বুলবন ওসমান
live chat 888sportের রোলটি খুব দ্রুত ধাবমান। এই তো সেদিন ১৯৭৬ সালে জয়নুলের প্রয়াণ। আজ তা ৩৮ বছরের প্রাচীন। কোথা দিয়ে কালের এই যাত্রা? ধারণা করার আগেই তা দিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছে। সময়কে ধরার কোনো কৌশল বা হাতিয়ার আবিষ্কৃত হয়নি। ভেবে অবাক লাগে এই তো সেই ১৯৬৬ সালে 888sport app চারুকলায় শিক্ষকতায় নিয়োগ পেলাম। হাতটি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন জয়নুল আবেদিন। সেই চাকরি নামের সোনার হরিণকে হাতে পাওয়া এক অভাবিত সাধন। আমার সেই কর্মজীবনও আজ সমাপ্ত, প্রায় আট বছর। চারুকলার রাস্তাটি আজ অচেনা হতে চলেছে। কিন্তু জয়নুল যে চিরভাস্বর। কত দিক দিয়ে যে ব্যক্ত আমি, 888sport live chatীকুল, জাতি তাঁর কাছে ঋণী, তা বলে শেষ করা যাবে না। অবিভক্ত ভারতে যিনি বিশাল ক্যানভাসে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন, ভারত বিভক্ত হলে সেই বৃহৎ কলেবর ত্যাগ করে মাতৃভূমির টানে নিজের সব উচ্চাশা জলাঞ্জলি দিয়ে ১৯৪৭ সালে হাজির হলেন পূর্ববাংলায়। যেখানে নাড়ির টান। সেইসব দুঃখী মানুষের মুখে ভাষা দিতে হবে। যারা চিরকাল পরপদতলে পিষ্ট। যাদের বেড়ে ওঠার কোনো সুযোগ ছিল না। তাদের মুখে ভাষা দেওয়ার জন্যে ব্যক্তিগত সবকিছু পরিত্যাগ করা কি কম সাহসের কথা? কয়জন পারে এমন সুযোগ হেলায় বিলিয়ে দিতে? না, সাম্প্রদায়িক কমিউনিটি নয়, পূর্ববাংলার সব বঞ্চিতের সঙ্গে নিজেকে জড়ানোর জন্যে কলকাতাত্যাগ। যে-কলকাতা প্রমাণপত্র না দিলে সারা উপমহাদেশে একজনের স্বীকৃতি মেলে না, সেই কলকাতা। সে-তুলনায় 888sport app একটি মফস্বল শহর। 888sport live chatকলার কোনো প্রতিষ্ঠানও নেই যে, নিজের ভূমিকা রাখবেন। এইরকম এক অনিশ্চয়তার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করেননি। বুড়িগঙ্গা আর ব্রহ্মপুত্রের হাতছানিকে উপেক্ষা করা জয়নুলের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এই সিদ্ধান্তের দরুন তাঁকে পশ্চিম পাকিস্তানে যেতে হয়, কিন্তু মাতৃভূমির 888sport live chatযাত্রার প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠা না করে ক্ষণকাল স্বস্তি পাননি। নিজের ব্যক্তিত্বের ভার দিয়ে নয়, মুসলিম লীগ সরকারকে তাদের মতো করে বোঝানোর জন্যে নিজেকে সাধারণ মানুষে পরিবর্তিত করতে বিলম্ব ঘটেনি। যুক্তি দেন : দেখুন, ইঞ্জিনিয়ারিং কাজে ড্রাফটসম্যান লাগবে, স্কুলে ছেলেদের ড্রইং টিচার লাগবে… এসব কাজ ছেলেরা শিখবে কী করে? কে শেখাবে তাদের? একটা 888sport live chat-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তো