খুব করে ভালো না লাগলে, কি live chat 888sport কি নাটক-নাট্য – কোনোটা নিয়েই লিখতে মন চায় না। তাছাড়া অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি মন না মজলে, মন থেকে না লিখলে লেখাটাও কেমন যেন মনমরা হয়ে যায়, পানসে লাগে। গত ৩০ এপ্রিল ২০১৯ সালে লোকনাট্যদল-প্রযোজিত আমরা তিনজন 888sport apps 888sport live chatকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় দেখে মন যেন কেমন করে উঠল। মন খারাপ করা প্রযোজনাটি আবার ভালোও লাগল! নাট্যযজ্ঞটি 888sport appর সন্তান বুদ্ধদেব বসু-রচিত গল্প ‘আমরা তিনজন’ অবলম্বনে নির্মিত। এর নাটকায়ন, মঞ্চ ও সংগীত-পরিকল্পনা এবং নির্দেশনা তথা নাট্যায়নের কাজটি করেছেন 888sport live chatজন লিয়াকত আলী লাকী।
গল্পের লেখক কবি, গল্পটির বাক্য-বর্ণনায় কাব্যলক্ষণ স্পষ্ট। গল্পের মঞ্চায়নও কাব্যধর্মী। সেজন্য প্রযোজনাটিও ‘মঞ্চকাব্য’ হয়ে উঠেছে। বুদ্ধদেব বসু 888sport appর পুরানা পল্টনের বাসিন্দা ছিলেন। পরে কলকাতা চলে যান; কিন্তু ভুলতে পারেননি পুরানা পল্টনের সেই সুখময় অল্পবয়সের 888sport sign up bonus। সদ্য কৈশোর পেরোনো যুবক বুদ্ধদেব গল্পের ভেতর দিয়ে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা 888sport app download for android করেছেন : সেই ১৯২৭-২৮ সালের পুরানা পল্টনের প্রাকৃতিক পরিবেশ, তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর ঘটনা, পাড়ার মেয়ে অন্তরার জন্য তিন বন্ধুর আকুতি এবং আরো কিছু প্রসঙ্গ প্রকাশ পেয়েছে গল্পে। বর্তমান রচনায় দুটি দিক থেকে প্রযোজনাটি অনুধাবন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে : এক. এর ড্রামাটিক টেক্সটটি তথা গল্পের নাটকায়নের ধরনটি কেমন এবং দুই. এর পারফরম্যান্স টেক্সট তথা নাট্যায়ন প্রচেষ্টাটি কিরূপ।
ড্রামাটিক টেক্সট/ নাটকায়ন
বলা দরকার যে, লিয়াকত আলী লাকী বুদ্ধদেব বসুর গল্পের নাটকরূপ দেননি, শুধু নাটকায়ন করেছেন – তাঁর ভাষায় ‘অবলম্বন’ করেছেন। গল্পের সবটাই গ্রহণ করেছেন, কোনো কিছুই বর্জন করা হয়নি। গল্পে যার যার চরিত্রে যে যে সংলাপ ছিল তার সবই বহাল রেখেছেন ড্রামাটিক টেক্সটে; চরিত্রগুলোর গল্পস্থ বর্ণনাগুলোও দিয়েছেন। বর্ণনাগুলো দর্শকগণের উদ্দেশে প্রযুক্ত, আর সংলাপগুলো চরিত্রবর্গ তাদের নিজেদের মধ্যে চালাচালি করে। সংলাপ – কাব্যাক্রান্ত। 888sport app download apkর চরণের মতো একেকটি সংলাপ। ছন্দময়-কাব্যালংকার সমৃদ্ধ।
সংযোজন করা হয়েছে শুধু কিছু রবীন্দ্রসংগীত, চরিত্রের মনের অবস্থার প্রকাশ ও ঘটনাকে মাত্রা দেওয়ার জন্য, গল্পের মেজাজ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আবহ তৈরির জন্য। প্রেম-বিরহ প্রভৃতি পর্যায়ের গান দিয়েই আবহ তৈরি করা হয়েছে। শ্রাবণ-রাতের আবহ তৈরিতেও বর্ষাবিষয়ক গান ব্যবহৃত হয়েছে। বোঝা যায় অনেক ভেবে গানগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। গানগুলো নির্বাচন করেছেন লিয়াকত আলী লাকী নিজেই। পুরো গান নয়, অংশবিশেষ। কিছু গান মঞ্চে গাওয়া হয়েছে, কিছু বেজেছে সাউন্ডট্র্যাকে। গল্পটি বাংলা 888sport live footballের একটি মেজর কাজ – তাই গল্পের মূল ভাব-বক্তব্যের প্রতি বিশ্বস্ত থাকাটা জরুরি ছিল। লিয়াকত আলী লাকীও তা-ই থেকেছেন। গল্পটি 888sport sign up bonusকাতরতায় আক্রান্ত। এই 888sport sign up bonusকাতরতাকে নাটকায়নে যথাযথভাবেই পরিবাহিত করেছেন তিনি।
