স্যুররিয়েল গল্প

\ এক \

ছেলেটি খুব অবাক হলো মেয়েটির কথা শুনে, কেননা এমন কথা সে তার কাছ থেকে এই প্রথম শুনল। মেয়েটি যদিও লিখেছে, মুখে কথা বলেনি, কিন্তু ব্যাপারটা তো দাঁড়ায় একই। শতভাগ না হলেও অনেকটাই, যেহেতু বলা শব্দে হোক অথবা হরফে লেখায়, বক্তব্যটা এক ও অভিন্নই হয়। কেউ কেউ বলেন, যা মনের ভেতর থাকে তা হুবহু প্রকাশ করা যায় না লিখিত ভাষায়, ভাষার সে-ক্ষমতাই নেই। তাহলে সামনাসামনি কি দূরালাপনীতে বলা কথার মাঝে সেই সীমাবদ্ধতা থাকে নাকি? প্রশ্নটা সে নিজেকে করেই ই-মেইলে লেখা কথার দিকে তাকাল। পরিষ্কার লেখা : আমি আসছি। দেখা হবে। বাস এইটুকু! কবে আসছে, কখন দেখা হবে, এসব কিছুই লেখা নেই। কয়েকবার পড়ার পর হাসল সে। এতদিনে মেয়েটাকে তার জানা হয়ে গিয়েছে; মেয়েটা আর দশজনের মতো নয়, একটু অন্যরকম। একটু কেন, বেশ অন্যরকম। না হলে তার সঙ্গে এইসব করে, সকাল নেই, বিকেল নেই, যখন তার খুশি? আর সে নিজে, সেও কি সাধারণ গড়পড়তা একটা ছেলে যার আচার-আচরণ, কথাবার্তা, শখ আর অভ্যাস কমবয়েসি কারো সঙ্গে মেলে? মেয়েরা ভেনাস থেকে এসেছে, আর ছেলেরা মঙ্গল গ্রহ থেকে, বেস্ট সেলার বইতে যেমন করে বলা হয়েছে, তাকেও দূরেই মানায়, মাঝখানে শুধু তাদের দুজনের কথাবিনিময় সেতুবন্ধ হয়ে থাকে।

কথাবিনিময়ই হয়ে এসেছে এতদিন, প্রায় এক বছরের ওপর।  এখন হঠাৎ কোনো উপক্রমণিকা ছাড়াই মেয়েটি বলছে দেখা হবে, আসছি। এটা এমন কিছু অস্বাভাবিক কথা নয় যে চমকে উঠতে হবে। সারা দুনিয়ায় এই মুহূর্তে লক্ষকোটি, অযুত ছেলেমেয়ের মধ্যে এমন কথাবিনিময় হচ্ছে, হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হবে। কিন্তু তাদের মধ্যে? ধ্যাত্! তা কী করে হয়, তারা তো অন্যরকম, একেবারেই এমন ভিন্ন যে ভাবাই যায় না।

ভাবতে ভাবতে তাড়াতাড়ি ব্যাগটা গোছালো সে। তার ম্যান ফ্রাইডে তনচাংগাকে ডেকে বলল, সে কয়েকদিনের জন্য 888sport app যাচ্ছে। তনচাংগা তার পাহাড়ি শিশুর মতো চোখ তুলে তাকিয়ে তাকে দেখল। যেন বুঝতে চেষ্টা করল যা শুনছে সেই কথাটা সত্যি কিনা। এমন সন্দেহ করার অবশ্য তার কারণ থাকতে পারে; ছেলেটি কর্ণফুলী নদীর দ্বীপের মতো এই ছোট টিলায় যে-কাঠের বাড়িতে থাকে সেটি তার অস্থায়ী আবাস হলেও সে এখানে আসার পর থেকে কোথাও যায়নি। আজ হঠাৎ করে বললে তার পক্ষে বিশ্বাস করা কঠিন হতে পারে। কিন্তু সে বিশ্বাস করল, পাহাড়ি মানুষরা যেমন সচরাচর করে থাকে। ছেলেটিকে ব্যাগের ভেতর জামাকাপড়, শেভ করার সামগ্রী রাখতে দেখে সে বুঝল ছেলেটি সত্যি কোথাও যাবে। এসব সকালে বা বিকেলে হেঁটে বেড়ানোর জন্য দরকার হয় না। আর হাঁটার সময় তনচাংগা তার পেছনেই থাকে। ছেলেটি যেখানে যাচ্ছে সেখানে তাকে পিছনে পিছনে অনুসরণ করতে হবে না ছায়ার মতো। ছেলেটি যখন টেবিলের ওপর থেকে তার ল্যাপটপ (হ্যাঁ ওটার নাম তাই, ছেলেটাই শিখিয়েছে তাকে) গুটিয়ে হাতে নিল, সেই সময় তনচাংগা নামে পাহাড়ি কিশোরের শুধু মনে হলো, সে ফিরে আসবে তো? নাকি, ওই 888sport app না কি বলে ওখানেই থেকে যাবে এরপর?

