মনি হায়দার
888sport appsের ও পৃথিবীর বাংলাভাষীরা প্রতিদিন বলবে, সৈয়দ হক ছিলেন গহিন পরানের মানুষ।
বাঙালি জাতির পরানের গহিন মানুষ সৈয়দ শামসুল হক। একটি জাতির পরানের গহিন মানুষ হওয়া এতই সোজা? নিশ্চয়ই না। পথ বন্ধুর। দুর্গম তো বটেই। সেই বন্ধুর ও দুর্গম পথ হেঁটে হেঁটে কুড়িগ্রাম কিংবা জলেশ^রীর থেকে তিনি পৌঁছেছেন বাঙালির চেতনামার্গের গভীরতম সোপানে। একজন লেখকই জানেন, তাঁর যাত্রাপথ কত পিচ্ছিল, কত জটিল আর কত প্রতিপক্ষের তীক্ষè ফলার মিছিল। সেসব ভেদ করে অভেদের দুয়ারে পৌঁছানো কঠিন। অসম্ভব কঠিন। কিন্তু প্রকৃতির বরপুত্র সৈয়দ শামসুল হক নির্বিবাদে নির্মাণের কলাকৌশল রেখার শীর্ষবিন্দুতে দাঁড়িয়ে অনড়। তাঁর ভেতরে এক ধরনের জেদ ছিল – তিনি মনে মনে শপথ নিয়েছিলেন, আমি পৌঁছাবই মাস্তুলে। তিনি কেবল পৌঁছানইনি, তিনি সিংহাসনেও আরোহণ করেছিলেন।
তিনি কতভাবে যে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করছেন, প্রজ্ঞা ও মননের অভিসারে হাজার-হাজার পৃষ্ঠায় প্রমাণ রেখে গেছেন। বহুমাত্রিক লেখার কারণে তিনি ‘সব্যসাচী’ অভিধায় ভূষিত হয়েছেন। খুবই স্বাভাবিক তাঁর জন্য এই অভিধা। তিনি তো আমাদের 888sport live footballের সম্রাট। তাঁর মাথায়ই শোভিত হওয়া উচিত সব্যসাচী অভিধার সুসজ্জিত মুকুট। সময়কে অতিক্রান্ত করে যে লেখক উঠে যান মনন শীর্ষে, তাঁর অনেক দায় থাকে – সমাজ-রাষ্ট্র এবং অনুজদের প্রতি। সৈয়দ শামসুল হক জানতেন তাঁর সমাজ-রাষ্ট্র ও অনুজদের মনোবৈকল্যের জ¦র। সেই বীক্ষণের দংশন থেকে তিনি লিখেছেন মার্জিনে মন্তব্য – যে-বই হাজার বছর চলার এক মহাসড়ক।
একজন লেখক, তখনই একটি স্বাধীন দেশের সকল সত্তার প্রতীক হয়ে ওঠেন, যখন তিনি জাতির স্বপ্ন ও অভিলাষ ধারণ করেন। সৈয়দ হক বাঙালি জাতির সকল স্বপ্ন ও অভিলাষ ধারণ করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি স্বপ্ন-সত্তাকে ছড়িয়েও দিয়েছেন
হাতে-হাতে। এখানেই তিনি অন্যদের থেকে আলাদা, অনন্য এক প্রতীক।
যখন কেউ লেখার জলে আবর্তিত হতে শুরু করে, মগজের উঠোনে লেখার সবুজপত্র জেগে ওঠে, দিশেহারা হয়ে যায়। কোথায় রাখব আমি আমার অনুধ্যান? গোপন অভিসারের সঞ্চিত শস্যকণা? বিভ্রান্ত পথিক সে একজন। নতুন সেই লেখক নিজেকে দেখতে পায় হাল ছেঁড়া পালহীন নৌকায়, এক অসীম দরিয়ার মাঝে। নতুন লেখকের এই বিভ্রান্তকালে সৈয়দ শামসুল হকের মার্জিনে মন্তব্য বইটি হয়ে উঠতে পারে দিশাহীনের দিশা। না, কেবল নতুন লেখকের জন্য নয়, আমি মনে করি এই বইটি যে-কোনো বয়সের লেখকের জন্য হয়ে উঠতে পারে রক্ষাকবচ। এই বাংলায় যে যা-ই বলুক না কেন, সৈয়দ শামসুল হক লেখকদের লেখক। সেই বোধ ও আস্থার জায়গা থেকে তিনি লিখেছেন মার্জিনে মন্তব্য।
