গলার স্বর গাঢ়। শুনেই বোঝা যায় কোথাও একটা প্রত্যয় আছে, মুখের অভিব্যক্তিতেও তা প্রকাশ পেল। বললেন তিনি, নিজে কোনো ক্লাস নেবেন না। তবে যাঁরা ক্লাস নেবেন তাঁরা, তাঁর চেয়ে অনেক বেশি গুণী। নাম শুনেই মন ভরে গেল। সৈয়দ আলী আহসান, মুস্তাফা মনোয়ার, আমিনুল ইসলাম আর সাঈদ আহমেদ, এই বলে তিনি বেরিয়ে গেলেন। তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাও তাঁকে অনুসরণ করলেন। তবে যাওয়ার আগে দুজনই পরিচয় দিয়ে গেলেন। স্মিত হেসে বিনয় নম্র স্বরে বললেন, আমিও ছবি আঁকি, আমার নাম সৈয়দ জাহাঙ্গীর আর আমার পাশের জন, তিনিও 888sport live chatী, আর্ট কলেজ থেকে পাশ করেছেন। তিনি আপনাদের এ-কোর্সের দায়িত্বে থাকবেন। এই বলে তিনি দম নিলেন। পাশের লোকটি বলল, আমি সুবীর চৌধুরী। আপনাদের কোনো সমস্যা হলে বলবেন। এই বলে দুজনই বেরিয়ে গেলেন।
সালটা ঠিক মনে নেই। ঋতুটা মনে আছে। ১৯৭৮-এর শেষ অথবা ’৭৯-এর শুরু। তখন সংক্ষিপ্ত বিকেলে ঠান্ডা নামতে শুরু করেছিল। 888sport live chatকলা একাডেমির গোল দালানটার নিচের তলার একটা ঘরে আমরা পড়তে গিয়েছিলাম ‘আর্ট হিস্ট্রি অ্যান্ড অ্যাপ্রিসিয়েশন’। তারপর তাঁকে দৃঢ় পদক্ষেপে হেঁটে যেতে দেখেছি অনেক আয়োজনে, শুনেছি তাঁর স্পষ্ট কথা গাঢ় উচ্চারণে। কর্মনিষ্ঠ মানুষটা তাঁর মাহাত্ম্য ফোটালেন ১৯৮১-তে প্রথম এশীয় দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীর আয়োজন করে। নামের সঙ্গে মিলে যায় এমন একটা নবাবি ভাব, আগে সৈয়দ, পরে জাহাঙ্গীর। তবে ঘনিষ্ঠতায় মুখোমুখি হলে সেই নবাবি মেজাজ উবে যায়। কথা বলেন স্মিত হেসে – বন্ধুত্বের বাৎসল্যে। নিজের 888sport live chat নিয়ে খুব কিছু বলতেন না; বরং বলতে পছন্দ করতেন, তিনি করাচি থাকতে আবেদিন স্যার তাঁর বাসায় আসতেন, তাঁর বাসায় থাকতেন, আরো অনেক দেশের ও দেশের বাইরের 888sport live chatীদের সঙ্গে মেলামেশার অভিজ্ঞতার কথা বলে শিহরিত হতেন। আর তাঁর বলার প্রিয় বিষয় ছিল সহোদর সিকান্দার আবু জাফরের সংগ্রামী ও 888sport live footballসাধক জীবন।
জীবনকে তিনি মলিন হতে দেননি কখনো। দীর্ঘ চলিস্নশ বছর তাঁর সঙ্গে কত ঘাটে দেখা। সভা, সেমিনার আর প্রদর্শনীশেষে গ্যালারিতে বসে সন্ধ্যাকে রাতের কালো চাদরে ঢেকে জলসিঁড়িতে বসে কত কত রাত কেটে গেল। 