শব্দের সীমানা

সরকার আবদুল মান্নান

অনেক দিন চলতে চলতে টাকা একসময় অচল হয়ে যায়। লোকে বলে অচল টাকা। শুধু টাকা নয়, অনেক কিছুই অচল হয়। মানুষ, হাটবাজার, শহর-বন্দর, রাস্তাঘাট অচল হয়। আবার অচল হয় না। এমন কিছু বিষয়-আশয়ও আছে। এই পৃথিবী, এই চাঁদ-সূর্য কতদিন ধরে চলছে – আমরা তা জানি না। মাথার ওপরে আছে বিপুল আকাশ, আছে রহস্যময় রাতের তারা। লক্ষ-কোটি বছর ধরে আছে। এসব কখনো হারিয়ে যাবে কি-না আমরা তার কিছুই জানি না। আর আমাদের চারপাশে এই যে রঙের খেলা, গন্ধের বিস্তার, প্রাণের কোলাহল – এসবও যে কত সহস্র বছর ধরে আছে তার কোনো হিসাব নেই। এসব কি কখনো অচল হবে, হারিয়ে যাবে? আমরা জানি না; কিন্তু কিছু শব্দ চলতে চলতে এক সময় আর চলতে পারে না। অচল হয়ে যায়। হৃদয়ের আনন্দ আর আর্তিতে ভরপুর এবং মমতারসে সিক্ত শব্দগুলো এক সময় হারিয়ে ফেলে তার সব ঐশ্বর্য, সব আবেদন। কখন থেকে যেন শব্দগুলো কেউ আর ব্যবহার করে না। কোন জাদুমন্ত্রে কবিগণ জেনে যান যে, এসব শব্দ ব্যবহার-উপযোগী নয় আর। পাঠকের ভাষাবোধে বোধ করি হোঁচট খায়। সময়ের সঙ্গে শব্দগুলো আর যায় না, সময়ের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। ফলে কবিগণ সহজাত ও সচেতন এক ভাষিক সদস্য হিসেবে বুঝে যান, কোন শব্দ 888sport app download apkয় আর ব্যবহৃত হতে পারে না। ব্যবহার করেন না বটে, কিন্তু কখনো ব্যবহৃত হতো; অসাধারণ শক্তি, সৌন্দর্য আর বিস্ময়কর রহস্য নিয়ে যখন শব্দগুলো কবির ভাবের জগৎকে আলোকোজ্জ্বল করে তুলত, সেই 888sport app download apkগুলো তো আবেদন হারায় না কখনো। কবিভাষার কিছু কিছু উপাদান পুরনো হয়ে গেলেও 888sport app download apkগুলো কখনো পুরনো হয় না। তার মানে, শব্দ পুরনো হয়ে যেতে পারে; কিন্তু কিছু 888sport app download apk কখনোই পুরনো হয় না। বিস্ময়কর আবেদন আর ব্যঞ্জনা নিয়ে বেঁচে থাকে বহুকাল। এই চিরকালীনতার রহস্য কোথায়? 888sport app download apkর মধ্যে, নাকি পাঠকের মধ্যে, নাকি 888sport app download apk ও পাঠক – এই উভয়ের মধ্যে।

888sport app download apkর আপন স্বভাবে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠার বিষয়টি সব কালেই ছিল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। চিরকালীনতার রহস্য 888sport app download apkরই অন্বিষ্ট। আর পাঠক-অবচেতনে শব্দ-সংস্কৃতির ঐতিহ্য লুকিয়ে থাকেই। শত শত বছরের আগের শব্দ, যে-শব্দে এখন আর কেউ বলেন না, যে-শব্দে কেউ আর লেখেন না, যে-শব্দ সেই সময়ের 888sport app download apkর দেহে আসীন হয়ে আছে, সেই শব্দ 888sport app download apkর দেহ থেকে পাঠকমনে আলোড়ন তোলে শব্দ-সংস্কৃতির অবচেতন ঐতিহ্যের জন্যই। যে-ভাষায় একজন পাঠক কোনোদিন লেখেননি, লিখবেনও না – মাতৃভাষার সেই রূপের 888sport app download apk তাকে কেন মোহাবিষ্ট করে, কেন তার চিরকালীন এক ভালোলাগার জগতের দরজা-জানালাগুলো খুলে দেয়, তার রহস্যও লুকিয়ে থাকে তার ভাষা-সংস্কৃতির ঐতিহ্যের মধ্যে, ভাষা-পুরানের প্রত্ন-ইতিহাসের মধ্যে। চোদ্দোশো শতকের কবি বড়ু চন্ডীদাস। তিনি লিখেছেন :

পাখি নহোঁ তার ঠাই উড়ী পড়ি জাঁও।

মেদনী বিদার হেউ পসিআঁ লুকাওঁ

‘পাখি’ শব্দটি ছাড়া এই 888sport app download apkর সকল শব্দই এখন অচল। শুধু শব্দই নয়, মধ্যযুগের কবিভাষার (diction) যে-জগৎ তৈরি হয়েছিল, সে-জগৎ এখন গবেষণা ও শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের বিষয়। ‘মোর’, ‘জনা’, ‘হরিষে’, ‘পসিঅাঁ’, ‘মরম’, ‘ধরম’, ‘রহুন’, ‘তথা’, ‘কোহ্ন’, ‘হেন’, ‘ষেজি’, ‘হানি’, ‘গোহারী’, ‘দরশন’, ‘নাহিক’ ইত্যাকার বহুতর শব্দ একসময় কাব্যভাষার হীরকরাজি হয়ে উঠেছিল। কয়েকটি উদাহরণ দিই :

