শওকত ওসমানের 888sport alternative link চতুষ্টয় : প্রসঙ্গ মুক্তিযুদ্ধ

শহীদ ইকবাল

আমাদের মুক্তিযুদ্ধটি ছিল নিশানা; মুক্তিযুদ্ধ সংঘটনের পূর্বে ও পরেও। দেখা যায়, স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতার পথে আমাদের গুচ্ছ গুচ্ছ ক্রিয়াশীল সময় তৈরি হয়েছে। সময়ের লেখকগণ তা একপ্রকার চেতনায়ও গেঁথে নিয়েছেন। সরদার জয়েনউদ্দীন, সত্যেন সেন, শহীদুল্লা কায়সার, শওকত ওসমান, শওকত আলী, জহির রায়হান তপ্ত চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ-পূর্বকালেই বিচিত্র বিষয়কে আত্তীকৃত করেন। বায়ান্ন থেকে একাত্তর-প্রতিরোধী সংগ্রামের সঙ্গে সঙ্গে মধ্যবিত্ত বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয় আর প্রসন্ন অধিকারের কাল রচিত হয়। এ-কালধারা নিস্তরঙ্গ নয়। বিচিত্র অনুরণনে হয়ে ওঠে অভিপ্রেত। আর এ-অভিপ্রেতশীল বুনন-কাঠামোটিই ধরা পড়ে 888sport alternative linkে। তবে তা অবশ্যই নান্দনিক ও লক্ষ্যনির্ভর। প্রসারিত পৃষ্ঠায় তাতে ধরা পড়ে বাঙালির নানামুখী ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও সংগ্রামময় চিত্তের দ্বন্দ্বময় সংস্রব। স্মর্তব্য, ঊনসত্তরের পর এক অভ্রান্ত চেতনায় জেগে উঠেছিল অগ্নিসারথিগণ – মুক্ত ও স্বাধীনতার স্বপ্ন ও প্রশ্নে। পরে বিজয় অর্জিত হলে স্বাধীন দেশের জন্মলগ্ন থেকেই মুক্তচেতনা অবিনাশী হয়ে ওঠে। থাকে ক্রিয়াশীলও। অদ্যকার 888sport appsে সে-চেতনা সংঘরূপে অদ্যাবধি সজাগ এবং সেটি প্রজন্মান্তরেও স্ফুরিত। কারণ, এর সাম্য-ধর্মনিরপেক্ষরূপ সংগ্রোথিত, জাতীয় চেতনায়। সেটি পরিস্রুত প্রজন্মান্তরের স্বপ্ন ও সন্দর্শনে। বস্তুত, এ-ধারাস্রোতে শ্রেয়শীল শওকত ওসমান, অবশ্য আমাদের গুরুত্বপূর্ণ লেখক। মুক্তিযুদ্ধ সর্বতো হয়েছে – তাঁর রচনায়। বিস্তৃত ও গভীর কাঠামো না পেলেও তাঁর লেখা চারটি 888sport alternative linkে (জাহান্নাম হইতে বিদায়, নেকড়ে অরণ্য, দুই সৈনিক, জলাঙ্গী) মুখ্যত প্রতিচিত্রিত অবিনাশী ‘মুক্তিযুদ্ধ’। প্রত্যক্ষসাক্ষ্য ও প্রতিপক্ষ পাকিস্তানিদের বর্বর মর্মন্তুদ অত্যাচার, হত্যাসাক্ষ্যরূপে বর্ণিত তাঁর এ-888sport alternative link চতুষ্টয়। ঠিক 888sport live chatমানে নয়, বস্তুত কাহিনির আধার ও আধেয়রূপে তার অধিক গুরুত্ব। আর এটি প্রকাশের রং ও রেখা – শওকত ওসমানের লেখক-কমিটমেন্ট ও ‘বাংলা’ নামের রাষ্ট্রের জায়মান চাঞ্চল্যে অকুস্থলরূপে – মুক্তিযুদ্ধের নিশানায় যা বিদীর্ণ ও উত্তুঙ্গমান। ঠিক অন্য লেখকের মতো শওকত ওসমানও লেখার জন্য শুধু লেখেননি, তাঁর রাজনৈতিক স্বচ্ছতা ও প্রগতিশীল চিন্তন-অভিমুখও এখানে যথার্থরূপে ক্রিয়াশীল। তাতে আমৃত্যু তিনি অবিচল এবং সে-লক্ষ্যেই তাঁর নিম্নোক্ত 888sport alternative link চতুষ্টয় আলোচ্য বলে পরিগণিত।

দুই
শওকত ওসমানের জাহান্নাম হইতে বিদায় (১৯৭১) ছোট্ট আঙ্গিকের 888sport alternative link। অকুস্থল ১৯৭১। প্রত্যক্ষসাক্ষ্য লেখকের। নিজেই নায়ক। 888sport alternative linkের নায়ক গাজী রহমান। গাজী রহমানের দৃষ্টিই এখানে লেখকের নিজস্ব দৃষ্টি (ড়সহরংপরবহঃ)। তার আত্মার কাঁপুনি, পেছনে ফেলে আসা স্বদেশ, স্ত্রী-সন্তান, ইতিহাস অংশ হয় 888sport alternative linkের। লেখক-কথনে রাজনৈতিক চেতনা জীবনের অনুষঙ্গী হয়ে উদ্ভাসিত হয়। ‘নিজের অভ্যন্তরে পরিব্রাজক’ গাজী রহমান। সাতটি খ-ে বিভক্ত 888sport alternative linkে গাজী রহমানের চেতনার আধারে আটকায় কিছু চরিত্র। তার মধ্য দিয়েই গাজী রহমানের যন্ত্রণা, বিকার, সমাজ, সময় ও দায়বোধ উঠে আসে। জাহান্নাম হইতে বিদায় 888sport alternative linkের পূর্বকথায় লেখক বলেন :
