সিগনেট প্রেসের রূপসী বাংলা বনাম জীবনানন্দ দাশের পান্ড‍ুলিপি

ফয়জুল লতিফ চৌধুরী

আমাদের মনঃপূত হোক বা না-হোক, রূপসী বাংলা কবি জীবনানন্দ দাশের জনপ্রিয়তম কাব্যগ্রন্থ। এটি প্রকাশিত হয়েছিল জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর পর – ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে, প্রকাশক কলকাতার সিগনেট প্রেস। ভারত ও 888sport appsের বাজারে রূপসী বাংলার অনেক সংস্করণ লভ্য। কার্যত সবই ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে  প্রকাশিত  সিগনেট সংস্করণকে অনুসরণ করেছে। আদৌ অস্বাভাবিক নয় যে, সিগনেট সংস্করণের ভুলভ্রান্তিগুলো পরবর্তী সংস্করণে অনুকৃত হয়েছে। এমনকি যাঁরা রূপসী বাংলার 888sport app download apkগুলো 888sport app download apk latest version করেছেন তাঁরাও বাধ্যতামূলকভাবেই সিগনেটের ভুলগুলোও 888sport app download apk latest version করেছেন।

তবে এ-প্রসঙ্গে 888sport app download for androidীয় যে, ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার প্রতিক্ষণ প্রকাশনা সংস্থা থেকে দেবেশ রায়ের সম্পাদনায় রূপসী বাংলার পান্ড‍ুলিপি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। তথাপি কোনো ফলোদয় হয়েছে, এরূপ প্রতীয়মান হয় না। হাতের কাছে ভারত ও 888sport appsের বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রকাশিত রূপসী বাংলার যে আট-নয়টি সংস্করণ পাওয়া যাচ্ছে তার সবগুলোই সিগনেট সংস্করণের অবিকল প্রতিলিপি; – প্রযত্নের অভাবে মুদ্রণপ্রমাদ যোগ হয়েছে মাত্র। ১৯৫৭-র পর ইতোমধ্যে পঞ্চাশ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। ২০১৫-র সংস্করণটি পর্যালোচনাক্রমে বলা যায়, সিগনেট প্রেস কর্তৃপক্ষ তাদের ভুলগুলো সংশোধন করেনি। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ২০১৫-তে 888sport appর বেঙ্গল পাবলিকেশন্স লিমিটেড থেকে প্রকাশিত এবং কবি ভূমেন্দ্র গুহ কর্তৃক সম্পাদিত জীবনানন্দ দাশের 888sport app download apk – মূলানুগ পাঠ, যাতে ৫১ থেকে ৭৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত রূপসী বাংলার 888sport app download apkগুলো মূল পান্ড‍ুলিপির ভিত্তিতে পরিশোধনক্রমে সন্নিবেশন করা হয়েছে।

 

দুই

১৯৫৭-য় প্রকাশিত সিগনেট প্রেস সংস্করণ রূপসী বাংলার ভুলত্রম্নটিগুলো সংশোধনের দাবি রাখে এবং এজন্য ভারতের জাতীয় গ্রন্থাগারে রেয়ার বুক সেকশনে রক্ষিত জীবনানন্দ দাশের সংশিস্নষ্ট পান্ড‍ুলিপির সহায়তার প্রয়োজন হবে। ভারতের জাতীয় গ্রন্থাগারে জমা দেওয়ার আগে ট্রাঙ্কভর্তি জীবনানন্দের লেখার খাতাগুলো অনুজ অশোকানন্দ দাশের তত্ত্বাবধানে রক্ষিত ছিল। এগুলোর একটি খাতায়, ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে, জীবনানন্দ দাশ একাদিক্রমে ৭৩টি 888sport app download apk রচনা করেছিলেন। এই খাতাটি কলকাতাস্থ ভারতের জাতীয় গ্রন্থাগারে জীবনানন্দের ৬-সংখ্যক 888sport app download apkর খাতা হিসেবে চিহ্নিত। ৭৩টি 888sport app download apkর প্রথম ৬২টি স্পষ্ঠত চতুর্দশপদী, যদিও ৩২-সংখ্যক 888sport app download apkয় (‘এখানে ঘুঘুর ডাকে’) চতুর্দশ পঙ্ক্তিটির অধিকাংশ লেখা বাকি ছিল এবং একইভাবে ৬২- সংখ্যক 888sport app download apkর (‘জানালার ফাঁক দিয়ে’) ষষ্টকে ছটির পরিবর্তে সাতটি পংক্তি দৃশ্যমান – হয়তো জীবনানন্দ কোনো একটি পঙ্ক্তি বর্জন করার কথা ভেবেছিলেন। জীবনানন্দ দাশ এ-খাতার 888sport app download apkগুলো ‘বাংলার ত্রস্ত নীলিমা’ নাম দিয়ে কাব্যাকারে প্রকাশ করার কথা ভেবেছিলেন। অনেক ভাবনার মতো এ-ভাবনাটিও জীবনানন্দ বাস্তবায়ন করেননি।

জীবনানন্দের মৃত্যু-পরবর্তীকালে – ১৯৫৭-তে – কবিভ্রাতা অশোকানন্দ দাশের উদ্যোগে কলকাতার সিগনেট প্রেস থেকে
এ-খাতাটির 888sport app download apkগুলো নিয়ে কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের উদ্দেশ্যে একটি পান্ড‍ুলিপি তৈরি করা হয়। পান্ড‍ুলিপি প্রণয়ন করেছিলেন জীবনানন্দভক্ত তরুণ কবি ভূমেন্দ্র গুহ (১৯৩৩-২০১৬) এবং কবিভগ্নি সুচরিতা দাশ (১৯১৫-৮০)। পান্ড‍ুলিপিতে তাঁরা প্রথম থেকে একাদিক্রমে এক থেকে বাষট্টি চিহ্নিত সনেটগুলো নিয়েছিলেন। ‘বাংলার ত্রস্ত নীলিমা’র জন্য ভূমেন্দ্র গুহ ও সুচরিতা দাশ মিলে উৎসর্গপত্রে লিখেছিলেন : ‘আবহমান বাংলা ও বাঙালী’ – জীবনানন্দভক্ত প্রভাকর সেনকে লেখা চিঠি থেকে বাক্যাংশ নিয়ে। কোনো ভূমিকা লিখলেন না তাঁরা; পরিবর্তে পান্ড‍ুলিপিতে প্রথমেই স্থাপন করেছিলেন প্রভাকর সেনকে লেখা ওই চিঠিটি একটি ভূমিকাবাক্যের অভিভাবকত্বে যথা : ‘এই বই-এর 888sport app download apkবলী সম্বন্ধে জীবনানন্দ যা চিঠির আকারে লিখেছিলেন নিরুদ্দিষ্ট কোনও পাঠককে।’ – প্রাপককে ‘নিরুদ্দিষ্ট’ অভিহিত করা হয়েছিল কারণ সে-সময় জানা ছিল না যে, জীবনানন্দ দাশের এ-চিঠিটির প্রাপক ছিলেন প্রভাকর সেন।

