ইমদাদুল হক মিলন
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ইন্টারভিউ করতে হবে কেন। বানিয়ে লিখে দাও না। তুমি তো আমার সম্পর্কে সবই জানো।
বেশ খানিক আগে রাত এগারোটা পেরিয়ে গেছে। আমরা বসে আছি সৈয়দ আল ফারুকের ড্রয়িংরুমে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তাঁর পাশে আমি। অন্য পাশে রফিক আজাদ। আমাদের মুখোমুখি পীযূষ ও রেবু আপা। এক পাশে স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়। সুনীলদা-স্বাতীদির সঙ্গে সস্ত্রীক আবৃত্তিকার সৌমিত্র মিত্র এসেছিলেন ২০শে ফেব্র“য়ারি রাতে। ফিরে গেলেন ২৬শে ফেব্র“য়ারি, ১৯৮৯।
আর ছিলেন দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর স্ত্রী ও পুত্র-কন্যা। 888sport appয় তাঁদের আমন্ত্রণ করেছিল স্বরশ্র“তি। স্বরশ্র“তির আবৃত্তি অনুষ্ঠান ছিল। সুনীলের 888sport app download apkর লাইনের মতো আমার 888sport sign up bonus এ-মুহূর্তে সামান্য প্রতারণা করছে। আমাদের প্রিয় বাদলদার কথাই তো বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম।
বাদলদার কেতাবি নাম হচ্ছে দ্বিজেন্দ্রনাথ বসু। আনন্দ পাবলিশার্সের বইয়ের প্রিন্টার্স লাইনে নাম থাকে। দ্বিজেন্দ্রনাথ বসু কর্তৃক প্রকাশিত। অর্থাৎ বাদলদা হচ্ছেন আনন্দ পাবলিশার্সের প্রধান। বাদল বসু নামে বিখ্যাত। খুবই আন্তরিক এবং মজাদার লোক। বেশ দশাসই দেখতে। ঠাট্টাপ্রিয়। এক সকালে ধানমণ্ডির গেস্ট হাউসে বাদলদা বললেন, কেউ কি একটা চশমা ফেলে গেছে? একটা চশমা একসেস হচ্ছে।
সেই রাতে বাদলদাও ছিলেন।
কিন্তু আমরা যখন আড্ডায় মেতে উঠেছি, তখনো দেবদুলাল এসে পৌঁছেননি। কবরীর (অভিনেত্রী) বাসায় গিয়েছিলেন। ফিরলেন বারোটার দিকে। ফিরেই সৌমিত্র মিত্রের সঙ্গে ভয়াবহ একটা ঝগড়া করলেন। দেবদুলালের গলার জোর যে এখনো একাত্তর সালের মতোই, বিন্দুমাত্র ম্লান হয়নি, ঝগড়া শুনে বোঝা গেল। খাঁটি ঘটি ভাষায় বেশ খানিকক্ষণ চালিয়ে গেলেন তিনি। শুনে আমরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।
ফারুকের বাসায় আমাদের সেদিন রাত্রিযাপন, খাওয়া এবং ধারাবাহিক আড্ডার দাওয়াত ছিল। এগারোটার পর জমেও উঠল সব। মাঝখানে দেবদুলালের ঝগড়া কিঞ্চিৎ বিরতি টেনে দিল। ফারুক, ফারুকের স্ত্রী বীথি, স্বরশ্র“তির প্রধান ও খবরের কাগজের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, দেবদুলালের ঝগড়া শুনে তারাও একদম চুপ। ঘটি ভাষাটা আমার একদম আসে না, নইলে দেবদুলালের ঝগড়ার ভাষা কিছুটা কোট করা যেত। পীযূষ দেখলাম বেশ মনে রেখেছে। পরদিন সকালে বেলাল চৌধুরীর অফিসে হুবহু অভিনয় করে দেখাল।
যাকগে, ঝগড়ার আগে-পরের সময়টা আমাদের অসাধারণ কেটেছে। গল্পে, ঠাট্টায়, হাসি-আনন্দে, সমবেত গানে। কিন্তু এসবের মধ্যে থেকেও আমি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে নানা রকম প্রশ্ন করেছিলাম। ঠিক ইন্টারভিউর মতো করে নয়। অগোছালোভাবে, যখন যা মনে আসছিল। লেখায় সম্ভবত হুবহু ব্যাপারগুলো আসবে না।
না আসুক। বানিয়ে লিখে দেব। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তো বলেছেনই, বানিয়ে লিখে দাও। বানাচ্ছি। ধরুন এক নম্বর প্রশ্ন, আচ্ছা শ্রী সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আপনি কি মনে করেন [আমাদের দেশের যাবতীয় ইন্টারভিউ কিন্তু এই, আচ্ছা, আপনি কি মনে করেন দিয়ে শুরু হয়। লক্ষ করেছেন?] না, এভাবে নয়।
আমি সিগ্রেট ছেড়ে দিয়েছি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় খাচ্ছিলেন রথম্যান ইন্টারন্যাশনাল। বললাম, আমাকে একটা দিন তো সুনীলদা। সুনীলদা অবাক হলেন। তুমি না ছেড়ে দিয়েছো?