888sport live chatের কথনে আর সরস বাক্যালাপে। একান্ত নিভৃতে তাঁর বাসায় গিয়েছি তাঁর ও আমার প্রযোজনে। সামনে প্রদর্শনী লিখতে হবে ক্যাটালগে। অথবা সামনের বছর প্রদর্শনী; আগাম কাজগুলো দেখাতে চান; কোনগুলো প্রদর্শিত হলে ভালো হয়, অভিমত নিতে চান। অভিমত দিলে মেনে নেন, চুপ করে থাকলে বুঝি মেনে নেননি। তাঁর চারটি প্রদর্শনীর ক্যাটালগে লিখেছি, তাঁকে নিয়ে পত্রিকাতেও আলোচনা-সমালোচনা করেছি অনেকবার। লেখা পড়ে পছন্দ হয়েছে, অপছন্দও হয়েছে হয়তো। কিন্তু কোনো রাগ বা অভিযোগ শোনাননি। শুধু বলতেন, আমার ওই ছবিগুলো নিয়ে, ওই ছবির ওই বিষয় নিয়ে তো কিছু লিখলে না। ব্যস, এখানেই শেষ। আবার ছবি আঁকা, ছবি নিয়ে আলাপচারিতা, আড্ডা, জীবনের মেধাবী প্রহর কেটে যায়। কোনো অসূয়া বাসা বাঁধেনি তাঁর মনে। অনেকের কাজের প্রশংসা করতেন। তবে 888sport live chatের ও 888sport live chatীর অবমাননায় সৈয়দ জাহাঙ্গীর সম্রাটী-হুংকার দিতে ভয় পেতেন না। এই তো বছরকয়েক আগের কথা। এক সংস্থা এশীয় দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীর আয়োজন মস্নান করার জন্য প্রদর্শনী করে 888sport live chatকলা একাডেমিতে। এ-সংস্থার প্রদর্শনীর মান নিঃসন্দেহে ভালো ছিল। প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিনে যে-সেমিনারের আয়োজন করা হলো তখন সে-সংস্থার উদ্যোক্তারা ঘোষণা দিলেন, এটাই 888sport appsে 888sport live chat নিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক সেমিনার। আমার পাশে বসে থাকা জাহাঙ্গীরভাই ক্ষেপে গেলেন। হাত উঁচিয়ে সেমিনার সভাপতির অনুমতি নিলেন। মঞ্চের দিকে যেতে যেতে বললেন, এরপর খালেদ, তুমিও বলবে। মঞ্চে উঠে যথাযথ সম্ভাষণশেষে স্পষ্ট উচ্চারণে গম্ভীর কণ্ঠে তিনি জানালেন, ‘এশীয় দ্বিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনী চলাকালে বহুবার এদেশে আন্তর্জাতিক মানের সেমিনার হয়েছে এবং সেইসব সেমিনারে পঠিত 888sport liveও 888sport live chatকলা একাডেমির সংগ্রহে রয়েছে।’ এ-কথা বলে মঞ্চ স্তব্ধ করে দিয়ে তালিতে মুখরিত দর্শকসারিতে ফিরে এলেন সত্যনিষ্ঠ 888sport live chatী সৈয়দ জাহাঙ্গীর। বছর দু-তিন আগে আত্মজীবনী লিখলেন। মোড়ক উন্মোচন হলো একটা হোটেলে। 888sport live chatীর বন্ধুরা এসেছেন। তাই তাঁদের সময় দিতে হচ্ছে। একসময় আমার পাশে বসলেন এবং আঙুল উঁচিয়ে কাকে যেন ইশারা করলেন। একজন একটা রঙিন কাগজ-মোড়ানো বই দিয়ে গেলেন। আমার পিঠে একটা চাপড় দিয়ে বললেন, ‘বইটা তোমাকে পড়তে হবে।’ এই বলে উঠে গেলেন। দিনকয়েক পরে ফোন, ‘পড়েছো বইটা?’ ‘এখনো শেষ হয়নি।’
