হাসনাত আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। এটি এত আকস্মিক এত অবিশ্বাস্য যে এটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। হাত-পা সব অসাড় হয়ে আসছে। এ এক অবিশ্বাস্য অকল্পনীয় দুর্ঘটনা। এ যেন এক বজ্রপাত।
আমি স্তব্ধ, হতবাক ও বাকরুদ্ধ। এক কঠিন দুঃসময় অতিক্রম করছি। এ শুধু আমার একার দুর্যোগ বা দুর্বহ ক্ষতি নয়, সবার জন্য এক বিশাল অপূরণীয় ক্ষতি। সবাই কাঁদছে। কতজন যে আমাকে কাঁদতে কাঁদতে ফোন করছে। কলকাতা থেকে চিন্ময় গুহ বারবার ফোন করছেন, মেসেজ পাঠাচ্ছেন। বলছেন, নিঃস্ব হয়ে গেলাম। বাংলা 888sport live footballের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। 888sport live footballজগৎ নিঃস্ব হয়ে গেল। এটা দুই বাংলার জন্যই প্রযোজ্য।
কবি, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, চিত্র-সমালোচক ও মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসনাত চলে গেছে আমাদের ছেড়ে। আর ফিরবে না। কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাতের আকস্মিক প্রয়াণ সবার হৃদয়ে যেন বজ্রাঘাত হেনেছে। ১৭ বছর এই 888sport live football পত্রিকাটি তিনি সম্পাদনা করেছেন। তার আগে তিনি সংবাদের 888sport live footballপাতার সম্পাদক হিসেবে ২৯ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। সংবাদের 888sport live football সাময়িকীকে তিনি অবিশ্বাস্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। একদিকে তিনি পাঠকরুচি তৈরি করেছিলেন, অন্যদিকে তিনি অসংখ্য নতুন লেখক তৈরি করেছেন এই সাময়িকীর মধ্য দিয়ে। এছাড়া এই সাময়িকীর মধ্য দিয়ে তিনি চিত্রকলার প্রতি পাঠকের মনে ভালোবাসা তৈরি করেছেন। শুধু তাই নয়, 888sport appর বাইরের সম্ভাবনাময় নবীন লেখকদের লেখা প্রকাশ করে অনেককে লেখক হয়ে উঠতে উৎসাহিত করেছেন।
আমার প্রায় পাঁচ দশকের জীবনসঙ্গী আবুল হাসনাত আকস্মিক অসুস্থতায় আমাদের ছেড়ে চলে গেছে, যার জন্য আমি এবং আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। কারণ, একজন সম্পূর্ণ সক্রিয় মানুষ এভাবে চলে যাবে, আমরা কেউই ভাবতে পারিনি। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, সে এভাবেই চিরকাল সক্রিয় থাকবে, কাজ করে যাবে। আমাদের আগলে রাখবে। মাথার ওপর ছায়া হয়ে থাকবে। সেই ছায়াটা আজ আকস্মিক সরে গেছে। রেখে গেছে বিশাল শূন্যতা।
হাসনাতের সঙ্গে আমার বিয়ে হয় ১৯৭৪ সালে। ৪৬ বছরের যৌথ জীবন আমাদের। টর্নেডোর মতো একটা ঝড় এসে আমার জীবন থেকে তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেছে। এখন একলাই পথ চলতে হবে। তবু জানি, সে আমার সঙ্গে, আমাদের সঙ্গেই থাকবে। থাকবে তার কাজ, তার লেখাগুলো, তার কথা।
ওর সঙ্গে আমার পরিচয় হয় খুব সম্ভবত ১৯৬৫ বা ’৬৬ সালে। আমি তখন বকশীবাজারে তৎকালীন গভ. ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে পড়ি। হাসনাত দৈনিক সংবাদের সাব-এডিটর ও স্পোর্টস রিপোর্টার। আমাদের কলেজের স্পোর্টসের সংবাদ সংগ্রহ সেদিন ছিল তার অ্যাসাইনমেন্ট। সেই সূত্র ধরে পরিচয়। আমরা দুজনেই তখন ছাত্র ইউনিয়ন করি। আইয়ুববিরোধী ছাত্র আন্দোলন, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে রাজপথে আমরা তখন ব্যস্ত। ৩১/১ হোসেনি দালান আমাদের প্রতিদিনের ঠিকানা। রাজপথে মিছিলে, সভায় আমাদের দৈনন্দিন ব্যস্ততা। তখন হাসনাত আমার মিছিলের সঙ্গী।
হাসনাত তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। দিনে ক্লাস করে, রাতে দৈনিক সংবাদে নাইট শিফটে কাজ করে। তাকে যেতে হয়েছে কঠিন জীবনসংগ্রামের মধ্য দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের শুরু থেকেই চাকরি করতে হয়েছে নিজের পড়ার খরচ জোগানো ও পরিবারকে সাহায্য করার জন্য।
তাই বলে ছাত্র ইউনিয়নের কাজ, কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশ মেনে মিছিল, সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণের কোনো বিরাম ছিল না। চোখে ছিল সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন।
আবুল হাসনাতের জন্ম ১৯৪৫ সালে 888sport appয়। দীর্ঘদিন কেটেছে ৯২ যুগীনগরের বাড়িতে। এই বাড়িতে কমরেড মণি সিংহও থেকেছেন দুই মাস। এটা আমার বিয়ের আগের ঘটনা। বিয়ের পর এই বাড়িতেই আমরা সংসার করেছি বহু বছর। এই বাড়িতে কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়নের অনেক গোপন বৈঠক ও সভা হয়েছে।
খালেদ মোশাররফের অভ্যুত্থানের পর ৪ নভেম্বর সকালে আমাদের এই বাড়িতে হাসনাতের শোবার ঘরে কমিউনিস্ট পার্টির ও আওয়ামী লীগের নেতাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টি ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। সাজেদা চৌধুরী, মহিউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ ফরহাদ, সাইফউদ্দিন আহমেদ মানিক ও পঙ্কজ ভট্টাচার্যের নাম উল্লেখযোগ্য। এমনি আরো বহু বহু ঘটনার সাক্ষী ৯২ যুগীনগর। এসবেরই অনুঘটক আবুল হাসনাত।
বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে হাসনাত ছাত্র ইউনিয়ন ছাড়াও সংস্কৃতি সংসদে সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করে। এই সময়ে তার নেতৃত্বে উজ্জ্বল একঝাঁক তরুণ-তরুণী সংস্কৃতির সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সমাজ পরিবর্তনের জন্য দিনরাত মেতে উঠেছিল। সেই সময় সংস্কৃতি সংসদ চমৎকার সব অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।
