সাংস্কৃতিক উত্থানের আগমনী সংগীত

গোলাম মুস্তাফা

পঞ্চমবারের মতো বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব অনুষ্ঠিত হলো ২৪ থেকে ২৮ নভেম্বর।  এর আগে প্রতিবছর অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে ২৮ নভেম্বর থেকে। এই তারিখ প্রায় নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কিছু অনিবার্য কারণে এবার অনুষ্ঠানের সময় এগিয়ে আনা হলো। উৎসবের সমাপ্তি দিবসের অনুষ্ঠানে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবুল খায়ের জানালেন, নানা পরিস্থিতির কথা ভেবে এ-বছরের আয়োজন নিয়ে তাঁরা খুব একটা উদগ্রীব ছিলেন না। কিন্তু সংগীতপিপাসুদের কথা ভেবে এবং সরকারের কাছ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস পেয়ে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠান আয়োজনে তাঁরা অগ্রসর হয়েছেন। ‘স্কয়ার’-নিবেদিত এবারের উৎসব উৎসর্গিত হয়েছে প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের উদ্দেশে।

উৎসবের প্রথম রজনীর অনুষ্ঠান শুরু হলো সময়ানুযায়ীই – ঠিক সন্ধে সাতটায় 888sport appsের বিশিষ্ট নৃত্য888sport live chatী শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘নৃত্যনন্দন’ পরিবেশিত নৃত্যানুষ্ঠানের মাধ্যমে। নৃত্যনন্দনের 888sport live chatীরা পরিবেশন করলেন মণিপুরি, কত্থক, ওড়িশি এবং কয়েকটি রবীন্দ্রসংগীতের সমন্বয়ে ‘রবিকরোজ্জ্বল নৃত্যমালিকা’। বিশেষত রবীন্দ্রনাথের ‘বিপুল তরঙ্গ রে’ গানের সুরে ‘নাচত ত্রিভঙ্গয়ে নন্দনন্দন বৃন্দাবন যমুনাতট’ এবং ‘অয়ি ভুবনমনোমোহিনী’, ‘ওই পোহাইল তিমির রাতি’ – এই  রবীন্দ্রসংগীতগুলোর নৃত্যরূপ ছিল বেশ উপভোগ্য। প্রায় এক ঘণ্টার এই নৃত্যানুষ্ঠান পরিকল্পনায় ও পরিবেশনায় ছিল অনবদ্য।

এরপর মঞ্চে এলেন বংশী888sport live chatী প্রবীণ গোদখিন্দি ও বেহালা888sport live chatী রতীশ তাগদে। কর্ণাটকের প্রবীণ গোদখিন্দি বিদ্যুৎ-প্রকৌশলী, কিন্তু শেষপর্যন্ত বংশধারানুযায়ী সংগীত-সাধনার পথই ধরলেন। তাঁর পিতা পণ্ডিত ভেঙ্কটেশ গোদখিন্দি বংশীবাদনের কীর্তিমান 888sport live chatী। পিতার কাছেই বংশীবাদনের তালিম নিয়েছেন প্রায় কয়েক দশক ধরে। রতীশ তাগড়ের বেহালায় প্রাথমিক শিক্ষা তাঁর পিতা বিশ্বনাথ রাও তাগড়ের কাছে। পরে পণ্ডিত বিষ্ণুগোবিন্দ যোগের কাছে তালিম নিয়েছেন দীর্ঘদিন। এই দুই 888sport live chatী প্রথমে পরিবেশন করলেন কল্যাণ ঠাটের সুমধুর রাগ মারুবেহাগ। প্রথমে বিলম্বিত একতাল ও পরে দ্রুত তিনতালে। এরপর পরিবেশিত হলো হংসধ্বনি। এই রাগটি মূলত দক্ষিণী। শংকর রাগের সদৃশ এই রাগটি, অনেকের মতে, হিন্দুস্থানি সংগীতে প্রচলন করেন ওস্তাদ আবদুল করিম খাঁ। প্রবীণ গোদখিন্দি ও রতীশ তাগড়ে এটি পরিবেশন করেন মধ্যলয়ের রূপক তালে। তানকারি ও লয়কারিতে দুজনেরই পরিবেশনা ছিল মনোমুগ্ধকর। এই দুজনের সঙ্গে তবলা সংগত করেন পণ্ডিত রামদাস পালসুলে।

উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অধিবেশন শুরু হলো এর পরেই। পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন 888sport apps সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, 888sport appsে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক  সেলিম আর এফ হোসেন এবং বেঙ্গল  ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের।

এরপর মঞ্চে এলেন বিদুষী গিরিজা দেবী। এবার সবাই প্রতীক্ষা করছিলেন গিরিজা দেবীর জন্য। বয়স আটাশি। আসতে পারবেন কি না, ঠিকমতো গাইতে পারবেন কি না – এই সংশয় ছিল অনেকের মনেই। কিন্তু মঞ্চে উঠেই জানালেন, যতদিন বেঁচে থাকবেন, চলাফেরা করতে পারবেন ততদিনই 888sport appয় আসবেন, গান শোনাবেন।

প্রথমে শুরু করলেন যোগকোষ রাগে খেয়াল ‘ঝানারিয়ারে মনকে মায়ি ক্যায়সে কর আউ তোরে পাস’। পণ্ডিত জগন্নাথ বুয়া পুরোহিত গুণিদাস এই রাগ সৃষ্টি করেন যোগ ও চন্দ্রকোষ অবলম্বনে। বিদুষী গিরিজা দেবী প্রথমে সামান্য আলাপের পর করলেন দীর্ঘ বিস্তার। বোল-বিস্তারও করেছেন বেশ খানিকটা সময় ধরে। বিস্তারে তাঁর কুশলতা সর্বজনবিদিত। শেষে দ্রুত তিন তালে গাইলেন ‘বহুত দিন বিতে আজো আয়ে না মোরে লাল’। বোলের মধ্যে মিলন-প্রতীক্ষার যে আকুতি ছিল তা যেন বহুগুণ বেড়ে গেল 888sport live chatীর দরদি কণ্ঠের পরিবেশনায়।

এরপর মিশ্র খাম্বাজে পরিবেশন করলেন ঠুমরি ‘ইতনা আরজ মোরি মান লে পিয়া, কভি পরদেশ না যাইও’। পরিবেশন করতে- করতে বললেন, বেনারসের ‘খাস চিজ’ হলো শব্দের মধ্যে ভাওনা (অনুভব) ঢেলে দেওয়া। গিরিজা দেবীর ঠুমরিতে সেই অনুভবেরই বিস্তার ঘটে। এরপর টপ্পা পরিবেশন করলেন। তার আগে শ্রোতাদের বললেন, ‘টপ্পা গাওয়া বেশ কঠিন, অনেক রেওয়াজ করতে হয়।’ কিন্তু শোরি মিয়ার ‘মিয়া নজরে নেহি আদাওয়ে’ গাইলেন অনায়াস সাবলীলতায়। ‘দিওয়ানা কিয়ে শ্যাম ক্যায়সে জাদু দারা, উসি গালিয়েন মে আনা রে হামসে কর না বাহানা’ – এই পুরনো দাদরাটি পরিবেশন করলেন সবশেষে।

গিরিজা দেবীর সঙ্গে সারেঙ্গিতে অসাধারণ সংগত করেছেন  মুরাদ আলী খান। গোপাল মিশ্রের তবলা সংগতও ছিল অনবদ্য। 888sport live chatীর সঙ্গে কণ্ঠে সহযোগিতা করেছেন সুনন্দা শর্মা, হারমোনিয়ামে ছিলেন সুমিত মিশ্র।

