— বলুন কি সমস্যা?
মোবাইলে টাইম দেখে বরাবরের মতো অবাক হলাম আমি। চারটা বেজে চুয়াল্লিশ মিনিট। অবাক হওয়ার মতো কোনো বিষয় না হলেও অবাক হচ্ছি কারণ এটা প্রথমবার নয়। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ব্যাপারটা ঘটছে। হঠাৎ করে মোবাইল হাতে নিয়ে টাইম দেখছি, দেখা গেলো টাইম দেখানোর তিনটা কিংবা চারটা 888sport free betই এক।
প্রথমবার পাত্তা দিইনি, কাকতালীয় ব্যাপার ভেবেছি। কিন্তু একনাগাড়ে বারবার একই ব্যাপার দেখে অবাক হচ্ছি এখন। অবশ্য নিতু হেসে উড়িয়ে দিচ্ছে ব্যাপারটা। গতরাতে ঘুম ভাঙ্গলো হুট করে, পানি খেয়ে এসে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখি ১১ টা বেজে ১১ মিনিট! নিতু কে জাগিয়ে বললাম,
— দেখো। তুমি তো পাত্তা দিচ্ছোনা! যখনই সময় দেখছি, তখনই এই অবস্থা!
নিতু ঘুম জড়ানো গলায় বললো,
— তো কি হয়েছে? ঐ 888sport free betগুলো তোমায় কামড় দিচ্ছে?
— তুমি বুঝতে পারছো না কেন, সামথিং ইজ রং। কাকতালীয় ব্যাপার হলে একবার দু’বার হবে, বারবার হবেনা!
নিতু মুখে এসে পড়া চুল- ঘাড় সামান্য তুলে দু’হাতে পেছনে সরিয়ে দিতে দিতে বলে,
— ওকে, বলছি আসলে কি হচ্ছে। ব্যাপারটা সময় নয়, তুমি সৃষ্টি করেছো! তুমি একটা নির্দিষ্ট সময়ে টাইম দেখছো। আমরা যখন ঘড়িতে একটা নির্দিষ্ট সময়ে এলার্ম দিয়ে রোজ উঠি, অভ্যেস হয়ে যাওয়ার পর একদিন এলার্ম না বাজলেও ঐ সময়টায় ঘুম ভেঙ্গে যায়। তোমার সাথেও একই ব্যাপার ঘটছে। তুমি ঠিক সেইম টাইমেই তোমার নিজের অজান্তেই মোবাইল হাতে নিচ্ছো, সময় দেখছো…
নিতুর ব্যাখ্যা আমার মনঃপুত হয়না কখনো, এখনো হলোনা। বলি,
— অভ্যেস দু’দিনে সৃষ্টি হয়না নিতু! এর আগে কখনো হয়নি, পাঁচ ছয়দিন হলো এমন হচ্ছে। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, এই সময়টা আশ্চর্য একটা সময়। আশ্চর্য কিছু একটা ঘটবে আমার সাথে।
নিতু আমার দিকে তাকায়, যেন এলিয়েন দেখছে। তাকিয়ে বলে,
— তুমি একটা ডাক্তার। অর্ধেক জীবন 888sport apk পড়ে কাটিয়েছো। আমার কিছুই বলার নাই তোমায় আর। ঘুমাও।
….
চেম্বারে আছি চারটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত। সিরিয়ালে আছে বিশ- ত্রিশেক লোক। এখন একজন বসে আছেন টেবিলের ওপাশের চেয়ারে।
একজন মহিলা। কালো বোরকা- হিজাব পরা। চোখ দু’টো দেখা যাচ্ছে শুধু। কাজল দেয়া। চোখ ছলছল করছে। মহিলা কাঁদছেন কিনা বুঝা যাচ্ছেনা। মহিলার কোলে একটা বাচ্চা। সাদা চাদর দিয়ে বাচ্চার সমস্ত শরীর জড়ানো, বাচ্চা চাদরের ভেতর থেকে হাত পা নড়াচড়া করছে। মহিলা চুপ করে আছেন। আমি আরেকবার জিজ্ঞেস করলাম,
— বলুন কি সমস্যা?
