সময়ের জবানবন্দি

কালের ধুলোয় লেখা : শামসুর রাহমান

প্রকাশক : অন্যপ্রকাশ

৩৮/২ বাংলাবাজার 888sport app-১১০০

মূল্য : ২৫০ টাকা

এক

‘যা হারিয়ে যায় তা আগলে বসে রইব কত আর- এমন একটি গান আছে রবীন্দ্রনাথের। আগলে বসে তো লাভ নেই। আগলে রাখা যে যায় না! সবই ঝরে যায়, যেমন পাতা ঝরে পজ্ঝড়ে, গাছের পাতা ঝরাবার কালে। 888sport sign up bonus প্রতারণা করে, সময় প্রতারণা করে। ফেলে-আসা অতীত মনের 888sport sign up bonusপঞ্জিকায় কালিক আনুপূর্বিকতা তছনছ করে দেয়। মনের কাণ্ডকারখানাই এমন। এ কারণেই সম্ভবত 888sport sign up bonusকথা লেখা ভারি ঝঞ্ঝাটের। আত্মজীবনী তাই লিখে ওঠা সহজ নয়, যেহেতু 888sport sign up bonusই এখানে উৎসমূল। অথচ 888sport sign up bonusর ওপরে ভর করেই 888sport sign up bonusচারণিক খণ্ডরচনা – যা ধারাবাহিক নয়, বিচ্ছিন্ন, কালানুক্রম দাবি করে না – লেখা অনেক বেশি সহজ। সংক্ষেপে কথাটা এমন দাঁড়ায় : বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা প্রসঙ্গ কিংবা নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা সময়কে কেন্দ্র করে 888sport sign up bonusচারণ রচনার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন আত্ম888sport sign up bonus লিখে ওঠা।

শামসুর রাহমান যখন দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় তাঁর আত্মকথা লিখে যাচ্ছিলেন তখন তা পাঠ করার সৌভাগ্য আমার হয়নি। পড়ার সুযোগ মিলল বই হয়ে বেরোবার পর। কালের ধুলোয় লেখা এ বছরে 888sport cricket BPL rateের বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। বৃহদায়তন গ্রন্থ, ৩৩৬ পৃষ্ঠার; ঈর্ষণীয় মুদ্রণপারিপাট্য ও বইটির গঠন-সৌকর্য। শামসুর রাহমান আমার প্রিয় মানুষদের একজন। না বললেও চলে আমি তাঁর এক অনুরাগী পাঠক, পদ্য-গদ্য উভয়েরই। তাঁর গদ্যের অন্যরকম স্বাদ আছে আমার কাছে। এই প্রত্যাশা, গভীর মর্মবেদনায় বলি, আমার পূরণ হলো না। আশাভঙ্গের কারণও আমার কাছে অস্পষ্ট নয়। সেটি কিঞ্চিৎ বিশদ করা প্রয়োজন। এই রচনা দৈনিক সংবাদপত্রে কিস্তিওয়ারি লেখা। যেমন কলাম লেখা হয়ে থাকে, প্রতিটি লেখাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। সে-অর্থে ধারাবাহিক রচনা নয়। ধারাবাহিক রচনায় সম্পূর্ণতা আসে লেখাটি শেষ হওয়ার পর, তার পূর্ব পর্যন্ত প্রতি কিস্তিতেই রচনার সম্প্রসারণ ঘটতে থাকে। কালের ধুলোয় লেখার যদি সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন করে কিস্তিতে কিস্তিতে প্রকাশিত হতো তাহলেই ধারাবাহিক রচনা হয়ে দাঁড়াত। কিন্তু পরিকল্পনা তো সংগত কারণেই তেমন ছিল না। যেহেতু দৈনিক পত্রিকা, কেউ সংরক্ষণ করে না, পাঠকের নির্দিষ্টতা বা 888sport free betসাম্য নেই, তাই লেখাকে প্রত্যেকবারই ‘নতুন’ হতে হয়।

এর অবশ্যম্ভাবী ফল হলো পৌনঃপুনিকতা। অনিবার্য না-হলে এটি নিরতিশয় বিরক্তিকর, আর সেজন্যেই গুণ হিসেবে গণ্য হয় না। অথচ যদি ভেবে নেওয়া হয়, আমার এ-লেখাটি কোনো ধারাক্রমের অন্তর্ভুক্ত নয়, নতুন, এর পাঠকও নতুন – যিনি এর আগের কিস্তি পড়েননি, তখন আগের বলা বহু কথাই বারবার ফিরে আসবে এবং পাঠকও তাকে পুনরাবৃত্তি হিসেবে শনাক্ত করতে অপারগ হবেন। তিনি তো ‘ধারাবাহিক’ কোনো রচনা পড়ছেন না, প্রত্যেকবারই নতুন লেখা পড়ছেন, আগে কোনো কিস্তিতে যদি পড়েও থাকেন ততদিনে তা ভুলে গেছেন। মনের পেছনে সরে-যাওয়া, চোখের আড়ালে পড়ে-থাকা এই লেখাই পাঠক যখন একসঙ্গে গ্রন্থিত দেখতে পান এক আধারের অবয়বে, তখনই তিনি পৌনঃপুনিকতার মুখোমুখি হন, রচনার বা বিন্যাসের ত্রুটি বিবেচনায় না এনে পারেন না। তাই নিতান্তই প্রয়োজন ছিল, গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে সম্পাদনার। এ কাজটি অবশ্যম্ভাবীরূপে যে লেখকেরই দায়িত্ব তা নয়। দায়িত্ব প্রধানত প্রকাশন-সংস্থার। এ জন্যেই পশ্চিমে যে-কোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে সম্পাদনাবিভাগ থাকে – যার দায়িত্ব পাণ্ডুলিপি পাঠ করে প্রয়োজনবোধে লেখককে পরিমার্জন-পরিবর্জন-সংক্ষেপণ-পরিবর্ধন ইত্যাদির কথা জানানো ও লেখকের সহযোগিতায় মুদ্রণের চূড়ান্ত পাঠ তৈরি করা। এমন ঘটে উঠলে দেখা যেত, এই বই আয়তনে অন্তত এক-চতুর্থাংশ কমে গেছে, গ্রন্থশেষে নির্ঘণ্ট (যা এ-জাতীয় গ্রন্থে একান্ত জরুরি) যুক্ত হয়েছে গ্রন্থের, 888sport app download apkর ও ব্যক্তিনামের, আর মুদ্রণবিভ্রাটজনিত অবোধ্য বাক্য সংশোধিত হয়েছে।