জীবনানন্দ দাশের পরিবারকে অনবহিত রেখেই সিগনেট প্রেস কর্তৃপক্ষ ‘বাংলার ত্রস্ত নীলিমা’-নামাঙ্কিত পান্ড‍ুলিপিটি পরিমার্জনার বা সম্পাদনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মূল 888sport app download apkর খাতাটিও তারা অশোকানন্দের কাছ থেকে কর্জ্জ গ্রহণ করেন। সম্পাদকের
পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়ে বাদ পড়ে পাঁচটি সনেট; যথা : ১. সমুদ্রের জলে আমি দেহ ধুয়ে চেয়ে থাকি নক্ষত্রের আকাশের পানে; ২. তোমরা স্বপ্নের হাতে ধরা দাও – আকাশের রৌদ্র ধূলো ধোঁয়া থেকে স’রে; ৩. গুবড়ে ফড়িং শুধু উড়ে যায় আজ এই সন্ধ্যার বাতাসে; ৪. অনন্ত জীবন যদি পাই আমি – তাহ’লে অনন্তকাল একা; এবং ৫. ঘরের ভিতর দীপ জ্বলে ওঠে – ধীরে ধীরে বৃষ্টি ক্ষান্ত হয় সন্ধ্যায়।

কবির ইচ্ছার কথা মনে রেখে ভূমেন্দ্র গুহ ও সুচরিতা দাশ অশোকানন্দের সঙ্গে পরামর্শ করে এ-কাব্যের প্রচ্ছদনাম রেখেছিলেন ‘বাংলার ত্রস্ত নীলিমা’। সিগনেট প্রেস তার বদলে তুলনামূলকভাবে হালকা একটি নাম স্থির করার অভিপ্রায়ে রূপসী বাংলা নির্বাচন করেছিল; হতে পারে উনিশসংখ্যক 888sport app download apkর (প্রথম চরণ : ‘তোমার বুকের থেকে এক দিন চ’লে যাবে তোমার সমত্মান’) ত্রয়োদশ পঙ্ক্তির ‘রূপসী বাংলা’ শব্দটি তাদের মনে ধরেছিল। পান্ড‍ুলিপির ৬৩ থেকে ৭৩-সংখ্যক 888sport app download apkগুলো চতুর্দশপদী নয়। এ-888sport app download apkগুলোর প্রথম পঙ্ক্তি নিম্নরূপ :

১. কত দিন ঘাসে আর মাঠে

২. আকাশে চাঁদের আলো – উঠানে চাঁদের আলো – নীলাভ চাঁদের আলো

৩. কেমন বৃষ্টি ঝরে – মধুর বৃষ্টি ঝরে – ঘাসে যে বৃষ্টি ঝরে

৪. সন্ধ্যা হয়ে আসে – সন্ধ্যা হয়ে আসে

৫. সন্ধ্যা হয় – চারি দিকে মৃদু নীরবতা

৬. চারি দিকে শান্ত বাতি – ভিজে গন্ধ – মৃদু কলরব

৭. গল্পে আমি পড়িয়াছি কাঞ্চী কাশী বিদিশার কথা

৮. চিরদিন শহরেই থাকি

৯. ঘাটশীলা – ঘাটশীলা –

১০. একদিন কুয়াশার এই মাঠে আমারে পাবে না কেউ খুঁজে

আর, জানি

১১. সেই দিন এই মাঠ স্তব্ধ হবে না ক’ জানি – এই নদী                                                                                                                                নক্ষত্রের তলে

সিগনেট প্রেসের সম্পাদক মহাশয় এ-888sport app download apkগুলো উপেক্ষা করেননি। শেষোক্ত ২০ পঙ্ক্তির 888sport app download apk যেটির প্রথম পঙ্ক্তি ‘একদিন কুয়াশার এই মাঠে আমারে পাবে না কেউ খুঁজে আর’ গ্রহণ করা হয়; সাজানো হয় দুটি পৃথক পাতায় যেন দুটি পৃথক 888sport app download apk। আর জীবনানন্দের লিখিত ইঙ্গিত অনুসরণ করে দ্বিতীয় স্তবকের ভিত্তিতে চরণ পুনর্বিন্যাস করে তৈরি করা হয় দ্বাদশ স্তবকটি। এভাবে 888sport app download apkটি ২৪ পঙ্ক্তির অবয়ব লাভ করে।

আর দুটি 888sport app download apk যথা : অর্থাৎ ৭২ ও ৬৮-সংখ্যক 888sport app download apk মিলিয়ে তৈরি করা হয় একটি 888sport app download apk, যার প্রথম পঙ্ক্তি ‘সেই দিন এই মাঠ স্তব্ধ হবে না ক’ জানি – এই নদী নক্ষত্রের তলে’ এবং শেষ চার পঙ্ক্তির প্রথমটি ‘চারি দিকে শান্ত বাতি – ভিজে গন্ধ – মৃদু কলরব’ 888sport app download apkটি। এটি সংস্থাপন করা হয় সর্বাগ্রে, ভূমিকা-888sport app download apk হিসেবে। তবে উলেস্নখ করা আবশ্যক যে, ৭২-সংখ্যক চার পঙ্ক্তির 888sport app download apkটিকে নয় পঙ্ক্তিতে পুনর্বিন্যাস করা হয়।

সিগনেট-প্রকাশিত রূপসী বাংলার ভূমিকা লিখেছিলেন কবিভ্রাতা অশোকানন্দ দাশ। ভূমিকাটি নিম্নরূপ :

 

এই কাব্যগ্রন্থে যে-888sport app download apkগুলি সংকলিত হলো, তার সবগুলিই কবির জীবিতকালে অপ্রকাশিত ছিল; তাঁর মৃত্যুর পরে কোনো-কোনো 888sport app download apk বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

888sport app download apkগুলি প্রথমবারে যেমন লেখা হয়েছিল, ঠিক তেমনি পান্ড‍ুলিপিবদ্ধ অবস্থায় রক্ষিত ছিল; সম্পূর্ণ অপরিমার্জিত। পঁচিশ বছর আগে খুব পাশাপাশি সময়ের মধ্যে একটি বিশেষ ভাবাবেগে আক্রান্ত হয়ে 888sport app download apkগুলি রচিত হয়েছিল। এসব 888sport app download apk ‘ধূসর পান্ড‍ুলিপি’-পর্যায়ের শেষের দিকের ফসল।

