শাহানারা হোসেনের বেলাশেষের পাঁচালি

তাঁ কে প্রথম দেখি ১৯৬০ সালে। একা নন। স্বামী ডক্টর এ.বি. মোশাররফ হোসেনও তাঁর সঙ্গে। দুজনই এসেছেন আমাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যোগ দিতে। আমি তখনো ছাত্র। তাঁদের বিষয়ে কিছুই জানি না। কিন্তু চোখে পড়াতেই মুগ্ধ। দুজনেই সাধারণের তুলনায় দীর্ঘদেহী-দিব্যকাস্তি। শাহানারা হোসেন যেন রাজহংসী। লালিত্যের সঙ্গে গাম্ভীর্যের মিশেল। দেবী প্রতিমার মতো। আপনা থেকে মাথা নত হয়। গুণের কথা জেনে অবাক হই আরো। দুজনেই লন্ডন-স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজ থেকে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে এসেছেন। এ.বি. এম হোসেন ইসলামের ইতিহাসে ডক্টরেট। আর শাহানারা হোসেন পরে গিয়ে খুব অল্প সময়েই সাধারণ ইতিহাসে এমএ। অবশ্য তার আগে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নজরকাড়া ফল দেখিয়ে যোগ্যতার ছাপ রাখতে পারেন বলেই লন্ডনের সেরা স্কুলে তাঁরা ভর্তি হতে পারেন। শাহানারা হোসেন পরে আবার ওখান থেকে ডক্টরেট করেন। সেটা ১৯৬৬ সালে। ডক্টর এ.বি. এম হোসেন এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর এমেরিটাস। ক’বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ডক্টর শাহানারা হোসেনকেও তাঁদের বিশেষ মর্যাদার ইউজিসি-প্রফেসর পদে বরণ করে তাঁর মেধার প্রতি সম্মান জানান। দুজনই আমাদের অশেষ 888sport apk download apk latest versionর। এ.বি. এম হোসেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসলামিক সংস্কৃতি, বিশেষ করে স্থাপত্যকলার ওপর একজন বিশেষজ্ঞ বলে নন্দিত। শাহানারা হোসেনের অবিসংবাদী দক্ষতা প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে।

শাহানারা হোসেনের সঙ্গে আমার বোধহয় বছর-তিনেকের ফারাক যখন এখানে এলেন, তখন ওই বয়সেই তাঁর জুটেছে মেধার পূর্ণ
স্বীকৃতি, এটা আমাদের সমীহ জাগায়। আত্মবিশ্বাসের অভাব তাঁর ভেতরে কখনো চোখে পড়েনি। মনে হয়েছে এমনটিই বুঝি স্বাভাবিক। যদিও মহিলা শিক্ষক ঠিক তখন আর কেউ ছিলেন কিনা মনে করতে পারছি না।

আমি অবশ্য তাঁকে দেখেছি কালে-ভদ্রে। এই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নির্মাণকাজের তখন শৈশব। ছাড়া ছাড়া কটি ভবনে চলে পাঠদান। প্রত্যেকটি পরস্পর বিচ্ছিন্ন। ইতিহাস-সংলগ্ন বিষয়গুলো পড়ানো হতো শহরে। আমরা পড়তাম ক্যাম্পাস যেখানে গড়ে উঠছিল, সেই মতিহারে। পুরনো কটা কুঠি ছিল, সেগুলোতেই ঝাড়াই-বাছাই করে। আর সবার সঙ্গে দেখা হতো গোটা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে। তখন এখানে শুধু দু-বছরের মাস্টার্স কোর্স ছিল। স্নাতক-পাশ ও সম্মান পাঠ সারা হতো কলেজে। কতইবা ছিল ছাত্রছাত্রীর 888sport free bet! সব মিলিয়ে বড়জোর হাজারখানেক। শিক্ষক-888sport free bet কি পঞ্চাশ-ষাটের বেশি ছিল? কখনো কখনো এই হোসেন দম্পতি থাকলে তাঁরা দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন অবশ্যই। তবে ওই সময়ে তাঁদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। যদিও শিক্ষক হিসেবে তাঁরা যে সমীহ আদায় করতেন, এটা ভেবে এখন অবাকই হই।