 

১. মরম না জানে ধরম কখানে

এমন আছয়ে যারা।

কাজ নাই সখি তাদের কথায়

বাহিরে রহুন তারা

– চন্ডী দাস

২. এ সখি হামারি দুখের নাহি ওর

এ ভরা বাদর মাহ ভাদর

শূন্য মন্দির মোর

গীতি888sport app download apkগুলো মধ্যযুগে রচিত। 888sport app download apkংশগুলোর প্রতিটি শব্দে সংগীতের পেলবতা, মর্মস্পর্শী সুরের আহবান। আর চিরায়ত নিঃসঙ্গতা, নিঃসঙ্গতার বিস্তার এবং শান্ত-সৌম্য গোপন এক হাহাকার পাঠক-হৃদয়কে বেদনাবিধুর করে তোলে। মানবসত্তার প্রত্যন্ত প্রদেশগুলো সজাগ হয়ে ওঠে এর ধ্বনিসাম্যে; সম্ভব-অসম্ভবের বোধ তিরোহিত হয় এই ধ্বনিসাম্যের বিস্তারে। চর্যাপদের কাব্যভাষা থেকে মধ্যযুগের গীতি888sport app download apkয় উত্তরণের কোনো সেতুবন্ধ হয়তো খুঁজে পাওয়া যায় না; কিন্তু বুদ্ধের মানবতাবাদী ভাবাদর্শের উত্তরণ অনুভব করা যায় ঠিকই। আর গভীরভাবে অনুভূত হয় সংস্কৃত 888sport app download apkর দৃঢ়বদ্ধতা থেকে মুক্তির প্রয়াস। এই প্রয়াসের মধ্যে অনার্য বাঙালি সংস্কৃতি ও মননের ঐতিহ্য লক্ষ করা যায়। অনেকের মধ্যে থেকেও বাঙালি কবি অনন্য এবং সেই অনন্যতার মূলে নিহিত থাকে অসীম এক প্রেমভাবনার অনিকেত স্বরূপ। এই আয়োজনে শব্দসংকল্পনা মুখ্য। যে দুটি উদাহরণ উল্লেখ করা হয়েছে তার প্রতিটি শব্দের দিকে তাকালেই এই প্রতীতি জন্মে যে, কবিগণ ক্ষিপ্র শব্দের প্রতি অনীহ। যেসব শব্দ প্রাত্যহিক, যেসব শব্দের মধ্যে সুর নেই, ঝঙ্কার নেই, বেদনার রং নেই, সেসব শব্দ তারা ব্যবহার করেননি। এমনকি কখনো যদি প্রাত্যহিক শব্দের বা কাজের শব্দের আগমন ঘটতও, তখনো সেই শব্দগুলোকে তারা ভাঙতেন – নির্মাণ পুনর্নির্মাণ করে নিতেন। সুরের বিস্তারের জন্য, বেদনার বিস্তারের জন্য, অন্তর্গত চিরকালীন এক হাহাকারের বিস্তারের জন্য তারা বেছে নিয়েছিলেন এই অমোঘ কবিভাষা। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য, মঙ্গলকাব্য, প্রণোপাখ্যান কিংবা মধ্যযুগের 888sport app কাহিনিকাব্য পদ্যে না লিখলেও চলত। ছন্দ আর অন্তানুপ্রাস কিংবা অন্ত্যমিল ছড়াকাব্যের তেমন কোনো উপাদান এগুলোর মধ্যে নেই। কিন্তু লেখা মানেই পদ্যের সেই যুগে এর কোনো বিকল্প ছিল না বলেই অসাধারণ জীবনজিজ্ঞাসার শক্তি নিয়ে গল্প ও আখ্যানের আড়ালে মুকুন্দরাম চক্রবর্তী 888sport alternative link না-লিখে কাব্যই লিখেছেন। এই কাহিনি রচনায় মধ্যযুগের কবিগণ যে-ভাষার আশ্রয় নিয়েছেন তা পদ্যের ভাষা। ছন্দ আর অন্ত্যমিলের সমারোহে ওই কাহিনিকাব্যগুলো নিশ্চয়ই সমকালের পাঠকদের কাছে সমাদর লাভ করেছিল। কিন্তু সেই সমাদর কাব্যের জন্য নয়, কাহিনির জন্য, গল্পের জন্য। সেই কাহিনি, সেই গল্প তাল-লয়-ছন্দের ঝঙ্কারে রসময় হয়ে ওঠে। রহস্যময়তা নয়, বিচিত্র ভাবনার বিন্যাস নয়, শুধু গল্পকে চিত্তাকর্ষক করে তোলার জন্য কবিগণ বিস্ময়কর প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। ঋষিতুল্য নিষ্ঠা ও অনুধ্যান লক্ষ করা যায় তাঁদের শব্দবোধে, ছন্দ নির্মাণে ও গল্প-প্রকল্পনায়। মুকুন্দরাম, আলাওল, ভারতচন্দ্র প্রমুখ খ্যাতিমান কবির কাব্যজগৎ বিচার করলে এ-বাস্তবতা অনুভব করা যায়। সময়ের দিক থেকে আধুনিক কবি হওয়া সত্ত্বেও ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত এ-ধারারই কবি। বহুতর বোধের উদ্বোধন তাঁদের 888sport app download apkয় নেই। মধ্যযুগের শেষ সময়ে এসে তিনজন কবির 888sport app download apk কোন বৈশিষ্ট্যে কাহিনিকাব্য ও কাব্য হয়ে ওঠে তিনটি উদাহরণ উলেস্নখ করে তার পরিচয় তুলে ধরা যায়। আবদুল হাকিম (১৬২০-৯০), ভারতচন্দ্র (১৭১২-৬০) এবং রামপ্রসাদ সেন (১৭২০-৮২) বলা যায় কাছাকাছি সময়ের কবি। তাঁদের মধ্যে প্রথম দুজন কাব্যসংগঠনে কাহিনি রচনা করেছেন। আর শেষতমজন লিখেছেন সর্বার্থে 888sport app download apk। উদাহরণ তিনটি উলে�খ করি :

