শূন্য অক্ষাংশে দাঁড়িয়ে

888sport app download apk latest version : আমিমুল এহসান

ভেবেছিলাম পঞ্চাশতম জন্মদিনে আমি দার্জিলিং ফিরে যাব, টাইগার হিলের চূড়ায় দাঁড়িয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার দিকে তাকিয়ে থাকব। এভাবে শৈশবে আবারো তীব্র ইচ্ছে করছিল ফিরতে, কিন্তু আমার আয়োজনগুলো চিরাচরিত আমার বিপক্ষেই থেকে গেল। মার্কিন পাসপোর্টের অধিকারী হওয়ায় দার্জিলিং যাবার জন্য দুটো ভিসার প্রয়োজন হয়। শেষ পর্যন্ত তা আর হয়ে উঠল না। তাছাড়া প্রায় ত্রিশ ঘণ্টার দীর্ঘ আকাশ888sport slot game, জেটল্যাগ কাটিয়ে উঠে ডলার ভাঙানো, যানবাহন, হোটেল ইত্যাদি খুঁজে বের করা এবং সবশেষে এই দীর্ঘযাত্রার উপর ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে ওঠা। এর চেয়ে বরং একটা বিকল্প যাত্রা আমার জন্য আরো উপভোগ্য হতে পারে – এমনটিই ভাবছিলাম। দালাইলামার উপদেশ ছিল, যেন আমি প্রতিবছর এক-একটি নতুন জায়গা 888sport slot game করি, যা আমার জ্ঞানের পরিধিকে প্রসারিত করবে। আমি গ্লোবের উপর চোখ রেখে খুঁজতে থাকি নতুন মহাদেশ, নতুন ভাষা, সংস্কৃতির পরিমণ্ডল। তার ভূপ্রকৃতি এমন কোনো উচ্চতায় যেখানে সন্ধ্যা-বাতাসে কোনো পতঙ্গ থাকবে না। ২৩ মার্চ আমার পঞ্চাশতম জন্মদিনে আমি সেই উচ্চতাকে খুঁজব – তা হতে পারে শূন্য ডিগ্রির সেই বিষুবরেখা – ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো – আমার পরবর্তী গন্তব্য।

এক্ষেত্রে আমার ভিসা বা পরিবর্তিত বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে না। ইন্টারনেটে একটা সুইস হোটেলে রিজার্ভেশন করে নিয়েছি, আট ডলার প্রতিরাত্রির জন্য। আমার সহযাত্রী তা-ই জানিয়েছিল আমাকে, বিশেষ করে এই অর্থের বিষয়টি, যদিও তা নিয়ে তার বিচলিত হবার কোনো কারণ ছিল না, কেননা সে ছিল একজন মিশনারি। আমি চিন্তিত হয়েছিলাম অন্য বিষয় নিয়ে – অপরিচিত জায়গা এবং তার অচেনা ভাষা।

আমাদের কন্টিনেন্টাল বিমান  পানামার উপর দিয়ে উড়ে যাবে সন্ধ্যায় এবং রাতে কুইটো বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। বিষুবরেখার ঠিক দক্ষিণে এর অবস্থান। জীবনে প্রথম বিষুবরেখার দক্ষিণে একটা ভিন্ন মহাদেশে আমার যাত্রা। খানিক গর্ব অনুভব করার জন্য এটা নিশ্চয়ই সংগত একটি কারণ।