একটু হিসাব করলেই ধরা পড়বে, যে বয়সে শাহানারা হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ মানে পড়াবার দায়িত্ব নিয়ে আসেন – এবং তা তাঁর স্বোপার্জিত সর্বজনমান্য সক্ষমতায় – সে বয়সে আজকাল খুব কম ছেলেমেয়েই আমাদের দেশে তাদের ছাত্রজীবনের সমাপ্তি ঘটায়। এখন সম্মান-পাঠে এমনিতে এক বছর বাড়তি যোগ হয়েছে। তার সঙ্গে পরীক্ষা-পদ্ধতির নতুন বিন্যাসে পাঠক্রম শেষ হতে কমপক্ষে আরো এক বছর লেগে যায়। নিটফল দাঁড়ায় এই, শাহানারা হোসেন যখন 888sport app-লন্ডনে তাঁর কৃতিত্বের সর্বোচ্চ স্বাক্ষর রেখে ফিরে আসেন, তার তুল্য সময়ে বর্তমানে ছাত্রছাত্রীদের নির্ধারিত পাঠচক্র অসমাপ্তই থেকে যায়। শাহানারা হোসেন কিন্তু তাঁর মেধার স্বীকৃতি আদায় করেছেন শুরু থেকেই। এবং তা যথার্থ। অবাক হই এ কারণে যে, আমাদের নীতিনির্ধারকরা যে ছেলেমেয়েদের ছাত্রত্ব অনেকটা বাধ্যতামূলকভাবে নিঃশব্দে দু-বছর বাড়িয়ে দেন, তার সার্বিক ভালোমন্দ আমরা যাচাই করি না।

কথাগুলো মনে এলো শাহানারা হোসেনের সম্প্রতি প্রকাশিত অতি উজ্জ্বল 888sport sign up bonusকথা বেলাশেষের পাঁচালি পড়া শেষ করে। বইটি ছেপেছে বাংলা একাডেমি। আমার বিশ্বাস, এটি তাদের সেরা প্রকাশনার একটি বলে গণ্য হতে থাকবে। প্রফেসর এ.বি. এম হোসেনের আত্মকথা পড়ন্ত বেলার গল্প ছেপে বেরোয় বছর দুই আগে। সেটিও উপাদেয়। শালীন, মার্জিত ও আন্তরিক। বেগম হোসেনের এই বইটিও তেমন। সবাই তাঁদের রাজযোটক বলে মানে। তার পরিচয় মিলল এখানেও। মেধার কর্ষণার অনায়াসলব্ধ ছাপ আমাদের সম্ভ্রম জাগায়। তবে দূরতব বাড়ায় না। আমরা বরং আকৃষ্ট হই। যদিও মেজাজ বারোয়ারি নয়। অন্তর্মুখীই বলা চলে। এতেই কিন্তু তাঁর সত্যস্বরূপ ফোটে। আমরা মুগ্ধ হই।

শাহানারা হোসেনের কথা শুরু তাঁর পূর্বমাতাদের 888sport app download for android করে, –  যতদূর জানা যায়। তাও আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছরের ব্যাপ্তি। এটা ইঙ্গিতবহ। 888sport promo code-বাস্তবতার প্রবাহকেই যে তিনি অগ্রাধিকার দেন, তার অনুমান এতে মেলে। তবে সক্রিয়বাদী তিনি নন। ঐতিহাসিকের অনাচ্ছন্ন দৃষ্টি বরাবর বজায় থাকে। তাতে অন্যরাও গুরুত্ব হারান না। তারপরও তাঁর সময় পর্যন্ত কত সম্ভাবনাময় 888sport promo code যে সংসারচক্রে বাঁধা পড়ে অকালে পথ হারান, পছন্দের সীমা তাঁদের কতটা যে সংকুচিত হয়, অভ্যাসের গতানুগতিকতায় তাঁরাও যে তাল মেলান, কারণ সেইটিই বাস্তব এবং তাতেই সমাজের প্রশ্নহীন অনুমোদন, – সংবেদনশীল মন নিয়ে পড়তে গেলে এগুলোও আমাদের চোখে পড়ে। অসহায় আক্ষেপ বাড়ে। তিনি অবশ্য কোথাও অভিযোগের আঙুল তোলেননি। আপন বৃত্তে চলমান বাস্তবতার স্বরূপটাকে চেতনায় ধরতে চেয়েছেন। আবেগের অতিরিক্ত মিশেল দেননি। তাঁর ইতিহাস পাঠের শৃঙ্খলা যেন স্বয়ং তাঁকে চালিত করে। যদিও সমবেদনার অশ্রুত রাগিণী আপনা থেকে বেজে চলে। ভূমিকায় তিনি জানান, ‘… বিশেষ করে পূর্ব মাতাগণের জীবনকথা 888sport app download for android হলে হৃদয়ে বেদনা বোধ করি। তাদের বঞ্চিত জীবন, অবহেলার কারণে তাদের কারও কারও অকালমৃত্যু – এসবই এখনও আমাকে কাঁদায়। আমার আম্মার মুখে আমি সদাই দেখতে চেয়েছি ম্যাডোনার প্রশান্ত হাসি – কিন্তু বারবার আমার সেই আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে। মনে পড়ে আমার অন্ধ মাতামহীর কপোল প্রায়ই অশ্রুতে সিক্ত থাকত।…’ – এই 888sport sign up bonusর সঙ্গে প্রতারণা তিনি করেননি। তবে আতিশয্যে ও অতিনাটকীয়তায় ভেসেও যাননি। ভাষার নির্মাণ পূর্বাপর সভ্য ও সংযত।