খ্রীষ্টাব্দ ১৯৭১। 888sport appsের স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে মুজিবনগরে এই 888sport alternative link লেখা হয়… সামাজিক কর্তব্য বাইরের জগৎকে জানানোর জন্য পাকিস্তানের ইসলামী সেনাবাহিনী বাঙালীদের উপর কি জাতীয় জুলুমের রোলার চালিয়ে দিচ্ছে প্রত্যহ। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া বিচিত্র কিছু নয়। সবচেয়ে জঘন্যতম অপরাধ গণহত্যা, সেখানে অপরাধী নিরপরাধী বাছবিচার নি®প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের গোড়ার দিকে মুসলমান নাগরিকদের উত্তেজিত করেছিল হিন্দু প্রতিবেশীদের ধ্বংসকল্পে। সেখানে তেমন সফল না হওয়ার ফলে পাকিস্তানি সৈন্যগণ নিজেরাই শুরু করল হিন্দু নিধন। কিন্তু বাঙালী হিন্দু-মুসলমান ত আকৃতিগত একরকম। হিন্দু-মুসলমান পার্থক্য দায়। তখন শুরু হলো গণহত্যা। পাকিস্তানী সৈন্যদের বর্বরতার ফলে দেশের অভ্যন্তরে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিরাপত্তার সন্ধানে যাযাবর। এক কোটি লোক প্রতিবেশী ভারত রাষ্ট্রে আশ্রয় পেল। এই পটভূমি। লেখক হিসেবে দায়িত্ব কে এড়িয়ে যেতে পারে?
এখানে লেখকের দায়িত্ব এবং দায়বোধ 888sport alternative linkের মৌল চালিকাশক্তি। গাজী রহমান কখনো 888sport sign up bonusচারণে, কখনো চেতনার প্রবাহে, কখনো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় 888sport alternative linkের পরিবৃত্ত রচনা করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে দেড় মাস তার অভিজ্ঞতা, স্বদেশ ছেড়ে কখনো নৌকায়, কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো পরিচিত ছাত্র ইউসুফ বা বন্ধু অ্যাডভোকেট রেজা আলির বাড়িতে আত্মগোপন করে সীমান্তের দিকে ধেয়ে চলেছেন তিনি। সবার পরামর্শও সীমান্তের ওপারে নিরাপদে থাকাই ভালো। সীমান্তে পাড়ি দেওয়া হলে এ-কাঁঠালছায়ায় আবার ফিরবেন এমন প্রত্যাশায় 888sport alternative link শেষ হয়। জাহান্নাম হইতে বিদায় মূলত গাজী রহমানেরই পরি888sport slot gameের পথ। এতে নজরে পড়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ, আশ্রয়হীন সম্বলহীন 888sport promo code-শিশু আর অনিশ্চিত যাপিত জীবনের মানুষের হাহাকার। এসবের মাঝে যুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে মানুষ দলবদ্ধ হয়ে; স্বদেশ মুক্ত করার জন্য প্রাণ বাজি রাখছে, ‘জয় বাংলা’ সেøাগানে মুক্ত স্বদেশের স্বপ্ন দেখছে। লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা 888sport live chatের ফ্রেমে উঠে আসে, মেসেজ প্রদানে লেখক বলেন :
গোটা 888sport apps স্তব্ধ। শব্দের মালিক তারাই যাদের হাতে মেশিনগান প্রভৃতি আগ্নেয় অস্ত্র আছে, পিতলের নক্ষত্র উর্দির উপর বসিয়ে যারা নিজেদের ভাবে পৃথিবী এবং আকাশ বিজেতা।
888sport alternative linkের কাহিনি নিস্তরঙ্গ, অভিঘাত কম। ব্যক্তি গাজী রহমানের চেতনার আড়ালে লুকিয়ে আছে যুদ্ধপীড়িত দেশের দেড় মাসের কিছু চালচিত্র। দৃশ্যসজ্জাও এরকম : আতঙ্কজনক পরিস্থিতি, স্বজন হারানোর বেদনা, নরসিংদী থেকে নবীনগরের পথে গাজীর চৈতন্য ভেসে-ওঠা বৃদ্ধের অভিব্যক্তি, ডেমরা ঘাঁটির চেকপোস্ট পার হয়ে ছইয়ের নিচে মাঝির অভিব্যক্তি, শীতলক্ষ্যা নদী-তীরবর্তী জীবন, মাতারির ছেলের মুক্তিফৌজে যোগদান ইত্যাদি। এমন বিষয় 888sport alternative linkে মর্মন্তুদ একটি সময়ের বিবরণ হয়ে রয়। গাজী রহমান শিক্ষক ছিলেন, সামাজিক সমস্যা নিয়ে তাঁর ভাবনা অনেক। 888sport alternative linkের শুরুতে গাজী রহমানের সাক্ষাৎ, ইউসুফ ও সখিনার বাড়িতে আশ্রিত – ইউসুফ ছাত্র হিসেবে সমীহ করে তার শিক্ষককে; সখিনার ভাই খালেদের নিখোঁজ হওয়ার উদ্দেশ্যও প্রশ্নাতীত। সবকিছুর মাঝে একটা দুঃসময়ের আশ্রয়দাতা হিসেবে গাজী রহমানের স্পর্শকাতর মন আবেগে জড়িয়ে যায়। মৃত্যুর কাফনের বিস্তার নিরাশ্রয় মানুষের আর্তনাদের মাঝে পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখা এক বৃদ্ধের আত্মকথন ভিন্ন অভিব্যক্তি পায় :
জোয়ান কালে কতো খোওয়াব দ্যাখছি পাকিস্তান হইব, মানুষ হইত পারব হগগলে। কতো খাডছি, ভোট দিচ্ছি। পাকিস্তান হইল। কতো রিফিউজী আইল। তাগোর জায়গা দিছি, খাওয়াইছি… হেরাও শুনি অহন মিলিটারীগো লগে। আল্লা… বেইমান হইয়া এই বয়সে মরণের লাই পাকিস্তান বানাইছিলাম?