আজ থেকে কয়েক বছর আগে, প্রথম যখন বইটি প্রকাশ পায়, তখন 888sport app download apkর কিমিয়া অংশ ছিল না। কেবল গল্প নিয়ে বইটির নাম ছিল মার্জিনে মন্তব্য : গল্পের কলকব্জা। আকারও একটু ছোট ছিল। বইটি কিনে প্রায় বাইবেলের ভক্তিতে পাঠ করেছি। আর গল্পের অলিগলি খুঁজে ফিরেছি। যেখানেই গিয়েছি মার্জিনে মন্তব্য : গল্পের কলকব্জা সঙ্গে নিয়ে নিয়েছি। কী করে গল্পের কাঠামো, জমিন এবং আখ্যান নির্মোহ হয়ে উঠতে পারে, পরম ধ্যানে পাঠ নিয়েছি। কিন্তু বইটি আমি হারিয়ে ফেলি একসময়ে। অথবা কেউ নিয়ে যায়। কয়েক বছর পর বইটি আবার পাই, আরো বড় কলেবরে, 888sport app download apkর কিমিয়া যুক্ত হয়ে। আমার কাছে এখন যে-বইটি আছে, প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ, দুই হাজার পাঁচ সালে। বইটি কিনেছি দুই হাজার দশ সালে। তিনশোরও অধিক পৃষ্ঠার বইটি এখনো আমার কাছে বাইবেল, ছোটগল্প লেখার জন্য, ছোটগল্পের কলকব্জা অনুধ্যান করার জন্য, ছোটগল্পকে আত্মার সলিলে ভাসিয়ে দেওয়ার জন্য।
তিনি কঠিন কথা কত সহজেই না লিখতে পারতেন। কঠিন প্রসঙ্গকে কত সহজে ধরিয়ে দিয়েছেন নির্মল ধ্যানে। ভূমিকায় তিনি লিখেছেন – ‘একজন লেখককে বড় হতে হলে তাকে হতেই হয় তার লেখার সবচেয়ে ভালো, সবচেয়ে নির্মম, সবচেয়ে নিরপেক্ষ সমালোচক। আত্মসমালোচনার পথেই আসে উত্তরণ, হয় ভালো থেকে আরও ভালো লেখা। লেখার জন্য মহৎ বিষয় পথে পড়ে পাওয়া যায়। লেখাটি মহৎ হয়ে ওঠে, কিম্বা যোগ্যই একটি লেখা, সে কেবল আবিষ্কারের কারণে। আমি যাকে বলছি আত্মসমালোচনা, জীবনানন্দ দাশ তাকেই বলেছেন – আত্মোপকার।’
লেখাপথের চিরকালের পথিক সৈয়দ শামসুল হক, লেখার জগৎ কত নিবিড় আর নিবিষ্টভাবে অনুভব করেছেন, ওপরের কয়েকটি লাইনের উদ্ধৃতিই প্রমাণ। সৈয়দ হকের প্রমাণ করার কী আছে? বরং লেখা যায়, সৈয়দ শামসুল হক প্রমাণিত। বিচিত্র জীবনের ধারায়, দেশে ও বিদেশের বহুমাত্রিক অভিজ্ঞানে তাঁর সঞ্জিত আঁধারে, বাংলা ভাষার লেখকদের জন্য রেখে গেছেন অনবদ্য পুস্তক, মার্জিনে মন্তব্য।
