বিশ্বজিৎ ঘোষ
আজ থেকে একশ আট বছর পূর্বে প্রকাশিত হয় শিবনাথ শাস্ত্রীর বিখ্যাত গ্রন্থ রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ (প্রথম প্রকাশ : ২৫ জানুয়ারি,
১৯০৪)। বাংলা ভাষার যেসব গ্রন্থ শতবর্ষের সীমানা ছাড়িয়ে উত্তরকালীন মানুষের কাছে
সমান জনপ্রিয়, রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন
বঙ্গসমাজ ঠিক এমন একধরনের বই। রামতনু লাহিড়ীর ব্যক্তিজীবন আলোচনা-সূত্রে
গোটা উনিশ শতকের সামাজিক ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে আলোচ্য গ্রন্থে। উনিশ শতকের সামাজিক
ইতিহাসের গতি-প্রকৃতি আর রামতনু লাহিড়ীর জীবন ছিল অভিন্ন। শিবনাথ শাস্ত্রী ব্যক্তি
রামতনু লাহিড়ী ও নবজাগ্রত উনিশ শতকী 888sport appsকে অভিন্ন দৃষ্টিতে এই গ্রন্থে
উপস্থাপন করেছেন। রামতনু লাহিড়ী ও
তৎকালীন বঙ্গসমাজ শীর্ষক গ্রন্থ সম্পর্কে আলোকপাতের পূর্বে গ্রন্থের লেখক
শিবনাথ শাস্ত্রীকে কিছুটা জেনে নেওয়া প্রাসঙ্গিক বলে বিবেচনা করি।
দুই
উনিশ শতকের অন্যতম
উজ্জ্বল আলোকিত মানুষ শিবনাথ শাস্ত্রী। ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জানুয়ারি দক্ষিণ
চবিবশ পরগনার চাংড়িপোতা গ্রামে মাতুলালয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম
হরানন্দ ভট্টাচার্য আর মাতা কামিনী ভট্টাচার্য। উনিশ শতকের আরেক আলোকিত মানুষ,
বিশিষ্ট সমাজ-সংস্কারক, সোমপ্রকাশ
(১৮৫৮) পত্রিকার সম্পাদক দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ ছিলেন তাঁর মাতুল। শৈশব-কৈশোরে
মাতুলালয়েই থাকতেন শিবনাথ এবং মামার আদর্শেই তিনি বড় হতে থাকেন। মামা দ্বারকানাথ
শিবনাথকে খুব ভালোবাসতেন এবং আপন আদর্শে তাঁকে বড় করে তুলতে থাকেন। শৈশব-কৈশোরেই
নানা বিষয়ে তিনি কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। অন্য বালকদের মতো খেলাধুলায় তেমন মন ছিল না
শিবনাথের, বরং মামার তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন বিষয়ের গ্রন্থপাঠে আগ্রহী হয়ে ওঠেন
তিনি। এভাবে শৈশব-কৈশোরেই শিবনাথের চেতনায় উপ্ত হয়েছিল উত্তরকালীন বিপুল সম্ভাবনার
বীজ।
শিবনাথ শাস্ত্রীর পৈতৃক নিবাস ছিল চবিবশ পরগনার মজিলপুর গ্রামে। মজিলপুর
পাঠশালায় তাঁর বাল্যশিক্ষা আরম্ভ হলেও তিনি সেখানে বেশিদিন পড়ালেখা করেননি।
মামাবাড়ির প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল তীব্র। এ-কারণে মামা দ্বারকানাথের তত্ত্বাবধানেই
শেষ হয় তাঁর বাল্যের পাঠ। অতঃপর মামার ইচ্ছানুসারে শিবনাথ ভর্তি হলেন সংস্কৃত
কলেজিয়েট স্কুলে। কলেজিয়েট স্কুলের পাঠ শেষ হলে শিবনাথ ভর্তি হন কলকাতার বিখ্যাত
সংস্কৃত কলেজে। সংস্কৃত কলেজ থেকে ১৮৭২ সালে সংস্কৃত ভাষা ও 888sport live footballে তিনি এমএ
ডিগ্রি অর্জন করেন। এমএ পরীক্ষায় ভালো ফল লাভ করায় তিনি অর্জন করেন ‘শাস্ত্রী’
উপাধি। অতঃপর পারিবারিক পদবি ভট্টাচার্যের পরিবর্তে তাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত হয়
‘শাস্ত্রী’ উপাধি এবং তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন শিবনাথ শাস্ত্রী নামে।১
উনিশ শতকের মধ্যপাদে কলকাতা শহরে ব্রাহ্মধর্ম ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়।
সে-সময়ে শিক্ষিত যুবকদের পক্ষে ব্রাহ্মধর্মের প্রভাব এড়ানো সম্ভব ছিল না। শিবনাথও
ব্রাহ্মধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। তাঁর বাবা হরানন্দ ছিলেন রক্ষণশীল গোঁড়া
ব্রাহ্মণ। কাজেই ছেলের ব্রাহ্মধর্মপ্রীতি তিনি ভালো চোখে দেখলেন না। শিবনাথের
সঙ্গে হরানন্দের মতবিরোধ চরম আকার ধারণ করে। পিতা-পুত্রের বিতর্ক শিবনাথ-গবেষক ড.
মিলনদত্ত তুলে ধরেছেন এভাবে –
সে
সময়টায় ছিল ব্রাহ্মধর্মের জোয়ার। ব্রাহ্মধর্মের প্রভাব এড়ানো শিক্ষিত যুবকদের
পক্ষে সম্ভব ছিল না। শিবনাথও ছাত্রজীবনে ব্রাহ্মসমাজ ও ব্রাহ্ম-আন্দোলনের সঙ্গে
জড়িত হয়ে পড়লেন। বাবা গোঁড়া ব্রাহ্মণ। ছেলের এসব কাজের উপর ভীষণ রেগে গেলেন।
স্পষ্ট বললেন, এই ‘বেম্মজ্ঞানী’দের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখা চলবে না।
ব্রাহ্মদের
সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে দোষের কি আছে?
নিশ্চয়
দোষের আছে। ব্রাহ্মরা হিন্দু নয়। ওরা না হিন্দু, না মুসলমান, না খ্রিষ্টান। ওরা এক
অদ্ভুত জাত।
শিবনাথ
বললেন, এটা আপনার ভুল ধারণা বাবা। ব্রাহ্মধর্ম উপনিষদের উপর ভিত্তি করে গঠিত।
উপনিষদের ব্রাহ্মই হলেন উপাস্য। এক কথায় বলা যেতে পারে ব্রাহ্মধর্ম হলো প্রকৃত
হিন্দুধর্মের নির্যাস। হরানন্দ রেগে গেলেন, তোমার স্পর্ধা তো কম নয়। দুদিনের ছেলে।
তুমি আমাকে ধর্মশিক্ষা দিতে এসেছ? হয় তুমি ‘বেম্ম’দের সংস্রব ছাড়ো, না হলে আমাকে
ছাড়ো।
শিবনাথ
মামার আদর্শে মানুষ। নরানাম্ মাতুলক্রমঃ। মামার মতোই জেদী। নিজে যা ভালো বোঝেন,
তাই করেন। ব্রাহ্মধর্মের সংস্রব তাঁর পক্ষে ত্যাগ করা সম্ভব না। এই নিয়ে বাপ
ছেলেতে মুখ দেখাদেখি বন্ধ।২
১৮৬৯ সালের ২২ আগস্ট
শিবনাথ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। উপবীত ও মূর্তিপূজা ত্যাগ করেন
শিবনাথ, ছেদ করেন পরিবারের সঙ্গে সকল সম্পর্ক। পিতা হরানন্দ শিবনাথকে বাড়ি থেকে
বের করে দেন, স্ত্রীকে নিয়ে শিবনাথও চিরকালের মতো বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেন। ক্রমে
শিবনাথ ব্রাহ্মসমাজের নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হন। ইতোমধ্যে ১৮৬৮ সালে
ব্রাহ্ম-আন্দোলনের নেতা কেশবচন্দ্র সেন (১৮৩৮-৮৪) প্রতিষ্ঠা করেন Indian
Reforms Association। এ
সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল মদ্যপান নিবারণ, শিক্ষা প্রসার, সুলভ 888sport live football ও কারিগরি
জ্ঞানের প্রচার, 888sport promo codeশিক্ষা তথা 888sport promo codeমুক্তি। এসব আদর্শের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে
শিবনাথ যোগ দেন Indian
Reforms Association-এ।
শিবনাথ কেশবচন্দ্রের প্রধান সহযোগী হিসেবে এসময় সমাজ সংস্কারমূলক অনেক কাজের সঙ্গে
জড়িয়ে পড়েন। 888sport promo codeশিক্ষার পক্ষে তিনি গ্রহণ করেন দৃঢ় অবস্থান, বিধবাদের বিয়ের পক্ষে
তিনি উচ্চারণ করেন জোরালো বক্তব্য। কেশবচন্দ্রের অনুপ্রেরণায় এসময় শিবনাথ মদ্যপান
নিবারণ এবং শিক্ষা-888sport live football-কারিগরি বিদ্যা প্রচারে বিশিষ্ট ভূমিকা পালন করেন।
সমাজে মদ্যপানের ভয়াবহতা দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হন। তরুণ সমাজকে মদ্যপানের ছোবল থেকে রক্ষা
করার মানসে তিনি প্রকাশ করেন মদ না গরল
শীর্ষক পত্রিকা।
শিবনাথ শাস্ত্রী, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দমোহন বসু প্রমুখের
উদ্যোগে ১৮৭৬ সালে গঠিত হয় Indian Association’। এই সংস্থাই হলো ভারতীয় রাজনীতির প্রথম সংঘবদ্ধ
প্রয়াস। এই সংস্থার অনুপ্রেরণাতেই ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস।
দেশের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় ১৮৭৭ সালে শিবনাথ শাস্ত্রী গঠন করেন ‘গুপ্ত বৈপ্লবিক
সমিতি’। এই সংস্থার প্রধান কর্মসূচি ছিল – জাতিভেদ অস্বীকার, সরকারি চাকরি
প্রত্যাখ্যান, সমাজে 888sport promo code ও পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা, অশ্বারোহণ ও বন্দুক
চালনা শিক্ষা, জাতীয়তামূলক ও সমাজ সংস্কারমূলক শিক্ষা এবং পূর্ণ রাষ্ট্রীয়