শাহানারা হোসেনের শৈশব ও বালিকাবেলার অনেকটা সময় কাটে কলকাতায়। বাবা ছিলেন সেখানে পুলিশের সর্বজনমান্য কর্মকর্তা। আস্থা ও 888sport apk download apk latest version তিনি অর্জন করেছিলেন চারপাশে সবার। বেড়ে ওঠার এই পর্বে কোনো বিভেদ বা বৈষম্যের কাঁটা তাঁর মনে ফোটেনি। তবে ওই সময়েই জাতিগত নৈর্ব্যক্তিক সাম্প্রদায়িকতা বিস্ফোরক হয়ে উঠেছে। তা নিয়ন্ত্রণাতীত প্রচ-তায় ফেটে পড়ে ১৯৪৬-এর আগস্ট মাসে। প্রধানত নিরাপত্তার কারণেই তাঁরা তখন বারবার বাসা বদল করেন। কোনো অঘটনের শিকার তাঁরা হননি। তবে সামষ্টিক চিন্তার কক্ষপথ আর আগের মতো থাকে না। তা পারিবারিক সিদ্ধান্তকেও প্রবলভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। ১৯৪৭-এই দেশভাগের আগে-পরে কর্মসূত্রে শাহানারা হোসেনের আত্মীয়স্বজন যাঁরা ওপারে ছিলেন, তাঁরা প্রায় সবাই এপারে চলে আসেন। এটা অবশ্য তাঁদের স্বগৃহে প্রত্যাবর্তনই। কারণ তাঁদের স্থায়ী নিবাস কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে। অভিজাত এবং শিক্ষ-দীক্ষায় অগ্রগণ্য। শিক্ষর মাপকাঠি অবশ্য পুরুষকেন্দ্রিক। মেয়েদের কথা বিবেচনায় আনা কেউ প্রয়োজন মনে করতেন না। তারা ভবিষ্যতে নম্র-বাধ্য-সুগৃহিণী হবে, এতেই ছিল প্রত্যাশায় অগ্রাধিকার। বাকিটা ভাগ্যের ব্যাপার।

