সাম্রাজ্যবাদ কি আকাশটাকেও বন্দি করে ফেলছে? উত্তরে বলতে হয় ‘হ্যাঁ’। অন্তত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যে সে-পথেই এগোচ্ছে তার প্রমাণ সুস্পষ্ট। ভাষাবিদ-বুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কি তাঁর ‘Dominance and its Dilemmas’ 888sport liveে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কীভাবে আকাশ-দখল করে সমগ্র পৃথিবীর উপর তার আধিপত্য স্থায়ী করার চেষ্টা করছে তা আলোচনা করেছেন। (ফ্রন্টলাইন, ২১ নভেম্বর ২০০৩) ঘটতে থাকা বিভিন্ন ঘটনা বিচার করে বলা যায়, আকাশটাকে দখল করা বর্তমান মার্কিন বিদেশ ও সমরনীতির প্রধান লক্ষ্য। অনুমান করা যায় যে, মার্কিন দর্শনটা হলো, আকাশটা কবজা করতে পারলে সমগ্র পৃথিবীর ওপর বিনা বাধায় খবরদারি করা যাবে।
কয়েক বছর আগে জাতিসংঘের একটি কমিটিতে যখন প্রস্তাব করা হয় যে, আকাশের সামরিকীকরণ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য খুবই বিপদজনক (‘a grave danger for international peace and security’), তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সমর্থনপুষ্ট এবং সমরশক্তিতে প্রায় অপ্রতিরোধ্য ইজরায়েল ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে। এখানে মার্কিনিদের ভোট না দেওয়ার অর্থ হলো ভেটো দেওয়া, প্রস্তাবটিকে আঁতুড়েই মেরে ফেলা। পক্ষে ভোট দিলে যে নিজের বিরুদ্ধে রায় দিতে হয়। মার্কিন নীতিনির্ধারকরা এক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র স্ববিরোধিতার আশ্রয় নিতে চাননি। সাম্রাজ্যবাদের ডানা কীভাবে দিনে দিনে সমগ্র পৃথিবীটাকে তার কর্তৃত্বের ছায়ায় নিয়ে আসতে তৎপর হয়েছে, তার ঘটনাপরম্পরা এবং অন্তর্নিহিত দর্শনের ব্যাখ্যা চমস্কি তাঁর 888sport liveে তুলে ধরেছেন।
চমস্কি লিখেছেন যে, আকাশ-দখলীকরণ বন্ধ করার প্রস্তাবে ‘ভেটো’ দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর মার্কিন Space Command তাদের লক্ষ্য পরিবর্তনের ঘোষণা দেয়। আর আকাশ ‘নিয়ন্ত্রণ’ (‘control) নয়, এখন তাদের লক্ষ্য হলো আকাশের ‘মালিকানা’ (‘ownership’)। Space Command -এর ওই পরিকল্পনায় আরো দাবি করা হয়েছে যে, আকাশের মালিকানা ভবিষ্যৎ-সমরব্যবস্থায় কার্যত মূলচাবি হয়ে কাজ করতে পারবে; কারণ, তখন পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তের যে- কোনো জায়গায় তারা ইচ্ছামতো ঢুকে পড়ে ঘটনার গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ঘরে বসে প্রায় বিনাক্ষতিতে শত্রুপক্ষকে আকাশ থেকে ঘায়েল করা যাবে। চমস্কি ঠিকই ধরেছেন যে, আকাশ-দখল সার্থক হলে অতীতের মতো মার্কিনিদের আর ভিনদেশী জমিতে সামরিক ঘাঁটি গড়তে হবে না, ঘরে বসেই শত্রু সাবাড় করা যাবে।
চমস্কি জানিয়েছেন যে, ২০০২-এর মে মাসে পেন্টাগনের গোপন তথ্যাদির যেটুকু ফাঁস হয়ে যায়, সেখানেও আগাম নিবৃত্তি (forward deterrance) দর্শনের ইঙ্গিত রয়েছে। একজন সামরিক-বিশেষজ্ঞের মতে, আকাশ-দখল করে আগাম নিবৃত্তি কার্যকর করতে পারলে পৃথিবীর যে-কোনো লক্ষ্যবস্তুতে মার্কিনিরা নিরাপদে আঘাত করতে পারবে। পালটা আক্রমণের কোনো শঙ্কাই থাকবে না। মিসাইল-ব্যবস্থা গড়ে তুলে মার্কিনিদের আত্মরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে। আকাশ-দখলের এই ব্যবস্থা এতই সর্বব্যাপী হবে যে, তৃতীয়, চতুর্থ বা পঞ্চম বিশ্বের কোনো অগম্য স্থানেও যদি হার জিরজিরে প্রাগৈতিহাসিক