বাস্তবতা থেকেই পাকিস্তান নামক স্বপ্নের ভূমির আবছায়া কাটতে থাকে। পাকিস্তানের তেইশ বছরের দুঃশাসন এবং পঁচিশে মার্চের মধ্যরাতের তা-বেই তার প্রমাণ মেলে। ইতিহাসের তথ্যে এটা সত্য :
উনিশশো একাত্তর সালে পঁচিশে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান নামে একটি তথাকথিত ধর্মরাষ্ট্রের মৃত্যু ঘটেছে। এটাকে কেবল একটা ধর্মরাষ্ট্রের মৃত্যু বলা হলে ঠিক বলা হবে না। এটা একটা অবাস্তব থিয়োরি বা তত্ত্বের অপঘাত-মৃত্যু।
রাজনীতি সমাজ জীবনে প্রভাব বিস্তার করে, সর্বস্তরের মানুষের মনে স্বপ্ন ও আশাবাদের প্রহরা সৃষ্টি করে। গাজী রহমান, গুলিবিদ্ধ আলম কিংবা কালু কারো জীবনেই এ থেকে নিষ্কৃতি নেই। লেখকের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার প্রচ্ছদপটে এরা সবাই রাজনৈতিক চরিত্র, সেজন্য এরা যুদ্ধ করে, দলবদ্ধ হয়, সেøাগান দেয়, শত্রুদের নিশানা ধ্বংস করতে প্রাণপণে লড়াই করে। 888sport alternative linkে আলমের মুখের বয়ানে আজিমগঞ্জের যুদ্ধের যে মর্মস্পর্শী বিবরণ, সম্মিলিত পাঞ্জাবি নিধনের তৎপরতা এবং দেশপ্রেমের যে-পরাকাষ্ঠা তাতে গাজী রহমান প্রশ্ন তোলেন, ‘সেও তো দেশকে ভালবাসে। তার এই মানসিক জোর নেই কেন? বয়স, ভদ্রলোক হওয়ার ফল, প্রাণভয়? না আর কিছু?’ মধ্যবিত্ত প্রবণতা হয়তো কাজ করে গাজী রহমানের মধ্যে – কিন্তু মাটি ও মানুষের আকুতি কি তার বিবেকে আঘাত করে না? সীমান্তের পথে ভাঙা ব্রিজ পার হওয়ার সময় কিংবা বাসে চেপে যে চলন্ত শবাধারের খোঁয়ারি তিনি দেখেন, তাতে তিনি ‘রাজনৈতিক জীব’ এতে কোনো সন্দেহ নেই। একইভাবে রেজা আলী, কিরণ রায়, সৈয়দ আলী সবাই একটা চেতনায় বন্দি হয় যেখানে কেউই বাঁচার জন্য মিথ্যার সঙ্গে আপস করতে নারাজ।
শওকত ওসমানের জাহান্নাম হইতে বিদায় 888sport alternative linkে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধেরই চিত্রার্পণ, পাক-হানাদারদের তৎপরতা এবং মুক্তিফৌজে অংশগ্রহণ যাকে তিনি বলেছেন,
অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলিয়া দাঁড়াইতে পারে শুধু বীর পুরুষেরা। মুক্তিফৌজের ব্রত তাই কঠিন। এমন কঠিনের সাধনা গ্রহণ করিয়াছে আমাদের নয়ন-মান মুক্তিফৌজবৃন্দ।
এসবের পাশাপাশি 888sport alternative linkে এসেছে হাহাকার ও আর্তনাদের বিভীষিকাময় বাস্তবতা, যেখানে নায়ক গাজী রহমান বারবার আপ্লুত হয়েছেন, নিজের বিবেক এবং বুদ্ধির সঙ্গে মিলিয়েছেন দেড় মাসের 888sport sign up bonusকে, যেখানে সত্যিই ‘জাহান্নামে’ পরিণত হয়েছে স্বদেশ। সেখানে থেকে পালাবার পথে যে-অন্তর্জ¡ালা, পেছনে ফেলে আসা যে-মাটি মানুষ সেখানে তিনি এমনই বলতে পারেন, ‘গোলামের কোন পরিচয় থাকে না গোলাম গোলামই। 888sport appsের স্বাধীনতাই আমার পরিচয় হোক।’
শওকত ওসমানের 888sport alternative link মুক্তিযুদ্ধের চলতি মুহূর্তের বিবরণ; জাহান্নাম হইতে বিদায় লেখা হচ্ছে যুদ্ধ চলাকালীন একটা অস্বস্তিকর ভীতিকর পরিবেশে। অনেক ঘটনা চোখের সম্মুখে, নিজের চেতনা জড়িয়ে যাচ্ছে একটা অস্থির সময় প্রবাহের সঙ্গে অথচ লেখার মতো, বিষয় বর্ণনা করার মতো পরিবেশ নেই। তবু একজন নায়ককে ঘিরে যে-ঘটনার বিবরণ লেখক দিচ্ছেন; যে-আত্মকথনের আবেগে স্বদেশকে চিহ্নিত করেছেন, হানাদার বাহিনীর নৃশংসতাকে তুলে ধরেছেন তা প্রশংসনীয়। নিরস গদ্যে একটা অস্থির সময়ের উত্তাপ এতে ধরা পড়েছে। সেজন্যই অত্যন্ত আস্থাশীল হয়ে তিনি বলতে পারেন ‘মুজিবনগরে লেখা এই 888sport alternative link, আমার মনে হয় এখনও অপ্রতিদ্বন্দ্বী রয়ে গেছে প্রথম রচনা হিসেবে। আর কোন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক 888sport alternative link তখন মুজিবনগরে লেখা হয় নি।’