গল্পটি এরকম : ১৯২৭ সালের 888sport appর পুরানা পল্টন। বিকাশ, অসিত এবং হিতাংশু তিন বন্ধু। দিনের বেশিরভাগ সময় তিন বন্ধু একসঙ্গে থাকে। তিন বন্ধু একে অপরের প্রেমে পড়ে আবার তিনজনই একসঙ্গে অন্য একজনের প্রেমে পড়ে, নাম তার অন্তরা, বাড়ির সবাই যাকে তরু বলে ডাকে, তবে তিন বন্ধুর কাছে মেয়েটির নাম হয়ে যায় ‘মোনালিসা’। একদিন কাকতালীয়ভাবে রাস্তায় তাদের সঙ্গে দেখা হয় তরু ও তার বাবা-মার। তরুর বাবা দে সাহেব তাদের বাসায় আমন্ত্রণ জানায়। বৃষ্টিমুখর একদিনে তারা তরুর বাড়ি যায়; কিন্তু তার সঙ্গে তেমন কোনো কথা হয় না। এর মধ্যেই সে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। তিন বন্ধুর ভীষণ মন খারাপ হয়। তরুর বাবা-মা তাদের সহায়তা চাইলে প্রায় এক মাস দিন-রাত পরিশ্রম করে তারা তরুকে সুস্থ করে তোলে। তার সঙ্গে তাদের একটি আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়।
তারপর একদিন তরু ভালো হলে শরীর উদ্ধারে চলে যায় রাঁচি। ঠিকানা রাখেনি বলে তিন বন্ধুর খুবই মন খারাপ। তবে যেদিন ওরা ফিরল, সেদিন স্টেশনে কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি আর লালচে মুখাবয়বের মোনালিসাকে দেখে তিন বন্ধু মুগ্ধ হয়। ট্রেনের মধ্যে তরুর সে কি গল্প, দেখতে দেখতে তিন বন্ধু চারজন হয়ে উঠল। একদিন তরুর মা তাদের ডেকে জানায় তরুর বিয়ের সংবাদ। খবরটি শুনে তিন বন্ধু হতভম্ব হয়ে যায়। বিয়ের পর তরু চলে যায় কলকাতা। কিছুদিন পর হঠাৎ জানা যায়, সে 888sport appয় আসছে এবং অমত্মঃসত্ত্বা। পোয়াতি তরুকে তিন বন্ধু ঘিরে থাকে সবসময়। ও যাতে ভালো থাকে, কখনো মন খারাপ না করে, সে চেষ্টাতেই দিন কাটে তাদের।
এক অমাবস্যার রাতে প্রসব-বেদনায় ছটফট করতে থাকে তরু। তার চাপাকান্না তিন বন্ধুর বুক বিদীর্ণ করে। শীতের রাতে মাঠের মধ্যে না-খেয়ে, না-ঘুমিয়ে তিন বন্ধু রুদ্ধশ্বাসে প্রতীক্ষা করতে থাকে। ভোরের প্রথম ছাইরঙা আলোয় ওরা দেখতে পায় দে সাহেবের বেদনার্ত নির্বাক মুখ। অতঃপর রাশি রাশি ফুল আরো কত কিছু দিয়ে সাজানো হলো তরুর শবদেহ। জীবিত তরুর তিন বন্ধু তার অস্তিমযাত্রায় তার শ্মশানবন্ধু হয়ে তারই শবদেহ বয়ে নিয়ে চলে। এভাবেই শেষ হয় 888sport sign up bonusকাতরতায় ভরা ড্রামাটিক টেক্সটটি।
গল্পটি মনে হয় দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পরই রচিত এবং তখনো দেশভাগ হয়নি। বিষয়টি বয়সী বিকাশ একেবারে শেষে হিতাংশু সম্পর্কে যা বলে তা থেকে বোঝা যায়। বিকাশ বলে : ‘হিতাংশু এমএসসি পাস ক’রে জার্মানিতে গেলো পড়তে আর ফিরল না, সেখানকারই একটা মেয়েকে বিয়ে ক’রে সংসার পাতল, এখন এই যুদ্ধের পরে কেমন আছে, কোথায় আছে কে জানে।’ যে-যুদ্ধের কথা বিকাশ বলছে তা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধই হবে। সম্ভবত ১৯৪৬ সালেই গল্পটি লিখিত হয়েছে। কারণ দেশভাগ হয়েছে ১৯৪৭ সালে – ওই সালে বা পরে লিখলে দেশভাগ প্রসঙ্গটি গল্পে আসার কথা।
গল্পের তিন বন্ধুর একজন বুদ্ধদেব নিজে, যার নাম বিকাশ। সবাই সমবয়সী। বয়সটাই তাদের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে। আর তখন জনমানুষের 888sport free betও এ-শহরে কমই ছিল। মেয়েদের 888sport free betও অল্প, তদুপরি মেয়েরা ঘরের বাইরে বেরোতো কম। ১৯২৭-২৮ সালের পুরানা পল্টনের তিন বন্ধু একসঙ্গেই সময় কাটাত, আড্ডা দিত, সাইকেল চালিয়ে রমনা-রেসকোর্সের মাঠ চষে বেড়াত। শহরের একমাত্র সিনেমা হলে ছবি দেখত।
রিফ্রেইন বা গানের ধুয়ার মতো বারবার কিছু সংলাপ ড্রামাটিক টেক্সটে ফিরে ফিরে আসে, যেগুলো পুরো নাটকায়নটিকে সংগীতের মোড়কে ঢেকে দিয়েছে। শুরুতে, মাঝে ও শেষে সংলাপগুলো বুদ্ধদেব গুঁজে দিয়ে কাব্যভাব সৃষ্টি করেছেন গল্পটিতে। এই ভাবটিরই সম্প্রসারণ ঘটানো হয়েছে নাটকায়নের ক্ষেত্রে। যেমন শুরুতেই বয়সী বিকাশ মঞ্চে প্রবেশ করে দর্শকদের উদ্দেশে বলছে : ‘আমরা তিনজন একসঙ্গে তার প্রেমে পড়েছিলাম : আমি, অসিত আর হিতাংশু; 888sport appয় পুরানা পল্টনে, উনিশ-শো সাতাশে। সেই 888sport app, সেই পুরানা পল্টন, সেই মেঘে-888sport app সকাল!’ এরপরই নাট্যযজ্ঞ ফ্ল্যাশব্যাকে চলে যায়। যুবক বিকাশ গল্প উন্মোচন করে এই বলে যে : ‘আমরা এসেছিলাম কিছু পরে, অসিতদের বাড়ির তখন ছাদ পিটোচ্ছে। একটা সময় ছিল, যখন ঐ তিনখানাই বাড়ি ছিল পুরানা পল্টনে; বাকিটা ছিল এবড়োখেবড়ো জমি, ধুলো আর কাদা, বর্ষায় গোড়ালি-জলে গা-ডোবানো হলদে-হলদে-সবুজ রঙের ব্যাঙ আর নধর সবুজ ভিজে-ভিজে ঘাস। সেই বর্ষা, সেই পুরানা পল্টন, সেই মেঘ-888sport app দুপুর! আমরা তিনজন একসঙ্গে থাকতাম সব সময় – যতটা এবং যতক্ষণ থাকা সম্ভব।’
