স্বর্গীয় সংগীতের আশা-জাগানিয়া উৎসব

শীলা মোমেন

বিদুষী আলারমেল ভাল্লি
সুজাতা মহাপাত্র

লাল রঙের কার্ডটা হাতে আসতেই হাতে চাঁদ পাওয়ার উপমা মনে পড়ল। কদিন ধরে পত্রিকার পাতায় বিজ্ঞাপনে যে নামগুলো দেখছিলাম তাঁরা সবাই সংগীতাকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন একটা বড় কিছু প্রাপ্তির প্রত্যাশা ভালোভাবেই জাগাতে পেরেছিল সংগীতপিপাসুদের মধ্যে।
প্রথম দিন 888sport app শহরের পথের বাধা ডিঙিয়ে আর্মি স্টেডিয়ামের বাইরে পৌঁছে সজ্জা আর জনসমাগমেই উৎসবের আমেজ পেতে শুরু করি। বড়-বড় ডিজিটাল ব্যানারে উপমহাদেশের সংগীতগুণীদের ছবি। ভেতর থেকে লেজার আলোর দ্যুতি মাঝে-মাঝে বাইরে থেকেও টের পাওয়া যাচ্ছে। তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের দল বেশ তৎপর, সবাইকে সহযোগিতা করছে। ভেতরে ঢুকে বুঝতে অসুবিধা হলো না বেঙ্গল সত্যিই একটা বড় আয়োজনেই নেমেছে। সুপরিসর মঞ্চ, উঁচু চাঁদোয়ার নিচে বিশাল প্যান্ডেল, আরামদায়ক চেয়ার। শুনলাম মঞ্চের ব্যাকস্ক্রিন চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে।
প্রথমেই বলতে হবে 888sport live chatীতালিকার কথা যাতে ভারতবর্ষের এসময়ের প্রবীণ-নবীন গুণী 888sport live chatীদের 888sport free bet চোখ বড় করে দেওয়ার মতো। সেই সঙ্গে অনাড়ম্বর কিন্তু ভাবগম্ভীর  মঞ্চসজ্জা, বসার পর্যাপ্ত পরিপাটি আসন, এমনকি ভালো মানের পরিচ্ছন্ন ও পর্যাপ্ত খাওয়ার ব্যবস্থা, নীরবে স্বেচ্ছাকর্মীদের নিজ-নিজ দায়িত্ব পালন এবং সমঝদার আগ্রহী শ্রোতার ভিড় মিলে যেন একটা উচ্চমানের ঘটনার অপেক্ষামাত্র। তারপরে চারদিনে যা ঘটল তা ছিল প্রথম দিনের প্রথম প্রহরের সেই প্রত্যাশার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
আয়োজন প্রথম শ্রেণির হলেও উৎসবের সাফল্য প্রধানত নির্ভর করেছে 888sport live chatী আর শ্রোতাদের ভূমিকায়। 888sport live chatীদের কথাই তো আলোচিত হবে বেশি, তাই আগেভাগে শ্রোতাদের কথায় চলে আসি।
একটা ধারণা ছিল, 888sport appsে উচ্চাঙ্গসংগীতের শ্রোতা নেই। এ অভিযোগ 888sport live chatী এবং আয়োজকদের কাছ থেকে প্রায়ই শোনা যায়। কিন্তু এ উৎসব সে-ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে। দশ থেকে বারো হাজার শ্রোতা কেবল উপস্থিত ছিলেন তা-ই নয়, তাঁদের বড় অংশ অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন, যথার্থ গুণগ্রাহীর মতো সাড়া দিয়েছেন, আপ্লুত হয়েছেন। নির্দ্বিধায় বলা যায়, দৈনিক উপস্থিত দশ-বারো হাজার শ্রোতার মধ্যে হাজার পাঁচেক শ্রোতা তো হবেনই যাঁরা চারদিনই উপস্থিত ছিলেন। কী জাদু আছে উচ্চাঙ্গসংগীতে যে তার টানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজীনা পর্যন্ত একাধিক দিন হাজির হয়েছেন, নিবিষ্ট শ্রোতাদর্শক হয়েছেন দীর্ঘক্ষণের জন্যে। স্ট্যাটাস, ফ্যাশন হিসেবে কিছু শ্রোতা নিশ্চয় ছিলেন, কিন্তু তাঁরা মুষ্টিমেয়, সমঝদার শ্রোতার তুলনায় সামান্য।
