হারলেমের হৃদয় হতে

 

‘I saw Harlem teeming with sounds and ritual colors

And outrageous smells – ’

Léopold Sédar Senghor

(কবি এবং স্বাধীন সেনেগালের প্রথম রাষ্ট্রপতি)

 

ভেদ রয়ে যায় সাদায়-কালোয়

পর্যটকরা নিউইয়র্ক গেলে দেখতে যাবেন এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং, স্ট্যাচু অব লিবার্টি, ৯/১১ মেমোরিয়াল মিউজিয়াম, ফ্রিডম টাওয়ার ইত্যাদি দ্রষ্টব্য স্থান এবং স্থাপনা। নিউইয়র্কের কথা লিখতে বসলেও এগুলোর কথা লেখাই হয়তো স্বাভাবিক। আমিও যখন প্রথম আমেরিকা যাই, তখন নিউইয়র্কে গিয়ে এসব জায়গায়ই গিয়েছিলাম। আমেরিকা 888sport slot game করে অনেকেই এসব দ্রষ্টব্য স্থান সম্পর্কে লিখেছেন। নতুন করে এগুলো সম্পর্কে আর কী লেখা যেতে পারে? তবে আমার কাছে নিউইয়র্ক সবসময়ই আকর্ষণীয় এবং কৌতূহলোদ্দীপক একটি জায়গা। ঘর থেকে রাস্তায় বের হলেই চারদিকে তাকাই; দেখি শহরটির জীবনযাত্রা, আর মানুষের চলাফেরা। কত ধরনের মানুষ বাস করে এই শহরটিতে, আর কত বিচিত্র তাদের জীবনধারা!

তাই বলে হারলেমের কথা? এই নামটি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে চোখে ভেসে ওঠে এমন এক জায়গা, যেখানে রাস্তায় হামেশাই হচ্ছে হানাহানি, ছিনতাই, দাঙ্গা ইত্যাদি। আমারও এরকমই ধারণা ছিল। তাই আমাদের মেয়ে শমী আর তার স্বামী ফারাজ যখন জানাল যে, ওরা মিড টাউনের অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে হারলেম চলে যাবে, তখন খুবই অবাক হয়েছিলাম। তবে তাদের বুদ্ধি-বিবেচনার ওপর আমার বেশ ভরসা আছে; তাছাড়া ছেলেমেয়ে বড় হয়ে যাওয়ার পর থেকে তাদের জীবনের কোনো বিষয়েই আমি নাক গলাইনি এবং এক্ষেত্রেও কিছু না বলে অপেক্ষা করলাম জায়গাটি দেখার জন্য।

স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, মেয়েজামাই না গেলে আমিও হয়তো কখনো বেড়ানোর জন্য হারলেম যেতাম না। এখন বুঝতে পারি, হারলেম না গেলে আমার নিউইয়র্ক দেখা কত অসম্পূর্ণ থেকে যেত। ম্যানহাটন বরোর একটি বড়সড় পাড়া হারলেম। পূর্ব-পশ্চিম এবং উত্তর-দক্ষিণ সবদিকেই এর বিসত্মৃতি বেশ কয়েক মাইল (আমেরিকায় এখনো মাইলেই দূরত্ব মাপা হয়)। সপ্তদশ শতকের কোনো এক সময় ওলন্দাজরা এসে একটি গ্রামের পত্তন করে এবং নেদারল্যান্ডসে নিজেদের ফেলে আসা শহরের নামে তার নাম দেয় হারলেম। কালক্রমে সে-জায়গাটি নিউইয়র্ক শহরের অংশ হিসেবে গড়ে ওঠে। সে-সময় প্রথমে ইতালীয় এবং ইহুদিরা ছিল এই অঞ্চলে 888sport free betগরিষ্ঠ। কিন্তু বিংশ শতকের প্রথমদিকে একসময় আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দলে দলে আফ্রিকান-আমেরিকানরা এসে বসতি গাড়ে হারলেমে। ক্রমে তারা হয়ে যায় মোট জন888sport free betর প্রায় নববই শতাংশ।

