সে লি না হো সে ন
পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই বয়সে পৌঁছেছে নুরিতা।
বয়স বাড়া ওর কাছে মধুময় দিনের মতো সোনালি অনুভব। বয়স বাড়ার ভালোলাগা নিয়ে দিন কাটে ওর। ওর ভাবনা এমন যে, বয়স বাড়লে লেখার জগতের বিস্তার হয়।
নুরিতা কবি। 888sport app download apk লেখার সঙ্গে বয়স বাড়ার সম্পর্ককে ও ক্যানভাসে রাখে। ক্যানভাসের ব্যাকগ্রাউন্ডে জলরঙের আঁকাজোখা নুরিতার চোখের সামনে এক বিশাল ভুবন।
এই বয়সে ওর দশটি 888sport app download apkর বই বেরিয়েছে। ও জানে, পাঠকের মুগ্ধতা আছে ওর 888sport app download apkয়। কোন 888sport app download apkটা কার কখন ভালো লেগেছে সে-কথা অনেকেই বলে। ফেসবুকে বলে। টেক্সট মেসেজ পাঠায়। ফোন করে। একজন কবির এর বেশি আর পাওয়ার কী আছে? নুরিতা সিনহা শব্দ নিমগ্নতায় নিজের দিন ভরিয়ে রাখে। নতুন একটি 888sport app download apkর চিন্তা করলে ওর সামনে ভেসে ওঠে অনন্তকালের মহাবিশ্ব। জীবন ও জগতের অপরূপ বৈচিত্র্য। মণিপুরি জাতিসত্তার সবটুকু। মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগে সভ্যতার ধারাবাহিকতা, নিজ জাতিসত্তা, ঐতিহ্য ও গৌরব। প্রেম –
শব্দটি উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে নিজের ভেতর গুটিয়ে যায় নুরিতা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কবি আদিত্য হান্নান ওর 888sport app download apk ভালো লাগে বলতে বলতে বলেছিল, আমি শুধু 888sport app download apkকে না, কবিকেও ভালোবাসি। নুরিতা চলো আমরা রমনাপার্কে হেঁটে আসি।
এমন আকস্মিক কথায় নুরিতা হকচকিয়ে যায়নি। ও টের পাচ্ছিল আদিত্যের মুগ্ধ দৃষ্টি। ওই দৃষ্টি ছিল কবির জন্য 888sport app download apkর ভাষা। এমন মুগ্ধ দৃষ্টির সামনে যে-কারো পাখা মেলার ইচ্ছা হতে পারে। কিন্তু নুরিতা আবেগের চেয়ে প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিয়েছে বেশি। সেদিন ওকে চুপ থাকতে দেখে আদিত্য মৃদুস্বরে বলেছিল, যাবে না
নুরিতা? আমরা দুজনে মিলে 888sport app download apkর ছন্দে নতুন কিছু আবিষ্কার করব।
নুরিতা মৃদু হেসে বলেছিল, 888sport app download apkর ছন্দ আমার একার। নিজেকে আবিষ্কারের আমার দুটো ক্ষেত্র আছে।
– ওহ্ তাই, ক্ষেত্র দুটো কী?