ওস্তাদ আশিস খান মঞ্চে আসন নিয়েই জানালেন, তাঁর অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল 888sport appsে আসার। ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁর পৌত্র এবং ওস্তাদ আলী আকবর খাঁর পুত্র এই 888sport live chatীর সরোদ শোনার আগ্রহ এদেশের শ্রোতাদেরও কম ছিল না। আশিস খান মঞ্চে উঠে তাঁর সরোদের সঙ্গে শব্দ-নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সমন্বয় সাধন করতে অনেকক্ষণ সময় নিলেন। সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার পর শুরু করলেন দরবারি-কানাড়ায় সরোদ পরিবেশন। আলাপে নিলেন দীর্ঘসময়। শ্রোতাদের সংবেদনকে নাড়া দিলো সেই আলাপ। বাদনে তিনি ছিলেন মগ্ন, শ্রোতারা হলেন মুগ্ধ। জোড়-ঝালায়ও 888sport live chatী তাঁর নৈপুণ্যের পরিচয় দিলেন।

এরপর আশিস খান বাজালেন চন্দ্রনন্দন। চন্দ্রনন্দন রাগটি সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর পিতা ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ। মালকোষ, চন্দ্রকোষ ও নন্দকোষ – এই তিনটি প্রচলিত রাগের সমন্বয়ে সৃষ্ট চন্দ্রনন্দন রাগটি বেশ শ্রম্নতিসুখকর। আশিস খান প্রথমে বাজালেন বিলম্বিত ত্রিতালে, পরে শেষ করলেন দ্রুত তিনতালে। 888sport live chatীর সবশেষ পরিবেশনা ছিল দাদরায় মিশ্রভৈরবী। তাঁর সঙ্গে তবলা-সংগত করেছেন পণ্ডিত বিক্রম ঘোষ। তবলায় বিক্রম ঘোষ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন। এই রাতের পরিবেশনায়ও তাঁর পারঙ্গমতা বোঝা গেছে।

এবারের উৎসবে যশরঙ্গি শোনার অভিজ্ঞতা হলো শ্রোতাদের। পণ্ডিত যশরাজ উদ্ভাবিত যশরঙ্গিতে দুজন 888sport live chatী দুটো রাগ পরিবেশন করেন একই সঙ্গে। বলা যায় রাগের যুগলবন্দি। রাগ ভিন্ন হলেও বন্দিশ ও তাল একই রকম হয়ে থাকে। যশরঙ্গির দুজন 888sport live chatীর একজন মহিলা ও একজন পুরুষ হয়ে থাকেন। ভারতীয় সংগীতের মূর্ছনা রীতির ভিত্তিতেই পরিবেশিত হয় এই ধরনের সংগীত। যশরঙ্গিতে দুই 888sport live chatীর স্বর-বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে। মহিলা 888sport live chatীর ‘মা’স্বরটি পুরুষ 888sport live chatীর জন্য ‘সা’রূপে গণ্য হয়, আর মহিলা 888sport live chatীর ‘পা’ পুরুষ কণ্ঠের জন্য ‘সা’রূপে বিবেচ্য।

যশরঙ্গি পরিবেশন করলেন জয়পুর-আতরাউলি ঘরানার বিদুষী অশ্বিনী ভিদে দেশপাণ্ড ও মেওয়াতি ঘরানার পণ্ডিত সঞ্জীব অভয়ঙ্কর। এঁরা দুজনে প্রথমে পরিবেশন করলেন ললিত ও পুরিয়া ধনেশ্রী রাগের যশরঙ্গি। দুটি রাগ পূরবী ঠাটের হলেও এদের পরিবেশনকাল এক নয়। ললিত ভোরের রাগ, অন্যদিকে পুরিয়া ধনেশ্রী দিনের তৃতীয় প্রহরে গেয়। এই অবস্থায় দুই রাগের মধ্যে একাত্মতা সৃষ্টি করে পরিবেশন করা সহজসাধ্য নয়, কিন্তু অশ্বিনী ভিদে ও সঞ্জীব অভয়ঙ্কর সেই কাজ করলেন যোগ্যতার সঙ্গেই। তাঁরা প্রথমে বিলম্বিত লয়ে পরিবেশন করলেন ‘ঢুন্ঢনা যাউ কিতহু হু ছুপ গ্যায়ে কৃষ্ণমুরারি’- এই বন্দিশটি। তাঁদের দ্রুত একতালের বন্দিশ ছিল ‘মেরে শানে শ্যাম’। পরে দুর্গা রাগে অশ্বিনী ও ভুপালি রাগে সঞ্জীব অভয়ঙ্কর আর একটি যশরঙ্গি পরিবেশন করলেন। আদ্ধা তালে গীত এই যশরঙ্গির বন্দিশ ছিল ‘মোরারে মানওয়া তুমহারি সঙ্গ লাগা, পিয়ারওয়া সুরজনওয়া মোরা প্যায়ারা’। দ্রুত তিনতালের তারানায় 888sport live chatীদ্বয় আসর মাতিয়ে দেন। তাঁদের সঙ্গে তবলা সংগত করেন অজিঙ্ক্য যোশী ও রোহিত মজুমদার এবং হারমোনিয়ামে সহযোগিতা করেন মিলিন্দ কুলকার্নি ও তন্ময় দেওচাক।

প্রথম রজনীর শেষ 888sport live chatী ছিলেন বিশিষ্ট বেহালা888sport live chatী পণ্ডিত ড. লক্ষ্মীনারায়ণ এল সুব্রমানিয়াম। তাঁর পিতা ভি লক্ষ্মীনারায়ণ আইয়ার ও মাতা সীতালক্ষ্মী – দুজনেই ছিলেন সম্পন্ন সংগীত888sport live chatী। তাঁর ভাইয়েরাও সংগীত888sport live chatী হিসেবে সমাদৃত। পিতার কাছেই এল সুব্রমানিয়ামের বেহালা-চর্চা শুরু। কর্ণাটকি ও পাশ্চাত্য – উভয় ধারারই তিনি একজন যোগ্য বেহালা888sport live chatী হিসেবে মান্য। তাঁর বেহালা-বাদন সম্পর্কে ইয়ুহিদি মেনুহিনের একটি উক্তি এই প্রসঙ্গে 888sport app download for androidীয় :

I find nothing more inspiring than the music making of my very great colleague Subramaniam. Each time I listen to him, I am carried away in wonderment.

এই মানের একজন 888sport live chatীর জন্য শ্রোতারা প্রতীক্ষা করবেন – এটাই স্বাভাবিক। 888sport live chatী প্রথমে বাজালেন চন্দ্রপ্রিয় রাগ। তিনিই এই রাগটির স্রষ্টা। এর সৃজন-কাহিনিও বেশ চমকপ্রদ। একবার গৌহাটিতে একটি অনুষ্ঠান করতে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়েন। বিমান-888sport slot game বিলম্বিত হয়। কিন্তু অনুষ্ঠানস্থলে গিয়ে দেখেন শ্রোতারা  ধৈর্য ধরে তাঁর অপেক্ষা করছেন। ঝড়ের তা-বে বিদ্যুৎব্যবস্থা বিপর্যস্ত। কিন্তু চাঁদের আলোয় ছেয়ে গেছে চারদিক। শ্রোতাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ এলো হিন্দোল রাগ বাজাতে। তিনি ভাবলেন, হিন্দোল রাগেই একটু বৈচিত্র্য এনে বাজাবেন। সৃষ্ট হলো নতুন রাগ। চাঁদের আলোয় প্রথম বাজিয়েছিলেন বলে এই রাগের নাম দিলেন চন্দ্রপ্রিয়া। এটি এল সুব্রমানিয়ামের
অতিপ্রিয় একটি রাগ। প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই বাজিয়ে থাকেন। হিন্দোল রাগের স্বরবিন্যাস মোটামুটি অনুসৃত হয় এই রাগে। তবে একটি অতিরিক্ত গান্ধার এতে সংযোজিত হয়।