কিন্তু মহামন্দার কারণে তিরিশের দশকে হারলেমের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটে। ফলে প্রতি চারজনের একজন হয়ে যায় বেকার। দারিদ্র্য এবং বেকারত্বের সঙ্গে অবনতি ঘটে সামাজিক পরিস্থিতির। মাদক, ডাকাতি, ছিনতাই এসব হয়ে ওঠে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সে-অবস্থা চলে আশির দশকের শেষের দিক পর্যন্ত। কিন্তু সে-সময় থেকে পরপর দুজন মেয়র কঠোর ব্যবস্থা নেন এসব অপরাধের বিরুদ্ধে। তার ফলও পাওয়া যায়; অপরাধের 888sport free bet দ্রম্নত কমে আসে। সরকারের দিক থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয় বাসস্থান এবং শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির লক্ষ্যে। অবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে হারলেম তার পুরনো গৌরব ফিরে পেতে শুরু করে। বিভিন্ন ধরনের জনগোষ্ঠী আবার এসে বসবাস শুরু করে এ-অঞ্চলে। শমী আমাকে বলেছিল, এখন অনেকেই হারলেমে বাসা নিচ্ছে। পরি888sport free betন বলছে, হারলেমের জন888sport free betর অর্ধেকের কিছু বেশি এখন আফ্রিকান-আমেরিকান। বাকিদের অধিকাংশই হিস্পানিক অথবা 888sport app গোষ্ঠীর – শ্বেতাঙ্গ মাত্র দশ শতাংশ। খালি চোখে অবশ্য আমার কাছে মনে হয় যে, আফ্রিকান-আমেরিকানরা এখনো শুধু 888sport free betগরিষ্ঠই নয়, বিশাল ব্যবধানে বেশি।

আমি বিকেলে হাঁটতে যাই দুটি পার্কে – সেন্ট্রাল পার্ক এবং মর্নিংসাইড পার্ক। হারলেমের দক্ষিণ প্রামেত্ম সেন্ট্রাল পার্কের উত্তর সীমানা। শমীর বাসা থেকে হেঁটে সেখানে পৌঁছতে দশ মিনিটের বেশি লাগে না। পার্কে ঢোকার পরই দেখা যায় শিশুদের খেলার জায়গা। পাশ দিয়ে যেতে যেতে দেখি শিশুরা বিভিন্ন ধরনের খেলায় মেতে আছে, আর তাদের মায়েরা (বা কোনো ক্ষেত্রে বাবারা) বসে গল্পগুজব করছে। প্রায় সবাই আফ্রিকান-আমেরিকান। বাকি দু-একজন হিস্পানিক। শ্বেতাঙ্গ প্রায় কেউই নয়।

মর্নিংসাইড পার্ক হারলেমের পশ্চিম সীমামেত্ম, শমীর বাসা থেকে আরো কাছে। সেখানেও একই দৃশ্য। পার্কটির একটি জায়গায় কিশোর-কিশোরীদের খেলতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ কাউকে দেখা গেলে তা মনে হয় ব্যতিক্রম। গ্রীষ্মকালে – বিশেষ করে সপ্তাহামেত্ম সেখানে অনেকে আসে পিকনিক করতে। ছোট পরিবার থেকে শুরু করে বিভিন্ন আকারের দল দেখা যায়। কেউ তৈরি খাবার নিয়ে আসে; আবার কেউ বারবিকিউর জন্য ছোট ছোট চুলো এনে আগুন জ্বেলে মাংস পুড়িয়ে খায়। সঙ্গে নাচগান। এসব দলে শ্বেতাঙ্গ সচরাচর দেখা যায় না; কমই দেখা যায় জাতিগোষ্ঠীর মিশ্রণ।

