হ্যালো

ও য়া হি দা  নূ র  আ ফ জা

প্লে­নের চাকা মাটি স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে একটা শূন্যতার কু-লী পেটের ভেতর নাভির নিচ থেকে ক্রমশ ওপরের দিকে উঠে বুকের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। কয়েক বছর ধরে এই উপসর্গ। আগে এমনটা ছিল না। তখন শাহীনের 888sport slot gameের নেশা ছিল। আমেরিকা-ইউরোপ-আফ্রিকা-এশিয়া, মেলিসাকে পাশে বসিয়ে একটার পর একটা মহাদেশ সে ঘুরছিল। বছরে অন্তত একবার একটা নতুন দেশ ঘুরতে না পারলে নিজেকে তখন অপূর্ণ মনে হতো। এখন হিউস্টন এবং 888sport app ছাড়া আর কোথাও যাওয়া হয় না। এতটুকুও করতে হয় প্রচ- অনিচ্ছাসত্ত্বে। প্লে­ন-এয়ারপোর্ট এসবে এখন এক অরুচিকর শূন্যতাবোধ। শাহীন এ-বিষয় নিয়ে ভেবে দেখেছে। মেলিসা হয়তো একটা কারণ – তবে পুরোটা নয়। তার এই আটত্রিশ বছর বয়সের জীবনে দিনে দিনে শূন্যতার পাল্লা ভারি হচ্ছে।

স্যুটকেস নিয়ে টার্মিনাল থেকে বেরোতেই ঘ্যাঁচ করে হেলালের গাড়িটা সামনে এসে ব্রেক কষে। দুদিন আগেও হেলাল হিউস্টন থেকে 888sport appয় শাহীনকে ফোন করে তার ফ্লাইট নম্বর সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেয়। শাহীন পাশ কাটাতে চেয়েছিল। গাড়ি চলতে শুরু করলে সেটাই সে হেলালকে মনে করিয়ে দেয়।

‘শুধু শুধুই তুই এই কষ্টটা করলি। আমি একটা উবারের গাড়ি নিয়ে চলে যেতে পারতাম।’

‘তুই দেশে যাওয়ার আগেই তো ঠিক করা হয়েছিল আমি আসব।’

‘তখন তো অন্য ব্যাপার ছিল। সঙ্গে বউ থাকার কথা ছিল।’

‘এজন্যই তো আরো বেশি করে আসার প্রয়োজনটা বোধ করলাম। না এলে ভাবতি বিয়ে করতে পারলি না দেখে দাম কম দিচ্ছি।’ ‘তুই এক্কেবারে আমার হাফপ্যান্ট পরার সময়কার বন্ধু। তোর সঙ্গে আবার দামাদামি কী?’

কথাটা আসলে মেকি। আমেরিকান স্টাইলের ‘আই মিস ইউ’ টাইপের। দেশে থাকতে একসময় ওরা দুজন একসঙ্গে 888sport appর ক্যান্টনমেন্টের শাহীন স্কুলে পড়ত। শাহীন ছিল ক্লাসে প্রথম হওয়া ছাত্র। উচ্চপদস্থ বাবার কল্যাণে স্কুলে গাড়ি করে আসত। তার ওপর বাস্কেটবল টিমের ছয়ফুটি সুদর্শন অধিনায়ক। কো-অ্যাড স্কুলে সে ছিল তখন এক উজ্জ্বল তারকা। অনেক জুনিয়র বোকা মেয়ে মনে করত শাহীনের নামেই শাহীন স্কুল। সে তো তখন স্কুলে রীতিমতো হার্টথ্রব। সে-সময়টায় তার মনে পড়ে না যে, স্কুলে থাকতে সে কখনো হেলালের সঙ্গে কথা বলেছিল। বন্ধুত্ব তো দূরের কথা। অথচ বিশ বছর পর এই হেলালই এখন তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। এর অনেকটাই সম্ভব হয়েছে দুজনেই হিউস্টনে থাকার ফলে। এদিক থেকে চিন্তা করলে আমেরিকা আসলেই মেল্টিং পট। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আমেরিকান 888sport appsিরা সব এক হয়ে যায়। সংস্কৃতি আর খাবার – এই দুটোর টানে পৃথিবীর বিভিন্ন জাতের মানুষ এই আমেরিকায় আলাদাভাবে একতাবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন ছাউনির নিচে ভিড় জমায়। অনেকটা ফলের বাহারি সালাদের মতো। একসঙ্গে আম-আনারস-আপেল-স্ট্রবেরির বিচিত্র সমাহার, অথচ কেউ কারো সঙ্গে মিলে যাচ্ছে না। ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে থাকার সময় এই বৈচিত্র্যময় সমাহার অনেক বেশি চোখে পড়ত। সে-সময় মাঝেমধ্যে গ্রীষ্মের কোনো কোনো বিকেলে মেলিসার হাত ধরে লেক এলিজাবেথ পার্কের লেকটা চক্কর দিত। চক্কর দিতে দিতেই নাকে কখনো আফ্রিকান-আমেরিকানদের বারবিকিউ বা আফগান কাবাবের গন্ধ এসে লাগত। কাবাবের মধ্যেও আবার বৈচিত্র্য আছে। জাফরান ম-ম করলে বুঝতে হবে এখানে ইরানিদের পার্টি চলছে। খাবারের মতো মিউজিকও বৈশিষ্ট্যময়। কখনো কানে আসবে ভারতীয়দের হিং-মেশানো বলিউড মিউজিকের ধামাকা, কখনোবা চিজি মেক্সিকানদের সালসা। মেলিসা খুব ভালো সালসা নাচতে পারত। ওর পূর্বপুরুষরা অবশ্য চার প্রজন্ম আগে সুইজারল্যান্ড থেকে এসেছিল। এর মধ্যে ওদের বংশধারায় জার্মান আর ইতালির সংমিশ্রণ ঘটেছিল। এতসব জাতের সংমিশ্রণে স্বর্ণকেশী মেলিসাকে ঘিরে থাকত একরকম রহস্যময় আকর্ষণ। একসঙ্গে সংসার করতে গিয়ে শাহীন বুঝেছিল মেলিসা আসলেও রহস্যময়ী। ওকে বোঝা যেত না। নাকি সে তার কাজে তখন এত ব্যস্ত থাকত যে, তাদের সম্পর্কটা জট পাকাতে শুরু করে?

‘কোনো সম্পর্কই ফর গ্র্যান্টেড নিতে নেই। সম্পর্ক হচ্ছে কচি গাছের চারার মতো। সময়মতো গোড়ায় সার-পানি না দিলে গাছ মরে যায়।’

হেলাল কি শাহীনের মন পড়তে পারে? এ-মুহূর্তে সে এ-কথা বলল কেন? শাহীন খুব আবেগপ্রবণ হয়ে গেল।

‘তাহলে কি তুই বলতে চাস মেলিসার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ভেঙে গেল সার-পানির অভাবে?’

হেলাল খুব অপ্রস্ত্তত স্বরে বলল, ‘না, সেটা তো অন্য ব্যাপার। তুই দেশ থেকে পেয়ারাগাছ এনে হিউস্টনে লাগালেও বাঁচাতে পারবি না।’

শাহীন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘একজন সফল বিবাহিত মানুষের কাছে সম্পর্ক হচ্ছে সার-পানির পরিমিত হিসাব। ভাঙা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে গেলে বুঝতিস, যখন সুর কেটে যায় তখন কোনো হিসাবই কাজ করে না।’

‘এত হতাশ হওয়ার কী হলো? যা হয়নি তা হয়তো ভালোর জন্যই হয়নি।’

‘এই কথা বলে নিজেকে সান্তবনা দেওয়ার বয়স আর নেই। তবে যা হয়নি তার জন্য কোনো আফসোস নেই। আছে শুধু বিশাল কৌতূহল।’

‘কী রকম?’

‘আচ্ছা বল, ঘটকালির বিয়ে মানুষ কীভাবে করে? আমি আর ওসবের মধ্যে নেই।’

‘কেন এখানে আমাদের অধিকাংশ বন্ধুরই তো এই ঘটকালির বিয়ে হয়েছে।’

‘তোদের দেখে তো ভাবতাম ব্যাপারটা ডাল-ভাতের মতো। দেশ থেকে বাপ-মায়ের ঠিক করা একটা সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করে আনব। আর সে-মেয়ে পরদিন থেকে আমার সংসার গোছাতে শুরু করবে। এখন তো মনে হচ্ছে পুরো বিষয়টাই লটারি জেতার মতো একটা ঘটনা।’

‘আমিও বুঝতে পারছি না তোর ক্লিক করছে না কেন?’

‘ভালোই বলছিস, আমার একদমই ক্লিক করছে না। না অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ, না লাভ ম্যারেজ।’

হেলাল শাহীনকে সান্তবনা দেওয়ার স্বরে বলল, ‘ধ্যাৎ মেলিসার কথা বাদ দে। তখন তোর বয়স অল্প ছিল।’

‘তাহলে বলতে চাস শেষ চেষ্টা হিসেবে এখন এ-বয়সে আরেকবার লাভ ম্যারেজের চেষ্টা করে দেখতে পারি?’

