বাংলা 888sport live football ও সংস্কৃতির ভুবনে সেলিনা হোসেন অপরিহার্য নাম। বহু ছোটগল্প, 888sport alternative link ও 888sport liveের রচয়িতা তিনি। তাঁর লেখার বিষয়বস্তু 888sport appsের মাটি, মানুষ, মানুষের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। সেলিনা হোসেন লেখক হিসেবে অতিসচেতন। গল্প-888sport alternative linkের চরিত্রগুলি বিচিত্র সমাজ ও সংস্কৃতি থেকে তুলে এনেছেন তিনি। তাঁর লেখায় প্রতিফলিত হয়েছে সমকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসংকটের সামগ্রিক রূপবৈভব।
গল্পগ্রন্থ দিয়ে সেলিনা হোসেনের 888sport live footballজীবনের সূচনা। প্রথম গল্পগ্রন্থ উৎস থেকে নিরন্তর (১৯৭২)। ১৯৭৬ সালে তাঁর রচিত বিখ্যাত 888sport alternative link হাঙর নদী গ্রেনেড প্রকাশের পর 888sport live footballজগতের আকাশে প্রদীপ্ত তারকায় পরিণত হন তিনি। হাসান আজিজুল হক এই 888sport alternative linkকে ‘তোলপাড় সৃষ্টিকারী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। বিষয় ও চরিত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলা 888sport live footballের আদি নিদর্শন চর্যাপদ থেকে শুরু করে মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যের রস সিঞ্চন করে আধুনিক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গহিনে তাঁর পদচারণা।
চল্লিশটিরও অধিক 888sport alternative link, তেরোটি গল্পগ্রন্থ, 888sport app download apkগ্রন্থ, ছোটদের জন্য প্রচুর লিখেছেন তিনি। 888sport live888sport live footballের ওপর গ্রন্থ প্রায় দশটি। এছাড়া বহু গ্রন্থ ও 888sport live footballপত্রিকা সম্পাদনা করেছেন সেলিনা হোসেন।
রচনা 888sport free bet ও প্রাচুর্য বিবেচনায় সেলিনা হোসেনকে স্বল্পপরিসরে আলোচনা সম্ভব নয়। বাংলার প্রাচীন সমাজ-সংস্কৃতি থেকে শুরু করে মধ্যযুগ, আধুনিক সমাজকাঠামো, রাজনীতির বাঁক, সময়ে-দুঃসময়ে বাঙালির হাসি-আনন্দের ফোয়ারা কিংবা দুঃখ-কষ্টের মর্মন্তুদ যন্ত্রণা-কাতরতা তাঁর অদম্য লেখনীকে দুর্বার করেছে সবসময়। দুর্বলের পক্ষে তাঁর কলম গর্জে উঠেছে যখন-তখন। অবহেলিত 888sport promo codeর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন বুক চিতিয়ে। বাঙালির অহংকার ভাষা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তাঁর লেখায় যোগ করেছে নতুন মাত্রা। তাঁর রচিত 888sport alternative link-গল্প ইংরেজি ছাড়াও আরো অনেক ভাষায় অনূদিত হয়েছে। 888sport live footballে অবদানের জন্য এই অসামান্য কথা888sport live footballিক অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি 888sport app download bd, আলাওল 888sport live football 888sport app download bd, ফিলিপস 888sport live football 888sport app download bdসহ বহু 888sport app download bd। ২০১০ সালে লাভ করেছেন 888sport cricket BPL rateে পদক। একই বছর রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি-লিট উপাধি দেয়।