তবে সাদা-কালোর মিশ্রণ যে একেবারে দেখা যায় না তা নয়। তার জন্য যেতে হবে একটু উচ্চশ্রেণির ক্যাফে বা রেসেত্মারাঁয়। হারলেমের পুনরুজ্জীবনের সঙ্গে সঙ্গে এ-ধরনের বেশ কিছু স্থাপনা গড়ে উঠেছে, যাদের কয়েকটি দেখা যায় ফ্রেদেরিক ডগলাস বুলেভার্ড আর লেনক্স অ্যাভিনিউয়ে। আমরা মাঝসকালের কফি বা সপ্তাহামেত্মর ব্রাঞ্চ খাবার জায়গার খোঁজে বেরিয়ে এ-ধরনের বেশ কয়েকটি ক্যাফে-রেসেত্মারাঁ পেয়েছি। কোনো কোনোটির নাম থেকে কিছুটা হলেও বোঝা যায় তার মালিকানার পটভূমি। তেমনি একটির নাম ‘প্যাতিসারি দেজ অ্যামবাসাদ’। নাম দেখেই আন্দাজ করেছিলাম যে, তার সঙ্গে কিছুটা হলেও ফরাসি যোগাযোগ আছে। ভেতরে গিয়ে দু-একজন খদ্দেরকে ফরাসি ভাষায় কথা বলতে শুনলাম। পরে নিউইয়র্ক টাইমসের একটি লেখায় এই ক্যাফেটির ফরাসি যোগাযোগের কথা পড়েছি।

হারলেমের আফ্রিকান-আমেরিকান বাসিন্দাদের ফরাসি যোগাযোগ অস্বাভাবিক কিছু নয়, কারণ আফ্রিকার অনেক দেশই একসময় ছিল ফ্রান্সের উপনিবেশ, আর তাদের শিক্ষিত জনগণ শিক্ষা এবং সরকারি কাজের জন্য শিখেছিল ফরাসি ভাষা। কোনো কোনো দেশ ফরাসিকে সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছে। আমেরিকায় অভিবাসন করলেও তারা সে-ভাষাটি ধরে রাখবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সুতরাং আমেরিকান হলেও হারলেমের অনেকেই ফরাসি ভাষায় কথা বলে। শুধু ঔপনিবেশিক ভাষাই নয়, অনেকে যে তাদের নিজস্ব ভাষাও ধরে রেখেছে সেটা বুঝতে পেরেছিলাম এক শুক্রবার জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে।

হারলেমের বাসিন্দাদের মধ্যে একটি উলেস্নখযোগ্য অংশ মুসলমান বলে আমার ধারণা, কারণ এখানে বেশ কয়েকটি ছোট মসজিদ রয়েছে। তবে সবগুলোকে বোধহয় মসজিদ বলা যাবে না। আমি যেটিতে শুক্রবার জুমার নামাজের জন্য যাই সেটি আসলে একটি হলঘরের মতো, যেখানে অন্য সময় ‘তায়কোয়ান্দো’ খেলার প্রশিক্ষণ হয়। সেখানে শুধু জুমার এবং ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। আর যারা সেখানে নামাজ পড়তে আসেন তাদের প্রায় সবাই আফ্রিকান-আমেরিকান – দু-চারজন দক্ষিণ এশীয় ছাড়া। কিন্তু আমি যখন মিড টাউনের কোনো মসজিদে যাই, সেখানে দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের লোকের জমায়েত।

সে যা হোক, নিউইয়র্কের সব মসজিদেই জুমার নামাজের খুতবা শুনেছি ইংরেজিতে – হারলেমের ১১৬ নম্বর রাস্তার জামাতেও, যেখানে আমি অনেক সময় যাই। একদিন এলেন অন্য একজন ইমাম, যাকে আমি আগে কখনো দেখিনি। দু-তিনটি আরবি বাক্য বলার পরই তিনি বলতে শুরু করলেন এমন এক ভাষায়, যা আমার কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত। যে-ভাষা বুঝি না সে-ভাষায় খুতবা শোনার অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে (জেনেভার মসজিদে খুতবার মূল অংশ আরবি ভাষায় উপস্থাপিত হয়)। সুতরাং ধৈর্য ধরে বসে থাকা ছাড়া আর কীই-বা করতে পারতাম।  তবে আমার কৌতূহল হলো ভাষাটি কী তা জানার জন্য। নামাজের শেষে পাশের এক ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করে জানলাম, ভাষাটি পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালির অধিকাংশ লোকের মাতৃভাষা। তার পার্শ্ববর্তী আরো দু-একটি দেশের (যেমন বেনিন এবং নিজের) কিছু লোকও এ-ভাষায় কথা বলে। মাতৃভাষার জন্য যে-দেশের লোক প্রাণ দিয়েছে সে-দেশের একজন হয়ে নিজের ভাষার প্রতি এই মমতাকে মনে মনে 888sport apk download apk latest version জানালাম, যদিও আমার মনে হয়েছিল যে, নিউইয়র্কের ওই জায়গায় ইংরেজিতে খুতবা দেওয়াই হয়তো উচিত ছিল।

