সুচরিত চৌধুরীর গল্প

সুচরিত চৌধুরী লেখক হতে চাননি। যৌবনের শুরুতে তাঁর উচ্চাকাক্সক্ষা ছিল বংশীবাদক হওয়ার। বারো মাসে তেরো পার্বণের মতো স্টেজে নাটক ও বারোয়ারি অনুষ্ঠান দেখে ঘুরেফিরে সময় কাটাতে ভালোবাসতেন। তবে 888sport live footballচর্চার প্রতি তাঁর এক ধরনের টান ছিল। বাবা আশুতোষ চৌধুরী ছিলেন মনেপ্রাণে 888sport live footballসেবী। সেই 888sport live footballপ্রাণতা ছেলের মধ্যেও লক্ষ্যে-অলক্ষ্যে সঞ্চারিত হয়েছিল। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সুচরিত চৌধুরী ১৯৭৬ সালে বংশীবাদক হিসেবে নয়, অত্যন্ত সংগত বিবেচনায় ছোটগল্প লেখক হিসেবে বাংলা একাডেমি 888sport app download bd লাভ করেন। এ-888sport app download bd পাওয়ার পর তাঁর পক্ষে 888sport live footballচর্চাকে আর উদাসীনভাবে দেখার অবকাশ ছিল না। এর আগে থেকেই বিভিন্ন ছদ্মনামে 888sport live footballচর্চা অব্যাহত রেখেছিলেন তিনি। সেগুলি ছিল – সুরাইয়া চৌধুরী, শুধু চৌধুরী, চলন্তিকা চৌধুরী ইত্যাদি। 888sport app download apk নিয়েই তাঁর 888sport live footballচর্চা শুরু হয়েছিল ১৯৫১ সালে। প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের নাম ছিল শুধু চৌধুরীর শুধু 888sport app download apk। সেটি এখন দুষ্প্রাপ্য। ১৯৫২ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ সুরাইয়া চৌধুরীর সেরা গল্প। তখন তাঁর বয়স ছিল বাইশ বছর। সুচরিত চৌধুরীর 888sport live footballচর্চায় একনিষ্ঠ হয়ে ওঠার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে জীবদ্দশায় তিনি জানিয়েছেন, ‘লেখা একটি কষ্টকর জিনিস। তবু আমি লেখক হয়েছি শুধু বাবার 888sport sign up bonusকে ধরে রাখার জন্য।’

লেখক হিসেবে সুচরিত চৌধুরীর পরিচয়টা কৌতূহলোদ্দীপক। এ-সম্পর্কে সুচরিত চৌধুরী লিখেছেন, যে-স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন সেটির নাম গাইয়াছড়ি স্কুল। স্কুলটির বর্তমান পরিবর্তিত নাম সরকারি ন্যাশনাল প্রাইমারি স্কুল।

