সন্‌জীদা খাতুনের শান্তিনিকেতনের দিনগুলি

তিনি সন্জীদা খাতুন। আমাদের অশেষ গর্বের এক নাম। এখন তিনি সব বাঙালির 888sport apk download apk latest versionর পাত্রী যে বাঙালি সংস্কৃতি নদীর মতো বহমান, দুপাশে স্থান-কালের সব বিভাজন উপেক্ষা করে ফুল ফোটায়, ফসল ফলায়, সব মানুষের মিলন ঘটায়, মনের কালি ধুয়ে দেয়, তিনি তাকেই পূর্ণপ্রাণের সবল তৃষ্ণায় নিজের ভেতর শুষে নেন। জহু মুনির মতো আবার তাকে জাহ্ণবী করে কালের প্রবাহে মিলিয়ে দেন। ‘তৃষ্ণার শান্তি সুন্দরকান্তি’ তার ‘মর্ত কাছে স্বর্গ যা চায় সেই মাধুরী’ বিলিয়ে দেবার শক্তি-সাহস পেয়ে যায়। অন্তত তাঁর সাধ্যে যতটা কুলোয়, তার সবটুকু তিনি ঢেলে দেন। সংস্কৃতি আপন ঐশ্বর্যে ঋদ্ধ হয়।
তবে তাঁর হয়ে ওঠাও এই সংস্কৃতির যাত্রাভিযানের মতোই। আলো ঝলমল জীবনোচ্ছল বন্দর তাঁকেও আকর্ষণ করে। তাঁর স্বপ্নকল্পনায় ওই বন্দর ছিল শান্তিনিকেতন। আপন আকাক্সক্ষা ও প্রতিভার জোরে তিনি তাকে ঘটনা করে তোলেন। রসদ যা পাবার, যা নেবার তিনি তা অঞ্জলি ভরে তুলে নেন। নিজের যা দেবার তা অসংকোচে দিয়ে আসেন। একবার নয়, বারবার। যোগাযোগ এখনো সচল। শান্তিনিকেতনের দিনগুলি তাঁর এই অফুরান অভিজ্ঞতার একখ- সঞ্চয়। আমাদের সাংস্কৃতিক উজ্জীবনের মর্মকথাও। তাঁর কপালে পড়েছে জয়টিকা। ওই শান্তিনিকেতনেই। সে গৌরব আমাদেরও। যে মানবিক বোধ আমরা লালন করতে চাই, করি, তার।
শুরুতেই তিনি জানিয়ে দেন, ‘শান্তিনিকেতন ছিল আমার স্বপ্নের দেশ।’ তার কারণ শুধু রবীন্দ্র888sport live football পাঠ নয়। তাঁর 888sport live football, সংগীত, ব্যক্তিমায়া, উদ্যোগ কল্পনা সব মিলে যে অদেখা আকর্ষণ, এ তাই। নজরুলের ব্যাপারেও তেমন ছিল। আরো একটা বিষয় হয়তো সেখানে কাজ করেছে। তিনি না বললেও, অনুমান, উজ্জ্বল তারুণ্যে বাবা ডক্টর কাজি মোতাহার হোসেনের সঙ্গে নজরুলের ছিল প্রীতির সম্পর্ক। কবির ব্যতিক্রমী ব্যক্তিপ্রতিভার আবেদন তো
থাকবেই। কিন্তু শান্তিনিকেতনের মতো নজরুলকে ঘিরে তাঁর প্রেরণার স্বাক্ষর কোনো প্রতিষ্ঠান কোথাও গড়ে ওঠেনি। তাই শান্তিনিকেতনে যাওয়াটাই হয়ে উঠেছিল তাঁর ইচ্ছাপূরণের একমাত্র লক্ষ্য। দেখেশুনে চোখ-কানের তৃপ্তিই নয় শুধু, ‘দেওয়া নেওয়া ফিরিয়ে দেওয়া’ – জনম-জনম নয়, এক জনমেই যতটা সাধ্য সবটা চরিতার্থ করা, এই হয়ে দাঁড়ায় তাঁর ভবিতব্য। প্রথম তারুণ্যে স্বপ্নসাধের উত্তেজনাটাই পথে নামিয়েছিল। পরে পথই পথ দেখায়।