মসজিদটির পাশেই একটি ‘কমিউনিটি কিচেন’। ফুড ব্যাংক নামে নিউইয়র্কের এক এনজিও চালায় এই কিচেন, যেখানে দরিদ্রদের বিনামূল্যে খাবার পরিবেশন করা হয়। নিউইয়র্ক, দরিদ্র এবং বিনামূল্যে খাবার – এই শব্দগুলো একসঙ্গে শুনে কেউ হয়তো অবাক হতে পারেন। তবে আশ্চর্য হলেও সত্য, আমেরিকার জন888sport free betর একটি বিরাট অংশ দরিদ্র (অবশ্য সেখানকার দারিদ্রে্যর সংজ্ঞা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ব্যবহৃত সংজ্ঞা থেকে আলাদা) এবং তাদের জন্য সরকারের যেমন বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে, তেমনি বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনও কাজ করে। ফুড ব্যাংক সেরকমই একটি এনজিও। ১১৬ নম্বর রাস্তায় তাদের এই কমিউনিটি কিচেনের পাশ দিয়ে কয়েকবারই হেঁটে গিয়েছি। এক শুক্রবার জুমার নামাজ থেকে ফেরার পথে ঢুকে পড়লাম সেখানে; ইচ্ছা, সেখানে কারা আসে, তাদের কী খাবার দেওয়া হয় একটু দেখা।

পশ্চিম হারলেমের এই কমিউনিটি কিচেনে শুক্রবার দুপুরের খাবার দেওয়া হয় দরিদ্র বয়োজ্যেষ্ঠদের। আমি যখন সেখানে ঢুকলাম, তখন অনেকেই খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে যাচ্ছিল। হলটিতে ঢোকার পথেই দেখলাম একজোড়া তরুণ-তরুণীকে; তাদের সামনে একটি ছোট টেবিলে প্যাকেট করা খাবার। প্রত্যেককে একটি প্যাকেট দেওয়া হচ্ছিল বেরোনোর আগে। জানতে পারলাম, শুক্রবারে এই বিশেষ ব্যবস্থা – যাতে দুপুরে খাবার পরও শনি-রোববারের জন্য সবাই কিছু খাবার নিয়ে যেতে পারেন। সুপারভাইজার ধরনের এক ভদ্রলোককে দেখে আমি জিজ্ঞাসা করলাম ভেতরে যেতে পারি কিনা। তিনি পাশের কাউন্টারে রাখা একটি খাতা দেখিয়ে তাতে নাম-ঠিকানা লিখে খেতে বসে যেতে বললেন। যখন আমি বললাম যে, আমি খেতে আসিনি, কেবল দেখতে এসেছি, তখন তাঁর চেহারা দেখে মনে হলো তিনি শুধু অবাকই নন, কিছুটা বিরক্তও। আমার ব্যাপারে আর উৎসাহ না দেখিয়ে তিনি চলে গেলেন অন্য কাজে। কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে বুঝলাম যে, সেখানে খেতে আসা দরিদ্রদের প্রায় সবাই আফ্রিকান-আমেরিকান অথবা হিস্পানিক; শ্বেতাঙ্গ প্রায় কেউ ছিলেন না।

 