ছেলেটি 888sport appয় এসে হোটেলে উঠল, কেননা সে চায় না তার জন্য অন্য কেউ এসে তার সময় নিয়ে নিক আলাপে, গল্পে, আর আমন্ত্রণ জানিয়ে। তাকে ফ্রি থাকতে হবে, মেয়েটি কবে, কখন এসে যায়, হঠাৎ করে বলে বসে, দেখা করতে আসছি, তার তো ঠিক নেই। মেয়েটি স্বভাবে চঞ্চল বলে সে এ-কথা ভাবছে না, জানে বলেই ভাবছে। খুব ব্যস্ত থাকে সকাল-সন্ধ্যা, এমনকি সপ্তাহামেত্ম ছুটির দিনেও। এই এক বছরে তার ই-মেইল পড়ে তেমনি মনে হয়েছে তার। একটু সেকেলেও মেয়েটা, না হলে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সে এখনো কবেকার পুরনো হয়ে যাওয়া ই-মেইল ব্যবহার করে? শুধু করে না, ঘনঘন করে। চার থেকে দশ লাইন, কখনো কখনো তারও বেশি। ছেলেটি খুব মজা পায় তার সঙ্গে খুনসুটির মতো ই-মেইলে কথাবার্তা বলে। চ্যাটিং তারা করে না, কেননা একই সময়ে তারা জেগে থাকে কমই। তার যখন সকাল, ওর তখন রাত। সব উলটাপালটা। খাওয়া, ঘুমানো সময়ের এইসব ঠাট্টা করার মতো ব্যাপার বন্ধ করে দিতে মেয়েটা এখন সশরীরে এসে যাচ্ছে তার কাছে, 888sport appয়, যেখানে দুজনেই বড় হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে কিন্তু কোনোদিন দেখা হয়নি তাদের। এখন হবে, মেয়েটি এসে যাওয়ার পর। তাকে দেখলে চিনবেই সে, মেয়েটিও খুব সময় নেবে না তাকে দেখার পর যে সেই-ই, অন্য কেউ নয়। দুজনের ছবি একে অন্যে স্কাইপে দেখেছে অসংখ্যবার না হলেও বেশ কয়েকবার, সময়ের ব্যবধানে।

হোটেলে ছেলেটি বসেই থাকে, কখনো বিছানায় কখনো জানালার কাছে ছোট টেবিলে, সামনে ল্যাপটপ নিয়ে। মেয়েটা সেই যে ই-মেইল পাঠিয়েছে তারপর একেবারেই ডুব দিয়েছে। কিছুই লিখছে না। সে কি তার সঙ্গে ঠাট্টা করল? একটা আমেরিকান জোক। না। মেয়েটাকে সে যতটুকু জানে তেমন কিছু করতে পারে বলে তার বিশ্বাস হয়নি। সে জন্যেই ধৈর্য ধরে নির্জন ঘরে শুয়ে-বসে তার সময় কাটানো, বই পড়া, গান শোনা আর ঘনঘন তাকানো পাশে রাখা ল্যাপটপের মনিটরে।

