামছা জুটল না। আমি মোখলেসকে বললাম, অ্যাঞ্জেলাকেও একটি দাও। গামছা পেয়ে সেও যারপরনাই খুশি। গামছা গায়ে জড়িয়ে মানুষ যে এত খুশি হতে পারে, ওদের না দেখলে বুঝতে পারতাম না। গামছা-পর্ব শেষ হলে ডিনার-পর্ব শুরুর তাগিদ পড়ল। বাঙালি খিচুড়ি যে ইতালিয়ান 888sport live chatীদের এতো পছন্দ হবে এবং ওরা এতটা আগ্রহ নিয়ে ভূরিভোজন করবে ভাবাই যায়নি। খেতে খেতে আড্ডা, গল্প, ছবি নিয়ে নানারকমের কথাবার্তা এতটাই জমে গেল যে, ভাষার সমস্যা যেন কর্পূরের মতো উবে গেল নিমিষেই। কথার ফাঁকে ফাঁকে অ্যান্টোনেল্লা, ডেভিড ওভিডি নানারকমের খুনসুটি করছিল, অ্যাঞ্জেলা, সার্জিও আদান-প্রদানের আবেগে খানিকটা আপ্লুত হচ্ছিল। ইগর, আলেসান্দ্রা আবার বেশ সাবধানী। তাদের দুজনের আবেগ ধরা পড়ল ছবি অাঁকার সময়ে। এবার ছবি অাঁকার পালা। অ্যাঞ্জেলা একটা বোর্ড নিয়ে ইজেলে গিয়ে গভীর মনোযোগের সঙ্গে অাঁকতে শুরু করল। আলেসান্দ্রা আর ইগর একটা বোর্ডেই অাঁকতে শুরু করল। আলেসান্দ্রা অাঁকে আর ইগর টেক্সচার আনার জন্য নানারকমের টেকনিক প্রয়োগ করে। ফাঁকে আমিও মনোযোগ দিয়ে ইগর সাভার কিছু টেকনিক দেখে নিলাম। মোখলেস, উত্তম, ডেভিড, সার্জিও মিলে একটা ক্যানভাসেই শুরু করল অাঁকার মুন্শিয়ানার প্রয়োগ। এদিকে 888sport live chatী কনক খুবই সিরিয়াস। প্যাস্টেলে যেন তাঁর সব আবেগ ক্ষীপ্রগতিতে বিগলিত হচ্ছিল। অন্যরাও হাত লাগাতে চাইলে আমি বললাম, এটা কনক একাই শেষ করুক। এভাবেই এগিয়ে চলে ছবি অাঁকা, 888sport live chatীদের নিজস্ব মেজাজে, নিজস্ব স্টাইলে, নিজস্ব বোধে। 888sport live chatীরা সত্যিই অাঁকার সময়ে অন্য মানুষ হয়ে যায়। ক্যানভাসের সামনে রং-তুলি হাতে 888sport live chatীরা মজে যায় ভিন্ন এক সৃষ্টির উন্মাদনায়, প্রবেশ করে যেন সৃষ্টির এক ঐশ্বরিক জগতে। তৃপ্ত হলে ফিরে আসে বোধের জগতে। অাঁকা হয়ে যায় অসাধারণ কিছু ছবি। 888sport live chatী উত্তমের কাজ শেষ। কনকও প্রায় শেষ করে এনেছে। হঠাৎ সে ক্যানভাস ছেড়ে পেছনে তাকাল, মোখলেসকে দেখে বলল – গুরু, এবার আপনি শেষ করেন। মোখলেস মিটমিট করে হাসছে। এবার সে খুব বুঝেশুনে ক্যানভাসে হাত লাগাল, স্পেস রেখে অল্প কিছু সাজ করেই ছেড়ে দিলো। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অসাধারণ কিছু ছবি হয়ে গেল। রোমের কর্মশালায় দেখলাম ভিন্ন এক রূপ। সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে আনন্দ আছে, স্ফূর্তি আছে, আড্ডা আছে, ভাব আছে, বেদনা আছে, ক্ষরণ আছে কিন্তু কোনো হাহাকার সম্ভবত নেই, পরশ্রীকাতরতা নেই, কারণ ওদের জীবনে আমোদের পর্যাপ্ত জায়গা আছে। দেহ-মনের মুক্ততা ওদের অনেক বেশি সৃষ্টিশীল করেছে, অনেক বেশি কর্মশীলও বটে।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.