যে সব বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।

সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি

দেশী ভাষায় বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।

নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশ ন যায়।

-আবদুল হাকিম

২.     ভবানন্দ মজুন্দার নিবাসে রহিব।

বর মাগ মনোনীত যাহা চাহ দিব

প্রণমিয়া পাটুনী কহিছে যোড় হাতে।

আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে

– ভারতচন্দ্র

 

৩.     মন রে কৃষি কাজ জান না।

এমন মানব-জমিন রইল পতিত,

আবাদ করলে ফলতো সোনা

– রামপ্রসাদ সেন

প্রথম দুটি 888sport app download apkংশে শব্দ তাৎপর্যময় হয়ে উঠেছে গল্প-সংস্থাপনায়। সময়ের ব্যবধানে কিংবা পাঠক পরিবর্তনে এর অর্থময়তা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। সেই অনন্য বিষয়ের সময়াতীত গুরুত্বের জন্য 888sport app download apkংশগুলো আজো সমানভাবে খ্যাত। অথচ এর অধিকাংশ শব্দই এখন ব্যবহার-অনুপযোগী। এখন কোনো কবি ‘বঙ্গেত’, ‘জন্মি’, ‘কাহার’, ‘জুয়াত’, ‘ত্যাগী’, ‘ন’, ‘নিবাসে’, ‘রহিব’, ‘মাগ’, ‘চাহ’, ‘প্রণমিয়া’, ‘কহিছে’ ইত্যাকার শব্দ নিশ্চয় ব্যবহার করবেন না; কিন্তু কেন? শব্দগুলোর কোনো গড়ন-কাঠামো ও অর্থময়তা কি সময়ের বিবর্তনে অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে? বিষয়টি কি ব্যাকরণগত ভাষা সংগঠনের বিবর্তনের কোনো ন্যায়সূত্র, নাকি সমাজ-সংগঠনের গোপন কোনো প্রক্রিয়ার কার্যকারণ, নাকি এসবের ভেতর দিয়ে বেড়ে ওঠা কবিমনের ভিন্ন কোনো বোধবুদ্ধি  ও রুচির অনুধ্যান? সে যাই হোক না কেন, শব্দ অচল হয়। ভাষা-সংগঠন ও ভাষাবোধ বদলায় এবং সেই অচল শব্দ ও পুরনো ভাষা-সংগঠনের ভেতর থেকে জন্ম নেয় নতুন শব্দ, নতুন ভাষাবোধ।

কিন্তু এই ভাবনা সব সময় কি যথার্থ? ব্যত্যয় হবে না কখনো? যদি আমরা ৩নং 888sport app download apkংশ 888sport app download for android করি, তাহলে দেখতে পাবো, শুধু ভাবনানিচয়ের নিরন্তর আধুনিকতার জন্য বা, ভাবের চিরায়ত সৌন্দর্য ও তাৎপর্যের জন্যই নয়, ভাষার এক চিরকালীনতার আস্বাদেও কোনো কোনো 888sport app download apk মহিমামন্ডিত হয়ে ওঠে। আঠারোশো শতকের গোড়ার দিকের কবি রামপ্রসাদ সেন। কিন্তু উদ্ধৃত 888sport app download apkংশের ভাষা ও ভাষা-সংগঠন থেকে শুরু করে অর্থবোধকতার মাত্রান্তর লক্ষ করলে একে আর আঠারশো শতকের 888sport app download apk ভাবার সুযোগ থাকে না। বরং এই 888sport app download apk শব্দ ও ভাবের চিরনতুনত্বের ঐশ্বর্য নিয়ে আশ্চর্যরকমভাবে সাম্প্রতিক হয়ে উঠেছে। শব্দের অন্তর্গত সংগীতময়তা কিংবা শব্দবন্ধের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া বহুতর অর্থদ্যোতনা এই নতুনত্বের প্রাণ, তা সুস্পষ্টভাবে বলা যাবে না। প্রায় প্রতিটি প্রাত্যহিক শব্দ ব্যবহার করে কাব্যভাষার এই অনন্য রূপাবয়ব নিঃসন্দেহেই দুর্লভ। ‘মন’, ‘কৃষিকাজ’, ‘মানব জমিন’, ‘পতিত’, ‘আবাদ’, ‘সোনা’ ইত্যাকার শব্দ দুশো বছর আগে যেমন কাব্যভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারত, তেমনি সমান তাৎপর্য নিয়ে আজো ব্যবহৃত হচ্ছে।

কাব্যভাষায় এই সংগীতময়তা প্রাচীনকালের চর্যাপদগুলোতে ছিল, মধ্যযুগের আদিলগ্নের চন্ডীদাস-বিদ্যাপতি-জ্ঞান দাস-গোবিন্দ দাসের 888sport app download apkয়ও ছিল। সেসব 888sport app download apkর সুর ও স্বপ্নময়তা আর গভীর বেদনাবোধের আনন্দ আজো আমাদের অভিভূত করে; কিন্তু সেই কাব্যভাষা এখন আর গ্রাহ্য নয় নিশ্চয়ই। হয়তো সেই কাব্যভাষার তাপ, উষ্ণতা এখনো গ্রহণ করেন কবিগণ; কিন্তু সেসব শব্দ নয়, শব্দবন্ধ নয়।