দরকার? এই সাধারণ তত্ত্ব দেওয়ার মতো ব্যক্তিত্ব ছিল জয়নুলের। আমার কথা শুনুন। দেশের মঙ্গল হবে। যুক্তিতে বিবাদ নেই। আছে সংবেদনশীলতা, সহমর্মিতা, ভালোবাসা যা দিয়ে দুনিয়া জয় করতে বেশি সময় লাগে না। জয়নুল ব্যক্তিত্বে এই সহজিয়া ধারাটা ছিল প্রবল। কিন্তু জগৎ অত সহজ নয়। তাই অনেক সময় আঘাত পেয়েছেন সবচেয়ে কাছের মানুষদের কাছ থেকে। যাঁরা তাঁরই সহযোগিতায় বড় হয়েছেন। গুরুকে তো মারাই যায়। সে-কষ্ট বুকে বয়ে চলেছেন দীর্ঘকাল। কিন্তু সব জায়গায় ভালোবাসার লোকও তো থাকে! তাই অভিমান ভুলতে হয়। সবার সঙ্গে আবার প্রাণ মেলান।
১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধের কাল। জয়নুল শত্রুদের এক নম্বর টার্গেট। হবেন না কেন? মিছিলে নেতৃত্ব। ছাত্রীদের বুকে লেখা স্বা… ধী… ন… তা… এই চারটি অক্ষর। অমার্জনীয় অপরাধ। ধ্বংস করো। তাঁদের নেতাকে। ২৫-এ মার্চের পর মাত্র দুই ঘণ্টা কারফিউ শিথিল। এক সাধারণ লোক দৌড়ে আসে : স্যার, আমি কে, কী আমার পরিচয় এসব জানতে চেয়ে কালক্ষেপণ করবেন না, আপনি এখনই ঘর থেকে সরে যান। আগন্তুক যে শুভানুধ্যায়ী এটা বুঝতে কালবিলম্ব হয় না জয়নুলের, সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে গেছেন। এক ঘণ্টা পর পাক সেনা বাড়ি ঘিরে ফেলে; কিন্তু দেরি হয়ে গেছে।
পরবর্তীকালে বাংলার আনাচে-কানাচে লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু চেহারাটা গড় বাঙালির চেয়ে বড়সড়, আর মানুষের মাপটা আরো বড়, কোথাও লুকোনোর জো নেই। দুদিন না যেতেই মানুষ চিনে ফেলে। ছদ্মবেশ নিলেন। মাথায় পরলেন টুপি। তারপরও নিস্তার নেই। জয়নুল নিজের কানে শুনছেন দুজন যুবক বলাবলি করছে, ওই লোকটাকে দেখছিস, ওই যে টুপি পরা, লোকটা 888sport live chatী জয়নুল আবেদিন।
জয়নুল আত্মগোপনের সময় বুকে করে আগলে রেখেছেন দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা।
কে বড়? 888sport live chat, না 888sport live chatী? এ-দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত বিশ্লেষণে 888sport live chatের জয়। 888sport live chatী একা নির্জন প্রান্তরে পড়ে থাকে, কেউ তার খোঁজ নেয় না। সোনার তরীতে তার কখনো ঠাঁই হয়নি। জয়নুল নিজেই তা প্রমাণ করে গেছেন। জানের চেয়ে 888sport live chatকর্মগুলো বড়। এটাই তো তাঁর পরিচয়। ওগুলো নেই তো তাঁর অস্তিত্ব কোথায়? জগৎ বড় বেশি ধনসম্পদনির্ভর। মানুষ সবসময় গৌণ।