‘আসলে তোর ব্যাপারটা আলাদা।’

‘কী রকম?’

হেলাল এবার প্রসঙ্গ পালটাতে চাইল। সে খুব ভালো করেই জানে শাহীনের অহমবোধ খুব উচ্চস্তরের। স্কুলে পড়ার সময় সে তো হেলালের দিকে একবারের জন্যও উলটো ঘুরে তাকায়নি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে পুরো বৃত্তি নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়তে আসে। সেই একই সময়ে হেলালও আমেরিকায় এসেছিল। তবে ডিভি ভিসা নিয়ে। দিনে ট্যাক্সিক্যাব চালিয়ে রাতে একটা একটা করে ক্লাস নিয়ে আইটিতে একটা ডিগ্রি নিতে প্রায় আট বছর লেগেছিল। তবে আমেরিকার নাগরিকত্ব থাকার ফলে আইটি সেক্টরে অবশেষে একটা সরকারি চাকরি পেয়ে যায়। সময়মতো দেশে গিয়ে রূপসী রূপাকে বিয়ে করে আনে। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। হেলালের সাংগঠনিক আর আমুদে স্বভাব, সেই সঙ্গে রূপার রাঁধুনিপনার কারণে হিউস্টনের 888sport appsি সমাজে তাদের দারুণ কদর। প্রবাসে এই কদরটার কারণে মনে হয় কোথাও নোঙর ফেলার একটা জায়গা তৈরি হলো। তার জীবনের এই সুখের সময়টাতে ওয়ালমার্টে একদিন হঠাৎ করেই শাহীনের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। হেলাল ভেবেছিল শাহীন হয়তো বার্কলের মতো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হয়ে ছাত্র পড়াচ্ছে। কিন্তু সে-সময় ভগ্নপ্রায় শাহীনকে দেখে সে জীবনের মানে নতুন করে ভাবতে শেখে। আড়চোখে তাকিয়ে দেখে শাহীন এখনো হেলালের উত্তরের অপেক্ষায় আছে। সে সাবধানী উত্তর দেয়, ‘থাক এখন সেসব। আমার এক্সট্রা পার্কিং লটে তোর গাড়িটা ঠিকঠাকমতোই আছে। আমি আসার আগ দিয়ে স্টার্ট দিয়ে দেখেছি ব্যাটারি চালু আছে। আগে বাসায় চল। রূপা তোর জন্য রান্নাবান্না করে বসে আছে।’

‘এখন! না গেলে হয় না?’

‘তুই ফোন করে রূপাকে বল আসছিস না।’

শাহীন জানে, রূপাকে এড়িয়ে যাওয়া অত সহজ নয়। আর তাছাড়া এ-মুহূর্তে হেলাল-রূপা দম্পতির সঙ্গ খুব একটা খারাপ লাগবে না। ‘চল তাহলে।’

হেলাল হালকা চালে সাবধান করে দেয়, ‘মেয়েলি কৌতূহল না মিটিয়ে পার পাবি না।’

‘কী বিপদ! রূপা কি খুব জেরা করতে শুরু করবে?’

দুই

রূপা টেবিলের এ-মাথা থেকে ও-মাথা পর্যন্ত প্রায় পনেরো রকম পদ সাজিয়ে ওদের জন্য অপেক্ষা করছিল। হিউস্টনে আসার আগপর্যন্ত শাহীনের খুব একটা প্রবাসী 888sport appsিদের সঙ্গে মেশা হয়নি। তখন মনে হতো 888sport appsি মানে শুধুই সময় নষ্ট। নিজে তখন বিল গেটস কিংবা স্টিভ জবস হওয়ার নেশায় মত্ত। প্রায় ছয় বছর বলতে গেলে সারা দিন-রাত খেটে শূন্য থেকে যে স্টার্টআপটাকে সে দাঁড় করাল, সেটি শেষ পর্যন্ত ব্রডকম কোম্পানি এক বিলিয়ন ডলার দিয়ে কিনে নেয়; কিন্তু ডিল চূড়ান্ত হওয়ার আগের দিন শাহীনকে সে-স্টার্টআপ থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়। এক অবিশ্বাস্য বিশ্বাসঘাতকতা। তার আগের বছর মেলিসা তাকে ছেড়ে চলে যায়। তার জীবনে এই সময়টা সবচেয়ে বাজে কেটেছে। প্রায় এক বছর সে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরেছে। এখন পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলে বাজে সময়টাকে তার অত বাজে লাগে না। সাফল্য পেতে ভালো লাগে; কিন্তু ব্যর্থতা মনের ভিতটা আরো শক্ত করে দেয়। হিউস্টনে এসে পুরনো এক সহপাঠীর সঙ্গে আবার শূন্য থেকে সে কাজে লেগেছে। তবে আগের থেকে সে অন্য মানুষ। এখন তার জীবনে বন্ধু আছে, সামাজিক জীবন আছে। বুঝে গেছে এ-পৃথিবীতে সবাই একই কাজ করতে আসে না। নিজের উন্নাসিকতাটুকু ছিল অহেতুক। একসময়ের ব্রিটিশ বাবু কালচারের মতো সেও সাদা আমেরিকান হওয়ার নেশায় মেতে ছিল। কিন্তু গ্লাস-সিলিং ভেঙে ওপরে ওঠা এত সহজ নয়। এখন জীবনটাকে সে নিজে অনেক সহজভাবে নিয়েছে। জীবনে সবসময় সবকিছুতে জয়ী হতে নেই।

খাওয়ার টেবিলেই তাদের মধ্যে প্রচ- আড্ডা জমে যায়।

শাহীনের পাত্রী দেখার অভিজ্ঞতা শুনে রূপা হাসতে হাসতেই বলে, ‘বলেন কী? 888sport appsের মেয়েরা এত্তো ধুরন্ধর হলো কী করে? আগের দিন আপনার সঙ্গে পিজ্জা হাটে ডেটিং করে পরের দিনই বয়ফ্রেন্ড নিয়ে উধাও!’

শাহীন বলল, ‘এটাকে ডেটিং বলছ কেন?’

রূপা যুক্তিতে অনড়, ‘বাহ্, বিয়ে করা যায় কিনা তা বাজিয়ে দেখার জন্য একটা মেয়ের সঙ্গে ডিনার করতে যাবেন এটা ডেটিং ছাড়া আর কি?’

শাহীন বলল, ‘বোঝা গেছে গত তিন বছরে তুমি আমেরিকানদের মতো চিন্তা করতে শুরু করে দিয়েছ। দুই পরিবার তো আগে থেকেই সব ঠিকঠাক করে রেখেছে। এখন শুধু আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ হবে। তো ভাবলাম এতে আর বাদবাকি আত্মীয়-স্বজনকে না নিয়ে শুধু দুজন মিলেই দেখা করি। মেয়েকেও সেটা বললাম। কিন্তু ভুল করে মুখ থেকে ডেটিং শব্দটা বের হয়ে গিয়েছিল। আর সঙ্গে সঙ্গে মেয়ে ফুঁসে উঠে বলল, আমি ভালো মেয়ে, ডেটিং করি না।’

রূপা যোগ করল, ‘চিকন আলীর যদি এই দশা হয় তবে মোটা আলীর কী অবস্থা? ভালো মেয়ে না ছাই।’

শাহীন বলল, ‘তবে মেয়েটির ভালো মেয়ে হিসেবে পরিচিতি ছিল। আম্মা তো এই মেয়ের সঙ্গে আমাকে বিয়েতে রাজি করার জন্য অন্তত একশবার বলেছেন, মেয়ে খুব ভালো।’

এবার হেলাল পাশ থেকে বলে উঠল, ‘ভালোর সংজ্ঞা কী?’

শাহীন বলল, ‘সেটা আম্মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। আম্মা বললেন, কখনো কোনো ছেলের দিকে চোখ তুলে তাকায় না। হিজাব পরে। আমার আগের ঘটনাটার জন্য এবার আম্মার ইচ্ছা ছিল আমাকে খুব একটা ধার্মিক মেয়ের সঙ্গে বিয়ে দেবেন।’

হেলাল বলল, ‘মেয়ে যে লুকিয়ে লুকিয়ে আরেকটা ছেলের সঙ্গে প্রেম করত, সেটা তার বাসার কেউ জানত না?’

রূপা হেলালের থেকে দেশের খবর বেশি জানে। সে বলল, ‘এটা কি আর মধ্যযুগ আছে নাকি? এখন তো ফেসবুক আর মোবাইল ফোনে ছেলেমেয়েরা প্রেম করে।’

‘সে তো ভালো মেয়ে। তাই ডেটিং করে না, কিন্তু প্রেম করে।’ শাহীন রূপাকে সমর্থন দিলো।

রূপার কৌতূহলের মাত্রা বাড়ছে। ‘পিজ্জা হাটে আপনাদের কী কী হলো একদম প্রথম থেকে বলেন।’

‘এই ভেন্যু সিলেকশনের ব্যাপারেও প্রথমে একটা বড় কালচারাল শক খেলাম।’ শাহীন বলতে লাগল, ‘মেয়ে যখন বলল সে পিজ্জা হাটে দেখা করবে আমি তো ভাবলাম কি আন-রোমান্টিক রে বাবা! পিজ্জা হাটে কেউ প্রথম মিট করে?’