তাঁর শান্তিনিকেতনে যাবার শখ জাগে স্কুলে পড়ার সময়েই। বাচ্চা মেয়ে। বাবা রাজি নন। সুযোগ নিজেই করে নিলেন ১৯৫৪ সালে বাংলায় অনার্স পরীক্ষা শেষ হবার আগ দিয়ে। বিশ্বভারতীতে সরাসরি আবেদন পাঠালেন, তিনি সেখানে এম.এ.-তে ভর্তি হতে চান। পরীক্ষা চলার ভেতরেই খবর এলো, শর্তসাপেক্ষ ভর্তির আবেদন মঞ্জুর। টাকা-পয়সা জমা দিলেই ঝামেলা তখনকার মতো শেষ। অনার্স পরীক্ষা টপকে গেলে তার প্রমাণপত্র দেখানো শুধু বাকি। সব জায়গাতেই এমন। এটা চিন্তার কোনো ব্যাপার নয়। বাপকে এড়িয়ে এইভাবে তাঁর শান্তিনিকেতনে রওনা হবার ব্যবস্থা। মা প্রশ্রয় দেন। কিন্তু বাবা তখনো গররাজি। প্রশ্ন তোলেন, খরচ জুটবে কোথা থেকে। মা-ই পথ বাত্লান। বলেন, বাবা প্রতিবছর কলকাতায় ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে যা পান, তাতেই মেয়ের পড়ার খরচ কুলিয়ে যাবে। অতঃপর মাকে সঙ্গী করে শান্তিনিকেতনযাত্রা। যথারীতি ভর্তিপর্ব সমাপন। 888sport appয় তিন বছরের অনার্স পর্ব বলে ওখানে দু-বছরের এম.এ কোর্স থেকে এক বছরের রেয়াত। ফলে গতানুগতিক পরীক্ষায় বসার আর প্রয়োজন থাকলো না। মূল করণীয় একটি গবেষণাপত্র জমা দেওয়া। আনুষঙ্গিক; সেমিনারে একটি 888sport live পাঠ, অন্যদের অনুরূপ রচনার ওপর আলোচনা, ও, সবশেষে একটি মৌখিক পরীক্ষা। তত্ত্বাবধানে তাঁর প্রধান অভিভাবক ডক্টর প্রবোধ চন্দ্র সেন, সর্বজনমান্য প-িত একজন। তিনি নিজের ঘরেই একধারে জানালার পাশের এক টেবিল তাঁর পড়ার জন্যে ঠিক করে দেন। এইভাবে শুরু হলো সন্জীদা খাতুনের শান্তিনিকেতন পর্ব।
অনেকের ধারণা, তিনি সেখানে গানের তালিম নিতে যান। কিন্তু তা ভুল। 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বাংলায় অনার্স পাঠ সাঙ্গ করে তারই স্বীকৃতিতে ওখানে এক বছরে তিনি এম.এ. করতে পারেন। তাতেও থাকে ব্যতিক্রমী মেধার পরিচয়। শান্তিনিকেতনের শিক্ষাক্রমে একটা পূর্ণাঙ্গতা আছে। এই বই থেকেই জানতে পারি। স্কুলের ছেলেমেয়েদের জন্যে পাঠভবন; তারপর ধাপে-ধাপে কলেজ স্তরে শিক্ষাভবন ও তার ওপরে বিদ্যাভবন। তাঁর পড়াশোনা বিদ্যাভবনে। থাকতেন শ্রীভবনে। যারা গানে শান্তিনিকেতনের ছাপ চাইতো, তাদের চর্চা সংগীতভবনে। কলাভবনে 888sport live chatকলার আর সব। তাঁর গানে দীক্ষা আগেই হয়েছে 888sport appয়। মাধ্যমিক পাশ করে টানা তিন বছর সোহরাব হোসেনের শিষ্য হয়ে তাঁর কাছ থেকে সবটুকু নিয়ে নিজের ভিত মজবুত করেছেন। আত্মবিশ্বাস সেইসঙ্গে তৈরি। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল, দুজনের গানেই ছিল সমান আগ্রহ। শান্তিনিকেতনের পরিম-লে এসে তা রবীন্দ্রনাথে থিতু হয়। পরে আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এইটিই হয়ে দাঁড়ায় আমাদের সঠিক জাতীয় পরিচয়ের অভিমুখ খুঁজে নেবার লড়াইতে নেতৃত্ব দেবার এক বড় অবলম্বন। এ-বইতে তার কথা সরাসরি আসেনি। তবে শান্তিনিকেতন বহু সম্মানে তাঁকে যে সর্বোচ্চ মর্যাদায় পরে অভিষিক্ত করে এবং যা দিয়ে এখানে তাঁর কথার সমাপ্তি, তার পেছনে তাঁর ওই সময়ের সৃষ্টিশীল ভূমিকাও যে একটা ইতিবাচক বিষয় ছিল, তা অনুমান করাতেও আমাদের অশেষ তৃপ্তি।
