ছোট ছোট লাফ। ছোট লাফে ছোট বাধাগুলো ঘোচানো। বাধা মানে ঝামেলা, ঝঞ্ঝাট। এই করো, সেই করো – এটা আনো, সেটা আনো বা এখানে যাও, সেখানে যাও। কিছুই করা হয় না। যাওয়া হয় না বা আনতেও ইচ্ছা করে না। ফলে জমে যায়। সেই ঝকমারিতে থাকার ফ্যাকড়া। ফেলে রাখা কাজে ফ্যাসাদ বাড়ে।
পুরনো খবরের কাগজ সত্মূপাকার। একটা জায়গা আছে যা ছাপিয়ে পড়ার টেবিল, ড্রেসিং টেবিলের নিচে, সিঁড়ির ধাপে ধাপে পুরনো কাগজ।
কিছুই না, লোক ধরে কাগজগুলো বিক্রি করতে হবে। রোববার আসে আর যায়, অর্ণবের সময় আর হয় না। বৈশালী বললেই বলে, ঠিক সামনের সপ্তাহে। এভাবেই চার সপ্তাহ পার হয়ে গেছে।
অ্যাডেনিয়ামের টব পালটাতে হবে। গোড়া মোটা হতে হতে যে-কোনোদিন টব ফাটিয়ে দেওয়ার অবস্থায়। টব কেনা, তার আগে সারমাটি তৈরি; তারপর গাছ বসানো। এত ঝামেলা সামলে ওঠা অর্ণবের ক্ষমতার বাইরে।
অথচ এই বাধাটা না টপকালে নয়।
সবচেয়ে বড় বাধা বইয়ের তাক আর পড়ার টেবিল। অগোছালো, এলোমেলো বই-খাতা-পেন। সময়ে-অসময়ে বৈশালী সুযোগ পেলেই এই নিয়ে অভিযোগ করবে – কী করেছ জায়গাটা। একটার ওপর আর একটা। বইগুলো তো বইয়ের তাকে রাখতে পারো। তারপরে ঝাঁঝ বাড়ে, ঠাসা বইয়ের তাকে চোখ রেখে বলে, আর একটা বইও কিনবে না। এত বই, পড়ো না তো সব –
ঝামেলা-ঝঞ্ঝাটের তালিকায় এক নম্বরে বাজার করা। অর্ণবের পছন্দে না-বাজারের দিন বেশি। সেখান থেকে হাঁ-বাজার যত কাছে আসে, এটা নেই ওটা নেই বা আলু মেরে-কেটে একদিন, মাছ তো হবেই না – অতএব নিরামিষ। বৈশালী হরিমটরের ভয় দেখালে অর্ণবকে বাজারের থলি হাতে বেরোতেই হয়।
তবু ছোট ছোট লাফে ঝামেলা মেটাতে ভালোবাসে অর্ণব। বৈশালী চরম লাফে। ধুমধাড়াক্কা মারকাটারি কিছু একটা। বকেয়া রাখা বৈশালীর অভিধানে নেই।
অনেক শেষ-না-হওয়া গল্প আছে অর্ণবের। ভাঙাচোরা সেসব গল্প এগোতে না এগোতেই হোঁচট খেয়ে পড়ে। তার বেশিরভাগ গল্পই শেষ হয় না অথচ সুযোগ আছে এই ভরসায় হারিয়ে যায়নি। টুকরো টুকরো না-গল্প না-কিছু হয়েও তাকে কাহিল করে তোলে। কাকুর গল্প যেমন। কখনো শেষ হয় না। অথচ শুরু হলেই আনন্দে ভরপুর। তারপর মাঝপথে উধাও। মাঝে মাঝে ঝলক দিয়ে ওঠে। আলোয় আলোকিত তখন অর্ণব। কিন্তু হঠাৎ হারিয়ে যায় কাকু। হারানোর কষ্ট গলা থেকে বুকে। সে হাওয়া টানতে পারে না। তার শরীর কাঁপতে থাকে।
ছোট ছোট কাজের সঙ্গে এই টুকরো টুকরো গল্প অর্ণবের সমস্যার কারণ। 888sport free betয় এরা বেড়েই চলেছে। কাজগুলো যা হোক শেষ নয়, নিখুঁত না হলেও বৈশালীর মনমতো হয়তো হয় না এবং তার জন্য খিটিমিটি হলেও অর্ণব ব্যাপারটা থেকে বেরোতে পারে। ধরেই নিয়েছে সীমাহীন এই সমস্যার সমাধান নেই, অসুবিধা হবে না খারাপ লাগবে, তবু মেনে নিতে হবে।