একটা বাহনও নড়াচড়া করে, মার্কিনিরা তার গতিবিধির উপর নজর রাখতে পারবে। ওরা কি তাহলে ঈশ্বরের মতো সর্বত্রগামী হতে চলেছে? চমস্কি যথার্থই বুঝতে পেরেছেন যে, আকাশ-দখলের পরিকল্পনা সফল হলে পৃথিবী হয়ে পড়বে মার্কিনিদের পদাবনত। যখন ইচ্ছা তখনই যে-কাউকে আঘাত করতে পারবে। ইতিহাসে এই ব্যাখ্যার ব্যবস্থার সমতুল্য কিছু আজো তৈরি হয়নি। ‘The world is to be left at mercy of U. S. attack at will without warning or credible pretext. The plans have no historical parallel- (Dominance and its Dilemmas). চমস্কি আরো লিখেছেন যে, আকাশ-দখল নিয়ে আরো উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা রয়েছে। কী সে-পরিকল্পনা, তা গোপন থাকলেও অনুমান করা যায় যে, সেটি হবে আরো ভয়ানক কিছু।
সাম্রাজ্যবাদের, বিশেষ করে মার্কিনিদের, আকাশ-দখল-পরিকল্পনার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগটা কী? তাঁর জীবৎকাল এবং আলোচ্য বিষয়ের বিকাশের মাঝে সময়ের ব্যবধান কি অর্ধ শতাব্দীরও বেশি নয়? তা ঠিক, সময়ের দূরত্ব বেশ কয়েক দশকের; তারপরও যোগাযোগটা সুস্পষ্ট। আকাশটাকে সাম্রাজ্যবাদ যে তার বিস্তারের কাজে লাগাচ্ছে, রবীন্দ্রনাথ ১৯৩২ সালেই সেটা লক্ষ করেছেন এবং এর হাতে যারা মার খাচ্ছে, তারা যে কতটা অসহায় সে-কথাও উল্লেখ করেছেন। বলা যায়, সাম্রাজ্যবাদের আকাশ-দখল-বিষয়ে তাঁর বিশ্লেষণে ফুটে উঠেছে সাম্রাজ্যবাদের ভবিষ্যৎ-গতি-সম্পর্কে আগাম সাবধানবার্তা এবং সমাজনীতি ও মানব-আচরণ-সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি। ১৯৩২ সালে রবীন্দ্রনাথ সাম্রাজ্যবাদের আকাশকেন্দ্রিক যে-নিষ্ঠুর নির্মম আচরণ দেখেছেন, একবিংশ শতাব্দীতে মার্কিনিরা সেই নির্মমতা আরো কতটা ব্যাপক ও অব্যর্থ করা যায়, তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছে।
উড়োজাহাজ থেকে যেদিন পরিকল্পিতভাবে বোমাবর্ষণ শুরু হয়েছে, বলা যায়, সেদিন থেকেই সূত্রপাত হয়েছে আকাশ-দখলের। বর্তমান সময়ের মতো অতীতে এই বোমাবর্ষণ এতটা ভয়াবহ ছিল না। সময় যতই এগোচ্ছে, এই দখলদারিত্ব ততই মারমুখী হয়ে উঠছে। এর ভয়াবহ রূপের সাম্প্রতিকতম দৃষ্টান্ত হলো ইঙ্গ-মার্কিনিদের ইরাক-আক্রমণ ও দখল। ’৭০-এর দশকে ভিয়েতনামে চলেছে নির্বিচারে মার্কিন বোমাবর্ষণ; তারপর উপসাগরীয় যুদ্ধে দেখা গেছে মার্কিনিরা একটা যুদ্ধকে টেলিভিশন-দর্শকের জন্য কতটা চিত্রমধুর করতে পারে। ইরাক-যুদ্ধের বোমার আগুন টেলিভিশনের পর্দায় যে-ফুলঝুরি খেলিয়েছে তাতে মনে হয়েছে কোনো নান্দনিক প্যাটার্ন অনুসরণ করা হচ্ছে হয়তো-বা। মারণাস্ত্রকে আরো পারফেক্ট করা হয়েছে। দুঃখ-যন্ত্রণার কথা ছাইয়ের মতো চাপা পড়ে গেছে আগুনের হলকার নিচে। এই যুদ্ধে যে মার খেয়েছে, সে-ই বুঝেছে, অচেনা আগুন কীভাবে পোড়ায়, কেড়ে নেয় জীবন-সহায়-সম্পদ। কবি শামসুর রাহমান বিধ্বস্ত নীলিমার ছবি এঁকেছেন তাঁর কাব্যে। যুদ্ধের দিনগুলোতে উড়োজাহাজ থেকে বোমাবর্ষণের ক্ষণে ইরাকবাসী দেখতে পেয়েছেন নীলিমা থেকে কেমন অনবরত ঝরতে পারে আগুনের বৃষ্টি এবং দিতে পারে নরকের স্বাদ।
ইরাকবাসী অতীতেও আগুনবৃষ্টির শিকার হয়েছে। যেমন, ১৯৩২ সালের কথা তোলা যায় এবং রবীন্দ্রনাথ তখন ইরান-ইরাক 888sport slot game করছেন। ঘটনাটির কথা উল্লেখ করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন :
‘বোগদাদে ব্রিটিশদের আকাশফৌজ আছে। সেই ফৌজের খ্রীস্টান ধর্মযাজক আমাকে খবর দিলেন, এখানকার কোন্ শেখদের গ্রামে তাঁরা প্রতিদিন বোমাবর্ষণ করছেন। সেখানে আবালবৃদ্ধবনিতা যারা মরছে তারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ঊর্ধ্বলোক থেকে মার খাচ্ছে : এই সাম্রাজ্যনীতি ব্যক্তিবিশেষের সত্তাকে অস্পষ্ট করে দেয় বলে তাদের মারা এত সহজ’। (পারস্যে, পৃ. ১১)।
রবীন্দ্রনাথের সহানুভূতি যারা মার খাচ্ছে, তাদের জন্য, সে-কথা নতুন করে ব্যাখ্যা করার দরকার নেই। মার দেওয়া হচ্ছে ‘সাম্রাজ্যের ঊর্ধ্বলোক থেকে’। সাম্রাজ্যবাদকে ঊর্ধ্বলোকে কেন স্থাপন করেছেন কবি? পারস্যে-আলোকে বলা যায়, এর সম্ভাব্য দুটি উত্তর রয়েছে। প্রথমত, সাম্রাজ্যবাদ ঊর্ধ্বলোকে চড়েছে তার যন্ত্রবিদ্যার জোরে, এখানে তার বাহন উড়োজাহাজ। দ্বিতীয়ত, সাম্রাজ্যবাদ আদর্শ হিসেবে অবাস্তব, উড়োজাহাজের মতোই মানবসম্পর্কহীন, শূন্যে তার বিচরণ। উড়োজাহাজ শব্দটিকে বিশেষ অর্থে ব্যবহার করে কবি সাম্রাজ্যবাদের যে-চেহারা তুলে ধরেছেন, ১৯৩২-এ তা যতটা ভয়ংকর ও নির্মম ছিল, একবিংশ শতাব্দীতে তা আরো নির্মম রূপ নিয়েছে।
প্রথমেই দেখা যাক, রবীন্দ্রনাথ উড়োজাহাজকে অবাস্তব কেন বলছেন। সেটি বুঝতে পারলে উড়োজাহাজে আরূঢ় সাম্রাজ্যবাদ কেন অবাস্তব ও বিধ্বংসী তা বোঝা সহজ হবে। যন্ত্র ও যন্ত্রসভ্যতা উভয়ের প্রতি রবীন্দ্রনাথের সংশয় তাঁর বিভিন্ন রচনায় বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। যন্ত্রের উপকার নিয়ে প্রশ্ন না করলেও, যন্ত্র যে বস্তুতান্ত্রিকতাকে উৎসাহিত করে, রবীন্দ্রনাথ অকপটে এ-কথা বিভিন্ন সময়ে 888sport app download for android করিয়ে দিয়েছেন। উড়োজাহাজ তৈরি করা হয়েছে প্রকৃতির নিয়মনীতি মেনে; বৈজ্ঞানিক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এর আবিষ্কার ও বিস্তার ঘটানো হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ সেটিকে অস্বীকার করেননি; জ্ঞানপ্রচেষ্টা বা মানুষের উদ্ভাবনীশক্তির প্রতি তিনি ছিলেন সশ্রদ্ধ। কিন্তু প্রকৃতিগতভাবে উড়োজাহাজের আবিষ্কারটি যে অবাস্তব, প্রকৃতির স্বাভাবিক অবস্থার বিরোধী, সে-কথা বলতে ভোলেননি। উড়োজাহাজের অবাস্তবতা তুলে ধরেছেন পাখির ওড়ার সাথে উড়োজাহাজ-চলার পার্থক্য তুলে ধরে।
পাখি বা প্রাণীর আকাশে বিচরণ-সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘ছেলেবেলা থেকে আকাশে যে-সব জীবকে দেখেছি তার প্রধান লক্ষণ গতির অবলীলতা। তাদের ডানার সঙ্গে বাতাসের মৈত্রীর মাধুর্য’ (ঐ, পৃ. ৯) সেই মাধুর্য দ্বন্দ্বহীন। ‘পাখির পাখাও বাতাসের সঙ্গে মিল করে চলে, তাই এমন তার সুষমা’ (ঐ, পৃ. ৯)। কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এই সুষমাটি নেই। ‘মাটির পৃথিবীতে চলায়-ফেরায় দ্বন্দ্বের চেহারা, সেখানে ভারের রাজত্ব, সকল কাজেই বোঝা ঠেলতে হয়’ (ঐ, পৃ. ৯)। উড়োজাহাজ আবিষ্কার করে মানুষ সেই ভারকে নিয়ে গেল আকাশে বা রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘বায়ুলোকে’। এই পরিবর্তন-বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘এতদিন পরে মানুষ পৃথিবী থেকে ভারটাকে নিয়ে গেল আকাশে। তাই তার ওড়ার যে চেহারা বেরলো সে জোরের চেহারা। তার চলা বাতাসের সঙ্গে মিল করে নয়, বাতাসকে পীড়িত করে; এই পীড়া ভূলোক থেকে আজ গেল দ্যুলোকে। এই পীড়ায় পাখির গান নেই, জন্তুর গর্জন আছে। ভূমিতল আকাশকে জয় করে আজ চীৎকার করছে’ (ঐ, পৃ. ১০)।