এল সুব্রমানিয়াম প্রথমে যথারীতি শুরু করলেন আলাপন। আলাপনে হিন্দোল রাগের আবহ পাওয়া গেল। এরপর তান পলস্নবী ও কৃতি পরিবেশন করলেন নিপুণ মুন্শিয়ানায়। 888sport live chatী কৃতির কথা উলেস্নখ করেছেন বারকয়েক। দক্ষিণী সংগীতে কৃতি একটি বিশেষ বাদনশৈলী। সৃজন অর্থে কৃতি শব্দটি ব্যবহৃত হয়। এরপর 888sport live chatী পরিবেশন করলেন রাগমালিকা। কয়েকটি রাগের পর্যায়ক্রমিক পরিবেশনাকেই দক্ষিণী সংগীতে রাগমালিকা নামে অভিহিত করা হয়, হিন্দুস্থানি সংগীতের রাগমালার মতোই। এল সুব্রমানিয়ামের বেহালা-বাদন আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল পণ্ডিত তন্ময় বোসের তবলা, টি.এন রাধাকৃষ্ণণের ঘটম এবং লক্ষ্মীনারায়ণ রঘুনাথনের মৃদঙ্গম সংগতে।  তাঁর বেহালা-বাদনেই শেষ হয় প্রথম রজনীর অনুষ্ঠান।

দ্বিতীয় রাতের অনুষ্ঠানে প্রথমে মঞ্চে এলেন ওড়িশি নৃত্যের বিশিষ্ট 888sport live chatী মাধবী মুডগাল ও আরুশি মুডগাল। মাধবী ভারতীয়  সংগীত ও নৃত্যচর্চার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন পিতা বিনয়চন্দ্র মুডগালের কাছ থেকে। গোড়ার দিকে তিনি শিখেছিলেন ভরতনাট্যম ও  কত্থক। পরে ওড়িশি নাচের গীতিময়তা ও সূক্ষ্মতায় আকৃষ্ট হন তিনি। গুরু কেলুচরণের কাছ থেকে ওড়িশি নাচের তালিম গ্রহণ করেন। আরুশি মুডগাল মাধবীর ভ্রাতুষ্পুত্রী ও শিষ্যা।

মাধবী মুডগাল প্রথমে পরিবেশন করেন নটরাজের কাছে প্রার্থনা-নৃত্য। নৃত্যে পারদর্শিতাপ্রত্যাশী 888sport live chatী নটরাজের কাছে প্রার্থনা করছেন, তাঁর মন যেন ময়ূরের মতো নৃত্যচঞ্চল হয়, তরঙ্গের মতো ছন্দোময় হয় তাঁর সারা শরীর।  মায়াধর মানসিংহ-রচিত 888sport app download apkর ওপর ভিত্তি করে এর নৃত্যরূপ দিয়েছেন মাধবী। এরপর সাহানা রাগে একটি আহ্লাদ-নৃত্য পরিবেশন করলেন আরুশি মুডগাল। জয়দেবের গীতগোবিন্দের একটি অংশের নৃত্যরূপায়ণে মাধবী ছিলেন অনবদ্য। কৃষ্ণের প্রতি রাধার মিনতি, প্ররোচনা ও প্রার্থনার এই নৃত্যরূপ ছিল ছন্দোময়, সাবলীল ও দৃষ্টিনন্দন। রবীন্দ্রসংগীতের সুরেও নৃত্য পরিবেশন করেন তাঁরা। শেষে ভৈরবী রাগে একটি পলস্নবীর নৃত্যরূপ পরিবেশিত হয়েছে। এঁদের সঙ্গে কণ্ঠসংগীতে ছিলেন  মণিকুন্তলা ভৌমিক ও ক্ষীতিপ্রসাদ মহাপাত্র। পাখোয়াজ, সেতার ও বাঁশিতে সহযোগিতা করেছেন যথাক্রমে জিতেন্দ্রকুমার সোয়াইন, ইয়ার মোহাম্মদ ও শ্রীনিবাস সৎপতী।

তবলা বাজিয়ে মুগ্ধ করলেন বেঙ্গল পরম্পরার শিক্ষার্থী 888sport live chatীরা। পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকারের পরিচালনায় তবলা পরিবেশন করলেন নুসরাত-ই-জাহান খুশবু, ফাহমিদা আখতার, পঞ্চম সান্যাল,  সুপান্থ মজুমদার, চিন্ময় ভৌমিক ও এম জে ভুবন। উচ্চাঙ্গসংগীতের এই উৎসবে আমন্ত্রিত ও প্রতিষ্ঠিত 888sport live chatীরাই  শুধু নন, সংগীত পরিবেশন করে থাকেন বেঙ্গলসহ 888sport appsের 888sport app শিক্ষায়তনের
শিক্ষার্থীরাও। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য এদেশে যোগ্য উচ্চাঙ্গসংগীত888sport live chatী তৈরি করা। এই উদ্দেশ্য একদিন সফল হবে, তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

888sport appsের প্রিয়াঙ্কা গোপও এই রাতের অনুষ্ঠান মাতিয়ে দিলেন। পণ্ডিত অরুণ ভাদুড়ির যোগ্য শিষ্যা প্রিয়াঙ্কা গেয়ে শোনালেন রাগ বাগেশ্রী। তাঁর চর্চিত কণ্ঠে বিলম্বিত ও দ্রুত লয়ে গাওয়া ‘কৌন গাতা ভাইলি’ বন্দিশটি ছিল নিখুঁত পরিবেশনার নিদর্শন। গুরু অরুণ ভাদুড়ির বন্দিশ ‘পিয়া না বুঝে ইয়ে কাহো বাত’ও গেয়েছেন চমৎকারভাবে। শেষে গাইলেন ‘রসিয়া মোহে বুলায়ে’ ঠুমরিটি। প্রিয়াঙ্কা অসাধারণ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন রাগদারি, মুড়কি ও মীড়ের কাজে। হিন্দুস্থানি সংগীতের পরিবেশন-কৌশলও রপ্ত করেছেন বেশ ভালোভাবে। প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে তবলা, সারেঙ্গি ও হারমোনিয়ামে সহযোগী ছিলেন যথাক্রমে ইফতেখার আলম প্রধান, মুরাদ আলী খান ও উদয় মালাকার।

রাহুল শর্মা সন্তুরে বাজালেন রাগ দরবারি। আলাপ, জোড় ও ঝালা পরিবেশন করলেন নিষ্ঠার সঙ্গে। তবলা888sport live chatী সত্যজিৎ তালওয়ালকারের সঙ্গে সাত মাত্রার রূপক তালের তেহাই ছিল মনোমুগ্ধকর। বিভিন্ন গৎ পরিবেশন করে শ্রোতাদের চমৎকৃত করলেন তিনি। এই প্রসঙ্গে সত্যজিৎ তালওয়ালকারের পারদর্শিতার কথাও উলেস্নখ করতে হয়। দুই 888sport live chatীর মধ্যে সমজদারি ছিল উপভোগ করার মতো।

888sport app বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগের মোহাম্মদ শোয়েব ও তাঁর সঙ্গীরা দরবারি কানাড়ায় একটি খেয়াল পরিবেশন করলেন। পরিবেশনাটির নাম ছিল ‘ধ্যান’। মোটামুটি ভালোই, তবে তাঁদের আরো তালিমের প্রয়োজন। তাঁদের সঙ্গে তবলা বাজালেন ইফতেখার আলম। পাখোয়াজে সুষেনকুমার রায় পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন।

সেনিয়া-মাইহার ঘরানার পূর্বায়ণ চট্টোপাধ্যায় বাজিয়ে শোনালেন রাগ হেম-ললিত। হেমনত্ ও ললিত রাগের মিশ্রণে এই রাগটির স্রষ্টা ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ। হেমমেত্মর ফসল কাটার আবহের সঙ্গে ভোরের ললিত আভাসের সমন্বয় সার্থকভাবে করেছেন পূর্বায়ণ। 888sport live chatীর বাদনে কিছুটা নাটকীয়তা ছিল, এটা অবশ্য তাঁর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। রাগদারির প্রভাবও পাওয়া গেল তাঁর সেতার-বাদনে। সঙ্গে অনুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের তবলা ছিল সার্থক জুড়ি। বিলম্বিত ও তিনতালের দ্রুত লয় বাজিয়ে অনুব্রত তাঁর কুশলতা দেখিয়েছেন বেশ সাবলীলভাবে। লোকজ সুরে রাগমালার বিস্তার ঘটিয়ে পূর্বায়ণ সমাপ্ত করলেন তাঁর অনুষ্ঠান।