আমি নিঃসন্দেহ নই, কালের ধুলোয় লেখার সমুদয় রচনা শামসুর রাহমান স্বহস্তে লিখে উঠতে পেরেছেন কি-না। তাঁর দৃষ্টিশক্তির যে-অবস্থা বহু বছর ধরে তাঁকে বিপর্যস্ত করে রেখেছে তাতে এমন হওয়া খুবই সম্ভব যে, তাঁকে শ্রুতিলিখনের মাধ্যমে লিখতে হয়। এ বইয়ের প্রধান ত্রুটিই এখানে যে, কিস্তিবন্দি লেখাগুলোকে একসঙ্গে জড়ো করে দু’মলাটের মধ্যিখানে সেঁটে দেওয়া হয়েছে। তাই রচনার অখণ্ডতা, বইটির ‘একটি-রচনা-হয়ে-ওঠা’, ঘটে উঠতে পারেনি। লেখক-প্রকাশক উভয়ের প্রতিই আমার অভিযোগ। প্রথম ব্যক্তি আমার শ্রদ্ধেয়, বয়সে গুরুজন; দ্বিতীয় জন আমার বয়ঃকনিষ্ঠ, অনুজপ্রতিম বন্ধু। অভিযোগ উত্থাপনের অধিকার আমি, সেহেতু, সংরক্ষণ করি। এই অর্ধশিক্ষিত গরিব দেশে যিনি আর কিছুই না করে (ইচ্ছে করলেই করতে পারেন) শুধুই লেখেন এবং যিনি আর কিছুই না করে (আলু-পটল বিক্রিও কিন্তু ব্যাবসাই) লেখা গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন, আমার দৃষ্টিতে দুজনেই শব্দব্রহ্মের সাধক, কল্যাণব্রতী, নমস্য। আমারও বয়স হয়েছে, বৃদ্ধই বলা উচিত, আমি – লজ্জা নেই স্বীকার করতে – লেখক ও প্রকাশক বিষয়ক ধারণায় প্রাচীনপন্থী। লেখা ও প্রকাশনা কোনোটিই পণ্য হিসেবে আমার কাছে বিবেচিত হয় না। সে-অর্থে, কে জানে, হয়ত আমি অনাধুনিকও।

অতএব, পিছিয়ে-পড়া মানুষের কাণ্ডজ্ঞানপ্রসূত ক্ষমাপ্রার্থনাপূর্বক বাকি কথা নিবেদন করি।

দুই

কালের ধুলোয় লেখা এক অসামান্য বই। রচনার গুণে যতখানি-না তার চেয়ে বেশি বিষয়মাহাত্ম্যে। আমি কৃতজ্ঞ লেখকের কাছে। কত পুরোনো দিন, পুরোনো কথা, হারিয়ে যাওয়া মানুষজনকে যে তিনি আমার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিলেন! শামসুর রাহমানকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই আমার। আমি এ শহরে জন্মাইনি বটে, কিন্তু অর্ধ শতাব্দীরও বেশি এর বাসিন্দা। তাঁর পারিবারিক 888sport sign up bonusর বাইরে 888sport app শহর, তার সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে যে-যুগের চিত্র তিনি এঁকেছেন আমি নিজেও কমবেশি সে-যুগেরই। ফলে এ-তো কেবল তাঁরই নয়, কিয়দংশ কি আমারও 888sport sign up bonusকথা নয়? মানে, তিনি এখানে আমাদের, আমার সমবয়সীদেরও, 888sport sign up bonusকথা লিখলেন। 888sport app শহর আমাদের সকলের চোখের সামনে কী দ্রুতই-না পাল্টে গেল! নগর কর্তৃপক্ষের ইতিহাসজ্ঞান ও কাণ্ডজ্ঞান থাকলে অতীতের 888sport appর বিভিন্ন সময়ের ছবি তাঁরা তুলে রাখতেন আলোকচিত্রে কি রংতুলিতে। আমার গেণ্ডারিয়া পাড়ার ইস্টিশনগামী রাস্তাটি যে মধ্যষাটের দশকেও শহরের সুন্দরতম সড়ক ছিল কেউ বিশ্বাস করবে? সারাটা পথ লাল সুরকি-বিছানো, দু-পাশে দোতলার বেশি উঁচু বাড়ি নেই, বেশির ভাগই একতলা, ফাঁকা জায়গা প্রচুর, আর সারি সারি কৃষ্ণচূড়া দু-পাশ আলো করে দাঁড়িয়ে আছে। 888sport app শহরে এরকম নানান এলাকাই ছিল 888sport app download for androidযোগ্য, সেকালের গর্ব ও গৌরব, একালে সম্পূর্ণ বিস্মৃত। এইসব বেদনার কথা বুক ভেঙে দিতে লাগল পড়তে-পড়তে। ল্যাম্পপোস্টের বাতিওয়ালা আমি দেখিনি, কিন্তু ভিস্তির মশকে পানি বয়ে নিয়ে যাওয়া দেখেছি, নাজিমুদ্দিনের গাড়িও। কী সব দিন ছিল!

কিন্তু সেকালের 888sport app নিয়ে বহু পূর্বেই সুখপাঠ্য বই তিনি লিখে গেছেন, তাঁর 888sport sign up bonusর শহর। আলোচ্য গ্রন্থের গুরুত্ব সেখানে নয়। এ বই তাঁর কবি হয়ে ওঠার ইতিহাস ধরে রেখেছে। এটিই সর্বাপেক্ষা প্রণিধানযোগ্য। এ এক কবির কাহিনী, আমাদের কালের সর্বাগ্রগণ্য ও সর্বশ্রেষ্ঠ জীবিত কবির সৃজনপ্রক্রিয়ার দলিল। চালচিত্রে এসেছে সতীর্থ বান্ধবদল, তাঁর বিদ্যাচর্চা ও কাব্যচর্চার প্রেক্ষাপট। এই ইতিহাস আমাদের সংস্কৃতি-ইতিহাসেরই অংশ। কবি ও লেখকবন্ধু, এদেশের বুদ্ধিজীবী ও বিদ্বৎসমাজের সত্যনিষ্ঠ আলেখ্য জানা বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য একান্ত অপরিহার্য।