একটা ছোট 888sport app download apkর বই পেল সে হোটেলের লবিতে। নামটা অদ্ভুত : পুলিশ এলে বলবো আইডি নেই, 888sport app download apkর বই দুটো ছাড়া।  সে হাসল বইয়ের নামটা পড়ে আর সঙ্গে সঙ্গে কিনে নিয়ে এলো তার রুমে। সে রুমেই থাকে হোটেলে চেক-ইন করার পর থেকে। কিন্তু প্রথম যখন এলো সে-সময় কিছুক্ষণ কাটাতে হয়েছে লবিতে। ওই সময়ে 888sport app download apkর বইটা দেখে কেনা। এখন তাকে তার ফ্লোর থেকে নিচে নামতে হয় না, সবই রুম সার্ভিসে ফোন করে পায়।  প্রথম দিনই কাপড় চেঞ্জ করে, হাতমুখ ধুয়ে বিছানার বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে সে পড়েছে 888sport app download apkগুলো কৌতূহল নিয়ে। ছোট ছোট আকারের, তাই পড়তে সময় নেয় না আর বেশ সহজ ভাষায় লেখা, বুঝতে কষ্ট হয় না একটুকুও। শিরোনামের 888sport app download apkটা এইরকম : ‘তুমি এলে রিকশায় ঘুরব দুজন/ পেছনের হুড ফেলে দিয়ে/ ট্রাফিক জ্যাম, গাড়ির গর্জন/ কিছুতেই হবো না কাতর/ পুলিশ এলে বলবো, আইডি নেই/ 888sport app download apkর বই দুটো ছাড়া।’ পড়া শেষ হলে সে হেসে উঠল, নিজে নিজেই বলল, বাহ্! দারুণ! তারপর সে মেয়েটাকে  ই-মেইলে লিখে পাঠাল 888sport app download apkটা। নিচে লিখল, আমার লেখা নয়, কিন্তু খুব ভালো লেগেছে। মনে হলো তুমিও পছন্দ করবে। এক ধরনের পাগলামি আছে এই 888sport app download apkয় যার সঙ্গে মিল আছে …।   কথাটাও সে শেষ করল না। মেয়েটা জানে সে কী বলতে চাইছে, তাই শেষটা লেখার প্রয়োজন হলো না।

দুপুরে সে শুয়েছিল, হয়তো একটু ঝিমুনিও এসেছে। হঠাৎ চোখ গেল খোলা মনিটরে, হরফগুলো ফুটে উঠেছে। সে পড়ল মেয়েটি লিখেছে, আমি এসে পৌঁছেছি গভীর রাতে। সকালে নাস্তার পরেই শুরু হয়েছে কনফারেন্স। এখন দশ মিনিটের চা-বিরতি। তারপর কনফারেন্সের পেস্ননারি সেশন শুরু হবে। দুপুরে সব ডেলিগেটকে একসঙ্গে লাঞ্চ খেতে হবে। লাঞ্চের পর কনফারেন্সের দ্বিতীয় অধিবেশন। সন্ধ্যায় সৌজন্য সাক্ষাৎকারে যেতে হবে মন্ত্রীর  অফিসে। হ্যাঁ সন্ধ্যায়। তার আগে তিনি সময় দিতে পারেননি। রাতে সব ডেলিগেটের জন্য রয়েছে অফিসিয়াল ডিনার। তারপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। মাননীয় মন্ত্রী এইসবের হোস্ট, সুতরাং কোনোটাই স্কিপ করা যাবে না। উফফ! এমন ব্যস্ত থাকতে হবে ভাবতে পারিনি। কখন যে দেখা হবে বুঝতে পারছি না। তুমি আছো তো?

ছেলেটি লিখল, ক্যারি অন। আমি আছি। তোমার কাজ শেষ করো। এই জন্যেই তো এতদূর আসা।

মেয়েটি লিখল : শুধু তা কেন? তোমার সঙ্গে দেখা করাটা কি উদ্দেশ্যের মধ্যে নেই?

ছেলেটি লিখল : তাহলে দেখা হবে।

দ্বিতীয় দিনও মেয়েটির কাটল একই ব্যস্ততায়। একের পর এক কনফারেন্স সেশন, প্রেস ইন্টারভিউ, অফিসিয়াল রিসেপশন এইসব তাকে ব্যস্ত রাখল সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। মেয়েটি লিখল : উইকএন্ডের দিনটি ফ্রি থাকব। সেদিন অবশ্যই দেখা হবে।