এই আসরের সবচেয়ে উলেস্নখযোগ্য পরিবেশনা ছিল পণ্ডিত উলহাস কশলকরের খেয়াল। উলহাস কশলকর জয়পুর, আগ্রা ও  গোয়ালিয়র ঘরানার তালিমে সমৃদ্ধ একজন শীর্ষস্থানীয় 888sport live chatী। প্রথমে তালিম নিয়েছেন পিতা এন. ডি. কশলকরের কাছে, পরে শিখেছেন  পণ্ডিত রাম মারাঠে ও পণ্ডিত গজনরাও যোশীর কাছ থেকে। উলহাস খেয়াল পরিবেশনায় কিছুটা রক্ষণশীল, শুদ্ধতার দিকে তাঁর মনোযোগ বেশি। চটকদারি করে শ্রোতা মনোরঞ্জনের অভিপ্রায়ী নন তিনি।

888sport live chatী প্রথমে পরিবেশন করলেন একটি জোড়-রাগ – বসন্ত-বাহার। ভৈরবী ঠাটের একটি সম্পূর্ণ রাগ এটি। বসন্ত ও বাহার রাগের মিশ্রণে সৃষ্ট এই রাগটি বসমেত্মর আগমনী শোনায়। বন্দিশ শুরু করলেন বিলম্বিত একতালে। পরে ‘গুন্দ লাওরি মালানিয়া’ পরিবেশন করলেন দ্রুত তিনতালে। উলহাস কশলকরের পরিবেশনায় ছিল নিষ্ঠার সঙ্গে সামর্থ্যের মেলবন্ধন। এরকম সচরাচর দেখা যায় না। তাঁর কণ্ঠে সাবলীল প্রবহমানতা আছে। পরে তিনি সোহনি রাগে পরিবেশন করলেন একটি নাতিদীর্ঘ খেয়াল। এই রাগটিও অবশ্য সংক্ষিপ্ত। বিস্তারের সুযোগ কম। উলহাস যখন ‘ইয়ে বড়ে যৌবন মানেরে কোয়েলিয়া’ বন্দিশটি শুরু করলেন, তখন শ্রোতারা রাগের মিষ্টত্বে এবং পরিবেশনার কুশলতায় মুগ্ধ না হয়ে পারেননি। 888sport live chatীর সঙ্গে তবলায় ছিলেন পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকার। তাঁর তবলাও ছন্দোময় হয়ে উঠেছিল উলহাস কশলকরের সুললিত কণ্ঠের সঙ্গে।

মাইহার ঘরানার বিশিষ্ট বংশী888sport live chatী রণু মজুমদার ও ম্যান্ডোলিন 888sport live chatী ইউ রাজেশ ছিলেন দ্বিতীয়  রজনীর শেষ 888sport live chatী। রণু মজুমদার সংগীতে প্রথম তালিম লাভ করেন পিতা ভানু মজুমদারের কাছ থেকে। পণ্ডিত লক্ষ্মণপ্রসাদ জয়পুরওয়ালার কাছে কিছুদিন কণ্ঠসংগীতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। লক্ষ্মণপ্রসাদের পরামর্শেই তিনি বংশীবাদনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ইউ রাজেশ পিতা পণ্ডিত ইউ সত্যনারায়ণের কাছে ম্যান্ডোলিন বাজানো শিখেছিলেন। তাঁর ভাই ইউ শ্রীনিবাস ছিলেন কিংবদন্তিতুল্য ম্যান্ডোলিন-বাদক। তাঁর অকালমৃত্যুর পরই রাজেশ বেহালা888sport live chatী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। রণু মজুমদার হিন্দুস্থানি সংগীতের 888sport live chatী, রাজেশ ম্যান্ডোলিন বাজান কর্ণাটকি ধারায়। এই দুই 888sport live chatীর যুগ্ম পরিবেশনা কেমন হবে, তা জানার আগ্রহ ছিল শ্রোতাদের। প্রথমে বাঁশিতে ভৈরবী ঠাটের  মঙ্গল-ভৈরবে প্রার্থনার  সুর তুললেন রণু মজুমদার। তাঁর সঙ্গে দক্ষিণী রাগ অমৃতবর্ষিণীতে ম্যান্ডোলিন বাজালেন ইউ রাজেশ। দুজনই তাঁদের পরিবেশনায় মুগ্ধ করে দিলেন শ্রোতাদের। এরপর নটভৈরবী বাজিয়ে শোনালেন দুজনে। এঁদের সঙ্গে পাখোয়াজ ও তবলায় সংগত করেছেন যথাক্রমে পণ্ডিত এস. ভি. রামাণি ও পণ্ডিত অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। গতবারে রণু মজুমদার একটি ভাটিয়ালি শোনাতে চেয়েছিলেন, সময়াভাবে পারেননি। এবারো সময় ছিল না, তবু তাঁর আকুতিতে সম্মতি জানালেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের। রণু বাঁশিতে ভাটিয়ালির সুর তুলতেই শ্রোতাদের উলস্নাস-ধ্বনিতে মুখরিত হলো অনুষ্ঠান-প্রাঙ্গণ। উলস্নাসমুখর শ্রোতাদের মুগ্ধ করেই বাঁশিবাদন শেষ করলেন 888sport live chatী।

উৎসবের তৃতীয় রজনী শুরু হলো বেঙ্গল পরম্পরার শিক্ষার্থীদের সরোদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের পরিচালনায় শিক্ষার্থীরা বাজালেন কাফি রাগ। বিভিন্ন বয়সের 888sport live chatীদের এই পরিবেশনায় বোঝা গেল উচ্চাঙ্গসংগীতচর্চার নতুন একটি যুগের সূচনা হতে চলেছে 888sport appsে। পণ্ডিত তেজেন্দ্র মজুমদারও বললেন, এই 888sport live chatীদের মধ্য থেকে আগামী বছরপাঁচেকের মধ্যে একজন বা দুজন জাতীয় পর্যায়ের সরোদিয়া তৈরি হবেন।

কর্ণাটকি সংগীতের বিশিষ্ট বংশী888sport live chatী শশাঙ্ক সুব্রহ্মণ্যন শৈশবেই সাড়া জাগিয়েছিলেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে মঞ্চে বাঁশি বাজিয়ে সংগীতবিজ্ঞদের বিস্মিত করেছিলেন। পিতা কণ্ঠ888sport live chatী পণ্ডিত আর. কে. শ্রীকান্তনের কাছ থেকে সংগীতের প্রাথমিক শিক্ষা পেয়েছেন। পরে পণ্ডিত পালঘাট কে. ভি. নারায়ণস্বামীর কাছে তালিম নিয়েছেন। হিন্দুস্থানি সংগীত শিখেছেন পণ্ডিত যশরাজের কাছে। বাঁশি বাজানোর এক নতুন রীতিও উদ্ভাবন করেছেন তিনি। রপ্ত করেছেন দুটো অকটেভে বাঁশি বাজানোর কৌশল। তাঁর ওপর বিবিসি একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছে Destination Music নামে। বাঁশিতে তাঁর পারদর্শিতার প্রমাণ পাওয়া গেল তৃতীয় রজনীর অনুষ্ঠানে।

শশাঙ্ক প্রথমে বাজালেন পূরবী কল্যাণী রাগ। এটি একটি বক্ররাগ। এম. এস. শুভলক্ষ্মী এই রাগে মীরা ছবিতে একটি গান গেয়েছিলেন বহুকাল আগে। সেই গান শুনে নাকি শ্রোতারা অশ্রম্নসজল হয়ে উঠতেন। হিন্দুস্থানি সংগীতের পুরিয়া কল্যাণের মতোই পূরবী কল্যাণী।