যে-সব ব্যক্তিত্বের কথা আছে তাঁদের অনেককেই আমি চিনি। এরকম মানুষজন ক্রমশ বিরল হয়ে যাচ্ছেন। যেমন, ধরা যাক, এবিসি। কী অসামান্য কাব্যপ্রেমই-না ছিল মানুষটির! আর কী অসামান্য 888sport sign up bonusশক্তি! জনসন দা-র যোগ্য সুহৃদ সেদিক থেকে। মস্কোয় বসে রাষ্ট্রদূত জনসন দা-র মুখেই শোনা। ‘পূর্বাণী’র দোতলায় বিশেষ কক্ষে সবান্ধব আড্ডা চলছে। কী প্রয়োজনে দরকার পড়ল এবিসির। জনসন দা ফোন করে বললেন, ‘বারেক তোমারে শুধাবারে চাই’। বলেই ফোন ছেড়ে দিলেন। অন্যেরা হৈ-হৈ করে উঠলেন – আরে, কিছুই তো বললেন না। বারেক সাহেব ওরফে এবিসি ঠিকই যথাসময়ে হাজির, শুধাবার যে ‘সুধা বার’ তা বুঝতে এক লহমা দেরি হয়নি। এই হচ্ছে সেন্স অব হিউমার। জনসন দা সঞ্চয়িতার পাতা না খুলে, – খুলে বসে ছিলাম আমরা- পুরো ‘কর্ণ-কুন্তী সংবাদ’ মুখস্থ আবৃত্তি করে শুনিয়েছিলেন। এইসব বর্ণাঢ্য মানুষের আকাল এখন। এবিসি নেই। জনসন দা আছেন। শতায়ু হোন, কায়মনোবাক্যে চাই। এমনি আরেক বর্ণিল চরিত্র আমাদের দেবুদা- চিত্রী দেবদাস চক্রবর্তী। তাঁর কথা একবার উঠেই থেমে গেছে, এই চিত্রীর কথা অনেক লিখতে পারতেন কবি। এমনই আরেকজন আমাদের ‘প্রভু’, খালেদ চৌধুরী, 888sport appয় এক সময়ের কিংবদন্তি। তাঁকে সংগতভাবেই এ বইয়ের পাতায় দেখার আশা করেছিলাম। পঞ্চাশের দশকে 888sport appর সংস্কৃতিজগতে কবি-গদ্যকার-সংগীতজ্ঞ-চিত্রকর-ভাস্কর সকলেরই একত্রে কমবেশি চলাফেরা ছিল, পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সখ্য ছিল। শামসুর রাহমানের সে-সময়ের বন্ধুবৃত্তের ইতিকথা অন্য বহু জনের মতো আমারও কিছুটা জানা। পাটুয়াটুলির সওগাত পত্রিকার অফিস তৎকালীন এইসব তরুণদের কেমন আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছিল তার আরেকটু বিস্তারিত বয়ান শুনতে চেয়েছিলাম। কথার পিছনে তাহলে আরো অনেক কথা এসে পড়ত, যুগচিত্র-অঙ্কন সম্পূর্ণতর হতো। তবে হাসান হাফিজুর রহমানের কথা এসবের ভিতরে বেশ অনেকখানি স্থান নিয়েছে দেখে তৃপ্তি পেয়েছি। প্রায় অভিন্নহৃদয় বন্ধুটির নিকট থেকে এই মনোযাগ তো প্রত্যাশিতই। হাসান কী অকালেই-না চলে গেলেন! তাঁদের ঐ বৃত্তে আরো ছিলেন 888sport live chatী আমিনুল ইসলাম, কথা888sport live footballিক-888sport live chatসমালোচক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর প্রমুখ। 888sport live chatী হামিদুর রহমান, যাঁর অবদান রয়ে গেছে 888sport appর শহীদ মিনারে, আর নভেরার গল্প শোনার ইচ্ছে যদি আমার হয়েই থাকে তো দোষ দেবো কি নিজেকে? তাঁরা তখন প্রায় সকলেই সমবয়সী, 888sport app তথা সমস্ত দেশের 888sport live football-888sport live chatের জগৎ তাঁদের হাত দিয়ে তৈরি হয়ে উঠছে,- তাঁদের অলক্ষ্যে। শহীদ কাদরীর কথা আছে কিছু, কিন্তু অসমবয়সী বন্ধুত্বের আলেখ্য নেই, থাকা প্রত্যাশিত ছিল। খুবই প্রয়োজন ছিল রেক্স আর গুলিস্তানের আড্ডা এবং আমাদের বুড়ো ভাইয়ের উপাখ্যান। তাঁর পঞ্চাশবর্ষপূর্তিতে যে-সংবর্ধনা এদেশের কবি-লেখকেরা মিলে বাংলা একাডেমীতে দিয়েছিলেন তা-ই কেমন করে বাদ পড়ল বুঝলাম না। আত্মমগ্ন ও স্বেচ্ছানির্বাসিত বটুর (মাহমুদুল হক) গপ্পোও তিনি করেননি, একবার নামোল্লেখ ছাড়া।

এত কথা বলছি এ-কারণে যে, আসলেই এক অকল্পনীয় সুন্দর সময়ের সাক্ষী শামসুর রাহমান। এ বই তাঁর নিজেকে ঘিরে তাঁর সময়েরই কথা। সে-সময় আর নেই। যদি সুদিন কখনো আসে, সে-সময় হয়ত আবার কখনো আসবে, কিন্তু আমরা কেউ তখন থাকব না।

কালের ধুলোয় লেখা আনুক্রমিক রচনা হলে স্তরবিন্যাসগুলো স্পষ্টভাবে সহজে ধরা যেত। কিঞ্চিৎ পরিশ্রম করলেই অবশ্য তা শনাক্ত করা যায়। যেমন, রাজনীতির প্রসঙ্গ এনেছেন। পাঠক হিসেবে আমরা জানি, শামসুর রাহমান রাজনীতিতে বীতরাগ ছিলেন এক সময়। সেই মানুষটিই কীভাবে ইচ্ছানিরপেক্ষ-ভাবে স্রোতের টানে রাজনীতিমনস্ক হয়ে ওঠেন তার আভাস দিয়েছেন। বুঝে যাই, সময় ও 888sport live chatীচৈতন্য কীভাবে গোপনে একই শিকড়ে রাজনীতির বীজ গেঁথে রাখে। তাঁর ‘সফেদ পাঞ্জাবি’ বা ‘আসাদের শার্ট’ কি ‘ টেলেমেকাস’ কি ‘হাতির শুঁড়’ 888sport app download apkর পশ্চাদবর্তী সৃজনক্রিয়া একই সঙ্গে ব্যক্তিমানুষ ও কবি শামসুর রাহমানকে চিনিয়ে দেয়। কবির অন্তর্জীবনের এই ইতিহাস তিনি নিজে না উদ্ঘাটন করলে তো আমাদের জানা সম্ভব হতো না।