বাংলা 888sport live footballের ছোটগল্পে ভিন্নতর আঙ্গিক উপস্থাপনায় সিদ্ধহস্ত সেলিনা হোসেন। তাঁর অধিকাংশ গল্পই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অবলম্বন করে। প্রেম-প্রণয়, ভালোবাসা, অভাব-অনটন, দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে নিম্নবিত্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ বেঁচে থাকে এক অদম্য মনোবাসনা নিয়ে, স্বপ্ন দেখে সুখী হওয়ার। কখনো সফল হয়, কখনো হয় ব্যর্থ। নিম্নবর্গের মানুষের দিনযাপনের এক অনাবিল মনোজ্ঞ গ্লানিচিত্র অঙ্কন করেছেন এই কথা888sport live chatী অত্যন্ত নান্দনিক প্রজ্ঞায়। সেলিনা হোসেন এমন এক গল্পকার যাঁর গল্পপাঠে পাঠকের বোধের দরজা অর্গলমুক্ত হয়, ঢেউ তোলে চিন্তাশীল মনন-মনীষা ও চেতনায়।
‘গৈরিক বাসনা’ সেলিনা হোসেনের ১৯৬৯ সালে প্রকাশিত উৎস থেকে নিরন্তর গ্রন্থের প্রথম গল্প। এই গ্রন্থে রয়েছে মোট তেরোটি গল্প। সাবানি এবং গনুভাই প্রধান চরিত্র এই গল্পের। নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত গ্রামের নাম চরগাজল। এই গ্রাম বর্ষা মৌসুমের পুরোটা সময় পানিতে ডুবে থাকে। ফলে এ-অঞ্চলের কৃষিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের অভাব নিত্যসঙ্গী। আবহাওয়াগত দুর্যোগের কারণে বছরের বেশিরভাগ সময় তারা বেকার জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। শরীরের শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে বেকারত্ব যাপনের যন্ত্রণাবিদ্ধ দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষ – সুখী নয় কেউ। পেটের প্রয়োজনে তাদের কাজ করতে হয়, পরিশ্রমে তাদের অনীহা নেই, কিন্তু প্রকৃতির বিরূপতা কাজের পরিবেশকে করে বিঘ্নিত। ফলে অভাব-অনটন লেগেই থাকে। তারপরও অভাবী মানুষগুলি পরস্পরকে ভালোবাসা ও মায়ার বাঁধনে বেঁধে রাখে। একের প্রয়োজনে খুব কাছের আত্মার আত্মীয় যেন ওরা।
গ্রামের কঠোর পরিশ্রমী ও মানবিক অনুভূতিসম্পন্ন যুবক গনু। সাবানি তাকে গনুভাই সম্বোধন করে। অসম্ভব মাতৃভক্ত এই তাগড়া যুবক গনুভাইকে সাবানি পছন্দ করে ভীষণ। মাতৃভক্ত হলেও গনুভাই বাস্তববাদী মানুষ। মায়ের মৃত্যুর পর সেই গনুই কত অবলীলায় মাকে কবরে শুইয়ে দিয়ে আসে আর সাবানিকে বলে, ‘সব বন্ধন শেষ করে এলাম রে! আমার আর কোনো বাধা রইলো না।’
