শঙ্খ ঘোষের চিঠি : শিশিরকুমার দাশকে

সংগ্রহ ও ভূমিকা : ভূঁইয়া ইকবাল

শঙ্খ ঘোষ (১৯৩২-২০২১) ও শিশিরকুমার দাশের (১৯৩৬-২০০৩) সম্পর্ক ছিল অগ্রজ-অনুজপ্রতিম। এই দুই মনীষী  888sport live football888sport live chatীর মধ্যে যে পত্রব্যবহার হয়েছিল তার কয়েকটি আমাদের হস্তগত হয়েছে। শঙ্খ ঘোষের কিছু চিঠি এখানে গ্রথিত হলো। শিশির দাশের কিছু পত্রাবলি শঙ্খ ঘোষ উপযুক্ত ভাষ্যসমেত সংকলন করেছেন পুরোনো চিঠির ঝাঁপি (২০১৯) গ্রন্থে।

পত্রকার ও প্রাপক – শঙ্খ ও শিশির দুজনেই গত শতকের পঞ্চাশের দশকে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজের ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। শঙ্খ ১৯৫১ সালে বিএ ও ১৯৫৪ সালে এমএ পাশ করেন আর শিশির ১৯৫৫ সালের অনার্স ও ১৯৫৭ সালের এমএ।

শিশির ছিলেন শঙ্খের ভাই নিত্যপ্রিয় ঘোষের বন্ধু। শঙ্খ ঘোষের পিতা মণীন্দ্রকুমার ঘোষ শিশিরকে লিখেছিলেন :

ডক্টর শশিভূষণ দাশগুপ্ত একদিন বলছিলেন তিনি যত ছাত্র পড়িয়েছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী শিশির। … তোমার সম্পর্কে আমার পুত্র শঙ্খর খুব উচ্চ ধারণা।

(দেখুন, মণীন্দ্রকুমার ঘোষ, শিশির-সুবীরের সঙ্গে ভাষালাপ, কলকাতা : প্যাপিরাস ২০১৮, পৃ ১৩)।

শঙ্খ-শিশিরের পারস্পরিক স্নেহ-888sport apk download apk latest versionর পরিচয় আছে তাঁদের বই উৎসর্গের মধ্যে। শঙ্খ তাঁর ছন্দোময় জীবন (১৯৯৩) উৎসর্গ করেছেন শিশির ও তাঁর স্ত্রী সুস্মিতা দাশকে। আর শিশির তাঁর তরজমা-নাটক বন্দিনী (১৯৮৩) [পরিবর্ধিত সংস্করণে নাম ট্রয়কন্যা, ২০০১] উৎসর্গ করেছিলেন শঙ্খ ঘোষকে। শঙ্খ ঘোষের ঐতিহ্যের বিস্তার (১৯৮৯) 888sport liveসম্ভারের রসগ্রাহী ও গভীর আলোচনা করেছেন (অনুস্টুপ, শঙ্খ ঘোষ বিশেষ 888sport free bet, ১৯৯৪)। ঐতিহ্যের বিস্তার ‘এক সংবেদনশীল কবির আত্মজিজ্ঞাসা’ বলে মন্তব্য করেছেন শিশির দাশ। শিশির দাশের মৃত্যুতে চতুরঙ্গ পত্রিকায় শোক-নিবন্ধ লিখেছেন শঙ্ঘ ঘোষ।  অনুজ শিশির সম্পর্কে শঙ্খের মন্তব্য :

শিশিরের কথা উঠলে কলম যেন আর থামতেই চায় না। এমন একজন প্রগাঢ় পাণ্ডিত্যময় মানুষ, সব সময়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখা এমন একজন ভাবুক আর লেখক – সে যে সেই একসঙ্গে নিজের চারপাশটাকে মাতিয়ে রাখতে পারে কী স্বতঃস্ফূর্ত কৌতুকে-রঙ্গে – এ অভিজ্ঞতাটা প্রায় অবিশ্বাস্য লাগত আমার।

শঙ্খ ঘোষের অনুরোধে প্রকাশনা-সংস্থা প্যাপিরাসের কিশোর জীবনী সিরিজের জন্যে শিশির দাশ লিখেছিলেন মাইকেল (১৯৯৪)। লেখার জন্য সময় দেওয়া হয় মাত্র মাসখানেক। যথাসময়ের আগেই পাণ্ডুলিপি পৌঁছে যায় শঙ্খের কাছে। তবে তারও আগে পৌঁছেছিল এই ‘রগড়-করা পদ্যলিপি’ (মধুসূদনের চতুর্দশপদীর অনুসরণে) :

মহামতি শঙ্খ ঘোষ

বিদ্যাসাগর নিবাসস্থ কবিশীর্ষেষু

আপনি ভাবেন নিত্য, দিল্লীবাসী, দাস

ঘুমায়ে কাটায় কাল, (কচ্ছপ যেমতি

আহা, চিড়িয়াখানায়) সদা খাই-খাই

মধ্যম পাণ্ডব যথা। হায় ভ্রাতঃ, আমি

মন্দমতি, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে।

প্রতিজ্ঞা করিনু আজি, আলস্য ত্যাজিয়া

পালিব তোমার আজ্ঞা, শার্দূল (য.) যেমতি

হঠাৎ পাইলে ক্ষুধা ছুটে মৃগপানে

P.T. Usha-সম গতি।

                      দাও, তিনদিন

(শারদীয় পূজা যথা) তিনটি রজনী

লিখিব এমন গ্রন্থ গৌড়জন যাহে

কান্দিবে ফুকারি উঠি প্রবল আতঙ্কে

স্বপনে শিশুরা যথা শুনি শঙ্খ-ঘোষ।

শিশির সম্পর্কে তাঁর ঘনিষ্ঠতা বিষয়ে শঙ্খ ঘোষ চারণ করেছেন তাঁর 888sport sign up bonus :

যখন বি.এ. পড়ছে শিশির – শিশিরকুমার দাশ – পঞ্চাশের দশকের সেই মধ্যভাগ থেকেই তাকে জানি, কেননা প্রেসিডেন্সি কলেজে সে তখন আমার ভাই নিত্যপ্রিয়র অন্তরঙ্গ সহপাঠী। …

… শিশিরের সঙ্গে সত্যিকারের যোগ – বন্ধুত্বের যোগ – তৈরি হলো … ১৯৭৪-এ আমার সেই দিল্লিজীবন থেকে।