শশাঙ্ক কর্ণাটকি সংগীতের ঐতিহ্য অনুসরণ করেই প্রথমে দীর্ঘক্ষণ আলাপন করলেন। এরপর করলেন তানম ও পলস্নবী। আলাপন ও তানম হিন্দুস্থানি সংগীতের আলাপ ও তানের দক্ষিণী নামান্তর। পলস্নবী কর্ণাটকি সংগীতের বিশিষ্ট রীতি। পদম বা পদ, লয়ম বা লয়, বিন্যাসম বা রাগের বিন্যাসবৈচিত্র্য – এই তিন স্তর নিয়েই হয় পলস্নবী। দক্ষিণী 888sport live chatীরা পলস্নবীর পুনরাবৃত্তি করেন সংগতকারী বাদককে তালের ধারণা দেওয়ার জন্য। আলাপন, তানম ও পলস্নবী – এই তিনটি অংশেই শশাঙ্ক তাঁর বংশীশৈলীর অনবদ্য পারদর্শিতা প্রদর্শন করেছেন। দুটো অকটেভে একই সঙ্গে বাঁশি বাজানো কঠিন – এ-কথা উলেস্নখ করে তিনি তা-ই করে শোনালেন অনায়াস সাবলীলতার সঙ্গে। বিখ্যাত কর্ণাটকি ধ্রুপদী গান ‘কৃষ্ণা নি বেজ্ঞানে বারো, মুখবহ্নি তোড়ো’র সুর তুললেন বাঁশিতে। ইমন কল্যাণী রাগে  কানাড়া ভাষার এই গানটির রচয়িতা ব্যাসতীর্থ। তিনতালের মিশ্র চাপুতে এটি পরিবেশিত হয়। শশাঙ্ক এই গানের সুর বাজিয়েছেন বেশ তন্ময় হয়ে। একটি তামিল লোকজ সুর বাজিয়ে 888sport live chatী তাঁর অনুষ্ঠান শেষ করেন। শশাঙ্কর বংশীবাদনে শ্রোতারা তৃপ্ত হয়েছেন। বাঁশিবাদনে তাঁর উদ্ভাবনী কৌশলে সবাই চমৎকৃত হয়েছেন। দক্ষিণী সংগীতে বংশীবাদনে গায়কি অঙ্গের প্রভাব অনেক বেশি। তালের কঠোরতাও অনেক। কিন্তু শশাঙ্কের কাছে এসব কিছুই বাধা নয়।

প্রভা আত্রে কিরানা ঘরানার প্রতিষ্ঠিত 888sport live chatী। সংগীতসাধনার আগ্রহ তাঁর তেমন ছিল না। আট বছর বয়সে তাঁর মা ইন্দিরা বাই খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। একজন বন্ধু তখন বললেন, উচ্চাঙ্গসংগীতের তালিম নিলে এই অসুস্থতা কেটে যেতে পারে। ইন্দিরা বাই বন্ধুর পরামর্শানুযায়ী উচ্চাঙ্গসংগীত শিখতে শুরু করেন। মায়ের শেখা সেই সংগীতগুলো শুনে-শুনেই প্রভা আত্রের সংগীতের প্রতি আকর্ষণ জন্মায়। কিরানা ঘরানার প্রবাদপ্রতিম 888sport live chatী ওস্তাদ আবদুল করিম খাঁর পুত্র সুরেশবাবু মানে এবং কন্যা বিদুষী হীরাবাই বরোদেকরের কাছ থেকে তালিম নিয়েছেন তিনি। তাঁর গায়কিতে ওস্তাদ আমীর খাঁ ও ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খাঁর প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়।

প্রভা আত্রে প্রথমে পরিবেশন করলেন শ্যামকল্যাণ রাগে একটি খেয়াল। কল্যাণ ঠাটের কল্যাণ ও কমোদ রাগের মিশ্রণে একটি মিষ্টি রাগ এই শ্যামকল্যাণ। হীরাবাই বরোদেকরের কাছ থেকে কিরানা ঘরানার গায়কি যে রপ্ত করেছিলেন প্রভা আত্রে, সেই প্রভাব বোঝা গেছে তাঁর খেয়ালে। 888sport live chatী প্রথমে গাইলেন বিলম্বিত খেয়াল, পরে দ্রুত একতালে পরিবেশিত হলো তারানা। এরপর মধুকোষ রাগে গাইলেন আরেকটি খেয়াল। প্রভা আত্রে এই রাগের স্রষ্টা। মালকোষ রাগের সঙ্গে একটি অতিরিক্ত গান্ধার যোগ করে সৃষ্টি করা হয়েছে মধুকোষ।  শুদ্ধ ও কোমল – দুটি গান্ধারই আছে মধুকোষে। শুরুতে ‘মোহন শ্যাম’ বন্দিশটি  গাইলেন বিলম্বিত একতালে, দ্রুত একতালে গাইলেন ‘পার করো মোরি নাইয়া, হে জগৎ কি নাইয়া। পিছে ভবমে ম্যাঁ একেলি, মোহন তু সহায়ি’। দুটি রাগেরই বিস্তারে 888sport live chatীর অনায়াস পারদর্শিতা মুগ্ধ হওয়ার মতো, তানের প্রদর্শনেও প্রভা আত্রে চৌকস। ‘বসমত্মী চুনরিয়া লাও মোরে সাইয়া’ দাদরাটি শ্রোতারা খুব উপভোগ করেছেন। শেষে পরিবেশিত হয়েছে একটি  ভজন, ‘জগৎজননী ভবতারিণী মোহিনী তু নবদুর্গা’।

ফরুখাবাদ ঘরানার তবলা888sport live chatী পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর পুত্র অনুব্রত চট্টোপাধ্যায় – দুজনই পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের শিষ্য। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় প্রথমে লখনউ ঘরানার ওস্তাদ আফাক হুসেন খানের কাছে কিছুদিন তবলার তালিম নেন। পরে পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের কাছে শিখেছেন প্রায় তিনদশক ধরে। অনুব্রত চট্টোপাধ্যায় পণ্ডিত জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের সর্বশেষ শিষ্য। পরে পিতার কাছেই তালিম নিয়েছেন তবলা বাদনের। মঞ্চে বসেই অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বললেন, চটকদারি বা চমক দেখানোই তবলা নয়। এই 888sport live chatের মধ্যে কবিত্ব আছে। সেটি না বুঝলে তবলিয়া হয়ে ওঠা যায় না।

পিতা-পুত্রের তবলা-বাদন জমে উঠেছিল। রীতি-অনুযায়ী প্রথমে উঠান ও পেশকার পরিবেশিত হলো। জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ রচিত রেলা বাজিয়ে শোনালেন অনুব্রত চট্টোপাধ্যায়। অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় শোনালেন টুকরা। পাঞ্জাবি চক্রদার শোনার অভিজ্ঞতাও হলো শ্রোতাদের। এই দুই প্রজন্মের 888sport live chatীর সওয়াল-জওয়াব ছিল উপভোগ্য।

888sport appsে ধ্রম্নপদের চর্চা খুব একটা হয় না, ধ্রম্নপদ শোনার সুযোগও এখানে কম। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবে অবশ্য প্রতিবারই ধ্রম্নপদ শোনার সুযোগ হয়েছে। এবারের অনুষ্ঠানে ধ্রম্নপদ পরিবেশন করলেন পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকার। তিনি গতবারও ধ্রম্নপদ পরিবেশন করেছিলেন। ওস্তাদ জিয়া ফরিদউদ্দীন ডাগর ও ওস্তাদ জিয়া মহিউদ্দীন ডাগরের শিষ্য উদয় ভাওয়ালকার ইতিমধ্যেই ধ্রম্নপদিয়া হিসেবে বেশ সমাদৃত। 888sport live chatী এই রাতে পরিবেশন করলেন আভোগী ও সরস্বতী রাগে  দুটি ধ্রম্নপদ। আভোগী মূলত দক্ষিণী রাগ। হিন্দুস্থানি সংগীতেও এই রাগটি গীত হয়। দুটি রাগই অতি যত্ন ও অভিনিবেশের সঙ্গে পরিবেশন করেছেন উদয় ভাওয়ালকার। তাঁর কণ্ঠ শান্ত জলপ্রবাহের মতোই সাবলীল। বেশ সুরে নিবদ্ধ থাকে তাঁর কণ্ঠ। আলাপে ও বিস্তারে রাগের আবহ যথাযথভাবেই ফুটে উঠেছে। তাঁর সুরেলা পরিবেশনায় শ্রোতাদের মন ভরে গেল।