পরের 888sport alternative link নেকড়ে অরণ্য (১৯৭৩)। এর বর্ণনা উদ্ধৃত করি :
গুদামের পোস্তার উপর শত শত বস্তা সারি সারি থাকে থাকে সাজানো থাকত ক’দিন পূর্বে। আজ সারি সারি মানুষ শুয়ে আছে। অবশ্যি স্তর অনুপস্থিত। কারণ কারো উপর কেউ শুয়ে নেই। একদম সিমেন্টের উপর, যাদের মানুষ বললাম, তারা শুয়ে আছে, মানুষের মধ্যে যাদের মানবী বলা হয়। কেউ সটান কেউ কুকড়ে গেছে, শীতের রাত্রের কুকুরের মত।
এ প্রতিপাদ্যে বাস করছে চরিত্রসমূহ – তানিমা, জায়েদা, বালীদা, সখিনা, চাষি বউ আমোদিনী। এরা এ-অরণ্যে বন্দি। মুক্তির প্রত্যাশা এদের চেতনা থেকে লুপ্ত, এদের জীবনের মূল্যবান সম্পদ নিঃশেষ; ধর্ষিতা, অপহৃতার মর্যাদা দিয়েছে ক্যাপ্টেন রেজা খান কিংবা আলী খান পাঞ্জাবিরা। সত্যিকার অর্থে, পাঞ্জাবিরা কি এভাবেই বন্দি করেছে বাংলাকে, এ-অরণ্য থেকে বাঙালির কি মুক্তি নেই? ‘এই বাঙালী হারামজাদলোগ পাকিস্তান কো বরবাদ করনে মাংতা। শালা লোগ হিন্দু হ্যায়। এ লোগ কা নসল (জন্ম) বদল দেনা চাহিয়ে। মুসলমান হোতা ত এ্যয়সা নেহি করতা।’ মুসলমানের ইজ্জত বাঁচানোর জন্য কিংবা ধর্ম রক্ষার জন্য যে-পাকিস্তান সেখানে ‘নেকড়ে অরণ্য’ বানিয়ে বন্দি মুসলমানদের ভবিষ্যৎ কী? প্রৌঢ়া চাষির অনুরোধ তানিমারা আল্লারে ডাকলেই কি শত্রুদের হাত থেকে মুক্তি পাবে, কিংবা মুক্তি পেলেও আবার কি তারা ফিরতে পারবে পূর্বের স্বপ্নময় সোনালি জীবনে? সখিনা যখন প্রৌঢ় চাষির বউয়ের কাছে প্রশ্ন করে – ‘আল্লারে ডাকতে কও। আল্লা থাকে ইসলামী রাষ্ট্রে? ইসলামী রাষ্ট্রে আল্লা থাকে? কও-কও।’ প্রতিপক্ষের চিৎকার যখন তীক্ষè হতে থাকে প্রৌঢ়ার কাছে স্বীকৃতি মেলে আর শুধাইয়েন না বু, জান। ঠিগ কইছেন। এই বুড়া বয়সে… আমরা জোওয়ান জোওয়ান পোলা… এই বেইজ্জতির লাইগ্যা বাঁইচ্যা ছিলাম…। নেকড়ে অরণ্যে বন্দি তানিমাদের জীবন ছিল, সুন্দর সোনালি স্বপ্ন ছিল – নূর আহসানের কথা মনে পড়ে তানিমার। দুসন্তানের আহাজারি ভেসে আসে। সওদাগরি ফার্মের অফিসার নূর হোসেন সাম্প্রদায়িক প্রশ্নে বরাবর বিরোধী ছিল। মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরোধিতা করত সে। একাত্তরের মাঝামাঝি নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য যখন গ্রামান্তরের ফেরারি, তখন ধরা পড়ে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে। বিবস্ত্র তানিমার এই মুহূর্তে আর কিছুই মনে নেই, চৈতন্য ফিরে পেলে তার সন্তান স্বামীর খবর জানে না ‘888sport sign up bonus কল্পনা। জীবন উদ্যানের বিটপীবৃক্ষের সঞ্জীবনী রস। এই সরসতার স্পর্শ ছাড়া সব মরুভূমি হয়ে যায়।’ তানিমাকে জীবন দিতে হয়েছে আলী খানের বুলেটে; একইভাবে জায়েদা ও আমোদিনী ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেছে, সখিনা নিজেই মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছে। ক্যাপ্টেন, মেজর, কর্নেলদের লোলুপদৃষ্টির নিশানায় মৃত্যুই তাদের শেষ পরিণতি হয়েছে। ইসলামের জিম্মাদার সেজে, ইসলামি রাষ্ট্রের প্রতিভূ হয়ে তারা বাঙালি 888sport promo codeদের নির্যাতনের যে বীভৎস দৃশ্যের সূচনা করেছিল তা ইতিহাসে বিরল।