… সুস্মিতা আর শিশিরের স্নিগ্ধ আবাসে নিরন্তর আতিথ্য, আর তারই সঙ্গে বাংলা বিভাগের ছাত্র-অধ্যাপকদের সঙ্গে আনন্দ মেলামেশার সঙ্গে সঙ্গে সেমিনারে সেমিনারে শিশিরের পাণ্ডিত্য মুহূর্তগুলিকে প্রত্যক্ষ করা – এসবের মধ্য দিয়ে দু’মাস কাটিয়ে যখন ফিরে এলাম কলকাতায়, বুদ্ধদেব বসুর মৃত্যু সংবাদ জানবার পরে বেশ ফাঁকা-ফাঁকাই লাগছিল তখন। (দেখুন পুরোনো চিঠির ঝাঁপি, পৃ ৫৬-৫৭)।

শিশিরকুমার দাশকে লেখা শঙ্খ ঘোষের এই চিঠিগুলির প্রতিলিপি এক দশক আগে প্রাপকের দিল্লিবাসী স্ত্রী সুস্মিতা দাশের সৌজন্যে পেয়েছি। সে-সময়ে তাঁর আপ্যায়নের জন্যে এখনো মনে মনে তাঁকে 888sport apk download apk latest version নিবেদন করি।

পত্রগুচ্ছ

পত্র : এক

শ্রী

১০৩ই কর্নওয়ালিস স্ট্রিট

কলকাতা-৪

৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬

শিশির,

সময়মতো চিঠির উত্তর না পেয়ে বিরক্ত হয়ে থাক। ওপরের ঠিকানা দেখে বুঝতে পারছ ইতিমধ্যে একটা পরিবর্তন ঘটে গেছে, বাসাবাদল করে আমরা এদিকটায় এসেছি। এ-ব্যাপারটা নিয়ে কদিন এমন হাঙ্গামার মধ্যে দিন কেটেছে যে আর কিছুই করে উঠতে পারিনি। বিশেষত আমাকে পুরুষসিংহ বলা যায় না।

পত্রিকার সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে কিনা জানি না ঠিক,

 তাহলেও পাঠাচ্ছি, যথাকরণীয় ক’রো।

ডিসেম্বরের শেষ দিকে তুমি কলকাতা এসেছ। এ খবর পেয়েছিলাম। সব নিয়ে ভালো আছ আশা করি।

স্নেহ শুভেচ্ছান্তে

                    শঙ্খদা

পত্র : দুই

শ্রী

২৯ মার্চ ১৯৭৪

শিশির

স্বপ্নের মধ্য দিয়ে যেন কেটে গেল কয়েকটা দিন। আরো সেটা টের পাচ্ছি কলকাতায় পা দিয়েই – মনে হচ্ছে ঠিক বস্তুজগতে ফিরে এলাম আবার। যে-রকম আপ্যায়নের ভিতরে ছিলাম দিল্লীতে, সে যেন অনেকটা চুরি করে পাওয়া; সে তো আমার প্রাপ্য ছিল না একেবারেই! মাঝে মাঝে মানুষের জীবনে এমন ঘটে যায়! এরপর যখন অসংগত দুঃখ পাব কখনো, মনে রাখতে ভুলব না যে, অসংগত  সুখও জীবনে পেয়েছি অনেকবার, বিলাপ করা তাই সাজে না। দিল্লীর দিনগুলি এতটা মূল্যবান হয়ে রইল আমার 888sport sign up bonusতে।

তোমার মতো একজন কেউ বাইরে প্রবাসে পড়ে আছে দিনের পর দিন, এ যে কত বড় ক্ষতি আমাদের, তা আগেও কখনো কখনো মনে হয়েছে। কিন্তু এত বেশি করে তা বুঝতে পারিনি আগে। কলকাতায় ফিরে দিল্লীর যেসব জিনিসের খুব অভাব বোধ করব, তোমার সেমিনার তার মধ্যে প্রধান। অথচ সেই সেমিনারে কিছু সর্দার যদি ভিকর অব ওয়েকফীল্ড হয়ে বসে থাকেন শুধু – কী অসীম সে অপচয়।

কলকাতার পথঘাট এই দুমাসেই আরো বেশি জীর্ণ আর ক্লেদময় হয়ে উঠেছে, তার একটা বর্ষা বড়ো কারণ এই যে, … [অস্পষ্ট]

কলকাতায় বর্ষা নেমে গেছে। চৈত্রকে চৈত্র বলে চেনা যায় না আর, একেবারে আষাঢ়ের চেহারা ধরেছে আকাশ। তাছাড়া আর সব খবর ভালো। বাড়ির লোকজন ভালো আছে সবাই। যতীনের বাজারও পছন্দ হলো সকলের। আর আমার ছোটো কন্যা কেবল এই খবর জেনেই খুশী যে দান্তে ওর থেকে ছোটো। গ্যেটে যখন বড়ো, তখন নিশ্চয় আমার চেয়েও বড়োই হবে, এই ওর নিশ্চিত বিশ্বাস।

সুযোগমতো তোমার নাটক দুটি কপি করে পাঠাতে ভুলো না। যতীন একবার বলেছিল যে গরমের ছুটির সূচনায় ওর কল্যাণীতে আসবার সম্ভাবনা। তাহলে সে-সময়ে ওর হাতেও দিয়ে দিতে পারো কপি। বড়োসড়ো জিনিস ডাকে পাঠাবার ঝামেলা অনেক।

আমাদের আসরগুলিতে যাঁরা আসতেন তাঁদের সবাইকে আমার শুভেচ্ছা জানিয়ো। বিশেষত জয়ন্তী আর গীতাদেবীকে। ওঁদের স্নিগ্ধ সাহচর্য কেবলই আমার মনে পড়ছে।

রবিবাবু আর তাঁর স্ত্রীর শরীর একটু ভালো কি এখন? ওঁদের আমি চিঠি লিখছি একটু পরেই, লিখছি যতীনকেও।

সুস্মিতা কি চা তৈরি করতে গিয়ে এক কাপ বেশি করে ফেলছে, ভুলে?

