(১৯০৬-১৯৭৬)
সুরঞ্জন রায়
১৯৪০ সালের ইস্টারের এক বিষণ্ণ সন্ধ্যা। বন্দর থেকে একটা জাহাজ এগিয়ে চলেছে ক্যাপ্রির দিকে। ডেকে দাঁড়িয়ে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন দুটি মানুষ। লম্বা সুদর্শন যুবকটিকে দেখে মনে পড়ে যায় মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর সৃষ্টি করা পুরুষদের কথা। মধ্য তিরিশের এই যুবকটির মুখে স্পষ্ট হয়ে আছে তার ভেতরকার উদ্বেল ঝড়ের এক ছায়া। আর ছোটখাটো চওড়া কাঁধের অপর তরুণটির বয়স বছর তেইশের কাছাকাছি। প্রাণরসে ভরপুর গ্রাম্য ধরনের ছেলেটি কথা বলে চলেছে অনর্গল, বিষয় একটিই – ইতালির ভবিষ্যৎ আর ভবিষ্যতের বহুরঙা ইতালি গড়ে তুলতে সিনেমা কীভাবে হয়ে উঠতে পারে এক রাজনৈতিক হাতিয়ার! অভিজাত পুরুষটির নাম লুচিনো ভিসকোন্তি আর অপর তরুণটির নাম জুসেপ্পি ডি সান্তিস। এই আলাপেরই ফলে ‘ওসিসিয়োনে’ বা ‘সম্মোহ’ (অবসেশন)।
১৯০৬ সালে মিলানের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন লুচিনো ভিসকোন্তি। ভিন্ন চরিত্রের তরুণ ভিসকোন্তি ঝুঁকে পড়লেন মার্কসের দর্শনের দিকে। যৌবনে ভালোবাসলেন সিনেমাকে। বিখ্যাত ফরাসি পরিচালক জাঁ রেনোয়ার অধীনে শুরু হলো সিনেমার কাজে হাত পাকানো। রুপোলি পর্দায় বাস্তবতার পরিবেশ দেখতে চেয়ে একদিন সিনেমা পত্রিকার লেখকগোষ্ঠী কথা888sport live footballিক জিয়োভান্নি ভার্গার লেখার দিকেই হাত বাড়িয়েছিলেন তাদের স্বপ্নকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে। বিশ শতকের গোড়ায় শোষণ-যন্ত্রণায় জর্জরিত সিসিলির অসহায় জনজীবনের চেহারাটা ভার্গাকে করেছিল বেদনাবিদ্ধ। তাঁর লেখাতেও বেজে উঠেছিল তার করুণ সুর। ভিসকোন্তি ভেবেছিলেন ভার্গার গল্প দিয়েই শুরু হবে তাঁর সিনেমার জয়যাত্রা। সেইমতো লাভার অব উইডের চিত্রনাট্যও জমা পড়েছিল, কিন্তু সেন্সরের মন জয়ে অসমর্থ হওয়ায় রেনোয়ার নির্দেশে মার্কিন ঔপন্যাসিক জেমস কেইনের লেখা দ্য পোস্টম্যান অলওয়েজ রিংস টোয়াইজ অবলম্বনে ভিসকোন্তি তৈরি করলেন তাঁর প্রথম ছবি ওসিসিয়োনে বা সম্মোহ। সম্মোহ ছবির কাজ শেষ করেই ভিসকোন্তি জড়িয়ে পড়লেন ইতালির সে-সময়ের রাজনীতির সঙ্গে। ফ্যাসিস্টদের অত্যাচারে তখন বিপর্যস্ত ইতালির সমাজজীবন। ভিসকোন্তি তাঁর বিলাসবহুল ‘রোমান ভিলা’ ছেড়ে দিলেন প্রতিরোধ বাহিনীর কর্মীদের আত্মগোপনের জন্য। উত্তর ইতালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া জার্মান সৈন্যরা তখন দিশাহারা এঁদেরই গেরিলা আক্রমণে। প্রতিশোধস্পৃহায় উন্মত্ত নাৎসিদের তা-বে রোমের জনজীবনে নেমে আসে কালরাত্রি। ১৯৪৪ সালের মার্চ মাসের ওই সময় রোমের ৩৩৫ জন নাগরিককে হত্যা করা হয় এবং গেস্টাপোদের চিরুনি-তল্লাশে ধরা পড়ে যান ভিসকোন্তিসহ আরো বহু শীর্ষস্থানীয় নেতা। অতিদীর্ঘ জেরার নামে চলতে থাকে নারকীয় অত্যাচার। প্রাণদণ্ড- দণ্ড-ত করা হয় ভিসকোন্তিকে। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে কারারক্ষীদের সহায়তায় জেল ভেঙে পালাতে সমর্থ হলেন তিনি। এর পরের বছর যুদ্ধ থামলে রোমে ফিরে এসে তিনি যোগ দিলেন ইতালির নাটমঞ্চের কাজে।
এ-সময় যুদ্ধে বিধ্বস্ত ইতালির চেহারাটা সিনেমার মধ্য দিয়ে পৃথিবীর মানুষের সামনে মেলে ধরার জন্য একদল মার্কিন বুদ্ধিজীবী ইতালিতে আসেন। ভিসকোন্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে তাঁদের বেশি সময় লাগল না। এঁদেরই আমন্ত্রণে ছবির একটি অংশ তৈরি করতে ভিসকোন্তি এগিয়ে এলেন। ডেজ অব গেস্নারি নামে এই তথ্যচিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৪৫ সালে। এ-ছবির কাজের সঙ্গে লগ্ন হতে হতেই ভিসকোন্তির সিনেমা করার আগ্রহটা আবার প্রবল হয়ে ওঠে। ভার্গার 888sport alternative linkের দিকেই হাত বাড়ালেন তিনি। গ্রামশির ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ ভিসকোন্তির মনে হয়েছিল দক্ষিণের সমস্যাই ইতালির সমাজ-দ্বন্দ্বের কেন্দ্রস্থল। তাই ভার্গার 888sport alternative link মেডলার গাছের পাশের বাড়িকে (I Malavoglia) অবলম্বন করেই গড়ে উঠল কাঁপনধরা পৃথিবীর (la tera, trema 1948) চিত্রনাট্যের শরীর।