– একটি বাবা-মাকে আহত না করা। অন্যটি মণিপুরি নৃগোষ্ঠী থেকে নিজেকে আড়াল না করা।
– ওহ্ তাই। আমি দুঃখিত নুরিতা। তোমার নিজেকে আবিষ্কার ঠিক আছে। জীবন তো একবারই যাপিত হবে। ঘাটে ঘাটে জীবনযাপনের রূপ বদলাবে না। মৃত্যুর পরে জীবন নেই।
– হ্যাঁ, তাই তো। বড় দার্শনিক কথা।
হো-হো করে হেসেছিল আদিত্য। হাসির শব্দ চমকিত করেছিল নুরিতাকে। ও সরাসরি আদিত্যের মুগ্ধ দৃষ্টিতে নিজের দৃষ্টি রেখেছিল।
আদিত্য গাঢ় কণ্ঠে বলেছিল, তুমিই আমার প্রথম প্রেম। তুমি আমার 888sport app download for androidে থাকবে। তোমার 888sport sign up bonusর মৃত্যু নেই। 888sport app download apk লেখা ছাড়বে না। তুমি আমার 888sport app download apk নুরিতা। যাই।
এতো অনায়াসে আবেগ ছড়িয়ে আদিত্যের চলে যাওয়া নুরিতাকে প্রবল ভালো লাগায় ভরিয়ে দিয়েছিল। নিজেকে বুঝিয়েছিল, নৃগোষ্ঠীর বাইরে মানুষ তো মানুষই। ও নিজেকেই বলল, তোমার জন্য আমার ভালোবাসা মনে থাকুক। আমিও তোমাকে মনে রাখব আজীবন।
পরবর্তী সময়ে নুরিতা আর বিবাহিত 888sport promo code হয়নি। সেদিনের পর থেকে আদিত্যের সঙ্গে ওর আর কোনোদিন দেখা হয়নি। মাঝে মাঝে ওকে টেক্সট মেসেজে 888sport app download apkর পঙ্ক্তি পাঠাত। অনেক বছর পরে ও পত্রিকায় আদিত্যের ছবি দেখেছিল। 888sport appsের কবি আদিত্য হান্নান সিডনিতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। মৃত্যুর তারিখটি মনে রেখেছে নুরিতা। সেদিন ও নিজের 888sport app download apkর বইয়ের মধ্যে একটি ফুল গুঁজে রাখে। দু-ফোঁটা চোখের জল গড়ায়। ভাবে, জীবন এমনই। নিজের জন্য ও একটি 888sport app download apkর লাইনে লিখেছে – ‘দুঃখ আমার সুখের ঘর’।
এ পঙ্ক্তি 888sport app download apkর পুরো আকার পায়নি। ওর ঘরের কাগজপত্রে লিখে রাখে। যত্রতত্র ছাড়িয়ে রাখে। কখনো নিজেই কুটিকুটি করে ছেঁড়ে। স্কুল যাওয়ার পথে কাউকে না দেখিয়ে বাতাসে উড়িয়ে দেয়। কাগজের টুকরো উড়তে উড়তে রাস্তার পাশে ছড়িয়ে পড়ে থাকে। ও নিজেকে বলে, তুমি আছ আমার সঙ্গে। দূরদেশের কোনো পাখি এলে বলব, কাগজের একটি টুকরো নিয়ে যাও তার কাছে, সে আমাকে প্রথম প্রেমের কথা বলেছিল। এভাবে নুরিতার দিন গড়ায়। মাঝে মাঝে কোনো বড় গাছের স্নিগ্ধ ছায়ায় বসে থেকে নিজের বয়সের হিসাব করে। বুঝতে পারে, কবির বয়স শুধু শুধু বাড়ে না। এটা সময়ের ব্যাপার নয় মাত্র। কবির বয়সের সঙ্গে সৃজনের মধুর সম্পর্ক আছে। অন্যদের বয়স বাড়ার সঙ্গে কবির বয়স বাড়ার এটুকুই পার্থক্য।
আজ নুরিতার স্কুল ছুটি। ছুটির দিনগুলোতে বুড়ো বাবা-মাকে দেখাশোনা করতে হয়। মা মাঝে মাঝে ওর হাত ধরে কাছে টেনে বসায়। বলে, মারে তোর জন্য তো আমি মরেও শাস্তি পাব না।
– কেন গো মা? তোমার তিন মেয়ে। দুই মেয়ের তো বিয়ে দিয়েছ। ওরা ভালো আছে। এক মেয়ে তোমার কাছে আছে, তুমি খুশি থাকো মাগো।
মা কথা না বাড়িয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে বলে, আমি আর ভালো থাকতে পারব না।
– বিয়ে করলেই কি মেয়েদের শাস্তি হয় মা? আমি তো বিয়ে না করেই ভালো আছি। মণিপুরির গরিব ছেলেমেয়েদের আমি দেখাশোনা করতে পারি। ওদের পড়ালেখায় সাহায্য করতে পারি।
– থাক, থাক, ওসব কথা আমাকে বলতে হবে না। আমি সব জানি।
নুরিতা দুহাতে মায়ের হাত চেপে ধরে। মা বালিশে মাথা কাত করে চোখ বোজে। নুরিতা বোঝে মা আর কথা বলবে না। ও মায়ের গায়ের ওপর চাদর টেনে দিয়ে বাবার ঘরে আসে।
বাবা চেয়ারে বসে গুনগুনিয়ে গান করছিল, ওকে দেখে দুহাত বাড়িয়ে বলে, আয় মা। তোকে দেখলে আমার শাস্তি।
– তোমার শরীর ভালো আছে তো বাবা? কোমরের ব্যথা –
– কিছু নাই, ব্যথা নাই। আজ তোর স্কুল ছুটি না রে?