স্বাধীনতা। এসব উদ্দেশ্য থেকেই শিবনাথ শাস্ত্রীর রাজনৈতিক চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়।
শিবনাথ শাস্ত্রী বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৮৭৪ সালে
শিবনাথ শাস্ত্রী দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুরস্থ সাউথ সুবার্বন স্কুলের প্রধান শিক্ষক
পদে যোগ দেন। দুবছর পর সাউথ সুবার্বন স্কুল ছেড়ে তিনি যোগ দেন হেয়ার স্কুলে,
সংস্কৃত ভাষা ও 888sport live footballের শিক্ষক রূপে। এ সময় মামা দ্বারকানাথ শিবনাথ শাস্ত্রীর
ওপর হরিনাভী স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করেন। শিক্ষা ক্ষেত্রের সকল দায়িত্বই
তিনি পরম নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করেন। তাঁর দক্ষ পরিচালনায় উল্লিখিত
স্কুলগুলোতে পঠন-পাঠনে ইতিবাচক নানা পরিবর্তন সূচিত হয়। রাজনৈতিক কারণে ১৮৭৮ সালে
হেয়ার স্কুলের শিক্ষকতার চাকরি থেকে তিনি স্বেচ্ছায় ইস্তফা গ্রহণ করেন।
শিবনাথ শাস্ত্রীর বর্ণাঢ্য ও উজ্জ্বল কর্মজীবনের এক গৌরবজনক অধ্যায় তাঁর
সাংবাদিক-জীবন। মামা দ্বারকানাথ-প্রতিষ্ঠিত সোমপ্রকাশ পত্রিকার সঙ্গে তিনি নানাভাবে জড়িত ছিলেন। দ্বারকানাথের
ব্যস্ততার কারণে ১৮৭৩-৭৪ – এই দুবছর শিবনাথ শাস্ত্রীর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সোমপ্রকাশ পত্রিকা। বস্ত্তত,
দ্বারকানাথই ছিলেন শিবনাথের সাংবাদিক জীবনের প্রধান অনুপ্রেরণা। ১৮৮৩ সালে শিবনাথ
শাস্ত্রীর সম্পাদনায় ব্রাহ্মসমাজের পক্ষ থেকে সখা নামে ভারতের প্রথম কিশোর মাসিক প্রকাশিত হয়। অভিন্ন সময়ে তত্ত্বকৌমুদী (১৮৮২) এবং ইন্ডিয়ান মেসেজ (১৮৮৩) নামে দুটি
ক্ষণস্থায়ী পত্রিকা সম্পাদনা করেন শিবনাথ শাস্ত্রী। ১৮৯৫ সালে তাঁর সম্পাদনায়
প্রকাশিত হয় বিখ্যাত কিশোর মাসিক মুকুল।
বাংলা শিশু-কিশোর 888sport live football বিকাশে এই পত্রিকা পালন করে ঐতিহাসিক ভূমিকা। উল্লিখিত
পত্রিকাসমূহ সম্পাদনায় শিবনাথ শাস্ত্রী বিশেষ দক্ষতা ও কৃতিত্বের পরিচয় দেন।
রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩) প্রবর্তিত ব্রাহ্মধর্মের দুই প্রধান কান্ডারি –
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫) এবং কেশবচন্দ্র সেন। প্রথম দিকে দেবেন্দ্রনাথ ও
কেশবচন্দ্রের মধ্যে ছির দারুণ সখ্য। ব্রাহ্মসমাজের উপাসনা সভায় তাঁরা বসতেন
পাশাপাশি। কিন্তু ১৮৭০-এর দশকে তাঁদের দুজনের সম্পর্কে চিড় ধরে। ব্রাহ্ম হলেও
দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন অনেকটা প্রাচীনপন্থী। হিন্দুধর্মের আচার-অনুষ্ঠান অনেকটাই পালন
করেন তিনি, ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেন হিন্দুমতে, ব্রাহ্মণদের উপবীত ধারণে অনুমতি দেন।
পক্ষান্তরে কেশবচন্দ্র অনেক বেশি আধুনিক ও বিপ্লবী। ব্রাহ্মধর্মকে তিনি হিন্দুধর্ম
থেকে একেবারে আলাদা করতে চান। তাঁর মতে, ব্রাহ্মরা অ-হিন্দু। হিন্দুধর্মের সকল
প্রচার কুসংস্কারমূলক আচার-অনুষ্ঠান বর্জনের তিনি পক্ষপাতী। ক্রমে এই দুই
ব্রাহ্ম-নেতার বিরোধ ধারণ করে চরম রূপ। এসময় ব্রাহ্ম ধর্মসভায় 888sport promo codeদের প্রকাশ্য
স্থানে উপাসনা করার পক্ষে ও বিপক্ষে মত প্রকাশে দেখা দেয় নতুন বিতর্ক। এ বিতর্কের
সূত্র ধরেই ১৮৭৮ সালে ভেঙে যায় ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ। এ সময় শিবনাথ শাস্ত্রীর
নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ’ (১৮৭৮)। অন্যদিকে কেশবচন্দ্র
প্রতিষ্ঠা করেন ‘নববিধান ব্রাহ্মসমাজ’ (১৮৭৮)। দেবেন্দ্রনাথের নেতৃত্বে ছিল ‘আদি
ব্রাহ্মসমাজ’। সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শিবনাথ শাস্ত্রী এসময় পালন
করেন ঐতিহাসিক ভূমিকা। তাঁর নেতৃত্বগুণে সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ দ্রুত কলকাতার
সমাজজীবনে প্রভাব বিস্তারে সমর্থ হয়। ধর্ম প্রচার ছাড়াও সমাজ সংস্কার ও রাজনৈতিক
সংস্কার ছিল সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের প্রধান কর্মসূচি। সমগ্র ভারতবর্ষ 888sport slot game করে
শিবনাথ শাস্ত্রী সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের আদর্শ প্রচার করেন।
ইতোপূর্বেই শিক্ষাব্রতী হিসেবে শিবনাথ শাস্ত্রীর খানিকটা পরিচয় আমরা
জেনেছি। এ প্রসঙ্গে তাঁর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত সিটি স্কুলের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ
করতে হয়। শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে ১৮৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্কুল উত্তরকালে সিটি
কলেজে রূপান্তরিত হয়। সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে উনিশ-বিশ
শতকের বহু আলোকিত মানুষ বিদ্যা লাভ করেন। সিটি স্কুল প্রতিষ্ঠায় শিবনাথ শাস্ত্রী
তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু আনন্দমোহন বসু এবং সুরেন্দ্রনাথ গোস্বামীর সহযোগ লাভ করেন।
অভিন্ন উদ্দেশ্যে এঁরা প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্টুডেন্ট সোসাইটি’ (১৮৭৯)। বস্ত্তত এটিই
হলো ভারতবর্ষের প্রথম ছাত্রসংগঠন।
১৮৮৮ সালে শিবনাথ শাস্ত্রী ইংল্যান্ড গমন করেন। ভারতবর্ষ ও ইংল্যান্ডের
সমাজকে তুলনামূলক দৃষ্টিতে বিচার করার মানসেই তাঁর বিলেত গমন। ছয় মাস তিনি বিলেতে
প্রবাসজীবন যাপন করেন। এ সময় তিনি ইংল্যান্ডের নানা স্থানে ভারতবর্ষের সমাজ ও
সংস্কৃতি, বিশেষত ব্রাহ্মধর্ম বিষয়ে বহু বক্তৃতা দেন এবং অর্জন করেন প্রচুর প্রশংসা।
ইংল্যান্ড 888sport slot game শিবনাথ শাস্ত্রীর মনে গভীর রেখাপাত করে। ইংরেজদের মধ্যে তিনি লক্ষ
করলেন বহু সদ্গুণ। দেশে প্রত্যাবর্তন করে ওই সদ্গুণের চর্চা করার মানসে তিনি
প্রতিষ্ঠা করেন ‘সাধনাশ্রম’ (১৮৮৯)। জনগণের মধ্যে উচ্চ আদর্শ ও সদ্গুণ প্রচারে
সাধনাশ্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাংলা 888sport live footballের একজন খ্যাতিমান লেখক হিসেবে শিবনাথ শাস্ত্রীর অবদান
বিশেষভাবে 888sport app download for androidীয়। সমাজ সংস্কারমূলক বিচিত্র কাজে ব্যস্ত থাকলেও তিনি
888sport live footballসৃজনেও ছিলেন সমান উৎসাহী ও আন্তরিক। তাঁর লেখা 888sport app download apk, 888sport alternative link, 888sport live,
ইতিহাস, আত্মজীবনী বাংলা 888sport live footballের অমূল্য সম্পদ। শিবনাথ শাস্ত্রী যেসব কাব্য
প্রকাশ করেন, তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য – নির্বাসিতের বিলাপ (১৮৬৮), পুষ্পমালা
(১৮৭৫), হিমাদ্রি কুসুম (১৮৮৭), পুষ্পাঞ্জলি (১৮৮৮), ছায়াময়ী
পরিণয় (১৮৮৯) ইত্যাদি। 888sport promo codeর প্রতি 888sport apk download apk latest version ও ভালোবাসা শিবনাথ শাস্ত্রীর
888sport app download apkর বিশিষ্ট লক্ষণ। সহজ-সরল হৃদয়বাণী গুণে শিবনাথের 888sport app download apk সমকালে বিশেষ খ্যাতি
অর্জন করেছিল। তাঁর লেখা ‘আজি শচীমাতা কেন চমকিলে/ ঘুমাতে ঘুমাতে উঠিয়া বসিলে।’ –
পঙ্ক্তিদ্বয় তখনকার প্রতিটি ছাত্রের মুখে-মুখে উচ্চারিত হতো।
বাংলা 888sport alternative link 888sport live footballের ধারায় শিবনাথ শাস্ত্রীর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
একটি বিশিষ্ট আদর্শ তাঁর ঔপন্যাসিক চেতনায় সর্বদা থেকেছে ক্রিয়াশীল। 888sport promo codeজীবনকে
