সুবর্ণরেখার বিস্ময়

মোবাশ্বির আলম মজুমদার

Suborna Rekhar Bishmoy
Suborna Rekhar Bishmoy

কথাগুলো এভাবে বলতে ইচ্ছে করছে – শেষবার ইচ্ছে হচ্ছিল তোমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে। কাইয়ুম চৌধুরী সুরের মায়াজালে আবিষ্ট হয়ে আমাদের কাছে আর থাকলেন না। এ-প্রদর্শনীটি তাঁর অাঁকা কালি ও কলমের জন্যে অলংকরণ ও পৃষ্ঠাসজ্জা পরিকল্পনার উপস্থাপন। কাইয়ুম চৌধুরী তাঁর জীবদ্দশায় কতসংখ্যক বই ও পত্রপত্রিকায় প্রচ্ছদ অলংকরণ করেছেন তার নির্দিষ্ট হিসাব নেই। কালি ও কলমের জন্মলগ্ন থেকেই কাইয়ুম চৌধুরী 888sport live chat-নির্দেশক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। দৃষ্টিনন্দন ও ব্যতিক্রমী একটি রুচিশীল 888sport live footballপত্রিকা হয়ে-ওঠার জন্যে কাইয়ুম চৌধুরীর নিরলস শ্রমের প্রত্যক্ষ প্রমাণ আমরা দেখতে পাই এই কাজে। কালি ও কলম পত্রিকার 888sport live chat-নির্দেশনা প্রসঙ্গে সম্পাদক আবুল হাসনাত বলেন এভাবে – ‘একদিকে তাঁর রেখা যেমন দীপ্তিময়, উজ্জ্বল, সৃজনধারার অনুষঙ্গী; তেমনি তাঁর রেখার প্রাণময়তা, শক্তিময়তা ও আবেগ প্রাণস্ফুর্তিতে উজ্জ্বল। এছাড়া যেসব 888sport liveের নামলিপি করেছেন, তাতেও কাইয়ুম চৌধুরীর অক্ষরবিন্যাসের ধীশক্তি নানাভাবে উন্মোচিত।’ তাঁর কাজের মাঝে বিষয়-সংশ্লিষ্ট রেখা ও জ্যামিতির উপস্থাপন লেখার মূল চরিত্র পাঠকের সামনে হাজির করে।

কোনো কোনো গল্পের শিরোনামের লিপিসৌন্দর্যে পৃষ্ঠার আবহ পরিবর্তিত হয়ে যায়। বিশ্ব888sport live chatকলার ধারাসমূহের বিবর্তনের দিকে মনোযোগ দিয়ে আমরা বুঝতে পারি, 888sport live chat একটা নির্দিষ্ট মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে স্থির হয়ে নেই। 888sport live chatস্রোতের এই যাত্রাপথে কাইয়ুম চৌধুরীর কাজ একেবারে আধুনিক ও সমসাময়িক নির্মাণ হিসেবে আমরা পাই। 888sport live chatযাত্রার পথে কাইয়ুম চৌধুরী নিরীক্ষায় ছিলেন নিরন্তর। আমরা তাঁর রেখাপ্রধান কাজের বিশ্লেষণের আগে বিষয় নিয়ে কথা বলি। কাইয়ুম চৌধুরীর ছবির বিষয় আবহমান বাংলা, তাঁর ছবির ক্যানভাস লাল-সবুজ রঙে ভরে ওঠে। কখনো কখনো চিরচেনা বাংলার রঙের মাঝে রেখা ও গতির উদ্ভাসন দেখা দেয়। ক্যানভাস নিজেই হয়ে যায় একখন্ড 888sport apps। মূর্ত মানুষ ও প্রকৃতির অবয়বকে প্রধান করে জ্যামিতিতে রূপান্তর করেন। আলো-ছায়া আর 888sport live chatের ব্যাকরণের কথা তিনি সব সময়ই মনে রাখেন। ফলে কাইয়ুম চৌধুরীর ছবির বিষয় এক দেখাতেই  লাল-সবুজ বাংলার কথা মনে করিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে কাইয়ুম চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করেছেন এমন একজন 888sport live chatী সমরজিৎ রায় চৌধুরীর কথাগুলো উল্লেখ্য – ‘আমি তো মনে করি, পেইন্টিংয়ের চেয়ে গ্রাফিক্স ডিজাইনে শ্রম অনেক বেশি দিতে হয়। তা না হলে এটা তো সবাই করতে পারত। অনেক বেশি সৃজনীশক্তি প্রয়োজন হয়, যা কাইয়ুমভাইয়ের ছিল। কাইয়ুমভাই সব সময়ই এ-ব্যাপারটিতে সফল ছিলেন।… আমি শুনেছি, তিনি বইয়ের প্রচ্ছদই করেছেন তিন হাজারের বেশি। তিনি পেইন্টিং যত না করেছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজ করেছেন। আমি মনে করি, তিনি পৃথিবীর সেরা পাঁচজন গ্রাফিক্স ডিজাইনারের মধ্যে একজন।’ সমরজিৎ রায় চৌধুরী তাঁর সব কটি শাখায় কাজ করার কথা বলেছেন। নকশা, বইয়ের প্রচ্ছদপট ও স্পেস ব্যবস্থাপনায় যে রং, আকৃতি ও স্পেসের আয়োজন কাইয়ুম চৌধুরী করেন, তাতে একনিষ্ঠ প্রত্যয় দেখা যায়। তাঁর অলংকরণ করা একটি 888sport app download apkর পাতায় 888sport app download apk ছিল দুটি – একটির শিরোনাম ‘বিলাপ’, অন্যটির ‘শর-মঞ্চের উপর’। অলংকরণটি কালো রেখায় অাঁকা। উল্লম্ব ও আড়াআড়ি রেখার সঙ্গে বিন্দু বিন্দু কালো রং বিষয়ের অবয়ব গড়ে তুলেছে। এ-কাজে রঙের উৎসারণ নেই, কিন্তু রেখার প্রাণময়তা আর প্রাচুর্য হাজির হয়েছে।

লেখার সঙ্গে সাদা পাতাটির তিনি ধ্যানমগ্ন সম্পর্ক তৈরি করতেন। তাঁরই সহকর্মী, ছাত্র শামসুল হক বলেন এভাবে – ‘স্যারকে যখন বলতাম, স্যার এই পাতাটি লে-আউট করে দিতে হবে, তখন তিনি পাতাটি সামনে নিয়ে কিছুক্ষণ ধ্যানমগ্ন হয়ে বসে থাকতেন। কিছু বলতেন না। শুধু পাতাটির ওপর আঙুলগুলো বিছিয়ে আলতো করে হাত বুলাতেন। চেয়ে থাকতেন তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে। কিছুক্ষণ পর কলম বা পেনসিল দিয়ে কাজ শুরু করতেন এবং শেষ করে ফেলতেন অল্প সময়ে…।’ তাঁর নিজের লেখা ‘হেমন্ত সন্ধ্যা’ 888sport app download apkর রেখাচিত্র বাংলার হেমন্তকালের দগ্ধদিনের উজ্জ্বল সূর্যের উপস্থিতি হেমন্তের আবহ তৈরি করে দেয়। কাইয়ুম চৌধুরীর জীবনবোধ নিভৃতের গভীর বিষাদ-রেখায় কম্পন তোলে। পৃথিবীর পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে তিনি গায়ে মেখে নিয়েছেন নীলের বিস্তার। একটি পাখির ডাকে চেতনার তন্ত্রী ছিঁড়ে অফুরন্ত সূর্য জ্বেলে দিলেন আমাদের।