– হ্যাঁ বাবা। আজ আমি তোমার জন্য রান্না করব। কী খাবে বলো।
– দুদিন পর তো আমাদের উৎসব – নিঙোল চাকৌবা। সেদিন তো অনেক খাওয়া-দাওয়া হবে। আজকে তোর কষ্ট করতে হবে না।
নিঙোল চাকৌবা! হ্যাঁ, আমাদের উৎসব। জরিতা আর সুরিতা আসবে। ওরা এলে বাড়ি গমগম করবে। দুজনের স্বামী-ছেলেমেয়ে নিয়ে জমজমাট সংসার। আমাদের বাড়িও সরগরম হবে।
– ঠিক বলেছিস মা।
– তোমাকে ডাবের জল দিই বাবা?
– হ্যাঁ, দে মা। দুপুরে খিচুড়ি আর ডিম রান্না করবি।
বাবার ঘাড়ে হাত রেখে রান্নাঘরে ঢোকে নুরিতা। ডাব আর দা নিয়ে উঠোনে আসে। মায়ের জন্যও ডাব কাটবে। নিঙোল চাকৌবা ওদের একটি বড় উৎসব। এই উৎসব ঘনিয়ে এলে ওর মায়ের মন খারাপ হয়। নুরিতা জানে, ওর বিয়ে না করা মাকে খুব কষ্ট দেয়। ও ডাব আর দা নিয়ে এক মুহূর্ত উঠোনের মাঝখানে দাঁড়ায়। সামনের গাছে দুটো বুলবুলি বসে আছে। নুরিতা টের পায়, ওর বুকের ভেতর গুমগুম শব্দ হচ্ছে। ও বিবাহিত 888sport promo code নয়। আর এই উৎসবটি বিবাহিত 888sport promo codeদের জন্য। নিঙোল মানে বিবাহিত মহিলা। আর চাকৌবা মানে ভোজনে আমন্ত্রণ। শুধু পরিবারে নয়, অনেক সময় পরিবারের বাইরেও তারা একত্রে বসে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করে।
নুরিতা উঠোনের কোনায় বসে ডাব কাটে। যত্ন করেই কাটে। বাবার হাতে ডাব তুলে দেবে। মাকে দেবে গ্লাসে। রান্নাঘরে ঢুকে ডাবের পানি গ্লাসে নিতে হবে। হঠাৎ করেই ওর মনে হয় এ-বাড়িতে কোনো ছোট ছেলেমেয়ে নেই। ওরা তিনজনই বয়সী মানুষ। দিনের বেলায় অনেকেই আসে। রাতের বেলা নিরিবিলি হয়ে যায় বাড়ি। ওদের কোনো ভাই নেই। নিঙোল চাকৌবা উৎসবের একটি বড় দিক ভাইদের জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করা। নিঙোল চাকৌবা ভাইবোনের উৎসব। বিবাহিত বোনেরা এই সময় বাবার বাড়িতে আসে। নুরিতা বিড়বিড় করে, ওহ্ উৎসব! ও বিবাহিত নয়, ওর কোনো ভাই নেই। তাহলে কি ওর জন্য এটা উৎসব নয়! হাঃ উৎসব। বাবার জন্য ডাব নিয়ে গেলে বাবা ওকে কাছে বসাবে। তারপর উৎসব কীভাবে শুরু হলো সে-গল্প বলবে।
গল্পটা ওর জানা। মণিপুরিদের প্রথম রাজা নোঙদা লাইরেন পাখংবা। তিনি রাজ্য শাসন করতেন। একদিন রানী লৈস্না তাঁর বড় ভাই পোরৈতানের ফসল তোলার কাজ দেখতে মাঠে যান। অনেকদিন পরে বোনকে দেখে ভাই খুব খুশি হন। ভাই তাকে বিন্নি ধানের সুগন্ধি কালো ও সাদা চাল উপহার দেন। সেইসঙ্গে একছড়া কলা দেন। ভাইয়ের আদর-যত্নে রানী খুব খুশি হন। তিনি