এরপর মঞ্চে এলেন সেতার-888sport live chatী সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মূলত পণ্ডিত রাধিকামোহন মৈত্রের শিষ্য। সেতার-বাদনে তিনি কোনো বিশেষ ঘরানার অনুসারী নন। সেনিয়া-শাহজেহানপুর, রামপুর-সেনিয়া ও এতোয়াহ ঘরানার বৈশিষ্ট্যাবলির সমন্বয় করেই তিনি তাঁর বাদনশৈলী তৈরি করেছেন।

পণ্ডিত সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় সাহানা রাগ দিয়েই তাঁর অনুষ্ঠান শুরু করলেন। শুরুর আগে বললেন, ‘সাহানা শব্দটি এসেছে সুহানা শব্দ থেকে। সুহানা শব্দের অর্থ সুন্দর, রাগটিও সুন্দর।’  আলাপ, জোড় ও ঝালা – তিনটি পর্বেই 888sport live chatী তাঁর সামর্থ্য দেখিয়েছেন। তাঁর বাদনে নিষ্ঠা ও মগ্নতা ছিল। পরে বাজালেন  ছোট কিন্তু শ্রম্নতিমধুর রাগ পিলু। সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় 888sport live chatী হিসেবে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ও উঁচুমার্গের। তাঁর বাদনশৈলীতে তা-ই বোঝা গেল। সংগীতজ্ঞ হিসেবেও তিনি সমাদৃত। সংগীতের ইতিহাস অনুসন্ধান এবং সাংগীতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণেও তিনি নিবেদিত।

এই রাতের আসরের শেষ 888sport live chatী ছিলেন ওস্তাদ রাশিদ খান। ললিত-রাগ দিয়ে শুরু করলেন। রাগটি সম্ভবত রাশিদ খানের খুবই প্রিয়। তাঁর প্রথম প্রকাশিত ক্যাসেটে এই রাগই গেয়েছেন তিনি। এরপর এই রাগে বেশ কয়েকটি সিডি প্রকাশিত হয়েছে। রাশিদ খান তাঁর পরিবেশনায় সবসময়ই সৃজনশীল। একই রাগের আলাপ-বিস্তারে তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মাত্রা যোগ করে থাকেন। এই রজনীর পরিবেশনায়ও তার পরিচয় পাওয়া গেল। আলাপ করলেন অনেক সময় নিয়ে। প্রথমে বিলম্বিত তিনতালে গাইলেন ‘ভোর হি আয়ে যোগিয়া তুম আলখ জাগাও’ বন্দিশটি। পরের বন্দিশ ‘কাহে সওতনিয়া’ পরিবেশিত হলো দ্রুত তিনতালে। বন্দিশের বিস্তারে রাশিদ খান বৈচিত্র্য আনেন, এবারো তাই করলেন। মীড়-মুড়কির  কাজে তিনি অসাধারণ; রাগদারি ও তানকারিতেও। এরপর তিনি ‘ইয়াদ পিয়াকি আয়ে’ ঠুমরিটি গাইলেন। বড়ে গোলাম আলী খাঁর পরিবেশনায় বিখ্যাত এই ঠুমরিটি তিনি গতবারও গেয়েছিলেন। এটি প্রথম তিনি পরিবেশন করেছিলেন জগজিৎ সিংহের 888sport app download for androidে আয়েজিত এক অনুষ্ঠানে।  রাশিদ খান এই  ঠুমরিটি যখন গান, তখন বড়ে গোলাম আলী খাঁর সঙ্গে তুলনা এসে যায়। হয়তো শ্রোতারা বড়ে গোলাম আলী খাঁর নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হন। রাশিদ খান তাঁর পরিবেশনায় শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দেন। কিন্তু এবার তেমন মন ভরলো না। তাঁর কাছ থেকে প্রত্যাশা বেশি বলেই কি?

চতুর্থ রাতের শুরু হলো 888sport appsের নৃত্য888sport live chatী মুনমুন আহমেদের পরিচালনা ও পরিবেশনায় নৃত্যানুষ্ঠান দিয়ে। মুনমুন আহমেদ নৃত্যে তালিম নিয়েছেন ওস্তাদ আজহার আলী, পণ্ডিত রামকিশোর দাস ও পণ্ডিত বিরজু মহারাজের কাছে। প্রথমে করলেন গুরুবন্দনা। এরপর তিনতালে কয়েকটি উঠান পরিবেশিত হলো। একক ও সমবেত কয়েকটি তেহাই পরিবেশন করলেন মুনমুন আহমেদ ও তাঁর শিক্ষার্থী-888sport live chatীরা। প্রকৃতির নানা ধ্বনি নিয়ে রচিত প্রদর্শন  করলেন পারমিলু। শিকার ও শিকারির আখ্যান, পাখোয়াজের বোলে ট্রেন চলার ধ্বনি – এসবের নৃত্যরূপ পরিবেশিত হলো। কত্থকের কয়েকটি ধরনও প্রদর্শন করলেন মুনমুন আহমেদ। গৌড় মালহার রাগের ‘মোরি গাগরিয়া কাহে কো ফোড়ি রে শ্যাম’ এই ঠুমরির সঙ্গে মুনমুন আহমেদের নৃত্যটি ছিল উপভোগ্য। মুনমুন আহমেদের সঙ্গে তাঁর কন্যা অপরাজিতা মুস্তাফা পরিবেশন করলেন একটি যুগলনৃত্য। নৃত্য888sport live chatীদের সঙ্গে কণ্ঠে সহযোগিতা করলেন তানজিনা করিম, তবলা বাজিয়েছেন সুবীর ঠাকুর। বাঁশি, সরোদ ও এস্রাজে সহযোগিতা করলেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, সুনন্দ মুখোপাধ্যায় ও অসিত বিশ্বাস।

পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকারের সুযোগ্য শিষ্য নীলেশ রণদের তবলা পরিবেশন করলেন। তিনতালে পেশকার, কায়দা ও রেলা বাজালেন 888sport live chatী। ওস্তাদ আলস্না রাখা-রচিত একটি বোলও বাজালেন নীলেশ রণদেব। তাঁর সঙ্গে হারমোনিয়াম সংগত করেছেন মিলিন্দ কুলকার্নি। 888sport live chatীর হারমোনিয়াম-বাদন বেশ সুরেলা।

কিরানা ঘরানার জয়তীর্থ মেউন্তি শুদ্ধকল্যাণ রাগে একটি খেয়াল পরিবেশন করে শ্রোতাদের চমকে দিলেন। বর্তমানে কিরানা ঘরানার একজন প্রতিষ্ঠিত 888sport live chatী জয়তীর্থ। পণ্ডিত ভীমসেন যোশীর শিষ্য পণ্ডিত শ্রীপতি পদগরের কাছে তালিম পাওয়া এই 888sport live chatী কিরানা ঘরানার সব সাংগীতিক বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছেন। পণ্ডিত ভীমসেন তাঁকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছেন; অন্য ঘরানার বিশিষ্ট গুরুদেরও গায়কি অনুসরণ করে হয়ে উঠেছেন সম্পন্ন 888sport live chatী।