এ-ছবির নায়ক এন্টনির মতোই মহাজন-দালাল-ফড়েরা ভিসকোন্তির ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছিল – ছবিটি থেকে চার হাজার ফুট কেটে, সিসিলিয়ান ভাষার জায়গায় ইতালিয়ান ভাষা ডাব করে একটি দ্বিতীয় শ্রেণির হলে দর্শকদের দেখানোর ব্যবস্থা করা হলো। live chat 888sport উৎসবে একটি অকিঞ্চিৎকর 888sport app download bd দিয়ে দর্শকদের মুখ বন্ধ করা হলো। ভগ্নমনোরথ ভিসকোন্তিও ছবি করা বন্ধ করে আবার ফিরে গেলেন নাটমঞ্চের কাজে।
প্রায় চার বছর পর ১৯৫১ সালে আবার ভিসকোন্তির পদচারণা শোনা গেল চিনেচিত্তায়। জাভাত্তিন্নির গল্প নিয়ে গড়ে উঠল বেলিস্নসসিমার চিত্রনাট্য। বাইসাইকেল চোরের বাবা-ছেলে সরে গিয়ে এবার এগিয়ে এলো মা-মেয়ে। রোমের শ্রেষ্ঠ শিশু সুন্দরী প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে পাঁচ বছরের কন্যাকে সাজিয়ে চিনেচিত্তায় নিয়ে এলেন বিধবা মা। সামাজিক নিষ্পেষণে পিষ্ট জাভাত্তিন্নির মা থেকে ভিসকোন্তি সরে এলেন অনেকটাই, – যন্ত্রণা আর কান্নার ভারে উদ্ভ্রান্ত রক্ত-মাংসের মাকে অনন্যসাধারণ দক্ষতায় ফুটিয়ে তুললেন অ্যানা ম্যাগনানি। live chat 888sport উৎসব থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর শিরোপাটি জিতে নিয়ে এলেন 888sport live chatী। কিন্তু ‘নয়া-বাস্তববাদ’ থেকে সরে আসার অভিযোগে এ-ছবি থেকেই জাভাত্তিন্নি আর ভিসকোন্তির দার্শনিক দ্বন্দ্ব পৌঁছল চরমে। এমনকি সে-সময় রজালিন্ড বা অ্যাজ ইউ লাইক ইট মঞ্চ প্রযোজনায় পরিচালক যে-মঞ্চসজ্জার আয়োজন করলেন তাকেও ছেড়ে কথা বললেন না জাভাত্তিন্নি।
সত্যিই ‘নয়া-বাস্তববাদ’ থেকেই ‘বাস্তবতা’ ও ‘রোমান্টিকতা’র দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ভিসকোন্তি। ১৯৫৪ সালে রঙিন ছবি সেন্সোতে সে-চেহারাটা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠল। গল্পের পটভূমি ছড়িয়ে আছে ১৮৬৬ সালকে কেন্দ্র করে, সে-সময় ইতালির ইউনিফিকেশনের জন্য মানুষের আগ্রহ পৌঁছেছে তার চরম বিন্দুতে। অস্ট্রিয়া-ইতালির মধ্যে চলছে ধুন্ধুমার লড়াই। এই যুদ্ধের পটভূমিতেই ভেনিসে শত্রুপক্ষের দুই মানুষ-মানুষী জড়িয়ে পড়ল শরীরী ভালোবাসা ও তার ব্যর্থতাজাত প্রতিশোধের ভয়াবহ আগুনে। এই গল্পের উজানে ভাসতে ভাসতে আমরা চলে আসি আমাদের চেনা ঘরে-বাইরের বিমলা-সন্দ্বীপের উপাখ্যানে, এমনকি সেখান থেকে মোহরের আখ্যানও বাদ গেল না। ১৮৮৩ সালে লেখা ক্যামিলেস্না বইতোর গল্পকে কেন্দ্র করে এ-ছবি তৈরি হলেও ঘটনার ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ভিসকোন্তি আমাদের কাছে পৌঁছে দেন ইতিহাসের নির্যাসকে। প্রথম রঙিন ছবি হলেও ভিসকোন্তি সেন্সোতে রঙের ব্যবহার করেছেন অসাধারণ দক্ষতায়। গোড়ার দিকে নায়ক-নায়িকার মনে ভালোবাসার উন্মেষে পর্দাজুড়ে এসেছে সবুজের সমারোহ। আর শেষের দিকে ভালোবাসার মৃত্যুর আগাম বার্তা নিয়ে যখন নায়িকা লিভিয়ার (অ্যালিদা ভ্যালিস্ন) রথ ছুটে চলেছে রণভূমির মধ্য দিয়ে, তখন পর্দা ঘিরে বেজে উঠল ধূসর রঙের হাহাকার – এমনই কত-না তুলির সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম টানে ঝংকৃত হয়ে উঠেছে সেন্সোর পরিম-ল! এ-ছবি আমাদের মনে করিয়ে দেয় কয়েক বছর পরে তোলা আমেত্মানিয়নির লাল মরুভূমির (এল ডেজার্টো রোসো) কথা।
১৯৫৭ সাল, এবার ভিসকোন্তি বেছে নিলেন দস্তয়েভস্কির একটি গল্প – তৈরি হলো শ্বেত রাত্রি (Le Notti Bianche) গল্পের কেন্দ্রস্থল লিভোর্নোর শহরতলি অঞ্চল। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে নাতালিয়া (মারিয়া স্কেল্লা) প্রতীক্ষা করে থাকে তাদেরই পরিবারে অতিথি হয়ে আসা তার ভালোবাসার মানুষের ফিরে আসার জন্য। কিন্তু প্রতীক্ষার পালা দীর্ঘায়িত হয়ে সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেলে সে বেছে নেয় আত্মহননের পথ। ওদিকে অন্য একটি শহর থেকে বদলি হয়ে আসা নবাগত মারিওর (মার্সেলেস্না মাস্ত্রোয়ান্নি) একাকিত্ব কাটতে চায় না কিছুতেই। পথে পথে ঘুরে বেড়াতে গিয়ে একদিন সে দেখা পেয়ে যায় মৃত্যুবিলাসিনী নাতালিয়ার। গভীর মমতায় তাকে আগলে রাখতে চায় সে, ভালোও বেসে ফেলে মেয়েটিকে। কিন্তু একদিন বয়স্ক প্রেমিক ফিরে আসায় মারিওকে বিদায় জানায় নাতালিয়া। নাটমঞ্চের প্রেমে মজে থাকা ভিসকোন্তি স্টুডিওর ভেতরেই গড়ে তোলেন অট্টালিকায় ঘেরা লিভোর্নোর গলিঘুঁজি, আধো-অন্ধকারে তা হয়ে ওঠে মায়াময় – ডিপ ফোকাস আর লং শটে বিচ্ছুরিত হয় থিয়েটারের গন্ধ। এ-ছবিতে ভিসকোন্তির নাট্যব্যক্তিত্ব আর সিনেমা পরিচালকের সত্তা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।