888sport appর সংস্কৃতিজগতের আরেকটি চেহারা আমাদের অজানা। সেটুকু জানানোর জন্য আমি কৃতজ্ঞতা বোধ করেছি। তা হলো 888sport appয় উর্দু 888sport app download apkর চর্চা ও কয়েক জন উর্দু কবির প্রসঙ্গ। নওশাদ নূরীর 888sport app download apkর সঙ্গে আমি পরিচিত নই, আমি উর্দু ভাষা জানি না। কিন্তু যে-ভালোবাসা ও আবেগে, 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে বাঙালি কবি শামসুর রাহমান ঐ অবাঙালি উর্দুভাষী কবিকে হাজির করেছেন তাতে একটি মূল্যবোধ ও কাণ্ডজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হয়। সেটি এই যে, আমাদের মনের সাংস্কৃতিক জঙ্গমতা 888sport live chat ও সংস্কৃতির জন্য প্রয়োজন। আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে এই ভাবনা নতুন করে ভাববার সময় এসেছে : দেশের ভিতরে একই ভাষায়, একই সংস্কৃতি, একই ধর্মের জনগোষ্ঠী কোনো জাতিসত্তার রাষ্ট্রশক্তিকে রুদ্ধপথ করে কি-না। 888sport appর সংস্কৃতিজগৎ ভিন্ন চেহারায় উপস্থিত করার জন্যে আমি তাঁর নিকট ঋণীবোধ করছি।

আমার কৃতজ্ঞ হওয়ার কারণ আরো আছে। সেই প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে শান্তিনিকেতনে যে- লেখকসম্মেলন হয়েছিল তার হৃদয়সংবেদী আলেখ্য এ-গ্রন্থে মিলল। ঐ সম্মেলনে পঠিত লেখাগুলো নিয়ে সেকালে একটি বইও বেরিয়েছিল শান্তিনিকেতন থেকে, উত্তরকৈশোরে আমার চোখে পড়েছে, আর পুনর্মুদ্রিত হয়নি। লোকে এখন ভুলেই গেছে সে-সব কথা। ফের মনে পড়ে গেল। আমাদের এদেশের রাজনীতির সদর-অন্দরেও আলো ফেলা হয়েছে দু-চার জায়গায়। এসেছে কিংবদন্তির রাজা অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের প্রসঙ্গ, রাজনীতিতে বুদ্ধিজীবী ও জ্ঞানসাধকদের অবদান- ৬ দফার অন্তরালবর্তী ঘটনা। যদিও এ- গ্রন্থে অকথিত, তবু আমরা বুঝতে পারি- জ্ঞানবুদ্ধিবিহীন রাজনীতি যে-সর্বনাশের অতল গহ্বরে দেশকে এখন ক্রমাগত ঠেলে ফেলছে, রাজনীতিকে সুস্থির হতে হলে বিদ্বৎসমাজকে আজ হোক, কাল হোক ডেকে আনতেই হবে। বহু বিষয়েই শামসুর রাহমান এভাবে আমাদের ভাবনাকে উস্কে দেন।

কালের ধুলোয় লেখার মূল্য লেখক ও সময়ের কারণে। আমাদের সংস্কৃতি-ইতিহাসের এক অধ্যায় লিপিবদ্ধ হয়ে রইল এখানে। আমাদের জন্যে তো বটেই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট তাই গ্রন্থটি অমূল্য। ৎ

চোখের আড়ালে পড়ে-থাকা এই লেখাই পাঠক যখন একসঙ্গে গ্রন্থিত দেখতে পান এক আধারের অবয়বে, তখনই তিনি পৌনঃপুনিকতার মুখোমুখি হন, রচনার বা বিন্যাসের ত্রুটি বিবেচনায় না এনে পারেন না। তাই নিতান্তই প্রয়োজন ছিল, গ্রন্থাকারে প্রকাশের পূর্বে সম্পাদনার। এ কাজটি অবশ্যম্ভাবীরূপে যে লেখকেরই দায়িত্ব তা নয়। দায়িত্ব প্রধানত প্রকাশন-সংস্থার। এ জন্যেই পশ্চিমে যে-কোনো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে সম্পাদনাবিভাগ থাকে – যার দায়িত্ব পাণ্ডুলিপি পাঠ করে প্রয়োজনবোধে লেখককে পরিমার্জন-পরিবর্জন-সংক্ষেপণ-পরিবর্ধন ইত্যাদির কথা জানানো ও লেখকের সহযোগিতায় মুদ্রণের চূড়ান্ত পাঠ তৈরি করা। এমন ঘটে উঠলে দেখা যেত, এই বই আয়তনে অন্তত এক-চতুর্থাংশ কমে গেছে, গ্রন্থশেষে নির্ঘণ্ট (যা এ-জাতীয় গ্রন্থে একান্ত জরুরি) যুক্ত হয়েছে গ্রন্থের, 888sport app download apkর ও ব্যক্তিনামের, আর মুদ্রণবিভ্রাটজনিত অবোধ্য বাক্য সংশোধিত হয়েছে।

আমি নিঃসন্দেহ নই, কালের ধুলোয় লেখার সমুদয় রচনা শামসুর রাহমান স্বহস্তে লিখে উঠতে পেরেছেন কি-না। তাঁর দৃষ্টিশক্তির যে-অবস্থা বহু বছর ধরে তাঁকে বিপর্যস্ত করে রেখেছে তাতে এমন হওয়া খুবই সম্ভব যে, তাঁকে শ্রুতিলিখনের মাধ্যমে লিখতে হয়। এ বইয়ের প্রধান ত্রুটিই এখানে যে, কিস্তিবন্দি লেখাগুলোকে একসঙ্গে জড়ো করে দু’মলাটের মধ্যিখানে সেঁটে দেওয়া হয়েছে। তাই রচনার অখণ্ডতা, বইটির ‘একটি-রচনা-হয়ে-ওঠা’, ঘটে উঠতে পারেনি। লেখক-প্রকাশক উভয়ের প্রতিই আমার অভিযোগ। প্রথম ব্যক্তি আমার শ্রদ্ধেয়, বয়সে গুরুজন; দ্বিতীয় জন আমার বয়ঃকনিষ্ঠ, অনুজপ্রতিম বন্ধু। অভিযোগ উত্থাপনের অধিকার আমি, সেহেতু, সংরক্ষণ করি। এই অর্ধশিক্ষিত গরিব দেশে যিনি আর কিছুই না করে (ইচ্ছে করলেই করতে পারেন) শুধুই লেখেন এবং যিনি আর কিছুই না করে (আলু-পটল বিক্রিও কিন্তু ব্যাবসাই) লেখা গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন, আমার দৃষ্টিতে দুজনেই শব্দব্রহ্মের সাধক, কল্যাণব্রতী, নমস্য। আমারও বয়স হয়েছে, বৃদ্ধই বলা উচিত, আমি – লজ্জা নেই স্বীকার করতে – লেখক ও প্রকাশক বিষয়ক ধারণায় প্রাচীনপন্থী। লেখা ও প্রকাশনা কোনোটিই পণ্য হিসেবে আমার কাছে বিবেচিত হয় না। সে-অর্থে, কে জানে, হয়ত আমি অনাধুনিকও।