যুবক বিকাশ আরো বলে : ‘আমরা তিনজন তিনজনের প্রেমে পড়েছিলাম, আবার তিনজন একসঙ্গে অন্য একজনের প্রেমে পড়লাম, সেই 888sport appয়, পুরানা পল্টনে উনিশ-শো সাতাশ সনে।’ গল্পের মাঝামাঝি এসে তরু অসুস্থ হয় এবং স্বাস্থ্যোদ্ধারে রাঁচিতে যায়। তখন যুবক বিকাশ বলে : ‘মোনালিসা, কোনোদিন জানলে না তুমি, কোনোদিন জানবে না, কী ভালো আমাদের লেগেছিলো, কী সুখী আমরা হয়েছিলাম, সেই সাতাশ সনের বর্ষায়, পুরানা পল্টনে, দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, সেই জ্বরে-ঝড়ে, বৃষ্টিতে থমথমে অন্ধকারে, ছমছমে ছায়ায়। দেড় মাস তুমি শুয়ে ছিলে, দেড় মাস তুমি আমাদের ছিলে।’
তারপর তরুর বিয়ে হয়। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তরুর মৃত্যু হলে নাট্যযজ্ঞের একেবারে শেষে বয়সী বিকাশ হুইলচেয়ারে করে এসে সমাপ্তিসূচক সংলাপ হিসেবে বলে : ‘অসিত আর হিতাংশুই সব করলো, রাশি রাশি ফুল নিয়ে এলো কোথা থেকে, আরো কত কিছু, বেলা দুটো পর্যন্ত শুধু সাজাল শুধু সাজাল, তারপর নিয়ে যাবার সময় সকলের আগে রইল ওরা দু’জন। আরো অনেকে এলো কাঁধ দিতে, শুধু আমি বেঁটে ব’লে বাদ পড়লাম, পিছনে পিছনে হেঁটে চললাম একা-একা। ঠিক একা-একাও নয়, কারণ ততক্ষণ হীরেনবাবু এসে পৌঁছেছেন, বাড়ির কাপড়ে জুতো-ছাড়া পায়ে তিনিও চললেন আমার পাশে পাশে। হীরেনবাবু পরের বছর আবার বিয়ে করলেন, দে-সাহেব চলে গেলেন বদলি হ’য়ে। কিছুদিন পর্যন্ত লোকেরা বলাবলি করলো ওঁদের কথা, তারপর তারা-কুটিরের একতলায় অন্য ভাড়াটে এলো, পুরানা পল্টনে আরও অনেক বাড়ি উঠলো, ইলেকট্রিক আলো জ্বললো। অসিত স্কুল থেকে বেরিয়ে চাকরি নিলো তিনসুকিয়ায়, ছ-মাসের মধ্যে কী একটা অসুখ ক’রে হঠাৎ মরে গেলো। … আর আমি – আমি এখনো আছি, 888sport appয় নয়, পুরানা পল্টনে নয়, উনিশ-শো সাতাশে কি আটাশে নয়, সে-সব আজ মনে হয় স্বপ্নের মতো, কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু স্বপ্ন, ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে একটু হাওয়া – সেই মেঘে-888sport app সকাল, মেঘ-ডাকা দুপুর, সেই বৃষ্টি, সেই রাত্রি, সেই – তুমি! মোনালিসা, আমি ছাড়া আর কে তোমাকে মনে রেখেছে!’
এই কাব্যময় রিফ্রেইন তথা ধুয়া বা কাব্যময় বাক্যগুলো (সেই 888sport app, সেই পুরানা পল্টন, সেই মেঘে-888sport app সকাল!/ সেই বর্ষা, সেই পুরানা পল্টন, সেই মেঘ-888sport app দুপুর!/ সেই সাতাশ সনের বর্ষায়, পুরানা পল্টনে, দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, সেই জ্বরে ঝড়ে, বৃষ্টিতে থমথমে অন্ধকারে, ছমছমে ছায়ায়।/ সেই মেঘে-888sport app সকাল, মেঘ-ডাকা দুপুর, সেই বৃষ্টি, সেই রাত্রি, সেই – তুমি!) বারবার ড্রামাটিক টেক্সটে আসার ফলে মঞ্চমাঝে একটা কাব্যভাবের জন্ম হয়েছে। এজন্যই প্রযোজনাটিকে ‘মঞ্চকাব্য’ বলা হয়েছে। এছাড়াও কিছু সংলাপ কাব্যভাবম–ত। যেমন তরুর বিয়ের পর তার বাড়ি ঘুরে এসে অসিত যে বলে – ‘হঠাৎ যেমন নতুন লাগল তাকে, একটু অন্যরকম, সিঁথিতে জ্বলজ্বলে সিঁদুর, পরনে কড়কড়ে শাড়ি, কানে হাতে গলায় চিকচিকে গয়না, আর কেমন একটা গন্ধ দিচ্ছে গা থেকে – হীরেনবাবুর সেন্টের গন্ধ না, নতুন ফার্নিচারের মদ-মদ গন্ধ না, চুলের তেল কি মুখের পাউডারেরও না – আমার মনে হ’লো এই সমস্ত মিলিত গন্ধের যেটা নির্যাস, সেটাই ভর করেছে মোনালিসার শরীরে।’ – তাতেও কাব্যগন্ধ উপস্থিত। তরুর আসন্ন মৃত্যু আঁচ করতে পেরে অসিত বলে – ‘দুপুরের আগেই বিকেল হ’য়ে গেলো সেদিন, বিকেলের আগেই অন্ধকার।’ আবার তরুর মৃত্যুর সময়কার বর্ণনা দিতে গিয়ে বিকাশ বলে – ‘ভোরের প্রথম ছাইরঙা আলোয় দেখলাম তাঁর ঠোঁট নড়ে উঠলো, এমন স্থির হ’য়ে আমরা তাকিয়েছিলাম আর এমন স্তব্ধ চারদিক যে তাঁর কথাটা আমরা কানে না-শুনে যেন চোখ দিয়ে দেখলাম।’ – এ-সংলাপগুলোও কাব্যরসম–ত।