আমরা যারা লেখার অলৌকিক জগতে আসি, লেখার শুরুতে আমাদের কত যে ভ্রান্তিবিলাস থাকে, তার শেষ নেই। সেই ভ্রান্তিগুলো খুঁজে পাই, লেখার পথে হাঁটতে-হাঁটতে কয়েক কিলোমিটার পার হওয়ার পর। কারণ লিখতে-লিখতে লেখার জগতে লুকিয়ে থাকা অলিগলি খুঁজে পাই। এবং নিজেদের ফেলে আসা পথের দিকে তাকিয়ে, অভিজ্ঞতার সুই-সুতোয় নতুন করে লিখতে আরম্ভ করি। নিজেদের জ্বালিয়ে নিই। লেখা, লেখার সঙ্গে থাকা – মূলত অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে দূরের থেকে দূরের পথে যাত্রা করা। এই যাত্রায় এক-একজন লেখক, কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, 888sport liveকার – যেই হই না কেন, লেখার আইলে-আইলে যেতে যেতে সবুজ ঘাসের মতো মায়াবী শব্দ, পাখির পালকের মতো বিনম্র আকুল বাক্য, জলের তিরতির ঢেউয়ের মতো অপরূপ আখ্যান পেয়ে যাই। এই অমূল্য রতন পাওয়ার জন্য একজন লেখক না-ঘুমিয়ে সারারাত জেগে থাকতে পারে। লেখার কুহক এমনই বিভ্রান্তজাল বিস্তারকারী এক আলো-ছায়ার খেলা। সৈয়দ শামসুল হক সেই খেলায় বিভ্রান্ত হয়েছেন ঠিকই কিন্তু আবার ফিরে এসেছেন নিজ জমিনে। আবিষ্কার করে নিয়েছেন নিজের সলতে জ্বালানো পথ। স্বীকার করতে দ্বিধা করেননি প্রারম্ভকালের বিভ্রম। সবাইকে ছাড়িয়ে এখানে তিনি অদ্বিতীয়। এবং তিনি তাঁর বিভ্রান্তকালের পথ থেকে আমাদের সাবধান করে দেওয়ার দায় নিয়েছেন।
মার্জিনে মন্তব্য বইয়ের সাতাশ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন –
পেছনের দিকে তাকিয়ে এখন শিউরে উঠি, লেখার কৌশল কত কম জেনে – আরো ভালো যদি বলি কিছুই না জেনে – একদা কলম হাতে নিয়েছিলাম। লেখা যেহেতু কোনো একটি ভাষায় লেখা, এবং যেহেতু সেই ভাষা আমরা শিশুকাল থেকেই, জন্ম বোবা না হলে অনবরত ব্যবহার করে থাকি, তাই আমাদের অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ে একবারও মনে হয় না যে 888sport live chatের প্রয়োজনে ভাষা নামক এই উপাদানটিকে সম্পূর্ণ নতুন করে, দৈনন্দিন ব্যবহার-পদ্ধতি ও ব্যবহার-যুক্তি থেকে একেবারে আলাদা করে দেখে নিয়ে, কলম ধরতে হয়, যেন আমরা এ থেকে শুরু করি যে, কথা যখন বলতে পারি, চিঠি যখন লিখতে পারি, তখন কাগজ কলম নিয়ে বসলে একটি গল্প বা 888sport app download apkও লিখে ফেলতে পারব।
…কিন্তু, লেখা যদি হতো ছবি আঁকা বা মূর্তি গড়া অথবা গান গাইবার মতো কোনো উদ্যম, তাহলে এতটা নিশ্চিন্তে, এতটা কম সচেতন হয়ে আমরা কলম ধরতে পারতাম না, অন্তত ছবি আঁকা, মূর্তি গড়া বা গান গাইবার জন্যে রঙ তুলি, হাতুড়ি-ছেনি বা হারমোনিয়াম নিয়ে যতটুকু পাঠ এবং রেওয়াজ এবং আরো বড় করে যতটুকু সাধ্য সাধনা করা দরকার তা করে নিয়েই কাগজে কলম ছোঁয়াতাম।