তিনি সমাজে-সংসারে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন স্বমহিমায়। প্রাকৃতিক লৈঙ্গিক পরিচয়ে না
দেখে সামাজিক লৈঙ্গিক দৃষ্টিকোণে 888sport promo codeকে বিবেচনার প্রাথমিক আভাস শিবনাথ শাস্ত্রীর
888sport alternative linkে বিশেষভাবে লক্ষণীয়। শিবনাথ শাস্ত্রীর উল্লেখযোগ্য 888sport alternative linkের মধ্যে আছে মেজবৌ
(১৮৭৯), নয়নতারা (১৮৮৯), যুগান্তর (১৯১৫), বিধবার ছেলে (১৯১৬) ইত্যাদি। প্রসঙ্গত
উল্লেখ্য যে, তাঁর যুগান্তর
888sport alternative link থেকেই উত্তরকালীন বিখ্যাত সংবাদপত্র যুগান্তরের নামকরণ করা হয়েছিল। 888sport alternative linkে ভাষা-ব্যবহারে শিবনাথ
শাস্ত্রী ছিলেন অতিসতর্ক। কলকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কথ্যভাষা ব্যবহার তাঁর
888sport alternative linkের একটি বিশিষ্ট লক্ষণ। বাংলা 888sport alternative link 888sport live footballের বিকাশের ধারায় শিবনাথ
শাস্ত্রীর অবদান যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে এখনো মূল্যায়িত হয়নি।
প্রাবন্ধিক হিসেবেও শিবনাথ শাস্ত্রী রেখে গেছেন তাঁর সৃষ্টিক্ষম প্রজ্ঞার
স্বাক্ষর। সমাজ সম্পর্কে প্রগতিশীল দৃষ্টিই তাঁর 888sport live-888sport live footballের উপজীব্য বিষয়।
হিন্দু ধর্মের নানামাত্রিক কুসংস্কার থেকে তিনি সমাজকে মুক্ত করার মানসে একের পর
এক 888sport live লিখেছেন। শিবনাথ শাস্ত্রীর উল্লেখযোগ্য 888sport liveগ্রন্থগুলো হচ্ছে – এই কি ব্রাহ্ম বিবাহ? (১৮৭৮), খৃষ্টধর্ম (১৮৮১), জাতিভেদ (১৮৮৪), বক্তৃতা স্তবক (১৮৮৮), মাঘোৎসব উপদেশ (১৯০২), মাঘোৎসব বক্তৃতা (১৯০৩), 888sport liveাঞ্জলি (১৯০৪), ধর্মজীবন (১৯১৬) ইত্যাদি।
ব্রাহ্মধর্মের তিন প্রধান তাত্ত্বিকের জীবনী লিখেছেন শিবনাথ শাস্ত্রী। তাঁর জীবনী
গ্রন্থগুলো হচ্ছে রামমোহন রায়
(১৮৮৫), মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ
(১৯১০) এবং ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র
(১৯১০)। ১৯১৮ সালে প্রকাশিত হয় শিবনাথ শাস্ত্রীর আত্মজীবনী আত্মচরিত। তাঁর আত্মচরিত পাঠ করলে গোটা উনিশ শতক পাঠকের
চোখে ভেসে উঠবে। ১৯০৪ সালে প্রকাশিত হয় শিবনাথ শাস্ত্রীর কালজয়ী গ্রন্থ রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ, যা
ইতিহাসের এক উল্লেখযোগ্য দলিল হিসেবে উত্তরকালে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ইংরেজি
ভাষাতেও শিবনাথ শাস্ত্রী কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর দুটি উল্লেখযোগ্য ইংরেজি
গ্রন্থ – History of the Brahma Samaj (১৮৮৮) এবং Men
I have seen (১৮৯৯)।
১৯১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর শিবনাথ শাস্ত্রী কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
চিন্তাবিদ, 888sport live footballিক, শিক্ষাব্রতী, সমাজ-সংস্কারক, পন্ডিত এবং ব্রাহ্মধর্ম
প্রচারক হিসেবে তিনি ছিলেন সমধিক পরিচিত। তিনি ছিলেন উনিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ
চিন্তাবিদ। সমাজ উন্নয়নের ধারায় তাঁর অবদান আজো গভীয় 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে 888sport app download for android করা
হয়।
তিন
সূচনা-সূত্রেই ব্যক্ত
হয়েছে যে, রামতনু লাহিড়ী এবং উনিশ শতকী বাঙালির নবজাগরণকে সমান্তরাল দৃষ্টিতে
পর্যবেক্ষণ করে শিবনাথ শাস্ত্রী রচনা করেছেন রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ। রামতনু লাহিড়ীর ব্যক্তিজীবন
উপস্থাপন সূত্রে শিবনাথ শাস্ত্রী এই গ্রন্থে নির্মোহ দৃষ্টিতে তুলে ধরেছেন উনিশ
শতকী উন্মথিত বাঙালির জাগরণ-ইতিহাস। কেবল উনিশ শতকী সমাজ নয়, সমকালীন
888sport live chat-888sport live football-সংস্কৃতি সম্পর্কেও এখানে পাওয়া যাবে শিবনাথ শাস্ত্রীর
বিশ্লেষণাত্মক মূল্যায়ন। গ্রন্থটি কেবল উনিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলোকিত মানুষ
রামতনু লাহিড়ীর জীবনেতিহাস নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে ওই শতকের সামাজিক-সাংস্কৃতিক
ইতিহাস ও রেনেসাঁস-আন্দোলনের ঐতিহাসিক এক দলিল। প্রসঙ্গত 888sport app download for android করা যায় শিবনাথ শাস্ত্রীর
নিম্নোক্ত ভাষ্য :
…অগ্রে
ভাবিয়াছিলাম বিশেষভাবে তাহার [রামতনু লাহিড়ী] অনুরক্ত ব্যক্তিগণের জন্য একখানি
ক্ষুদ্রাকার জীবনচরিত লিখিব।… অতএব, প্রথমে তদ্নুরাগী লোকদিগের জন্যই লিখিতে
আরম্ভ করিয়াছিলাম। কিন্তু তৎপরে মনে হইল, লাহিড়ী মহাশয়ের যৌবনের প্রথমোদ্যমে
রামমোহন রায়, ডেভিড হেয়ার ও ডিরোজিও, নব্যবঙ্গের এই তিন দীক্ষাগুরু তাঁহাদিগকে যে
মন্ত্রে দীক্ষিত করেন, সেই মন্ত্রের প্রভাবেই বঙ্গসমাজের সবর্ববিধ উন্নতি ঘটিয়াছে;
এবং সেই প্রভাব এই সুদূর সময় পর্যন্ত লক্ষিত হইতেছে। আবার সেই উন্নতির স্রোতের
সঙ্গে সঙ্গে আসিয়াছেন, অগ্রসর হইয়া অত্যগ্রসর দলের সঙ্গে মিশিয়াছেন, এরূপ দুই একটি
মাত্র মানুষ পাওয়া যায়। তন্মধ্যে লাহিড়ী মহাশয় একজন। অতএব, তাঁহার জীবনচরিত লিখিতে
গেলে, বঙ্গদেশের আভ্যন্তরীণ ইতিবৃত্তকে বাদ দিয়া লেখা যায় না। তাই বঙ্গদেশের
আভ্যন্তরীণ সামাজিক ইতিবৃত্তের বিবরণ দিতে প্রবৃত্ত হইতে হইল।৩
শিবনাথ শাস্ত্রীর
উপর্যুক্ত ভাষ্যে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে আলোচ্য গ্রন্থের মৌল চারিত্র্য। রামতনু
লাহিড়ীর জীবন এবং তৎকালীন বাংলার জাগরণ যে অভিন্ন-সূত্রে গ্রথিত, এই অভিজ্ঞানই
গ্রন্থটিকে দিয়েছে স্বতন্ত্র মর্যাদা। একজন আলোকিত মানুষের জীবনেতিহাস লিখতে গিয়ে
সময়ের পূর্ণাঙ্গ ও বস্ত্তনিষ্ঠ বিবরণ এই গ্রন্থে যেভাবে উঠে এসেছে, তেমন দৃষ্টান্ত
বাংলা 888sport live footballে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ-গ্রন্থে ধরা পড়েছে উনিশ শতকের বিভিন্ন
মনীষীর কর্মের বিবরণ, বিশেষ করে ব্রাহ্মধর্মের উদ্ভব ও বিকাশকাহিনি। রামতনু
লাহিড়ীর জীবনেতিহাস বর্ণনাসূত্রে উনিশ শতকের সামাজিক ইতিহাস বয়ানের যে সিদ্ধান্ত
গ্রহণ করেছিলেন শিবনাথ শাস্ত্রী, আজ শতবর্ষ পরে সেজন্যে তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে হয়।
মানসিকতার পরিবর্তন না ঘটলে আমরা হয়তো গতানুগতিক এক জীবনগ্রন্থ পেতাম, সামাজিক
ইতিহাসের অনুপম এক আকরগ্রন্থ পেতাম না। প্রসঙ্গত 888sport app download for android করা যায় বরুণকুমার
চক্রবর্তীর এই বিবেচনা :
ধন্যবাদ
জানাতে হয় শিবনাথ শাস্ত্রীর পরিবর্তিত মানসিকতাকে। সত্য সত্যই যদি তিনি তাঁর পরম
শ্রদ্ধেয় রামতনু লাহিড়ীর জীবনচরিত রচনায় গতানুগতিক পথকে অবলম্বন করতেন, নিছক
লাহিড়ী মহাশয়ের অনুরক্তদের খুশি করার মতো একটি ক্ষুদ্রাকার জীবনচরিতে লাহিড়ী
মহাশয়ের জন্ম, তাঁর কুল-পরিচয়, তাঁর চারিত্রিক স্বাতন্ত্র্য, শিক্ষাদানের জন্য
তাঁর অনুসৃত রীতি, ছাত্র বাৎসল্য, আপন আদর্শের জন্য প্রবল প্রতিপক্ষের প্রতিকূলতার
সম্মুখীন হওয়ার আনুপূর্বিক বিবরণ, তাঁর পারিবারিক তথা সাংসারিক জীবন, বিশেষ
ধর্মাদর্শে বিশ্বাস স্থাপন, বন্ধুপ্রীতি ইত্যাদির পরিচয় দানেই কর্তব্য সীমাবদ্ধ
রাখতেন, তাহলে বাংলা 888sport live football একটি অনন্যসাধারণ জীবনচরিত লাভের সৌভাগ্য লাভে বঞ্চিত
হতো, যেমন বঞ্চিত হয়েছে অদ্বিতীয় বিদ্যাসাগরের আত্মচরিত খন্ডিত থাকার কারণে।৪
উনিশ শতকে হিন্দু কলেজকে
(১৮১৭) কেন্দ্র করে দেখা দিয়েছিল নবজাগরণের উত্তুঙ্গ এক রূপ। পাশ্চাত্য