দক্ষিণ ইতালির অনুন্নত পরিবেশ ছেড়ে উত্তরের স্বর্গরাজ্যে পৌঁছার স্বপ্ন দেখে সেখানকার মানুষ, কিন্তু ইতালির পুনর্বাসনের কঠোর আইন সে-স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দেয় বারবার। ১৯৫১ থেকে ১৯৬১ সালের মধ্যে সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ইতালির অনুন্নত দক্ষিণ ছেড়ে আঠারো লাখ মানুষ উত্তরের 888sport live chatাঞ্চলে চলে আসে রুজির সন্ধানে। শুধু ১৯৫৮ সালেই দক্ষিণ ছেড়ে মিলানে এসে হাজির হয় ১৩ হাজার মানুষ। ইতিহাসের এই চেহারাটাই স্থান পেয়েছে ১৯৬০ সালে ভিসকোন্তির রোকো এবং তার ভাইয়েরা (Rocco e i suoi fratelli) সিনেমায়। ছবির শুরুতেই ক্যামেরা চলে আসে মিলানের সেন্ট্রাল স্টেশনে। ট্রেন থেকে নেমে আসে প্যারন্ডি পরিবার। প্যারন্ডি পরিবারের গ্রাম্য মানুষগুলোকে 888sport live chat-নগরীর বিশাল রেলওয়ে স্টেশন যেন গিলে খেতে আসে – মুহূর্তেই এদের করুণ পরিণতির আভাস আমাদের কাছে বারতাবহ হয়ে ওঠে। এই পরিবারের কর্তা মারা যাওয়ায় ওরা গ্রামের বাড়ি ছেড়ে বড় ছেলের কর্মস্থল মিলানে এসে হাজির হয়েছে। বড় ছেলের ফ্ল্যাটে সেদিন এনগেজমেন্টের আনন্দ-উৎসবে জড়ো হয়েছে কিছু বিশিষ্ট মানুষ। সেখানে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অশ্রম্নজলে ভেলা ভাসিয়ে প্যারন্ডি পরিবার চলে আসে ভ্যাগাবন্ডদের আশ্রয়স্থলে। এবার শুরু হয় টিকে থাকার লড়াই। এভাবে অনুন্নত দক্ষিণ ইতালি থেকে পালিয়ে আসা দমবন্ধ হয়ে আসা মানুষের উত্তর ইতালির স্বপ্নের রাজ্যে পৌঁছানোর আর্তির ধাক্কা খাওয়ার বাস্তব চেহারাটা বেদনাবিদ্ধ করে তুলল আমাদের।
দ্বিতীয় ভাই সাইমন রোজগারের আশায় আত্মনিয়োগ করে একটি 888sport live chat-তালুকে। তৃতীয় ও চতুর্থ ভাই চিরো ও রোকো দুই বিপরীত চরিত্রের মানুষ – বক্সিং রিংয়ে প্রতিষ্ঠা পেতে চায় চিরো কিন্তু চরিত্রের অসংযম তাকে সবার কাছে অপ্রিয় করে তোলে। ওদিকে রোকো তার ভাইয়ের স্খলন-পতনকে আড়াল করে
ধুলো-কাদা থেকে তাকে তুলে আনার চেষ্টা করে। রোকো একটি ড্রেস পলিশের দোকানে সামান্য চাকরি জুটিয়ে নেয়; কিন্তু ভাইয়ের অসাধুতার জন্য চাকরিটি হারায় সে। একজন পতিতার সঙ্গে চিরোর সম্পর্ক গড়ে ওঠে; কিন্তু চিরোর অসাধুতার জন্য মেয়েটি তাকে ছেড়ে যায়। অন্য ধরনের তরুণ রোকো তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে দুজনের মধ্যে তৈরি হয় গভীর প্রেম। চিরো সহ্য করতে পারে না, বন্ধুদের সঙ্গে মিলে ভাইকে বেদম প্রহার করে তৃপ্তি পেতে চায় সে। বক্সিং রিং থেকে বিতাড়িত হয়ে আরো উন্মত্ত হয়ে উঠে সে বিশাল দেনার দায়ে জড়িয়ে পড়ে। ওদিকে রোকোর মধ্যে সম্ভাবনা দেখে তাকে আহবান জানায় মালিকপক্ষ। মিলিটারিতে থাকাকালে বক্সিংয়ের শিক্ষা এবার কাজে লাগে তার।
পরিবারকে স্বাচ্ছন্দ্যের পথে ফিরিয়ে আনতে ভাইদের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই চিরোর ঋণের বোঝা নিজের কাঁধে টেনে নেয় রোকো। চ্যাম্পিয়নশিপে রোকোর জেতায় যখন প্যারন্ডি পরিবার আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠেছে, ঠিক তখনই চিরো তার প্রাক্তন প্রেমিকাকে হত্যা করে। হতভম্ব ছোটভাই লুকা দাদার কাছে জানতে চায় এখন ওদের গ্রামে ফিরে যাওয়াই ঠিক হবে কি না! রোকোর ভূমিকায় অসাধারণ অভিনয় করেন অ্যালান ডিলন। তাঁর সাফল্যম–ত অভিনয়-জীবনকে মধ্যগগনে পৌঁছে দিতে এ-ছবির ভূমিকা অস্বীকার করা যায় না। এ-ছবি যেন কাঁপনধরা পৃথিবীকেই ভিসকোন্তি অন্য প্রেক্ষাপটে পরিবেশন করলেন। ছবি দেখতে দেখতে আমাদের বারবার মনে পড়ে যায় দস্তয়েভস্কির 888sport alternative link অপরাধ ও শাসিত্মর কথা।