২৫ মার্চের অপারেশনের পর তৎকালীন পশ্চিমের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক নেতা একজনের কাছে জানতে চায়, কিয়া, জয়নুল জিন্দা হ্যায়? জবাবটা ছিল সদর্থক। তবে জানা যায়নি ভদ্রলোক খুশি হয়েছিলেন, না ব্যথিত। হয়তো খুশি হননি। জয়নুল থাকলে যে পুবের চাষি-বাসির দেশটা জগৎ আসনে মাথা তুলে দাঁড়ানোর অবলম্বন পাবে।
ঠিক। হলোও তাই। স্বাধীনতার পরপরই জয়নুলের ডাক পড়ে গেল মেহনতি মানুষের দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নে। করা হলো সব কাজের ভিডিও তথ্য। তাঁর কাজ তো বাংলার নিসর্গের কাজ, মানুষের কাজ, খেটে-খাওয়া মানুষ, মেহনতি মানুষ। তাঁর ক্যানভাসে সম্রাটের মৃত্যু দৃশ্যের ছবি নেই। ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে দরিদ্র পিতা-পুত্র অপেক্ষা করছে। ফেরি আসবে। ফেরি তো গতি। ফেরি তো জীবনের নতুন দিগন্তে যাওয়ার বাহন। বাংলার স্বাধীনতা তো সেই ফেরি, যেসব মানুষকে বাঁচার হাটে পৌঁছে দেবে।
রাস্তায় গরুগাড়ির চাকা গর্তে কাদায় বসে গেছে। জোয়ান গাড়োয়ান দুই বাহু বাড়িয়ে তা সামাল দিচ্ছে – সঙ্গে অবলা গরুদ্বয়। প্রাণান্তকর চেষ্টা চলছে, তাদের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসছে। যুবক গাড়োয়ানের পেশি কিন্তু শিথিল হয়নি। বাংলা কেন, সভ্যতাকে তো ওই মেহনতি মানুষের পেশিই ঠেলে নিয়ে চলেছে। আমরা নগরবাসী তার ফল ভোগ করছি। নগরে বন্দরে ওরা তো সর্বত্রই। চাষির দুঃখ দেখে কবির চোখে জল আসে। জয়নুল দুঃখ পায় নিশ্চয়, কিন্তু সংগ্রামে ঠেলে দেয়। কাতর হয় না।
লোকজ রীতি-প্রথা ও উৎসবকে প্রাণের মতো ভালোবাসতেন। রাজধানী শহরে চারুকলায় করতেন ‘নবান্ন’। মুড়ি-মোয়া ও নাগরদোলার সরব উপস্থিতি জানাত ক্যাঁচ-ক্যাঁচ করে। ঢাকিদের ডেকে ঢোল বাজানোর ব্যবস্থা নিতেন। হতো যাত্রা, পালাগান।
উনিশশো পঞ্চাশের দশকের গোড়ার কথা। রকফেলার ফাউন্ডেশন থেকে স্কলারশিপে বেরিয়েছেন প্রতীচ্যের 888sport live chatকলা দর্শনে। ইউরোপ-আমেরিকা দর্শন করে ফিরলেন। কাজে একটা বদল এলো। বিষয় সেই আগের – বেদেনি, কাজের মেয়ে পাইন্যার মা – কিন্তু তাদের চেহারা লম্বাটে হয়ে গেছে। কে জানে, ইউরোপ গিয়ে তাঁর বাংলার বিশেষ করে ময়মনসিংহের মাটির পুতুলের কথা মনে পড়ে গেল কিনা? ওই আকার ইউরোপের, না বাংলার, এ-দ্বন্দ্বের এখনো বিচার হয়নি।
জয়নুলের জীবনে ব্রহ্মপুত্র এক বিরাট আসন নিয়ে বিরাজ করছে। নদীর নামের মধ্যে আছে একটা ধ্রুপদী ভাবের অনুষঙ্গ। আর যেহেতু এটা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, তাই নয় সর্বনেশে। ধীর গতি। মানুষের সঙ্গে সখ্য বড় বেশি হার্দিক। তবু জোয়ারের সময় সব নদীতে থাকে টান, যেমন থাকে ভাটার সময়। উজান বা ভাটির বিরুদ্ধে যেতে হলে টানতে হবে গুণ। পাড় ধরে জোয়ান মাঝিরা পায়ে পায়ে এগিয়ে নিয়ে যাবে নৌকো। সেই দুই বাহু ও দুপায়ের পেশিতে প্রবল টান। কিন্তু তাকে জয়নুল একতালা লয়ে ছন্দিত করেছেন। পেশিময় করেননি। 888sport live chatীর মনে কখন কী ভাব খেলা করে বলা মুশকিল।