হ্যাঁ।
তাহলে খাবে কেন?
ইচ্ছে করছে।
একটা দিচ্ছি। কিন্তু এরপর আর ইচ্ছে করবে না, আচ্ছা?
সিগ্রেট ধরিয়ে বেশ একটা টান দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে চোখের সামনে সুনীলদার চেহারা ঝাপসা হয়ে গেল। বললাম, আপনার প্রথম গল্প কোনটি? 888sport app download apkর কথা জানি, ‘একটি চিঠি’।
সুনীলদা বললেন, হ্যাঁ। খুবই অল্প বয়সে লেখা। আমি তখন প্রচুর টিউশনি করি। এক টিউশনি বাড়ির কিশোরীর প্রেমে পড়েছিলাম [বানাচ্ছি কিন্তু। সুনীলদা হুবহু এমন করে বলেননি]। মেয়েটি রেগুলার দেশ পত্রিকা পড়ত। দেশ পত্রিকার 888sport app download apk নিয়ে আলোচনা করত। আমি সেই মেয়েটিকে মনে মনে প্রচুর চিঠি লিখতাম। ওরকম একটি চিঠি 888sport app download apk করে দেশ পত্রিকায় পাঠিয়ে দিলাম। কে জানত, 888sport app download apkটি যে ছাপা হয়ে যাবে! ছাপা হওয়ার পর সেই টিউশনি-বাড়ি গেছি। গিয়ে শুনি, বাড়িতে আলোচনা হচ্ছে, দেশে কোন এক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি 888sport app download apk বেরিয়েছে। 888sport app download apkটি বেশ ভালো। পাশের ঘরে বসে আমি ছাত্র পড়াচ্ছি। উঠে গিয়ে যে বলব 888sport app download apkটি আমার লেখা, লজ্জায় বলতে পারলাম না। অবশ্য বললেও ওরা বিশ্বাস করত না।
তো এইভাবে আপনি, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কবি হয়ে গেলেন?
হ্যাঁ। তবে এর আগেও আমি প্রচুর 888sport app download apk লিখেছি। কিন্তু আমার নিজের নামে নয়। টেনিসনের নামে।
মানে?
