888sport app download for androidের আবরণে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

২৫ ডিসেম্বর বড়দিন আর ছুটির দিন হলেও অফিসে আসতে হয়েছিল কাজের চাপের জন্য। অসংখ্য ফাইলপত্রের মধ্যে ডুবে আছি। অনুজপ্রতিম পিয়াস মজিদ ফোন করে খবরটা জানালো – কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মারা গেছেন। মুহূর্তে আমার সামনের সত্মূপাকার নথিপত্র যেন চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে গেল। মন চলে গেল ১৯৭১ সালের জুন মাসের মাঝামাঝি কোনো একটি দিনে। আমার সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাতের দিন। তারপর বিগত ৪৮ বছরের অনেক 888sport sign up bonus মনের মণিকোঠায় আন্দোলিত হতে থাকল। 888sport sign up bonus সততই বেদনার। একাকী ঘরে বসে দুচোখ সজল হয়ে উঠল আমার। ‘কলকাতার যিশু’র কবি চলে গেলেন যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিনে!

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে আমার অপ্রত্যক্ষ পরিচয় ১৯৬১ সালে। আমি তখন 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের শেষ বর্ষের ছাত্র। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখে সামান্য যা কিছু আয় হয়, তাতে মধুদার ক্যান্টিনের দায় পরিশোধ করি এবং অনিয়মিতভাবে দেশ পত্রিকা ও 888sport free bet login কিনি। বাদবাকি প্রায় সব খরচই পৈতৃক। বাংলা ভাষা ও 888sport live footballের ছাত্র হিসেবে কিংবা 888sport app download apk লিখি বলে 888sport app download apk পড়া সম্পর্কে আগ্রহ একটু বেশি। বইয়ের দোকান থেকে কিনে আনলাম নতুন 888sport app download apkর বই অন্ধকার বারান্দা, কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, দেশ পত্রিকার মাধ্যমে যিনি আমার স্বল্পপরিচিত। কিন্তু বিশেষভাবে পরিচিত হলেন ওই 888sport app download apkর বইটির মাধ্যমে। অন্ধকার বারান্দার প্রকাশক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কৃত্তিবাস প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত, প্রচ্ছদপট এঁকেছেন পূর্ণেন্দুশেখর পত্রী, মূল্য আড়াই টাকা। কী কারণে জানি না অন্ধকার বারান্দা আমার মনের ভেতর আলো জ্বেলে দিলো। বইটি আমার মধ্যে এক ধরনের ঘোর তৈরি করল। আমি সিতাংশু আর অমলকান্তির মোহে বন্দি হয়ে রইলাম। 888sport app download apk পড়ে মনে হয়েছিল নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী যেন আপাদমস্তক 888sport app download apkয় জড়ানো মানুষ।

অন্ধকার বারান্দা নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর দ্বিতীয় 888sport app download apkর বই। তাঁর প্রথম 888sport app download apkর বই নীল নির্জন দ্বিতীয় বইয়ের ছ-বছর পূর্বে বেরিয়েছে। স্বভাবতই আমি সেটির খোঁজ করছিলাম। জানা গেল, সেটির কিছু কপি এসেছিল, বিক্রি হয়ে গেছে। অবশ্য কবির আরেকটি বই পাওয়া গেল – আয়ুবের সঙ্গে। এতে কবির সাংবাদিকতার পরিচয় আছে। কিন্তু আমার মন ভরল না। আমি কিছুদিনের মধ্যে নীল নির্জন সংগ্রহ করে ফেললাম। প্রাথমিক পরিচয়ের সীমানা পেরিয়ে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তখন আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ কবি। আমি সে-সময় প্রত্যাশায় থাকি তাঁর পরবর্তী 888sport app download apkর বইয়ের জন্য। অন্যদিকে দেশ বা কলকাতার পত্র-পত্রিকায় তাঁর 888sport app download apk পেলে পড়ি। কবির তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ নীরক্ত করবী প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৫ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে। এ-সময় থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতি ঘটে, যার পরিণতিতে দুদেশের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যায়। ফলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিমবঙ্গের যোগাযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