একটা কথা এখানে বলা দরকার। বড় ওস্তাদদের বিনয় এবং শ্রোতাদের প্রতি গভীর 888sport apk download apk latest versionর এমন আন্তরিক সুন্দর প্রকাশ ছিল যাতে যে-কোনো শ্রোতাই বাড়তি মনোযোগ ও 888sport apk download apk latest versionর সঙ্গে পরিবেশনা উপভোগে আগ্রহী হয়েছেন। আর মহান সন্তুর 888sport live chatী পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা যখন স্পষ্ট করে বললেন, সংগীতের শাস্ত্রীয় খুঁটিনাটি না জানলেও এর রস উপভোগে বাধা নেই, প্রয়োজন মনের সংযোগ সাধন তখন যেন সাধারণ শ্রোতাও সংগীতের প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। আমাদের দর্শকদের প্রশংসা সংগীত রিসার্চ অ্যাকাডেমির পরিচালক রবি মাথুরের বক্তৃতায় যেমন ছিল, তেমনি অধিকাংশ 888sport live chatীর কথাতেও প্রকাশ পেয়েছে।
এদিক থেকে বলা যায়, বেঙ্গলের আয়োজন দারুণভাবে সার্থক হয়েছে। নিয়মিত এমন আয়োজনের কথা তাঁরা যে ভাবছেন সে তো এবারের এই সাফল্যের কারণেই, আর তাতে দর্শকের ভূমিকাই প্রধান। একটু বলা দরকার বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের প্রধান আবুল খায়ের লিটুর কথা। উচ্চাঙ্গসংগীতের প্রতি গভীর টানই তাঁকে বিপুল অর্থব্যয় ও শ্রমে এবং নিশ্চিতভাবেই অনেক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ভেতর দিয়ে এ উৎসব এগিয়ে নিয়ে সম্পন্ন করার প্রেরণা দিয়েছে। আবুল খায়ের যদি হন উৎসবের প্রাণপুরুষ, তবে প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী এ বিপুল কর্মযজ্ঞের কাণ্ডারি। কোনো পেশাদার প্রতিষ্ঠান নয়, বেঙ্গলের কর্মীরাই এই বিশাল উৎসবের সমগ্র কাজ সম্পাদন করেছেন। যেসব তরুণ-তরুণী স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে শুধু এ উৎসবের কাজ করেছে তাদেরও এ কাজে মিলিয়ে নেওয়া গেছে দক্ষতার সঙ্গে। সবই চলেছে কোনোরকম ঝামেলা ছাড়া। আর আয়োজনের সামগ্রিক দক্ষতা ও মান ভালো হওয়ায় দর্শকরাও ছোটখাটো সমস্যা, ত্র“টি নিয়ে মাথা ঘামাননি। আমারও আজ কেবল প্রাপ্তির কথা বলতে আর আনন্দ ভাগ করে নিতেই ইচ্ছা করছে। সংগীতানুরাগী সকল মানুষের পক্ষ থেকে তাঁদের জন্যে করতালি দিয়ে অনুষ্ঠানের আলোচনায় চলে যাব।
এবারে চারদিনের অনুষ্ঠানসূচি এখানে তুলে দিতে চাই। তাহলে যাঁরা অনুষ্ঠানসূচি দেখেননি বা অনুষ্ঠানে হাজির হতে পারেননি তাঁরা এতক্ষণ ধরে আয়োজনের বহর ও গুরুত্ব নিয়ে যে কথাগুলো বলছি তা বুঝতে পারবেন।
কর্মসূচি :
প্রথম দিন ২৯ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরদিন রাত সাড়ে ৪টা
উৎসর্গ : সংগীতসাধক ওয়াহিদুল হক
