দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে ষাট ও সত্তরের দশক ছিল বিভিন্ন ধরনের গণআন্দোলনের যুগ। জন্মানোর পর থেকেই একটি রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন বামপন্থি পরিবারের সন্তানরূপে এসব চোখে দেখেছি, কানে শুনেছি। এর মধ্যে সব থেকে সফল ছিল
১৯৭১-এর পূর্ব পাকিস্তানের (888sport apps) গণআন্দোলন, যা পরে পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শোষণের কবল থেকে মুক্তির যুদ্ধে রূপান্তরিত হয়েছিল। বর্তমান আলোচনা আমার 888sport sign up bonusকথামূলক একটি আলেখ্য, যাতে 888sport appsের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে আমার বাল্য-কৈশোরের অভিজ্ঞতাসঞ্জাত বিবরণ লিপিবদ্ধ হয়েছে।
আমরা জানি, ১৯৪৭ সালের পর পাকিস্তান রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক দুর্বলতা ও অনুন্নয়ন কীভাবে নতুন রাষ্ট্রের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থে এই বৈষম্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে গিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের শাসকবর্গের গৃহীত অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কীভাবে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জাতীয়তাবাদকে গণআন্দোলনের পথে নিয়ে গিয়েছিল তাও আমরা জানি। এগুলো আরো বেশিমাত্রায় ও আগেভাগেই আমি জেনেছিলাম আমার পিতা প্রয়াত ধনঞ্জয় দাশের অভিজ্ঞতালব্ধ বর্ণনার সূত্রে। বাবা ছিলেন খুলনা জেলার অধিবাসী। কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ফেডারেশনের সক্রিয় কর্মী হওয়ার সূত্রে তিনি দেশভাগের পর অন্তত নয় বছর ওই দেশে অতিবাহিত করেন, তার মধ্যে শেষ সাড়ে চার বছর কাটিয়েছিলেন পাকিস্তানের জেলখানায় নিরাপত্তা বন্দি ও কখনো গৃহে অন্তরীণ অবস্থায় – যদিও মাঝে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ পর্যন্ত তিনি কলকাতায় সিটি কলেজে পড়াশোনা করতেন ও দুই বাংলার 888sport live football-সংস্কৃতি আন্দোলনের প্রায় সর্বক্ষণের কর্মী রূপে কাজ করতেন। মাঝে মাঝে তিনি খুলনায় ভিটাবাড়িতে ফিরতেন সেখানে কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল মা ও দিদিমার কাছে কলকাতায় জীবনধারণের জন্য আর্থিক রসদ সংগ্রহ করতে। শেষবার ১৯৫১ সালে যখন তিনি এই উদ্দেশ্যে 888sport app-খুলনায় ফিরে যান, তখন গ্রেফতার হয়ে কারান্তরালে চলে যান। উভয় বাংলাতেই রাষ্ট্রযন্ত্র তখন কমিউনিস্টদের নির্বিচারে আটক করে রাখছিল বিপজ্জনক রাষ্ট্রবিরোধী বিপ্লবী রূপে। ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলন চলার সময় বাবা 888sport app সেন্ট্রাল জেলে ছিলেন। তাঁর সেই অভিজ্ঞতার বিবরণ তিনি ১৯৭১ সালে রচিত তাঁর গ্রন্থ আমার জন্মভূমি 888sport sign up bonusময় বাঙলাদেশ-এ লিপিবদ্ধ করেন। বইটি সম্প্রতি কলকাতায় পুনরায় প্রকাশিত হয়েছে।
দুই
১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলন থেকে পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের সম্মিলিত জনতার দাবিতে পাকিস্তানের সামরিক সরকার ১৯৭০ সালে সেদেশে সাধারণ নির্বাচন করতে বাধ্য হলে সেই নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে একক 888sport free betগরিষ্ঠতা পায়; কিন্তু পাকিস্তানের স্বৈরাচারী সামরিক সরকার তাঁদের সরকার গঠন করতে দেয় না। ফলে ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং বাংলার মানুষ তাঁর আহ্বানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পথে নেমে পড়েন। পূর্ব পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ তখন তাঁর হাতে। ৭ই মার্চ তিনি রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তিনি হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান। সমগ্র 888sport appsের মানুষ মানসিকভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হয়। ২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর সশস্ত্র আক্রমণ চালায় এবং গণহত্যা শুরু করে। ভীতসন্ত্রস্ত বহু মানুষ প্রাণভয়ে দলে দলে পালিয়ে এসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ নানা প্রান্তে আশ্রয় নেন। ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং দেশবাসীকে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের (পশ্চিম) কারাগারে বন্দি করে রাখে। সমগ্র 888sport apps মুক্তিযুদ্ধে শামিল হয়।
এই সময় কাশ্মির দখলে আগ্রাসী পাকিস্তানের ডানা ছাঁটতে উদ্যোগী ও প্রতিবেশী দেশে শান্তি রক্ষার নীতিতে বিশ্বাসী ভারত সরকার এবং ভারতের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন লেখক-888sport live chatী-বুদ্ধিজীবীরা ও বামপন্থি দলগুলো 888sport appsের মুক্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নানাভাবে তাঁদের সমর্থন ও সহায়তা দান করেন। 888sport appsের যেসব তরুণ ভারতে গিয়েছিল এবং মুক্তিযুদ্ধে নাম লেখাতে আগ্রহী ছিল সেসব তরুণকে ভারতের সামরিক বাহিনী সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষিত করে তোলে। এই কাজে 888sport appsের মুক্তিবাহিনী নিজেরাও যুদ্ধের শুরু থেকে নিজেদের মতো করে উদ্যোগ নিয়েছিল। অবশেষে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে। ভারত আর মুক্তিবাহিনীর কাছে নতিস্বীকার করে পরাজয় বরণ করে পাকিস্তানি বাহিনী। পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করলে যুদ্ধবন্দি হিসেবে ভারত তাদের নিরাপত্তা দেয়। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে 888sport apps এদের বিচার করতে চেয়েছিল; কিন্তু উপমহাদেশে শান্তি বজায় রাখতে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৭২ সালের ২রা জুলাই ‘সিমলা চুক্তি’ স্বাক্ষর করে ও প্রায় এক লাখ যুদ্ধবন্দিকে পাকিস্তানের হাতে নিঃশর্ত প্রত্যর্পণ করে। ভারতের পক্ষে দেশের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং পাকিস্তানের পক্ষে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিতে ভারত ও পাকিস্তান তাদের সকল বৈরিতার অবসান ঘটানো, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সকল ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা এবং জম্মু ও কাশ্মিরের স্থিতাবস্থা পুনঃস্থাপনের অঙ্গীকার করে।
স্বাধীন-সার্বভৌম 888sport apps রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলা ভাষায় ভাষণ দেন তিনি। মতাদর্শগতভাবে তিনি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং এই মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে স্বাধীন 888sport appsের সংবিধান প্রণয়ন এবং সেই অনুযায়ী রাষ্ট্র চালানোর চেষ্টা করেন।
তবে এই অর্জন হঠাৎ করে সম্ভব হয়নি। এমনকি বিগত পঞ্চাশ বছরেই কেবল নয়, 888sport appsের একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে ইতিহাসের এক অনিবার্য পরিণতি হিসেবে। এটা আজ আর অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাঙালি মুসলমানেরা একসময় বঙ্গভঙ্গ এবং অনেক পরে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান চেয়েছিল। পূর্ব ভূখণ্ডে মুসলমানদের 888sport free betধিক্য ছিল। তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গেও সেই 888sport free betটা একেবারে কম ছিল না। তাই ১৯৪৭ সালে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান গঠনের সময় দেশভাগ অনিবার্য হয়ে পড়ে। ওই দেশে বসবাসরত হিন্দুরা বিশেষ করে বর্ণহিন্দুরা দলে দলে দেশ পরিবর্তন করতে থাকেন। অন্যদিকে 888sport free betয় কম হলেও পশ্চিমবঙ্গ থেকেও বহু মুসলমান দেশত্যাগ করে পূর্ববঙ্গে চলে যান। পূর্ব পাকিস্তান ক্রমশ মুসলমানপ্রধান দেশ হিসেবে পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্য হয়ে যাত্রা শুরু করে; কিন্তু অচিরেই পশ্চিমা প্রভুদের আধিপত্য বিস্তারের নখ-দাঁত প্রকাশিত হতে থাকে। প্রায় শুরু থেকেই ওখানকার বাঙালিরা আত্ম-স্বাতন্ত্র্য ও মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে শামিল হয়, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। ভাষা-আন্দোলনের দানাবল ছড়িয়ে পড়ে ওই দেশে। তারপর থেকে ওই দেশের সাধারণ মানুষের লড়াইটা আর থেমে থাকেনি। ক্রমান্বয়ে ধূমায়িত বিক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৭১-এ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে ঘোষিত হয় স্বাধীনতার সংগ্রাম। এই ইতিহাস আমাদের সকলের জানা।
২৬শে মার্চ থেকে দীর্ঘ নয় মাস ধরে ওই দেশের মানুষের ওপর কী অমানুষিক অত্যাচার হয়েছে তা লিপিবদ্ধ হয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসবিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থে, এখনো তা নিত্য লিখিত হয়ে চলেছে। সেইভাবে তো সমগ্র ব্যাপারটা ধরা সম্ভব নয়। তবু নানারকম ইতিহাস গ্রন্থ, গল্প, 888sport alternative link, 888sport app download apk, 888sport sign up bonusকথা ও 888sport liveে ধরা আছে তার আনুপূর্বিক বিবরণ, যা পড়তে পড়তে শিহরিত হই আমরা। তাছাড়া এ বিষয় নিয়ে অনেক live chat 888sportও নির্মিত হয়েছে, যাতে ধরা আছে ওই দেশের মুক্তিযুদ্ধের নানা পরিসর। দেশজুড়ে দিনের পর দিন যে ছোট-বড় গণহত্যা হয়েছিল, তার বিবরণ পড়লে যে-কোনো বিবেকবান মানুষের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠবে। আমাদেরও সমগ্র অস্তিত্ব কেঁপে উঠেছিল যখন যুদ্ধশেষের পর আমরা 888sport appsের বিজয়ে আনন্দিত ও শিহরিত, তখন ডিসেম্বরের শেষে আমাদের কলকাতার বাসায় শোক-সংবাদ পৌঁছলো যে, বাবার মা ও দিদিমাও পাকিস্তানি সেনাদের নির্বিচার গণহত্যার বলি হয়েছেন।