ডাহা মিথ্যা বললাম। বইটা তো সেই রাতে ফিরে এসেই আমার অগোছালো বইয়ের ভেতর গুঁজে দিয়েছি। আমি লেখক নই, তবু লেখার তাড়া আসে। সম্পাদকের টেলিফোনের ভয়ে আমি গরমের দিনেও কাঁথা দিয়ে মাথা ঢেকে ঘুমিয়ে থাকি। কিন্তু জাহাঙ্গীরভাই তো লেখার জন্য এমন তাড়া দেন না। আর বইটা নিয়ে লিখতে হবে না, এ-কথা সেদিনই বলে দিয়েছিলেন। এবার তো তাহলে বইটা পড়তে হয়। পড়তে পড়তে সত্তরের দশকের শেষ বছরের দিকে চলে এলাম। দেখি নিজের নাম। কে না পড়তে চায় নিজের কথা। মনুষ্য প্রকৃতি বলে কথা। জাহাঙ্গীরভাই দ্বিধামুক্ত কলমে লিখেছেন যে, তিনিই প্রথম 888sport live chatকলা একাডেমীতে ‘আর্ট হিস্ট্রি ও অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স’ চালু করেন এবং গুণী ও যোগ্য শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নেওয়ার আয়োজন করেছিলেন এবং তার ফল আমরা পেয়েছি … এই বলে আমার সম্বন্ধে লিখলেন। এই কোর্স সম্পন্ন করে আমার বন্ধু আনাও (ইসলাম) এদেশের বিশিষ্ট 888sport live chatলেখক হিসেবে আজ সুপরিচিত।
কয়েক বছর ধরে তাড়া দিচ্ছিলেন তিনি মাসে-দুমাসে একবার করে। নিজের 888sport live chatকর্ম নিয়ে একটা দীর্ঘ-জীবনের দীর্ঘ-888sport live chatসাধনার সাক্ষীস্বরূপ একটা বড় আকারের বই করতে চান 888sport live chatী। আসবো, নেক্সট উইকে না, সামনের মাসের প্রথমে বসি …। ওপার থেকে উত্তর, ‘ওকে, এবার কিন্তু মিস করো না। তুমিই তো আমাকে বই বের করার কথা বলেছিলে।’ ‘না, জাহাঙ্গীরভাই, এবার হবে।’ লজ্জিত সুর কেটে ফোন বন্ধ করলাম।
ভাবছিলাম, চারুকলার ৭০ বছর উৎসবে দায়িত্ব আছে। সেটা থাক। জাতীয় সংসদ নির্বাচনও শেষ হোক, তারপর যাবো 888sport live chatীর বাসায়।
২৯ ডিসেম্বর। ঢোল বাজছে। নাচছে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। গান, সম্মাননা, 888sport app download bd প্রদান, আনুষ্ঠানিকতায় অধীর নবীন-প্রবীণ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। কিন্তু সকাল থেকে কুয়াশা কাটছে না। ঢোলের বাদ্যি আর কুয়াশা ভেদ করে শিশির (ভট্টাচার্য্য) আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি গ্যালারির পেছনে কাঠগোলাপ গাছের আড়ালে। শিশিরের দু-আঙুলের ফাঁকে সিগারেট পুড়ছে। ঢোলের শব্দের কারণে আমার কানে মুখ ঘনিষ্ঠ করল ও, ‘জাহাঙ্গীরভাই নেই।’
আনন্দ-অনুষ্ঠানে বেদনামথিত হয়ে কাঠগোলাপের ডালে হেলান দিলাম। ইতোমধ্যে দুঃসংবাদ ফিসফিসিয়ে অনেকের কাছে পৌঁছে গেছে। আমরা কজন শোকসন্তপ্ত বলয় করে অদূরে দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। আরো পরে শোনা গেল লাশ আসবে এখানে বিকেল ৩টায়।
