মিচিকো কাকুতানি
[মিচিকো কাকুতানি নিউইয়র্ক টাইমসের নামজাদা ও নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ-সমালোচক। ১৯৭৯ সাল থেকে তিনি এই দায়িত্ব পালন করছেন। কঠোর ও বস্তুনিষ্ঠ গ্রন্থ-সমালোচনার জন্য মিচিকো পাঠক জনপ্রিয়তায় ধন্য হয়েছেন, যদিও যাঁদের গ্রন্থ তাঁর হাতে সমালোচিত হয়েছে, তাঁদের অনেকেই সম্ভব হলে ছুরি হাতে তাঁকে খুন করতেন। কথাটা আক্ষরিক অর্থেই বলা হচ্ছে, তাঁর মৃত্যুর কয়েক বছর আগে নর্মান মেইলার ইঙ্গিত করেছিলেন, সম্ভব হলে মিচিকোকে তিনি খুন করতেন। মিচিকোর হাতে তাঁর এক গ্রন্থের কঠোর সমালোচনা পাঠের পর মেইলার মন্তব্য করেছিলেন, মিচিকো এক অতি-মূর্খ পুস্তক-সমীক্ষক, যাঁকে নিউইয়র্ক টাইমস চাকরি থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেয়নি, কারণ সে মহিলা ও এশীয় বংশোদ্ভূত। আরেক নামজাদা আলফা-পুরুষ লেখক নিকলসন বেকার বলেছিলেন, কাকুতানির পুস্তক-সমালোচনা পড়তে গিয়ে তাঁর মনে হয়েছে, কেউ একজন অজ্ঞান না করেই তাঁর কলজে কেটে বের করছে।
এই মিচিকো কাকুতানি ২০১৬ সালের সেরা দশটি বই ক্রমানুসারে নির্বাচন করেছেন। বিদেশি বই আলোচনায় নিউইয়র্ক টাইমস অনুসারে কাকুতানির সে-তালিকা ও তাঁর সমীক্ষা সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করা হলো। সংক্ষিপ্ত হলেও বইয়ের মেজাজ ও সৌন্দর্য এই অল্পকথাতেই অর্জিত হয়েছে। লেখাটি প্রস্তুত করেছেন হাসান ফেরদৌস।]
১। মুনগ্লো, মাইকেল শাবন, হার্পার
এটি একটি কপট 888sport sign up bonusকথা, নিজের পিতামহের গল্পটি এখানে শাবন নিজ ভাষ্যে সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন। প্রাক্তন সৈনিক সেই পিতামহ লেখকের 888sport apk download apk latest versionমিশ্রিত ভালোবাসায় এভাবে প্রকাশিত হয়েছেন যে, মনে হয়, তিনি জীবনের চেয়েও বৃহৎ একজন। তাঁর এই গ্রন্থনা মনে করিয়ে দেয় সল বেলোর মার্কিন মন্দাবস্থার সময়কার 888sport alternative link অগিমার্চের নায়ককে। তিনি একই সঙ্গে স্বাপ্নিক, কর্কশ, অতিচতুর ও জেলফেরত আসামি এমন একজন, যে কখনো অতিসরল, কখনো আত্মদম্ভী, আবেগপ্রবণ ও রোমান্টিক।
মাইকেল শাবন সম্ভবত বর্তমান সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী গদ্য-লেখক। এই গ্রন্থে তিনি একই সঙ্গে তাঁর অনায়াস গীতিময়তা ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যাগ্রতার প্রমাণ রেখেছেন। এই গ্রন্থের নায়ক অর্থাৎ তাঁর পিতামহ – এক ফরাসি উদ্বাস্তু 888sport promo codeর প্রেমে পড়েছিলেন, পরে সে-888sport promo codeকেই তিনি বিয়ে করেন। অসীম যতেœ ও মমতায় শাবন তাঁদের প্রেমের গল্পটি পুনরুদ্ধার করেছেন। এই দুই মানব-মানবীর উদাহরণে শাবন আমাদের বিশ শতকে আমেরিকার পরিবার ও পারিবারিক জীবন যে পরিবর্তন ও টানাপড়েনের ভেতর দিয়ে অগ্রসর হয়েছে, তার এক অনপনেয় পোর্ট্রেট উপহার দিয়েছেন।
২। হিটলার : এসেন্ট, ১৮৮৯-১৯৩৯, ভোলকার উলরিখ, আলফ্রেড কনফ
