জাকির তালুকদার
সৈয়দ শামসুল হক, 888sport appsে, অনেক কিছুতেই ‘একমাত্র’।
আমাদের দেশে কেবল কবি বা লেখক পরিচয় কারো জন্যই যথেষ্ট বিবেচিত হয় না। 888sport live footballিকের নিজের কাছেও বোধহয়। তাই কেউ কবি-অধ্যাপক, কেউ লেখক-সাংবাদিক, কবি-আমলা, কবি-ব্যবসায়ী, নাট্যকার-সমাজকর্মী, লেখক-স্থপতি, লেখক-পুলিশ, লেখক-ডাক্তার। পেশা-পরিচয় সঙ্গে যোগ করার মানেই হচ্ছে লেখালেখির বাইরের এক ধরনের ক্ষমতার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা।
কিন্তু সৈয়দ শামসুল হকের সঙ্গে এরকম বাড়তি কোনো পরিচয়ের প্রয়োজন হয়নি। লেখক পরিচয়েই তাঁর সার্বভৌমত্ব। পছন্দ করতেন নিজেকে কবি বলে পরিচয় দিতে। কিন্তু বহু বছর ধরে তাঁর নামের সঙ্গে মিডিয়া বা অন্য কেউ জুড়ে দিয়েছে ‘সব্যসাচী’ শব্দটি। সেটিও কোনো পেশাবাচক পরিচয় নয়। এক্ষেত্রে সৈয়দ হকই 888sport appsে একমাত্র কবি বা লেখক। শুধু লেখক পরিচয়েই তিনি সমাদৃত হয়েছেন। এই একটি পরিচয় নিয়েই বিচরণ করেছেন পৃথিবীতে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত।
তাঁর জবানি থেকেই আমরা জানতে পেরেছি যে, কৈশোরে যখন মানুষ স্বপ্ন দেখে বড় কোনো পেশাজীবী হওয়ার, তিনি তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন কেবল লেখক হবেন। আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে, হবেন, কবি। পিতা তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখাতেন অনেক। প্রথমে চেয়েছিলেন তাঁর বাদশা (সৈয়দ হকের ডাকনাম) বিলেত গিয়ে ব্যারিস্টার হবেন। পুত্রকে শেষরাতে-রাতে ঘুম থেকে তুলে মুখস্থ করাতে লাগলেন কীভাবে কুড়িগ্রাম থেকে রংপুর হয়ে দার্জিলিং মেল ধরে যেতে হবে কলকাতা, সেখান থেকে মেলট্রেনে বোম্বে (মুম্বাই), বোম্বে থেকে জাহাজে করে সুয়েজ পেরিয়ে মার্সাই বন্দর। ‘বাবা আমাকে বিকল্পটাও মুখস্থ করাতেন – যদি আমার তাড়া থাকে তাহলে মার্সাইয়ে নেমে ট্রেনে ক্যালে বন্দর গিয়ে ফেরি জাহাজ নিয়ে ইংল্যান্ডের ডোভারে উঠব ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে, তারপর ট্রেনে করে সোজা লন্ডনের ভিক্টোরিয়া টার্মিনাস স্টেশনে, নয়তো জাহাজে থেকেই ইংল্যান্ডের সাদাম্পটন বন্দর, সেখান থেকে ট্রেন ধরে লন্ডনের ভিক্টোরিয়া স্টেশন।’
কিছুকাল পরেই পিতা সৈয়দ সিদ্দিক হোসেন তাঁর চাওয়া পরিবর্তন করে লন্ডনের বদলে পছন্দ করলেন আলিগড়। সেখানে পুত্রকে ভাতের বদলে ডাল-রুটি খেতে হবে, সেজন্য অভ্যাস করাতে শুরু করলেন সপ্তাহে দুদিন রুটি খাওয়ানোর।
কিছুদিন পরে সেটারও বদল ঘটল। পিতা এবার তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্রকে বানাতে চাইলেন ডাক্তার।
কিন্তু পুত্র তো চান লেখক হতে। তাতে পিতার ঘোর আপত্তি। কারণ – ‘বাবার ধারণা ছিল, লেখকমাত্রেরই থাকে অপরিসীম দারিদ্র্য, হয় যক্ষ্মা, পান করে দিশি মদ, যায় বার888sport promo codeদের পল্লীতে, মৃত্যু হয় অকালে।’
আমরা জানি যে, লেখক সম্পর্কে এরকম ধারণাই বরাবর পোষণ করে আসছে আমাদের লেখাপড়া জানা মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত দেশবাসী। আমরা এটাও জানি যে, উচ্চবিত্তের মানুষ কী রকম করুণার চোখে তাকান লেখকের দিকে। অথচ লেখক কখনো হননি তাদের করুণাপ্রার্থী।