ভার্গার প্রতি তাঁর ভালোবাসা ছাড়াও ভিসকোন্তিকে গভীরভাবে আকর্ষণ করেছিল দস্তয়েভস্কি ও টমাস মান। শ্বেতরাত্রি তো সরাসরি দস্তয়েভস্কির গল্প থেকেই নেওয়া। রোকোর গল্পেও খুঁজে পাওয়া যায় দস্তয়েভস্কির গভীর প্রভাব। তবে রোকো এবং তার ভাইয়েরার সঙ্গে টমাস মানের যোসেফ এবং তার ভাইয়েরার মিলের কথা ভাবতে গেলে প্রথমেই মনে আসে নামের মধ্যে মিলের কথা, তবে সেটা ছেড়ে দিলেও তাঁর সিনেমায় ওই 888sport alternative linkের প্রভাবের কথা ভিসকোন্তি নিজেই স্বীকার করেছেন। ভালো করে খেয়াল করলে আমরা দেখতে পাই, নাটমঞ্চের প্রতি ভিসকোন্তির গভীর অনুরাগ তাঁকে সিনেমার আবহ তৈরির জন্য অপেরার দিকেই টেনেছে বেশি করে।
১৯৬৩ সালে ল্যাম্পেদুসার গল্প নিয়ে ভিসকোন্তি গড়ে তুললেন নেকড়ে (I1 Gattopardo) সিনেমাটি। এর আখ্যানভাগে রয়েছে ১৮৬০ থেকে ১৮৬২ সালের ইতালির ইতিহাসের দিনবদলের পালা। কাউন্ট কাভুর, ম্যাৎসিনি, গ্যারিবল্ডিদের নেতৃত্বে ইউনিফিকেশনের জন্য মানুষের আগ্রহ তখন তুঙ্গে পৌঁছেছে। গ্যারিবল্ডির নেতৃত্বে সিসিলিতে অবসান ঘটেছে ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের। এই গল্পের অন্তস্তল খুঁড়ে পাওয়া যায় ভিসকোন্তির পরিবারেরই দ্বন্দ্বমধুর আখ্যানকে। এ-ছবির প্রধান চরিত্র সেলিনা পরিবারের প্রধান ডন ফ্যাব্রিৎজিওর (বার্ট ল্যাঙ্কাস্টার) বুকে কান পাতলে একদিকে যেমন আমরা শুনতে পাই ভিসকোন্তির করুণ দীর্ঘশ্বাস, অন্যদিকে ছবি দেখতে দেখতে আমাদের সামনে ফুটে ওঠে নৈর্ব্যক্তিক এক ইতিহাসকারের অবয়ব। ইতিহাসের অমোঘ নিয়মেই সেদিন সেলিনাদের মতো সামন্তপ্রভুরা সরে গিয়ে বুর্জোয়ারা এগিয়ে এসেছিল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। এ যেন বাণিজ্য-পুঁজির নির্দেশেই নেকড়েরা সরে গিয়ে ইতিহাসের রঙ্গমঞ্চে আবির্ভাব ঘটল চতুর শেয়ালদের।
গ্যারিবল্ডির দলে নাম লিখিয়েছিল ডন ফ্যাব্রিৎজিওর প্রিয় ভাইপো টানক্রেডি (অ্যালান ডিলন) – ভাইপো তার প্রিয়, কেননা ছেলেরা অকর্মণ্য, অলস আর মেয়ে কনচিত্তা ভালোবাসলেও টানক্রেডি সে-ভালোবাসা অতিক্রম করে এগিয়ে যায় হঠাৎ বড়লোক হওয়া পরিবারের মেয়ে অ্যাঞ্জেলিকার (ক্লডিয়া কার্ডিনেল) দিকে। বিচক্ষণ ফ্যাব্রিৎজিও ইতিহাসের নির্দেশকে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারে বলেই সাদরে মেনে নেয় অ্যাঞ্জেলিকাকে। একইভাবে সে মেনে নেয় নিজের অন্তিম পরিণতিকেও। ছবির শেষদিকে ৪৫ মিনিটের অতিদীর্ঘ বলনাচের দৃশ্যের মধ্য দিয়ে ভিসকোন্তি অসাধারণ নৈপুণ্যের সঙ্গে ইতিহাসের চলনকে ধরার চেষ্টা করেছেন, দৃশ্যটি শেষ হয়েছে একটি লোকনৃত্য ‘মুজরকা’র মধ্য দিয়ে – সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ভিসকোন্তি যেন এই নাচটির মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের জয় ঘোষণা করতে চেয়েছেন।
এ-প্রসঙ্গে একটি ফ্রেমের কথা এখানে উল্লেখ করতেই হয় – বলনাচের আসরে সবাই গভীরভাবে মাতোয়ারা হয়ে আছে, সবাইকে শুভেচ্ছা জানাতে জানাতে আনমনে ঘুরে বেড়াচ্ছে ফ্যাব্রিৎজিও আর এভাবে ঘুরতে ঘুরতে একসময় সে চলে আসে ফাঁকা একটা বসার ঘরে, সেখানে দেয়ালজুড়ে টাঙানো গ্রিউসের অাঁকা ‘ডেথ অব অ্যা জাস্ট ম্যান’ ছবিটির সামনে এসে দাঁড়িয়ে বিহবল হয়ে যায় ফ্যাব্রিৎজিও, ভাবতে থাকে নিজের মৃত্যুর কথা। ভিসকোন্তি এই ফ্রেমটার মধ্য দিয়ে সামন্তপ্রভুদের বিদায়ঘণ্টার সুর আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত করে দেন। বিপুল ব্যয়বহুল এই ছবিটিকে ভিসকোন্তি পরিচালনা করেছেন অসাধারণ দক্ষতায়, বিশাল জনগণকে কী নিপুণ দক্ষতায় তিনি নিয়ে এসেছেন আমাদের সামনে। বাঘা বাঘা তারকাকে দিয়ে অভিনয় করানোয় ছবিটির বিশ্বাসযোগ্যতা যেমন পৌঁছেছে তার চূড়ান্ত বিন্দুতে, তেমনি খরচও বেড়েছে অনেকটাই। এ-ছবির মধ্য দিয়েই আমরা দেখতে পেলাম সিনেমা বানানোয় ভিসকোন্তির চরম সিদ্ধিকে।
কালপুরুষের গভীরে আসীন উজ্জ্বলতায় ভরা হে আমার জীবনের ধ্রুবতারা,
ভাবিনি আবার কখনো তোমার স্পর্শে আলুলায়িত হবে নিদ্রাহারা
জীবন পিতার ভবনে এসে। সেরেনাদে সেরেনাদে মুখর হবে আবার স্বপ্নলালিত
শৈশবের দিনগুলি, মুছে গেল যারা সুখ888sport sign up bonus নিয়ে ব্যথাতুর আমার প্রার্থনায় \