তবে গানের জগৎ সেখানে যে তাঁর অধরা ছিল, তা নয়। আসলে গানের 888sport live chatিত সুষমায় ভরা ছিল শান্তিনিকেতন। তিনিও তাতে মিশে গেছেন। নিজেকেও চিনিয়েছেন। বইটিতে তাঁর 888sport sign up bonusর টানেই টুকরো টুকরো ছাড়া ছাড়া এরা উঠে এসেছে। এলোমেলো নয়। ট্যাপেস্ট্রির মতো। হালকা বুনোট। কিন্তু উজ্জ্বল। ভেসে যায় না। ভাসমান থাকে। দৃষ্টি কাড়ে। মাধুরী তার আমাদের মনেও ছড়ায়।
তাঁর কথামালায় এদিকটি নজরে আনার আগে বিদ্যাশৃঙ্খলায় নিজেকে প্রমাণ করার যে-দায়বদ্ধতায় তিনি তিনবার শান্তিনিকেতনে গিয়ে একটানা দীর্ঘতর মেয়াদে কাটিয়ে আসেন, তাতে তাঁর সার্থকতা কতটা কেমন, তা একটু বোঝার চেষ্টা করি।
এম.এ.-তে তিনি গবেষণাপত্র লেখেন সত্যেন দত্তর কাব্য নিয়ে। পরে তা বই হয়ে বেরোয়। নাম, কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। পরের সংস্করণে একটু পালটে, সত্যেন্দ্র কাব্য পরিচয়। তাঁর ওই এম.এ. থিসিসই এখন সত্যেন দত্তর 888sport app download apkর ওপর উচ্চতর পাঠে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বই। বিশ্বভারতীতে। অন্যত্রও। সেমিনারে 888sport live পড়েছিলেন প্রমথ চৌধুরীর ওপর। তা ছাপা হয় ওখানেই এক উঁচুদরের 888sport live footballপত্রে। মনে রাখতে হবে, দুটো কাজই তাঁর এম.এ. ডিগ্রি পাবার জন্য। অর্থাৎ অবিচ্ছিন্ন ছাত্রজীবন শেষ হয়নি। অথচ লেখায় মেধার দ্যুতি তাঁকে উচ্চতর পাঠচর্চাতেও তখনই অপরিহার্য করে তুলেছিল। তাঁর ডক্টরেট-গবেষণাও শান্তিনিকেতনে। মনের টান নিশ্চয় ছিল। তবে পঁচাত্তরে এখানে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ভীতিকর অবস্থাটাও তাঁকে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বারমুখো করে। সময়টা তিনি বৃথা যেতে দেন না। বিশ্বভারতীতেই পিএইচ.ডি করায় নিবন্ধিত হন। বিষয়ভাবনা আগে থেকে মাথার ভেতরে গোছানো ছিল। ন-মাসেই থিসিস লেখা শেষ করে জমা দেন। এত অল্পসময়ে বিষয়ের ওপর সুবিচার করে গবেষণা সন্দর্ভ খাড়া করা সহজ নয়। বিধিবিধানের বাধানিষেধও বিপত্তি ঘটাতে পারত। কিন্তু এম.