জ্ঞান-888sport apk-দর্শনের আলোয় স্নাত হয়ে হিন্দু কলেজে প্রতিষ্ঠিত অ্যাকাডেমিক
অ্যাসোসিয়েশনের (১৮২৬) সদস্যবৃন্দ কলকাতার রক্ষণশীল সমাজে প্রবল অভিঘাত সৃষ্টি
করেন। অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন বা ইয়ং বেঙ্গলের অভিঘাতে কলকাতার সমাজজীবনে সৃষ্টি
হয় যে নবতরঙ্গ, তার মুখ্য প্রেরণা-উৎস ছিলেন হিন্দু কলেজের তরুণ শিক্ষক হেনরি
ভিভিয়ান ডিরোজিও (১৮০৯-৩১)। রেনেসাঁস ম্যান বা আলোকিত মানুষ বলতে যা বোঝায়,
ডিরোজিও ছিলেন তার উজ্জ্বল উদাহরণ। রামতনু লাহিড়ী ছিলেন এই ডিরোজিওর অন্যতম
শ্রেষ্ঠ ভাবশিষ্য। এই গ্রন্থের ভূমিকায় শিবনাথ শাস্ত্রী লিখেছেন – ‘ডিরোজিওর
ছাত্রবৃন্দের মধ্যে যদি কেহ গুরুর সমগ্র-ভাব পাইয়া থাকেন, যদি কেহ চিরদিন গুরুকে
হৃদয়াসনে প্রতিষ্ঠিত রাখিয়া পূজা করিতে থাকেন, তবে তাহা রামতনু লাহিড়ী।’৫ যেহেতু ইয়ং বেঙ্গলদের আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল
সমাজে প্রচলিত সনাতন কুসংস্কার ও জগদ্দল রক্ষণশীলতা, তাই রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ
তাদের বিরুদ্ধে নানাপ্রকার কুৎসা ও অপবাদ ছড়াতে থাকে, তাদের চরিত্রে লেপন করতে
থাকে নানা ধরনের কালিমা। তৎকালীন ডামাডোল, তর্ক-বিতর্ক ও বিপরীতমুখী প্রচারণা থেকে
প্রকৃত সত্য বের করে আনা ছিল এক কঠিন কাজ। এ কাজেই ব্রতী হলেন শিবনাথ শাস্ত্রী।৬ রামতনু লাহিড়ীর জীবনচরিত লিখতে গিয়ে সে-সময়ের প্রকৃত সত্য উপস্থাপন
করাই হয়ে উঠলো তাঁর মৌল লক্ষ্য। সে-লক্ষ্য পূরণে একজন লেখক যে কী পরিমাণে সিদ্ধি
লাভ করতে পারেন তার উজ্জ্বল ও ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত হয়ে আছে আলোচ্য গ্রন্থ। প্রসঙ্গত
888sport app download for android করা যায় লেখকের এই বক্তব্য :
আমার
পূবর্ববর্তী কোনও কোনও লেখক ডিরোজিও ও তাহার শিষ্য-দলের প্রতি বিশেষ অবিচার
করিয়াছেন। তাঁহারা ইহাদিগকে নাস্তিক ও সমাজ-বিপ্লবেচ্ছু যথেচ্ছচারী লোক বলিয়া
ঘোষণা করিয়াছেন। এরূপ অমূলক অপবাদ আর হইতে পারে না। ডিরোজিওর ছাত্রবৃন্দের মধ্যে
যদি কেহ গুরুর সমগ্র-ভাব পাইয়া থাকেন, যদি কেহ চিরদিন গুরুকে হৃদয়াসনে প্রতিষ্ঠিত
রাখিয়া পূজা করিতে থাকেন, তবে তাহা রামতনু লাহিড়ী। পাঠক! এই গ্রন্থে দেখিবেন
ঈশ্বরে তাঁহার কি বিমল ভক্তি ছিল। আমাদের গৃহে যখন তিনি বাস করিতেন, তখন সর্বদা
দেখিতাম যে, অতি প্রত্যুষে তিনি উঠিয়াছেন, এটি ওটি করিতেছেন এবং গুন্গুন্ স্বরে
গান গাইতেছেন, ‘মন সদা কর তাঁর সাধনা’। আমার বিশ্বাস এই সাধনা তাঁর নিরন্তর চলিত।
এই কি নাস্তিক গুরুর নাস্তিক শিষ্য? অতএব প্রকৃত অবস্থা কি, তাহা দেখাইয়া
ইঁহাদিগকে অকারণ অপবাদ হইতে রক্ষা করাও আমার অন্যতর উদ্দেশ্য। কিন্তু তাহার ফল
চরমে যাহা দাঁড়াইয়াছে তাহা সকলেই অনুভব করিবেন। স্থানে স্থানে বাহিরের কথা প্রকৃত
বিষয় অপেক্ষা অধিক হইয়া পড়িয়াছে।৭
শিবনাথ শাস্ত্রীর
উপর্যুক্ত ভাষ্য থেকে দুটো তথ্য পাওয়া যায়। প্রথমত, তিনি ডিরোজিও ও তাঁর শিষ্যদের
সৃষ্ট ভাব-আন্দোলনের প্রকৃত তথ্য অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছেন এবং দূর করার প্রয়াস
পেয়েছেন ইয়ং বেঙ্গল সদস্যদের চরিত্র সম্পর্কে রক্ষণশীল সমাজের নানামাত্রিক অপবাদ।
দ্বিতীয়ত, রক্ষণশীল সমাজের অপবাদ দূর করতে গিয়ে সামাজিক ইতিহাসকে বিশদ বিশ্লেষণ
করতে হয়েছে। তিনি লিখেছেন – ‘স্থানে স্থানে বাহিরের কথা প্রকৃত বিষয় অপেক্ষা অধিক
হইয়া পড়িয়াছে।’ বস্ত্তত, প্রকৃত বিষয় অর্থাৎ রামতনু লাহিড়ী অপেক্ষা তৎকালীন সমাজ ও
সংস্কৃতি যে অধিক হয়ে পড়েছে, এখানেই নিহিত গ্রন্থটির অসামান্য সার্থকতা। ‘বাহিরের
কথা’ অধিক না হলে, গ্রন্থটি বিপুল সার্থকতা ও কালোত্তীর্ণ পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করতে
পারতো না বলেই মনে করি।
এই গ্রন্থের দ্বিতীয়
উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য, বর্ণিত প্রায় সব ঘটনাই শিবনাথ শাস্ত্রীর প্রত্যক্ষ
অভিজ্ঞতার জগৎ থেকে গৃহীত হয়েছে। কোনো বানানো বা কল্পকাহিনি এ-গ্রন্থে স্থান
পায়নি। রামতনু লাহিড়ীর শিষ্য হিসেবে শিবনাথ শাস্ত্রী সে-সময়ের প্রতিটি আন্দোলনের
সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এই গ্রন্থের অধিকাংশ চরিত্রের সঙ্গে শিবনাথের
ছিল প্রত্যক্ষ পরিচয়, অনেক ঘটনার সঙ্গে তিনি ছিলেন সরাসরি যুক্ত। নিজের চোখে দেখা
বলে সকল ঘটনার খুঁটিনাটি বিষয় শিবনাথ শাস্ত্রী এতো চিত্তাকর্ষকভাবে বর্ণনা করতে
সক্ষম হয়েছেন। তিনি ছিলেন উত্তম সাংবাদিক, কুশলী বক্তা। পাঠকের চিত্তলোকে কীভাবে
পৌঁছতে হয়, তা তাঁর ভালো করেই জানা ছিল। এ-কারণেই শতবর্ষের সীমানা পেরিয়েও এই
গ্রন্থটি বাঙালি পাঠকের কাছে এখনো এতো জনপ্রিয়। কেবল শিক্ষক-শিক্ষার্থী-গবেষক নন,
সাধারণ পাঠকও এ-বই পাঠ করেন 888sport alternative link-পাঠের সমান আনন্দ নিয়ে। বস্ত্তত, উনিশ শতকের
888sport apps সম্পর্কে কৌতূহলী যে-কেউ এ-গ্রন্থ পাঠেই সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন –
এ-গ্রন্থ পাঠ করেই একালের তরুণ শিক্ষার্থী জানতে পারে উনিশ শতকের সেই গৌরবোজ্জ্বল
সময়ের কথা – জানতে পারে তার অতীত ঐশ্বর্যের কথা, ঋদ্ধ ঐতিহ্যের কথা।
কেমন ছিল সেকালের কলকাতা, কেমন ছিল তার সংস্কৃতি, শিক্ষাদানের কৌশলই বা
কেমন ছিল? রামতনু লাহিড়ীর জীবনচরিত নির্মাণ-সূত্রে শিবনাথ এসব বিষয় চমৎকারভাবে
উপস্থাপন করেছেন আলোচ্য গ্রন্থে। নিচের উদ্ধৃতি পঞ্চকের মাধ্যমে তৎকালীন কলকাতাকে
শিবনাথ যেন আমাদের চোখের সামনে তুলে ধরেছেন :
ক.
ধনী গৃহস্থগণ প্রকাশ্যভাবে বারবিলাসিনীগণের সহিত আমোদ-প্রমোদ করিতে লজ্জা বোধ
করিতেন না। তখন উত্তর পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্য ভারতবর্ষ হইতে এক শ্রেণীর গায়িকা ও নর্তকী
সহরে আসিত, তাহারা বাঈজী এই সম্ভ্রান্ত নামে উক্ত হইত। নিজ ভবনে বাঈজীদিগকে
অভ্যর্থনা করিয়া আনা ও তাহাদের নাচ দেওয়া ধনীদের একটা প্রধান গৌরবের বিষয় ছিল।
কোন্ ধনী কোন্ প্রসিদ্ধ বাঈজীর জন্য কত সহস্র টাকা ব্যয় করিয়াছেন সেই সংবাদ সহরের
ভদ্রলোকদিগের বৈঠকে বৈঠকে ঘুরিত এবং কেহই তাহাকে তত দোষাবহ জ্ঞান করিত না। এমনকি
বিদেশিনী ও যবনী কুলটাদিগের সহিত সংসৃষ্ট হওয়া দেশীয় সমাজে প্রাধান্য লাভের একটা
প্রধান উপায়স্বরূপ হইয়া উঠিয়াছিল।৮
খ.
এই সময়ে সহরের সম্পন্ন মধ্যবিত্ত ভদ্র গৃহস্থদিগের গৃহে ‘বাবু’ নামে এক শ্রেণীর
মানুষ দেখা দিয়েছিল। তাহারা পারসি ও স্বল্প ইংরেজী শিক্ষার প্রভাবে প্রাচীন
ধর্ম্মে আস্থাবিহীন হইয়া ভোগসুখেই দিন কাটাইত। ইহাদের বহিরাকৃতি কি কিঞ্চিৎ বর্ণনা
করিব? মুখে, ভ্রূপার্শ্বে ও নেত্রকোলে নৈশ অত্যাচারের চিহ্নস্বরূপ কালিমা রেখা,
শিরে তরঙ্গায়িত বাউরি চুল, দাঁতে মিশি, পরিধানে ফিনফিনে কালাপেড়ে ধুতি, অঙ্গে
উৎকৃষ্ট মসলিন বা কেমরিকের বেনিয়ান, গলদেশে উত্তমরূপে চুনট করা উড়ানী ও পায়ে পুরু
বগল্স সমন্বিত চিনের বাড়ীর জুতা। এই বাবুরা দিনে ঘুমাইয়া, ঘুড়ি উড়াইয়া, বুলবুলির
লড়াই দেখিয়া, সেতার এসরাজ বীণ প্রভৃতি বাজাইয়া, কবি হাপ-আকড়াই পাঁচালী প্রভৃতি
শুনিয়া, রাত্রে বারাঙ্গনাদিগের আলয়ে আলয়ে গীতবাদ্য ও আমোদ করিয়া কাল কাটাইত; এবং
খড়দহের মেলা ও মাহেশের স্নানযাত্রা প্রভৃতির সময়ে কলিকাতা হইতে বারাঙ্গনাদিগকে
লইয়া দলে দলে নৌকাযোগে আমোদ করিতে যাইত।৯
গ.