হেলাল বলল, ‘তুই তো দেশের ভেতরকার কোনো খবর রাখিস না। পিজ্জা হাট হচ্ছে দেশের আপারক্লাস রেস্টুরেন্ট।’

সেই সঙ্গে রূপা আরো যোগ করল, ‘ওখানে লোকজন ফিটফাট হয়ে খেতে আসে।’

‘দেশে আমাদের মতো মিডলক্লাস লোকজনের কাছে পিজ্জা হাটে খাওয়া মানে বিশাল ব্যাপার।’ হেলাল সুযোগ পেলেই শাহীনকে মধ্যবিত্ত সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করে।

এবার শাহীন বলল, ‘তাই হবে। আমার মাথায় তো আমেরিকার কথা ঘুরছিল। যা হোক, শেষ পর্যন্ত এলো। তবে একা নয়। সঙ্গে মেয়ের কাজিন আর বান্ধবী মিলে প্রায় বিশজন।’

‘তখনই আপনার বোঝা উচিত ছিল। মেয়ে আপনার সঙ্গে খেলছে।’ রূপার পরিপক্ব মতামত।

হেলাল বন্ধুর হয়ে ওকালতি করে, ‘আরে ও কী করে দেশের কালচার বুঝবে?’

শাহীন তার অজ্ঞতা প্রকাশ করে, ‘আমি তো ভেবেছিলাম অ্যারেঞ্জ ম্যারেজে এমনই হয়।’

‘আর পরদিনই শুনলেন মেয়ে তার পুরনো প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়েছে।’ কথাটা যোগ করেই রূপা আবার হাসিতে ফেটে পড়ে।

শাহীন এবার রহস্য যোগ করে। ‘তোমাদেরকে তো আসল ক্লাইমেক্সই এখন পর্যন্ত বলিনি।’

রূপা আগ্রহ নিয়ে জানতে চায়, ‘কী সেটা?’

শাহীন রহস্য ভাঙে। ‘আসার দু-দিন আগে মেয়ের কাছ থেকে একটা এসএমএস আসে। সে দেখা করতে চায়।’

হেলাল উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ‘দাঁড়া, দাঁড়া এত সারপ্রাইজ একসঙ্গে নিতে পারছি না। মেয়ে কী করতে চায়?’

রূপাও উত্তেজিত। ‘আপনি কী উত্তর দিলেন?’

‘কী আর দেবো? কোনো উত্তরই দিইনি। ততদিনে আমার আরেকটা বিয়ের প্রস্ত্ততি প্রায় হতে হতেও শেষ মুহূর্তে ভেঙে যায়। আমি তো রীতিমতো শকড। এ-অবস্থা থেকে খালি পালানোর কথা ভাবছিলাম।’

রূপা বিস্মিত। ‘আপনার দ্বিতীয় বিয়েটা ভাঙল কেন?’

হেলাল শুধরে দেয়। ‘কথা ঠিক করে বলো। বিয়ে না বলে বলো বিয়ের প্রব।’

‘ওই একই কথা।’

শাহীন উত্তর দিলো, ‘হেলালের ভাষায় দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তাবটা আমার শর্ট লিস্টে দ্বিতীয় অবস্থানেই ছিল, মূলত মেয়েপক্ষের উৎসাহেই সবকিছু খুব দ্রুত ঠিক হয়ে গেল। আমি আর এবার সাহস করে মেয়ের সঙ্গে ডেট করতে চাইলাম না। ভবিষ্যতে যা হওয়ার হবে। তখন তো আমি আত্মীয়-স্বজনের কাছে রীতিমতো করুণার পাত্র। মনে হচ্ছিল কখন এ-অবস্থা থেকে উদ্ধার পাব।’

রূপা বলল, ‘আপনার মতো এলিজেবল ছেলেরাও করুণার পাত্র হয় নাকি? আমি তো ভেবেছিলাম শুধু মেয়েদেরই এ-অবস্থায় পড়তে হয়।’

হেলাল অস্থির, ‘আহা, ওকে ঘটনাটা বলতে দাও।’

‘বিয়ের দিন-তারিখ সব ঠিক হয়ে গেছে। বিয়ের আগে শুধু একটা পানচিনির আনুষ্ঠানিকতা হবে। আমি মেয়েকে আংটি পরাব। আমরা দলবেঁধে মেয়ের বাসায় গেলাম। মেয়েকে আংটিও পরালাম। আমাকে যা যা বলছে আমি ভদ্র ছেলের মতো তা-ই করছি। খেতে যখন বসেছি তখন হঠাৎ শুনলাম পাশের ঘরে ছোটখাটো গ-গোল। আস্তে আস্তে সেটাই প্রায় মারামারির অবস্থায় পৌঁছে গেল।’

রূপা বলল, ‘বলেন কী?’

‘সমস্যাটা শুরু হয় বিয়ের দেনমোহর ধার্য করা দিয়ে। আমার পরিবারের মতে, মেয়ের পরিবার অস্বাভাবিক দেনমোহর চাচ্ছে। আর মেয়ের পরিবারের মত হলো, সমাজে তাদের পারিবারিক স্ট্যাটাস মেনটেইন করতে হলে এই পরিমাণ দেনমোহর দিতে হবে। তার ওপর এইটা আবার ছেলের দ্বিতীয় বিয়ে। সুতরাং এক পয়সাও কম দেওয়া যাবে না।’

হেলাল বলল, ‘কথা তো ঠিক। তোরা নিজেরাও ব্যবসায়ী পরিবার। পাত্রীও খুঁজিস আরেক ব্যবসায়ী পরিবারে। এসব বড়লোকের মেয়েগুলো হয় কিছুটা বখে যাওয়া। বেশি হাইফাই আপ-স্ট্যান্ডার্ডের পাত্রী হিসেবে দেখতে গেছিস তো, তাই তোর এই সমস্যা।’

দেনমোহর শব্দটি শুনে রূপার আগ্রহ এবার অন্যদিকে ঘুরে গেল, ‘আচ্ছা ওরা কত টাকা দেনমোহর চাচ্ছিল?’

ব্যতিব্যস্ত হয়ে হেলাল বলে উঠল, ‘তোর গাড়িটা এখন একটু দেখে নে, স্টার্ট দেয় কিনা।’

রূপা স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি এত ব্যস্ত হচ্ছ কেন? সকালেই তো স্টার্ট দিয়ে দেখেছ যে গাড়ি ঠিক আছে।’

শাহীন চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল, ‘এখন উঠি। রূপা তোমার লাঞ্চের জন্য ধন্যবাদ।’

শাহীনকে ওর গাড়ি বুঝিয়ে দিয়ে ঘরে ঢুকে হেলাল দেখে যে রূপা থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

রূপা খেঁকিয়ে উঠল, ‘আপ-স্ট্যান্ডার্ডের পাত্রী বলতে কী বোঝাচ্ছিলে? আমিই কি লো-স্ট্যান্ডার্ডের?’

হেলাল দেখল মহাবিপদ। ‘এখানে তোমার কথা এলো কী করে?’

‘আমার কথা এলো না মানে? উলটা-পালটা মেয়েদের তুমি ভালো বলবা আর আমাকে কখনো একটা ভালো কথা শোনাবে না।’

‘তুমি একদমই ভুল বুঝতেছ।’

‘আমাকে বোকা মনে করো? বানের জলে ভেসে আসছি? চুপচাপ হাসিমুখে তোমার সংসার করে যাই বলে সস্তা মনে করো? তাই না?’

‘আরে বাবা, কিসের মধ্যে কী? তোমাকে সস্তা মনে করব কেন?’