তুমি নিশ্চয়ই জানো, আমি 888sport app download apkর সুখ দুখে লিখেছিলাম। ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর যে দুই-তিন মাস সময় অবসর থাকে, ওই সময় আমার বাবা প্রতিদিন আমাকে টেনিসনের গোটা কয়েক করে 888sport app download apk 888sport app download apk latest version করতে দিতেন। প্রথম প্রথম কায়ক্লেশে কিছু 888sport app download apk latest version করে বাবাকে দেখিয়েছি। মূল 888sport app download apkর সঙ্গে মিলিয়ে প্রথম প্রথম বেশ যতেœ 888sport app download apk latest version ঠিক হয়েছে কি না দেখতেন বাবা। পরে আর মূল 888sport app download apk দেখতেন না। শুধু 888sport app download apk latest versionটাই দেখতেন। আমি এই চান্সটা নিলুম। করতুম কী, নিজেই টেনিসনের প্যাটার্নে লাইনের পর লাইন সাজিয়ে পৃষ্ঠা ভরে রাখতুম। বাবা ধরতে পারতেন না।
বাবা ধরতে পারতেন না কথাটা এমন মজা করে বললেন সুনীলদা, শুনে রফিক আজাদ এবং আমি হো হো করে হেসে উঠলাম। সুনীলদাও হাসলেন। আমাদের হাসি শুনে স্বাতী, মুনমুন, রেবু, বীথি, সৌমিত্র, পীযূষ, ফারুক, নাঈম আমাদের মুখের দিকে তাকাল।
আসলে ততক্ষণে আমাদের আড্ডায় দুটো গ্র“প হয়ে গেছে। আমি, সুনীলদা আর রফিক ভাই একদিকে, অন্যদিকে আর সবাই।
কিন্তু সুনীলের এই সরল ভঙ্গিতে বলে যাওয়া কথার মধ্য থেকে আমি টের পেলাম, সুনীল তাঁর লেখার মতোই অকপট। সুনীলের মধ্যে চালাকি জিনিসটা একদম নেই। বড় 888sport live chatীর বড় গুণটি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে বড়ভাবেই আছে। এরপর সুনীলের সেই গল্প ‘রাত পাখি’র মতো নিজেদের অজান্তে আমরা একসময় ক্ষণকালের জন্য থেমে গেলাম। আমি তাকিয়ে ছিলাম সুনীলের মুখের দিকে। তাকিয়ে চমকে উঠলাম। এত লোকের মধ্যে থেকেও, এরকম আড্ডার মধ্যে থেকেও কখন যেন সম্পূর্ণ একা হয়ে গেছেন সুনীল। কপালে সামান্য ভাঁজ পড়েছে। চোখে অদ্ভুত আনমনা দৃষ্টি। এক হাতে সিগ্রেট, অন্য হাতে গ্লাস।
সুনীল তুমি কার কথা ভাবো? ‘রাত পাখি’র সেই মেয়েটি, বাচকুন, তোমার কি তার কথা মনে পড়ে। মানুষের স্বভাবই হচ্ছে এরকম। কথা বলতে বলতে হঠাৎ নিজের অজান্তে থেমে যায় তারা। এটি প্রথম টের পেয়েছিলাম সুনীলের ‘রাত পাখি’ পড়ে।
কিন্তু সুনীলের প্রথম গল্প?
সুনীলদা বললেন, গল্প যে কোনটা লিখেছিলাম, কোথায় লিখেছিলাম মনে নেই। প্রথম 888sport alternative linkের কথা…
সুনীলের কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি বললাম, ওটা না বললেও চলবে। আÍপ্রকাশের কথা কে না জানে। ওই যে, ‘সকালবেলা পরিতোষ এসে বলল, এসব আপনারা কী আরম্ভ করেছেন? সব কিছুরই একটা সীমা থাকা উচিত!’
এই দুটো লাইন দিয়ে শুরু হয়েছিল। আপনি, শক্তি, শরৎ Ñ বিশেষ করে এই তিন যুবকের জীবনাচরণের ভেতর দিয়ে আপনাদের জেনারেশনের মর্মবেদনার সম্পূর্ণ ছবি। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে, যখন মধ্যরাতে কলকাতা শাসন করতে চারজন যুবক (শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়) সেই সময়টাকে আÍপ্রকাশের মতো করে আর কোনো 888sport alternative link বলতে পেরেছে?
কথা বলতে বলতে নিজের অজান্তে কখন যে শার্টের হাতা গোটাতে শুরু করেছিলাম আমি। দেখে সুনীল হাসলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে পড়ল, আÍপ্রকাশের নায়ক সব সময় শার্টের হাতা গুটিয়ে রাখত। যেন সারাক্ষণই তার চারপাশে ঘুরছে অদৃশ্য শত্র“। যখন-তখন সেই শত্র“র ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে তাকে।
এই শত্র“ আসলে কে?
সময়!
সাবাস সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ’৬৬ সালে এরকম একটি 888sport alternative link লিখেছিলেন! এলোমেলো, অগোছালো, রাগী তরুণদের নিয়ে বাংলায় কি আÍপ্রকাশই প্রথম 888sport alternative link?