পারফরম্যান্স টেক্সট/ নাট্যায়ন
নাট্যায়নের শুরুতেই বিলম্বিত লয়ে সেতারের ধ্বনি শোনা যায়। সাইক্লোরামায় স্থির মেঘ। সন্ধ্যার আবহ তৈরি করা হয় পুরনো দিনের পাঁচটি বাতিগাছে আলো জ্বালিয়ে। তিনজন বয়স্ক নওকর বাতিগুলো জ্বালিয়ে যায়। বাতি জ্বালানো আর নেভানোর মধ্য দিয়েই মঞ্চে সন্ধ্যা-সকালের আবহ তৈরি করা হয়, দৃশ্যান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। মঞ্চের দুদিকে চারটি বাইসাইকেলকেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ছোট ছোট অনেক বক্সও রাখা – ওগুলোর তিনটির ওপর তিনজন অভিনয়888sport live chatী বসে আছে। বক্সগুলো দিয়েই অন্তরাদের বাড়ি, রেলের কামরা, ঘোড়ার গাড়ি, তরুণ বিকাশের লেখার টেবিল, দিগন্ত-বিসত্মৃত মাঠ, অসুস্থ অন্তরার শোবার বিছানা, তরুর শবাধার ইত্যাদি বানানো হয়। এ-কাজে কখনো নওকরগণ, কখনো অভিনয়888sport live chatীরা অংশ নেয়। নরম-কোমল পেইল ইয়েলো আলো মঞ্চমাঝে। এসবের মধ্যে ‘ওগো তৃষ্ণা আমার বক্ষজুড়ে …’ গানটি গাইতে গাইতে হুইলচেয়ারে করে বয়সী বিকাশ মঞ্চে আসে – বিকাশই ১৯২৭-২৮ সালের পুরানা পল্টনের সেইসব দিনরাত্রির 888sport sign up bonus, ‘সেই পুরানা পল্টন, সেই মেঘে-888sport app সকাল!’, তার নিজের, বন্ধু অসিত, হিতাংশুর গল্প বলে যায়। তিন বন্ধু একসঙ্গে যার প্রেমে পড়েছিল, সেই রহস্যময়ী অন্তরা ওরফে তরু ওরফে মোনালিসার গল্প বলে যায়।
বয়সী বিকাশই এই
গল্পের কথক। বস্ত্তত তার কথনের এক পর্যায়েই গল্পটি পেছনে চলে যায়, ফ্ল্যাশব্যাকে
888sport sign up bonus-বি888sport sign up bonusর দোঁহা মঞ্চমাঝে পরিবেশিত হয় – সেই ১৯২৭-২৮ সালের ঘটনাগুলো ঘটতে থাকে – কখনো সংলাপে, কখনো বর্ণনায়, কখনো গানে, কখনো নীরবতায়। বয়সী বিকাশ
প্রস্থানের সময় গাইতে থাকে ‘নিবেছে মোর বাতি …।’ পুরো নাট্যযজ্ঞে কিছু গান
অভিনয়888sport live chatীদের কণ্ঠনিঃসৃত, কিছু রেকর্ডকৃত। নাট্যায়নের শেষ দৃশ্যেও এই বয়সী
বিকাশই কষ্টভরা মন নিয়ে হুইলচেয়ারে বসে মঞ্চে আসে। তার হাতে তরুর সাদা-কালো ছবি। মঞ্চে আসতে আসতে সে গান ধরে ‘নয়ন ছেড়ে
গেলে চলে …।’ এই রবীন্দ্রসংগীতটি গল্পের শেষাংশের সঙ্গে গেছে, আবেগ তৈরিতে সহায়ক
হয়েছে। লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পরা তরু এই সময়
বিকাশের পিছনে এসে দাঁড়ায়। তখন বিকাশ আবার গেয়ে ওঠে – ‘তোমায় নতুন করে পাবো বলে …’। মঞ্চে তখন গল্পের যে-পরিবেশ ছিল তার
সঙ্গে গানটি যায়নি। তখন তরুকে
শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে – তিন বন্ধু
আর তরুর গল্পটিও অবশিষ্টহীনভাবে শেষ – তখন বিকাশ সমাপ্তিসূচক সংলাপ হিসেবে যা বলে
তা ড্রামাটিক টেক্সটবিষয়ক আলোচনার শেষের দিকে উদ্ধৃত হয়েছে। দীর্ঘ অথচ মন খারাপ
করা সমাপ্তিসূচক সেই সংলাপটি যেভাবে কাতর করেছে, গানটি তা করতে পারেনি। ভালো হতো
যদি ভরাট কণ্ঠে গানটি রেকর্ড করে শোনানো হতো। তাতে মঞ্চমাঝে 888sport sign up bonusমেদুর আবহ
তৈরিতে অধিক সহায়ক হতো।