নন্দনকাননের যে-পাহাড়ের ওপর আশুতোষ চৌধুরী ‘নিভৃতনিলয়’ তৈরি করেছিলেন সেই বাড়ি থেকে এই স্কুলের দূরত্ব পায়ে হেঁটে গেলে মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ। সেকালে স্কুলের পরিবেশ তেমন উন্নত ছিল না। প্রায় সাধারণ মানের স্কুলটিতে পারতপক্ষে কোনো সচ্ছল ও শিক্ষিত অভিভাবকের সন্তান-সন্ততি ভর্তি হতো না। বেশির ভাগ ছাত্র ছিল মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। সুচরিত চৌধুরী কোনো উল্লেখযোগ্য ছাত্রকে স্কুলে বন্ধু হিসেবে পাননি। তবু তিনি মনে করতেন, স্কুলে যাঁদের সহপাঠী হিসেবে পেয়েছিলেন তাঁরাই ছিল তাঁর সারাজীবনের প্রকৃত সখা। এ-স্কুলে তাঁর প্রাক্তন সহপাঠী ছিল, যাঁরা পরবর্তীকালে কোনো রকম খ্যাতি বা সামাজিক পদমর্যাদা অর্জন করতে পারেননি, তাঁদের কথাও তাঁর মনে ছিল। একই সঙ্গে যে গাইয়াছড়ি স্কুলে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেছিলেন, সেই অখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রতিও পোষণ করতেন গভীর কৃতজ্ঞতাবোধ।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি সুচরিত চৌধুরীর তেমন আগ্রহ ছিল বলে মনে হয় না। বাঁশি, সংগীত ও 888sport live football – এ তিন ভুবনে আমৃত্যু নিজেকে উৎসর্গিত করে রেখেছিলেন। স্কুলপর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি সেই শৈশব থেকে পাঠ্যক্রম বহির্ভূত আরেকটি বিষয় – বাঁশি বাজানো অনুশীলন করতে থাকেন। জীবদ্দশায় সুচরিত চৌধুরী ছিলেন প্রতিষ্ঠানবিরোধী মানুষ। প্রতিষ্ঠানের আড়ম্বর, কৃত্রিমতা, নিয়মতান্ত্রিকতা তাঁর কাছে বিরক্তিকর মনে হতো। ফলে প্রাতিষ্ঠানিকতার কোনো সনদপ্রাপ্তি তাঁর জীবনে ঘটেনি।  

শৈশবে পিতাকে দেখেছেন পুঁথি888sport live footballের তথ্য সংগ্রহ করতে। আশুতোষ চৌধুরী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ও 888sport live footballের অধ্যাপক দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে পনেরো বছর কাজ করেছেন। ব্যক্তিজীবনে ছিলেন সহজ-সরল একজন মানুষ।

কথা888sport live chatী সুচরিত চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন ১৯৯৪ সালে। মৃত্যুর প্রায় আটাশ বছর পর তাঁর 888sport sign up bonus ক্রমে ভুলে যাওয়ার কথা। ব্যক্তি চলে গেলে তাঁর লেখা নিয়ে ফিরিস্তি গাওয়া যায়। একসময় যাঁরা তাঁর তরুণ শুভাকাক্সক্ষী ছিলেন এখন তাঁরা বার্ধক্যে পা রেখেছেন। তবু তাঁর বেঁচে থাকা শুভার্থীরা তাঁকে মনে রেখেছেন। তাঁদের আন্তরিকতায় আকাশে অনেক ঘুড়ি সম্প্রতি পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। এই গল্পের বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬১ সালে।

আকাশে অনেক ঘুড়ি গ্রন্থে সাতটি গল্প রয়েছে। প্রতিটি গল্প বিশুদ্ধ শিশুতোষ গল্প বলা যায়। আকাশে অনেক রঙের ঘুড়ি ওড়াউড়ি করে। এটা প্রাচীন খেলা। ঘুড়িগুলির বিশেষত্ব হচ্ছে, ওরা মানুষের মতো কথা বলে। দেশের কথাও বলে। ওরা একে অপরের প্রতি সহানুভূতি জানায়। কখনো কখনো পরস্পরের সহমর্মী হয়ে ওঠে। বাবু একটি চরিত্রের কথা বলা যায়। বাবু বেড়াতে গেছে বন্ধুর বাসায়। ড্রয়িংরুমে পা দিয়ে দেখে সারা ঘর সাজানো ‘ক্লি’র ছবি দিয়ে। বাবু ছবিগুলি ঘুরেফিরে দেখতে লাগলো। এ-সময় একটা বক এসে দাঁড়ায়। হাতে ট্রে। তাতে গ্লাসভরা বনজুস। এরকম মজার আড্ডায় সময় বয়ে যেতে থাকে। ওরা সবাই বন্ধু, কেউ কাউকে আক্রমণ করে কথা বলে  না। তবে ওদের কথাগুলি বুদ্ধিদীপ্ত।