সাবানিরাও খুব দরিদ্র। সাবানি তার বাবা আর গনুভাইয়ের মধ্যে পার্থক্য খোঁজে। তার বাবা অত্যন্ত পরিশ্রম করেও যখন প্রয়োজনীয় খাবারটুকু ঠিকভাবে অর্জন করতে পারে না, তখন নিজ ভাগ্যকে দোষারোপ করে সান্ত্বনা পায়। কিন্তু গনুভাই একদম আলাদা ধাঁচের মানুষ, বলে, ‘জানিস, মানুষ এতো বেশি করাঘাত করে যে, আমার হাসি পায়। কুড়াল বেচারার দুর্গতির আর সীমা নেই।’ গনুভাইয়ের আত্মবিশ্বাস সাবানিকে মুগ্ধ করে। গনুভাইয়ের অভাব আছে ঠিক, কিন্তু এই অভাবের কারণে নিজেকে নিজের শরীরের শক্তিকে কখনো ছোট করে দেখেনি। তার বাবা যেখানে অভাবের তাড়নায় সর্বদা বিষণ্ন-উদাসীন, গণুভাই তখন বলে, দুঃখ করে কী লাভ! বাঁচো, আনন্দ করো তারপর যথাস্থানে ফিরে যাও। কথাগুলির মাঝে সাবানি স্বপ্ন খুঁজে পায়, বেঁচে থাকার যুক্তি তালাশ করে।
সাবানির নতুন ভাই হয়েছে। সাবানির বাবা তটস্থ হয়। নতুনের আগমনে অভাবের ভয় আতঙ্কে পরিণত হয়। গনু ভেবেছিল, পরিবারের সকলেই হয়তো এমনই আতঙ্কিত। কিন্তু সাবানির আনন্দ দেখে ভুল ভাঙে তার। সাবানির এই খুশি গনুকে আনন্দ দেয়, ভাবে, অভাববোধ সাবানিকে পীড়িত করেনি, মানুষের মনুষ্যত্বের মূল্যবোধ থেকে করেনি বিচ্যুত।
বর্ষাশেষে চরগাজলায় কলেরার প্রাদুর্ভাব মারাত্মক আকার ধারণ করে আর তার পরপরই অভাব এবং দুর্ভিক্ষ। সাবানির মা আর সাবানির নবজাতক ভাই মারা গেল সেই দুর্ভিক্ষে, অসহায় সাবানি তখন একেবারে নিরাপত্তাহীন, তবে দমে যায়নি সে। অভাবে কখনো লক্ষ্যহীন হলেও দায়িত্বচ্যুত হয়নি সাবানি। তবে সে অস্থির হয়ে উঠলো, যখন গনুভাইয়ের কাছে শুনলো, ‘এখানে আর থাকবো না, সাবানি। দূর দেশে চলে যাবো।’ রক্তশূন্য ফ্যাকাসে সাবানি বললো, ‘বাঁচতে তো আমিও চাই গনুভাই। আমাকেও নিয়ে চলো।’ কিন্তু গনুর উত্তর ছিল, ‘তোকে কোথায় নিয়ে যাবো বানি? আমার নিজেরই যে কিছু ঠিক নেই।’
চলে যেতে চাইলেও তো যাওয়া হয় না। দুর্ভিক্ষের এক রাতে গনুভাই সাবানিকে প্রস্তাব দেয় গ্রামের চৌধুরী আর তালুকদারবাড়ি থেকে চাল চুরি করার। সাবানি তাতে অসম্মত, চুরি করতে চায় না সে। গনুকেও সে বাধা দেয়।
গনুকে খুব ভালোভাবেই চেনে সাবানি। একবার যখন চাল চুরির কথা বলেছে, সে তা করবেই। তবু জিজ্ঞেস করে, ‘সত্যি তুমি চুরি করতে যাবে নাকি গনুভাই?’
সাবানি বরং চাল চেয়ে আনার পক্ষপাতী। গনুকে সে প্রস্তাব দেয়, ‘তার চেয়ে চলো দুজনে কিছু চাল চেয়ে আনিগে।’
সাবানির চাল চেয়ে আনার প্রস্তাবে গনু ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। চেয়ে আনাকে ভিক্ষের মতো মনে হয় তার। সে দয়া পেতে চায় না। হুংকার দেয়, দু-চোখে ঠিকরে ওঠে আগুন।
আসলে চাল চুরি এ তো নিছক চুরি নয়; গনু মনে করে, এ এক প্রতিবাদ। ভিক্ষা করবে কারা? যার শরীরে শক্তি নেই, অসুস্থ, প্রতিবন্ধী, যারা কাজ করতেই শেখেনি, তারাই ভিক্ষা করবে। কিন্তু এরকম তাগড়া শরীর নিয়ে যে খাবারের চাল চাইতে যাবে সে মানসিক দৈন্য গনুর নেই। সে দয়ার পাত্র হতে পারবে না।