কিন্তু গল্পগুলো তাকে সমস্যায় রাখে। ভালোমতো যদি 888sport sign up bonus থেকে কিছু মুছে যেত। পাঁচ-ছ লাইনের, সব গল্পের শুরু আছে, তারপর থম মেরে জবুথবু – আর এগোতে পারে না – 888sport free betয় অগুনতি – এরা না থাকলে অর্ণব কেমন থাকত – অন্য এক অর্ণব হয়তো, বা এই অর্ণব আরো বুদ্ধিমান হয়ে, নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন এবং ধাপে ধাপে ওপরে ওঠার সিঁড়ি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা একজন, বৈশালী যা চেয়েছিল এবং পায়নি, বৈশালীর অনেক বন্ধু যা পেরেছে – একজন সফল মানুষ, যা সে চেষ্টা করলেই, যা সে পারেনি শুধুমাত্র আলস্যের জন্য – যারা এই কথাগুলো বলে, বৈশালী বা তার বন্ধুরা বা আত্মীয়স্বজন – তারা কেউ অর্ণবের ছোট ছোট গল্পের কথা জানে না। জানে না এদের হঠাৎ জীবন্ত হয়ে-ওঠার কথা আর দু-চার লাইনের বেশি এগোতে না পারার কথা। এর জন্য তার স্নায়ু বিপর্যয়। অবসাদ। সেই কবে থেকে ওষুধ। ডাক্তারের ঠিক করে দেওয়া ওষুধের মাপ, কখনো কম বা বেশি, নিয়মিত চেকআপ। ওটা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা, শর্টকাট নেই। খেতেই হবে ওষুধ, যেতেই হবে ডাক্তারের কাছে।
ডায়াবেটিস বা থাইরয়েড গ্রন্থির অসুখে সে এরকমই ঊর্ধ্ব রক্তচাপ বা হার্টের সমস্যা – ওষুধ ছাড়া একদিনও না – যতদিন বেঁচে থাকা তো জীবনভর এই ওষুধ আর ডাক্তার তো অর্ণব একা নয় – হ্যাঁ, তার যদিও স্নায়ু বিপর্যয়, যে-কারণে অবসাদ – কিন্তু এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের ছোট ছোট কাজ জমে পাহাড় হয় না অথবা অনেক শেষ-না-হওয়া গল্পে তারা অসহায় বোধ করে না।
গল্পে কাকু আসে আবার চলেও যায়। নতুন ক্ষত তৈরি হয় না আর। শুরুর ক্ষত আর বোজেনি। নতুন কিছু হওয়ার নেই। ফলে পুরনো ক্ষতে শুধু প্রলেপ।
অথচ কাকু মানেই আলো। সে দিন বা রাত, সকাল অথবা বিকেল – যা হোক, রাতের অন্ধকার আলো করে উঠতে পারে, বর্ষার মেঘে 888sport app আকাশে চোখ-ঝলসানো হাজার ওয়াটের আলো!
কাকুরও স্নায়ুরোগ। অবসাদ। মসিত্মষ্কে স্নায়ুতন্ত্রের রসায়নে ভারসাম্যের অভাব। অবসাদ সহ্য করতে না পেরে কাকু হারিয়ে গেল। অর্ণবকে বলেছিল, একদিন এমনভাবে চলে যাব, দেখবি কেউ আমাকে খুঁজে পাবে না।
সে-কথা অর্ণব কাউকে বলেনি। যাওয়ার আগে কাকু তাকে দুটো জিনিস দিয়েছিল। কাকুর 888sport app download apkর খাতা আর একটা সাদা খাম। খামের ভেতর একটা চিঠি। এক 888sport promo codeর প্রেমের সম্পর্ক ছেদ করতে চাওয়ার চিঠি। মানসিক ভারসাম্য হারানো একজন কীভাবে সেই 888sport promo codeর কাছে অপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে তার বর্ণনা।
মাত্র একবার, আর কোনোদিন অর্ণব সেই চিঠি পড়েনি। কাকু চলে যাওয়ার পর মাঝে মাঝে 888sport app download apkর খাতা অবশ্য খুলেছে। 888sport app download apkগুলো একটার পর একটা পড়ে যেত।