তোমরা আমার ভালোবাসা জেনো।

                                        শঙ্খদা

পত্র : তিন

শ্রী

২২৬এ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড

কলকাতা-৪। ২১ জুন ১৯৭৪

শিশির

ভাবছ কি কলকাতায় গিয়ে ভুলেই গেল লোকটা? সত্যিও, এমন একটা ঘূর্ণিপাক সবসময়েই চলছে কলকাতায় যে কিছু না করেও মনে হয় কত কাজে ব্যস্ত। দিল্লীর দিনগুলির সঙ্গে তুলনা করে দেখলে এখানে আমার ব্যক্তিগত দিনযাপন অনেক মন্থর আর কর্মহীন, কিন্তু মনে হয় যেন স্রোতের ধাক্কায় চলছি, নিজের অভিপ্রায়মতো একখানা চিঠি লেখাও শক্ত হয়ে ওঠে এখানে।

যতীন কি এখনো দিল্লীতে, না চলে গেছে সিমলায়? আমি তো আশা করেছিলাম যে, এর মধ্যে কলকাতায় ওকে দেখতে পাব একবার। না কি রাগ করে দেখা দিল না? এক্ষণ পত্রিকার জন্য যে-লেখাটি ওর কাছে চেয়েছিলাম সেটি নিয়ে এই বিপদে পড়েছি যে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যাবার মুখে এখন। গত পুজোর পর কোনো 888sport free bet বেরোয়নি আর, এবং সম্ভব সেই সংকোচে নির্মাল্য একেবারেই আর দেখা করে না আমার সঙ্গে। যতীন যদি এখনো ওখানে থাকে তো জিজ্ঞেস করে দেখো, অন্য কোনো পত্রিকায় – যেমন ধরা যাক ‘পরিচয়’ – ছাপতে ওর মত আছে কি না। জানায় যেন।

মীন সঙ্ঘের 888sport app সদস্য আশা করি দিল্লীতেই আছে এখনো। দেখা হয় তাদের সঙ্গে?

রবিবাবু যে এখানে এসেছেন বেশ কিছুদিন হলো, সেটা সেদিন আচমকা জানলুম আমি বিশীমশাইয়ের কাছে। একটি রাবীন্দ্রিক সভায় (পঁচিশ বৈশাখের ঢেউ এখনো চলছে) ওঁর সঙ্গে দেখা হলো। মুশকিল হচ্ছে এখানে রবিবাবুর আস্তানা আমার জানা নেই, এবং বিশীমশাইও বলতে পারলেন না ঠিকানা। সে যাহোক, যেমন করেই পারি খোঁজ করে নেব নিশ্চয়ই। আর, ওঁদের হাতে তোমাদের ছবিগুলি পাঠিয়ে দেব।

দান্তে-বিষয়ক তোমার 888sport app download apkটি পড়তে পেলাম আনন্দবাজারে। পেয়েছ পত্রিকা? তোমার আরো একটি 888sport app download apk প্রায় লুকিয়ে-লুকিয়ে জানা হয়ে গেল, জার্মান-দেশ হয়ে সেটি আমার কাছে ঘুরে এসেছে। অলোকের খুব পছন্দ হয়েছে বলে পাঠিয়ে দিয়েছে আমার কাছে।

তোমাদের পারিবারিক সমৃদ্ধি কি ইতিমধ্যে সম্পন্ন, না আসন্ন? ভার্জিল না সাফো, সেইটে সময়মতো জানিয়ো।

এখানকার খবর সব ভালোই। নিত্যপ্রিয় আবার চাকরি বদল করেছে, নতুন খবরের মধ্যে এই।

ভালোবাসা জেনো।

                      শঙ্খদা

পত্র : চার

শ্রী

২২৬এ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড

কলকাতা-৪।  ২২ জুলাই ১৯৭৪

শিশির

তোমাদের কন্যার সংবাদে আমরা সকলেই খুব খুশী। সুস্মিতা এখন বেশ ভালো আছে তো?

রবিবাবুরা যেদিন এসেছিলেন এখানে, আমার ছোটো মেয়েটা খুবই দমে গিয়েছিল সেদিন। কেননা দিল্লী থেকে কেউ আসছেন শুনে ও ধরেই নিয়েছিল যে দান্তেকে দেখতে পাওয়া যাবে দলের মধ্যে। দান্তেই যদি না এল তাহলে আর এসব লোকজনের দরকার কী, এই রকম একটা মুখভঙ্গি করে অচিরেই সে ঘুমিয়ে পড়ল।

বর্ষণক্লিষ্ট কলকাতার কিছু কিছু বিবরণ নিশ্চয় তোমরা রবিবাবুর কাছে শুনেছ?

একটা কাজের কথা অনেক দিন ধরে তোমাকে লিখব ভাবছি। অ্যারিস্টটলের পোয়েটিক্স-এর একটি ভালো 888sport app download apk latest version কি দরকার নয় বাংলায়? এবং এর জন্যে কি এমন একজন লোকের দরকার নয় যে 888sport live football বোঝে; বাংলা জানে, গ্রীক জানে? এবং সেরকম লোক তোমাকে ছাড়া আর পাওয়া যাচ্ছে কোথায়?

কথাটা উড়িয়ে দিয়ো না। সাধনকুমার ভট্টাচার্য যে শোচনীয় কাজটি করে গেছেন তার থেকে বাঙালী পাঠককে একটু মুক্তি দেওয়া দরকার। সটীক একটি পোয়েটিক্স-এর 888sport app download apk latest versionে যদি এখনই তুমি হাত না দাও, তাহলে এ বিষয়ে আমি যতীনকে উশকে দেব। যতীন কিছুদিন দিল্লীতে থাকলে নিশ্চয় কাজটা তোমাকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারবে।

আর আমার বিশ্বাস যে এর জন্যে প্রকাশকের অভাব হবে না, এই দুর্দিনের বাজারেও।

প্রকাশকের কথায় মনে পড়ল আমার বইয়ের প্রচ্ছদের কথা। সে-বিষয়ে এইটুকুই বলা যথেষ্ট যে প্রথম যেদিন মুদ্রিত ওই প্রচ্ছদ দেখতে পাই সেদিন অনেকক্ষণ পথে ঘুরে বেরিয়েছি ‘আত্মহত্যাই করা উচিত কিনা’ এই ভাবতে ভাবতে। পরে অবশ্য সেটা না-করাই সাব্যস্ত করেছি, বলা বাহুল্য।

অলোকরঞ্জন আরো ছ মাসের ছুটি চেয়ে পাঠিয়েছে – হয়তো সেটা এক বৎসরেও গড়াতে পারে। দেবীবাবুকে সে জন্যে অবশ্য অখুশী দেখাচ্ছে না একেবারেই।

দিল্লী কি এখন বৃষ্টিধারায় স্নিগ্ধ?