সৈয়দ জাহাঙ্গীর নামটা একটা সত্যিকার তরুণ হয়ে আমার কল্পনার মঞ্চে আবির্ভূত হলো। সেই যে-তরুণ খুলনা থেকে চলিস্নশের দশকের শেষে 888sport appয় এসে এই চারুকলা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হয়েছিলেন তাঁরই মৃত্যুসংবাদ শুনলাম তাঁরই প্রতিষ্ঠানের ৭০ বছরপূর্তির
আনন্দ-অনুষ্ঠানে। জীবনের এ কী পরিহাস। সবাই যখন দারুণ উল্লাসে ফেটে পড়ছে, ছড়াচ্ছে বিচিত্র রং ক্যানভাসে, তখন সাদা কাফনে ঢেকে গেল পঞ্চাশের প্রজন্মের অন্যতম প্রতিভাবান কর্মিষ্ঠ এক 888sport live chatী।
আর তো হলো না দেখা। জাহাঙ্গীরভাইয়ের মৃত্যু আমাকে যেন অপরাধী করে দিয়ে গেল। বারবার তাঁর ইমেজ চলচ্ছবির মতো উঠে এলো মনপটে। দীর্ঘদেহী, সুঠাম শরীর, গম্ভীর কণ্ঠস্বর, সবসময় পরিপাটি। পাটভাঙা প্যান্ট-শার্ট, আয়নার মতো চকচকে জুতা, বয়সের কারণে চুল কমে এলেও ব্যাকব্রাশ করা, মুখাবয়ব সুচিক্কণ প্রসাধিত। রং ভালোবাসতেন বলে চেহারা আলো করে রাখতেন যেন। মলিন ও বিষণ্ণ সৈয়দ জাহাঙ্গীরের কোনো ইমেজ মনে পড়ে না।
এক শীত গিয়ে আরেক শীত আর পোহাতে পারল না জাহাঙ্গীরভাইয়ের জীবন। সতীর্থরা তাঁর আজ অনেকেই অসীমে লীন হয়ে গেছেন। হিসাব করে দেখি আমার চেয়ে তিনি সাতাশ বছরের বড়। আমার জন্মের আগেই তিনি পঞ্চাশের দশকে 888sport live chatী খ্যাতি লাভ করে ফেলেছেন। তবু তাঁকে আমি ডেকেছি ভাই বলে, বড়ভাইয়ের অতল স্নেহে সম্পর্ক হয়েছে সচ্ছল। সেই স্নেহে ছিল 888sport live chatের আলো। তাই তাতে ছিল/ আছে সহস্র অদৃশ্য বন্ধন। আমার মতো আরো অনেকে, বিশেষ করে যারা 888sport live chat নিয়ে লিখি, তাঁরা সৈয়দ জাহাঙ্গীরের কাছে ঋণী। তিনি 888sport live chatকলা একাডেমিতে নতুন নতুন জানালা খুলে দিয়েছিলেন বলেই তো সেখানে আর্ট বিষয়ে পড়ে আমরা লিখি, এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী দেখে প্রথম ভিন্ন দেশের 888sport live chatের রিপ্রোডাকশন নয়, অরিজিনাল দেখার সুযোগ পাই। 888sport live chat-সমালোচক হিসেবে তাঁর কীর্তির কথা লেখার জন্য আমি আবশ্যই দায়বদ্ধ।