দুদেশের সম্পর্কের যোগাযোগ-বিচ্ছিন্নতা বোঝাতে কিছুটা ব্যক্তিগত বিষয়ের অবতারণা আশা করি অনাবশ্যক বিবেচিত হবে না। ১৯৬৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভের পর ১৯৬৪ সালে আমি উচ্চতর ডিগ্রির জন্য গবেষণা করতে বাংলা একাডেমির বৃত্তি লাভ করি। আমার গবেষণার বিষয় ছিল ‘সত্যপীর ও সত্যনারায়ণ’। প্রাসঙ্গিকভাবেই বাংলা 888sport live footballে হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্ক উদ্ঘাটন এর অন্যতম লক্ষ্য। আমি উৎসাহভরে এ-বিষয়ে নানাবিধ তথ্য জানতে চেয়ে ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ডক্টর সুকুমার সেন, ডক্টর আশুতোষ ভট্টাচার্য এবং ডক্টর পঞ্চানন ম-লকে চিঠি লিখি। তাঁরা সকলেই আমার চিঠির উত্তর দেন। তাঁদের চিঠিপত্র পেয়ে আমার ধারণা হয়, গবেষণার স্বার্থে আমাকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থান ও শান্তিনিকেতনে গিয়ে পুথিপত্র দেখতে হবে। কলকাতা ও শান্তিনিকেতন তখন আমার কাছে স্বর্গরাজ্য। গবেষণাকর্ম ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে আমার স্বপ্নের মানুষদের সাক্ষাৎ লাভ করতে পারব, আমি সেই কল্পনায় বিভোর। আমার গবেষণাকর্মের বিষয়টি যেহেতু 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে নিবন্ধিত, সেহেতু গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হকের পরামর্শে ভারত-888sport slot gameের জন্য 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি চাইলাম। অনুমতিপত্র ছাড়া সরকারও আমাকে বিদেশে যেতে দেবে না। কিন্তু ভাগ্য ঘোলা জলে ডোবা হলে যা হয়, তাই হলো। পাক-ভারত যুদ্ধপরবর্তী দিনগুলোতে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয় আমার আবেদন নাকচ করে দেয়। তাতে আমি ততটা মর্মাহত হইনি। মর্মাহত হয়েছি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের কোনো কোনো সদস্য সত্যপীর ও সত্যনারায়ণ নিয়ে গবেষণায় প্রবল বিরোধিতা করেন। যেন আমি খুবই একটা অনৈতিক কাজ করছি। হিন্দু-মুসলমানকে এক করে দেখাই ছিল আমার অপরাধ। শেষ পর্যন্ত আমি গবেষণাকাজটি সম্পন্ন করতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলি।

আরেকটি ঘটনা প্রসঙ্গত উল্লেখ্য। ষাটের দশকের শেষভাগে কবি জসীমউদ্দীন ব্যক্তিগত 888sport slot gameে কলকাতা যান। তিনি কলকাতার এক সুধী সমাবেশে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে তোলার পক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন। কলকাতার পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়। ফলে দেশে ফেরার পর বিপাকে পড়তে হয় কবিকে। দু-একজন তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ তুলতে অপচেষ্টা চালান। সত্যি বলতে কী, ষাটের দশকের শেষ কয়েকটি বছর ছিল দমবন্ধ করা অবস্থা। রেডিও ও টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাঙালি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার জন্য পাকিস্তান সরকার একের পর এক অপতৎপরতা শুরু করে। পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের 888sport free bet login আসাও বন্ধ হয়ে যায়। তবে এসব কর্মকা- ঘটিয়ে পাকিস্তানিরা 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করছিল, আর কিছু নয়।

১৯৭১ সালে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে পায়ে হেঁটে পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী শহর সাব্রম্নমে আসি। সেখান থেকে আগরতলা হয়ে কলকাতায়। আশ্রিত হই আমার পত্রবন্ধু অর্চনা চৌধুরীদের যোধপুর পার্কের বাড়িতে। কাছাকাছি বাড়িতে থাকতেন অন্নদাশঙ্কর রায়। কলকাতার প্রথম দিনগুলো সম্পর্কে ২৬ বছর পূর্বে প্রকশিত আমার বই বঙ্গভবনে পাঁচ বছর-এ যা লিখেছিলাম, আজ তা উদ্ধৃত করতে ইচ্ছা হচ্ছে : ‘কলকাতা গিয়ে প্রথমে দেখা করতে গিয়েছিলাম নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে। এই উঁচু লম্বা শ্যামল মানুষটির স্নেহশীলতা খুব ভালো লাগল। তাঁর 888sport app download apkর মতো তিনিও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেন আমার কাছে। ওই সময়ে আর্থিক সাহায্যের হাতও বাড়িয়েছিলেন তিনি, যা কোনোদিন ভোলার নয়। পরবর্তী সময়ে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক একান্ত পারিবারিক হয়ে দাঁড়াল। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সুবাদে আনন্দবাজারের সঙ্গে আমার একটা ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। দেশ পত্রিকায় কয়েকটা 888sport app download apk লেখার কারণে ওখানে সামান্য পরিচিতি ছিল। ধীরে ধীরে ওখানকার অনেকের সঙ্গেই একাত্ম হয়ে গেলাম। আমার বাসস্থানের সমস্যার কথা বলতে আনন্দবাজারের অন্যতম সহকারী সম্পাদক নিরঞ্জন হালদার বললেন, ‘দুদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। হয়েছিলও তাই। আমি বিনা ভাড়ায় লেক ভিউ রোডে দু’রুমের একটি বাসা পেয়ে যাই।’