হারলেমে বাঙালি

হারলেমে শুধু যে আফ্রিকান-আমেরিকান অথবা হিস্পানিকরাই বসতি স্থাপন করেছিলেন তা নয়, ছিলেন অন্যরাও। তার মধ্যে ছিলেন বাঙালিও। বিবেক বল্ডের বই বেঙ্গলি হারলেম অ্যান্ড দ্য লস্ট হিস্ট্রিজ অব সাউথ এশিয়ান অ্যামেরিকা থেকে জানা যায়, ঊনবিংশ শতকের শেষাংশে এবং বিংশ শতকের প্রথমার্ধে বেশকিছু বাঙালি এ-অঞ্চলে বসতি গেড়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন জাহাজ থেকে পালিয়ে আসা এবং নকশি করা সিল্কের কাপড়ের ব্যবসায় নিয়োজিত লোকেরা। বিভিন্ন কারণে তাঁরা এখানে বসবাস করতে শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে আফ্রিকান-আমেরিকান এবং হিস্পানিকদের (বিশেষ করে পুয়ের্তোরিকানদের) সঙ্গে মিশে পরিবার গড়েন। জাহাজ কোম্পানির রেকর্ড, পুরনো সংবাদপত্রের রিপোর্ট, স্থানীয় প্রশাসনের বিয়ে-সংক্রান্ত রেকর্ড ইত্যাদি বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য ঘেঁটে বিবেক  বল্ড এই জাতিগোষ্ঠীর মার্কিন সমাজে একীভূত হওয়ার এক চমকপ্রদ ইতিহাস নির্মাণ করেছেন তাঁর বইয়ে। আর আমি এক সকালে শমীর বাসা থেকে দোকানে যাওয়ার পথে দেখা পেয়ে গেলাম এমন একজনের, যাঁর সঙ্গে কথা বলে মনে হলো, তিনি এ-ধরনের কোনো বাঙালি পরিবারের উত্তরসূরি।

এক রাস্তার পাশে কয়েকটি দালানে চলছিল মেরামত ও উন্নয়নের কাজ; আর সেখানে ‘মালেক কোং’ লেখা একটি সাইনবোর্ড ঝুলছিল। যাঁরা সেখানে কাজ করছিলেন তাঁদের মধ্যে দুজনকে দেখে বাঙালি বলেই মনে হলো। আর তাঁদের একজনকে আমি সরাসরি বাংলায় জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি বাঙালি? তিনি ইতিবাচক জবাব দিয়ে আমার কথাও জানতে চাইলেন। আর অল্পস্বল্প বাক্যালাপ থেকেই বোঝা গেল যে, তিনি বিংশ শতকের প্রথমার্ধে জাহাজ থেকে নেমে পালানো বাঙালি কারো বর্তমান প্রজন্ম।  নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করে এখন নিজেই ছোট একটি কোম্পানি গড়ে তুলেছেন; যার মাধ্যমে কাজ করেন। হারলেমের বাঙালির ইতিহাসের একটি ক্ষুদ্র অংশ বর্তমান হয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলেছিলেন অল্পক্ষণের জন্য হলেও।

 

প্রতিবাদ আর জীবনের ভাষা

কাগজে-কলমে বর্ণবৈষম্য বা বর্ণবাদ দূর করা যত সহজ, বাস্তবে সে-ধরনের পরিবেশ নিশ্চিত করা অথবা অন্য বর্ণের প্রতি মানুষের মনোভাবে পরিবর্তন আনা কিন্তু এত সহজ নয়। আইন করে বাহ্যিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিন্তু চিন্তাধারাকে বদলানো অনেক কঠিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমাজও তার ব্যতিক্রম নয়। অবস্থা আরো জটিল হয়, যখন 888sport free betলঘু সম্প্রদায় অর্থনৈতিক এবং বৈষয়িক দিক থেকে পিছিয়ে থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়। স্বাধীনতা অর্জনের এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কয়েক শতক পরও          কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান-আমেরিকানরা শুধু যে পিছিয়ে রয়েছে তাই নয়, কোনো কোনো সময় রাজনৈতিক নেতারাও তাদের হেয় চোখে দেখে অথবা তাদের কটাক্ষ করে কথা বলে। এমনকি তাদের অবস্থার জন্য তারা নিজেরাই দায়ী, এমন মন্তব্য করতেও দ্বিধা করে না। ১৯৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তদানীন্তন শ্রম প্রতিমন্ত্রী ড্যানিয়েল প্যাট্রিক মৈনিহান এক বিশেস্নষণধর্মী 888sport world cup rateে এ-ধরনের কথাই বলেছিলেন।