১৯৭০ সালের শুরুতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বিশাল প্যান্ডেল করে দুই দিনব্যাপী উৎসব হয়েছে। একদিন সংগীত ও নৃত্য, দ্বিতীয় দিন সংগীত ও নাটক। এখানেই মঞ্চস্থ হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী। 888sport appর সংস্কৃতি অঙ্গনে তা ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল। মিডিয়ায় এর খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়েছিল। নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন সৈয়দ হাসান ইমাম। রক্তকরবী নাটকেই আসাদুজ্জামান নূরের 888sport appর মঞ্চে প্রথম অভিনয়। নাটকটিতে ও সংগীতানুষ্ঠানে খ্যাতনামা 888sport live chatীরা অংশ নিয়েছিলেন। ওই সংগীতসন্ধ্যায় পরিবেশিত হয়েছিল নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ 888sport app download apkটি সংগীত ও নৃত্যনাট্য হিসেবে। শহীদ আলতাফ মাহমুদ এতে অসাধারণ সুরারোপ করেছিলেন। এই সংগীত উৎসবের আয়োজনে প্রচুর শ্রম দিয়েছিল আবুল হাসনাত ও সংস্কৃতি সংসদের একদল নিবেদিত কর্মী। শুধু এই আয়োজনই নয়, নানা সময়ে তারা আয়োজন করেছে রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুলজয়ন্তী ও আরো অনেক অনুষ্ঠানের। সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে একদল তরুণ-তরুণী উদ্দীপিত হয়েছিল। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও বাঙালি সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠার জন্য আবুল হাসনাত মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছিল ও বিপুল শ্রম দিয়েছিল। এছাড়া ছিল 888sport cricket BPL rateের সন্ধ্যায় সংগীতানুষ্ঠান আয়োজন।
ফেব্রুয়ারি এলে প্রতিবছর ছাত্র ইউনিয়ন ও সংস্কৃতি সংসদ থেকে অসাধারণ 888sport cricket BPL rateের সংকলন প্রকাশ করা। তার জন্য বিজ্ঞাপন সংগ্রহ। সংকলন প্রকাশের জন্য দিনরাত প্রেসে পড়ে থাকা। অসাধারণ এক একটি সংকলন প্রকাশ হয়েছিল – নিনাদ, সূর্য জ্বালা, অরণি, ঝড়ের খেয়া। সব নাম এখন মনে নেই। জানি না সংকলনগুলো এখন কারো কাছে আছে কি না। সংগ্রহে রাখা প্রয়োজন। প্রায় সব কাজই একসঙ্গে করতেন – মতিউর রহমান ও আবুল হাসনাত।
আবুল হাসনাত সৃজনী লেখক ও 888sport live chatী গোষ্ঠীর সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিল। সৃজনী কবিদের 888sport app download apk নিয়েও প্রতিবছর চমৎকার 888sport cricket BPL rateের সংকলন প্রকাশিত হতো। দুজন ছাড়া সৃজনীর কেউ আজ আর বেঁচে নেই।
ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলন উপলক্ষে রবীন্দ্রনাথের মুক্তধারা, তাসের দেশ, আবর্তসহ নানা সময়ে বিভিন্ন নাটকের সফল মঞ্চায়ন। এছাড়া বহু রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে হাসনাত সর্বদা ব্যস্ত ছিল।
তখন থেকেই 888sport live footballের প্রতি তার ঝোঁক। ছিল প্রচুর বই কেনা, বিশেষত 888sport app download apkর বই কেনা ও পড়ার নেশা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পড়া ও আরো অনেক বামপন্থী 888sport live football পাঠে তখন থেকেই তার বিপুল আগ্রহ। নিজেও 888sport app download apk লিখতে শুরু করে। প্রথম দিকে ছোটগল্পও লিখেছে। পরে দীর্ঘদিন শুধু 888sport app download apkই লিখেছে। পরে কিশোর 888sport alternative link এবং 888sport liveে হাত দেয়।
ফিরে যাই আবার ছাত্র আন্দোলন প্রসঙ্গে। ১৯৫৮-তে আইয়ুবের সামরিক শাসন জগদ্দল পাথরের মতো দেশের বুকে চেপে বসে। ’৬২-তে এর বিরুদ্ধে যে ছাত্র-আন্দোলন গড়ে ওঠে, হাসনাত তাতে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৬-তে আবুল হাসনাত 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অনার্সে ভর্তি হয়। একই সময়ে ১৯৬৪-র ডিসেম্বরে হাসনাত দৈনিক সংবাদের বার্তা বিভাগে যোগ দেয়। দিনে ক্লাস করা, মধুর ক্যান্টিনে বা বটতলায় সভা, মিছিল; বিকেলে ৩১/১ হোসেনি দালানে সভা। রাতে ৮টা থেকে ২টা সংবাদ অফিসে সাংবাদিকতা – এই ছিল তার প্রাত্যহিক রুটিন।
প্রতিদিন ছাত্র ইউনিয়ন অফিসে যেতেই হবে। আমরাও বদরুন্নেসা কলেজ থেকে ৩১/১ হোসেনি দালানে প্রতি বিকেলে জড়ো হতাম। হাসনাত তাঁর আত্মজীবনী হারানো সিঁড়ির চাবির খোঁজে গ্রন্থে এ-প্রসঙ্গে লিখেছে :
আজ ভাবতে অবাকই লাগে, রাতে চাকরি, সকাল থেকে দুপুর মধুর ক্যান্টিন আর দুপুর থেকে সন্ধ্যা অবধি ৩১/১ হোসেনি দালানে সভা করে বা সময় কাটিয়ে কেমন করে তখন এত পরিশ্রমী হয়ে উঠেছিলাম। দুপুরে আহার করতাম দল বেঁধে ডিলাইট কিংবা পপুলারে। কখনো হাসিনা হোটেলে (বর্তমানে অবলুপ্ত)। খুব অল্প আহার করতাম আমরা। ১৯৬৭-৬৮ সাল থেকেই শামসুদ্দোহা, নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শেখর দত্তের সঙ্গে যে প্রগাঢ় সখ্য হয়েছিল তা দীর্ঘদিন অটুট ছিল। এ বন্ধুত্ব ছিল আন্দোলন গড়ে তোলার কর্মসূত্রে এবং পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নকে আরও সম্প্রসারণ করার অভিপ্রায়ে। তারপর ৩১/১ হোসেনি দালানের আপিস গৃহের বেঞ্চে দুপুরে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর আবার কাজ শুরু হতো। আটটা নাগাদ চলে যেতাম সংবাদ অফিসে চাকরির জন্য। সে এক সংগ্রামের জীবন ছিল বটে। ৩১/১ হোসেনি দালান ঘিরেই আমাদের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা ও দেশচেতনা আবর্তিত হয়েছে। … প্রেম, প্রীতি ও ভালোবাসায় আবর্তিত হয়েছি আমরা এই ৩১/১ হোসেনি দালান গৃহে। এই কর্মচাঞ্চল্য ও কর্মযজ্ঞের গৃহটি হয়ে উঠেছিল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য। গৃহেই দীক্ষা পেয়েছি অসাম্প্রদায়িক হতে, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার অনুষঙ্গকে ধারণ করতে এবং সকল নিপীড়িত মানুষের জন্য সহমর্মী হতে। নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির প্রযত্নে যে তাত্ত্বিক দর্শন পেয়েছিলাম তার মূল্যও আমাদের কাছে ছিল অপরিসীম। কিন্তু বাস্তব প্রয়োগ ও জীবনদৃষ্টির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এই গৃহে, ছাত্র ইউনিয়নের পতাকাতলে …।
৩১/১ ঘিরে আমাদের জীবনও তখন প্রতিদিন আবর্তিত হচ্ছে। তখন আইয়ুববিরোধী ছাত্র-আন্দোলন ক্রমেই আরো জোরালো হয়ে উঠেছে। ছাত্রদের এই আন্দোলন ছিল দেশে স্বৈরশাসনের অবসান ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।