শাহানারা হোসেন জানাচ্ছেন, তাঁর মা বিরক্ত হলে রান্না করাকে বলতেন ‘হাঁড়ি ঠ্যালা’। আমার মা-ও ওই শব্দটি প্রায় ব্যবহার করতেন। এছাড়া বাবা ছিলেন স্কুলমাস্টার। তার সঙ্গে মিলিয়ে বলতেন, তিনি করেন ‘ডেগ মাস্টারি’। তবে এটা কিন্তু ছিল পরিবারে গৃহিণীর অধিকারের জায়গা। ভাগ্যের পরিহাস, বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠানের রীতিনীতি বজায় রেখে পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধ মজবুত করায় মূল ভূমিকাও আরোপিত থাকে তাঁদের ওপরেই। নিজেদের নিয়ে স্বপ্নের সীমা তাঁদের পরিবারের গ– পেরোতে পারত না। এখনো কতটা পারে জানি না। শাহানারা হোসেনরা ছিলেন কেবল দুবোন। তাঁদের কোনো আপন ভাই ছিল না। বাবা আধুনিক শিক্ষয় শিক্ষিত, উদারমনা। মায়ের আক্ষেপ পূরণের আকাঙ্ক্ষা হয়তো মেয়েদের ভেতর সঞ্চারিত হয়েছিল। তবু অদম্য মনোবল নিয়ে প্রতিকূলতা ঠেলেই তাঁদের এগিয়ে যাওয়া। মেধার উত্তরাধিকার অবশ্য তাঁরা পেয়েছেন নিঃসন্দেহে। অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। অনুপ্রেরণাও। কিন্তু বাস্তবের অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সব মেয়ের সামনে আয়ত্তসম্ভব-উদাহরণ কতটা হতে পারেন, জানি না। এটা ঠিক, রন্ধন-প্রযুক্তি অনেক পালটেছে। যোগাযোগে বিস্ময়কর উন্নতি স্থানের সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তবু আমাদের মনোজগৎ এদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলায় না। মেয়েরা একরকম ‘ন যযৌ ন তস্থৌ’ অবস্থায় থেকে যায়। আর কষ্ট পায়। আমাদের উদাসীনতা এতটুকু কমে না। বরং প্রতিক্রিয়ায় অনেকে আরো বেশি মারমুখো হই।

শাহানারা হোসেনের শৈশব 888sport sign up bonusতে আরো সেঁটে আছে ১৯৪৩-এর মন্বন্তর। পথে-পথে মানুষের হাহাকার তাঁর কানে এসে বেজেছে। মৃত ও অনশনক্লিষ্ট মুমূর্ষুরা খোলা আকাশের নিচে চোখেও পড়েছে। তিনি লিখছেন, ‘সেই সব দৃশ্য দেখে আমাদের মুখে আর হাসি ফুটত না, আমরা মানসিক ক্লিষ্টতায় ভুগতাম।’ বড় হয়ে জেনেছেন, ‘এই মন্বন্তর ছিল মানুষের সৃষ্ট দুর্যোগ, ইচ্ছে করেই একটা সংকট সৃষ্টি করা হয়েছিল। ব্রিটিশ সরকার বাংলা ও পার্শ্ববর্তী প্রদেশগুলোর সকল শস্য মজুত করেছিল সেনাবাহিনীর জন্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় সরকার পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করেছিল। সরকারের স্বার্থপর প্রজাপীড়ন ও নির্যাতনের নীতির সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল দেশীয় মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সম্প্রদায় …।’ পরে জেনেছি, এইসব নয়। পাছে শত্রম্নরা নদীপথ ব্যবহার করে, তাই সব নৌকো তারা বাজেয়াপ্ত করেছিল। হঠাৎ করে বিপুলসংখ্যক দিন-আনা-দিন-খাওয়া মানুষের কর্মসংস্থান ও ক্রয়ক্ষমতা পারস্পরিক যোগাযোগে উবে গেল। দুর্ভিক্ষ দ্রম্নত গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ল। এরই দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়ায় ঢিলেঢালা সরল উৎপাদন ও ভোগব্যবস্থা ভেঙে পড়তে শুরু করে। রেশনিং, বণ্টন ব্যবস্থায় বাধ্যতামূলক বহুমুখী সংযোগ, – এগুলো আত্মপ্রকাশ করতে থাকে। অর্থনীতিতে রাষ্ট্রব্যবস্থার গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ে। তবে ওই সময়ের মন্বন্তরেই পঞ্চাশ লাখের ওপর মানুষ প্রাণ হারায়। সবই শাসনব্যবস্থায় নির্মম উদাসীনতার কারণে। শাহানারা হোসেনের শৈশব 888sport sign up bonusর এই নিষ্করুণ টুকরো আমাদের সংক্ষোভ আবার জাগিয়ে তোলে।

সাতচলিস্নশে দেশভাগের পরিণামে পিতা আবদুল হাফিজ সপরিবারে এ-বাংলায় চলে এসে থিতু হন 888sport appয়। কোনো অনিশ্চয়তা তাঁকে তাড়া করে না। দুই মেয়েকেই স্কুলে ভর্তি করে দেন। শাহানারা পড়েন মুসলিম গার্লস হাইস্কুলে, ও পরে কামরুন্নেসা হাইস্কুলে। স্কুলজীবনের বান্ধবীদের তিনি এ-বইতে আন্তরিক সহমর্মিতায় 888sport app download for android করেছেন। তাঁর অনুভবের নির্মাল্য ও প্রখর 888sport app download for androidশক্তি আমাকে মুগ্ধ করে।