সৈয়দ শামসুল হক কত নির্মোহ চৈতন্যে নিজের শুরুর ঘটনা, আজ ও আগামীকালের লেখকদের জন্য উপলব্ধির ঐশ্বর্য থেকে নিবেদন করেছেন! লেখা! লেখা আসলে কী? করোটির কোন কোনায় লেখা ঘাপটি মেরে থাকে খুনে বিড়াল ছানার মতো? যেখান থেকে অকস্মাৎ একদিন বা বিদ্যুৎক্ষণে আচমকা নেমে আসে মনে, মন থেকে হাতে, হাত থেকে কলমের নিপ বেয়ে সাদা কাগজে? সাদা কাগজ মুহূর্তে হয়ে ওঠে নিরঞ্জনের ঘাট। লেখকের সত্তায় সেই মুহূর্তকাল কেমন করে আসে? সৈয়দ হক নিজস্ব রক্ততিলকের নৌকায় উঠে আমাদের জন্য রাখলেন সচেতনভাবে পা ফেলার, নির্ভুল লেখার অভাবিত কৌশল। ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার একচ্ছত্র অধিকার।
ছোট-ছোট উপশিরোনামে, সৈয়দ শামসুল হক মার্জিনে মন্তব্য বইয়ে রাখলেন সারাজীবনের সঞ্চিত অভিজ্ঞতার সোনালি শস্য উদার মাঠে ছড়িয়ে। আমরা, যারা লেখার জগতে হাঁটছি পা-পা করে, টলোমলো সূত্রজ্ঞানে, হাঁটব আরো অধিককাল, তাদের জন্য এই হিরে চুনি পান্নার মাঠ। লিখতে দ্বিধা নেই, এখন আমরা যারা লিখছি, আমাদের ক্রিয়াপদের ব্যবহারে, প্রয়োগে কোনো ব্যাকরণ মানি না। না-মানার প্রধান কারণ, না-জানা। মার্জিনে মন্তব্য বইয়ে তিনি দক্ষ কারিগরের বা গল্পের শিক্ষকের মতো দেখিয়েছেন ক্রিয়াপদের অবাক ও আশ্চর্য ব্যবহার। আমাদের লেখার জীবনের শুরুতে যদি এই বইটি হাতে পেতাম, নিশ্চিত করে লিখতে পারি, আমরা অনেক ভ্রান্তি থেকে মুক্তি পেতাম। দুঃখ নেই, এই সময়ে পেয়েছি, মার্জিনে মন্তব্য সেটাও কম নয়। আর তো কেউ, সৈয়দ শামসুল হক ছাড়া ভাবেননি, পরের প্রজন্মের জন্য।
এই সময়ের অনেক লেখক, হোক গল্পকার বা কবি, কোনোভাবেই ব্যাকরণ মানতে চান না। একটা দুর্বিনীত দৃষ্টিতে সবকিছু অস্বীকার করতে চান। আমাদের 888sport live football পাতার সম্পাদকরাও ব্যাকরণ সম্পর্কে অনেকটা সচেতনভাবে উদাসীন। উদাসীনতার এই হাওয়ায় মেরে কেটে তেড়ে বের হয়ে যায় লেখকেরা। কিন্তু লেখকেরা যদি একটু মন অভিনেশ দিয়ে সৈয়দ শামসুল হকের এই বইটি পাঠ করতেন, জীবনের অনেক আফসোস থেকে মুক্তি পেতেন। লিখছিলাম, ক্রিয়াপদের ব্যবহার প্রসঙ্গে।
সৈয়দ শামসুল হক গল্পে ক্রিয়াপদের বিভিন্ন কালরূপ উপশিরোনামে গল্পকারদের সামনে বন্ধ দরজা-জানালা খুলে দিয়েছেন নিজস্ব দরবারি কানাড়ায়।
তিনি লিখেছেন – ‘গল্প বলবার কৌশলের ভেতরে একটি বড় প্রশ্ন লুকিয়ে রয়েছে – ক্রিয়াপদের কোন রূপটি ব্যবহার করবো? বাংলার আগে ইংরেজির দিকে তাকানো যাক। ইংরেজি ভাষায় – এই ভাষাটির সঙ্গে মাতৃভাষার পরেই আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ পরিচয় – গল্প 888sport alternative link লিখতে গিয়ে লেখকেরা ক্রিয়াপদের যে-কালরূপটি ব্যবহার করেন, তা হচ্ছে ‘পাস্ট ইনডেফিনিড’ অর্থাৎ সাধারণ অতীত – সিলভিয়া ঘরে ঢুকল, পিটার বলল, জেনি হাত থেকে রুমালটা ছিনিয়ে নিল, ইংরেজি কথা888sport live footballে ক্রিয়াপদের এই সাধারণ অতীত কালরূপটি সেই আদিকাল থেকে প্রায় ব্যতিক্রমহীনভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