‘সস্তা না মনে করলে আমার বিয়ের কাবিন এত কম রাখবে কেন? তাড়াতাড়ি করে তো বন্ধুকে নিয়ে গেলে, মেয়েপক্ষ বিয়ের কাবিন কত চাইল সেটা শুনতেও দিলে না।’

‘পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ আছে? বিয়ের দেনমোহর হচ্ছে লোক-দেখানো একটা পলকা স্ট্যাটাস।’

‘নিজের বউয়ের ক্ষেত্রেই এটা মনে হয়? তোমার বোনের বিয়ের সময় তো ঠিকই বিয়ের কাবিন বাড়িয়ে নিয়েছিলে।’

‘ঠিক আছে, ঠিক আছে – আবার প্রথম থেকে ধারাপাত পড়তে শুরু করো। আমার মা-বোন থেকে শুরু করে গত ছয় বছরে কী কী অভিযোগ জমা আছে সব বয়ান করো। আমি আরো একবার সব শুনি।’

 

 

তিন

সোমবারে শাহীন বাসা থেকে কাজ করে। সেদিনই হেলালের ফোনটা পেল।

‘মেয়েটার নাম জুলিয়া। চারটার পর ওর কাজ শেষ। তারপর তার অফিসের লবিতে রূপার জন্য অপেক্ষা করার কথা। কিন্তু রূপার বদলে তুই সেখানে যাবি।’

শাহীন বুঝল ওর বিয়ের ঘটকালির চেষ্টা করা হচ্ছে। শুনে বলল, ‘এইসব ষড়যন্ত্রের মধ্যে আমি নাই।’

‘আরে মেয়েটার অফিস তোর বাসা থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ। ন্যাশনাল অটিস্টিক সেন্টার। জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে দেখ মেয়েটার অফিস দেখতে পারিস কিনা।’

‘আরে রাখ তোর ফাজলামি। আমার কাজ আছে। আমি পারব না।’

‘তোর হচ্ছে নিজের কোম্পানি। তার ওপর আবার বাসার মধ্যে বসেই অর্ধেক কাজ সারিস। তোর ফ্লেক্সিবিলিটি আছে দেখেই তো তোকে বলছি।’

‘এটা কোনো মেয়ে না হয়ে ছেলে হলে করতাম।’

‘বুঝছি, দেশে এবার তোর অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ ছিল। মনে কর একজনের উপকার করছিস। দেশ থেকে একটা মেয়ে অটিস্টিক সেন্টারে ট্রেনিং নিতে জীবনে প্রথমবারের মতো আমেরিকায় এসেছে। এই এলাকা একটু ঘুরেফিরে দেখতে চায়। একটা ভলান্টিয়ারিং জব মনে করে তুই শুধু তাকে একটু এদিক-সেদিক ঘুরিয়ে দেখাবি। এর বেশি কিছু না।’

‘আইটির মার্কেটিংয়ে কাজ করতে করতে তোর স্বভাবটা দিন দিন জোঁকের মতো হয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম তো পারব না। ফোন রাখছি।’

 

চার

ন্যাশনাল অটিস্টিক সেন্টারে ঢুকেই শাহীনের মনটা ভালো হয়ে গেল। বিশাল পাঁচতলা বিল্ডিং। বিল্ডিংয়ের সামনে একটা ভাস্কর্যে চারটি শিশু খেলছে। একতলার সামনের ঝকঝকে কাচের দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে গেল। অভ্যর্থনাকারীকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই একটি মেয়ে সামনে এসে দাঁড়াল।

শাহীন জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কি জুলিয়া?’

মেয়েটি উত্তর দিলো, ‘জি।’

‘আপনাকে রূপার পিক করার কথা ছিল। তিনি হঠাৎ আটকে গেছেন। তাঁর পরিবর্তে আমাকে আসতে বললেন। আমি উনার স্বামীর বন্ধু।’

জুলিয়া বলল, ‘গত ছয় মাসে এই প্রথম একজন 888sport appsির সঙ্গে দেখা হলো।’

‘কী প্রোগ্রামে এসেছিলেন?’

‘অটিজমের ওপর একটা কোর্স করতে এসেছিলাম। আর বারোদিন পর দেশে চলে যাব।’

‘রূপা বলেছে আপনি এই এলাকাটা ঘুরে দেখতে চান। আমার ওপর দায়িত্ব পড়েছে আপনাকে ঘুরিয়ে দেখানোর। আমার সঙ্গে যেতে আপত্তি নেই তো?’

‘না নেই। সেরকম আপত্তির মানসিকতা থাকলে আমার হয়তো আমেরিকাতেই আসা হতো না।’

‘তাহলে চলুন। আমার গাড়ি পার্কিং লটে পার্ক করা আছে।’

দুজন পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করল।

শাহীন জিজ্ঞেস করল, ‘এই হিউস্টনে ট্যুরিস্ট স্পট হিসেবে গ্যালভেস্টোন বিচ আর নাসা দুটো প্রধান আকর্ষণ। কোথায় যেতে চান?’

‘আসলে সব ট্যুরিস্ট স্পট আমার দেখা হয়ে গেছে। আমাদের ট্রেনিং সেন্টার থেকে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রবাসী 888sport appsিদের ব্যাপারে আমার একটা কৌতূহল আছে। তাদের দেখতে পারলে ভালো লাগত।’

‘আপনি রূপাকে এই কথা বলেছিলেন?’

‘আমি ই-মেইলে লিখেছিলাম।’

শাহীন জিজ্ঞেস করল, ‘কার কাছে?’

‘ইন্টারনেটে খুঁজে আমি হিউস্টনের 888sport appsিদের একটি সংস্থার খোঁজ পাই। সেখানে প্রথমে ই-মেইল করি। সেখান থেকে হেলাল ভাই, পরে রূপা আপা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে।’

‘হেলাল আমার বন্ধু। সে এখন এখানকার 888sport appsি কমিউনিটি অরগানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট।’

‘ও আচ্ছা, এজন্যই উনি আমার ই-মেইলের উত্তর দিয়েছিলেন।’

শাহীন জুলিয়ার দিকের দরজা খুলে দেয়। তারপর দুজনই যার যার সিটে গাড়ির মধ্যে উঠে বসে।

শাহীন বলল, ‘আপনি এখানকার 888sport appsিদের দেখতে চাইলে, রূপা সেটা করতে পারবে। আমি হাইস্কুলের পরই পড়াশোনা করার জন্য আমেরিকায় চলে আসি। হেলাল আমার বাল্যবন্ধু। ওর বাসায় গেলে কিছু 888sport appsির সঙ্গে দেখা হয়। তার বাইরে আমার আর তেমন কোনো 888sport appsিদের সঙ্গে পরিচয় নেই।’

জুলিয়া শাহীনের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা দেখতে পেল। জিজ্ঞেস করল, ‘আপনার মনে হয় কাজের তাড়া আছে।’

‘না, ঠিক তা নয়।’ শাহীন ভাবল, মেয়েটা এ-প্রশ্ন করল কেন?

জুলিয়া বলল, ‘তাহলে আপনি ঠিক আসতে চাননি। রূপা আপা আপনাকে অনেকটা জোর করে পাঠিয়েছে।’

শাহীন কিছুটা অপ্রস্ত্তত। ‘আপনার কেন এমনটা মনে হচ্ছে?’

‘আসলে অটিস্টিক বাচ্চাদের সঙ্গে কাজ করি তো। মুখের কথা ছাড়াও মানুষের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে অনেক কিছু বুঝে নিতে হয় আমাদের। আপনার ভেতরকার অস্বস্তিটুকু টের পাচ্ছি। আপনি নিশ্চয় আমার জায়গায় একজন বয়স্ক মহিলা আশা করেছিলেন। কিংবা ভাবছেন বাসায় ফিরে আপনার স্ত্রীকে কী বলবেন।’

শাহীন এবার একটু জোরে হেসে ফেলল। ‘না সেরকম কিছু নয়। আর আমার স্ত্রী নেই।’ শাহীন ভাবল আগামী কয়েকদিন জুলিয়ার সঙ্গ তার খারাপ লাগবে না।

জুলিয়া বলল, ‘সেরকমটাই ভেবেছিলাম।’

‘কী রকম?’

‘আপনি একজন ব্যাচেলর। তাই রূপা আপা আপনাকে পাঠিয়েছে। না হলে তিনি হেলাল ভাইকেই পাঠাতে পারতেন।’

শাহীন জুলিয়ার কথাতে খুব মজা পাচ্ছে। ‘আপনি তো দেখছি অল্পতেই অনেক বুঝে ফেলেন।’

‘ওটাই আমার বড় দোষ।’

‘এটা দোষের বলছেন কেন?’

‘বোঝাটা দোষের কিছু নয়। তবে সরাসরি সেটা বলে ফেলাটা ঠিক নয়। সমস্যা হলো আমি কথা বেশি বলি।’

‘আমার মন আর মুখের মধ্যে কোনো দেয়াল নেই। আছে শুধু একটা বড় জানালা। তাই মনের কথাগুলো হরহর করে মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়।’

শাহীন বলল, ‘আপনি খুব মজা করেও কথা বলেন।’

‘আপনি ব্যাচেলর একজন ছেলে বলে এ-কথা বলছেন। আমার আম্মার কাছে প্রতিদিন কথা বেশি বলার জন্য বকা খেতাম। আমার আম্মার ধারণা, আমি খুব বোকা। তবে ইন্টেলেকচুয়ালি নয়। সাংসারিক বুদ্ধিতে।’

‘আপনি এখনো সংসার শুরু করেননি?’