১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণা করলে এই আন্দোলন ক্রমেই আরো জোরদার হয়ে ওঠে। ১৯৬৯ সালে গণতন্ত্রের জন্য এক উত্তাল গণআন্দোলন হয়ে ওঠে। ২০ জানুয়ারি ছাত্রমিছিলে গুলিতে আসাদের হত্যা এবং ২৪ জানুয়ারি মতিউর হত্যার পর তা এক বিশাল গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। এই উত্তাল গণআন্দোলনে হাসনাত ছিল সর্বদা সক্রিয়। এ-সময় হাসনাতের বিখ্যাত 888sport app download apkর পঙক্তি – ‘লাঠি, গুলি, বেয়নেট দিয়ে দখল করা/ হে নগরী, আমরা প্রস্তুত থাকব’ – দিয়ে ব্যানার-পোস্টার লেখা হতো। আন্দোলনের এই ঝোড়ো সময়ে আমিও প্রতিদিন ছিলাম সভা-সমিতি ও রাজপথের সব মিছিলে।
’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়ে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর মার্চের ২৫ তারিখ আইয়ুব খানের পতন হয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসেন জেনারেল ইয়াহিয়া খান। ক্ষমতায় বসে তিনি নির্বাচন ঘোষণা করেন, পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন। ’৭০-এর সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ষড়যন্ত্র করতে থাকে। ১ মার্চ দুপুর ১টায় রেডিওতে ঘোষণা আসে। ৩ মার্চ 888sport appয় অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত করা হয়। শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার দাবিতে বাঙালির তুমুল রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম এবং ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলন।
এই আন্দোলন তথা বাঙালিকে দমন করতে ২৫ মার্চ 888sport appয় ব্যাপক গণহত্যা চালানো হয়। রক্তঝরা মার্চের ইতিহাস সবারই জানা। তাই আমি অতি সংক্ষেপে এর উল্লেখ করলাম।
সেই ভয়ংকর গণহত্যার পর আমরা সবাই বুঝলাম স্বাধীনতা ছাড়া আমাদের আর কোনো বাঁচার পথ নেই। 888sport app থেকে দলে দলে মানুষ গ্রামে চলে যাচ্ছে। শিশু, কিশোর, যুবা, বৃদ্ধ – সবাই হাঁটছে। কেউ কেউ হেঁটে ৪০০ থেকে ৫০০ মাইল পর্যন্ত পাড়ি দিয়েছে বাঁচার জন্য। সেই দুর্দশা অবর্ণনীয়।
আবুল হাসনাত ২৯ মার্চ পার্টির নির্দেশে ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খানের সঙ্গে ৯২, যুগীনগরের বাড়ি ছেড়ে, পরিবারের কাছে বিদায় নিয়ে নিরুদ্দেশের পথে যাত্রা করে।
হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ডাক্তারদের কোয়ার্টার, ডেমরার বাওয়ানী জুট মিলের কোয়ার্টার হয়ে নরসিংদীর রায়পুরার একটি বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এখানে পার্টির (সিপিবি) আরো অনেক নেতাও আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে ১৩ এপ্রিল ভোরে ১৬ জনের একটি দলের সঙ্গে তাঁরা সীমান্তের উদ্দেশে রওনা হন। দলের সবাই কমিউনিস্ট কর্মী ও নেতা। দলের নেতৃত্বে ছিলেন শ্রমিকনেতা শহীদুল্লাহ চৌধুরী।
বহু মাইল পথ হেঁটে বহু বিপদ পেরিয়ে তাঁরা ১৪ এপ্রিল সীমান্ত অতিক্রম করে আগরতলা পৌঁছাতে পারলেন। আগরতলায় মাস দেড়েক পার্টির অন্যদের সঙ্গে থেকে পার্টির নির্দেশে তাকে কলকাতায় যেতে হয়। কমিউনিস্ট পার্টির লিয়াজোঁ অফিস পরিচালনার মূল দায়িত্ব দিয়ে কলকাতায় পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রায় পুরো সময় সে ১৬/১ আমির আলী অ্যাভিনিউতে স্থাপিত কমিউনিস্ট পার্টির অফিসে সার্বক্ষণিক সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে।
এখানে আবুল হাসনাতের আত্মজীবনী হারানো সিঁড়ির চাবির খোঁজে থেকে কিছুটা উদ্ধৃত করছি :
মুক্তিযুদ্ধকালে আমি যখন কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে ১৯৭১-এর মে মাস থেকে কলকাতায় বৃহৎ কর্মে নিজেকে ব্যাপৃত করেছিলাম তখন স্বাভাবিকভাবে 888sport appয় অবস্থানরত আমার পরিবার ও পরিজনের কথা মনে পড়ত। কলকাতায় ১৬/১ আমির আলী এভিনিউতে 888sport appsের কমিউনিস্ট পার্টির একটি লিয়াজোঁ আপিস খোলা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের প্রায় পুরো সময়টা আমি সে আপিসের দায়িত্বে ছিলাম। মায়ের সেই চাহনি এবং অপলক চেয়ে থাকা শত কাজের মধ্যেও আমাকে কখনো-সখনো উন্মনা করে দিত। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, কলকাতায় আট মাস অবস্থান আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। কলকাতায় সে সময় 888sport appsের কমিউনিস্ট পার্টি ব্যাপক তৎপরতা পরিচালনা করছিল। এই আপিসেই ফোর্ট উইলিয়াম থেকে একজন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা পি নাথ ও অপরজন সমীর ব্যানার্জি বাবু (আসল নাম নয়) আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং মে থেকে নভেম্বর এই সময়ে ছাত্র ইউনিয়নের ৮০০ ছাত্র ও যুবককে কয়েক ভাগে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য দেরাদুনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল। হাওড়া স্টেশন থেকে দেরাদুনগামী কয়েকটি নির্দিষ্ট রিজার্ভ কম্পার্টমেন্টে তাদের নিয়ে যাওয়া হতো। সাবধানতা গ্রহণ করা হতো। আলো নেভানো থাকত। সাহায্যকারীরা টর্চ ব্যবহার করত। আগরতলা থেকেও এভাবে তেজপুর ও 888sport app স্থানে পাঠানো হতো। আজ মুক্তিযুদ্ধের এত বছর বাদে ভাবতে ভালো লাগে যে মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্র-যুবকদের ট্রেনিংয়ে পাঠানো এবং বস্ত্র ও ওষুধপত্র সংগ্রহ ও ক্যাম্পে ক্যাম্পে বিপুল কর্মকাণ্ডে পশ্চিমাঞ্চলের ছয়টি জেলার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে উঠেছিলাম আমি। অংশ নিয়েছিলাম নানা ধরনের কর্মে।
