অজস্রতায় তিনি

কালি ও কলমের স্মারক 888sport free betর আয়োজন হলেই একটা চাপা ব্যথা অনুভব করি। এই কর্মতৎপরতার মধ্য দিয়ে যেন বিষাদভরে নিশ্চিত হই কোনো বিশেষ ব্যক্তির প্রস্থান সম্বন্ধে। আরেকটা নক্ষত্র খসে পড়ল, আলো একটু কমে গেল। সামনের সারির 888sport live football-পত্রিকার কাছে এরকম একটি 888sport free bet সকলেই প্রত্যাশা করেন। এটাই তো কাজ। তাই কবি শামসুর রাহমান থেকে শুরু করে রবিউল হুসাইন পর্যন্ত 888sport apk download apk latest versionর্ঘ্য চলছিল। কিন্তু মানুষটি যখন নিজের কেউ হন তখন কলম যে আর সরে না।
সম্পাদক আবুল হাসনাত অনুরোধ করায় বেশ কয়েকদিন বসেছি তৈরি হয়ে; কিন্তু কথারা পাশ কাটিয়ে চলে গেছে। আনিস স্যার 888sport sign up bonus হয়ে যাবেন এটা চাই না। আমি তো অত বড় মানুষটিকে তাঁর বিশালতায় দেখিনি, দেখার চোখও নেই, কাছে থেকে শুধু স্নেহে ও প্রশ্রয়ে প্রগলভ হয়ে থেকেছি।
‘মামা’ বলে অনায়াসে যাঁকে ডেকেছি, একবারও তো ভাবিনি তিনি কত বড় পণ্ডিত, কতগুলো কালের সাক্ষী। ধরেই নিয়েছি ভাগ্নিসুলভ স্নেহ যখন পাচ্ছি তখন নিশ্চয়ই এটা আমার প্রাপ্য। বুঝিনি যে তিনি সবাইকে প্রাপ্যের চেয়ে একটু বেশিই দিয়ে থাকেন, আন্তরিকতা ও সৌজন্যবোধের গুণে। এই বুঝতে না-দেওয়াটা তাঁর মহানুভবতা।
তিনি অফিসে এলেই অভ্যর্থনা থেকে শম্পা দিদি ফোন করে জানাত, স্যার এসেছেন। শম্পা ওঁর খুব দেখাশোনা করত। কী খাবেন, কেমন শিঙাড়া স্যারের পছন্দ, শেষদিকে যখন শরীরটা অত ভালো নেই তখন গাড়ি থেকে নামানো-ওঠানো, চেয়ার টেনে দেওয়া ইত্যাদি। কালি ও কলমের আশফাক, মনিদা, আতাউর – এরাও ওঁর কাজে সহায়তা করতেন। এই মার্চ মাসে অনেক বলে-কয়ে অফিসে আসা বন্ধ করতে হয়েছে। শরীর না চললেও দায়িত্ববোধ ঘাড় থেকে নামেনি। মামা, এখন কোথায় যাবেন জিজ্ঞেস করলে – দুপুরে একটা সভা, সেখান থেকে বিকেলে শাহবাগে আর সন্ধ্যায় উদ্বোধনে বা প্রকাশনা অনুষ্ঠানে … আমাদের কাছে কেন আশ্চর্য মনে হয়নি, আশি-পেরোনো একজন মানুষ সারাদিন নানা অঙ্গীকার পূরণে ব্যস্ত! তার কারণ হয়তো এই যে, দায়বোধটা আন্তরিক ছিল, পোশাকি নয়। এতগুলো মানুষকে সত্যি সত্যি গুরুত্ব দেওয়া – সে কি সবাই পারে? কোনো সহকর্মীর সন্তানের জন্মদিন, কারো মেয়ের বিয়ে, বিয়েবার্ষিকী … ওরা বড় আশা করে বলেছে – স্যার আপনি যদি একটু আসতেন? স্যার ছোট কালো ডায়েরিটা বের করে দেখে নিতেন সেদিন সন্ধ্যায় অন্য কিছু আছে কি না। ফাঁকা থাকলে ঠিকই সময়মতো কিংবা সময়ের কিছু আগেই কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছে যেতেন। তখনো হয়তো নিমন্ত্রণকারী এসে পৌঁছাতে পারেননি। এই সময়ানুবর্তিতা কি কাউকে খুশি করার জন্য? পরিবার-সন্তানসহ উৎফুল্ল সহকর্মী কিন্তু এই দিনটা সারাজীবন মনে রাখবেন। স্যারের উপস্থিতিই তো আশীর্বাদ। নিজের ভালোলাগার চেয়ে অন্যের ভালোলাগাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার যে-উদারতা, সেটাই তাঁকে সবার খুব কাছে নিয়ে গিয়েছিল। তাই কেঁদে ভাসিয়েছে সবাই, শিক্ষক বা পণ্ডিতের জন্য নয়, একজন ভালো মানুষের জন্য।