সৈয়দ হকের জবানিতেই আমরা জেনেছি যে, পিতা তাঁর অবশেষে মেনে নিয়েছিলেন পুত্রের লেখক হওয়ার বাসনা। তবে সেইসঙ্গে শর্ত দিয়েছিলেন, তাঁকে ভালো, বলা চলে, সর্বোৎকৃষ্ট লেখা লিখতে তো হবেই, পাশাপাশি লেখার মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার বাদ দিতে হবে সস্তা যাবতীয় কিছু। সে-কারণেই অন্যরা যখন লিখেছেন রুলটানা কাগজে কিংবা নিউজপ্রিন্টে, সৈয়দ হক তখন বাবার আদেশে লিখতেন ক্রিমলেইড বিলাতি কাগজে। এখনকার এ-ফোর সাইজের একশ তা-র প্যাকেট হিসেবে কিনতেন 888sport appর তখনকার একমাত্র অভিজাত রয়াল স্টেশনারি সাপ্লাই থেকে। যে-কলম ব্যবহার করতেন, তা ছিল জার্মানির তৈরি রাজা ফাউন্টেন পেন।
পরবর্তীকালে অবশ্যম্ভাবীরূপে সৈয়দ হককেই পেয়েছি আমরা বাংলা888sport live footballের প্রথম লেখক হিসেবে, যিনি লিখতে শুরু করেছিলেন টাইপ রাইটারে। পোশাকে-আশাকে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি ছিলেন অভিজাত ও ব্যতিক্রমী। পাজামা-পাঞ্জাবি, যা লেখক-কবির নাম বলামাত্র ভেসে ওঠে মধ্যবিত্তের দৃষ্টিতে, তা তিনি পরতেন না বাইরে। তাঁকে সবসময় দেখা গেছে জিন্স কিংবা ডেনিমশোভিত।
ব্যয়বহুল জীবনযাপন ও দামি পোশাক তো আর আভিজাত্যের প্রমাণ নয়। লেখকের আভিজাত্য তাঁর রচনায়, তাঁর চলনে-বলনে, সব ধরনের ভিখিরিপনার ঊর্ধ্বে ওঠার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আমরা তো শত শত লেখক-কবিকে দেখেছি, এবং দেখছি, অন্যক্ষেত্রে নিজেদের আত্মসম্মান বজায় রাখলেও সম্পাদক-প্রকাশকের সামনে নিজের ব্যক্তিত্ব বিকিয়ে দিতে। বড় পত্রিকা, বড় প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কী আপ্রাণ চেষ্টা তাদের! অন্যকে দিয়ে নিজের বইয়ের প্রশংসাসূচক আলোচনা লিখিয়ে নেওয়ার জন্য কত আকুতি! তাদের আত্মপ্রচারের ঢক্কানিনাদ বিবমিষা জাগায়। স্তুতি পাওয়ার জন্য মেধাহীনদের সঙ্গে নিয়ে দলবাজি করেন তাঁরা।
সৈয়দ হক এসবের ধার ধারেননি কোনোদিন। লেখকের আভিজাত্য নিয়ে সম্মুখীন হয়েছেন রোজকার জীবনের, বড় বড়
পদ-পদবিধারীর, বিদেশি নামজাদা লেখকদেরও।
দুই
বিদেশের কথায় অপরিহার্যভাবেই এসে যায় কলকাতার কথা। বাংলা888sport live football মানেই কলকাতা। লেখক মানেই কলকাতার লেখক। পত্রিকা মানেই কলকাতার পত্রিকা। সেখানকার কাগজে লেখা ছাপা হওয়ার অর্থ জাতে ওঠা। সেখানকার কোনো লেখকের কৃপাবাক্য লাভ করা মানে চূড়ান্ত স্বীকৃতি পেয়ে যাওয়া। এদেশের একটা বিরাট অংশের কবি-888sport live footballিকের কাছে কলকাতা যাওয়া মানে তীর্থদর্শন।
সৈয়দ হক কখনো কলকাতামুখী ছিলেন না। বরং 888sport appকে 888sport live footballের রাজধানী করে তোলার জন্য যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে তিনি অন্যতম। সাতচল্লিশের দেশবিভাগের সময় প্রকাশনা 888sport live chatের সমস্ত অবকাঠামো এবং 888sport live footballপত্রিকা ছিল কলকাতায়। সে-সময় 888sport appকে তথা সৈয়দ হকদের কাজ শুরু করতে হয়েছে শূন্যহাতে। সেই কাজে নেমে পড়েছিলেন শওকত ওসমান, আহসান হাবীব, শামসুদ্দীন আবুল কালাম, ওয়াহিদুল হক, আনিসুজ্জামান, মুস্তাফা নূর-উল