নেকড়ে অরণ্য 888sport alternative link 888sport promo codeর বন্দিশালায় ‘খান’দের অত্যাচারের ইতিবৃত্ত। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে 888sport promo codeদের এ-নিগ্রহ হানাদারদের কাছে একটা অনিবার্য বিষয় ছিল। নেকড়ে অরণ্যের কাহিনি তারই এক ছায়াচিত্র। কিন্তু এই বন্দিশালাতেও মাঝে মাঝে এসেছে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদ, মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের বার্তা। বন্দি 888sport promo codeদের অন্তরে এ-সংবাদ জুগিয়েছে নতুন সঞ্জীবনী। শৃঙ্খলমুক্তির জন্যই শুধু নয়, প্রতিশোধ এবং প্রতিরোধে শাণিত হওয়ারও একটা প্রেরণা তাদের চেতনায় জেগে উঠেছিল। উজীর আলী ধরা পড়ে নেকড়ে খানসেনাদের হাতে, সে সেবা পায় বন্দিদের হাতে কিন্তু আলী খানের বয়ানে ‘মুক্তিফৌজের ওই ছোকরাকে চার দিন ধরে ‘তিন ডিগ্রি’ দাওয়াই দিয়েছে অনেকে মিলে, অনেকক্ষণ ধরে। এমনকি সে নিজের হাতে কম্বল ধোলাই চালিয়েছিল। কিন্তু একটা কথা কেউ বের করতে পারেনি।’ স্বদেশের উপকারে নিগৃহীত 888sport promo codeরা সর্বোচ্চ সম্পদ বিকিয়েছে, নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে জীবন দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচিয়েছে, সেবা দান করেছে – উজীর আলীরা বন্দিশালায় বন্দিত্বকে মেনে নিয়েছে; কিন্তু তবু গোপন সংবাদ প্রকাশ করেনি। ঔপন্যাসিক জায়েদা ও আমোদিনীর ক্ষেত্রে একটি হিন্দু ও মুসলমান রমণীর একই সঙ্গে একদড়িতে মৃত্যু দেখিয়েছেন, অসাম্প্রদায়িক স্বদেশের জন্য যে-কথা বলেছিল তানিমার স্বামী নূর আহসান – ‘আমার তোমার মঙ্গল দিয়ে ত সারা দেশের বিচার হয় না। কোটি কোটি হিন্দু-মুসলমানের কী হয়েছে? সব মিলিয়ে দ্যাখো। দাঙ্গা-হাঙ্গামা, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুহারা, জীবজন্তুর মতো এদেশ ওদেশ আর কেন?’ এ প্রশ্নের দিকেই ইঙ্গিত করেন লেখক। পাকিস্তানি নেকড়েদের নির্যাতনের একটি অংশের প্রতিচ্ছবি
এ-888sport alternative link। সমালোচক বলেছেন : ‘নেকড়ে অরণ্যকে 888sport alternative link বলা চলে না। কারণ এর মধ্যে চরিত্রসমূহের বিকাশ নেই এই গ্রন্থ একটি ডায়েরী বা 888sport sign up bonusচিত্র, মুুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন একটি বিশেষ দিকের উদ্ঘাটন হয়েছে এই গ্রন্থে, কিন্তু নেকড়ে অরণ্যতে মুক্তিও নেই যুদ্ধও নেই।’
তানিমা, সখিনা, আমোদিনীরা উজ্জ্বল তাদের 888sport promo codeত্বের মহিমায়, বন্দিশালায় তারা সোচ্চার প্রতিবাদী। হানাদারের উর্দু সংলাপের প্রতাপ তারা সহ্য করেছে। অবসন্নতার শেষ পর্যায়ে মৃত্যুকেই তারা বেছে নেয়। সখিনার মৃত্যুর পর হানাদারদের অট্টহাসির মধ্য দিয়ে 888sport alternative link শেষ হয় – ‘শওকত ওসমানের প্রতিনিধিত্বশীল সকল 888sport live footballকর্মেরই মূল চারিত্র্য ‘ঘৃণা’। সে ঘৃণা বর্বরতার প্রতি সভ্যতার, অমানবিকতার প্রতি মানবিকতার, নিপীড়কের প্রতি নিপীড়িতের। এ ঘৃণার প্রণোদনাতেই তাঁর নেকড়ে অরণ্য নামক 888sport alternative linkটিও রচিত।’
দুই সৈনিক (১৯৭৩) শওকত ওসমানের আরেকটি 888sport alternative link। একটি গ্রামের পটভূমিতে লেখা দ্বন্দ্বাত্মক জীবনের ছায়াচিত্র 888sport alternative linkে মুক্তিযুদ্ধের বার্তা পৌঁছে দেয় গ্রামে। একটা সংবাদই তখন জীবন সঞ্জীবনী। কলকাতা বেতার শুনছে সাহেলী ও চামেলী। দাদি আছেন, আছেন মা আসেমা। বাবা মখদুম মৃধা; তিনি মৌলিক গণতন্ত্রী ছিলেন, ঊনসত্তরে গণঅভ্যুত্থানের সময় সাজাও পেয়েছেন একাত্তর নিয়ে এখন দ্বিধাদ্বন্দ্ব তিনি। তার পক্ষ স্পষ্ট নয়। একটি গ্রামীণ প্রতিবেশে 888sport alternative linkের কাঠামো নির্মাণ, ইতিহাসের সভ্যতা তার পরিপূরক হয়ে আসে। প্রথম দুপর্বে চরিত্রগুলোর পারস্পরিক কথোপকথনে জানা যায় একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে দেশের স্বাধীনতা, শেখ মুজিব কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছেন, নির্বাচনে জিতেছেন। মখদুম মৃধার দুই মেয়ে সারাক্ষণ ট্রানজিস্টার নিয়ে দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠ শুনছেন। এ উতালা সংবাদের জন্য বাড়িতে রেডিও নিয়ে হইচই হচ্ছে। শহরে চাচার বাড়িতে থাকলেও যুদ্ধের ডামাডোলে গ্রামে এসেছে বাধ্য হয়ে। ‘দুজনেই মনে মনে আওয়ামী লীগের সমর্থক। কিন্তু গুরুজনদের কিছু জানতে দিত না। হিন্দু মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার এই ধুয়া ছাড়া মুসলিম লীগের ঘিলু পথে আর কোন সমর্থক চিন্তা কোনদিন প্রবেশপথ পায়নি।’ কিন্তু রেডিওর খবরের ইতিবৃত্ত শুনে সাহেলী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। দাদির কাছে বসে দেশভাগ হওয়ার পর দাঙ্গার ইতিহাস শোনে ‘কতো জমিন মানুষ জোর দখল কইরা লইল। তহন ভাবছি, পাকিস্তান অইল, ভয়ে মানুষ ভিটামাটি ছাড়া অইব ক্যান?’ এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতেই পাকিস্তানের অবসান হতে যাচ্ছে, বাঙালির সঙ্গে তার লড়াই শুরু হয়েছে।
মখদুম মৃধার বাসায় দুই সৈনিক মেজর হাকিম আর ক্যাপ্টেন ফৈয়াজ এসেছে। ‘মৌলিক গণতন্ত্রী’ এদের দুজনের তকলিফ নিয়ে ব্যস্ত। ইসলাম রক্ষার জন্য গণহত্যা জায়েজ, এ-গ্রামে হিন্দুদের খোঁজ নেয় তারা। মৃধার ঘনিষ্ঠজন সয়ীদ মাতবর মিলিটারিদের উপস্থিতিতে অস্বস্তি বোধ করলেও মৃধার পাকিস্তান ভক্তির ইতিহাস ওদের সামনে গদগদ হয়েই শোনে। খানাপিনার আয়োজন হয় মৃধাবাড়িতে। খাবার পরিবেশনে তার দুই মেয়েকে পরিচয় করে সৈনিকদের কাছে। মেজরদ্বয়ের স্তুতিবাক্যে গদগদ হয় মৃধা। সয়ীদ মাতবর সারাক্ষণ ভীতসন্ত্রস্ত হয়েই কাজ করে; মিলিটারির আগমনে গোটা গ্রাম স্তব্ধ। রবিয়েল পাটোয়ারীর পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়স; মিলিটারির গ্রাম জ্বালানোর খবর সে তাকে দেয়। মৃধা যে-মিলিটারিদের আতিথ্য দিচ্ছে, অত্যাচারীদের নিজের বাড়িতে ঠাঁই দিচ্ছে তার কারণ জিজ্ঞেস করে সয়ীদ মাতবরকে। মখদুম মৃৃধা সাধ্যমতো বিশাল আয়োজন সম্পন্ন করে; পাকিস্তানের জন্য আলোচনার টেবিলে, হুইস্কির উৎসবে ঝড় ওঠে – মন ও মেজাজ মিলিয়ে দুই মেজর ভালোই এন্তেজাম করে; কিন্তু চোখ আঠার মতো লেগে থাকে মৃধা সাহেবের দুই মেয়ের ওপর। খাবার টেবিল ছাড়িয়ে তাদের চোখ গিয়ে পড়ে সাহেলী ও চামেলীর শরীরের ওপর। ‘দুলহিন… আগার শাদী করনা হায় ত মাশরেকী (পূর্ব) পাকিস্তান মে’ – এমন প্রস্তাব দেয় সয়ীদ মাতবরের মারফত। এমন পয়গামে মৃধার দুই চক্ষু চড়কগাছ। যে-মৃধার সারাজীবনের হিসাবে এতটুকু ভুল হয়নি, সে কিনা এমতাবস্থায় মহাসংকটেই পড়ল। সে চেঁচিয়ে উচ্চারণ করে ‘নেহি। মাতওয়ালা (মাতারৎল) কে সাথ হাম লাড়কি কা শাদি নেহি দুংগা।’ মেজর হাকিম ও ক্যাপ্টেন ফৈয়াজ তখন হুকুম দেয় ‘ইসকো এ্যারেস্ট করো। ইয়ে আওয়ামী লীগার হ্যায়।’ সয়ীদ মাতবর সুযোগ বুঝে স্থানত্যাগ করে; অপহরণ করে মখদুম মৃধার দুই মেয়েকে। মখদুম মৃধা নির্বাক তাকিয়ে থাকে :
মৃধা স্তব্ধ। সব দেখছিল মাত্র। কিন্তু বোবার মতো। অত্যন্ত রাশভারী লোক। গাঁয়ের মানুষ কেঁপে উঠেছে বছরের পর বছর, তার কোন প্রাণশক্তি ছিল কোনকালে আজ কল্পনা করা কঠিন।
মখদুম মৃধার মা চুড়ি বিবি তার দুই নাতনির অপহরণে নিরুত্তর পুত্রের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে –
কথা কস না ক্যান? মুখে রাও নাই ক্যান? পাকিস্তান বানইছিলি না? তহন হিন্দু মাইয়াদের উপর জুলুম অইলে কইতিস অহন দু’একডা অয়। অহন দ্যাখ, আল্লাহ ইনসাফ আছে কি-না। দ্যাখ, চোখ খুইল্যা দ্যাখ। আহ আমার সোনার বুবুগো আমি খডে পামু? ও আল্লা, আল্লারে।