যে-লোকটাকে একসময় ভাবা হয়েছিল অর্ধ-উন্মাদ, হতচ্ছাড়া ও বোকার হদ্দ, তিনি কী করে গ্যটে ও বিঠোফেনের দেশে ক্ষমতার শীর্ষে উঠতে সমর্থ হলেন? কীভাবে জার্মানির লাখ লাখ মানুষ তাঁকে ও তাঁর ঘৃণাভরা রাজনৈতিক বাগাড়ম্বরে আস্থা স্থাপন করল? এমন একজন প্রতারক কীভাবে একসময়ের এই অগ্রসর গণতান্ত্রিক দেশের ওপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করে তাকে এক মহাবিপর্যয়ের পথে ধাবিত করতে সমর্থ হলেন? এই বলিষ্ঠ ও অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ জীবনীতে উলরিখ আমাদের দেখিয়েছেন, হিটলার কীভাবে একের পর এক বাগাড়ম্বরতার তূণ ব্যবহার করে ইতিহাসের এক সংকটপূর্ণ মুহূর্তে নিজের অভীষ্ট পূরণে সমর্থ হয়েছিলেন। তাঁর ব্যবহৃত কৌশলের মধ্যে ছিল সরাসরি মিথ্যাচার, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, জাঁকজমকপূর্ণ অতিনাটকীয় জনসমাবেশ ও একই কথার পুনরাবৃত্তি, যা তিনি মন্ত্রের মতো ব্যবহারে সমর্থ হয়েছিলেন। এর সঙ্গে যুক্ত করুন প্রথম মহাযুদ্ধোত্তর জার্মানির অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা, বেকারত্ব ও রাজনৈতিক বিভক্তি। উলরিখের বক্তব্য অনুসারে, হিটলারের উত্থান অনিবার্য ছিল, তা মোটেই নয়। তাঁর সাফল্যের মূল কারণ হিটলারের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা এই লোকটি কী পরিমাণ নিষ্ঠুর হতে পারেন, সে-কথা সম্যক উপলব্ধি করতে সমর্থ হননি। অন্যদিকে বিদেশি রাষ্ট্রনায়করা ভেবেছিলেন, হিটলারের লম্ফঝম্প তাঁরা সহজেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে সমর্থ হবেন। এই বইতে উলরিখ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, যা অভাবিত, তেমন ঘটনা কত সহজেই ঘটতে পারে।
৩। নাইট স্কাই উইথ একজিটউন্ডস, ওশান ভুওং, কপার ক্যানিয়ন প্রেস
এটি একটি চমৎকার কাব্যগ্রন্থ, যেখানে প্রবল ও অভাবিত তীক্ষè ভাষায় কবি উদ্ধার করেছেন অভিবাসীদের প্রতি আমেরিকার নাগরিকদের রক্ষণশীল মনোভাব, তার পাশাপাশি যে আশা ও উদ্বেগে এই সমুদ্রসীমায় অভিবাসীরা ভিড় জমায়, তার বিবরণ। এই সেই আমেরিকা যেখানে ‘বৃক্ষটিও জানে ইতিহাসের গুরুভার’।
ভুওং, যাঁর জন্ম ১৯৮৮-তে সায়গনের কাছে এক খামারে, তাঁর পরিবারের তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি লেখাপড়া শেখার সুযোগ পান। ধ্বনি ও ছন্দের যে-দুলুনি তাঁর 888sport app download apkয় রয়েছে, তা থেকে বোঝা যায়, শব্দের মধ্যে রয়েছে যে জাদুকরি সংগীতময়তা তা তাঁর সম্পূর্ণ করায়ত্ত। 888sport app download apkয় গল্প ও 888sport sign up bonusকে উদ্ধারে তিনি কুশলী, ঠিক যে-কুশলতা ছিল তাঁর মাতামহীর, যিনি এখনো স্পষ্ট মনে করতে পারেন ভিয়েতকংদের হাতে কীভাবে মার্কিনদের পরাজয় ও সায়গন শহরের পতন ঘটল। ভুওং এমনসব আকস্মিক ও আবেগময় রূপকল্পের ভেতর দিয়ে আমাদের সে-কাহিনির সঙ্গে পরিচিত করান, যেখানে ভাষা তাঁর হাতে পরিণত হয় ‘সংগীতের হাড়মাসে।’ কাগজে কলমের ডগা ছোঁয়াতেই যেন জাদুর পরশে জীবন ফিরে পায় বি888sport sign up bonusর গহ্বরে লুকিয়ে থাকা তাঁর পরিবারের গল্প।