তিন
আমাদের বাড়িতে অসংখ্য পুস্তকের সংগ্রহ রয়েছে, যাকে আমি বলি রত্নশালা। এই রত্নশালার অন্যতম প্রধান রত্ন সকলেই বলে থাকেন
পিতৃদেব ধনঞ্জয় দাশ-রচিত তিন খণ্ডের মার্কসবাদী 888sport live football বিতর্ক; কিন্তু তাঁর সন্তান রূপে আমরা বলতে পারি যে, আমাদের পরিবারে বাবার রেখে যাওয়া সেরা রত্ন নিঃসন্দেহে আমার জন্মভূমি 888sport sign up bonusময় 888sport apps। ১৯৭১ সাল আমার স্কুলবেলা। আমরা তিন ভাইবোন বাবাকে এই বছরটায় দেখেছি ছটফট করে বেড়াতে। মার্চ মাস থেকেই যেদিন খবর পেলেন যে, ২৫শে মার্চ রাতে 888sport appয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নেমেছে, নির্বিচারে গণ-হত্যা চালাচ্ছে, অসংখ্য ছাত্র-অধ্যাপক-বুদ্ধিজীবীকে গুলি করে মারছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হানাদার বাহিনী বন্দি করে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এমনসব খবর বাবার সাংবাদিক বন্ধুদের মাধ্যমে এসে পৌঁছাচ্ছে আমাদের পূর্ব কলকাতার ৩০নং রামকৃষ্ণ সমাধি রোডের দেড় কামরার ঈ/১৮ নম্বর ফ্ল্যাটে। খুলনার এক অজপাড়াগাঁ কালিকাপুরে তখন সামান্য কৃষিজমির মালিক আমাদের ঠাকুরমা সুহাসিনী এবং তস্য মাতা কুমুদিনী দেবী মাথা গুঁজে দিন গুজরান করতেন। তাঁরা অতীতে স্বাধীনতা ও দেশবিভাগের পরে মাঝে মধ্যে কলকাতায় ছেলের সংসারে এসে বসবাস করলেও পূর্ব বাংলার মাটির টান ছেড়ে পাকাপাকি চলে আসতে রাজি ছিলেন না। তাঁদের জন্যও আমাদের
বাবা-মা, চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছিলেন।
১৯৭১-এর ২৬শে মার্চের পর থেকে 888sport apps থেকে দলে দলে শরণার্থী মানুষের স্রোত আসতে শুরু করে ত্রিপুরা, শিলিগুড়ি, দিনাজপুর, নদীয়া, বসিরহাট-বনগাঁ ও যশোহর রোড ধরে কলকাতা অভিমুখে। প্রথম গণপরিযান ঘটে মূলত হিন্দু-মুসলমান শিক্ষিত-বুদ্ধিজীবী অংশের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত বাঙালিদের। তাঁরা কলকাতা ও শহরতলি অঞ্চলে এসে আশ্রয় নিতে শুরু করেন। এঁদের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে বহু আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গে এসে বসবাস করা পরিবারগুলোর যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল। সে-সময় বাবাকে দেখেছি এসব চেনাজানা বাড়িতে ঘুরে বেড়াতে – কে এলেন, কারা এলেন? অনেকেই চেনাজানা। নানাভাবে তাঁদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হতো। আমাদের বাড়িতেও এসেছিলেন, থেকেছিলেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন পিতৃবন্ধু অধ্যাপক অজয় রায়, তখন তরুণ কিন্তু পরবর্তীকালে প্রখ্যাত সংগীত888sport live chatী আপেল মাহমুদ, স্বপ্না রায় প্রমুখ। সে-সময় সদ্য গড়ে উঠেছে ‘ভারত-888sport apps মৈত্রী সমিতি’। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ ভবনের বাইরের দিকে ট্রামলাইনের পাশে একটা ঘরে তার অফিস। কলকাতার সেরা অধ্যাপক-শিক্ষক-লেখক-888sport live footballিক-888sport live chatী-কবি ও বুদ্ধিজীবীরা সেখানে মিলিত হতেন আলাপ-আলোচনা, সংবাদ আদান-প্রদান ও ভবিষ্যতের কর্মসূচির পরিকল্পনা ঠিক করতে। একই রকম আরেকটি স্থান ছিল কলেজ স্ট্রিট মার্কেটের একপাশে মহাত্মা গান্ধী রোডের (পুরনো হ্যারিসন রোড) ওপর ঘোষ কেবিনের দোতলায় পরিচয় পত্রিকার অফিস। পাশেই পশ্চিমবঙ্গ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির কার্যালয়। এসব জায়গাতেই বাবা ও তাঁর 888sport live footballিক বন্ধুরা প্রায়শ মিলিত হতেন। কখনো-সখনো আমিও তাঁর সঙ্গী হতাম। অনেককে দেখতাম দেখানে। কাজী নজরুল ইসলামের আবৃত্তিকার সুপুত্র কাজী সব্যসাচী, আকাশবাণীর প্রখ্যাত সংবাদ-পাঠক দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের অন্যতম। আর বিখ্যাত লেখক, সাংবাদিকরা তো ছিলেনই। পরিচয় পত্রিকা সম্ভবত দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় এই সময় কচি কলাপাতা ও লাল রঙের মলাটে একটি অসাধারণ ‘888sport apps 888sport free bet’ প্রকাশ করেছিল। কবিগণ এসময় অসংখ্য 888sport app download apk রচনা করছেন, এমনকি নাটকও। এরকম দু-একটি নটিকায় আমরাও ছোটবেলায় অভিনয় করেছিলাম।
888sport appsের মুক্তিযুদ্ধ তখন পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। লাগোয়া সীমান্ত পার হয়ে প্রথমে হাজার, পরে লাখ লাখ ছিন্নমূল মানুষ এসে ভরিয়ে তুলছেন এপার বাংলার মাঠঘাট-প্রান্তর। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে রাষ্ট্র প্রশাসন ওপার থেকে আসা শরণার্থী মানুষদের সর্বপ্রকার সহায়তা প্রদান করেছিল। স্থানীয় মানুষদেরও সীমান্ত পার হয়ে আসা লোকদের প্রতি কোনো বিরূপতা প্রকাশ করতে তো দেখিইনি, উপরন্তু তারা পূর্ণাঙ্গ সহায়তা প্রদান করেছিলেন। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে পূর্ববঙ্গের মানুষের লড়াইটা হয়ে উঠেছিল যেন পশ্চিমবঙ্গবাসী মানুষেরও লড়াই। ‘888sport apps সংহতি ও সহায়তা সমিতি’ গঠন করে পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবীরা তখন 888sport live footballিক ও কংগ্রেস এমপি তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে শরণার্থী শিবিরে ত্রাণকার্য ও 888sport appsকে ভারত সরকার যাতে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়, তার জন্য তৎপরতা শুরু করছে। বাবা তখন সরকারি চাকরির পাশাপাশাশি সন্ধ্যাটা কাটান দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা অফিসে সম্পাদক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়কে নানাভাবে সাংবাদিকতায় সাহায্য-সহযোগিতা করে। এসময় বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় ‘ভারত-সরকারের এত দ্বিধা, এত ভয় কেন?’ শীর্ষক এক জ্বালাময়ী সম্পাদকীয় লিখে প্রভূত উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিলেন। তাতে এক স্থানে লেখা হয়েছিল, ‘প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বর্ণ সিং এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রামের উদ্দেশে আমরা জনসাধারণের পক্ষ থেকে আবেদন জানাইতেছি অবিলম্বে স্বাধীন 888sport apps সরকারকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যে। ভারতবর্ষের সমস্ত রাজনৈতিক দল, সমস্ত আইনসভা সদস্য এবং সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমস্বরে এই দাবি উত্থাপন করিতেছেন।’ বস্তুত পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী ও কমিউনিস্ট দলগুলিও (নকশালরা বাদ দিয়ে) এই দাবিতে গোটা রাজ্যজুড়ে সভা-সমিতিতে সোচ্চার হয়েছিল। রাজ্যের শিক্ষক, অধ্যাপক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলিও তাতে শামিল হন। বাবাকেও সেই সময় দেখেছি এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, তরুণ সান্যাল প্রমুখের সঙ্গে একজোটে শামিল হতে। শুনেছি, 888sport sign up bonusময় 888sport apps রচনার উৎসাহ বাবা এঁদের কাছ থেকে মূলত পেয়েছিলেন।
এ-সময় বাবাকে ছুটে বেড়াতে দেখেছি এক সীমান্ত থেকে আরেক সীমান্তে। মূলত উত্তর চব্বিশ পরগণার বারাসাত, বসিরহাট, বনগাঁ অঞ্চলে কাদের যেন তিনি খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আমাদের ছোট ফ্ল্যাটে তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে বাবা-মা কোনোমতে মাথা গুঁজে থাকেন কয়েক হাজার 888sport free bet login-পত্রিকা নিয়ে; মেঝেতে বিছানা পেতে শুতে হয়। মাঝে মধ্যে শরণার্থী শিবির থেকে কোনো কোনো দেশওয়ালি ভাই-বোনকে নিয়ে বাবা চলে আসতেন আমাদের বাসায়। দেখেছি বহুবিধ অসুবিধা সত্ত্বেও আমার মা (গীতা সোম) হাসিমুখেই তাঁদের কয়েকদিনের জন্য থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করে দিতেন। আবার বাবাকে এর জন্য মুখ-ঝামটাও খেতে দেখেছি। ভিন্নধর্মী অপরিচিত 888sport promo code-পুরুষের (এঁদের নাম করছি না, তাঁরা মূলত সংগীত888sport live chatী ছিলেন) মধ্যে প্রেম-প্রণয়ের মতোন মিষ্টি ঘটনাও ঘটতে দেখেছি। আমরা আনন্দিত যে, নিউটাউনে বসবাসরত মায়ের সবচেয়ে ছোট বোন আমাদের সবার প্রিয় বেণু (ভৌমিক) মাসি এর সাক্ষী রূপে আজো আমাদের মধ্যে রয়েছেন।
এবার আসা যাক 888sport appsের স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বেল হয়ে ওঠা পশ্চিমবঙ্গবাসীর নানা অংশের সক্রিয় অংশগ্রহণের বিবরণীতে।
চার
সংবাদপত্রে বিভিন্ন 888sport world cup rate, সম্পাদকীয় ও উপসম্পাদকীয় লেখার মধ্য দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বুদ্ধিজীবীরা 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধে সমর্থনের
প্রশ্নে দেশীয় জনমতকে সংগঠিত করার প্রয়াস নিয়েছিলেন। এর পাশাপাশি বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী সংগঠনও মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে দেশীয় জনমত গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল। 888sport appsে গণহত্যার প্রতিবাদে পশ্চিমবঙ্গের লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতি প্রকাশিত হয় :