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ হইতে সহরে হরু ঠাকুর ও তাঁহার চেলা ভোলা ময়দা, নীলু
ঠাকুর, নিতাই বৈষ্ণব প্রভৃতি কবিওয়ালাগণ প্রসিদ্ধ হইয়াছিল। যে সময়ের কথা বলিতেছি
তখনো সহরে অনেক বিখ্যাত কবিওয়ালা ছিল। ইহাদের লড়াই শুনিবার জন্য সহরের লোক
ভাঙ্গিয়া পড়িত। কবিওয়ালাদিগের দলে এক একজন দ্রুতকবি থাকিত; তাহাদিগকে সরকার বা
বাঁধনদার বলিত। বাঁধনদারেরা উপস্থিত মত তখনি তখনি গান বাঁধিয়া দিত। বঙ্গের
প্রসিদ্ধ কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত কিছুদিন কোনও কবির দলে বাঁধনদারের কাজ
করিয়াছিরেন।… সে সময়ে আন্টুনী ফিরিঙ্গী নামে একজন কবিওয়ালা ছিল। আন্টুনী
ফরাসডাঙ্গাবাসী একজন ফরাসীর সন্তান; বাল্যকালে কুসঙ্গে পড়িয়া বহিয়া যায়; ক্রমে
প্রতিভাবলে কবিওয়ালা হইয়া উঠে। আন্টুনী নিজে একজন দ্রুতকবি ছিল।১০
ঘ.
…কলিকাতার কতিপয় ভদ্র ইংরাজ-মহিলা সমবেত হইয়া তদানীন্তন গবর্নর জেনেরাল লর্ড
আমহার্স্টের পত্নী লেডী আমহার্স্টকে আপনাদের অধিনেত্রী করিয়া স্ত্রীশিক্ষার
উন্নতিবিধানার্থ বেঙ্গল লেডীস্ সোসাইটি (Bengal Ladies Society) নামে এক সভা স্থাপন করিলেন। এই সভার মহিলা
সভ্যগণের উৎসাহে ও যত্নে নানা স্থানে বালিকা বিদ্যালয় সকল স্থাপিত হইতে লাগিল।
অল্পকালের মধ্যেই ইঁহারা সহরের মধ্যস্থলে একটি প্রশস্ত স্কুলগৃহ নির্মাণ করিবার
সংকল্প করিলেন। কিছুকাল পরে মহিলাগণ মহাসমারোহে গৃহের ভিত্তিস্থাপন পূবর্বক
গৃহনির্ম্মাণে প্রবৃত্ত হইলেন। ঐ গৃহ নির্ম্মাণকার্য্যের সাহায্যার্থে রাজা
বৈদ্যনাথ বিংশতি সহস্র মুদ্রা দান করিয়াছিলেন। ইহাতেই প্রমাণ, স্ত্রী-শিক্ষা
প্রচলন বিষয়ে মহিলাগণ এদেশীয় অনেক ভদ্রলোকের উৎসাহ ও আনুকূল্য প্রাপ্ত হইয়াছিলেন।১১
ঙ.
তখন জলের কল ছিল না, প্রত্যেক ভবনে এক একটি কূপ ও প্রত্যেক পল্লীতে দুই-চারিটি
পুষ্করিণী ছিল। এই সকল পচা দুর্গন্ধময় জলপূর্ণ পুষ্করিণীতে কলিকাতা পরিপূর্ণ
ছিল।… এই পুষ্করিণীগুলি জলের উৎসস্বরূপ ছিল। এতদ্ভিন্ন গবর্নমেন্ট স্থানে স্থানে
কয়েকটি দীর্ঘিকা খনন করিয়াছিলেন, তাহাতে কাহাকেও স্নান করিতে দিতেন না; সেইগুলি
লোকের পানার্থ ছিল।… এখনকার ফুটপাতের পরিবর্ত্তে প্রত্যেক রাজপথের পার্শ্বে এক
একটি সুবিস্তীর্ণ নর্দ্দমা কর্দ্দম ও পঙ্কে এরূপ পূর্ণ থাকিত যে, একবার একটি
ক্ষিপ্ত হস্তী ঐরূপ একটি নর্দ্দমাতে পড়িয়া প্রায় অর্দ্ধেক প্রোথিত হইয়া যায়, অতি
কষ্টে তাহাকে তুলিতে হইয়াছিল। এই সকল নর্দ্দমা হইতে যে দুর্গন্ধ উঠিত তাহাকে
বর্দ্ধিত ও ঘনীভূত করিবার জন্যই যেন প্রতি গৃহেই পথের পার্শ্বে এক একটি শৌচাগার
ছিল। তাহাদের অনেকের মুখ দিনরাত্রি অনাবৃত থাকিত। নাসারন্ধ্র উত্তমরূপে বস্ত্র
দ্বারা আবৃত না করিয়া সেই সকল পথ দিয়া চলিতে পারা যাইতো না। মাছি ও মশার উপদ্রবে
দিন-রাত্রির মধ্যে কখনই নিরুদ্বেগে বসিয়া কাজ করিতে পারা যাইত না।১২
– উপরের উদ্ধৃতি পঞ্চকের
মাধ্যমে উনিশ শতকের কলকাতা শহরের নানামাত্রিক ছবি পাঠকের চোখের সামনে তুরে ধরেছেন
শিবনাথ শাস্ত্রী। ‘ক’ সংখ্যক উদ্ধৃতিতে কলকাতাসমাজে বারবণিতাচর্চা কীভাবে জেঁকে
বসেছিল তার রূপ অঙ্কিত হয়েছে। ‘খ’ সংখ্যক উদ্ধৃতিতে কলকাতাসমাজে ‘বাবু’দের
দুরবস্থা ও বারাঙ্গনাচর্চার পরিচয় পাওয়া যায়। ক্ষিতীশবংশাবলীচরিত-লেখক দেওয়ান কার্ত্তিকেয়চন্দ্র রায় ইতোপূর্বে
লিখেছেন – ‘সন্ধ্যার পর রাত্রি দেড় প্রহর পর্যন্ত বেশ্যালয় লোকে পূর্ণ থাকিত।
বিশেষত পবের্বাপলক্ষ্যে সেথায় লোকের স্থান হইয়া উঠিত না। লোকে পূজার রাত্রিতে যেমন
প্রতিমা দর্শন করিয়া বেড়াইতেন, বিজয়ার রাত্রিতে তেমনি বেশ্যা দেখিয়া বেড়াইতেন।’১৩ এই গ্রন্থে শিবনাথ শাস্ত্রীর পর্যবেক্ষণ
কার্ত্তিকেয়চন্দ্রের পর্যবেক্ষণেরই প্রতিধ্বনি যেন। ‘গ’ সংখ্যক উদ্ধৃতিতে কলকাতার
সমাজজীবনে সাংস্কৃতিক অবস্থার দৈন্যের ছবি প্রকাশিত হয়েছে। অশ্লীল কবিগানের প্রতি
সেকালের মানুষ যে কীরূপ আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিল, এ অংশ থেকে তা অনুমান করা যায়। উনিশ
শতকের গোড়ার দিকে কলকাতায় 888sport promo codeশিক্ষার একটি বিশ্বস্ত চিত্র পাওয়া যায় ‘ঘ’ সংখ্যক
উদ্ধৃতি থেকে। কলকাতার পয়ঃপ্রণালি, পানীয় জলের উৎস ইত্যাদি প্রসঙ্গ ফুটে উঠেছে ‘ঙ’
সংখ্যক উদ্ধৃতিতে। শিবনাথ শাস্ত্রীর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে লেখা এসব চিত্র তৎকালীন
কলকাতার একটা সামগ্রিক রূপ পাঠকের চোখের সামনে তুলে ধরে।
রামতনু লাহিড়ীর
ব্যক্তিজীবন উপস্থাপন-সূত্রে এই গ্রন্থে শিবনাথ শাস্ত্রী বঙ্গীয় রেনেসাঁসের মৌল
বৈশিষ্ট্য এবং পুরোধা ব্যক্তিবর্গের অবদান সম্পর্কেও আলোকপাত করেছেন। বাংলার
সমাজ-বিবর্তনের ধারায় তাঁর এসব মূল্যায়ন ঐতিহাসিক উপাদান হিসেবে উত্তরকালে
স্বীকৃতি লাভ করেছে। রামমোহন রায়, দ্বারকানাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর,
কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, কেশবচন্দ্র সেন, রাজকৃষ্ণ সিংহ, মথুরনাথ মল্লিক,
রামগোপাল ঘোষ, রসিককৃষ্ণ মল্লিক, ডেভিড হেয়ার, হেনরী লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও প্রমুখের
অবদান ও ভূমিকা শিবনাথ শাস্ত্রী ঈর্ষণীয় নৈপুণ্যে তুলে ধরেছেন তাঁর গ্রন্থে।
নবজাগরণের এসব পুরোধা ব্যক্তির দু-একজন সম্পর্কে শিবনাথ শাস্ত্রীর মূল্যায়ন এখানে
888sport app download for android করা যায় :
ক.
রামমোহন রায়
রামমোহন
রায় ১৮২৩ সালে লর্ড আমহার্স্টকে যে পত্র লেখেন তাহাকেই এই নবযুগের প্রথম সামরিক
শঙ্খধ্বনি মনে করা যাইতে পারে। তিনি যেন স্বদেশবাসীদিগের মুখ পূবর্ব হইতে পশ্চিম
দিকে ফিরাইয়া দিলেন। তবে ইহা 888sport app download for androidীয় যে, তাঁহাতে যাহা ছিল অপর কোনও নেতাতে তাহা
হয় নাই। তিনি নবীনের অভ্যর্থনা করিতে গিয়া প্রাচীন হইতে পা তুলিয়া লন নাই।
হিন্দুজাতির কোথায় মহত্ব তিনি তাহা পরিষ্কাররূপে হৃদয়াঙ্গম করিয়াছিলেন এবং তাহা
সযত্নে বক্ষে ধারণ করিয়াছিলেন, অথচ পাশ্চাত্য 888sport apk, পাশ্চাত্য নীতি ও পাশ্চাত্য
জনহিতৈষণাকে অনুকরণীয় মনে করিয়াছিলেন।১৪
খ.