এ. করার পরই রেজিস্ট্রেশন করা থাকায় অহেতুক ঝক্কি-ঝামেলা থেকে তিনি রেহাই পান। ডক্টরাল থিসিস ‘রবীন্দ্রসংগীতের ভাবসম্পদ’ও বিপুল প্রশংসা পায়। বই হয়ে বেরোলে এর মৌলিকত্ব সবার নজর কাড়ে। তাঁর প্রাগ্রসর চিন্তা ও উপলব্ধির গভীরতা এক মোহনায় মেশে। পোস্ট-ডক্টরাল কাজও এক ফাঁকে তিনি সারেন শান্তিনিকেতনেই। বিষয়টি অভিনব। ধ্বনি888sport apkের তত্ত্বভূমির ওপর দাঁড় করিয়ে 888sport app download apkর ভাবরূপের বিকাশকে তিনি বোঝার ও বোঝাবার চেষ্টা করেন। বাছাই করেছিলেন পাঁচটি 888sport app download apk : রবীন্দ্রনাথের ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’, সত্যেন দত্তের ‘চম্পা’, নজরুলের ‘সর্বহারা’, জীবনানন্দের ‘আমাকে একটি কথা দাও’ ও শঙ্খ ঘোষের ‘ভিখিরির আবার পছন্দ’। কাজটি একটু গুরুগম্ভীরই। তবে সমঝদারদের সামনে একটা চ্যালেঞ্জ। পোস্ট-ডক্টরাল কাজ হবারই যোগ্য। নাম, ধ্বনি থেকে 888sport app download apk। বইটিরও এই নাম অনুমান, ভবিষ্যতের গবেষকরা এখান থেকে অনেক ভাবনার খোরাক পাবেন। আর, তাঁর সব কাজে এটা ধরা পড়ে, তিনি ভুঁইফোঁড়, নন, হঠাৎ পাওয়া ধনও নন, চিরজাগ্রত মন তাঁকে চেতনায় সব সময়ে উন্মুখ রাখে, আতশ-কাচের নিচে ফেলে অনুসন্ধানী দৃষ্টি তাঁর জিজ্ঞাস্য কোনো বিষয়ের প্রাণরূপ ঠিকই খুঁজে পায়। তবে এই রকম নীরস-কাঠকাঠ ভাষায় কোনো অর্জনের ফিরিস্তি তিনি দেননি। হাল্কা-বৈঠকে চালে শান্তিনিকেতনে দিনগুলি-রাতগুলি তাঁর কেমন কেটেছে, তারই ছড়ানো-ছিটানো কথামালা থেকে এই তথ্যগুলো আমরা খুঁজে নিই। এগুলো বলা তাঁর লক্ষ্য নয়। এদের কারণে তাঁর যে অভিজ্ঞতার সঞ্চয়, তারই টুকরো টুকরো 888sport sign up bonusর প্রসন্ন রোমন্থনেই এখানে সবটা তিনি পার করেন। তার স্বর-ও-লুকোনো সুরের মেজাজ আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে। আমরা তৃপ্তি পাই। অভিজ্ঞতা যেখানে বিরক্তিকর, সেখানেও তাঁর রুচির সংযম বা ভাষার প্রফুল্ল বুনন ক্ষুণœ হয় না। তবে এমন পরিস্থিতি কম। অনেক গুণী মানুষের আদর ও সম্মান তিনি পান। তা আমাদের অশেষ আনন্দের। আরো ভালো লাগে, আশ্রম সব মিলিয়ে তাঁকে কাছে টানে বলে। বইয়ের এই মূল জায়গাটায় এবার নজর দিই।
বোধহয় ভালো হয়, যদি তাঁর লেখা থেকেই কিছু নমুনা তুলে নিই :
১. স্কুলের ওপর দিককার শিক্ষার্থীরা আমাদের একতলা ব্লকের বাথরুম ব্যবহার করত। যাবার পথে মিনুদিকে সম্ভাষণ না করলে চলত না ওদের। সেভেন, এইট, নাইন, টেন-এর গানপাগল মেয়ে এরা। সেভেনের শ্যামলী খাস্তগীর, এইটের রমা, নাইনের ইন্দ্রানী, মহাশ্বেতা আরও সব কারা। নতুন গান শিখলে শোনাত, গাইতে হতো মিনুদিকেও। প্রিয় গানের ফরমাশ হতো তো! আমি এম.এ. দ্বিতীয় পর্বের ছাত্রী। ওদের সঙ্গে কলকল করে গল্প চলত। কোথায় ভেসে যেত বয়সের বাধা। … (মিনুদি স্বয়ং সন্জীদা খাতুন, পৃ ১৪)