আমাদের ভালোবাসা জেনো।

                                 শঙ্খদা

পত্র : পাঁচ

শ্রী

২২৬এ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড

কলকাতা-৪।  ৪ নভেম্বর ১৯৭৪

শিশির

বিজয় সম্ভাষণ জানিয়ে কদিন আগে তোমাদের চিঠি লিখেছি একটা, কিন্তু কাগজে যা দেখছি তাতে সে-চিঠি যে দিল্লী পর্যন্ত পৌঁছবে শেষ অব্দি, তেমন কোনো ভরসা নেই।

 সেই শের শাহও নেই, সে ঘোড়ার ডাকও নেই! কাজেই ভাবছি হাতে-হাতে চিঠি পাঠাবার ব্যবস্থাটাই ভালো : মণিময়কে যখন পেয়ে গেলাম দৈবাৎ।

তুমি যে ম্যানিলা যাচ্ছ, সে খবরটা তোমরা না লিখলেও টের পেয়ে গেছি আমি। এবারে যতীন-মণিময়ের কাছে জানলাম যে তোমার পেপারও তৈরি। সেটা যে খুব ভালো হবে তা বলাই বাহুল্য কিন্তু সেমিনারের পুরো অভিজ্ঞতাটা জানিয়ো ফিরে এসে। সুস্মিতাদের কি অন্য কোথাও রেখে যাবে?

তোমাদের দুজনের শরীরই তো খারাপ চলছিল। এখন কি উন্নতি হয়েছে কিছু?

আমাদের পুজোর দিনগুলি বেশ দুর্ভাবনায় কাটল। মিঠি – আমাদের বড়ো মেয়ে – দিন পনেরো ধরে বিছানাবন্দী। আজ, এতদিন পর মনে হচ্ছে হয়তো সুস্থতার প্রান্তে পৌঁছল। মাসের শেষে স্কুল খুললেই ওদের টেস্ট পরীক্ষা, এজন্য বেশ মন খারাপ করে আছে। পরীক্ষায় কী আসে যায়, এসব কথা বলেও বিশেষ সুবিধে করা যাচ্ছে না।

তোমার অ্যারিস্টটল কতদূর? যতীন আমাকে আশ্বাস দিয়েছে যে তাড়া দিয়ে অবশ্যই করিয়ে নেবে কাজটা। হয়ে গেলেই এখানে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা কোরো।

রবিবাবুদের খবর ভালো? ওঁদের আমার 888sport apk download apk latest version জানিয়ো।

সম্প্রতি একটি পত্রিকায় সাব্যস্ত হয়েছে যে শঙ্খ আমার ছদ্মনাম; আসল ব্যাপার অন্য কিছু; ফলে এখন চিঠির শেষে কী যে লিখি এই নিয়ে খুব ভাবনা!

ভালোবাসা জেনো।

                      শঙ্খদা

পত্র : ছয়

শ্রী

২২৬এ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড

কলকাতা-৪।  ৯ ডিসেম্বর ১৯৭৪

শিশির

888sport app download apk latest versionের টুকরোটি যে হাতে এসে পৌঁচেছে, অনেক আগেই সে-খবর জানানো উচিত ছিল। জানাতে যে পারিনি তার খানিকটা কারণ স্বভাব, কিন্তু খানিকটা উৎপাতও। সেই পুজোর সময় থেকে মিঠি যে ভুগছে তার আর অবসান নেই, মাঝে মাঝে দু’একদিন মনে হয়েছিল বটে যে সেরে উঠল, কিন্তু এখন বোঝা যাচ্ছে অসুখটা চলবেই কিছুদিন। ইতিমধ্যে ওর টেস্ট পরীক্ষাটা দেওয়া বন্ধ হয়েছে, শেষ পরীক্ষাতেও কী দাঁড়াবে বুঝতে পারছি না। সেটা অবশ্য এপ্রিলে; সময় আছে এখনও।

তোমার 888sport app download apk latest version, যেমন আমার আশা ছিল, খুব ভালো। 888sport app download apk latest version আর টীকা যদি শেষ করে থাকো, এবার এ নিয়ে কিছু আলোচনা কি করবে? তাহলে আমরা ব্যাপারটার অল্পস্বল্প হদিশ পাই।

গ্রীক নামের উচ্চারণ ইত্যাদি বিষয়ে যে প্রশ্ন তুলেছ তার উত্তর দেওয়া খুব শক্ত। আমি কয়েকমাস ‘ভারতকোষে’র কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবার সময় এ নিয়ে আমরা ভেবেছিলাম খানিকটা। ইংরেজি উচ্চারণ নয়, যথাসম্ভব মূলানুগ-ই করা উচিত এসব; এই রকমই ভেবেছিলাম তখন। পরে আবার কখনো কখনো ভেবেছি, সাধারণ পাঠকের পরিচিত নামগুলোকে এমন অচেনা চেহারায় সাজালে যোগাযোগের কোনো বিঘ্ন ঘটবে না তো! কিন্তু তবু, শেষ পর্যন্ত আমি ‘আরিস্তোতেলেস’-এরই পক্ষপাতী।

খুবই ছোটোখাটো দুএকটি জিজ্ঞাস্য অবশ্য আছে আমার।

সে-সব নিশ্চয়ই মুদ্রণের সময় ভাবা চলবে (এমন ভাবে বলছি যেন ছাপা শুরু হলো ব’লে!) – এমন গুরুতর কিছু নয়। যেমন ধরো, ‘যে 888sport live chat শুধু গদ্যে বা পদ্যে রচিত, এক বা একাধিক ছন্দে গঠিত, এখনও পর্যন্ত তার কোনো নামকরণ হয়নি’ এই বাক্যের বাইওয়াটার-কৃত 888sport app download apk latest versionে আছে একটি অতিরিক্ত অংশ ‘an art which imitates by language alone’। তাহলে কি ধরে নেব যে 888sport app download apk latest versionের আড়ষ্ট ভাবটা কাটাবার জন্যে ওইটে জুড়ে দিয়েছিলেন বাইওয়ার্চার? মূলে নেই? না কি অপ্রয়োজনবোধে তুমি বর্জন করছ? বা, একটু আগে, ‘এই সবকিছুতেই বলা চলে অনুকরণ’ বাক্যাংশটিতে ‘modes of imitation’-এর ধাঁচে কোনো কথা কি মূলে নেই?