ডেভিড হেয়ার
১৮১৮
সালের ১লা সেপ্টেম্বর হেয়ারের উদ্যোগে স্কুল সোসাইটি নামে আর একটি সভা স্থাপিত
হইল। হেয়ার ও রাধাকান্ত দেব তাহার সম্পাদকের পদ গ্রহণ করিলেন। কলিকাতার স্থানে
স্থানে নূতন প্রণালীতে ইংরাজি ও বাঙ্গালা শিক্ষার জন্য স্কুল স্থাপন করা এই
সোসাইটির উদ্দেশ্য ছিল। হেয়ার ইহার প্রাণ ও প্রধান কার্য্য-নিবর্বাহক ছিলেন। তিনি
ইহার উদ্দেশ্য সিদ্ধ করিবার জন্য অবিশ্রাম পরিশ্রম করিতে লাগিলেন। এমনকি সেজন্য
তাঁহার ঘড়ির ব্যবসায় রক্ষা করা অসম্ভব হইয়া উঠিল। তিনি তাঁহার বন্ধু গ্রেকে খড়ির
কারবার বিক্রয় করিয়া, সেই অর্থে সহরের মধ্যে কিঞ্চিৎ ভূমি ক্রয়পূবর্বক তদুৎপন্ন আয়
দ্বারা নিজের ভরণপোষণের ব্যয় নিবর্বাহ করিতে লাগিলেন; এবং অনন্যকর্ম্মা হইয়া
এদেশের বালকদিগের শিক্ষাদান কার্য্যে নিযুক্ত হইলেন।১৫
গ.
হেনরী লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও
ডিরোজিও
এইরূপ উপাদান লইয়া তাঁহার (Academic Association) একাডেমিক এসোসিএশনের কার্য্য আরম্ভ করিলেন।
প্রথমে কিছুদিন অন্য কোনো স্থানে উক্ত সভার অধিবেশন হইয়া, শেষে মাণিকতলার একটি
বাটীতে অধিবেশন হইত। ডিরোজিও নিজে উক্ত সভার সভাপতি ও উমাচরণ বসু নামক একজন যুবক
প্রথম সম্পাদক ছিলেন।… এই সভার অধিবেশনে সমুদয় নৈতিক ও সামাজিক বিষয় স্বাধীন ও
অসঙ্কুচিতভাবে বিচার করা হইত। তাহার ফলস্বরূপ ডিরোজিওর শিষ্যদিগের মনে স্বাধীন
চিন্তার স্পৃহা উদ্দীপ্ত হইয়া উঠিল; এবং তাঁহারা অসংকোচে দেশের প্রাচীন রীতি-নীতির
আলোচনা আরম্ভ করিলেন।… হিন্দু কলেজের অপেক্ষাকৃত অধিক বয়স্ক বালকদিগের এই সকল
ভাব ক্রমে অপরাপর বালকদিগের মধ্যে ব্যাপ্ত হইয়া পড়িল। ঘরে ঘরে বৃদ্ধদিগের সহিত
বালকদিগের বিবাদ, কলহ ও তাহাদিগের প্রতি অভিভাবকগণের তাড়না চলিতে লাগিল।১৬
শিবনাথ শাস্ত্রী এই
গ্রন্থে নবজাগরণের পুরোধা ব্যক্তিদের কথাই কেবল বলেননি, ওই আন্দোলনের ফলে বাংলা
888sport live footballে যে নবতরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছিল, সে-সম্পর্কেও আলোকপাত করেছেন। শিবনাথের দৃষ্টি
ছিল সর্বত্রসঞ্চারী। তাই 888sport live footballের ক্ষেত্রে যে-রূপান্তর সূচিত হয়েছিল, তা তাঁর
চোখ এড়িয়ে যায়নি। প্যারীচাঁদ মিত্র (১৮১৪-৮৩), মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-৭৩),
দীনবন্ধু মিত্র (১৮৩০-৭৩) প্রমুখ 888sport live footballিক সম্পর্কে এই গ্রন্থে শিবনাথ শাস্ত্রী
গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়ন উপস্থাপন করেছেন। নিচে এই তিন লেখক সম্পর্কে শিবনাথ
শাস্ত্রীর মূল্যায়নের চুম্বকাংশ উদ্ধৃত হলো :
ক.
প্যারীচাঁদ মিত্র
একটি
বিশেষ কার্য্যের জন্য বঙ্গ888sport live footballে তিনি চির888sport app download for androidীয় হইয়া রহিয়াছেন। একদিকে
পন্ডিতবর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অপরদিকে খ্যাতনামা অক্ষয়কুমার দত্ত, এই উভয়
যুগপ্রবর্ত্তক মহাপুরুষের প্রভাবে বঙ্গভাষা যখন নবজীবন লাভ করিল, তখন তাহা
সংস্কৃত-বহুল হইয়া দাঁড়াইল।… কিন্তু ‘আলালের ঘরের দুলাল’ বঙ্গ888sport live footballে এক নবযুগ
আনয়ন করিল। এই পুস্তকের ভাষার নাম ‘আলালী ভাষা’ হইল।… এই আলালী ভাষার সৃষ্টি
হইতে বঙ্গ888sport live footballের গতি ফিরিয়া গেল। ভাষা সম্পূর্ণ আলালী রহিল না বটে কিন্তু
ঈশ্বরচন্দ্রী রহিল না, বঙ্কিমী হইয়া দাঁড়াইল। এজন্য আমার পূজ্যপাদ মাতুল,
‘সোমপ্রকাশ’ সম্পাদক, খ্যাতনামা দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ মহাশয় সোমপ্রকাশে কতই শোক
করিলেন। কিন্তু আমার বোধহয় ভালই হইয়াছে; জীবন্ত মানুষ ও ভাষা যত কাছাকাছি থাকে ততই
ভাল।১৭
খ.
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
তিলোত্তমা
বঙ্গ888sport live footballে এক নূতন পথ আবিষ্কার করিল। বঙ্গীয় পাঠকগণ নূতন ছন্দ, নূতন ভাব, নূতন
ওজস্বিতা দেখিয়া চমকিয়া উঠিলেন। মধুসূদনের নাম ও কীর্ত্তি সবর্বসাধারণের আলোচনার
বিষয় হইল। ইহার পরে তিনি ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ রচনাতে প্রবৃত্ত হন। ইহাই বঙ্গ888sport live football
সিংহাসনে তাঁহার আসন চিরদিনের জন্য সুপ্রতিষ্ঠিত করিয়াছে।… ইহা অত্যাশ্চর্য্য
বলিয়া মনে হয় যে, তাঁহার লেখনী যখন ‘মেঘনাদের’ বীররস চিত্রণে নিযুক্ত ছিল, তখন সেই
লেখনীই অপরদিকে ‘ব্রজাঙ্গনা’র সুললিত মধুর রস চিত্রণে ব্যাপৃত ছিল। এই ঘটনা তাঁহার
প্রতিভাকে কি অপূবর্ববেশে আমাদের নিকট আনিতেছে! একই চিত্রকর একই সময়ে কিরূপে এরূপ
দুইটি চিত্র চিত্রিত করিতে পারে! দেখিয়া মনে হয়, মধুসূদনের নিজ প্রকৃতিকে দ্বিভাগ
করিবার শক্তিও অসাধারণ ছিল। তাহার জন্যই বোধ হয় এতো দুঃখ-দারিদ্রে্যর মধ্যে, এতো
ঘনঘোর বিষাদের মধ্যে, এতো জীবনব্যাপী অতৃপ্তি ও অশান্তির মধ্যে বসিয়া তিনি 888sport app download apk
রচনা করিতে পারিয়াছেন!১৮
গ.
দীনবন্ধু মিত্র
যে
সময়ে কেশবচন্দ্র সেন বাঙ্গালী জাতির নব শক্তি ও নব আকাঙ্ক্ষার উন্মেষের মুখপাত্র
স্বরূপ হইয়া দাঁড়াইয়াছিলেন, যে সময়ে বঙ্কিমচন্দ্র ও ‘বঙ্গদর্শন’ আমাদের চিন্তার
এতোটা স্থান অধিকার করিয়াছিলেন, সেই সময়ে দীনবন্ধু আর এক দিক দিয়া সেই উন্মেষে
সহায়তা করিয়াছিলেন তাহাতে সন্দেহ নাই।… যাঁহার দুঃখ-সন্তপ্ত হৃদয় হইতে
‘নীলদর্পণ’ বাহির হইয়াছিল, তিনি যে নিজে দীনবন্ধু নাম পছন্দ করিয়া লইয়াছিলেন, এটা
একটা বিশেষ 888sport app download for androidীয় ঘটনা বলিতে হইবে।… গভর্নমেন্টের কার্য্যোপলক্ষে যে তিনি নানা
স্থানে 888sport slot game ও নানা শ্রেণীর লোকের সহিত পরিচয় ও আত্মীয়তা করিতে পারিয়াছিলেন,
তাহাই তাঁহার নাটক রচনার পক্ষে বিশেষ সাহায্য করিয়াছিল। এরূপ অভিজ্ঞতা, এরূপ মানব-চরিত্র দর্শন, ও এরূপ বিবিধ সামাজিক
অবস্থার জ্ঞান আর কাহারও হয় নাই। তাহার রচিত নাটক সকলে আমরা এই সকলের যথেষ্ট পরিচয়
প্রাপ্ত হই।১৯
– উপর্যুক্ত উদ্ধৃতিত্রয়
প্যারীচাঁদ মিত্র, মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং দীনবন্ধু মিত্রের 888sport live footballপ্রতিভা
মূল্যায়নে শিবনাথ শাস্ত্রীর পরমসূক্ষ্ম বোধের পরিচায়ক। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
(১৮১২-৫৯), ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-৯১), বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(১৮৩৮-৯৪) প্রমুখ 888sport live footballিক সম্পর্কেও শিবনাথ শাস্ত্রীর সূক্ষ্ম বিবেচনাসম্ভূত
মূল্যায়ন এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের
সাংবাদিক-সত্তা সম্পর্কে শিবনাথের মূল্যায়ন 888sport app download for android করা যায় – ‘১৮৭২ সালে
‘বঙ্গদর্শন’ প্রকাশিত হইল। বঙ্কিমের প্রতিভা আর এক আকারে দেখা দিল। প্রতিভা এমনি
জিনিষ, ইহা যাহা কিছু স্পর্শ করে তাহাকেই সজীব করে। বঙ্কিমের প্রতিভা সেইরূপ ছিল।
তিনি মাসিক পত্রিকার সম্পাদক হইতে গিয়া এরূপ মাসিক পত্রিকা সৃষ্টি করিলেন, যাহা