ওস্তাদ আলী আহমেদ হোসেন : সানাই, ওমকার দাদারকার : কণ্ঠ, ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান : সরোদ, বিদুষী সুজাতা মহাপাত্র : ওড়িশি নৃত্য, ওয়াসিম আহমেদ খান : কণ্ঠ, ওস্তাদ শহীদ পারভেজ সেতার, পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকর : কণ্ঠ, পণ্ডিত তেজেন্দ্র এন মজুমদার : সরোদ, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী : কণ্ঠ।
দ্বিতীয় দিন ৩০ নভেম্বর, শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে পরদিন ভোর সাড়ে ৪টা
উৎসর্গ : ওস্তাদ বিলায়েৎ খাঁ
রাজরূপা চৌধুরী : সরোদ, দেবশ্রী ভট্টাচার্য : কণ্ঠ, যশবন্ত  বৈষ্ণব : তবলা, আদনান খান : সেতার, সন্দীপ ভট্টাচার্য : কণ্ঠ, কৌশিকী দেশিকান : কণ্ঠ, ওস্তাদ মাশকুর আলী খান : কণ্ঠ, পণ্ডিত বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত : সরোদ, ওস্তাদ রশীদ খান : কণ্ঠ, পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা : সন্তুর।
তৃতীয় দিন ১ ডিসেম্বর, শনিবার বিকেল ৫টা থেকে মধ্যরাত
উৎসর্গ : পণ্ডিত উদয়শংকর
আরশাদ আলী খান : কণ্ঠ, এবাদুল হক : সেতার, শশাঙ্ক মাক্তেদার : কণ্ঠ, আবির হোসেন : সরোদ, প্রিয়াংকা গোপ : কণ্ঠ, কুমার মারদার : কণ্ঠ, পণ্ডিত কুমার বোস : তবলা, বিদুষী শুভ্রা গুহ : কণ্ঠ, পূর্বায়ন চট্টোপাধ্যায় : সেতার, বিদুষী গিরীজা দেবী : কণ্ঠ, পণ্ডিত বিরজু মহারাজ : কত্থক।
চতুর্থ দিন ২ ডিসেম্বর, রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে মধ্যরাত
উৎসর্গ : ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ
আলিফা লায়লা : সেতার, ব্রজেশ্বর মুখোপাধ্যায় : কণ্ঠ, মুর্তজা কবির : বাঁশি, বিদুষী অরুণা সায়েরাম : কণ্ঠ, বিদুষী আলারমেল ভাল্লি : ভরতনাট্যম, পণ্ডিত রাজন ও পণ্ডিত সাজন মিশ্র : কণ্ঠ ও পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া : বাঁশি।
এই পুরো উৎসবটা উৎসর্গ করা হয়েছে উপমহাদেশের পিতৃপ্রতিম সংগীতগুরু ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর 888sport sign up bonusতে। তিনি তো আমাদেরই লোক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান। আর চারদিনের চারটি অধিবেশন উৎসর্গিত হয়েছে যথাক্রমে – সংগীতসাধক ওয়াহিদুল হক, সেতার888sport live chatী ওস্তাদ বিলায়েৎ খাঁ, নৃত্য888sport live chatী পণ্ডিত উদয়শংকর এবং সরোদ888sport live chatী ওস্তাদ আলী আকবর খাঁর 888sport sign up bonusতে। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, চট্টগ্রামের আচার্য সুরেন দাশ ও পণ্ডিত বারীন মজুমদারের নাম কোনোভাবে 888sport app download for android করা গেলে ভালো হতো। 888sport appsে উচ্চাঙ্গসংগীতের প্রবাদপ্রতিম এ দু’জন সংগীতজ্ঞের নাম ও অবদান সকলেরই জানা থাকা দরকার।