বাংলাতেও ক্রিয়াপদের এই সাধারণ অতীতকাল রূপটি গল্প বলায় বারবার ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। লক্ষ না করে পারি না, মা যখন শিশুকে রূপকথা বলেন, সে রূপকথার ক্রিয়াপদগুলো সাধারণ অতীত – রাজপুত্র আস্তে করে দরোজা খুলল, দেখল সোনার খাটে শুয়ে আছে ঘুমন্ত রাজকন্যা।’
কী নিপুণ নৈপুণ্যে সৈয়দ আমাদের সামনে তুলে ধরলেন ব্যাকরণের একটি জটিল কিন্তু সহজ পরিবেশনা। যে-পরিবেশনা পাঠের মধ্য দিয়ে একজন লেখক অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারেন সিদ্ধির সোপানে। গল্প তো করোটির ভেতরেই অধিষ্ঠান নেয়। কিন্তু সেই অধিষ্ঠিত গল্পকে সাদা কাগজে আর কম্পিউটারের পর্দায় কীভাবে লিখবে একজন গল্পকার, তার অনবদ্য ছক তৈরি করেছেন তিনি মার্জিনে মন্তব্য বইয়ের পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জুড়ে। নিজের লেখার অভিজ্ঞতা, প্রচুর পঠন ও পাঠন এবং নিবিড় চর্চা – যাত্রার ভেতর থেকে সৈয়দ শামসুল হক একের পর এক নিরীক্ষা চালিয়েছেন, বাংলা ভাষা ও 888sport live footballের গোলায়।
একটা গল্প কী করে গল্প হয়ে ওঠে? গল্পের গল্প হয়ে-ওঠার কাঠামো কেবল গল্পকারের মাথায়ই থাকে। তাঁর নিজস্ব বয়নে ও রূপায়ণে, ক্ষেত্রবিশেষে – প্রকরণের অভিনবত্বে গল্প সফল ও সার্থকতা লাভ করে। সেসব গল্পের কাঠামো, অবকাঠামো বিশ্লেষণ করে সৈয়দ শামসুল হক দেখিয়েছেন, নিরেট একটা সাধারণ বিষয়ও কীভাবে সফল বা মহৎ গল্পের মর্যাদা অর্জন করে। বাংলা 888sport live footballে আধুনিক গল্পের প্রথম মুক্তিদাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর হাতে বিচিত্র প্রভায় গল্প পেয়েছে প্রাণ। বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার গল্পের প্রতিমায় প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। মার্জিনে মন্তব্য বইয়ে সৈয়দ হক গল্পের প্রাণ প্রতিষ্ঠার তুলনা, প্রতিতুলনা করতে গিয়ে, নিরীক্ষার বৃক্ষ রোপণ করতে গিয়ে অনেকের গল্প ব্যবহার করেছেন। রবীন্দ্রনাথ তো আছেনই, আরো ব্যবহার করেছেন প্রেমেন্দ্র মিত্র, জগদীশ গুপ্ত, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প। কাঁটা কম্পাস দিয়ে সৈয়দ দেখিয়েছেন কীভাবে গল্প সৃজন হয়। কীভাবে গল্পের কলকব্জা দিয়ে একজন গল্পকার সফল ও সার্থক গল্প লেখেন। সৈয়দ শামসুল হক রবীন্দ্রনাথের ‘নিশীথে’ গল্পটি ব্যবচ্ছেদ করে দেখিয়েছেন, গল্পের বুনন কাঠমোর বিস্তার, শব্দের প্রয়োগ এবং আখ্যানের আবিষ্কার।