মহিলা হাত সামান্য উঁচু করে কোলের বাচ্চাটিকে দেখালেন আমায়। বাচ্চার বয়স সম্ভবত সাত- আট মাস। আমি প্রথমে ভেবেছি, সমস্যাটা মহিলার। ভুল ভাঙ্গলো। বাচ্চাকে দেখাতে নিয়ে এসেছেন তিনি। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,
— হ্যাঁ বলুন, বাচ্চার কি সমস্যা?
মহিলা ডানপাশের দরজার দিকে তাকালেন, তারপর আমার দিকে। একবার বাচ্চার দিকে এবং তারপর টেবিলের দিকে তাকালেন। মনে হলো, মহিলা ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারছেন না কোথা থেকে শুরু করবেন। ডাক্তারদের ধৈর্যশক্তি প্রচন্ড, আমি ধৈর্য ধরে রইলাম। তারপর মহিলা চট করে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট স্বরে বললেন,
— আমার বাচ্চাটা মাঝে মাঝে পরিষ্কার বাংলায় কথা বলে…
থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করলাম আমি,
— মানে?
মহিলা কোলের বাচ্চাটিকে আবারো সামান্য উঁচু করে আমায় দেখালেন। তারপর হতাশ তবে স্পষ্ট স্বরে বললেন,
— আমার বাচ্চা…। ওর বয়স সাত মাস। ও আর দশটা স্বাভাবিক বাচ্চার মতো নয়। জন্মাবার পর চিৎকার করে কাঁদেনি, এখনো কাঁদেনা। কান্না পেলে ঠোঁট কাঁপে, আর চোখ দিয়ে সমানে পানি বের হয়। হাসে; হাসিতে শব্দ হয়না।
আমি চুপ করে হা হয়ে মহিলার কথা শুনছি, কে জানতো, আমার ডাক্তারি জীবনের সবচেয়ে অদ্ভুত সময়টার মুখোমুখি হতে যাচ্ছি আমি!
….
— আমার নাম রাবেয়া। আমার বাচ্চাটার এখনো নাম রাখিনি, একেকজনে একেক নামে ডাকে। ওর বাবা ডাকে, পুঁটি। দাদা- দাদী ডাকে, মনি। চাচা ডাকে জয়ী। চাচা অবশ্য ঘোষণা করে দিয়েছে, ওর নাম জয়ীই রাখা হবে। আমি ডাকি, চুপকথা। আমরা বাবা- মা, স্বামী আর স্বামীর ছোটভাই সবাই একসাথে। আমার বাচ্চার প্রথম কথা বলার ঘটনাটা বলি। সেদিন শুক্রবার। দুপুরবেলা। সবাই জুমআ পড়তে গেলো। বাসায় আমি ছাড়া আর দু’জন। মা এবং স্বামীর ছোট ভাই। সে জুমআ পড়েনা। নাম জুনায়েদ। বয়স পঁচিশ- ছাব্বিশ হবে। চাকুরি খুঁজছে, আপাতত বেকার। দুপুরে আমি বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে স্নান করতে ঢুকি, বের হয়ে দেখি রুমে জুনায়েদ। বিছানায় বসে আছে। আমি লজ্জার চেয়েও বেশি ভয় পাই। গা কাঁপতে থাকে আমার। তারপরেও গায়ের কাপড় টেনে আরেকটু জড়িয়ে নিয়ে জোর করে স্বাভাবিক থেকে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলি, ‘কি ব্যাপার জুনায়েদ? জুমআ পড়োনা কেন তুমি?’ জুনায়েদ আমার দিকে ঘোর লাগা চোখে তাকায়। আমি বুঝতে পারি ওর চোখের ভাষা। ভয়ে গা শিউরে উঠে। আমার চিৎকার করতে ইচ্ছে করে। অথচ চিৎকার করে লাভ নেই। মা কানে তেমন শুনেন না, শুনলেও উঠে যে এই রুমে আসবেন সেই ক্ষমতাও উনার নেই। আমি কি করবো ভেবে পাইনা। জুনায়েদ আমার দিকে এগিয়ে আসে, আমি হাতজোড় করে বলি। ‘প্লিজ জুনায়েদ, তুমি আমার ছোট ভাইয়ের মতো। পাপ হবে, প্লিজ।’ জুনায়েদ মুচকি হাসে, আমার গা শিউরে উঠে। জুনায়েদ এসে আমার ভয়ে কাঁপতে থাকা শরীর স্পর্শ করে। ঠিক তখনিই প্রথমবার চিৎকার করে কেঁদে উঠে আমার বাচ্চাটা! আমার মতো জুনায়েদও ভীষণ চমকে উঠে, প্রথমবারের মতো বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনে। আমি ঝটকা দিয়ে ওর হাত সরিয়ে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে পাশের বাসায় চলে যাই। তবে কাউকে কিছু বলিনা, বাসায় আসলে কি ঘটছে।
রাবেয়া থামলো, আমি পানি এগিয়ে দিলাম। পানি খাওয়ার জন্যে রাবেয়া হিজাব খুললো। আমার চোখ ধাঁধিয়ে গেলো একমুহূর্তের জন্যে। স্নিগ্ধ একটা মুখ, চিকন নাক, নাকের উপর একটা তিল রাবেয়ার। পানি খেয়ে আবার হিজাব পরে রাবেয়া বলতে শুরু করলো,
— আমি বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিই। বাচ্চার এতোটুকুন চেহারায় আমি স্পষ্ট দেখি লালচে আভা। প্রচন্ড রাগে কান্না করলে ফর্সা মানুষের চেহারা যেমন লালচে হয়ে যায়, ঠিক তেমন। কেন যেন বাচ্চা রেগে আছে! কি অদ্ভুত! আমি বাচ্চার কপালে, তুলতুলে নাকে, গালে চুমুতে ভরিয়ে দিই। বাচ্চার লালচে চেহারা আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আসে। সে রাতে স্বামীকে অনেকবার বলতে যেয়েও থমকে থমকে গেলাম। তারপর বললাম না আর, আরো অনেক কিছুর মতো এটাও চেপে গেলাম। কেননা, সবার সামনে জুনায়েদ আমাকে ভীষণ 888sport apk download apk latest version- সন্মান করে। স্বামী কখনোই বিশ্বাস করবেনা, তাছাড়াও স্বামীর সাথে আমার সম্পর্ক টা অতোটা মধুর ও নয়! উল্টো আমাকেই দোষী ভাববে। সে রাতের অনেকক্ষণ পর্যন্ত চুপিচুপি বাথরুমে গিয়ে কাঁদলাম। তারপর বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বারান্দায় হাঁটলাম কিছুক্ষণ। কোলের মধ্যে বাচ্চার হাত পা নড়াচড়া বন্ধ হলো, ভাবলাম বাচ্চা ঘুমিয়েছে। তাকিয়ে দেখি বাচ্চা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে, আমি অবাক হই, কি অদ্ভুত দৃষ্টি! আমি কপালে চুমু খাই। বাচ্চা ঐভাবেই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে স্পষ্ট স্বরে স্পষ্ট বাংলায় স্পষ্ট উচ্চারণে বললো, ‘তোমার সব খুলে বলা উচিৎ ছিলো…!’
…..
পানির গ্লাস নিয়ে পানি খাই আমি, আমার মনে নেই রাবেয়ার পরে সিরিয়ালে আরো অনেকজন বাইরে অপেক্ষা করছে। রাবেয়া থামলো। তারপর বললো,
— আমি আবার আসবো। এখন যাই।
আমি বাচ্চাকে ইশারায় দেখাই, রাবেয়া বলে,
— পুরোটা না শুনলে বাচ্চার সমস্যাটা বুঝবেন না। আজ এতোটুকুন থাক, আমি আসবো আবার..