যে-রাতে চৌধুরী আর তালুকদার গিন্নির কাছ থেকে চাল চেয়ে সাবানি বাড়ির দিকে ফেরে, সে-রাতেই গনু ফেরে বস্তাভর্তি চাল চুরি করে।
গনুকে দেখে সাবানি হতভম্ব হয়ে যায়। সাবানির চাল চেয়ে আনাকে গ্রহণ করতে পারে না গনুভাই। তাই সাবানির আঁচল জোর করে দেখতে চায়, ছিটকে পড়ে আঁচলের সব চাল। গনু বলে, ‘ও! দয়া কুড়াতে যাওয়া হয়েছিলো!’ সাবানি কেঁদে ওঠে।
চাল চুরি করতে গিয়ে তালুকদার বাড়ির পাহারাদারের মাথা ফাটাতে হয়েছে গনুর। সে জানে, সকালে তালুকদার পুলিশ নিয়ে ধরতে আসবে। হয়তো তাকে জেলে যেতে হবে; ভাবে, অন্তত কয়েক মাস নিশ্চিন্তে চলে যাবে। সে তার বস্তার চালগুলি সাবানিকে দিতে চায়। সেই বর্ষণমুখর রাতে সাবানির কষ্টে গনুর চোখেও অশ্রু ঝরে।
সেলিনা হোসেনের ছোটগল্পে নিম্নবর্গের মানুষের পাওয়া, না-পাওয়া, দারিদ্র্য, শোষণ, বঞ্চনা বেশ জোরালোভাবে উপস্থাপিত হয়। গল্পে নিম্নবর্গের সমাজ হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে কৃষি-সমাজ, রিকশাচালক, যৌনকর্মী, শ্রমিক, কাঠুরে, পেশাদার খুনি, আদিবাসী প্রভৃতি সমাজ। এ-ধরনের সমাজের মানুষকে তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন খুব কাছ থেকে গভীরভাবে। শৈশব-কৈশোরেই তাদের সম্পর্কে তিনি জেনেছেন, দেখেছেন নিম্নবর্গের জীবনযাপন ও সুখ-দুঃখের কড়চা। তিনি সাধারণ দুঃখী এই মানুষগুলির পক্ষে নিজের কলম অহর্নিশ সোচ্চার রেখেছেন বলেই গল্পে নিম্নবর্গের পরিশ্রমী অভিমানী মানুষগুলি এবং সমাজের দারিদ্র্য, মুক্তিযুদ্ধকালীন এবং যুদ্ধপরবর্তীকালের যন্ত্রণাদগ্ধ জীবনের অনুপুঙ্খ বর্ণনা, ধনী-দরিদ্রের জীবনযাপন ও অহংকার প্রদর্শনের প্রভেদ কাঠামোয় গড়ে ওঠা সমাজব্যবস্থা, ক্ষমতার জোরে উচ্চবর্গের সন্ত্রাস জিইয়ে রাখার সামাজিক বাস্তবতার বর্ণনা এসেছে অত্যন্ত সাবলীলভাবে।
888sport appsের মহান মুক্তিযুদ্ধ সেলিনা হোসেনের গল্পভুবনে প্রতিধ্বনি তোলে প্রতিনিয়ত। তাই তিনি বারবার ফিরে যান একাত্তরের কাছে। মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের গল্পে মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরব ও স্বপ্নের কথা উচ্চারণ করতে গিয়ে তিনি নিজে যেমন আপ্লুত হন, পাঠককেও করে তোলেন আবেগাক্রান্ত। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি গল্পেই তিনি এক ধরনের শ্লেষ তৈরি করেন, যেখানে বঞ্চনার প্রতিবাদে পাঠককেও সঙ্গে নিয়ে দ্রোহের ক্ষেত্র নির্মিত হয়। কখনো ক্ষোভে-বিক্ষোভে মুষ্টিবদ্ধ হাতে সেøাগান তোলে, কখনো হতাশায় ক্লান্ত নীল মুখাবয়বে নির্যাতিতের প্রতি নিদারুণ মায়ায় টলটলে নোনাজলে ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে পাঠকের বিক্ষুব্ধ চোখ, যেন চরিত্রের সঙ্গে নিঃশর্ত একাত্মতা। এভাবেই সেলিনা হোসেন 888sport appsের 888sport live footballধারায় নির্মাণ করেছেন নিজস্ব একটি ভুবন। 