৪। ল্যাব গার্ল, হোপ জাহরেন, আলফ্রেড কনফ
হোপ জাহরেন পেশায় একজন ভূ-জীব888sport apkী, লেখক হিসেবে তাঁর রয়েছে সেই দুটি গুণ নবোকফ যা যে-কোনো লেখকের জন্য অপরিহার্য বিবেচনা করতেন : ‘কবির মিতাচার ও নির্ভুলতা এবং 888sport apkীর কল্পনাশক্তি’। ল্যাব গার্ল নামক এই 888sport sign up bonusকথায় তিনি একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন, কিন্তু যে-ভাষায় তা বর্ণিত হয় তাতে রয়েছে এমন এক তড়িৎপৃষ্ঠ উত্তেজনা যা একই সঙ্গে কবির মিতাচার ও 888sport apkীর কল্পনাশক্তি দ্বারা নির্মিত। এই দুই গুণের সমন্বিত ব্যবহারে তাঁর রচনা হয়ে উঠেছে স্বাদু ও সুন্দর। তাঁর গদ্যের ভিতে রয়েছে লম্বা প্রস্তুতি নিয়ে সম্পাদিত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অপরিহার্য যে শৃঙ্খলা ও ধৈর্য, এবং মাঠ পর্যায়ের কাজের কর্মনিষ্ঠতা ও আবিষ্কারের আনন্দ। এই বইয়ে তিনি জীব888sport apkের যে-আবিষ্কারের গল্পটি বলেছেন, তা একদিকে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার প্রক্রিয়ার অন্তরঙ্গ বিবরণ, অন্যদিকে এটি ভেষজ প্রজাতির অজ্ঞাত জীবনের গোপন কাহিনির নির্ভরযোগ্য একটি গাইড বুক। বস্তুত, এই বইটি উদ্ভিদতত্ত্বের জন্য ঠিক তাই করবে, যা স্টিফেনগুল্ডের লেখা গ্রন্থসমূহ পক্ষী888sport apkের জন্য করেছিল।
৫। দি নর্থ ওয়াটার, ইয়ান ম্যাকগ্যয়ার, হেনরি হল্ট পাবলিশার্স
এই 888sport alternative linkটির বিষয়বস্তু উনিশ শতকের এক তিমি মাছ শিকারের কাহিনিকে ঘিরে। সে-কাহিনি ততটাই রক্তাক্ত ও ভীতিকর যতটা ছিল সন্ডহাইমের মিউজিক্যাল ‘সুইনিটড’, অথবা একে তুলনা করা যায় কোনো ধোঁয়াটে ও অতিনাটকীয় জ্যকবিয়ান নাটকের সঙ্গে। এই 888sport alternative linkের প্রধান দুষ্ট চরিত্র, তার ভিলেইন, হেনরি ড্রাক্স এমন একজন দানবীয় ব্যক্তি, যাঁর কাজ আমাদের করম্যাকম্যকার্থির অপেরা ব্লাড মেরিডিয়ান বা জ্যাক লন্ডনের ১৯০৪ সালের 888sport alternative link দি সি উলফের ধর্ষকামী পাষ- বিচারপতি উলফ লারসেনের কথা মনে করিয়ে দেয়। বলা বাহুল্য, নানা ঘটনা ও অঘটনে ভরা তিমি শিকারের এই গল্প আপনাকে মেলভিলের মবিডিক 888sport alternative linkের জগতে নিয়ে যাবে। কিন্তু ইয়ান ম্যাকগ্যয়ারের গল্প বলার এমনই মুন্শিয়ানা যে, আপনি কখনোই ভাববেন না, বিগতকালের সেসব মহান লেখকের প্রতি নিজের 888sport apk download apk latest versionঞ্জলি প্রদানের জন্য তিনি গল্প ফেঁদেছেন। বরং এমন এক রুদ্ধশ্বাস ও মৌলিক গল্পকথনের শৈলী এই লেখকের করায়ত্ত যে, তা আমাদের এমন এক আদিম ও বন্য জীবনাভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে নিয়ে যায়, যার উদাহরণ মেলে শুধু ডারউইনের জগতে, যেখানে একমাত্র ‘সবচেয়ে সবল’ প্রাণিরাই টিকে থাকতে পারে।