২. শ্যামলীল বাড়ির কোনাকুনি লাগোয়া একতলা বাড়িতে থাকতেন প-িত সুখময় ভট্টাচার্য। একবার শঙ্খ ঘোষ শান্তিনিকেতনে ওঁর সঙ্গে কী কাজে দেখা করতে গিয়েছিলেন। আমি সঙ্গ ধরলাম, প-িত মশাইয়ের বাড়ি যাব ওঁর সঙ্গে। কী রকম সংস্কার আছে-না-আছে জানা নেই। চললাম ভয়ে ভয়ে। আমি শ্যামলীর বাড়ির দোতলায় থাকি শুনে সুখময় বাবু একেবারে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন। রোজ ভোরে সীমানা বেড়ার গাছ থেকে পূজার জন্যে বনটগর তুলতে গিয়ে আমার গলা সাধার সুর শোনেন উনি। সে নাকি ভারি মধুর! … (পৃ ৪০)
৩. শান্তিনিকেতনের প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের প্রতি আমার মা খুব অনুকূল ছিলেন। জীবনে কত জায়গাতেই তো মুসলমান বলে হেনস্তার পাত্র হয়েছেন। তাই ওঁদের বাসায় আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন – এই বাড়িতে মুসলমান বলে কোনো মানুষকে ছোট করা হয় না। সত্যি সত্যি ওঁদের বাড়িতে কারও কাছে কোনো অবহেলা পাইনি। (পৃ ৫০)
৪. বেলার সঙ্গে রামকিঙ্কর বেইজের খুব জানাশোনা ছিল। ও একদিন ওঁর বাড়িতে ধরে নিয়ে গিয়েছিল আমাকে। ভাঙাচোরা মাটির ঘর। আমাদের শকুন্তলা মাসিমার ভাই 888sport live chatী শঙ্খ চৌধুরী ঘরটি করেছিলেন নিজের জায়গায়। নিজের থাকা হয়নি, রামকিঙ্করদাকে থাকতে দিয়েছিলেন। শুনতাম খুব সাপখোপ আছে। রামকিঙ্করদা থাকতেন নির্বিকার। এদিক-ওদিক এটা-ওটা গড়তে গড়তে অর্ধেক করে ফেলে রাখতেন। (পৃ ১০৭)
নমুনাগুলো থেকে বইয়ের স্বাদ কিছুটা হলেও, অনুমান, আন্দাজ করা যায়। রবীন্দ্রভাবনা ও রবীন্দ্রসংগীতের আঙিনায় কিংবদন্তি যাঁরা যেমন শান্তিদেব ঘোষ, শৈলজারঞ্জন মজুমদার, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (মোহরদি), ক্ষিতিমোহন সেন, সত্যেন সেন, নীলিমা সেন (বাকুদি) এই রকম অনেকের নাম ব্যক্তিগত চেনাজানার সূত্রে বারবার এসেছে। কোথাও আদিখ্যেতা নেই। সশ্রদ্ধ কৌতূহল ও বোঝাপড়া আছে।
নীলিমা সেন ও গীতা ঘটকের এক দ্বৈতগানের বর্ণনা রয়েছে, যা আমাকে শিহরিত করে। নীলিমা সেনের গান সামনে থেকে শুনেছি। এইখানেই। নাজিম মাহমুদ রবীন্দ্রসংগীত মেলার আয়োজন করেছিলেন। তাতে এসেছিলেন। তাঁর গানের স্বাদ এখনো বহু সমাদরে মাথায় বয়ে বেড়াই। তখন তাঁকে পা ছুঁয়ে প্রণাম করতে পেরেছি – এ আমার এক পরম সঞ্চয়। তাঁর কথা বইতে যেমন আছে তাতে এতটুকু অতিরঞ্জন নেই। গীতা ঘটককে দেখিনি। তবে ওই সময়ে রেডিওতে তাঁর গান শুনেছি। দারুণ জোরালো। নম্রতার দিকে নয়, বরং ওজস্বিতার দিকে টান। ঋত্বিক ঘটকের মেঘে 888sport app তারা ছবিতে তাঁর গাওয়া ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি’, ‘চিরজীবনের সনে’ মনে ‘গাঁথা হয়ে’ আছে। তবে ওই ঘটক পরিবারে ওই পর্বে আরো অনেকের মতো তিনিও বোধহয় ছিলেন একটু-আধটু ছিটগ্রস্ত। প্রতিভার পরিচর্যা বুঝি সবটুকু হলো না। কিছু অতৃপ্তি থেকে যায়।