অনেক করে মন খারাপ না হলে কোনো 888sport live chatকর্মেরই জন্ম হয় না। বুদ্ধদেব বসুর গল্পটি পড়ে লিয়াকত আলী লাকীর মন নিশ্চয় খারাপ করেছিল। আর মঞ্চে প্রযোজনাটি দেখে আমার-আমাদের মন খারাপ হয়েছে। এই মন খারাপ হওয়ার বিষয়টি মঞ্চে নাট্যায়ন প্রত্যক্ষ করার সময়ই সংঘটিত হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রযোজনাটির নির্দেশনার ধরন, অভিনয়শৈলী প্রধান ভূমিকা রেখেছে। সঙ্গে আলো-মঞ্চসজ্জা-আবহসংগীত-পোশাক পরিকল্পনা সহযোগী উপাদান হিসেবে সক্রিয় থেকেছে – সব মিলিয়েই তৈরি হয়েছে পারফরম্যান্স টেক্সটটি। পারফরম্যান্সের ভেতর দিয়েই মঞ্চে 888sport sign up bonusমথিত কষ্ট নির্মিত হয়েছে। দেড় ঘণ্টার মতো নাট্যযজ্ঞটির সময়সীমা। এর মধ্যেই গল্পটির মধ্যে স্থিত 888sport sign up bonusকাতরতাকে নাট্যায়নের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে।
নাট্যায়নের ধরনটি অর্গানিক ইউনিটির কথাই মনে করিয়ে দেয়। নাট্যায়নের মূল ইউনিট বা উপকরণগুলো হচ্ছে সেট-প্রপস্, অভিনয়888sport live chatীদের পোশাক-পরিচ্ছদ, মেকআপ, মঞ্চ-আওতায় অভিনয়888sport live chatীদের চলাফেরা, তাদের অভিনয়, আলোর সংগত, আবহসংগীত ইত্যাদি। এগুলোর সুষম সমন্বয়ের মাধ্যমে অর্গানিক ইউনিটিটি গঠন করেছেন নির্দেশক। আর এ-কাজে বাস্তবধর্মী উপস্থাপ888sport promo codeতিই অনুসৃত হয়েছে, কারণ বহুদূরে ফেলে আসা এক সুখময় অথচ কষ্টদায়ক 888sport sign up bonusই নির্দেশক মঞ্চে উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। কোনো রকমের গিমিক বা অ্যাবস্ট্রাকশনের আশ্রয় নেওয়া হয়নি। তাতে করে কিন্তু বর্তমানে থেকেও অতীতে ফিরে যেতে অসুবিধা হয়নি দর্শকের। নাট্যায়নকর্মটি দর্শকের মনে ধরার এটাও অন্যতম একটি কারণ। বাস্তববাদ যে 888sport live chatকলার জগৎ থেকে কখনো লুপ্ত হবে না তা প্রযোজনাটি প্রত্যক্ষ করে আবার অনুভব করলাম।
সুচারু নাট্যায়নের কাজই হচ্ছে অর্গানিক ইউনিটি তৈরি করে দর্শক-মনে নানা রসের সঞ্চার করা, নানা ভাবের বিস্তার ঘটানো। সুখ-দুঃখবহ 888sport sign up bonusময় করুণরসের সঞ্চার-বিস্তার ঘটানোর এই কাজটি নির্দেশক সুচারুভাবেই সম্পন্ন করেছেন। সেজন্য গল্পের সুখ-দুঃখবহ মেজাজটি অক্ষুণ্ণ থেকেছে মঞ্চে। মঞ্চে যেন আমরা একই সময়ে গল্পটি পাঠ করি, আবার এর নাট্যায়নটি প্রত্যক্ষও করি! বুদ্ধদেব বসু যেন অনুপস্থিত থেকেও উপস্থিত! লিয়াকত আলী লাকী ও তাঁর দল মঞ্চে উপস্থিত থেকে বুদ্ধদেব বসুর অনুপস্থিতিকে বুঝতে দেয়নি। আমার মতে, এখানেই এই প্রযোজনাটির সর্বোচ্চ সাফল্য।
প্রযোজনাটির সেট, আলো ও আবহসংগীত সাজেস্টিভ। আর বাকি সব ইউনিটই বাস্তবধর্মী। আলোচ্য প্রযোজনার সেট-পরিকল্পনার দায়িত্বে ছিলেন সুজন মাহাবুব – তিনি গল্প-উপযোগী সেটই নির্মাণ করেছেন। সেটের প্রধান উপকরণগুলোর কথা ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি। সব উপকরণই পুরনো দিনের আবহ তৈরিতে সহায়ক হয়েছে। এছাড়া তরুদের বাড়ির অবস্থান বোঝাতে একটি তুলসীগাছ মঞ্চের এক কোণে একসময় রাখা হয়, তরুর মা ‘দুর্গা দুর্গা’ বলে তাতে জলও দেয় – এতেও পুরনো দিনের 888sport sign up bonus নির্মিত হয়। পেছনের পর্দায় প্রায় সারাক্ষণ ব্যাক প্রজেকশনের মাধ্যমে আকাশে স্থির মেঘ দেখানো হয়েছে। এ-উপকরণটিও গল্পে বলা ‘সেই মেঘে-888sport app সকাল, মেঘ-ডাকা দুপুর, সেই বৃষ্টি’ কথাগুলোকে মঞ্চে প্রতিস্থাপন করে। তবে মেঘগুলো মাঝে মাঝে উড়ে চললে মঞ্চে গতির সঞ্চার হতো।
বয়সী বিকাশের চরিত্রে লিয়াকত আলী লাকী নিজেই অভিনয় করেছেন। নিজ চরিত্রের মধ্যে লীন হয়ে গেছেন বলেই মনে হলো। তাঁর সহজাত অভিনয় প্রতিভার গুণেই চরিত্রটি বিশ্বাস্য হয়ে উঠেছে, করুণরসের সঞ্চার করেছে। তরুণ বয়সের বিকাশের চরিত্রে মাসউদ সুমন দারুণ অভিনয়শৈলী দেখিয়েছেন। তিনি একাই নাট্যযজ্ঞটিকে অনেকদূর টেনে নিয়ে গেছেন। চরিত্রটিকে সেই ১৯২৭-২৮ সালের পুরানা পল্টনে স্থাপন করেছেন। তবে তাঁর স্বারিক তথা বাচিক অভিনয়ে বাঙাল টান থাকলে চরিত্রটি স্থানিক ভিত্তি পেত। তাছাড়া দুই বিকাশের মধ্যে বয়সের কারণে শারীরিক আকারগত পার্থক্যটি গ্রহণযোগ্য হলেও এদের গায়ের বর্ণগত তফাতটি চোখে লাগে, দুজন যে একই