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাতের বর্ণনা আরেকটি 888sport sign up bonusকথামূলক লেখা ‘আমার কলকাতা জীবন’-এ রয়েছে। 888sport sign up bonus রোমন্থন করতে গিয়ে সেটির উদ্ধৃতির লোভ সংবরণ করত পারছি না : ‘কলকাতা যেমন আমার স্বপ্নের শহর, তেমনি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন আমার স্বপ্নলোকের কবি। তাঁর ‘অন্ধকার বারান্দা’, ‘নীরক্ত করবী’ এবং আরো একটি কি দুটি কাব্যগ্রন্থ আমার সংগ্রহেই ছিল। প্রথম দর্শনেই ভালো লেগে গেল তাঁকে। আমার কল্পনায় যেমনটি আঁকা ছিল, ঠিক তেমনটি যেন তিনি। সাদা ধুতি-পাঞ্জাবিতে কিঞ্চিৎ কৃষ্ণকায় ও কৃশকায়, শ্যামলা উঁচু লম্বা মানুষটিকে নিরেট কবি বলেই মনে হয়। আমি তাঁকে যখন বললাম, ‘আপনি আমার অত্যন্ত আপনজন’, শুনে তিনি আমার হাত চেপে ধরলেন। বললেন, ‘তাড়া আছে নাকি তোমার?’ আমার তাড়া নেই জেনে কয়েক মিনিট বসতে বলে হাতের কাজ শেষ করে নিলেন। তারপর আনন্দবাজার ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন আমাকে সমেত। লম্বা লম্বা পা ফেলে ফুটপাত ধরে এগিয়ে চললেন। আমি তাঁকে অনুসরণ করে অগ্রসর হলাম। ফুটপাতের পাশেরই একটা ছোট দোকানে ঢুকে গেলেন তিনি। সেটা যে রেস্তোরাঁ, আমি বাইরে থেকে বুঝতে পারিনি। দুজনের জন্য দোসার অর্ডার দিয়ে বললেন, ‘এসব সাউথের খাবার তুমি আগে কখনো খাওনি। খেয়ে দেখতে পার।’

দোসা জাতীয় খাবার আমার কাছে যে খুব ভালো লাগল, তা নয়। তবে এক ধরনের ভিন্ন স্বাদ বলেই আমি তা উপভোগ করলাম। দোকান থেকে বেরিয়ে তিনি আমাকে নিয়ে ট্যাক্সিতে

উঠে বসলেন। কোথায় যে নিয়ে গেলেন আমাকে, তা 888sport app download for android করতে পারছি না। তবে ওখানে গিয়ে বুঝতে পারলাম, ওটা তাঁদের আড্ডার স্থান। অন্য যাঁদের আসার কথা ছিল, তাঁরা বোধহয় আসেননি। শুধু দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন। তাঁরও লেখা আগেই পড়েছি। সুতরাং আলাপ জমিয়ে তুলতে অসুবিধা হলো না। সন্ধ্যার পর নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ট্রামে তুলে দিলেন আমাকে। আমার গন্তব্যস্থলের দিকনির্দেশনা দিয়ে বিদায়ের আগে বললেন, ‘টাকা-পয়সা লাগলে আমাকে জানাবে।’