ওপরের 888sport live chatী তালিকায় চুরাশি বছরের বিদুষী গিরীজা দেবী যেমন আছেন, তেমনি আছেন একালের বিস্ময় তরুণী কৌশিকী দেশিকান। বিভিন্ন মাধ্যমের বেশ কজন কিংবদন্তি 888sport live chatীর নির্বাচন এ উৎসবের মর্যাদা বাড়িয়েছে, যেমন – বেনারস ঘরানার কণ্ঠ888sport live chatী বিদুষী গিরীজা দেবী, বেনারস ঘরানার বাঁশিবাদক পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, লক্ষ্মৌর কত্থকগুরু পণ্ডিত বিরজু মহারাজ, কাশ্মিরের সন্তুর 888sport live chatী পণ্ডিত শিব কুমার শর্মা। আবার ছিলেন এখন যারা মধ্যগগনে তেমন 888sport live chatীরাও, যেমন – কণ্ঠ888sport live chatী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী, পণ্ডিত উলহাস কুশালকর, ওস্তাদ রশীদ খান ও বিদুষী শুভ্রা গুহ এবং ভরতনাট্যম 888sport live chatী বিদুষী আলারমেল ভাল্লি, সেতারি ওস্তাদ শাহিদ পারভেজ, ওড়িশি 888sport live chatী বিদুষী সুজাতা মহাপাত্র, তবলা888sport live chatী পণ্ডিত কুমার বোস প্রমুখ। আর যেসব প্রতিশ্র“তিশীল 888sport live chatী বড় তারকা হওয়ার পথে তাঁদের মধ্যে ছিলেন কণ্ঠ888sport live chatী কৌশিকী, বিদুষী অরুণা সায়েরাম এবং 888sport appsের সেতার888sport live chatী এবাদুল হক ও ভারতের আদনান খান, সরোদ888sport live chatী আবির হোসেন প্রমুখ। 888sport appsের প্রিয়াংকা গোপের পরিবেশনাও মানসম্পন্ন হয়েছে। প্রিয়াংকা আরও মেহনত করে সংগীতের সুদূরের পথ নিশ্চয় ঠিকমতো পাড়ি দেবেন। এ-সময়ের তরুণ শিক্ষার্থী দেবশ্রী ভট্টাচার্য ও ব্রজেশ্বর মুখার্জি তাঁদের পরিশ্রমের ছাপ রেখেছেন গায়নে। তাঁদের মুখ থেকেই জানা গেল, তাঁরা নিয়মিত পড়ালেখার পাশাপাশি সংগীতচর্চা করেছেন। সংগীতের প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা থেকেই তাঁরা সংগীতকে পেশা হিসেবে নিতে পেরেছেন। প্রচণ্ড পরিশ্রম করে একটি মানে পৌঁছানোই প্রাথমিক লক্ষ্য থাকে একজন শিক্ষার্থীর। এ-সময়ে পৃষ্ঠপোষকতার প্রত্যাশা তাঁরা করেননি। তবে তাঁরা প্রচণ্ড আশাবাদী এবং ভারতে সে আশার বাস্তব ভিত্তিও আছে, একটি মানে পৌঁছানো গেলে শ্রোতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব হবে না। তবে অভিজ্ঞ সরোদ888sport live chatী ওস্তাদ শাহাদাৎ হোসেন খান সেদিন যেন তাঁর নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।
যাঁরা কিংবদন্তি 888sport live chatী তাঁদের পরিবেশনা নিয়ে বলার কিছু থাকে না। তাঁরা এতো সহজ স্বাভাবিকভাবে সংগীত পরিবেশন করেন, এতো আন্তরিকতাপূর্ণ বিনয়ের সঙ্গে দর্শক-শ্রোতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন যে, কখন মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে পুরো শ্রোতৃমণ্ডলীকে দখল করে নেন, তা বোঝাই যায় না। তাঁদের পরিবেশনা এতো সহজ-সাবলীল ও সুন্দর যে গানের টেকনিক্যাল বিষয় না জেনেও সাধারণ শ্রোতা এর রসের ছোঁয়া পান। এখানেই তাঁদের মহত্ত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব। চুয়াত্তর বছর বয়সে পণ্ডিত বিরজু মহারাজ মঞ্চে নাচবেন, নিখুঁত তেহাই দেখাবেন, অভিনয়শৈলীর গুণে মুখমণ্ডল থেকে চোখ সরানো যায় না – এ ভাবা যায়!