এরপর অরণ্যের দিনরাত্রি, প্রতিদ্বন্দ্বী, জীবন যেরকম, সরল সত্য, অর্জুন Ñ রাগী তরুণদের নিয়ে লেখা কত 888sport alternative link। একটি প্রজš§ নিয়ে সুনীল একাই অনেক ভালো 888sport alternative link লিখে ফেললেন।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নামে আসলে কজন লেখক লেখেন? [এখন বলতে হবে লিখতেন]
একজনই!
বিশ্বাস হয় না।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, শিশু888sport live footballিক (কিশোরদের জন্য কাকাবাবু, নাট্যকার, নীললোহিত), সনাতন পাঠক, নীল উপাধ্যায়, সুনীল আসলে কজন?
রফিক আজাদ বললেন, আপনি বলুন। শুনতে ভালো লাগছে।
সুনীল গ্লাসে চুমুক দিলেন। সিগ্রেটে টান দিলেন। এরপর কী রকম দূরাগত গলায় বলতে শুরু করলেন, ষাট সালের প্রথমদিকে আমি একটা স্কলারশিপে আমেরিকা গিয়েছিলাম। শেষ না করে ফিরে আসি। কিন্তু কলকাতা এসে বেকার। কয়েকটি টিউশনি নিই। আর বিভিন্ন নামে গদ্য লেখা শুরু করি। নীললোহিত, নীল উপাধ্যায়, সনাতন পাঠক। গদ্য লিখে এবং টিউশনি করেই আমি চলতাম। আর সন্ধেবেলা কফি হাউসে আড্ডা। কখনো কখনো লেখকদের বাড়িতেও আড্ডা দিই। এরকম এক আড্ডায় সাগরময় ঘোষ, দেশ পত্রিকার সম্পাদক বারান্দায় ডেকে নিয়ে বললেন, দেশ শারদীয় 888sport free betয় প্রতিবছরই নতুন লেখকের একটি করে 888sport alternative link ছাপি আমরা। এবারের 888sport alternative linkটি তোমাকে লিখতে হবে। কাল থেকে লিখতে বসে যাও। সময় দুই মাস। শুনে আমি তো অবাক। 888sport alternative link লিখব আমি! 888sport alternative link কেমন করে লিখতে হয় জানি না তো। 888sport alternative linkের পরিচ্ছেদ কেমন করে ভাগ করতে হয় জানি না তো।
সাগরদার কথা উপেক্ষা করা গেল না। পরদিন সকালবেলা কাগজ-কলম সাজিয়ে বেশ কায়দা করে লিখতে বসলাম। পরপর দু-তিন কাপ চা খেলাম। কিন্তু কী লিখব। একটা লাইনও মাথায় আসে না। এভাবে দিন যায়। প্রতিদিন সকালবেলা ওভাবে কাগজ-কলম নিয়ে বসি। একটা লাইনও লিখতে পারি না। দিন ফুরিয়ে আসছে। সাগরদার সঙ্গে মাঝেমধ্যে দেখা হয়। জিজ্ঞেস করেন, সুনীল, তোমার 888sport alternative link কত দূর! Ñ হেসে বলি, হচ্ছে। এরপর পালিয়ে আসি।
কিন্তু লেখা তো এক লাইনও এগোচ্ছে না। ভেতরে ভারি একটা অস্থিরতা। দিন ফুরিয়ে আসছে। কী হবে।
একদিন ওরকম এক সকালবেলা কাগজ-কলম নিয়ে লেখার টেবিলে বসে আছি, দুই কাপ চা খাওয়া হয়ে গেছে। উদাস হয়ে সিগ্রেট টানছি, শক্তির ছোট ভাই এসে বলল, দাদা কাল রাতে বাড়ি ফেরেনি। আপনারা এসব কী শুরু করেছেন?
শক্তির ছোট ভাই চলে যাওয়ার পরই লেখা শুরু করলাম আমি। অদ্ভুত একটা ঘোর পেয়ে বসল আমাকে।
সুনীলদার কথা তখন মুগ্ধ হয়ে শুনছে ঘরের সবাই। কোথাও কোনো শব্দ নেই। হইচই থেমে গেছে। আড্ডা বন্ধ।
সুনীল বললেন, সাগরদার হাতে লেখা পৌঁছে দিয়ে, শারদীয় 888sport free bet বেরোনোর আগে আমি কলকাতা থেকে পালিয়ে গেলাম। ধারণা হয়েছিল, কিচ্ছু হয়নি। দেশ পত্রিকার সর্বনাশ করে দিয়েছি আমি।
বেশ কিছুদিন পর ফিরে এলাম। কিন্তু পরিচিত কারো সঙ্গে দেখা করি না। কী জানি লেখা নিয়ে কী ঘটে গেছে।
আমি আর দেশ পত্রিকার ধারেকাছেও ভিড়ছি না।
দিন যায়।
কিন্তু এভাবে কত দিন পালিয়ে থাকব!
এক দুপুরে দেশ পত্রিকার অফিসে গেলাম। লিফটে রমাপদ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা। বললেন, পড়তে শুরু করেছি। শেষ পর্যন্ত যদি ডুবিয়ে দিন তো খুন করে ফেলব।
সুনীলদার কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সৌমিত্র আমাকে বলল, মিলন, তুমি কি খুব সিরিয়াস!
আমি সৌমিত্রের দিকে তাকিয়ে বললাম, তোমাকে এক কৌটো পাউডার কিনে দেব।
সঙ্গে সঙ্গে সারা ঘর হেসে উঠল।
সৌমিত্র ঘাড়ে-গলায় পাউডার মেখে 888sport app download apk আবৃত্তি করতে ভালোবাসে। পাউডার প্রসঙ্গে শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা মনে পড়ল। অনেক কাল আগে কোনো এক কাগজে শ্যামলের একটা ইন্টারভিউ বেরিয়েছিল। ইন্টারভিউতে শ্যামলকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, এখনকার তরুণ লেখকদের সম্পর্কে আপনার কী ধারণা? শ্যামল বলেছিলেন, কোনো তরুণও নেই, কোনো লেখকও নেই। এক শ্রেণির যুবক আছে, যারা শনিবারে শনিবারে ঘাড়ে-গলায় পাউডার মেখে সম্পাদকদের সামনে গিয়ে বসে থাকে।
কিন্তু সুনীল তরুণ লেখকদের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী। আবুল বাশারের লেখা খুবই পছন্দ করেন তিনি। কানাই কুণ্ডুর অন্ধকারের মাছি 888sport alternative linkটি তাঁর খুব ভালো লেগেছে বললেন। তবে সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে বললেন একটু ড্রাই।
সমসাময়িক লেখকদের মধ্যে শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা তিনি পছন্দ করেন। আর মতি নন্দীর। বললেন, তবে শ্যামলটা বড্ড গোঁয়ার। সন্তোষদাকে [লেখক সন্তোষকুমার ঘোষ] কিনু গোয়ালার গলি, স্বয়ং নায়ক, সুধার শহর [আদি নাম মোমের পুতুল], জল দাও, শেষ নমস্কার শ্রীচরণেষু মাকে। শেষ নমস্কারের জন্য একাডেমী অ্যাওয়ার্ডে চড় মেরেছিল। আর মতির ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝি না। এত ভালো হাত অথচ ওর লেখা নিয়ে নকলের অভিযোগ ওঠে। এবার একটা 888sport alternative link লিখেছে স্বর্ণকুমারী নামে। শোনা যাচ্ছে, ওটা নাকি গোল্ডেন গার্ল নামের একটা 888sport alternative linkের নকল।
আমি বললাম, মতি নন্দীর বারান্দা 888sport alternative linkটি নিয়েও কথা উঠেছিল। ওটি নাকি দি ডোর নামের কোনো এক 888sport alternative linkের নকল।