‘না করিনি। তাই ইচ্ছামতো স্বাধীন জীবন উপভোগ করতে পারছি। আমরা মোট পাঁচ বোন। আমি সবার ছোট। বাকি চার বোন বিয়ে করে মনের আনন্দে সংসার করছে।
অন্তত অ্যাপারেন্টলি। আববা-আম্মার অনেক বয়স হয়ে গেছে। তাই আমি অনেকটা পারিবারিক চাপমুক্ত জীবন কাটাতে পারছি।’

শাহীন ভাবছিল কোথায় যাওয়া যায়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। জুলিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘চলেন এখানে একটা 888sport appsি রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে যাই।’

‘কে বলবে আপনি অনেকদিন ধরে আমেরিকায় আছেন। এখনো পুরোপুরি 888sport appsি কালচার ধরে রেখেছেন। কারো জন্য কিছু করতে চাইলে প্রথমেই আমাদের খাওয়া-দাওয়ার কথা মনে হয়। আপনার লাঞ্চ না হলে যেতে পারি। এমনিতে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার ইচ্ছে নেই।’

‘তাহলে শপিংমলে চলেন।’

‘ওরে বাববা ওখানে তো আরো না। 888sport appsে এখন শপিংমল গিজগিজ করছে। বুঝি না মানুষ এত টাকা পায় কই?’

‘ক্রেডিট কার্ডে কেনে। জানেন তো ১৯৮৮ সালের দিকে ক্রেডিট কার্ডের প্রচলন শুরু হওয়ার পর থেকে আমেরিকায় শপিংমলের 888sport free bet স্কুলের 888sport free betর থেকে বেড়ে যায়।’

‘আমাদের ট্রেনিংয়ে বলেছে, এদেশে মানুষজন ডিপ্রেশন কাটাতেও শপিং করে।’

‘তারপরও আমেরিকা থেকে দেশে যাবেন কিছু কিনবেন না, তা কী করে হয়?’

‘যা কেনার তা সব কেনা হয়ে গেছে। আমার অনেক ভাগ্নে-ভাগ্নি আছে। তাদের জন্য অনেক গিফট কিনেছি। বড়দের জন্যও। তার থেকে চলেন কোনো গ্রাম দেখে আসি। আমেরিকার গ্রাম। গ্রাম খুব দূরে হলে কোনো শহরতলি।’

শাহীন কিছুটা অপ্রস্ত্তত হয়েই জিজ্ঞেস করল, ‘অনেক বাংলা ভুলে গেছি। শহরতলি মানে কী?’

‘যেখানে শহর শেষ হয়ে গেছে।’

‘যাওয়া যেতে পারে। তবে দেখার কিছু নেই।’

‘দেখার কিছু না থাকলে আমেরিকাকে দেখতে কেমন লাগে আমি তো তাই দেখতে চাই। আর তাছাড়া একটা খুব ভালো অভিসারও হবে।’

শাহীন এবারো জিজ্ঞেস না করে পারল না, ‘অভিসার মানে কী?’

জুলিয়া খুব স্বাচ্ছন্দ্যে উত্তর দিলো, ‘এই যে আমরা দুজন ব্যাচেলর একসঙ্গে যাব। কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়াব। এটাই অভিসার। একটা ছোটখাটো ডেটিং বলতে পারেন।’

শাহীনের হৃৎপি- হঠাৎ করে একটা পালসের ছন্দ হারিয়ে ফেলে। ‘888sport appsি মেয়েদের সঙ্গে আপনাকে মেলানো যায় না।’

‘আমাকে আপনার একটু ডেয়ারিং টাইপ মনে হচ্ছে। তাই না? আমি আসলে একটু দুষ্টু। 888sport appsে দুষ্টু মেয়ে হওয়ার একটা সুবিধা আছে।’

‘কী রকম?’

‘দুষ্টু মেয়েদের ছেলেরা তেমন বিরক্ত করে না। আর ছেলেরা বিরক্ত করলে মেয়েদের পৃথিবী ছোট হয়ে আসে।’

‘আপনি কি এজন্যই দুষ্টুমি করেন?’

‘আমরা পাঁচ বোন। আমি সবার ছোট। না চাইতেই অল্প বয়সে ইঁচড়েপাকা হয়ে গেছি। ক্লাস টু-থ্রিতে পড়ার সময় বান্ধবীরা যখন কার্টুন ক্যারেক্টারের গল্প করত তখন আমি বলতাম, আচ্ছা ম্যাকগাইভার কি স্মার্ট, না? আড়ি পেতে বড় বোনদের কথা যা শুনতাম তাই আবার ক্লাসে গিয়ে বলতাম।’

জুলিয়া তার ব্যাগ খুলে আঁতকে উঠে বলল,  ‘ও মা, আমি আমার সেলফোন আর ক্যামেরা, দুটো আনতেই ভুলে গেছি। আমেরিকার গ্রামের ছবি তুলব না? আপনার সেলফোনে ছবি তোলা যাবে?’

শাহীন পকেটে হাতড়ে বুঝতে পারল সেও ফোন আনেনি। ‘আমিও সেলফোন আনিনি। আমার বাসা খুব কাছে। মাত্র দুমিনিট লাগবে যেতে। আপনি গাড়িতে বসে থাকবেন। আমি খুব দ্রুত ফোনটা নিয়ে আসব।’

 

পাঁচ

পার্কিং লটে গাড়ি থামিয়ে শাহীন তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। আরেক পাশ থেকে জুলিয়াও দরজা খুলে বাইরে বেরোয়।

জুলিয়া জিজ্ঞেস করল, ‘আমাকে আপনার বাসার ভেতর যেতে বলবেন না?’

শাহীন এবার বেশ অবাক হয়। বলে, ‘নিশ্চয়। চলেন। কী ভাববেন তা আর বলিনি।’

জুলিয়া নিশ্চিন্ত স্বরে বলে ওঠে, ‘আমি আবার একটু ভাবি-টাবি কম।’

‘ডেয়ারিং বলে?’

দুজনেই একসঙ্গে হেসে ওঠে। শাহীন চাবি দিয়ে দরজা খোলে। তারপর দুজনই ঘরে প্রবেশ করে।

জুলিয়া চারদিকটা অবাক চোখে দেখে বলে ওঠে, ‘ও মা, ব্যাচেলরের ঘর এত টিপটপ সুন্দর-গোছানো থাকে! না, আপনার বাসাটাকে মোটেই ব্যাচেলরের বাসা বলে মনে হচ্ছে না।’

শাহীন মনে মনে বেশ খুশি হয়ে ওঠে। ‘কী মনে হচ্ছে?’

‘এটা একটা মেয়ের হাতে সাজানো বাসা।’

জুলিয়ার কথাটা একদিক দিয়ে ঠিক আছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় মেলিসা ঠিক যেভাবে বাসা সাজিয়েছিল, হিউস্টনে এসে শাহীন তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। এ-মুহূর্তে মেলিসার কথা মনে করায় সে খুব গুটিয়ে যায়। তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, ‘আমি তাহলে সঙ্গে ক্যামেরাটাও নিয়ে নিই।’

‘নেন।’

শাহীন ভদ্রতা-সৌজন্যবোধ হিসেবে জিজ্ঞেস করে, ‘কফি বানাব?’

জুলিয়াও প্রস্তাবটা লুফে নেয়। ‘তাই! জীবনে তাহলে এই প্রথম একটা ছেলেকে কফি বানাতে দেখব।’

লিভিংরুমে সোফার পাশে একটা সাইড টেবিল। সেখানে একটা ডিজিটাল ফটোফ্রেম ওলটানো অবস্থায় ছিল। সেটা হাতে নিয়ে দেখতে থাকে জুলিয়া। এরই মধ্যে পাশের রুম থেকে ক্যামেরা হাতে শাহীন লিভিংরুমে ফিরে আসে। শাহীনের ঘরে ঢোকার শব্দে জুলিয়া চমকে ওঠে। শাহীনকে দেখে সে আশ্বস্ত হয়। বলল, ‘আমি যা ভেবেছিলাম তাই।’

‘কী রকম?’

‘এটা একটা মেয়ের হাতে সাজানো বাসা। এখানে আপনার বিয়ের ছবি আছে।’

‘হ্যাঁ, মেলিসা এরকম করে বাসাটা সাজিয়েছিল। তবে এখানে না, ক্যালিফোর্নিয়ায়।’

জুলিয়া মনে করিয়ে দিলো, ‘অথচ আপনি বলেছিলেন আপনার বউ নেই।’

‘ছিল, এখন নেই।’

‘আপনাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে?’

শাহীন ওর একটা দীর্ঘনিশ্বাস চেপে যায়। ‘আমাদের সেপারেশন চলছিল। ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার আগেই মেলিসা মারা যায়।’

জুলিয়া বলে, ‘কীভাবে?’

এই প্রসঙ্গটি এলেই শাহীন খুব ঠান্ডা হয়ে যায়। খুব গম্ভীর স্বরে সে বলল, ‘মেলিসার মৃত্যুটা স্বাভাবিক ছিল না।’

শাহীনের হঠাৎ পরিবর্তন আর কণ্ঠস্বরের অস্বাভাবিকতা জুলিয়াকে কিছুটা ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে। তারপরও নিজেকে সে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করে, ‘কী রকম অস্বাভাবিক?’