প্রকাশ মাত্র বাঙ্গালীর ঘরে ঘরে স্থান পাইল। তাহার সকলি যেন চিত্তাকর্ষক, সকলি যেন
মিষ্ট। বঙ্গদর্শন দেখিতে দেখিতে উদীয়মান সূর্যের ন্যায় লোকচক্ষের সমক্ষে উঠিয়া
গেল। বঙ্কিমচন্দ্র যখন ‘বঙ্গদর্শনে’র সম্পাদক তখন তিনি রুসোর সাম্যভাবের পক্ষ,
উদারনৈতিকের অগ্রগণ্য এবং বেন্থাম ও মিলের হিতবাদের পক্ষপাতী। তিনি তাঁহার অমৃতময়ী
ভাষাতে সাম্যনীতি এরূপ করিয়া ব্যাখ্যা করিতেন যে, দেখিয়া যুবকদলের মন মুগ্ধ হইয়া
যাইত।’২০
শিবনাথ শাস্ত্রীর আলোচ্য গ্রন্থে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থার নানামাত্রিক ছবি
চিত্রিত হয়েছে। ঔপনিবেশিক শোষণ সেদিন কীভাবে ভারতবাসীকে গ্রাস করেছিল, শোষণ করেছিল
বাঙালি জাতিকে, শিবনাথের এই গ্রন্থপাঠে তার পরিচয় পাওয়া যায়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক
শক্তি নিজেদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সকল কাজ পরিচালনা করতো। তাদের কাছে দেশীয়
মানুষের স্বার্থ কখনই প্রাধান্য পায়নি। এদেশের মানুষের প্রতি তাদের উপেক্ষা ছিল
নির্মম ও ভয়াবহ। ১২৭৬ বঙ্গাব্দের মন্বন্তরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শিবনাথ শাস্ত্রী
ঔপনিবেশিক শক্তির নির্মমতার ছবি চিত্রিত করেছেন এভাবে – ‘…১৭৬৮ ও ১৭৬৯ এই দুই
বৎসর অনাবৃষ্টি হইয়া শস্যের সম্পূর্ণ ক্ষতি করিল। তাহার ফলস্বরূপ দেশে ভয়ানক
মন্বন্তর উপস্থিত হইল। এরূপ দুর্ভিক্ষ এদেশে আর হয় নাই। ১২৭৬ বঙ্গাব্দে ঘটিয়াছিল
বলিয়া এই দুর্ভিক্ষ ‘ছিয়াত্তুরে মন্বন্তর’ নামে চিরদিন বাঙ্গালীর মনে মুদ্রিত হইয়া
রহিয়াছে।…
১৭৭০ সালের জানুয়ারী হইতে আগস্ট পর্যন্ত এই নয় মাসের মধ্যে সমগ্র বঙ্গদেশে
প্রায় এক কোটি লোকের এবং কেবলমাত্র কলিকাতা নগরে ১৫ই জুলাই হইতে ১৫ই সেপ্টেম্বরের
মধ্যে ৭৬০০০ লোকের মৃত্যু হয়। এরূপ হৃদয়-বিদারক দৃশ্য কেহ কখনও দেখ নাই। পথে ঘাটে,
হাটে বাজারে, খানাখন্দে, দলে দলে মানুষ মরিয়া পড়িয়া থাকিত; ফেলিবার লোক পাওয়া যাইত
না। আশ্চর্য্যের বিষয় এই, নব-প্রতিষ্ঠিত ইংরাজ রাজগণ এই মহামারী নিবারণের বিশেষ
কোনো উপায় অবলম্বন করেন নাই।’২১
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ গ্রন্থের শব্দরাজিতে উনিশ শতকের 888sport apps
সুপ্তাবস্থায় বিরাজ করছে। বঙ্গদেশের এমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রসঙ্গ নেই, যা
এ-গ্রন্থে পাওয়া যাবে না। নানা বিষয়েই এখানে পাওয়া যায় কৌতূহলোদ্দীপক বর্ণনা।
যেমন, সেকালের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে শাস্ত্রী লিখেছেন – ‘পাঠশালে
পাঠনার রীতি এই ছিল যে, বালকেরা প্রথমে মাটিতে খড়ি দিয়া বর্ণ পরিচয় করিত তৎপরে
তালপত্রে স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, যুক্তবর্ণ, শটিকা, কড়াকিয়া, বুড়িকিয়া প্রভৃতি
লিখিত; তৎপর তালপত্র হইতে কদলীপত্রে উন্নীত হইত; তখন তেরিজ, জমাখরচ, শুভঙ্করী,
কাঠাকালী, বিঘাকালী প্রভৃতি শিখিত; সবর্বশেষে কাগজে উন্নীত হইয়া চিঠিপত্র লিখিতে
শিখিত। সে-সময়ে শিক্ষা-প্রণালীর উৎকর্ষের মধ্যে এইটুকু 888sport app download for android আছে যে, পাঠশালে
শিক্ষিত বালকগণ মানসাঙ্ক বিষয়ে আশ্চর্য্য পারদর্শিতা দেখাইত; মুখে মুখে কঠিন অঙ্ক
কষিয়া দিতে পারিত। চক্ষের নিমিষে বড় বড় হিসাব পরিষ্কার করিয়া ফেলিত। এক্ষণে যেমন
ভৃত্যের দশ দিনের বেতন দিতে হইলেও ইংরাজী-শিক্ষিত ব্যক্তিদিগের কাগজ ও পেন্সিল
চাই, ত্রৈরাশিকের অঙ্কপাত করিয়া কাগজ ভরিয়া ফেলিতে হয়, তখন সেরূপ ছিল না।’২২
রামতুন লাহিড়ী (১৮১৩-৯৮) ছিলেন উনিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলোকিত মানুষ।
শিক্ষাবিদ, সমাজ-সংস্কারক এবং 888sport promo code-স্বাধীনতার প্রবক্তা হিসেবে উনিশ শতকে তিনি
পালন করেছেন ঐতিহাসিক ভূমিকা। ডিরোজিওর প্রভাবে এসে তিনি গ্রহণ করেছিলেন ইহলৌকিক,
যুক্তিবাদী এবং মানবকল্যাণমুখী ভাবধারা। উনিশ শতকের কলকাতায় তাঁকে বলা হতো Arnold
of Bengal। উনিশ শতকের এমন
একজন আলোকিত মানুষকে শিবনাথ শাস্ত্রী
অসামান্য নিপুণতার সঙ্গে আলোচ্য গ্রন্থে উদ্ভাসিত করে তুলেছেন। অন্যের সংস্পর্শে
এসে রামতনু লাহিড়ী কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছেন সে-কথা যেমন এখানে আছে, তেমনি আছে
রামতনু লাহিড়ীর সংস্পর্শে আসা বিভিন্ন মানুষর চারিত্রিক রূপান্তরের কথা। দীনবন্ধু
মিত্রের সুরধুনী কাব্য (১৮৭১)
থেকে রামতনু লাহিড়ী-বিষয়ক 888sport app download apkংশ উদ্ধৃত করে শিবনাথ শাস্ত্রী লিখেছেন :
একদিন
তাঁর কাছে করিলে যাপন,
দশদিন
থাকে ভাল দুবির্বনীত মন।
বিদ্যা
বিতরণে তিনি সদা হরষিত
তাঁর
নাম রামতনু সকলে বিদিত।
‘একদিন
তাঁর কাছে করিলে যাপন,/ দশদিন থাকে ভাল দুবির্বনীত মন।’ এই বাক্যগুলি লাহিড়ী
মহাশয়ের কি অকৃত্রিম সাধুতারই পরিচয় দিতেছে! সাধুতার কত প্রকার লক্ষণ শুনিয়াছি
তন্মধ্যে একটী প্রধান এই যে, ‘তিনিই সাধু যাঁর সঙ্গে বসিলে হৃদয়ের অসাধু ভাবসকল
লজ্জা পায়, ও সাধু ভাবসকল জাগিয়া উঠে।’ প্রকৃত সাধুর নিকট বসিয়া উঠিয়া আসিবার সময়
অনুভব করিতে হয়, যেরূপ মানুষটি গিয়াছিলাম, তাহা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট মানুষ হইয়া
ফিরিতেছি।
দীনবন্ধু
সাক্ষ্য দিতেছেন যে, লাহিড়ী মহাশয়ের এরূপ সাধুতা ছিল যে, তাঁহার সহবাসে একদিন যাপন
করিয়া আসিলে দশদিন হৃদয়মনের উন্নত অবস্থা থাকিত। এটি 888sport app download for android করিয়া রাখিবার মত কথা।২৩
একথা বলার অপেক্ষা রাখে
না যে, রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন
বঙ্গসমাজ গ্রন্থে রামতনু লাহিড়ী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য স্থান পায়নি। হয়তো
লেখকের তা উদ্দেশ্যও ছিল না। তবু, সীমিত পরিসরে হলেও, উনিশ শতকী 888sport appsের কথা
বলতে গিয়ে রামতনু লাহিড়ী যেভাবে এসেছেন, তাতেই তাঁর অনন্যতা প্রকাশিত হয়েছে।
শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে পুণ্যাত্মা রামতনুকে আলোচ্য
গ্রন্থে তুলে ধরেছেন।
শিবনাথ শাস্ত্রী ছিলেন মুক্তচিত্তের আলোকিত মানুষ। রামতনু লাহিড়ীর অনুসারী
হলেও তাঁর সবকিছুকে তিনি অন্ধের মতো মেনে নেননি। লর্ড মেকলের ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে
ভারতবাসী নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি ভুলে ইংরেজি ভাষা ও 888sport live footballের দিকে ঝুঁকে
পড়েছিল, শিবনাথ সে-প্রবণতার সমালোচনা করতে কুণ্ঠিত হননি। তিনি লিখেছেন –
‘…কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রসিককৃষ্ণ মল্লিক, রামগোপাল ঘোষ, তারাচাঁদ চক্রবর্তী,
শিবচন্দ্রদেব, প্যারীচাঁদ মিত্র, রামতনু লাহিড়ী প্রভৃতি হিন্দু কলেজ হইতে
নবোত্তীর্ণ যুবকদল সবর্বান্তঃকরণের সহিত মেকলের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তাঁহারা
যে কেবল ইংরাজী শিক্ষার পক্ষপাতী হইয়া সবর্বত্র ইংরাজী শিক্ষা প্রচলনের চেষ্টা
করিতে লাগিলেন তাহা নহে, তাঁহারাও মেকলের ধুয়া ধরিলেন। বলিতে লাগিলেন যে, – এক