কালি ও কলমের কাগজপত্র নিয়ে আবুল হাসনাত আনিস স্যারের সঙ্গে প্রায়ই বসতেন। আমরাও কখনো কখনো যোগ দিয়েছি। কিন্তু তাঁর কাজের সময় কখনো কাউকে ডেকে পাঠাননি, টেবিল থেকে নিজেই উঠে এসেছেন। আরে করছেন কী, আমরাই তো আসতে পারতাম … হেসে বলেছেন, আমারও একটু তোমাদের এখানে আসা হলো। ঢিলে পাজামা আর পাঞ্জাবি ছাড়া ওঁকে কখনো দেখিনি বললেই চলে। তবে প্লেনে দূরপথে যাত্রা হলে বাধ্য হতেন পোশাকের ধরন পালটাতে। কোনোদিন অফিসে প্যান্ট-শার্ট পরে এলে ছেলেমেয়েরা মুচকি হেসে বলত, স্যার কি এখান থেকে এয়ারপোর্টে যাবেন?
কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক 888sport app download bd প্রবর্তন করায় আনিস স্যার প্রীত হয়েছিলেন এবং মনে করতেন এভাবেই নবীনদের উৎসাহিত করা উচিত। সম্পাদক আবুল হাসনাত প্রচুর শ্রম ব্যয় করে 888sport app download bdের কাঠামো দাঁড় করিয়ে একটা সম্মানজনক স্থানে উন্নীত করেছেন। 888sport app download bd প্রদানে এক বছর জটিলতা দেখা দিলে আনিস স্যারের শরণাপন্ন হই। সেবার দেখেছি কী স্পষ্ট ও যৌক্তিক তাঁর চিন্তা। ২০০৯ সাল থেকে প্রতিবছর জাদুঘরে 888sport app download bd প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে আনিস স্যার পুরস্কৃতদের অভিবাদন জানিয়েছেন কী উজ্জ্বল ভাষায়! সেখানেও অতিথিদের মধ্যে তিনিই কিন্তু সবার আগে এসে উপস্থিত। তখনো আমরা মঞ্চের জিনিস টানাটানি করছি। আগামীবার ওঁকে ছাড়া কীভাবে এসব আয়োজন হবে?
২০১৪-র নভেম্বরে বেঙ্গল উৎসবের মঞ্চে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেল। বরেণ্য 888sport live chatী কাইয়ুম চৌধুরী মঞ্চে বক্তৃতা শেষ করে চলে যাচ্ছিলেন; কিন্তু ‘আমার আরেকটা কথা ছিল …’ বলে, কী মনে করে মাইকের সামনে ফিরে এসে দণ্ডায়মান অবস্থায়ই মাটিতে পড়ে গেলেন। ওখানেই শেষ! মঞ্চের পেছনে শোয়ানো হলো, পরে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নেওয়া হলো। ভয়ে ও শোকে আমরা হতভম্ব। বিদেশ থেকে আসা গানের 888sport live chatী, যন্ত্রী সকলে স্তম্ভিত। এরকম পরিস্থিতিতে কখনো পড়িনি (আর কখনো পড়তেও চাই না!)। আয়োজনের কী হবে? এত জনসমাগম, বিশাল প্রস্তুতি – নিশ্চয়ই সব বন্ধ করতে হবে? সেদিন আনিস স্যারও মঞ্চে ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে পেছনে এলেন। যখন হাসপাতাল থেকে চূড়ান্ত সংবাদ এলো তখন রামেন্দু মজুমদারকে নিয়ে মঞ্চের সামনে গেলেন। বন্ধুবর কাইয়ুম চৌধুরীকে এমন আকস্মিকভাবে হারিয়ে গভীর শোকার্ত হওয়া সত্ত্বেও সব সামলে আনিস স্যার সংক্ষেপে কাইয়ুম চৌধুরীর জীবনালেখ্য পাঠ ও শোক জ্ঞাপন করে বললেন – ‘অনুষ্ঠান চলবে, যেমন জীবন বয়ে চলে। কাইয়ুম সংগীত ভালোবাসতেন। তিনি চাইতেন না তাঁর কারণে কোনো সংগীতের আসর বিঘ্নিত হোক। আমরা তাঁর সে-ইচ্ছা কল্পনা করে অনুষ্ঠান চালিয়ে নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ রামেন্দু মজুমদার চমৎকারভাবে বললেন, ‘এমন আলোকিত মৃত্যু ক’জনের ভাগ্যে জোটে।’ এই স্বল্পকথনে শোক হয়ে গেল শক্তি।