এবার আমার কথা। মুক্তিযুদ্ধকালে আমি কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকবলিত 888sport appsেই ছিলাম। পুরো 888sport apps তখন যুদ্ধক্ষেত্র। প্রথম দিকে এপ্রিল থেকে শুরু করে কয়েক মাস আমি গ্রামে ছিলাম। তারপর থেকে অবরুদ্ধ 888sport app শহরেই ছিলাম। পুরো 888sport app নগরী তখন যেন এক কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। রাতে ব্ল্যাকআউট ও কারফিউ। একের পর এক দুঃসংবাদ আসছে। খবর পাচ্ছি প্রখ্যাত সংগীত888sport live chatী ও সুরকার আমাদের গণসংগীতের শিক্ষক আলতাফ মাহমুদকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্বর নির্যাতনের পর তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। প্রখ্যাত রবীন্দ্রসংগীত888sport live chatী ইকবাল আহমেদকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হচ্ছে ও তাঁকে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
অবরুদ্ধ শহরে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে। এর মধ্যেই মুক্তিযুুদ্ধের পক্ষে কাজও করছি। অর্থ সংগ্রহ করছি, কেউ এসে তা আবার নিয়েও যাচ্ছে যথাস্থানে পাঠানোর জন্য। পার্টির গোপন সার্কুলার আমাদের কাছে আসছে। আমরা তা নিজেরা পড়ছি। অন্যদেরও পড়াচ্ছি। জানি হাসনাত সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গেছে। তারপর থেকে তার আর কোনো খবর জানি না। উৎকণ্ঠায় কাটছে দিনরাত।
এমনই এক সময়ে হঠাৎ আমার হাতে এলো পার্টির একটি সার্কুলার। সার্কুলারে জ্বলজ্বল করছে হস্তাক্ষর। সেই হাতের লেখা আবুল হাসনাতের। আমি জানলাম হাসনাত বেঁচে আছে। সেই মুহূর্তটির কথা আমি কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। সেকালে স্টেনসিল পেপারে হাতে লিখে সাইক্লোস্টাইল মেশিনে সার্কুলার কপি করা হতো। তখন তো কম্পিউটার, ফটোকপিয়ার এসব ছিল না।
একসময় যুদ্ধের দিন শেষ হলো। ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধ শেষ হলো। 888sport apps স্বাধীন হলো। প্রথম গেরিলাদলটি ১৭ ডিসেম্বর 888sport appয় প্রবেশ করল। হাসনাত কলকাতায় পার্টি অফিসের দায়িত্ব শেষ করে আগরতলা হয়ে ২২ ডিসেম্বর 888sport appয় ফিরে এলো। তখন ছাত্র ইউনিয়ন অফিসে আবার আমাদের দেখা হয়েছে আরো অনেক বন্ধুর সঙ্গে।
ফিরে যাই পুরনো কথায়। আমিও তখন ছাত্র ইউনিয়ন ও কমিউনিস্ট পার্টির নির্দেশে দিনরাত সভা, মিছিলে ব্যস্ত। সেই সঙ্গে 888sport cricket BPL rateের সন্ধ্যার অনুষ্ঠানসহ অসংখ্য অনুষ্ঠানে কোরামে গণসংগীতে নিয়মিত অংশ নিচ্ছি।
এই সব অনুষ্ঠানের রিহার্সাল হচ্ছে কখনো আর্ট কলেজে, কখনো ইকবাল হলের (বর্তমান জহুরুল হক হল) কমনরুমে; শহিদ মিনারের নিচে গর্ভ গৃহে (বেসমেন্ট – যেটি বর্তমানে দেয়াল তুলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে)।
গান শেখাতেন আলতাফ মাহমুদ, শেখ লুৎফর রহমান। পরে অজিত রায়, সুখেন্দু চক্রবর্তী ও মাহমুদুন্নবী – এমনি সব প্রখ্যাত সংগীত888sport live chatী। এসব অনুষ্ঠান ও রিহার্সাল আয়োজনের দায়িত্বে ছিল তখন আবুল হাসনাতসহ সংস্কৃতিকর্মীরা। ওর কাজ ছিল প্রখ্যাত 888sport live chatীদের অনুরোধ করে ডেকে আনা, রিহার্সালের স্থান নির্ধারণ ও আমাদের মতো অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা। এসব রিহার্সালে তাই আমাদের দেখা হতো।
সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ৫০ বছর উদ্যাপন উপলক্ষে পল্টন ময়দানে এক বড় উৎসব হয়েছিল। তার রিহার্সাল হতো বিজয়নগরে। এর আয়োজনের দায়িত্বও ছিল আবুল হাসনাতের। তখনো আমরা শুধুই সহকর্মী।
আমি ইতিমধ্যে ১৯৬৭ সালে 888sport app বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। তখন আইয়ুববিরোধী আন্দোলন তথা গণতন্ত্রের জন্য ছাত্রদের উত্তাল সংগ্রামের কাল ’৬৮ বা ’৬৯-এর কোনো একদিন সংবাদে হাসনাতের একটি দীর্ঘ 888sport app download apk প্রকাশিত হয়। এই 888sport app download apkটি আমাকে নাড়া দেয়। মনে হলো, এটি আমার উদ্দেশেই লেখা। আমি নিজের সঙ্গে অনেক বোঝাপড়া করি। একসময় সিদ্ধান্তে আসি, হাসনাতকে আমারও ভালো লাগে। আমি অপেক্ষা করতে থাকি। ওর কাছ থেকে কিছু শোনার জন্য। কিন্তু বৃথা। ও আমাকে দেখি কিছুই বলছে না।
বুঝলাম, ও বলতে পারছে না। অবশেষে স্থির করলাম, যা বলার আমিই বলব।
কিন্তু হাসনাত তার কঠিন জীবনসংগ্রাম, পরিবারের প্রতি তার দায়িত্ব ইত্যাদি ভেবে আমাকে ফিরিয়ে দিলো। আমি অভিমান নিয়ে নীরব থাকলাম। এর মাঝে মুক্তিযুদ্ধ গেছে। দেশের মানচিত্র বদলে গেছে। জন্ম হয়েছে নতুন দেশের।
১৯৭২ সালে পার্টির নির্দেশে ও কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে মস্কো যাওয়ার আগে হাসনাত আর আমার মধ্যে আবার কথা হয়। আমরা নতুন করে আবার ভাবতে শুরু করি। ওদের নয় মাস কমিউনিস্ট পার্টির স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করতে পাঠানো হয়েছিল। ’৭৩ সালে ওরা ফিরে আসে। অনেক টানাপড়েন, অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আমরা সিদ্ধান্ত নিই আমরা বিয়ে করব। পরিবারকে জানাই। আমার অনমনীয় জেদের কারণে অভিভাবকেরা সম্মতি দেয়।
’৭৪ সালের ১৬ জানুয়ারি আমাদের বিয়ে হয়। জানি না অনেক বেশি বলে ফেললাম কি না। আমি আমার আত্মজীবনী লিখছিলাম। ভেবেছিলাম এই বিষয়টা এক লাইনেই শেষ করব। লেখা শেষ করার আগেই হাসনাত আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। এই লেখা লিখতে গিয়ে অনেক কথা লিখে ফেললাম।
আমাদের যৌথ জীবনে হাসনাত সব দায়িত্ব পালন করেছে। আমাকে কিছুই করতে দেয়নি। আমাকে কখনো বাজার করতে দেয়নি, আমি পারব না বলে। সর্বদা আমার পাশে থেকেছে। আমাকে আগলে রেখেছে। কোনো আঁচ লাগতে দেয়নি। কোনো কাজে বাধা দেয়নি। আজ তাই অত্যন্ত একলা ও অসহায় বোধ করছি। আমার সব কাজে, বিশেষত লেখার ব্যাপারে খুব উৎসাহ দিয়েছে। সংবাদে আমি যখন ‘সাম্প্রতিক’ নামে সাপ্তাহিক কলাম লিখতে শুরু করি, তখন প্রকাশিত হওয়ার পর আমার একেকটি লেখা হাসনাত কতবার করে যে পড়ত! কলামটি তখন খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। সাত বছর নিয়মিত লিখেছিলাম। হাসনাত খুবই গর্বিত হয়েছিল।