১৯৬৫ সালে গ্রিক উপকথা থেকে ‘ইলেকট্রা’ গল্পটি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে ভিসকোন্তি বুনে ফেললেন সানড্রা সিনেমাটি। আমাদের মনে পড়ে যায় এর কয়েক বছর পর মিকলোস ইয়াঙ্কসোও ‘ইলেকট্রা’ উপাখ্যান নিয়ে ছবি করেছিলেন ইলেকট্রা মাই লাভ। অবশ্য সেখানে ফ্যাসিস্ট সম্রাটের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা হয়েছিল রক্তরাঙা পথে। ভিসকোন্তির ছবিতে ফ্যাসি শক্তির ভয়ংকর চেহারাটা কিছুটা আবছাভাবে হলেও এই গল্পের প্রেক্ষাপটে থাকায় ইউরোপের মানুষ একে সাধুবাদ জানাল। ভেনিস থেকে 888sport live chatী জিতে নিলেন স্বর্ণসিংহ। ছবির শুরুতেই আমরা দেখতে পাই সানড্রা/ ইলেকট্রা (ক্লডিয়া কার্ডিনেল) তার গ্রাম্য স্বভাবের আমেরিকান স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হয়েছে ইতালির ছোট্ট কিন্তু মনোরম একটি শহরের পিতৃদত্ত প্রাচীন একটি বাড়িতে, যেখানে অনুষ্ঠিত হবে পিতার পারলৌকিক কাজ। বাড়িটিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নাৎসি অত্যাচারের নানা ক্ষতচিহ্ন। বাড়িটির আনাচে-কানাচে আনমনে ঘুরে বেড়ায় সানড্রা। মনে পড়ে, মা আর সৎবাবার বিশ্বাসঘাতকতায় নাজিরা ধরে নিয়ে যায় তাকে। মনে পড়ে, দাচাউয়ের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বাবার মৃত্যুর কথা – অপরাধ, তিনি ছিলেন ইহুদি। সফোক্লিস-ইউরিপিডিসের নাটকের গভীরে অবগাহন করে ভিসকোন্তি খুঁজে পেলেন ভাইবোনের মধ্যে এক অবৈধ সম্পর্কের ইন্ধন। একটি বুদ্ধিদীপ্ত শটের মধ্য দিয়ে আমরা দেখতে পাই বাড়ির অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে আসা ভাই, জিয়ান্নি/ অদ্রিকে। দুটি ঘরের মধ্যে রয়েছে একটা কাচের পার্টিশন, সেই পার্টিশনে ভেসে ওঠে জিয়ান্নির মুখ – কখনো মনে হয় ক্রুশবিদ্ধ যিশুর কথা, আবার কখনো মনে হয় এ যেন সানড্রার অবচেতনেই দুলছে ভাইয়ের মুখ। বাড়ি পৌঁছেই তারা তাদের বৃদ্ধ কাজের মেয়ের কাছ থেকে জানতে পারে যে আত্মীয়-পরিজনদের ওখানে আসার কথা তারা আসতে পারছে না। বিরাট বাড়িটা ওদের যেন গিলে খেতে চায়।
সামান্য ঝগড়ার সুযোগে একদিন শ্যালককে বেদম পিটিয়ে দেয় ভগ্নিপতি। মা-বাবার সঙ্গেও ছেলেমেয়ের বিরূপ মনোভাব সামনে চলে আসে। ক্রমেই সানড্রা একা হয়ে যেতে থাকে, জিয়ান্নি ছাড়া তার আর আপনজন কেউ থাকে না। ধীরে ধীরে আমরা সানড্রার মধ্যে খুঁজে পাই ইলেকট্রার ছায়া।
ষাটের দশকের মাঝামাঝি অ্যালবেয়ার ক্যামুর মৃত্যুর পর ১৯৬৭ সালে ভিসকোন্তি বেছে নিলেন ১৯৪২ সালে লেখা তাঁর দ্য আউটসাইডার 888sport alternative linkটিকে। চিত্রস্বত্ব বিক্রি করলেও ক্যামুর স্ত্রী জেদ ধরলেন সিনেমার খাতিরে 888sport alternative linkটি থেকে একচুলও নড়া যাবে না। এতদিন ধরে যে-দৃষ্টিকোণ সৃষ্টি থেকে সৃষ্টিতে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল, এবার এই প্রথম ভিসকোন্তিকে তার থেকে সরে অপর আরেকজনের ওপর নির্ভর করে তার বর্ণনা-ভাষা-দৃষ্টিকোণকে বরণ করেই নতুন ছবি আগন্তুকের (Lo straniero) কাজে হাত দিতে হলো – হোঁচট খেল সিনেমার ছন্দ। আসলে জীবনের বিরুদ্ধে নায়ক মারসল্টের একক বিদ্রোহ, মৃত্যুকে চ্যালেঞ্জ জানানোর স্পর্ধা ভিসকোন্তিকে টেনে ছিল প্রবলভাবে। ঘটনার সময়কালকে বেছে নিতে ক্যামুর স্ত্রীর কাছ থেকে ভিসকোন্তি একটুখানি স্বাধীনতা চেয়ে নিয়েছিলেন, ১৯৩৮ সালের আলজেরিয়া থেকে তিনি সরে চলে এলেন ১৯৫৯ সালের আলজেরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রেক্ষাপটে। ভিসকোন্তি অনেক যত্নে গড়ে তুললেন প্রাচীন নগরী আলজেরিয়াকে, যেখানে নায়ক মারসল্ট কেরানির চাকরি করে ছোট এক ফরাসি সংস্থায়। মায়ের মৃত্যুর পরপরই সমুদ্রের বেলাভূমিতে বান্ধবীকে নিয়ে বেড়াতে এসে প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে মারসল্ট। বান্ধবী জানতে চায় পুরুষটি তাকে ভালোবাসে কিনা, এক অকরুণ উদাসীনতায় মারসল্ট উত্তর দেয়, ‘এটা আমি ঠিক জানি না।’ মেয়েটির অভিমান আহত হয়, সরে যেতে চায় সে মারসল্টের কাছ থেকে, কিন্তু পারে না। এখানেই সে বন্ধুর ওপর নির্যাতনের প্রতিশোধ হিসেবে হত্যা করে বসে একটি আরব ছেলেকে। পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায় তাকে।