১৯৭১ সালের অনিশ্চিত দিনগুলোতে প্রথমে আমি একাই দেশান্তরি হয়েছিলাম। দুমাস পরে আমার স্ত্রী রুবি দুই শিশুকন্যা স্বাতী ও গীতিকে নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন। যোধপুর পার্ক ছেড়ে আমি সপরিবারে লেকভিউ রোডের বাড়িতে চলে আসায় জীবনযাপন আরো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ওই দুর্যোগ-সময়ে আমাকে নিয়ে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর উদ্বেগ কম ছিল না। সাক্ষাতের দ্বিতীয় দিনে তিনি আমাকে একরকম জোর করেই কিছু টাকা দিয়েছিলেন। আমি তাকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক চারটি 888sport app download apk দিয়েছিলাম। তিনি সেগুলো ছাপার ব্যবস্থা করে দেবেন বললেন। ছাপাটা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে কিছু অর্থের সংস্থান করা। আমি এ-ব্যাপারে তাঁকে কোনো অনুরোধ জানাইনি। তিনি নিজেই এরকম উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এখানেই শেষ নয়। লেখক দিব্যেন্দু পালিত এসেছিলেন তাঁর অফিসে। তিনি সম্ভবত কোনো বিজ্ঞাপনী সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁকে বললেন, ‘তোমাদের ওখানে মাহবুবের একটা চাকরি করে দাও না কেন? ও তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিল।’ দিব্যেন্দু পালিত জানালেন, তাদের বিজ্ঞাপনী সংস্থায় ভ্যাকেন্সি নেই। তাছাড়া কী কাজ করবেন তিনি? এ-ধরনের জবাব শুনেও আশাহত হতে চাইলেন না কবি। বললেন, ‘তোমাদের এত নামকরা সংস্থা, ভ্যাকেন্সি না থাকলে কি চাকরি দেওয়া যায় না? ভ্যাকেন্সি তৈরি করে নিলেই হলো। ওদের দেশের এখন যা অবস্থা! তাতে কবে ওরা দেশে ফিরতে পারবে কে জানে?’

একাত্তর সালে কলকাতার প্রারম্ভিক দিনগুলোতে আমার তেমন কিছু করণীয় ছিল না। পরে আমি স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে অনিয়মিতভাবে কথিকা পড়তে শুরু করি এবং পরবর্তীকালে মুজিবনগর সরকার-প্রকাশিত পত্রিকা জয়বাংলায় সহকারী সম্পাদকের পদে যোগ দিই। ওই সময় আমার বেতন ছিল চারশো ভারতীয় রুপি। তখনকার দিনে এ-বেতন কম ছিল না, কারণ মুজিবনগর সরকারের সচিবদেরই সর্বোচ্চ বেতন ছিল পাঁচশো ভারতীয় রুপি। আর্থিক সংকট কেটে যাওয়ায় আমার ব্যক্তিগত টেনশন কমে যায়। অন্যদিকে বালুহাক্কাক লেনে অবস্থিত জয়বাংলা পত্রিকায় কাজকর্মও তেমন বেশি ছিল না। ফলে আমি মাঝেমাঝেই আনন্দবাজার পত্রিকার অফিসে চলে যেতাম। ওখানে যাওয়া মানে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ঘরে যাওয়া।

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সুবাদেই আনন্দবাজারের 888sport app কবি-888sport live footballিকের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তিনি প্রথমে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন সমেত্মাষকুমার ঘোষের সঙ্গে। তিনি আনন্দবাজারের সংযুক্ত সম্পাদক ছিলেন। সেদিনই দেশ পত্রিকায় আমার 888sport app download apk ‘যুদ্ধক্ষেত্রে ঘর’ প্রকাশিত হয়েছে। সমেত্মাষকুমার ঘোষ আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং সেখানে উপস্থিত দুজন সহকর্মীকে বলেন, ‘ওর 888sport app download apkটি তোমরা পড়ে দেখো, জয়বাংলার 888sport app download apk কাকে বলে!’ তাঁর সম্মুখ-প্রশংসায় আমি লজ্জায় পড়ে যাই। একই দিনে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী আমাকে নিয়ে গৌরকিশোর ঘোষ ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। দেশ পত্রিকায় গৌরকিশোর ঘোষের রম্যরচনা পড়ে আমি রীতিমতো মুগ্ধ। অন্যদিকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের গদ্য ও পদ্য উভয়েরই আমি ভক্ত পাঠক। পরিচয়ের প্রথম দিন থেকে গৌরকিশোর ঘোষের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি পরে একদিন তাঁর এক ডাক্তার বন্ধুকে নিয়ে আমার লেকভিউ রোডের বাসায় এসেছিলেন এবং সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ছিলেন। আমিও একদা দুপুরে গৌরকিশোর ঘোষের বাড়িতে আমন্ত্রিত হয়ে সারা দুপুর ছিলাম। সেখানে প্রথম পরিচয় হয়েছিল শিবনারায়ণ রায় ও দেবদাস পাঠকের সঙ্গে। শিবনারায়ণ রায় তাঁর কাব্যগ্রন্থ কথারা তোমার মন সেদিন উপহার দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে পরে আমার ঘনিষ্ঠতা হয় এবং তিনি অস্ট্রেলিয়া থাকাকালে আমাদের পত্র-বিনিময় ঘটে। অন্যদিকে আনন্দবাজারে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রথম দিনে তিনি আমার লেখার বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। আমি যোধপুর পার্কে থাকি শুনে তাঁর বাসায় যেতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমার ছোট নোটবইয়ে তাঁর ঠিকানা লিখতে লিখতে জানালেন, তাঁর বাসা ৩৭/২ গড়িয়াহাট রোড, আমার বাসস্থানের কাছেই। আমি এক সকালে সেখানে হাজির হয়েছিলাম। এছাড়া, পরবর্তী সময়ে নীরেনদা আমাকে নরেন্দ্রনাথ মিত্র ও রমাপদ চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁরা উভয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় কাজ করতেন। রমাপদ চৌধুরী তাঁর সদ্য প্রকাশিত 888sport alternative link এখনই আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। এখনই ছায়াছবিটি তখন কলকাতার সিনেমা হলগুলোতে চলছিল।