কাকু অর্ণবকে বলেছিল, তুই একদিন আমার মতো 888sport app download apk লিখবি। মনে হচ্ছে তোরও নার্ভের গন্ডগোল হবে।
কাকুর কণ্ঠস্বর ছিল সরু আর মিহি। সুর করে নিজের 888sport app download apk পড়ত। 888sport sign up bonus থেকে বেশি। নিচু পর্দায় গলা থাকত। বন্ধ দরজার ওপাশে বিরক্তি আর ব্যঙ্গ। সুযোগ পেলেই হুল ফোটায়। – গরম বেড়েছে। তাল মিলিয়ে পাগলামি। অথবা, ভাতের চিন্তা নেই – চালিয়ে যা আঁতলামি –
আলোর গল্প আরো একটা – তিন্নি। কিন্তু সেটা এসেই চলে যায়। বাকি সব গল্প অন্ধকারের। বিদ্রূপ, পরিহাস, হেনসত্মা আর অপমানের গল্প। একটা শুরু হতে না হতেই আর একটা অন্ধকার গিলে নেয়। একটার পর একটা, ঘন অন্ধকারে ডুবে যেতে থাকে অর্ণব। তখন হয়তো সে মাছ কিনছে। রুপোলি পারশে বা ডিমভরা ট্যাংরা – বৈশালীর পছন্দ। বৈশালী তাকে প্রতিমুহূর্তে বোঝায় সে কীভাবে ঠকে যায়। সাবধান করে। মাছ কেনার সময় দাঁড়িপালস্নার দিকে তাকাতে বলে।
সেই দাঁড়িপালস্নার একদিকে ট্যাংরা, কালো পিচ্ছিল, জ্যান্ত। পাঁচশো গ্রামের বাটখারা অন্যদিকে।
দুদিকে চোখ রেখে সতর্ক হওয়ার চেষ্টা করে অর্ণব। পারে না। তার চোখ ট্যাংরার কালো পিচ্ছিল অন্ধকারে আটকে যায়। আর তখনই কালো ধোঁয়ায় অর্ণব আর কিছু দেখতে পায় না। এতক্ষণ যা হোক সামলাতে পারছিল। ছোট ছোট অন্ধকারের সঙ্গে তার লুকোচুরি। কিন্তু এত বড় ধোঁয়ার কু-লী থেকে বেরোবার উপায় সে জানে না। মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার সময় হাতের থলির কথা মনে পড়ে। থলির ভেতর সদ্য কেনা ট্যাংরারা তাকে টলমলে শরীর থেকে সোজা করে দেয়। বৈশালী না হলে প্রচুর অশামিত্ম করবে। পতনের হাত থেকে রেহাই পেয়ে অর্ণব কাকুর আশ্রয় নেয়। একটু আলোর জন্য – কাকুর সুরেলা স্বরে 888sport app download apk শোনার জন্য অর্ণব ছটফট করতে থাকে।
আর তিন্নি। পাশের বাড়ির তিন্নি। ছোট থেকে একসঙ্গে। বড় হওয়ার আগেই ষোলো বছর বয়সে তিন্নির লিউকোমিয়া। ধরা পড়ার পর মাত্র চারমাস। তিন্নি চলে গেল। তার বছরখানেক আগে থেকে মাঝে মাঝেই জ্বর। হায়ার সেকেন্ডারিতে ভর্তি হয়েও ক্লাসে যেতে পারত না। জ্বরাতপ্ত পাংশু ঠোঁটে অর্ণবের আঙুল রেখে বলেছিল, আমি তোকে ভালোবাসি। তোকে ছাড়া আমি বাঁচব না।
ভয়ে অর্ণব কাঁপছিল। বলেছিল, পড়াশোনা শেষ করে – তিন্নির সাদা ফ্যাকাশে ঠোঁটের স্পর্শ আজো তার আঙুলে। এই স্পর্শ অন্ধকার থেকে অনেকবার অর্ণবকে বের করে এনেছে।
তিন্নির গল্পটা খুব ছোট, শুরু হতে না হতেই হারিয়ে যায়। এই গল্পটার আরম্ভও আচমকা যে-কোনো জায়গা থেকে, মুহূর্তের উদ্ভাসে অর্ণবকে অন্ধকার থেকে মুক্তি দেয়। বাকিটুকু বিরাট শূন্য, সেখানে তিন্নির – তোকে ভালোবাসি – ভেসে থাকে খড়কুটোর মতো।