তাঁর বাড়িতে ভাইকে খাবারের জন্য নিমন্ত্রণ করেন। এই হলো সূত্রপাত। এরপর থেকে বিবাহিত বোনেরা বছরের একদিন ভাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ভোজনের আয়োজন করে। বহু বছর ধরে এই উৎসব চলে। পরবর্তী সময়ে রাজা চন্দ্রকীর্তি সিংহের আমলে উৎসবের পরিবর্তন হয়। ঠিক হয়, বোন আমন্ত্রণ জানাবে না, ভাই বোনকে আমন্ত্রণ জানাবে। সেই থেকে শুরু। বিবাহিত 888sport promo codeরা এই উৎসবে বাবার বাড়িতে এসে ভাইদের সঙ্গে মহাভোজে এক হয়। মনে করা হয়, এভাবে মেয়েরা নিজেদের শেকড়ে ফিরে আসে। পারিবারিক বন্ধনের আলো জ্বলে। বন্ধন দৃঢ় হয়। ভালোবাসা আকাশছোঁয়া হয়।
নুরিতা মায়ের জন্য ডাবের জল গ্লাসে ঢালে। রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ওর মনে হয় মেয়েদের নিজেদের জন্য ঘর তৈরি করতে হয়। বিয়ে তো বাবা-মায়ের বাড়ি ছাড়ার উৎসব। যেতে হয় অন্য বাড়িতে। সে-বাড়িতে নিজেকে ঘরের চালের খুঁটি বানাতে হয়। একসময় সেই ঘর নিজের ঘর হয়। বিয়ের পরে যে-বাড়ি ছাড়তে হয় সে-বাড়িতে ফিরে আসার উৎসব আছে বিবাহিত মেয়েদের। যে-মেয়ে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করে না, তার জন্য বাবার ঘরের খুঁটিই তো আসল খুঁটি। নুরিতা বিয়ের জন্য ভালোবাসার বন্ধনকে জরুরি মনে করেনি। বাঙালি আদিত্যকে ভালোবেসে নিজের গোত্র ছাড়েনি। ওর কাছে নিজের গোত্রও ভালোবাসার বন্ধনের জায়গা। ব্যক্তিগত ইচ্ছা মানুষকে আর কতদূর নিয়ে যাবে। ওর তো 888sport app download apkর পৃথিবী আছে। এই বিশাল পৃথিবী ওর বেঁচে থাকার স্বপ্ন।
ও দুহাতে ডাব নিয়ে বাবার কাছে আসে।
– কী রে মা?
– তোমার জন্য ডাবের জল।
– দে। তুই আমার মনের কথা বুঝিস মা। আমার মনে হয়েছিল আমার ডাবের জল খেতে ইচ্ছে হয়েছে। মা আমার সব বোঝে। দে-মা-দে –
হাসতে হাসতে দুহাতে ডাবটা নেয় নুরিতার বাবা সোমেন্দু।
– এক চুমুকে খাব নাকি রে?
– না, বাবা, একটু একটু করে খাও।
আদর করে বাবার চুল এলোমেলো করে দেয় নুরিতা। সোমেন্দু ডাবে চুমুক দিয়ে বলে, দুদিন পরে নিঙোল চাকৌবা। তুই আমার ঘর-আলো করা উৎসব মা। তুই যেমন আমার মেয়ে, তেমনি আমার ছেলে। তুই আমার ঘরের আলোজ্বলা খুঁটি।
– তোমার ছেলে না-থাকায় মন-খারাপ নেই বাবা?
– একটুও না। কেন থাকবে?
– উৎসব! উৎসব! আমারও ভাই না-থাকায় মন খারাপ নেই।
নুরিতা উচ্ছ্বসিত হাসিতে ঘর মাতায়। হাসির শব্দ শুনে শোভারানী দরজায় এসে দাঁড়ায়।
– কী হয়েছে তোমাদের?