গুরু জানালেন ডান পা বাতের ব্যথায় কাতর, আর শিষ্যা শাশ্বতী সেন জানালেন, সকালে ব্যথায় দাঁড়াতেও পারছিলেন না, আর রাতে কিনা তিনি নাচ করছেন। বয়স ও ব্যথার দিকে খেয়াল রেখে তাঁর পরিবেশনা খানিকটা লেকচার ডেমোনস্ট্রেশনের মতো রাখলেন, শিষ্যাকে কিছু পুরো নাচের সুযোগ দিলেন। একটু হয়তো আক্ষেপ থেকে গেল তৎকার ও দ্রুত তারানা দেখার সুযোগ হলো না। তাঁর একেবারে রিল্যাক্সড ভঙ্গিতে ধেরে ধেরে, তেটে তেটে ইত্যাদি তবলার নানা রকম বোলকে বিভিন্নভাবের বাণী করে তোলার ক্ষমতা দেখার মতো ব্যাপার ছিল।
একটা বিষয় খেয়াল করার মতো, এঁরা প্রায় সকলেই শিষ্যদের বা সঙ্গতকারদের গাওয়ার বা বাজানোর যথেষ্ট সুযোগ করে দেন। আর তাতে উচ্চাঙ্গের গানবাজনার ক্ষেত্রে পরম্পরার গুরুত্ব যেমন বোঝা যায় তেমনি তবলা-সারেঙ্গি প্রভৃতির সঙ্গত যে কত উচ্চমানের হতে পারে, হওয়া প্রয়োজন, তাও বোঝা যায়।
বিদুষী গিরিজা দেবী দুই শিষ্যা নিয়ে বসে বেহাগ ধরলেন প্রথমে। চেহারায় বয়সের ছাপ থাকলেও, গানের সঙ্গে সঙ্গে তা ছাপিয়ে গেল সংগীতেরই প্রসাদগুণে। প্রসন্নতা চেহারায়, আর অন্তরের সংগীতরস যেন পুরো অবয়ব থেকে লাবণ্যের দ্যুতি ছড়াচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছিল মা যেন দুই কন্যাকে নিয়ে গাইতে বসেছেন। আর কথায় বরাবর তিনি সরস, একবার সারেঙ্গির চৌগুণের জবাব দিলেন চৌগুণ গেয়ে আর বললেন, ‘ছোট ছেলে ভেবেছে আমি বুড়া লোক চৌগুণ গাইতে পারব না।’ গিরিজা দেবীর পরিবেশনা শুনতে-শুনতে বোঝা গেল 888sport live chatী যত পরিণত হন ততোই তাঁর গায়নশৈলী পরিচ্ছন্ন নির্ভার হয়ে ওঠে। তাঁর বেহাগে অবরোহণের পহ্ম গমগ, ধগমপ গমপম গরস – সাবলীল সৌন্দর্যে মুগ্ধ করে রাখে। ঠুমরিতে অলঙ্কারগুলো গেয়ে দেখালেন এবং বুঝিয়ে বললেন এ গানের ‘যাও’ শব্দটির ব্যঞ্জনা তান-কর্তবে ফুটবে না, বরং মীড়ের প্রয়োগে অনুরোধের ভাব ফোটাতে হবে। পরে বিরজু মহারাজের সঙ্গে বসে রসিকতায় মেতে উঠলেন। মেহফিল রসে কানায় কানায় টইটম্বুর – চুরাশি আর চুয়াত্তর বছরের দুই 888sport live chatীর গায়নে-নাচনে।