শুদ্ধকল্যাণের পরিবেশনায় জয়তীর্থ ছিলেন নিখুঁত ও সৃজনশীল। স্বরের অভিব্যক্তিতে গভীরতা সৃষ্টি কিরানা ঘরানার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। 888sport live chatী সেই বৈশিষ্ট্যের প্রতি সুবিচার করেছেন। তাঁর পারদর্শিতা তান বিস্তারে, মেরুখন্ড তানের সব পর্বেই তিনি স্বচ্ছন্দ। ইন্দোর ঘরানার ওস্তাদ আমির খাঁর প্রভাবে তিনি তানে এই সামর্থ্য অর্জনের সাধনা করেছেন। বোল-তান ও বোল-আলাপেও বেশ যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন 888sport live chatী। গমক, মীড়ের কাজেও তিনি অসাধারণ। প্রথমে ‘তুম বিনা কৌন খবরিয়ারে’ বন্দিশটি গাইলেন বিলম্বিত লয়ে, পরে দ্রুত লয়ে পরিবেশন করলেন ‘বাজো রে বাজো’। শেষ করলেন ‘বাজে মুরলিয়া বাজে রে’ ভজনটি গেয়ে। 888sport live chatীর কণ্ঠ সাবলীল ও প্রবহমান। এবারের উৎসবে শ্রোতারা আরো একজন প্রতিভাবান 888sport live chatীর সংগীত শোনার অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন। এইজন্য উৎসবের আয়োজকগণ ধন্যবাদার্হ। 888sport live chatীর সঙ্গে হারমোনিয়ামে সংগত করেছেন মিলিন্দ কুলকার্নি, তবলা ও তানপুরায় ছিলেন অজিঙ্ক্য যোশী ও উজ্জ্বল কুমার মালাকার।

পণ্ডিত যোগেশ শামসি ও পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের তবলা পরিবেশনা ছিল এই রাতের অন্যতম আকর্ষণ। প্রথমে তাঁরা তিনতালে একটি যুগলবন্দি বাজালেন। এরপর ওস্তাদ কেরামত উলস্নাহ খানের একটি কায়দা শোনালেন যোগেশ শামসি, ওস্তাদ আলস্না রাখার একটি কায়দা-বিস্তার পরিবেশন করলেন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি প্রচলিত কায়দা বাজিয়ে শোনালেন উভয়ে। আজরেরা, রেলা, চক্রদার, বেদম চক্রদার পরিবেশন করে তবলা-বাদনের বিভিন্ন রূপ ও আঙ্গিক উপস্থাপন করে সঙ্গে শ্রোতাদের মাতিয়ে দিলেন এই দুই 888sport live chatী। তাঁদের সঙ্গে হারমোনিয়ামে সহযোগিতা করেছেন পণ্ডিত অজয় যোগেলকার।

রঞ্জনী বালাসুব্রহ্মণ্যন ও গায়ত্রী বালাসুব্রহ্মণ্যন – কর্ণাটকি সংগীতের এই দুই বোন শ্রোতাদের অভিভূত করলেন তাঁদের কণ্ঠসুষমায়। দুই বোনই সংগীতাচার্য টি. এন. কৃষ্ণস্বামীর কাছ থেকে বেহালায় তালিম নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের বেহালা888sport live chatী হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। সংগীতকলা-আচার্য নারায়ণস্বামী তাঁদের কণ্ঠসামর্থ্যের পরিচয় পেয়ে কণ্ঠসংগীত-সাধনায় অনুপ্রাণিত করেন। এরপর থেকে তাঁরা বেহালা ছেড়ে কণ্ঠসংগীত পরিবেশন করে আসছেন। ইউটিউবে দুই বোনের পরিবেশনা শুনে মুগ্ধ হয়ে পণ্ডিত রবিশঙ্কর একবার তাঁদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সংগীত শোনানোর জন্য।

উৎসবে প্রথমে তাঁরা সরস্বতীবন্দনা করলেন। ছয়মাত্রায় পরিবেশন করলেন পণ্ডিত ত্যাগরাজা-রচিত বন্দিশ ‘বন্দনা শিবনানী’। এরপর পরিবেশিত হলো মুখারি রাগে ‘মিলাকণ্ঠ শিবম’। গাভীর সঙ্গে বাছুরের সম্পর্কের রূপকে পরিবেশিত হলো আত্মা-পরমাত্মার সম্পর্কের রহস্য। এই পৃথিবীতে বহু-বিচিত্র বস্ত্ত থাকলেও তাদের আত্মা একই – এই দর্শনেরই প্রতিফলন ঘটল তাঁদের এই পরিবেশনায়। পার্থিব সম্পদ ছেড়ে ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার সাধনায় যে আকুতি ও প্রার্থনা শোনা যায়, তারই অভিব্যক্তি পাওয়া গেল রঞ্জনী ও গায়ত্রীর সংগীত-নিবেদনে।

আটমাত্রার আদি তালে একটি পলস্নবী শোনালেন বেশ কুশলতার সঙ্গে। একটি রাগমালিকাও পরিবেশিত হলো। আভোগী, কলাবতী ও মূর্ছনার সমন্বয়ে এই রাগমালিকাটি ছিল বেশ শ্রম্নতিসুখকর। 888sport live chatীদ্বয় মারুবেহাগ রাগে একটি মারাঠি অভঙ্গ শুনিয়ে শেষ করলেন তাঁদের অনুষ্ঠান। রঞ্জনী ও গায়ত্রীর সঙ্গে বেহালা বাজালেন চারুমতী রঘুরামাণ, মৃদঙ্গম ও ঘটমে সংগত করেছেন যথাক্রমে কে. সাই গিরিধারী ও চন্দ্রশেখর শর্মা।

মাইহার ঘরানার পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার সরোদে বাজালেন রাগ গুঞ্জিকানাড়া। আলাপ, জোড় ও ঝালায় 888sport live chatী ছিলেন স্বচ্ছন্দ। পণ্ডিত যোগেশ শামসির তবলা ছিল সরোদের সঙ্গী। যোগেশ শামসি গৎ ও তেহাই পরিবেশন করেছেন যোগ্যতার সঙ্গে। মীড়, গমক ও মুরকির পরিবেশনাও ছিল অনবদ্য। তেজেন্দ্রনারায়ণ পরে যোগিয়া-কালিন্দি বাজিয়ে শোনান।

এই রাতের অনুষ্ঠানের শেষ 888sport live chatী ছিলেন পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। বিলাসখানি টোড়ি রাগে তিনি পরিবেশন করলেন একটি খেয়াল। এর বন্দিশ ‘নিকি বাণী বানহা’ গেয়েছেন সুরেলা কণ্ঠে। গমকের কাজে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী বেশ স্বচ্ছন্দ। তার পরিচয় পাওয়া গেল এই পরিবেশনায়ও। সরগম, বোল-তানে ছিল অসাধারণ নৈপুণ্য। দ্রুত তিনতালের বন্দিশ ‘বাঁশিয়া বাজে মোহন শ্যাম কি’ পরিবেশনের সময়  888sport live chatী ছিলেন অনেকটা নিমগ্ন এবং তাঁর স্বভাবমতোই স্বচ্ছন্দ ও চিত্তাকর্ষক।

অজয় চক্রবর্তী তাঁর সংগীতজীবনের পরিণত বয়সে পণ্ডিত বালমুরালি কৃষ্ণের কাছে তালিম নিচ্ছিলেন। বালমুরালি সদ্যপ্রয়াত। এই প্রবাদপ্রতিম 888sport live chatীর একটি তিলস্নানা পরিবেশন করে অজয় চক্রবর্তী গুরুর প্রতি888sport apk download apk latest version নিবেদন করলেন। তিলস্নানাটি গীত হয়েছে কুন্তল বরালি রাগে।  চতুর্থ  রাতের অনুষ্ঠান শেষ হলো ভৈরবী রাগে অজয় চক্রবর্তীর ‘গুরু দেবম, ভজরে ভজরে গুরু কি নাম’ ভজনের পরিবেশনা দিয়ে। 888sport live chatীর সঙ্গে কণ্ঠসহযোগিতা করেছেন দেবশ্রী ভট্টাচার্য; তবলা ও হারমোনিয়ামে ছিলেন সৌমেন সরকার ও অজয় যোগেলকার।