তবে এই পর্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তাঁর বড় বোন হাসনা বেগমের বিয়ে। বিয়ের তারিখ ১৮ মে, ১৯৪৯। পাত্রীর বয়স তখন বোধহয় বছর-চোদ্দ। এমনটি তখন ছিল খুবই স্বাভাবিক। আর পাত্রও সদ্বংশজাত, উচ্চশিক্ষিত ও যোগ্য। তবু শাহানারা হোসেনের এই বিয়ে মেনে নিতে কষ্ট হয়। অকপটে তিনি জানাচ্ছেন, ‘… আপার প্রতি আমার একটা প্রবল অধিকারবোধ ছিল। বিয়ের পরপরই আববা যেভাবে দুলাভাই ও তার আববার হাতে আপার সকল দায়িত্ব সমর্পণ করলেন তা থেকে এ-কথা বুঝতে আমার এক মুহূর্তও দেরি হয়নি যে, এখন থেকে আপার ওপর দুলাভাইয়েরই সর্বাধিকার। তাছাড়া
পিতৃতন্ত্র, পুরুষতন্ত্র এসব শব্দের সঙ্গে তখনো পরিচিত না হলেও নানি, মা, খালা, ফুফু, বিবাহিতা আত্মীয়া এবং আশপাশের অন্য মহিলাদের জীবনধারা দেখে ছোট হলেও এই জ্ঞান আমার হয়েছিল যে, একটি বিবাহিতা মেয়েকে তার স্বামীকে সন্তুষ্ট করেই আজীবন চলতে হয়।’ শাহানারা তখন নিতান্ত বালিকা। বয়স মাত্র তেরো। তিনি আরো লিখছেন : ‘… বেদনার মেঘে 888sport app হৃদয়ে আমি সেদিন নিজের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলাম, পরিস্থিতি যাই হোক কোন বিয়ের প্রস্তাবে আমার অভিমত জানতে চাইলে আমি কোনদিনই আপার মত বলবো না, ‘আববা-আম্মার মতই আমার মত’। আমি আরো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পরিণত বয়স না হওয়া পর্যন্ত এবং বিয়ে ও ঘরকন্না করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্ত্ততি গ্রহণ না করে কোনো চাপের মুখেই আমি বিয়েতে সম্মত হব না। …।’ আমরা জানি, তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করার পরই তিনি প্রফেসর এ.বি. এম হোসেনকে বিয়ে করেন। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় লন্ডনে। এ-বইয়ে তারও রুচিস্নিগ্ধ বিবরণ আছে।

বইটিতে আরো আছে বিয়ের পর সাত বছরের ভেতরেই হাসনা বেগম তিন কন্যার জননী। এছাড়াও ষোলো বছর বয়সে এক শিশুপুত্রের মৃত্যুশোক তিনি সহ্য করেছেন। মেয়েদের যত্ন নিয়ে ঘর-সংসারের কাজকর্ম সামলাতে তাঁর হিমশিম অবস্থা। এমনে এতে অস্বাভাবিক কিছু নেই। কিন্তু যা আমাকে বিস্মিত করে, তা হলো, এইসব দায়িত্ব যথাযথ পালন করে কখন তিনি পড়াশোনায় মন দিতে পারলেন? কেমন করে তিনি বিশ্ববিদ্যা সভায় দর্শনে মুর, রাইল এঁদের ধ্যান-ধারণার বিচার-বিশেস্নষণের পর আপন যুক্তি প্রতিষ্ঠা করে একজন বিশেষজ্ঞের মর্যাদা পেলেন? আর 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের সর্বজনমান্য অধ্যাপক থেকে নিজের কর্মজীবনের সমাপ্তি ঘটালেন? আমার বিস্ময় আকাশ ছোঁয়। এই বইতে দুই বোনের বেড়ে ওঠার কথা অনেকদূর পর্যন্ত একত্রে পাই। কিন্তু অগ্রজাকে নিয়ে কৌতূহল পুরো মেটে না। অবশ্য এখানে তা মেটানো প্রাসঙ্গিক নয়।