সেলফ ইংরাজী গ্রন্থে যে জ্ঞানের কথা আছে, সমগ্র ভারতবর্ষ বা আরবদেশের 888sport live footballে
তাহা নাই। তদবধি ইঁহাদের দল হইতে কালিদাস সরিয়া পড়িলেন, সেক্সপিয়ার সে স্থানে
প্রতিষ্ঠিত হইলেন; মহাভারত, রামায়ণাদির নীতির উপদেশ অধঃকৃত হইয়া Edgeworth’s
Tales সেই স্থানে আসিল;
বাইবেলের সমক্ষে বেদ, বেদান্ত, গীতা প্রভৃতি দাঁড়াইতে পারিল না।’২৪
শিবনাথ শাস্ত্রীর রামতনু লাহিড়ী
ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ বাংলা 888sport live footballের জনপ্রিয় এক ইতিহাস গ্রন্থ। ইতিহাসের
নিষ্ঠার সঙ্গে এ-গ্রন্থে মিশেছে 888sport live football-সমালোচকের বিশ্লেষণ, মিশেছে সমাজ888sport apkীর
পর্যবেক্ষণ। বিষয়-গৌরবের পাশাপাশি এই গ্রন্থের ভাষা ও বর্ণনাধর্মিতাও এর
জনপ্রিয়তার উল্লেখযোগ্য উৎস। সাবলীল নিপুণ ও সুললিত ভাষায় শিবনাথ লিপিবদ্ধ করেছেন
রামতনু লাহিড়ীর জীবন এবং কল্লোলিত উনিশ শতকের ইতিহাস। গ্রন্থটি প্রকাশের পরপরই প্রবাসী এবং ভারতী পত্রিকায় যে-সমালোচনা প্রকাশিত হয়, সেখানে বিষয়ের পাশাপাশি
গ্রন্থের ভাষার প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব আরোপিত হয়। শতবর্ষ পুরনো দুটো সমালোচনার
অংশবিশেষ এখানে প্রণিধানযোগ্য :
ক. প্রবাসী
পন্ডিত
শিবনাথ শাস্ত্রী মহাশয়ের ভাষা এমন সরল এবং মনোহর এবং রামতনু লাহিড়ী মহাশয়ের
জীবনচরিত ও প্রাচীন বঙ্গসমাজের অবস্থা এমন সাবধানে ও সযত্নে চিত্রিত যে, কেবল
ইতিহাসের খাতিরেও এ-গ্রন্থ সর্বত্র পঠিত হইবে। এ-গ্রন্থ পাঠ করিলে বাঙ্গালার সকল
মহাপুরুষের জীবনচরিতের কথাই অবগত হইয়া প্রভূত আনন্দ লাভ করা যায়।২৫
খ. ভারতী
শাস্ত্রী
মহাশয় যে কালের ইতিহাস লিখিয়াছেন, তাহা যেন তাঁহার নখদর্পণে।… তিনি প্রাঞ্জল ও
কৌতূহলোদ্দীপক সুন্দর ভাষার আকর্ষণে আমাদিগকে মুগ্ধের ন্যায় টানিয়া লইয়া বিগত
অর্ধ-শতাব্দীর আবরণ উন্মোচন করিয়া দেখাইয়াছেন।২৬
সাবলীল ভাষার পাশাপাশি
অন্য একটি বৈশিষ্ট্যের কারণেও শিবনাথ শাস্ত্রীর গ্রন্থটি পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। লক্ষ
করলেই দেখা যাবে, গ্রন্থের নানা জায়গায় শিবনাথ পাঠককে সম্বোধন করে বিশেষ কোনো
প্রসঙ্গ বর্ণনা করতে আরম্ভ করেছেন। ‘পাঠকগণ দেখিতে পাইতেছেন’, ‘পাঠকগণ দেখিতেছেন’,
‘হে পাঠক’ – এই ধরনের সম্বোধন পাঠক ও লেখকের মধ্যে সহজ আত্মীয়তার সম্পর্ক নির্মাণ
করেছে। পাঠকের সঙ্গে লেখকের সম্পর্ক-সৃজনের এমন কৌশল ইতোপূর্বে আমরা বঙ্কিমচন্দ্র
চট্টোপাধ্যায় এবং মীর মশাররফ হোসেনের (১৮৪৭-১৯১২) রচনাতেও লক্ষ করেছি। গ্রন্থটির
আর একটি উল্লেখযোগ্য দিক, এখানে উনিশ শতকের বিশ্রুত অনেক চিন্তানায়কের প্রতিকৃতি সন্নিবেশিত হয়েছে, যা
গ্রন্থটির আকর্ষণ অনেকাংশে বৃদ্ধি করেছে। পাঠকের কাছে এ প্রকৃতিগুলোও নিঃসন্দেহে
ভিন্ন স্বাদ সঞ্চার করবে।
888sport sign up bonusনির্ভর বিপুলায়তন একটি গ্রন্থে তথ্যগত ভ্রান্তি বা ত্রুটির সম্ভাবনা
সবসময়ই থেকে যায়। রামতনু লাহিড়ী ও
তৎকালীন বঙ্গসমাজও এই ভ্রান্তি থেকে সর্বাংশে মুক্ত নয়। সাল-তারিখের কিছু
ভুল এখানে পরিলক্ষিত হয়েছে, গ্রন্থনামেও আছে ভুলের উপস্থিতি। ডিরোজিও হিন্দু কলেজে
শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ১৮২৬ সালে, এখানে বলা হয়েছে ১৮২৮ সালে। প্যারীচাঁদ মিত্রের
প্রকৃত 888sport alternative linkের নাম বলা হয়েছে অভেদা,
আধ্যাত্মিকতা – প্রকৃত নাম হবে অভেদী, আধ্যাত্মিকতা। এমনি আরো কিছু ভুল গ্রন্থটিতে লক্ষ করা গেছে।
চার
শিবনাথ শাস্ত্রীর রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ কেবল
একখানা জীবনীগ্রন্থ নয়, এটি একটি গবেষণাকর্ম। শিবনাথ শাস্ত্রীই বাংলার নবজাগরণের
প্রথম ইতিহাসকার হিসেবে আলোচ্য গ্রন্থে আত্মপ্রকাশ করেছেন। বাংলা ও বাঙালির
নবজাগরণের ইতিহাস রচনায় এ বই অপরিহার্য এক উপাদান, যাকে আমরা বলতে পারি আকর গ্রন্থ
বা Primary
Source। এ-গ্রন্থে
রামতনু লাহিড়ীর জীবন-ইতিহাস, উনিশ শতকের সামূহিক অবক্ষয় এবং রামমোহন-হেয়ার-ডিরোজিও
প্রভাবিত ভাব-আন্দোলন – এই ত্রিমাত্রিক বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। গ্রন্থটি পাঠ করার
সময় মনে হয় না যে একখানা জীবনীগ্রন্থ বা সমাজ-ইতিহাসের বই পাঠ করছি; বরং মনে
হয়, অন্তত আমার মনে হয়েছে, পাঠ করছি
অসামান্য এক 888sport alternative link। রামতনু লাহিড়ীর পঁচাশি বছরের জীবন-ইতিহাসের আধারে এ-বই
888sport appsের একটি বিশেষ সময়ের পতন-অভ্যুদয়ের বিশ্বস্ত বিবরণী, অসামান্য বর্ণনা।
ব্যক্তির জীবনের সঙ্গে দেশজীবনকে সমীকৃত করে লেখা এমন বই বাংলা 888sport live footballে এই-ই
প্রথম।
টীকা ও তথ্যনির্দেশ
১. মিলন
দত্ত (সম্পাদক), রামতনু লাহিড়ী ও
তৎকালীন বঙ্গসমাজ (কলকাতা : রত্নাবলী, ২০০৩), দ্র. ‘ভূমিকা’।
২. পূর্বোক্ত।
৩. শিবনাথ
শাস্ত্রী, রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন
বঙ্গসমাজ (888sport app : নবযুগ প্রকাশনী, ২০১১), দ্র. ‘ভূমিকা’।
৪. বরুণকুমার
চক্রবর্তী, 888sport live football অন্বেষা
(কলকাতা : অপর্ণা বকু ডিস্ট্রিবিউটার্স, ১৯৯৯), পৃ ৫৬।
৫. শিবনাথ
শাস্ত্রী, পূর্বোক্ত, দ্র. ‘ভূমিকা’।
৬. রামতনু
লাহিড়ীর পুত্র শরৎকুমার লাহিড়ীর অনুরোধে শিবনাথ শাস্ত্রী রচনা করেন রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।
শিবনাথ শাস্ত্রী গ্রন্থটি লেখা আরম্ভ করেন ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে, শেষ
করেন ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে। দীর্ঘ আট বছরের কঠিন সাধনায় রচিত হয়েছে বাংলা
888sport live footballের অনুপম এই গ্রন্থ। শিবনাথ শাস্ত্রী গ্রন্থটির ভূমিকা লেখেন ১৯০৩
খ্রিষ্টাব্দের ১১ই ডিসেম্বর। সে-হিসাবে অনেকেই গ্রন্থটির প্রকাশসাল হিসেবে ১৯০৩
খ্রিষ্টাব্দ উল্লেখ করে থাকেন। কিন্তু এটি প্রকাশিত হয় ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫শে
জানুয়ারি। দ্রষ্টব্য : রামতনু লাহিড়ী ও
তৎকালীন বঙ্গসমাজ (সম্পাদক : বারিদবরণ ঘোষ, কলকাতা : নিউ এজ পাবলিশার্স
প্রা. লি., ২০০৩), ভূমিকাংশ দেখুন।
৭. শিবনাথ
শাস্ত্রী, পূর্বোক্ত, দ্র. ‘ভূমিকা’।
৮. পূর্বোক্ত,
পৃ ৫৬।
৯. পূর্বোক্ত,
পৃ ৫৬-৫৭।
১০. পূর্বোক্ত,
পৃ ৫৭-৫৮।
১১. পূর্বোক্ত,
পৃ ১৮৬।
১২. পূর্বোক্ত,
পৃ ৫৫-৫৬।
১৩. দেওয়ান
কার্ত্তিকেয়চন্দ্র রায়, ক্ষিতীশবংশাবলীচরিত।
উদ্ধৃত : শিবনাথ শাস্ত্রী, পূর্বোক্ত, পৃ ৪০।
১৪. শিবনাথ
শাস্ত্রী, পূর্বোক্ত, পৃ ১০১।
১৫. পূর্বোক্ত,
পৃ ৫০।
১৬. পূর্বোক্ত,
পৃ ১০৭-১০৮।
১৭. পূর্বোক্ত,
পৃ ১৩৮-১৩৯।
১৮. পূর্বোক্ত,
পৃ ২২৯-২৩০।
১৯. পূর্বোক্ত,
পৃ ২৭২-২৭৩।
২০. পূর্বোক্ত,
পৃ ২৭৭।
২১. পূর্বোক্ত,
পৃ ৯।
২২. পূর্বোক্ত,
পৃ ৩২।
২৩. পূর্বোক্ত,
পৃ ২৭৫।
২৪. পূর্বোক্ত,
পৃ ১৫৪।
২৫. রামানন্দ
চট্টোপাধ্যায়, ‘গ্রন্থ-সমালোচনা’, প্রবাসী,
কলকাতা, চৈত্র ১৩৪০।
২৬. ‘গ্রন্থ-সমালোচনা’, ভারতী, কলকাতা, জ্যৈষ্ঠ ১৩১১, পৃ ১৯১-১৯২।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.