পরে আমি লেখা ছেড়ে দেওয়ার পর বহু বহুবার আক্ষেপ করেছে ও আমাকে লিখতে বলেছে কতবার, তার ইয়ত্তা নেই। আমার চরম আলসেমির জন্য আর আগের মতো লেখা হয়ে ওঠেনি। আমি লিখছি দেখলে ও খুশি হতো। হয়তো এই খেদ ওর মনে রয়ে গেল। এই কথাগুলো বললাম এ জন্য যে, এই দিয়ে ওর মনের একটা পরিচয় পাওয়া যায়।
হাসনাতের সারা জীবনের শখ ও নেশা ছিল বই কেনা, সংগ্রহ ও পড়া। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বই কিনেছে ও বই পড়েছে। এখনো দুটি দোকানে চারটি বই রাখা আছে। আনতে পারেনি। সেগুলো আমি সংগ্রহ করব। বাড়িতে এত বই, তা নিয়ে মাঝেমধ্যে রাগও করেছি। এখন বইগুলো আছে। হাসনাত নেই।
ছাত্রজীবন থেকে ছবি কেনার শুরু। সারা জীবনের শখ ছিল প্রখ্যাত 888sport live chatীদের চিত্রকর্ম সংগ্রহ। অনেক ছবির দাম একবারে পরিশোধ করতে পারেনি। আস্তে আস্তে পরিশোধ করেছে। প্রথম প্রথম আমি রাগ করতাম, দেয়ালে এত ছবি কী দরকার? পরে ধীরে ধীরে আমারও ভালো লাগা জন্মাল। সুন্দর করে ঘর সাজানোর শখ ছিল। সিরামিকসের জিনিস পছন্দ করত। কোথাও গেলে সিরামিকস আনত। আমি বিদেশে গেলে এসবই আনতে বলত। দেশের নানা অঞ্চলের মাটির পুতুল সংগ্রহ করেছিল। এসবই এখন আমার শূন্য বাড়িতে সাজানো রয়েছে। শুধু যার এগুলোতে এত আগ্রহ ছিল, সে-মানুষটিই নেই।
আমাদের বিয়ের পর দীর্ঘদিন আমাদের কঠিন জীবনসংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সংবাদের বেতন তখন কম ছিল। ৭ তারিখে বেতন হতো, ১০ তারিখে ধারকর্জ পরিশোধ করে হাত খালি। তারপর শুরু হতো আবার ধার করা। আবুল হাসনাত ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে দৈনিক সংবাদে বার্তা বিভাগে যোগ দেয়। কিছুকাল স্পোর্টস রিপোর্টার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছে। বার্তা বিভাগে সহসম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছে। ১৯৭৫ সালে সংবাদের 888sport live football সাময়িকী সম্পাদনার দায়িত্ব পায়।
সংবাদের 888sport live football সাময়িকীকে মানসম্পন্ন করার জন্য মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছিল। প্রতিটি 888sport free betয় বৈচিত্র্য আনার জন্য বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিল। প্রতিটি বিশেষ 888sport free betর জন্য প্রচুর পরিশ্রম করত। বাড়ি থেকে অনেক বই নিয়ে যেত পাতা করার জন্য। কারণ, অনেক ছবি প্রয়োজন হতো। অনেক রাতে কাজ শেষ করে বইয়ের বোঝা হাতে করে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরত। এই ছিল রুটিন। এছাড়া বিখ্যাত 888sport live chatীদের চিত্রকর্ম দিয়ে হাসনাত 888sport live footballপাতা সাজাত।
সাময়িকীর প্রতিটি 888sport free betয় বিশ্ববিখ্যাত 888sport live chatীদের চিত্রকর্ম স্থান পেত। একেকটি বিশেষ 888sport free betর প্রচ্ছদের দায়িত্ব দিত একেকজন চিত্র888sport live chatীকে। এভাবেই আবুল হাসনাত চিত্র888sport live chat সম্পর্কে দেশের পাঠকের ও মানুষের মনে আগ্রহ গড়ে তোলে। 888sport live football সাময়িকীর মধ্য দিয়ে আবুল হাসনাত মানুষের 888sport live football ও 888sport live chatের রুচি গঠনে সাহায্য করেছিল। হাসনাত জানত কোন লেখা কাকে দিয়ে লেখাতে হবে। এভাবে সে অনেককে দিয়ে তাগাদা দিয়ে লিখিয়েছে এবং অনেককে লেখক হিসেবে তৈরি করেছে।
সম্পাদক আবুল হাসনাতের হাত ধরে অনেক লেখকের জন্ম হয়েছে। লেখকেরা অনেকেই আজ সে-কথা স্বীকার করেছেন। সংবাদে অনেক লেখককে দিয়ে ধারাবাহিক লিখিয়েছে। পরে সেগুলো বই হিসেবে বেরিয়েছে। যেমন সৈয়দ শামসুল হকের 888sport alternative link বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ, 888sport live football কলাম হৃৎকলমের টানে, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের চিলেকোঠার সেপাই, সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের অলস দিনের হাওয়া ইত্যাদি।
888sport live football সাময়িকীকে আবুল হাসনাত এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। এজন্য সংবাদ সম্পাদক আহমদুল কবির সংবাদ সাময়িকীর জন্য চারটি পাতা বরাদ্দ করেন। সংবাদের বৃহস্পতিবারের 888sport live football সাময়িকীর জন্য দেশের নানা প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাঠকেরা উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করতেন। সাময়িকীর জন্য বৃহস্পতিবারের সংবাদ বেশি বিক্রি হতো। সেজন্য ওইদিন সংবাদ বেশি ছাপাতে হতো। অনেকে সংবাদ কেনা ছেড়ে দিলেও শুধু বৃহস্পতিবার সংবাদ কিনত।
আবুল হাসনাত ২০০৩ সাল পর্যন্ত দৈনিক সংবাদে একাদিক্রমে ৩৮ বছর কর্মরত ছিল। 888sport live football সাময়িকী সম্পাদনার দায়িত্বে ছিল ২৯ বছর। 888sport live chatী কামরুল হাসানের মৃত্যু হলে দুদিনের মধ্যে একটি অনন্যসাধারণ চার পাতার রঙিন 888sport live football সাময়িকী কামরুল হাসান 888sport free bet হিসেবে বের করেছিল। এটি অন্য কারো পক্ষে করা সম্ভব ছিল বলে আমার মনে হয় না।
২০০৩ সালে আবুল হাসনাত কালি ও কলম 888sport live footballপত্রিকার সম্পাদক হিসেবে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে যোগ দেয়। কালি ও কলম 888sport appsের একমাত্র 888sport live football পত্রিকা, যা একাদিক্রমে ১৭ বছর ধরে প্রকাশিত হচ্ছে। বর্তমানে অষ্টাদশ বর্ষ চলছে। কালি ও কলম এত উন্নত মানের 888sport live footballপত্রিকা যে এটি 888sport apps ও ভারতের তথা সারা বিশ্বের বাঙালি পাঠকের কাছে শ্রেষ্ঠ 888sport live footballপত্রিকার আসন পেয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে আবুল হাসনাতের সম্পাদনার গুণে। তার শ্রম, মেধা, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের জন্য।
নিভৃতচারী, প্রচারবিমুখ, 888sport live chat ও 888sport live footballপ্রেমী এই মানুষটি দেশের ও সমাজের কল্যাণের জন্য, 888sport live footballের জন্য গোটা জীবনটাই নিবেদন করেছিল।