প্রফেসর অমিয় কুমার দাশগুপ্ত ও তাঁর কন্যা অলকনন্দা প্যাটেলও যে সন্জীদা খাতুনের 888sport sign up bonusর সঞ্চয়, এটা দেখে ভালো লাগে, অলকনন্দা তাঁর শৈশবের বরিশাল (বিশেষ করে গৈলা অঞ্চল) ও 888sport appকে যে এখনো সযতেœ মনে লালন করেন, তার পরিচয় পাই তাঁর অসামান্য 888sport sign up bonusকথা পৃথিবীর পথে হেঁটেতে। আবুল হাসনাতের উদ্যোগে আমাদের বেঙ্গল পাবলিকেশন্স থেকেই বইটি ছাপা। তা আমার তৃপ্তি বাড়ায়।
সন্জীদা খাতুন বইটির সমাপ্তি টেনেছেন তাঁর বিশ্বভারতী থেকে সর্বোচ্চ সম্মাননা দেশিকোত্তমপ্রাপ্তির সুখ888sport sign up bonusর অকপট বর্ণনা দিয়ে। নিঃসন্দেহে এ এক বিরাট অর্জন। গোটা বিশ্বের সেরা কীর্তিমান-কীর্তিময়ীদের ভেতর থেকেই এর জন্য নাম বাছাই করা হয়। তাঁর প্রতিভার এই স্বীকৃতিতে আমরাও গৌরববোধ করি। তবে শান্তিনিকেতনের দিনগুলিই শুধু এর কারণ নয়। হয়তো তা এক উল্লেখযোগ্য সৃষ্টিশীল উপাদান। কিন্তু সমস্তটা নয়। এই 888sport appsের অভ্যুদয়ে সাংস্কৃতিক সংগ্রামে ছায়ানটকে কেন্দ্র করে তাঁর যে অনমনীয় নেতৃত্ব, যা এখনো বহুমাত্রিক কর্মকা-ে সচল, তার ভূমিকাও এখানে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বইটির পরিধিতে তা নিশ্চয় পড়ে না। সংগত কারণেই লেখক একে বাইরে রাখেন। তারপরেও এই প্রসঙ্গে আমরা এটা মনে রাখি। বইয়ের সীমানা পেরিয়ে আমাদের
কৃতজ্ঞতা এদিকেও প্রসারিত হয়। নিশ্চয় এখানে তা আলোচনায় আসা উচিত নয়। তবু এই ত্রুটি অমার্জনীয় হলেও তা আমার স্বেচ্ছাকৃত। এবং অনুতপ্ত নই।
লেখক তাঁর আখ্যান শেষ করেন এই বলে : ‘জীবনে আমরা যা চাই, তা সব সময়ে পাই না। মনের কোণে এক গোপন আক্ষেপ থেকেই যায়। কিন্তু এমন কিছু জিনিস আছে, যার আকস্মিক প্রাপ্তি জীবনের সমস্ত ক্ষোভকে শান্ত করে দিতে পারে। দেশিকোত্তম অর্জন আমার জীবনের সেই পরম প্রাপ্তি। ধন্য আমার জীবন, ধন্য এই জন্ম। আমার চেয়ে বেশি সুখী কি এ পৃথিবীতে আর কেউ হতে পেরেছে!’ এই আনন্দ আমাদেরও।
বইটি কৃশ হলেও পূর্ণ – ‘ফুল্ল কুসুমিত দ্রুমদল শোভিনী।’ অভিজ্ঞতা অমø-মধুর যাই হোক না কেন, লেখার প্রসন্নতা বরাবর অবিকল। আমরা কৃতার্থ।
এখানে উৎসর্গ-পাতায় পড়ি, ‘স্নেহভাজন পিয়াস মজিদের অনুরোধে শান্তিনিকেতনের দিনগুলি লেখা হয়েছে। এটি তাঁকেই উৎসর্গ করলাম।’ বিপুল মুগ্ধতা ছড়ানো এই কাজটির পেছনে তরুণ প্রতিভাবান কবি পিয়াস মজিদ যে সর্বান্তঃকরণে লেগে থেকেছেন, এজন্য তাঁর কাছেও আমরা ঋণী।