বিমানবন্দর থেকে বের হবার পর খানিক শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়। অধিক উচ্চতার কারণে বাতাস হালকা হয়ে এসেছে। একজন ট্যাক্সি-ড্রাইভার আমার নাম লেখা বোর্ড ধরে অপেক্ষা করছিল। সুইস হোটেল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা আমাকে মুগ্ধ করল। এই মধ্যরাত্রিতেও তারা আমাকে অভ্যর্থনা জানাবার ব্যবস্থা করে রেখেছে। ট্যাক্সি-ড্রাইভারটি অত্যন্ত বিনয়ী, আমার সীমিত স্প্যানিশ এবং তার আরো সীমিত ইংরেজি কথোপকথনে আমার তেমনই মনে হলো। সে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ট্রলি সিস্টেমের প্রশংসা করছিল, যা কুইটোর ট্রাফিকজ্যাম এবং দূষণ কমিয়ে আনতে পেরেছে। শেষ ট্রলিস্টপটি এয়ারপোর্টের খুব কাছে। এখানে পৌঁছানোর আগে আমি শহরের মানচিত্র দেখে নিয়েছিলাম। তাতে বোঝা যায়, শহরের মাঝেই এই এয়ারপোর্ট অবস্থিত। হোটেলে পৌঁছে দেওয়ার আগে ট্যাক্সি-ড্রাইভার খুব গর্বের সঙ্গে আমাকে ম্যাকডোনাল্ডস চিনিয়ে দিল এবং জানাল আমার জন্য এখানে খাওয়াটাই নিরাপদ। অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে     তা-ই আমি নিরাপদ ভেবে গ্রহণ করতাম, কিন্তু যতদিন ইকুয়েডর আছি, আমি এখানকার স্থানীয় খাবার খেতেই পছন্দ করব – আমি তাকে আশ্বস্ত করি।

আমি বুঝতে পারলাম না, সে আমার উত্তর পছন্দ করল কি-না, তবে সে আমার কাছ থেকে কোনো অর্থ নিতে অসম্মতি জানাল, কারণ হোটেল-কর্তৃপক্ষ তাকে আগেই তা পরিশোধ করেছে। এক্ষেত্রে আমি তাকে কিছু ডলার টিপস দিতে চাইলে সে আর কোনো প্রতিবাদ করল না।

আট ডলার হিসেবে হোটেলটি ছিল খুব চমৎকার। প্রতিটি কক্ষে ঠান্ডা ও গরম পানির ব্যবস্থা রয়েছে। অনেক রাত সত্ত্বেও হোটেল-ক্লার্ক আমাকে রুমে পৌঁছে দিল। আমি ভীষণ ক্লান্ত ছিলাম এবং বিছানায় যাওয়া মাত্রই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম।

পরদিন সকালে আমি বের হলাম নতুন শহরে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে ঢালু রাস্তার উঁচু-নিচু শহর। নিশ্বাসজনিত অসুবিধা থেকেই গেল। আমি ধীরগতিতে 888sport slot gameের সিদ্ধান্ত নিলাম এবং চলাচলের জন্য বাস এবং ট্যাক্সিকেই বেছে নিলাম। বাসগুলো সময় ধরে চলছিল এবং ভাড়াও যথেষ্ট শস্তা, প্রতি কিলোমিটার এক সেন্ট। প্রতি ট্রিপের ভাড়া ২৫ সেন্ট। তাদের বিশেষ শ্রেণির বাসও রয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে চলাচল নিষিদ্ধ- যদিও তার ভাড়া খানিকটা বেশি। পরিবেশ-দূষণ এবং ট্রাফিকজ্যাম কমাতে প্রতিরুটে বাসের 888sport free bet কমিয়ে আনা হয়েছে। দিনের অধিকাংশ সময়েই আমি এইসব বাসে চড়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরেফিরে দেখলাম। কিছু ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে পরিবহণে কনডাক্টরের কাজ করছে। হাসিমুখেই যে তারা কাজে নিয়োজিত আছে, তা দেখা গেল।