কবির কাছে ‘এরা প্রত্যেকে আলাদা-আলাদা স্বতন্ত্র সত্তার মতো নয় কেউ, অপরপক্ষে সার্বিক বোধে একশরীরী; গ্রামবাংলার আলুলায়িত প্রতিবেশ-প্রসৃতির মতো ব্যষ্টিগত হয়েও পরিপূরকের মতো পরস্পরনির্ভর।…

স্পষ্ট যে, প্রভাকর সেনকে লেখা জীবনানন্দের চিঠিটির ভিত্তিতেই এ-কথাগুলো লিখেছিলেন অশোকানন্দ দাশ – তখনো হারিয়ে যায়নি চিঠিটি। এখানে 888sport app download for android করা যেতে পারে যে, প্রভাকর সেনকে জীবনানন্দ-লিখিত চারটি চিঠি পাওয়া গিয়েছিল। সিগনেট প্রেস ধার নেওয়া চিঠিটি হারিয়ে ফেলে। আর গ্রন্থের পেছনের মলাটে বিজ্ঞাপনস্বরূপ যা লেখা হয়েছিল তাও 888sport app download for androidীয় এবং উদ্ধারণযোগ্য :

বাংলার রূপ তার প্রকৃতিতে, কাব্যকাহিনী এবং ইতিহাসের ঘটনায় বিধৃত হয়ে আছে। এর মধ্যে বিশেষত প্রকৃতির অংশ নিয়ে আপাততুচ্ছকে ঘিরে যে মহিমাম-ল জীবনানন্দ দাশ তাঁর 888sport app download apkয় সৃষ্টি করেছেন তার তুলনা যে-কোনও দেশের 888sport live footballেই বিরল। ‘রূপসী বাংলা’ তাঁর চিত্ররূপময় কাব্যরীতির মধ্যেও স্বল্পপরিজ্ঞাত একটি নতুন অধ্যায়, কেননা এর প্রতিটি 888sport app download apk এক-একটি সনেট। নিভৃতে নিজের মনে, চতুর্দশপদে গ্রথিত এই 888sport app download apkবলীতে, মৃত্যুর-ছায়া-পড়া সকরুণ গভীর একটি ভালবাসার কাহিনী তিনি রচনা করে গেছেন। দেশপ্রেম নিয়েও এরা যে উৎকৃষ্ট কাব্য হয়ে উঠেছে সেই কারণেও এই গ্রন্থ কাব্যের ইতিহাসে 888sport app download for androidীয় হয়ে থাকবে।

 

তিন

উপর্যুক্ত ৬-সংখ্যক 888sport app download apkর খাতা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জীবনানন্দ দাশ লেখার সয়ম 888sport app download apkর শিরোনাম দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি, ১ থেকে ৭৩ পর্যন্ত 888sport free bet ব্যবহার করেছেন। ব্যতিক্রম চারটি 888sport app download apk, যেগুলোর পাতায় শিরোনাম লিখেছিলেন জীবনানন্দ। যে-চারটি 888sport app download apkর শুরুতে জীবনানন্দের হাতে লেখা শিরোনাম রয়েছে সেগুলো হলো : ক. ‘এই জল ভালো লাগে; – বৃষ্টির রূপালি জল কত দিন এসে’ যেটির কবি-নির্ধারিত শিরোনাম ‘বৃষ্টির জল’; খ. ‘অশ্বত্থ বটের পথে অনেক হয়েছি আমি তোমাদের সাথী’, যেটির কবি-নির্ধারিত শিরোনাম ‘১৩২৬-এর কতকগুলো দিনের 888sport app download for androidে’; গ. ‘খুঁজে তারে মর মিছে – পাড়াগাঁর পথে তারে পাবে না ক’ আর’, যেটির কবি-নির্ধারিত শিরোনাম ‘দাঁড়কাক’ এবং ঘ. ‘অশ্বত্থে সন্ধ্যার হাওয়া যখন লেগেছে নীল বাংলার বনে’, যেটির কবি-নির্ধারিত শিরোনাম ‘দেশবন্ধু : ১৩২৬-১৩৩২-এর 888sport app download for android’। এ-প্রসঙ্গে 888sport app download for androidযোগ্য যে, ১১-সংখ্যক 888sport app download apkর পাদদেশে, এক কোণে, ‘শ্মশান’ শব্দটি লিখিত রয়েছে যা 888sport app download apkটির অন্তর্নিহিত চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। 888sport app download apkটি পাঠে এমত প্রতীতি হয়, জীবনানন্দ এ-888sport app download apkটির শিরোনাম হিসেবেই ‘শ্মশান’ কথাটি লিখেছিলেন। সিগনেট প্রেস জীবনানন্দ দাশ কর্তৃক স্থিরীকৃত এ-শিরোনামগুলো ব্যবহার করেনি; পান্ড‍ুলিপিতে জীবনানন্দ দাশের দেওয়া ১, ২, ৩ ইত্যাদি 888sport free betও ব্যবহার করেনি।

 

চার

সিগনেট প্রেস কর্তৃক নিযুক্ত সম্পাদক মহাশয় তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রমাণস্বরূপ ভূমেন্দ্র গুহ এবং সুচরিতা দাশ-প্রণীত পান্ড‍ুলিপিতে যেসব পরিবর্তন এনেছিলেন সেগুলো চিহ্নিত করা হলো : সিগনেট সংস্করণের অষ্টম 888sport app download apkর প্রথম চরণ ‘হায় পাখী এক দিন কালীদহে ছিলে না কি’। এ 888sport app download apkর ১২-সংখ্যক পঙ্ক্তিতে জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন, ‘এ নদী মা কালীদহ নয়?’। সিগনেট সংস্করণে ‘মা’র পরিবর্তে ‘কি’ ব্যবহার করা হয়েছে; ছাপা হয়েছে : ‘এ নদী কি কালীদহ নয়?’। উলেস্নখযোগ্য যে, এই সনেটের ষষ্টকে চরণ888sport free bet ৫। ষষ্টকের দ্বিতীয় চরণ ‘ফণীমনসার বনে মনসা রয়েছে না কি? – আছে; মনে হয়’-এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভুলক্রমে ষষ্টকের চতুর্থ পঙ্ক্তিটি রচনা করা হয়নি।