888sport live footballের সকল প্রয়োজনকে পূরণ করেই 888sport live footballিক হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতিও তিনি থেকেছেন সচেতন। ফলে শেষ পর্যন্ত তিনি শুধু 888sport live footballিক থেকেই সন্তুষ্ট নন, তিনি একজন প্রগতিশীল সংস্কৃতিকর্মী ও সুস্থ সমাজচিন্তক।
‘ঘৃণা’ সেলিনা হোসেনের সৃষ্টি নিম্নবিত্ত গ্রামবাসীকে নিয়ে এ-ধরনেরই অন্যতম প্রতিবাদী গল্প। গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে রচিত সেলিনা হোসেনের এই গল্প ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত মানুষটি গল্পগ্রন্থের পনেরোটি গল্পের মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ। ‘ঘৃণা’ গল্পের নায়ক চান গাজি। আগেই বলেছি, সেলিনা হোসেন নিম্নবিত্তদের ঘরের কথা বলেন একান্তই পরম দরদের জায়গা থেকে। তাঁর গল্পের নিম্নবিত্তরা হয় পরিশ্রমী, আত্মমর্যাদাশীল, আত্মবিশ্বাসী অধিকারসচেতন। চান গাজিও সেই ধরনের একজন পরিশ্রমী দরিদ্র মানুষ, যিনি বন্যাপীড়িত অনাহারক্লিষ্ট, অথচ রিলিফের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। রিলিফকে তাঁর মনে হয় দয়া-করুণার সামগ্রী। এই চান গাজির আরেকটি পরিচয় রয়েছে। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা।
চান গাজি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিলেও যুদ্ধের কথা এখন তাঁর 888sport sign up bonusতে ভাসে অনেকটা আবছাভাবে। মনে হয়, অন্য এক জন্মে যুদ্ধ করেছিলেন তিনি। দীর্ঘ রাত নির্ঘুম কাটলে কালো রাত হাত বাড়িয়ে তাঁকে টেনে নেয় পূর্বজন্মে। মাথার মধ্যে দ্রুতলয়ে পেরিয়ে যায় যুদ্ধের দিনগুলি। খুলনা জেলার কলারোয়া থানার বোয়ালিয়া গ্রামে বারুদের গন্ধভরা বাতাসে, গাছের নিচে শুয়ে থাকা তারাভরা আকাশ এবং সঙ্গীদের মৃদুকথা কিংবা গোঙানি কিংবা স্তব্ধ চোখের তারা সবটাই তাঁর কাছে স্বপ্ন মনে হয়। মনে হয় পূর্বের কোনো এক জন্মে ঘটেছিল এমন ঘটনাগুলি। ঘুমের ঘোরে গোঙায় গুলমত বানু। আবার পূর্বজন্মের 888sport sign up bonus মনে পড়ে চান গাজির। অনেক সহযোদ্ধাকে এভাবে গোঙাতে গোঙাতে মরে যেতে দেখেছেন। স্ত্রী গুলমত বানুকে জাগিয়ে দেন চান গাজি। জেগে গুলমত বানু বলে, ‘স্বপ্নে বিরাট সাপ আমারে তাড়া কইরা আসতাছে। আমি দৌড়াইবার পারতাছি না। মাটির লগে আমার পা আটকাইয়া গেছে।’ চান গাজি বলেন, ‘স্বপ্নটা দেখার কথা আমার। তুমি দেখো ক্যান?’ গুলমত বানু অন্ধকারে ওর বুকের ওপর হাত রাখে, যতই অভাবের যন্ত্রণা থাক মানুষটাকে সে প্রবলভাবে আগলে রাখতে চায়। বুকের ওপর হাত ঘষে বলে, ‘আপনি ক্যান দেখবেন?’