আমরা প্রতিবাদ জানাই, আমরা তীব্র নিন্দা করিতে লেখা হয় “স্বাধীন 888sport apps”-এর উন্নতশির নাগরিকগণ এবং তাদের প্রিয় নেতা শেখ মুজিবর রহমান ইতিমধ্যে আমাদের হৃদয় জয় করেছেন। অসম্ভব সাহস, অফুরন্ত প্রাণশক্তি এবং অতি সীমিত অস্ত্রবল নিয়ে তারা মোকাবিলা করেচেন নবতম অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েক ডিভিশন সেনাবাহিনীর সঙ্গে। বিশ্বের বিধানে সত্যের জয়, শুভের জয় সর্বদাই হয় তা বলতে পারি না, কিন্তু শেষ পর্যন্ত যে হয় তা আমরা বিশ্বাস করি। তাই আমরা বিশ্বাস করি যে, ‘স্বাধীন 888sport apps’-এর জয় হবেই। কিন্তু এই মুহূর্তে 888sport apps আক্রান্ত হয়েছে সুদূর পশ্চিম পাকিস্তানের সত্তর হাজার যুদ্ধপটু সৈনিকদের দ্বারা, তাদের ক্ষমতামদমত্ত সেনাপতির আদেশে তারা ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে, কামান-মেশিনগান-স্টেনগান নিয়ে হাজার হাজার শান্তিপ্রিয় স্বাধীনতাকামী যুবক এবং আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার রক্তে পূর্ব বাংলার নগর-গ্রাম, পথ-মাঠ-ঘাট লাল করে দিচ্ছে। এই বেপরোয়া গণহত্যার ফলে হতাহতের 888sport free bet কিছুদিনের মধ্যেই কয়েক লক্ষে পৌঁছবে বলে আমরা আশঙ্কা করি।
আমাদের পশ্চিমবঙ্গের 888sport live chat-888sport live football-শিক্ষাসেবীদের বেদনা বিশেষরূপে গভীর। বাংলা 888sport live football ও সংস্কৃতির খুব বড় অংশ গিয়ে পড়েছে সমগ্র বাংলার সেই অংশে যাকে ২৬শে মার্চে অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রিয় নেতা মুজিবর রহমান সাহেব স্বাধীন 888sport apps বলে ঘোষণা করেছে। গত দুই দশক ধরে এদেশের নবজাগরণ, নব উদ্দীপনা নব কর্মশক্তির ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বিষয়ে নব চেতনা এবং কাব্যে, 888sport alternative linkে, 888sport liveে এ সবের বরিষ্ঠ প্রকাশ দেখে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি, অনেক আশায় বুক বেঁধেছি। যাদের নিয়ে সেই আনন্দ ও আশা তাদের উদ্বুদ্ধ জীবনের সকল সাধনা ও সিদ্ধিকে বুটের তলায় মাড়িয়ে দিতে উপস্থিত হয়েছে এক বিরাট বর্বর সেনাবাহিনী। এতে কি আমাদের বেদনা সকলের অপেক্ষা তীব্র হবে না, কষ্ট সকলের অপেক্ষা সোচ্চার হবে না?
এতে স্বাক্ষর করেছিলেন – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়, মৈত্রেয়ী দেবী, আবু সয়ীদ আইয়ুব, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, শম্ভু মিত্র, সুশোভন সরকার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, তৃপ্তি মিত্র, প্রবোধচন্দ্র সেন, তারাপদ মুখোপাধ্যায়, অমøান দত্ত, গৌরকিশোর ঘোষ, সন্তোষ কুমার ঘোষ, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
888sport apps সহায়ক 888sport live chat-888sport live footballিক সমিতি নামে একটি সংস্থাও সেই সময় গঠিত হয়েছিল। এই সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সম্পাদক হিসেবে ছিলেন – মণীন্দ্র রায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্র্তী ও নীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। সমিতির কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন ডা. মণীন্দ্রলাল বিশ্বাস এবং সহ-সভাপতিমণ্ডলীতে ছিলেন – অজিত দত্ত, অন্নদাশঙ্কর রায়, অমলাশঙ্কর, উদয়শঙ্কর, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, গোপাল হালদার, জ্যোতি দাশগুপ্ত, দক্ষিণারঞ্জন বসু, মনোজ বসু, মন্মথ রায়, শম্ভু মিত্র, সন্তোষ কুমার ঘোষ, সরযূবালা দেবী, সুচিত্রা মিত্র, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সুশোভন সরকার এবং হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।
১৯৭১-এর ৪ঠা এপ্রিল পশ্চিমবাংলার বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, আইনজীবী, সমাজকর্মী, সাংবাদিক প্রভৃতি ভারতীয় সংস্কৃতি ভবনে মিলিত হয়ে ‘সংগ্রামী স্বাধীন 888sport apps সহায়ক সমিতি’ নামে একটি সংস্থা গঠন করেন। 888sport appsের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্ভাব্য সকল উপায়ে সাহায্য করা এই সমিতির উদ্দেশ্য।
ঠিক হয়েছিল : ইতিপূর্বে মুখ্যমন্ত্রী অজয় কুমার মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা সহায়ক কমিটি (কমিটি ফর অ্যাসিস্ট্যান্ট টু দ্য ফ্রিডম স্ট্রাগল ইন 888sport apps) নামে যে-সংস্থাটি গঠিত হয়েছে, এই সমিতি তার সঙ্গে যোগ রেখে কাজ করবে এবং সমিতির অর্থ সংগ্রহ এবং 888sport app সাহায্য ওই কমিটির মাধ্যমে যথাস্থানে পাঠানো হবে।
নতুন এই সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্তোষকুমার ঘোষ এবং বিনয় সরকার ছিলেন যথাক্রমে কোষাধ্যক্ষ এবং যুগ্ম-সম্পাদক। সমিতির কার্যালয় : ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন হল, ৬২ বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী স্ট্রিট, কলকাতা।
৮ই এপ্রিল 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত হয় 888sport live chatী-888sport live footballিক-সাংবাদিকদের বিশাল জমায়েত। এ সম্পর্কে গণশক্তির রিপোর্ট :
কলকাতা, ৯ই এপ্রিল – 888sport appsের মুক্তি সংগ্রামের সমর্থনে এবং 888sport appsের স্বীকৃতিসহ 888sport app দাবিতে গতকাল বিকেলে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে 888sport live chatী, 888sport live chatকর্মী, 888sport live footballিক ও সাংবাদিকদের জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়। পরে একটি ডেপুটিশন রাজভবনে দেওয়া হয়। গণনাট্য সংঘ ছাড়াও এই সংঘে বিভিন্ন সহযোগী সংস্থাগুলির এই জমায়েতে সংগঠিতভাবে অংশগ্রহণ করে।
জমায়েতে সভাপতিত্ব করেন গণনাট্য সংঘের সভাপতি আশু সেন। ভাষণ দেন সম্পাদক শিশির সেন। রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মারকলিপি পাঠ করেন শিবনাথ চ্যাটার্জী। এই জমায়েতের পরই একটি সংগঠিত মিছিলের মাধ্যমে রাজ্যপালকে এক ডেপুটেশন মারফত স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ডেপুটেশনে ছিলেন – কল্পতরু সেনগুপ্ত, জীবনলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, আশু সেন, শিবনাথ চ্যাটার্জী, প্রদোষ মিত্র, এম.এ. সঈদ। রাজভবনের সামনে ‘সোনার বাংলা’, ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই’ প্রভৃতি গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন 888sport live chatীবৃন্দ।
জনমত সংগঠনে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন কলেজের অধ্যাপকরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। ‘888sport appsের গণহত্যার প্রতিবাদে অধ্যাপকদের বিক্ষোভ মিছিল’ এই শিরোনামে যে-সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল তাতে লেখা হয়েছিল –
পরাস্ত বেসামাল ইয়াহিয়ার সৈন্যরা 888sport appsে যে বেপরোয়া গণহত্যা চালাচ্ছে তার প্রতিবাদে আজ পশ্চিমবাংলার অধ্যাপকরা মহানগরীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তার আগে রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে একটি প্রতিবাদ সভাও হয়।
সভার পর রাজ্যের অধ্যাপকদের বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে পাকিস্তান ডেপুটি হাইকমিশন এবং পরে বর্মার দূতাবাসের সামনে যায়। অধ্যাপক সমিতির পক্ষ থেকে দুই দূতাবাসের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে দুটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
তবে কেবল মৌখিক সমর্থন নয়, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহল 888sport appsের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছিল। 888sport appsের সমর্থনে ১৯৭১ সালের ৩১শে মার্চ সমগ্র পশ্চিমবাংলায় হরতাল বা বন্ধ পালিত হয়েছিল। প্রতিটি রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন, ছাত্র সংগঠনগুলো এই বন্ধকে সমর্থন করেছিল। এই হরতাল সফল করার জন্য বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো প্রচার করেছিল। রাজনৈতিক দলগুলো যৌথভাবে হরতাল ঘোষণা এবং পালন করতে সমর্থ হয়েছিল। ঐক্যবদ্ধভাবে হরতাল সফল করার একটা ক্ষীণ চেষ্টা এসইউসি এবং সিপিআই (এম)-এর তরফে করা হয়েছিল। 888sport appsের সমর্থনে সকল বামপন্থি দল একসঙ্গে যাতে পথে নামে তার জন্য আলোচনার উদ্দেশ্যে এসইউসির রাজ্য সম্পাদক নীহার মুখার্জী সিপিআই (এম)-এর রাজ্য সম্পাদক প্রমোদ দাশগুপ্তকে চিঠি পাঠান। সিপিআই (এম) আগ্রহ প্রকাশ করে আলোচনায় বসতে; কিন্তু সাধারণ ধর্মঘট এবং হরতাল বিষয়ে মত দেওয়ার আগেই এসইউসি এবং সিপিআইযের তরফে একতরফা ৩১শে মার্চের হরতালের ঘোষণা করে দেওয়া হয়। ২৮শে মার্চ শহিদ মিনারের সমাবেশ থেকে বিজয় নাহারও জনগণকে হরতালকে সফল করার আবেদন জানান। এই অবস্থায় সিপিআই (এম) এমন কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে চায়নি যাতে 888sport appsের প্রতি যে ব্যাপক সংহতি সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে দেখা গিয়েছিল তার ক্ষতি হয়। সংযুক্ত বামপন্থি ফ্রন্টের দিন এবং সময়কাল নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছিল, তখন সিপিআই এবং কিছু সংগঠনের তরফে একরতফা ৩১শে মার্চ ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। বলা হয় : ‘ধর্মঘটের কারণটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, বিভেদনীতি তৈরি করার কয়েকটি দলের অপচেষ্টাকে কার্যকর হতে দিতে পারি না। তাই জনগণের কাছে আহ্বান জানানো হচ্ছে যে, তারা যেন কোনো প্ররোচনায় পা না দিয়ে ৩১শে মার্চ 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ধর্মঘট সফল করেন।’ এই সামান্য বিতর্কটুকু ছাড়া ৩১শে মার্চের হরতালে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলের সমর্থন ছিল সর্বাত্মক। বিরাট সাফল্য পেয়েছিল হরতাল। পরদিন সকালে সংবাদপত্রগুলির প্রথম পাতা জুড়ে ছিল কেবল মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সফল হরতালের খবর। হরতালের দিন বিমান, ট্রেন, বাস, যানচলাচল ছিল সম্পূর্ণ বন্ধ। সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ সেদিন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। স্কুল, কলেজ, অফিস, কলকারখানা সবকিছুই বন্ধ ছিল। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি থাকলেও সরকার বন্ধ ব্যর্থ করার কোনো চেষ্টা করেনি। সাধারণত কোনো রাজনৈতিক সংগঠন কোনো বিষয়ে বন্ধ বা হরতাল ডাকলে তাকে ব্যর্থ করতে তার বিরোধীদলগুলো চেষ্টা করে; কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যায়, সকল রাজনৈতিক সংগঠন হরতালের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছিল। এমন নজির খুব একটা পাওয়া যায় না। আরো একটা বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৩১শে মার্চ হলো আর্থিক বছরের শেষ দিন, সাধারণত ওইদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস-দফতরে কাজ চলে। কিন্তু ১৯৭১ সালের ৩১শে মার্চ তার ব্যতিক্রম ঘটে, 888sport appsের সমর্থনে সব অফিস-কাছারির কর্মচারীরা হরতাল পালন করেন। কিছু অফিস-দফতর খোলা হলেও কর্মচারীর অভাবে কাজকর্ম সব মুলতবি হয়ে যায়। এমন নজিরও আছে, অন্য হরতালের দিনের মতোন ফাঁকা রাস্তায় কোনো খেলাধুলা হয়নি, তার বদলে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখা গিয়েছিল 888sport appsের সমর্থনে উড্ডীয়মান ‘জয় বাংলা’ নিশান।
রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন গণসংগঠনও 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে সোচ্চার হয়েছিল। সিপিআইয়ের ছাত্র-যুব সংগঠনের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ৪ঠা এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্র-যুবরা শিয়ালদহে মিলিত হয়, সেখান থেকে ট্রেনে করে তারা বনগাঁ পৌঁছায়। যশোর সীমান্তে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সংহতি জানিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে তারা এবং মিছিলে অংশগ্রহণকারী দুজন তরুণী মুক্তিযোদ্ধাদের নিজেদের রক্ত দিয়ে রক্ততিলক পরিয়ে দেন।
পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র সংগঠন – বিপিএসএফ (সিপিএম), বিপিএস-এফ (সিপিআই), পিএসইউ, এফআরএস এবং ছাত্র ব্লক মুক্তিসংগ্রামের সমর্থনে ২০শে জুলাই থেকে ৩রা আগস্ট সমস্ত বিভিন্ন কর্মসূচি যৌথভাবে পালন করেছিল। ২রা আগস্ট সফিউল আলম (বিপিএসএফ-এর সিপিআই-এম প্রভাবিত গোষ্ঠীর নেতা), সুভাষ চক্রবর্তী (বিপিএসএফ-এর সিপিআইএম প্রভাবিত গোষ্ঠীর নেতা), ছায়া মুখার্জী (ডিএসও), ভোলা কুণ্ডু (ছাত্র ব্লক), ক্ষিতি গোস্বামী (পিএসইউ) এবং অশোক দত্ত (এফআরএস) – এক যৌথ বিবৃতিতে জানান যে, 888sport appsের সমর্থনে ৩রা আগস্ট সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হবে। 888sport appsের সমর্থনে হওয়া এই ছাত্র ধর্মঘটও ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছিল। ওইদিন বেলা আড়াইটার সময়ে কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে একটি কেন্দ্রীয় ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় 888sport appsের সমর্থনে। সমাবেশের পরে ছাত্রদের একটি প্রতিনিধিদল রাজভবনে যায়। তাঁরা রাজ্যপালের হাতে ভারত সরকারের তরফে 888sport appsকে সর্বপ্রকার সাহায্য দেওয়ার দাবি সম্মিলিত একটি স্মারকলিপি তুলে দেন।
888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি প্রথম থেকেই পশ্চিমবঙ্গের মহিলা সংগঠনগুলিও সংহতি প্রকাশ করেছিল। পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি 888sport appsের জনগণের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন এবং পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী কর্তৃক 888sport appsের জনগণের বিরুদ্ধে বর্বর আক্রমণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি এক প্রস্তাবে ভারত সরকারের কাছে 888sport appsের মুক্তিসংগ্রামে পূর্ববঙ্গের 888sport promo codeসমাজের যোগ্য অংশগ্রহণ ও মিলিটারির বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে 888sport promo codeসমাজের যোগ্য অংশগ্রহণের জন্য তাদের অভিনন্দন জানিয়েছিল। ১লা এপ্রিল বিভিন্ন মহিলা সংগঠন 888sport appsের মুক্তিসংগ্রামের সমর্থনে ভারত সভা হলে এক বিরাট সমাবেশের আয়োজন করেছিল। ভারতীয় মহিলা ফেডারেশনের ডাকে ওই সভায় পশ্চিমবঙ্গ মহিলা সমিতি, মহিলা সাংস্কৃতিক সম্মেলন, সারা ভারত মহিলা সম্মেলন ও মহিলা সমন্বয় কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছিল এবং এই সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন ড. রমা চৌধুরী। রমা চৌধুরী ছাড়াও ইলা মিত্র, অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়, মায়া দাস, কমলা মুখোপাধ্যায় বক্তব্য রাখেন। তাঁরা সবাই পাকিস্তানিদের গণহত্যা বন্ধ করার জন্য জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ দাবি করেন। সভায় মহিলারা ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তাঁরা শরণার্থীদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ, অর্থ সংগ্রহ করবেন এবং মহিলারা রক্তদান করবেন। সেইসঙ্গে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মহিলারা ৫ই এপ্রিল ‘রোশেনারা দিবস’ পালন করবেন।
কলকাতার শহিদ মিনার থেকে মহিলাদের এক বিশাল মিছিল বের হয়েছিল 888sport appsের সমর্থনে। ওই মিছিলে স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা, সাধারণত মহিলা থেকে মহিলা নেতৃত্ব, বিভিন্ন বয়সের মহিলা যোগদান করেছিলেন। সুদীর্ঘ মিছিলটি বিভিন্ন রাস্তা পরিক্রম করে পাকিস্তান ডেপুটি হাইকমিশনে যায়, সেখানে মহিলা নেতৃবৃন্দ পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরোধিতা করে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। মিছিলকারীরা ভারত সরকার কর্তৃক 888sport appsকে সকল প্রকার সাহায্য দানের দাবি জানিয়েছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গের 888sport promo codeসমাজ 888sport appsের সংগ্রামী জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়েছিল। ৮ই এপ্রিল গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির ডাকে শহিদ মিনার ময়দানে 888sport appsের সমর্থনে এক বিপুল মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সমিতির সাধারণ সম্পাদিকা মাদুরী দাশগুপ্ত 888sport appsের সমর্থনে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন এবং সাংসদ বিভা ঘোষ সমর্থন করেন। প্রস্তাবটিতে মুক্তিসংগ্রামে পূর্ববঙ্গের মেয়েদের লড়াকু ভূমিকার প্রশংসা করা হয় এবং 888sport appsের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম শহিদ চারুবালা করের আত্মবলিদানের কথা 888sport app download for android করা হয়। ওইদিন সমাবেশশেষে মহিলাদের একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রথমে রাজভবনে এবং পার্ক সার্কাসে পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনে গিয়েছিল।
888sport appsের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করতে গিয়ে বা মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সংহতি জানাতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহল যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মতো বৃহৎ রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছিল। কারণ যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন প্রথম থেকেই 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। চীন মনে করত, 888sport apps সমস্যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়। দেশটি ভারতকেই দায়ী করেছিল 888sport apps সংকটের জন্য। চীন ইয়াহিয়া খানকে আশ্বস্ত করে বলেছিল, পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষা করতে সবরকমভাবে সাহায্য করবে। চীন তার দীর্ঘদিনের বন্ধু পাকিস্তানকে সামরিক, অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করেছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়ে। অন্যদিকে 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নেতিবাচক দিকটি হলো, পাকিস্তান সরকারকে ১৯৭১-এর ২৫শে মার্চের পরেও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ অব্যাহত রাখা।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের এই নেতিবাচক ভূমিকার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিবাদমুখর হয়েছিল – এটি মুক্তিযুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলের সংহতি সমর্থনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্য দান অব্যাহত রাখার তীব্র বিরোধিতা করেছিল পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি রাজনৈতিক দল। সিপিআইয়ের তরফে বলা হয় যে, পাকিস্তানের সামরিক শাসনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে এবং মার্কিন সাহায্য নিয়েই ইয়াহিয়া সরকার 888sport appsের সাড়ে সাত কোটি মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ধ্বংস করতে সচেষ্ট হয়েছেন। 888sport appsের মুক্তিসংগ্রামকে ধ্বংস করাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিশ্বায়ন নীতির অংশ এবং তারা চায়, ভারতীয় উপমহাদেশেও আরেকটি ভিয়েতনাম সৃষ্টি করতে।