সিগনেট সংস্করণের দ্বাদশ 888sport app download apkর প্রথম চরণ ‘ঘুমায়ে পড়িব আমি এক দিন তোমাদের নক্ষত্রের রাতে’। এর দ্বিতীয় চরণের শুরুতে রয়েছে ‘আকাশে বৈশাখ মেঘ’। পান্ড‍ুলিপিতে জীবনানন্দ দাশ ‘আকাশে’ শব্দটি নিম্নরেখ করে ওপরে ‘মাথায়’ লিখে রেখেছেন। জীবনানন্দ দাশের পান্ড‍ুলিপি সংশোধনের রীতি সম্পর্কে অবহিত হয়ে পুস্তক সংস্করণে ‘আকাশে’র পরিবর্তে ‘মাথায়’ ব্যবহার করাই ন্যায্য। ভূমেন্দ্র গুহ তা-ই করেছেন। সিগনেট সংস্করণের সম্পাদক ‘আকাশে’ এবং ‘মাথায়’ দুটিই বর্জন করে স্বীয় পছন্দমাফিক অভিধান থেকে বেছে নিয়ে ‘শিয়রে’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। জীবনানন্দের শব্দ প্রতিস্থাপনের এবম্বিধ অধিকার তিনি কীভাবে অর্জন করেছিলেন তা প্রশ্নযোগ্য রয়ে গেছে। জীবনানন্দ দাশের শব্দচয়ন-প্রথা সম্পর্কে যাঁরা অবহিত, তাঁরা জানেন জীবনানন্দ দাশ ‘মাথার’ পরিবর্তে ‘শিয়রে’ শব্দটি ব্যবহার করতেন না। সিগনেট সংস্করণের ১৩-সংখ্যক 888sport app download apkর ত্রয়োদশ পঙ্ক্তিতে জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন, ‘শালিখ খঞ্জনা আজ কতদূর ওঠে’। সিগনেট প্রেস ‘ওঠে’ বদল করে ‘ওড়ে’ ব্যবহার করেছে। সিগনেট সংস্করণের ২০-সংখ্যক 888sport app download apkর প্রথম পঙ্ক্তি হলো ‘তোমার বুকের থেকে এক দিন চ’লে যাবে তোমার সমত্মান’। এ-888sport app download apkর সপ্তম পঙ্ক্তির শেষের শব্দ ‘পরে’-কে বদলে সিগনেট সংস্করণে ‘উপরে’ ব্যবহার করা হয়েছে। ২২-সংখ্যক 888sport app download apkর প্রথম চরণ ‘অশ্বত্থে সন্ধ্যার হাওয়া যখন লেগেছে নীল বাংলার বনে’। এ-888sport app download apkর তৃতীয় পঙ্ক্তিতে জীবনানন্দ-লিখিত ‘শত শত’র পরিবর্তে সিগনেট সংস্করণে ‘কত শত’ ব্যবহার করা হয়েছে। সিগনেট সংস্করণে ২৪-সংখ্যক 888sport app download apkর প্রথম চরণ ‘খুঁজে তারে মর মিছে – পাড়াগাঁর পথে তারে পাবে না ক’ আর’। এ-888sport app download apkর ১২-সংখ্যক পঙ্ক্তির শেষে ‘ধোঁয়াভরা ভাতে’র পরিবর্তে ‘ধোঁয়া-ওঠা ভাত’ ব্যবহার করা হয়েছে। সিগনেট সংস্করণের ২৬-সংখ্যক 888sport app download apkর প্রথম চরণ ‘কখন সোনার রোদ নিভে গেছে – অবিরল শুপুরীর সারি’। এ-888sport app download apkর নবম পঙ্ক্তির শুরুতে ‘ঘাসে’র পরিবর্তে ‘এই মাঠে’ ব্যবহার করা হয়েছে। একই 888sport app download apkর একাদশ পঙ্ক্তিতে জীবনানন্দ লিখিত ‘সর্ষে ক্ষেতের’ পরিবর্তে ‘সর্ষের ক্ষেতের’ ব্যবহার করা হয়েছে। সিগনেট সংস্করণের ২৮-সংখ্যক 888sport app download apkর প্রথম চরণ ‘কত ভোরে – দু’পহরে – সন্ধ্যায় দেখি নীল শুপুরীর বন’। এ-888sport app download apkর পঞ্চম পঙ্ক্তিতে ‘নাহিক মরণ’ বদলে ‘নাইকো মরণ’ করা হয়েছে। একই 888sport app download apkর ত্রয়োদশ পঙ্ক্তিতে ‘ক্লান্ত’ শব্দটি অতিরিক্ত সংযোজন করা হয়েছে। ফলে ‘করুণ কাকের ডাক’ হয়ে গেছে ‘করুণ কাকের ক্লান্ত ডাক’। সিগনেট সংস্করণের ৩০-সংখ্যক 888sport app download apk শুরু হয়েছে ‘এখানে আকাশ নীল – নীলাভ আকাশ জুড়ে সজিনার ফুল’ দিয়ে। এ-888sport app download apkর চতুর্থ পঙ্ক্তির শেষে ‘চিকণ সোনালি চুল’কে বদলে ‘সুচিক্কণ চুল’ করা হয়েছে। এ-888sport app download apkরই দশম পঙ্ক্তির শেষে ‘অন্নদামঙ্গল’কে পরিবর্তন করে ‘চ–কামঙ্গল’ ব্যবহার করা হয়েছে।