ছেলেটি লিখল : আই অ্যাম ওয়েটিং উইথ পেশেন্স। কবির ভাষায়, সহিষ্ণু প্রতীক্ষা।

ছেলেটি হোটেলে তার রুমে অপেক্ষার সময় বারবার পড়ল 888sport app download apkর বইটা : পুলিশ এলে বলবো আইডি নেই, 888sport app download apkর বই দুটো ছাড়া। বইয়ের মধ্যে আরো সব মজার 888sport app download apk আছে,  মনে হয় যেন পাগলামি করে লেখা! একটা এরকম :  ‘আসবেই যদি এতদূর থেকে কেন?/ কি হতো থাকতে যদি এখানে এই গলির ভেতর/ যেখানে সাদা-কালো বিড়াল ঘুরে বেড়ায় কারো তোয়াক্কা না করে/ রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে/ যখন খুশি নাকে নাক ঘষে/ আসতে হবে কেন, থাকবে এখানে!’

এই 888sport app download apkটা পড়েও ছেলেটি হেসে উঠল, নিজের মনে মনে বলল, আগের 888sport app download apkটার মতো। বাহ্! কিছুক্ষণ পর সে 888sport app download apkটা পাঠিয়ে দিলো মেয়েটার কাছে। লিখল, এটাও আমার লেখা নয়, সেই আগের কবির যার 888sport app download apk তোমাকে এর আগে পাঠিয়েছি।  মেয়েটি উত্তর দিলো, সঙ্গে সঙ্গে না, বেশ পরে। লিখল : চমৎকার। খুব রোমান্টিক তো তোমার এই কবি। তারপর লিখল : কবিরা রোমান্টিকই হয়।

উইকএন্ডে দেখা হলো না তাদের। মেয়েটাকে যেতে হলো সুন্দরবন সেখানকার ইকোলজি সরেজমিনে দেখার জন্য। তাদের কনফারেন্সের বিষয় ‘বায়ো-ডাইভারসিটি, দ্য রিস্ক ইট ফেসেস।’ সুতরাং সুন্দরবন যাওয়া সব ডেলিগেটের জন্য প্রায় বাধ্যতামূলক। অতএব মেয়েটি কোনো অজুহাতেই সুন্দরবন না গিয়ে পারল না। সে লিখল : দেখো তো তোমার ওই কবি আর কী লিখেছে? আমার মতো সমস্যায় সে কি পড়েনি কখনো? ছেলেটি উত্তর দিলো : কবি যা লিখেছে তা তোমাকে পাঠালে খুশি হতে না। মেয়েটি বলল, লিখে পাঠাও। পড়বো।

ছেলেটি লিখল : ‘কি হবে যদি/ একদিন তুমি কথা নাই বল/ ‘এই’ বলে ডাকো?/ নদী বয়ে যাবে, সময় কাটবে/ শ্বাস হবে বড়/ বুক থর থর।’

মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে লিখল : বাহ! তারপর লিখল, আমরা এখন মেঘনায়। খুব বড় নদী। ওপরে বিশাল আকাশ। নীল শুধু নীল। প্রেমেন মিত্রের 888sport app download apkর মতো।

যাবার আগের দিন মেয়েটি লিখল : আজ ভেবেছিলাম সময় পাবো দেখা করার জন্য। তাও হলো না। চোখে ব্যথা নিয়ে আই হসপিটালে এসেছি। এখান থেকে ফিরে যাবো হোটেলে, সমাপনী অধিবেশনে আমাকেই সভাপতিত্ব করতে হবে। কী মুশকিল! এতো দূর এসে দেখা হলো না। এই আফসোস রাখি কোথায়?

মেয়েটি বসে ছিল ডাক্তারের চেম্বারের সামনে, চোখে আই ড্রপ দিয়ে। ডাক্তার চোখ দেখে ওষুধ দিয়েছেন। এখন সেই ওষুধের প্রভাব কাটাতে এই আই ড্রপ। সবকিছু ঝাপসা দেখছে সে।

ছেলেটি সামনে এসে বলল, এই তো দেখা হয়ে গেল।

মেয়েটি ত্রসেত্ম উঠে বলল, কে? আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না। কে আপনি? আমাকে কিছু বললেন।

ছেলেটি হেসে বলল, আই ড্রপ দিলে কিছুক্ষণ এমনই দেখায়।

এসো যাই।

মেয়েটি উঠে দাড়াল। বলল, ও তুমি? দারুণ, এসে পড়েছ? ভাবতে পারিনি।

ছেলেটি বলল, ওঠো, আমি হাত ধরছি। আমার সঙ্গে চলো।

মেয়েটি বলল, কোথায়?