পাকিস্তানকে মার্কিন সামরিক সাহায্যদানের বিরুদ্ধে সংযুক্ত সোশ্যালিস্ট পার্টির পাঁচশোর বেশি সমর্থক প্রবল বর্ষণ উপেক্ষা করে ৩রা জুলাই কলকাতায় অবস্থিত মার্কিন কনস্যুলেটের সামনে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভ প্রদর্শনের পরে তাঁরা যে-স্মারকলিপি জমা দেন তাতে মার্কিন প্রশাসনের প্রতি দাবি করা হয়, ‘ভারতীয় উপমহাদেশে গণতন্ত্র ধ্বংস এবং পাকিস্তানকে অস্ত্র সাহায্য দিয়ে 888sport appsকে বিধ্বস্ত করার পরিকল্পনা কার্যকর করা থেকে বিরত থাকুন।’ নব কংগ্রেসের উত্তর কলকাতা কমিটির উদ্যোগে ৫ই জুলাই উত্তর কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রতিবাদ মিছিল বের হয়েছিল। ১০ই জুলাই ‘888sport apps মুক্তি সংগ্রাম সমিতি’র উদ্যোগে মহিলাদের বিক্ষোভ সংগঠিত হয় মার্কিন কনস্যুলেটের সামনে। মহিলা বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন পুরবী মুখোপাধ্যায় (নব কংগ্রেস), রেণুকা রায় (নব কংগ্রেস) এবং গীতা মুখোপাধ্যায় (সিপিআই) এবং তাঁরা মার্কিন কনসাল জেনারেলকে পাকিস্তানকে মার্কিন সামরিক সাহায্যদানের বিরোধিতা করে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। অপরদিকে ২০শে জুলাই ছয়টি ছাত্র সংগঠন – এসএফআই, এআইএসএ, ডিএসও, প্রগতিশীল ছাত্র সংঘ, ছাত্র ব্লক এবং এফআরএসের তরফে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জঙ্গি মিছিল বের হয় চৌরঙ্গীতে। মিছিলশেষে ছাত্ররা চৌরঙ্গীতে অবস্থিত মার্কিন লাইব্রেরির ছাদ থেকে মার্কিন পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এদের উদ্যোগেই ৩রা আগস্ট মার্কিন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ধর্মঘট সফল হয়।
888sport appsের মুক্তিযুদ্ধে চীনের নেতিবাচক ভূমিকার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিবাদী হয়েছিল। চীনের মতো সমাজতান্ত্রিক দেশের 888sport appsের মুক্তিকামী মানুষের লড়াইয়ের বিরোধিতা, পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থি দলগুলো কোনোমতেই সমর্থন করেনি। সিপিআইয়ের মুখপত্রে ‘ধন্য চেয়ারম্যান মাও’ শীর্ষক খবর প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে 888sport apps নিয়ে চীনের দ্বিমুখী নীতির তীব্র সমালোচনা করা হয়।
অন্যদিকে সিপিআই (এম)-ও চীনের বিরোধিতায় সরব হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে চীনের নেতিবাচক ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক প্রমোদ দাশগুপ্ত স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমাদের আন্তর্জাতিক বোধ থেকে আমরা এই লড়াইয়ের সম্ভাবনাকে বিচার করে দেখেছি – এর সাফল্য এই উপমহাদেশ বিশেষ করে এশিয়ার সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সংগ্রামকে এগিয়ে নেবে। … আজ চীন এই সংগ্রামের বিরুদ্ধাচরণ করছে। দুঃখের কথা মার্কসীয় আন্তর্জাতিকতাবোধ আজ শব্দসমষ্টি মাত্র। 888sport appsের লড়াইয়ে সর্বতোভাবে সাহায্য করা প্রকৃত কমিউনিস্টদের আন্তর্জাতিক কর্তব্য; কিন্তু চীন 888sport apps সংগ্রামের বিরুদ্ধাচরণ করে সেই কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হয়েছে।’
অন্যদিকে চীনের অন্ধ অনুসরণকারী সিপিএম-এল, যারা নকশাল নামে বেশি পরিচিত, তারা 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধে চীনের ভূমিকাকে সমর্থন করেছিল। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধকে পশ্চিমবঙ্গের সকল রাজনৈতিক দল সমর্থন করলেও একমাত্র নকশালরা বিরোধিতা করেছিল। তার কারণ চীন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তাই চীনের ভূমিকা অনুসরণ করে তারাও 888sport appsের ন্যায়সংগত আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল। এটি ছিল খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
পাঁচ
888sport appsকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির প্রশ্নে বেসরকারি স্তরে প্রথম দাবি উত্থাপিত হয়েছিল ১৯৭১-এর ২৭শে মার্চ, সারা বাংলায় ছাত্র ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে। ছাত্র ধর্মঘটের জন্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে যে-সভা হয়েছিল, তাতে ছাত্র-শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, কমিউনিস্ট পার্টির কিছু প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকের ভারত সরকারের কাছে দাবি ছিল সার্বভৌম, স্বাধীন, সাধারণতন্ত্রী 888sport appsকে স্বীকৃতি দেওয়া। সভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন পরিমল রাউত এবং মূল প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন বিমান বসু।
বিভিন্ন ছাত্র সংস্থা ২৯শে মার্চ 888sport appsকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে ও মুক্তিবাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহের দাবিতে দুপুর ১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কলকাতায় অবস্থিত পাকিস্তান ডেপুটি হাইকমিশনারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। একইদিন কলকাতার পৌর বিদ্যালয়গুলির শিক্ষক ও কর্মীসংঘ এক বিবৃতির মাধ্যমে স্বাধীন 888sport apps গঠনের দাবি জানিয়েছিল। 888sport appsকে স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে কূটনৈতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে ও মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হানাদারদের বর্বর আক্রমণের প্রতিবাদে পশ্চিম বাংলায় ৩১শে মার্চ রাজ্যের ছাত্র সংগঠনগুলি, ট্রেড ইউনিয়নগুলি একযোগে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল। সেদিন সমগ্র পশ্চিমবঙ্গবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করেছিলেন। সেদিন কলকারখানা, স্কুল-কলেজ, যানবাহন, আনন্দ-অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়ে 888sport appsের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল। কলকাতার একদল ছাত্র ‘শেখ মুজিবুর রহমান-এর জয়’ এই ধ্বনি তুলে পাকিস্তানের হাইকমিশনারের অফিসের সামনে ১২ ঘণ্টার জন্য অনশন করেছিলেন। ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে রাজ্যের কোনো জায়গা থেকেই হামলা কিংবা বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।
888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে ও অবিলম্বে 888sport appsকে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে বিদ্যাসাগরের সান্ধ্য কলেজের ছাত্র-শিক্ষক, অধ্যাপক, শিক্ষাকর্মী মিলিত হয়ে ১লা এপ্রিল সত্যকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে এক কনভেনশন অনুষ্ঠিত করেছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের অধ্যাপকরা 888sport appsে পাকিস্তানি সৈন্যের দ্বারা পরিচালিত ব্যাপক গণহত্যার প্রতিবাদে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে প্রতিবাদ সভা করেছিলেন। তারপর 888sport appsকে সমর্থনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেছিলেন। এই মিছিল অনেক পথ অতিক্রম করার পর শেষে পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনারের অফিসে গিয়ে দুটি স্মারকলিপি দিয়েছিল। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে ভারতজুড়ে একটি কমিটি তৈরি হয়েছিল। এই কমিটির অর্থভাণ্ডারে প্রথম দাতা ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সত্যেন সেন।
এই কমিটি ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্টস কমিশনের তদানীন্তন সভাপতি ড. ডি.এস. কোঠারির কাছে 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যের জন্য একটি দরখাস্ত পাঠিয়েছিল। এই দরখাস্তের ভিত্তিতে ড. কোঠারি 888sport appsকে সাহায্যের লক্ষ্যে প্রত্যেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি আবেদন জানান তাঁরা যেন একদিনের আয় কমিটির অর্থভাণ্ডারে জমা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যের জন্য ড. কোঠারির এই আবেদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