কালি ও কলম সম্পাদনার সুবাদে হাসনাতের 888sport appsের ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত লেখকদের সঙ্গে প্রগাঢ় বন্ধুত্ব হয়েছিল। কারো কারো সঙ্গে অবশ্য আগে থেকেই বন্ধুতা ছিল।
শঙ্খ ঘোষ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, অশোক মিত্র, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মহাশ্বেতা দেবী, অরুণ সেন, ভূমেন্দ্র গুহ, মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, চিন্ময় গুহ, অংশুমান ভৌমিক প্রমুখ। হাসনাতের সঙ্গে ওঁদের অনেকের বাড়িতে আমারও যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে।
888sport appsের ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অনেক প্রখ্যাত চিত্র888sport live chatীর সঙ্গে হাসনাতের নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল 888sport live chatের প্রতি ভালোবাসার কারণে। ভারতের যোগেন চৌধুরী, গণেশ হালুই, প্রণবরঞ্জন রায় এবং 888sport appsের কামরুল হাসান, কাইয়ুম চৌধুরী, রফিকুন নবী, মুর্তজা বশীর, মনিরুল ইসলাম প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। সকলের নাম বলা হলো না বলে ক্ষমাপ্রার্থী।
কবি জীবনানন্দ দাশের জীবিতাবস্থায় তাঁর অল্প কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। অধিকাংশ লেখাই প্রকাশিত হয় তাঁর মৃত্যুর পর। জীবনানন্দ দাশের অপ্রকাশিত লেখা প্রকাশের ব্যাপারে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন কবি ভূমেন্দ্র গুহ; যিনি একজন প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞও। ভূমেন্দ্র গুহ না হলে জীবনানন্দের অধিকাংশ লেখাই (888sport app download apk ও 888sport alternative link) কখনো আলোর মুখই দেখত না। তিনি যখন প্রথমবার 888sport app আসেন তখন হাসনাতের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়।
পরে কলকাতার বন্ধু পার্থশঙ্কর বসুর সঙ্গে আমি ও হাসনাত বেশ কয়েকবার কলকাতার সল্টলেকের করুণাময়ীতে তাঁর বাসায় গিয়েছি। পরের বার তিনি 888sport appয় এসে আমাদের বাসায় ছিলেন। কালি ও কলমের উদ্যোগে বেঙ্গল গ্যালারিতে কবি জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে তাঁর একটি বক্তৃতার আয়োজন করা হয়েছিল। কবি ভূমেন্দ্র গুহ এবং আবুল হাসনাতের মধ্যে গভীর হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওঁরা একাধিকবার ভূমেনদার শান্তিনিকেতনের বাড়িতেও গিয়েছে। একবার আমারও যাওয়া হয়েছে। এই সূত্র ধরেই হাসনাত ভূমেন্দ্র গুহকে সম্মত করায় জীবনানন্দ দাশ মূলানুগ পাঠ বইটি লেখার ব্যাপারে।
কবি ভূমেন্দ্র গুহর এই বইটি বেঙ্গল পাবলিকেশন্সের মূল্যবান বইগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সম্পাদনার কাজের চাপে তার 888sport live footballসাধনা অনেক ব্যাহত হয়েছে। তবু এই কাজের মধ্যেও সে কিন্তু তার 888sport live footballসাধনা চালিয়ে গেছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে 888sport app download apk লেখা চলছিলই। তার 888sport app download apkর বইয়ের 888sport free bet তিনটি। কিশোরদের জন্য 888sport alternative link লিখেছে ইস্টিমার সিটি দিয়ে যায়, যুদ্ধদিনের ধূসর দুপুর, রানুর দুঃখ ভালোবাসা, যুদ্ধদিনের পোড়োবাড়ি এবং সমুদ্র ও টুকুর গল্প। সমুদ্র ও টুকুর গল্প 888sport alternative linkের জন্য আবুল হাসনাত অগ্রণী ব্যাংক শিশু888sport live football 888sport app download bd (স্বর্ণপদক) লাভ করে।
আবুল হাসনাত ছোটদের জন্য তিনটি জীবনীগ্রন্থ রচনা করে। আগেই বলেছি, আমাদের অসচ্ছলতার কথা। হাসনাতের লেখা বইগুলো আমাদের সংসারে সাচ্ছল্য এনে দিয়েছিল। আমাদের কোনো ফার্নিচার ছিল না। একেকটি বইয়ের প্রাপ্ত রয়্যালটির অর্থে আমাদের একেকটি ফার্নিচার হয়েছে। প্রতিটির পেছনে তাই একটি করে গল্প আছে।
আবুল হাসনাতের প্রথম বই পশতু গণমুখী 888sport app download apk। একটি 888sport app download apk latest version গ্রন্থ। প্রকাশিত হয় সম্ভবত ১৯৭০ সালে। এতে আজমল খাটকসহ প্রখ্যাত পশ্তু কবিদের 888sport app download apkর আবুল হাসনাতের করা 888sport app download apk latest version স্থান পায়। 888sport app download apkগুলো ছিল অসাধারণ ও জীবনমুখী। কবি ফয়েজ আহমদ ফয়েজের 888sport app download apkর একটি গ্রন্থেরও সম্পাদনা করেছিল আবুল হাসনাত।
পশতু গণমুখী 888sport app download apk 888sport app download apk latest version করে হাসনাত কবি আজমল খাটকেরও স্নেহভাজন হয়েছিল। অনেক পরে কাবুলে একটি সম্মেলনে আজমল খাটকের সঙ্গে মতিউর রহমানের দেখা হয়েছিল। আজমল খাটক তাঁর মাধ্যমে কবির নিজের কলম মাহমুদ আল জামানের (আবুল হাসনাত) জন্য উপহার পাঠিয়েছিলেন। সেটি ছিল হাসনাতের জন্য এক মহামূল্যবান উপহার।
মুক্তিযুদ্ধকালে কলকাতায় থাকার সময় পশ্চিমবঙ্গের অনেক লেখক ও 888sport live chatীর সঙ্গে হাসনাতের খুবই প্রগাঢ় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৯৭৫ সালে হাসনাত ও আমি কলকাতায় বেড়াতে যাই। তখন হাসনাত আমাকে নিয়ে পরিচয় পত্রিকার অফিসে দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, স্টেটসম্যান অফিসে অসীম রায়ের সঙ্গে দেখা করতে যায়। মনীষা গ্রন্থালয়ের দিলীপ বসুর বাড়িতে আমরা যাই। আমরা কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব ইলা মিত্রের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে যাই। ইলা মিত্র ও রমেন মিত্র দুজনেই হাসনাতকে খুব স্নেহ করতেন। এছাড়া বিষ্ণু দে, সুভাষ মুখোপাধ্যায় হাসনাতকে খুবই স্নেহ করতেন। মুক্তিযুদ্ধকালে এই যোগাযোগ তার পরবর্তী সময়ে সম্পাদক জীবনে কাজে এসেছিল।