চান গাজির ইচ্ছে হয় বিষাক্ত একটা সাপ পুষবে। শরীরে বিষ ছড়িয়ে শত্রুকে খতম করবে। গুলমত বানু বলে, ‘আপনের কী হইছে? আপনে তো এমন ছিলেন না!’ অভাব নামক শত্রুই যে চান গাজিকে এমন করেছে তা আর লেখককে বলতে হয় না।
বন্যাকবলিত শরতে গ্রামের অবস্থা ভরভরন্ত। বেড়িবাঁধের ওপর টংঘরের মাচা বানিয়ে কোনোমতে মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করেছে গ্রামের সকলে। চারদিকে অন্ধকার। অথই জল, অথচ খাবার পানির তীব্র সংকট। সঙ্গে খাবার তো নেই-ই। গ্রামগুলি ডুবে গেছে, জেগে রয়েছে গাছের মাথা। পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার কবলে পড়ে গ্রামবাসীর এই দুঃসময়ে কেউ আসে না খোঁজ নিতে। জীবন ধারণ চলে কচু-ঘেচু খেয়ে।
চান গাজির স্ত্রী গুলমত বানু স্বামীকে সহযোগিতা করে চলে। ভালোবেসে খুব, শুধু স্বামী হিসেবে নয়, এই অতি পরিশ্রমী মানুষটিকে মানুষ হিসেবে সকল মানুষের পাশে থেকে সাহস জুগিয়ে চলার অদম্য এক সৈনিক হিসেবে নির্ভরতা খুঁজে পায় স্ত্রী গুলমত বানু।
বন্যার কবলে পড়ে ওরা এক ঘরে বাস করে আঠারো জন। সঙ্গে হালের বলদ দুটি, চারটি ভেড়া এবং দশ-বারোটি হাঁস-মুরগি। গুলমত বানু ভোরবেলা উঠে লাদা, চনা, বিষ্ঠা পরিষ্কার করে কিন্তু গন্ধ থেকেই যায়। চান গাজি মানুষের দুরবস্থার কথা ভাবেন। এই ভাবনায় তাঁর ঘুম আসতে চায় না। অন্যেরা ঘুমিয়ে থাকে, গন্ধ হয়তো তেমন টের পায় না, চান গাজিকে এই ভীষণ কটু গন্ধ কাবু করে ফেলে।
চান গাজি এমনিতে প্রচণ্ড আবেগপ্রবণ। যে-আবেগে, যে ভালোবাসার জোয়ারে একাত্তরে দেশকে ভালোবেসে জীবনকে তুচ্ছ করে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, ভেবেছিলেন, যুদ্ধের পরে একটি স্বাধীন সুন্দর দেশ পাবেন, দেশের সকল মানুষের অভাব দূর হবে, তিনবেলা পেটপুরে খাবেন, সকলে সম্মান নিয়ে বাঁচার অধিকার পাবে; কিন্তু যুদ্ধ শেষে তাকেই কি না অভাবের তাড়নায় একমুঠো খাবার সংগ্রহে অমানুষিক কষ্ট করতে হয়। তাই যুদ্ধের দিনগুলিকে তাঁর স্বপ্ন মনে হয়।
কখনো 888sport sign up bonusতে ভেসে আসে যুদ্ধময়দানের বীরত্বের দিনগুলির কথা। একবার যুদ্ধে আহত হয়ে প্রায় তিন মাস তাঁকে চিকিৎসার জন্য ভারতের কল্যাণীতে কাটাতে হয়েছিল। সুস্থ হয়ে যখন ফিরে এলেন ততদিনে দেশ স্বাধীন হয়েছে। পঙ্গু হলেও সন্তান, যুবতী স্ত্রীর ভালোবাসা আর সদ্য স্বাধীন দেশ পেয়ে তাঁর মনে হয়েছিল, জীবনের অপ্রাপ্তি আর বুঝি কিছুই রইলো না, সবকিছুই তাঁর পাওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু অভাবের তাড়নায় সেই সুখ আর প্রাপ্তির আনন্দ নিমিষে উধাও হতে সময় লাগেনি। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা চান গাজি কখনো হারতে চাননি। যোদ্ধা হিসেবে অন্তত খাবারের অধিকারটুকু পাওয়ার জন্য কত সংগঠনের কাছেই না গেছেন তিনি – মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। পোস্ট অফিসে গিয়ে দিনের পর দিন খোঁজ নিয়েছেন কোনোদিক থেকে কোনো সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়া যায় কি না। পোস্টমাস্টারের কাছে কোনো খবর নেই দেখে হতাশ হন, পোস্টমাস্টার সাহস দিয়ে বলেন, ‘মন খারাপ কইরো না মিয়া। যুদ্ধ করা মানুষের কি হার আছে?’