শাহীন এবার খুব গভীর দৃষ্টি নিয়ে জুলিয়ার দিকে তাকায়, তারপর বলল, ‘আপনি তো অনেক কিছু খুব দ্রুত বুঝে ফেলেন, বুদ্ধিমান, ডেয়ারিং এবং দুষ্টু। কিন্তু তারপরও দেখেন কত সহজে ফাঁদে ধরা দিলেন।’

শাহীনের দৃষ্টির মধ্যে এমন কিছু ছিল, যা দেখে জুলিয়া আর নিজের স্বাভাবিকত্ব ধরে রাখতে পারল না। এবার সে বেশ ভীতসন্ত্রস্ত স্বরে বলে উঠল, ‘আপনি কী বলছেন?’

দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল সেটি বন্ধ।

শাহীন স্বাভাবিকের থেকে খুব বেশি শান্ত কণ্ঠে বলল, ‘এই মুহূর্তে পৃথিবীর কেউ জানে না, আপনি কোথায় আছেন। আপনার অফিস জানে না, আপনি কার সঙ্গে বাইরে বেরিয়েছেন। আপনাকে ট্রেস করার জন্য বাইরে কোনো গাড়ি অপেক্ষা করছে না। সঙ্গে কোনো সেলফোন নেই।’

‘তার ওপর আপনি এমন একজনের সঙ্গে তার বাসার মধ্যে প্রবেশ করেছেন, যার স্ত্রীর মৃত্যুরহস্য এখনো সমাধান হয়নি।’

জুলিয়া আস্তে আস্তে দরজার দিকে যেতে চাইলে হুইসেলের মতো একটা বিকট শব্দ বেজে উঠল। জুলিয়া অসম্ভব চমকে উঠে দরজার কাছে দৌড়ে চলে যায়।

শাহীন বলল, ‘এ-বাসার দরজা-জানালাগুলো এখন সব অটোম্যাটিক লক করা আছে। আর পুরো বাসাও সাউন্ডপ্রুফ।’

জুলিয়া প্রায় নিরুপায় হয়ে সোফায় বসে পড়ে। তার জীবনে যা ঘটছে তা কী আসলেই বাস্তব? সে তো অনেকবার এরকম ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেছে। তারপর ঘুম থেকে জেগে উঠে আশ্বস্তবোধ করেছে। এটি কি সেরকমই একটি স্বপ্ন নয়? এবার সোফার পাশের সাইড টেবিল থেকে শাহীনের সেলফোনটা বেজে উঠল। জুলিয়া একটু ঝুঁকে দেখল কে ফোন করেছে। নামটা দেখে সে আবার স্বাভাবিক বাস্তবে ফিরে আসে।

ফোনটা শাহীনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, ‘রূপা আপার ফোন। আপনার কথা ঠিক না। রূপা আপা জানে যে আমি আপনার দায়িত্বে আছি।’

শাহীনের মুখের ভাবে স্বাভাবিকতা ফিরে আসে। কিচেনের কফিপট থেকে হুইসেল ক্রমাগত বেজেই চলছে। ফোনটা হাতে নিয়ে সে কিচেনের দিকে চলে যায়।

 

 

ছয়

সামনে বিশাল মাঠ। আঙুর বা যে-কোনো ফলের ক্ষেত। একপাশে একটা খামারবাড়ি।

জুলিয়া ছবি তুলছিল। পেছনে এসে শাহীনের পাশে দাঁড়াল।

জুলিয়া বলল, ‘আপনাকে যতটা সরল-সোজা ভেবেছিলাম আপনি ততটা সরল-সোজা নন।’

শাহীন উত্তর দিলো, ‘আমি দেখতে চাইছিলাম আপনি কতটা ডেয়ারিং।’

‘টেস্ট নিচ্ছিলেন? গত ছয় মাসে এই প্রথম একজন 888sport appsি দেখে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম। আর সেই আপনি আমাকে এমন ভয় পাইয়ে দিলেন? আমার আর কখনো আমেরিকায় আসা হয় কিনা কে জানে? তাই যতটুকু দেখা যায় ততটুকুই লাভ।’

‘আপনি হায়ার এডুকেশনের জন্য অ্যাপ্ল­vই করতে পারেন।’

‘আমার তো খুব স্পেসিফিক লাইনের কাজ। ট্রেনিং করছি বিভিন্ন দেশে।’

‘আমেরিকার একটা ডিগ্রি থাকলে এদেশে কাজ পেতে সুবিধা হয়।’

‘আমার এ-দেশে থাকার ইচ্ছা নেই। আমি ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার না যে বেশি বেতনে ভালো জায়গায় থাকার ইচ্ছা নিয়ে লেখাপড়া করেছি। আমি অটিস্টিক বাচ্চাদের শিক্ষক। এদেশে অনেকেই আছে এদেরকে নিয়ে কাজ করার। কিন্তু আমাদের দেশে এ-বিষয়ে কাজ করার খুব কম মানুষ।’

‘তাহলে আপনি বেশ পরিকল্পনা করেই এ-লাইনে এসেছেন।’

‘হ্যাঁ।’

নিজের অজান্তেই শাহীন জুলিয়ার ব্যক্তিগত বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে। জিজ্ঞেস করল, ‘আপনার মতো হাসিখুশি একজন মানুষ এ-পেশা বেছে নিল কেন?’

‘আমাদের পাঁচ বোনের পর একটা ভাই হয়েছিল। ভাইটা অটিস্টিক ছিল। আমার যখন বারো বছর বয়স তখন সে মারা যায়। আমার জীবন বলেন, পরিবার বলেন ভাইটা খুব একটা বড় প্রভাব রেখে যায়। তারপরই ঠিক করি অটিস্টিকদের নিয়ে লেখাপড়া করব।’

এর মধ্যে একটা দম্পতি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছিল। এবার তারা বেশ পরিচিত ভঙ্গিতে শাহীনের দিকে এগিয়ে এলো।

ভদ্রলোক  করমর্দনের জন্য হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আরে শাহীন ভাই না?’

শাহীন করমর্দন করল। হেলালের বাসায় অনেকের সঙ্গে দেখা হয়। উনি হয়তো তাদেরই কেউ হবেন।

ভদ্রলোক এবার বেশ পরিচিত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাবিকে নিয়ে কবে ফিরলেন?’

শাহীন অপ্রস্ত্তত চোখে জুলিয়ার দিকে তাকাল।

ভদ্রমহিলা এবার অনুযোগের স্বরে বললেন, ‘শাহীন ভাই আপনি এলেন আর রূপা ভাবি আমাকে কিছুই জানাল না?’

এবার জুলিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনার বধূবরণ অনুষ্ঠান নিয়ে আমি আর রূপা ভাবি কত পস্ন্যান করলাম! ধান, দূর্বাঘাস, পিতলের থালা, শঙ্খ এর-ওর থেকে সবকিছু জোগাড় করে আমার বাসায় এনে রেখেছি। রূপা ভাবি হঠাৎ ফোন করে বলল, বরণ অনুষ্ঠান হবে না। আমি ভেবেছিলাম শাহীন ভাইয়ের বিয়ে ভেঙে গেছে। কিন্তু এখন তো ঠিকই বউ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আপনি কী বরণ অনুষ্ঠান পছন্দ করেন না?’

জুলিয়া খুব স্বাভাবিক স্বরে উত্তর দিলো, ‘করি তো। করব না কেন?’

মহিলা এবার শাহীনকে বললেন, ‘তাহলে নিশ্চয়ই আপনি মানা করেছেন? আমাদের এত পস্ন্যান ভ-ুল করে দেওয়ার জন্য আপনাকে সুদে-আসলে পুষিয়ে দিতে হবে।’

জুলিয়াও সায় দিলো। ‘ঠিক বলেছেন। তাঁকে ধরেন একটা বড় পার্টি দেওয়ার জন্য।’

মহিলা শাহীনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী শাহীন ভাই বড় পার্টি দেবেন না?’

ভদ্রলোক বললেন, ‘আহা, কারো থেকে জোর করে পার্টি নিতে নেই। এখন উনাদের সময় আর নষ্ট করো না।’

ভদ্রমহিলা বিদায় নিতে নিতে বললেন, ‘ভাবি এখন আসি। রূপা ভাবির থেকে আপনার ফোন নম্বর নিয়ে নেব।’

শাহীন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। জুলিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘বিষয়টা কী হলো?’

জুলিয়া নির্বিকারভাবে উত্তর দিলো, ‘প্রতিশোধ নিলাম।’

‘কিসের প্রতিশোধ?’

‘আমাকে ভয় দেখিয়েছিলেন তার প্রতিশোধ।’

‘অনেক বেশি প্রতিশোধ নিয়ে ফেলেছেন। জানেন আজকের মধ্যেই 888sport appsি সমাজে ফলাও করে প্রচার হয়ে যাবে যে, আমি দেশ থেকে বিয়ে করে এসেছি।’

‘আপনাকে বিপদে ফেলার জন্যই তো এমনটা করলাম। অথচ এক সপ্তাহ পর যখন আমি দেশে চলে যাব, আমার এতে কিছুই হবে না। কেন যে লোকে বলে কলঙ্ক শুধু মেয়েদের গায়ে লাগে, ছেলেদের গায়ে লাগে না। এক সপ্তাহ পর তো আমি আর থাকব না। এখানে আমার কোনো ট্রেস নেই। অথচ আপনাকে এর জের বইতে হবে।’

‘আপনি বড্ড বেশি 888sport promo codeবাদী।’

‘যাই বলেন, আমাকে 888sport promo codeবাদী বলবেন না।’

‘কেন? 888sport promo codeবাদী হওয়া তো গৌরবের ব্যাপার। এ-যুগের ফ্যাশন। এখন ছেলেরাও 888sport promo codeবাদী হচ্ছে।’

‘কাটাতেন আমার জীবন তখন বুঝতেন সাধ করে আমি 888sport promo codeবাদী না, আমার আসলে সামর্থ্য নেই।’

‘একা একা আমেরিকা চলে আসছেন আর বলছেন আপনার সামর্থ্যের অভাব?’