শেষাবধি মখদুম মৃধা নিরুপায় হয়ে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে। বুড়োবিবির উক্তিই লেখকের মেসেজ। শওকত ওসমান অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে পাকিস্তানি সৈন্যদের পরত উন্মোচন করেন, একাত্তরে পাকিস্তান রক্ষার নামে তাদের কীর্তিকলাপের দৃষ্টান্ত পাঠক সম্মুখগোচর করেন। রণেশ দাশগুপ্তের মন্তব্য :
দুই সৈনিক হচ্ছে হানাদার বাহিনীর দুই মদমত্ত অফিসার। ৭১ সালের ২৫ শে মার্চ হানাদার বাহিনী সারাদেশে যে হামলা চালায় তার দুই মূর্তিমন্ত প্রতীক। তাদের পাশবিক ক্রিয়াকলাপ 888sport alternative linkটির ঘটনা তরঙ্গ সৃষ্টি করে। এই জন্যই সম্ভবত : 888sport alternative linkের নাম দুই সৈনিক।
জলাঙ্গীর (১৯৭৪) পটভূমি, বাঁকাজোল গ্রাম। একাত্তরের যুদ্ধের ঢেউ শহর ছাপিয়ে বাঁকাজোলে পৌঁছেছে। জামিরালি শহর থেকে গ্রামে এলো; স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি – এখন সব বন্ধ। শেখ মুজিবের হুকুমে সবকিছুই বন্ধ। ছয় দফা জনতার দাবি। নির্বাচনে শেখ মুজিবের পার্টিকে ভোট দিয়েছে কি-না সে-প্রশ্ন করে জামিরালি তার
বাবা-মাকে। 888sport alternative linkের কাহিনিতে বোঝা যায় রাজনীতি খুব তাৎপর্যপূর্ণ একটা ব্যাপার হয়ে গেছে। অনিবার্যভাবেই বাস্তবতার একটা তাগিদ থেকেই রাজনীতি অনুষঙ্গী হয়ে পড়েছে মানুষ। যে-পাকিস্তানের জন্য এত রক্ত আবার সে-পাকিস্তানই ভাঙার জন্য সবার প্রস্তুতি। গাঁয়ের বধূ নাসিমন, কাজেম মৃধা, ফয়েজ মহাম্মদ, জাফর শেখ সবাই এখন এক প্রশ্নে একমত :
চব্বিশ বছর আগে পাকিস্তান হওয়ার সময় সে কত কী আশা করেছিল। আরো স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত জীবন। কিছুই সহজে মেলেনি। যেটুকু পেয়েছি স্রেফ গতরের জোরে। তার একটা বিহিত হওয়া দরকার।
একটা মৌলিক প্রশ্নে দাঁড়িয়ে যায় গ্রামের মানুষ। প্রতিটি সংবাদ প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যায়; মুজিবের বার্তা মর্মে আঘাত হানে প্রত্যেকের। ৭ই মার্চের সংবাদে লেখক বলেছেন :
ইতিহাস যেন স্বকণ্ঠে রায় দিলো। থরথর কম্পনে গোটা দেশ নড়ে উঠল বিরাট অজগরের মতো। সেই মোহ-বর্ণিল ভীতিময় অবয়ব সেই গর্জন এবং শীৎকারের আষ্টেপৃষ্ঠে লেজ-সাপটানি! আঘাতের সময় সরল, সমুন্নত।
অধিকারের প্রশ্ন, বাঁচার স্বার্থ একটা গ্রামীণ জীবনে ভিন্ন অর্থ পায়; সময়ের পরিবর্তনে দ্বন্দ্ব আসে, অবস্থার পরিবর্তন হয়। জামিরালি গ্রামে ফিরে সরল দৃষ্টিতে এ-পরিবর্তনগুলো নিয়ে ভাবে। জামিরালি গ্রামে শহরের আন্দোলনের খবর দেয়, মেয়েরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিচ্ছে, ট্রেনিং নিচ্ছে এখন আর ঘরে থাকার সময় নেই। গ্রামের মানুষরাও মুক্তিফৌজে যোগ দিচ্ছে। হানাদারদের আস্তানায় আঘাত করছে। তারুণ্যেদীপ্ত জামিরালির মনে বাঁকাজোলের সিক্ত আবহাওয়ায় হাজেরার প্রেম আসে, স্বপ্ন-আকাক্সক্ষার দীপ জ্বলে কিন্তু প্রতিরোধের অঙ্গীকারও তার চৈতন্যে স্থিরতা না এনে; প্রবল গতিবেগের তাড়না দেয়। জামিরালি আগরতলায় মুক্তিফৌজে যোগ দেয়; পিতা-মাতার স্নেহের বন্ধন ছেড়ে সে মুক্তিযুদ্ধে যায়। বেতারের সংবাদে সে স্থির থাকতে পারে না। এর মাঝে খবর আসে, সেখানে তীরবর্তী বাঁকাজোল বিপজ্জনক। এমন জায়গায় বসবাসের সাহস কারো থাকল না। ফয়েজ মৃধা, কাজেম মৃধার আজন্মভূমি ছাড়তে মন চায় না। শেষে ফয়েজ মৃধা পুত্র জামিরালির ফেরার প্রত্যাশায় অসুস্থ স্ত্রী নাসিরনকে নিয়েই থেকে যায়। কাজেম মৃধা হাজেরার জন্য কাজির চরে আশ্রয় নেয়। সবারই একটা প্রত্যাশা করে শত্রুমুক্ত হবে দেশ, প্রজন্মের জন্য কবে প্রতিষ্ঠিত হবে নিরাপদ স্বাধীন ভূখ-। মুক্তিযুদ্ধের মুখের পানে তাকিয়ে নাসির মুনসী বলে : ‘চাচা, দ্যাশ স্বাধীন হোক, আর কিছুই চাই না। আল্লা যেন তোমাদের সহি সালামতে (নিরাপদে) রাখে।’ মরণজয়ী মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থী হয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ, স্বজন-পরিজন হারিয়ে অনেকেই হয়েছিল নিজভূমে পরবাসী, শত দুঃখ-বেদনাক্লিষ্ট যন্ত্রণায় সারাক্ষণ থেকেছে কাতর কিন্তু তাদের একটা ছিল স্বপ্ন স্বাধীন দেশ, দেশ গড়ার স্বপ্ন।