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত থেকে অক্ষুয়কুমার বড়াল পর্যন্ত অনেক কবির নাম করা যায়, যাঁরা আধুনিক যুগের প্রথমদিকে ছন্দে সমর্পিত গদ্য বা গল্প লিখে কবিখ্যাতি লাভ করেছেন। চিন্তার জগতে সমকালীনতাকে স্থান দিয়ে তাঁরা 888sport app download apkয় মধ্যযুগীয় ধর্মভাব থেকে কিছুটা সরে এসেছিলেন বটে কিন্তু কাব্যভাষায় বেশিদূর এগোতে পারেননি। বিশেষ করে  ভারতচন্দ্রকে অতিক্রমের ক্ষমতা এঁদের অনেকেরই ছিল না। কারো কারো 888sport app download apkয় বিক্ষুব্ধ ও বিপর্যস্ত সমকালের চটুলতা প্রাত্যহিক শব্দের সীমানায় ধরা দিয়েছে; কিন্তু শব্দ তাৎপর্যপূর্ণ কোনো মাহাত্ম্য লাভ করেনি। তবে ভিন্ন এক যুগের ইঙ্গিতবাহী হয়ে উঠেছে। মধ্যযুগ ও আধুনিক যুগের সন্ধিলগ্নে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত লিখেছেন :

লক্ষ্মী মেয়ে যারা ছিল,

তারাই এখন চড়বে ঘোড়া চড়বে ঘোড়া!

ঠাট ঠমকে চালাক-চতুর

সভ্য হবে থোড়া থোড়া!!

আর কি এরা এমন কোরে,

সাঁজ সেঁজুতির ব্রত নেবে?

আর কি এরা আদর কোরে,

পিঁড়ি পেতে অন্ন দেবে?

ঈশ্বরগুপ্তের এই 888sport app download apkর মধ্যে ভাবনার সমকালীনতা স্থান পেয়েছে। চিন্তার এই গড়ন আধুনিকতার অনুষঙ্গী। এবং পঙ্ক্তি ও পঙ্ক্তিমালার ভেতর দিয়ে ভাবনা-সংগঠনের যে-চিত্র অঙ্কিত হয়েছে, তাতে মধ্যযুগের ধারাবাহিকতার অনুক্রমণ অনেকাংশেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পঙ্ক্তি-বিন্যাসে এসেছে নতুন কাঠামো। ‘লক্ষ্মী মেয়ে’, ‘চড়বে ঘোড়া’, ‘ঠাট ঠমকে’, ‘চালাক চতুর’, ‘থোড়া থোড়া’, ‘পিঁড়ি পেতে’ ইত্যাকার শব্দ বা শব্দবন্ধ নতুন যুগের বার্তাবাহী। প্রাত্যহিক শব্দের এমন গদ্যগন্ধী ব্যবহার মধ্যযুগের 888sport app download apkয় লক্ষ করা যায় না। এই নতুন ভাবনা, নতুন শব্দ, নতুন ছন্দ, নতুন তাল-লয়, নতুন পঙ্ক্তিবিন্যাস মিলে যে নতুন 888sport app download apk, তার মধ্যে 888sport app download apk আছে কতটুকু? শব্দের মধ্যে শব্দাতীত ব্যঞ্জনা আছে কতটুকু, বোধের মধ্যে বহুতর বোধের সম্ভাবনা আছে কতটুকু? খুব বেশি নয়; কিন্তু তবু এই ভাষা ভারতচন্দ্রের ভাষা নয়, দ্বিজ কানাই, ফকির গরীবুলস্নাহ বা সৈয়দ হামজার ভাষা নয়। এই ভাষা ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের, যিনি ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে নতুন জীবনাকাঙ্ক্ষা ও জীবন-জিজ্ঞাসার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। একটি দ্বন্দ্বসংকুল জীবনের ভাষ্য রচনায় তিনি শব্দের যে-জগৎ রচনা করেন, শব্দের যে ন্যায়বোধ দ্বারা তিনি তাড়িত হন, সেই শব্দের কাব্যমূল্য হয়তো খুব বেশি নয়, কিন্তু কাব্যভাষার বিবর্তনের ইতিহাসে এর তাৎপর্য অনেক। এই কাব্যভাষার মধ্য দিয়ে গোপন এক প্রক্রিয়ায় আচল হয়ে পড়ে মধ্যযুগের কাব্যভাষা।