১৯৭১ সালের জুন মাসের শেষে বা জুলাই মাসের প্রারম্ভে সপ্তাহে একদিন বা দুদিন আনন্দবাজারে যাওয়া এক ধরনের নেশা ছিল। একদিন সেখানে যেতে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বললেন, ‘আজ তোমাকে একটি জায়গায় নিয়ে যাব।’ কোথায় যাব, সেটা আমার মনে কৌতূহল সৃষ্টি করলেও আমি কোনো কিছু জিজ্ঞেস না করে কৌতূহল লালন করতে থাকলাম। তিনি হাতের কাজ গুছিয়ে নেওয়ার পর পত্রিকা অফিস থেকে বেরিয়ে পড়লাম আমরা। হেঁটে একটা রেস্তোরাঁয় এলাম। সেখানে চায়ের সঙ্গে টা খেয়ে আবার হেঁটে মেট্রো সিনেমা হলের সামনে গেলাম। কবি শঙ্খ ঘোষ অপেক্ষা করছিলেন। তারপর তিনজনে আবু সয়ীদ আইয়ুবের বাসায় এলাম। আবু সয়ীদ আইয়ুবের সঙ্গে আগে আমার আর সাক্ষাৎ হয়নি। তাঁর অসাধারণ পা–ত্যের কথা আগেই জানতাম। শুধু জানা নয়, আইয়ুবের আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ আমার সংগ্রহে ছিল। পরবর্তীকালে লেখা পান্থজনের সখা, পথের শেষ কোথায় অত্যন্ত পাঠকনন্দিত গ্রন্থ। সেদিন অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় শুয়ে ছিলেন আবু সয়ীদ আইয়ুব। আমাদের দেখে বিছানায় আধশোয়া হয়ে উঠে বসলেন। প্রায় দু-ঘণ্টা ছিলাম সেখানে। কীভাবে সময়টা কেটে গেল, তা এক আশ্চর্য ব্যাপার! আবু সয়ীদ আইয়ুব একাধারে বুদ্ধিজীবী ও দার্শনিক। সেদিন তাঁর আলোচনার বিষয় ছিল রবীন্দ্রনাথের ডাকঘরের অমলের মৃত্যু। তাঁর আলোচনা ও সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিশ্লেষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলাম আমরা। শঙ্খ ঘোষ মাঝে মাঝে কিছু প্রশ্ন করছিলেন। আমি মুখ খুললাম না নিজের বিদ্যাবুদ্ধি জাহির হয়ে যাওয়ার ভয়ে। ‘সাইলেন্স ইজ গোল্ডেন’ – এ-আপ্তবাক্যটির মর্ম নিজের অনভূতিতে উপলব্ধি করলাম।

আবু সয়ীদ আইয়ুবের বাসায় যাওয়ার পরদিন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁর বাড়ি যেতে আমন্ত্রণ জানান। তাঁর বাড়ি বাঙ্গুর এভিনিউ বি বস্নকের ১২২ নম্বর হোল্ডিংয়ের ঠিকানা ও লোকেশন মোটামুটি বুঝিয়ে ও মুখস্থ করিয়ে দিলেন। অতটার অবশ্য দরকার ছিল না। কারণ আমার কলকাতা শহর চেনার গাইড তখন অর্চনা চৌধুরীর ছোট বোন 888sport sign up bonus চৌধুরী। 888sport sign up bonusকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হয়ে গেলাম সকালেই। বাঙ্গুর এভিনিউ এলাকাটি দমদমের দিকে। এককালে বিসত্মৃত পতিত জমি ছিল মনে হয়। সেখানে বিশাল আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে তখন। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বাড়ি করেছেন সেখানে। কাছাকাছি বাড়ি করেছেন কথা888sport live chatী সুবোধ ঘোষ ও চিত্রকর পূর্ণেন্দু পত্রী। সুবোধ ঘোষ আমার প্রিয় লেখক আর পূর্ণেন্দু পত্রী প্রিয় 888sport live chatী। সুবোধ ঘোষের সঙ্গে একবারই পরিচয় ও সাক্ষাৎ ঘটেছে। পূর্ণেন্দু পত্রীর সঙ্গে আনন্দবাজারে আলোচনা হয়েছে কয়েকবার। পরবর্তী সময়ে কবি হিসেবে অত্যন্ত খ্যাতি অর্জন করেন পূর্ণেন্দু পত্রী। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য live chat 888sportও নির্মাণ করেছিলেন তিনি।