এই রকম দুচারটি কথা পরে তোমার কাছে শুনব কখনও – কৌতূহল মেটাবার জন্যে। ইতিমধ্যে আমাকে জানিয়ো, 888sport app download apk latest versionের সঙ্গে কোনো আলোচনা যোগ করবার কথা ভাবছ কি না। আমার মনে হয়, করতে পারলে ভালো।

সুম্মিতা এখন বেশ ভালো হয়ে উঠেছে তো? তোমার ত্রিরত্ন নিশ্চয় খুব টগবগ করছে। কিন্তু যতীনদের কথায় সুস্মিতার চিঠিতে এখন যা বুঝতে পারছি, তোমাকে নিয়েই সমস্যা। ভালো করে ডাক্তার দেখিয়েছ? তোমারও শরীরের একটা দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা দরকার মনে হয়।

যতীন এবার কলকাতা থেকে খানিকটা গ্লানি বহন করে গেছে।  আমাকে কি বলেছে সে-অভিজ্ঞতা? বৌধায়নদার সঙ্গে আচম্কা পথে দেখা হওয়াতে উনি অবিশ্বাস্য এক অভদ্রতা করলেন ওর সঙ্গে : বৌধায়নদার নাকি অনেক জটিল অভিযোগ জমে আছে ওর বিষয়ে।

যতীন কি ভেলোর থেকে ফিরেছে? ওর মা-র কী খবর?

শেষ পর্যন্ত যদি তোমার ম্যানিলা যাওয়াই সাব্যস্ত হয়ে থাকে তাহলে এই চিঠি হয়তো এখনই পাবে না। অবশ্য চিঠি না পাবার অন্য গুরুতর কারণ থাকতে পারে। ডাকবিভাগের লোকেরা এখন ঠিক কতটা সদয়, জানি না।

আমরা ভাবছি এ মাসের শেষ দিকে দিন দশেকের জন্য পুরী যাব, মিঠাইর জন্য। নির্ভর করছে অবশ্য টিকেট পাওয়ার উপর।

আমাদের ভালোবাসা জেনো।

                                 শঙ্খদা

পত্র : সাত

শ্রী

১৫ ডিসেম্বর ১৯৭৪

শিশির

তোমার চিঠির আমার চিঠির মাঝপথে দেখা হয়ে থাকবে কোথাও। এখন দেখছি ভূমিকা-লেখা বিষয়ে বাহুল্য পরামর্শ দিয়েছি : ভূমিকা তোমার শেষই হয়ে গেছে। এত তাড়াতাড়ি কাজ করো কেমন করে?

Metre-এর প্রতিশব্দ হিসেবে ‘বৃত্ত’ আমার পছন্দ হচ্ছে না তেমন। তার 888sport app কারণ ছাড়াও একটা বড়ো কারণ এই যে পাঠকদের একটু বিভ্রান্ত লাগতে পারে ওই শব্দে। ওর চেয়ে বরং একটু বড়োসড়ো হলেও, ছন্দমিতি ছিল ভালো।

কিন্তু ছন্দমিতি পর্যন্ত যেতে হচ্ছে তো ‘ছন্দ’ শব্দটিকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টায়? Metre অর্থেই ছন্দ ব্যবহার তো সংস্কৃতেই আছে। আসলে বিভ্রাট হয়েছে Metre-এর প্রতিশব্দ নিয়ে, এই তো? রীদ্ম্-এর জন্য একটা শব্দ পেলে হয়তো ‘ছন্দ’কে ছেড়েই রাখতে পারো Metre-এর জন্য। যদিও, সবাই মানবেন যে, ‘ছন্দ’ শব্দটি Metre-এর চেয়ে অনেক ব্যাপক।

স্পন্দ ও ছন্দঃস্পন্দ (বিসর্গটা বাতিল করাও যায়) অনেক সময়ে ব্যবহৃত হয়েছে রীদ্ম্ অর্থে। সেইটেকে চালিয়ে দিলে ক্ষতি কী?

এতটা লিখলাম বটে, কিন্তু এ নিয়ে আমার কোনো শুচিবায়ু নেই। তোমার যেমন পছন্দ, সেইরকমই লিখো।

রবিবাবু এখানে চিঠি লিখেছেন শুনে ভাবনায় পড়েছি। ‘শঙ্খ’ নাম অবশ্য দেবীবাবু ছাড়া আর সকলে মোটামুটি জানেন, – কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। মিঠির শরীর ভালো যাচ্ছে না, স্কুলের টেস্ট পরীক্ষা দিতে পারল না, এপ্রিলে ওর শেষ পরীক্ষা। সব মিলিয়ে আপাতত কিছুদিনের মতো দু-তিন মাস কলকাতার বাইরে থাকা একটু শক্তই হবে। আর দেবী-প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি যে সহজে মিলবে তা মনে হয় না। সেইজন্য সময় থাকতে থাকতে অন্য বিকল্প নাম ভেবে রেখো।

এখানকার একটি খ্যাত নাটক, বছর দুই ধরে চলছে, এতদিন পর দেখতে গিয়েছিলাম কাল। মনটা খুব ভার হয়ে আছে সেই থেকে। সুভাষদাকে নিয়ে ইতর ধরনের আক্রমণই এই নাটকের প্রধান উপজীব্য। ‘আনন্দবিদায়ে’র কথা মনে পড়ল আমার। কিন্তু প্রভেদ কেবল এই যে ‘আনন্দবিদায়ে’র অভিনয় হতে দেন নি সত্যেন্দ্রনাথেরা, আর আজ সুভাষদার এমন কোনো অনুরাগী দল নেই যে একটা দক্ষযজ্ঞ তৈরি হবে আবার!

আনন্দবাজার!