আরো এক দশক আগের কথা। সারা ইউরোপ কেন, গোটা বিশ্বজুড়ে চলছে ধ্বংসলীলা – দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। যুদ্ধ হয় ইউরোপে, মানুষ মরে বাংলায়। এদিকে জাপানি সৈন্য এগিয়ে আসছে ভারতবর্ষের দিকে – ইম্ফল পর্যন্ত তারা হাজির। সঙ্গে নেতাজি সুভাষ বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজ। ব্রিটিশ ফৌজ পিছু হটছে। বাংলা থেকে প্রচুর চাল সরিয়ে ফেলা হলো। নিয়ে যাওয়া হলো ইউপিতে। পোড়া মাটি নীতি। শত্রুপক্ষ যেন খাদ্য না পায়। শুরু হয়ে গেল চালের দাম বৃদ্ধি ও আকাল। দলে দলে নিরন্ন মানুষ কলকাতা মহানগরে ভিড় করছে। কংকালের মিছিল চলেছে রাজপথে, অলিতে-গলিতে। দলে দলে লোক রাস্তায় ফুটপাতে মরে পড়ে আছে। মানুষকে লাশ ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে যেতে হয়। এমনই অবস্থা। মাগো, একটু ফ্যান দাও, ভাত আর চাল তখন কেউ চাচ্ছে না। আমার নিজের কানে শোনা। মামাবাড়ি ঝামটিয়া গ্রামে। বাগদি গরিব চাষিরা এসে নানির কাছে ভিক্ষা চাচ্ছে। – বড়দি একটু ফ্যান দাও গো… দুই দিন ধরে খাইনি। শহর-গ্রাম একই অবস্থা। ১৯৪৩ সালে আমার বয়স তখন তিন – জয়নুল এই সময়ের স্কেচধর্মী চিত্র করে চলেছেন। সে-ছবি শুধু রেখামাত্র। কাগজ, সাধারণ বাদামি রঙের র্যাপিং পেপার। কলকাতার কাগজে ছাপা হতে শুরু করে সেসব কাজের চিত্র। রাতারাতি বিশ্ববিবেকের কাছে পৌঁছে যায় সে-সংবাদ। ভয়াবহ মানববিপর্যয় ঘটছে সারা বাংলায়। জয়নুল বিখ্যাত হয়ে গেলেন। পিপলস লিবারেশন ওয়ার নামক কমিউনিস্ট পার্টির কাগজে বড় 888sport world cup rate বেরোয়। সঙ্গে জয়নুলের দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা। এ এক অদ্ভুত দিনলিপি। চিত্রভাষা বাস্তব, কিন্তু শৈলী যেন প্রাচ্যধর্মী। যেন চীনা 888sport live chatীর তুলি থেকে তা বেরোচ্ছে। এত অল্প রেখায় কত কথা বলে চলেছে। সারা স্পেসে দু-একটা ফিগার ছাড়া আর কিছু নেই। আছে কখনো দু-একটি চতুর কাক। মুমূর্ষু নর-888sport promo codeর ওপর কাকের বিচরণ। ঠোকর দেওয়ার আগে পর্যবেক্ষণ, এখন ঠোকর দেওয়ার ঠিক সময় এসেছে তো? আজ এতদিন পরও যখন দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা অবাক হয়ে দেখি, এত অল্প কয়েকটি রেখায় একটি যুগের মহাবিপর্যয়ের কাহিনি কী করে একজন বিধৃত করে? না, জয়নুল এসব চিন্তা করে করেননি। এ এসেছে তাঁর অন্তর্লোক থেকে আপনা-আপনি। চোখ আর হাত স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্রিয়ারত। ফর্ম ও কনটেন্ট বেরোচ্ছে একসঙ্গে। পূর্বচিন্তার কোনো সুযোগ নেই। আজো লোকে জয়নুলকে দুর্ভিক্ষের চিত্রকর হিসেবেই অভিহিত করে। তা খুব একটা অমূলক ব্যাপার নয়।