চান গাজি ভাবেন, পঙ্গু যোদ্ধা হিসেবে যে-অধিকার তাঁর পাওয়ার কথা সেটুকুও তিনি পাচ্ছে না, এটি কি তাঁর হার নয়? তিনি যদি দিনমজুর হন, তাঁকে যদি ভিক্ষা করতে হয়, যদি একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অন্যের করুণার দানে নিজের ভরণপোষণ করতে হয়, সেটি কি তাঁর হার নয়? তাঁর ক্ষোভ বাড়ে, রাগ-অভিমান-যন্ত্রণায় স্বাভাবিক থাকতে পারেন না। শত্রুকে তিনি সাপের বিষে মারতে চান। তিনি জমির ফসলের মাটি খুঁড়ে খুঁড়ে সাপের খোঁজ করেন। ক্ষুধায় দুর্বল তিনি। চোখে অন্ধকার দেখেন। দাঁড়াতে পারেন না। গুলমত বানু তাঁর হাত ধরে টানে, বলে, ‘চলেন, দৌড়ান। শুনতে পান না পাহাড়ের ঢল নামছে।’ ঘুম আসে না চান গাজির। স্ত্রী তাঁকে জিজ্ঞেস করে, ‘আমাগো জন্য রিলিফ আইবো না?’
প্রচণ্ড ক্ষুধার যন্ত্রণায় চান গাজির মনে পড়ে শিকায় ঝুলানো মাটির হাঁড়িতে সামান্য কিছু খাবার আছে। গুলমত বানু সেখানে হাত দিয়ে আবার টেনে নেয়, বলে, ‘সাপ!’ চান গাজি খুশি হয়ে বলেন, এতদিনে একটা আশা বোধহয় পুরলো। গুলমত বানু জিজ্ঞেস করে, ‘সাপ দিয়া কী করবেন?’ চান গাজি বলেন, ‘সাপ দিয়া মানুষ খাওয়ামু।’ যুদ্ধের ঠিক ষোলো বছর পর পর্যন্ত এত দিনে তিনি দিনমজুরের জীবনে পেয়েছেন শুধু ঘাম আর লবণ। গুলমত বানু ভাবে, মানুষটা কেন এমন হয়ে গেল? চান গাজির মনে পাগলামি চাপে। সারা গ্রামে রটে যায়, চান গাজি বাড়িতে একটি সাপ পোষে। ব্যাঙ ধরে ধরে সাপকে খাওয়ায়। সত্যি দিন দিন চান গাজি কি বদ্ধপাগল হয়ে গেছে। সারা গ্রামের মানুষের মনে প্রশ্ন।
মন্ত্রী গ্রামে এসেছেন। রিলিফ বিলি করার সময় কিছু মানুষ বলে, ‘স্যার, ও ঘরে ঢুকবেন না। ও ঘরে সাপ আছে একটা।’ সাপকে গুলি করে মেরে ফেলার নির্দেশ আসে। চান গাজি বুক চিতিয়ে দাঁড়ান, বলেন, ‘বহুত দিন শত্রু মারি না, অহন মারুম ঐ সাপ দিয়া।’ সাপকে মেরে ফেলা হয়। চান গাজি অসহায় আর্তনাদে গুমরে ওঠেন। মন্ত্রী তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকেন। তার কপাল জুড়ে ক্ষতের দাগ, যেন এদেশের মানচিত্র। রিলিফের চাল দিয়ে চান গাজির পরিবারে ভাত রান্না হয়। সঙ্গে শাপলা ভাজা। ছেলেমেয়েদের আজ আনন্দ-উৎসব যেন। ছেলেমেয়েরা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে; কিন্তু চান গাজি রিলিফের চালের ভাত খাননি। দারিদ্র্যের কশাঘাতে অসহায় হয়েছেন চান গাজি, কিন্তু যে হাতে দেশ স্বাধীন করার জন্য একবার অস্ত্র নিয়েছেন,
সে-হাতে রিলিফের সাহায্য নিতে তিনি পারেন না।
অপমান-আত্মসমর্পণের গ্লানি বুকের অজানা স্থানে ভার সৃষ্টি করে। তাই চান গাজি সামনের ভালো দিনের অপেক্ষায় থাকেন।