ইসলাম, হাসান হাফিজুর রহমান, শামসুর রাহমান, ফজলে লোহানী, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ, রশিদ চৌধুরী, কাইয়ুম চৌধুরী, হামিদুর রহমান, মুর্তজা বশীর, আলাউদ্দিন আল আজাদ, ফজল শাহাবুদ্দীন, বুলবুল চৌধুরী, গওহর জামিল প্রমুখ। কেউ 888sport live footballে, কেউ চিত্র888sport live chatে, কেউ সংস্কৃতির অন্য আঙ্গিকে। এঁরা 888sport appsের জন্য নির্মাণ করেছেন পৃথক ও অপরিহার্য ভাষা, তৈরি করতে সাহায্য করেছেন প্রকাশনার অবকাঠামো, তৈরি করেছেন 888sport appsে 888sport appsের লেখক-কবিদের পাঠক, 888sport appকে পরিণত করেছেন বিশ^888sport live footballিকদের সঙ্গে বাঙালি লেখকদের মিলনস্থলে। বাঙালির একমাত্র স্বাধীন রাষ্ট্র 888sport apps। তার রাজধানী 888sport app যে হবে বিশ^বাঙালির সকল তৎপরতার কেন্দ্রবিন্দু – এটাই তো স্বাভাবিক। ইতিহাস তাঁদের কাঁধে যে-দায়িত্ব অর্পণ করেছিল, তাঁরা তা পালন করার চেষ্টা করেছেন সর্বতোভাবে। সৈয়দ শামসুল হক তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন নয়, বরং প্রধান একজন, অনন্য একজন। তাঁর অনন্যতা এসেছে 888sport live chatসফল সৃষ্টির প্রাচুর্যের মধ্য দিয়ে।
তিন
লেখক হিসেবে কী অসাধারণ সাহসী ছিলেন তিনি! আমাদের দেশের অন্য কবি-888sport live footballিকদের সঙ্গে সৈয়দ হকের যোজন-যোজন পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছে এই অসাধারণ সাহস। আমরা দেখেছি, দেখছি, আমাদের ভাষার খুব শক্তিমান লেখকরাও নিজেদের একটি ভাষাভঙ্গি এবং আঙ্গিক পেয়ে যাওয়ার পর আর সেখান থেকে নড়তে চান না। তখন তাঁদের রচনা কি আগের লেখার পুনরাবৃত্তি বলে মনে হতে থাকে? ফ্রেমটা ঠিক রেখে, রঙের বিন্যাস অবিকল রেখে দিয়ে তারা আঁকিবুকি করে চলেন। নতুন আঙ্গিকের পথে নামতে তাঁদের ভয়। ঘর ছেড়ে বেরুলে যদি নতুন পথ খুঁজে না পান সেই ভয়। আবার নতুন পথ খুঁজে না পেলে পুরনো ঘরটিতে ঠিকঠাকমতো ফিরে আসতে পারবেন কি না সেই ভয়।
সৈয়দ হক সেই ভীতি থেকে মুক্ত ছিলেন জীবনের শেষ অক্ষরটি লেখা পর্যন্ত। নতুন-নতুন পথে চলেছেন তিনি সবসময়। একটি লেখার খ্যাতি তাঁকে সেই আবর্তে আটকে রাখতে পারেনি একদিনের জন্যও। এত নিরীক্ষাপ্রবণ লেখক বাংলা ভাষাতে আর একজনও আসেননি। নিরীক্ষার জন্য হাত পেতেছেন প্রাচীনতম বাঙালি কবিদের দিকে, পশ্চিমের দিকে। কিন্তু অন্তর্গত শক্তির মহিমায় সেই নিরীক্ষা হয়ে উঠেছে তাঁর একক নিরীক্ষা। যেখানে হাত দিয়েছেন, ফলেছে সোনা।
এটাই তো লেখকের সব চাইতে বড় আভিজাত্য।
চার
১৯৫৩ সালে পিতা সৈয়দ হককে চিঠিতে লিখেছিলেন – ‘সম্প্রতি তোমাকে লক্ষ করিয়া আমি বিস্ময়াপন্ন হইলাম। তোমাকে ঠিক চিনিয়া উঠিতে পারিলাম না। সন্দেহ হয়, আমিই তোমার জন্মদাতা কি না। বোধ করি জগৎও তোমাকে জন্ম দিয়াছে। জগতের ভাগই অধিক বলিয়া দেখিতে পাই। পিতা হিসাবে আমি নিমিত্ত মাত্র।’
কোনো পিতা যখন তাঁর সৃষ্টিমুখর পুত্রকে এভাবে অভিনন্দন জানাতে পারেন, তখন সেই লেখকের তো আর কারো কাছে নতজানু হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তিনি তখন নতজানু হন কেবল 888sport live footballের কাছে।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.