– মা গো, আমাদের সামনে উৎসব। নিঙোল চাকৌবা।
– তো, এতো হাসাহাসির কী হলো?
সোমেন্দু ডাবে চুমুক দিয়ে বলে, উৎসব তো হাসির হয়। উৎসবে কেউ কাঁদে নাকি?
– কে জানে, তোমাদের কী হয়েছে –
শোভারানী হাত উলটে মাথা ঝাঁকায়। নুরিতা মায়ের হাত ধরে বলে, তুমি এখানে বসো মা। আমি তোমার ডাবের জল নিয়ে আসছি।
– আমি তো ডাবে চুমুক দিয়ে –
– আমি তো জানি মা। আমি তোমার জন্য ডাবের জল গ্লাসে ঢেলেছি। বসো, বাবার কাছে –
নুরিতা মাকে বসিয়ে দেয় বাবার পাশে। বলে, তোমাদেরকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।
বলতে বলতে বেরিয়ে যাবার সময় টের পায়, মায়ের কণ্ঠে কান্নার মৃদু হেঁচকি। ও বুঝতে পারে, মা চোখে আঁচল চাপা দিয়েছে। মায়ের কষ্ট ও বুঝতে পারে। উৎসব তো বিবাহিত মেয়েদের। উৎসবের দিন বাবার বাড়ি এসে শেকড়ের খুঁটি ছোঁবে। ভাইয়ের জন্য প্রার্থনা করবে। ভাইয়ের দীর্ঘজীবন কামনা করবে। তার বাড়িতে এটা হবে না। রান্নাঘর থেকে গ্লাস নিয়ে ফিরে আসে নুরিতা। নিজের হাতে গ্লাস রেখে মাকে বলে, চুমুক দাও।
শোভারানী চুমুক দিয়ে একটানে ডাবের জল শেষ করে। নুরিতা ঘাড় নামিয়ে মায়ের কপালে চুমু দেয়। তারপর বাবার হাত থেকে ডাব নিয়ে বেরিয়ে আসে।
উৎসবের দিন। বাড়ি জমজমাট। আগের দিন দুই বোন জরিতা আর সুরিতা এসেছে পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে। ওদের স্বামীরা নিজেদের বাড়িতে গিয়েছে। বোনেরা আসবে ভাইকে দেখতে। বোনেরা ভাইয়ের মঙ্গল প্রার্থনা করবে। দীর্ঘ জীবন চাইবে ভগবানের কাছে। নানা কিছু রান্না করবে।
সকাল থেকে জরিতা আর সুরিতা রান্নাঘরে ঢুকেছে। বলেছে, দিদি বাবা-মায়ের জন্য রান্না আমরা করব। তোমার ছুটি। যে কদিন আমরা এখানে থাকব সে কদিন বাবা-মা আমাদের। তুমি ভাগ বসাবে না।
– কী বললি? আমার ভাগ আমি ছাড়ব না। সবটুকু তোরা নিবি কেন?
দু-বোন হাসতে হাসতে বলে, এটা আমাদের কথার কথা। তোমার সঙ্গে আদরের ভাগাভাগি দিদি।
জরিতা দুহাত বাড়িয়ে বোনের গলা জড়িয়ে ধরে বলে, তুমি
বাবা-মাকে আমাদের চেয়ে বেশি ভালোবাসো দিদি। বাঙালিকে বিয়ে করে বাড়ি ছেড়ে পালাওনি।
– থাক, এসব কথা বলিস না।
– তুমি আর বিয়েই করলে না। লোকটাকে তুমি অনেক ভালোবাসো, না দিদি?
– আহ্, চুপ কর। একটা কথা কতবার বলতে হবে তোদের।
জরিতা চেঁচিয়ে বলে, হাজার হাজারবার বলতে হবে। তুমি আমাদের উৎসব।
– হ্যাঁ, হ্যাঁ উৎসব। আমাদের ভাই নেই তো কী হয়েছে, তুমি তো আছো।
– তুমি আমাদের বাড়িঘর। তুমি আমাদের শেকড়। তুমি আমাদের মণিপুরির আকাশ।
দু-বোনে সুর করে বলতে থাকে। ছেলেমেয়েরা এসে যোগ দেয় মায়েদের সঙ্গে। দুহাত ওপরে তুলে নাচতে নাচতে বলে, তুমি আমাদের মণিপুরির আকাশ – আকাশ। মাসি আমাদের আকাশ।
ঘর থেকে বেরিয়ে আসে সোমেন্দু আর শোভারানী।
– কী রে, তোদের কী হয়েছে? এতো হাসিখুশি কেন?