ব্যক্তি তা ব্যক্ত করে না। বয়সী বিকাশ শ্যামলা আর তরুণ বিকাশ ধবধবে সাদা-ফর্সা। মানুষের বয়স বাড়লে দেহগত আকারের পরিবর্তন হলেও গাত্রবর্ণগত পরিবর্তন হয় না বললেই চলে। এখন যেটা করা যায় সেটা হলো, তরুণ বিকাশের মুখম-ল ও গায়ের প্রকাশিত অংশ রূপসজ্জার মাধ্যমে কিছুটা শ্যামলাবরণ করে দেওয়া। তাছাড়া বয়সী বিকাশের পোশাকেও পরিবর্তন আনা দরকার বলে মনে করি – তিনি কোট-প্যান্ট না পরে পাজামা-পাঞ্জাবি পরলে যথাযথ হতো, কারণ বুদ্ধদেব সম্ভবত ১৯৪৬-৪৭ সালের দিকেই গল্পটি লিখেছেন – ওই সময় তিনি কলকাতায় পড়ান এবং প্রায়শই পাজামা-পাঞ্জাবি পরতেন। কোট-প্যান্ট পরতেন বিদেশে অধ্যাপনাকালে। পাজামা-পাঞ্জাবি পরলে যুবক বয়সী বিকাশের সঙ্গে বয়সী বিকাশের একধরনের সাযুজ্যও তৈরি হবে। তাতে করে উভয় বিকাশকে একই ব্যক্তি বলে ধরে নিতে দর্শকগণের বেগ পেতে হবে না।
হিতাংশু চরিত্রে আজিজুর রহমান সুজন এবং অসিত চরিত্রে ফজলুল হক চোস্ত অভিনয় করেছেন। তাঁরা সিজন্ড অভিনয়888sport live chatীর মতোই দাপটের সঙ্গে তাঁদের স্ব-স্ব চরিত্রকে মঞ্চে জীবন্ত রেখেছেন। তরুও ভীষণ ভালো কাজ করেছেন। তরুর মুখে সংলাপ কম। কিন্তু মঞ্চে তাঁর অবস্থান ছিল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। এই অবস্থান ধরে রেখে তিনি যে সারাক্ষণ তরু হয়ে থেকেছেন এবং শুধু আঙ্গিক-বাচিক অভিনয় দিয়ে তাঁর প্রতি আমাদের আকর্ষণ তৈরি করেছেন, এটাও গল্পটি জমতে সাহায্য করেছে। দে সাহেবের চরিত্রে স্বদেশ রঞ্জন দাসগুপ্ত, হীরেনবাবুর চরিত্রে জিয়া উদ্দিন শিপন ও দে সাহেবের স্ত্রী সুমির চরিত্রে সোনিয়া আক্তারও গল্পের চরিত্রের সঙ্গে মিশে গেছেন বলে তাঁরাও গল্পেরই একজন হয়ে গেছেন, বিচ্ছিন্ন কেউ বলে মনে হয়নি। কিন্তু স্বদেশ রঞ্জন দাসগুপ্তর অ্যাক্টিং ওভার্টলি থিয়েট্রিক্যাল, কিছুটা উচ্চৈঃস্বরিক, যা অন্যদের সফট টোন ও অ্যাক্টিং স্কিমের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়। তাঁর টোন কিছুটা ডাউন করা দরকার বলে মনে করি। পুরনো ভৃত্যদের চরিত্রে শিশির কুমার রায়, আলী আজম বাচিক অভিনয়ে যুক্ত না থেকেও তাঁদের অঙ্গভঙ্গি-চলাফেরার মধ্য দিয়ে সেই আমলের ভৃত্যদের কথাই 888sport app download for android করিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের বেশ-ভূষণও পুরনো দিনের কথাই মনে পড়িয়ে দেয়। পোশাক, রূপ, সজ্জা সেই ১৯২৭-২৮ সালসম্মত।
সবার বেশ-ভূষণ পরিকল্পনার কাজটি মেহেজাবীন মুমু গল্পের সময়-কালানুযায়ীই নিষ্পন্ন করেছেন। তরুর বিয়ের পর লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরানো হয় তাকে, হাতে শাঁখা, পায়ে আলতাও দেওয়া হয় – তাতে বিবাহিত তরু বিশ্বাস্য হয়ে ওঠে। আরো পরে তাকে ইজিচেয়ারে গাঢ় সবুজ শাড়ি পরা অবস্থায় দেখা যায় – বোঝা যায় সে আর কুমারী নেই। অসুখের সময় কালো চাদর গায়ে শোয়া অবস্থায়ও তাকে দেখা যায়। বলা যায়, শাড়ি-কাপড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে মেহেজাবীন মুমু সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তবে বয়সী বিকাশের জন্য কালানুযায়ী পোশাক-পরিচ্ছদ তিনি নির্বাচন করেননি বলেই মনে হয়েছে।
মঞ্চে আলোকসৃজনের দায়িত্বে ছিলেন স্বনামখ্যাত আলোক888sport live chatী নাসিরুল হক। দৃশ্যখ– হলুদ-নরম আলোর সংগত পুরনো দিনের আবহ সৃষ্টি করেছে মঞ্চপরিসরে। এক্ষেত্রে স্পটলাইটের সাহায্য নেওয়া হয়েছে বেশি করে, ফলে আলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়নি। তাতে করে দর্শকের চোখ কেবল ঘটনাখণ্ডের দিকেই নিবদ্ধ ছিল। তখন 888sport app শহরে বিদ্যুৎ ছিল না। তাই বাতিগাছ তথা লণ্ঠনের আলো ব্যবহৃত হয়েছে। সংলাপসূত্রে জানা যায় যে, তরুদের বাড়িতে তখন পেট্রোম্যাক্স জ্বলতো। পেট্রোম্যাক্স প্রসঙ্গটি পুরনো দিনের আমেজ তৈরি করে। তরুর বিয়েতে তাদের বাড়িতে আলোসজ্জার ব্যবস্থা করা হয় – মঞ্চে আলোর ঝলকানি তৈরি করে আলোকসজ্জার ইফেক্ট নির্মিত হয়, নাসিরুল হক এক্ষেত্রে সফল। তরুর শিয়রে মোমবাতির ক্ষীণ আলোর ব্যবহারও তার অসুস্থতার আবহ তৈরিতে সহায়ক হয়েছে। বস্ত্তত উজ্জ্বল আলো পরিহার করে মঞ্চে নাসিরুল হক নস্টালজিক একটা আবহ তৈরি করেছেন। এটা তাঁর আলো তৈরির ক্ষেত্রে নান্দনিক বোধের প্রকাশ – সেই ১৯৮৩-৮৫ সালের দিকে কলকাতায় আলোক888sport live chatী তাপস সেনের কিছু আলোর কাজের কথা মনে পড়েছে নাসিরুল হকের কাজ দেখে।