আমি শুধু মাথা নাড়লাম, রাবেয়া চলে গেলো। আমার মনে নেই কখন সব কাজ মিটিয়ে বাসায় ফিরলাম। মাথায় শুধু রাবেয়া ঘুরছে। নিতু আমার উদভ্রান্ত চেহারা দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। কিছু বলতে পারলাম না ও কে।
আমি বৃহস্পতিবারের অপেক্ষায় আছি, রাবেয়া আসবে আবার। একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে। বাচ্চাটার অদ্ভুত ক্ষমতা।
রাতে নিতু কে জিজ্ঞেস করলাম,
— আচ্ছা নিতু, ধরো একটা সাত মাস বয়সী বাচ্চা পরিষ্কার বাংলায় স্পষ্ট স্বরে স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলছে! তাও উপদেশমুলক! কিভাবে সম্ভব?
নিতু প্রথমে মুখ টিপে হাসলো, তারপর আমার গলা জড়িয়ে বললো,
— ভুল করেছো! তোমায় ডাক্তারি নয়, 888sport live football নিয়ে এগুনো উচিৎ ছিলো।
আমি কিছু বললাম না আর, কিছুক্ষণ পর নিতুই নিজ থেকে বললো,
— ছোট্ট বাচ্চার কথা বলা নিয়ে আমি এর আগে পড়েছি। একটা ধর্মীয় বইয়ে। একটা বাচ্চার কথা জানি আমি। একজন নবীর নিষ্পাপ এবং পবিত্রতা ঘোষণার জন্যে যে বাচ্চাটি কথা বলেছিলো।
আমি চুপ করে রইলাম। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। চেম্বারে পৌঁছালাম সময়ের আগেই। প্রথম সিরিয়াল রাবেয়ার। আজ বাচ্চাটিকে কোলে নিবো একবার। রাবেয়া এলো একটু দেরী করে, আজ সে শুরু করলো গল্পের অন্য জায়গা থেকে,
— ছোটবেলায় মোসাদ্দেক হুজুর নামে একজন এসে আমায় বাসায় আরবী পড়াতো। স্কুলের বাইরে আমাকে কোথাও যেতে দেয়া হতোনা। প্রাইভেট ও বাসায় এসে পড়াতো টিচার। আমার বয়স তখন নয় বৎসর। হুজুরের সামনে আমি গুটিয়ে থাকতাম, কেননা সামান্য ভুলে তিনি প্রচন্ড শাস্তি দিতেন। তার প্রিয় উক্তি ছিলো, ‘আরবী পড়া নিয়া তামাশা করবা না!’ তিনি আরবী পড়াতেন সকালে। বাবা অফিস যেতো, বাসায় মা আমি আর দাদী। মা দিনের অর্ধেক সময় রান্না ঘরেই থাকতেন, দাদী শুয়ে। মোসাদ্দেক হুজুর আমায় শাস্তি দিতেন অদ্ভুত এবং উদ্ভট টাইপের। তখন আমি ঠিক করে কিছুই বুঝতাম না। এখন ঘৃণায় গা শিউরে উঠে। তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি প্রথমবার সুযোগ বুঝে আমার স্পর্শকাতর জায়গাগুলোয় হাত দিয়েছেন!
….