সিগনেট সংস্করণের ৩১-সংখ্যক 888sport app download apkর প্রথম চরণ শুরু হয়েছে ‘কোথাও মঠের কাছে’ দিয়ে। 888sport app download apkটির তৃতীয় পঙ্ক্তিতে জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন : ‘পাশে দীঘি মজে আছে – রূপালি মাছের কণ্ঠে স্বর’। সিগনেট সংস্করণে করা হয়েছে : ‘পাশে দীঘি মজে আছে – রূপালি মাছের কণ্ঠে কামনার স্বর’। পান্ড‍ুলিপিতে একই 888sport app download apkর ষষ্ঠ পঙ্ক্তি ছিল ‘সে কত শতাব্দী আগে মাছরাঙা-ঝিল্মিল্; – এঁকেছে কড়ির ঘর’। সিগনেট সংস্করণে শেষাংশ পরিবর্তন করে লেখা হয়েছে – ‘সে কত শতাব্দী আগে মাছরাঙা-ঝিল্মিল্; – কড়ি খেলাঘর’। সিগনেট সংস্করণের ৩২-সংখ্যক 888sport app download apkর প্রথম চরণ ‘চ’লে যাব শুক্নো পাতা ছাওয়া ঘাসে – জামরুল হিজলের বনে’। এ-888sport app download apkর চতুর্থ পঙ্ক্তিতে ‘মায়া ছাওয়া’ সম্পূর্ণ বদলে ‘পাতা মাখা’ করা হয়েছে। সিগনেট সংস্করণের ৩৩-সংখ্যক 888sport app download apkর প্রথম চরণ ‘এখানে ঘুঘুর ডাকে অপরাহ্নে শান্তি আসে মানুষের মনে’। এ-888sport app download apkর অষ্টকের শেষে অর্থাৎ 888sport app download apkর অষ্টম পঙ্ক্তির শুরুতে ‘র’ব আমি’র পর জীবনানন্দ দাশ-লিখিত ‘এইখানে’ শব্দটি বর্জন করা হয়েছে। সিগনেট সংস্করণের ৩৫-সংখ্যক 888sport app download apkর প্রথম চরণ ‘তবু তাহা ভুল জানি … রাজবলস্নভের কীর্ত্তি ভাঙে কীর্ত্তিনাশা’। এ-888sport app download apkর ষষ্ঠ পঙ্ক্তির শেষে ‘বাসিতে গো পার’ বদলে ‘বাসিতে যেখানে পায়’ ব্যবহার করেছে সিগনেট প্রেস। একই 888sport app download apkর দ্বাদশ পঙ্ক্তিতে ‘সুধালাম’কে ‘শুধালাম’ করা হয়েছে। একইভাবে 888sport app download apkটির সর্বশেষ পঙ্ক্তিতে ‘তোমারে সুধাই কবি’কে ‘তোমারে শুধাই কবি’ করা হয়েছে।

সিগনেট সংস্করণের ৩৬-সংখ্যক 888sport app download apkর প্রথম চরণ ‘সোনার খাঁচার বুকে রহিব না আমি আর শুকের মতন’। জীবনানন্দের পান্ড‍ুলিপিতে এ-888sport app download apkর শেষ পঙ্ক্তিটি ছিল ‘হাড়পাহাড়ের দিকে চেয়ে চেয়ে হিম হয়ে গেল না কি স্তন’। এ পঙ্ক্তিটি সিগনেট সংস্করণে হয়ে গেছে ‘হাড়পাহাড়ের দিকে চেয়ে চেয়ে হিম হয়ে গেছে তার স্তন’। সিগনেট সংস্করণের ৩৯-সংখ্যক 888sport app download apkর প্রথম পঙ্ক্তিটি হলো – ‘কত দিন তুমি আর আমি এসে এইখানে বসিয়াছি ঘরের ভিতর’। 888sport app download apkটির অষ্টম পঙ্ক্তির শেষে ‘ক্ষীণ’ শব্দটি সিগনেট প্রেস কর্তৃক অতিরিক্ত সংযোজন করা হয়েছে। সিগনেট সংস্করণের ৪০-সংখ্যক 888sport app download apkর দ্বাদশ পঙ্ক্তিতে ‘আজ রাত্রে; যেমন ঘুমায় মৃত যারা; যেমন হতেছে ক্ষয়’ অযাচিতভাবে বদলে ‘আজ রাত্রে; মৃত যারা; যেমন হয়েছে ঘুমে ক্ষয়’ ব্যবহার করা হয়েছে। সিগনেট সংস্করণের ৪১-সংখ্যক 888sport app download apkর ত্রয়োদশ পঙ্ক্তিতে পড়তে হবে ‘সে হার ফিরায়ে দিয়ে দিতে’। ‘ফিরায়ে’ এবং ‘দিতে’ শব্দদুটির মধ্যে অতিরিক্ত ‘দিয়ে’ শব্দটি সংযোজন করেছেন সিগনেট প্রেসের সম্পাদক মহাশয়। একই 888sport app download apkর প্রথম চরণে মূল বাক্যাংশটি ছিল ‘করাচীর সমুদ্রের জলে’। জীবনানন্দ দাশ ‘করাচী’র পরিবর্তে দুটি বিকল্প শব্দ লিখে রেখেছিলেন, যথা : ‘মান্দ্রাজের/ বিদেশের’। সিগনেট সংস্করণে ‘করাচীর সমুদ্রের জলে’র পরিবর্তে ‘মান্দ্রাজের সমুদ্রের জলে’ ব্যবহার করা হয়েছে। সিগনেট সংস্করণের ৪২-সংখ্যক 888sport app download apkর ষষ্ঠ পঙ্ক্তিতে ‘ননীর’ শব্দটি পরিবর্তন করা হয়নি। উলেস্নখ্য যে, পান্ড‍ুলিপিতে জীবনানন্দ দাশ ‘ননীর’ বিকল্প শব্দ হিসেবে ‘নরম দুধে’ ব্যবহার করবেন বলে স্থির করেছিলেন। একইভাবে সিগনেট সংস্করণের ৪৩-সংখ্যক 888sport app download apkর সপ্তম পঙ্ক্তিতে ‘কল্কাপাড়’ শব্দটি পরিবর্তন করা হয়নি, যদিও জীবনানন্দ দাশ বিকল্প শব্দ ‘জড়িপাড়’ ব্যবহার করবেন বলে লিখে রেখেছিলেন। অন্যদিকে একই 888sport app download apkর অষ্টম পঙ্ক্তিতে ‘ভিজে’র পরিবর্তে ‘নম্র’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন সিগনেট প্রেস-নিযুক্ত সম্পাদক মহাশয়। এ-পরিবর্তনের কারণ স্বতঃস্পষ্ট নয়। সিগনেট সংস্করণের ৪৬-সংখ্যক 888sport app download apkর পঞ্চম পঙ্ক্তিতে জীবনানন্দ প্রথমে ‘গন্ধ পাই’ লিখে তা নিম্নরেখ বিকল্প ‘শব্দ পাই’ ব্যবহার করবেন স্থির করেছিলেন। সিগনেট সংস্করণে ‘শব্দ পাই’ই ব্যবহার করা হয়েছে। এ-888sport app download apkর সপ্তম পঙ্ক্তিতে জীবনানন্দ দাশ ‘ভিজে’ শব্দটির পরিবর্তে দুটি বিকল্প শব্দ ব্যবহার করেছেন। যথা : ‘নগ্ন’ এবং ‘ক্লান্ত’। সিগনেট সংস্করণে ‘নগ্ন’ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু জীবনানন্দ দাশ কোনো বিকল্প ইঙ্গিত না করলেও সিগনেট সংস্করণে একাদশ পঙ্ক্তিতে ‘পড়ি’র পরিবর্তে ‘যাই’ ব্যবহার করা হয়েছে। পঙ্ক্তি হয়েছে : ‘অনেক লোকের ভিড়ে ডুবে যাই’।