কিন্তু 888sport app download apkয় শব্দ ব্যবহারে এই প্রাত্যহিকতা পরবর্তীকালে আর রক্ষিত হয়নি। নিখাঁদ বাঙালি জীবনাকাঙ্ক্ষার পটভূমিতে, এই জীবনের অন্ধিসন্ধি ঘেঁটে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত যে কাব্যভাষা ও কাব্যজগৎ গড়েছিলেন আধুনিকতার সেই পর্ব বেশিদূর প্রলম্বিত হয়নি। অধিকন্তু ঈশ্বরগুপ্তীয় বাঙালি ঢঙের সেই আধুনিকতা অবলুপ্ত হয়ে যায় তাঁর সময়েই। ভাব ও ভাষায় প্রতিদিনের যে-জীবন তিনি অাঁকতে চেয়েছিলেন 888sport app download apkয়, এমনকি কথা888sport live footballে প্রমথনাথ শর্মা, কালীপ্রসন্ন সিংহ, প্যারীচাঁদ মিত্র, সেই ভাব ও ভাষা কোনোটাই পরে রক্ষিত হয়নি। অধিকন্তু, মাইকেল মধুসূদন দত্তের উত্থানে বাংলা 888sport app download apkয় শুরু হয় পাশ্চাত্যরীতির আধুনিকতার অন্য এক পর্বান্তর। কথা888sport live footballে এর পুরোধা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। আর এই রীতিই গ্রাহ্য হয় আধুনিক বাংলা 888sport app download apk ও কথা888sport live footballের প্রধান ধারা হিসেবে। প্রাচীন ও মধ্যযুগ পেরিয়ে আধুনিক যুগের প্রথম পর্বে বাংলা 888sport app download apkর যে-স্বভাব একটি গোপন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গড়ে উঠেছিল, মধুসূদন তার বাইরে নতুন এক কাব্যজগৎ নির্মাণ করেন। তাঁর এই কাব্যজগতের নির্মাণ-কৌশল ও উপায় উপকরণের সিংহভাগ পাশ্চাত্যের এবং কিয়দংশ সংস্কৃত 888sport live football-পুরান ও ঐতিহ্যের। ফলে মধুসূদনের কাব্যজগৎ নিয়ে যখনই কথা হয়, বাঙালি সমালোচকরা তখনই প্রসঙ্গক্রমে উলে�খ করেন পাশ্চাত্য মানস, হোমার, মিল্টন, ট্যাসো, ভার্জিল এবং পরিশেষে সংস্কৃত ঐতিহ্য – ব্যাস-বাল্মীকি-কৃত্তিবাস-কাশীরাম দাসের কথা। মধুসূদন দত্তের বিপুল এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার জগতে কাব্যভাষা, বিশেষত শব্দ স্বয়ংসম্পূর্ণ রূপাবয়ব লাভ করেছে। ‘করিনু’, ‘কাটাইনু’ ‘সঁপি’, ‘মজিনু’, ‘ফেলিনু’, ‘ভুলি’, ‘কয়ে’, ‘লভিনু’ ইত্যাকার যে-ক্রিয়াপদ তিনি ব্যবহার করেছেন, তা আমাদের  কাব্য-ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও কাব্য-ভাষা সংগঠনের নতুন এক পটভূমিতে ক্রিয়াপদগুলো পুরনো ঐতিহ্য থেকে সরে এসেছে অনেকদূর। আর নতুন এক ছন্দ-সংস্থাপনায় তৎসম শব্দ ভাবনার যে-বৈদগ্ধ্য সৃষ্টি করেছে, বাংলা 888sport app download apkর পূর্ববর্তী ইতিহাসে তার নজির নেই বললেই চলে। মাদ্রাজে (চেন্নাই)  অবস্থানকালে মধুসূদন অসাধারণ নিষ্ঠার সঙ্গে আয়ত্ত করেছিলেন সংস্কৃত, গ্রিক, লাতিন, হিব্রু, ফরাসি, তেলেগু, তামিল, জার্মান, ইতালিয়ান প্রভৃতি ভাষা। আর ইংরেজি ভাষা তো প্রায় মাতৃভাষার মতোই রপ্ত করেছিলেন। অসাধারণ মেধাবী এই কবির ব্যক্তিগত চিঠিপত্র, আলাপচারিতা ও নানাজনের 888sport sign up bonusচারণায় তাঁর যে মানস-বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়, সংবেদনশীল ও অনুভবঋদ্ধ 888sport app download apkর জন্য মোটেই তা অনুকূল নয়। ফলে কাব্যভাষা নির্মাণে তিনি বিপুল পান্ডিত্বের পরিচয় দিয়েছেন, তাঁর অনুসন্ধিৎসু বৈদগ্ধ্য ও অসাধারণ পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তিনি নতুন এক কাব্যভাষার আবির্ভাব ঘটিয়েছেন। সেই কাব্যভাষার মধ্যে রহস্যময়তা নেই, অনেকান্ত পাঠের আনন্দ নেই, বহুতর অর্থব্যঞ্জনা নেই, আড়াল-আবডালের সৌন্দর্য ও স্বাধীনতা নেই; কিন্তু পরবর্তী কবিদের জন্য অনেক পথ ও পদ্ধতির নির্দেশনা আছে, বিচিত্রভাবে গ্রহণের জন্য গ্রন্থিত কাব্যভাষা আর পুরাণ ব্যবহারের প্রভূত ঐশ্বর্য আছে। মেঘনাদবধ কাব্যে তিনি প্রাচীন রীতিতে বর চাইছেন।

 

… হে পিতঃ, কেমনে,

888sport app download apk-রসের সরে রাজহংস-কুলে

মিলি করি কেলি আমি, না শিখালে তুমি!