কী জানি।
আমি হঠাৎ করে বললাম, শ্যামল কিন্তু সম্পাদক হিসেবে আপনাকে খুব বড় মনে করেন। শ্যামলের ঈশ্বরীতলার রূপকথা 888sport alternative linkের ভূমিকা ‘আমার লেখা’য় শ্যামল এক জায়গায় লিখেছেন, ‘আমাদের সময় কয়েকজন বিশিষ্ট সম্পাদকে আলোকিত। যেমন সাগরময় ঘোষ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। এঁদের সাহস এঁদের সুবিচার সুবিদিত।’
প্রসঙ্গক্রমে কথা উঠল কৃত্তিবাস নিয়ে। সঙ্গে সঙ্গে আমি আমার পাশে দেখতে পেলাম দুজন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বসে আছেন। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সম্পাদক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। মনে পড়ে, আমার জšে§র দুই বছর আগে ১৯৫৩ সালে সুনীল, দীপক মজুমদার প্রমুখ কৃত্তিবাস নামের এক পত্রিকা নিয়ে মেতে উঠেছিলেন। রাতারাতি পত্রিকাটি তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীকালে সুনীল প্রজšে§র প্রায় সব লেখক-কবিই কৃত্তিবাসের লেখক-কবি হয়ে গিয়েছিলেন। যেমন শক্তি, সন্দীপন, শ্যামল, তারাপদ, শরৎ, শঙ্খ, মতি, শীর্ষেন্দু, দেবেশ ও দীপেন। অপেক্ষাকৃত তরুণ বেলাল চৌধুরী। বেলাল চৌধুরী কৃত্তিবাসের তিনটি 888sport free bet সম্পাদনাও করেছিলেন। ২৫শে বৈশাখ ১৩৯১ প্যাপিরাস থেকে সুনীলের সম্পাদনায় বেরিয়েছে কৃত্তিবাস সংকলন। সংকলনটির ভূমিকা পড়লে কৃত্তিবাসের সম্পূর্ণাঙ্গ জীবনী পাওয়া যাবে। বড় ভালোবেসে লিখেছেন সুনীল। রচনাটি এত আন্তরিক, আমার ইচ্ছে হচ্ছে পুরোটা এই লেখার ভেতর তুলে দিই।
কিন্তু সে অসম্ভব। রচনাটি বেশ দীর্ঘ। উৎসাহী পাঠক কৃত্তিবাস সংকলনের ভূমিকাটি পড়ে নেবেন।
নাঈম তখন আমাদের সোফার পেছনে বসে অবিরাম টেলিফোন ঘুরিয়ে যাচ্ছে।
আমি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘নীরা হারিয়ে যেও না’ নামে অনেক দিন পর আবার নীরাকে নিয়ে দীর্ঘ 888sport app download apk লিখলেন!
সুনীল পলকের জন্য স্বাতীর দিকে তাকালেন। স্বাতী তাঁকে দেখলেন কি না জানি না। সুনীলের ঠোঁটে রহস্যময় এক হাসি ফুটে উঠল।
নীরা প্রসঙ্গ থাক। অন্য কথা বলো।
আমি বললাম, আপনি এত মুটিয়েছেন কেন?
হ্যাঁ, কী করি বলো তো?
জগিং করুন। হাঁটাহাঁটি করুন।
প্রায়ই ভাবি করব। হয় না। আয়তনটা আমার খুব বেড়ে গেছে, না?
হ্যাঁ! শরীরের এবং 888sport live footballের। সুনীলদা, আপনি একবার তীব্র শীতের রাতে কোনো এক স্টেশনে বসে শীতে কষ্ট পাচ্ছিলেন।
‘ভ্রƒ পল্লবে ডাক দিলে দেখা হবে চন্দনের বনে’ বলছো? হ্যাঁ, ঘটনাটা সত্য! কোত্থেকে যে লাইনটা মাথায় এলো। মুহূর্তে তীব্র শীত কেটে গেল আমার। আমি উত্তেজিত হয়ে গেলাম। কে ভ্রƒ পল্লবকে ডাক দেবে আমাকে! কার সঙ্গে চন্দনের বনে দেখা হবে আমার! শীত এবং ট্রেনের জন্য অপেক্ষা কিচ্ছু টের পেলাম না। কিচ্ছু মনে রইল না আমার।
আপনার কি এখনো তেমন হয়?