এই চিঠি পড়ে সুস্মিতা নিশ্চয়ই ভাবছে যে এরা বড়ো কেজো কথার মানুষ হয়ে উঠেছে! কাজেই, রইল এইখানে -।

ভালোবাসা জেনো।

                      শঙ্খদা

পত্র : আট

শ্রী

২২৬এ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড

কলকাতা-৪।  ১৮ অক্টোবর ১৯৭৫

শিশির

ড্রামাটিক আয়রণির একটা ভালো উদাহরণ বলি। তোমার শেষ যে চিঠিখানি পাই – ছন্দ বিষয়ে – প্রায় মাস ছয়েক আগে – সেটি পড়তে পড়তেই মিঠিকে বলছিলাম : ‘এ হচ্ছে সেইরকমের চিঠি যার জবাব দেবার জন্য হাত নিশপিশ করে। কাল সকালেই বসতে হবে।’ তারপর সে কাল মহাকালে পৌঁছল, দিল্লী কলকাতায় অনেক ঘটনা ঘটে গেল এর মধ্যে, আর তোমরা দুজনে

তো মস্ত রাগ করে বসে আছো আমার দুর্ব্যবহার দেখে। ব্যবহারের কোনো কৈফিয়ৎ নেই যদিও, কিন্তু যদি এ-গল্পটা তোমার জানা

থাকত যে চিঠি না লিখবার অপরাধে বছর তিনেক আগে পুলিশও হানা দিয়েছিল। তাহলে নিশ্চয় আমার অপরাধটা উপেক্ষা করতে পারতে।

খানিকটা অস্বস্তিতে ছিলাম মিঠিকে নিয়ে। পরীক্ষার আগে যে দীর্ঘস্থায়ী অসুখটি ওর ধরা পড়ে, সেটা এক ধরনের টি.বি.। ডাক্তারের নির্দেশমতো তখন রোগীকে অথবা অন্য কাউকেই সেটা জানানো হয়নি। চিকিৎসা এখনও চলছে অবশ্য, তাহলেও এখন মোটের উপর সুস্থ বলা যায়। কাল, এতদিনে, ওকে জানিয়েও দিয়েছি অতীতের খবরটা।

এরই মধ্যে কোনরকমে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে বেরোল, ফোর্থ হয়েছে। ফিলজফি নিয়ে প্রেসিডেন্সীতে ভর্তি হয়েছে পুজোর ছুটির ঠিক আগে। বাঙলা আর সংস্কৃতে লেটার পেয়েছে বলে হিতৈষীরা সবাই তর্জন করছেন : বাঙলা পড়াই উচিত ছিল। কিন্তু যে পড়বে, তার তাতে ঘোর আপত্তি।

যতীনের কাছে জেনেছি যে তোমার অ্যারিস্টটল সম্পূর্ণ হয়ে আছে। 888sport app download apk latest version যে শেষ হয়েছে সে তো আমিই জানতাম। ভূমিকা এবং আনুষঙ্গিক যা-কিছু, তা যদি লেখা হয়ে থাকে তাহলে পাঠাচ্ছ না কেন এখানে! কলকাতার প্রকাশকমহল যদিও একেবারেই নির্ভরযোগ্য নয়, কোনো প্রতিশ্রুতিরই দায় তারা শেষ পর্যন্ত নেয় না, তাহলেও আমাদের আশা করতে দোষ কী? নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পাঠিয়ে দেবে লেখাটা?

আর কী লিখছ এখন?

আমি শারীরিকভাবে মাঝেমাঝেই অবসন্ন হয়ে পড়ছি। কদিন আগে ইউ.জি.সি. টিমে রবিবাবু এলেন, সে-সময়ে দেখা হবে একটু, আশা ছিল। কিন্তু রাস্তায় মাথা ঘুরে পড়ে বন্দী হয়ে গেলাম দিন দশেকের জন্য। শরীর এবং লেখাপড়া, আপাতত আমার এ-দুয়েরই অবস্থা সমান।

তোমরা পঞ্চকে আমার ভালোবাসা জেনো। রবিবাবুকে আমার 888sport apk download apk latest version জানিয়ো।

           শঙ্খদা

পত্র : নয়

শ্রী

২২৬এ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড

কলকাতা-৪।  ৩১.১২.১৯৭৫

শিশির

কী হলো, লেখার? এবার যে প্রকাশকই তাড়া দিচ্ছেন! শারীরিক দুর্যোগ বেড়েছে? দেবীবাবু দিল্লী থেকে ফিরে বলেছিলেন, শিশিরের শরীর তেমন ভালো নেই।  সেই রকমই কি চলছে?

অবশ্য আমিও কিছুদিন তাড়া দিতে পারি নি তোমাকে। আগের চিঠিটি লিখবার পরেই আমরা চলে গিয়েছিলাম কাশীতে। দিনকুড়ি ওখানে কাটিয়ে কলকাতায় ফিরেছি নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। ফিরেই একটা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছিলাম, ফলে আর চিঠিপত্র লেখা হয়নি।

সে যাই হোক, অ্যারিস্টটল এবার পাঠাও। আমি খবর নিয়ে জেনেছি গ্রীক শব্দ ছাপানোতেও কোনো বাধা হবে না। টাইপ পাওয়া যাবে।

ইতিমধ্যে কি তোমার পায়াভারী হয়েছে? দিন কয়েক আগে যাদবপুরে একজন বললেন যে, শিশির এখন প্রফেসর। মানতেই হলো। দেবীবাবুই নাকি বলেছেন। … আমার মুখ ফশ্কে বেরিয়ে গেল কই আমি তো জানি না। যেন আমারই জানার কথা।

ঘটনাটা ঘটে থাকলেও তুমি নিজে থেকে জানাবে তা নয়। তাহলেও জেনো আমি কৌতূহলী হয়ে আছি। এসব ব্যাপারে সাধারণত আমার কোনো কৌতূহল হয় না। কিন্তু তোমার বিষয়ে জানতে ইচ্ছে করে।

পবিত্র এখনো কাজ পায় নি। যাদবপুরে ওর যে কাজটা হয়ে যাবে বলে আমরা ধরেই নিয়েছি, নানা অবিশ্বাস্য আর অনির্দেশ্য কারণে দিনের পর দিন সেটা আটকে থাকছে।

‘ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ’ কি তুমি পড়েছিলে? প’ড়ে কোনো সংশোধন বা পরিমার্জনের কথা কি মনে হয়েছিল? দিন পনেরোর মধ্যে ওটা আবার ছাপতে দিতে হবে; তোমার কোনো পরামর্শ থাকলে জানিয়ো। এই জন্যেই নতুন করে বইটি পড়বার কোনো দরকার নেই, এমনি এমনি যদি কিছু মনে হয় তবে লিখো।

রবিবাবুর সব খবর ভালো? তোমার পরিবার আর সামাজিক দলবল? তোমার চিঠি এলে টিয়া কেবল একটাই মুখস্থ-প্রশ্ন করতে থাকে : আমি বড়ো না দান্তে বড়ো?