পাঁচ মাস পর জামিরালি মা-বাবার সন্ধান নিয়ে এসে দেখা পায়নি। হানাদার বাহিনী মেঘনা-তীরবর্তী এ-গ্রাম গোটা জ্বালিয়ে দিয়েছে, মেঘনার বুকে তার বাবা-মার সলিল সমাধি হয়েছে। জামির বলে ‘প্রতিশোধ নেয়ার দিন। প্রতিশোধ আমরা নেবই।’ প্রেম ও প্রতিশোধ দুটিই তাকে টানে। কাজির চরে রাজাকারদের সীমানায় সে হাজেরার সন্ধানে যায়। মেজর হাশেম আর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান মোসাহেব আলির কাছে নির্যাতন-পরবর্তী বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় তাকে। 888sport alternative linkের শেষ অংশে জামিরালির নির্যাতনের বিবরণ। হাজেরা ও জামিরালির সম্পর্ককে পাকিস্তানের ইসলামি আইনে বিচারের সাব্যস্ত হয়। মেজর হাশেম আর মোসাহেব আলী এই আইনের প্রণেতা। জনতা এ-বিচারে আগ্রহ না দেখালেও মেজর হাশেমের ইঙ্গিতে রাক্ষসী মেঘনার বুকে তাদের প্রাণ বিসর্জন হয়। শওকত ওসমানের 888sport alternative linkের কলেবর ছোট। জামিরালি প্রেমিকপ্রবণ এবং অন্তর্নিহিত শক্তিতে মুক্তিযোদ্ধা। তার প্রবণতাকে নানামুখী করে জীবন সমগ্রতার বিবিধ রূপ অনুসন্ধান করা যেত। লেখক সেদিকে না গিয়ে বারবার পাকিস্তান প্রশ্ন, হানাদারের অত্যাচার, মুক্তিযোদ্ধাদের শৌর্যবীর্য ইত্যাদি বিষয়কে অহেতুক আরোপিত করেছেন। 888sport alternative linkের শুরুটা যেমন চমৎকার প্রতিবেশে, শেষ হয় না কিন্তু তেমনভাবে। একটা উদ্দেশ্যনির্ভর প্রবণতা নিয়েই তিনি দৃশ্যপট উম্মোচন করেন। 888sport live chatের দায়বোধ নিশ্চিতই 888sport live chatকে ভিন্নমাত্রা দেয় কিন্তু ‘888sport live chatীর ন্যায়’কে রক্ষা করার দায়িত্বও আছে সেক্ষেত্রে। শওকত ওসমানের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক 888sport alternative linkগুলোতে এমন প্রশ্ন অযৌক্তিক নয়। তবে নিছক সময়ের স্মারক হিসেবে এগুলোর মূল্য আছে কিন্তু 888sport live chatের মানদ-ে তার প্রাসঙ্গিকতা প্রশ্নবিদ্ধ বটে।

তিন
মুক্তিযুদ্ধের ডকুমেন্টেশন বক্ষ্যমাণ 888sport alternative linkগুলো, তার অতিরিক্ত কিছু নয়। একাত্তর কালপট সেখানে সুনির্ধারিত। নির্বাচিত স্থান-চরিত্র – জাহান্নাম (উদ্বাস্তু) হইতে বিদায়, ‘নেকড়ে’ (হানাদার তুলনা করে) অরণ্য, দুই ‘সৈনিক’ (পাক সৈন্য-কর্তৃক বাঙালি 888sport promo code ধর্ষণ ও নির্যাতন), জলাঙ্গী (প্রতিনিধিত্বশীল গ্রাম) তাৎপর্যময়। বিষয়ের গুণে এর মাত্রা ‘ডকুমেন্টেশন’কে ছাড়িয়ে গেছে। বড় ঘটনা ছোট কাহিনিপুটে বন্দি কিন্তু তীব্রতা-প্রতিনিধিত্ব-স্বরূপায়ণ বেশ চিত্রল ও কার্যকরী; স্পর্শকাতরও। আঙ্গিক পিরামিড স্থানাঙ্কজাত। লেখকের চারটি 888sport alternative linkই এখানে চারটি বিষয়ের পৃথক প্রতিনিধিত্ব করছে। তাতে ভাষা-রূপকার্থ-ব্যঞ্জনাও নির্ধারিত ওই বিষয়কে ঘিরেই। বাচ্যার্থ ও ব্যঙ্গার্থ উইটের প্রচ্ছদপটে গড়া। বিন্দুতে সিন্ধুর মুকুর – আমাদের অহংকার মুক্তিযুদ্ধ – তার গতি ও বেগ নির্ণয়ে। ফলে বিষয়ের মাহাত্ম্য ধরা পড়ছে। হয়েছে তার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্তময়। অধিকন্তু, তাৎক্ষণিক ওই আবেগ স্ফুলিঙ্গন্যায় শানিত বিচ্ছুরণে অভিপ্রায়িত – অনেক দূরগম্য – বিশেষত এ-প্রার্থিত বর্তমান প্রজন্ম পর্যন্ত। তাই কাজটি প্রলুব্ধময় এবং প্রয়াসশীলও, সন্দেহ নেই। শওকত ওসমানের কৃতিত্ব সেখানেই।