888sport appsকে সাহায্যের জন্য ও স্বাধীন 888sport appsের অনুকূলে জনমত সংগঠিত করার লক্ষ্যে কমিটির কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে অধ্যাপক অনিল সরকার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সফল করেন। টাকা সংগ্রহের জন্য কমিটি আমেদাবাদ, মুম্বাই, মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে কিছু ছবি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছিলেন। ভারতের ছাত্র-শিক্ষকদের মিলিত একটি কমিটি ১৪টি বই প্রকাশ করেছিল, যার মধ্যে একটি অন্যতম ছিল Bangladesh : The Truth, যার কভার পেজের ছবি ছিল – এক মৃত 888sport promo codeর শরীর কুকুর ছিঁড়ে খাচ্ছে, অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদের নগ্ন রূপকে প্রতীকী মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এই বইটি বাইরের বহু দেশে পাঠানো হয়েছিল, মূল উদ্দেশ্যই ছিল, ১৯৭১-র মুক্তিযুদ্ধের চিত্রকে বিশ্বের মানুষের সামনে তুলে ধরা, 888sport appsের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়ে তোলা। তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাবিদ মৃণালিনী দাশগুপ্তা তাঁর ছাত্রছাত্রীদের সাহায্যে খাদ্য, ওষুধ, টাকা সংগ্রহ করে সীমান্তে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছিলেন। বহু ছাত্রী টাকা সংগ্রহের জন্য গহনা বন্ধক রেখেছিলেন।
888sport appsকে স্বীকৃতিদানের দাবিতে জেলার ছাত্রছাত্রীরাও পিছিয়ে ছিলেন না। যেমন – চন্দননগরের বঙ্গীয় প্রাদেশিক ছাত্র ফেডারেশন এক গণতান্ত্রিক কনভেনশন করেছিল। প্রায় আড়াইশো ছাত্রছাত্রী এই কনভেনশনে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া উত্তরপাড়াতে এক ছাত্র সমাবেশের সেøাগানই ছিল ‘স্বীকৃতি দাও, অস্ত্র দাও, সীমান্তের বেড়া খুলে দাও, অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সি.আর.পি মিলিটারি, ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করো।’ পাকিস্তানি সৈন্যদের অমানবিক অত্যাচারের প্রতিবাদে ১লা ও ২রা এপ্রিল দুদিন ধরে রানাঘাট মহকুমার স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা স্থানীয় ছাত্র সংসদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের ও ধর্মঘট পালন করেছিল। নাসরা প্রগতি সংঘের যুবকদল কালো ব্যাজ পরে, কালো পতাকা তুলে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানিয়েছিলেন। স্থানীয় কমিউনিস্ট পার্টির তরফে ইয়াহিয়া খানের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছিল।
যে-কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধেই বুদ্ধিজীবীদের কলম থেমে থাকে না, বরং তা আরো ধারালো হয়, কলমের মাধ্যমেই বৃহত্তর আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে, এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ২৮শে মার্চ দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় 888sport appsের গণহত্যার প্রতিবাদে সম্পাদকীয় কলমে পশ্চিমবঙ্গের লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের তরফে এক বিবৃতি পেশ করা হয়েছিল যার শিরোনাম ছিল –
আমরা প্রতিবাদ জানাই, আমরা তীব্র নিন্দা করি’ – এর মাধ্যমে বিশ্ববোধ জাগ্রত করার জন্য সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে বুদ্ধিজীবীরা আবেদন করে লিখেছিলেন, ‘পৃথিবীতে আজ বহু দেশ আছে, বহু জাতি আছে, যারা নিজেদের সুসভ্য বলে দাবি করে। সে দাবি অনেকাংশে স্বীকার্য। তাদের বিবেক কি আজ সাড়া দেবে না? আমরা পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতিকর্মীরা বিশেষ করে আবেদন জানাই পৃথিবীর সব দেশের 888sport live chatী, স্রষ্টা, জ্ঞানী ও তপস্বীদের কাছে। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এই বীভৎস বিরাট নরহত্যার সংবাদ তাঁরা পেয়েছেন নিশ্চয়। তাঁদের সকলের তীব্র প্রতিবাদ ঘোষিত হোক, তাঁদের সরকারকে তাঁরা উদ্বুদ্ধ করুন এই অর্থহীন নৃশংসতার নিন্দা করতে, প্রতিরোধ করতে, এ বিষয়ে তাদের যথোচিত কর্তব্য পালন করতে।
পণ্ডিত রবিশঙ্কর 888sport appsের মুক্তিযোদ্ধাদের ও মহিলা-শিশুদের আর্থিক সাহায্যে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ারে জজ হ্যারিসন, বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, আলি আকবর খানের মতো নামী গায়কদের দ্বারা তিন রাতব্যাপী জলসা করে আয় হওয়া ১০-১৫ মিলিয়ন ডলার ইউনিসেফের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, উদয়শঙ্কর, অন্নদাশঙ্কর রায়, সুচিত্রা মিত্র, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, তরুণ সান্যাল, ধনঞ্জয় দাশ প্রমুখ কবি-888sport live footballিক স্বাধীন 888sport appsের সমর্থনে বিবেকবান মানুষকে এগিয়ে আসার জন্য সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে আবেদন জানান। ১৯শে এপ্রিল দৈনিক যুগান্তরে তাঁদের বিবৃত প্রকাশ পেয়েছিল। বিবৃতিটি ছিল –
আমরা পশ্চিমবঙ্গের সর্বস্তরের 888sport live chatী-888sport live footballিক-বুদ্ধিজীবীরা আগামী মঙ্গলবার (২০শে এপ্রিল) বিকেল ৫টায় টাটা বিল্ডিংয়ের উল্টোদিকে গড়ের মাঠে পুকুর পাড়ে সমবেত হব। তারপর নীরব শোভাযাত্রা করে নিকটবর্তী বৈদেশিক দূতাবাসগুলোতে যাব, বলব 888sport appsে পাকিস্তানি ফৌজের ঘৃণ্য হত্যা বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে সক্রিয় ব্যবস্থা নিতে হবে। 888sport appsের সার্বভৌম সরকারকে স্বীকৃতি জানাতে হবে।
888sport appsের মুক্তিসংগ্রামে পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকদের ভূমিকাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। শহীদ কাদেরের গবেষণায় এর বিবরণ আছে। শরণার্থী শিশুদের অপুষ্টি থেকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় সরকারকে একশটি পুষ্টি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনের অনুরোধ জানান। ১৬ই অক্টোবর ১৯৭১-এ প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিম দিনাজপুরে সাতটি, মালদায় পাঁচটি, নদীয়ায় চারটি, মুর্শিদাবাদে চারটি ও চব্বিশ পরগণায় তিনটি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করেন। স্থানীয়রা সেগুলোতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া রেড ক্রসের উদ্যোগে অপুষ্টির শিকার শিশুদের নানা ধরনের ভিটামিন, দুধ ও পুষ্টিকর খাবার বিতরণ করা হয়। নদীয়া, বারাসাত ও বালুরঘাটে স্থানীয় তরুণদের সহায়তায় শিশুদের জন্য ফিডিং সেন্টার খোলা হয়। নদীয়া শহরে শিশুদের বিনামূল্যে দুধ বিতরণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় একটি সংগঠন। ভারতীয় রেড ক্রস নদীয়া জেলা শাখা রানাঘাট রেলস্টেশনে অবস্থানরত
শরণার্থী পরিবারের শিশু ও অসুস্থদের প্রতিদিন দুধ বিতরণ করেছে।
888sport appsে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে বেঙ্গল মেডিক্যাল ইউনিয়ন প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে। মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউট হলে পশ্চিমবঙ্গের বত্রিশ হাজার চিকিৎসকের পক্ষ থেকে 888sport appsের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ভারত সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। ডা. কে কে ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা নীরব দর্শক না হয়ে ওদের পাশে গিয়ে লড়তে চাই।’
২৮শে অক্টোবর ১৯৭১-এ পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে অসামরিক লোকদের হত্যা, 888sport promo code নির্যাতন ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী মিছিলের আয়োজন করে পশ্চিমবঙ্গ চিকিৎসক ইউনিয়ন। সহস্রাধিক চিকিৎসক এতে উপস্থিত ছিলেন।
একাত্তরে জামশেদপুরের ষোলোজন চিকিৎসক নিয়েছিলেন ভিন্ন এক উদ্যোগ। চিকিৎসকদের এই দলটি শরণার্থীদের সহায়তায় প্রথমে স্থানীয়ভাবে ওষুধপত্র সংগ্রহ শুরু করে। পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহের পর অক্টোবরে তাঁরা চলে যান পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্তে। শরণার্থীদের চিকিৎসা ও বিনামূল্যে ওষুধ সংগ্রহের পাশাপাশি তাঁরা শরণার্থী শিবিরগুলোতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে কাজ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে এপ্রিল মাসে 888sport appsের আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় ডা. গুরুপদ শাণ্ডিল্যের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় কার্যক্রম শুরু করেন একদল চিকিৎসক। এই দলকে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধ সরবরাহে এগিয়ে আসেন দে’জ মেডিক্যাল স্টোরস, স্ট্যানিস্ট্রিট, এম ভট্টাচার্য, পি. কে গুহ, ইস্ট ইন্ডিয়া ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস। এই দলটি বনগাঁ, পশ্চিম দিনাজপুর, নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ সীমান্তে তাদের কার্যক্রম চালায়।
পশ্চিমবঙ্গের তরুণ তীর্থ ক্লাবের উদ্যোগে একাত্তরে তরুণ তীর্থ মেডিক্যাল ইউনিট গড়ে তোলা হয়। আহত শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সহায়তায় ইউনিটটি কাজ করে। তরুণ তীর্থের সমাজকল্যাণ সম্পাদক ডা. প্রবীর সেনগুপ্তের নেতৃত্বে গঠিত মেডিক্যাল ইউনিটটি চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি বিভিন্ন ত্রাণ কার্যক্রমেও অংশ নেয়। গান্ধী শান্তি সংস্থার উদ্যোগে একাত্তরে শরণার্থী ক্যাম্পের তরুণ-তরুণীদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও নার্সিং বিষয়ে প্রশিক্ষণদানের ব্যবস্থা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে শান্তি সংঘ ও সর্বসেবা সংঘ এই ধরনের ছয়টি প্রশিক্ষণ স্কুল খোলে। যেগুলোতে প্রায় দুই হাজার শরণার্থী তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োগ করা হয়। পাশাপাশি স্থানীয় বেশ কিছু তরুণ-তরুণীকে স্বেচ্ছাসেবক স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে গান্ধী সংস্থা প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