উৎসব শুরু হয়েছিল ওস্তাদ আলী আহমদ হোসেনের সানাই দিয়ে। সানাই উৎসবের বাজনা। হংসধ্বনি রাগটি বাজালেন আর উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়ে গেল সঙ্গে-সঙ্গে। সত্তর বছর বয়সে সুরের ব্যাপ্তি ও গভীরতায় মুগ্ধ করে জানালেন, তিনি সত্তর সেকেন্ড  পর্যন্ত দম রাখতে পারেন, আর তাঁর গুরু সানাই-নেওয়াজ ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁ মৃত্যুর আগেও ১২০ সেকেন্ড দম রাখতে পারতেন। খাঁ সাহেব প্রয়াত হয়েছেন প্রায় নব্বই বছর বয়সে।
রশীদ খান এখন অজয় চক্রবর্তীর মতো কলকাতারই 888sport live chatী। দুজনের জন্যে দর্শকদের আগ্রহ কতটা ছিল তা বোঝা গেছে নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিপুল করতালিতে। রশীদ বড় যতœ করে গাইলেন পুরিয়াকল্যাণ। ভারি রাগ বেদনাচ্ছন্ন করে তোলে শ্রোতার মন। তাঁর ঘরানার সব সম্পদ উজাড় করে গাইলেন। অজয় চক্রবর্তী প্রথম গেয়েছেন শেষ রাতের রাগ আহির ললিত। এতই চমৎকার ছিল গায়ন যে শ্রোতাদের অনুরোধে শোনালেন আরও গান। সুঠাম ভরাট কণ্ঠে শ্রোতাদের মন জয় করলেন আচার্য জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের এই ছাত্র। বলা যায়, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের পরে বড়মাপের বাঙালি কণ্ঠ888sport live chatী অজয় চক্রবর্তী। মিশ্রভাই – রাজন-সাজন এখন প্রবীণের দলে। কিন্তু বারবার এঁরা প্রমাণ করেছেন গানের কাছে বয়স কিছুই নয়। সাধনা, রেওয়াজ কোন পর্যায়ের হলে এই সিদ্ধি অর্জিত হয় সেটাই ভাবতে হয় অবাক বিস্ময়ে।
আগ্রা ঘরানার গায়িকা বিদুষী শুভ্রা গুহ তাঁর ঘরের ধ্র“পদ ভঙ্গিমা বজায় রেখেই গাইলেন। নিষ্ঠার সঙ্গে চর্চা করে এক উচ্চমানে পৌঁছেছেন তিনি। আগ্রা ঘরানার বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখে কীভাবে নতুন শৈলী তৈরি করা যায়, বিশেষ করে 888sport promo codeদের জন্যে, সে-ব্যাপারে তাঁকে সৃজনশীল চিন্তাধারায় পরামর্শ দিয়েছেন এসআরএর প্রাক্তন পরিচালক সুগায়ক পণ্ডিত বিজয় কিচলু।
আলারমেল ভেল্লি যেন মন্দিরের গায়ে উৎকীর্ণ চিরায়ত ভাস্কর্য থেকে উঠে আসা মানবী, কিংবা অপ্সরী। ভরতনাট্যমে নানা মুদ্রা, এবং অভিনয় ও মুখে কাহিনির বর্ণনায় বিপুল দক্ষতা দেখিয়েছেন। সবটাই ছবির মতো – মনোগ্রাহী, রসগ্রাহী। আর নাচের সঙ্গে গান-বাদ্যের সঙ্গত ছিল অতি উচ্চমানের। এ সূত্রে বলতে হয়, আমাদের দেশে বেশ কিছু ভালো মানের নৃত্য888sport live chatী তৈরি হলেও মঞ্চে তাঁদের সঙ্গে সঙ্গত করার মতো গাইয়ে-বাজিয়ে তৈরি হয়নি এখনও। তাঁরা মঞ্চে নৃত্য পরিবেশন করেন টেপ বাজিয়ে। এ-ধরনের অনুষ্ঠানে উপযুক্ত সঙ্গতকারের অভাবে আমাদের নৃত্য888sport live chatীরা অংশ নিতে পারলেন না। ক্যাসেট বাজিয়ে নেচে অনুষ্ঠান করলে প্রকৃত নৃত্য-সংস্কৃতির বিকাশ হবে না।