পরবর্তীকালে জয়নুল নজর দিয়েছেন বড় বড় সব সামাজিক বিপর্যয় ও সামাজিক চিরকালীন ব্যর্থ ইতিহাস-চিত্রণে। আঁকেন ‘নবান্ন’ নামে ৬৫ ফিট স্ক্রলচিত্র ১৯৬৯ সালে। প্যানেল করে করে গ্রামবাংলার জীবনালেখ্য ফুটিয়ে তোলেন। মাটি কর্ষণ, বীজ বপন, ঘরে ফসল তোলা, উৎসব, মেয়ের বিয়ে, কিন্তু অন্তিমযাত্রা ঘরবাড়ি ছেড়ে নগরের দিকে। বাংলার আবহমান ট্র্যাজেডি। সেই মোটা রেখা। অল্প রং। তবে রেখার সেই সাবলীলতা অনেকটা ধীর। কিছুটা হারিয়েছে সূক্ষ্মতা। এরপর আঁকেন ১৯৭০-এর প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের পরবর্তী জীবনের চিত্র। ২৯ ফিট স্ক্রলে মানুষ ও পশুর মৃতদেহ একাকার হয়ে বেলাভূমিতে পড়ে আছে। সবশেষে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে একটি পুরুষ মানুষের ফিগার। সব হারিয়ে বিমূঢ়। তবু মৃত্যুর কাছে জীবনের জয়গান গাওয়ার প্রতিনিধি। মানুষ ধ্বংস হয়, কিন্তু পরাজিত হয় না।
গত শতকে পঞ্চাশের দশকে ইউরোপে বিমূর্ত প্রকাশবাদিতার জয়জয়কার। জয়নুলকে খুব একটা টানেনি। পিছিয়ে থাকার গ্লানিবোধ নেই। বিষয় অনুযায়ী আকার জয়নুলে স্বতঃসিদ্ধ। কিছুটা কি দোলা খাননি? না, ভেবেছেন, সামান্য প্রয়াসও নিয়েছেন, কিন্তু অন্তরাত্মা সায় দেয়নি। চেষ্টাটা পার্সি কার্পেটের নকশার রূপ নিয়েছে – তাও মাত্র একটি তেলরং। আর কোনো নমুনা দেখতে পাইনি। জয়নুল ভারতীয় উপমহাদেশের – বিশেষ করে বাংলার। খানদানি বাংলা নয়, প্রলেতারিয়েত বাংলার। এমনকি মধ্যবিত্তেরও নন। যদিও শেকড় মধ্যবিত্তে। কী বলব এই 888sport live chatীকে? ডিক্লাস্ড? কাজের সূত্রে তাই। জীবনসূত্রে নয়।
লোকজীবনধারার প্রতি জয়নুলের যে কী দরদ, তা বলে বোঝানো যাবে না। ১৯৭০-এর একটি ঘটনা মনে পড়ে। সাক্ষী অল্প কয়েকজন। আমি, বন্ধুবর রফিকুন নবী আর রেডিওর প্রোগ্রাম পরিচালক শামসুল হুদা। নবান্ন প্রদর্শনীর পর রেডিওতে একটি প্রোগ্রাম হবে এ-প্রদর্শনীর ওপর। আমি উপস্থাপক। প্রোগ্রামে আলোচনা চলছে। রফিকুন নবীর আলোচনা শেষ। সব শেষে 888sport live chatাচার্য। আলোচনা চলতে চলতে হঠাৎ তিনি গ্রামের মানুষের জীবনের জয়গানের কথা বলতে বলতে আবেগতাড়িত হয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন এবং অবাক হতে হলো – কণ্ঠ তাঁর বাকহারা, চোখ দিয়ে ঝরছে অঝোরধারায় অশ্রু। আমরা সবাই নির্বাক। হতবাক। বিস্মিত। বেশ সময় লাগল আবেগ সম্বরণ করতে। এই ঘটনা নিয়ে আমি একটি নিবন্ধ রচনা করেছিলাম : ‘জয়নুলের কান্না’। একজন মানুষ এত ভালোবাসা কোথা থেকে পায়? এ এক নিগূঢ় রহস্য। জয়নুল চারুকলা থেকে অগ্রিম অবসর নিয়েছিলেন তাও এ-ধরনের এক ব্যাপার নিয়ে। প্রতিষ্ঠানের একটি গ্যালারি হবে 888sport live chatকর্ম প্রদর্শনীর জন্যে – বিশেষ করে শিক্ষকদের কাজের প্রদর্শনী। জয়নুল গ্যালারিতে পাটের তৈরি নকশা করা শিকে ঝুলিয়েছিলেন। সহকর্মীরা তা নিয়ে হাসাহাসি করে। জয়নুল টের পান। খুব একটা দেরি করেননি সিদ্ধান্ত নিতে। নিয়ে নেন অগ্রিম অবসর। কাউকে কোনো কারণ ব্যক্ত করেননি। কিন্তু অত বড় লোকের মনোভাব জানতে কি আর দেরি হয়? অনেক অনুরোধ-উপরোধ এসেছে নানাজনের কাছ থেকে, বিশেষ করে যারা তরুণ এবং জয়নুলভক্ত, তাদেরও তিনি নিরাশ করেন। অটল হিমাচল। অভিমান তখন এভারেস্টের চুড়োয়। এমনকি ওই রাস্তা দিয়ে নিজের গাড়িটিকেও কোনোদিন যেতে দেননি। একেবারে স্বাধীনতার পর তাঁর অভিমান পড়ে যায়। এই চত্বরে পুনরায় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।
ভারি শক্ত-সমর্থ চেহারা, হঠাৎ একটা স্ট্রোক। ডানদিকের গালটা ভেঙে গেল। গেলেন লন্ডন। ধরা পড়ল কর্কট রোগ। ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে। তাঁকে জানতে দেওয়া হয়নি। দেশে ফিরে চলছে চিকিৎসা। একদিন হঠাৎ তাঁর নজরে পড়ে স্ত্রী জাহানারা আবেদিন জানালার গরাদে মাথা রেখে কাঁদছেন। তিনি সচেতন মানুষ, বুঝতে পারলেন যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। তিনি যে তা জানতে পেরেছেন আর কাউকে না জানিয়ে নিজেই সবাইকে উৎসাহ দেন, ভালো হয়ে যাব। কিন্তু কয়েকটি কাজ সমাপনের জন্যে ভীষণ ব্যগ্র হয়ে উঠলেন। এক, 888sport live chatকলা একাডেমি বিধান করা, দুই, সোনারগাঁ লোক888sport live chat ফাউন্ডেশন নির্মাণ, তিন. ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্রের পারে নিজের কাজ নিয়ে একটি গ্যালারি।
তাঁর জীবদ্দশায় তিনটি কাজই সমাজ কর্তৃক গৃহীত হয়। তখন বাংলার শাসনভার ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে। জ্যেষ্ঠ এই 888sport live chatীকে আন্তরিক 888sport apk download apk latest version করতেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর পক্ষে অদেয় কিছু ছিল না। সব প্রতিষ্ঠান আজ পূর্ণরূপ লাভ করেছে।
জীবনরসিক ছিলেন জয়নুল। রসিকতার সুযোগ পেলেই কাজে লাগাতেন।