একাত্তরে 888sport appsের পাশে দাঁড়িয়েছিল ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ননরেজিস্টার্ড ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন’। 888sport appsে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার প্রতিবাদে সংগঠনটি এপ্রিলে প্রতিবাদ মিছিল বের করে। এছাড়া এই সংগঠনের সদস্য পশ্চিমবঙ্গের পঁচিশ হাজার
ননরেজিস্টার্ড অ্যালোপ্যাথ চিকিৎসক একাত্তরে শরণার্থীদের সেবায় কাজ করেছেন। বিভিন্ন ক্যাম্পে চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছেন। ট্রানজিট মেডিক্যাল ক্যাম্প করে সদ্য আগত শরণার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে সীমিত ডিগ্রিধারী চিকিৎসক দিয়ে একাত্তরের মতো মানবিক বিপর্যয় সামাল দেওয়া সম্ভব হতো না – যদি না এসব ননরেজিস্টার্ড ডাক্তার ভূমিকা রাখতেন। একাত্তরে শরণার্থীদের চিকিৎসাসেবায় সম্পৃক্ত এমন একজন ননরেজিস্টার্ড পল্লিচিকিৎসক মুর্শিদাবাদের জলাঙ্গীর বাশার মুন্সী।
পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে শরণার্থীসেবায় এসব ননরেজিস্টার্ড ডাক্তারই ছিলেন একমাত্র ভরসা। একাত্তরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রায় ছয়শো ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীকে সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়। ফলে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সংকট দেখা দেয়। আবার প্রায় আশি লাখ বাড়তি শরণার্থীর জন্য এসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়ের সৃষ্টি হয়। রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর চিকিৎসা কার্যক্রম দারুণভাবে ব্যাহত হয়।
যেসব ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা শরণার্থী হয়ে ভারতে এসেছিলেন, তাঁদের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগে যোগাযোগ করে দৈনিক বেতনের ভিত্তিতে কাজে নিয়োগের অনুরোধ জানানো হয়। জুলাই মাসে এই মজুরি বৃদ্ধি করে এমবিবিএস ডাক্তারদের ২০ টাকা ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডাক্তারদের ১৫ টাকা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রায় এক হাজার শরণার্থী ডাক্তারকে এই কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয়।
এছাড়া মুজিবনগর সরকার কলেরা মোকাবিলায় জুন মাসে পশ্চিমবঙ্গে দুই হাজার চিকিৎসক ও নার্স প্রেরণ করে। মুজিবনগর সরকারের স্বাস্থ্য দফতরের ডিরেক্টর ডা. টি হোসেন এসব ডাক্তার ও নার্সের সরাসরি তত্ত্বাবধান করতেন। প্রায় আড়াই হাজার প্যারা-মেডিক্যাল স্টাফ, সাত হাজার প্রশিক্ষিত নার্স, বাইশ হাজার অপ্রশিক্ষিত কর্মী একাত্তরে পশ্চিমবঙ্গে শরণার্থীদের স্বাস্থ্য-সহায়তায় সম্পৃক্ত হয়েছিলেন।
888sport apps থেকে আগত শরণার্থীদের সহায়তার জন্য রাজস্থান রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম দিনাজপুরের ইসলামপুরে একটি ভ্রাম্যমাণ সার্জিক্যাল ইউনিট পাঠায়। চারশো শয্যার অত্যাধুনিক এই হাসপাতালে দেড়শো স্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন, যাঁদের মধ্যে ১৫ জন ডাক্তার ও ৫০ জন তাদের সহকারী। ১৫টি মেডিক্যাল ভ্যান নিয়ে গঠিত এই ভ্রাম্যমাণ সার্জিক্যাল ইউনিটে ল্যাব ও এক্স-রে মেশিনসহ অপারেশন থিয়েটার ছিল। ডিসেম্বর মাসে যখন ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তখন অসামরিক প্রতিরক্ষায় পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসক ও নার্সদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয় পশ্চিমবঙ্গ সিভিল ডিফেন্স। একাত্তরে আহত অনেক মুক্তিযোদ্ধা বনগাঁ, নদীয়া, দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ ও কলকাতার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে একাত্তরে শতাধিক গুলিবিদ্ধ ও গুরুতর আহত মুক্তিযোদ্ধার অপারেশন করা হয়েছিল।
একাত্তরে শরণার্থীদের সেবায় ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শাখা বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল। সর্বভারতীয় আই.এম.এর সাধারণ সম্পাদক ডা. সমর রায় চৌধুরী একাত্তরের এপ্রিলের শুরুতে এক বিবৃতিতে 888sport appsের মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণের সাহায্যার্থে ওষুধ এবং 888sport app সাহায্য চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ জনগণের সহায়তা কামনা করেন। 888sport apps থেকে আগত শরণার্থীদের স্বাস্থ্যসেবায় আইএমএ এপ্রিলের শুরুতেই একটি কমিটি গঠন করে। শরণার্থী আগমনের পয়েন্টগুলোতে রে ডক্রসের সহায়তায় ট্রানজিট মেডিক্যাল ক্যাম্প গড়ে তোলা হয়। রেড ক্রসের পর আইএমএ পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংগঠন যারা শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবায় এগিয়ে আসেন। একাত্তরে তারা পশ্চিমবঙ্গে মোট ২৩টি চিকিৎসাকেন্দ্র খোলে। শুরুতে আইএমএর সদস্যভুক্ত ডাক্তাররা এই কার্যক্রমে অংশ নেন। শরণার্থী বাড়তে থাকলে আইএমও মেডিক্যাল ও নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বড় ধরনের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তুলেছিল।
ছয়
এসব বিবরণী দিলাম সমকালীন বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত 888sport world cup rate ও কয়েকটি সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত গবেষণা গ্রন্থের সহায়তায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের লেখাপড়া প্রায়
মাথায় উঠেছিল। একদিকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অস্থিরতা, নকশাল আন্দোলনের খুন-খারাবি; অপরদিকে 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের উত্তেজনায় স্কুলের পড়াশোনাও প্রায় বন্ধ হয়েছিল। বিদ্যালয় থেকে আধা কিলোমিটার দূরে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়-প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল চত্বর পার হয়েই মাইলের পর মাইল পড়ে থাকা বাড়িবাড়ি সল্ট লেক (এখন যা বিধাননগর) আর সেখানে ডাঁই করে রাখা পাঁচ ফুট ব্যাসের আর দশ ফুট লম্বা হাজার হাজার কংক্রিটের পাইপ। সল্ট লেকে গঙ্গার পলিমাটি নিয়ে আসার সরকার পরিকল্পিত প্রযুক্তি। আমরা সমবয়সী ও স্কুলের উৎসাহী ছাত্ররা ছুটির পরে বিকেলে দলবেঁধে হাজির হতাম সেখানে। অবাক বিস্ময়ে দেখতাম, লক্ষ লক্ষ শরণার্থী মানুষ 888sport apps থেকে এসে আশ্রয় নিয়েছেন, ওই পাইপের মধ্যে সংসার পেতে বসেছেন। রান্নাবান্না, থাকা-খাওয়া, জীবন কাটানো সবই সেখানে। সে যেন এক মহা কুম্ভমেলা (888sport live footballিক কালকুটের অমৃত কুম্ভের সন্ধানে 888sport alternative linkটি তখন প্রকাশিত ও বহুলপঠিত)। সারা বিকাল, সন্ধ্যা সেখানে কাটিয়ে, অনেকের কাছ থেকে তাদের অসহায় জীবনকাহিনি শুনে বাড়ি ফিরতাম। রাতে বাবাকে সেসব বলতে গিয়ে দেখেছি, তিনি এসবের পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর সবই রাখেন।
আমাদের হাউজিংয়ের আরেকটি ফ্ল্যাটে বাস করতেন বাবার আরেক কবিবন্ধু গোবিন্দ হালদার। তবে আমার পিতৃদেব যেমন সক্রিয়ভাবে কমিউনিস্ট রাজনীতির অনুসারী ছিলেন, গোবিন্দকাকু মনে মনে সমর্থন করলেও প্রকাশ্যে তা ব্যক্ত করতেন না। স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাকে নিয়ে তিনি একেবারেই সদাগরি অফিসের কনিষ্ঠ কেরানির মতোই নির্বিরোধী জীবনযাপন করতেন। কিন্তু তাঁর ভেতরে যে কী ছাইচাপা আগুন রয়েছে তা আমরা তখনো জানতাম না। আমরা জানতাম, এই খর্বাকৃতি পিতৃবন্ধু স্নেহশীল মানুষটি একজন আপাদমস্তক রোমান্টিক গীতিকার। খাতার পর খাতা ভর্তি তাঁর সেসব গান আজো তাঁর পরিবার বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন। নিসর্গ প্রেম ও ভক্তিমূলক গানই লিখতেন তিনি। হঠাৎ আমরা আবিষ্কার করলাম যে, কলকাতার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে যে গোপন 888sport apps বেতার কেন্দ্র গড়ে উঠেছে মূলত কামাল লোহানী প্রমুখ বুদ্ধিজীবীর নেতৃত্বে, তার মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে গোবিন্দ হালদার-রচিত অদ্ভুত সুন্দর ও তেজোদীপ্ত ভাষায় এবং সুরে 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে লেখা অসাধারণ জনপ্রিয় সব দেশাত্মবোধক সংগীত। সেসব গান আমরাও শুনতাম রেডিওতে, আর পাকিস্তানি বাহিনীর মোকাবিলারত মুক্তিযোদ্ধাদের সেসব গান যেমন অনুপ্রাণিত করত, তেমনি করত 888sport app, ফরিদপুর, রংপুর, চট্টগ্রাম, যশোর-খুলনার মানুষদের। যেমন ‘একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি …’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাঙলার স্বাধীনতা আনলে যারা …’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল’