মধ্যাহ্নভোজনের সময়টি আমার কাছে রোমাঞ্চকর মনে হতে থাকল। কেননা, স্থানীয় খাবারের ব্যাপারে আমার কোনো ধারণাই নেই। সৌভাগ্যবশত এই সময়ে আমি শহরের কেন্দ্রে অবস্থান করছিলাম আর বাছাই করার জন্য আমার কাছে অনেক সম্ভাবনাও খোলা ছিল। পর্যটকদের জন্য সাধারণত নিরামিষ এবং চাইনিজ খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। স্থানীয় খাবারের তালিকায় স্যুপ, ভাত, মুরগির সঙ্গে কলাভাজা এবং ফলের রস দেখা গেল। পর্যটকদের জন্য পৃথক খাবারগুলোর চেয়ে মাত্র এক ডলারের বিনিময়ে এই স্থানীয় খাবারই আমার পছন্দ হলো। এখানে অবশ্য ম্যাকডোনাল্ডস, কে এফ সি এবং পিজা হাটের জন্য বহুজাতিক খাবার রেস্তোরাঁয় রয়েছে যাতে স্থানীয় এবং পর্যটকদের ভিড় লেগে আছে। প্রথমদিনের মতো পরবর্তী দিনগুলোতেও আমি এসবের পরিবর্তে যতটা সম্ভব স্থানীয় খাবার গ্রহণেই সচেষ্ট থাকলাম। দুবার অবশ্য চাইনিজ খাবার নিয়েছিলাম, কারণ তাতে যথেষ্ট বৈচিত্র্য ছিল। এক সন্ধ্যায় আমি নিরামিষভোজীদের রেস্তোরাঁয় গেলাম এবং সে-খাবারও খুব ভালো ছিল। কিন্তু স্থানীয় রেস্তোরাঁ তাদের মেন্যু পরিবর্তন করে উন্নত হয়ে ওঠার চেষ্টা করছিল। অবশ্যই তা নিজস্ব ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ন রেখে। বিফ স্টু এবং রাইস কেক তাদের তেমনিই      দুটো ঐতিহ্যবাহী। হাস্যকর ছিল খাবার মেন্যুতে তাদের পরিশোধিত কফির সংযোজন। কারণ এর স্বাদ যথেষ্টই খারাপ, কফি-উৎপাদক একটি দেশের কাছে এটা মোটেও প্রত্যাশিত নয়। অপরিশোধিত অবস্থায় এই কফি খেতে কালো সিরাপের মতো। শহরতলি অঞ্চলে যে-খাবার পাওয়া যায় তাতে ভারতীয় প্রভাবই      বেশি লক্ষ করা যায় এবং এতে কিছু আদিবাসী খাদ্যের – যেমন, ভুট্টা এবং মুরগির-মিশ্রণ রয়েছে।

দূরবর্তী স্থানগুলোতে যাবার জন্য আমাকে     পুরনো শহরের কেন্দ্রীয় বাসস্টেশনে যেতে হতো। এটা ছিল অত্যন্ত জনবহুল অংশ, যা পর্যটকদের জন্য খানিক অস্বস্তিকরও বটে। পর্যটকরাও এই অঞ্চলগুলোতে নিরাপদ বোধ করে না। আমার চেহারা খানিকটা স্থানীয়দের মতোই। নিতান্ত কথা বলতে না হলে আমাকে স্থানীয়দের মধ্য থেকে আলাদা করা কঠিন। আমার স্প্যানিশ তেমন ভালো না হলেও মোটামুটি কাজ চালাবার মতো ছিল। এর মাধ্যমে এই ক্ষেত্রে আমি শহর থেকে দক্ষিণে ২ ঘণ্টার যাত্রাপথের একটি গন্তব্যস্থল খুঁজে নিতে পারলাম। যাত্রার আগে ড্রাইভার প্যাসেঞ্জার-লিস্ট পূরণ করে তা পুলিশের হাতে দিল। প্যান অ্যামেরিকান হাইওয়ে ধরে দক্ষিণে ছুটে চলল আমাদের বাস। এটি একটি দীর্ঘ হাইওয়ে, যা দক্ষিণ আমেরিকার শেষ প্রান্তের শহর ঞরবৎৎধ ফবষ ঋঁবমড়-কে যুক্ত করেছে আলাস্কার সাথে। প্রথম আধঘণ্টা বাসটি কুইটোর প্রান্তসীমানা ছুঁয়ে অসংখ্য বস্তির মাঝখান দিয়ে পথ অতিক্রম করছিল। এই অংশটি শহরের মানচিত্রে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই রাস্তাগুলোরও কোনো নামও নেই, যদিও এর দুপাশে অসংখ্য মানুষের মানবেতর বসবাস ঘটে চলেছে। যখন আমরা শহরের শেষ প্রান্ত থেকে হাইওয়েতে উঠে পড়লাম তখন আমাদের সঙ্গে যুক্ত হলো অনেক বাস, ট্রাক এবং গাড়ি। এই হাইওয়ের নির্মাণ খুবই দৃষ্টিসুখকর ছিল এবং ছোটো ছোটো শহরের পথ ছাড়া সব পথে যানবাহনের গতি যথেষ্ট দ্রুত হয়ে যাচ্ছিল। ছোটো শহরগুলোতে আমাদের বাস থামছিল, কিছু যাত্রী ওঠানামা করছিলেন। হাইওয়ের দুপাশে রাজনৈতিক স্লোগান এবং ঘোষণাসংবলিত প্ল্যাকার্ড-ব্যানার শোভা পাচ্ছিল। সাবেক প্রেসিডেন্ট জামাইল মাহুয়াদ এবং আবদালা বুচারানের নামও এখন দেখা গেল কিছু কিছু প্ল্যাকার্ডে। দুঘণ্টা পর একটা ছোট্ট শহরে এসে আমি নামলাম। দক্ষিণ গোলার্ধে আমার এই পদচারণা আমাকে ক্রমশ সুখী করে তুলছিল।