উৎসবের পঞ্চম ও শেষ রজনীতে বেঙ্গল পরম্পরার 888sport live chatীদের সমবেত সেতার পরিবেশন করলেন পণ্ডিত কুশল দাশের পরিচালনায়। এইসব শিক্ষার্থী-888sport live chatীর সেতার-বাদনে নবিশি ছাপ আছে। এটা স্বাভাবিক। তবে আশা করা যায় ধীরে-ধীরে যোগ্য গুরুর কাছে রেয়াজ করে একদিন এই 888sport live chatীরা পরিণত হয়ে উঠবেন। সংগীতসাধনার পথ বেশ দীর্ঘ। এই উপলব্ধি নিয়ে সাধনারত থাকলে ফল পাওয়া যাবেই।

এরপর মঞ্চে এলেন পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা। তিনি প্রতিবারই এসেছেন এই সংগীত-উৎসবে এবং তাঁর সন্তুর বাদনে মুগ্ধ করেছেন সংগীতামোদীদের। এবারের আসরে পরিবেশন করলেন যোগ রাগ। আলাপ, জোড় ও ঝালায় স্বরের সুরেলা বিন্যাস 888sport live chatীর বৈশিষ্ট্য। সুরের সঙ্গে তালের মেলবন্ধনেও শিবকুমার বেশ মনোযোগী ও সতর্ক। রূপক তালে যোগ্যতার সঙ্গে সংগত করেছেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি। শিবকুমারের সন্তুর-বাদন আবেগঘন ও অন্তর্ভেদী।

কিরানা ঘরানার কুমার মারদুর গেয়ে শোনান ‘সুধর তোরি রূপ মানো নি, কহ দে ব্রহ্মা কহ দে বিষ্ণু’। 888sport live chatী তানে পারদর্শী, তানের সময়ে গমকের কাজে সার্থক। তাঁর  দ্রুত তিনতালের তারানা পরিবেশন ছিল মনোমুগ্ধকর।  888sport live chatী কবীরের ‘ভজন বিনা বিত গ্যায়ে দিন’ ভজনটি গাইলেন বেশ দরদের সঙ্গে।

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা হলো এইরাতে। সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, প্রধান অতিথি ছিলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। 888sport app দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, 888sport app উত্তরের মেয়র আনিসুল হক এবং স্কয়ার টয়লেট্রিজের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর অঞ্জন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের সবার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন, ঘোষণা করলেন, আগামী জানুয়ারিতে 888sport app স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে সুফি সংগীত-উৎসব।

সমাপনী অনুষ্ঠানের পর সেতার পরিবেশন করলেন মাইহার ঘরানার পণ্ডিত কুশল দাশ। সংগীতের ধারা ছিল তাঁর বংশে। পিতামহ বিমলচন্দ্র দাশ এস্রাজ বাজাতেন। পিতা শৈলেন দাশ পণ্ডিত রবিশঙ্করের শিষ্য ছিলেন। কুশল দাশ কৌশি-কানাড়া পরিবেশন করলেন প্রথমে বিলম্বিত ও পরে দ্রুত তিনতালে। যথারীতি আলাপ, জোড় ও ঝালা বাজালেন বেশ যোগ্যতার সঙ্গে। কৌশি-কানাড়া রাগটি বেশ শ্রম্নতিমধুর। রাগের এই মাধুর্য পাওয়া গেল 888sport live chatীর বাদনে। তাঁর সঙ্গে তবলা সংগত করেছেন পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।

এবারের উৎসবে কিরানা ঘরানার প্রাধান্য ছিল। অনুষ্ঠানের শেষ রাতেও কিরানা ঘরানার আরেক 888sport live chatীরা – আরতি অঙ্কলিকারের – খেয়াল শোনার সুযোগ হলো। কিশোরী আমানকারের শিষ্যা। তিনি পরিবেশন করলেন যোগকোষ রাগে একটি খেয়াল। ত্রিতালে  ‘ও সুন্দর বড়ি নাম, পীর বরায়ি জানে নেহি বালমওয়া’ বন্দিশটি শোনালেন খুবই নিষ্ঠার সঙ্গে। গায়কিতে প্রভা আত্রের ছায়া আছে। খেয়ালের পর শোনালেন ‘সাজনওয়া ক্যায়সে ম্যা আউ তোরে পাস’ ঠুমরিটি। 888sport live chatীর সঙ্গে তবলা ও হারমোনিয়ামে সংগত করেছেন রোহিত মজুমদার ও মিলিন্দ কুলকার্নি।

উৎসবের শেষ 888sport live chatী ছিলেন পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া। বরাবরই তাই হয়ে থাকে। এই রাতে শ্রোতার উপস্থিতি ছিল সর্বাধিক। মূল অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে, উন্মুক্ত আকাশের নিচে, শিশিরভেজা ঘাসের ওপর বসে অনুষ্ঠান শুনেছেন অনেকেই। এই নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ-অনুযোগ ছিল না। শ্রোতাদের এই সংগীতনিষ্ঠা দেখে বিস্মিত হতে হয়। হয়তো পণ্ডিত চৌরাসিয়ার বাঁশির টানেই সবাই এসেছিলেন।

পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া প্রথমে শোনালেন একটি বিরলরাগ প্রভাতী। হরিপ্রসাদের বাঁশিতে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। রূপক তালে প্রভাতী রাগের আবহ ছেয়ে যাচ্ছিল চারদিকে, তখন প্রভাত হতেও বেশি দেরি নেই। এরপর বাজালেন আরেকটি বিরল রাগ জয়েত। উঁচুমাপের 888sport live chatীদের পরিবেশনা শোনার এই এক বড় পাওয়া। অনেক অপ্রচলিত বা স্বল্পপ্রচলিত রাগ শোনা যায়। জয়েত রাগটি পরিবেশিত হলো তিনতালে।

888sport live chatীর সঙ্গে বাঁশিতে সহযোগিতা করেছেন দেবপ্রিয় রণদেব ও বিবেক সোনার, তবলায় সংগত করেছেন পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, পাখোয়াজ বাজিয়েছেন পণ্ডিত ভবানীশংকর। বাঁশি, তবলা ও পাখোয়াজের সওয়াল-জওয়াব ছিল অসাধারণ।

পণ্ডিত চৌরাসিয়া যখন শেষ করলেন, তখনো শ্রোতাদের মন  ভরেনি। আরো বাজানোর দাবি উঠল। পণ্ডিত চৌরাসিয়া বললেন, ‘আমি সারাদিন বাজাতে পারি। কিন্তু আমার সামনে একটি ঘড়ি আছে। আমি অসহায়।’ শেষ পর্যন্ত অতৃপ্তি নিয়েই ফিরতে হলো সবাইকে। এই অতৃপ্তি নিয়েই প্রতীক্ষা করতে হবে আরো একবছর।

বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের পঞ্চম অধিবেশন সমাপ্ত হলো সাফল্যের সঙ্গে। পাঁচ বছর ধরে এই উৎসব সার্থকভাবে চলার ফলে এখন বেশ প্রত্যয়ের সঙ্গেই বলা যায়, 888sport appsে সংগীতপিপাসুর অভাব নেই। এই পিপাসুরা ধীরে-ধীরে বোদ্ধা হয়ে উঠবেন। 888sport appsে সংগীতচর্চা, সাধনা ও উপভোগের নতুন যুগের সূচনা হচ্ছে। সংগীতচর্চার মাধ্যমে এদেশের মানুষ পরিশীলনের নতুন স্তরে উন্নীত হবে। বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসব আজ সংস্কৃতিপ্রেমীদের মহামিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এদেশে সাংস্কৃতিক উত্থানের আগমনী-সংগীত শোনা যাচ্ছে। r