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সান্নিধ্যের অনেকগুলো দিনই আমার 888sport sign up bonusতে অমস্নান। সবচেয়ে উজ্জ্বল সম্ভবত অরুণকুমার সরকারের ৪৫/এ রাসবিহারী এভিনিউয়ের বাড়িতে এক দীর্ঘ দুপুরের 888sport sign up bonus। তাঁরা উভয়ে পরস্পর আত্মীয় ছিলেন। অরুণদার ছেলের সঙ্গে নীরেনদার মেয়ে শিউলির বিয়ে হয়। তবে ব্যবহারিক আত্মীয়তা থেকে তাঁদের প্রাণের আত্মীয়তাই বেশি ছিল। কবি নরেশ গুহও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। অরুণকুমার সরকারের দূরের আকাশ, নরেশ গুহের দুরন্ত দুপুর ও নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর নীলনির্জন পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের প্রথমভাগের সাড়া জাগানো তিনটি কাব্যগ্রন্থ। তাঁদের তিনজনের একত্র সান্নিধ্য আমার জীবনে এক অসাধারণ 888sport sign up bonusময় দিন। অবশ্যই এই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্য। তিনিই অরুণকুমার সরকারের আমন্ত্রণবার্তা পৌঁছে দিয়েছিলেন কিংবা নিজেই আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। নরেশ গুহের সঙ্গে আবার আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল, কিন্তু অরুণকুমার সরকারের সঙ্গে আর কখনো দেখা হয়নি। তিনি অন্য দুজনের চেয়ে কিছুটা বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও নরেশ গুহ উভয়েরই জন্মসাল ছিল ১৯২৪। তাঁদের তিনজনকে একত্রে পাওয়া আমার পরম সৌভাগ্য।

আমার স্ত্রী রুবি দুই শিশুকন্যাসহ কলকাতা চলে আসেন ১৯৭১ সালের শেষভাগে। ওদের আগমনের খবর জানতে পেরে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সবাইকে নিয়ে তাঁর বাসায় যেতে বলেন। আমি কিছুদিন অসুস্থ অবস্থায় নীলরতন হাসপাতালে থাকায় সপরিবারে তাঁর বাড়ি যাওয়া হয়ে ওঠেনি। সেই বহুপ্রতীক্ষিত দিনটি ঠিক হয় ২৬ ডিসেম্বর। আমাদের পরিবারের জন্য সেটি এক 888sport app download for androidীয় দিন। সকাল  থেকে বিকেল পর্যন্ত আমরা ছিলাম সেখানে। দুপুরে বউদির হাতের রান্নায় ভূরিভোজ হলো। কবির সঙ্গে গল্প করে কাটল দীর্ঘ সময়। আসার সময় তিনি দুটো 888sport app download apkর বই উপহার দিলেন আমাদের। একটি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ 888sport app download apk এবং অন্যটি উলঙ্গ রাজা। শ্রেষ্ঠ 888sport app download apk বছরখানেক পূর্বে প্রকাশিত হয়েছিল আর উলঙ্গ রাজার প্রকাশ মাত্র কয়েক মাস আগে। বই-দুটোতে কবি লিখেছেন : ‘রুবি ও মাহবুবের জন্য – নীরেনদা।’ বই হাতে পেয়ে রুবি বেজায় খুশি। তার আনন্দের প্রধান কারণ কবি তার নাম আমার নামের আগে লিখেছেন। বিগত ৪৫ বছরে নীরেনদা বেশ কয়েকটি 888sport app download apkর বই আমাদের উপহার দিয়েছেন। প্রতিটি উপহারপত্রে রুবির নাম প্রথমে লেখা। তাঁর কথা উঠলে রুবি বলে, ‘এতবড় কবি আমাকে যে স্নেহ ও সম্মান দিয়েছেন, তা কখনো ভোলার নয়। আমার আববার পরে আমি তাঁকে সবচেয়ে বেশি 888sport apk download apk latest version করি।’ পরিপূর্ণ মানবিক গুণাবলিসমৃদ্ধ পরম স্নেহশীল কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সম্পর্কে এটাই আমাদের আন্তরিক অনুভূতির প্রকাশ।