রাবেয়া আজ চোখে কাজল দেয়নি, চোখ গতকালের মতোই ছলছল করছে, তবে এখন রাবেয়া কাঁদছে। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি। ওর শরীর দুলছে। রাবেয়ার কিছুক্ষণ লাগলো নিজেকে সামলাতে, তারপর বললো,
— আমি অনেকদিন পর্যন্ত চেপে গেলাম। তারপর একদিন সহ্যের বাইরে চলে যায়, আমি মাকে জানালাম ব্যাপারটা। মা চোখ বড় করে ঠোঁটের উপর তর্জনী আঙ্গুল লাগিয়ে সেই প্রথমবার বললেন, ‘শশশ… কাউকে বলোনা!’ মা, সেদিনই বাবাকে অন্য হুজুর দেখতে বললেন, তবে ঘটনা কিছুই খুলে বললেন না। ফলে বাবা ও কিছুই বুঝলেন না। মায়ের এই অদ্ভুত আচরণ আমায় ভোগালো অনেক। তিনি কেন চেপে গিয়েছিলেন ব্যাপারটা বাবার কাছে, ভেবে ভেবে প্রচন্ড মন খারাপ করেছি। হুজুর এটার কাছেই আমায় পড়া লাগলো। তবে এইবার মা কাছাকাছি দুরত্বে বসে থাকলেন পড়ানোর সময়টায়। তাও সবসময় বসে থাকতে পারতেন না, দু’মিনিটের জন্যে রান্নাঘরে গেলে আমি টের পেতাম এই পৃথিবী আর পৃথিবীর মানুষগুলো কতোটা নোংরা! সারা রাত কাঁদতাম, এতোটুকুন বয়স আমার অথচ বুঝতে শিখে গিয়েছি… জীবনের অনেকটা সময় আমায় ঠোঁটের উপর তর্জনী লাগিয়ে ‘শশশ…’ শুনে চেপে যেতে হবে অনেক ব্যথা- কষ্ট- কথা!
রাবেয়া থামলো আরেকবার। কোলের বাচ্চাটা স্বাভাবিক আর দশটা বাচ্চার মতোই খেলছে, চুপচাপ। গায়ে জড়ানো সাদা চাদর নড়ছে। রাবেয়া বললো,
— সেই ভয় ঢুকলো। তারপর বড় হলাম। স্কুল- কলেজ। ফ্রেন্ড। মেয়ে বন্ধু হলো, তবে কোনো ছেলে বন্ধু নয়। পুরুষ শব্দটায় ভয় ঢুকে গেছে ততদিনে। তাড়াতাড়িই আমার বিয়ে ঠিক হয়। স্বামীরা দুইভাই। আর বাবা- মা। চারজনের ছোট্ট সুন্দর পরিবার। আর্থিক অবস্থা ভালো, স্বামী একটা সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে। আমি ফুলশয্যায় স্বামীকে ছুঁতে দেইনি শরীর। কতো স্বপ্ন থাকে এ রাত নিয়ে, অথচ একটা প্রচন্ড ভীতি আঁকড়ে ধরে রেখেছে ও রাতে আমায়। আমি আমার শরীরে একটা লোমশ হাতের স্পর্শে শিউরে উঠি। ঐ স্পর্শ, যেটা আমার প্রানবন্ত শৈশবকে গলা টিপে হত্যা করেছিলো! স্পর্শ করতে না দেয়ায় স্বামী প্রচন্ড অপমানিত বোধ করলো। ওপাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লো। আমি অর্ধেক রাত পর্যন্ত কাঁদলাম। আমার জীবনটা এমন হলো কেন?
…..