তরুণরা তাদের শিক্ষার মান ও পরিশ্রম তথা সাধনার ছাপ রাখতে পেরেছেন। পরিবেশনায় সবসময় পেশাদারি দক্ষতা বা রাগের প্রকাশ না ঘটলেও সুরের ঘাটতি ছিল না। সংগীতের আনন্দের সন্ধান যে তাঁরাও পেতে শুরু করেছেন সেটা বেশ বোঝা যায়।
ওস্তাদ ওয়াসিম হোসেন খাঁ আগ্রা ঘরানার ১৭তম প্রজন্মের 888sport live chatী। এই সুদীর্ঘ অবিচ্ছিন্ন পরম্পরার ধারাই উচ্চাঙ্গসংগীতকে তার সফল ধ্রুপদী সম্পদসহ টিকিয়ে রেখেছে। 888sport appsে এ-সংগীতচর্চাকে এগিয়ে নিতে হলে অবিচ্ছিন্ন পরম্পরার ধারা তৈরি করতে হবে। বেঙ্গল আশা করি সেদিকটা নিয়ে ভাববে।
তরুণ গায়ক ওমকার দাদারকার ও কুমার মারদুর মুগ্ধ করেছেন তাঁদের কণ্ঠের জোরালো কিন্তু মধুর আওয়াজ দিয়ে। কিরানা ঘরানার পরিচ্ছন্ন লয়কারিন তানে, সরগমে তাঁরা স্বচ্ছন্দ। ধ্র“পদ গাইলেন পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকর। শ্রোতাদের যথাযথ সম্মান দেখিয়ে গাইতে শুরু করলেন। ধ্র“পদ শোনার অভিজ্ঞতা কম আমাদের। তাই তাঁর পরিবেশনা প্রাণভরে শুনেছেন শ্রোতারা।
রাজরূপার কথা আলাদা করে বলি। কলকাতার মেয়ে,  সেখানেই সরোদে তালিম, তবে বিবাহসূত্রে এখন সে 888sport appর। তার সরোদে গভীরতা ছিল, সুরের কারুকাজও ছিল বর্ণময়। সেতারি এবাদুল হক শ্রোতাদের  আনন্দ দিয়েছেন। দ্রুত বাজানোর সময় শেষদিকে মাঝে মাঝে হাত ছুটে গেলেও সবটা মিলে তার প্রতিশ্র“তি বোঝা যায়।
কৌশিকীর প্রসঙ্গ আরেকবার তুলি। এ বয়সেই তাঁর জয়জয়কার চলছে, কিন্তু বাবা পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী তীক্ষè নজর রেখেছেন যেন মেয়ের পা থাকে মাটিতে আর মাথা থাকে পরিষ্কার। শ্রোতাদের আসন রাখলেন সবার ওপরে, কৌশিকীর তাঁদের কাছ থেকে কেবল আশীর্বাদই কাম্য হতে পারে। কৌশিকীও বসন্ত মুখারি গাইতে গিয়ে বললেন, প্রথম গাইছেন এ রাগ এ বন্দিশ, তাই ভুল হতে পারে, হচ্ছেও। ততক্ষণে কিন্তু শ্রোতা তার প্রসন্ন সুন্দর মুখের অনবদ্য সুরেলা গায়নে মাত হয়ে গেছে।