সেলিনা হোসেন তাঁর গল্পে এই নিম্নবর্গের মানুষের জীবন তুলে এনেছেন পরম মমতায় বাস্তবসম্মতভাবে। তিনি সাধারণ মানুষের জীবনযাপন দেখেছেন নিবিড়ভাবে। তাঁর গল্পে শ্রমিক, চাষি, কাঠুরে, রিকশাচালকসহ বিচিত্র পেশার মানুষ উঠে এসেছে। তাঁর 888sport app গল্পে সাবানির বাবা, গনু মিয়া কিংবা চান গাজির মতো অনেক চরিত্রের উপস্থিতি পাঠককে মর্মাহত ও ব্যথিত করে। যেমন, নূর আলী সীমান, জব্বুইরা, মকবুল পাটোয়ারি, দাদ আলী, ছফদর, আয়াত আলী, মেহের আলী, সাইবা, আক্কাস, আবদুল মান্নান, শাজাহান, মনতাজ, টাপারা, লীলা, গোপাল, খলিল, নূরুদ্দিন, শফিউল্লাহ, আলিম, আছিয়া, তৈয়ব আলী, মেরাজ, মেঘনাদ, ফুলজান। ভিন্ন ভিন্ন পেশা ও জীবনযাপনে যুক্ত থেকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তির জন্য অর্থ উপার্জন করে, কিন্তু এ-অবস্থা থেকে মুক্তি আসে না। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে তারা কঠোর পরিশ্রম করে, মুনাফা খুব বেশি আসে না। তারা দারিদ্র্যজর্জরিত জীবনে বঞ্চনা, অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার হতেই থাকে।
অসাধারণ কিছু চিত্রকল্পের মধ্য দিয়ে সেলিনা হোসেন ‘ঘৃণা’ গল্পে একদিকে দারিদ্র্যের কঠিন বাস্তবতার ছবি এঁকেছেন, আবার সেখানেই একজন আত্মমর্যাদাবান মুক্তিযোদ্ধার ভাবমূর্তিকে তিনি অভাবের তাড়নায়, ক্ষুধার যন্ত্রণায়ও ভূলুণ্ঠিত হতে দেননি। গল্পে এই দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা নিত্যক্ষুধার কষ্টে নীল যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়ে কখনো অবচেতনে মানসিক যাতনায় বিদ্ধ হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু সাহায্যের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মানিত হাতকে রিলিফের সম্পদ নিতে নিচু হতে দেননি। এখানেই গল্পকার সেলিনা হোসেনের কৃতিত্ব। এখানেই এই গল্পের বিশেষত্ব ও অনন্যতা। দীর্ঘদিন মুক্তিযোদ্ধা এই মানুষটি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছেন তাঁর সমকালকে অনেকটা অস্বীকার করেই। কারণ তাঁর সমকালের শাসকসমাজ মুক্তিযোদ্ধার সম্মানদানে নিতান্তই কার্পণ্য করেছে। যুদ্ধের সময়ে তাঁর যে স্বপ্ন ছিল তা এই সময়ে অনেকটাই অধরা। তাই তিনি কখনো বেশি বেশি সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার 888sport free bet বাড়ানোর চিন্তা করছেন, আবার বিষাক্ত সাপ দিয়ে শত্রুকে নিধনের মাধ্যমে একধরনের প্রতিশোধ নিতে চাইছেন। এসবই পরিস্থিতির প্রতি প্রতিবাদ, দ্রোহ-বিদ্রোহ। সেলিনা হোসেনের 888sport live footballে অহরহ এই ধরনের প্রতিবাদ দেখা যায়।
বিষয়বৈচিত্র্য সেলিনা হোসেনের গল্পের একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিক। গল্পে তিনি দেখিয়েছেন মানুষের মর্মান্তিক ক্ষরণ ও যন্ত্রণা; অপমৃত্যু ও অসীম বেদনা; সকল শুভ প্রয়াসের অন্তর্ধান। তবে এসবই তাঁর গল্পের শেষ পরিণতি নয়, বরং তা থেকে উত্তরণের পথ উজ্জ্বল বর্ণময় হয়ে শিখা ছড়িয়েছে, আলো বিকিরণ করেছে। তিনি শেষ পর্যন্ত জীবনের কথাই বলেন, সুন্দরভাবে সম্মানের সঙ্গে মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার আনন্দেই তিনি মুগ্ধ থাকতে পছন্দ করেন। জীবনকে ভালোবেসে জীবন থেকে পলায়নে তিনি বিশ্বস্ত নন। নিঃসীম অন্ধকারময় হতাশায়ও সেলিনা হোসেন সকলকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন জুগিয়ে যান প্রতিনিয়ত।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.