রবীন্দ্রনাথের গানই ওঁর প্রিয় ছিল; কিন্তু শাস্ত্রীয় গানের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে এমন কিছু সার কথা বলেছেন, যা আমাদের নানাভাবে সঞ্জীবিত করেছে। শাস্ত্রীয় গানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরম্পরা সংগীতালয়ের ছাত্রছাত্রীদের রবীন্দ্রনাথের কথাটি মনে করিয়ে দিয়েছেন, যেন উপায় বা প্রকরণ সংগীতকে ছাপিয়ে না যায়। শাস্ত্রীয় সংগীতের বিশালতা সম্বন্ধে অবগত হওয়া আমাদের কর্তব্য এবং এ-প্রসঙ্গে ২০১৫ সালে একজন বড় ওস্তাদের কথা উদ্ধৃত করে বলেছেন – ‘১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় পাঞ্জাবে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে মর্মাহত হয়ে তিনি বলেছিলেন, ভারতবর্ষের ঘরে ঘরে যদি উচ্চাঙ্গসংগীতের চর্চা করা সম্ভবপর হতো তা হলে এমন সংঘাত ঘটত না এবং দেশভাগেরও প্রয়োজন হতো না। এ-কথা তিনি বলেছিলেন আমার বিশ্বাস, দুটো ধারণা থেকে। একটি যে, ভারতীয় উচ্চাঙ্গসংগীতের যে-ধারা বয়ে চলে এসেছে সেটি হিন্দু ও মুসলমানের যুক্ত সাধনায় সমৃদ্ধ হয়েছে, একটা থেকে অপরকে পৃথক করা যায় না। আর দ্বিতীয় কথাটি ছিল এই যে, সংগীতের চর্চা – আসলে যে-কোনো সুকুমার 888sport live chatের চর্চা – মানুষের মনে যে ভাবের ও সুকুমারবৃত্তির বিকাশ ঘটায় তাতে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে মানুষ পরস্পরের বন্ধনে জড়িয়ে যেতে শেখে। তিনি স্বীকার করেছেন যে, অনেক সময় সম্পূর্ণ মর্ম উপলব্ধি না করেও ভালো পরিবেশনা উপভোগ করা সম্ভব।’ আরেক সাক্ষাৎকারে শুনেছিলাম সংস্কৃতি ও বিনোদনের মধ্যে পার্থক্য এবং সংস্কৃতি কীভাবে মানুষের মধ্যে কল্যাণ ও ন্যায়বোধ তৈরি করে তা তিনি চমৎকারভাবে বিশ্লেষণ করেছেন।
আনিস স্যারের রসবোধ তাঁর আলাপচারিতাকে আকর্ষণীয় করে তুলত। বেঙ্গল উৎসবের কোনো এক পর্বে বক্তৃতা শুরু করেছিলেন এই বলে – ‘এই উৎসবের জন্য কোনো প্রবেশমূল্য নির্ধারিত নেই। অলিখিত প্রবেশমূল্য হচ্ছে আপনাদেরকে আমাদের বক্তৃতা শুনতে বাধ্য করা।’
সৈয়দ শামসুল হক দৈনিক তাগিদ না দিলে হয়তো আনিস চৌধুরীর তিন খণ্ডের লেখালেখি প্রকাশ করা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না। শেষে ২০১০ সালে প্রকাশনা অনুষ্ঠান হলো। আনিস স্যার সেখানে 888sport sign up bonusচারণে উল্লেখ করেছিলেন সংবাদপত্র অফিসে চা-ওয়ালার ঘটনা। চায়ের স্লিপে আমার বাবা আনিস চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘দু কাপ চা – আনিস।’ চা সরবরাহকারী ক্ষিপ্ত হয়েছিলেন এই মনে করে যে তাঁকে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে। কাল নিরবধি 888sport sign up bonusগ্রন্থে আনিস স্যার কলকাতায় কংগ্রেস একজিবিশন রোডের প্রতিবেশীদের প্রসঙ্গে দাস ভবনে সাত ছেলেমেয়ে নিয়ে আমার দাদির সংসারের কথা উল্লেখ করেছেন। 888sport sign up bonusচারণের চমৎকার বর্ণচ্ছটায় পাই কত যে অজানা কথা! আমার ছোট চাচা জামিল চৌধুরী নাকি ট্রানজিস্টার রেডিও খুলে আবার জোড়া লাগাতে পারতেন, সেই আশ্চর্য ঘটনা যাচাই করতে দাস ভবনে ওদের বাড়িতে গিয়েছিলেন কৌতূহলী কিশোর আনিসুজ্জামান। বহু যুগ পরে আনিস স্যার আমাকে কংগ্রেস একজিবিশন রোডে নিয়ে যান দাস ভবন চিনিয়ে দিতে। সে-সময় আমাদের বন্ধুস্থানীয় একজন রোদে অতিষ্ঠ হয়ে আনিস স্যারকে বলেন, ‘লুভা বুঝবে না। অত না খুঁজে ওকে যে কোনো একটা পুরনো বাড়ি দেখিয়ে দিন না।’ কিন্তু আনিস স্যার কি আর অত মোটা দাগের মানুষ! কিছুদিন আগে জামিল চৌধুরী তাঁর 888sport sign up bonusচারণে একটা ছোট্ট ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, একাত্তর সালে দেশ স্বাধীন করার জন্য কলকাতায় সাংগঠনিক কাজে যখন সবাই আকণ্ঠ নিমগ্ন এবং কিছুটা পরিশ্রান্ত ও অবসন্ন, তখন আনিস স্যারের বড় মেয়ে রুচি বাবাকে বলেছিল, ‘যুদ্ধ শেষ হলে তুমি আমাকে একটা রসগোল্লা কিনে দেবে?’ এই সামান্য চাওয়ার মধ্যে নিহিত পরবাসে কাটানো অসহায় ও অনিশ্চিত জীবনের প্রকট ছবি। এসব ত্যাগের কথা হয়তো আমরা এখন বিস্মৃত।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবুল খায়েরের সুবাদে ওই যে কবে থেকে ‘মামা’ বলে ডাকছি আর তাই বেবী মামিও তাঁর স্বভাবসুলভ স্নেহপরায়ণতায় আমাদের কাছে টেনে নিয়েছেন। মামির রান্নার হাত এত ভালো যে, আশ্চর্য নয় আনিস স্যার খুব উঁচুদরের খাবারের ভক্ত ছিলেন। বাঙালি আদর্শে বিশ্বাসী বুদ্ধিজীবী মনে করে অনেকেই হয়তো আনিস স্যারকে নেমন্তন্ন করে মাছ-ভাত খাওয়াতে চাইতেন; কিন্তু তিনি তো একেবারেই এসব খেতে পারতেন না। তাঁর পছন্দ ছিল কাটলেট, মাংস, স্যুপ, ভাজা ইত্যাদি। কালি ও কলম নিয়ে প্রাথমিক আলোচনার জন্য কয়েকবার ওঁর বাড়িতে প্রাতর্ভোজে অংশ নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। টেবিল সাজানো থাকত মামির বহু পদের রান্নায়। ন্যাপকিন, কাঁটাচামচ সমেত আনিস স্যার ব্রেকফাস্ট করতেন টোস্ট, মারমালেড ইত্যাদি দিয়ে। সঙ্গে লুচি, পরোটা, হালুয়া, ভুনা গোশত তো আছেই। অতীব গুণী ও স্নেহপরায়ণ বেবী মামির দিন এখন কীভাবে কাটবে ভেবে পাই না।
২০১৯ সালে বেঙ্গল গ্যালারি নতুনভাবে সজ্জিত হয়ে 888sport live chatী কাজী গিয়াসউদ্দিনের প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। সেদিন বড় ভালো লেগেছিল এই ভেবে যে, আনিস স্যার ২০০০ সালে গ্যালারি উদ্বোধনের দিন ছিলেন আর ১৯ বছর পর ওঁর হাত ধরেই আবার যাত্রা শুরু হলো। এর মধ্যে কত প্রদর্শনী, কত অনুষ্ঠানে যে ওঁর আশীর্বাদ আমরা পেয়েছি সে কি আর বলে শেষ করা যাবে! আমাদের মাথার ওপর রাখা হাত ছাড়া আমরা কীভাবে চলব?