বন্ধুকে নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে তাকে সরিয়ে সে নিজেই এগিয়ে গিয়েছিল আরব ছেলেটির দিকে, ছেলেটির হাতের ছুরি ঝিলিক দিয়ে উঠে চোখ ধাঁধিয়ে দেয়, খর তপনে বিভ্রান্ত মারসল্টের পিস্তল গর্জে ওঠে। এসব কোনো কথাই সে কোর্টে কবুল করে না, ফলে বিবেকহীন, নির্বোধ খুনি হিসেবে প্রাণদণ্ডই হয়ে যায় তার। আদালতের বিচারসভায় চরম শাসিত্মর ভয় তাকে বিচলিত করতে পারে না, এক নিদারুণ উপেক্ষা আর উদাসীনতায় তাকে মগ্ন দেখে বিচলিত হয়ে ওঠে চারপাশের লোকজন। এমনকি প্রাণদণ্ড-র পূর্বমুহূর্তে তার কাছে আসা যাজককেও সে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। যদিও জীবনের প্রতি মায়া তাকে যন্ত্রণায় অস্থির করে তোলে। উৎকণ্ঠার এ-মুহূর্তগুলো মাস্ত্রোয়ান্নির অভিনয়ে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। ছবি প্রস্ত্ততির পূর্বমুহূর্তে প্রযোজকদের চাপে ভিসকোন্তিকে অনিচ্ছাসত্ত্বেও অ্যালান ডিলনের পরিবর্তে নাম ভূমিকায় নিয়ে আসতে হয় মার্সেলেস্না মাস্ত্রোয়ান্নিকে – ক্ষুণ্ণ হয় ছবির গঠন পারিপাট্য। ক্যামুর অাঁকা চরিত্রটির বুদ্ধিনির্ভর উদাসীনতা সরিয়ে মাঝে মাঝেই আবেগে, যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে নায়ক চরিত্রটি, বিশেষত কোর্ট রুম সিকোয়েন্সের অভিনয়ে। যদিও মৃত্যুর আগে যাজকের সঙ্গে কথোপকথনের দৃশ্যে মার্সেলেস্নার অভিনয় অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
অতলান্তিক জীবনের গভীরে অবগাহন করতে করতে ঋদ্ধ হয়ে উঠতে থাকে ভিসকোন্তির মানসভুবন। সাতাশ বছর বয়সে, যৌবনের প্রারম্ভে 888sport live chatীর চেতনাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়ে গেল নাৎসি উত্থানের বিরুদ্ধে টমাস মানের সতর্কবাণী। এখানে আমাদের মনে পড়ে যায় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পটভূমিকায় মানের খেলা ডক্টর ফাউস্টস 888sport alternative linkটির কথা। 888sport alternative linkের নায়ক লেভেরকুয়েন এক সুরকার; তিনি বোদলেয়ার ও নিটশের মতো প্রথম যৌবনে উপদংশ রোগে আক্রান্ত হন (মনে হয় সেটাই তাঁর ‘শয়তান’); কুড়ি বছর ধরে অলোকসামান্য সৃষ্টিপ্রতিভার পরিচয় দেওয়ার পর সেই গুপ্ত ব্যাধির বিষক্রিয়ায় জড়বুদ্ধি ছন্নমসিত্মষ্কে পরিণত হয়ে আরো দীর্ঘকাল জীবিত থাকেন। অন্য এক স্তরে, মানের ফাউস্ট তাঁর জন্মভূমি জার্মানি; উনিশ শতক ধরে জ্ঞান-888sport apk-888sport live chatকলার সবৃক্ষেত্রে জার্মানিতে যে-সৃষ্টিশীলতার বিস্ফোরণ ঘটেছিল, হিটলার ও নাৎসিবাদের ভয়াবহ মুদ্রা গুনে গুনে তারই মূল্য দিতে হলো। শুরু হয়ে যায় টমাস মানকে নিয়ে পড়াশোনা, যার পরিণতিতে ১৯৭১ সালে পৌঁছে আমরা পেয়ে যাই ভেনিসে মৃত্যু সিনেমাটি। টমাস মানের গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র কথা888sport live chatী অ্যাসেনবাখ লেখকের পরবর্তী 888sport alternative link ডক্টর ফাউস্টসের কেন্দ্রীয় চরিত্র লেভারকুয়েনের মতো ভিসকোন্তির সিনেমায় হয়ে ওঠে সুরঝর্ণায় স্নাত এক সংগীত888sport live chatী। কথা888sport live chatী অ্যাসেনবাখ সংগীত888sport live chatী হওয়ায় ভিসকোন্তির হাতে সিনেম্যাটিক পরিভাষার প্রয়োগ-নৈপুণ্যে ঝলমল করে উঠেছে গোটা ছবিটি। শ্রাবণের ধারার মতোই সিকোয়েন্স থেকে সিকোয়েন্সে ঝরে পড়েছে মালহার হবাগনার-বিটোভেনের সুরলহরি। যদিও হবাগনার-বিটোভেন এ-ছবিতে আচম্বিতে এক-আধবার এসে পড়লেও পরিচালকের প্রয়োজনে আধুনিক জীবনের জটিলতাকে ধরতে গুস্তাভ মালহারের ফিফথ সিম্ফনি বেজেছে বারবার।
ছবির টাইটেল কার্ড শেষ হতেই আমরা দেখতে পাই জলপথে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে এগিয়ে চলেছে একটি স্টিমশিপ, আর তাতে ডেক চেয়ারে আসীন ছবির নায়ক অ্যাসেনবাখ (ডার্ক বোগার্ট)। মাথার ওপর চেপেবসা আকাশটাকে দেখতে দেখতে আমাদের মনে জাগে এক বিষণ্ণ সন্ধ্যার আগমনবার্তা; কিন্তু একটু বাদেই আমাদের ভুল ভেঙে যায়, জেটির প্রান্তসীমায় জেগে উঠেছে একটি নতুন সকালের কলকাকলি। অ্যাসেনবাখের চালচলন দেখতে দেখতে আমাদের মনে হয় সে বোধহয় খুব একটা সুস্থ নয়। তবে কি হাওয়া বদলের জন্যই সে এসে পৌঁছেছে এই বন্দরনগরীতে! একটা মেডিক্যাল টিম এগিয়ে আসতে থাকে জলযানটির দিকে, কিছুটা অপ্রস্ত্তত বোধ করে অ্যাসেনবাখ। মনে