গত শীতে সৈয়দ জাহাঙ্গীরের সবশেষ প্রদর্শনী হয় অবিমত্মা গ্যালারিতে। বড় আকারের ক্যাটালগ ছাপা হয়। তাতে আমি তাঁর সাম্প্রতিক কাজের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে ভূমিকা লিখি। প্রদর্শনী চলাকালে একসঙ্গে গিয়েছি এবং ফিরে এসেছি। তার মাসকয়েক আগে মৌলবাদীদের রক্তপিপাসার শিকার কিশোরী অবিমত্মাকে নিয়ে যে-প্রদর্শনী হয় তাতে জাহাঙ্গীরভাই ছবি এঁকেছেন এবং লিখেছেন। তখনো একই গাড়িতে বসে 888sport live chatালাপ করতে করতে গ্যালারিতে গিয়েছি, বাসায় ফিরেছি। তাঁর ছবির মতোই তাঁর মধ্যে কোনো কালো ছায়া দেখতে পাইনি। তবু অতর্কিতে মৃত্যু তাঁর স্বভাববৈশিষ্ট্যে কেড়ে নিল সৈয়দ জাহাঙ্গীরের নশ্বর দেহ, কিন্তু 888sport live chat যে অবিনশ্বর, তাতে মৃত্যুর প্রবেশাধিকার নেই; তাই 888sport live chatী জাহাঙ্গীর অমরত্বের জয়পতাকা উঁচিয়ে রাখলেন অন্তহীন আগামীর দিকে।
গত শতকের পঞ্চাশের দশকে যে তরুণ তুর্কিদের হাতে এদেশের 888sport live chatের বড় ধরনের পালাবদল ঘটে সেই প্রজন্মেরই এক প্রধান 888sport live chatী সৈয়দ জাহাঙ্গীর। জীবনের তরুণ দিনে নদী-নিসর্গের আলো-অন্ধকার নিরীক্ষণ করে আর মানুষের দেহের অন্ধি-সন্ধির জ্ঞান আহরণ করে যাঁরা তালিম নিয়েছিলেন গুরু888sport live chatী জয়নুল, কামরুল, সফিউদ্দীন, আনওয়ারুল প্রমুখের কাছে তাঁদেরই এক অগ্রগামী 888sport live chatার্থী তিনি। এদেশের 888sport live chatীজন্মে বিশেষ আশীর্বাদ আছে প্রকৃতির। এমন সবুজ, এমন রঙিন, এত নদীর জল-সচলতা এত ব্যাপ্ত সমতলে এত বড় আকাশ আর কোথায় মেলে। এই প্রকৃতির পরিধির মধ্যে দাঁড়িয়ে কে না ছবি আঁকে, কার কণ্ঠেই না সুর ওঠে, কার হৃদয়ই না শব্দ বুনে বুনে 888sport app download apk বানায়। বাংলার প্রকৃতির, মানুষের মিতালির, প্রাণীপতঙ্গের জীবনের সাম্যবাদে যে অপার সৃজন-প্রণোদনা তা-ই আরো অনেকের মতো সৈয়দ জাহাঙ্গীরকে 888sport live chatী জন্মলাভের পথ করে দিয়েছে সুগম। এ-888sport live chatীর জীবনে প্রকৃতিপাঠে বিশেষ মুগ্ধতা শৈশবেই যোজিত হয়ে যায়। কেননা তাঁর জন্ম দক্ষিণে – সাগরলগ্ন খুলনায়। নদীরা সেখানে উজান-ভাটিতে আনন্দে হাস্যোজ্জল, বেদনায়ও কল্লোলিত। যেন জল জীবনের স্বরসাধনা শেখায় এ-দেশে।
কী অপূর্বই না ছিল তাঁর প্রথম জীবনে আঁকা ভূদৃশ্য। একদিকে জলের টলটলে স্বভাব আর অন্যদিকে ললিত কন্ট্যুর রেখায় বাঁধা জলের সুরেলা আবহ। সমতলীয় ল্যান্ডস্কেপ এঁকেছেন তুলিকে দূরদিগন্তে লীন করে দিয়ে। পাহাড়ি 888sport apps আঁকাতেও পরিমিতা দেখিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামে গিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে, কথা বলে, তার রূপ এঁকে।