প্রভৃতি সংগীত বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে 888sport appsে গীত হচ্ছে, রেডিও-টেলিভিশনে শোনা যাচ্ছে। বাবার অন্যতম স্নেহের এই কবিবন্ধু ছিলেন 888sport appsের স্বাধীনতা সংগ্রামের সেই আগ্নেয় সময়ে প্রধানতম সখা। কত কী তাঁরা দুজনে মিলে যে আলোচনা করতেন! গোবিন্দকাকুকে পরে 888sport apps সরকার রাষ্ট্রীয় 888sport app download bdে সম্মানিত করে। মনে আছে, মাত্র কয়েক বছর আগে তাঁর মৃত্যুর সময় (১৭ জানয়ারি, ২০১৫) কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে শেষ বিদায় জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন স্বয়ং 888sport appsের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বাবার সঙ্গে গোবিন্দকাকুর এই বৃত্তান্ত এখানে নিবেদন করার একটি কারণ হলো যে, সে-সময় এই দুই বন্ধু যে-যাঁর নিজের মতো করে 888sport appsের মুক্তিসংগ্রামে সৃজনশীল কাজে নিবিড় ও অন্তরঙ্গভাবে যুক্ত ছিলেন প্রায় একই সঙ্গে।
যাই হোক, ১৯৭১ সালের মাঝামাঝি সেই সময়ে একদিন হঠাৎ আবিষ্কার করি একটি ছয় নম্বরের বাঁধানো বঙ্গলিপি (সেই সময় রেশন দোকানেও মিলত) সাদা পৃষ্ঠার খাতা ভর্তি করে পূর্বের মতোনই অতিশয় ক্ষুদে মুক্তাক্ষরে রাত জেগে বাবা লিখে চলেছেন তাঁর অসামান্য 888sport sign up bonusকথা আমার জন্মভূমি 888sport sign up bonusময় 888sport apps। পাণ্ডুলিপি অবস্থায় একটু-আধটু পাঠ করেই বুঝতে পারছিলাম, এটি 888sport appsের ভবিষ্যৎ ইতিহাসের একটি মূল্যবান দলিল। অত্যন্ত দ্রুতগতিতে খাতাটি শেষ করে বাবা লেখাটির প্রেস-কপি তৈরি করে নিতেন দিস্তে কাগজে প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন ইত্যাদি সম্পাদনা করে। শুনলাম, কলকাতায় অফিস করে (শিয়ালদহের কাছে ৯নং অ্যান্টনি বাগান লেন) কাজ করছেন 888sport appর একটি প্রকাশনা সংস্থা মুক্তধারা (স্বাধীন বাংলা 888sport live football পরিষদ), বইটি তারাই ছাপাবেন; এবং তা দুই-তিন মাসের মধ্যেই। এবং যেমন কথা তেমনই কাজ। সুন্দর, শোভন একটি আকর্ষণীয় প্রচ্ছদসহ (নিতুন কুণ্ডুকৃত) প্রকাশিত হলো বইখানি (প্রথম প্রকাশ : সেপ্টেম্বর ১৯৭১)। নিবেদন অংশে লেখক ধনঞ্জয় দাশ আশ্চর্য 888sport sign up bonusমেদুর লেখনীতে ব্যক্ত করলেন এই গ্রন্থ প্রকাশের পশ্চাতে 888sport app কুশীলবের ভূমিকার কথা। সবার আগে বলেছিলেন আমাদের মায়ের কথা যিনি পরম যত্নে বাবার পূর্ববঙ্গে জেলজীবনের (১৯৫০-৫৫) পাঁচ-ছয়টি খাতাকে রক্ষা করে রেখেছিলেন। 888sport sign up bonusময় 888sport apps গ্রন্থের বহু তথ্য এই খাতা থেকেই বাবা সংগ্রহ করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে আরো একটি তথ্য দিতে চাই। বইরূপে প্রকাশিত হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই একটি 888sport live football পত্রিকাতেও রচনার প্রথম খানিকটা অংশ প্রকাশিত হয়েছিল। পত্রিকাটি বিকাশচন্দ্র দাশ-সম্পাদিত শারদ নবাঙ্কুর। এর ফলে পরিচিতজনের মধ্যে বইটি সম্পর্কে একটি প্রাথমিক কৌতূহল তৈরি হয়েছিল।
খবরের কাগজে ও রেডিওতে মুক্তিযুদ্ধের খবর নিত্য শোনা যেত। বিশেষ করে ‘দেবদুর্লভ কণ্ঠে’র অধিকারী দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংবাদ পাঠ শুনে আমাদের ঘুম ভাঙত। সে-সময় 888sport apps থেকে শরণার্থী হয়ে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে এসে ওঠা ১৬ বছরের দামাল কিশোর সুভাষের সঙ্গে আমাদের খুব ভাব হয়ে যায়। কী অমিত তেজ ছেলেটির! এই সাঁই সাঁই করে দৌড়াচ্ছে; তরতরিয়ে সুদীর্ঘ নারকেল গাছে উঠে ডাব পেড়ে নিয়ে আসছে; পাড়ার সুগভীর পুকুরে অকুতোভয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাঁচ কেজি কাতলা বগলদাবা করে উঠে আসছে। পুব-বাংলার ছেলেদের বীরত্ব কানে শুনেছিলাম, সেই প্রথম চোখে দেখি। সুভাষ ছিল আমাদের বালককুলের হিরো।
সন্ধ্যা হলেই আমাদের মাতব্বরি আরো বেড়ে যেত। সারাদিন আকাশে মিগ বোমারু বিমানের ছোটাছুটি দেখতে পেতাম (ভারতের মিগ বেশি, পাকিস্তানের স্যাবার জেট দু-একটি)। ভয়ও লাগত। রাতে ব্ল্যাক-আউটের ঘুটঘুটে অন্ধকারে টর্চ নিয়ে আমরা বানর বাহিনী পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াতাম Air Raid Protection স্বেচ্ছাসেবক রূপে। কার ঘরের জানালা দিয়ে আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে, ব্যাস টর্চের ফোকাস মেরে হুঁশিয়ারি দেওয়া। গাড়ির হেডলাইটের উপরিভাগে কালো আলকাতরা লেপে দেওয়া আছে কি না তা তদারকি করা। অন্ধকারে শান্তি-শৃঙ্খলা, চুরি-ছিনতাইয়ের হাত থেকে গৃহস্থকে বাঁচানো – এসব কম কাজ নাকি! তার ওপর নাটক। আমাদের ক্লাব থেকে 888sport appsের মুক্তিযুদ্ধের ওপর নাটক নামিয়েছিলাম। অভিনয় হতো যোগোদ্যান যাওয়ার পথে স্বপ্নাবাগানে আমাদের ক্লাবের কর্মকর্তা সমাদ্দারদের বাড়িতে। ওদের এক দিদি এবং প্রায় হাফডজন ভাই প্রদীপ, মৃত্যুঞ্জয়, বুলবুল, চন্দন, বাবলা প্রমুখ সব মূল চরিত্রে। সবার হাতে একটা করে টয়-পিস্তল, মাথায় টুপি, সবার লক্ষ্য খানসেনা খতম। পালার নাম জয় বাংলা। আরেকটি পালা শয়তানের হাসি। এটি ছিল 888sport appর গভর্নর জেনারেল অত্যাচারী টিক্কা খানের কাণ্ডকারখানা নিয়ে। পাড়ার বড়দারা দেখতে আসতেন সেসব প্রযোজনা। মৃত্যুঞ্জয় ছিল মূল পরিচালক। তারা এখন সবাই কোথায় কে জানে?
কারো কারো বাড়িতে ওপার বাংলার আতঙ্কিত-লাঞ্ছিত কোনো পরিবার হঠাৎ এসে উঠলে কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ শোনা যায়। তাতে শুধু ভয় আরো বাড়ে। ওখানে আমাদের পরিবারের এক অংশ তখনো রয়ে গেছে। বলা বাহুল্য, শোনা বিবরণ হয়তো সবটা নয়। ঘটনা হয়তো আরো ভয়াবহ। তার ওপর 888sport promo code নির্যাতনের খবর যতটা সম্ভব চেপে রাখা হয়। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার ছিল যে, পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব প্রান্তের সমস্ত বর্ডার দিয়ে ওপার বাংলার মানুষের আগমন ঘটছে অগণন 888sport free betয়। একই জিনিস আসাম ও ত্রিপুরাতেও ঘটছে। কেন্দ্রীয় সরকার শুরু থেকে বর্ডার যেমন খুলে রেখেছে, তেমনি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আগতদের জন্য শরণার্থী শিবির স্থাপন ও 888sport app ব্যবস্থা করে চলেছে। এই তিনটি রাজ্যে শরণার্থী আগমন নতুন কোনো ঘটনা নয়। যদিও আগের কারণ আর এখনকার কারণের মধ্যে তফাৎ রয়েছে। এখন যেন শত কষ্টের মধ্যে একটা স্বপ্ন দানা বাঁধছে। পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান তথা সদ্যঘোষিত 888sport appsের যুদ্ধ চলছে। মনে হয়েছিল, ধর্মভিত্তিক জাতিবাদের নামে বাংলা ভাগের বিরুদ্ধে বাঙালিরা একটা জবাব দিচ্ছেন। আমার মনে এটারই একটা অস্পষ্ট আবেগ তখন কাজ করছিল। যদিও পরবর্তীকালে বুঝেছি, বিষয়টা বাংলাভাগ ছিল নয়। ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বাধিকারের লড়াই। যাই হোক, স্বাভাবিকভাবেই এটা প্রত্যাশিত ছিল যে, যেহেতু এটা বাঙালিদেরই লড়াই, তাই এই তিন প্রদেশের বাঙালিরা, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা, যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পূর্ববঙ্গীয় উদ্বাস্তু আছেন, তাঁরা কীভাবে সাড়া দিচ্ছেন, এটা নিশ্চয়ই দৃশ্যমান হবে। খুব স্বতঃস্ফূর্ত না হলেও তা দৃশ্যমান হতো নানাভাবে। উদ্বাস্তু মানুষদের জন্য তরুণদল ঘরে ঘরে চাঁদা তুলত, খাদ্যশস্য, জামা-কাপড় সংগ্রহ করত। সেই বছর পূজোর কোনো কোনো থিম হিসেবে উঠে এসেছিল 888sport appsের মুক্তিসংগ্রামের চালচিত্র।
মুক্তিযুদ্ধ একদিন শেষ হয়। ১৬ই ডিসেম্বর (১৯৭১) 888sport appয় ভারত-888sport apps যৌথ কমান্ডের কাছে জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে; কিন্তু আত্মসমর্পণের দুদিন আগে নারকীয়, নৃশংস বর্বরোচিত ঘটনা ঘটায় হানাদাররা। 888sport appsের প্রথম সারির বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, অধ্যাপকদের তারা নির্বিচারে হত্যা করেছিল। নিহত হন অধ্যাপক-888sport live footballিক মুনীর চৌধুরীসহ বাবার অসংখ্য কমরেড, বন্ধু ও প্রিয়জন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন খুলনাতে পাকিস্তানি বাহিনী দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার সংবাদ, যার বলি হয়েছিলেন বাবার মা সুহাসিনী দেবী) ও দিদিমা (কুমুদিনী দেবী)। ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে এই সংবাদ কলকাতায় আমাদের বাসায় বয়ে নিয়ে আসে বাবার গ্রামের এক প্রতিবেশী ভাই – নিমাই। তখন ‘পাক বর্বরতার বলি 888sport live footballিকের মা ও দিদিমা’ শীর্ষক সংবাদ প্রথম সারির অনেক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। এ-সময় আমাদের মধ্যচল্লিশের বাবাকে ভেঙে পড়তে দেখেছিলাম। আমাদের মামাবাড়ির দিকের আত্মীয়স্বজন সেদিন তাঁকে কোনোক্রমে সামলেছিলেন। বেশ কয়েক বছর পরে স্বাধীন-সার্বভৌম 888sport appsের কয়েকটি সাংস্কৃতিক (তার মধ্যে ‘উদীচী’ অন্যতম) সংস্থা তাঁকে সংবর্ধিত করেন তাঁর গ্রন্থ রচনার সূত্রে। তখন তিনি তাঁর গ্রামের ভিটাবাড়ি থকে কুড়িয়ে নিয়ে এসেছিলেন একমুঠো জন্মভূমির মাটি; যা তাঁর শেষ ইচ্ছানুসারে ২০০৩ সালের ৫ই এপ্রিল অন্তিম সৎকারের শেষ মুহূর্তে তাঁর কপালে লেপে দেওয়া হয়।
আজ অনেকটা সময় বাহিত হয়ে গেছে। মনে হয় সেদিনের শিশুরাষ্ট্রটির জন্য যে-ধরনের শুশ্রƒষার প্রয়োজন ছিল তা নেওয়া হয়নি নানা কারণে। অনিবার্যভাবেই সেখানে এসে যায় রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রসঙ্গ। স্বাধীন 888sport apps তো আসলে মূলধারার বাঙালির একটি স্বপ্ন ছিল। সে-স্বপ্নের বাস্তবায়নে বিঘ্ন ঘটলেও তার সত্তাটিকে রক্ষার জন্য আজ সর্বস্তরের সক্রিয়তার প্রয়োজন। 888sport appsের পঞ্চাশ বছর পূর্তি হতে চলেছে। আশা করা যায়, একদিন সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.