অতএব, পিছিয়ে-পড়া মানুষের কাণ্ডজ্ঞানপ্রসূত ক্ষমাপ্রার্থনাপূর্বক বাকি কথা নিবেদন করি।

দুই

কালের ধুলোয় লেখা এক অসামান্য বই। রচনার গুণে যতখানি-না তার চেয়ে বেশি বিষয়মাহাত্ম্যে। আমি কৃতজ্ঞ লেখকের কাছে। কত পুরোনো দিন, পুরোনো কথা, হারিয়ে যাওয়া মানুষজনকে যে তিনি আমার সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিলেন! শামসুর রাহমানকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই আমার। আমি এ শহরে জন্মাইনি বটে, কিন্তু অর্ধ শতাব্দীরও বেশি এর বাসিন্দা। তাঁর পারিবারিক 888sport sign up bonusর বাইরে 888sport app শহর, তার সমাজ ও সংস্কৃতি নিয়ে যে-যুগের চিত্র তিনি এঁকেছেন আমি নিজেও কমবেশি সে-যুগেরই। ফলে এ-তো কেবল তাঁরই নয়, কিয়দংশ কি আমারও 888sport sign up bonusকথা নয়? মানে, তিনি এখানে আমাদের, আমার সমবয়সীদেরও, 888sport sign up bonusকথা লিখলেন। 888sport app শহর আমাদের সকলের চোখের সামনে কী দ্রুতই-না পাল্টে গেল! নগর কর্তৃপক্ষের ইতিহাসজ্ঞান ও কাণ্ডজ্ঞান থাকলে অতীতের 888sport appর বিভিন্ন সময়ের ছবি তাঁরা তুলে রাখতেন আলোকচিত্রে কি রংতুলিতে। আমার গেণ্ডারিয়া পাড়ার ইস্টিশনগামী রাস্তাটি যে মধ্যষাটের দশকেও শহরের সুন্দরতম সড়ক ছিল কেউ বিশ্বাস করবে? সারাটা পথ লাল সুরকি-বিছানো, দু-পাশে দোতলার বেশি উঁচু বাড়ি নেই, বেশির ভাগই একতলা, ফাঁকা জায়গা প্রচুর, আর সারি সারি কৃষ্ণচূড়া দু-পাশ আলো করে দাঁড়িয়ে আছে। 888sport app শহরে এরকম নানান এলাকাই ছিল 888sport app download for androidযোগ্য, সেকালের গর্ব ও গৌরব, একালে সম্পূর্ণ বিস্মৃত। এইসব বেদনার কথা বুক ভেঙে দিতে লাগল পড়তে-পড়তে। ল্যাম্পপোস্টের বাতিওয়ালা আমি দেখিনি, কিন্তু ভিস্তির মশকে পানি বয়ে নিয়ে যাওয়া দেখেছি, নাজিমুদ্দিনের গাড়িও। কী সব দিন ছিল!

কিন্তু সেকালের 888sport app নিয়ে বহু পূর্বেই সুখপাঠ্য বই তিনি লিখে গেছেন, তাঁর 888sport sign up bonusর শহর। আলোচ্য গ্রন্থের গুরুত্ব সেখানে নয়। এ বই তাঁর কবি হয়ে ওঠার ইতিহাস ধরে রেখেছে। এটিই সর্বাপেক্ষা প্রণিধানযোগ্য। এ এক কবির কাহিনী, আমাদের কালের সর্বাগ্রগণ্য ও সর্বশ্রেষ্ঠ জীবিত কবির সৃজনপ্রক্রিয়ার দলিল। চালচিত্রে এসেছে সতীর্থ বান্ধবদল, তাঁর বিদ্যাচর্চা ও কাব্যচর্চার প্রেক্ষাপট। এই ইতিহাস আমাদের সংস্কৃতি-ইতিহাসেরই অংশ। কবি ও লেখকবন্ধু, এদেশের বুদ্ধিজীবী ও বিদ্বৎসমাজের সত্যনিষ্ঠ আলেখ্য জানা বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য একান্ত অপরিহার্য।