আবুল হাসনাত আফ্রো-এশীয় লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। এছাড়া তিনি দ্য আফ্রো-এশিয়ান পিপলস সলিডারিটি অর্গানাইজেশন–আপসোরও নেতৃস্থানীয় দায়িত্বে সক্রিয় ছিলেন দীর্ঘদিন।
আফ্রো-এশীয় লেখক সংঘের সম্মেলনে যোগ দিতে হাসনাত বৈরুত গিয়েছিল ১৯৭৪ সালে। হাসনাত তখন 888sport apps আফ্রো-এশীয় লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক।
বৈরুতে সেই সম্মেলনে ভারত থেকে যোগ দিয়েছিলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও কথা888sport live chatী দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁদের সঙ্গে একাত্তরে কলকাতায় যে পরিচয় ও বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল তা আরো নিবিড় হওয়ার সুযোগ হয়।
বৈরুত তখন চমৎকার শহর। ভূস্বর্গ বলে পরিচিত। এটা যুদ্ধের আগের ঘটনা। বৈরুত তখনো আজকের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত নয়।
বৈরুতে সিরিয়ান কবি আদোনিসের সঙ্গে ওঁদের পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়। হাসনাত ও সুভাষদা আদোনিসের (ছদ্মনাম) বাড়িতেও গিয়েছিলেন।
আদোনিস হাসনাতকে নিজের স্বাক্ষরসহ একটি 888sport app download apkর বই উপহার দিয়েছিলেন। আদোনিসের নাম বহুবার নোবেল 888sport live football 888sport app download bdের জন্য মনোনীত হয়েছিল। যদিও তিনি সে-888sport app download bd এখনো পাননি। আদোনিসের 888sport app download apkর বইটি অনেকদিন আমাদের কাছে ছিল। আমি কয়েকটি 888sport app download apk 888sport app download apk latest versionও করেছিলাম। এখন বইয়ের ভিড়ে বইটি খুঁজে পাচ্ছি না।
১৯৭২ সালে পার্টির পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে হাসনাত গণ888sport live football সম্পাদনা করতে শুরু করে। তখন 888sport appsের লেখকদের সঙ্গে বিষ্ণু দে, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, তরুণ সান্যালসহ অনেকের লেখা গণ888sport live footballে প্রকাশিত হয়েছিল। গণ888sport live football আবুল হাসনাতের সম্পাদনার গুণে একটি উঁচু মানের 888sport live football পত্রিকা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হাসনাত পত্রিকাটি সম্পাদনা করলেও শেষের কয়েক বছর তাতে হাসনাতের নাম প্রকাশিত হতো না। সংবাদ সম্পাদক শর্ত দিয়েছিলেন, যেহেতু হাসনাত সংবাদে চাকরি করে, তাই গণ888sport live footballে তার নাম যেতে পারবে না। এ-কারণে পরে হাসনাত তার নামটি বাদ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করে। পরের 888sport free betগুলো ওর নাম ছাড়াই প্রকাশিত হয়েছে। 888sport appsের প্রগতিবাদী 888sport live football-আন্দোলনে অবদানের জন্য গণ888sport live football সম্পাদক হিসেবে আবুল হাসনাতকে ২০০৫ সালে সম্মানিত করে চট্টগ্রাম লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি গবেষণা কেন্দ্র সম্মাননা পরিষদ।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে হাসনাত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি নৃত্যনাট্যের স্ক্রিপ্ট রচনা করে। নাম লাল গোলাপের জন্য। এই নৃত্যনাট্যটি প্রথমে 888sport appয় পরিবেশিত হয়। পরে ’৭২ সালে কলকাতায় 888sport apps-ভারত মৈত্রী মেলায় তা পরিবেশিত হয়। এই চমৎকার পরিবেশনা অত্যন্ত প্রশংসিত হয়। এর নৃত্যরচনা ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন শারমিন হাসান। সংগীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ইকবাল আহমেদ। আবুল হাসনাতের অনুরোধে লাল গোলাপের জন্যর আলোর কাজ করেছিলেন আলোর জাদুকরখ্যাত তাপস সেন।
অনুষ্ঠান শেষ হলে দর্শকদের মধ্যে উপস্থিত কবি বিষ্ণু দে, 888sport live chatী দেবব্রত বিশ্বাস, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, 888sport live chatী সুচিত্রা মিত্র, অর্ঘ্য সেন ও মায়া সেন মঞ্চে উঠে আসেন এবং লাল গোলাপের জন্যর স্ক্রিপ্ট ও পরিবেশনার জন্য আবুল হাসনাতের ও দলের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। লাল গোলাপের জন্য মিডিয়ারও উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পায়।
আবুল হাসনাত জহির রায়হানের আর কত দিন 888sport alternative linkের নাট্যরূপ দিয়েছিল। ডাকসুর নাট্যচক্র এটি মঞ্চায়ন করে সম্ভবত ১৯৭৩ সালে। এটি পরিচালনা করেছিলেন ম. হামিদ। এই প্রযোজনার সঙ্গে হাসনাত ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। এই নাটকেই প্রথম অভিনয় করেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রজ্ঞা লাবণী। একইভাবে হাসনাত স্বাধীনতার পরে রোকেয়া হলের ছাত্রী সংসদের জন্য পোড়া মাঠে বসন্ত নৃত্যনাট্যেরও স্ক্রিপ্ট রচনা করেছিল।
সম্পাদকের গুরুদায়িত্ব নেওয়ার পর হাসনাতের নিজের কবি পরিচয় কিছুটা চাপা পড়ে যায়। হাসনাতের প্রচারবিমুখতাও তার একটি কারণ। তবে হাসনাত 888sport app download apk লিখে যাচ্ছিল। নিজের বই প্রকাশের ব্যাপারে মনোযোগী ছিল না।
প্রথম 888sport app download apkর বই জ্যোৎস্না ও দুর্বিপাক প্রকাশ করে অনেক বিলম্ব করে ১৯৮৭ সালে। পরে প্রকাশিত হয় কোনো একদিন ভুবনডাঙায়, ভুবনডাঙার মেঘ ও নধর কালো বেড়াল।
সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে জার্নিম্যান বুকস থেকে নির্বাচিত 888sport app download apk। আবুল হাসনাত 888sport app download apk লিখেছে মাহমুদ আল জামান লেখক নামে। প্রথম জীবনের সব লেখাই এই নামে। কিশোরদের জন্য প্রথমেই রচনা করেছিল ছোটদের জসীমউদ্দীন ও চার্লি চ্যাপলিন। প্রকাশিত হয়েছিল মুক্তধারা থেকে। পরে সূর্য সেন প্রকাশিত হয়েছিল শিশু একাডেমি থেকে।
কিশোর 888sport alternative linkগুলোও প্রকাশিত হয়েছে মাহমুদ আল জামান লেখক নামে। 888sport liveগুলো লেখা হয়েছে আবুল হাসনাত নামে। এই দুই নামের কারণেও অনেক পাঠক বিভ্রান্ত হয়েছে।