এই তো কদিন আগেও একবার হয়েছিল। গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। বিছানায় উঠে বসে রইলাম। কী রকম একটা ঘোর পেয়ে বসল। কয়েকটা লাইন লিখলাম।
সুনীল হাসলেন। পাগল মনে হচ্ছে না তো।
একটু মনে হচ্ছে।
সবাই হো হো করে হেসে উঠল।
বললাম, এই মাত্র পূর্ব পশ্চিম শেষ করলেন আপনি। দীর্ঘদিন ধরে দীর্ঘ একটি 888sport alternative link লিখলেন। শেষ হয়ে যাওয়ার পর কেমন লাগছে?
লেখাটা হাতেকলমে শেষ হয়েছে। কিন্তু মাথা থেকে এখনো নামেনি। রয়ে গেছে।
তাড়াবেন কেমন করে?
বুঝতে পারছি না।
অন্য লেখা শুরু করলে কি…
বোধ হয় তা-ই। তবে আমি আপাতত কোনো লেখার কথা ভাবছি না।
কবে ভাববেন?
দেখি।
এখনো কি স্বপ্নে গল্প পান?
মানে?
ওই যে আমিই সে লেখার শুরুটা যেমন করে স্বপ্নে পেয়েছিলেন? খরস্রোতা নদী তীরে একটি লোক দাঁড়িয়ে আছে। নদী সাঁতরে পার হবে।
হ্যাঁ, এরকম একটা দৃশ্য স্বপ্নে দেখার পরই আমিই সের আইডিয়াটা মাথায় এসেছিল। অনেকদিন তেমন হচ্ছে না।
খারাপ লেখার জন্য বিবেকের তাড়া, মানে আপনি একটা গল্প লিখেছিলেন না, অবশ্য অনেক কাল আগে লিখেছিলেন, আপনার মনে আছে কি না জানি না।
বলো তো?
ওই যে সন্ধেবেলা কোনো একটা চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন, হঠাৎ অচেনা একটি মেয়ের টেলিফোন এলো সেখানে।
হ্যাঁ, মেয়েটিকে আমি বিবেকের মতো করে হাজির করেছিলাম। টেলিফোনে বিবেক আমাকে বলছে, তুমি এসব কী লিখছো! সত্যি নিজের কত লেখার জন্য যে লজ্জা হয়।
অহংকার হয় না?
না। অহংকার জিনিসটা আমার একদম নেই। আমি কমলকুমারকে একা এবং কয়েকজন উৎসর্গ করে লিখেছিলাম, আপনার খাটের পায়ার তলায় থান ইটের জায়গায় বইটি রেখে দেবেন। কাজে লাগবে।
কমলকুমার মজুমদার, অমিয়ভূষণ মজুমদার, গুণময় মান্না Ñ এই তিনজনের মধ্যে কার লেখা আমি পছন্দ করি? কমলকুমারকে। একটা সময়ে কমলকুমার আমাদের আদর্শ ছিলেন। জীবনচর্যায়, গদ্যভঙ্গিমায়। বাংলা ভাষায় কমলকুমারই বোধহয় একমাত্র লেখক, নিজের লেখার জন্য সম্পূর্ণ আলাদা একটি গদ্যভঙ্গি তৈরি করেছিলেন। ওই ভাষায় অন্য কারো পক্ষে লেখা সম্ভব নয়।
একা এবং কয়েকজনের সূর্য সম্পর্কে আপনি একবার লিখেছিলেন, সূর্যের মৃত্যু আপনাকে খুব কষ্ট দিয়েছিল। সূর্যের মৃত্যু চ্যাপটারটি লেখার পর আপনার ইচ্ছে হয়েছিল, দেশ পত্রিকার অফিসে গিয়ে লেখাটি বদলে দেন। সূর্যকে বাঁচিয়ে তোলেন।
হ্যাঁ, আমার এ-রকম হয়। তোমার হয় না?
সুনীল প্রশ্ন করছেন আমাকে! আমি যে কী লজ্জা পেলাম। অনেকক্ষণ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখের দিকে আর তাকাতে পারি না। একটি 888sport app download apkর লাইন মনে পড়ল। ‘এ জীবন অন্য রকম হবার কথা ছিল।’ বললাম, সুনীলদা আপনার এখনো মনে হয়?
কী?