মাধ্যমিক পর্ব পেরিয়ে শাহানারা হোসেন উচ্চ মাধ্যমিকের পাট সারেন 888sport appর ইডেন কলেজ থেকে। বরাবরই তিনি মনোযোগী ছাত্রী। তবে অংকে দুর্বল। আগ্রহ বেশি 888sport live footballে – দেশি-বিদেশি, দুই-ই। পাঠ তালিকা থেকে বুঝি, তা ছিল সুনির্বাচিত ও ব্যাপক। পারিবারিক আবহ যে অনুকূল ছিল, তাও বোঝা যায়। উদার-মুক্ত মন তাঁর গড়ে ওঠে এভাবে। উচ্চ মাধ্যমিকে দারুণ ভালো ফল করে এবার তিনি পা রাখেন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর ইচ্ছে ছিল, পড়বেন ইংরেজি 888sport live football, কিন্তু বাবার পছন্দ ইতিহাস। ভেবেচিন্তে তিনিও বাবার ইচ্ছাতেই সম্মতি দিলেন। পেছন ফিরে তাকিয়ে মনে হয়, ভুল করেননি। 888sport live football পাঠের স্বাধীনতা তাঁর অক্ষুণ্ণই থাকে। বাড়তি যোগ হয় ইতিহাসের ব্যাপ্তি ও দূরান্বয়ী দৃষ্টি। বিশ্বাস, কর্মজীবনে তাঁকে কখনো আফসোস করতে হয়নি। এই বইতেও দেখি ভাষার কমনীয়তার সঙ্গে আতিশয্যহীন অনাচ্ছন্নতা। ইতিহাস ও 888sport live footballের সমন্বিত প্রভাব। তার গরিমায় আমরা মুগ্ধ। পূর্ণ ব্যক্তিত্বে তিনি ধরা দেন।

তাঁর দেখা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো এখানে আঁকা। বিন্দুমাত্র অতিরঞ্জন নেই। যাঁদের কাছে পড়েছেন, যাঁরা সতীর্থ ছিলেন, তাঁদের পরিচয়ও মেলে। যেন একটানা ছবি। এবং সবই তিনি যেমন দেখেন, তেমন। তাতে কোনো কপটতা নেই। মালিন্যও নেই। অস্থিতিশীল দেশের রাজনৈতিক অবস্থা। তার ছাপও পড়ে। তবে তিনি তাতে সক্রিয় নন। যদিও গণজাগরণ ও প্রগতির পক্ষে তাঁর অনুচ্চারিত মনোভাব একেবারে অস্পষ্ট থাকে না। এছাড়া যা চমৎকৃত করে, তা হলো, তাঁর অসাধারণ 888sport app download for androidশক্তি। আপন পরিসরে যা ঘটে, যা দেখেন, সবই তিনি মনে রাখেন। কিছুই হারিয়ে যায় না। চেনাজানা কেউ না। সব মিলিয়ে তারা বইটিতে অন্তরঙ্গতার স্বাদ দেয়। মনে হয়, যেন এই তো সেদিন!