অতিপ্রাকৃত উপাদান নিয়ে বাংলা ভাষায় গল্প, যাকে আমরা সাধারণভাবে বলি ভূতের গল্প, ভয়ের গল্প, বহুদিন থেকেই প্রচলিত ছিল লোকমুখে, বস্তুতপক্ষে, অতিপ্রাকৃত গল্প রচনা মানুষের সাধারণ একটি সামাজিক প্রতিভা। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের আগে আমাদের আর কোনো লেখক 888sport live footballের জন্যে এই বিশেষ উপাদানটি হাতে নিয়েছেন বলে জানা নেই। রবীন্দ্রনাথ যদিও ‘নিশীথে’র বছরদুয়েক আগে লিখে ফেলেছেন ‘কঙ্কাল’, যেখানে অতিপ্রাকৃত উপাদান নিয়ে তাঁর প্রথম নাড়াচাড়া, কিন্তু ভয়ের চেয়ে স্মিত কৌতূহলই সেখানে বরং বেশি কাজ করেছে, এবং ‘কঙ্কাল’, এর পরের বছর ‘জীবিত ও মৃত’, যেখানে তাঁর অসামান্য পরীক্ষাটি, যে-বাস্তবতার ষোলো আনা ভেতরে থেকেও অতিপ্রাকৃত আবহ রচনা করা যায় কীভাবে – বলা যায় ‘নিশীথে’ই তিনি লিখলেন আমাদের 888sport live footballের প্রথম অতিপ্রাকৃত গল্পটি সত্যিকার অর্থে। এখনই আমরা জেনে রাখি না কেন, এর মাত্র ছমাসের মাথায়, ১৩০২ সনের শ্রাবণ মাসে, ভাবতে ভালো লাগে বৃষ্টিমথিত কোনো রাতে, রবীন্দ্রনাথ লিখবেন, আগামী একশ বছরের জন্য তো বটেই, তারও বেশি কিনা কে জানে, বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ অতিপ্রাকৃত গল্পটি – ‘ক্ষুধিত পাষাণ’।
সৈয়দ হক কেবল নিজে লেখেন না, পড়েছেনও প্রচুর। তাঁর কাছে লেখার কৌশল জানার জন্য গেলে তিনি প্রাণ খুলে বলতেন, পড়, পড় এবং পড়। প্রকৃতপক্ষে, একজন প্রকৃত লেখকের জন্য বিচিত্র প্রসঙ্গে পড়া ছাড়া নিস্তার নেই। ওপরের লেখা থেকে আমরা আবিষ্কার করতে পারি যে, তিনি রবীন্দ্রনাথকে কতখানি গভীর মমতা ও অভিনিবেশে পাঠ করেছেন, গ্রহণ করেছেন এবং নিজের জীবনে প্রয়োগও করেছেন। তিল তিল সঞ্চয়ে তিনি নিজেকে নির্মাণ করেছেন, গড়েছেন, উচ্চতার শিখরে নিয়েছেন। মার্জিনে মন্তব্য বইয়ের ভূমিকাসহ পৃষ্ঠা দুশো ছয়। আবার দুশো নয় থেকে তিনশো নয় পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন 888sport app download apkর কিমিয়া।
সৈয়দ শামসুল হক বহুমাত্রিক লেখক। অনেক প্রসঙ্গ ও প্রকরণ নিয়ে লিখেছেন। গল্প, 888sport app download apk, 888sport alternative link, নাটক, 888sport live, 888sport app download apk latest version, কাব্যনাটকসহ আরো কত কী! সবার ওপর যে-পরিচয় তাঁর, সেটা কবি। বাংলা 888sport app download apkকে তিনি নিয়ে গেছেন আকাশভেদী উচ্চতায়। কবি শামসুল হক যখন গল্প নিয়ে কিমিয়া বা রসায়ন লিখবেন, অনিবার্যভাবে 888sport app download apkও আসবে। আসতে বাধ্য।