যে-সব ব্যক্তিত্বের কথা আছে তাঁদের অনেককেই আমি চিনি। এরকম মানুষজন ক্রমশ বিরল হয়ে যাচ্ছেন। যেমন, ধরা যাক, এবিসি। কী অসামান্য কাব্যপ্রেমই-না ছিল মানুষটির! আর কী অসামান্য 888sport sign up bonusশক্তি! জনসন দা-র যোগ্য সুহৃদ সেদিক থেকে। মস্কোয় বসে রাষ্ট্রদূত জনসন দা-র মুখেই শোনা। ‘পূর্বাণী’র দোতলায় বিশেষ কক্ষে সবান্ধব আড্ডা চলছে। কী প্রয়োজনে দরকার পড়ল এবিসির। জনসন দা ফোন করে বললেন, ‘বারেক তোমারে শুধাবারে চাই’। বলেই ফোন ছেড়ে দিলেন। অন্যেরা হৈ-হৈ করে উঠলেন – আরে, কিছুই তো বললেন না। বারেক সাহেব ওরফে এবিসি ঠিকই যথাসময়ে হাজির, শুধাবার যে ‘সুধা বার’ তা বুঝতে এক লহমা দেরি হয়নি। এই হচ্ছে সেন্স অব হিউমার। জনসন দা সঞ্চয়িতার পাতা না খুলে, – খুলে বসে ছিলাম আমরা- পুরো ‘কর্ণ-কুন্তী সংবাদ’ মুখস্থ আবৃত্তি করে শুনিয়েছিলেন। এইসব বর্ণাঢ্য মানুষের আকাল এখন। এবিসি নেই। জনসন দা আছেন। শতায়ু হোন, কায়মনোবাক্যে চাই। এমনি আরেক বর্ণিল চরিত্র আমাদের দেবুদা- চিত্রী দেবদাস চক্রবর্তী। তাঁর কথা একবার উঠেই থেমে গেছে, এই চিত্রীর কথা অনেক লিখতে পারতেন কবি। এমনই আরেকজন আমাদের ‘প্রভু’, খালেদ চৌধুরী, 888sport appয় এক সময়ের কিংবদন্তি। তাঁকে সংগতভাবেই এ বইয়ের পাতায় দেখার আশা করেছিলাম। পঞ্চাশের দশকে 888sport appর সংস্কৃতিজগতে কবি-গদ্যকার-সংগীতজ্ঞ-চিত্রকর-ভাস্কর সকলেরই একত্রে কমবেশি চলাফেরা ছিল, পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সখ্য ছিল। শামসুর রাহমানের সে-সময়ের বন্ধুবৃত্তের ইতিকথা অন্য বহু জনের মতো আমারও কিছুটা জানা। পাটুয়াটুলির সওগাত পত্রিকার অফিস তৎকালীন এইসব তরুণদের কেমন আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছিল তার আরেকটু বিস্তারিত বয়ান শুনতে চেয়েছিলাম। কথার পিছনে তাহলে আরো অনেক কথা এসে পড়ত, যুগচিত্র-অঙ্কন সম্পূর্ণতর হতো। তবে হাসান হাফিজুর রহমানের কথা এসবের ভিতরে বেশ অনেকখানি স্থান নিয়েছে দেখে তৃপ্তি পেয়েছি। প্রায় অভিন্নহৃদয় বন্ধুটির নিকট থেকে এই মনোযাগ তো প্রত্যাশিতই। হাসান কী অকালেই-না চলে গেলেন! তাঁদের ঐ বৃত্তে আরো ছিলেন 888sport live chatী আমিনুল ইসলাম, কথা888sport live footballিক-888sport live chatসমালোচক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর প্রমুখ। 888sport live chatী হামিদুর রহমান, যাঁর অবদান রয়ে গেছে 888sport appর শহীদ মিনারে, আর নভেরার গল্প শোনার ইচ্ছে যদি আমার হয়েই থাকে তো দোষ দেবো কি নিজেকে? তাঁরা তখন প্রায় সকলেই সমবয়সী, 888sport app তথা সমস্ত দেশের 888sport live football-888sport live chatের জগৎ তাঁদের হাত দিয়ে তৈরি হয়ে উঠছে,- তাঁদের অলক্ষ্যে। শহীদ কাদরীর কথা আছে কিছু, কিন্তু অসমবয়সী বন্ধুত্বের আলেখ্য নেই, থাকা প্রত্যাশিত ছিল। খুবই প্রয়োজন ছিল রেক্স আর গুলিস্তানের আড্ডা এবং আমাদের বুড়ো ভাইয়ের উপাখ্যান। তাঁর পঞ্চাশবর্ষপূর্তিতে যে-সংবর্ধনা এদেশের কবি-লেখকেরা মিলে বাংলা একাডেমীতে দিয়েছিলেন তা-ই কেমন করে বাদ পড়ল বুঝলাম না। আত্মমগ্ন ও স্বেচ্ছানির্বাসিত বটুর (মাহমুদুল হক) গপ্পোও তিনি করেননি, একবার নামোল্লেখ ছাড়া।

এত কথা বলছি এ-কারণে যে, আসলেই এক অকল্পনীয় সুন্দর সময়ের সাক্ষী শামসুর রাহমান। এ বই তাঁর নিজেকে ঘিরে তাঁর সময়েরই কথা। সে-সময় আর নেই। যদি সুদিন কখনো আসে, সে-সময় হয়ত আবার কখনো আসবে, কিন্তু আমরা কেউ তখন থাকব না।

কালের ধুলোয় লেখা আনুক্রমিক রচনা হলে স্তরবিন্যাসগুলো স্পষ্টভাবে সহজে ধরা যেত। কিঞ্চিৎ পরিশ্রম করলেই অবশ্য তা শনাক্ত করা যায়। যেমন, রাজনীতির প্রসঙ্গ এনেছেন। পাঠক হিসেবে আমরা জানি, শামসুর রাহমান রাজনীতিতে বীতরাগ ছিলেন এক সময়। সেই মানুষটিই কীভাবে ইচ্ছানিরপেক্ষ-ভাবে স্রোতের টানে রাজনীতিমনস্ক হয়ে ওঠেন তার আভাস দিয়েছেন। বুঝে যাই, সময় ও 888sport live chatীচৈতন্য কীভাবে গোপনে একই শিকড়ে রাজনীতির বীজ গেঁথে রাখে। তাঁর ‘সফেদ পাঞ্জাবি’ বা ‘আসাদের শার্ট’ কি ‘ টেলেমেকাস’ কি ‘হাতির শুঁড়’ 888sport app download apkর পশ্চাদবর্তী সৃজনক্রিয়া একই সঙ্গে ব্যক্তিমানুষ ও কবি শামসুর রাহমানকে চিনিয়ে দেয়। কবির অন্তর্জীবনের এই ইতিহাস তিনি নিজে না উদ্ঘাটন করলে তো আমাদের জানা সম্ভব হতো না।

888sport appর সংস্কৃতিজগতের আরেকটি চেহারা আমাদের অজানা। সেটুকু জানানোর জন্য আমি কৃতজ্ঞতা বোধ করেছি। তা হলো 888sport appয় উর্দু 888sport app download apkর চর্চা ও কয়েক জন উর্দু কবির প্রসঙ্গ। নওশাদ নূরীর 888sport app download apkর সঙ্গে আমি পরিচিত নই, আমি উর্দু ভাষা জানি না। কিন্তু যে-ভালোবাসা ও আবেগে, 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে বাঙালি কবি শামসুর রাহমান ঐ অবাঙালি উর্দুভাষী কবিকে হাজির করেছেন তাতে একটি মূল্যবোধ ও কাণ্ডজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হয়। সেটি এই যে, আমাদের মনের সাংস্কৃতিক জঙ্গমতা 888sport live chat ও সংস্কৃতির জন্য প্রয়োজন। আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে এই ভাবনা নতুন করে ভাববার সময় এসেছে : দেশের ভিতরে একই ভাষায়, একই সংস্কৃতি, একই ধর্মের জনগোষ্ঠী কোনো জাতিসত্তার রাষ্ট্রশক্তিকে রুদ্ধপথ করে কি-না। 888sport appর সংস্কৃতিজগৎ ভিন্ন চেহারায় উপস্থিত করার জন্যে আমি তাঁর নিকট ঋণীবোধ করছি।