গাঁথিব নূতন মালা, তুলি সযতনে

তব কাব্যোদ্যানে ফুল, ইচ্ছা সাজাইতে

বিবিধ ভূষণে ভাষা, কিন্তু কোথা পাব

(দীন আমি!) রত্নরাজী, তুমি নাহি দিলে,

রত্নাকর? কৃপা, প্রভু কর অকিঞ্চনে! –

এই ভাষায় ও ছন্দে গতিময়তা আছে, স্বাধীনতা আছে; কিন্তু বাংলা 888sport app download apkর চিরায়ত সংগীতময়তা সম্পূর্ণ তিরোহিত। শব্দ নির্বাচনে অসাধারণ শ্রম ও নিষ্ঠার পরিচয় আছে। সেই শ্রম ও নিষ্ঠার ফলে মধুসূদন নতুন একটি কাব্যভাষা সৃষ্টি করতে পেরেছেন কিন্তু কাব্যভাষার মধ্যে পান্ডিত্যের প্রবল উপস্থিতি লক্ষ করা গেলেও কল্পনাপ্রতিভার পরিচয় খুব একটা পাওয়া  যায় না। কিংবা বোধের যে-জগৎ শব্দকে শব্দাতীত অর্থময়তায় অভিষিক্ত করে, অনেকান্ত অর্থে দ্যুতি ছড়ায়, রঙের আভা তৈরি করে সেই বোধ ও অনুভব, সেই স্বপ্ন ও রহস্যময়তার সৌন্দর্য মধুসূদনের 888sport app download apkয় প্রায় দুর্লভ। অসাধারণ সংগঠনের মধ্যে তিনি 888sport app download apkর যে-রূপাবয়ব তৈরি করেছেন, তার তুলনা চলে না। সেই সংগঠনের প্রতিটি হিসাব-নিকাশ ও মাপজোখ থেকে উত্তর-সাধকদের জন্য অর্জনের অনেক কিছু আছে, যা অনিঃশেষ।

যৌবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মধুসূদনের অসাধারণ কর্মযজ্ঞের তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারেননি। পরে তিনি যথার্থই বুঝতে পেরেছেন যে, কী বিস্ময়কর এক জগৎ তিনি তৈরি করে গেছেন। বিশেষ করে শব্দ নির্বাচন, নতুন শব্দ তৈরি ও শব্দ-সংস্থাপনায় মধুসূদনের অসামান্য কীর্তিকে অস্বীকার করার উপায় নেই। বিপুল এক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে মধুসূদনের সময় অতিবাহিত হয়েছে। শব্দ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ছন্দ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বিষয়বস্ত্ত নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এমনকি বিরামচিহ্ন নিয়েও তাঁকে আশ্রয় নিতে হয়েছে বিচিত্র পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার। ফলে অনিবার্যভাবেই সম্ভাবনার অনেকগুলো দুয়ার তিনি উন্মোচন করে দিতে পেরেছেন। আর সেই খোলা দরজায় বাইরে থেকে চেয়ে তাকানোর সুযোগ পেয়েছেন উত্তরকালের অনেকেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও দেখার সেই আনন্দ থেকে বাদ পড়েননি; কিন্তু তিনি 888sport live football-সংস্কৃতি ও জীবনজিজ্ঞাসার এমন এক পরিমন্ডলে বেড়ে ওঠেন, তৎকালীন ভারতবর্ষে যার তুলনা চলে না। সেই পরিমন্ডলেই তিনি বহু-বিপরীতের ঐকতান ঘটানোর এক সহজাত শক্তি অর্জন করেছিলেন। একটি দেশজ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে কী করে সর্বমানবীয় আবেদনকে অন্বিত করে অনন্য এক জীবনতৃষ্ণার 888sport live chat-রচনা করা যায়, তার রহস্য তিনি জানতেন। ফলে যে বিপুল কাব্যজগৎ তিনি সৃষ্টি করেছেন সেই কাব্যভাষার আদিগন্ত জুড়ে রয়েছে গীতল ও প্রাত্যহিক শব্দের এক মায়াময় জগৎ। সুষ্ঠু, সমন্বিত ও ভারসাম্যঋদ্ধ সংস্কৃত কাব্যভাষার গদ্যগড়ন থেকে সরে এসেছিলেন আমাদের মধ্যযুগের কবিগণ। 888sport app download apkকে গান আর গানকে তাঁরা 888sport app download apk করে তুলেছিলেন। অন্যদিকে আধুনিক যুগের প্রারম্ভলগ্নে প্রাত্যহিক জীবনের ভাষায় বয়ন করা হয়েছিল বিশৃঙ্খল জীবনের ওপরকাঠামোর আলেখ্য। এবং তার অব্যবহিত পরেই মূলত মাইকেল মধুসূদন দত্ত সংস্কৃত কাব্যসাধনার বহুদূর উত্তরসূরির ন্যায় অবি888sport app download for androidীয় এক কাব্যভাষা তৈরি করেন। বাংলা কাব্যসাধনার এই বিচিত্র ধারা থেকে শক্তি সঞ্চয় করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নিজস্ব ভাষাবৈভব রচনা করেন। শব্দের শরীরে সুর আর তাল-লয়-ছন্দ মেখে দিলেন তিনি। আর শব্দের অন্তরে পুরে দিলেন বিকশিত হওয়ার শক্তি। 888sport app download apk হয়ে উঠল গান আর গান হয়ে উঠল 888sport app download apk। কখনোবা কাব্যভাষা অভিষিক্ত হলো গদ্যের আত্মীয় রূপে। বৈঠকি গদ্যে রচিত হলো 888sport app download apk। কখনো বা পদ্য আর গদ্যভাষার যুগলবন্দি রূপ তৈরি হলো অভিন্ন 888sport app download apkয়। সুর আর বেসুরের দ্বন্দ্ব নয় – মিলন, অতিক্রান্ত দ্বন্দ্বের ভেতর দিয়ে অফুরন্ত সৃষ্টিতে উত্তীর্ণ। কটি উদ্ধৃতি দিই :

বুঝি গো সন্ধ্যার কাছে      শিখেছে সন্ধ্যার মায়া

ওই অাঁখিদুটি,

চাহিলে হৃদয়-পানে        মরমেতে পড়ে ছায়া,

তারা উঠে ফুটি।

(‘দৃষ্টি’)