আকাশে ওড়ার জন্য একটা বিশেষ মূল্য দিতে হয় মানুষকে; বাস্তব পৃথিবীর সঙ্গে বিচ্ছেদকে মেনে নিতে হয়। এই বিচ্ছেদের প্রথমটি রবীন্দ্রনাথ এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন :
‘বায়ুতরী যতই উপরে উঠল ততই ধরণীর সঙ্গে আমাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের যোগ সংকীর্ণ হয়ে একটা মাত্র ইন্দ্রিয়ে এসে ঠেকল, দর্শন-ইন্দ্রিয়ে, তাও ঘনিষ্ঠভাবে নয়। নানা সাক্ষ্য মিলিয়ে যে-পৃথিবীকে বিচিত্র ও নিশ্চিত করে জেনেছিলুম সে ক্রমে এল ক্ষীণ হয়ে, যা ছিল তিন আয়তনের বাস্তব তা হয়ে এল এক আয়তনের ছবি। সংহত দেশকালের বিশেষ বিশেষ কাঠামোর মধ্যেই সৃষ্টির বিশেষ বিশেষ রূপ। তার সীমানা যতই অনির্দিষ্ট হতে থাকে, সৃষ্টি ততই চলে বিলীনতার দিকে। সেই বিলয়ের ভূমিকার মধ্যে দেখা গেল পৃথিবীকে, তার সত্তা হলো অস্পষ্ট, মনের উপর তার অস্তিত্বের দাবি এল কমে’ (ঐ, পৃ. ১০)।
আকাশচারী হলে মানুষ যে কতটা বিধ্বংসী হতে পারে ১৯৩২-এ ইরাকের উপর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের বোমাবর্ষণে রবীন্দ্রনাথ তাঁর প্রত্যক্ষ রূপ দেখেছেন। ওই অবস্থান থেকে এ-জাতীয় আচরণকে মানবপ্রকৃতির স্বাভাবিক প্রকাশ বলে মনে হয়েছে রবীন্দ্রনাথের এবং লিখেছেন : ‘এমন অবস্থায় আকাশ-যানের থেকে মানুষ যখন শতঘ্নী বর্ষণ করতে বেরোয় তখন সে নির্মমভাবে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে; যাদের মারে তাদের অপরাধের হিসাববোধ উদ্যত বাহুকে দ্বিধাগ্রস্ত করে না, কেননা হিসাবের অঙ্কটা অদৃশ্য হয়ে যায়। যে-বাস্তবের পরে মানুষের স্বাভাবিক মমতা যে যখন ঝাপসা হয়ে আসে তখন মমতারও আধার যায় লুপ্ত হয়ে’ (ঐ, পৃ. ১০-১১)।
মমতার অবলুপ্তি যে কতটা আত্মতুষ্টির কারণ হয়ে ওঠে, তার দৃষ্টান্ত রবীন্দ্রনাথ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে সৌজন্য অতিক্রম না করে ব্যবহার করেছেন শ্লেষ। লক্ষ করার বিষয় যে, রবীন্দ্রনাথকে বোমাবর্ষণের খবরটা দেন একজন খ্রিষ্টান ধর্মযাজক। খ্রিষ্টান ধর্মমতে, সকল মানুষ ঈশ্বরের পুত্র অতএব মানবিক সহানুভূতির যোগ্য। তবে ইরাকবাসীরা বোধহয় ঈশ্বরের সন্তান নন। হলে ধর্মযাজক পেশাগত নিষ্ঠার সততায় এর প্রতিবাদ করতেন। এক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী চেতনার সঙ্গে ধর্মযাজকের চেতনার কোনো দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়নি; মানবতা বিদায় নিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন : ‘কিন্তু খ্রিষ্টান ধর্মযাজকের কাছে সেই পিতা এবং তাঁর সন্তান হয়েছে অবাস্তব, তাঁদের সাম্রাজ্যতত্ত্বের উড়ো জাহাজ থেকে চেনা গেল না তাঁদের,…’ (ঐ, পৃ. ১১)।
ভূলোক থেকে দ্যুলোকে স্থানান্তর ঘটলে মানব-আচরণে পরিবর্তনকে মানবচরিত্রের সাধারণ সত্য বলাটা বোধহয় অন্যায় হবে না। এমনিতে ‘আউট অব সাইট, আউট অব মাইন্ড’ বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। তাছাড়া দর্শক না থাকলে দৃশ্যবস্তুর অস্তিত্ব থাকে কি-না, সে-বিষয়ে দার্শনিক বিতর্ক রয়েছেই। তবে উড়োজাহাজের দূরত্ব যে মানবমনে একজাতীয় নির্লিপ্ততার সৃষ্টি করে সে-কথা কবি ইয়েটস-রচিত ‘অ্যান আইরিশ এয়ারম্যান ফোরসিজ হিজ ডেথ’ 888sport app download apkয় প্রতিফলিত হয়েছে। বিমানচালক ওই 888sport app download apkয় তার পেশাকে ঠিক নিন্দা করেননি; আপন আবেগের আনন্দে (এ লোনলি ইমপালস অব ডিলাইট) মেঘের দেশে চালিয়ে নিয়ে গেছেন তার ‘বায়ুতরী’ এবং ওই ঊর্ধ্বলোক তার হৃদয় থেকে ভালোবাসা বা ঘৃণা দুটিকেই সরিয়ে দিয়েছে। বিমানচালক আপন মনোভাব সম্পর্কে বলছেন :