আমার কৃতজ্ঞ হওয়ার কারণ আরো আছে। সেই প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে শান্তিনিকেতনে যে- লেখকসম্মেলন হয়েছিল তার হৃদয়সংবেদী আলেখ্য এ-গ্রন্থে মিলল। ঐ সম্মেলনে পঠিত লেখাগুলো নিয়ে সেকালে একটি বইও বেরিয়েছিল শান্তিনিকেতন থেকে, উত্তরকৈশোরে আমার চোখে পড়েছে, আর পুনর্মুদ্রিত হয়নি। লোকে এখন ভুলেই গেছে সে-সব কথা। ফের মনে পড়ে গেল। আমাদের এদেশের রাজনীতির সদর-অন্দরেও আলো ফেলা হয়েছে দু-চার জায়গায়। এসেছে কিংবদন্তির রাজা অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের প্রসঙ্গ, রাজনীতিতে বুদ্ধিজীবী ও জ্ঞানসাধকদের অবদান- ৬ দফার অন্তরালবর্তী ঘটনা। যদিও এ- গ্রন্থে অকথিত, তবু আমরা বুঝতে পারি- জ্ঞানবুদ্ধিবিহীন রাজনীতি যে-সর্বনাশের অতল গহ্বরে দেশকে এখন ক্রমাগত ঠেলে ফেলছে, রাজনীতিকে সুস্থির হতে হলে বিদ্বৎসমাজকে আজ হোক, কাল হোক ডেকে আনতেই হবে। বহু বিষয়েই শামসুর রাহমান এভাবে আমাদের ভাবনাকে উস্কে দেন।

কালের ধুলোয় লেখার মূল্য লেখক ও সময়ের কারণে। আমাদের সংস্কৃতি-ইতিহাসের এক অধ্যায় লিপিবদ্ধ হয়ে রইল এখানে। আমাদের জন্যে তো বটেই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট তাই গ্রন্থটি অমূল্য। ৎবান্ধবদল, তাঁর বিদ্যাচর্চা ও কাব্যচর্চার প্রেক্ষাপট। এই ইতিহাস আমাদের সংস্কৃতি-ইতিহাসেরই অংশ। কবি ও লেখকবন্ধু, এদেশের বুদ্ধিজীবী ও বিদ্বৎসমাজের সত্যনিষ্ঠ আলেখ্য জানা বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য একান্ত অপরিহার্য।

যে-সব ব্যক্তিত্বের কথা আছে তাঁদের অনেককেই আমি চিনি। এরকম মানুষজন ক্রমশ বিরল হয়ে যাচ্ছেন। যেমন, ধরা যাক, এবিসি। কী অসামান্য কাব্যপ্রেমই-না ছিল মানুষটির! আর কী অসামান্য 888sport sign up bonusশক্তি! জনসন দা-র যোগ্য সুহৃদ সেদিক থেকে। মস্কোয় বসে রাষ্ট্রদূত জনসন দা-র মুখেই শোনা। ‘পূর্বাণী’র দোতলায় বিশেষ কক্ষে সবান্ধব আড্ডা চলছে। কী প্রয়োজনে দরকার পড়ল এবিসির। জনসন দা ফোন করে বললেন, ‘বারেক তোমারে শুধাবারে চাই’। বলেই ফোন ছেড়ে দিলেন। অন্যেরা হৈ-হৈ করে উঠলেন – আরে, কিছুই তো বললেন না। বারেক সাহেব ওরফে এবিসি ঠিকই যথাসময়ে হাজির, শুধাবার যে ‘সুধা বার’ তা বুঝতে এক লহমা দেরি হয়নি। এই হচ্ছে সেন্স অব হিউমার। জনসন দা সঞ্চয়িতার পাতা না খুলে, – খুলে বসে ছিলাম আমরা- পুরো ‘কর্ণ-কুন্তী সংবাদ’ মুখস্থ আবৃত্তি করে শুনিয়েছিলেন। এইসব বর্ণাঢ্য মানুষের আকাল এখন। এবিসি নেই। জনসন দা আছেন। শতায়ু হোন, কায়মনোবাক্যে চাই। এমনি আরেক বর্ণিল চরিত্র আমাদের দেবুদা- চিত্রী দেবদাস চক্রবর্তী। তাঁর কথা একবার উঠেই থেমে গেছে, এই চিত্রীর কথা অনেক লিখতে পারতেন কবি। এমনই আরেকজন আমাদের ‘প্রভু’, খালেদ চৌধুরী, 888sport appয় এক সময়ের কিংবদন্তি। তাঁকে সংগতভাবেই এ বইয়ের পাতায় দেখার আশা করেছিলাম। পঞ্চাশের দশকে 888sport appর সংস্কৃতিজগতে কবি-গদ্যকার-সংগীতজ্ঞ-চিত্রকর-ভাস্কর সকলেরই একত্রে কমবেশি চলাফেরা ছিল, পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সখ্য ছিল। শামসুর রাহমানের সে-সময়ের বন্ধুবৃত্তের ইতিকথা অন্য বহু জনের মতো আমারও কিছুটা জানা। পাটুয়াটুলির সওগাত পত্রিকার অফিস তৎকালীন এইসব তরুণদের কেমন আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছিল তার আরেকটু বিস্তারিত বয়ান শুনতে চেয়েছিলাম। কথার পিছনে তাহলে আরো অনেক কথা এসে পড়ত, যুগচিত্র-অঙ্কন সম্পূর্ণতর হতো। তবে হাসান হাফিজুর রহমানের কথা এসবের ভিতরে বেশ অনেকখানি স্থান নিয়েছে দেখে তৃপ্তি পেয়েছি। প্রায় অভিন্নহৃদয় বন্ধুটির নিকট থেকে এই মনোযাগ তো প্রত্যাশিতই। হাসান কী অকালেই-না চলে গেলেন! তাঁদের ঐ বৃত্তে আরো ছিলেন 888sport live chatী আমিনুল ইসলাম, কথা888sport live footballিক-888sport live chatসমালোচক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর প্রমুখ। 888sport live chatী হামিদুর রহমান, যাঁর অবদান রয়ে গেছে 888sport appর শহীদ মিনারে, আর নভেরার গল্প শোনার ইচ্ছে যদি আমার হয়েই থাকে তো দোষ দেবো কি নিজেকে? তাঁরা তখন প্রায় সকলেই সমবয়সী, 888sport app তথা সমস্ত দেশের 888sport live football-888sport live chatের জগৎ তাঁদের হাত দিয়ে তৈরি হয়ে উঠছে,- তাঁদের অলক্ষ্যে। শহীদ কাদরীর কথা আছে কিছু, কিন্তু অসমবয়সী বন্ধুত্বের আলেখ্য নেই, থাকা প্রত্যাশিত ছিল। খুবই প্রয়োজন ছিল রেক্স আর গুলিস্তানের আড্ডা এবং আমাদের বুড়ো ভাইয়ের উপাখ্যান। তাঁর পঞ্চাশবর্ষপূর্তিতে যে-সংবর্ধনা এদেশের কবি-লেখকেরা মিলে বাংলা একাডেমীতে দিয়েছিলেন তা-ই কেমন করে বাদ পড়ল বুঝলাম না। আত্মমগ্ন ও স্বেচ্ছানির্বাসিত বটুর (মাহমুদুল হক) গপ্পোও তিনি করেননি, একবার নামোল্লেখ ছাড়া।