 

পঁচিশে বৈশাখ চলেছে

জন্মদিনের ধারাকে বহন ক’রে

মৃত্যুদিনের দিকে।

সেই চলতি আসনের উপর ব’সে কোন কারিগর গাঁথছে

ছোট ছোট জন্মমৃত্যুর সীমানায়

নানা রবীন্দ্রনাথের একখানা মালা।

(‘পঁচিশে বৈশাখ’)

 

অচ্ছোদসরসিনীরে রমণী যেদিন

নামিলা স্নানের তরে বসন্ত নবীন

সেদিন ফিরিতেছিল ভুবন ব্যাপিয়া

প্রথম প্রেমের মতো কাঁপিয়া কাঁপিয়া

ক্ষণে ক্ষণে শিহরি শিহরি।

(‘বিজয়িনী’)

উদ্ধৃতি তিনটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যভাষার বৈচিত্র্য অনুধাবন করা যায়। এবং সেই বৈচিত্র্যের মধ্যে কবির নিজস্ব কণ্ঠ চিনতে অসুবিধা হয় না। রবীন্দ্রনাথ জানতেন, বাচন888sport live chatের মধ্যে সংগীত মর্মস্পর্শী। মানবমনের গভীরতর প্রদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে একমাত্র সংগীত। কাব্যভাষার অর্থময়তার বিস্তার বিবেচনায় রেখেও বলা যায় যে, সংগীতের শক্তি অনির্বচনীয়, অফুরন্ত। সর্বময় নিবেদনের ভাষা যেমন সংগীত, তেমনি আত্মোপলব্ধির ভাষাও সংগীত। ফলে অনিবার্যভাবেই 888sport app download apkয় এই সাংগীতিক শক্তি বরাবরই ব্যবহার করেছেন কবি। ‘দৃষ্টি’ শীর্ষক 888sport app download apkর উলি�খিত অংশের প্রায় প্রতিটি শব্দের মধ্যে সংগীতের ঢেউ আছে, প্রশান্তি আছে। ‘বুঝি গো’ – এই অভিব্যক্তির মধ্যে গ্রামীণ জীবনের চিরায়ত এক সুর ধ্বনিত হয়, যে-সুরের সঙ্গে মিলেমিশে থাকে ভালোবাসার স্বপ্ন-সাধ-সৌন্দর্য। শব্দের মধ্যে সংগীতের আস্বাদ না-থাকলে এই 888sport app download apk হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে না। এখানে কাব্যভাষার প্রায় প্রতিটি শব্দই পুরনো, বহুকাল আগে থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসা; কিন্তু 888sport app download apkটিতে শব্দসংস্থাপনার এমন এক রীতি অনুসৃত হয়েছে, যেখানে পুরনো শব্দগুলো নতুন এক কণ্ঠস্বর লাভ করেছে, নতুন কোনো অর্থময়তায় অনন্য হয়ে উঠেছে।

দ্বিতীয় 888sport app download apkটি দার্শনিক প্রত্যয়ে লেখা। এই দর্শন জীবনের চিরায়ত পরিণতির কাব্যরূপ। ফলে অনিবার্যভাবেই শব্দ নির্বাচনে গীতলতা গ্রাহ্য হয়নি। অধিকন্তু, উদ্দেশ্য-বিধেয়র স্থান পরিবর্তন করে গদ্যগড়নকে ভেঙে রচিত হয়েছে 888sport app download apkর অবয়ব। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো শব্দের গড়নে গদ্যের ন্যায়সূত্র লঙ্ঘন করে কাব্যের আঙিনায় অভিষিক্ত করা হয়েছে। ‘পঁচিশে বৈশাখ চলেছে’ – এই বাক্যের অর্থময়তার জগৎ গদ্যের অনুষঙ্গী নয়। গদ্যে পঁচিশে বৈশাখ কখনোই চলে না। ফলে পুরো 888sport app download apkটি গদ্যগন্ধি হলেও চেতনার জগতে একটি ভাবনার স্থাপত্য অনুভব করা যায়। প্রাত্যহিক শব্দের অকপট এই ব্যবহার বাংলা 888sport app download apkর নতুন যাত্রাপথ চিহ্নিত করে।