আবহসংগীত করেছেন ইমামুর রশীদ। আবহসংগীত – গল্পের মেজাজ অনুযায়ী দাঁড় করানো হয়েছে। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রে – বিশেষ করে সেতার, পিয়ানো, সরোদ, সানাই, ভায়োলিন ও কিবোর্ডে যে-সুরখ- বাজানো হয়েছে তা গল্পটির নানা ঘটনাখ- মঞ্চ-পরিসরে ঘনবদ্ধ হতে সহায়ক হয়েছে। হারমোনিয়াম, তবলাও প্রয়োজনীয় মেজাজ তৈরি করেছে ঘটনাখণ্ডের। তরুর বিয়ের সময় সানাই-উলুধ্বনি-বিয়ে পড়ানোর মন্ত্র শোনা যায়। বিয়ের আবহ তৈরিতে এসব শব্দ সাহায্য করেছে। সংলাপে তরুর অসুখের কথাবার্তার সময় সরোদ-সেতার বাজে, বেহালাও বাজে করুণ সুরে। সরোদের টোকায় কষ্ট উৎপাদিত হয় মঞ্চমাঝে। 888sport promo codeকণ্ঠে দীর্ঘ লয়ে রাগসংগীতও বাজে তখন, এতে বিষণ্ণতার আবহ সৃষ্টি হয় মঞ্চে। শব্দ নিয়ে একটি নিরীক্ষা দারুণ লেগেছে – সেটি হচ্ছে তরুর মৃত্যু-চিৎকার থামার সঙ্গে সঙ্গেই সাউন্ডট্র্যাকে বাজতে থাকা সংগীতখ-টি হঠাৎ থেমে যাওয়া। মৃত্যুর মেটাফোর বলা যায় একে – যেন হঠাৎ মরণ এসে ছিঁড়ে নিয়ে গেল তরুর জীবন। শব্দের এরকম মাত্রিক ব্যবহার সৃষ্টিশীলতার পরিচায়ক। কিছুক্ষণ নীরবতার পর ধীরলয়ে বেজে ওঠে তানপুরা – শোকের আবহ তৈরি হয় মঞ্চ আওতায়।
সংলাপে শিয়ালের কথা এসেছে বারকয়েক। পারিপার্শ্বিক শব্দ হিসেবে শিয়ালের হুক্কাহুয়া ডাক শোনার অপেক্ষা করেছি বারবার। পাইনি। পেলে পরিবেশটা সশরীরে পেতাম। সংলাপসূত্রে ঘোড়ার গাড়ি চলার শব্দও শুনতে পেয়েছি, যা পুরনো দিনের 888sport sign up bonus মনে করিয়ে দেয়। একবার শুধু পাখির ডাক সংলাপের সঙ্গে শোনানো হয়েছে। আরো কিছু পাখির ডাক শোনার জন্যও কান উদগ্রীব ছিল – ধারণা করি তখন গাছভরা পাখি ছিল, পাখির কলরব-কিচিরমিচির ছিল সকাল-সন্ধ্যায়। পাখি ও 888sport app প্রাণীর ডাক পরিবেশ তৈরিতে অবদান রাখত। সংলাপসূত্রে বৃষ্টির শব্দও পাওয়া যায় একবার, তবে তা আরো কয়েকবার এলে বর্ষার আমেজ মঞ্চে সশরীরে উপস্থিত হতো। তারপরও লিয়াকত আলী লাকী মঞ্চসজ্জা, সংগীত ও নির্দেশনার ইউনিটগুলো দিয়ে মঞ্চমাঝে দেড় ঘণ্টার যে ঘোর তৈরি করেন তা-ই দর্শককে আটকে ফেলে এবং 888sport sign up bonusকাতর করে রাখে। এই কৃতিত্ব তাঁকে দিতেই হবে। তবে নাট্যযজ্ঞ যেহেতু সামষ্টিক কর্ম তাই এই যজ্ঞে জড়িত সবাই সেই কৃতিত্বের অংশীদার।
আসলে নাট্যযজ্ঞের প্রতিটি ইউনিট একই লয়-তালে ক্রিয়া করে মঞ্চে গল্পের গতি সৃষ্টি করতে না পারলে দর্শককে ভাবে ডোবানো সম্ভব হয় না। এ-কাজটি লিয়াকত আলী লাকী তাঁর নাট্যক্ষেত্রে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আশ্রয়ে নিপুণভাবেই সম্পন্ন করেছেন। তার জন্য তাঁকে অর্গানিক ইউনিটির ওপরই জোর দিতে হয়েছে। সকল শুদ্ধ 888sport live chatকর্মই এই ইউনিটি দাবি করে। সম্ভবত নির্দেশকের সংগীতের ওপর দখল থাকার কারণেই এই ইউনিটি বজায় থেকেছে। পুরো প্রযোজনাটিকেই তিনি সংগীতের সমতুল্য করে গড়ে তুলেছেন। সে-কারণেই দেড় ঘণ্টা যে কোনদিক দিয়ে মঞ্চে অতিবাহিত হলো তা টের পাইনি, যে-ঘোরের মধ্যে মন ডুবল তাও সংগীতের ধুয়ার মতোই মনে অনুরণিত হতে থাকল, নাট্যযজ্ঞ শেষ হওয়ার পরও। সবকিছুরই শেষ থাকে, ভালো লাগারও শেষ থাকে, কিন্তু নাট্যযজ্ঞটি দেখার পর যে ভালো লাগার জন্ম হয় তা যেন শেষ হতেই চায়নি!