দেখতে হাবাগোবা। চেহারায় সাধারণ বাঙালি, কিছুটা গারো ছাপ, কিন্তু উইট ষোলো আনা। পাকিস্তানি জনগোষ্ঠীর চেহারার ছবি নিয়ে একটা অ্যালবাম হবে। ওখানকার 888sport live chatীরা পশ্চিমের জনজীবনের ছবি আঁকবে। এক রাজনৈতিক বন্ধু নেতা জয়নুলকে বললেন যে, উনি তো ট্যাগোরের 888sport app download apkর ছবি করবেন। তিনি জবাবে বললেন, দেখুন, আমরা বাঙালিরা কালো-শীর্ণ চেহারা, তা আমার পক্ষে আঁকা সহজ, কিন্তু আপনাদের চেহারা আঁকা আমার পক্ষে কষ্টের – কারণ আপনারা তো নওয়াবজাদা… গ্রিকরা আপনাদের খাড়া নাক দিয়ে গেছে, আমার অমন নাক আঁকা বেশ কষ্টের হবে…। তাই বাঙালিদের চেহারা ছাড়া অন্য কিছু আঁকা… রাজধানীতে বসে জয়নুল এভাবে স্বাজাত্য রক্ষা করতেন। কথায় কথায় তাল মেলানোর পাত্র ছিলেন না।
এমনকি জীবনের শেষ কয়েকদিন আগে, পিজি হাসপাতালে অনেকে দেখতে গেছেন। তিনি সিরামিক888sport live chatী মীর মোস্তফা আলীর দিকে আঙুল তুলে মুখে হাসি নিয়ে বললেন, বালিশ বালিশ… লোকে ভাবল তিনি বালিশ চাচ্ছেন। অনেকে বালিশ নিয়ে এগিয়ে এলো। তিনি তা ফিরিয়ে দিয়ে আবার মোস্ত
অঙ্গুলি নির্দেশ করলেন… আসলে মোস্তফা সাহেব ডোরা টানা কাপড়ের পাঞ্জাবি পরে এসেছেন, যা আমাদের দেশে তোশক আর বালিশের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়… মোস্তফা সাহেব ওই কাপড়ে বালিশ হয়ে গেছেন। অবশ্যই কোলবালিশ।
জয়নুল নিজে বিমূর্ত কাজ না করলে কী হবে বিমূর্ত অঙ্কনকারীদের কখনো ঊনচোখে দেখেননি। এক্ষেত্রে তাঁর ঔদার্য আকাশের মতো। 888sport live chatকর্ম শুধু চারু888sport live chatে নিবদ্ধ থাকবে, তা মানতেন না। জীবন্ত 888sport live chatী ছিলেন জয়নুল। দেশের মানবিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয় দেখে বলতেন, ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’। ১৯৪৩-এ ছিল খাদ্যের অভাব, বর্তমান জগৎ রুচিকে জলাঞ্জলি দিয়েছে। মানবিক মূল্যবোধ মানুষের সব আবিষ্কার ও উদ্ভাবনকে ছাড়িয়ে যায়। ওটা না থাকলে সবকিছু অর্থহীন। জয়নুল বলতেন, মানুষের চেহারা নয়, তার অন্তরের সৌন্দর্যই আসল সৌন্দর্য।
১৯৪৩-এরও পূর্ববর্তী দশকে জয়নুল কলকাতা আর্ট স্কুলে পঞ্চম বর্ষের ছাত্র থাকা অবস্থায় শিক্ষকের পদ লাভ করেন। এ-ব্যাপারে বেশি কিছু বলা সাজে না।
জয়নুলের ছিল পশ্চিমা চোখ আর মনটা পুবের। দুটিতে বড় একাকার হয়ে তাঁর মধ্যে বিরাজ করেছে। শতবর্ষে আমরা জয়নুলকে যেভাবে দেখছি আরো একশ বছর পরে মনে হয় তখনকার বাঙালি তাঁকে এর চেয়ে বড় করে দেখবে।
শৈশবে জয়নুল ছিলেন কম কথা বলা ধীরস্থির বালক। বাড়ি ও পাড়ার লোকে বলত, ঠান্ডার বাপ। যদিও ডাকনাম ছিল টুনু।