সিগনেট সংস্করণের ৪৭-সংখ্যক 888sport app download apk সমস্যাবহুল। এ-888sport app download apkর শুরু ‘পৃথিবীর পথে আমি’ দিয়ে। 888sport app download apkটির প্রধান সমস্যা ষষ্টকের আকার নিয়ে। পান্ড‍ুলিপিতে জীবনানন্দ ষষ্টকে যথারীতি ছটি পঙ্ক্তি লিখেছেন; কিন্তু পরে সপ্তম একটি পঙ্ক্তি লিখে তা বন্ধনীভুক্ত করে রেখেছেন। সম্পাদককে ষষ্টকের আকার অর্থাৎ ছয় পঙ্ক্তি ঠিক রাখার প্রয়োজনে ষষ্ঠ অথবা বন্ধনীভুক্ত সপ্তম যে-কোনো একটি পঙ্ক্তি গ্রহণ করতে হবে। সিগনেটের সংস্করণে ষষ্ঠ পঙ্ক্তি ‘‘‘তুমি কেন এইখানে’ ‘তুমি কেন এইখানে’, শরের বনের থেকে দেয় সে উত্তর’’ সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হয়েছে এবং জীবনানন্দ-লিখিত বন্ধনীভুক্ত সপ্তম পঙ্ক্তি গ্রহণ করা হয়েছে কিন্তু সপ্তম পঙ্ক্তির জীবনানন্দ-লিখিত প্রথমাংশ ‘আবার পাখনা নাড়ে’ ছেঁটে ফেলা হয়েছে। উক্ত পঙ্ক্তিতে ‘করুণ’ শব্দটিকে ‘তরুণ’ হিসেবে মুদ্রণ করা হয়েছে। পঞ্চম পঙ্ক্তিতেও সম্পাদক মহাশয় আরো কিছু স্বাধীনতা গ্রহণ করেছেন : ‘নলখাগ্ড়ার বনে ব্যাং ডাকে কেন যেন’ তাঁর কাঁচিতে কাটা পড়ে হয়েছে ‘খাগড়ার বনে ব্যাং ডাকে কেন’। এ-888sport app download apkরই একাদশ পঙ্ক্তিতে ‘একাকী মাঠের ধারে’র পরিবর্তে পাঠককে ‘একাকী মাঠের ঐ ধারে’ পড়তে হবে। জীবনানন্দের পান্ড‍ুলিপিতে রয়েছে ‘একাকী মাঠের ধারে’। অতিরিক্ত ‘ঐ’ শব্দটি সম্পাদক মহাশয়ের ঔদার্যের অবদান।

সিগনেট সংস্করণের ৫২-সংখ্যক (পান্ড‍ুলিপিরও ৫২) 888sport app download apkর শুরু ‘বাতাসে ধানের শব্দ শুনিয়াছি’ এভাবে। পান্ড‍ুলিপিতে এ-888sport app download apkর তৃতীয় পঙ্ক্তিতে প্রবিষ্ট ‘গূঢ়’ শব্দটি জীবনানন্দ দাশের নিজের হাতের বলে মনে হয় না। অবস্থানও যথাস্থানে নয়। ‘মস্নান রূপ’ শব্দটি রেখেই পঙ্ক্তিটি ব্যবহার করা শ্রেয় ছিল।

শব্দ পরিবর্তনের আরো একটি উদাহরণ রয়েছে সিগনেট সংস্করণের ৫৩-সংখ্যক 888sport app download apkয়, যার শুরু ‘একদিন এই দেহ ঘাস থেকে’। এ-888sport app download apkর অষ্টম পঙ্ক্তিতে ‘চালের’ পরিবর্তে ‘ভাত’ ব্যবহার করা হয়েছে সিগনেট সংস্করণে। সম্পাদকের এহেন সিদ্ধান্ত প্রশ্নযোগ্য বটে।

সিগনেট সংস্করণের ৫৫-সংখ্যক 888sport app download apkর তৃতীয় পঙ্ক্তিতে ‘রূপশালি ধান তাহা… রূপ, প্রেম… এই ভাবি…’ অংশের পর জীবনানন্দ-লিখিত ‘তারপর’ শব্দটি বর্জন করা হয়েছে। এছাড়া অষ্টম পঙ্ক্তিতে ‘অস্বীকারের মত’ শব্দদুটি পরিবর্তন করে ‘ব্যাকুল রাত্রি’ এবং দশম পঙ্ক্তিতে ‘অন্ধকারের মত’ শব্দদুটির পরিবর্তে ‘আঁধার রাত্রি’ ব্যবহার করা হয়েছে।

সিগনেট সংস্করণের ৫৬-সংখ্যক 888sport app download apkর সপ্তম পঙ্ক্তিতে রয়েছে ‘যখন মেঘের রঙে পথহারা দাঁড়কাক পেয়ে গেছে ঘরের সন্ধান’। এখানে জীবনানন্দ-লিখিত ‘পেয়েছে গো’ পরিবর্তন করে ‘পেয়ে গেছে’ ব্যবহার করা হয়েছে।

অনুরূপভাবে সিগনেট সংস্করণের ৫৭-সংখ্যক 888sport app download apkতেও পরিবর্তন এনেছেন সিগনেট প্রেসের সম্পাদক। দ্বাদশ পঙ্ক্তিটি পান্ড‍ুলিপিতে জীবনানন্দ দাশ কর্তৃক লিখিত হয়েছে ‘এখুনি আসিবে সন্ধ্যা, – পৃথিবীতে গোধূলি নামিলে’ এভাবে। সিগনেট সংস্করণে পাঠক পড়বেন : ‘এখুনি আসিবে সন্ধ্যা, – পৃথিবীতে ম্রিয়মাণ গোধূলি নামিলে’। ‘পৃথিবীতে’ শব্দের পর ‘ম্রিয়মাণ’ শব্দটি অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে সিগনেট সংস্করণে।

সিগনেট সংস্করণের ৫৮-সংখ্যক 888sport app download apkর চতুর্থ পঙ্ক্তিটি ‘পৃথিবীর সব চেয়ে ক্ষমাহীন এবং গাঢ় এক রূপসীর মুখ ভালোবেসে’। জীবনানন্দ লিখেছিলেন : ‘পৃথিবীর সব চেয়ে গাঢ় এক রূপসীর মুখ ভালোবেসে’। পান্ড‍ুলিপিতে ‘গাঢ়’ শব্দটির ওপর বন্ধনীভুক্ত অবস্থায় লেখা আছে ‘ক্ষমাহীন’। তাতে মনে হতে পারে ‘গাঢ়’র পরিবর্তে ‘ক্ষমাহীন’ ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন কবি। কিন্তু লক্ষণীয় যে, ‘গাঢ়’ শব্দটি নিম্নরেখ নয়। তাতে প্রতীয়মান হয় ‘গাঢ়’ শব্দটি ক্ষমাহীন দিয়ে প্রতিস্থাপন করা জীবনানন্দের উদ্দেশ্য ছিল না। এখানে সিগনেটের সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত সঠিক।