‘Those that I fight I do not hate/those that I guard I do not love.’ ঘৃণা বা ভালোবাসা কোনোটিই না থাকা হলো নির্লিপ্ততা। নির্লিপ্ততায় যেমন মানুষ হতে পারে অতিমানবের মতো উদাসীন তেমনি মানবগুণবর্জিত। আর মানুষের গুণ হারিয়ে ফেলে মানুষকে মানুষরূপে বিচার না করার বাধাগুলো সহজে ঝেড়ে ফেলা যায়।
সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারিত সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা দেওয়া এ-রচনাটির লক্ষ্য নয়। আমরা জানি, এটি এমন একটি রাজনৈতিক পন্থা যেটিকে কাজে লাগিয়ে একটি সবল দেশ বা জনগোষ্ঠী দুর্বল দেশ বা জনগোষ্ঠীর জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে। এই নিয়ন্ত্রণের পেছনে দখলকারী বা আধিপত্যকামী দেশের আর্থিক-রাজনৈতিক স্বার্থচিন্তাই বেশি গুরুত্ব পায়। কখনো কখনো আদর্শের কথাও বলা হয়। যেমন, অতীতে আফ্রিকায় পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা ঢুকে পড়েছিলেন সভ্যতার আলো ছড়াবার প্রকল্প নিয়ে। ইতিহাস বলে, তাঁরা যতটা না আলো ছড়িয়েছেন, অন্ধকার তার চাইতে কম ছড়াননি। সাম্রাজ্যবাদের শিকার দেশগুলোর আর্থসামাজিক বিশৃঙ্খলা তার প্রমাণ। আজ আমেরিকা শান্তি নিশ্চিত করতে আফগানিস্তান, ইরাক ইত্যাদি দেশে ফ্রন্টিয়ার খুলেছে এবং তার জয়যাত্রার বাহন উড়োজাহাজ। এই বাহনকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ‘ডাবল আয়রনির সৃষ্টি করেছেন। এক, বস্তুগতভাবেই সে অবাস্তব; দুই প্রয়োগেও সে অবাস্তবতার বাহন।
রবীন্দ্রনাথ সাম্রাজ্যবাদকে দেখেছেন ‘তত্ত্বনির্মিত উড়োজাহাজ’রূপে। তিনি লিখছেন, ‘গীতায় প্রচারিত তত্ত্বোপদেশও এই রকমের উড়ো জাহাজ। অর্জুনের কৃপাকাতর মনকে সে এমন দূরলোকে নিয়ে গেল, সেখান থেকে দেখলে মারেই-বা কে, মরেই-বা কে, কেই-বা আপন, কেই-বা পর। বাস্তবকে আবৃত করবার এমন অনেক তত্ত্বনির্মিত উড়ো জাহাজ মানুষের অস্ত্রশালায় আছে, মানুষের সাম্রাজ্যনীতিতে, সমাজনীতিতে, ধর্মনীতিতে’ (ঐ, পৃ. ১১)।
উদ্ধৃত মন্তব্যটি থেকে দেখাই যায় যে, রবীন্দ্রনাথ এখানে উড়োজাহাজকে ‘ইউটোপিয়ার’ সমার্থকরূপে ব্যবহার করেছেন। ধর্ম, সমাজনীতি বা রাজনীতিকে কীভাবে ইউটোপিয়ার আদলে বারেবারে ব্যবহার করা হয়েছে তার ইতিহাস নতুন করে বর্ণনা করার দরকার নেই। আজ মার্কিনিরা আকাশে আকাশে উড়ছে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার যুক্তি দেখিয়ে। কিন্তু তার আসল লক্ষ্য কি আকাশ দখল করে পৃথিবীকে তার পদাবনত করা নয়? যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে চমস্কি সেই উপসংহারই টেনেছেন। শান্তির নামে নিরাপরাধকে মূল্য দিতে হয়, তার জন্য কী সান্ত্বনা বা সহমর্মিতা রয়েছে? রবীন্দ্রনাথ যা বলেছিলেন সেটিই কি সত্য নয় যে আকাশ থেকে ‘নিরাপদে মারা যাচ্ছে’ বলেই মার দেওয়া সহজ হচ্ছে? তাছাড়া, পাশ্চাত্য হননবিদ্যায় যারা দুর্বল তাদের মনুষ্যত্ব কি ‘পশ্চিমি অস্ত্রীদের’ কাছে ঝাপসা হয়ে যায়নি? ঝাপসা যে হয়ে গেছে তা নতুন করে বলার দরকার করে না। অবাস্তবতার বাহন ‘উড়োজাহাজে’ চড়ে সাম্রাজ্যবাদী তত্ত্বের উড়োজাহাজ চালিয়ে মার্কিনিরা আজ আকাশ দখল করে পৃথিবী দখলের কাজে নেমেছে। উড়োজাহাজ চেপে একদিন সাম্রাজ্যবাদ যে নিরাপদে উড়ে বেড়ানোর সুযোগ করে নেবে তার আগাম সতর্কীকরণ রবীন্দ্রনাথ কি সেই ১৯৩২-এ করে যাননি?