৬। বর্ন এ ক্রাইম : স্টোরিস ফ্রম এ সাউথ আফ্রিকান চাইল্ডহুড, ট্রেভর নোয়াহ, স্পিগেল অ্যান্ড গ্রাউ
ট্রেভর নোয়াহ আমেরিকায় পরিচিত নৈশকালীন টিভি অনুষ্ঠান ‘দি ডেইলি শো’র হোস্ট হিসেবে। তিনি একজন কমেডিয়ান, তাঁর রয়েছে বৃত্তের বাইরে থেকে অবলোকনের ধীশক্তি, জীবনের অবাস্তবতা উদ্ধারের এক অন্তর্গত দৃষ্টি। যে-কৌতুকবোধের জন্য তিনি সুুপরিচিত, তার গঠনকাল শৈশবে নিজ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায়। তাঁর মা একজন খোসা বংশোদ্ভূত আফ্রিকান, বাবা সুইস-জার্মান শ্বেতকায়। তাদের অসবর্ণ সম্পর্ক দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী আইনে অবৈধ ছিল। নোয়াহ তাদের সেই অসম্ভব প্রেমের গল্পটি করেছেন, তবে এটা সাদামাটা কোনো প্রেমকাহিনি নয়। নোয়াহর বর্ণনায় ধরা পড়ে, দক্ষিণ আফ্রিকার সেই সমাজে বর্ণবিভাজন কীভাবে জীবনের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার প্রতি পদক্ষেপে অনুপ্রবেশ করেছিল। কঠিন, কষ্টকর অভিজ্ঞতা, অথচ সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নোয়াহ তাঁর মায়ের উদ্দেশে পরম যতেœ, পরম ভালোবাসায় এই
888sport sign up bonusকথায় যেন একটি ভালোবাসার পত্র লিখেছেন। প্যাট্রিসিয়া নোয়াহ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, ‘যে-কোনো জায়গায় যেতে সমর্থ, যা খুশি করতে সমর্থ, যা কিছু হতে চায়, সে তা অর্জনে সমর্থ’ এই বিশ্বাস তিনি নিজ পুত্রে স্থাপন করবেন। এই গ্রন্থপাঠশেষে এ-কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, প্যাট্রিসিয়ার সে-বিশ্বাস অপাত্রে বর্ষিত হয়নি।
৭। দি রিটার্ন : ফাদার্স, সন্স অ্যান্ড দি ল্যান্ড ইন-বিটুইন, হিশাম মাতার, র্যান্ডম হাউস
হিশাম মাতারের পিতা জাবাল্লা মাতার তাঁর দেশ লিবিয়ার একজন সুপরিচিত ভিন্নমতাবলম্বী। ১৯৯০ সালে লিবিয়ার একনায়ক মুয়াম্মার গাদ্দাফির গোপন পুলিশ তাঁকে অপহরণ করে পাঠায় সে-দেশের কুখ্যাত আবু সালিম কারাগারে। এই চমৎকার গ্রন্থটিতে হিশাম মাতার টেলেমেকাসের মতো সকল বিপদ উপেক্ষা করে তাঁর অপহৃত পিতার সন্ধানে কীভাবে সারাদেশের এপার-ওপার চষে বেড়িয়েছেন, তার ঘনিষ্ঠ বিবরণ তুলে ধরেছেন। পিতার অনুপস্থিতি তরুণ হিশামকে বিষণœ করেছে, সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে স্থিরপ্রতিজ্ঞ করেছে পিতা কোথায় আছেন, সে-সত্য উদ্ধারে। এক রহস্য 888sport alternative linkের মতো সে-কাহিনিই তিনি এই গ্রন্থে উদ্ধার করেছেন। টুকরো টুকরো বিভিন্ন ঘটনা একসঙ্গে যোগ দিয়ে তিনি উদ্ধার করতে চেয়েছেন ঠিক কীভাবে তাঁর পিতা অপহৃত হয়েছিলেন, কারা সে-অপরাধের জন্য দায়ী, শেষ পর্যন্ত কী হয়েছিল তাঁর পিতার। একই সঙ্গে এই গ্রন্থ নির্বাসনের এক নির্জন কাহিনি। হিশাম, তাঁর মা ও এক ভাই লিবিয়া থেকে পালিয়ে নির্বাসিত অবস্থায় দিনের পর দিন কাটিয়েছেন, পিতার উদ্ধারের আশা তাঁদের বাঁচতে সাহায্য করেছে।