আজ পরাশর আসবে। রাতে নেমন্তন্ন। পরাশর বন্ধু সেই স্কুলবেলা থেকে। স্কুলের পর্ব শেষ করে ব্যবসায়। পেলস্নায় বড়লোক। কোটি কোটি টাকার টেন্ডার, লেটার অব ক্রেডিট, ব্যাংক গ্যারান্টি। গল্পকথা নয়। তার প্রমাণ এধার-ওধার ছড়ানো-ছিটানো যার ছিটেফোঁটা যতটুকু, বৈশালী তাতেই হতবাক। অর্থে বা বিত্তে এই মাপের মানুষ, যতই অর্ণবের ছোট বয়সের বন্ধু হোক, তাদের সঙ্গে সমানে সমানে – বৈশালী উচ্ছ্বাস চেপে রাখতে না পেরে বলেছিল, আপনাকে দেখে মানুষের বোঝা উচিত। নিজের শিকড়কে অস্বীকার করা উচিত নয় – আপনার কাছ থেকে নতুন করে শিখলাম।
পরাশর তিন মাস আগে শেষ এসেছিল। আর ছিল নীলাবু – অর্ণবের কবিবন্ধু। এতদিনে অর্ণবের দুটো মাত্র 888sport app download apkর বই প্রকাশ পেলেও নীলাবুর বই888sport free bet পনেরো ছাড়িয়েছে। ছোট-বড়-মেজ-সেজ সব ধরনের পত্রিকায় তার সাবলীল যাতায়াত। অনায়াস ও দুরন্ত গতি তার। কয়েকটা 888sport app download bdও পেয়েছে। দু-তিনবারের সাক্ষাতেই সে বৈশালীর নীলু।
দু-তিন মাস অন্তর খানাপিনার ব্যবস্থা তার বাড়িতে। গত ছ-মাসে যদিও দুবার এবং আজ তৃতীয়বার কিন্তু প্রসত্মাব আছে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে অন্যদের বাড়িতেও হবে।
আজ সকালে পড়ার টেবিল, বই আর খুচরো কাগজ গোছাতেই অনেকটা সময়। ফেরিওয়ালার ঝোলায় পুরনো খবরের কাগজ ঢুকেছে আজ সকাল সকাল। ওদিকে বৈশালী এক টুকরো কাপড় নিয়ে ঘুরছে। ধুলো দেখলেই ঝাঁপিয়ে সাফ।
আজ পরাশরদের জন্য বিশেষ বাজার – তাই অর্ণব অতিরিক্ত সতর্ক। কিন্তু মুরগির মাথা ধর থেকে আলাদা হতেই অর্ণবের ঠিকঠাক থাকাটা হোঁচট যায়। এক টুকরো অন্ধকার তার মাথার ভেতর, এক কোণে ঢুকে পড়ে।
অর্ণব ঝুঁকি নেয় না। সরাসরি কাকুর ঘরে ঢুকে যায়।
হুইস্কির বোতল সাজিয়ে কাকু। গস্নাসে চুমুক দিচ্ছে। মাঝে মাঝে 888sport app download apk, সুরেলা উচ্চারণে কাকুর কণ্ঠস্বরে কেঁপে ওঠে অর্ণব।
এই 888sport app download apk সে কতবার শুনেছে। তখন কিছু বুঝত না, কিন্তু আকর্ষণ ছিল। অন্ধকার তার জীবনে আরো অনেক পরে। একদিন চাপ চাপ অন্ধকারে সেও ঢুকে পড়বে। কাকু তো বলেই দিয়েছিল, তোর দশা আমার মতো হবে।
পরাশর হা-হা করে হাসছিল তার বিদেশ888sport slot gameের গল্পের সময়। হাসতে হাসতে বলছিল সেইসব রঙিন পৃথিবীর কথা। দু-তিনটে দেশ বাদে পৃথিবীর সবটুকু চেটেপুটে নিয়েছে। অর্ণবকে বলছিল – যাতায়াতের ভাড়া জোগাড় কর। বাকি দায়িত্ব আমার।
বৈশালী জড়ানো গলায় – এবার কিন্তু যাবই যাব। কোনো কথা শুনব না। অন্তত সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়া –
এদিকে নীলাবু তার প্যারিস888sport slot gameের গল্পে। লন্ডন, ফ্রাঙ্কফুর্ট দুবার, 888sport apps তো যখন-তখন। আর অর্ণবের পাসপোর্ট পর্যন্ত করা হয়নি।
আলো থেকে অন্ধকারে অর্ণব। পেন্ডুলামের মতো ভালো থেকে খারাপ। টেবিল থেকে গস্নাস তুলে নিয়েছিল। একসময় সেও মাঝেমধ্যে। যখন নিষেধ ছিল না, অ্যান্টি-ডিপ্রেশন ওষুধ খেতে হতো না, সেই দিনগুলোতে সসত্মার রাম – অর্ণব উপভোগ করত।