আমরা জানি, 888sport app download apk এক হরণের নদী। যে-নদীর কূল নেই, কিনার নেই। কেবল বিস্তার আর বিস্তার। সেই 888sport app download apk নদী অর্কেস্ট্রার মাঝি হয়ে 888sport app download apkর নির্মাণ রেখায় পা রাখবেন না, এমনটি হতে পারে না। 888sport app download apkর জগৎ তিনি কীভাবে দেখতেন? কিংবা 888sport app download apk তার করোটিতে কেমন সুরে এসে বাসা বাঁধত, নিশ্চয়ই সেই সাধনসঙ্গীর গোপন অভিসার সম্পর্কে আমাদের প্রশ্ন আছে!
তিনি নিজেই ‘888sport app download apkর কিমিয়া’য় বর্ণনা রেখে গেছেন। লিখেছেন –
888sport app download apkর একটি কাজ আছে। 888sport app download apk আমাদের পুনরুত্থান ঘটায়, 888sport app download apk আমাদের কিছু বলে – সংকেতের চিত্রকল্পে সে আমাদের কিছু সংবাদ দেয়। পড়বার জন্যে যেমন বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয়টা চাইই চাই, 888sport app download apkর সংবাদ নেবার জন্যেও তেমন একটা পাঠ নেবার দরকার আছে নিশ্চয়ই। কিন্তু বাস্তবে দেখতে পাই, পাঠকের যেন এই একটা দাবি – পড়বার বা শোনবার সঙ্গে সঙ্গেই বুঝে ফেলবো। পাঠকের যেন কিছুই করবার দরকার নেই, কেবল শোনা বা পড়া ছাড়া। কিন্তু শুধু 888sport app download apk কেন? 888sport live chatের প্রতিটি মাধ্যমেরই সৃষ্টি নিজের ভেতরে গ্রহণ করতে হলে নিজেরও চাই প্রস্তুতি। 888sport live chatের কাছে নিজেকেও অনেকখানি এগিয়ে আসতে হয়।
ওপরের উদ্ধৃতির শেষের দুটো লাইন আবারো পাঠকদের সমীপে উপস্থাপন করতে চাই – 888sport live chatের প্রতিটি মাধ্যমেরই সৃষ্টি নিজের ভেতরে গ্রহণ করতে হলে নিজেরও চাই প্রস্তুতি। 888sport live chatের কাছে নিজেকেও অনেকখানি এগিয়ে আসতে হয়। 888sport live chatের রস আস্বাদনের জন্য, যে-কোনো মানুষের জন্য, পাঠের জন্য উপরের লাইন দুটি খুবই জরুরি। তিনি, সৈয়দ শামসুল হক, 888sport live chatে যা কিছু করেছেন, গভীর বোধ থেকে করেছেন। 888sport live chatের 888sport live chatসুষমার সঙ্গে কখনো কোনোদিন আপস করেননি। আপসহীন তিনি জলেশ^রী থেকে একা, এক কদমে, এক রিদমে যাত্রা করে-করে, হাজার-হাজার মাইল পথ পরি888sport slot game করে আবার ফিরে গেছেন, জলেশ^রীর জলে কাদায় ও মাটিতে। আর আমাদের জন্য রেখে গেছেন – রিক্ত ও তিক্ত অভিজ্ঞতায় নির্মিত মার্জিনে মন্তব্য।