সেই সুদূর অতীতে বসে দূর-ভবিষ্যৎকে দেখতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ আরো একটি বিষয়ের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। আমার বিবেচনায়, ‘উড়োজাহাজ’ শব্দটি নিয়ে খেলা করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ সৃজনশীল 888sport live footballকর্ম এবং 888sport live footballতত্ত্ব (লিটারারি থিয়োরি) একদিন কোন পথে এগোবে তারও আভাস দিয়ে গেছেন। একজন গীতিকবি হিসেবে তিনি যেমন থাকতেন আপন চেতনায় ‘মগ্ন’ তেমনি প্রয়োজনে আপন অন্তর্লোক থেকে বেরিয়ে আপন রূপকে ড়নলবপঃরাবষু দেখার সুযোগ তৈরি করেছেন। যেমন, শেষের 888sport app download apkর অমিত রায়। অমিতকে সৃষ্টি করে রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথকেই আঘাত করেছেন, যদিও শেষমেশ অমিতের বিপ্লব ডানা গোটাতে বাধ্য হয়েছে। লাবণ্যকে নয়, কেতকীকে নিয়েই ঘর বাঁধতে হয়েছে। সাম্প্রতিককালে সৃজনশীল 888sport live football এবং 888sport live footballতত্ত্ব একজাতীয় আঘাতের প্রক্রিয়াকে কাজে লাগায় জীবনের প্রকৃত চিত্রটি তুলে ধরতে। বলা চলে, রবীন্দ্রনাথ সে-সম্ভাবনার ইঙ্গিত রেখে গেছেন।
যে-আঘাত বা ‘ভায়োলেন্সে’র কথা বলা হচ্ছে তা খুব নতুন কিছু নয়। অষ্টাদশ শতকের ইংরেজ সমালোচক ড. জনসন সপ্তদশ শতকের ইংরেজ কবি এবং শেক্সপিয়রের সমসাময়িক জন ডান সম্পর্কে অনুযোগ করেছিলেন যে, গায়ের জোরে (violence) তিনি সামঞ্জস্যহীন চিত্রকল্প জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। প্রিয়ার মুখে যাঁরা চাঁদের ছাপ না দেখে গোলার্ধের অর্ধেকটা দেখেন তাঁদের চিন্তা এবং অনুভূতির গভীরতা বুঝতে কিছুটা বাড়তি বুদ্ধির (রিঃ) দরকার হয়। ইতিহাস, সমাজ, মানবজীবন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে যেসব মহাবর্ণনা বা meta narrative চলে আসছে তার তলায় আসল কথাটি প্রায়ই চাপা পড়ে গেছে। এই লুকানো সত্যকে উদ্ধার করতে সাম্প্রতিককালের 888sport live footballে প্রায়ই fantasy-i আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। প্রকৃত চিত্রটি তুলে ধরতে অনেক লেখকই ব্যবহার করেছেন magic realism। যেমন, ১৯৪৭-পরবর্তী ভারতের ইতিহাসের ‘tryst with desti বা ওই জাতীয় meta narrative -কে deflate করতে সালমান রুশদী পিনোচ্চিওর লম্বা নাকওয়ালা চরিত্রের মতো সৃষ্টি করেছেন সেলিমের চরিত্র।
সৃজনশীল 888sport live footballকর্মের পাশাপাশি লিটারারি থিয়োরি মূল text -এর ভেতরে sub-text বা counter-text -এর সন্ধান করে লুকানো অন্য কোনো অর্থ উদ্ধার করতে। উড়োজাহাজ শব্দটি নিয়ে রবীন্দ্রনাথ এমনই sub-text বা counter-text তৈরি করেছেন পারস্যে বইতে। পশ্চিমি সভ্যতা বা সাম্রাজ্যবাদের বাহন উড়োজাহাজ সাধারণত একটি অর্থেই ব্যবহৃত হয়। ওই ব্যবহারের ভেতরে কোনো অনিশ্চয়তার বোধ দেখা যায় না। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ‘উড়োজাহাজ’ শব্দটির একটি অর্থ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না; তিনি নানা নাম আবিষ্কার করেছেন এর জন্যে। প্রথমে লিখেছেন উড়ো জাহাজ, এরপর প্রতিশব্দ হিসেবে একে একে ব্যবহার করেছেন ‘যন্ত্রপঙ্খীরাজ’, ‘ব্যোমতরী’, ‘বায়ুযান’, ‘খেচররথ’, ‘যন্ত্র’, ‘তরী’, ‘বায়ুতরী’, ‘আকাশযান’ এবং ‘ব্যোমবাহন’। প্রশ্ন হলো, উড়োজাহাজ শব্দটির জন্য এতগুলো সমার্থক শব্দ ব্যবহার করেছেন কেন? বায়ুযানে চড়ে কবির মনটিও কি সৃষ্টির বায়ুতে পাল তুলেছিল?