এই গ্রন্থের কাহিনি উন্মোচিত হচ্ছে এমন এক সময়ে যখন এক আকস্মিক ‘আরব বসন্ত’ আরব দেশগুলিতে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক মুক্তির সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছিল। হিশাম তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উদাহরণে এই ‘আরব বসন্ত’ কীভাবে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেও শেষ পর্যন্ত এক আগুন ঝড়ে নিজেই জ্বলেপুড়ে ছাই হলো তার চিন্তামনস্ক বিবরণ তুলে ধরেছেন।
৮। নাটশেল, ইয়েন ম্যাকইয়্যান, ন্যান এ ট্যালিস পাবলিশার্স
এই 888sport alternative linkটি বর্ণিত হয়েছে এক ভ্রƒণের ভাষ্যে, যে জন্মাবার আগে চুপিচুপি তাঁর আসন্নপ্রসবা মা ট্রুডি ও পিতৃব্য ক্লডের মধ্যে গোপন প্রণয় প্রত্যক্ষ করে। এ যেন গর্ভাবস্থায় এক হ্যামলেটের গল্প, যে-গল্প শোনাচ্ছে জন্মের অপেক্ষায় থাকা এক ভ্রƒণ। মানতেই হবে, এই গ্রন্থে ইয়েন ম্যাকইয়্যানের সৃষ্টিশীলতা ও হাতের কারসাজি দেখে আমাদের বিস্মিত না হয়ে উপায় থাকে না। বিচিত্র ও অস্বাভাবিক পটভূমিতে নির্মিত এই গল্পে লেখক ভাষার অবাক জিমন্যাস্টিকে আধুনিক সময়ের অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা ব্যক্তিজীবনে কী প্রচ- তোলপাড় তোলে তার অনুপুঙ্খ বিবরণ তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি হাজির করেন সামাজিক অসন্তোষ, শ্রেণিগত বৈষম্য ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে যে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়, ব্যক্তি কীভাবে তার ভেতর দিয়ে বেঁচে থাকার জায়গা করে নেয় তার বিবরণ।
৯। দি আন্ডারগ্রাউন্ড রেইলরোড, কলসন হোয়াইটহেড, ডাবলডে
উনিশ শতকের মধ্যভাগে আমেরিকায় দাস ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে যে গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়, এই 888sport alternative link সেই সময়ের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রচিত এক গভীর বেদনার ও বিভক্তির কাহিনি। ১৮৬২ সালে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের দাস ব্যবস্থা বিলুপ্তি ঘোষণার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ নিগ্রো দাসের মুক্তির সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়। এদের অধিকাংশের বাস ছিল দেশের দক্ষিণে, যেখানকার শ্বেতকায় প্রভুরা তাদের সে ‘সম্পত্তি’ এককথায় ছেড়ে দিতে রাজি ছিল না। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অপেক্ষাকৃত উদারনৈতিক উত্তরাঞ্চল ও রক্ষণশীল দক্ষিণের মধ্যে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।