হালকা সোনালি হুইস্কি এক চুমুকে। গস্নাস শেষ করে হাঁপাতে হাঁপাতে অনেকগুলো অবাক চাহনি অগ্রাহ্য করে আর এক গস্নাস; একটানা –
অন্ধকার কেটে আলোয় আলোকিত ফাঁকা মাঠ। মাঠের শেষে ত্রিকুট পাহাড়ে সে আর বৈশালী। রুক্ষ পাথরের খাঁজে খাঁজে বৃষ্টির জমা জলে লাল-নীল মাছ। আকাশ দেখা যায় না এতই ঘন উঁচুউঁচু গাছ। সূর্যের আলো ছিল না, তবু হাজার ওয়াটের হাজার হাজার আলোর ঝলকানিতে তার দুচোখ বুঁজে এসেছিল।
অর্ণব চোখের পাতা টেনে কিছু দেখতে চাইছিল, কিন্তু পারেনি। চোখ বন্ধ হয়ে এঁটে বসেছিল। সে কিছু শুনতে চাইছিল না, তবু শুনতে পাচ্ছিল। হো-হো করে হাসি কানে আসছিল। পরাশর হাসছে, নীলাবু হাসছে। পাড়া-প্রতিবেশী, অফিসের সহকর্মীরা, যাদের কাছ থেকে সে মাছ কেনে, আলু-পটোল কেনে যাদের থেকে – সবাই একসঙ্গে হাসছিল।
গলা থেকে গোঁ-গোঁ শব্দ বের হচ্ছিল, কেউ সেই গোঙানি শুনতে পায় না। অর্ণব জানে ওটা শব্দ নয়, শুধু মনে হওয়া। যেমন তার অন্ধকার কেউ দেখতে পায় না, বুঝতেও পারে না।
অর্ণব চেষ্টা করছিল ছোট ছোট বাধা পার হতে। 888sport app download apkর লাইনগুলোই তার ভরসা। কত শব্দ উঠে আসে অন্ধকার থেকে। বিষণ্ণতা চেপে বসা শব্দরা তাকে বিপন্ন করে তোলে।
অর্ণব আলো খুঁজছিল। আদিগন্ত ছড়ানো আলোয় স্নান করে ঘুমের অতল থেকে জেগে উঠতে চাইছিল। অন্ধকারে জেগে উঠে সে কিছু দেখতে চাইছিল, কিন্তু দেখতে পায়নি। শুধু শুনতে পাচ্ছিল আশিস্নষ্ট শীৎকারের ধ্বনি। কামনাতুর সেই শীৎকার, কাছে না দূরে, হামাগুড়ি দিয়ে বিছানা থেকে কোথাও একটা যাওয়ার চেষ্টা করতেই নরম আলোর স্পর্শ নিয়ে তিন্নি। তিন্নি বলেছিল, যেও না। ওখানে আরো অন্ধকার।
বড় না মাঝারি – মাছ কাটতে গিয়ে প্রশ্নটা অর্ণবকে। অর্ণব কাকুর দিকে তাকিয়ে মনে করতে চেষ্টা করে, বৈশালী কী বলেছিল। কাকু এগিয়ে আসে। অর্ণবের হয়ে উত্তর দেয়, বড়। প্রত্যেকটা টুকরো একশ গ্রাম।
অর্ণব অবাক হয়ে বলে, জানলে কী করে! বৈশালী তো এরকমই বলেছিল।
কাকু হাসে। বলে, অত ঢকঢক করে খাবি না। ছোট ছোট চুমুকে সময় নিয়ে শেষ করবি।
থলেভর্তি বাজার নিয়ে ফেরার সময় অর্ণব তিন্নির সঙ্গে দেখা করে। তিন্নি ঘুমোচ্ছিল। অর্ণব ওর সাদা ফ্যাকাশে ঠোঁটে হাত রাখে। তিন্নি হাসে। বলে, ভয় পেয়ো না। আমি তো আছি। আজ সারাক্ষণ তোমার সঙ্গে থাকব।
অর্ণবের ইচ্ছে করে তিন্নিকে চুমু খেতে।
তিন্নি সাবধান করে – এখন না। মা-বাবা পাশের ঘরে। যদি চলে আসে। কিছুদিনের মধ্যেই ভালো হয়ে উঠব। তখন যত
খুশি –
অর্ণব কথা শোনে না, তিন্নিকে বুকে টানে। তিন্নি খিলখিল করে হেসে ওঠে। বলে, আমি তো কথা দিয়েছিলাম। এত তাড়া কেন?
লাল পাপড়িতে অর্ণব ঠোঁট ছোঁয়ায়। খুব সাবধানে। যেন ভেঙে না যায়।
শিশিরভেজা পাপড়ি থরথর করে কেঁপে ওঠে। তিন্নি বলে, আলো নিভিয়ে দাও।