আকাশে অনেক ঘুড়ি গল্পগ্রন্থে ‘স্বাতীর চিঠি’ ও ‘হাসি’ নামে দুটি আলাদা গল্প রয়েছে। একসময় ওরা আত্মহত্যা করে (যৌথ আত্মহত্যা নয়)। দুটি গল্পের বুনন সুন্দর। কিন্তু আত্মহত্যা কেন? এ-প্রশ্নটি জিজ্ঞাসু পাঠকের মনে থেকেই যায়।

‘চুড়ি’ একটি ভালো গল্প। এ-গল্পের নায়িকার পছন্দ ছিল গোলাপি রং। মেয়েটি বারকয়েক পছন্দ করে গোলাপি চুড়ি কেনে। কিন্তু মেয়েটি বিবাহিত হলেও সুখী হতে পারেনি। রহস্যজনকভাবে তার মৃত্যু হয়।

‘সুরতারা’ গল্পটি শুরুতে কোনো গ্রন্থের ভূমিকার মতো। ক্রমে জট খুলতে থাকে। এক বাবুই ছাড়া গল্পের
পাত্র-পাত্রী কেউ মানুষ নয়। গানের আসরে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি। তারা মন খুলে নিজেদের জীবনকথা বলছে। উদাহরণ হিসেবে তবলার কথা বলা যায়। হারমোনিয়ামের গায়ে তবলা উন্মত্ত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। একদিন হারমোনিয়ামও চায়ের দোকান থেকে বগলদাবা করে তাকে নিয়ে এসে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিল।

‘টুল-বেঞ্চের দিনগুলি’ গ্রন্থের শেষ গল্প। পরিসরে গল্পটি এতো বড় যে, একে গল্প না বলে প্রায়-888sport alternative link বলা চলে। অনেকটা মন-প্রাণ উজাড় করে লেখক যেন গল্পটা লিখেছেন। এখানে অন্য গল্পের মতো সেকালের পাঠক ও একালের পাঠক গল্পটি পাঠ করে পরস্পরের অনুভবের মধ্যে মিল খুঁজে পান। পাঠক মনে করেন, এ তো আমার স্কুলদিনের কথা। স্কুলের আসবাবপত্র বদলায়, শিক্ষক বদলায়, নতুন শিক্ষক আসেন, তরুণ ছাত্রে আবার ভরে ওঠে স্কুল। পাশ-টাশ করে একসময় ওরাও চলে যায়। এটা আসলে একটি নস্টালজিক গল্প। কিন্তু ছোটবেলাটা কখনো বড়বেলা হয় না। জীবন ক্রমশ ছোট হয়ে এলেও আমৃত্যু স্কুলের শৈশব কখনো পুরনো হয় না।

সুচরিত চৌধুরীর গল্পগুলি পাঠ করলে সহজে বোঝা যায় বিষয়, প্রসঙ্গ, অনুষঙ্গ। প্রতিটি গল্পে তাঁর জানা জীবন ও অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন তিনি। রচনাশৈলীও পাঠকদের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করার জন্য যথাযথ। বিখ্যাত লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে বলেছেন, ‘Ôto put down what I see and what I feel in the best and simplest way I can tell it.’

আর রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘বিশ্বশক্তি যদি আমার কল্পনায় আমার জীবনে এমন বাণীরূপে উচ্চারিত হইয়া থাকে, যাহা অন্যের পক্ষে দুর্বোধ তবে আমার কাব্য আমার জীবন পৃথিবীর কাহারও কোনো কাজে লাগিবে না – সে আমারই ক্ষতি, আমারই ব্যর্থতা।’

সুচরিত চৌধুরীর গল্পগুলি পড়তে গিয়ে এই দুই মনীষীর কথা মনে পড়ে গেল। পাঠকও নতুন করে গল্পগুলি পাঠ করলে হয়তো একই অনুভূতি তাঁরও হতে পারে।