— আমায় কখনো বুঝেনি স্বামী, বুঝতে চায়নি, শুনতে চায়নি কিছুই। আমি আমার স্বামীর হাতে ধর্ষিত হই বিয়ের চার দিন পর। তারপর অসংখ্যবার। আমার পেটে আমার ছোট্ট চুপকথা আসে। আমার কান্না পায়। এই বাচ্চাটি ভালোবাসায় জন্মায়নি! বারান্দায় বসে রাতভর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদি। চিৎকার করতে ইচ্ছে করে। পারিনা। আমার পাশে আমারিই একটা বিচ্ছিরি ছায়া ঠোঁটে তর্জনী লাগিয়ে বলে, ‘শশশ…!’ স্বামীর সাথে সম্পর্ক বিয়ের প্রথমদিন থেকেই ভালো ছিলোনা, পরবর্তীতে তা আরো খারাপ হয়। আমি চেপে যাই আমার ভয়ংকর অতীত। আমাদের কখনো ভালোবাসা বাসি হয়নি। চুপকথা দ্বিতীয় বার কথা বলে, যখন স্বামীর হাতে কোনো একটা তুচ্ছ কারণে থাপ্পড় খেয়ে এসে আমি তার দিকে মুখ করে শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়েছি। আমার গালে চুপকথার তুলতুলে কোমল হাতের স্পর্শ লাগে, চোখ খুলি আমি। চুপকথা আগের মতো করেই স্পষ্ট স্বরে বলে, ‘তোমার সব বলা উচিৎ ছিলো।’
অনেকক্ষণ হয়ে গেছে, রাবেয়া ইতস্তত করে। আমি বলি,
— সমস্যা নেই, আপনি বলুন। আজ আর কাউকে দেখছিনা আমি…
রাবেয়া বলতে শুরু করে আবার,
— আমি হতভম্ব হই, প্রথমবার বাচ্চার আওয়াজ স্পষ্ট শুনেও মনকে বুঝিয়েছি, ওটা বিভ্রম। এতোটুকুন একটা বাচ্চা আবার কথা বলতে পারে নাকি! কিন্তু এবার! আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি, ‘তুমি কথা কিভাবে বলছো?’ বাচ্চা আগের মতো খেলতে শুরু করে, প্রশ্ন শুনে আমার নিজেরই নিজেকে বোকা বোকা মনে হয়! চুপকথা তৃতীয়বার কথা বলে, তারপর আরো বেশ কয়েকবার। খেয়াল করলাম, বাক্যটা ক্রমশ আরো ছোট হয়েছে। ‘তোমার বলা উচিৎ ছিলো…!’ ‘বলা উচিৎ ছিলো!’ ‘বলো…!’
রাবেয়া থামে, কিছু কথা গুছিয়ে নিয়ে বললো,
— শেষবার চুপকথা কথা বলে, যখন স্বামী আমায় জুনায়েদের কাছ থেকে মন গড়া গল্প শুনে অবিশ্বাস করে চরিত্রহীন বলে গাল দেয়। আমি চুপ করে সব শুনে যাই। মাঝে মাঝে এখন রাতে বাড়ি ফিরেনা স্বামী, কোথায় থাকে জানিনা। আমি চুপকথাকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোই। চুপকথা বলে, ‘বলো…!’ আমি জিজ্ঞেস করি, ‘তুমি কথা কেন বলো আম্মু?’ চুপকথার স্পষ্ট স্বর শুনি, ‘কারণ, তুমি কখনোই বলোনি….!’
রাবেয়া থামে। আমি হা হয়ে শুনি। রাবেয়া বাচ্চাকে আমার কোলে দেয়। অনেকদিন কথা বলছেনা আর চুপকথা। আমি চুপকথাকে কোলে নিই।
পাঁচটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিট তখন। পাঁচ পাঁচ পাঁচ। ম্যাজিক 888sport free bet। চুপকথা হাত বাড়িয়ে আমার গাল স্পর্শ করে। একটা কথাও বলছেনা সে। যেন অভিমান জমে আছে! আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকি।
রাবেয়া কে আমি কিছুই বলতে পারিনি। কেন বাচ্চাটা কথা বলছে এটাই আশ্চর্য, কেন বাচ্চাটা কথা বলছেনা সেটা নয়! আমরা অস্বাভাবিক কিছুতে অতিদ্রুত স্বাভাবিক আর অভ্যস্ত হয়ে যাই। রাবেয়া ও হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই। একটা শব্দে। যে শব্দ অস্বাভাবিক- চেপে রাখে যা, গোপনে। খুন করে- আস্তে আস্তে মেরে ফেলে যেটা। একটা নোংরা- বিচ্ছিরি- গলা টিপে দেওয়া শব্দ। ‘শশশ….!’


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.