‘আগেই বলেছি আমরা পাঁচ বোন, বাবারও ছোটখাটো চাকরি। জন্মের পর থেকে কীভাবে মাথা নিচু করে চলতে হয় আম্মা খুব ভালোভাবে সেই ট্রেনিং দিয়েছে। থাক, আমার কথা। আপনি কী করেন? ইঞ্জিনিয়ার?’

‘হ্যাঁ, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। শুধু তাই না, নিজের কোম্পানি চালাই। গত কয়েক বছর ধরে অন অ্যান্ড অ্যাভারেজ পঁচিশজনকে পে-চেক দিয়ে যাচ্ছি।’

‘বুঝেছি, আপনি অ্যাটম বোম বোঝেন, মানুষ বোঝেন না।’

‘মানে বুঝলাম না।’

‘এটা 888sport appsের একজন বিখ্যাত কবি হেলাল হাফিজের দু-লাইনের একটা 888sport app download apkর এক লাইন সারাংশ।’

‘দু-লাইনের হলমার্কের কোটেশন হয় তা জানি। কিন্তু 888sport app download apk হয় তা জানতাম না।’

‘বোঝা গেছে আপনি আসলেই একজন পুরোদস্ত্তর ইঞ্জিনিয়ার।’

‘শুধু অ্যাটম বোম বুঝি। তাই কি?’

‘ওরকমই।’

শাহীন বুঝতে পারছে এই মেয়েটি ক্রমশ তাকে অদৃশ্যভাবে জড়িয়ে ধরছে। সে-মেয়েটির ব্যাপারে খুব আকর্ষণবোধ করছে। আচ্ছা জুলিয়াকে তা বুঝতে দিলে কেমন হয়? শাহীন জুলিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে খুব গভীর স্বরে বলল, ‘যদি মানুষ বুঝতে চায় তাহলে সাহায্য করবেন?’

জুলিয়া খুব তড়িঘড়ি করে হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আচ্ছা আমাদের ডিনারে হেলাল ভাই আর রূপা আপার বাসায় দাওয়াত ছিল না?’

 

সাত

রূপা আর হেলালের বাড়িতে বিশাল আয়োজন করা হয়েছিল। অতিথিরা এক এক করে বিদায় নিয়েছে। শুধু শাহীন আর জুলিয়া রয়ে গেছে। চায়ের কাপ হাতে সবাই এখন লিভিংরুমে বসে আরেকপর্ব আড্ডার প্রস্ত্ততি নিচ্ছে। সবাই বলতে হেলাল, রূপা, শাহীন আর জুলিয়া। রূপা বলল, ‘জুলিয়া তুমি তো কোনো মিষ্টিই স্পর্শ করলে না।’

‘আমি মিষ্টি খাই না আপা।’

হেলাল বলল, ‘অথচ তোমার জন্য রূপা আজকে সারাদিন ধরে পাঁচ রকমের মিষ্টি বানাল।’

জুলিয়া মনে করত মিষ্টি শুধু দোকানে কিনতে পাওয়া যায়, ঘরে কেউ বানায় না। সে বিস্মিত স্বরে জিজ্ঞেস করল, ‘এতসব মিষ্টি আপনি নিজের হাতে বানিয়েছেন?’

রূপার মিষ্টি উত্তর, ‘এই আমেরিকায় হাজার রকম রান্না না জানলে আমাদের প্রবাসী 888sport appsি সমাজে কোনো দাম নেই।’

হেলাল পাশ থেকে যোগ করল, ‘অন্তত মহিলারা এমনটা মনে করে থাকেন। এই প্রবাসে 888sport appsি-888sport promo codeরা তাদের ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করে থাকেন রান্নাবান্নার মাধ্যমে। সিদ্দিকা কবীরের রান্না খাদ্য পুষ্টি হচ্ছে উনাদের ক্ষমতায়নের বিপ্লবী রেড বুক।’

রূপা অনুযোগ করল, ‘জুলিয়া মাত্র কয়েকদিনের জন্য এ-দেশে এসেছে, ওকে আমাদের সম্পর্কে এত খারাপ ধারণা দিচ্ছ কেন?’

হেলাল টিপ্পনী কাটল, ‘তাহলে তুমিও বেশি রান্না করাটাকে খারাপ বলে স্বীকৃতি দিচ্ছ?’

রূপাও ছাড়ার পাত্র নয়, ‘আহা, ন্যাকা। টেবিলে সব মজাদার খাবার দেখলে তো ঠিকই পে­টভর্তি করে খাও।’

হেলাল তার ভুঁড়ির ওপর হাত বুলিয়ে বলল, ‘সাপস্নাই ডিমান্ড তৈরি করে। আমরা তো সব সাপস্নাইয়ের দাস।’

জুলিয়া স্বামী-স্ত্রীর কপট ঝগড়া উপভোগ করছিল। বলল, ‘আসলেই হেলাল ভাই। কথাটা ঠিক বলেছেন। 888sport appsে সেলফোনের এখন এত সাপস্নাই যে অন্য প্রয়োজন আর মিটুক না মিটুক সেলফোন একটা কেনা চাই।’

অনেকক্ষণ শাহীন চুপ করে সবার কথা শুনছিল। এবার নিজের উপস্থিতি জানিয়ে দিলো, ‘এক্সকিউজ মি। আমি আরেক কাপ চা নেব।’

শাহীনের পেছন পেছন রূপাও কিচেনে চলে এলো।

গ্রানাইটের আইল্যান্ডের ওপর রাখা টি-পট থেকে শাহীন চা ঢালছিল। পাশে দাঁড়িয়ে রূপা খুব নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করল,  ‘আপনি আজকে জুলিয়াকে নিয়ে কোথায় গিয়েছিলেন? সোমা ভাবি তো অলরেডি 888sport appsি কমিউনিটিতে রটিয়ে দিয়েছে যে, আপনি দেশ থেকে বউ নিয়ে এসেছেন।’

শাহীন হেসে বলল, ‘যা ভেবেছিলাম তাই।’ জুলিয়াকে সবাই তার বউ ভাবছে এ-ধারণাটি তাকে অনেক আনন্দ দিচ্ছে।

রূপা বেশ সাবধানী সুরে বলল, ‘মনে হচ্ছে মজা পাচ্ছেন? আপনার পরে বিয়ে হতে কিন্তু আরো সমস্যা হবে। জুলিয়ার আশা কইরেন না। ওর কিন্তু দেশে বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।’

হঠাৎ কী একটু গরম চা ছিটকে পড়ল? নাকি কারেন্টের শক? শাহীন প্রথমটায় খুব চমকে উঠল, তারপরই হঠাৎ খুব গম্ভীর হয়ে গেল।

রূপার চোখে তা এড়াল না। শাহীনের জন্য তার খারাপই লাগছে। সেও তো জানত না। কিছুক্ষণ আগে জুলিয়াই তাকে জানিয়েছে। তার ধারণা ছিল জুলিয়া হয়তো শাহীনকেও বলেছে। সে জিজ্ঞেস করল, ‘জুলিয়া আপনাকে বলেনি?’

‘এসব ব্যাপারে ওর সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। আপাতত এ-কদিন একজন ট্যুরিস্টের গাইডের কাজ করছি। এর বেশি কিছু নয়।’

ওরা দুজন যখন আবার লিভিংরুমে ফিরে এলো তখন তাদের দেখে জুলিয়া ব্যস্ত হয়ে বলে উঠল,

‘রূপা আপা আমরা এখন উঠি তাহলে।’

রূপা বলল, ‘এখনই কী উঠবে? আরেকটু বসো।’

‘এই কদিন তাঁর অনেক সময় নষ্ট করেছি। আজকে আর দেরি করাতে চাই না।’

হেলাল বলল, ‘শাহীনের সমস্যা থাকলে আমি তোমাকে দিয়ে আসব। বসো আরেকটু।’

শাহীন ঠিক করেছে সে অত সহজে হাল ছাড়বে না। জুলিয়া বাগদত্তা, বিবাহিত তো আর না। ভাবল মেয়েটাকে একটু পটালে কেমন হয়। ‘জুলিয়ার নিজের উদ্দেশ্য মহৎ। আমরা তো দেশের জন্য কিছু করতে পারলাম না। জুলিয়াদের মতো যারা এখানে দুদিনের অতিথি হয়ে আসে তাদের ট্যুরিস্ট গাইড হয়ে কিছুটা হলেও নিজের অপরাধবোধ কমাতে পারি।’

জুলিয়া উঠে পড়ল। বলল, ‘আসলেও উঠতে হবে। শাহীন ভাইয়ের খুব ভোরে একটা মিটিং আছে। উনি ভদ্রতা করে কিছু বলছেন না।’

মেয়েটি শাহীনকে আর কত বিস্মিত করবে? ‘আমার মিটিংয়ের খবর আপনি জানলেন কী করে?’