এই ছোট্ট শহরেও একটি চাইনিজ রেস্তোরাঁ দেখা গেল, যদিও আমি স্থানীয় খাবার খাবো বলেই ঠিক করেছিলাম। একটা ছোট্ট ফ্যামিলি-রেস্তোরাঁয় ঢুকে পড়লাম আমি। মাত্র দেড় ডলার বিলের জন্য আমি বিশ ডলারের একটি নোট দিয়ে টয়লেটে যাই। টয়লেট থেকে ফিরে দেখি রেস্তোরাঁ-মালিক আমার বিশ ডলারের নোটটি ইনফ্রারেড রশ্মির নিচে রেখে পরীক্ষা করে দেখছে এটি জাল কি-না। বস্তুত এই অধিবাসীদের এসব ডলারের উপর নির্ভর করাটা মাঝে মাঝেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। অধিকাংশ অধিবাসীই এক ডলার, পাঁচ ডলার, দশ ডলার এবং বিশ ডলারের পার্থক্য বোঝার মতো যথেষ্ট শিক্ষিত নয়। কারণ সব নোটই একই আকার ও রঙের। এই দরিদ্র অর্ধশিক্ষিত মানুষের জন্য ইংরেজিতে লেখা এই নোটগুলোর পার্থক্য করাটা খুব সহজ নয়। এদেশে রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক শক্তি শতকরা দশভাগ জনগোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত, যার অধিকাংশই ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত। ডলার-অর্থনীতি কেবল তাদের কাছেই সহজবোধ্য। স্থানীয় মানুষ আর আদিবাসীদের জন্য এই অর্থনীতি খানিক বিভ্রান্তই করে।