হয় কয়েক বছর আগে পেস্নগের মহামারি আকার ধারণ করার জন্যই এই সতর্কতা। অ্যাসেনবাখ আর মাঝির আলাপচারিতা শুনতে শুনতে চকিতে আমাদের মনে ভেসে আসে খ্রিষ্টান বিশ্বাসে রঞ্জিত বৈতরণীর নৌকায় আসীন ক্যারনের ছবিটি। আবহে মৃত্যুর দ্যোতনা ছড়াতে থাকে মালহারের ফিফথ সিম্ফনি। ছবির শুরু থেকেই মৃত্যুর এই নিঃশব্দ পদসঞ্চার আমাদের অন্তিম পরিণতির জন্য প্রস্ত্তত করে তোলে। নামের মধ্যেই প্রচ্ছন্ন ছিল যে বিদ্রূপ – কামনার দেবীর কাছে এসেই পূর্ণতা পেল অ্যাসেনবাখের জীবনের বলিদান আর তাই গুস্তাভ মালহারের ফিফথ সিম্ফনির ব্যবহার এখানে এসে পেয়ে যায় জীবনের গভীরতর তাৎপর্য।
ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে জল কেটে এগিয়ে চলে স্টিমশিপ এসমেরান্ডা। ক্যামেরায় ধরা পড়ে তীর ধরে ছুটে চলা সৈনিকদের ছবি, তীরের কাছাকাছি একটি 888sport sign up bonusসৌধ চোখে পড়ে – ইতিহাস ঘেঁটে জানতে পারি, মহামারি পেস্নগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পর নগরবাসী এই গির্জাটা তৈরি করছিল। এক-সময় কাঙিক্ষত তীরে এসে নোঙর করে এসমেরান্ডা, ঘুমিয়ে পড়া জলযানটি মুহূর্তেই মুখর হয়ে ওঠে যাত্রীদের অবতরণের উদ্দামতায়। অ্যাসেনবাখও প্রস্ত্তত হয় – পা বাড়ায় অবতরণের জন্য। গন্তব্যে পৌঁছনো নিয়ে অ্যাসেনবাখের সঙ্গে স্থানীয় কর্মচারীদের ঘনিয়ে ওঠে কিছুটা বিবাদণ্ডবিসম্বাদ। শেষ পর্যন্ত হোটেলের অভ্যন্তরে পৌঁছে খানিকটা স্বসিত্ম খুঁজে পায় যেন। অ্যাসেনবাখের জন্য নির্দিষ্ট ৩০৮ নম্বর ঘরের ব্যালকনি থেকে সমুদ্রের বেলাভূমিকে প্রাণভরে দেখে তৃষ্ণা মেটাতে চায় সে। হোটেলঘরে জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখে, বিশেষত স্ত্রী ও কন্যার ছবি দুটোয় চুমু খেয়ে যথাস্থানে রেখে পরিপাটি করে বেশভূষা পালটে লাউঞ্জে এসে উপস্থিত হয় অ্যাসেনবাখ। টপ শটের মহিমা ছড়িয়ে ক্যামেরা ঘুরতে থাকে। জাঁকজমকে ঠাসা লাউঞ্জ-ঘরটি প্রতিষ্ঠিত করে দেয় এদের শ্রেণি-চরিত্রটি। এখানে কাছাকাছি আরেকটি টেবিল অধিকার করে বসে আছে একটি পোলিশ পরিবার। ওদের সঙ্গের অপরূপ-দর্শন এক কিশোর, টাডেউজ চোখ টেনে নেয় অ্যাসেনবাখের। ফ্ল্যাশব্যাকে ভেসে আসে আগে একবার হোটেলে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা – বন্ধু অ্যালফ্রেডের পরিচর্যায় সেবার সেরে উঠেছিল সে, কিন্তু বেশি করে মনে পড়ছে সেদিনই বিকেলে 888sport live chatের ইন্দ্রিয়পরতা নিয়ে তার সঙ্গে বিতর্কের কথাটাই। অ্যালফ্রেড পিয়ানোয় সুর তুলে আত্মপক্ষ সমর্থন করলেও অ্যাসেনবাখ মেনে নিতে পারেনি সে-যুক্তি। গোটা সিনেমাজুড়ে পরিচালকের প্রিয় ‘ডিপ ফোকাস’ এবং ‘মিশঁ-এন-সিনে’র অনন্য ব্যবহারে ছবিটি স্থান করে নেয় রসিক দর্শকের মনের মণিকোঠায়। আকাশে মেঘের ঘনঘটা দেখে আমাদের পূর্বপরিচিত টেবিল ম্যানেজারের কাছ থেকে অ্যাসেনবাখ জেনে নিতে চায় বৃষ্টির পূর্বাভাস। ক্যামেরা কাট করে চলে আসে বালুকাবেলায়। আমরা দেখতে পাই সকালের জলখাবার সেরে অ্যাসেনবাখ একজন পরিচারকের সাহায্যে বালুকাবেলায় বেশ গুছিয়ে বসে লেখার কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করছে। বালুকাবেলা তখন মুখর হয়ে উঠেছে 888sport slot gameপিপাসুদের কলরোলে। ঠিক সে-সময়েই চোখে পড়ে জলে নামার পোশাক পরে অ্যাসেনবাখের সামনে বেলাভূমিতে এক সঙ্গীর নিবিড় সান্নিধ্যে হেঁটে বেড়াচ্ছে টাডেউজ। বিনষ্ট হয় মনোসংযোগ – আমাদের মনে পড়ে যায় 888sport live chatী ভিসকোন্তি ব্যক্তিগত জীবনেও ছিলেন একজন গে-মানুষ। হোটেলরুমে দ্রম্নত ফিরে আসে ক্রুদ্ধ অ্যাসেনবাখ।
কেমন যেন অস্থির হয়ে ওঠে অ্যাসেনবাখ। দ্রম্নত গুছিয়ে নেয় নিজের জিনিসপত্র। হোটেলের বিল মেটাতে গেলে আশ্চর্য হয়ে যায় হোটেলের ম্যানেজার। কোনোরকমে একটা যুক্তি খাড়া করে রেহাই পায় সে। কিন্তু মালপত্র ঠিক ট্রেনে না-ওঠায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে – ঘোষণা করে মাল ফেরত না আসা পর্যন্ত ওখান থেকে নড়বে না সে। প্রতীক্ষারত অ্যাসেনবাখের চোখের সামনে ভেসে আসে অদূরে দাঁড়ানো একটি শীর্ণকায় মানুষ হঠাৎই মাথা ঘুরে পড়ে যায়। ক্যামেরা অ্যাসেনবাখকে ক্লোজে ধরলে আমরা দেখতে পাই তার চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে একটা অস্বসিত্মর ছাপ। কিন্তু উদাসীনতায় আবৃত ব্যস্ত মানুষজন ভেসে যায় আপন লক্ষ্যস্থলে, কেবল একটি বালিকা পরম বিস্ময়ে এগিয়ে যায় অসহায় মানুষটির দিকে।