আমরা, যারা একদা ছিলাম শব্দ-সারেঙ্গীবাদক, তিনি হাঁটতেন আসমানে – আমরা নিচে তাঁর ছায়ায়, আমাদের পাথেয় মার্জিনে মন্তব্য – গল্পের কলকব্জা। 888sport app download apk যে কত বিচিত্র অভিসারের ভেতর দিয়ে যাত্রা করে, যেতে যেতে কত চিত্রকল্প, উপমা আর উৎপ্রেক্ষার জন্ম দিয়ে যায়, 888sport app download apkর কিমিয়ায় সেই যাত্রা প্রামাণ্য হয়ে উঠেছে।
জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ 888sport app download apkকে সামনে রেখে এক অবাক বিশ্লেষণ করেছেন তিনি। একটা 888sport app download apkর কতই না ব্যাখ্যা হতে পারে! আর সৈয়দ হক যখন করেন, সেই বিশ্লেষণ তো পায় ভিন্ন মাত্রা। তিনি লিখেছেন – ‘আমরা জীবনানন্দের বনলতা সেনে অনেক উল্লেখ পাই, যা আমাদের অভিজ্ঞতা, পড়াশোনা এবং দেখার বাইরে। যেমন, সিংহল সমুদ্র, মালয় সাগর – এ না-হয় মানচিত্রে পেয়েছি বা কল্পনা করে নিতে পারি তাদের ভেতরে দারুচিনি দ্বীপটিকেও, কিন্তু বিম্বিসার, অশোক, বিদর্ভ, শ্রাবস্তী? ক’জনাই বা ইতিহাস উল্টে এদের সংবাদ নিয়েছি? কতটুকুই বা জেনেছি? আসলে, জানবার প্রয়োজনও পড়ে না, জানি যে না! তাও
আমাদের খিন্ন করে না এতোটুকু! আমরা বরং ওইসবের ধ্বনি ও দুর্বোধ্যতা- অস্পষ্টতা ও দূরত্ব দ্বারাই স্পৃষ্ট হই – এই স্পৃষ্টকরণই ছিলো কবির অভিপ্রেত, দূরত্বটিও তিনি বাস্তব মানচিত্রের দূরত্ব দেখিয়ে নয়, সৃষ্টি করেন ধ্বনি-সঙ্গীতে।’
বিচিত্র অনুধ্যানে, খ–খ- বিপণিতে, নির্মল বনায়নে তিনি বুনে গেছেন বৃক্ষ, বৃক্ষ আর বৃক্ষ। যে-বৃক্ষের পত্রছায়ায় দাঁড়িয়ে আমরা নেব আশ্রয়।
বিশাল পুস্তক মার্জিনে মন্তব্য গল্পের কলকব্জা : 888sport app download apkর কিমিয়া। তিনশো দশ পৃষ্ঠার বই। সামান্য লেখায় এই বিশাল আয়োজনকে ধারণ করা কঠিন। কেবল আমাদের সময়ে শ্রেষ্ঠ কলাকার, শ্রেষ্ঠ লেখকের মহাপ্রস্থানের কালে আমার সামান্য নৈবেদ্য নিবেদন করলাম। লেখাটা শেষ করার আগে সৈয়দ শামসুল হকের ঠিকানার কাছে একবার পাঠকদের নিয়ে যেতে যাই। তিনি এই বইটি উৎসর্গ করেছেন যাদের, তাদের কাছে নিয়ে যেতে চাই। তিনি উৎসর্গে লিখেছেন – 888sport app download apk-প্রদোষে সান্নিধ্য যাঁদের পেয়েছি – জসীমউদ্দীন, আবুল হোসেন, আহসান হাবীব, ফররুখ আহমদ। গদ্য সূচনায় সারথী যাঁদের পেয়েছি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, শওকত ওসমান, ফজলে লোহানী, আনিস চৌধুরী।
নিশ্চয়ই আপনারা সৈয়দ শামসুল হকের ঠিকানা পেয়েছেন!

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.