আমি হেঁটে বেড়াতে লাগলাম এই শহরে, আর স্থানীয় খোলা বাজারগুলোতে। ফলমূল, শবজি, মুরগি থেকে শুরু করে জুতো – সবই বাজারে বিক্রি হচ্ছে। শহরের এককোণে একটি স্থানীয় চার্চ চোখে পড়ল। তা ছিল একটি মূল্যবান রত্নখণ্ডের মতো। তার      স্টাকো-আবৃত বহিরঙ্গ আর সংহত অন্তঃপরিসর মুরিশ-স্থাপত্যের আদলে নির্মিত। মিশনারিরা এই গির্জার নির্মাতা। তাঁরা যথেষ্ট প্রজ্ঞা আর ধীশক্তির মাধ্যমে যিশুর বাণীকে সহজভাবে স্থানীয়দের মাঝে প্রচার করতে সচেষ্ট রয়েছেন, যা অত্যন্ত কার্যকর এবং প্রশংসনীয়। এখানে আরো কিছু গির্জাও রয়েছে, যা চাকচিক্য এবং ধর্মীয় ভীতিকে আত্মস্থ করে আছে। ফেরার পথে এমন একটি গির্জা আমি প্রত্যক্ষ করেছিলাম। পুরনো শহরের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদের পাশে তার অবস্থান । এর পৃথিবীর কেন্দ্র বলে পরিচিত Mitaddel Mundo শহরে যাবার জন্য অনেকগুলো বাস রয়েছে, যার সবগুলোই পর্যটকদের ভিড়ে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। প্রায় আধঘণ্টা পর আমি কাক্সিক্ষত বাসে চড়ে বসি। একজন তরুণী বাস-কনডাক্টর আমার কাছে এসে ভাড়া বাবদ পঁয়ত্রিশ অভ্যন্তর আড়ম্বরপূর্ণ সামগ্রী দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। কলাম আর বিম সোনালি প্রলেপ-আবৃত। এতে কঠিন শ্রম, মহত্ত্ব, উৎসর্গের সপক্ষে নানা ধরনের উপদেশ-বাণীও লেখা ছিল। ইউরোপীয় গির্জার চাকচিক্য, জৌলুসের মাধ্যমে    স্থানীয়দের মুগ্ধ করার ভেতর দিয়ে খ্রিষ্টধর্মের প্রসার ছিল এসব গির্জার মূল লক্ষ্য। মিশনারিরা এই কাজে নিবেদিতপ্রাণ থেকেছেন।

এদেশে একজন প্রেসিডেন্ট এই গির্জাটির সামনেই গুলিবিদ্ধ হন। তাকে সেই অবস্থায় গির্জার অভ্যন্তরে নিয়ে আসা হয়েছিল। যখন রক্তে ভেসে যাওয়া গির্জার মেঝেতে তিনি মৃত্যুযন্ত্রণায় অস্থির ছিলেন তখনো নিশ্চয়ই এই ধর্মীয় বাণী, আর অলঙ্ককরণপ্রভা তার সামনে এমনই জ্বলজ্বল করছিল এবং তা নিশ্চিতভাবে কোনো আবেদন তৈরি করেনি। বরং এর চেয়ে তাকে হনন করেছিল তথাকথিত পারিপার্শ্বিক সভ্যতা, যা একজনের হাতে সমগোত্রের হীন মৃত্যুকেই অনিবার্য করে তোলে।

স্থাপত্য ও পরিকল্পনা যাদের প্রিয়, তাদের কাছে এই শহর অত্যন্ত আকর্ষণীয় মনে হবে। অতীত-গৌরব অধিকার করে সকল ভবন আজো তেমনই দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া মুভি হাউজ, সরকারি ভবন এবং গির্জার পাশঘেঁষে সরু পথগুলো কখনো উন্মুক্ত হয়েছে বড় বড় চত্বরে, যাকে ঘিরে আছে অসাধারণ সব নিওক্লাসিক্যাল স্থাপনা। এই পুরানো শহরটিকে ইউনেস্কো ‘ওয়ার্ল্ডস হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে সংরক্ষণ করেছে। কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, পরিবর্ধন তাই উৎসাহিত করা হয় না। সাইনবোর্ডের ব্যবহার সীমিত এবং নিয়নবাতি নিষিদ্ধ। আমি এই স্থাপনাগুলোর ছবি তুলছিলাম এবং বস্তুত তা ছিল খুবই উপভোগ্য কিছু সময়। একটি বড় ভবনের ছবি তোলার জন্য আমি যখন রাস্তা পার হচ্ছিলাম তখন হঠাৎ আমার পেছন দিক থেকে ছুটে-আসা পায়ের শব্দ শুনতে পাই। থমকে ফিরে তাকিয়ে দেখি দুজন সৈনিক, তলোয়ার এবং পিস্তলসংবলিত অবস্থায় খুব উত্তেজিতভাবে আমার দিকে ছুটে আসছে। তারা ‘পারে’ ‘পারে’ বলে চিৎকার করছিল। আমি ভাবলাম, সম্ভবত সংরক্ষিত কোনো রাস্তা অতিক্রম করে আমি কোনো আইন ভঙ্গ করেছি। তারা ছিল প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদের অফিসিয়াল গার্ড। কাছে এসে জানতে চাইল আমি কোথা থেকে এসেছি, তারা আমার পাসপোর্ট পরীক্ষা করল এবং নিশ্চিন্ত হলো এই দেখে যে, আমি কোলোম্বিয়ান নই।