সর্বশেষ 888sport app download apkয় কাব্যভাষার অন্য এক দিগন্তের পরিচয় মেলে। এই 888sport app download apkর গড়নসৌষ্ঠবের মধ্যে সংস্কৃত 888sport app download apkর প্রগাঢ়তা, পরিমিতি, ভেতরগত উচ্ছ্বাস ও অফুরন্ততা লক্ষ করা যায়। একই সঙ্গে এর কাব্যভাষা সংস্কৃত গদ্যের নিকটবর্তী। মাইকেল মধুসূদন দত্ত মেঘনাদবধ কাব্যে যে-কাব্যভাষার জগৎ তৈরি করেছেন, তাও সংস্কৃত ঐতিহ্যেরই অনুষঙ্গী; কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আর মধুসূদনের কাব্যভাষার মধ্যে পার্থক্যটা তখনই স্পষ্ট হয়ে-ওঠে, যখন 888sport app download apk হয়ে ওঠার উচ্চতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। উদ্ভাবনের প্রাথমিক সীমাবদ্ধতা, বিশেষ করে বোধের গভীরতা ও মহিমা মধুসূদনের কাব্যবৈশিষ্ট্যের মধ্যে লক্ষণীয়ভাবে পরিলক্ষিত হয় না। কাব্যভাষার অভিধানগত অর্থময়তার বাইরে অর্থাৎ বাচ্যার্থ ছাড়া ব্যঞ্জনার্থের সীমায় পাঠককে পৌঁছে দেয় কমই। প্রায় একই রকম শব্দের ভেতর দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনন্য এক কাব্যভাষা নির্মাণ করেন, যেখানে পাঠক শব্দার্থগত সীমা অতিক্রম করে মুক্ত আকাশে ওড়ে বেড়ানোর আনন্দলাভ করতে পারেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর শব্দের সীমানাকে অনেকদূর পর্যন্ত বাড়িয়ে নিয়েছিলেন। মধ্যযুগ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত বাংলা শব্দের বিপুল ঐতিহ্যকে তিনি তাঁর কাব্যপ্রতিভার এক সমন্বিত শক্তিতে অভিষিক্ত করে তোলেন। শব্দের সীমানা তিনি মানেননি। শব্দের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করাই যেন ছিল তাঁর কাব্যপ্রতিভার শক্তি। এভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষার এমন এক অসীম জগতের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেন, যিনি জন্মগ্রহণ না-করলে যে-জগৎ চিরকাল অজ্ঞাতই থেকে যেত। এখন আমরা রাবীন্দ্রিক কাব্যভাষার পরিচয় জানি। আমাদের বোধের জগতে সেই কাব্যভাষার স্বভাবগুলো বেশ ভালোভাবেই চিহ্নিত হয়ে আছে। এক ধরনের রাবীন্দ্রিক আর্কেটাইপ বা আদিকল্প আমাদের চেতনায় মুদ্রিত হয়ে আছে, যার মাধ্যমে আমরা তাঁর শব্দপ্রতিমা ও ভাবপ্রকল্প স্পষ্টতই চিনতে পারি, বুঝতে পারি। বোধের অনুকল্পগুলো শব্দপ্রতীকের সীমানায় নিয়ে নিয়ে তিল তিল করে তিলোত্তমা গড়ে তোলার শক্তি রবীন্দ্রনাথের মতো আর কারোরই নেই এবং বিষয়বৈচিত্র্যের বিপুল অনুষঙ্গে সীমাবদ্ধ শব্দের সীমাহীন ব্যবহার তাঁর সৃষ্টিকে যেভাবে মহিমামন্ডিত করে তুলেছে, তার কোনো তুলনা চলে না। শব্দের জাতপাত ও মান-মর্যাদাকে বিবেচনায় রেখেই এর সর্বোত্তম ব্যবহার তিনি নিশ্চিত করেছিলেন, আর বাড়িয়ে দিয়েছিলেন শব্দের পরিসীমার কলেবর। ‘আধা-আধা’ অভিজাত কোনো শব্দ নয়, মহত্তর কাব্যভাষার উপযোগীও নয়। এই শব্দ বা শব্দবন্ধ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি ধ্রুপদী 888sport app download apkয় কীভাবে স্থান পেয়েছে তার উলেস্নখ করি :

দূরে বহুদূরে

স্বপ্নলোকে উজ্জয়িনীপুরে

খুঁজিতে গেছিনু কবে শিপ্রানদীপারে

মোর পূর্বজনমের প্রথমা প্রিয়ারে।

মুখে তার লোধ্ররেণু, লীলাপদ্ম হাতে

কর্ণমূলে কুন্দকলি, কুরুবক মাথে,

নু দেহে রক্তাম্বর নীবীবন্ধে বাঁধা,

রণে নূপুরখানি বাজে আধা-আধা।

(‘স্বপ্ন’)

 

এভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিপুল কাব্যজগতে প্রাত্যহিক শব্দকে তার কেজো অর্থময়তার বাইরে অফুরন্ত করে তুলেছেন। ‘আধা-আধা’ শব্দবন্ধকে যেমন একটি সংকীর্ণ সীমা থেকে তুলে নিয়ে স্বপ্নময়তার এক বিপুল স্রোতের মধ্যে স্থান দেওয়া হয়েছে, তেমনি তিনি প্রতিদিনের অসংখ্য শব্দকে বিন্যাস-পুনর্বিন্যাস করে করে, বোধের বিচিত্র সঙ্গে-অনুষঙ্গে স্থান দিয়ে দিয়ে মহিমামন্ডিত করে তুলেছেন। শব্দ অর্জন করেছে অবারিত এক জগৎ। সমগ্রতার ভাবনা (grand narative) রবীন্দ্র-সৃষ্টির আদিকল্প। শব্দের মধ্যে তাঁর এই সমগ্রতার বোধ লক্ষ করা যায়। এমনকি স্থানিকতার ক্ষুদ্র সীমায়ও (local narrative) তিনি সেই বৃহত্তের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। ফলে অনিবার্যভাবেই এক সর্বগ্রাসী শব্দের সীমানা তৈরি করে নিতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা 888sport app download apkয় সমগ্রতার যুগ শেষ হয়। সেখানে স্থান করে নেয় স্থানিকতা। দৃষ্টিভঙ্গির এই বিপুল পরিবর্তন রবীন্দ্র-উত্তর আধুনিক বাংলা 888sport app download apkর মূল প্রতিপাদ্য। এ সময় থেকে শব্দ চেতনার প্রতীক হয়ে ওঠে। তিরিশোত্তর কাল থেকে অদ্যাবধি 888sport app download apkয় শব্দের বিবর্তনের ইতিহাস মূলত স্থানিকতার পটভূমি থেকে স্বাতন্ত্র্যমন্ডিত অনন্য এক জীবনজিজ্ঞাসার ইতিহাস। r