মন্দ্র, মধ্য, তারসপ্তকে কী অনায়াস তার বিচরণ, মন্দ্রে স্া থেকে আবার র্সা ছুঁয়ে আসার দক্ষতা রীতিমতো শিহরণ জাগায়। মনে হয় মানুষ তো নয়, বৈদিক কালের গান্ধর্বী। এটুকুই  বলা সহজ, একদিন কৌশিকী  সারা ভারতের সেরা গাইয়ের আসন পাবেন। এ আশাবাদ জানিয়ে ফেললেন সংগীত রিসার্চ অ্যাকাডেমির পরিচালক রবি মাথুর। সেদিনের শ্রোতাদের এ প্রার্থনা করতে আগ্রহের কমতি হবে না সে-কথা সহজেই বলা যায়।
সঙ্গতকারদের কথা আগে একটু বলেছি, তবুও বিশেষ করে বলতে হবে তবলা888sport live chatীদের কথা। পণ্ডিত কুমার বসু, পণ্ডিত সমর সাহা ও পণ্ডিত যশবন্ত বৈষ্ণব আলাদা করে লহরা বাজিয়েছেন, কিন্তু তাঁরাসহ এ উৎসবে যাঁরা বিভিন্ন মাধ্যমের 888sport live chatীদের সঙ্গে তবলা বাজিয়েছেন তাঁদের কথা আলাদা করে বলতে হবে। মূল 888sport live chatীদের সঙ্গে চমৎকার সওয়াল-জবাবে অংশ নিয়েছেন তাঁরা। আবার মাঝে মাঝেই ফাঁকটা ভরাট করে দিয়েছেন লয়কারির জাদু দেখিয়ে। তালবাদ্য যে উচ্চাঙ্গসংগীতের প্রাণসম্পদ সেটা তাঁরা বোঝেন এবং বুঝিয়ে দিতে পারেন। 888sport appsের তরুণ সঙ্গতকারদের প্রশংসা করেছেন পণ্ডিত সমর সাহা। উপযুক্ত গুরুর কাছে বসে নিয়মিত চর্চা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
চারদিনের উৎসব তো শেষ হলো, তার রেশ রয়ে গেল আমাদের মনে। আর যে আশার বাণী বেঙ্গলের আবুল খায়ের এবং এসআরএর রবি মাথুর শুনিয়েছেন তা মনে গেঁথেছে সংগীতানুরাগী মানুষের। কাজটা কঠিন সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবে বেঙ্গলের কাজের ধারাবাহিকতা আর বড় কাজে নামার সাহসিকতা আমাদের আশাবাদী করেই রাখে। 888sport appsে তালিম দিতে অনেকবার এসেছেন এসআরএরই স্কলার বিদুষী শুভ্রা গুহ। তাঁর কথা দিয়ে আজ শেষ করি। তিনি বলেছেন, শিক্ষায় ধারাবাহিকতা আর শিক্ষার্থীর মেহনত করার সাহসিকতা থাকা জরুরি। তাহলেই এগোনো যাবে। প্রথম বিষয়টিতে আয়োজকদের ভূমিকা বড়, এক্ষেত্রে তা বেঙ্গলের, তবে শেষের বিষয়টি সবটাই শিক্ষার্থীদের ওপর নির্ভর করে। তাদের ধারাবাহিক পরিশ্রমই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে। তবে চারদিনের উৎসব যেন আমাদের সকলকে প্রত্যয়ী করে তুলেছে যে, কি বেঙ্গল, কি শিক্ষার্থী কেউই পিছু হটবে না। তাদের জন্যে সংগীতানুরাগীদের থাকবে শুভেচ্ছা, আর সহযাত্রী হওয়ার প্রতিশ্রুতি।