‘The Negro Family : The Case for National Action’ শিরোনামের 888sport world cup rateটির প্রধান রচয়িতা ছিলেন মৈনিহান। সেই 888sport world cup rateের মূল বক্তব্য ছিল এই যে, কৃষ্ণাঙ্গদের দারিদ্রে্যর, বিশেষ করে তাদের শিশুদের দৈন্যদশার মূল কারণ হচ্ছে পারিবারিক কাঠামোয় ভাঙন, মাতৃতন্ত্র এবং পুরুষদের দায়িত্ব পালন না করা। যদিও এই বক্তব্যের সমর্থনে বেশকিছু তথ্য-উপাত্ত পরিবেশন করা হয়েছিল, তা সত্ত্বেও 888sport world cup rateটি তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করে এবং তারপর অনেক বছর এ-বিষয়টি আলোচনার বাইরে চলে যায়।

শুধু বিতর্কই নয়, প্রতিবাদও হয়েছিল মৈনিহানের 888sport world cup rateের বিরুদ্ধে। আর সে-প্রতিবাদ শুধু রাজনৈতিক-সামাজিক অঙ্গনেই সীমাবদ্ধ ছিল না – ছড়িয়ে পড়েছিল 888sport live chatের জগতেও, অংশগ্রহণ করেছিলেন 888sport live chatীরাও। তেমনি কিছু চিত্রকর্ম দেখা গেল হারলেমের স্টুডিও মিউজিয়ামে।

যদিও নিউইয়র্ক শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে হাজারখানেক মিউজিয়াম রয়েছে, পর্যটকদের পদচারণা সচরাচর সীমাবদ্ধ থাকে নামকরা কয়েকটিতেই। আমারও জানা ছিল না হারলেমের স্টুডিও মিউজিয়ামের কথা। শমীর কাছ থেকে শুনলাম এর কথা, আর এ-ও জানলাম যে, রোববার বিকেলে সেটি উন্মুক্ত থাকে বিনামূল্যে প্রবেশের জন্য। ম্যানহাটনের সেন্ট নিকোলাস অ্যাভিনিউ থেকে ১২৫ নম্বর রাস্তা ধরে পুবদিকে সামান্য হেঁটে গেলে হাতের ডানদিকে পড়ে মিউজিয়ামটি। শমীর বাসা থেকে হাঁটাপথ। তার মানে যাতায়াতের খরচ নেই। আর রোববার বিকেলে গিয়েছি বলে ঢোকারও কোনো খরচ নেই। সম্পূর্ণ নিখরচায় দেখা গেল হারলেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য স্থান। আফ্রিকান-আমেরিকানদের চিন্তা এবং মনের জগৎ সম্পর্কে খানিকটা হলেও ধারণা পাওয়া যায় এরকম একটি জায়গায় কিছুটা সময় কাটালে।

স্টুডিও মিউজিয়ামের স্থায়ী প্রদর্শনীর অন্যতম ছবি বারবারা জোনস-হুগোর আঁকা ‘বস্ন্যাক মেন উই নিড ইউ’। আফ্রিকান-আমেরিকান পরিবারে পুরুষের ভূমিকা সম্পর্কে মৈনিহান 888sport world cup rateে যে নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে এ-চিত্রটি একটি স্পষ্ট বক্তব্য। শিকাগোতে ১৯৬৮ সালে আফ্রিকান-আমেরিকানদের যে-888sport live chatীগোষ্ঠী গড়ে ওঠে তার অন্যতম সদস্য ছিলেন বারবারা। তাঁদের কাজের মূল বিষয়বস্ত্ত ছিল আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের জীবন, আর তাঁরা সেটা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহার করেছেন উজ্জ্বল রং এবং ছন্দময় প্রকাশভঙ্গি। ‘বস্ন­¨vক মেন’ ছবিটিও সে-ধারারই একটি  চিত্রকর্ম।