‘আপনি ইন্ডিয়ার কোনো টিমের সঙ্গে এ-বিষয়ে কথা ব­লেছেন।’

হেলাল আর রূপা তাদের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গেল। রূপা জুলিয়াকে জড়িয়ে ধরে বিদায় দিলো।

 

আট

গাড়ি চলছে। তার ভেতর অনেকক্ষণ ধরে দুজন চুপচাপ বসে আছে। শেষে শাহীন নীরবতা ভেঙে বলল,

‘কনগ্র্যাচুলেশন্স।’

জুলিয়া শাহীনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘কেন?’

‘সামনে আপনার বিয়ে সে-কথা বলেননি।’

‘কিন্তু আমি যে এ-দেশে থাকব না, সে-কথা কিন্তু প্রথমেই বলেছিলাম।’

‘এই দুটোর সঙ্গে সম্পর্ক কী?’

‘যাতে সহজেই একটা অবিবাহিত মেয়ের প্রেমে পড়ে না যান।’

শাহীন না হেসে পারল না। ‘যে-ছেলে আপনাকে বিয়ে করবে সে খুব ভাগ্যবান।’

‘সবাই সবকিছু একই রকম ভাবে, বোঝে না। আমার বিয়ে এখনো ঠিক হয়নি। আজকে আমার আববার কাছে পাত্রপক্ষের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার কথা।’

শাহীন কৌতূহল দেখাল, ‘লাভ ম্যারেজ?’

‘না, পলিটিক্যাল ম্যারেজ।’

‘কী রকম?’

‘আমরা নারায়ণগঞ্জে থাকি। বিশ বছর আগে ওখানকার একটা কলেজে আববা প্রফেসর হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। সেখানেই রিটায়ার্ড করেন। অনেক আগে একটা জমি কিনেছিলেন। সেই জমি জোর করে এলাকার এক প্রভাবশালী দখল করে নেন। আববার অনেক কিছু করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু এই জমি নিয়ে বলতে গেলে এক ধরনের গর্তে পড়ে গেছেন। গত সাত-আট বছর ধরে দেখছি এই জমির পেছনে মামলা-মোকদ্দমা করতে করতেই প্রায় জীবনটা শেষ করে দিচ্ছেন।’

‘তার সঙ্গে আপনার বিয়ের সম্পর্ক কী?’

‘যারা আজকে আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে তারা সেই প্রভাবশালী পরিবার। সেই পরিবারের একটা ছেলে কলেজজীবন থেকেই আমার পেছনে লেগে আছে। কখনো পাত্তা দিইনি। তবে এবার আমেরিকা আসার আগে দেখা করে এমন কান্নাকাটি শুরু করল যে, বললাম মামলা উঠিয়ে নাও তারপর চিন্তা করব।’

‘এত বছরের মামলা উঠিয়ে নিল?’

‘সত্যি এই আমেরিকা বসে আববার কাছেই খবর পেলাম মামলা উঠিয়ে নিয়েছে। আমি অনেকদিন আববাকে এত আনন্দ নিয়ে কথা বলতে শুনিনি।’

‘পুরো ব্যাপারটাকেই কেমন জানি একটা গল্প মনে হচ্ছে।’

‘অনেকদিন আমেরিকায় থাকেন তো। তাই এসব এখন আপনার কাছে গল্প। আজকে ওদের আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার কথা।’

‘আপনি জেনেশুনে এমন একটা পরিবারে বিয়ে করছেন?

‘আমার তো মনে হয় এমন একটা পরিবারেই আমার বিয়ে করা উচিত। সার্বক্ষণিক কাউন্সেলিং করে সবাইকে ঠিক করে ফেলব।’

‘আপনি আসলেই ডেয়ারিং। ভালো ঝুঁকি নিতে পারেন।’

‘সে সঙ্গে আবার কেয়ারিংও।’

‘আসলে আমার জীবনেও এরকম একটা ঘটনা আছে। আমি সফল হতে পারিনি। তবে আমি নিশ্চিত আপনি সফল হবেন। মেলিসার কথা আপনাকে কিছুটা বলেছিলাম…’

‘রূপা আপার কাছে সব শুনেছি। মেলিসার সঙ্গে আপনার যখন পরিচয় হয় তখন সে সিরিয়াস ডিপ্রেশনের রোগী ছিল।  সব জেনেশুনেই আপনি মেলিসাকে বিয়ে করেছিলেন।’

‘হ্যাঁ। প্রথম ছয় মাস সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু তারপরই মেলিসার ডিপ্রেশনটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। মেলিসা ওর বাবা-মার কাছে মিনেসোটায় চলে যায়।’

‘তারও দুই মাস পর একদিন শুনি মেলিসা সুইসাইড করেছে।’

‘খবরটা শুনে আমি সঙ্গে সঙ্গেই মিনেসোটায় চলে যাই।’

‘ভাগ্যিস ঘটনাটা আমেরিকায় ঘটেছিল। 888sport appsে হলে আপনাকে বউ খুনের অভিযোগে জেলে যেতে হতো।’

‘মেলিসার পরিবার আমাকে কোনো দোষ দেয়নি। বরং ওর ফিউনেরালে আমাকে কিছু বলতে বলেছিল। আসলে সমস্যার মূল অনেক গভীর হলে বিয়ে ব্যাপারটা তাতে তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।’

‘আপনি তো দেখি আমার মধ্যে কিছুটা ভয় ধরিয়ে দিচ্ছেন।’

‘আমার জীবন আরো কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। এখন সব কাটিয়ে আবার সামনের দিকে চলতে শুরু করেছি। কাজ আর ভালোবাসা – এ দুটোই এখন আমার জীবনের মূলমন্ত্র।’

 

নয়

শাহীন ওর বিছানায় ঘুমাচ্ছিল। গভীর রাতে ফোন বেজে উঠল। রাতের ফোন মানেই দুঃসংবাদ। মানসিক প্রস্ত্ততি নিয়েই ফোনটা হাতে নিয়ে শাহীন বলে, ‘হ্যালো?’

জুলিয়া অস্থির কণ্ঠে বলে উঠল, ‘আমি বোধহয় আপনার ঘুম ভাঙালাম। পরে সরি বলব। এখন আমার খুব বিপদ। উপকার করেন।’

শাহীন ধড়ফড়িয়ে বিছানায় উঠে বসে। ‘কী হয়েছে বলেন?’

‘পাত্রপক্ষের বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পরই আমার আববার স্ট্রোক হয়। আববা এখন 888sport appর হাসপাতালে আছে। আমাকে টিকিটটা বদলে এখনই 888sport app যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।’

শাহীন বলে, ‘আচ্ছা দেখি কী করা যায়।’

 

দশ

এয়ারপোর্ট। জুলিয়া বোর্ডিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। পাশে শাহীন বসে আছে।

জুলিয়া এখন কিছুটা শান্ত। বোনের সঙ্গে কথা বলেছে। ওর আববার অবস্থা এখন বিপদমুক্ত। তবে ভদ্রলোক আর নারায়ণগঞ্জে থাকতে চাচ্ছেন না। জুলিয়া বলল, ‘আববার মাথা থেকে ওই জমির ভূত নেমে গেছে। জমির ব্যাপারে আর কোনো মাথাব্যথা নেই। এখন মনে করছেন নারায়ণগঞ্জে গেলেই ওরা আমাকে অপহরণ করে নিয়ে যাবে। কী করতে যে কী করে ফেললাম!’

একসময় জুলিয়ার প্লেনে ওঠার সময় এগিয়ে আসে।

শাহীন হঠাৎ করেই জিজ্ঞেস করে, ‘আচ্ছা দেশে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ আছে?’

জুলিয়াও খুব উৎসাহ নিয়ে বলে, ‘খুব আছে। এখানে যা করছেন, দেশেও তা করবেন। আপনাদেরকেই তো 888sport appsের অনেক দরকার। সবকিছু সুজলা-সুফলা এরকমটা বলব না। দেশে থাকলে বিভিন্ন প্রভাবশালী, জমি-দখলদারিকে ম্যানেজ করেই আপনাকে সেখানে চলতে হবে।’

শাহীন বলল, ‘পৌঁছেই কিন্তু ফোন করবেন।’

পেছন ফিরে জুলিয়া মাথা নাড়ল।

 

এগারো

কয়েকদিন পার হয়ে গেছে। শাহীন তার বাসায় একা একা। কী করবে বুঝতে পারছে না। এমন সময় একটা ফোন এলো। সেলফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে শাহীন বুঝে গেল কার ফোন। বলল, ‘হ্যালো?’ r