পঞ্চাশের দশকের সতীর্থদের মতো তিনিও ধীরে প্রকৃতির চেনা অনুষঙ্গের ঠিকানা হারিয়ে ফেলেন। 888sport live chatের যে-মৌল বর্ণমালা রং, রেখা, রূপ, এসবের যোজন-বিয়োজনে বিমূর্ত 888sport live chatের রহস্যময় দেশে যাত্রা করেন জাহাঙ্গীর। তাঁর রূপ থেকে অরূপের অন্বেষণের
পথপরিক্রমা বিশ্লেষণ না করলে কেন তিনি স্বতন্ত্র, তাঁর প্রজন্মের অন্যদের চেয়ে আলাদা, তা শনাক্ত করা যাবে না। সৈয়দ জাহাঙ্গীর মূলত ছিলেন নিসর্গপ্রাণ 888sport live chatী। তিনি যখন ফুল্ল-প্রফুল্ল প্রকৃতি আঁকতেন তাতে অনুভূত হতো হৃদয়ের নিবেদনের সুর। যেন প্রকৃতিতে ফুলের অঞ্জলি দিচ্ছেন। আমি বলতে চাচ্ছি, কুসুমিত প্রকৃতির রং আর ঘ্রাণ যেন তাঁকে জানিয়ে দিয়েছে এই বিশ্বলোক এক অপরিমেয় রহস্যের উৎস। এই রং-রূপ চির রূপান্তরশীল। তাকে ঠিক নির্দিষ্ট ফর্মে ধরা যায় না। প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা থেকে সম্পূর্ণ সম্পর্ক ছেদ করে বিমূর্ত 888sport live chatে আত্মবিসর্জনের প্রতীতি জাহাঙ্গীরের পরিণত পর্বের ছবিতেও নেই। তাঁর ক্যানভাসে রং গড়িয়ে-ছড়িয়ে অবাধ নয়। তবে বিমূর্তনের পথে ধাবিত হতে চায় রং, আবার কলি-কুসুমের রূপ ও রঙিন সুবাস হয়ে তারা ফিরে আসে।
তাঁর প্রজন্মের 888sport live chatীদের মধ্যে রং নিয়ে যে রোমান্টিক মনের বোধির উৎসারণ ঘটেছে সেখানেও একজন কাইয়ুম চৌধুরী, একজন রশীদ চৌধুরী থেকে সৈয়দ জাহাঙ্গীরকে তাঁর নিজস্ব সৃজনমুদ্রায় চিহ্নিত করা যায়। তিনি একটা সময় পর্যন্ত মরমি রোমান্টিক ধ্যানে বসে 888sport live chatচর্চা করেছেন; এঁকেছেন রূপের রহস্যময় জ্যামিতি, নাম দিয়েছেন সেই 888sport live chatের ‘আত্মার উজ্জীবন!’ হৃৎপিণ্ড শনাক্ত করা যায়, কিন্তু হৃদয় বা আত্মা অদৃশ্য। ধ্যানের মধ্য দিয়ে তার মুদ্রারূপ চয়ন সম্ভব। জাহাঙ্গীরের 888sport live chatে এই মরমি রস আমৃত্যু বহমান ছিল।
তিনি গত বছরবিশেক ধরে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন নীল আর সোনালি হলুদ। নীল আকাশে হলুদ আলোর পূর্ণচাঁদ আর এই আবহেই হেঁটে যাচ্ছে শ্রমী মানুষের জীবন। এসব দৃশ্য বারবার এঁকেছেন। জীবনকে অনন্তের তৃষ্ণা নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। তুলি আসলে চারকোনা ক্যানভাস স্পর্শ করে না, তা অনন্তকে ছুঁয়ে দেখতে চায়। এই নশ্বরতার পরও দেখে যাবে রং আকাশের ওপারের আছে আরেক রঙিন আকাশ। ছবি আঁকতে আঁকতে সেই আকাশে হারিয়ে গেলেন স্পেসতৃষ্ণার্ত চিত্রকর সৈয়দ জাহাঙ্গীর।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.