রবীন্দ্রনাথের উদ্ভাবনী এবং সৃজনক্ষমতা যে খুব কম লোকের ভেতরেই দেখতে পাওয়া যায় তার পুনরুল্লেখের দরকার নেই। তাঁর মতো একটি playful mind নিয়ে খুব কম লোকই জন্মগ্রহণ করেছেন। তবে এখানে রবীন্দ্রনাথ একটি শব্দ নিয়ে খেলা করেছেন শুধুমাত্র Playful হবার জন্য নয়। আসলে যে-যন্ত্রসভ্যতা এত দাপটে আকাশ জয় করছে তার প্রকৃতি ও প্রয়োগ-বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের একটি সংশয় ছিল। আর এই সংশয়টি প্রকাশ করার জন্য শুধুমাত্র উড়ো জাহাজ কথাটির জন্য এতগুলো শব্দ ব্যবহার করে ওই সভ্যতার meta narrative -এর বিপক্ষে একটি counter-text তৈরি করার চেষ্টা করছেন। আর এই counter-text রবীন্দ্রনাথের সংশয়কে ধারণ করছে। বলা যায়, এই counter-text তৈরি করে রবীন্দ্রনাথ থিয়োরির জন্য তাঁর বিপ্লবী অমিত রায় সৃষ্টি করে গেছেন, আগাম আভাস দিয়ে গেছেন কীভাবে একদিন 888sport live footballকর্ম ও তত্ত্বে playfulness of mind প্রাধান্য পাবে, লেখকেরা exotic I fantastic -এর দিকে ঝুঁকবেন। রবীন্দ্রনাথের চিন্তা যে এখানে একদম প্রশ্নাতীত, তা বলা যাবে না। প্রথমে দেখা যাক, সাম্রাজ্যবাদ থেকে পরিত্রাণ-বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ কী বলেছেন। আকাশকে তিনি দেখেছেন ঈশ্বরের আলো এবং শান্তির উৎসরূপে। কিন্তু সেই নীলিমা যদি ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাহলে মুক্তির উপায় কী? রবীন্দ্রনাথ ইরাক বায়ুফৌজের সেই ধর্মযাজককে ইংরেজিতে যে-বাণী দিয়েছিলেন সেখানে লিখেছেন, ‘If in an evil moment mans cruel history should spread its black wings to invade that realm of divine dreams with its cannibalistic greed and fratricidal ferocity then Gods cures will certainly descend upon us for that hideous desecration and the last curtain will be rung down upon the world of Man for whom God feels ashamed.’ (ঐ, পৃ. ১২)।
আকাশ-দখল যে ভ্রাতৃঘাতী এবং মানুষখেকো রূপ নিয়েছে তাই-ই শুধু নয়, মার্কিন Spece Command -এর পরিকল্পনা কার্যকর হলে পৃথিবীর কোথাও যে কেউ আর মার্কিনি খবরদারির বাইরে থাকবে না, সে-কথা চমস্কি আলোচনা করেছেন। এর হাত থেকে রক্ষা পাবার কি কোনো পথ আছে? রবীন্দ্রনাথ সে-আলোচনায় যাননি। ঋষির ভাষায় উত্তর দিয়েছেন, ওই ভ্রাতৃঘাতী মানুষখেকোদের উপর ঈশ্বরের অভিসম্পাত নেমে আসবে। কিন্তু এই অভিসম্পাত কি বাঁচাতে পারবে সাধারণ মানুষকে? বাঁচাতে না পারার দৃষ্টান্ত এত বেশি যে, এই বিষয়ে ঈশ্বরের উপর ভরসা রাখার সাহসও হারিয়ে গেছে। আর ঈশ্বরের অভিসম্পাত মার্কিনিদের উপর নামার আপাতত কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। রবীন্দ্রনাথের আস্তিক্যবাদ সাধারণ বিশ্বাসের অতিরিক্ত কিছু নয়।
মার-খাওয়া মানুষ কীভাবে তার অবস্থা পালটাবে, অন্তত মানুষ হিসেবে তার অস্তিত্বের জন্য 888sport apk download apk latest version আদায় করবে, সে-বিষয়টি রবীন্দ্রনাথ এই আলোচনায় তোলেননি। এর সঙ্গে আরো একটি প্রশ্ন চলে আসে। 888sport apk যেমনি মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তেমনি আবার ধ্বংসের কাজেও সাহায্য করছে। রবীন্দ্রনাথ যেমন লক্ষ করেছেন ‘পশ্চিমা হননবিদ্যা’ ও ‘পশ্চিমা অস্ত্রী’দের কথা, তেমনি আবার মন্তব্য করেছেন, ‘পৃথিবীর মধ্যে পাশ্চাত্ত্য মহাদেশেই মানুষ আজ উজ্জ্বল তেজে প্রকাশমান’ (ঐ, পৃ. ১৫)। 888sport apkের সাধনা পশ্চিমাজগৎকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে, কারণ ‘সেই মানুষেই বৈজ্ঞানিক সত্যকে লাভ করবার অধিকারী, সত্যকে যে 888sport apk download apk latest version ক’রে পূর্ণ মূল্য দিতে পারে। এই 888sport apk download apk latest version আধ্যাত্মিক, প্রাণপণ নিষ্ঠায় সত্য-সাধনার শক্তি আধ্যাত্মিক। পাশ্চাত্ত্য জাতি সেই মোহমুক্ত আধ্যাত্মিক শক্তি দ্বারাই সত্যকে জয় করেছে এবং সেই শক্তিই জয়ী করছে তাদের’ (ঐ, পৃ. ১৫)। আবার একটু পরেই লিখেছেন, ‘অপর পক্ষে পাশ্চাত্ত্য জাতির মধ্যে বিপদের লক্ষণ আজ যা দেখা দিয়েছে সেও একই কারণে। বৈজ্ঞানিক বুদ্ধি ও শক্তি তাকে প্রভাবশালী করেছে, এই প্রভাব সত্যের বরদান। কিন্তু সত্যের পক্ষে মানুষের ব্যবহার কলুষিত হলেই সত্য তাকে ফিরে মারে। 