888sport appsের স্বাধীনতার পরে নীরেনদা এদেশে এসেছিলেন। প্রথমবার এসেছিলেন ১৯৭২ সালে স্বাধীন দেশের প্রথম 888sport cricket BPL rateে ফেব্রম্নয়ারি উদ্‌যাপন উপলক্ষে। সেবার সরকারি আমন্ত্রণে 888sport appsে এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের অনেক নামিদামি কবি-888sport live footballিক ও 888sport live chatী। এঁদের মধ্যে ছিলেন সত্যজিৎ রায়, সুচিত্রা মিত্র, শ্যামল মিত্র, সমেত্মাষকুমার ঘোষ, মনোজ বসু, প্রবোধকুমার সান্যাল, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। আমি তখন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির স্পেশাল অফিসার। 888sport cricket BPL rateে ফেব্রম্নয়ারি সকালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে শহিদ মিনারে গেলাম আর সেখান থেকে বাংলা একাডেমিতে। পরে একাডেমির অনুষ্ঠানষে রাষ্ট্রপতিকে বঙ্গভবনে রেখে পূর্বাণী হোটেলে এলাম। সেদিন দুপুরবেলা সমেত্মাষকুমার ঘোষ, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ পুরনো 888sport appয় গিয়ে এই প্রিয় শহরকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম। এম আর আখতার মুকুলের মতো 888sport app-অভিজ্ঞ মজাদার মানুষ সেদিন ছিলেন আমাদের গাইড। সে আরেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা। পরদিন আমাদের সঙ্গে ছিলেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি চু চিন চৌ রেস্তোরাঁয় মধ্যাহ্নভোজে সবাইকে আপ্যায়ন করেন।

সেই রাতে রাষ্ট্রপতি ভবন বা বঙ্গভবনে আমার বাসায় নৈশভোজের আয়োজন ছিল। আসলে নৈশভোজ উপলক্ষ মাত্র। লক্ষ্য ছিল সবাই মিলে গল্প করা। সবাই বলতে সমেত্মাষকুমার ঘোষ, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং আমাদের এখান থেকে শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদ। আরো দু-চারজনকে বলার ইচ্ছা ছিল আমার। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বললেন, ‘লোক বেশি হলে খাওয়া হবে, আড্ডা হবে না।’ তাঁর কথা শিরোধার্য করে অতিথির 888sport free bet বাড়াইনি। সেবার মধ্যরাত পর্যন্ত চলছিল আমাদের তুখোড় আড্ডা। আল মাহমুদ মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় ছিলেন। তাঁর সঙ্গে অন্য লেখকদের যোগাযোগ হয়েছিল। শামসুর রাহমানের সঙ্গে কলকাতার কবি-888sport live footballিকদের মেলামেশার সুযোগ তত হয়নি। পানাহারের পাশাপাশি গল্প ও আবৃত্তি সমানতালে চলল। আবৃত্তি নিজের এবং পরের 888sport app download apkর। একসময়ে মনে হলো আবৃত্তিতেও মেজাজ জমছে না। শেষে শুরু হলো গান। গানের জন্য শ্যামল মিত্রকে আগে বলে রেখেছিলাম। তাঁকে পাওয়া গেল না। কিন্তু শ্যামল মিত্র না এলে যে গান হবে না, তা হতে পারে না। অবশেষে সমেত্মাষকুমার ঘোষের গলায় গান চড়ল। সেই রাতের জমজমাট আড্ডার 888sport sign up bonus আজো মনের ভেতরে জ্বলজ্বল করছে।

বিগত ৪৭ বছরে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা হয়েছে কয়েকবার। আমি কলকাতায় গেলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া ছিল অনিবার্য। মুক্তিযুদ্ধের পর আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত হই। সরকারি কাজে কখনো দিলিস্ন গেলে কলকাতায় যাত্রাবিরতি করতাম এবং মুক্তিযুদ্ধকালে যাঁরা আমাকে ও আমার পরিবারকে আশ্রয় ও সহযোগিতা দিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। সাক্ষাতের তালিকায় নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর নাম ছিল সর্বশীর্ষে। তাঁর সঙ্গে কলকাতায় দেখা হয় ৪ ফেব্রম্নয়ারি ২০১০ সালে। সপরিবারে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলাম সেবার।
তিনি তাঁর সদ্যপ্রকাশিত বই হাসলে ভালোবাসলে উপহার দিয়েছিলেন। বইটিতে লিখেছিলেন, ‘রুবি ও মাহবুবকে – নীরেনদা, ১৯৭০-১৯৭১ সালের দিনগুলোকে 888sport app download for android করে।’