ছেলেটি বলল, কাছেই। তোমার দৃষ্টি স্বাভাবিক হয়ে আসতে আসতে ফিরে আসব আমরা এখানে। ডাক্তার কিংবা নার্স টেরই পাবে না যে তুমি এখানে ছিলে না।

আমাকে যে আবার হোটেলে ফিরে যেতে হবে। ওরা আসবে আমাকে নিয়ে যেতে এখানে। মেয়েটির স্বরে বিপন্নতা।

বেশ ত। তুমি সময়মতো যাবে ওখানে। ওরা তো এখনই আসছে না তোমাকে নিতে। এলেও কিছুক্ষণ কি অপেক্ষা করবে না?

মেয়েটি বলল, হ্যাঁ, করবে। আমি ফোন করে দেবো দেরি করে আসতে। চলো।

বাইরে এসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে মেয়েটি বলল, আমি এখনো ঝাপসা দেখছি। তবে আগের চেয়ে কিছুটা হালকা। অনেক গাড়ি, রিকশা, বাস, মানুষজন দেখতে পাচ্ছি।

ছেলেটি তার হাত ধরে বলল, তবে ওঠো।

মেয়েটি অবাক হয়ে বলল, কোথায় উঠব?

ছেলেটি বলল, রিকশায়। আমি তোমাকে ধরে ওঠাচ্ছি।

রিকশায়? বলো কী? আমি কি পারব? কতদিন উঠিনি।

ছেলেটি বলল, আমি হাত ধরে থাকব। তুমি উঠতে পারবে।

দুজনে রিকশা দিয়ে যাচ্ছে, কখনো ধীরে, কখনো বেগের সঙ্গে। বাতাসে মেয়েটির চুল উড়ছে। সে হাসছে আর বলছে, আই ডোন্ট বিলিভ ইট। ইট ইজ নট হ্যাপেনিং। ইনক্রেডিবল ইউ। তারপর বলল, তুমি কি রিকশার হুড ফেলে দিয়েছ?

ছেলেটি বলল, হ্যাঁ।

ট্রাফিক জ্যাম আছে? মেয়েটির মুখে হাসি।

আছে, মাঝে মাঝে। দেখছো না রিকশা থেমে যাচ্ছে। তার কথার মাঝে মেয়েটি একদিকে হেলে পড়ছিল প্রায়। ছেলেটি এক হাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল। মেয়েটি খিলখিল করে হেসে উঠল। বলল, আর উই গোয়িং টু ডান্স?

ছেলেটি বলল, উই আর অলরেডি। তাই মনে হচ্ছে না?

মেয়েটি বলল, হ্যাঁ তাই মনে হচ্ছে। তারপর বলল, আমি একটু একটু পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি এখন। ওটা কি? পুলিশের গাড়ি  মনে হচ্ছে।

ছেলেটি বলল, হ্যাঁ।

ওরা কি আইডি দেখতে চাইবে? মেয়েটির স্বরে কপট ভীতি।

ছেলেটি 888sport app download apkর বইটা বের করে বলল, আসুক। বইটা দেখিয়ে বলব …।

দুজনে একসঙ্গে বলে উঠল আবৃত্তির মতো : ‘আইডি নেই। 888sport app download apkর বই দুটো ছাড়া।’

রিকশা থেকে নেমে মেয়েটি ছেলেটির দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকল। তারপর বলল, ইউ আর এ ওয়ান্ডারফুল লাভার। তারপর কৃত্রিম চপেটাঘাতের ভঙ্গি করে বলল, ডোন্ট সে, ‘ইউ আর ওয়েলকাম’।

ছেলেটি তার হাতে একটা গোলাপ দিয়ে বলল, রোমান হলিডে সিনেমাতে গ্রেগরি পেক অড্রে হেপবার্নকে তার তোলা ছবি ফেরত দিয়েছিল। আমি দিচ্ছি এই লাল গোলাপ।

মেয়েটি গোলাপের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে বলল, মাই লাভ ইজ লাইক এ রেড রেড রোজ। কে লিখেছে বলো তো?