অ্যারিস্টটল! অ্যারিস্টটল!

                             শঙ্খদা

পত্র : দশ

শ্রী

২২৬এ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড

কলকাতা-৪।  ১৮.২.৭৬

শিশির

কিছুদিন আগে তোমার পাণ্ডুলিপি দিয়ে গেছে পবিত্র। তার ঠিক পরেই হঠাৎ কদিনের জন্য শিলিগুড়ি যেতে হয়েছিল আমাকে, তাই আর চিঠি লিখে রেখে যেতে পারি নি। ফিরে এসে তোমার পোস্টকার্ড পেলাম।

প্রকাশকের হাতে এখনো তুলে দিই নি পাণ্ডুলিপি, খবর দিয়ে রেখেছি মাত্র। দুচারদিনের মধ্যেই হয়তো ওঁরা নিয়ে যাবেন।

আমি ভেবেছিলাম একবার পুরো পড়ে নিয়ে তারপর তোমাকে লিখব। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তাতে আরো দেরি হয়ে যাবে। আপাতত দুএকটি মাত্র জিজ্ঞাস্য জানাই, খুবই গৌণ।

শেষদিকে যেখানে পরিভাষা-তালিকা দিয়েছ, সেখানে আছে গ্রীক মূল আর তার বাংলা প্রতিশব্দ। ওই তালিকায় একটা ইংরেজি প্রতিশব্দেরও ঘর থাকলে কি ভালো হয় না? অন্ততপক্ষে বাংলা রোমান অক্ষরে গ্রীক শব্দটির উচ্চারণ? তা নইলে আমাদের মতো লোকদের কী দশা হবে?

ঠিক সেই রকমই উৎসর্গ পাতারও একটা সর্বজনগ্রাহ্য চেহারার কি দরকার নেই? গ্রীক চেহারার সঙ্গে সঙ্গে? এতে অবশ্য পরিচ্ছন্নতার সামান্য হানি হতে পারে; তাহলেও কথাটা কিন্তু ভেবে দেখবার যোগ্য।

তোমার আগের চিঠিতে যতীন-বিষয়ক খবর পেয়ে আমরা বাড়িসুদ্ধ সবাই বিহ্বল হয়ে আছি। আমি নিজে অন্য কারণেও একটু অপ্রস্তুত বোধ করছি। দিল্লী থেকে ফিরবার পর নবীন উত্তেজনায় যখন তার বিবরণ সবাইকে বলছি, দু-চারজন তখনই যতীন বিষয়ে একটু বাঁকা ইঙ্গিত করেছিলেন। এর মধ্যে প্রধান এবং প্রবল ছিলেন বৌধায়নদা। কিন্তু তাতে আমি বরং ওঁরই ওপর বিরক্ত হয়েছি, অগ্রাহ্য করেছি ওঁর সঙ্গ। অথচ শেষ পর্যন্ত সবই সত্য হলো!!

তোমার শরীরের উন্নতি হচ্ছে না কেন? ঠিকমতো ওষুধ খাও তো?

পবিত্র শেষ পর্যন্ত কী করবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। যাদবপুরে নির্বাচন যদিও হয়ে গেছে, তাহলেও নিয়োগপত্র পেতে আরো অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। এ এক আশ্চর্য কাণ্ড। ও যাতে এখানে ঢুকতে না পারে কিছুতেই, তার ব্যবস্থায় জ্যোতিশচক্র অবিরাম ঘূর্ণিত হচ্ছে। পরিণাম বলা মুশকিল।

আমাদের খবরের মধ্যে নতুনত্ব নেই কিছু। মিঠি কলেজে ঢুকতে না ঢুকতেই অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, কাল পরীক্ষা। টিয়া নিজের স্কুলকে এখন কলেজই মনে করছে। প্রতিমা কোনোরকমে নিজেকে সামলে নেবার চেষ্টা করছে। আর আমি কেবল দিন কাটাচ্ছি। শিলিগুড়ি থেকে ফিরে ‘ছন্দের বারান্দা’র দ্বিতীয় সংস্করণ হাতে পেলাম। আহ্লাদের খবর কেবল এইটুকু।

সুস্মিতার চা যে আবার কবে খাব।

                                      শঙ্খদা

পত্র : এগারো

শ্রী

২২৬এ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড

কলকাতা ৪

৬ এপ্রিল ১৯৭৬

শিশির

তোমার বইটি ছাপছেন আশা প্রকাশনী। প্রকাশক কাল তোমার ঠিকানায় দলিলের কাগজপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন, তার একটা কপি সই করে ওঁদের ফেরত পাঠাতে হবে। ওখানে লেখা আছে, পাণ্ডুলিপির জন্য অগ্রিম একশো টাকা দেওয়া হলো। সেই টাকা ওঁরা আমার কাছে রেখে গেছেন; আমি দুচার দিনের মধ্যে সময় করে সেটা পাঠিয়ে দেব তোমার ঠিকানায়।

ছাপার কাজটা শুরু হলে প্রুফ তোমার কাছে পাঠানো হবে সময়মতো।

উৎসর্গপত্রে কেবল গ্রীক হরফ রাখার বিষয়ে আমার দ্বিধাটা কিন্তু রয়ে গেল। তোমার যে পাঠকেরা হাতে তুলে নেবেন এই বই তাঁদের  কি একটু অপ্রস্তুত করা হবে না এতে?

গরমের ছুটির মধ্যে কলকাতায় আসতে পারো, লিখেছিলে। তার সম্ভাবনা কি বাড়ল কিছু?

পবিত্র শেষ পর্যন্ত যাদবপুরে কাজ শুরু করতে পেরেছে। এতদিনে সেটা জেনেছ নিশ্চয়। তোমাদেরও নতুন লোক নেওয়া কি একসঙ্গে হলো?