স্টুডিও মিউজিয়ামে আরো একটি ছবি দেখলাম, যাতে ইউরোপভিত্তিক কল্পকাহিনি ব্যবহার করে আফ্রিকার ওপর ইউরোপের শোষণের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। হেইল উডরাফের ‘আফ্রিকা অ্যান্ড দ্য বুল’ শিরোনামের এই ছবিটির মূলে রয়েছে একটি গ্রিক কল্পকাহিনি, যাতে গ্রিক দেবতা জিউস সাদা ষাঁড়ের ছদ্মবেশে ফিনিশিয়ান রাজকন্যাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়। কিন্তু 888sport live chatী তাঁর ছবিতে দেখাচ্ছেন একজন কালো মেয়েকে সাদা গরুর পিঠে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে – স্পষ্টতই আফ্রিকার ওপর ইউরোপের শোষণের একটি চিত্র এটি।

স্টুডিও মিউজিয়ামে শুধু চিত্রকর্মই নয়, রয়েছে আলোকচিত্র এবং ভাস্কর্য। ভালোভাবে দেখলে প্রতিটি 888sport live chatকর্মে পাওয়া যায় কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের জীবন-সংস্কৃতি ও সংগ্রামের প্রতিফলন। মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে কত সুন্দরভাবে তুলে ধরা যায় তার একটি ভালো উদাহরণ শাবাজের আলোকচিত্রগুলো। বেশ কয়েকটি ছবিতে তিনি তুলে ধরেছেন হারলেম এলাকার – বিশেষ করে ১২৫ নম্বর রাস্তার (যাকে কোনো কোনো দিক থেকে ওই এলাকার প্রাণকেন্দ্রও বলা যায়) জীবনের চালচিত্র।

মিউজিয়াম দেখা শেষ করে যখন বের হলাম, তখন প্রায় বন্ধ হওয়ার সময়। স্যুভেনিরের দোকানটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু রিসেপশন কাউন্টারে একজন তখনো বসে ছিলেন। আর সেখানে সাজানো ছিল বিভিন্ন ধরনের প্রচারপত্র এবং মিউজিয়ামের নিজস্ব সাময়িকীর সর্বশেষ 888sport free bet। আমাকে পত্রিকাটি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে দেখে ওই কর্মকর্তা জানালেন, এটি আমি সৌজন্য 888sport free bet হিসেবে নিতে পারি। পত্রিকাটির সামনের পৃষ্ঠাগুলো থেকে বুঝতে পারলাম, এই মিউজিয়ামের পেছনের শক্তি একটি ফাউন্ডেশন, যেটি বেশ ভালোই চাঁদা পায়, আর তার ফলেই সম্ভব হচ্ছে 888sport live chatবিষয়ক এই সাময়িক পত্রিকাটি প্রকাশ করা।

মিউজিয়াম দেখা শেষ করে ১২৫ নম্বর রাস্তা ধরেই ফিরে যাচ্ছিলাম শমীর বাসায়। এক পাশে দেখলাম ঐতিহ্যবাহী অ্যাপোলো থিয়েটার, যা এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে বেশ ভালোভাবে। স্পষ্টতই, অনেক দশক ধরে হারলেমের ওঠানামার সাক্ষী এই থিয়েটার। শুধু থিয়েটার এবং বড় বড় দোকানপাটই নয়, ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে বসে গেছে অনেকেই। ম্যানহাটনের অনেক জায়গায়ই ফুটপাতে ছোট ছোট দোকান দেখা যায়; তবে ১২৫ নম্বর রাস্তার দোকানগুলোর পসরার ধরন স্বাভাবিকভাবেই বেশ আলাদা, আর পুরো পরিবেশ অনেক বেশি প্রাণবন্ত। এলাকাটার পরিবেশ থেকেই বোঝা
যাচ্ছিল, প্রকৃতিতে আফ্রিকান-আমেরিকানরা খুবই প্রাণোচ্ছল এবং আমুদে। r