পান্ড‍ুলিপি পাঠে প্রতীয়মান হয়, এ-888sport app download apkর সপ্তম পঙ্ক্তিতে জীবনানন্দ দাশ ‘নরম জামের মত চুল তার – ঘুঘুর বুকের মতো নরম আঙুল’ লিখে ‘নরম’-এর পরিবর্তে ‘করুণ’ শব্দটি ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। সিগনেটের পাঠ দাঁড়িয়েছে : ‘নরম জামের মত চুল তার – ঘুঘুর বুকের মত অস্ফুট আঙুল’। সিগনেটের সম্পাদক মহাশয় ‘করুণ’-এর পরিবর্তে ‘অস্ফুট’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন স্বীয় বিবেচনায় ও সিদ্ধান্তে। ১০-সংখ্যক পঙ্ক্তিতে জীবনানন্দ দাশ লিখেছিলেন : ‘তবুও সে মস্নান জানালার পাশে উড়ে আসে নীরব পাখায়’। এটি ষষ্টকের তৃতীয় পঙ্ক্তি। এর সঙ্গে সনেটের জন্য প্রয়োজনীয় চরণান্তিক মিল রেখে ষষ্টকের চতুর্থ পঙ্ক্তিটি রচনা করেছিলেন জীবনানন্দ :

তবুও সে মস্নান জানালার পাশে উড়ে আসে নীরব পাখায়

মলিন পাখ্না তার খড়ের চালের হিম শিশিরে মাখায়

সিগনেটের রূপসী বাংলায় তৃতীয় চরণের শেষে ‘সোহাগে’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে। পান্ড‍ুলিপির পাতায় আলোচ্য পঙ্ক্তির শেষে কেউ ‘সোহাগে’ শব্দটি লিখেছেন – এটি জীবনানন্দের হাতের লেখা নয় আদৌ। একইভাবে ষষ্টকের পঞ্চম পঙ্ক্তিতে ‘পৃথিবীও নাই আর – দাঁড়কাক শুধু একা একা রাত্রি জাঁকায়’-এর পরিবর্তে ‘পৃথিবীও নাই আর – দাঁড়কাক একা একা সারা রাত জাগে’ মুদ্রণ করা সমীচীন হয়েছে কি না তা প্রশ্নযোগ্য। পান্ড‍ুলিপিতে একটি অতিরিক্ত পঙ্ক্তি রয়েছে : ‘নিমপেচা তবু হাঁকে : ‘পাবে না ক’ কোনো দিন – পাবে নাক কোনো দিন – পাবে নাক কোনো দিন আর’। সনেটের চৌদ্দ পঙ্ক্তির বাঁধন ঠিক রাখতে মুদ্রণকালে এ-পঙ্ক্তিটি  বর্জন করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এ-বিষয়ে একটি সম্পাদকীয় ব্যাখ্যা পাঠকের পাওনা থেকে যায়। আলোচ্য সনেটটি সমস্যাক্রান্ত; আরো গবেষণা ও বিচার-বিশেস্নষণের পর এর কাঠামো চূড়ান্ত করার প্রয়োজন ও অবকাশ রয়েছে।

 

পাঁচ

উপর্যুক্ত ব্যত্যয়গুলো ছাড়াও আরো কিছু ব্যত্যয় থাকতে পারে, যা হয়তো বর্তমান আলোচকের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। সিগনেট
প্রেস-নিযুক্ত সম্পাদক অনেকখানি স্বাধীনতা নিয়েছিলেন – সন্দেহ নেই। কোনো সচেতন পাঠক এহেন ব্যত্যয় অনুমোদন করবেন না। অনেক পরিবর্তন অযৌক্তিক, অনেক পরিবর্তন জীবনানন্দ-ঈপ্সিত অর্থ কিংবা ব্যঞ্জনা বা উভয়কেই আহত করেছে। এ-ধরনের সম্পাদকীয় হস্তক্ষেপের বিষয়ে জীবনানন্দ আদৌ সহনশীল ছিলেন না।

চঞ্চল চট্টোপাধ্যায় (১৯১৫-২০০৪) সম্পাদিত 888sport live footballপত্র পত্রিকার শ্রাবণ ১৩৫৫ 888sport free betয় জীবনানন্দ দাশের ‘এই চেতনা’ 888sport app download apkটি (হলুদ কমলা ধূসর, মেঘের ফাঁক দিয়ে/ কিরণের সব বর্শাফলক দীর্ঘ ছন্দে উঠে/ উপরের নীল আকাশের দিকে নির্জনতার মতো/ চলে গেছে…) প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে মুদ্রণের ভুল ছিল বিস্তর। ২২.১০.১৯৪৮ তারিখে চিঠি লিখে তাঁর প্রতিক্রিয়া বিশদ করে ব্যক্ত করেছিলেন, যা এ-প্রসঙ্গে 888sport app download for android করা প্রয়োজন।

চিঠিতে জীবনানন্দ লিখেছিলেন : ‘‘আপনার পত্রে আমার ‘এই চেতনা’ 888sport app download apkটি প’ড়ে দেখলাম। 888sport app download apkটি এম্নিই স্বচ্ছ, সরল ছিল না, কিন্তু কয়েকটি ছাপার ভুলে সবই কেমন বিশৃঙ্খল মনে হচ্ছে। যারা 888sport app download apk পড়েন 888sport live footballপত্রের সে সব পাঠকদের এ রকমভাবে ধোকা দেবার উদ্দেশ্য আমার ছিল না; কেমন একটু অস্বসিত্ম বোধ করছি। 888sport app download apkটির ১০নং লাইনে ‘ঢের দিনকার’ হবে, ‘ঢেরদিনকার’ ছাপা হয়েছে।