এত কথা বলছি এ-কারণে যে, আসলেই এক অকল্পনীয় সুন্দর সময়ের সাক্ষী শামসুর রাহমান। এ বই তাঁর নিজেকে ঘিরে তাঁর সময়েরই কথা। সে-সময় আর নেই। যদি সুদিন কখনো আসে, সে-সময় হয়ত আবার কখনো আসবে, কিন্তু আমরা কেউ তখন থাকব না।

কালের ধুলোয় লেখা আনুক্রমিক রচনা হলে স্তরবিন্যাসগুলো স্পষ্টভাবে সহজে ধরা যেত। কিঞ্চিৎ পরিশ্রম করলেই অবশ্য তা শনাক্ত করা যায়। যেমন, রাজনীতির প্রসঙ্গ এনেছেন। পাঠক হিসেবে আমরা জানি, শামসুর রাহমান রাজনীতিতে বীতরাগ ছিলেন এক সময়। সেই মানুষটিই কীভাবে ইচ্ছানিরপেক্ষ-ভাবে স্রোতের টানে রাজনীতিমনস্ক হয়ে ওঠেন তার আভাস দিয়েছেন। বুঝে যাই, সময় ও 888sport live chatীচৈতন্য কীভাবে গোপনে একই শিকড়ে রাজনীতির বীজ গেঁথে রাখে। তাঁর ‘সফেদ পাঞ্জাবি’ বা ‘আসাদের শার্ট’ কি ‘ টেলেমেকাস’ কি ‘হাতির শুঁড়’ 888sport app download apkর পশ্চাদবর্তী সৃজনক্রিয়া একই সঙ্গে ব্যক্তিমানুষ ও কবি শামসুর রাহমানকে চিনিয়ে দেয়। কবির অন্তর্জীবনের এই ইতিহাস তিনি নিজে না উদ্ঘাটন করলে তো আমাদের জানা সম্ভব হতো না।

888sport appর সংস্কৃতিজগতের আরেকটি চেহারা আমাদের অজানা। সেটুকু জানানোর জন্য আমি কৃতজ্ঞতা বোধ করেছি। তা হলো 888sport appয় উর্দু 888sport app download apkর চর্চা ও কয়েক জন উর্দু কবির প্রসঙ্গ। নওশাদ নূরীর 888sport app download apkর সঙ্গে আমি পরিচিত নই, আমি উর্দু ভাষা জানি না। কিন্তু যে-ভালোবাসা ও আবেগে, 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে বাঙালি কবি শামসুর রাহমান ঐ অবাঙালি উর্দুভাষী কবিকে হাজির করেছেন তাতে একটি মূল্যবোধ ও কাণ্ডজ্ঞান প্রতিষ্ঠিত হয়। সেটি এই যে, আমাদের মনের সাংস্কৃতিক জঙ্গমতা 888sport live chat ও সংস্কৃতির জন্য প্রয়োজন। আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে এই ভাবনা নতুন করে ভাববার সময় এসেছে : দেশের ভিতরে একই ভাষায়, একই সংস্কৃতি, একই ধর্মের জনগোষ্ঠী কোনো জাতিসত্তার রাষ্ট্রশক্তিকে রুদ্ধপথ করে কি-না। 888sport appর সংস্কৃতিজগৎ ভিন্ন চেহারায় উপস্থিত করার জন্যে আমি তাঁর নিকট ঋণীবোধ করছি।

আমার কৃতজ্ঞ হওয়ার কারণ আরো আছে। সেই প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে শান্তিনিকেতনে যে- লেখকসম্মেলন হয়েছিল তার হৃদয়সংবেদী আলেখ্য এ-গ্রন্থে মিলল। ঐ সম্মেলনে পঠিত লেখাগুলো নিয়ে সেকালে একটি বইও বেরিয়েছিল শান্তিনিকেতন থেকে, উত্তরকৈশোরে আমার চোখে পড়েছে, আর পুনর্মুদ্রিত হয়নি। লোকে এখন ভুলেই গেছে সে-সব কথা। ফের মনে পড়ে গেল। আমাদের এদেশের রাজনীতির সদর-অন্দরেও আলো ফেলা হয়েছে দু-চার জায়গায়। এসেছে কিংবদন্তির রাজা অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের প্রসঙ্গ, রাজনীতিতে বুদ্ধিজীবী ও জ্ঞানসাধকদের অবদান- ৬ দফার অন্তরালবর্তী ঘটনা। যদিও এ- গ্রন্থে অকথিত, তবু আমরা বুঝতে পারি- জ্ঞানবুদ্ধিবিহীন রাজনীতি যে-সর্বনাশের অতল গহ্বরে দেশকে এখন ক্রমাগত ঠেলে ফেলছে, রাজনীতিকে সুস্থির হতে হলে বিদ্বৎসমাজকে আজ হোক, কাল হোক ডেকে আনতেই হবে। বহু বিষয়েই শামসুর রাহমান এভাবে আমাদের ভাবনাকে উস্কে দেন।

কালের ধুলোয় লেখার মূল্য লেখক ও সময়ের কারণে। আমাদের সংস্কৃতি-ইতিহাসের এক অধ্যায় লিপিবদ্ধ হয়ে রইল এখানে। আমাদের জন্যে তো বটেই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিকট তাই গ্রন্থটি অমূল্য।