তোমার শরীর কি একটু ভালো এখন? রবিবাবুর খবর ভালো? আমাদের দিনকাল চলছে একরকম। চিঠি থেকে খানিকটা আন্দাজ করতে পারবে মনটা খুব জড়তাময় হয়ে আছে।

ভালোবাসা জেনো।

                       শঙ্খদা

পত্র : বারো

শ্রী

২০ নভেম্বর ১৯৭৬

শিশির

অনেকদিন তোমাদের চিঠি লিখিনি। ইতিমধ্যে কত ব্যাপার গড়িয়ে গেল। ন্যাশনাল লাইব্রেরীতে রবিবাবু আসছেন, কাগজে এই খবর দেখে প্রথমে তোমার কথাই ভাবছি। তুমি তো তাহলে একেবারেই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়লে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের একটা সম্ভাব্য পথ হচ্ছে এ-অঞ্চলে ফিরে আসবার আরেকটা চেষ্টা করা। সেই চেষ্টার প্রসঙ্গে লিখি।

অশ্রু সম্প্রতি শিলিগুড়িতে রীডার হয়েছে, জানো অবশ্যই। অশ্রু লিখেছে, ওদের ওখানে প্রফেসর-পদের জন্যেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, কিছুদিন হলো, সেখানে যেন অবশ্যই তুমি একটা আবেদনপত্র পাঠিয়ে দাও। এটা অশ্রুর যেমন ইচ্ছে, আমারও। অমøানবাবু রবিবাবুর কথার উপর খানিকটা ভরসাও রাখেন বোধহয়, কাজেই আমাদের ইচ্ছে বা প্রত্যাশাটা এবার নিষ্ফল এবং অলীক নাও হতে পারে। আর হলেই বা, চিঠি একটা ফেলে দিতে দেরি হয়ে গেলে শিলিগুড়িরও একটা মানুষ [অস্পষ্ট] ভাব হয়, আর তোমাকেও আমরা কাছাকাছি পাই।

দ্বিতীয় কথাটা তোমার বই নিয়ে। মাঝখানে তো এমন অবস্থা হলো যে ভাবলাম বন্ধই হয়ে গেল ছাপার কাজ। শেষ পর্যন্ত একটা রফা হয়েছে শুনলাম। … এরা তো ভরসা দিচ্ছে যে এবার তাড়াতাড়ি এগোবে কাজ। হলে ভালো।

কিন্তু তাই বলে তুমি তাড়াহুড়া কোরো না। কাল ওদের হাতে তোমার দেখে-দেওয়া একটা প্রুফ চোখে পড়ল। তাতে যেন মনে হলো তুমি গ্রীক হরফগুলোর দিকে মন দিয়ে বাকিটা ওদের ওপর ছেড়ে দিচ্ছ। সেটা কিন্তু ঠিক হবে না। পুরোটা কয়েকবার ভালো করে দেখে দিয়ো, তা নইলে বেশি ভুল থেকে যাবার সম্ভাবনা। এই প্রুফটা অবশ্য হঠাৎ আমার চোখে পড়ায় কিছু ভুল শুধরে দিয়েছি, তবে সবসময়ে আমার চোখে না-ও পড়তে পারে।

একটা কথা : Hegemon-কে দুবার লিখেছ হেনোমেন। এইটেই কি উচ্চারণ হবে? ঠিক জানি না বলে ওটায় আমি হাত দিই নি অবশ্য।

বাজে কথায় ভরে গেল চিঠিটা। কাজের কথা হচ্ছে এই যে হঠাৎ আমরা পনেরো দিনের জন্য চলে গিয়েছিলাম বীরভূমের গ্রামাঞ্চলে, পুজোর অল্প পরে। আর, খুব ভালো কাটিয়ে এসেছি কদিন, সেই থেকে শরীর আর মেজাজ খুব ভালো।

গ্যেটে এখন ক্রিকেটসংবাদে আনন্দে আছে নিশ্চয়ই?

ভালোবাসা জেনো।

                              শঙ্খদা

পত্র : তেরো

শ্রী

২২৬এ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড

কলকাতা-৪।  ৯ জুলাই ১৯৭৭

শিশির

একদিন গুছিয়ে বসে বেশ বড়োসড়ো একটা চিঠি লিখব, এই ভেবে ভেবে এতদিন গড়িয়ে গেল। এখন বুঝতে পারছি সেটা আর হয়ে উঠবে না।

তোমার নিষেধ অমান্য করে টাইটেল-পেজের ওই অসামান্য ইংরেজির কথা প্রকাশককে জিজ্ঞেস করেছিলাম। টাইটেল-পেজের কিছুই আমাকে দেখায় নি বলে আমার ধারণা ছিল যে তোমাকেই দেখিয়ে নিয়েছে প্রুফ। ঠিক সেই সময়টায় সুধীরও ছিল না কলকাতায়। সব মিলে এই বিপর্যয়। আমার অবশ্য চোখে পড়ে নি ব্যাপারটা, বই হাতে পাবার পরেও। তোমার চিঠি পাবার পরই লক্ষ করলাম।

…   …   …

এতদিনে তুমি পুরোপুরি একা হয়ে পড়লে : রবিবাবু তো কলকাতায় এসে গেছেন? এসেছেন বলে নিশ্চিত কোনো খবর অবশ্য আমি জানি না। অ্যাকাডেমিক মহলে সকলেরই তীব্র কৌতূহল এবার ওখানে তুমি বিভাগীয় প্রধান হবে কি না।

আমি এখন ভালোই আছি। কিন্তু সবারই ভালো থাকা ভালো দেখায় না বলে আপাতত মিঠি শয্যাশায়ী। দিন কুড়ি পর ওর পার্ট ওয়ান পরীক্ষা শুরু। কাজেই যোগ্য সময়েই অসুখটা …। পড়াশোনাও ভালো তৈরি নয়।

বানান বিষয়ে বাবার লেখাগুলো নিয়ে ‘আশা’ একটি বই করতে চাইছে। কাজ শুরু হবে কয়েকদিনের মধ্যেই। নিত্য আর আমি ভাবছিলাম, তোমাদের পত্রালাপ এ-বইতে জুড়ে দিলে কেমন হয়। বাবার সঙ্গে কি এ নিয়ে তোমার কথা হয়েছিল? সুনীতিবাবু, [অস্পষ্ট] বাবু আর রাজশেখর বসুর কয়েকখানি চিঠিও এই সঙ্গে দেবার কথা ভাবছি। বাবার ইচ্ছেটা এখনও জানি না ঠিক।

তোমার ত্রিমূর্তির খবর কী?

… …

শঙ্খদা