শুধু লিংকনের আইনি ঘোষণায় নিগ্রো দাসদের পক্ষে তাদের মুক্তি অর্জন অসম্ভব ছিল, সেজন্য তাদের বিপুল রক্তপাত ও দীর্ঘ পথপরিক্রমার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। গৃহযুদ্ধের এই খা-বদাহনের সময় দক্ষিণের মুক্ত দাসেরা দলবেঁধে পালিয়ে আসে উত্তরে। খুব সহজ ছিল না তাদের সেই যাত্রা। গোপনে, দাস মালিকদের ভাড়াটে ঘাতকদের চোখ এড়িয়ে, বিপদসংকুল পথ অতিক্রম করে অবশেষে তাঁদের কেউ কেউ উত্তরের রাজ্যসমূহে এসে পৌঁছাতে সমর্থ হয়। যেভাবে তাদের উত্তরে পাচার করা হয়, মার্কিন লোকগাথায় তা আন্ডারগ্রাউন্ড রেইলরোড নামে পরিচিত। সত্যি সত্যি কোনো রেইলরোড নয়, গোপনে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তাদের যেভাবে পালাতে সাহায্য করা হয়, প্রতীকী অর্থে তা-ই গোপন রেলপথ হিসেবে পরিচিত।
কলসন হোয়াইটহেড তাঁর এই 888sport alternative linkে প্রতীকী নয়, এক সত্যিকারের রেলগাড়ির কথা বলেছেন, যে রেলগাড়িতে চেপে পালাচ্ছে দক্ষিণের মুক্তিপাগল দাসেরা। 888sport alternative linkে রেলগাড়িটি সত্যি, কিন্তু তার আসল পরিচয় প্রতীকী, যার ছায়ায় তিনি বর্ণবাদ ও দাসপ্রথার এক প্রবল ধিক্কারময় কাহিনি আমাদের উপহার দিয়েছেন। আশ্চর্য নমনীয় ভাষায় তিনি এই কাহিনি বর্ণনা করেন, যেখানে একই সঙ্গে মিশে থাকে বাস্তব ও মিথের ঐন্দ্রজালিক প্রভা। প্রবল দক্ষতায় দাসপ্রথার নির্মমতা তিনি আমাদের কাছে পৌঁছে দেন, সঙ্গে থাকে ঘৃণা ও প্রত্যাখ্যানের প্রবল কশাঘাত। যে-ভাষায় এই কাহিনি নির্মিত, তা একই সঙ্গে সারল্যমিশ্রিত ও কাব্যিক। এই বই পড়তে গিয়ে অবশ্যই মনে পড়বে উইলিয়াম ফকনারের সেই কথা, ‘বিগত আসলে কখনো মৃত নয়। বস্তুত বিগত অতীতও নয়।’
১০। দি রিভেঞ্জ অব অ্যানালগ : রিয়েল থিংস অ্যান্ড হোয়াই দে ম্যাটার, ডেভিড স্যাক্স, পাবলিক অ্যাফেয়ার্স
অ্যানালগ যুগ পেরিয়ে আমরা এখন ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছি। এই সম্মোহনী গ্রন্থে সাংবাদিক ডেভিড স্যাক্স ডিজিটালকে ডিঙিয়ে অ্যানালগ প্রযুক্তি কীভাবে আবার প্রত্যাবর্তন করছে তার এক সরস বর্ণনা হাজির করেছেন। অপেক্ষাকৃত পরিণত বয়সের পাঠকদের নিশ্চয় মনে আছে, একসময় শুধু ছিল ভিনাইল রেকর্ড (যা আমরা ৭৮ আরপিএম নামে জানি, পরে যার নাম হয় এলপি বা লং প্লেয়িং রেকর্ড)। কম্প্যাক্ট ডিস্ক আবিষ্কারের পর ভিনাইল রেকর্ড কার্যত উঠে গিয়েছিল। কিন্তু তারা আবার ফিরে এসেছে। একসময় পোলারয়েড ক্যামেরা খুব জনপ্রিয় হয়েছিল, ডিজিটালের আক্রমণে তাও উধাও হয়ে গিয়েছিল। সেই পোলারয়েড আবার বাজারে রমরমা ব্যবসা করছে। ৩০ বছরের কম এমন নতুন সহস্রাব্দের তরুণ-তরুণীরা এখন এসবে খুব ঝুঁকেছে। এমনকি পুরনো ধাঁচের কাগজের নোটবুক ও সহজে মোছা যায় এমন হোয়াইট বোর্ডও ফের জনপ্রিয় হচ্ছে। ডেভিড স্যাক্স আমাদের জানাচ্ছেন, এই পরিবর্তনের কারণ মানুষ আসলে হাতে ছোঁয়া যায়, চোখে দেখা যায়, বায়বীয় নয়, সত্যি জিনিস পেতে আগ্রহী। ডিজিটাল জগতে সেই হাতের ছোঁয়ার বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই, তাই ফের সেই অ্যানালগে প্রত্যাবর্তন।

Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.