তাঁর 888sport app download apk ও 888sport alternative linkের অনেক ভক্ত পাঠক আছে কিন্তু তারা জানে না যে আবুল হাসনাতই মাহমুদ আল জামান বা মাহমুদ আল জামানই আবুল হাসনাত। নির্বাচিত 888sport app download apkর আগে ও পরে জার্নিম্যান প্রকাশ করল কিশোর 888sport alternative link সমগ্র এবং 888sport liveসংগ্রহ প্রত্যয়ী 888sport sign up bonus ও 888sport app। সবশেষে ২০২০ বইমেলার শেষ দিন জার্নিম্যান বুকস প্রকাশ করেছে আবুল হাসনাতের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ হারানো সিঁড়ির চাবির খোঁজে। আরো তিনটি 888sport liveসংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি চলছিল।
করোনাকালীন লকডাউনের মধ্যে তো হাসনাত প্রায় সবটা সময় বাড়িতেই ছিল। এই সময়ে বাড়িতে বসে প্রচুর পড়াশোনা করেছে। প্রচুর লেখার কাজও করেছে। বাড়িতে বসে কালি ও কলমের কাজ ছাড়াও 888sport liveের বইয়ের জন্য 888sport live লিখেছে। 888sport app download apk লিখেছে, বিভিন্ন বইয়ের জন্য ভূমিকা লিখেছে। যেমন শামসুর রাহমান রচনাবলি তৃতীয় খণ্ড (বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিতব্য); বাঙালি ও 888sport apps (কলকাতার নয়া উদ্যোগ থেকে সদ্য প্রকাশিত); 888sport live chatী মুর্তজা বশীর ও কাইয়ুম চৌধুরীর সাক্ষাৎকার সংবলিত বইয়ের (অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিতব্য) ভূমিকা ইত্যাদি। হাসপাতালে যাওয়ার আগের দিনও অসুস্থ শরীরে অন্যপ্রকাশের বইটির ভূমিকা লিখেছে। ১১ অক্টোবর হাতে পেয়েছে নয়া উদ্যোগ-প্রকাশিত বইটি। বইয়ের দুই সম্পাদক অরুণ সেন ও আবুল হাসনাত। এটি দ্বিতীয় সংস্করণ। অরুণ সেন কয়েক মাস আগে প্রয়াত হয়েছেন। আবুল হাসনাতও আমাদের ছেড়ে গেল।
হাসনাত এই সময়ে অনেক লিখছিল। আরো অনেক বিষয়ে লেখার পরিকল্পনা করেছিল। সেজন্য প্রচুর পড়াশোনা করছিল। অনেক বই পড়ে টেবিলে গুছিয়ে রেখেছে ভবিষ্যতে লেখার জন্য। টেবিলে বইগুলো এখনো গোছানো রয়েছে। আবুল হাসনাত সেগুলো রেখে হাসপাতালে গেছে। আশা ছিল সুস্থ হয়ে ফিরে এসে লিখবে। কিন্তু তা আর হলো না। তার আর ফেরা হবে না। আর লেখা হবে না।
জুলাই মাসে নিউইয়র্কে যাওয়ার কথা ছিল বইমেলায়। মেয়ে আর নাতনির সঙ্গে দেখা হবে বলে উন্মুখ হয়ে ছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে সব ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায়। তাই আর যাওয়া হয়নি। মেয়ে আর নাতনির সঙ্গে দেখা হলো না বলে মনে খুবই কষ্ট ছিল। নিউইয়র্কে থাকে আমাদের একমাত্র কন্যা দিঠি হাসনাত ও নাতনি শ্রেয়সী। করোনা পরিস্থিতির কারণে মেয়েও আসতে পারেনি। তাই এই কষ্ট নিয়েই হাসনাত চলে গেছে।
আরো অনেক কষ্ট ছিল মনে। নীরব ও অভিমানী বলে তা সে প্রকাশ করেনি।
সারাজীবন ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিল ও তার কাজের মধ্য দিয়ে বিপুল অবদান রেখেছে। কমিউনিস্ট পার্টির জন্য আবুল হাসনাতের বিপুল অবদানের কথা ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি। মুক্তিযুদ্ধের প্রায় পুরো সময়টাই হাসনাত কলকাতায় কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালনার দায়িত্বে ছিল। তারপরও কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) যখন ন্যাপ, ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টির মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলা বাহিনীর তালিকা করে সেই তালিকায় আবুল হাসনাতের নামটা রাখেনি। সেজন্য মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসনাত গার্ড অব অনারও পায়নি। এসব নিয়ে হাসনাত কখনো ভাবেনি। তবে এটা আমার মনে কষ্ট হয়ে রয়ে গেছে। স্বপ্ন ছিল মানুষের জীবনের পরিবর্তন আনার। সে-স্বপ্নও সফল হয়নি। তার অবদানের জন্য যথার্থ সম্মান-স্বীকৃতিও অনেক সময় তাকে দেওয়া হয়নি।
সংস্কৃতি সংসদ ও ছায়ানটের সঙ্গে যুক্ত থেকে সংস্কৃতির সাধনা করেছে। ১৯৬৬ সাল থেকে ছায়ানটের সঙ্গে যুক্ত থেকেছে আমৃত্যু। ছায়ানটের সাতটি বই আবুল হাসনাতের একক ও যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও এই সংগঠনের পেছনে দিনরাত শ্রম ও মেধা দিয়েছে সে। তবু এই সংগঠন থেকেও শেষ মুহূর্তে অনেক বড় আঘাত পেয়েছে। এই আঘাত নিয়েই সে চলে গেছে।
নিজের পরিবারের জন্য তার বিপুল অবদান ছিল। প্রতিদানে পেয়েছে ব্যথা। আমার নিজের পরিবারের জন্যও হাসনাত অনেক, অনেক করেছে। সেখান থেকেও পেয়েছে আঘাত। রাজনীতির মধ্য দিয়ে সমাজে পরিবর্তন আনতে চেয়েছিল। হয়নি।
আসলে হাসনাতের মতো নিবেদিতপ্রাণ, নীরব, নিভৃতচারী মানুষেরা বুঝি শুধু দিয়েই যায়, কোনো কিছু পাওয়া তাদের হয় না। হাসনাত নিজের ঢাকঢোল পেটানোয় সর্বদাই বিমুখ ছিল। বেশি কথা বলতে পছন্দ করত না। নিজের কথা তো নয়ই।
হাসনাতের হাত ধরে আমি জীবনের পথে যাত্রা করেছিলাম। কবির সঙ্গে সংসার করা তো আসলে সহজ নয়। তবু আমাদের সংসার খুবই, খুবই সুখের হয়েছিল। আমাদের বোঝাপড়ায় কোনো ঘাটতি ছিল না। কারণ, হাসনাত একদিকে গৃহী, অন্যদিকে সন্ন্যাসী। কবি ও ভাবুক হলেও সংসারও করেছে খুবই নিপুণভাবে। দায়িত্ব পালনে কোথাও কোনো ত্রুটি ছিল না তার। সাজানো সংসার ফেলে সে চলে গেছে। তার অনেক শখের বই, চিত্রকর্ম সংগ্রহ পড়ে রয়েছে। আমার ঘর শূন্য। শূন্য এ-ঘরে সে আর ফিরবে না।
আবুল হাসনাত তার অনন্য সম্পাদক জীবনে অনেক লেখক তৈরি করেছে। অনেক পাঠকের 888sport live football ও 888sport live chatরুচি তৈরি করেছে। 888sport appsের সমাজে মানুষের 888sport live chat ও 888sport live footballরুচি নির্মাণে নীরবে অবদান রেখে গেছে। হাসনাত বেঁচে থাকবে তার লেখকদের মধ্যে। তার নিজের লেখার মধ্যে। 888sport app download apkর মধ্যে। পাঠকদের মধ্যে। প্রদীপ নিভে গেছে, তবু আলো জ্বলছে। আমি জানি হাসনাত আছে। আমার সঙ্গে, আমাদের সঙ্গেই সে আছে। থাকবে।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.