ছেলেটি বলল, রবার্ট বার্নস।

মেয়েটি গোলাপটার দিকে তাকিয়ে বলল, সো ভেরি রেড। ইট উইল নেভার ফেড। এই 888sport sign up bonus কখনো মলিন হবে না। মেয়েটার বয়স পঞ্চাশ, ছেলেটার সত্তর। তাদের মাঝখানে বিশ হাজার মাইলের দূরত্ব। তেপান্তরের মাঠ। সাত সমুদ্দুর, তেরো নদী।

 

\ দুই \

কুয়াশা এত ঘন যে নদীতীরে সব অস্পষ্ট, প্রায় কিছুই দেখা যায় না। বাতাস আসছে ধীরে, হিমশীতল তার স্পর্শ। কুয়াশার ভেতর অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে দেখা যায় একটা নৌকা, বেশ বড়। ছই নেই, পাটাতন বিছানো। নৌকাটা ধীরে ধীরে তীরের দিকে এগিয়ে আসছে। নৌকায় মাঝি ছাড়া কেউ নেই, কিন্তু মাঝির মুখ বা শরীরের কোনো অংশ দেখা যাচ্ছে না, সবকিছু কুয়াশার মতো রঙের চাদরে 888sport app। সে যখন বৈঠা ফেলছে ধীরে ধীরে, নদীতে অস্ফুট একটা শব্দ হচ্ছে, এত অস্ফুট যে কান পেতে না থাকলে শোনা যায় না। নদীর  ওপর বৈঠা পড়ে যে অস্ফুট শব্দ হচ্ছে সেটা কান্নার পর হিচ্কির মতো। ক্লান্ত আর বিষণ্ণ। কুয়াশায় ভিজে ভিজে বাতাস যখন আসে তার ভেতর থাকে এক করুণ দীর্ঘশ্বাসের আর্তি। আকাশ অথবা নদী, কিছুই চোখে পড়ে না, মনে হয় একই ধূসর রং ওপর থেকে নিচে গড়িয়ে পড়েছে অবিরল ধারায় যার জন্য আকাশ আর নদীর মাঝখানে কোনো ভেদরেখা চোখে পড়ে না।

আরো একটা শব্দ শোনা যায় কিছুক্ষণ পরপর, হাহাকারের মতো শোনায় সেই শব্দ, যেন সম্মিলিত কোনো স্বরে শোকগাঁথা আবৃত্তি করে চলেছে কেউ বা কারা। মাঝে মাঝে সেই হাহাকার ধ্বনি কান্নার মতোও হয়ে যায় যখন নদীর বুক ছুঁয়ে আসে। নদীর হিমশীতল পানিতে ভিজে আসার জন্যই সেই হাহাকার কিনা তা বোঝা যায় না। সেই কান্নার গমক বেশ কিছুক্ষণ স্থির হয়ে থাকে নদীতীরে এসে। নদীর বুক ছুঁয়ে আসে বলেই স্বরের করুণ আর্তিতে হয়তো থাকে হাহাকার বা বিলাপের ভেজা ধ্বনি। নো নাটকে মৃত ব্যক্তির আত্মা মঞ্চে এসে যেমন বলে যায় তার জীবন888sport sign up bonus, এই কান্নার ভেজা স্বরেও থাকে একই রিক্ততার বিদীর্ণ উচ্চারণ।

নদীতীরে যারা পারাপারের প্রতীক্ষায় তাদের আপাদমস্তক ধূসর চাদরে আবৃত, অলৌকিক সেই নৌকার মাঝির মতোই। তারা একঠায় দাঁড়িয়ে, অচঞ্চল, নির্বাক। কেউ কারো দিকে তাকিয়ে নেই, কেবল সমুখে তাদের দৃষ্টি যেখানে নদীতীরে এসে নদীর পানি কুণ্ঠিত হয়ে মৃদু লয়ে ছলাৎছল শব্দ তোলে নিয়মিত বিরতির পর, যেন শ্রম্নত সুরের সঙ্গে পরিপূরক হয়ে বাজে সামিসেনের মতো যন্ত্রসংগীত।