বাবা পুলিশ অফিসার তমিজউদ্দীন ছেলের ছবি আঁকার ঝোঁককে প্রশ্রয় দিতেন। ছেলেদের মধ্যে জয়নুল বড়। চার ভাই। ওপরে আছে এক বোন। মা জয়নাবুন্নেসা খুব ফর্সা চেহারার। মাকে জয়নুল অসম্ভব ভালোবাসতেন। একটা ঘটনা এরকম : স্টেটসম্যান কাগজে একবার একটা চিত্র প্রতিযোগিতা আহবান করা হয় – এক খেলোয়াড় গলফবলে আঘাত করার জন্য ব্যাট উঁচিয়েছে – এটিকে এঁকে পাঠাতে হবে। জয়নুল ছবি এঁকে বিছানার তলায় রেখে দিয়েছে। পাঠাতে পোস্ট খরচ ছ-আনা। কোথা পাবে এই পয়সা? ঘটনাচক্রে বাবার হাতে পড়ে ছবিটি। বাবার ভালো লেগে যায়। তিনি ছ-আনা খরচ করে পাঠিয়ে দেন। কিছুদিন পর জয়নুলের 888sport app download bd এসে যায়। প্রথম হয়েছে জয়নুল। ময়মনসিংহ শহরে এটা বেশ চাঞ্চল্য এনে দেয়।
উৎসাহ জাগে – জয়নুল পড়ার বইয়ের 888sport app download apkর পাশে ছবি আঁকে। এভাবে চলে তার গোপন 888sport live chatচর্চা। এটা নজরে পড়ে মৃত্যুঞ্জয় স্কুলের প্রধান শিক্ষকের। তিনি জয়নুলের বাবাকে ডেকে বলেন, জয়নুলকে কলকাতা আর্ট স্কুলে পাঠাতে। বাবার ইচ্ছা আছে, কিন্তু সংগতি কোথায়? বড় সংসার। কলকাতায় একজনকে ভাড়া বাসায় রেখে পড়ানো!
এর মধ্যে ঘটে আরো এক ঘটনা। হঠাৎ জয়নুল উধাও। কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। তিন-চারদিন হয়ে গেছে। মা প্রায় শয্যাশায়ী, বাবা চারদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন – জয়নুল তখন নবম শ্রেণির ছাত্র – এদিকে শীত পড়ে গেছে – বাড়িতে দুর্ভাবনার শেষ নেই – পঞ্চম দিনে সকালবেলা দেখা গেল লাল আলোয়ান গায়ে ঢ্যাঙামতো একজন স্টেশনের ওদিক থেকে এগিয়ে আসছে – আর সেই কিশোর হলো জয়নুল। সবার প্রশ্ন একটাই, কোথায় গিয়েছিলে? উত্তর : কলকাতা আর্ট স্কুল দেখতে।
জয়নুলের আর্ট স্কুলের পড়ার খরচের প্রাথমিক দায়িত্ব নেন মা। গলার হারটি বিক্রি করে ছেলেকে পাঠান আর্ট স্কুলে। সেই হারের সম্মান রেখেছিলেন জয়নুল। ওই ঘটনা বলতে বললে মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতায় জয়নুলের চোখে সবসময় জল দেখা দিত।
কলকাতা থেকেই জয়নুল ছিলেন আমার বাবার (888sport live footballিক শওকত ওসমান) অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু। 888sport appয় এসে তাঁদের বন্ধুত্ব আরো নিবিড় হয়েছিল। তিনি থাকতেন শান্তিনগরে – মাঝে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, এ-পাশে আমরা। কখনো কখনো তিনি হাঁটতে হাঁটতে বাসায় এসে হাজির হতেন। আর চাকরি পাওয়ার পর আমার তো প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় ছিল তাঁর ওখানে যাওয়া। আজ উৎসবের মধ্যেও একটা বেদনা বোধ করছি। শুধু ভাবি, দুই বন্ধু যদি এখনো বেঁচে থাকতেন!
ফা সাহেবের দিকে

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.