এ-জীবন অন্যরকম হবার কথা ছিল।
হ্যাঁ।
কী রকম?
সে আমি বলতে পারব না।
সুনীল আবার আনমনা হলেন। উদাস হলেন। চোখে সেই সুদূরের দৃষ্টি। সুনীলকে দেখে আবার চমকে উঠলাম আমি। স্পষ্ট দেখতে পেলাম আমার পাশের সোফায় তিনজন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বসে আছেন। সন্ত ও কাকাবাবুর স্রষ্টা সুনীল, প্রাণের প্রহরীর নাট্যকার এবং সনাতন পাঠক যে নির্দ্বিধায় বঙ্কিমচন্দ্রকেও ঠুকে দেয়। একটা সিঙ্গেল সোফায় ওই আয়তনের তিনজন বসে আছেন কী করে!
আবার সেই প্রশ্নটি মনে এলো। সুনীল আসলে কজন?
বললাম, অমলের পাখির কথা মনে আছে সুনীলদা?
থাকবে না, রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গল্প লিখেছিলাম। শোনো, আমি রবীন্দ্রনাথের যৌবন নিয়ে একটি 888sport alternative link লিখব ভাবছি।
কবে?
কবে লিখব তা অবশ্য ভাবিনি। [পরে লিখলেন প্রথম আলো]
দর্পণে কার মুখ 888sport alternative linkের সেই পাঠিকা কি সত্যি ছিল?
লেখাটির কথা আমার মনে নেই।
অন্যদিকে তখন তুমুল আড্ডা চলছে। পীযূষ এবং মুনমুন গানও শুরু করেছে। ডুয়েট হচ্ছিল। ‘ভালবেসে বেসে বাসরে ভাল, নইলে বেস না।’ ওদের দিকে তাকিয়ে সুনীল একটু তাল দিলেন। আমি দু-তিনবার চুটকি বাজালাম।
কী জানি কী কারণে আমার তখন মার্গারিটের কথা মনে পড়ল। সুদূর ঝর্ণার জলের কথা মনে পড়ল। ওই হই-হুল্লোড়, নাচ-গানের মধ্যে পাশের সোফায় তাকিয়ে দেখি, কী আশ্চর্য! দুজন লেখক একই সোফায় বসে আছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় (৫৫), নীললোহিত (২৭)।
আমি নীললোহিতকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার মার্গারিট ম্যাথিউ কেমন আছে।
সুদূর ঝর্ণার জলে?
হ্যাঁ।
মার্গারিটের মতো সরল, সুন্দর, ইনোসেন্ট যুবতী পৃথিবীতে আর কেউ ছিল না। আমেরিকা থেকে ফিরে আসার অনেককাল পর শুনেছিলাম, চারজন নিগ্রো রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল মার্গারিটকে। এরপর মার্গারিট আর কখনো ফিরে আসেনি।
মার্গারিটকে তোমার মনে পড়ে?
মার্গারিট আমার সুদূর ঝর্ণার জল।
নীললোহিত এরপর আশ্চর্য এক মায়াবী গলায় বলে যায়, ‘আমি ধপ করে বসে পড়লাম। জ্বরে যেন আমার শরীরটা কাঁপছে। নিজেকে সামলাতে পারছি না। দরদর করে জল পড়ছে চোখ দিয়ে। শৈশবের প্রায় কুড়ি-পঁচিশ বছর পর আমি আবার কাঁদছি। নির্লজ্জের মতন। আমার হেঁচকি উঠে যাচ্ছে। হাতের চেটো দিয়ে মুখ মুছেও সে-কান্না শেষ করা যায় না।
আবার জানালা দিয়ে তাকাবার চেষ্টা করলাম। আর কিছুই দেখা যায় না। বাইরে শুধু মেঘ। আমি হারিয়ে যাচ্ছি। আমি একলা… আর এ কী অসম্ভব একাকিত্ব, বুক যেন ছিঁড়ে যেতে চাইছে। মার্গারিট, আমি আছি, তুমি আমার দিকে একবার তাকাও, চোখে চোখ রাখ আর একবার বল, আমাদের প্রতিটি মুহূর্তই তো আনন্দের।’

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.