তরু থেকে তিথি
গল্পটিতে বুদ্ধদেব বসুর 888sport sign up bonusমথিত বেদনা প্রকাশিত হয়েছে মন কেমন করা কাব্যাক্রান্ত ভাষায়। সেই ‘মন কেমন করা’ বিষয়টি মঞ্চে পরিবাহিত করেছেন লিয়াকত আলী লাকী তাঁর সৃষ্টিশীল নাট্যপ্রজ্ঞার সহায়তায়। সেই নাট্যপ্রয়াস প্রত্যক্ষ করে দর্শক হিসেবে আমারও মন কেমন করে ওঠে। আমারও মনে পড়ে যায় নিজ 888sport sign up bonusর কথা! আমি নিশ্চিত, আমার মতো অনেকেরই এমনটি হয়েছে – 888sport promo code-পুরুষ উভয় প্রকার দর্শক নির্বিশেষে। নাট্যযজ্ঞটি ভালো লাগা ও মন খারাপ হওয়ার কারণও তাই 888sport sign up bonusবিজড়িত। হয়তো নাট্যায়নটি প্রত্যক্ষ না করলে সেই 888sport sign up bonus-বি888sport sign up bonusর মধ্যেই থেকে যেত। এখানেই নাট্যযজ্ঞের প্রাসঙ্গিকতার প্রশ্নটি আসে। আর আমার কাছে ‘তরু থেকে তিথি’ প্রসঙ্গটিও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
নাট্যযজ্ঞটি দেখে রমনা পার্কের ভেতর দিয়ে বাড়ি ফিরছি – তরু নয় তখন কেন জানি হঠাৎ তিথির কথাই মনে পড়ে! পার্ক এমনিতেই মানুষের মনকে নৈঃসঙ্গ্যচেতনায়-888sport sign up bonusকাতরতায় আচ্ছন্ন করে। ফিরে যাই সেই ১৯৭৩-৭৪ সালের নয়াপল্টনে। সেই শঙ্খবরণ ভোর! সেই কারো এলানো চুলের মতো কালোরঙের রাত্রি! তখন বুদ্ধদেবের সময়ের মতো শিয়ালের ডাক শোনা যেত না। কিন্তু ব্যাঙের ডাক শুনেছি আর বানরও দেখেছি অনেক। ১৯২৭-২৮-এর মতো তখন তেমন ‘লম্বা-লম্বা চোর-কাঁটা ছাওয়া মাঠ’ ছিল না। বুদ্ধদেবের মতো ‘লণ্ঠন জ্বেলে কেরোসিনের গন্ধে আর মশার কামড়ে’র মধ্যে আমাদের পড়তে হতো না। তবে গল্পের তিন বন্ধুর মতো আমরাও তিন বন্ধু ছিলাম – আমি (শামীম), ফারুক ও শাহীন। কৈশোর পেরোনো যুবক, সবার প্রেমভরা মন। একসঙ্গে নয়াপল্টন চষে বেড়াই। আর গল্পের তিনজনের মতো আমরাও তিথিদের বাড়ির পাশ দিয়ে হাঁটি! শুধু তাকে একবার দেখার জন্য। তবে তিনজন একসঙ্গে নয়, যার যার সময়মতো। বিষয়টা সবাই জানতাম; কিন্তু এ নিয়ে কথা হতো না। কে জানে, তিথিও হয়তো বুঝত তাকে দেখার জন্য অনেকে খামোখাই তার বাসার পাশ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করে।
বিকাশ, অসিত এবং হিতাংশুদের তো তবু তরুর সঙ্গে কথা হয়েছে, আমার কোনোদিনই কথা হয়নি, দেখা ছাড়া। ফারুক, শাহীনের কথা বলতে পারব না। এক সময় বাসাবদলের কারণে তিথির সঙ্গে আর দেখা হয়নি। কবছর আগে অফিসার্স ক্লাবে এক বিয়েতে তাকে দেখি – আমাদের বিয়েটি দ্বিতীয় তলায় আর তিথিরটি নিচ তলায়। ওপরে উঠতে গিয়ে হঠাৎ তাকে দেখে থমকে দাঁড়াই। আমি তাকে চিনলেও সে চিনতে পারেনি। তার হাতে কালো বড় ভ্যানিটি ব্যাগ, বেশ ব্যস্ত। শাড়ি পরা অবস্থায় তিথিকে এই প্রথম দেখলাম। বারবার করে দেখলাম – সেই চোখ, সেই ফর্সা মুখ, তবে শরীর ভারী হয়ে গেছে। একজনের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম আজ তিথির ছেলের বউভাত। পার্কে হাঁটতে হাঁটতে ভাবলাম – বুদ্ধদেবের তরু সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে জীবন হারায় আর আমাদের তিথি ছেলের বৌভাত করেছে। আসলে নাট্যযজ্ঞটিই আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে পেছনে, মনে পড়িয়ে দিয়েছে তিথির কথা। বাসায় ফিরেও তিথির কথাই মনে পড়েছে বারবার। কিন্তু কেউই তা বুঝতে পারেনি! যৌবনের প্রারম্ভের সেই দিনগুলোর একটি অকথিত প্রসঙ্গকে 888sport app download for android করিয়ে দেওয়ার জন্য এরকম একটি প্রযোজনার কাছে ঋণী থেকে গেলাম, যা ছিল গোপন তা হঠাৎ আজ তরুর সূত্রে প্রকাশ পেল। ফারুক বা শাহীন কি মনে রেখেছে তিথিকে? তিথিরও কি কখনো মনে আসে আমাদের কারো কথা? শুধু কি আমিই জীবনের সবচেয়ে সুখের অথচ মন খারাপ করা 888sport sign up bonus ধরে রেখেছি? ফারুক কোথায় জানি না। শাহীন ডাক্তার হয়েছিল কিন্তু অসিতের মতো সেও বিশ-বাইশ বছর পূর্বে সড়ক দুর্ঘটনায় মরে গেল! আর আমি? বাবা চেয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার হই, হয়েছি লেখক। হয়তো সামান্য লেখক বলে, বুদ্ধদেব যেমন তরুকে, আমিও তেমনি তিথিকে ভুলিনি। মনে হয়, গল্পের থিমটি তথা এই তরু-তিথিবিষয়ক কথকতা সবসময়ই প্রাসঙ্গিক থাকবে, সব যুগে।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.