প্রতীক্ষারত লোকগুলি পুরুষ না 888sport promo code, তা বোঝা যায় না, একই তাদের ধূসর রঙের বসন যা শুষে নেয় চারিদিকের তৃষ্ণার্ত কুয়াশা। কেবল দুটি মূর্তিকে একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় মাঝে মাঝে, কিন্তু সেও বেশিক্ষণের জন্যে নয়। যখন দীর্ঘ দেহের এক মূর্তি লাঠি হাতে এসে তাদের পৃথক করে দেয় হাতের লাঠির স্পর্শে, তারা সরে দাঁড়ায়।

নৌকা তীরে এসে নোঙর ফেলে না, ভাসতে থাকে ঢেউয়ের  মৃদু আন্দোলিত শরীরের ভীরু ছন্দের সঙ্গে তাল রেখে। মাঝির হাতের বৈঠা নৌকার টাল সামলায়, স্থির করে রাখে যতটুকু পারে।  অপেক্ষমাণ যাত্রীরা একে একে ওঠে নৌকায়, কেউ বসে পাটাতনে, কেউ দু-পা ছড়িয়ে ভারসাম্য রেখে দাঁড়িয়ে থাকে। নৌকার সব জায়গা ভরে গেলে মাঝি বৈঠা তোলে। নদীর পানিতে বৈঠা দিয়ে গতির সৃষ্টি করে, নৌকার মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তখনো নদীতীরে কিছু যাত্রী, তারা অপেক্ষা করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় নতুন মানুষ, একইভাবে ধূসর চাদরে আবৃত হয়ে।

নৌকায় সবাই নিশ্চুপ, কেউ কারো দিকে তাকায় না। কারো মুখ দেখা যায় না। শ্বাস পড়ে কি পড়ে না, তা বোঝার উপায় নেই।  ভেজা বাতাস এসে স্পর্শ করে যাত্রীদের শরীর, শীতল সেই বাতাস কিন্তু কেউ কেঁপে ওঠে না। বাতাসে মিশে থাকে সামিসেনের শান্ত আর করুণ সুর, একটানা যতক্ষণ শোনা যায়। নদীর পানিতে বৈঠার শব্দ যেন তবলায় হাতের মৃদু চাটি।

দুটি 888sport sign up bonus পাশাপাশি বসে, তাদের হাত একসময় পরস্পরকে স্পর্শ করে। তারা ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে। সতর্ক মাঝি দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গে বৈঠা তুলে সে তাদের মাঝখানে রাখে, ছায়ামূর্তি দুটির হাত পরস্পর বিযুক্ত হয়ে যায়।

নদীটি প্রস্থে বড় হবে, কেননা পারাপারে সময় নেয়। নৌকায় বসে থেকে দুজন কুয়াশা মেখে নিয়ে পরস্পরের হাতে হাত রাখে। কুয়াশার ধূসর পর্দা ভেদ করে সেই দৃশ্য চোখে পড়ে নৌকার সতর্ক মাঝির। সে ত্বরিতে বৈঠা রাখে দুজনের মাঝখানে, হাত দুটো পৃথক হয়ে যায়। তখন বাতাস আসে সামিসেনের সুর নিয়ে, বৈঠা পড়ে তবলার চাটির মতো ধীরলয়ে। একঘেয়ে, কিন্তু একঘেয়ে মনে হয় না, কেননা নদীর মৃদু ঢেউয়ে নৌকা আন্দোলিত হয়।

একসময় চোখে পড়ে নদীতীর। কুয়াশা একটু সরে গিয়ে দেখতে দেয় নদীতীরের রিক্ত বিষণ্ণতা। যাত্রীরা নামে একে একে, নিঃশব্দে। সবাই নেমে গেলে মাঝি নৌকা ফেরায় অন্য তীরের দিকে। তখন তার চোখে পড়ে পাটাতনে, যেখানে দুজন বসে ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছে হাতে হাত ধরে, তাদের পরিত্যক্ত আসনে কিছু একটা পড়ে আছে। কৌতূহলী সে তুলে নেয়। চোখের সামনে এনে দেখে : শুকিয়ে যাওয়া একটা গোলাপ। রং বোঝা যায় না, কিন্তু মৃদু গন্ধ আছে। r

 

পাদটীকা

নো জাপানের ঐতিহ্যময় নাটক। ‘সামিসেন’ জাপানের প্রাচীন যন্ত্রসংগীত যা নো নাটকের সঙ্গে বাজানো হয়।