888sport apkকে দিনে দিনে য়ুরোপ আপন লোভের বাহন করে লাগামে বাঁধছে’ (ঐ, পৃ. ১৫)। প্রশ্ন হলো, পাশ্চাত্য জাতি যদি মোহমুক্ত আধ্যাত্মিক শক্তিদ্বারা 888sport apkের সত্যকে জয় করে, তাহলে তাকে ‘কলুষিত’ করছে কী করে? সাধারণ মতে আমরা কি বিশ্বাস করি না যে কোনোকিছু আধ্যাত্মিক স্তরে পৌঁছলে তার আর কলুষিত হবার ভয় থাকে না। নাকি 888sport apkের সত্যঅর্জনের অন্য উৎস রয়েছে। কবি সে-উৎসের কথাও আলোচনা করেছেন।
উড়োজাহাজ-সংস্কৃতি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘একালের বিমান যারা বানিয়েছে তারা আর-এক জাত। শুধু যদি বুদ্ধির জোর এতে প্রকাশ হতো তাহলে কথা ছিল না। কিন্তু চরিত্রের জোর – সেটাই সব-চেয়ে শ্লাঘনীয়’ (ঐ, পৃ. ১৩-১৪)। সেই জোর নিয়ে এগিয়ে গেছে এবং ‘সাহস’ ও ‘অপরাজেয় অধ্যাবসায়’ দিয়ে ‘ব্যর্থতা, মৃত্যু’কে জয় করে সফলতা লাভ করেছে।
শুধু চরিত্রের জোর নয়, পশ্চিমা জাতের সাফল্যের আরো একটি কারণ দেখতে পেরেছেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি লিখেছেন :
‘এই ব্যোমতরীর চারজন ওলন্দাজ নাবিকের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখি। বিপুল বপু, মোটা হাড়, মূর্তিমান উদ্যম। যে-আবহাওয়ায় এদের জন্ম সে এদের প্রতিক্ষণে জীর্ণ করেনি, তাজা রেখে দিয়েছে। মজ্জাগত স্বাস্থ্য ও তেজ কোনো একঘেয়ে বাঁধা ঘাটে এদের স্থির থাকতে দিল না। বহু পুরুষ ধরে প্রভূত বলদায়ী অন্নে এরা পুষ্ট, বহু যুগের সঞ্চিত প্রচুর উদ্বৃত্ত এদের শক্তি’ (ঐ, পৃ. ১৪)।
এর পাশে ভারতবাসীর কী অবস্থা দেখেছেন তিনি? ওই উড়োজাহাজ-সংস্কৃতি ভারত কেন অর্জন করতে পারেনি? রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘ভারতবর্ষে কোটি কোটি মানুষ পুরো পরিমাণ অন্ন পায় না। অভুক্তশরীর বংশানুক্রমে অন্তরে-বাহিরে সকল রকম শত্রুকে মাশুল দিয়ে সর্বস্বান্ত। মনেপ্রাণে সাধনা করে তবেই সম্ভব হয় সিদ্ধি, কিন্তু আমাদের মন যদি-বা থাকে, প্রাণ কই?’ (ঐ, পৃ. ১৪)। রবীন্দ্রনাথ এ-প্রশ্ন তুলেছিলেন ১৯৩২-এ। ভারতবর্ষ তখন ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের তলে। কিন্তু এখন পরিবর্তন হয়েছে। ভারতও পারমাণবিক বোমা তৈরি করে অপর দেশের জন্য আকাশভীতি হয়েছে, উড়োজাহাজ-সংস্কৃতি কিছুটা হলেও চর্চা করছে। ওলন্দাজের মতো ‘বিপুল বপু, মোটা হাড়’ বাগাতে না পারলেও ভালো খেয়ে-পরে একটা শ্রেণি ‘মূর্তিমান উদ্যম’। দেশের কর্তৃত্ব এদের হাতে। রবীন্দ্রনাথ দেখেছিলেন দুটি জাত – ওরা এবং ভারতীয়রা। এখন কি তাহলে ভারতবর্ষেও দুটি জাত তৈরি হয়েছে? একটি মূর্তিমান উদ্যমী শ্রেণি এবং অন্যটি উপবাসে ক্লান্ত শরীর নিয়ে কাজে ফাঁকি দিয়েই চলেছে।
ভারতীয় পত্রিকা ফ্রন্টলাইন তার ফেব্রুয়ারি ২৮-মার্চ ১২, ২০০৪ 888sport free betয় সে-চিত্রই তুলে ধরেছে। ভারত-বিষয়ক 888sport world cup rateের একটি চিত্রে নাচ-গান স্বাস্থ্য-বিত্তে চকচক করছে উদ্ভাসিত ভারত এবং অন্যচিত্রের ডাস্টবিন ছেঁচে খাবার খুঁজতে থাকা শিশুরা জয়নুলের আঁকা মন্বন্তরের ছবির কথা 888sport app download for android করিয়ে দেয়। অতীতে ছিল ভারতীয় ও আর-এক জাত; এখন ভারত বিভক্ত হয়েছে দুজাতে – অন্নপুষ্ট ও উপবাসীতে? রবীন্দ্রনাথ ১৯৩২ সালে মানবসমাজে যে অন্নপুষ্ট ও উপবাসী এবং মার দেনেওয়ালা এবং মার খানেওয়ালার ভাগাভাগি দেখেছিলেন তার কি বিলোপ ঘটেছে? বিরাজমান অবস্থা বলে সেই ভাগাভাগির বিলোপ ঘটেনি। তাহলে কি বলতে হবে দেশের পরিচালকরা চিন্তার উড়োজাহাজে চড়ে ‘ঊর্ধ্বলোক’ থেকে দেশ চালান? রবীন্দ্রনাথ অবশ্য এর কোনো সমাধান দেননি। সে-দায়িত্ব তাঁর নয়। একজন কবির দায়িত্ব মানুষের জন্য ভালোবাসা এবং সত্য
প্রকাশ করা। উভয় কাজই গভীর দায়িত্ববোধ নিয়ে সম্পন্ন করে গেছেন রবীন্দ্রনাথ।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.