পরবর্তী দিন আমি আরেকটি নতুন শহর দেখার প্রতি মনোযোগী হলাম। গতদিনের তুলনায় তা খানিকটা      নতুন এবং যথেষ্ট প্রশস্ত। চওড়া রাস্তা এবং উঁচু ভবনগুলো ছিল এই শহরের দর্শনীয় বিষয়। আধুনিক দোকানপাট, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এবং হোটেল চোখে পড়ছিল সর্বত্রই। তেলসম্পদ আর ভূপ্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে ইকুয়েডর পৃথিবীতে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে চিহ্নিত। তাই অনেক দেশ এখানে দূতাবাস স্থাপন করেছে। অধিকাংশ দূতাবাস প্রশস্ত আমাজন রিভার অ্যাভিনিউয়ের দুপাশে অবস্থিত। 888sport apps এবং পাকিস্তান দূতাবাসকে একই ভবনে দেখা গেল। জার্মানি এবং ডেনমার্কের কিছু বহুজাতিক বাণিজ্য-স্থাপনাও রয়েছে এই অ্যাভিনিউতে। স্ট্রিপ সেন্টারগুলোতে ছিল মুভি থিয়েটার এবং আমেরিকান হার্ডওয়ার স্টোর। পর্যটকদের সংগ্রহের জন্য প্রচুর গিফটশপ রয়েছে। সেখানে উল আর আলপাকা কম্বল এবং সোয়েটার বিক্রয় হচ্ছে। ফাস্টফুড এবং অভিজাত রেস্তোরাঁর 888sport free betও কম নয়। ট্রলি সিস্টেমের কারণে ট্রাফিকজ্যাম এবং দূষণকে তারা নিয়ন্ত্রণের ভেতর রেখেছে। হালকা বাতাসের স্তরে যেন পরিবেশ-দূষণ ক্ষতিকর না হয়ে ওঠে সে-বিষয়ে নগর-পরিচালকবৃন্দ আগে থেকে সচেতন। এছাড়া যানবাহন হিসেবে রয়েছে ট্যাক্সি, যার প্রতিটিতেই ভাড়া-নির্দেশক মিটার রয়েছে, যা আবশ্যিকভাবে লাইসেন্সকৃত। নিকটতম দূরত্বে তার ভাড়া কমপক্ষে এক ডলার হলেও তা নিরাপদ এবং বিঘ্নমুক্ত।