জীবনানন্দ লিখেছিলেন, ‘‘আজ পর্য্যন্ত আমি নতুন বাংলা বানান গ্রহণ করি নি, কাজেই ‘সূর্য্য’ লিখি; ১৫নং লাইনে বানান ঠিকই আছে, কিন্তু ১৭নং লাইনে ‘সূর্য হয়েছে; ২০নং লাইনে আবার ‘সূর্য্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পরের লাইনে ‘সূর্যে’ ছিটকে পড়েছে। এ পর্য্যন্ত এ see-saw খেলা খারাপ লাগে নি আমার; এই রকমই যদি চলত ছিল মন্দ না; কিন্তু পরের লাইনেও আবার ‘সূর্য’ হওয়াতে চাল ভুল হয়ে গেল। ২৪নং লাইনে ঊ-কারও বর্জ্জন ক’রে ওপরের ভুলটাকে সুদে আসলে শুধরে নেবার জন্যে সুর্য – এই প্রসিদ্ধি। এ ‘সুর্যে’র দিকে সোজাসুজি তাকানো সম্ভব – তাকিয়ে স্থির হয়ে থাকে চোখ। এ সব ছাপার বানানের দিকে নজর পড়াতে আমি টের পেলাম এ 888sport app download apkয় ‘সূর্য্য’ শব্দটি নিয়ে একটু বাড়াবাড়ি ক’রে ফেলেছি আমি। সেইটে আমাকে বুঝিয়ে দেবার জন্যে কম্পোজিটর হয়তো বানান নিয়ে একটু সরু চাকলি ঝেড়ে খাওয়ালেন; খুব উপভোগ্য হয়েছে, কিন্তু পাঠকেরা হয়তো একটু বিব্রত বোধ করেছেন। ১৭নং লাইনে ‘আমাদের’ জায়গায় ‘প্রাসাদের’ হবে; ‘দিনভোর সব বড় বেবিলন প্রাসাদের সিঁড়ি বেয়ে’ লিখেছিলাম, ‘… বেবিলন আমাদের সিঁড়ি বেয়ে’ ছাপানো হ’ল। ‘বেবিলন আজাদের সিঁড়ি বেয়ে’ ছাপালেও চ’লে যেত। আমার 888sport app download apkর এই লাইনটা – আগাগোড়া 888sport app download apkটাই যে একটু রজনে ঘষা তারে বাঁধা – এমনতর জিনিষ এ রকম ছাপার কারিগরিতেই আমরা হাসতে হাসতে উপলব্ধি করি – সমালোচকদের আলোপাতে ততটা করি কি?’

‘‘888sport app download apkটির শেষ লাইনে ‘অনাদি আনন্দ সূর্য্য’ লিখেছিলাম – ‘অনাদি অনন্ত সূর্য’ ছাপা হয়েছে। ‘অনাদি অনন্ত সূর্য্য’ বা ‘অনাদি অনন্ত বিধাতা’ – এ রকম ভাষা 888sport app download apkয় কোনো দিন ব্যবহার করেছি ব’লে মনে পড়ছে না; ভবিষ্যতে ব্যবহার করলে ছাপাখানার দৌলতখানার কাছে ঋণ স্বীকার করতে হবে, কিংবা যে আবশ্যিকতায় ব্যবহার করা হবে – পদ্যে বা গদ্যে, ‘এই চেতনা’ 888sport app download apkটির পরিপ্রেক্ষিতের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই। ‘অনাদি অনন্তে’র মত ‘রঙ্গীন’ও আসে না আমার কলমে; রঙীন লিখেছিলাম, ‘রঙ্গীন’ ছাপিয়েছেন প্রেস; রঙ্গীন চলে অবিশ্যি; কিন্তু ও দিকে ‘সূর্য’ আর এ দিকে ‘রঙ্গীন’ এতে যে ডবল ডিমের ভালো ওমলেট তৈরি হয় না ‘বেবিলন আমাদের সিঁড়ি’র পরিবেশকের পক্ষে এইটেই খুব সম্ভব প্রথম ভুল; ভেবে দেখতে গেলে বুঝতে পারা যাবে – হয়তো প্রতিফলিত ভুল – খুব সম্ভব ‘বেবিলন প্রাসাদের সিঁড়ির মূল ভ্রমাত্মক ইঙ্গিতের; – আমার চোখ ফিরিয়ে দিয়েছে আমার নিজের 888sport app download apk ও চেতনার দিকে; যা লিখেছি তার ভিতর-গভীরটা যাচাই ক’রে দেখতে হবে।’

অতঃপর জীবনানন্দ যোগ করেছিলেন, ‘… দু’টো ভুল আরো চোখে পড়ল : তৃতীয় লাইনে নির্জনতা’র জায়গায় ‘নির্জ্জনতা’ হবে;
১৯নং লাইনে ‘অ্যাথেন্স্’ ছাপা হয়েছে, ‘এথেন্স্’ হবে। আরো ভুল থাকতে পারে, সম্প্রতি চোখে পড়ছে না।’

তিনি অনুরোধ ব্যক্ত ক’রে লিখেছিলেন, ‘888sport app download apkটি ছাপার ভুলে দাঁড়িয়ে থাকবে এটা ঠিক নয়। 888sport live footballপত্র’র আগামী 888sport free betয় ভুলগুলো শুদ্ধ ক’রে দেখিয়ে দিলে খুশি হব। …আগামী 888sport free betর 888sport live footballপত্রে আমার এই চিঠিটাই ছাপিয়ে দিন’।

বলার অপেক্ষা রাখে না, জীবনানন্দ কেবল ভুল বানানেরই প্রতিবাদ করেননি, তিনি সম্পাদকীয় হস্তক্ষেপেরও অগ্রহণযোগ্যতা জানিয়ে দিয়েছিলেন। ‘অনাদি আনন্দ সূর্য্য’-কে ‘অনাদি অনন্ত সূর্য’ বানানো ছাপাখানার কাজ ছিল প্রতীয়মান হয় না, সম্পাদকের কাছে ‘অনাদি অনন্ত সূর্য’ অধিকতর জুতসই বিবেচিত হয়েছিল মাত্র। উলেস্নখ করা দরকার, 888sport live footballপত্রের সম্পাদক চঞ্চল চট্টোপাধ্যায় জীবনানন্দের অনুরোধ রক্ষা করে পরবর্তী 888sport free betয় 888sport app download apkটি শুদ্ধভাবে ছাপাবার বা ভুলগুলো উলেস্নখ করে সংশোধনী প্রদানের ব্যবস্থা করেননি, বা জীবনানন্দের চিঠিটিও ছেপে দেননি।

চঞ্চল সরকারের তুলনায় সিগনেট প্রেসের সম্পাদক মহোদয়ের সম্পাদকীয় হস্তক্ষেপের পরিমাণ, ধরন ও প্রতিফল অনেক বেশি ব্যাপক ও গভীর। এই হস্তক্ষেপগুলো দূর করে একটি মূলানুগ ‘রূপসী বাংলা’ প্রকাশ করা দরকার। আর সিগনেট প্রেস কর্তৃক নিযুক্ত সম্পাদক মহাশয় কে ছিলেন – ঐতিহাসিক প্রয়োজনে তারও নিশ্চিত হদিস করা দরকার। r