নীরেনদার সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল 888sport appয়। ২০১৪ সালে মাসিক কালি ও কলমের আমন্ত্রণে 888sport appয় এসেছিলেন তিনি। ৪ এপ্রিলের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে 888sport app download bd বিতরণ করেছিলেন। অনুষ্ঠানের পরদিন অর্থাৎ ৫ এপ্রিল এসেছিলেন আমার ইস্কাটনের বাসস্থানে। সঙ্গে ছিলেন এমেরিটাস অধ্যাপক (বর্তমানে জাতীয় অধ্যাপক) আনিসুজ্জামান ও কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দীর্ঘ সময় তাঁরা ছিলেন। মূলত নীরেনদা আর আনিস স্যার বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা বলছিলেন। হাসনাত ও আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিলাম। আমার জীবনে সেটা ছিল এক অবি888sport app download for androidীয় বিকেল।

আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলে এই আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। প্রতি বছর ১৯ অক্টোবর কবির জন্মদিন ছাড়াও আমি মাঝে মাঝে ফোন করে তাঁর ও তাঁর পরিবারের খোঁজখবর করতাম। একবার বললেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটিতে নীরেনদার শ্বশুরের কথা উল্লেখ করেছেন। আমি শুনে কিছুটা বিস্মিত হই। পরে অসমাপ্ত আত্মজীবনী খুলে দেখলাম সেখানে লেখা – ‘১৯৪১ সালে আমি ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেব। পরীক্ষায় পাশ আমি নিশ্চয়ই করব, সন্দেহ ছিল না। রসরঞ্জন বাবু ইংরেজির শিক্ষক, আমাকে ইংরেজি পড়াতেন। আর মনোরঞ্জন বাবু অঙ্কের শিক্ষক, আমাকে অঙ্ক করাতেন। অঙ্ককে আমার ভয় ছিল। কারণ ভুল করে ফেলতাম। অঙ্কের জন্যই বোধহয় প্রথম বিভাগ পাব না।’ নীরেনদার শ্বশুর মনোরঞ্জন রায় চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর বিদ্যালয় জীবনের শিক্ষক ছিলেন। আমি নীরেনদাকে বলেছিলাম মনোরঞ্জন বাবুর সংক্ষিপ্ত জীবনী আমাকে পাঠালে বইয়ের জীবনবৃত্তান্তমূলক টীকায় তাঁর নামটি জুড়ে দেওয়া যাবে। নীরেনদার প্রেরিত সংক্ষিপ্ত পরিচিতি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানকে পাঠিয়ে দিই, যিনি বইয়ের পা-ুলিপি সম্পাদনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে শুনতে পাই কাগজটি স্থানচ্যুত হওয়ায় সেটি পাওয়া যাচ্ছে না। আমিও মূল লেখাটিই শামসুজ্জামান খানকে পাঠিয়েছিলাম। যাই হোক, অসমাপ্ত আত্মজীবনীর পরবর্তী কোনো সংস্করণের জীবনবৃত্তান্তমূলক টীকায় অন্যদের নামের সঙ্গে মনোরঞ্জনবাবুর নামটিও উল্লেখ করা যেতে পারে।

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে অসাক্ষাতের দিনগুলোতে চিনেছিলাম কবি হিসেবে। সাক্ষাতালাপের পর চিনেছি মানুষ হিসেবে।
কবি হিসেবে তিনি অসাধারণ সন্দেহ নেই, মানুষ হিসেবে তিনি যে অতি বড়মাপের, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমার জীবনের পরম সৌভাগ্য, আমি কর্মক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আবু সাঈদ চৌধুরীর মতো বড়মাপের মানুষদের ব্যক্তিগত স্নেহ লাভ করেছিলাম। অন্যদিকে অনেক জ্ঞানী-গুণী মানুষের সংস্পর্শ লাভে ধন্য হয়েছি, যাঁদের মধ্যে কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী অন্যতম।

নীরেনদা, আপনার সঙ্গে আর কখনো দেখা হবে না। আপনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন জানি না। আপনাকে সশ্রদ্ধ সালাম ও প্রণাম।