পরের কথা তাঁর ‘পাঁচালির শেষ কথা’। লন্ডনে পৌঁছুনো, বিয়ে, পড়াশোনা, ফিরে আসা, দুজনেরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যোগ দেওয়া, আবার গিয়ে ছেষট্টি সালে তাঁর ডক্টরেট করে আসা, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, সহিংসতা, শহীদ-ডক্টর জোহার কথা, মুক্তিসংগ্রাম, আটকেপড়া জীবনের আতঙ্ক, স্বাধীনতা, এ সবের কথা তিনি বলে গেছেন একটানা। অনেকটা প্রামাণ্যচিত্রের মতো। আগের পরিচ্ছেদগুলোর মতো নিচে থেকে বা ভেতর থেকে দেখা নয়। ফলে একটু ভিন্ন রকম লাগে বইকি! তবে এখানে তাঁর বাবার পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পদ থেকে স্বেচ্ছা-অবসরে যাওয়ার যে-কাহিনি তিনি শুনিয়েছেন, তা পড়ে ওই আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মহান ব্যক্তিটিকে মনে করে 888sport apk download apk latest versionয় মাথা নোয়াই। কন্যা লিখছেন : ‘পাক-ভারত যুদ্ধ শেষ হবার কিছুদিন পর আববা আমাদের (লন্ডনে) চিঠি লিখে জানান যে, তিনি স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন এবং একটি বিদেশি পুস্তক প্রকাশনা সংস্থায় চাকরি করছেন। অবসর গ্রহণ করার পর তিনি অনেক মুক্তবোধ করছেন। ১৯৬৬ সালে দেশে ফিরে আম্মা ও আপাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করে জানতে পারি যে, Intelligence Branch-এর একজন পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে আববা ১৯৬৫ সালের আগে হতে বুঝেছিলেন যে সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো উত্তাল হতে চলেছে। একজন পুলিশের কর্মকর্তাকে সে ধরনের বিপর্যয় ঘটলে অনেক বিবেকহীন কাজ করতে হবে এবং অসত্য কথা বলে পাকিস্তানি শাসকদের নির্দেশে বাঙালি রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করতে হবে। তিনি একজন বিবেকবান মানুষ ও বাঙালি। উচ্চপদ ও অর্থের প্রলোভনে তিনি তাঁর মানবিক সততা ও বাঙালি সত্তা বিসর্জন দিতে পারেন না। তাই তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেছেন।’

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হোসেন দম্পতি সপরিবারে দেশেই আটকা পড়েছিলেন। প্রফেসর এ.বি. এম হোসেনকে যে একাধিকবার সামরিক বাহিনীর লোকেরা তুলে নিয়ে গিয়ে ভয় দেখায়, আর উপাচার্য প্রফেসর সাজ্জাদ হোসেন জেনেও যে শুধু উদাসীন থাকেন, তাই নয়, এমন ঘটনার জন্যে সবসময় প্রস্ত্তত থাকাই উত্তম, এই বলে শাহানারা হোসেনকে বিদায় করেন, এ-কথার উল্লেখ বইটিতে পাই। পড়ে এখনো গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

বইটি নিঃসন্দেহে বাংলায় 888sport sign up bonusকথা পর্যায়ে সেরা তালিকার একটি। আরো উল্লেখযোগ্য এখানে 888sport promo code লেখকদেরই প্রাধান্য। তাঁরা কি প্রকৃতিগতভাবে বেশি অনুভূতিশীল? অথবা এমনকি হতে পারে, তাঁদের মনে বলার কথা জমে অনেক, যা প্রকাশের সুযোগ তাঁদের হয় না? বাংলা ভাষায় এমন প্রথম বই এবং অন্যতম সেরা, আমার জীবনকথা – লেখক, রাসসুন্দরী দেবী পাবনার পোতাজিয়া গ্রামের এক অখ্যাত মহিলা, যিনি বাড়ির ছেলেদের পড়া শুনে শুনে আর অক্ষর পরিচয় অনুকরণ করে, নিজে লেখা শেখেন। এবং আত্মগোপনে। এখন এ জাতীয় যেসব বই মনে দাগ কাটে তাদের ভেতর অবশ্যই থাকবে হামিদা খানমের ঝরা বকুলের গন্ধ ও অলকনন্দা প্যাটেলের পৃথিবীর পথে হেঁটে। শাহানারা হোসেনের এই বইতে হামিদা খানমের বিনম্র উল্লেখ আছে। এঁরা তিনজনই প্রতিভাময়ী ও উচ্চশিক্ষিত। বিশ্ববিদ্বৎসভায় অতি 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে উচ্চারিত হয় তাঁদের নাম। আরো বলবার, তিনজনেরই বাড়ি এই বাংলায়। তাঁদের 888sport sign up bonusতে রয়ে গেছে কলকাতাও। এঁদের লেখার আলাদা আলাদা আবেদন আমাদের চেতনাকে ঋদ্ধ করে, দৃষ্টিকে প্রসারিত করে। আমাদের সশ্রদ্ধ অভিবাদন এঁদের প্রাপ্য।বেলাশেষের পাঁচালিতে সবশেষে আছে ছবির অ্যালবাম। লেখা যেখানে সমাপ্ত, তার পরের পর্বের কিছু নিদর্শন বেশকটি ছবিতে আছে। লেখকের জীবন-সংক্ষেপও তাঁর কৃতি মেলে ধরে। তা সামান্য নয়।