জরিতা চেঁচিয়ে বলে, দিদি আমাদের –
দুহাত তুলে ওকে থামায় সোমেন্দু।
– থাক, তোকে আর বলতে হবে না, ও আমাদের 888sport app download apk। আমাদের ভাষা। ও মণিপুরিদের প্রাণ।
– বাবা! বাবা কী বলছ?
সুরিতা অবাক বিস্ময়ে বলে, আমাদের দিদি এতোকিছু? দিদি এতোকিছু?
– হ্যাঁ, এতোকিছুই। আজ তোরা ওর জন্য দীর্ঘজীবন প্রার্থনা করবি। ভগবানের কাছে ওর সুস্থতা চাইবি। ও যেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত 888sport app download apk লিখতে পারে।
– 888sport app download apk!
বিড়বিড় করে দুই বোন।
ছোটরা চেঁচামেচি করে ওঠে।
মাসি আমাদের 888sport app download apk। 888sport app download apk। মাসি আমাদের – আজ আমরা মাসিকে ফুলের মুকুট দেব। চলো চলো, ফুল তুলি – চলো চলো, মুকুট বানাই।
একসময় রাত বাড়ে। উৎসব শেষ হয়।
যে যার ঘরে ফেরে। ঘুমিয়ে পড়ে।
ঘুম আসে না নুরিতার।
নিঃশব্দে দরজা খুলে বাইরে আসে।
আকাশে ঝলমল করছে পূর্ণিমার চাঁদ। সেদিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ও। টের পায় ওর চারদিকে প্রবল শূন্যতার ঘূর্ণি। সেই ঘূর্ণিতে উড়ছে 888sport app download apkর শব্দ, চরণ, আবেগ, আর কি?
নুরিতা জোরে জোরে বলে, 888sport sign up bonus। উড়ছে 888sport sign up bonus – আদিত্যের মুখ। একটি বিকেল। কতগুলো শব্দের ছন্দ।
আদিত্য বলেছিল, তোমাকে নিয়ে আমি পদ্মপুকুরের ধারে যাব। হাজার হাজার ফুল তোমার মাথায় দিয়ে বলব, প্রেমের ঘ্রাণ নাও। দেখো ভালোবাসা কত সুন্দর। কত তার সৌরভ।
উঠোনের সবটুকু জুড়ে অসংখ্য ফুল ছড়িয়ে আছে। ছোটদের সঙ্গে স্কুলের ছেলেমেয়েরা মিলে বাড়িতে ফুল বোঝাই করে ফেলেছে। মৃদু গন্ধ আসছে সেসব ফুল থেকে।
নুরিতা উঠোনের এ-মাথা ও-মাথায় হাঁটে। 888sport app download apkর উচ্চারণের মতো বলতে থাকে, দুঃখই আমার সুখের ঘর।
ভোঁ-ভোঁ উচ্চারণ ছুটে যায় বাতাসে। নুরিতা প্রবল বাতাসের মাঝে দাঁড়িয়ে বুকভরে শ্বাস টানে। অনুভব করে বুকের ভেতরে দুঃখই আমার সুখের ঘর নিবিড় প্রশাস্তিতে নিমগ্ন।
জরিতা উঠোনে নেমে ডাকে, দিদি।
– ডাকছিস কেন? আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে রে!
– চলো ঘরে। আজ রাত হোক তোমার সুখের রাত।
নুরিতা ওকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যায়। ঘরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে, পূর্ণিমার চাঁদ আমার ভেতরে ঠাঁই নিয়েছে।
বয়ে যায় হাসির জোয়ার। ঘরের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা অন্যরা আচমকা চোখ খুললে বুঝতে পারে নুরিতা হাসছে। নুরিতার হাসি এ-বাড়িতে ভীষণ আনন্দের।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.