এখনো আরাধ্য গন্তব্যে যাওয়া হয়নি আমার। শূন্য888sport free betবাচক সেই বিষুব-বিন্দুতে দাঁড়াব বলে আমি বাসের জন্য প্রতীক্ষা করতে থাকি। সেন্ট উল্লেখ করে। আমি তাকে ৫০ সেন্ট দিয়ে বাকিটুকু রেখে দিতে বলি। বাস উত্তরমুখী হয়ে চলতে থাকে এবং একে একে এয়ারপোর্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়-অঞ্চল অতিক্রম করে 888sport live chat-এলাকার ভেতর ঢুকে পড়ে। চারপাশে গাড়ি সারাবার ওয়ার্কশপ, বস্তি এবং দোকানপাটের ভেতর দিয়ে বাস থেমে থেমে চলতে থাকে, পথিমধ্যে যাত্রীরা উঠানামায় ব্যস্ত। পরিপার্শ্বের দৃশ্যপটের পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে শহরটি যেন আরো প্রসারিত হতে থাকে। একসময়ে কেবল বাজারসদৃশ স্থাপনার মধ্য দিয়ে আমরা ক্রমশ এগিয়ে যেতে থাকি। আমি অসহিষ্ণু হয়ে সেই তরুণী কনডাক্টরের কাছে গন্তব্যের দূরত্ব সম্পর্কে জানতে চাই, কেননা ইতোমধ্যে একঘণ্টা সময় পেরিয়ে গেছে। তরুণীটি আমাকে আশ্বস্ত করে। আমার সহযাত্রীরা জানায়, তারাও একই স্থানে সেই শূন্য অক্ষাংশ উদ্যাপনের অপেক্ষায় রয়েছে, আমি একা নই। অনেকটা সময় পেরিয়ে আমাদের বাস একটি মার্কেট প্লেসের সামনে এসে দাঁড়ায়। আমি দেখতে পাই একটি বিশাল গ্লোবের সৌধ। প্রত্যেকেই দ্রুতগতিতে বাস থেকে নেমে সেই সৌধের নিকটবর্তী হতে সচেষ্ট হয়।

তখন ঠিক মধ্যাহ্নের কাছাকাছি একটি সময়, এই স্থানে আসার যথার্থ সময়। অনেক দেশ থেকে অনেক জাতির মানুষের ভিড় এখানে। গ্লোবসংবলিত সেই সৌধের দিকে আমিও এগিয়ে যাই। সৌধ-বরাবর একটি হলুদ রেখা এগিয়ে গেছে, যা বিষুবরেখা নির্দেশ করছে।     সৌধস্তম্ভকে বিভাজিত করে তা এগিয়ে গেছে একটি গির্জার অভিমুখে। গির্জার পেছনে পটভূমি জুড়ে আগ্নেয় পর্বত। আমি যখন সেই হলুদ রেখা ধরে হেঁটে যাচ্ছিলাম, তখন কোথাও আমার কোনো ছায়া পড়ছিল না! অবশেষে আমি সত্যিই পৌঁছে গেলাম পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুতে। আমার আনন্দিত এই উদ্যাপন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, কাঞ্চনজঙ্ঘা-ছবিটির মতোই দ্রুত বদলে যাচ্ছিল আবহাওয়া। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝড়ো হাওয়াসহ ছুটে এল মেঘ – তা এসেছিল আগ্নেয় পর্বতের পেছন থেকে। প্রত্যেকেই ছুটে যাচ্ছিল নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য, নিজেকে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করবার জন্য। আমিও ছুটে গেলাম সৌধের নিকটবর্তী এক ভবনে। তা ছিল একটি পোস্ট অফিস। কাউন্টারের পেছনে বসা মেয়েটি আমার পাসপোর্ট দেখতে চাইল। আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন ভিন্ন একটি দেশে ঢুকে পড়েছি। পাসপোর্টটি এগিয়ে দিতেই মেয়েটি তাতে একটি স্ট্যাম্প লাগিয়ে দিল ভিসার আদলে। আমি তাকালাম সেই স্ট্যাম্পের দিকে, তাতে লেখা গরঃধফফবষ গঁহফড়, কুইটো, ইকুয়েডর, অক্ষাংশ শূন্য, শূন্য, শূন্য।

* লেখক রফিক ইসলাম আমেরিকার অ্যারিজোনায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী প্রবাসী বাঙালি স্থপতি। তাঁর ডিজাইনকৃত এল পেডরেগাল মার্কেট প্লেস ১৯৯০ সালে আন্তর্জাতিক বিচারে সেরা মার্কেট প্লেসের 888sport app download bd পায়। এ-888sport slot game-অভিজ্ঞতাটি তিনি ইংরেজিতে লিখেছেন।