হোটেলে ফিরে এসে বেশ কিছুটা স্বসিত্ম পায় যেন। ঘরে ঢুকে সমুদ্রের দিকের জানালাটা খুলে দিতেই বেলাভূমিতে ঘুরে বেড়ানো টাডেউজকে দেখতে পায় – পরিচিতজনের মতো হাত নেড়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে। বেলাভূমিতে নেমে আসে অ্যাসেনবাখ, হঠাৎ চোখ পড়ে একটি দলছুট বালিকার দিকে – মনে পড়ে যায় স্টেশনের শিশুটির কথা। ভেসে আসে একটা ছোট ফ্ল্যাশব্যাক – অ্যাসেনবাখ স্বপ্ন দেখে, একটা মনোরম ছোট কুটিরের সামনে প্রকৃতির তৈরি করা শ্যামলিমা এক বাগানে অলস খেলায় মেনে উঠেছে সে তার স্ত্রী ও কন্যার সঙ্গে। নিটোল ভালোবাসায় গড়ে ওঠা এই ক্ষণমুহূর্তটিও আমাদের নাড়া দেয় গভীরভাবে। খানিকক্ষণ বেলাভূমিতে কাটিয়ে হোটেলে ফিরে আসে সে। বসার জায়গাটা পেরোতে গিয়ে দেখতে পায় মোৎসার্টের সুর-মূর্ছনায় বিভোর হয়ে টাডেউজ পিয়ানোয় মগ্ন হয়ে আছে। কাট করে ক্যামেরা চলে আসে ফ্ল্যাশব্যাকে – আমরা দেখতে পাই একটি বারবনিতার ঘরে অ্যাসেনবাখকে। মেয়েটি পিয়ানোয় বাজিয়ে চলেছে ওই একই সুর। মেয়েটির সঙ্গে অ্যাসেনবাখের স্ত্রীর সাদৃশ্য দেখে আমরা কিছুটা অবাক হয়ে যাই। মেয়েটি অ্যাসেনবাখের ঘনিষ্ঠ হতে গেলে সে নির্দিষ্ট টাকা পকেট থেকে বের করে টেবিলে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। ক্যামেরা আবার কাট করে চলে আসে ভেনিসের পথে। একটা অন্ধকার গলি অতিক্রম করে পোলিশ পরিবারটি। একটি আলোকিত পথে পৌঁছাতেই আমরা দেখতে পাই ভেনিসের মিউনিসিপ্যালিটির সতর্কতা জারি করা পোস্টার – পথে পথে ফিনাইল ঢালার সমারোহ।
মহামারির সংক্রমণ বার্তায় ভয়ার্ত অ্যাসেনবাথ হোটেলের কর্মচারী বা রাস্তার দোকানদার কারো কাছ থেকেই কোনো সদুত্তর না পেয়ে অস্থির হয়ে ওঠে। এরপর আমরা অ্যাসেনবাখকে দেখকে পাই হোটেলের লাউঞ্জে বসে থাকতে। মূকাভিনয়ের পোশাকপরা চারজনের একটি দল গান গাইতে গাইতে ঢুকে পড়ে হোটেল লাউঞ্জে। খানিকটা মজাই পায় অ্যাসেনবাখ – একাকিত্বের মোহজাল কেটে বেরিয়ে আসতে চায় সে।
এবার মিউনিসিপ্যালিটির সদর দফতরে এসে সঠিক কারণটি জানতে চায় সে। অফিসের এক কর্তা মহামারির আগমন আশঙ্কার কথা জানায় তাকে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভেনিস ছেড়ে চলে যেতে বলে। অ্যাসেনবাখ স্বপ্ন দেখে, সে যেন টাডেউজের মাকে আকুতি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে অবিলম্বে ভেনিস ছেড়ে চলে যেতে বলছে।
জীবনকে ফিরে পাওয়ার তীব্র আগ্রহে, যৌবনকে আরো একবার জীবনে বরণ করে নেওয়ার তীব্র আকুতিতে অ্যাসেনবাখ চলে আসে একটি সেলুনের নাপিতের কাছে। নাপিতও পরম যত্নে তার রঙের জাদুতে চুলগুলোকে কালো আর বাহারি করে তোলে, হালকা গোলাপি টানে ঠোঁট দুটোতে ফুটে ওঠে কামনা-কম্পিত যৌবনের ছোঁয়া। নাপিতকে ধন্যবাদ দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এসে অ্যাসেনবাথ দেখতে পায়, পোলিশ পরিবারটি খাঁড়ির ওপরের সেতু ধরে এগিয়ে চলেছে। টাডেউজ যেন পরম যত্নে সবাইকে আগলে সবার পেছন পেছন এগিয়ে চলেছে। একবার সে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিতে চাইল তার প্রেমাস্পদ তাকে অনুসরণ করে আসছে কিনা। অ্যাসেনবাখ কিন্তু নিষ্ক্রান্ত পরিবারটির চিহ্নটিও আর খুঁজে পেল না। হতাশ অ্যাসেনবাখ আত্মসমর্পণ করে। তাকে ঘিরে ধরে ক্লান্তি, স্টেশনের সেই শীর্ণ লোকটির মতো মাথা ঘুরে পড়ে যায় সে। মনে পড়ে যায় তার বহুদিন আগে একবার কন্ডাক্টিং করতে করতে এমনই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল আর বন্ধু এলবার্ট তাকে ভৎর্সনায় ভৎর্সনায় আরো অসুস্থ করে তুলেছিল। ক্যামেরা কাট করে চলে এসেছে বেলাভূমিতে – পোর্টারের সাহায্যে একটি ইজি চেয়ারে বসে পড়ে অ্যাসেনবাখ – দেখতে পায় টাডেউজকে। বন্ধুর সঙ্গে দৌড়াতে দৌড়াতে চলে যায় উপকূলের কাছে, মেতে ওঠে মারামারির খেলায়। সহ্য করতে পারে না, মৃত্যুর কোলে অসহায় আত্মসমর্পণ করে অ্যাসেনবাখ। r


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.